মালভূমি কাকে বলে, ভারতের উচ্চতম মালভূমির নাম কি

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

মালভূমি কি, মালভূমি কাকে বলে, মালভূমি কাকে বলে উদাহরণ দাও

সমুদ্র সমতল হতে অপেক্ষাকৃত উচ্চে অবস্থিত খাড়া ঢালযুক্ত অসমতল এবং প্রশস্ত ভূমিভাগকে মালভূমি বলে।

মালভূমি কাকে বলে

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে গড়ে প্রায় 300 মিটারের অধিক উচ্চতা বিশিষ্ট, বহুদূর বিস্তৃত, চারি দিকে খাড়া ঢাল যুক্ত এবং উপরিভাগ তরঙ্গায়িত বা বন্ধুর ভূমিভাগকে মালভূমি বলে। প্রধানত ভূ-আলোড়ন ও পাত সঞ্চালন, ভূপৃষ্ঠে লাভা সঞ্চয় এবং ভূপৃষ্ঠের ক্ষয়সাধন-এই তিনটি কারণে মালভূমি সৃষ্টি হয়।

সমুদ্র সমতল থেকে অতি উচ্চ বিস্তৃর্ণ সমভূমিকে মালভূমি বলে। সমুদ্র পৃষ্ট হতে এর উচ্চতা কয়েক শত মিটার হতে কয়েক হাজার মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। ভূ-অভ্যন্তরস্থ ও ভূ-পৃষ্ঠস্থ বিভিন্ন প্রক্রিয়ার কারণে মালভূমির সৃষ্টি হতে পারে। যেমনঃ পাত সঞ্চালন, ভূ-আন্দোলন, ভূ-পৃষ্ঠের ক্ষয়সাধন, আগ্নেয় তৎপরতা ও লাভা সঞ্চয়ের মাধ্যমে মালভূমি গঠিত হয়ে থাকে। পৃথিবীর মোটভূমির শতকরা পাঁচ ভাগ মালভূমি।

প্রধানত ভূ-আলোড়ন ও পাত সঞ্চালন, ভূপৃষ্ঠে লাভা সঞ্চয় এবং ভূপৃষ্ঠের ক্ষয়সাধন-এই তিনটি কারণে মালভূমি সৃষ্টি হয়।

মালভূমির উদাহরণ

  • তিব্বতের পামির মালভূমি একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। মালভূমির উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে কয়েকশ মিটার থেকে কয়েক হাজার মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। ভূ-অভ্যন্তরস্থ ও ভূ-পৃষ্ঠস্থ বিভিন্ন প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার কারণে মালভূমি সৃষ্টি হতে পারে। পৃথিবীর মোট ভূমির শতকরা পাঁচভাগ: মালভূমি।
  • ভারতের ছোটনাগপুর মালভূমি, দক্ষিণাত্যের মালভূমি, তিব্বতের মালভূমি, লাদাখ মালভূমি ইত্যাদি।
  • কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার শিল্ড।

মালভূমির বৈশিষ্ট্য

মালভূমির প্রধানত তিনটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা

(ক) এটি বিস্তীর্ণ উচ্চভূমি,

খ) এর উপরিভাগ তরঙ্গায়িত ও অসমতল এবং

গ) এটি চারদিক থেকে নিম্নভূমিতে নেমে যায়।

আরো অন্যান বৈশিষ্ট গুলি হলো : –

১)মালভূমি হল একটি বহুদূর বিস্তৃত উচ্চভূমি।

২)মালভূমি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে সাধারণত 300 থেকে 600 মিটার উচ্চতার মধ্যে অবস্থান করে।

৩)মালভূমির উপরিভাগ কিছুটা তরঙ্গায়িত বা উঁচু নিচু হয়।

৪)মালভূমির চতুর্দিক খাড়া ঢাল যুক্ত হয়।

৫)মালভূমির উপরিভাগ কিছুটা তরঙ্গায়িত বা প্রায় সমতল এবং চতুর্দিক খাড়া ঢাল বিশিষ্ট বলে একে দেখতে অনেকটা টেবিলের মত হয়। তাই মালভূমিকে টেবিল ল্যান্ড বলা হয়।

৬)মালভূমির উপরিভাগে ছোট ছোট পাহাড় অবস্থান করতে পারে।

৭)মালভূমি বয়সে প্রাচীন ও নবীন উভয় ধরনের হতে পারে।

মালভূমি সৃষ্টির কারণ, মালভূমি কিভাবে গঠিত হয়

ভূ-অভ্যন্তরস্থ ও ভূ-পৃষ্ঠস্থ বিভিন্ন প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে তিনটি প্রধান কারণ মালভূমি সৃষ্টির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যথা : –

১. ভূ-আন্দোলন ও পাত সঞ্চালন। উদাহরণ- তিব্বতের পামীর মালভূমি।

২. ভূ-পৃষ্ঠের ক্ষয়সাধন। উদাহরণ- সাইবেরিয়ার পূর্ব মালভূমি।

৩. ভূ-পৃষ্ঠে লাভা সঞ্চয় । উদাহরণ- ভারতের দাক্ষিণাত্য মালভূমি ।

প্রধানত তিনটি কারণে মালভূমির সৃষ্টি হয় যথা-

ভূ – আলোড়ন

ভূ – আলোড়নের ফলে ভূপৃষ্ঠের প্রাচীন । স্থলভাগগুলি পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে এবং উচ্চতায় বৃদ্ধি পেয়ে এক একটি মালভূমিরূপে অবস্থান করে , একে মহাদেশীয় মালভূমি বলে। উদাহরণ -দাক্ষিণাত্য মালভূমি , আরবের মালভূমি ইত‍্যাদি।

প্রাকৃতিক ক্ষয়কারী শক্তিসমূহের কার্য

সৌরতাপ , বায়ুপ্রবাহ , নদী , হিমবাহ প্রভৃতি প্রাকৃতিক ক্ষয়কারী শক্তিসমূহ উচ্চ পার্বত্য অঞ্চল বা অন্য কোনো উচ্চভূমিকে ধীরে ধীরে ক্ষয় করে প্রায় সমতল শিখরদেশবিশিষ্ট মালভূমিতে পরিণত করে। উদাহরণ- ছোটোনাগপুরের মালভূমি।

লাভা সঞ্চয়

ভূ – অভ্যন্তরস্থ ম্যাগমা লাভারূপে ভূপৃষ্ঠে বেরিয়ে এসে ক্রমশ সঞ্চিত হয়েও মালভূমির সৃষ্টি হয়। উদাহরণ- ভারতের দাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তর – পশ্চিমাংশ হল লাভা মালভূমি।

মালভূমির শ্রেণিবিভাগ

উৎপত্তি, গঠন ও ও বৈশিষ্ট্য অনুসারে মালভূমিকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন-

১) পর্বত বেষ্টিত মালভূমি,

২) ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি,

৩) লাভা মালভূমি,

৪) তরঙ্গায়িত মালভূমি,

৫) মহাদেশীয় মালভূমি,

৬) তির্যক মালভূমি,

৭) চ্যুতি মালভূমি,

৮) অধিত্যকা মালভূমি ইত্যাদি।

পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের মালভূমি রয়েছে মালভূমি গুলি কিভাবে গঠন করে এবং কোথায় পাওয়া যায় সেগুলোর উপর ভিত্তি করে মালভূমিকে প্রকৃতপক্ষে চার ভাগে ভাগ করা যায় যথা- 1. পর্বতবেষ্টিত মালভূমি 2. ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি 3. লাভা মালভূমি 4. মহাদেশীয় মালভূমি।

পর্বতবেষ্টিত মালভূমি কাকে বলে

ভূ আলোড়নের ফলে ভঙ্গিল পর্বত তৈরি হওয়ার সময় দুটি সামান্তরাল পর্বতশ্রেনীর মাঝখানের জায়গা গুলি চাপের জন্য উঁচু হয়ে মালভূমি সৃষ্টি হয়। এই মালভূমির চারদিকে পর্বত থাকে বলে একে পর্বত বেষ্টিত মালভূমি বলে।

পর্বতবেষ্টিত মালভূমির উৎপত্তি

পাত সঞ্চালনের ফলে ভঙ্গিল পর্বত উত্থানের সময় পর্বতের মধ্যবর্তী কোন অংশ উঁচু হয়ে এই মালভূমির সৃষ্টি হয়।

পর্বতবেষ্টিত মালভূমির বৈশিষ্ট্য

  1. পর্বদৃষ্টিতে মালভূমির উচ্চতা খুব বেশি হয়।

2. ভঙ্গিল পর্বতের উৎপত্তির সঙ্গে এই মালভূমির উৎপত্তির সম্পর্কযুক্ত।

3. মালভূমি গুলির বিস্তার অপেক্ষাকৃত বেশি হয়।

উদাহরণ : তিব্বত মালভূমি, ইরানের মালভূমি, পামির মালভূমি প্রভৃতি। তিব্বতের মালভূমি উত্তরে কুয়েনলুন এবং দক্ষিণে কাকাকোলাম হিমালয় দ্বারা বেষ্টিত।

ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি কাকে বলে

নদী, বায়ু, হিমবাহ প্রভৃতি প্রাকৃতিক ক্ষয় কারী শক্তির মাধ্যমে প্রাচীন মালভূমি অঞ্চল ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং এর উচ্চতাও হ্রাস পায়। নদনদী এবং সেগুলির শাখা-প্রশাখা মালভূমিটিকে ধীরে ধীরে ছোট ছোট অংশে ভাগ করে। এইভাবে কোন বিস্তৃত মালভূমি অঞ্চল সংকীর্ণ নদী উপত্যকার মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন হলে তাকে ব্যাবচ্ছিন্ন মালভূমি বা ক্ষয়জাত মালভূমি বলে।

ব‍্যবচ্ছিন্ন মালভূমির উৎপত্তি

মালভূমি সাধারণত কঠিন ও কোমল শিলা দ্বারা গঠিত হয়। প্রাকৃতিক ক্ষয়কারী শক্তি যেমন নদীর জল, বায়ু প্রভৃতি দ্বারা কমল শিলা ক্ষয় পেয়ে যায় এবং গভীর খাঁজ বা উপত্যাকার সৃষ্টি হয়। কঠিন শিলায় গঠিত অংশগুলি তখন বিচ্ছিন্নভাবে মালভূমির মতো অবস্থান করে।

ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমির বৈশিষ্ট্য

1. ব্যবচ্ছিন্ন মালভূম মূলত ক্ষয়ের ফলে সৃষ্ট মালভূমি।

2. এই মালভূমির উচ্চতা মাঝারি প্রকৃতির হয়।

3. ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ‘মেসা’ ও ‘বিউট’ সৃষ্টি করে।

উদাহরণ : ছোটনাগপুরের মালভূমি, কর্ণাটক মালভূমির মালনাদ অঞ্চল, মধ্য ভারতের বুন্দেলখন্ড এবং বাঘেলখন্ড ইত‍্যাদি।

লাভা গঠিত মালভূমি কাকে বলে

অনেক সময় ভূগর্ভস্থ ম্যাগমা ভূত্বকের কোন ফাটল বা দুর্বল অংশের মধ্য দিয়ে নির্গত হয়ে ভূপৃষ্ঠে লাভারূপে সঞ্চিত হয় এবং ধীরে ধীরে ঠান্ডা ও কঠিন হয় মালভূমি সৃষ্টি করে এই ধরনের মালভূমিকে লাভাগঠিত মালভূমি বলা হয়।

লাভাগঠিত মালভূমির উৎপত্তি

অগ্নুৎপাতের ফলে ভূগর্ভের ম‍্যাগমা ভূপৃষ্ঠের ফাটল পথে বাইরে বেরিয়ে এসে লাভা হিসেবে সঞ্চিত হয়। একাধিকবার লাভা সঞ্চয় সমগ্র অঞ্চলটি উঁচু হয়ে এই মালভূমির উৎপত্তি হয়।

লাভাগঠিত মালভূমির বৈশিষ্ট্য

1. এটি এক ধরনের সঞ্চয়জাত মালভূমির ফলে সৃষ্টি হয়।

2. এই মালভূমি অগ্নুৎপাতের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়।

3. ব্যাসল্ট জাতীয় শিলার আধিক্য থাকে এই মালভূমিতে।

4. মালভূমির মধ্যে অবস্থিত পাহাড়ের মাথা চ্যাপ্টা হয়।

উদাহরণ : ভারতের দক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তর-পশ্চিমাংশ মালব মালভূমি, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের কলম্বিয়া-স্নেক মালভূমি।

মহাদেশীয় মালভূমি কাকে বলে

ভূ আন্দোলনের ফলে ভূপৃষ্ঠের প্রাচীন অংশসমূহ পরস্পর থেকে আলাদা হয়ে মালভূমির সৃষ্টি করলে তাকে মহাদেশীয় মালভূমি বলে।

মহাদেশীয় মালভূমির উৎপত্তি

ভূ আন্দোলনের ফলে প্রাচীন উচ্চভূমি পরস্পর পরস্পরের থেকে পৃথক হয়ে যায়। বিভিন্ন প্রাকৃতিক ক্ষয়কারী শক্তির দ্বারা সুদীর্ঘকাল ধরে ক্ষয় পেয়ে মালভূমি রূপ নেয়। মহাদেশের উপর বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে এইসব মালভূমি অবস্থান করে বলে এদের মহাদেশীয় মালভূমি বলে। মহাদেশীয় মালভূমির অপর নাম শিল্ড বা প্রচীন মালভূমি

মহাদেশীয় মালভূমির বৈশিষ্ট্য

1. এই মালভূমি গুলি বয়সে অনেক প্রাচীন। (প্রায় ১০০ কোটি বছরেরও বেশি)

2. প্রাচীন উচ্চভূমির ক্ষয়ের ফলে সৃষ্ট হয় এই মালভূমি।

3. মহাদেশীয় মালভূমি অঞ্চলে ভূমিভাগ সুস্থিত প্রকৃতির হয়।

4. এই মালভূমি গুলি খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ হয়।

উদাহরণ : ব্রাজিল মালভূমি কানাডীয় (শিল্ড) মালভূমি প্রভৃতি। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা, অ্যান্টর্কটিকা, গ্রিনল্যান্ডে বিস্তীর্ণ অংশ জুড়ে মহাদেশীয় মালভূমি অবস্থিত রয়েছে।

আগ্নেয় মালভূমি কাকে বলে

অগ্ন্যুৎপাতের ফলে ভূ-ত্বকের কোনো ফাটল বা আগ্নেয়গিরির ছিদ্র পথে ভূ-গর্ভ হতে লাভা প্রবাহ ভূ-পৃষ্ঠে ছড়িয়ে পড়ে এবং শীতলীকরণ প্রক্রিয়ায় ঠান্ডা হয়ে কঠিন অবস্থা ধারণ করে যে ভূমির সৃষ্টি হয় তাকে আগ্নেয়জাত মালভূমি বলে।

উদাহরণ : ভারতের দাক্ষিণাত্যের মালভূমি। উর্বর মৃত্তিকার কারণে এখানে ভারতের সবচেয়ে বেশী তুলা উৎপাদন হয়।

আগ্নেয় মালভূমির বৈশিষ্ট্য

১. আগ্নেয় লাভা ভিত্তিক।

২. বিস্তীর্ণ এলাকায় লাভা ছড়িয়ে পড়ে এ ধরণের মালভূমির সৃষ্টি হয়।

৩. এ ধরণের মালভূমি বন্ধুর ভূ-প্রকৃতি সম্পন্ন।

8. শুষ্ক জলাবায়ুর আওতাভূক্ত থাকায় জনবসতি খুব কম। 

৫. আগ্নেয়জাত লাভা দ্বারা গঠিত তাই ক্ষয় ক্রিয়ার মাধ্যমে উর্বর মৃত্তিকা সৃষ্টি করে।

৬. এ প্রকার মালভূমিতে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ যেমন টিন, তামা পাওয়া যায় ।

৭. মালভূমির খরস্রোতা নদীতে বাঁধের মাধ্যমে পানিবিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়।

চ্যুতি মালভূমি কাকে বলে

চ্যুতির ফলে কোন এলাকার বিরাট অংশ অসমানভাবে ওপরে উঠে গিয়ে এ ধরণের মালভূমির সৃষ্টি করে।

উৎপত্তিঃ ভূ-পৃষ্ঠের কোন বিস্তৃত স্থান এর দুই পার্শ্বে অপেক্ষাকৃত দুর্বল অঞ্চলে ভূ-অভ্যন্তরস্থ যেখানে দুটি নাজুক অবস্থার মাঝে অবস্থান করে এবং প্রবল চাপে ফাটল সৃষ্টি হয়। এই ফাটলগুলো পাশাপাশি আসে বরাবর।

চ্যুতি মালভূমি বৈশিষ্ট্য

১. চ্যুতির কারণে এ মালভূমির সৃষ্টি হয়।

২. বিস্তৃত এলাকা চ্যুতি বরাবর উপরে উঠে যায়।

উদাহরণ : স্পেনের মেসেটা।

পর্বত মধ্যবর্তী মালভূমি কাকে বলে

ভঙ্গিল পর্বত গঠিত হবার সময় পর্বত দ্বারা বেষ্টিত নিম্নস্থান সমূহ উঁচু হয়ে যে মালভূমি সৃষ্টি করে তাই পর্বত মধ্যবর্তী মালভূমি। পরবর্তীতে মালভূমির উচ্চতা সাধারণত ৩০০০-৫০০০ মিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।

উৎপত্তি : সংকোচনজনিত চাপের ফলে ভঙ্গিল পর্বতের মাঝে এ ধরণের মালভূমি সৃষ্টি হয়। এছাড়া পাত সঞ্চালন এবং ভূ-আলোড়নের সময় কখনও কখনও ভূ-পৃষ্ঠের ভঙ্গিল পর্বত শ্রেণী তাদের মধ্যবর্তী অপেক্ষাকৃত নিম্ন স্থানসমূহকে ওপরে তুলে আনে এবং মালভূমিতে পরিণত করে। এভাবে গঠিত মালভূমি পর্বত বেষ্টিত থাকে বলে পর্বতবেষ্টিত মালভূমি বলে।

উদাহরণ : তিব্বত মালভূমি। এটি পৃথিবীর বৃহত্তম ও উচ্চমত মালভূমি। তিব্বত মালভূমির গড় উচ্চতা ৪০০০ মিটারের বেশি। এর আয়তন ৫২ লক্ষ বর্গ কিলোমিটার।

এছাড়া এশিয়ার আল তিতাস ও তিয়েনশান পর্বতমালার মধ্যে তারিম মালভূমি, এলুবর্জ ও জাগ্রোস পর্বত শ্রেণীর মধ্যে ইরানের মালভূমি পর্বত মধ্যবর্তী মালভূমির উদাহরণ।

ক্ষয়জাত মালভূমি কাকে বলে

কোন পার্বত্য অঞ্চল বা উঁচু ভূখন্ড নদী, হিমবাহ, বৃষ্টিপাত, বায়ু প্রবাহ প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত হলে তার উচ্চতা হ্রাস পায় এবং মালভূমিতে পরিণত হয়। এ ধরণের মালভূমিকে ক্ষয়জাত বা অবশিষ্ট মালভূমি বলে।

উৎপত্তি : এ ধরণের মালভূমির পুরাতন উঁচু ভূ-ভাগ ক্ষয় প্রাপ্ত হয়ে সৃষ্টি হয়। এই শিলার ক্ষয় প্রকৃতি এর বন্ধুরতা নিয়ন্ত্রণ করে। যেখানে ক্ষয়কাজ বেশী হয় সেখানে ভূমির বন্ধুরতা বেশী দেখা যায়।

বৈশিষ্ট্য :

১. ক্ষয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়।

২. সাধারণত এ মালভূমি স্বল্প উচ্চতা বিশিষ্ট হয়।

৩. সহজে ক্ষয়প্রাপ্ত শিলাসমূহ ক্ষয় হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন ক্ষয়জাত ভূমিরূপ দেখা যায়। যেমন-

মেসা, পিলার, বুটি, পিনাকল।

উদাহরণ : দক্ষিন ভারতের মালভূমি, সৌদি আরবের মালভূমি, সাইবেরিয়ার পূর্ব মালভূমি, আফ্রিকার দক্ষিণ মালভূমি, সাইবেরিয়ার পূর্ব মালভূমি, আফ্রিকার দক্ষিণ মালভূমি ক্ষয়জাত মালভূমি। ইউরোপের ক্যালিডোনিয়ান পর্বতশ্রেণী ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ফিজেল্ড মালভূমির সৃষ্টি করেছে।

আগ্নেয়জাত মালভূমি কাকে বলে

আগ্নেয় লাভা প্রবাহ থেকে এ ধরণের মালভূমির সৃষ্টি।

উৎপত্তি : ভূ-ত্বকের কোন ফাটল বা আগ্নেয়গিরির ছিদ্র পথে ভূ-গর্ভ হতে লাভা প্রবাহ ভূ-পৃষ্টে উঁচু হয়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং ক্রমশ: ঠান্ডা ও কঠিন হয়ে মালভূমির সৃষ্টি করে।

বৈশিষ্ট্য :

১. আগ্নেয় লাভা ভিত্তিক।

২. বিস্তীর্ণ এলাকায় লাভা ছড়িয়ে পড়ে এ ধরণের মালভূমির সৃষ্টি হয়।

৩. এ ধরণের মালভূমি বন্ধুর ভূ-প্রকৃতি সম্পন্ন।

৪. শুষ্ক জলাবায়ুর আওতাভূক্ত থাকায় জনবসতি খুব কম।

৫. আগ্নেয়জাত লাভা দ্বারা গঠিত তাই ক্ষয় ক্রিয়ার মাধ্যমে উর্বর মৃত্তিকা সৃষ্টি করে।

৬. এ প্রকার মালভূমিতে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ যেমন টিন, তামা পাওয়া যায়।

৭. মালভূমির খরস্রোতা নদীতে বাঁধের মাধ্যমে পানিবিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়।

উদাহরণ : ভারতের দাক্ষিণাত্যের মালভূমি। উর্বর মৃত্তিকার কারণে এখানে ভারতের সবচেয়ে বেশী তুলা উৎপাদন হয়।

আরও পড়ুন :-মরুভূমি কাকে বলে, সাহারা মরুভূমি কোথায় অবস্থিত, গোবি মরুভূমি কোথায় অবস্থিত

ভারতের উচ্চতম মালভূমির নাম কি, ভারতের সর্বোচ্চ মালভূমির নাম কি

ভারতের উচ্চতম মালভূমির নাম হল লাদাখ।

লাদাখ হল ভারতের সর্বোচ্চ মালভূমি যার উচ্চতা প্রায় ৩,০০০ মি (৯,৮০০ ফু) -এর বেশি । এটি হিমালয় থেকে কুনলুন রেঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত এবং উচ্চ সিন্ধু নদী উপত্যকা অন্তর্ভুক্ত।

ভারতের একটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল, এই অঞ্চলের উত্তরে কুনলুন পর্বতশ্রেণী এবং দক্ষিণে হিমালয় দ্বারা বেষ্টিত, ১৯৪৭ সাল থেকে এই অঞ্চলটি ভারত, পাকিস্তান এবং চীনের মধ্যে বিরোধের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

পৃথিবীর বৃহত্তম মালভূমির নাম কি

তিব্বতের মালভূমি হল পৃথিবীর বৃহত্তম মালভূমি।

হিমালয়ের উত্তর অংশে শত শত বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে তিব্বত নামের রহস্যময় রাজ্যটি। তিব্বত হিমালয়ের উত্তরে অবস্থিত ছোট একটি দেশ। ১৯১২ সালে ত্রয়োদশ দালাই লামা কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত একটি স্ব-শাসিত অঞ্চল তিব্বত। মধ্য এশিয়ায় অবস্থিত এ অঞ্চলটি তিব্বতীয় জনগোষ্ঠীর আবাসস্থল। এ অঞ্চলটিকে চীনের অংশ বলা হলেও এখানকার বেশির ভাগ তিব্বতি এ অঞ্চলকে চীনের অংশ মানতে নারাজ। এ নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। ১৯৫৯ সালে গণচীনের বিরুদ্ধে তিব্বতিরা স্বাধিকার আন্দোলন করলে, তা ব্যর্থ হয়।

তিব্বতের রাজধানী লাসা বিশ্বব্যাপী ‘নিষিদ্ধ নগরী’ হিসেবে পরিচিত ছিল অনেক আগে থেকেই। তিব্বত বা লাসায় বাইরের বিশ্ব থেকে কারও প্রবেশ করার আইন না-থাকায় এই অঞ্চলটি দীর্ঘদিন ধরে সবার কাছে একটি রহস্যময় জগৎ হিসেবে পরিচিত ছিল।

পৃথিবীর উচ্চতম মালভূমির নাম কি, পৃথিবীর সর্বোচ্চ মালভূমির নাম কি

পৃথিবীর উচ্চতম মালভূমির নাম হল পামির মালভুমি। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে পামির মালভুমির উচ্চতা ৭ হাজার ৬৪৯ মিটার বা প্রায় ১৬ হাজার ফুট। পামির মালভুমিকে পৃথিবীর ছাদ বলা হয়।

পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু ভূমির নাম পামীর মালভূমি। স্থানীয় ভাষায় এর উচ্চারণ হচ্ছে ‘পমির’। যার অর্থ হচ্ছে সূর্যের পা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা হচ্ছে প্রায় ১৬,০০০ ফুটের মতো। মধ্য এশিয়ায় অবস্থিত পামির পর্বতমালাকে ঘিরে এ মালভূমিটির অবস্থান। তাজিকিস্তান, আফগানিস্তান, উজবেকিস্তান, কিরগিজস্তান, তিব্বত, চীন এবং পাকিস্তানের কিছু অংশ পর্যন্ত এ মালভূমিটি বিস্তৃত।

এ অঞ্চলটি মূলত বিভিন্ন উঁচু পর্বতের মিলনস্থল। পৃথিবীর সর্বোচ্চ কয়েকটি পর্বতের মধ্যবর্তীস্থানে অবস্থিত হওয়ায় এটি এ পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু মালভূমি হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছে। শুধু পৃথিবীর সর্বোচ্চই নয় তিব্বত মালভূমির সঙ্গে সম্মিলিতভাবে পামির পর্বতশ্রেণির সংলগ্ন মালভূমিটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মালভূমি অঞ্চল। এ কারণে তাই পামীর মালভূমিকে পৃথিবীর ছাদ।

পশ্চিমবঙ্গের মালভূমি অঞ্চল

পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম অংশে অবস্থিত এই ঢেউখেলানো উঁচুভুমি ও মালভুমি অঞ্চলটি সমগ্র পুরুলিয়া জেলা এবং বাঁকুড়া, বীরভূম, বর্ধমান ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পশ্চিমদিকের ৫০ মিটারের বেশি উচ্চতাযুক্ত অঞ্চল নিয়ে গঠিত হয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের মালভূমি অঞ্চলের তিনটি পাহাড়ের নাম হলো অযোধ্যা পাহাড়, শুশুনিয়া পাহাড় ও বেলপাহাড়ি পাহাড়।

পশ্চিমবঙ্গের মালভূমি অঞ্চলের প্রধান নদী

পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলের নদনদীগুলোর মধ্যে অজয়, ময়ূরাক্ষী, দামোদর, সুবর্ণরেখা, ব্রাক্মণী, কোপাই, দ্বারকেশ্বর, শিলাই রূপনারায়ণ, কাঁসাই, কেলেঘাই, হলদি প্রভৃতি নদী উল্লেখযোগ্য। এইসব নদীগুলোর প্রত্যেকটিই ভাগীরথী-হুগলি নদীর ডান তীরের নদী এবং এরা পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, মেদিনীপুর, হাওড়া এবং হুগলি জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলের নদনদীগুলোর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল:

(১) এই সমস্ত নদীগুলোর উৎস হল পশ্চিমের মালভূমি এবং বিহারের ছোটনাগপুর মালভূমি;

(২) সুবর্ণরেখা বাদে এই অঞ্চলের সমস্ত নদীগুলো ভাগীরথী-হুগলি নদীতে মিশেছে; অর্থাৎ এইসব নদীগুলো আসলে ভাগীরথী-হুগলি নদীর উপনদী। শুধুমাত্র সুবর্ণরেখা নদীটি ওড়িশার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয়েছে;

(৩) পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলের এইসব নদনদীগুলো ভূমির ঢাল অনুসারে পূর্ব ও দক্ষিণপূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়েছে;

(৪) শুধুমাত্র বৃষ্টির জলে পুষ্ট হওয়ায় পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলের নদীগুলোতে জলপ্রবাহ সারাবছর সমান থাকে না;

(৫) বর্ষাকালে পশ্চিমের মালভূমিতে বেশি বৃষ্টিপাত হলে এইসব নদীতে বন্যা হয়;

(৬) বর্তমানে পশ্চিমের মালভূমি অঞ্চলের নদনদীগুলোতে বাঁধ ও জলাধার নির্মাণ করে একাধারে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ কাজ এবং জলবিদ্যুৎ উৎপন্ন করা হচ্ছে।

ছোটনাগপুর মালভূমি কি ধরনের মালভূমি

ছোটনাগপুর মালভূমি হল দাক্ষিণাত্য মালভূমি থেকে বিচ্ছিন্ন একটি মালভূমি। এটি পূর্ব ভারতের পাঁচটি রাজ্য জুড়ে বিস্তৃত। এই রাজ্য গুলি হল ঝাড়খণ্ড, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা ও ছত্তিশগড়। এই মালভূমির বেশির ভাগ অংশ ঝাড়খণ্ড রাজ্যে অবস্থিত।

এই ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চলে ভূপ্রকৃতি, জলবায়ু, নদনদী, কৃষিকাজ, খনিজ সম্পদ প্রভৃতি বিভিন্ন দিক দিয়ে নানা রূপ বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। নিম্নে ছোটনাগপুর মালভূমির বৈশিষ্ট্য গুলি সম্পর্কে আলোচনা করা হলো –

1) বহু বছর ধরে বিভিন্ন নদী দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত হয় ছোটনাগপুর মালভূমি বর্তমানে ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি অঞ্চলে পরিণত হয়েছে অর্থাৎ এটি একটি ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি। 

2) উপদ্বীপীয় মালভূমি রংস ছোটনাগপুর মালভূমি মূলত আর্কিয়ান যুগের গ্রানাইট ও নিস শিলা দ্বারা গঠিত।

3) ভূ-প্রাকৃতিক তারতম্য অনুসারে ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চলকে রাঁচি মালভূমি, হাজারীবাগ মালভূমি, কোডার্মা মালভূমি,  বাগমুন্ডি উচ্চভূমি, রাজমহল পাহাড় প্রভৃতি অঞ্চলে ভাগ করা হয়।

4) হাজারীবাগ মালভূমিতে অবস্থিত পরেশনাথ পাহাড় ছোটনাগপুর মালভূমির সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। 

5) সমগ্র অঞ্চলটি পশ্চিম থেকে পূর্ব ও দক্ষিণ পূর্বে ঢালু।

6) ছোটনাগপুর অঞ্চলের প্রধান নদী হল দামোদর সুবর্ণরেখা। এছাড়া এ অঞ্চলে প্রবাহিত নদীগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অজয়, ময়ূরাক্ষী, বরাকর প্রভৃতি।

7) ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চলের মাটি তেমন একটা উর্বর নয়। এখানকার অধিকাংশ অঞ্চলে ল্যাটেরাইট ও লোহিত মাটির প্রাধান্য দেখা যায়।

8) এখানে মৌসুমী পর্ণমোচী উদ্ভিদের প্রাধান্য দেখা যায়। যেমন – শাল, শিমুল, পলাশ, মহুয়া, সেগুন প্রভৃতি। 

9) প্রায় সব ধরনের ধাতব খনিজ সম্পদ যেমন কয়লা, আকরিক লোহা, তামা, বক্সাইট, চুনাপাথর, ইউরেনিয়াম প্রভৃতি অঞ্চলে পাওয়া যায় বলে, ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চল কে ভারতের খনিজ ভান্ডার বলা হয়। 

10) খনিজ সম্পদের প্রাচুর্য এই অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের ভারী শিল্পের বিকাশে সহায়তা করেছে। 

ছোটনাগপুর মালভূমির সর্বোচ্চ শৃঙ্গ

ছোটনাগপুর মালভূমির সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হল পরেশনাথ পাহাড় (১৩৫০ মিটার) ক্ষেত্র ৬৫,০০০ বর্গ কিলোমিটার বর্গকিলোমিটার।

মালভূমি ও সমভূমির পার্থক্য

পৃথিবীর উপরি পৃষ্ঠে যে নানা রূপ যে উঁচু নিচু ভূমিরূপ দেখা যায় সেগুলিকে উচ্চতা, বন্ধুরতা ও ঢালের তারতম্য অনুসারে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা হয়, যথা – পর্বত, মালভূমি ও সমভূমি। এই তিন ধরনের ভূমিরূপের মধ্যে নানা রূপ পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। এখানে সমভূমি ও মালভূমির মধ্যে পার্থক্য আলোচনা করা হল। 

মালভূমিসমভূমি
সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে মাঝারি উচ্চতায় অবস্থিত খাড়া ঢাল  ও সমতল উপরি পৃষ্ঠ বিশিষ্ট ভূমিরূপ গুলিকে মালভূমি বলে।সমতল মৃদু ঢাল যুক্ত ঢেউ খেলানো যে সব ভূমিরূপ সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে সামান্য উচ্চতায় অবস্থিত, তাকে সমভূমি বলে।
মালভূমি গুলি সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে 300 মিটারের অধিক উচ্চতা বিশিষ্ট হয়।সমভূমি সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে 300 মিটারের কম উচ্চতা বিশিষ্ট হয়। 
ভূ আন্দোলনের ফলে সৃষ্ট অন্তর্জাত শক্তি জনিত কারণে ভূমির উত্থানের ফলে বা ম্যাগমা র নির্গমনের ফলে মালভূমির সৃষ্টি হয়।নদী, বায়ু, হিমবাহ প্রভৃতি বহির্জাত শক্তির ক্ষয় ও সঞ্চয় কাজের ফলে সমভূমির সৃষ্টি হয়।
মালভূমি অঞ্চল গুলি একটানা নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে বিস্তৃত থাকে না। মাঝে মাঝে নদী বা সমতল ভূমির উপস্থিতি দেখা যায়। সমভূমি অঞ্চল গুলি নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে বহুদূর অবধি বিস্তৃত হয়।
মালভূমি গুলির উপরি ভাগ সমতল কিন্তু পার্শ্ব দেশ খাড়া ঢাল যুক্ত হয়।সমভূমি গুলি মৃদু ঢাল বিশিষ্ট হয়।
উৎপত্তি অনুসারে মালভূমি কে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা হয়, যথা – লাভা গঠিত মালভূমি, ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি ও পর্বত বেষ্টিত মালভূমি।উৎপত্তির পার্থক্য অনুযায়ী সমভূমি কে তিন ভাগে ভাগ করা হয় – ক্ষয়জাত সমভূমি, সঞ্চয়জাত সমভূমি ও ভূ আলোড়ন গঠিত সমভূমি। 
মালভূমি অঞ্চল গুলি পাথর ও কাঁকুর যুক্ত হওয়ায় কৃষি কাজ করা যায় না।সমভূমি অঞ্চল গুলি উর্বর পলি গঠিত হওয়ায় কৃষি কাজের পক্ষে আদর্শ ।
মালভূমি অঞ্চলে বিভিন্ন রকমের ধাতব খনিজের সঞ্চয় লক্ষ্য করা যায় বলে, অনেক সময় মালভূমি অঞ্চল কে খনিজের ভান্ডার বলা হয়।সমভূমি অঞ্চল গুলিতে তেমন একটা খনিজ সম্পদ পাওয়া যায় না।
মালভূমি অঞ্চল গুলি বন্ধুর ভূমিরূপ, অনুর্বর মৃত্তিকা, কৃষি কাজের অনুপযুক্ত হওয়ায় তেমন একটা জন বসতি গড়ে উঠতে দেখা যায় না।সমভূমি অঞ্চল গুলি বসবাসের উপযুক্ত হওয়ায় পৃথিবীর বেশির ভাগ জন বসতি এই সমভূমি অঞ্চলেই গড়ে উঠেছে।
পৃথিবীর প্রধান প্রধান মালভূমি অঞ্চল গুলি হল – তিব্বত মালভূমি, আমেরিকার কলোরাডো মালভূমি, ফ্রান্সের ম্যাসিফ মালভূমি, ভারতের ডেকান ট্র্যাপ অঞ্চল প্রভৃতি।ভারতের সিন্ধু গঙ্গা সমভূমি, মিশরের নীলনদের সমভূমি, রাশিয়ার সাইবেরিয়া সমভূমি প্রভৃতি পৃথিবীর বিখ্যাত সমভূমি
মালভূমি অঞ্চল লােহা, তামা, ম্যাঙ্গানিজ, বক্সাইট, অভ্র, কয়লা প্রভৃতি খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ হয়।সমভূমি অঞ্চল সাধারণত খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ হয় না। তবে খনিজ তেল বা প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়া যেতে পারে। 
মালভূমি কৃষিকাজে খুব একটা উন্নত নয়। তবে জলসেচেরসাহায্যে কৃষিকাজ করা যায়।নদী, জলাশয় প্রভৃতি সহজলভ্য বলে সমভূমি কৃষিকাজে উন্নত। 
মালভূমিতে রেল ও সড়ক যােগাযােগ ব্যবস্থা গড়ে তােলা তুলনামূলক ভাবে কঠিন।সমভূমিতে সহজেই রেল ও সড়ক যােগাযােগ ব্যবস্থা গড়ে তােলা যায়। 
মালভূমি ও সমভূমির পার্থক্য
আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | মালভূমি

Q1. টেলিগ্রাফ মালভূমি কোথায় অবস্থিত

Ans – টেলিগ্রাফ মালভূমি উত্তর আটলান্টিকের একটি অঞ্চল, যা মধ্য সাগরের বাংলাদেশের উত্তর পূর্বে অবস্থিত।

Q2. পামির মালভূমি কোথায় অবস্থিত, পামির মালভূমি কোন মহাদেশে অবস্থিত

Ans – পামির মালভূমি কোন একটি নির্দিষ্ট দেশে অবস্থিত নয়। মূলত মধ্য এশিয়াতে পামির মালভূমি অবস্থিত। এই মালভূমির একটি বড় অংশ তাজিকিস্তান এর অন্তর্গত। এছাড়াও পামির মালভূমির কিছু অংশ আফগানিস্তান, চিন ও কিরঘিস্তান এর মধ্যে পরে। পামির মালভূমি পৃথিবীর সব থেকে উঁচু মালভূমি, এই কারণে পামির মালভূমিকে ‘পৃথিবীর ছাদ’ বলা হয়। এই মালভূমিতে বেশ কয়েকটি পর্বত শ্রেণির উপস্থিতি লক্ষ করা যায়। যেমন তিয়ান সান, কারাকরাম, কুনলুন এবং হিন্দুকুশ পর্বতমালা।

Q3. পশ্চিমবঙ্গের মালভূমি অঞ্চলের সর্বোচ্চ শৃঙ্গের নাম কি

Ans – অযোধ্যা পাহাড়ের গোরগাবুরু পশ্চিমবঙ্গের মালভূমি অঞ্চলের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ। গোগরাবুরু শৃঙ্গের উচ্চতা ৬৭৭ মি.।

Q4. দাক্ষিণাত্যের মালভূমি কোন দেশে অবস্থিত

Ans – দাক্ষিণাত্য মালভূমি পৃথিবীর একটি প্রাচীনতম ভূখণ্ড গনডোয়ানাল্যান্ড এর অংশ ।

Q5. পৃথিবীর ছাদ যে মালভূমিকে বলা হয় সেটি হলো, পৃথিবীর ছাদ বলা হয় কোন মালভূমিকে

Ans – তিব্বত মালভূমি (পামির মালভূমি) বিশ্বের ছাদ হিসাবে পরিচিত। অনেক উচ্চতায় অবস্থিত বলে একে পৃথিবীর ছাদ বলা হয়। এটি পামির পর্বত নামেও পরিচিত। এটি তিয়ান শান, কারাকোরাম, কুনলুন এবং হিন্দুকুশ পর্বতমালার সাথে হিমালয়ের সংযোগস্থল।

Q6. তিব্বত মালভূমি কোথায় অবস্থিত

Ans – তিব্বতীয় মালভূমি চীনে ছিংহাই-তিব্বত মালভূমি বা কুইং-জ্যাং মালভূমি বা হিমালয় মালভূমি নামেও পরিচিত মধ্য এশিয়া ও পূর্ব এশিয়ার একটি বিশাল উচ্চভূমি। মালভূমিটি বেশিরভাগ তিব্বত স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চলের এবং চীনের কিংহাইয়ের পাশাপাশি ভারতের লাদাখ এবং লাহল ও স্পিটি এলাকা নিয়ে গঠিত।

Q7. আরবের মালভূমি কোন দেশে অবস্থিত

Ans – সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, ওমান, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।