প্রতিদান কবিতা, প্রতিদান কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

প্রতিদান কবিতা

আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা, আমি বাঁধি তার ঘর,

আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর।

যে মোরে করিল পথের বিবাগী, —

পথে পথে আমি ফিরি তার লাগি।

দীঘল রজনী তার তরে জাগি ঘুম যে হরেছে মোর;

আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা আমি বাঁধি তার ঘর।

আমার এ কুল ভাঙিয়াছে যেবা আমি তার কুল বাঁধি,

যে গেছে বুকেতে আঘাত হানিয়া তার লাগি আমি কাঁদি;

সে মোরে দিয়েছে বিষে ভরা বাণ,

আমি দেই তারে বুকভরা গান;

কাঁটা পেয়ে তারে ফুল করি দান সারাটি জনম ভর,

আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর।

মোর বুকে যেবা কবর বেঁধেছে আমি তার বুক ভরি,

রঙিন ফুলের সোহাগ-জড়ান ফুল-মালঞ্চ ধরি।

যে মুখে সে কহে নিঠুরিয়া বাণী,

আমি লয়ে সখি, তারি মুখখানি,

কত ঠাঁই হতে কত কি যে আনি, সাজাই নিরন্তর,

আপন করিতে কাঁদিয়া বেড়াই যে মোরে করেছে পর।

প্রতিদান কবিতার ব্যাখ্যা

‘প্রতিদান’ কবিতাটি ‘পল্লিকবি’ খ্যাত কবি জসীমউদ্দীনের ‘বালুচর’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে। এই কবিতায় কবির পরার্থপর চেতনার প্রকাশ ঘটেছে। এই কবিতার মধ্য দিয়ে ব্যক্তিস্বার্থ বিসর্জন দিয়ে অন্যের জন্য নিজেকে নিবেদন করার কথা বলা হয়েছে। কারণ পরার্থপরতাই জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য। পরার্থপর মানুষই প্রকৃত সুখী। কবির চিন্তার মধ্য দিয়ে আমরা বুঝতে পারি যে, সমাজ- সংসারে বিদ্যমান হিংসা- বিভেদ, বৈষম্য, প্রতিশোধ আর প্রতিহিংসা দূর করতে হবে। তা হলেই সুন্দর সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে। কারণ মানুষ সহনশীল হলেই সুন্দর পৃথিবী নির্মাণ করা সম্ভব। কবি তাই তাঁর প্রতি অন্যায়, অবিচার ও হিংসা করা ব্যক্তিকে ক্ষমা করে বুকে টেনে নেন। কারণ তিনি সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের পৃথিবী প্রত্যাশা করেন।

প্রতিদান কবিতার বিষয়বস্তু, প্রতিদান কবিতার মূল কথা কি, প্রতিদান কবিতার মূলভাব, প্রতিদান কবিতার মূলভাব কি, প্রতিদান কবিতার সারমর্ম

কবি জসীমউদ্দীন নিজের সাহিত্য ভাণ্ডারকে গ্রামীণ উপমায় যেমন সাজিয়েছেন, তেমনি গ্রামীণ নর-নারীর সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা নিয়ে কাব্য রচনা করেছেন। গ্রামীণ শব্দ, ভাব-ভাষা, উপমা ও তুলনা তার সাহিত্যকে করেছে প্রাণময়। প্রতিদান কবিতাও এর ব্যতিক্রম নয়। কবিতায় বর্ণিত হয়েছে-প্রাপ্তিতে নয়, পরোপকারের মধ্যেই রয়েছে সত্যিকারের সুখ ও মানব জীবনের সার্থকতা। এমনকি যে বা যারা কবির ক্ষতি করেছে, কবি প্রতিদানে তাদের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করতে এগিয়েছেন। নিজের সুখ বিসর্জন দিয়ে তাদের সুখী করতে উদ্যোগী হয়েছেন। ‘প্রতিদান’ কবিতা পড়ার সময় যে দিকগুলো বেশি করে পড়তে হবে তা নিচে তুলে ধরা হলো। কবি কার জন্য কেঁদে বেড়ান এবং কেন, কবিতায় কবির পরার্থপরতা যেভাবে প্রকাশ পেয়েছে, কবি কাকে বুকভরা গান দেন এবং কেন, কবিতায় প্রতিদান কীভাবে প্রকাশ পেয়েছে, আঘাতের বিপরীতে কবি কেন ভালোবাসা দিতে চেয়েছেন, কবিতায় প্রতিদানের মাধ্যমে প্রীতিময় পৃথিবী যেভাবে সৃষ্টি করা যেতে পারে ইত্যাদি।

  • ‘প্রতিদান’ কবিতাটি ‘বালুচর’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে।
  • ‘প্রতিদান’ কবিতাটির উপজীব্য বিষয় পরার্থপরতা।
  • কবি মহৎ, উদার, ক্ষমাশীল হৃদয়ের মানুষ, তাই তিনি শত্রুকেও আপন করে নেন।
  • ‘প্রতিদান’ কবিতায় প্রতিদানে ঘর বাঁধা, দীঘল রজনী জাগা, বুকভরা গান দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
  • কবি নিঠুর বাণী উচ্চারণকারীর মুখখানিও ভালোবাসেন।
  • যে ব্যক্তি কবিকে কষ্ট দেয় তিনি নিরন্তর তাকে আপন করতে কেঁদে বেড়ান।
  • কবি অনিষ্টকারীর উপকার করার মধ্য দিয়ে পৃথিবীকে সুন্দর করতে চান।

প্রতিদান কবিতার চরণ সংখ্যা কতটি

প্রতিদান কবিতায় কবিতায় মোট ১৮টি চরণ আছে ।

প্রতিদান কবিতার MCQ, প্রতিদান কবিতার বহুনির্বাচনি প্রশ্ন, প্রতিদান কবিতার বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর, প্রতিদান কবিতার MCQ প্রশ্ন ও উত্তর

‘প্রতিদান’ কবিতায় কবি কাঁটা পেয়ে কী দান করেছেন?

ক. ফুল খ. ঘৃণা গ. বাণ ঘ. ঘর

সঠিক উত্তর : ক – ফুল

‘আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা আমি বাঁধি তার ঘর’—এ পঙ্ক্তিতে কী বোঝানো হয়েছে?

ক. পরোপকার খ. আত্মগ্লানি গ. সর্বংসহা মনোভাব ঘ. কৃতজ্ঞতাবোধ

সঠিক উত্তর : ক – পরোপকার

যে কবির ঘর ভাঙে, কবি তার ঘর কী করেন?

ক. পুড়িয়ে দেন খ. ভেঙে দেন

গ. বেঁধে দেন ঘ. নিশ্চিহ্ন করেন

সঠিক উত্তর : গ – বেঁধে দেন

কবি কেমন ফুলের মালঞ্চ দেওয়ার কথা বলেছেন?

ক. গোলাপ ফুলের

খ. রজনীগন্ধার

গ. সাদা ফুলের

ঘ. রঙিন ফুলের

সঠিক উত্তর : ঘ – রঙিন ফুলের

‘প্রতিদান’ কবিতায় কবি কার জন্য পথে পথে ফেরেন?

ক. যে কবির ঘর ভেঙেছে

খ. যে কবিকে পর করেছে

গ. যে কবিকে পথের বিবাগী করেছে

ঘ. যে কবিকে আঘাত করেছে

সঠিক উত্তর : গ – যে কবিকে পথের বিবাগী করেছে

কবিকে কেউ বিষ-ভরা বাণ দিলে কবি তাকে কী প্রতিদান দেন?

ক. উদার স্নেহ

খ. বুকভরা গান

গ. বুকভরা বেদনা

ঘ. বুকভরা গানের সুর

সঠিক উত্তর : খ – বুকভরা গান

কবি কাকে আপন করার জন্য কেঁদে বেড়ান?

ক. কবি প্রিয়াকে

খ. যে কবিকে পর করেছে

গ. যে কবিকে ভালোবেসেছে

ঘ. যে কবির মন ভেঙেছে

সঠিক উত্তর : খ – যে কবিকে পর করেছে

‘প্রতিদান’ কবিতা মোট কত চরণের?

ক. ১৬ খ. ১৭ গ. ১৮ ঘ. ১৯

সঠিক উত্তর : গ – ১৮

‘প্রতিদান’ কবিতায় কোন ফুলের নাম উল্লেখ আছে?

ক. হলুদ ফুল খ. সাদা ফুল গ. লাল ফুল ঘ. রঙিন ফুল

সঠিক উত্তর : ঘ – রঙিন ফুল

‘প্রতিদান’ কবিতায় কবি দীর্ঘ রাতকে কী বলেছেন?

ক. বড় রাত খ. দীঘল রাত গ. দীঘল প্রহর ঘ. শূন্য প্রহর

সঠিক উত্তর : খ – দীঘল রাত

‘মালঞ্চ’ শব্দের অর্থ কী?

ক. মালি

খ. ফুলের বাগান

গ. গোলাপ ফুলের বাগান

ঘ. রজনীগন্ধা ফুলের বাগান

সঠিক উত্তর : খ – ফুলের বাগান

‘নিরন্তর’ শব্দের অর্থ কী?

ক. সব সময় খ. সময় গ. নিয়ত ঘ. নিরিবিলি

সঠিক উত্তর : গ – নিয়ত

‘প্রতিদান’ কবিতাটি জসীমউদ্দীনের কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে?

ক. ধানখেত খ. রঙিলা নায়ের মাঝি গ. বালুচর ঘ. সোজন বাদিয়ার ঘাট

সঠিক উত্তর : গ – বালুচর

কবি অনিষ্টকারীকে প্রতিদানে কী করেছেন?

ক. ঘৃণা খ. অপমান গ. উপকার ঘ. আপন

সঠিক উত্তর : গ – উপকার

‘সাজাই নিরন্তর’ বলতে কী বোঝায়?

ক. প্রকাশ করা খ. সৃষ্টি করা গ. নতুনের আগমন ঘ. ধ্বংস করা

সঠিক উত্তর : খ – সৃষ্টি করা

কবি জসীমউদ্দীন ‘ঘুম হরণ’ বলতে কী বুঝিয়েছেন?

ক. ঘুম কেড়ে নেওয়া খ. নিঘুর্ম রাত কাটানো গ. ঘুম না আসা ঘ. ঘুমে কাতর

সঠিক উত্তর : খ – নিঘুর্ম রাত কাটানো

প্রতিদান কবিতার গুরুত্বপূর্ণ অতি সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

‘প্রতিদান’ কবিতার রচয়িতা কে ?

উত্তর: ‘প্রতিদান ’ কবিতার রচয়িতা জসীমউদ্দীন।

‘প্রতিদান’ কবিতায় স্তবক কয়টি ?

উত্তর: ‘প্রতিদান ’ কবিতায় স্তবক রয়েছে তিনটি।

‘বালুচর’ কাব্যগ্রন্থটি কার লেখা ?

উত্তর: ‘বালুচর ’ কাব্যগ্রন্থটি জসীমউদ্দীনের লেখা।

‘প্রতিদান’ কবিতায় কার ঘর ভাঙার কথা বলা হয়েছে ?

উত্তর: ‘প্রতিদান’ কবিতায় কবির ঘর ভাঙার কথা বলা হয়েছে।

কবিকে যে পথের বিরাগী করেছে কবি তার জন্য কী

উত্তর: যে কবিকে পথের বিরাগী করেছে কবি তার জন্য পথে পথে ঘোরেন।

কবি কাকে আপন করার জন্য কেঁদে বেড়ান ?

উত্তর: কবিকে যে পর করেছে তাকে আপন করার জন্য কেঁদে বেড়ান।

‘প্রতিদান’ কবিতা অনুসারে কে পথের বিরাগী ?

উত্তর : ‘প্রতিদান’ কবিতা অনুসারে কবি পথের বিরাগী।

কবি কার মুখ নিরন্তর সাজান ?

উত্তর: যে নিঠুরিয়া বাণী উচ্চারণ করে কবি তার মুখ নিরন্তর

‘প্রতিদান’ কবিতায় কোন ধরনের ফুলের উল্লেখ আছে ?

উত্তর: ‘প্রতিদান’ কবিতায় রঙিন ফুলের উল্লেখ আছে।

‘প্রতিদান’ কবিতায় কবির কোথায় আঘাত করার কথা বলা হয়েছে ?

উত্তর: ‘প্রতিদান’ কবিতায় কবির বুকে আঘাত করার কথা বলা হয়েছে।

‘বাণ’ শব্দের অর্থ কী ?

উত্তর: ‘বাণ ‘ শব্দের অর্থ তীর বা শর।

‘মালঞ’ শব্দের অর্থ কী ?

উত্তর : ‘মালঞ ’ শব্দের অর্থ হলো ফুলের বাগান।

‘বিরাগী’ শব্দের অর্থ কী ?

উত্তর: ‘ বিরাগী ’ শব্দের অর্থ উদাসীন।

‘বাণী’ শব্দের অর্থ কী ?

উত্তর: ‘বাণী ‘ শব্দের অর্থ হলো ভাষণ বা কথা।

রজনী’ শব্দের অর্থ কী ?

উত্তর :’ রজনী ‘ শব্দের অর্থ হলো রাত।

প্রতিদান কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন ও উত্তর, প্রতিদান কবিতার অনুধাবন প্রশ্ন

“আমার এ ঘর ভাঙিয়াছে যেবা, আমি বাঁধি তার ঘর” চরণটি ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : কবির ঘর যে ভেঙেছে, কবি তার ঘর তৈরি করে দেন আলোচ্য চরণের মাধ্যমে এটিই প্রকাশ পেয়েছে। আমাদের চারপাশে এমন অনেক মানুষ আছে যারা অন্যের ক্ষতিসাধন করতে সর্বদা ব্যাপৃত থাকে। তারা কখনো অন্যের ভালো সহ্য করতে পারে না। তারা অন্যের অপকার করতে গিয়ে মূলত নিজেরই ক্ষতি করে। এমন ক্ষতিকর মানুষ কবির ঘর ভাঙে। এতে কবির অপকার হলেও তিনি মনে কোনো ক্ষোভ রাখেন না। বরং কবির ঘর যে ভেঙেছে, কবি তার ঘর প্রস্তুত করে দেন। এর মাধ্যমে কবির উদার মহানুভবতার পরিচয় পাওয়া যায়।

কবির পথে পথে ঘুরে বেড়ানোর কারণ ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : কবিকে যে পথের বিরাগী করেছে, কবি তাকে আপন করার জন্য পথে পথে ঘোরেন। সব মানুষ সমান নয়। কিছু মানুষ আছে যারা ভীষণভাবে আত্মকেন্দ্রিক। তারা অন্যকে গুরুত্ব দিতে চায় না। কেবল নিজেরা ভোগ- বিলাসে আসক্ত থাকে। এমনই এক আত্মকেন্দ্রিক মানুষ কবিকে পথের বিরাগী করে। এতে কবির দুঃখ নেই। তাই কবিকে যে পথের বিরাগী করেছে কবি তার জন্যই পথে পথে ঘুরে বেড়ান। কারণ কবি তাকে আপন করতে চান।

“দীঘল রজনী তার তরে জাগি ঘুম যে হরেছে মোর।”-ব্যাখ্যা কর। অথবা, কবি কার জন্য জেগে থাকেন? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : কবির ঘুম যে কেড়ে নিয়েছে কবি তার জন্য জেগে থাকেন বহুনির্বাচনি অংশ প্রিয় শিক্ষার্থী, এ অংশে তোমাদের সেরা প্রস্তুতির জন্য কবি একজন উদার, মহৎ ও সুন্দর হৃদয়ের মানুষ। পরার্থপরতা তাঁর অন্যতম প্রধান গুণ। সব মানুষের জন্যই তাঁর প্রাণ কাদে। তাই তো দীর্ঘ রাত কবি জেগে থাকেন। তিনি তার জন্য জেগে থাকেন, যে ব্যক্তি তার ঘুম হরণ করেছে। অর্থাৎ কষ্ট পেলেও কবি বুক ভরা ভালোবাসা দিয়ে তাকে আগলে রাখেন, যে কবির ক্ষতি করেছে। তাই কবি বলেছেন, দীঘল রজনী তার তরে জাগি ঘুম যে হরেছে মোর। ‘

কবি কাকে বুকভরা গান দেন ? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : যে কবিকে বিষে ভরা বাণ দেয় কবি তাকে বুকভরা গান দেন। পৃথিবীর সব মানুষ সমান চেতনার অধিকারী নয়। কিছু মানুষ আছে যাদের আচরণ বা কর্মকান্ড অন্যের বুকে বিষাক্ত বাণের মতো বিঁধে। তারা কথা বা আচরণ দিয়ে জর্জরিত করে অন্যের জীবন। কবি এমন মানুষদের কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, যারা কথা বা কাজে নির্মমভাবে জর্জরিত করে কবি তাদের জন্য রাখেন বুক ভরা গান। অর্থাৎ কবিকে যারা বিষে ভরা বাণ দেয় কবি তাদের জন্য বুক উজাড় করে গান দেন।

কবি নিরন্তর কী সাজান ? ব্যাখ্যা কর।

উত্তর : যার মুখ দিয়ে নিষ্ঠুর বাণী উচ্চারিত হয় কবি তার মুখখানি নিরন্তর সাজান। সমাজে এমন একশ্রেণির মানুষ আছে যাদের আচরণ ও ব্যবহার অন্যকে যন্ত্রণা দেয়। তাদের নিষ্ঠুর বাণী অন্যের হৃদয়ে কাঁটার মতো আঘাত করে। কবি এমন মানুষের কথা বলতে গিয়ে বলেছেন, যে ব্যক্তি কবিকে এমন নিষ্ঠুর বাণী শোনায় কবি তাকেও ভালোবেসে আপন করে নেন। তার মুখখানি বিভিন্ন দিক থেকে আনা সুমিষ্ট বচনে নিরন্তর সাজান। তাই বলা যায় যে, কবি তার মুখখানি নিরন্তর সাজান যে ব্যক্তি মুখ দিয়ে নিষ্ঠুর বাণী উচ্চারণ করে।

প্রতিদান কবিতার সৃজনশীল, প্রতিদান কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

অনুজের হস্ত ধরিয়া নিকটে বসাইয়া হাসান বলিতে লাগিলেন, ভাই স্থির হও। আমি আমার বিষদাতাকে চিনি। … যাহা হউক ভাই, তাহার নাম আমি কখনােই মুখে আনিব না। তাহার প্রতি আমার রাগ, হিংসাদ্বেষ কিছুই নাই। ঈশ্বরের নামে শপথ করিয়া বলিতেছি, আমার বিষদাতার মুক্তির জন্য ঈশ্বরের নিকট প্রার্থনা করিব।

কবি কার কূল বাঁধেন?

উত্তরঃ যে ব্যক্তি কবির কূল ভেঙেছে কবি সেই ব্যক্তির কূল বাঁধেন।

“কাঁটা পেয়ে তারে ফুল করি দান সারাটি জনমভর”- চরণটি ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ আলােচ্য উক্তিটির মাধ্যমে কবির উদার হৃদয়ের পরিচয় পাওয়া যায় ।

কবি প্রশ্নোক্ত উক্তিটির মধ্য দিয়ে বলতে চেয়েছেন, সারা জীবন যারা কবিকে দুঃখ-যন্ত্রণা দিয়েছে তিনি সেসব ভুলে তাদের ভালােবাসা দান করেন। কবি মনে করেন এর মাধ্যমে পৃথিবী সুন্দর হবে। কষ্ট পেয়ে প্রতিশােধ নেওয়ার থেকে প্রতিদানে। ভালােবাসা দেওয়াই উত্তম। কবি এ কাজটিই করেছেন। তাই তিনি বলেছেন, কাটা পেয়ে তাদের ফুল দান করেন সারাটি জীবনভর।

সারকথা : কবি কারও কাছ থেকে আঘাত পেলেও তাকে সারা জীবন ভালােবাসেন।

উদ্দীপকের হাসানের কর্মকাণ্ডে ‘প্রতিদান’ কবিতার কবির কোন গুণাবলি প্রকাশ পেয়েছে?

উত্তরঃ উদ্দীপকের হাসানের কর্মকাণ্ডে ‘প্রতিদান’ কবিতার কবির মানুষের প্রতি সহমর্মিতা দেখানাের গুণাবলি প্রকাশ পেয়েছে।

পৃথিবীর সব মানুষই একই চেতনার অধিকারী নয়। ভিন্ন চেতনার হওয়ায় অনেক সময় মানুষের আচরণ ও কাজে অন্য মানুষ কষ্ট পায় । কষ্ট পাওয়া মানুষ সেসব মানুষকে ক্ষমা করলে, তাদের প্রতি সহমর্মিতা দেখালে সংসারের অশান্তি দূর হয়। উদ্দীপকে দেখা যায়, হাসান মৃত্যুশয্যায় উপনীত। তাঁকে বিষ প্রয়ােগ করা হয়েছে।

তিনি জানতে পেরেছেন কে তাঁর বিষদাতা। তা সত্ত্বেও তিনি বিষদাতার প্রতি ঘৃণার পরিবর্তে সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন। তিনি এও নিশ্চিত করেছেন যে, বিষদাতার প্রতি তার কোনাে রাগ বা হিংসাদ্বেষ নেই। তিনি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন। তিনি ঈশ্বরের নামে শপথ করে বলেছেন, বিষদাতার মুক্তির জন্য প্রার্থনা করবেন ঈশ্বরের কাছে।

প্রতিদান’ কবিতার কবিও তাঁর ওপর অত্যাচারকারী সবাইকে ক্ষমা করেছেন। প্রতিদানে তাদের প্রতি ভালােবাসা ও সহমর্মিতা দেখিয়েছেন। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকের হাসানের কর্মকাণ্ডে ‘প্রতিদান’ কবিতার কবির মানুষের প্রতি সহমর্মিতা দেখানাের গুণাবলি প্রকাশ পেয়েছে।।

সারকথা : উদ্দীপক ও প্রতিদান’ কবিতায় নিষ্ঠুর মানুষের প্রতি সহমর্মিতা ও ভালােবাসা প্রকাশ পেয়েছে।

“উদ্দীপকের বিষদাতা প্রতিদান’ কবিতার নিষ্ঠুর মানুষদের প্রতিনিধি।”- মন্তব্যটির সপক্ষে মতামত দাও।

উত্তরঃ “উদ্দীপকের বিষদাতা প্রতিদান’ কবিতার নিষ্ঠুর মানুষদের প্রতিনিধি।” মন্তব্যটির যথার্থ ।

ভালাে ও মন্দ উভয় বৈশিষ্ট্যের মানুষই এ সংসারে বিদ্যমান। মন্দ মানুষ সব সময় অন্যের কষ্টের কারণ হয়। আর ভালাে মানুষ সহমর্মিতা, উদারতা, ক্ষমাশীলতা ও সুচেতনা অন্যের মধ্যে ছড়িয়ে দেন; অন্যের কল্যাণে নিবেদিত থাকেন।

উদ্দীপকের বিষদাতা হাসানকে বিষদান করে, তবুও হাসান তার প্রতি সহমর্মিতা দেখান। তাকে ক্ষমা করে দেন। এমনকি তার মুক্তির জন্যও ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করার প্রতিশ্রুতি দেন। এমন একজন উদার ও মহৎ মানুষ বিষদাতার মতাে নিষ্ঠুর মানুষের খারাপ আচরণের শিকার হন।

এমনই নিষ্ঠুর মানসিকতা আমরা প্রতিদান’ কবিতার মধ্যেও দেখতে পাই। সেখানে এক শ্রেণির মানুষের কথা বলা হয়েছে যারা কবির ঘর ভেঙেছে, কবির বুকে আঘাত করেছে, কবিকে দিয়েছে বিষে ভরা বাণ, নিষ্ঠুর বাক্যে কবিকে করেছে জর্জরিত।

উদ্দীপক ও প্রতিদান’ কবিতা উভয় জায়গায় নিষ্ঠুর ও অমানবিক মানুষের কথা ফুটে উঠেছে, যারা তাদের কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে অন্যকে কষ্ট দিয়েছে। অন্যায়ভাবে অন্যকে আঘাত করেছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের বিষদাতা প্রতিদান’ কবিতার নিষ্ঠুর মানুষদের যােগ্য প্রতিনিধি।

সারকথা : প্রতিদান’ কবিতায় কবির সঙ্গে নিষ্ঠুর আচরণ করা মানুষেরা উদ্দীপকের বিষদাতার মতােই হীন চরিত্রের মানুষ। তারা নিষ্ঠুর আচরণ করার দিক দিয়ে একে অন্যের প্রতিনিধি।

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

হে সূর্য!
তুমি আমাদের উত্তাপ দিও
শুনেছি তুমি এক জ্বলন্ত অগ্নিপিণ্ড
তােমার কাছে উত্তাপ পেয়ে পেয়ে।
একদিন হয়তাে আমরা প্রত্যেকেই
এক একটা জ্বলন্ত অগ্নিপিণ্ডে পরিণত হব!

তখন হয়তাে গরম কাপড়ে ঢেকে দিতে পারব রাস্তার ধারের ঐ উলঙ্গ ছেলেটাকে।

কে সুন্দর ও নিরাপদ পৃথিবী নির্মাণ করতে পারে?

উত্তরঃ ভালােবাসাপূর্ণ মানুষ সুন্দর ও নিরাপদ পৃথিবী নির্মাণ করতে পারে ।

কবি কার বুক ভরিয়ে দিতে চেয়েছেন? ব্যাখ্যা কর।

উত্তরঃ যে কবির বুকে কবর বেঁধেছে কবি তার বুক রঙিন ফুলের সােহাগ জড়ানাে ফুল মাল ভরিয়ে দিতে চেয়েছেন।

আমাদের সমাজে পাষাণ হৃদয়ের মানুষের অভাব নেই। এরা সবসময় অন্যের ক্ষতি করার চেষ্টা করে। এদের অত্যাচার ও নিষ্ঠুরতায় মানুষের জীবন অতিষ্ঠ। কবি এমন মানুষদেরই স্নেহ-মমতা দিয়ে বুক ভরিয়ে দিতে চেয়েছেন। কবি মনে করেন, যারা তাঁর বুকে কবরের মতাে শূন্যতা সৃষ্টি করবে, কবি তাদের হৃদয় স্নেহ-ভালােবাসায় পূর্ণ করবেন । |

সারকথা : সমাজের যে ব্যক্তি কবির বুক ভেঙে দিয়েছে কবি তার বুকই ভালােবাসায় ভরিয়ে দিতে চেয়েছেন।

উদ্দীপকের প্রার্থীর চেতনা কোন দিক দিয়ে প্রতিদান’ কবিতার কবির চেতনাকে ধারণ করেছে ?

উত্তরঃ উদ্দীপকের প্রার্থীর চেতনা অন্যকে সাহায্য করার মানসিকতার দিক দিয়ে প্রতিদান’ কবিতার কবির চেতনাকে ধারণা করেছে।

একজন প্রকৃত মানুষের বৈশিষ্ট্য হলাে বিপদগ্রস্ত মানুষকে নিঃস্বার্থভাবে সাহায্য করা। কারণ মানুষের কল্যাণের মধ্যেই নিহিত থাকে মানবজীবনের সার্থকতা। আমাদের উচিত বিপন্ন মানুষকে সবসময় সাহায্য করা।

উদ্দীপকের কবিতাংশে একজন প্রার্থী সূর্যের কাছে উত্তাপ প্রার্থনা করেছে। তার মতে, সূর্যের কাছ থেকে উত্তাপ পেয়ে পেয়ে একদিন হয়তাে প্রত্যেকেই এক-একটি জ্বলন্ত অগ্নিপিণ্ডে পরিণত হবে। তখন প্রার্থী রাস্তার ধারের শীতার্ত উলঙ্গ ছেলেটিকে দিতে পারবে উত্তাপ। হয়তাে তাদের শরীর ঢেকে দিতে পারবে গরম কাপড়ে।

প্রার্থীর এই অন্যকে সাহায্য করার চেতনা প্রতিদান কবিতার কবির চেতনারই প্রতিরূপ। কারণ কবি বারবার নিজে কষ্ট পেলেও অন্যকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। যারা তার ঘর ভেঙেছে, তাকে কষ্ট দিয়েছে, তিনি তাদের জন্যই নিবেদিতপ্রাণ এবং তাদেরই বুকে আগলে রাখতে চেয়েছেন।

তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকের প্রার্থীর চেতনা অন্যকে সাহায্য করার দিক দিয়ে প্রতিদান’ কবিতার কবির চেতনাকে ধারণ করেছে।

সারকথা : উদ্দীপকের প্রার্থী ও ‘প্রতিদান’ কবিতার কবি উভয়েই অন্যকে সাহায্য করার মানসিকতার দিক থেকে একই চেতনা ধারণ করে।

“উদ্দীপকটি আলােচ্য কবিতার খণ্ডাংশমাত্র।”- মন্তব্যটির পক্ষে-বিপক্ষে তােমার মতামত উপস্থাপন কর।

উত্তরঃ “উদ্দীপকটি আলােচ্য কবিতার খণ্ডাংশমাত্র।” – মন্তব্যটি যথার্থ। • মানুষকে সাহায্য করাই প্রকৃত মানুষের ধর্ম। যুগ যুগ ধরে মানুষ একে অন্যকে সাহায্য করে আসছে বলেই পৃথিবী এত সুন্দর।

তাই আমাদের সবারই অন্যকে সাহায্য করার মতাে মানবিক গুণাবলি অর্জন করা উচিত। উদ্দীপকের কবিতাংশে একজন প্রার্থীর কথা বলা হয়েছে, যে সূর্যের কাছে উত্তাপ প্রত্যাশা করে। যাতে সে হয়ে উঠতে পারে একটি জ্বলন্ত অগ্নিপিণ্ড ।

প্রার্থী মনে করে জ্বলন্ত অগ্নিপিণ্ডে পরিণত হলে হয়তাে গরম কাপড়ে ঢেকে দিতে পারবে রাস্তার ধারের ঐ উলঙ্গ ছেলেটিকে। প্রার্থীর এমন মানসিকতা আলােচ্য কবিতার কবির মানসিকতাকে ধারণ করে। কারণ কবিও নিজের স্বার্থ ত্যাগ করে সমাজের মানুষকে বুকে আগলে রেখেছেন।

কিন্তু উদ্দীপকে প্রকাশিত এই বিষয়টি ছাড়াও আলােচ্য কবিতায় প্রকাশ পেয়েছে কবির উদারতা, সহিষ্ণুতা ও ক্ষমাশীলতা যেগুলাে উদ্দীপকে ততটা বিস্তৃতভাবে প্রকাশিত হয়নি। উদ্দীপকে একজন মানবিক মানুষের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পেয়েছে।

অন্যদিকে প্রতিদান’ কবিতায় কবির মানবিকতার পাশাপাশি সমাজের নিষ্ঠুর মানুষের কথাও ফুটে উঠেছে, প্রকাশ পেয়েছে কবির অন্যান্য মহৎ গুণাবলিও যা উদ্দীপকে অনুপস্থিত। তাই বলা যায়, উদ্দীপকটি আলােচ্য কবিতাংশ খণ্ডাংশমাত্র ।।

সারকথা : উদ্দীপকটি প্রতিদান’ কবিতার একটি চেতনাকে ধারণ করে। কবির অন্যান্য গুণ উদ্দীপকের প্রার্থীর মধ্যে অনুপস্থিত। তাই প্রার্থীর = চেতনা কবির একটি বৈশিষ্ট্যকে নির্দেশ করায় বলা যায় যে, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ ।

প্রতিদান কবিতা pdf

জসিমুদ্দিন : জীবন ও সাহিত্য



জসিমুদ্দিন : জীবন ও সাহিত্য

প্রতিদান কবিতা, প্রতিদান কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

কে সুন্দর ও নিরাপদ পৃথিবী নির্মাণ করতে পারে?
উত্তরঃ ভালােবাসাপূর্ণ মানুষ সুন্দর ও নিরাপদ পৃথিবী নির্মাণ করতে পারে ।


আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।