শিল্প কি, শিল্প বিপ্লব কি, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

শিল্প কি, শিল্প কাকে বলে

শিল্প মানেই সৃষ্টি অর্থাৎ শিল্প প্রকৃতির পদত্ত সম্পদ বা কাঁচামাল সংগ্রহ করে মানুষের ব্যবহারের উপযাগী পণ্য সৃষ্টি করে। তাহলে আমরা বলতে পারি, প্রকৃতির পদত্ত সম্পদকে রুপগত পরিবর্তনের মাধ্যমে নতুন উপযোগ সৃষ্টি করাকেই শিল্প বলে। যেমন: তুলা থেকে কাপড় তৈরি।

শিল্পকে উৎপাদনের বাহন বলা হয়। শিল্প পণ্যদ্রব্য ও সেবাকর্ম উৎপাদন ও প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত। শিল্প প্রকৃতির হতে কাঁচামাল সংগ্রহ করে এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে নতুন উপযোগ সৃষ্টি করে। অর্থাৎ শিল্পের প্রকিয়াকরণের মাধ্যমে রুপগত পরিবর্তন হয় যা নতুন পণ্য সৃষ্টি করে। যেমন: কাঠ থেকে চেয়ার, টেবিল, খাট ইত্যাদি আসবাবপত্র তৈরি করা। অর্থাৎ কাঠের রুপগত পরিবর্তন করে নতুন উপযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যেমন: চেয়ার, টেবিল, খাট।

শিল্প কত প্রকার ও কি কি

শিল্প প্রধানত পাঁচ প্রকার:

  1. প্রজনন শিল্প
  2. নিষ্কাশন শিল্প
  3. নির্মাণ শিল্প
  4. উৎপাদন শিল্প
  5. সেবা শিল্প

প্রজনন শিল্প

যে শিল্পে উৎপাদিত সামগ্রী পুনরায় সৃষ্টি বা উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হয় তাকে প্রজনন শিল্প বলে। অর্থাৎ প্রজনন প্রকিয়ায় সম্পদ সৃষ্টি করাকেই প্রজনন শিল্প বলা হয়।

যেমন: হ্যাচারিতে পোনা উৎপাদন, রেশম চাষ, পোল্ট্রি ফার্ম পরিচালনা ইত্যাদি।

নিষ্কাশন শিল্প

প্রকৃতির বিভিন্ন উৎস থেকে সম্পদ আহরণ বা উত্তোলন করাকেই নিষ্কাশন শিল্প বলে। অর্থাৎ নিষ্কাশন শিল্পের মাধ্যমে প্রকৃতি হতে সম্পদ আহরণ করে এদের উপযোগীতা বৃদ্ধি করে ব্যবহার উপযোগী পণ্যে পরিনত করা।

যেমন: খনি থেকে কয়লা আহরণ, ট্রলার দিয়ে মাছ ধরা, বন থেকে মধু সংগ্রহ ইত্যাদি।

নির্মাণ শিল্প

যে শিল্পের মাধ্যমে রাস্তাঘাট, সেতু, বাঁধ ও দালানকোঠা ইত্যাদি নির্মাণ করা হয় তাকে নির্মাণ শিল্প বলা হয়। নির্মাণ শিল্প সমগ্র বিশ্বের অন্যতম সর্বাধিক উদীয়মান শিল্প। যে কোনও বিদ্যমান বিল্ডিং মেরামত করা বা  নির্দিষ্ট কিছু পরিবর্তন করাও নির্মাণ শিল্পের আওতায় আসে।

যেমন: বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা, ডকইয়ার্ডে জাহাজ নির্মাণ ইত্যাদি।

উৎপাদন শিল্প

যে প্রক্রিয়ায় শ্রম ও যন্ত্রের ব্যবহার করে কৃষিজাত পন্য বা প্রাকৃতিক সম্পদ রুপান্তরের মাধ্যমে মানুষের ব্যবহারের উপযোগী পণ্যে পরিণত করা হয়, তাকে উৎপাদন শিল্প বলা হয়।

যেমন: গার্মেন্টস কারখানা, সাবান কারখানা, চিনি উৎপাদন ইত্যাদি।

সেবা শিল্প

যে শিল্পের মাধ্যমে মানুষের সেবা পবিবেশন করা হয় বা সেবা পরিবেশনের কাজে নিয়োজিত থাকে তাকে সেবা শিল্প বলে। এ শিল্পের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষকে প্রয়োজনী সেবা দিয়ে সন্তুষ্ট করা।

যেমন: পরিবহণ, চিকিৎসা পরিষেবা, শিক্ষা, ব্যাংকিং, বীমা, বর্জ্য নিষ্কাশন, টেলিযোগাযোগ পরিষেবা ইত্যাদি।

আকার অনুযায়ী শিল্প তিন প্রকার:

  1. বৃহৎ শিল্প
  2. মাঝারি শিল্প
  3. ক্ষুদ্র শিল্প ও কুটির শিল্প

বৃহৎ শিল্প, বৃহৎ শিল্প কাকে বলে

বৃহৎ শিল্পে অধিক মূলধন, অনেক শ্রমিক ও প্রচুর পরিমানে কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়। যে শিল্পে ২৩০ জনের বেশি শ্রমিক কাজ করে তাকে বৃহৎ শিল্প বলে। এ শিল্পের মধ্যে রয়েছে পাট, বস্ত্র, সিমেন্ট, কাগজ, সার ইত্যাদি।

সহজ কথায় যে সকল শিল্পের মধ্যে বিপুল পরিমান পুঁজির প্রয়োজন হয়। এবং যে সকল প্রতিষ্ঠান করার জন্য প্রচুর পরিমান জনবল কাজ করে। সেই ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান কে বলা হয়, বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান। কেননা, বৃহৎ প্রতিষ্ঠান গুলোকে অনেক উন্নত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিচালনা করতে হয়। 

আর বর্তমান সময়ে বেশ কিছু প্রোডাক্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কে বৃহৎ শিল্প হিসেবে নির্ধারন করা হয়। যেমন,

  • আমাদের দেশে চিনি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান গুলো হলো, বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান।
  • সিমেন্ট শিল্প কে বৃহৎ শিল্প হিসেবে নির্ধারন করা হয়। 
  • ওষুধ শিল্পকে বৃহৎ শিল্প বলা হয়।
  • কীটনাশক বা সার শিল্প হলো,বৃহৎ শিল্প।

মাঝারি শিল্প, মাঝারি শিল্প কাকে বলে

যে শিল্পে ২০-২৩০ জন শ্রমিক নিয়োজিত থাকে তাকে মাঝারি শিল্প বলে। যেমন: চামড়া শিল্প, সাবান শিল্প, দিয়াশলাই শিল্প ইত্যাদি।

সেই শিল্প গুলোকে মাঝারি শিল্প হিসেবে নির্ধারন করা হবে। যেমন,

  • এই ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান গুলোতে শ্রমিক এর সংখ্যা হবে প্রায় ২০ জন থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২৩০ জন পর্যন্ত। 
  • উক্ত প্রতিষ্ঠান গুলো শুরু করার জন্য ব্যয় এর পরিমান হবে প্রায় ১০ কোটি থেকে শুরু করে ৫০ কোটি পর্যন্ত।
  • এই ধরনের শিল্প প্রতিষ্ঠান করার জন্য বৃহৎ প্রতিষ্ঠান এর তুলনায় অনেক কম মুলধন বিনিয়োগ করতে হবে। 

সেই প্রতিষ্ঠান গুলো কে আমরা মাঝারি শিল্প বলবো। যেমন,

  • দিয়াশলাই একটি মাঝারি শিল্প,
  • বিশ্বজুড়ে বিখ্যাত সিগারেট একটি মাঝারি শিল্প,
  • সাবান তৈরির প্রতিষ্ঠান,
  • চামড়া শিল্প

ক্ষুদ্র শিল্প, ক্ষুদ্র শিল্প কাকে বলে

যে শিল্পে ২০ জন শ্রমিক কাজ করে তাকে ক্ষুদ্র শিল্প বলে। যেসব শিল্প কারখানায় বৃহৎ শিল্পের তুলনায় কম মূলধন এবং মূলধনের তুলনায় বেশি শ্রমিক নিয়োগ করা হয় তাদের সাধারণত ক্ষুদ্র শিল্প বলে।

স্বল্প পুঁজি ও স্বল্পসংখ্যক কর্মচারী নিয়ে এক মালিকানা, অংশীদারি অথবা সমবায়ের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা শিল্পকে ক্ষুদ্র শিল্প বলে। এসব প্রতিষ্ঠানে জমি এবং কারখানা ভবন ব্যতিরেকে অন্যান্য স্থায়ী সম্পদের মূল্য বা প্রতিস্থাপন ব্যয় অনধিক ১.৫০ কোটি টাকা।

ক্ষুদ্র শিল্পের উদাহরণ

  • খাদ্য ও খাদ্যজাত শিল্প – ময়দা, আটা, সেমাই, চিনি, মধু, মাছ, তেল, চাল, চকলেট, মুড়ি-চিড়া, শুটকি প্রস্তুত।
  • বস্ত্র শিল্প- থান কাপড়, বেডশিট, শাড়ি, লুঙ্গি, গামছা প্রস্তুত।
  • পাট ও পাটজাত শিল্প – সুতা, পাটের ব্যাগ, কাপড়, কার্পেট ইত্যাদি।
  • বন শিল্প – কাঠ, বাঁশ, করাত কল, কাঠের খেলনা, আসবাপত্র তৈরি।
  • মুদ্রণ ও প্রকাশনা – কাগজ, প্যাকেট, প্যাকিং ও কার্টন তৈরি
  • চামড়া ও রাবার শিল্প – চামড়ার তৈরি পন্য, জুতা কারখানা।
  • ইস্পাত ও প্রকৌশল শিল্প- কৃষি যন্ত্রপাতি, মিল কারখানার যন্ত্রপাতি, অটো মোবাইল সামগ্রী
  • কেমিক্যাল ও ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প – রং, পেইন্ট, প্লাস্টিক, ঔষধ ও সার কারখানা।
  • গ্লাস ও সিরামিক শিল্প – বিভিন্ন ধরণের কাঁসের ও চিনামাটির জিনিসপত্র
  • হিমাগার শিল্প

    কুটির শিল্প, কুটির শিল্প কি

    কুটির শিল্প মূলত পরিবারের সদস্যদের দ্বারা পরিচালিত হয়।

    পারিবারিক শ্রমিক দ্বারা ঘরে বসে কোনরকমের বিদ্যুৎ ও ভারী যন্ত্রপাতির সাহায্য ছাড়াই হাতের সাহায্যে কোনো দ্রব্যসামগ্রী উৎপাদন করাকে কুটির শিল্প বলা হয়।

    অর্থাৎ, কোনো ব্যাক্তি যদি ঘরে বসে ছোটখাটো কোনো যন্ত্রপাতি অথবা হাতের সাহায্যে কোনো দ্রব্যসামগ্রী তৈরি করে । ওই শিল্পকে কুটির শিল্প বলা হয়।

    কুটির শিল্পের উদাহরণ

    • কুমোর মাটির জিনিসপত্র তৈরি করে,
    • কাঠের মিস্ত্রি কাছের আসবাবপত্র বানায়।
    • সোনার দোকানি সোনার জিনিসপত্র বানায়।
    • কামার কাঁচি, কাস্তে, হাতুড়ি বানায়।
    • ঘরে বসে জামাকাপড় তৈরি করা।
    • কাগজের ঠোঙ্গা বানানো।
    • ঘরে বসে পুতুল বানানো।
    • বাঁশ ও বেতের ঝড়া বানানো।

    এরকম অসংখ্য শিল্পকে কুটির শিল্প বলা হয় ।

    ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের মধ্যে পার্থক্য

    ক্ষুদ্র শিল্পকুটির শিল্প
    সেসব প্রতিষ্ঠানে জমি এবং কারখানা ভবন ব্যতিরেকে অন্যান্য স্থায়ী সম্পদের মূল্য বা প্রতিস্থাপন ব্যয় অনধিক ১.৫০ কোটি টাকা সেসব প্রতিষ্ঠানকে ক্ষুদ্রশিল্প বলে।যা পরিবারের সদস্যদের দ্বারা পূর্ণ অথবা খণ্ডকালীন সময়ে উৎপাদন বা সেবামূলক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত তাকে কুটির শিল্প বলে।
    স্বল্প পুঁজি ও স্বল্পসংখ্যক কর্মচারী নিয়ে এক মালিকানা, অংশীদারি অথবা সমবায়ের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা শিল্পকে ক্ষুদ্র শিল্প বলে।পরিবারের সদস্যদের দ্বারা পারিবারিক পরিবেশে গড়ে ওঠা শিল্পই কুটির শিল্প।
    ক্ষুদ্র শিল্প পরিবার ভিত্তিক নয়।কুটির শিল্প প্রধানত পরিবারভিত্তিক এবং উদ্যোক্তা নিজেই এর কারিগর।
    ক্ষুদ্র শিল্প কে বৃহত্ শিল্পের ইউনিট বলা হয়।কুটির শিল্পকে খণ্ডকালীন উৎপাদন ইউনিট বলা হয়।
    ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের মধ্যে পার্থক্য

    শিল্প বিপ্লব কি

    অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ দিকে ব্রিটিশ অর্থনীতির এক যুগান্তকারী ঘটনা ছিল শিল্পবিপ্লব। এই বিল্পবের পূর্বে প্রায় সমগ্র বিশ্বে উৎপাদন প্রথা ছিল পরিবার ভিত্তিক, ক্ষুদ্র আকারের। প্রযুক্তি স্তর ছিল গতানুগতিকর সাধারণ মানের,  উৎপাদনের গতিবেগ ছিল মন্থর। শিল্প বিপ্লবের মাধ্যমে বিশ্ব অর্থনীতিতে বিশেষ পরিবর্তন লক্ষ্য করা গিয়েছিল।

    দৈনিক শ্রমের পরিবর্তে উন্নতি প্রযুক্তি বিদ্যার সাহায্যে অল্প সময়ে অল্প খরচে ব্যাপক পরিমাণে উৎপাদনকে বলা হয় শিল্প বিপ্লব। কোন ক্ষেত্রে দ্রুত এবং আমূল পরিবর্তনকে সাধারণভাবে শিল্প বিপ্লব বলা হয়।

    শিল্পবিপ্লব হল শিল্পের ক্ষেত্রে দ্রুত এবং আমূল পরিবর্তন। কৃষিগত শস্য ছাড়া মানুষ তার প্রয়োজনের প্রায় সব সামগ্রিক উৎপাদন করে শিল্পের মধ্য দিয়ে। এক সময় এক উৎপাদন প্রক্রিয়া পুরোপুরি কায়িক শ্রমের উপর নির্ভরশীল ছিল কিন্তু ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লবের ফলে শ্রমিকের পরিবর্তে যন্ত্রের ব্যবহার শুরু হওয়ার উৎপাদনের গতি বৃদ্ধি হয় দ্বিগুনে।

    শিল্প বিপ্লবের উৎপাদনের গতি ও পরিমাণ বৃদ্ধি করার পাশাপাশি উৎপাদন ব্যবস্থার কাঠামত ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। শিল্প বিপ্লবের আগে উৎপাদন ছিল পরিবার কেন্দ্রিক। শিল্প বিপ্লবের ফলে এই পরিবার কেন্দ্রিক, কুটিরশিল্প ভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থার অবসান ঘটে ।

    এই সময়ের মধ্যে, নতুন উদ্ভাবন এবং প্রযুক্তি, যেমন বাষ্প ইঞ্জিন, যান্ত্রিক তাঁত এবং তুলার জিন, উৎপাদন ও উত্পাদন প্রক্রিয়ায় বিপ্লব ঘটিয়েছে। কারখানায় মেশিনের ব্যাপক ব্যবহার এবং ব্যাপক উৎপাদন কৌশলের উন্নয়ন পূর্বে অজানা স্কেলে পণ্যের উৎপাদন সক্ষম করে, যার ফলে উৎপাদনশীলতা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি ঘটে।

    শিল্প বিপ্লব শহর ও নগরায়নের বৃদ্ধি, মধ্যবিত্ত শ্রেণীর উত্থান এবং কাজ ও শ্রমের কাঠামোর পরিবর্তন সহ উল্লেখযোগ্য সামাজিক পরিবর্তনও নিয়ে আসে। নতুন পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন, যেমন রেলপথ এবং স্টিমশিপ, পণ্য ও মানুষের চলাচল সহজতর করেছে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে আরও ত্বরান্বিত করেছে।

    শিল্প বিপ্লব বলতে কী বোঝায়

    শিল্প বিপ্লব মানব ইতিহাসের এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা। যার ফলে বিশ্বের বাহ্যিক চেহারা, সমাজের মূল কাঠামো মানুষের জীবনাচরণ ও পদ্ধতিতে বিরাট এক ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়।

    সাধারণ কোথায় শিল্পের ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে জীবনে যে দ্রুত ও আমূল পরিবর্তন সাধিত হয় তাকে শিল্প বিপ্লব বলে। শিল্প বিপ্লব মানে হচ্ছে শিল্পের মাধ্যমে সাধিত দ্রুত পরিবর্তন যা মানুষের আর্থসামাজিক জীবন প্রণালী কে পাল্টে দেয়।

    অষ্টাদশ থেকে উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত সময়ে যান্ত্রিক বা কারখানা যুগের সূচনার ফলে ইংল্যান্ডের মানুষের আর্থসামাজিক জীবনসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে যে ব্যাপক সুদুরপ্রসারি এবং দ্রুত পরিবর্তন সূচিত হয় তাকে শিল্প বিপ্লব বলে।

    শিল্পবিপ্লবের ফলে গ্রামীণ বাসস্থানের বদলে উৎপাদনের কেন্দ্র হয়ে ওঠে শহরের কারখানাগুলি। এই সকল কারখানায় বেতনভোগী শ্রমিকেরা যন্ত্রপাতির সাহায্যে উৎপাদন করতে থাকে। আগে পণ্যের উৎপাদকই ছিল পণ্যের মালিক, কিন্তু এখন পণ্যের মালিকানা কেন্দ্রভূত হয় কারখানার মালিকের হাতে।

    শিল্পবিপ্লবের সময় ও স্থান

    শিল্প বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল ইউরোপে বিশেষ করে পশ্চিম ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে শিল্প বিপ্লবের বৈশিষ্ট্য গুলি প্রথম লক্ষ্য করা যায়। এর পরবর্তী সময়ে মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের কোন কোন দেশে শিল্প বিপ্লবের সূচনা হয়। রাষ্ট্রের বিচারে প্রথম শিল্পবিপ্লব হয় ইংল্যান্ডে। শিল্পবিপ্লবের সময়কাল নিয়ে বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে ঐতিহাসিক নেফ এর মতানুসারে 1540 চল্লিশের দশকে ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লব হয়েছিল বলে মত প্রকাশ করেন।

    ঐতিহাসিক টয়েনবি এর মতে শিল্প বিপ্লবের সূচনা হয় ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে। এছাড়াও রস্টো, হপম‍্যান, ম‍্যানটকস প্রমুখ ঐতিহাসিক ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। তবে সাধারণভাবে বলা যায় শিল্পবিপ্লব একটি গতিশীল পর্যায়ে। আনুমানিক অষ্টাদশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে থেকে বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধের মধ্যে এই বিপ্লবের সূচনা, বিকাশ এবং সমাপ্তি ঘটে।

    শিল্প বিপ্লবের বৈশিষ্ট্য

    শিল্প বিপ্লবের সাথে সম্পৃক্ত প্রধান বৈশিষ্ট্য হোল প্রাযুক্তিক, আর্থ সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক পরিবর্তন যার ফলে, পাশ্চাত্যের কৃষি ভিত্তিক সামন্ত সমাজ ব্যবস্থা অতি অল্প সময়ের মধ্যে বিশাল শিল্প ভিত্তিক ধনতান্ত্রিক সমাজে রূপান্তরিত হয়ে পড়ে। প্রাযুক্তিক পরিবর্তন সমূহ হোল :-

    • লোহা ও ইস্পাতের মত মৌলিক বস্তুর ব্যবহার বৃদ্ধি।
    • নতুন শক্তির উৎস যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত, পেট্রোল, কয়লা,স্টিম ইঞ্জিন, ইলেট্রিসিটি প্রমুখর আবিষ্কার ও উৎপাদনে প্রয়োগ ।
    • স্পিনিং জেনি বা কাটনা, যন্ত্র চালিত তাতের আবিষ্কার, যার ফলে কম মানব শ্রম খরচের বদলে যান্ত্রিক শ্রমের সাহায্যে অনেক বেশি কাপড় উৎপাদন সম্ভব হয়ে উঠে ।
    • ফ্যাক্টরি সিস্টেমের প্রবর্তন যার ফলে শ্রম বিভাজন ও কাজের বিশেষীকরণ চালু হয় এবং তা উৎপাদনের বৃদ্ধির সহায়ক হয়ে উঠে।
    • বাষ্প চালিত ইঞ্জিন, টেলিগ্রাফ, রেডিও, গাড়ী, এরোপ্লেন প্রভৃতির আবিষ্কারের ফলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন।
    • শিল্পে বিজ্ঞানের প্রয়াগ বৃদ্ধি। এ সকল প্রাযুক্তিক আবিষ্কার ও প্রয়োগ, উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয় এবং শিল্পজাত পণ্যের ব্যাপক উৎপাদন শুরু হয়।

    শিল্প বিপ্লবের কারণ ও ফলাফল

    শিল্প বিপ্লবের আর্থ-সামাজিক পটভূমি স্বভাবতই অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রসংগে যেসব বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য তা হচ্ছে উপনিবেশ স্থাপন ও বৈদেশিক বাণিজ্যের সম্প্রসারণ, শিল্প-কৃষি-প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অগ্রগতি, বণিক পুঁজিরবিকাশ ও যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি। স্টুয়ার্ট রাজাদের আমলে উপনিবেশ স্থাপন এবং তৎসংগে বৈদেশিক বাণিজ্যের সম্প্রসারণ শুরু হয়।

    প্রথম জেমসের শাসন আমলে ইংল্যান্ডের প্রথম উপনিবেশ স্থাপিত হয় বর্তমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জেমস টাউনে বা ভার্জিনিয়ায়। পরবর্তীকালে উত্তর আমেরিকায় উপনিবেশ স্থাপনের প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকে এবং ১৭৩৩ সালের মধ্যে ১৩ টি উপনিবেশ গড়ে উঠে।

    শিল্প বিপ্লবের কারণ

    • 1760-এর দশকে ব্রিটেনে শিল্প বিপ্লব শুরু হয়েছিল, মূলত টেক্সটাইল শিল্পে নতুন উন্নয়নের সাথে।
    • সেই সময়ের আগে কাপড় তৈরি করা একটি ধীর প্রক্রিয়া ছিল। পশম সংগ্রহের পর তা সুতোয় কাটতে হয় এবং তারপর হাতে কাপড়ে বোনা হয়। 1764 সালে জেমস হারগ্রিভস দ্বারা স্পিনিং জেনি নামে একটি যন্ত্র প্রথম ধারণ করেছিল , যা সুতা কাটতে সহজ করেছিল। 1793 সালে এলি হুইটনি তুলার জিন আবিষ্কার করেন , যা তুলা বাছাই করার পর পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। এগুলি এবং অন্যান্য ডিভাইসগুলি মানব শক্তির একটি ছোট ব্যয়ের সাথে উত্পাদন বৃদ্ধির অনুমতি দেয়।
    • হুইটনিও বিনিময়যোগ্য অংশের ধারণা নিয়ে এসেছিলেন । আগে একজন শ্রমিক হাতে একটি একক পণ্য তৈরি করতে অনেক সময় ব্যয় করবে। হুইটনি আবিষ্কার করেছিলেন যে একটি মেশিন একবারে একটি পণ্যের পৃথক অংশের অনেকগুলি অনুলিপি তৈরি করতে পারে। অংশগুলি তখন যে কোনও কর্মী দ্বারা একত্রিত করা যেতে পারে। এর মানে হল যে অনেক পণ্য দ্রুত উত্পাদন করা যেতে পারে।
    • অন্যান্য পরিবর্তন যা শিল্প বিপ্লব ঘটাতে সাহায্য করেছিল তার মধ্যে রয়েছে বাষ্পের ব্যবহার, এবং পরবর্তীতে অন্যান্য ধরণের শক্তি, মানুষ ও প্রাণীর পেশীর পরিবর্তে।
    • আরেকটি মূল উন্নয়ন ছিল কারখানা ব্যবস্থা গ্রহণ । এই উৎপাদন ব্যবস্থা বিশেষায়িত এবং প্রায়শই বড়-প্রতিষ্ঠানে শিল্পের ঘনত্বের উপর ভিত্তি করে। 18 শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ব্রিটেনে কাপড় বুননের মতো প্রক্রিয়া যান্ত্রিকীকরণের জন্য জলশক্তি এবং তারপর বাষ্প ইঞ্জিনের ব্যবহার কারখানা ব্যবস্থার সূচনা করে।

    শিল্প বিপ্লবের ফলাফল

    শিল্প বহির্ভূত ক্ষেত্রেও বহু পরিবর্তন সাধিত হয়, এগুলো মধ্যে অন্যতম

    • কৃষির উন্নয়নের ফলে কৃষির সাথে সম্পৃক্ত নয় এমন বিশাল সংখ্যক মানুষের অন্নের সংস্থান সম্ভব হয়।
    • অর্থনৈতিক পরিবর্তনের ফলে সম্পদের বণ্টন ব্যবস্থা বিস্তৃত হয় এবং বিকাশমান শিল্প উৎপাদন ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের বিস্তৃতির ফলে সম্পদের উৎস হিসেবে জমির মূল্যর পতন হয়।
    • রাজনৈতিক পরিবর্তনের মধ্যে অর্থনৈতিক শক্তির স্থানান্তরের প্রতিফলন ঘটে, এবং শিল্পায়িত সমাজের উপযোগী রাষ্ট্রীয় নীতিমালা প্রণীত হয়।
    • শিল্প শহরের উদ্ভব, শ্রমিক শ্রেণীর উদ্ভব এবং সামাজিক আধিপত্যের নতুন ধরণের উদ্ভব ঘটে, যার ফলশ্রুতিতে সুদূর প্রসারী সামাজিক পরিবর্তনের সূচনা হয়।
    • বৃহত্তর কাঠামোতে সাংস্কৃতিক পরিবর্তন শুর হয়। শ্রমিক শ্রেণী, তাদের সুনির্দিষ্ট কর্ম কাণ্ড অনুযায়ী নতুন দক্ষতা অর্জন করে । কুটির শিল্পে ব্যবরহিত হস্ত চালিত যন্ত্রপাতির বদলে শিল্প শ্রমিকরা আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যাবহারে দক্ষ হয়ে উঠে। এবং সর্বশেষ, এক ধরণের মনোস্তাত্ত্বিক পরিবর্তনের সূচনা হয়: প্রকৃতির সম্পদ সমূহের ব্যবহারের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয় মানুষ।
    • শিল্প বিপ্লবের ফলে বিপুল সংখ্যক মানুষকে কৃষিখাত থেকে উৎখাত করা হয় বিকাশমান শিল্প কারখানায় শ্রমিক হিসেবে নিয়োগের উদ্দেশ্যে। এ সকল শিল্প কারখানা দীর্ঘ প্রাযুক্তিক উন্নয়নের ফলে ক্রমান্বয়ে পরিবর্তিত হয়ে বৃহৎ শিল্পের রূপ পরিগ্রহ করে।
    • শিল্প প্রতিষ্ঠানের এবং বিকাশমান ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার পরিচালনার প্রয়োজনে বৃহৎ অর্থনৈতিক আমলাতন্ত্রের উদ্ভব ঘটে। এই ধরণের অর্থনীতিতে মুক্তবাজার ব্যবস্থা আদর্শ হিসেবে উপস্থাপিত হয়।
    • মুক্ত বাজারে শিল্প প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত বস্তুর বিনিময় সম্ভব হয়ে উঠে। শিল্প বিপ্লব জাত নতুন সমাজ ব্যবস্থায় কিছু মানুষ প্রচণ্ড ভাবে লাভবান হয়, কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ বেঁচে থাকার তাগিদে অত্যন্ত কম মজুরিতে দীর্ঘ সময় কাজে নিযুক্ত হতে বাধ্য হয়। এর ফলশ্রুতিতে শিল্পায়ন ও ধনতন্ত্রের বিরুদ্ধে সাধারণ শোষিত মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃজন হয়। ফলশ্রুতিতে শোষণের বিরুদ্ধে ইউরোপে শ্রমিক অসন্তোষ দানা বাঁধে ও ধনতান্ত্রিক ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের জন্য বিভিন্ন আন্দোলনের সূত্রপাত হয়।

    আরো পড়ুন ভারতের শিল্প প্রশ্ন উত্তর

    ইংল্যান্ডে প্রথম শিল্প বিপ্লব কেন হয়েছিল, ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের কারণ ও ফলাফল

    ইংল্যান্ডের প্রথম শিল্প বিপ্লবের কারণ গুলি কি ছিল তা নিম্নে আলোচনা করা হল-

    • মূলধনের প্রাচুর্য : ইংল্যান্ড অনেক আগে থেকেই ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক থেকে অনেক উন্নত ছিল যার কারনে একশ্রেণীর মানুষের হাতে বিপুল পরিমাণে অর্থ জমা হয় এবং এই অর্থ তারা শিল্পে বিনিয়োগ করে।
    • খনিজ সম্পদের প্রাচুর্য : ইংল্যান্ডে কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে কয়লা ও লোহা থাকায় বিভিন্ন কলকারখানা ও যন্ত্রপাতি তৈরিতে সুবিধা হয় যা শিল্পায়নের ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল।
    • আবহাওয়া : ইংল্যান্ডে নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ার কারণেই বস্ত্রবয়ন শিল্পে বিশেষ উপযোগী ছিল।
    • কাঁচামাল সংগ্রহ : ইংল্যান্ড তার সুবিশাল ওপনিবেশিক সাম্রাজ্য থেকে নিয়মিত প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সংগ্রহ করার সুযোগ পেয়েছিল। এমন উপনিবেশিক সাম্রাজ্য ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলির না থাকার কারণে শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সংগ্রহে ব্যর্থ হয়।
    • যোগাযোগ ব্যবস্থা: ইংল্যান্ডের চতুর্দিকে সমুদ্র দ্বারা বেষ্টিত ছিল ফলে জলপথে অভ্যন্তরীণ ও বহির্বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পরিবহন ব্যয় ছিল অত্যন্ত কম।
    • বাজার : ইংল্যান্ডের নিজের দেশে বিক্রির পর তার উদবৃত্ত শিল্পপন‍্য বিভিন্ন উপনিবেশিক বাজার গুলিতে বিক্রির সুযোগ পেয়েছিল।
    • সুলভ শ্রমিক: অষ্টাদশ শতকে ইংল্যান্ডের জনসংখ্যা প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পাওয়ায় ইংল্যান্ডের কারখানাগুলোতে প্রচুর পরিমাণে সুলভ ও শ্রমিকের যোগান ছিল।
    • সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা : ইংল্যান্ডে শিল্পের প্রসারের জন্য ব্রিটিশ সরকার, বিভিন্ন বণিক ও শিল্পপতিদের নানাভাবে সাহায্য করে যার কারণে ইংল্যান্ডে শিল্পায়নের বিকাশ হয়েছিল।
    • বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার : অষ্টাদশ শতকে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার শিল্পায়নে যথেষ্ট সহায়তা করেছিল যেমন- জন কে আবিষ্কৃত উড়ন্ত মাকু, জন স্মিটন আবিষ্কৃত লোহা গলাবার চুল্লি, হামফ্রে ডেভি আবিষ্কৃত সেফটি ল্যাম্প, জেমস ওয়াট আবিষ্কৃত বাষ্পীয় ইঞ্জিন, জর্জ স্টিফেনসন আবিষ্কৃত বাষ্পচালিত রেল ইঞ্জিন প্রভৃতি আবিষ্কারের ফলে কলকারখানা চালানোর পক্ষে সহায়ক হয়েছিল।

    ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের প্রভাব

    ইংল্যান্ডে শিল্পবিপ্লবের প্রভাব বা ফলাফল গুলি সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হল-

    ইংল‍্যান্ডে শিল্পবিপ্লবের অর্থনৈতিক প্রভাব

    অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষার্ধে শিল্পবিপ্লবের ফলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন ঘটে। এই বিপ্লবের ফলে পুঁজিবাদী অর্থনীতির উদ্ভব ঘটে। শিল্প বিপ্লবের ফলের পুঁজিপতি মালিকেরা শিল্পে তাদের মূলধন বিনিয়োগ করে প্রচুর মুনাফা অর্জন করে আরও ধনী হয়ে ওঠে।

    পুঁজিপতি বুর্জোয়া শ্রেণীর হাতে থাকে প্রচুর পরিমাণে অর্থ, আর শ্রমিক শ্রেণী সামান্য মজুরির বিনিময়ে শিল্প কারখানায় কাজ করতে বাধ্য হয়। কুটির শিল্পের ধ্বংস হয় এবং বড় বড় কারখানা গড়ে ওঠে। মালিক ও শ্রমিক শ্রেণীর অর্থনৈতিক বৈষম্য তীব্রতর হয়।

    ইংল‍্যান্ডে শিল্পবিপ্লবের সামাজিক প্রভাব

    শিল্পবিপ্লবের ফলে নতুন নতুন শিল্পনগরী গড়ে উঠতে থাকার কারণে নগর সভ্যতার দ্রুত প্রসার ঘটে। ১৬ থেকে ১৮ ঘন্টা হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের ফলে অল্প বয়সেই শ্রমিকদের জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটতো। শ্রমিকদের থাকার জায়গা দেয়া হতো অল কারখানার এক নোংরা ঘরে যার ফলে তারা অসুস্থ হয়ে পড়তো। কালমার্কস তার কমিউনিস্ট ম‍্যানিফেস্টো গ্রন্থে বলেছেন- “সূর্যালোকিত দিনের মাঝে শ্রমিকদের জীবন ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন”।

    ইংল‍্যান্ডে শিল্পবিপ্লবের রাজনৈতিক প্রভাব

    বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে শৈল্পিক পুজি যুক্ত হয়। বিপ্লবের পূর্বে সামন্ত শ্রেণীর অভিজাতরা যে সমস্ত অধিকার রাষ্ট্রীয় জীবনে ভোগ করত পুঁজিবাদি ব্যবস্থার উদ্ভবের পর সেইসব অধিকার আরো অতি অনায়াসে ভোগ করতো। সম্পত্তির অধিকারের ক্ষেত্রে ভোটাধিকার চালু হয়। শোষিত শ্রমিক শ্রেণী মুক্তি পাওয়ার উদ্দেশ্যে শ্রমিক আন্দোলনে লিপ্ত হয়।

    চতুর্থ শিল্প বিপ্লব

    আধুনিক স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রচলিত উৎপাদন এবং শিল্প ব্যবস্থার স্বয়ংক্রিয়করণের একটি চলমান প্রক্রিয়া। স্বয়ংক্রিয়করণ , উন্নত যোগাযোগ এবং স্ব-পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা এবং মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই সমস্যার বিশ্লেষণ এবং নিরুপণ করতে সক্ষম স্মার্ট মেশিন তৈরী করার জন্য বড় আকারে মেশিন টু মেশিন যোগাযোগ এবং ইন্টারনেট অব থিংস কে একসাথে করা হয়েছে।

    এক কথায় বলতে পারেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লব হলো আধুনিক স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রচলিত উৎপাদন এবং শিল্প ব্যবস্থার স্বয়ংক্রিয়করণের একটি চলমান প্রক্রিয়া।

    চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের উপাদান কী কী

    আমাদের সমাজ এবং চলতি ট্রেন্ডগুলোকে গভীরভাবে দেখলে চতুর্থ শিল্প বিপ্লব অনেকগুলো উপাদানে ভাগ করা যায়। এই উপাদানগুলো কতটা ব্যাপক তা বুঝার জন্য উদাহরণস্বরূপ কিছু উল্লেখযোগ্য ডিজিটাল প্রযুক্তির নাম দেয়া হলো—

    • মোবাইল ডিভাইস
    • ইন্টারনেট অব থিংস  প্ল্যাটফর্ম (Internet of Things – Iot)
    • অবস্থান সনাক্তকরণ প্রযুক্তি (বৈদ্যুতিক সনাক্তকরণ)
    • উন্নত মানব-মেশিন ইন্টারফেস
    • প্রমাণীকরণ এবং জালিয়াতি সনাক্তকরণ
    • স্মার্ট সেন্সর
    • বিগ অ্যানালিটিকস এবং উন্নত প্রক্রিয়া
    • বহুস্তরীয় গ্রাহক ইন্টারঅ্যাকশন এবং গ্রাহক প্রোফাইলিং
    • অগমেন্টেড রিয়েলিটি অথবা ওয়্যারেবল টেকনোলজি (Augmented Reality or Wearable Technology)
    • চাহিদা সাপেক্ষে কম্পিউটার সিস্টেম রিসোর্সের প্রাপ্যতা
    • সাইবার-ফিজিক্যাল সিস্টেম
    • চাহিদা সাপেক্ষে কম্পিউটার সিস্টেম রিসোর্সের প্রাপ্যতা
    • কগনিটিভ কম্পিউটিং
    আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

    FAQ | শিল্প

    Q1. শিল্পায়ন কি

    Ans – শিল্পায়ন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে মানুষ কৃষি সমাজ থেকে যান্ত্রিক শিল্প সমাজে প্রবেশ করে। উন্নয়নশীল দেশে শিল্পায়ন প্রক্রিয়াটি বেশি লক্ষ্য করা যায়। শিল্পায়নে মানুষের কর্মসংস্থান করে ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করে ।

    Q2. শিল্প বিপ্লব কত সালে হয়

    Ans – শিল্প বিপ্লব সংঘটিত হয় আঠার শতকে।
    ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের কারণ ও ফলাফল ইতিহাসে মোটামুটি ১৭৬০ – ১৮৪০ খ্রিষ্টাব্দ এই সময়কালে কৃষি এবং বাণিজ্যিক ব্যবস্থা থেকে আধুনিক শিল্পায়নের দিকে গতি শুরু হওয়ায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বিস্ময়কর পরিবর্তন ঘটে।
    পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতাব্দীর সমুদ্র যাত্রা বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যের পথ খুলে দেয়। এরপর পুঁজিবাদের উদ্ভব, বাষ্পীয় ইঞ্জিনের আবিষ্কার, কয়লার খনি আর ইস্পাতের ব্যাপক ব্যবহারের ফলে অনেক শিল্প শহর আর কারখানা গড়ে উঠে।

    Q3. নিষ্কাশন শিল্প কি

    Ans – যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভূগর্ভ, পানি বা বায়ু থেকে সম্পদ আহরণ বা উত্তোলন করা হয় তাকে নিষ্কাশন শিল্প বলে।

    Q4. আমদানি বিকল্প শিল্প কি

    Ans – আমদানি দ্রব্য অন্য দেশ থেকে আমদানি না করে, ওই পণ্যে দেশে উতপাদনের জন্য যে শিল্প গড়ে তোলা হয়, তাকে আমদানি বিকল্প শিল্প বলে।

    Q5. প্রজনন শিল্প কি

    Ans – যে শিল্পে উৎপাদিত সামগ্রী আবার সৃষ্টি বা উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হয় তাকে প্রজনন শিল্প বলে।

    Q6. কারুশিল্প কাকে বলে

    Ans – বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে লোক ও কারুশিল্পের অবস্থান মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত, বাঙালির আত্মপরিচয়ের প্রতীক, কায়িক শ্রমে ও নান্দনিক কৌশলে ব্যবহারিক বস্তুকে সৌন্দর্য ও কারুমন্ডিত করার উদ্দেশ্য অলঙ্ককরণকেই আমরা ‘কারুশিল্প’ হিসেবে অভিহিত করি।

    আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

    আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

    মন্তব্য করুন

    আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।