পোস্টমাস্টার গল্পের প্রশ্ন উত্তর

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

পোস্টমাস্টার গল্পের অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

” পোস্টমাস্টার ” গল্পটি কোন পত্রিকায় কোন সংখ্যায় প্রকাশিত ?

উত্তর:- ” পোস্টমাস্টার ” গল্পটি ” হিতবাদী ” পত্রিকায় ২৪ শে জৈষ্ঠ্য ১২৯৮ সংখ্যায় প্রকাশিত ।

” পোস্টমাস্টার ” গল্পটি কোথায় বসে লেখা ?

উত্তর:- ” পোস্টমাস্টার ” গল্পটি শিলাইদহে বসে লেখা ।

” পোস্টমাস্টার ” গল্পের উপাদান কথা থেকে সংগৃহীত ?

উত্তর:- ” পোস্টমাস্টার ” গল্পের উপাদান সংগৃহীত হয় সাজাদ পুর কুঠি বাড়ীর পোস্ট অফিস সংক্রান্ত ঘটনাবলী থেকে ।

” পোস্টমাস্টার ” গল্পে কটি চরিত্র ? তাদের নাম কি ?

উত্তর:- ” পোস্টমাস্টার ” মাত্র দুটি চরিত্র । পোস্টমাস্টার এবং রতন ।

” পোস্টমাস্টার ” এর বাড়ী কোথায় ?

উত্তর:- ” পোস্টমাস্টার ” এর বাড়ী কলকাতায় ।

” পোস্টমাস্টার ” যে গ্রামে চাকরি করতে আসেন সেই গ্রামের নাম কি ?

উত্তর:- ” পোস্টমাস্টার ” যে গ্রামে চাকরি করতে আসেন সেই গ্রামের নাম হল উলা পুর ।

গ্রামে এসে কলকাতার ছেলে পোস্টমাস্টারের কেমন অবস্থা হয়েছিল ?

উত্তর:- গ্রামে এসে কলকাতার ছেলে পোস্টমাস্টারের অবস্থা হয় ডাঙায় তোলা মাছের মতো ।

উলা পুরের পোষ্ট অফিসটি কেমন পরিবেশে স্থাপিত হয়েছিল ?

উত্তর:- উলা পুরের পোষ্ট অফিসটি স্থাপিত হয়েছিল পানা পুকুরের ধারে । জঙ্গল ঘেরা একটা অন্ধকার আটচালা ঘরে ।

উলা পুরের পোষ্ট অফিসটি কে বা কারা প্রতিষ্ঠা করেছিল ?

উত্তর :- উলা পুরের পোষ্ট অফিসটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নীল কুঠির এক সাহেব ।

পোস্টমাস্টারের কাজের মেয়েটির নাম ও বয়স উল্লেখ কর ?, পোস্টমাস্টার গল্পের রতনের বয়স

উত্তর:- পোস্টমাস্টারের কাজের মেয়েটির নাম রতন , বয়স বারো – তেরো বছর ।

কাজের বিনিময়ে পোস্টমাস্টারের কাছ থেকে রতন কী পেত ?

উত্তর:- কাজের বিনিময়ে পোস্টমাস্টারের কাছ থেকে রতন বেতন পেত না , শুধু পেটে খেতে পেত ।

রতন পোস্টমাস্টারের কোন কোন কাজ করে দিত ?

উত্তর:- রতন পোস্টমাস্টারের ঘর পরিষ্কার করা , উনুন ধরানো , তামাক সাজা , জলতোলা , রুটি সেঁকে দেওয়া এই সব কাজ করত ।

” পোস্টমাস্টার ” নিজে রেঁধে খেতেন কেন ?

উত্তর:- পোস্টমাস্টারের বেতন অল্প । রাঁধুনি রাখার সাধ্য ছিল না । তাই নিজেই রেঁধে খেতেন ।

” পোস্টমাস্টার ” কীভাবে তাঁর অবসর কাটাতেন ?

উত্তর:- পোস্টমাস্টার কবিতা লিখতেন , বাড়ীর আত্মীয় স্বজনদের কথা ভাবতেন , রতনের সঙ্গে গল্প করতেন । শেষ দিকে রতনকে পড়াতেও শুরু করেন ।

পোস্টমাস্টারের বাড়িতে কে কে আছেন ?

উত্তর:- পোস্টমাস্টারের বাড়িতে তাঁর ছোট ভাই , দিদি আর মা আছেন ।

রতনের কে কে আছেন ?

উত্তর:- রতনের আপনজন বলতে কেউ নেই ।

কে রতনকে মায়ের চেয়েও বেশী ভালোবাসত ?

উত্তর:- রতনের বাবা রতনকে তাঁর মায়ের চেয়েও বেশী ভালোবাসত ।

রতন পোস্টমাস্টার কে কী বলে সম্বোধন করত ?

উত্তর:- রতন পোস্টমাস্টার কে ” দাদাবাবু ” বলে সম্বোধন করত ।

” সেই মুহূর্তে সে জননীর পদ অধিকার করিয়া বসিল ।” কে কোন মুহূর্তে জননীর পদ অধিকার করে বসে ?

উত্তর:- রতন যখন পোস্টমাস্টারের অসুখ করেছে জানল , তখনই জননীর মতো সেবা করতে বসে গেল ।

পোস্টমাস্টার বদলির দরখাস্ত করেছিলেন কেন ?

উত্তর:- পোস্টমাস্টার স্বাস্থ্যর কারণে গ্রাম্য পরিবেশ থেকে মুক্তি পেতে বদলীর দরখাস্ত করেন ।

পোস্টমাস্টারের স্নানের জল রতন কোথা থেকে তুলে আনত ?

উত্তর:- পোস্টমাস্টারের স্নানের জল রতন নদী থেকে তুলে আনত ।

পোস্টমাস্টার গল্পের গুরুত্বপূর্ণ বড় প্রশ্নোত্তর

পােস্টামাস্টার’ গল্পে পােস্টমাস্টারের সাথে গ্রাম্য বালিকা রতনের কীভাবে কেমন সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তার বষরণ দাও।

উত্তর : উলাপুর গ্রামের পােস্ট অফিসে নতুন পােস্টামাস্টার এলেন কলকাতা থেকে। গণ্ডগ্রামে অপরিচিত পরিবেশে তিনি অস্বস্তি বােধ করতে লাগলেন। এই সময়ে গ্রামেরই এক পিতৃমাতৃহীনা বারাে-তেরাে বছরের এক অনাথা বালিকা চারটি খেতে পাওয়ার পরিবতে তাঁর কাজকর্ম করে দিত। তার নাম রতন।

রতন বাবুর খুবই অনুগত ছিল। একদিন পােস্টমাস্টার রতনকে তাঁর মায়ের কথা জিজ্ঞাসা করলেন। রতন তার মা, বাবা, ছােটোভাই সকলের কথা জানালাে গভীর দুঃখে। কারণ তার আর কেউ নেই। পােস্টমাস্টার রতনের সব কাহিনী শুনলেন। আর একদিন সন্ধ্যাবেলা পােস্টমাস্টার তাঁর ছােটোভাই, মা, দিদির কথা, প্রবাসে যাদের সততই মনে পড়ে, এই গ্রাম্য বালিকার কাছে তা অসংকোচে বললেন। আগ্রহে তাদের কাহিনী শুনে তাদের সঙ্গে এক কাল্পনিক মা-দাদা-দিদি সম্পর্ক গড়ে তুলতাে।

একদিন বষাকালে মেঘমুক্ত মধ্যাহ্নে পল্লীপ্রবাসী সামান্য বেতনের পােস্টমাস্টারের মনে এক ভাবের উদয় হলাে ; তিনি রতনকে ডেকে বললেন তাকে তিনি লেখা পড়া শেখাবেন। রতনও রাজি হল। পড়াশুনাও শুরু হল। একদিন বর্ষার সকালে রতন বইপত্তর নিয়ে পােস্টমাস্টারের ঘরে এসে দেখলাে তাঁর শরীর বেশ অসুস্থ। রতন স্নেহময়ী নারীরপে জননী ও দিদির মতাে সেবা শুশ্রষায় পােস্ট মাস্টারকে সুস্থ করে তুললাে। কিন্তু পােস্টমাস্টার আর এই গণ্ডগ্রামে নােংরা পরিবেশে চাকুরী করতে রাজী হলেন না। বদলির জন্যে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করলেন।

আবেদন নামঞ্জুর হ’লে পােস্টমাস্টার চাকুরী ছেড়ে দিলেন। রতন পােস্টমাস্টারের সঙ্গে তাঁর বাড়ি যেতে চাইলাে। পােস্টমাস্টার রাজি হলেন না, বরং তাঁর স্থলে—যে নতুনবাব আসবেন, তাঁর কাছে রতনের থাকার ব্যবস্থা করে যাওয়ার আশ্বাস দিলেন। রতন কেদে উঠল এবং উচ্ছসিত কণ্ঠে ঐ প্রস্তাবের প্রতিবাদ করল। পােস্টমাস্টার যথা-নির্দিষ্ট দিনে গ্রাম ছেড়ে কলকাতার পথে রওনা হলেন। যে প্রীতিপণ মধুর সম্পর্ক রতনের সঙ্গে গড়ে উঠেছিল তা ছিন্ন করে যেতে পােস্টমাস্টারের খুবই কষ্ট হলাে। তিনি রতনকে তাঁর বিদায়কালে কিছু টাকা দিতে চেয়েছিলেন, কিন্তু রতন তা গ্রহণ করে নি এবং আমার জন্যে কাউকে কিছু ভাবতে হবে না’-বলে এক দৌড়ে পালিয়ে গেল।

বালিকার এই নিঃস্বার্থ সেবার কথা পােস্টমাস্টারের মনে বার বার জেগে উঠল। নদীপথে নৌকায় বসে পোেস্ট মাস্টার রতনের জন্যে অত্যন্ত বেদনা অনুভব করতে লাগলেন ; একটা সামান্য গ্রাম্য বালিকার করণে মুখচ্ছবি যেন বিশ্বব্যাপী এক অব্যক্ত মর্মব্যথা প্রকাশ করতে লাগলাে। বিরহী পােস্টমাস্টারের উদাস হৃদয়ে এক তত্ত্বের উদয় হলাে—“জীবনে এমন কত -বিচ্ছেদ ; কত মত্যু আছে, ফিরিয়া ফল কী। পথিবীতে কে কাহার!”

পোস্টমাস্টার গল্পের চরিত্র বিশ্লেষণ

উত্তর : ” পোস্টমাস্টার ” গল্পে কাহিনী সামান্য। কলকাতার ছেলে গ্রামে পােস্টমাস্টার হয়ে এসেছে। গল্পের নায়ক তিনিই। গ্রাম্য পরিবেশের সঙ্গে সম্ভবত তিনি নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছিলেন না। অফিসের কাজ সামান্য—অবশিষ্ট সময় কাটে কি করে ? নিজের রাস্তা নিজেই করে নেন—অল্প বেতন, তাই এ-ছাড়া উপায়ই বা কি ? অবশ্য এতে তাঁর কিছুটা সময় কাটে। কলকাতার ছেলেরা নদীতে স্নান করতে যেতে বােধ হয় সাহসই পায় না। রতন নদী থেকে জল এনে দেয়, সেই তােলা জলেই সে স্নান করে। ভালাে করে অপরিচিতের সঙ্গে সে আলাপ করতে পারে না। তাই অবসর সময়ে তাঁর বাইরে যাবার প্রয়োজন হয় না।

শহরের ছেলের সঙ্গে গ্রামের মানুষের যােগাযােগ স্থাপিত না হলেও গ্রাম্য প্রকৃতির প্রভাব তিনি এড়াতে পারেন নি। রােমান্টিক পরিবেশে তাঁকে দিয়ে দু’চারটে কবিতাও লিখিয়ে নিয়েছেন। কবিতার ভঙ্গী দিয়েই তিনি সকলের মন ভােলাতে চেয়েছিলেন। অট্টালিকার পর অট্টালিকা এবং পাকা পাকা রাস্তার প্রতি আকর্ষণ থাকলেও পল্লীর প্রশংসায় রচিত হয়েছে তাঁর কবিতা।

প্রকৃতির প্রভাব মানুষের থেকেও অধিক ঃ সন্ধ্যার সময় যখন ঝােপে ঝােপে ঝিল্লি ডাকত, তখন অন্ধকার দাওয়ায় একলা বসে গাছের কম্পন দেখে এই তথাকথিত পল্লী প্রেমিক কবিরও হৃৎকম্প উপস্থিত হতাে। এই প্রকৃতির ইঙ্গিত ভবিষ্যতে পােস্টমাস্টারকে একটা স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছে দিয়েছিল।

অন্ধকার গাছের কম্পনে অতিপ্রাকৃতের কল্পনা জাগিয়ে তুলতাে তাঁর মনে। তখন সঙ্গীর প্রয়ােজন হতাে, তিনি রতনকে ডেকে তামাক সেজে দিতে বলতেনশ প্রকৃতি একদিকে হৃৎকম্প জাগায়, অন্যদিকে রােমান্টিক করে তোলে। তাই রতনের জীবনইতিহাস জানতে চান তিনি। রতনের কাহিনী শুনতে শুনতে অনেক সময় অধিক রাত হয়ে গেলে আর তাঁর কাজের ইচ্ছা থাকতাে না। বিদেশে একক জীবনে রতনের কাহিনী তাঁর নিজের ওপর নিশ্চিতরূপে প্রভাব বিস্তার করতাে। নিশ্চয়ই মনে পড়তো মায়ের কথা, দিদির কথা, ভাইয়ের কথা। ভাবের আবেগে তিনিও নিজ গহের কথা, মা, দিদি, ভাইয়ের কথা শুনাতেন এই ক্ষুদ্র বালিকাকে। আবেগ প্রবণ, ইচ্ছক চিত্ত কোনাে ব্যক্তি ব্যতীত আর কারও নিকটে তাে একথা বলা চলে না। পােস্টমাস্টার রতনের মধ্যে সেই আবেগ লক্ষ্য করেছিলেন। নিজের মনের আবেগ দিয়ে রতনের মনের আবেগকে স্পষ্ট করে তিনি অনেক স্বস্তি পেতেন।

প্রকৃতির নিন্ধ শােভা পােস্টমাস্টারকে বিস্মৃতির অতলে টেনে নিয়ে যেত। তিনি যে পােস্টমাস্টার সে কথাটিই হয়তাে তিনি ভুলে যেতেন—প্রকৃতির কাছে একটি

ভাইকে নিয়ে আনন্দে সে কত না খেলেছে ! পােস্টমাস্টারের কপায় সে জেগে উঠেছে বুঝেছে যে সেও মানুষ।

– পাখীর করুণ অভিযােগ তাঁর মনেও অভিযোেগ জাগিয়ে তুলতাে—এই সময়ে কাছে একটি কেহ নিতান্ত আপনার লােক থাকিত—হৃদয়ের সহিত একান্তসংলগ্ন একটি স্নেহপলি মানবমতি। প্রতি তাঁকে যেন টেনে নিয়ে চলছিল এক বিশেষ দিকে। পাখীর কমণ ঘরে, গলব-মম’রে তিনি নিজ চিত্তেরই প্রকাশ দেখলেন। প্রতি যেন মানব,তি ধারণ করে তর্জনী নির্দেশে তাঁকে পথ দেখিয়ে দিচ্ছে। ছুটির দিনে প্রায়ই তার মনে প্রকৃতির বাণী এসে পৌছায়।

একতি, বিশেষ করে ছুটির দিনে তাঁর মনকে ঘরের দিকে ফিরিয়ে দেয়। তাই অবসর সময় তিনি নতুন কাজ খুজে নিলেন—রতনকে একটু একটু করে পড়ালেন। কিছুদিনের মধ্যে যুক্তাক্ষরও আয়ত্ত করে নিল রতন।

বর্ষাকালে গােস্টমাস্টার অসুস্থ হয়ে পড়লেন। রােগ তাঁর চেতন মনকে আচ্ছন্ন করে ফেলেছিল। তাই তাঁর অবচেতন মনে যে কথাগুলাে ছিল তা আত্মপ্রকাশ কলা। তিনি যে বদলির দরখাস্ত করেছিলেন এবং তা না-মঞ্জর হয়েছে সে কথা তিনি পবে প্রকাশ করেন নি। চাকরী ছেড়ে যাবার কথাও তাঁর মনে আসেনি। প্রকতির প্রভাব, বক্ষর মম’র ধনি, আবার পাখীর করণ অভিযােগ তাঁকে ঘর মুখাে করে তুলেছিল রােগ। তাঁকে শেষ সিদ্ধান্তেই চাকুরী ছেড়েই তিনি চলে যাবেন, আর বানে ফিরবে না।

সঙ্গে যাবার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছিল রতন। এই আকাক্ষা নিতান্ত অবাভাবিক মনে হয়েছিল তাঁর। তিনি হেসেছিলেন কথাটা শুনে, বলেছিলেন, সে কী করে হবে। বাড়ী যাবার তাড়ায় তখন তিনি আবেগহীন। নৌকায় উঠে কিন্তু তাঁর আবেগ জেগে উঠেছিল, মনে পড়ছিল বালিকার করুণ মুখখানা। মানুষের মনোভাবের কত না পরিবর্তন ঘটে। মানুষ নিজেকে চিনতে পারে না-পােস্টমাস্টারও নিজেকে চিনতে পারেন নি এখানে।

পোস্টমাস্টার গল্পের রতনের চরিত্র বিশ্লেষণ

রতন বারাে-তেরাে বৎসরের অনাথিনী বালিকা। পােস্টমাস্টারের যাবতীয় কাজ করে দেয়; ঠিক সময়ে পায় দু’বেলা আহার। তার মন ছিল সম্পূর্ণ মত, দাবীও শেব কিছ, তার ছিল না। লেখক জানিয়েছেন, ‘বিবাহের বিশেষ সম্ভাবনা দেখা বর ন্য। লেখকের একথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার কোনাে প্রয়ােজন ছিল না। বনের মনে একথা কোনদিনও জাগে নি।

কারণ প্রকৃতি বহিরাগত পােস্টমাস্টারের ওপর প্রভাব বিস্তার করে তাঁকে চাকুরী ছেড়ে গহে কিরে বাবার সিদ্ধান্তে পৌঁছে দিয়েছিল বটে, কিন্তু গ্রামের মেয়ে রতনের ওপর তেমন কোনাে প্রভাব ফেলতে পারেনি। রতনের মনকে জাগিয়ে তুলেছিলেন পোস্টমাস্টার বরং। তিনি তাকে পড়াতে আরম্ভ করলেন। তার জীবনের কাহিনী শুনতে চাইলেন এবং নিজের বাড়ীর কথা তাকে শােনালেন। কাজের মেয়ে উন্নীত হরেছে বঢ়ের মেরেতে। যে আত্মসচেতন ছিলনা সে তার বাল্যকালের কথা স্মরণ রেছে : তারও মা ছিল, পিতার সঙ্গে বিশেষ স্নেহ-প্রীতির সম্পর্ক ছিল—ছােট ভাইকে নিয়ে আনন্দে সে কত না খেলেছে ! পােস্টমাস্টারের কপায় সে জেগে উঠেছে বুঝেছে যে সেও মানুষ।

পােস্টমাস্টারও তাঁর গহের কথা বহুদিন শুনিয়েছে রতনকে। রতন যেমন মানুষ হয়ে ওঠেনি, হয়েছে পােস্টমাস্টারের আত্মীয়—তাঁর মা তাঁরও মা, তার দিদি তারও দিদি, তাঁর ছােট ভাইও তার দাদা। পপাস্টমাস্টার মুখােমুখী হয়েছিলেন প্রকৃতির, রতনও একেবারে পােস্টমাস্টারের মুখােমুখি হয়েছে।

তারপরেই পােস্টমাস্টার হলেন অসুস্থ। রােগশয্যায় শাঁখাপরা কোমল হাতের সেবা পেতে ইচ্ছা করে পােস্টমাস্টারের মনেও সেই ইচ্ছে জাগ্রত হয়ে উঠেছিল, রতন তাে আর নিছক কাজের মেয়ে নয়, পােস্টমাস্টারের আত্মীয় জনের মধ্য একজন বলে সে নিজেকে মনে করেছিল। পােস্টমাস্টারের ইচ্ছা আপণ রইলাে না। বালিকা রতন আর বালিকা রইলাে না—সেই মুহূর্তেই সে জননীর পদ অধিকার করে বসলাে। বৈদ্য ডাকল, ওষধ খাওয়াল এবং সারারাত্রি শিয়রে বসে কাটাল। মনে মনে সে দাদাবাবর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় হয়ে উঠলাে।

রােগ-শয্যা থেকে উঠে পােস্টমাস্টার জানালেন যে, তিনি বাড়ী চলে যাবেন, আর ফিরবেন না। রতনের মনে প্রচণ্ড আঘাত লাগলাে। যিনি আত্মীয় হয়ে উঠেছিলেন তিনি চিরতরে চলে যাবেন। সে নিজেকে দাদাবাবর আত্মীয় মনে করে, তারই জোরে সে হঠাৎ জিজ্ঞাসা করে বসলাে, আমাকে তােমাদের বাড়ি নিয়ে যাবে? তার আশা ছিল যে, দাদাবাব, তাকে আত্মীয় রূপেই গ্রহণ করবেন। কিন্তু পােস্টমাস্টার জানালেন যে, সে কী করে হবে। স্বর্গলােক থেকে পতন হলাে রতনের। বুঝল যে, দাদাবাব, তাকে কাজের লােক ছাড়া অন্য কিছু মনে করেন না। সে কী করে হবে’ কথাটা বালিকাকে পাগল করে তুললাে। পােস্টমাস্টার বন আর নাই বুঝন—বালিকা এখন আর তুচ্ছ কাজের মেয়ে নয়। সে পেপাস্টমাস্টারের দেওয়া অর্থ গ্রহণে অস্বীকার করলাে, পরবর্তী পােস্টমাস্টারের কাজে বহাল হতেও আর চাইল । বালিকা একেবারে প্রৌঢ়ত্বে পৌছে গেছে—তার মন জেগে উঠেছে পর্ণ দীপ্তিতে তার জন্যে কাউকে আর ভাবতে হবে না।

সে জেগে ওঠার বিপদ এখানেই। যে-কোনাে একজন পােস্টমাস্টারের কাছে আর সে থাকতে পারে না। পােস্ট-অফিসটা প্রদক্ষিণ করে সে কেবলই অশ্রু বিসর্জন করতে লাগলাে। এই পোেস্ট-অফিস যেন তার কাছে মন্দির—ওখানকার দেবতা তার মনকে জাগিয়ে দিয়ে গেছে কিন্তু সে জাগরণ দেবতার দৃষ্টি এড়িয়ে গেছে। অতএব, এই ছােট গল্পে একটি বালিকার চিত্ত-জাগরণের চিত্র বড় সুন্দর করে একেছেন রবীন্দ্রনাথ।

পোস্টমাস্টার ছোট গল্পের সারমর্ম, পোস্টমাস্টার গল্পের বিষয়বস্তু, পোস্টমাস্টার গল্পের বিষয়বস্তু

বাংলা ছোটগল্পের পথিকৃৎ ও শ্রেষ্ঠ শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর(১৮৬১-১৯৪১)। আপাততুচ্ছ জীবনের ভেতরে আনন্দ-বেদনার যে গোপনপ্রবাহ তাকে অসামান্য অন্তর্দৃষ্টি ও কাব্য সৌন্দর্যে ফুটিয়ে তুলেছেন রবীন্দ্রনাথ তাঁর গল্পগুলোতে।

পোস্ট্ মাস্টার গল্পটি রবীন্দ্রনাথের একটি বিখ্যাত গল্প। রবীন্দ্রনাথের কুঠিবাড়ির একতলাতে যখন পোস্টঅফিস ছিল এবং তিনি প্রতিদিন দেখতেন পোস্টমাস্টারকে। সেই সময়ে একদিন দুপুরে তিনত লিখেছিলেন পোস্টমাস্টার গল্পটি।

কলকাতা থেকে অজপাড়া গাঁয়ের পোস্টঅফিসে কাজ করতে আসা পোস্টমাস্টারবাবুর প্রতি এক অসহায় অনাথ গ্রাম্য-বালিকার সহজ সরল অথচ গভীর প্রাণের টান এবং পোস্টমাস্টারের কাজ ছেড়ে চলে যাবার সময় বালিকার মনের অব্যক্ত আর্তি রবীন্দ্রনাথের এ গল্পকে এক মর্মস্পর্শী ও সকরুণ কাব্যধর্মীতায় মণ্ডিত করেছে।এখানে চরিত্র বলতে দুটি – পোস্টমাস্টার আর রতন। খানিকটা বর্ণনা ও খানিকটা কথোপকথনের রীতিতে গল্পটি নির্মিত। গণ্ডগ্রামে শহুরে পোস্টমাস্টারবাবুর একাকিত্ব দূর করেছে রতন:তাকে সঙ্গ দিয়ে, পরিচর্যা দিয়ে,গ্রাম্য-বালিকার স্বাভাবিক সারল্যে তাকে বড়ো আপন করে নিয়েছে যেন রতন।

পোস্টমাস্টার রতনকে তার বাড়ির কথা,নিকটজনের কথা শুনিয়েছে, লেখাপড়া শিখিয়েছে তাকে।অতঃপর পোস্টমাস্টারবাবু অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে দিনরাত সেবা-শুশ্রুষা করে ভালো করে তুলেছে রতন।এই পর্যন্ত দুই বিপ্রতীপ পুরুষ ও নারীর এক আন্তরিক সম্পর্কের গল্প।কিন্তু তারপরই অকস্মাৎ যেন তার ছিঁড়ে যায়,বেসুরো হয়ে যায় সবকিছু।পোস্টমাস্টার পাড়াগাঁ ছেড়ে শহরে ফিরতে উদ্গ্রীব, বদলির দরখাস্ত পাঠান,দরখাস্ত নাকচ হলে চাকরি ছেড় ফিরে যাবার উদ্যোগ নেন নিজেই।রতনকে একথা জানালে সে হতবাক হয়ে যায়।পোস্টমাস্টারকে সে বলে তাকে সঙ্গে নিয়ে যেতে।

‘সে কি করে হবে’ -পোস্টমাস্টারবাবুর এই সকৌতুক উত্তর রতনের স্বপ্নে ও জাগরণে ঘুরপাক খেতে থাকে।যাবার সময় পোস্টমাস্টার রতনকে আশ্বস্ত করেন যে- নতুন পোস্টমাস্টারকে তিনি রতনের ব্যাপারে বলে যাবেন।নিজের পথখরচ বাদে বেতনের সব টাকাটা তিনি রতনকে দিতে চান।রতন পোস্টমাস্টারের পায়ে ধরে মনের যন্ত্রণাকে ঢাকতেচায়-‘দাদাবাবু, তোমার দুটি পায়ে পড়ি, তোমার দুটি পায়ে পড়ি,আমাকে কিছু দিতে হবেনা,তোমার দুটি পায়ে পড়ি, আমার জন্য কাউকে ভাবতে হবে না’।

নৌকায় উঠে রতনের কথা ভেবে তার করুণ মুখচ্ছবি মনে করে পোস্টমাস্টার বিচলিত হলেও ততক্ষণে নৌকা ঢের এগিয়েছে।রতন কিন্তু পোস্টঅফিসের আশেপাশে তখনো ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছিল যদি দাদাবাবু ফিরে আসে।

স্বল্প পরিসরে দুটি নর-নারীর নিভৃত মনের সংযোগ ও ঘটনাচক্রে তার করুণ পরিসমাপ্তি অতি সহজ ও সাবলীল ভঙ্গিতে তুলে ধরেছেন রবীন্দ্রনাথ এ গল্পে।

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

পোস্টমাস্টার গল্পের প্রশ্ন উত্তর, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্যগ্রন্থ pdf

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতাঞ্জলি

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতাঞ্জলি (মূল বাংলা পাণ্ডুলিপি থেকে লেখকের গদ্য অনুবাদের সংগ্রহ)

পোস্টমাস্টার গল্পের প্রশ্ন উত্তর

” পোস্টমাস্টার ” কীভাবে তাঁর অবসর কাটাতেন ?
উত্তর:- পোস্টমাস্টার কবিতা লিখতেন , বাড়ীর আত্মীয় স্বজনদের কথা ভাবতেন , রতনের সঙ্গে গল্প করতেন । শেষ দিকে রতনকে পড়াতেও শুরু করেন ।


আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।