ঋতু কাকে বলে, ছয় ঋতুর নাম, বাংলার ঋতু বৈচিত্র্য প্রবন্ধ রচনা

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

ঋতু কাকে বলে

পৃথিবীর বার্ষিক গতির কারণে ভূপৃষ্ঠে দিন ও রাতের সূচনা হয় এবং সূর্য রশ্মীর পতন কোনের পার্থক্যের কারণে বছরের বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীতে উষ্ণতার তারতম্য দেখা যায়। এই উষ্ণতা তারতম্যকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে যাকে ঋতু বলা হয়।

বার্ষিক গতির ফলে সূর্যের চারদিকে পৃথিবী ক্রমাগত ঘুরে যাচ্ছে, সূর্যকে প্রদক্ষিণ করার সময় পৃথিবী তার নিজের অক্ষাংশের উপর সাড়ে ৬৬° হেলে রয়েছে। এর ফলে বছরের বিভিন্ন সময় সূর্য পৃথিবীর বিভিন্ন অক্ষাংশের ওপরে কখনো তির্যকভাবে, কখনো লম্ব ভাবে পতিত হয় যে কারণেই প্রধানত পৃথিবীতে উষ্ণতার তারতম ঘটে যার কারণে ঋতুচক্রের সৃষ্টি।

ঋতু বা মৌসুম বছরের একটি খণ্ডবিশেষ যা নির্দিষ্ট সার্বজনীন কোন সূত্রের ভিত্তিতে স্থির করা হয়। সচরাচর স্থানীয় আবহাওয়ার ওপর ভিত্তি করে বৎসরের ঋতু বিভাজন করা হয়। বিশ্বের অধিকাংশ দেশে বসন্ত, গ্রীষ্ম, হেমন্ত ও শীত- এই চারটি প্রধান ঋতু দেখা যায়। কিছু দেশের জনগণ ঋতুকে আরো কয়েকভাগে বিভক্ত করেছেন। তন্মধ্যে বাংলাদেশ,ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার সহ উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যে ৬টি ঋতু বিদ্যমান। সাধারণত পৃৃথিবীর বার্ষিক গতির কারণে ঋতু পরিবর্তিত হয়।

গ্রীষ্মমণ্ডলীয় এলাকায় দুইটি ঋতু থাকে।

  • বর্ষাকাল এবং
  • শুষ্ককাল।

আবার, শীতপ্রধান এলাকায় দুইটি মাত্র ঋতু থাকে।

  • পোলার ডে (বসন্ত ও গ্রীষ্ম) এবং
  • পোলার নাইট (শরৎ ও শীত)।

ছয় ঋতুর নাম

আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপর ভিত্তি করে ৬টি ঋতুতে ভাগ করা হয়েছে।

যথাঃ গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত। ভৌগোলিক কারণে এক একটি দেশে ঋতুর পার্থক্য হয়ে থাকে। বেশির ভাগ দেশে তিনটি ঋতু থাকে। যথাঃ গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত।

ছয় ঋতুর বৈশিষ্ট্য

বসন্ত | Spring, বসন্ত ঋতুর বৈশিষ্ট্য

বসন্ত ঋতু বোঝায় উদ্ভোদন এবং নবজাতক জীবনের আগমন। এটি পৃথিবীতে সবচেয়ে সুন্দর ঋতু এবং সবচেয়ে আনন্দময় ঋতু। বাংলা বসন্তে পৃথিবী পুনরুজ্জীবিত হয় এবং সব জীবনী নবজাত হয়। প্রকৃতি এই ঋতুতে বিভিন্ন প্রকারের ফুল, গাছ এবং ফল প্রদর্শন করে। এটি সাধারণত মার্চ মাস থেকে শুরু হয় এবং এপ্রিল এবং মে মাসে সবচেয়ে উষ্ণ সময়।

গ্রীষ্ম | Summer, গ্রীষ্ম ঋতুর বৈশিষ্ট্য

গ্রীষ্ম ঋতু পৃথিবীতে সবচেয়ে উষ্ণ ঋতু এবং বাংলা ক্ষেত্রে মাঝারি বৃষ্টি হয়। এটি জুন মাস থেকে শুরু হয় এবং সেপ্টেম্বর মাসে শেষ হয়। এই ঋতুতে প্রকৃতি অনেক জল চাই এবং জলাবদ্ধ অঞ্চলের জন্য এটি অনেক ক্ষতিকর। এই ঋতুতে প্রকৃতি বাড়িয়ে যায় এবং সামাজিক অধিকার দিয়ে দিয়ে সবকিছু মোড় দেয়।

বর্ষা | Rainy season, বর্ষা ঋতুর বৈশিষ্ট্য

বর্ষা ঋতু পৃথিবীতে সবচেয়ে বৃষ্টি প্রদান করে। এটি পৌষ মাসে শুরু হয় এবং আষাঢ় মাসে শেষ হয়। এটি প্রকৃতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এই ঋতুতে সবকিছু তাজা ও সবুজ হয়ে উঠে আসে। এটি অনেক মানুষের কৃষি ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এই ঋতুতে মূলত ধান চাষ করা হয়। এই ঋতুতে সবকিছু প্রকৃতির সৌন্দর্যে ভরে উঠে আসে।

শরৎ | Autumn, শরৎ ঋতুর বৈশিষ্ট্য

শরৎ ঋতু পৃথিবীতে সুন্দর হয়ে উঠে আসে। এটি আশ্বিন মাসে শুরু হয় এবং কার্তিক মাসে শেষ হয়। এই ঋতুতে প্রকৃতি সবচেয়ে সুন্দর হয়ে উঠে আসে এবং শিশির ফুল এবং ফল প্রদর্শন করে। এই ঋতুতে হয় শরৎ উৎসব যা বাংলাদেশে অনেক প্রচলিত এবং এতে স্থানীয় খাদ্য এবং বিনোদন সহ অনেক আনন্দ করা হয়।

হেমন্ত | Late Autumn/Winter, হেমন্ত ঋতু, হেমন্ত ঋতুর বৈশিষ্ট্য

হেমন্ত ঋতু পৃথিবীতে মাঝারি তাপমাত্রা এবং হৈচৈত্রের পর হয়। এটি মাঘ মাসে শুরু হয় এবং ফাল্গুন মাসে শেষ হয়। বাংলাদেশে এই ঋতুতে তাপমাত্রা কমে যায় এবং কোমর ঝুলে পড়ে। এই ঋতুতে স্বভাবতই শীতল হয় এবং সামান্য আবহাওয়া বরফ নমুন দেখা যায়। এই ঋতুতে কোমর না পড়া সম্ভব নয় এবং এই ঋতুতে তথ্যপ্রযুক্তি এবং নিউক্লিয়ার শক্তি উৎস হিসাবে বেশি ব্যবহৃত হয়।

শীতকাল | Winter, শীত ঋতুর বৈশিষ্ট্য

শীতকাল ঋতু পৃথিবীতে সবচেয়ে ঠাণ্ডা ঋতু এবং মার্গশীর্ষে অবস্থান করে। এটি মাঘ মাসের শেষে শুরু হয় এবং ফাল্গুন মাসের শেষ হয়। বাংলাদেশে এই ঋতুতে তাপমাত্রা কমে যায় এবং সামান্য বরফ নমুন দেখা যায়। এই ঋতুতে মানুষ পানির উপর চেপে বরফের উপর হেলিকপ্টারে যায় এবং বাসার মাঝে বরফের স্কুল ও কলেজ হয়।

এই ঋতুতে প্রকৃতি খুব সুন্দর হয়। বাংলাদেশে শীতকালে মাছ পাচ্ছে না, পানির তাপমাত্রা কমে যায়, সাধারণত কাপড় ও নরম পরিধান পরিধান করা হয় এবং বরফ নমুন দেখা যায়। শীতকাল সবচেয়ে ঠাণ্ডা ঋতু হওয়ার কারণে মানুষ এই ঋতুতে সাবধান থাকতে হয়। আবহাওয়া হয় ঠাণ্ডা এবং বাতাস তীব্র হয়। এই ঋতুতে পশুপাখীর একটি অসাধারণ দৃশ্য দেখা যায়।fzrh

বাংলা বারো মাসের নাম, ছয় ঋতুর নাম ইংরেজিতে

বাংলা মাসইংরেজি মাসকাল/ঋতু
বৈশাখএপ্রিল-মেগ্রীষ্মকাল | Summer
জ্যৈষ্ঠমে-জুন
আষাঢ়জুন-জুলাইবর্ষাকাল | Rainy season
শ্রাবণজুলাই-আগস্ট
ভাদ্রআগস্ট-সেপ্টেম্বরশরৎকাল | Autumn
আশ্বিনসেপ্টেম্বর-অক্টোবর
কার্তিকঅক্টোবর-নভেম্বরহেমন্তকাল | Late Autumn
অগ্রহায়ণনভেম্বর-ডিসেম্বর
পৌষডিসেম্বর-জানুয়ারিশীতকাল | Winter
মাঘজানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি
ফাল্গুনফেব্রুয়ারি-মার্চবসন্তকাল
চৈত্রমার্চ-এপ্রিল
ছয় ঋতুর নাম ইংরেজিতে

ঋতু পরিবর্তন কাকে বলে

পৃথিবীতে আলো ও তাপ এর উৎস হল সূর্য । ভূপৃষ্ঠে সারাবছর সূর্যরশ্মি সমানভাবে পড়ে না। লম্বভাবে পতিত সূর্য রশ্মি ও তীর্যকভাবে পতিত সূর্য রশ্মির কারণে ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানে সারা বছর ধরে উষ্ণতা হ্রাস বৃদ্ধি দেখা যায়। উষ্ণতার তারতম্য অনুসারে বছরকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়। প্রত্যেকটি ভাগ কে ঋতু বলে। ঋতুর পর্যায় ক্রমিক পরিবর্তন কে ঋতু পরিবর্তন বলে।

ঋতু পরিবর্তনের কারণ ব্যাখ্যা কর, ঋতু পরিবর্তনের কারণ, ঋতু পরিবর্তনের চিত্র সহ ব্যাখ্যা

বিভিন্ন কারণে উষ্ণতার তারতম্যের ফলে ভূপৃষ্ঠে ঋতু পরিবর্তন হয়। এই কারণ গুলি হল – 

পৃথিবীর অভিগত গোলক আকৃতি

পৃথিবীর অভিগত গোলক আকৃতির জন্য সূর্য রশ্মি ভূপৃষ্ঠে কোথাও লম্বভাবে পরে, কোথাও বা তীর্যকভাবে পরে। তির্যক ও লম্বভাবে পতিত সূর্য রশ্মির মধ্যে উত্তাপ এর তারতম্য থাকায় কোথাও শীত  কোথাও গ্রীষ্ম ঋতু দেখা যায়।

পৃথিবীর আবর্তন গতি

পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্য দিনরাত্রি সংঘটিত হয় এর ফলে উষ্ণতার তারতম্য ঘটে ও ঋতু পরিবর্তন হয়। পৃথিবীর আবর্তন গতি না থাকলে অর্ধেক পৃথিবীতে চির গ্রীষ্ম ও অর্ধেক পৃথিবীতে চির শীত বিরাজ করতো।

পৃথিবীর পরিক্রমণ গতি

পৃথিবী নিজের অক্ষের চারিদিকে ঘুরতে ঘুরতে একটি নির্দিষ্ট উপ বৃত্তাকার কক্ষপথে সূর্যের চারিদিকে প্রদক্ষিণ করছে, যা পরিক্রমণ গতি নামে পরিচিত। এই পরিক্রমন গতির জন্য ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অংশে বছরের বিভিন্ন সময়ে সূর্য রশ্মি প্রাপ্তির তারতম্য দেখা যায়। যার দরুন ঋতু পরিবর্তন সংঘটিত হয়।

পৃথিবীর উপবৃত্তাকার কক্ষপথ

পৃথিবীর উপবৃত্তাকার কক্ষপথে জন্য সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব সারা বছর সমান থাকে না। এর ফলে উষ্ণতার পার্থক্য সৃষ্টি হয়। 

পৃথিবীর মেরু রেখার একই দিকে অবস্থান

পৃথিবীর কক্ষতলের ওপর তার মেরু রেখার সাড়ে 66 ডিগ্রী কোণে সর্বদা একই দিকে অবস্থানের ফলে দিন ও রাত্রির হ্রাস বৃদ্ধি ঘটে। এর ফলে শীত ও গ্রীষ্মের তারতম্য দেখা যায়।

পৃথিবীর কক্ষপথে কৌণিক অবস্থান

সূর্যকে পরিক্রমণের সময় নিজ কক্ষতলের সাথে পৃথিবীর মেরুরেখা সমকোণে না থেকে ৬৬.৫ ডিগ্রী কোণে হেলে একই দিকে অবস্থান করে। এতে বছরে একবার সূর্যের উত্তর মেরু ও একবার দক্ষিণ মেরু সূর্যের নিকটবর্তী হয়। যে গোলার্ধ যখন সূর্যের দিকে ঝুকে থাকে সে গোলার্ধে সূর্য লম্বভাবে কিরণ দেয়। সেই গোলার্ধে তাপমাত্রা তখন বেশি হয় এবং সূর্য থেকে দূরে গেলে আবার তাপমাত্রা কমে যায়। এতেও ঋতু পরিবর্তন ঘটে।

ঋতু পরিবর্তন প্রক্রিয়া

আমরা জানি, পৃথিবীতে চারটি ঋতু- গ্রীষ্মকাল, শরৎকাল, শীতকাল ও বসন্তকাল। আমরা এখন দেখবো ঋতু কীভাবে পরিবর্তির হয়। সূর্যকে পরিক্রমণকালে পৃথিবীর চারটি অবস্থা থেকে ঋতু পরিবর্তনের ব্যাখ্যা পাওয়া যায়।

উত্তর গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে শীতকাল

২১ মার্চের পর থেকে পৃথিবী তার নিজ কক্ষপথে এগিয়ে চলার সাথে সাথে উত্তর মেরু ক্রমশ সূর্যের দিকে হেলতে থাকে। এতে যত দিন যায় তত উত্তর মেরুতে আলোকিত অংশ বাড়তে থাকে। এভাবে ২১ জুন গিয়ে সূর্য কর্কটক্রান্তি রেখার উপর লম্বভাবে কিরণ দিতে থাকে। ফলে ২১ জুন উত্তর গোলার্ধে দিন বড় ও রাত ছোট হয়। ঐ দিনই সূর্যের উত্তরায়ণের শেষ এবং তার পরের দিন থেকে পুনরায় সূর্য দক্ষিণ দিকে আসতে থাকে।

দিন বড় হওয়ার কারণে উত্তর গোলার্ধে ২১ জুনের দেড় মাস আগে থেকেই গ্রীষ্মকাল শুরু হয় এবং পরের দেড় মাস পর্যন্ত গ্রীষ্মকাল স্থায়ী হয়। এই সময়ে দক্ষিণ গোলার্ধে ঠিক বিপরীত অবস্থা দেখা যায় অর্থাৎ শীতকাল অনুভূত হয়। এ সময় সূর্য হেলে থাকার কারণে এ গোলার্ধে সূর্য কম সময় আলো দেয়। ফলে দিন ছোট এবং রাত বড় হয়। দিনে ভূপৃষ্ঠ যতটুকু উত্তপ্ত হয়, রাতে তাপ বিকিরণের ফলে তা ঠাণ্ডা হয়ে যায়।

উত্তর গোলার্ধে শরৎকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে বসন্তকাল

২১ জুন থেকে দক্ষিণ মেরু সূর্যের দিকে হেলতে থাকে। তাই উত্তর গোলার্ধের অংশগুলো কম কিরণ পেতে থাকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধের অংশগুলো বেশি সূর্যকিরণ পেতে থাকে। এভাবে ২৩ সেপ্টেম্বর সূর্য নিরক্ষরেখার উপর লম্বভাবে কিরণ দেয়। তাই এই সময় পৃথিবীর সর্বত্র দিন ও রাত্রি সমান হয়। দিনের বেলায় যে তাপ ভূপৃষ্ঠ শোষণ করে, রাত সমান হওয়ার কারণে একই পরিমাণ তাপ বিকিরিত হওয়ার সুযোগ পায়।

ফলে আবহাওয়াতে ঠাণ্ডা গরমের পরিমাণ সমান থাকে। এই সময় উত্তর গোলার্ধে শরৎকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে বসন্তকাল বিরাজ করে। ২৩ সেপ্টেম্বরের দেড় মাস আগে থেকেই উত্তর গোলার্ধে শরৎকাল শুরু হয় এবং দেড় মাস পর পর্যন্ত এই শরৎকাল স্থায়ী থাকে।

উত্তর গোলার্ধে শীতকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল

২৩ সেপ্টেম্বরের পর দক্ষিণ গোলার্ধ ক্রমশ সূর্যের দিকে হেলতে থাকে। এই সময় দক্ষিণ গোলার্ধ সূর্যের কাছে আসতে থাকে। আর উত্তর গোলার্ধ দূরে সরে যেতে থাকে। ফলে দক্ষিণ গোলার্ধে সূর্য লম্বভাবে কিরণ দেয় ও উত্তর গোলার্ধে কৌণিকভাবে কিরণ দেয়। এতে উত্তর গোলার্ধে দিন ছোট ও দক্ষিণ গোলার্ধে দিন বড় হয়। এর মধ্যে ২২ ডিসেম্বর সূর্য মকরক্রান্তি অঞ্চলের উপর লম্বভাবে কিরণ দেয়।

সেই দিন উত্তর গোলার্ধে ছোট দিন ও বড় রাত হওয়াতে শীতকাল। ঐ দিনই সূর্যের দক্ষিণায়নের শেষ এবং তার পরের দিন থেকে পুনরায় সূর্য উত্তর দিকে আসতে থাকে। ২২ ডিসেম্বরের দেড় মাস আগেই উত্তর গোলার্ধে শীতকাল শুরু হয় এবং পরবর্তী দেড় মাস পর্যন্ত এই শীতকাল চলতে থাকে। এই সময়টায় দক্ষিণ গোলার্ধে গ্রীষ্মকাল।

উত্তর গোলার্ধে বসন্তকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে শরৎকাল

পৃথিবী তার কক্ষপথে চলতে চলতে ২২ ডিসেম্বরের পর থেকে ২১ মার্চ পর্যন্ত এমন স্থানে ফিরে আসে যখন সূর্য নিরক্ষরেখার উপর লম্বভাবে কিরণ দিতে থাকে। ফলে ২১ মার্চ পৃথিবীর সর্বত্র দিন-রাত সমান হয়। দিনের বেলায় সূর্য কিরণের কারণে ভূপৃষ্ঠের বায়ুস্তর গরম হয় এবং রাত্রিবেলায় তাপ বিকিরিত করে ঠাণ্ডা হয়। এই সময় উত্তর গোলার্ধে বসন্তকাল ও দক্ষিণ গোলার্ধে শরৎকাল।

মানব জীবনে ঋতু পরিবর্তনের প্রভাব

আমাদের জীবনে ঋতু পরিবর্তনের প্রভাব অপরিসীম। বলা যেতে পারে, ঋতু পরিবর্তনের উপর ভিত্তি করেই আমাদের জীবন যাপন আবর্তিত হয়। নিম্নে মানব জীবনে ঋতু পরিবর্তনের প্রভাব তুলে ধরা হলো-

(১) ঋতু পরিবর্তন আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।

(২) ঋতু পরিবর্তন মাথায় রেখেই কৃষি কাজ করা হয়।

(৩) ঋতু পরিবর্তন জীবজগতের বৃদ্ধি, বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করে।

(৪) ঋতু পরিবর্তনের কারণে আমরা অনেক প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হই।

(৫) ঋতু পরিবর্তন আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড ব্যাপকভাবে নিয়ন্ত্রণ করে।

বাংলার ঋতু বৈচিত্র্য প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা

মানবসভ্যতা যতই আধুনিকতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, মানুষের জীবনে ততোই প্রকট হচ্ছে অশান্তির কালো মেঘ। জীবনের অশান্তির এই নিকষ কালো অন্ধকারে সুখের চেয়ে মানুষ আজ স্বস্তির ব্যাকুল অনুসন্ধানী। আমাদের প্রিয় প্রকৃতিতেই রয়েছে সেই আকাঙ্ক্ষিত অনাবিল শান্তি ও স্বস্তির উপকরণ।

সেজন্য এই আধুনিক যান্ত্রিক জীবনে মানুষ মুক্ত প্রকৃতির রূপ ও বৈচিত্র্য আস্বাদের জন্য ব্যাকুল। প্রকৃতির বৈচিত্র্য জীবনকে করে তোলে বর্ণময়, আর রূপ জীবনের একঘেয়েমি দূর করে নতুন রঙে রাঙিয়ে দেয়। বাঙালির সৌভাগ্য যে, আমাদের স্বদেশ বঙ্গভূমিতে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের কোনো অভাব নেই।

বছরের বারো মাসে ছয় ঋতুতে প্রকৃতির নতুন রূপে নতুন লীলা বাংলার মানুষের জীবনকে অনাবিল স্নিগ্ধ আনন্দে ভরিয়ে তোলে। বঙ্গভূমির প্রকৃতি প্রত্যেকটি ঋতুতে বাঙালির জীবনে এনে দেয় নব নব রূপ ও রসের অপরূপ ছন্দ। বাংলার এই অপরূপ রূপে মোহিত হয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কলম থেকে নিঃসৃত হয়েছিল-

সেজন্য এই আধুনিক যান্ত্রিক জীবনে মানুষ মুক্ত প্রকৃতির রূপ ও বৈচিত্র্য আস্বাদের জন্য ব্যাকুল। প্রকৃতির বৈচিত্র্য জীবনকে করে তোলে বর্ণময়, আর রূপ জীবনের একঘেয়েমি দূর করে নতুন রঙে রাঙিয়ে দেয়। বাঙালির সৌভাগ্য যে, আমাদের স্বদেশ বঙ্গভূমিতে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যের কোনো অভাব নেই।

বছরের বারো মাসে ছয় ঋতুতে প্রকৃতির নতুন রূপে নতুন লীলা বাংলার মানুষের জীবনকে অনাবিল স্নিগ্ধ আনন্দে ভরিয়ে তোলে। বঙ্গভূমির প্রকৃতি প্রত্যেকটি ঋতুতে বাঙালির জীবনে এনে দেয় নব নব রূপ ও রসের অপরূপ ছন্দ। বাংলার এই অপরূপ রূপে মোহিত হয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কলম থেকে নিঃসৃত হয়েছিল-

কুয়াশার ঘোমটা মাথায় নিয়ে শীত হাজিরা দেয় পৌষে, মাঘেও সে তার হিমেল চাদর বিছিয়ে রাখে বাংলার বুকে। এ হলো সোনার বাংলার পাতাঝরার মরশুম। বৃক্ষরাজি তাদের শরীর থেকে সকল শুকনো পাতা ঝরিয়ে ফেলে নতুন রূপে সেজে ওঠবার নিমিত্ত প্রস্তুত হয়। এ যেনো পুরাতন জীর্ণ বস্ত্র ত্যাগ করে নতুনের আহ্বান করার মরশুম।

এইভাবে শীতের অবসানে প্রকৃতি নিজেকে রিক্ত করে ঋতুর সিংহাসন সাজিয়ে সাড়ম্বরে বরণ করে নেয় ঋতুরাজ বসন্তকে। ফাল্গুন এবং চৈত্র এই দুই মাস ধরে বসন্ত আবার তার পরম মায়ায় সমগ্র প্রকৃতিকে নবরূপে নতুন বছর হেতু সুসজ্জিত করে দেয়। অবশেষে চৈত্রের সাথে সাথে বাংলার বুকে একটি বছরের অবসান ঘটে।  আবার ফিরে আসে অগ্রজ গ্রীষ্ম- সোনার বাংলার বুকে ঋতুচক্র এমন ভাবেই চলতে থাকে।

অর্থনীতি

খাদ্যশস্যের ফলনে ঋতুচক্রের প্রভাব

বাংলার মতোন নানা ঋতুর এমন প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য পৃথিবীর খুব কম দেশেই রয়েছে। প্রতি দুই মাস অন্তর নতুন নতুন ঋতুর আগমন বাঙালির জীবনকে যেমন আনন্দে ভরিয়ে তোলে, তেমনি বাঙালির আর্থসামাজিক জীবনেও এই ঋতু বৈচিত্র্যের সীমাহীন প্রভাব রয়েছে।

বিশেষ করে বাঙালির অর্থনৈতিক জীবনের সঙ্গে এই ঋতুচক্রের এক সুগভীর সম্পর্ক বর্তমান। কিংবা বলা ভালো বাংলার গ্রাম্য কৃষি অর্থনীতির বেশিরভাগটাই গড়ে উঠেছে এই ঋতু বৈচিত্রকে কেন্দ্র করে। বিভিন্ন বিভিন্ন ঋতুকে কেন্দ্র করে বাংলার কৃষকেরা নানা মরশুমী ফসল ফলায়। গ্রীষ্মে বপন করা ফসলের রূপ একরকম; আবার শীতে তার রূপ সম্পূর্ণ ভিন্ন।

অন্যদিকে কোন কোন ফসল ফলানোর জন্য সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত বর্ষার অকৃপণ বৃষ্টিধারা। বর্ষার অশ্রান্ত ধারাতে কচি ধানের জমিতে জল জমে, শরতের তাজা রোদ ও মাঝে মাঝে বৃষ্টি গাছ গুলিকে পুর্নতা দান করে। হেমন্তের শিশির অন্নের শস্যদানার ক্ষিরকে পুষ্ট করে তোলে। অগ্রহায়ণ মাসে গ্রাম বাংলা মেতে ওঠে নবান্ন উৎসবে। বসন্তে রবি শস্যে পাক ধরে।  

মরশুমী ফুল ও ফলচাষে ঋতুচক্র

গ্রীষ্মের রোদ্দুরে সুমিষ্ট আম, লিচু, জাম, কাঁঠাল, তরমুজের ফলন ভুলিয়ে দেয় খরতপ্ত সূর্যের প্রখর দাবদাহকে। বর্ষায় চাষ হয় পানিফল, আনারস ইত্যাদির। আবার প্রতিটি ঋতুতে রংবেরঙের নানা ফুল বাংলাকে নতুন নতুন রঙে রাঙিয়ে তোলে।  এই ফুল ও ফল চাষের উপর ভিত্তি করেই গ্রামবাংলার বুকে লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের জীবিকা নির্বাহ করে।

তাই বাংলার কৃষককুলের জন্য প্রতিটি ঋতুর আগমন অত্যন্ত জরুরি। বাংলার বুকে প্রকৃতির এই ঋতু বৈচিত্রের ক্ষেত্রে সামান্যতম উত্থান-পতন গ্রামবাংলা তথা সমগ্র বাংলার অর্থনীতির ওপর এক সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে।

ষড়ঋতুর বৈশিষ্ট্য

গ্রীষ্মকাল

ঋতু-পরিক্রমার প্রথম ঋতু গ্রীষ্মকাল। গ্রীষ্ম হল রুদ্র তাপস। রুক্ষ তার তনু।’ উড্ডীন পিঙ্গল জটাজাল।’ তৃতীয় নেত্রে অগ্নিস্রাবি দৃষ্টি। তার ‘ লোলুপ চিতাগ্নি শিখায়’ আকাশ বাতাস মাটি হয় দগ্ধ।

সূর্যের প্রখর তাপে প্রচণ্ড দাবদাহে বাংলার মাটি, খাল, বিল, নদী-নালা শুষ্ক হয়ে পরম তৃষ্ণায় সামান্য বর্ষার প্রতীক্ষা করতে থাকে। তবে এমন রুদ্র রূপ এর মধ্যেও প্রকৃতি গ্রীষ্মের ডালি ভরে দেয় চম্পক, রজনীগন্ধা সহ আম, জাম, কাঁঠালের মতো নানা সরেস ফল ফুল দিয়ে। অবশেষে প্রখর রুদ্র মূর্তিতে বর্ষার আবাহন করে জ্যৈষ্ঠের শেষে এর অবসান ঘটে। 

বর্ষাকাল

গ্রীষ্মের অবসানে হাজির হয় ‘ ঘন গৌরবে নবযৌবন বরষা।’বর্ষা হল ঋতু-পরিক্রমার দ্বিতীয় ঋতু। রুদ্র তাপস গ্রীষ্মের রুক্ষ অগ্নিস্রাবি দৃষ্টি আর প্রখর দাবদাহে শুষ্ক প্রকৃতি যখন পরম তৃষ্ণায় কাতর, তখনই মেঘের দামামা বাজিয়ে আকাশ কালো করে ধরিত্রীর বুকে নেমে আসে অঝোর বর্ষণ। এই অঝোর বৃষ্টি ধারায় ভরে যায় খাল বিল ,নদী, নালা।

এই সময়ে প্রকৃতি আবার নব কলেবরে সজ্জিত হয়ে ওঠে। ফুটিফাটা মাটি, খাল-বিল, নদী-নালা, পশুপাখি সকলে প্রশান্তিময় শীতলতায় স্বস্তি ফিরে পায়। গ্রাম বাংলার বুকে কৃষকের মন নেচে ওঠে আনন্দে। জমিতে বীজ তোলা ও রোপণের ধুম পড়ে।

শরৎকাল

দুইমাস ব্যাপী বর্ষার অবসানে জল থৈ থৈ স্নিগ্ধ শীতল প্রকৃতির বুকে তৃতীয় ঋতু শরতের একটা আলাদা মাধুর্য ও বৈচিত্র্য রয়েছে। ঘনকালো মেঘে জমে থাকা বর্ষণের বাষ্প পৃথিবীর বুকে অঝোর ধারায় ঢেলে দিয়ে এসময় আকাশ হয়ে ওঠে ঘননীল। পেঁজা পেঁজা তুলোর মতো মেঘ আকাশের বুকে ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত ভেসে বেড়ায়।

তারা অতি স্নিগ্ধ, প্রশান্ত; যেন আর তাদের কোন তাড়া নেই। মাঠে মাঠে প্রস্ফুটিত কাশগুচ্ছ প্রকৃতির সাজসজ্জায় এক অনন্য মাত্রা এনে দেয়। এমন স্নিগ্ধ, শীতল প্রকৃতির বুকে জীবনের একঘেয়েমি দূর করে বাঙালি মেতে ওঠে পুজা পার্বনে। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসবগুলি এসময় পালিত হয়ে থাকে, যার মধ্যে অন্যতম হলো দুর্গোৎসব। 

হেমন্ত

কুয়াশার  ঘোমটা টেনে বিষাদখিন্ন হৃদয়ে বৈরাগ্যের তপস্যায় বাংলার চতুর্থ ঋতু হেমন্ত থাকে নীরব। হেমন্ত যেন বাংলার একান্ত নিজস্ব সম্পদ। কারণ অন্য কোথাও এর উপস্থিতি তেমন লক্ষ্য করা যায় না। এই হেমন্তেরই অগ্রহায়ণ মাসে আসে বাঙালির চির আকাঙ্খিত নবান্ন উৎসব।

এসময় ধান কাটা শেষ হয়ে শুরু হয়; হয় চৈতালি ফসলের আয়োজন। শুকনো বাতাসে থাকে এক মন্থরতা। কার্তিক এবং অগ্রহায়ণ এই দুই মাস ধরে হেমন্ত ঋতুর ব্যাপ্তি। এই দুই মাসে প্রকৃতি ধীরে ধীরে স্নিগ্ধ শীতল থেকে আরো শীতলতর হতে থাকে। অবশেষে প্রকৃতিকে ঘাসের ওপর হীরের মতন চিকচিকে শিশির উপহার দিয়ে হেমন্ত বিদায় নেয়।

শীতকাল

শিশির শয্যায় হেমন্তের অবসানে আসে শীত। শীতকালে পদে পদে জড়িয়ে থাকে শীতাতুর জড়তা। তবুও শীত বাঙালির উৎসবের; অত্যন্ত কাছের প্রিয় এক ঋতু। এই সময়ে বাঙালি মেতে ওঠে নানা ধরনের মিলন মেলায়। বাজারে আসে নতুন নতুন ফল ও সবজি। প্রকৃতির গাছপালা নিজের জীর্ণ পুরাতনকে ঝরিয়ে ফেলে নতুন রূপে সেজে ওঠার জন্য প্রস্তুত হয়।

ঋতুরাজ বসন্ত

সকল ঋতুর অবসানে বছরের অন্তিম লগ্নে আগমন ঘটে বসন্তের। এর উজ্জ্বল আলোর ধারায় চারিদিক হয় উদ্ভাসিত। শীতে ঝরে যাওয়া জীর্ণ প্রকৃতি নবকলেবর সেজে ওঠে। গাছপালাতে লাগে নতুন সবুজের ছোঁয়া। প্রস্ফুটিত শিমুল পলাশের অর্ঘ্যে আগমন ঘটে বাগদেবী সরস্বতীর। বাঙ্গালী গৃহবাসী দ্বার খুলে মেতে ওঠে নতুন রঙের খেলায়। আর কোকিলের কুহুতান এই অনাবিল আনন্দে এক নতুন মাত্রা যোগ করে দেয়।

উপসংহার

বাংলার ঋতু পরিক্রমা কেবল প্রকৃতির রূপ পরিবর্তনের ধরাবাঁধা পটচিত্র মাত্র নয়। বাংলার ঋতুচক্র বাঙালির চেতনাকে মায়াময় কবিত্বে ভরে দিয়ে যায়। প্রকৃতির এই ঋতুচক্রে বাঙালির জীবন সুখ দুঃখে মিলেমিশে আবর্তিত হয়।

ঋতুচক্রের কারণে যেমন প্রকৃতি নতুন নতুন সাজে সজ্জিত হয় তেমন কখনও অনাবৃষ্টির কারণ খরা বা কখনো অতিবর্ষনে বন্যাও হয়ে থাকে। বছরজুড়ে বৈচিত্র্যময় আবর্তনে এই ঋতুচক্র আমাদের যেন দুঃখকে জয় করে সুখের প্রতিষ্ঠার মূলমন্ত্রই শিখিয়ে দিয়ে যায়।

আরো পড়তে: জলবায়ু কাকে বলে

বাংলাদেশের ষড়ঋতু রচনা, বাংলাদেশের ঋতু বৈচিত্র্য রচনা

ভূমিকা

ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ । গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত,শীতও বসন্ত। এ ছয় ঋতুর আবর্তন বাংলাদেশকে বৈচিত্র্যময় করে তোলে । প্রত্যেকটি ঋতুরই রয়েছে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য । এক এক ঋতু আমাদের জীবনে আসে এক এক রকম ফুল, ফল আর ফসলের সম্ভার নিয়ে । বাংরার প্রকৃতিতে ষড়ঋতুর পালাবদল আলপনা আঁকে অফুরন্ত সৌন্দর্যের।তাতে আমাদের চোখ জুড়িয়ে যায়, আনন্দে উদ্বেল হয়ে উঠে হৃদয়।গ্রীষ্মের দাবদহ,বর্ষার সজল মেঘের বৃষ্টি,শরতের আলো–ঝলমলে স্নিগ্ধ আকাশ,হেমন্তের ফসলভরা মাঠ,শীতের শিশিরভেজা সকাল আর বসন্তের পুষ্প সৌরভ বাংলার প্রকৃতি ও জীবনে আনে বৈচিত্র্যের ছোঁয়া ।ঋতুচক্রের আবর্তনে প্রকৃতির এ সাজবদল বাংলাদেশকে রূপের রানীতে পরিণত করেছে ।

ঋতুচক্রের আবর্তন

বাংলাদেশের ঋতু পরিবর্তনের মূলে রয়েছে জলবায়ুর প্রভাব ও ভৌগোলিক অবস্থান । এ দেশের উত্তরে সুবিস্তৃত হিমালয় পর্বতমালা , দক্ষিণে প্রবাহিত বঙ্গোপসাগর । সেখানে মিলিত রয়েছে হাজার নদীর স্রোতধারা ।মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে হয় বৃষ্টি । বৃষ্টির ধারা এ দেশের মাটিকে করে উর্বর , ফুল ও ফসলে করে সুশোভিত । নদীর স্রোত বয়ে আনে পলিমাটি ।সে মাটির প্রাণরসে প্রাণ পায় সবুজ বন- বনানী, শ্যামল শস্যলতা । তার সৌন্দর্যে এ দেশের প্রকৃতি হয়ে উঠে অপরূপ । নব নব সাজে সজ্জিত হয়ে এ দেশে পরপর আসে ছয়টি ঋতু ।এমন বৈচিত্রময় ঋতুর দেশ হয়তো পৃথিবীর আর কোথা ও নেই।

ঋতু পরিচয়

বর্ষপঞ্জির হিসেবে বছরের বার মাসের প্রতি দুই মাসে এক এক ঋতু।বৈশাখ –জৈষ্ঠ দুই মাস গ্রীষ্মকাল,ভাদ্র-আশ্বিন শরৎকাল,কার্তিক অগ্রহায়ণ হেমন্তকাল,পৌষ–মাঘ শীতকাল এবং ফাল্গুন–চৈত্র বসন্তকাল ।তবে ঋতুর পালাবদল সবসময় মাসের হিসেব মেনে চলে না।তা ছাড়া ঋতুর পরিবর্তন রাতারাতি বা দিনে দিনেও হয় না।অলক্ষে বিদায় নেয় একঋতু,আগমন ঘটে নি:শব্দে নতুন কোন ঋতুর।প্রকৃতির এক অদৃশ্য নিয়মে যেন বাঁধা ঋতুচক্রের এই আসা- যাওয়া ।

গ্রীষ্ম

ঋতু-পরিক্রমার প্রথম ঋতু গ্রীষ্মকাল । গ্রীষ্মে বাংলাদেশের রূপ হয়ে ওঠে রুক্ষ ও শুষ্ক । প্রচন্ড খরতাপ আর খাঁ খাঁ রোদ্দুরে মাঠ-ঘাট চৌচির হয়। নদী-নালা খাল –বিল শূকিয়ে যায়। কখনো তপ্ত বাতাসে যেন আগুনের হলকা ছুটতে থাকে । ক্লান্তি আর তৃঞ্চায় বুক শুকিয়ে আসে পথিকের । কখনো উত্তর-পশ্চিম আকাশের কোণে কালো হয়ে মেঘ জমে। হঠাৎ ধেয়ে আসে কালবৈশাখী ঝড়। বছরের পুরোনো সব আবর্জনা ধুয়ে মুছে যায়। জ্যৈষ্ঠ্য আসে ফলের সম্ভার নিয়ে । আম,জাম,কাঁঠাল,আনারস,লিচু ইত্যাদি নানারকম মৌসুমি ফলের সমারোহ গ্রীষ্মঋতুকে করে তোলে রসময়।

বর্ষা

গ্রীষ্মের প্রচন্ড তাপদাহের পর আসে বর্ষা।আকাশে দেখা দেয় সজল-কাজল মেঘ।অঝোর ধারায় নামে বৃষ্টি।পৃথিবীতে প্রাণের সাড়া।আষাঢ়- শ্রাবণের বর্ষণে জেগে ওঠে বৃক্ষলতা ।কথনো একটানা বৃষ্টিতে খাল-বিল,পুকুর -নদী সব কানায় কানায় ভরে ওঠে । বর্ষার পল্লিপ্রকৃতি তখন এক অপরূপ সৌন্দর্যে উদ্ভাসিত হয় । সে রূপ ধরা পড়েছে রবীন্দ্রনাথের কবিতায় :

নীল নবঘনে আষাঢ় গগনে তিল ঠাঁই আর নাহি রে

ওগো আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে ।

বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর

আউশের খেত জলে ভরভর

কালি – মাখা মেঘে ওপারে আাঁধার ঘনিয়াছে দেখ চাহি রে ।

বর্ষায় বাংলাদেশের নিচু এলাকাগুলো পানিতে ডুবে যায়।নদীতে দেখা দেয় ভাঙন।বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা দেয় বন্যা।এমনকি শহরাঞ্চল জলমগ্ন হয়ে পড়ে।বর্ষায় গরিব মানুষের দু:খ–কষ্ট বেড়ে যায়। মানুষের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হয় ।

শরৎ

শরৎকাল বাংলাদেশের এক ঝলমলে ঋতু।বর্ষার বৃষ্টি– ধোয়া আকাশ শরতে হয়ে ওঠে নির্মল। তাই শরতের আকাম থাকে নীল।শিমুল তুলার মত সাদা মেঘ ভেসে বেড়ায় আকাশে।এ সময় শিউলি ফুল ফোটে,নদীর তীরে ফোটে সাদা কাশফুল।নির্মল আকাশে শরতের জ্যোৎস্না হয় অপরুপ ও মনলোভা । ঘাসের বুকে শিশিরের মৃদু ছোঁয়ায় স্নিগ্ধ হয়ে ওঠে শরতের সকাল।

হেমন্ত

হেমন্ত বাংলাদেশের ফসল–সমৃদ্ধ ঋতু।তখন সোনার ফসলে সারা মাঠ ভরে থাকে।কৃষকের মুখে থাকে হাসি ।কাস্তে হাতে ধান কাটাতে ব্যস্ত থাকে কৃষক।নতুন ফসল ওঠায় ঘরে ঘরে ব্যস্ত থাকে কৃষক ।নতুণ ফসল ওঠায় ঘরে ঘরে শুরু হয় নবান্নের উৎসব।পাকা ধানের সোনালি দৃশ্য সত্যি মনোমুগ্ধকর । সন্ধ্যা ও সকালে চারদিকে ঘন হয়ে কুয়াশা নামে।এসময় থেকে শীতের আমেজ পাওয়া যায় ।

শীত

শীত বাংলাদেশের হিমশীতল ঋতু।শীত আসে কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে।শতে বিবর্ণ হয়ে গাছের পাতা ঝরে পড়ে।সকাল হলেও অনেক সময় সূর্যের মুখ দেখা যায় না।শীতে জড়সড় হয়ে যায় মানুষও প্রাণিকুল।শতের প্রচন্ডতা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সবাই গরম কাপড় পরে।দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে শীতের প্রকোপ থাকে বেশি । শীতে বেশি কষ্ট পায় আশ্রয়হীন, শীতবস্ত্রহীন দরিদ্র মানুষ ।শীত কেবল হীমশীতল বিবর্ণ ঋতু নয় ।শীতকালের প্রকৃতি নানারকম শাকসবজির সম্ভার নিয়ে আসে । গ্রামবাংলায় এ সময় খেজুর রস ও পিঠা –পায়েস খাওয়ার ধুম পড়ে যায় ।

বসন্ত

বসন্তকে বলা হয় ঋতুরাজ ।শীতের রুক্ষ,বিবর্ণ দিন পেরিয়ে বসন্ত আসে বর্ণিল ফুলের  সম্ভার নিয়ে।বাংলার নিসর্গলোক এ সময় এক নতুনসাজে সজ্জিত হয়।পুষ্প ও পল্লবে ছেয়ে যায় বৃক্ষশাখা, গাছে গাছে আমের মুকুল আর ফুলে ফুলে মৌমাছির গুঞ্জন শোনা যায়। মৃদুমন্দ দখিনা বাতাস আর কোকিলের কুহুতান বসন্তের এক অপরূপ মার্ধুয সৃষ্টি করে ।

উপসংহার

বাংলাদেশ বিচিত্র সৌন্দর্যের লীলাভুমি ।ঋতু পরিক্রমায় এখানে দেখা যায় বৈচিত্রময় রূপ । গ্রীষ্মের রুক্ষ প্রকৃতি, বর্ষার জলসিক্ত জীবন,শরতের কাশফুল,হেমন্তের নবান্নের উৎসব,শীতের কুয়াশামাখা সকাল আর বসন্তের পুষ্প–পল্লব ষড়ঋতুর ভিন্ন ভিন্ন রূপ বাংলাদেশকে করেছে বিচিত্ররূপণী।

আরো অন্যান্য সরকারি স্কিম সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | ঋতু

Q1. ঋতু কয়টি ও কি কি

Ans – পৃথিবীতে মোট ৬ টি ঋতু রয়েছে, যেগুলি হল গ্রীষ্ম, শীত, বর্ষা, শরৎ, বসন্ত ও হেমন্ত। এই ৬ টি ঋতু বছরের মোট বারো মাসে আমরা প্রত্যক্ষ করে থাকি, প্রত্যেকটি ঋতু বছরে দুটি মাস কেন্দ্র করে স্থায়ী হয়। 

Q2. বর্ষা ঋতু কাকে বলে

Ans – ব্যুৎপত্তিগতভাবে “বর্ষা” শব্দটি এসেছে আরবি শব্দ মৌসিম থেকে, যার অর্থ ঋতু। সাধারণত, সারা বিশ্বে, বর্ষাকাল গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে মোটামুটি 20° N এবং 20° S-এর মধ্যে অনুভূত হয়।

Q3. ঋতু শব্দের অর্থ কি

Ans – প্রকৃতির অবস্থা অনুযায়ী সময়ের পবিতর্বনকেই ঋতু বলে।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।