উদ্ভিদ কাকে বলে, উদ্ভিদ কোষ কাকে বলে

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

প্রশ্নপত্র

উদ্ভিদ কাকে বলে

যেসব জীবের দেহ মূল, কান্ড, পাতায় বিভক্ত এবং যারা অধিকাংশই সূর্যের আলো থেকে শক্তি নিয়ে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় নিজের খাদ্য নিজেই তৈরী করতে পারে এবং এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাফেরা করতে পারে না তাদেরকে উদ্ভিদ বলে ।

যেসব জীবের দেহ মূল, কান্ড, পাতায় বিভক্ত এবং যাদের অধিকাংশই সূর্যের আলো থেকে সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় নিজের খাদ্য নিজেই তৈরি করতে পারে এবং একস্থান থেকে অন্য স্থানে চলাফেরা করতে পারে না তাদেরকে উদ্ভিদ বলে। যেমন – আম গাছ, জাম গাছ, কাঁঠাল গাছ ইত্যাদি।

এক কথায় বলা যায়, যা মাটি ভেদ করে উঠে কিন্তু এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাফেরা করতে পারে না তাকে উদ্ভিদ বলা হয়। যেমন – মরিচ, জাম, আম,লিচু, সুপারি গাছ ইত্যাদি।

উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য

  • উদ্ভিদের মূল, কান্ড, পাতা ও শাখা-প্রশাখা রয়েছে।
  • এরা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাচল করতে পারে না।
  • এরা মূলের সাহায্যে মাটিতে আটকে থাকে।
  • সূর্যের আলো ও পানি ব্যবহার করে এরা নিজেদের খাদ্য নিজেরাই তৈরি করতে পারে।
  • এরা দেখতে পায় না, শুনতে পায় না এবং ঘ্রাণ নিতে পারে না।
  • সূর্যালোক থেকে শক্তি গ্রহণ করে।
  • বেশিরভাগ উদ্ভিদ মাটিতেই প্রোথিত হয়।
  • এরা তুষারময় পাহাড়ের ঢাল থেকে শুষ্ক, গরম মরুভূমি পর্যন্ত, পৃথিবীর প্রায় সবজায়গায় বেঁচে থাকতে পারে।
  • সূর্যের আলো ও পানি ছাড়া উদ্ভিদ বাঁচতে পারে না।
  • উদাহরণঃ ধান, গম, কাঁঠাল গাছ, ভুট্টা, আম গাছ ইত্যাদি।

উদ্ভিদ রাজ্যের শ্রেণীবিন্যাস

পৃথিবীর সব ধরণের উদ্ভিদ নিয়ে উদ্ভিদ জগৎ গঠিত হয়েছে। উদ্ভিদকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো –

  • অপুষ্পক বা ক্রিপটোগ‍্যামস উদ্ভিদ (Cryptogams)
  • সপুষ্পক বা ফ্যানারােগ্যামস উদ্ভিদ (Phanerogams)

অপুষ্পক উদ্ভিদ কাকে বলে

যেসব উদ্ভিদের ফুল , ফল ও বীজ গঠিত হয় না তাদের অপুষ্পক উদ্ভিদ বলে। যেমন – শৈবাল, ছত্রাক ইত্যাদি।

অপুষ্পক উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য

  • অপুষ্পক উদ্ভিদের ফুল, ফল হয় না।
  • এসব উদ্ভিদের কাণ্ড ও পাতা নেই এবং কিছু কিছু উদ্ভিদের মূলও নেই।
  • অধিকাংশ উদ্ভিদ নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে না।
  • অপুষ্পক উদ্ভিদের মূল মাটির গভীরে যায় না।
  • এসব উদ্ভিদের আকার ছোট ও নরম হয়। উদাহরণ– শৈবাল, ছত্রাক।

অপুষ্পক উদ্ভিদকে আবার তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হলো—

  • থ্যালােফাইটা বা সমাঙ্গদেহী
  • ব্রায়ােফাইটা এবং
  • টেরিডােফাইটা

থ্যালােফাইটা বা সমাঙ্গদেহী, সমাঙ্গদেহী উদ্ভিদ কাকে বলে

এদের দেহ মূল , কাণ্ড ও পাতায় বিভক্ত নয়। ক্লোরােফিলের উপস্থিতি অনুসারে এদেরকে আবার দুভাগে বিভক্ত করা হয়। যথা—

  • শৈবাল
  • ছত্রাক

শৈবাল : শৈবাল ক্লোরোফিল যুক্ত , স্বভােজী সমাঙ্গদেহী উদ্ভিদ। যেমন –  স্পাইরোগাইরা (সূত্রাকার শৈবাল) , ক্ল্যামাইডােমােনাস (এককোশী শৈবাল) , ভলভক্স (উপনিবেশ গঠনকারী শৈবাল)।

ছত্রাক : এ জাতীয় উদ্ভিদ ক্লোরােফিল বিহীন এবং মৃতজীবী বা পরজীবী সমাঙ্গদেহী। যেমন –  ইস্ট (এককোশী ছত্রাক), মিউকর (অণু সূত্রাকার ছত্রাক), পেনিসিলিয়াম, অ্যাগারিকাস ইত্যাদি।

ব্রায়ােফাইটা

এ ধরণের উদ্ভিদ ‘মস ’ জাতীয়। এসব উদ্ভিদের দেহে কাণ্ড ও পাতা ও মূল থাকে না । মূলের পরিবর্তে এদের রাইজয়েড থাকে । এদের দেহে ক্লোরােফিল থাকায় এরা স্বভােজী । সংবহন কলাতন্ত্র অনুপস্থিত এবং জননাঙ্গ বহু কোশযুক্ত হয়। যেমন– পােগােনেটাম, রিকসিয়া, মারক্যানসিয়া, পলিট্রিকাম ইত্যাদি কয়েকটি সাধারণ মস।

টেরিডােফাইটা

এরা ‘ফার্ন’ জাতীয় উদ্ভিদ। এসব উদ্ভিদের দেহে মূল , কাণ্ড ও পাতা উপস্থিত থাকে। এদের ক্লোরােফিল থাকায় এরা স্বভােজী উদ্ভিদ । অপুষ্পক উদ্ভিদদের মধ্যে ফার্ন সবচেয়ে উন্নত। এর কারণ হলো এদের দেহে সংবহন কলাতন্ত্র উপস্থিত রয়েছে। যেমন– ড্রায়ােপটেরিস,  মারসিলিয়া, লাইকোপােডিয়াম, সেলাজিনেলা ইত্যাদি ফার্ন জাতীয় উদ্ভিদ।

সপুষ্পক উদ্ভিদ কাকে বলে

যেসব উদ্ভিদের ফুল , ফল ও বীজ গঠিত হয় , তাদের সপুষ্পক উদ্ভিদ বলে। যেমন– আম, জাম, সুপারি, কাঁঠাল গাছ ইত্যাদি।

সপুস্পক উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য

  • সপুস্পক উদ্ভিদের ফুল ও ফল হয়
  • এসব উদ্ভিদের মূল, কাণ্ড ও পাতা আছে।
  • এসব উদ্ভিদ নিজের খাদ্য নিজেই তৈরি করতে পারে।
  • এসব উদ্ভিদ আকারে বড়, শক্ত ও মজবুত হয়।
  • এসব উদ্ভিদের মূল মাটির গভীরে প্রবেশ করে।

ফলের উৎপত্তি অনুসারে সপুষ্পক উদ্ভিদকে আবার দুভাগে ভাগ করা যায়। যথা–

  • ব্যক্তবীজী উদ্ভিদ
  • গুপ্তবীজী উদ্ভিদ

ব্যক্তবীজী

ব্যক্তবীজী উদ্ভিদের ফল সৃষ্টি না হওয়ায় বীজগুলি নগ্ন প্রকৃতির হয়ে থাকে। যেমন – সাইকাস, পাইনাস, নিটাম ইত্যাদি ব্যক্তবীজী উদ্ভিদ।

গুপ্তবীজী, গুপ্তবীজী উদ্ভিদ কাকে বলে

এ প্রকার উদ্ভিদের ফল সৃষ্টি হওয়ায় বীজগুলি ফলের মধ্যে আবৃত থাকে। যেমন – ধান, আজ, জাম, গম ইত্যাদি।

বীজপত্রের সংখ্যা অনুসারে গুপ্তবীজী উদ্ভিদ দুধরণের হয়ে থাকে। যথা —

  • একবীজপত্রী উদ্ভিদ
  • দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ

একবীজপত্রী উদ্ভিদ কাকে বলে

যেসব উদ্ভিদের বীজে একটিমাত্র বীজপত্র থাকে , তাদেরকে একবীজপত্রী উদ্ভিদ বলে । যেমন — ধান , ভুট্টা , গম , তাল , সুপারি , নারকেল ইত্যাদি একবীজপত্রী উদ্ভিদ।

দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ কাকে বলে

যেসব উদ্ভিদের বীজে দুটি বীজপত্র থাকে , তাদের দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ বলে । যেমন — আম , জাম , কাঁঠাল , মটর , ছােলা , রেড়ি , পাট , কলা ইত্যাদি দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ।

আকার ও কান্ডের গঠনের উপর ভিত্তি করে উদ্ভিদকে আবার ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলো –

  • গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ
  • বিরুৎজাতীয় উদ্ভিদ ও
  • বৃক্ষজাতীয় উদ্ভি

গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ কাকে বলে

যেসব উদ্ভিদের কান্ড শক্ত কিন্তু গুঁড়িহীন অর্থাৎ ক্ষুদ্র কান্ড বিশিষ্ট এবং মাটির সামান্য উপরে ঝোপের মতো শাখাপ্রশাখা সৃষ্টি করে, সেসব উদ্ভিদকে গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ বলে।

যেসব উদ্ভিদের কাণ্ড শক্ত কিন্তু বিক্ষের মতো দীর্ঘ ও মোটা নয়, এরা মাঝারি আকারের হয় এবং এদের কাণ্ড থেকে বহু শাখা-প্রশাখার সৃষ্টি হয়। এ উদ্ভিদগুলো দেখতে অনেকটা ঝোপের মতো দেখায়, এসকল উদ্ভিদকেই গুল্ম উদ্ভিদ বলে।

এরা মাঝারি আকারে হয়ে থাকে। শেকড় মাটির বেশি গভীরে যায় না। এদের গোড়া থেকেই শাখা-প্রশাখা বের হয়। গুল্ম উদ্ভিদ সাধারণত ঝোপবিশিষ্ট্য হয়। কিছু গুল্ম উদ্ভিদ ফুল ও ফল প্রদান করে। এগুলো অত্যন্ত সহিষ্ণু ও প্রায় সকল ধরনের মাটিতে জন্মে। গুল্ম উদ্ভিদ যেমন: জবা, রঙ্গন, গোলাপ, লেবু ইত্যাদি।

গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য

  • এ জাতীয় উদ্ভিদ সাধারণত মাঝারি আকারে হয়ে থাকে।
  • এদের কান্ড শক্ত।
  • এদের শেকড় মাটির বেশি গভীরে যায় না।
  • এদের গোড়া থেকেই শাখা-প্রশাখা বের হয়।
  • এ উদ্ভিদগুলো দেখতে অনেকটা ঝোপের মতো দেখায়।
  • কিছু কিছু গুল্ম উদ্ভিদ ফুল ও ফল প্রদান করে।
  • এগুলো অত্যন্ত সহিষ্ণু এবং এরা প্রায় সব ধরণের মাটিতে জন্মায়।
  • উদাহরণ: জবা, রঙ্গন, গোলাপ, লেবু ইত্যাদি।

গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ নাম

গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ যেমন– জবা, রঙ্গন, গোলাপ, বেলি, জুঁই,কাগজি লেবু, গন্ধরাজ ইত্যাদি।

বিরুৎজাতীয় উদ্ভিদ কাকে বলে

যে সব উদ্ভিদ আকারে ছোট এবং যাদের কাণ্ড নরম হয় তাদেরকে বিরুৎজাতীয় উদ্ভিদ বলে। যেমন – ধান, সরিষা, মরিচ, লাউ, কুমড়া, পুঁই শাক ঘাস, কচু ইত্যাদি।

বিরুৎজাতীয় উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য সমূহ

  • বিরুৎজাতীয় উদ্ভিদ আকারে ছোট হয়।
  • এদের কাণ্ড, শাখা-প্রশাখা নরম হয়।
  • এদের শেকড় মাটির তেমন গভীরে যায় না।
  • উদাহরণ: মরিচ গাছ, লাউ গাছ, ধান, সরিষা, ইত্যাদি।

বৃক্ষজাতীয় উদ্ভিদ কাকে বলে

যেসব উদ্ভিদের প্রধান কাণ্ড দীর্ঘ, মোটা ও শক্ত হয় এবং যাদের শেকড় মাটির গভীরে প্রবেশ করে সেসব উদ্ভিদকে বৃক্ষজাতীয় উদ্ভিদ বলে। যেমন: আম, কাঁঠাল, বেল গাছ ইত্যাদি।

বৃক্ষজাতীয় উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য সমূহ

  • বৃক্ষের কাণ্ড থেকে শাখা-প্রশাখা এবং পাতা হয়।
  • এ উদ্ভিদের আকার দীর্ঘ হয়।
  • এ জাতীয় উদ্ভিদের শিকড় মাটির গভীরে প্রবেশ করে।
  • এদের কান্ড শক্ত ও গুঁড়িযুক্ত হয়।
  • উদাহরণঃ আম গাছ, কাঁঠাল গাছ, বেল গাছ ইত্যাদি।

পুষ্টি অনুসারে উদ্ভিদ জগতের শ্রেণিবিভাগ, পুষ্টি অনুসারে উদ্ভিদ জগৎ দু ধরণের। এগুলি হলো—

  • স্বভোজী পুষ্টি সম্পন্নকারী উদ্ভিদ
  • পরভোজী পুষ্টি সম্পন্নকারী উদ্ভিদ

স্বভােজী পুষ্টি সম্পন্নকারী উদ্ভিদ

যে সকল উদ্ভিদ নিজেদের পুষ্টি নিজেরাই সম্পন্ন করতে পারে তাদেরকে, স্বভোজী পুষ্টি সম্পন্নকারী উদ্ভিদ বলে। যেমন – শৈবাল , মস , ফার্ন , ব্যক্তবীজী ও গুপ্তবীজী উদ্ভিদসমূহ ইত্যাদি।

পরভােজী পুষ্টি সম্পন্নকারী উদ্ভিদ

যেসব উদ্ভিদ নিজেদের পুষ্টি নিজেরা সম্পন্ন করতে পারে না তাদেরকে পরভোজী পুষ্টি সম্পন্নকারী উদ্ভিদ বলে। যেমন —

  • মৃতজীবী উদ্ভিদ
  • পরজীবী উদ্ভিদ
  • মিথোজীবী উদ্ভিদ
  • পতঙ্গভুক উদ্ভিদ

মৃতজীবী উদ্ভিদ

যেসব উদ্ভিদ মৃত জৈব বস্তু থেকে পুষ্টিরস সংগ্রহ করে পুষ্টি সম্পন্ন করে , তাদের মৃতজীবী উদ্ভিদ বলা হয়। যেমন – বিভিন্ন প্রকার ছত্রাক এ জাতীয় উদ্ভিদ।

পরজীবী উদ্ভিদ

যেসব উদ্ভিদ অন্য কোন সজীব পোষক উদ্ভিদ থেকে পুষ্টি রস শোষণ করে পুষ্টি সম্পন্ন করে , তাদের পরজীবী উদ্ভিদ বলা হয় । উদাহরণস্বরূপ  স্বর্ণলতা , র‍্যাফ্লেসিয়া , ফাইটোপথােরা ইত্যাদি উদ্ভিদের কথা বলা যায়।

মিথােজীবী উদ্ভিদ

যেসব উদ্ভিদ পুষ্টির জন্য অপর কোনাে জীবের সাহচর্যে জীবন ধারণ করে , তাদের মিথোজীবী উদ্ভিদ বলা হয় । যেমন –  লাইকেন , রাইজোবিয়াম ইত্যাদি।

পতঙ্গভুক উদ্ভিদ

যেসব উদ্ভিদ নাইট্রোজেন ঘটিত প্রােটিন জাতীয় খাদ্যের জন্য পতঙ্গদের দেহ থেকে পুষ্টিরস শােষণ করে , তাদের পতঙ্গভুক উদ্ভিদ বলা হয়। যেমন – কলশপত্রী , ড্রসেরা , পাতাঝাঁজি ইত্যাদি।

উদ্ভিদের শ্রেণীবিন্যাসের প্রয়োজনীয়তা

বিভিন্ন কারণে উদ্ভিদের শ্রেণীবিন্যাস করা হয়। শ্রেণীবিন্যাসের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। নিম্নে এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করা হলো –

  • সারা পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে ৩ লক্ষ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। এদেরকে আলাদাভাবে জানা অসম্ভব। তাই আমাদের জানার প্রয়োজনেই উদ্ভিদের শ্রেণীবিভাগ করা প্রয়োজন। শ্রেণীবিন্যাসের মাধ্যমে সহজে সকল উদ্ভিদ সম্পর্কে জানা যায়।
  • উদ্ভিদ শ্রেণীবিন্যাসের কারণে উদ্ভিদ শনাক্ত করা সহজ হয়।
  • উদ্ভিদ সম্পর্কিত জ্ঞানকে সংক্ষেপে প্রকাশ করতে সাহায্য করে।
  • উদ্ভিদের বিভিন্ন কাল নির্ধারণ করতে সাহায্য করে।
  • শ্রেণীবিন্যাসের মাধ্যমেই উদ্ভিদ সম্পর্কে জ্ঞান, বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্তকে সহজ উপায়ে সংরক্ষণ করা যায় এবং প্রয়োজন অনুযায়ী প্রয়োগ করা যায়।
  • উদ্ভিদের নির্দিষ্ট অবস্থান জানার জন্য শ্রেণীবিন্যাসের প্রয়োজন।
  • কৃষি, বন ও উদ্যান পালন বিদ্যায় উদ্ভিদের শ্রেণীবিন্যাস সম্পর্কিত জ্ঞান প্রয়োজন।
  • বিভিন্ন ওষুধ তৈরির জন্য ভেষজ উদ্ভিদ শনাক্তকরণ ও বাছাই করতে শ্রেণীবিন্যাসের জ্ঞান প্রয়োজন।
  • বিশ্বের সব উদ্ভিদকে সহজে আন্তর্জাতিক পরিচিতি প্রদানে শ্রেণীবিন্যাসের জ্ঞান প্রয়োজন। ইত্যাদি।

উদ্ভিদের খাদ্য তৈরিতে কি কি প্রয়োজন

উদ্ভিদের বেঁচে থাকার জন্য ৪টি বেসিক উপাদান দরকার। সেগুলো হলো, মাটি, পানি, বায়ু ও সূর্যালোক। প্রযুক্তির মাধ্যমে আপনি মাটি ছাড়া আপনি গাছ লাগাতে পারবেন, কিন্ত বাকি ৩টি ছাড়া উপায় নেই।

উদ্ভিদের অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য উপাদানগুলো মূলত দুভাগে বিভক্ত।

  • ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট
  • মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট

ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট বা ম্যাক্রো উপাদান কী?

উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য যেসব উপাদান বেশি পরিমাণে দরকার হয়, সেগুলোকে ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্ট বা ম্যাক্রো উপাদান বলে। যেমন—নাইট্রোজেন (N), পটাসিয়াম (K), ফসফরাস (P), ক্যালসিয়াম (Ca), ম্যাগনেসিয়াম (Mg), কার্বন (C), হাইড্রোজেন (H), অক্সিজেন (O), সালফার (S) ও লৌহ (Fe)।

মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট বা মাইক্রো উপাদান কী

উত্তর : উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য যেসব উপাদান অত্যন্ত সামান্য পরিমাণে প্রয়োজন হয় তাদের মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট বা মাইক্রো উপাদান বলে। যেমন—দস্তা বা জিংক (2n), ম্যাংগানিজ (Mn), মোলিবডেনাম (Mo), বোরন (B), তামা বা কপার (Cu) ও ক্লোরিন (Cl)।

১৬টি অত্যাবশকীয় উপাদানের মধ্যে-

ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টগুলোর মধ্যে কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেন সরবরাহ হয় বাতাস ও পানি থেকে, এগুলো উদ্ভিদের গঠনগত উপাদান। নাইট্রোজেন, ফরফরাস, পটাশিয়াম, এবং ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম ও সালফার আসে মাটি থেকে।

গৌণ পুষ্টি, মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টগুলোর মধ্যে বোরন, আয়রণ, কপার, মলিবডেনাম, ম্যাংগানিজ, ক্লোরিন ও জিঙ্ক আসে মাটি থেকে।

উদ্ভিদের পুষ্টি উপাদান কয়টি

উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য মোট ২০টি অপরিহার্য বা উপকারী খনিজ পদার্থ (পুষ্টি উপাদান) আছে।

  • এই তিনটি উপাদান বাতাস এবং পানিতে পাওয়া যায়।
    • কার্বন (C)
    • হাইড্রোজেন (H)
    • অক্সিজেন (O)
  • এই ৬টি পুষ্টিদায়ক পদার্থ উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য প্রচুর পরিমাণে লাগে।
    • নাইট্রোজেন (N)
    • ফসফরাস (P)
    • পটাসিয়াম (K)
    • ক্যালসিয়াম (Ca)
    • ম্যাগনেসিয়াম (Mg)
    • সালফার (S) বা গন্ধক

  • এ ছাড়াও কিছু পুষ্টিদায়ক পদার্থ সামান্য পরিমাণে প্রয়োজন হয়। এ ধরনের উপাদানগুলির মধ্যে যেগুলি অপরিহার্য, সেগুলি হল– বোরন (B), ক্লোরিন (Cl), কপার (Cu) বা তামা, আয়রন (Fe) বা লোহা, ম্যাঙ্গানিজ (Mn), সোডিয়াম (Na), জিঙ্ক (Zn) বা দস্তা, মলিবডেনাম (Mo) ও নিকেল (Ni)। অন্যান্য উপকারী উপাদানগুলি হল সিলিকন (Si) ও কোবাল্ট (Co)।

উপকারী উপাদানগুলি সব উদ্ভিদের ক্ষেত্রে অপরিহার্য নয়, কয়েকটির ক্ষেত্রে অপরিহার্য। সামান্য পরিমাণে প্রয়োজন হয়, এমন উপাদানগুলির ক্ষেত্রে উপকারী এবং অপরিহার্যের মধ্যে তফাৎ করাটা কঠিন। যেমন, কোবাল্ট কলাই শস্যে নাইট্রোজেনের পরিমাণ স্থির রাখতে সাহায্য করে। দেখা গেছে, উদ্ভিদের তাপ ও খরা পরিস্থিতি সহ্য করার ক্ষমতা বাড়ায় কোষের দেওয়ালে জমে থাকা সিলিকন। পাশাপাশি সিলিকন কীটপতঙ্গ ও ছত্রাকের আক্রমণ থেকেও উদ্ভিদকে রক্ষা করে।

সিলিকন একটি উপকারী পদার্থ হিসেবে অতিরিক্ত ম্যাঙ্গানিজ, লোহা, ফসফরাস ও অ্যালুমিনিয়ামের বিষক্রিয়া রোধ করে। দস্তার অভাবও পূরণ করে। উদ্ভিদের পুষ্টি সংক্রান্ত বিষয়টিকে যদি একটি সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে দেখা যায়, তা হলে একে কখনওই অপরিহার্য পুষ্টিদায়ক পদার্থ নিয়ে আলোচনার মধ্যে বেঁধে রাখা যাবে না। এর মধ্যে যাবতীয় উপকারী উপাদানগুলিকেও রাখতে হবে, কারণ সেগুলোকে বাদ দিয়ে উদ্ভিদের সুষম বেড়ে ওঠা সম্ভব হয় না।

বিশ্লেষণী রসায়নবিদ্যার বিকাশ এবং পুষ্টিদায়ক পদার্থের উৎপাদন থেকে দূষিত উপাদানগুলিকে বাদ দিতে পারলে অপরিহার্য উপাদানের সংখ্যা ভবিষ্যতে অনেকটাই বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে।

উদ্ভিদের মুখ্য পুষ্টি উপাদান কয়টি, সুষম পুষ্টির প্রয়োজনীয় উপাদান

উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য অপরিহার্য ও উপকারী পুষ্টিদায়ক পদার্থগুলি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল। এগুলির মধ্যে কোনও একটি না থাকলেই, উদ্ভিদের বৃদ্ধির ক্ষেত্রে অস্বাভাবিকতা দেখা দেবে। পুষ্টির অভাবজনিত লক্ষণগুলি চোখে পড়বে এবং উদ্ভিদ স্বাভাবিক ভাবে জনন প্রক্রিয়া চালাতে পারবে না।

ম্যাক্রো নিউট্রিয়েন্টস

  • নাইট্রোজেন উদ্ভিদের জীবনে প্রয়োজনীয় প্রোটিন, গ্রন্থিরস (হরমোন), ক্লোরোফিল, ভিটামিন এবং উৎসেচকগুলিতে নাইট্রোজেন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। নাইট্রোজেন আত্মীকরণ করাটা কাণ্ড ও পাতার বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত জরুরি। অতিরিক্ত নাইট্রোজেনে যেমন ফুল, ফল ফুটতে দেরি হয়, তেমনই নাইট্রোজেনের ঘাটতি হলে গাছের ফলন ক্ষমতা কমে যায়, পাতা হলুদ হয়ে যায় এবং বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

  • ফসফরাস বীজের অঙ্কুরোদ্গম, সালোকসংশ্লেষ, প্রোটিনের গঠন সহ উদ্ভিদের সব রকমের বৃদ্ধি এবং বিপাক প্রক্রিয়ার জন্য ফসফরাস প্রয়োজনীয়। ফুল ও ফল হওয়ার জন্যও এটা জরুরি। পিএইচ মাত্রা ৪-এর কম হলে ফসফেট রাসায়নিক ভাবে জৈব উপাদানযুক্ত মাটিতে আটকে থাকে। ফসফরাসের অভাবে কাণ্ড ও পাতার রঙ নীলাভ লাল হয়ে যায়, পরিণতি ও বৃদ্ধির হার কমে যায়। ফুল ও ফলের সংখ্যা কমে যায়। ফল-ফুল তাড়াতাড়ি ঝরে য়ায়। উদ্ভিদের শিকড়ের খুব কাছে ফসফরাস প্রয়োগ করা উচিত যাতে উদ্ভিদ তা ব্যবহার করতে পারে। দস্তা (জিঙ্ক) বাদ দিয়ে প্রচুর পরিমাণে ফসফরাস ব্যবহার করলে জিঙ্কের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।

  • পটাসিয়াম চিনি, শর্করা, কার্বোহাইড্রেট গঠন, প্রোটিনসংশ্লেষ, মূল ও উদ্ভিদের অন্যান্য অঙ্গে কোষ বিভাজনের জন্য পটাসিয়াম অত্যন্ত জরুরি। জলের ভারসাম্য রক্ষা, কাণ্ডের দৃঢ়তা, ঠাণ্ডা সহ্য করা, ফল ও সবজির গন্ধ ও রঙের তীব্রতা বাড়ানো, ফলে তেলের পরিমাণ বাড়ানোর জন্য পটাসিয়াম প্রয়োজনীয়। বিশেষত পাতাবহুল ফসলের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব অসীম। পটাসিয়ামের অভাবে ফলন কমে যায়, পাতায় ছোপ ছোপ দাগ হয়, পাতা কুঁকড়ে যায়, পাতার ঝলসানো চেহারা হয়ে যায়।

  • সালফার অ্যামিনো অ্যাসিড, প্রোটিন, ভিটামিন এবং উৎসেচকের একটি উপাদান হল সালফার। ক্লোরোফিল তৈরিতে এবং বহু সবজির গন্ধ সৃষ্টির ক্ষেত্রে সালফারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সালফারের অভাবে পাতার রং হাল্কা সবুজ হয়ে যায়। অনেক সময়েই মাটি থেকে সালফার বেরিয়ে যায়। তাই সার দেওয়ার সময় আলাদা করে সালফার দিতে হয়। কোনও কোনও এলাকায় সরবরাহ করা জলে সালফার থাকে।

  • ম্যাগনেসিয়াম এটি ক্লোরোফিল অণুর একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এবং কার্বোহাইড্রেট, শর্করা ও চর্বি উৎপাদনে এটি উদ্ভিদের উৎসেচকগুলিকে সহায়তা করে। ফল ও বাদাম ফলনে এটি ব্যবহৃত হয়, বীজের অঙ্কুরোদ্গমের জন্যও এটি জরুরি। ম্যাগনেসিয়ামের অভাবে উদ্ভিদ পাণ্ডু বর্ণ হয়ে যায়, পাতার রং হলুদ হয়ে যায়, পাতা ঝুঁকে পড়ে। গাছে জল দিলে ম্যাগনেসিয়াম বেরিয়ে যায়। গাছে সার দেওয়ার সময় তাই অবশ্যই ম্যাগনেসিয়াম প্রয়োগ করা উচিত। ঘাটতি মেটানোর জন্য ফোলিয়ার স্প্রে হিসাবে ম্যাগনেসিয়াম দেওয়া দরকার।

  • ক্যালসিয়াম এটি উৎসেচককে কার্যকর করে তোলে। এটি কোষ প্রাচীরের অন্যতম উপাদান। কোষের মধ্যে জল সঞ্চালনে সহায়তা করে, কোষের বৃদ্ধি এবং কোষ বিভাজনের জন্যও এটি জরুরি। নাইট্রোজেন এবং অন্যান্য খনিজ আত্মীকরণ করার জন্য কয়েকটি উদ্ভিদে ক্যালসিয়াম না থাকলেই নয়। ক্যালসিয়াম সহজেই আলাদা হয়ে বেরিয়ে যায়। কিন্তু উদ্ভিদ টিস্যুতে এক বার জমে গেলে ক্যালসিয়াম সেখান থেকে বেরোয় না। তাই উদ্ভিদের বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত ক্যালসিয়াম সরবরাহ করে যেতে হয়। ক্যালসিয়ামের অভাবে কাণ্ড, ফুল ও শিকড়ের বৃদ্ধি বাধাপ্রাপ্ত হয়। এর অভাবে বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিকৃতি, পাতা ও ফলে কালো দাগ দেখা দেয়। পাতার ধার ঘেঁষে হলুদ রঙ দেখা দিয়ে থাকে।

ম্যাইক্রো নিউট্রিয়েন্টস

  • লোহা বহু উৎসেচককে কার্যকর করার ক্ষেত্রে লোহা জরুরি। এটি ক্লোরোফিল সংশ্লেষে অনুঘটকের কাজ করে। উদ্ভিদের নবগঠিত অঙ্গগুলির জন্য এটি জরুরি। এর অভাবে পাতা বিবর্ণ হয়ে যায়, পরবর্তীতে পাতার রঙ হলুদ হয়ে যায় ও গাছের শিরা বড় হয়ে যায়। লোহা মাটি থেকে খুব সহজেই বেরিয়ে গিয়ে মাটির একেবারে তলার অংশে সঞ্চিত থাকে। মাটিতে ক্ষারের মাত্রা খুব বেশি হলে লোহা মাটিতে থাকলেও উদ্ভিদ তা ব্যবহার করতে পারে না। লোহা সহ পুষ্টিদায়ক অম্ল দ্রবণের প্রয়োগ এই সমস্যা মেটাতে পারে।

  • ম্যাঙ্গানিজ সালোকসংশ্লেষ, শ্বসন, নাইট্রোজেন বিপাকে উৎসেচকের কাজে ম্যাঙ্গানিজের প্রয়োজন। নতুন পাতায় ম্যাঙ্গানিজের অভাব ঘটলে পাতার রঙ হাল্কা সবুজ হয়ে যায় এবং অসংখ্য সবুজ শিরা দেখা দেয় (যেমন লোহার অভাবে হয়)। সমস্যা গভীর হলে সবুজ অঙ্গ সাদা হয়ে যায়, পাতা ঝরে যায়। গাছের শিরার পাশে বাদামি, কালো বা ধূসর ছোপ ছোপ হয়ে যায়। ভারসাম্যযুক্ত বা ক্ষার জাতীয় মাটিতে উদ্ভিদে ম্যাঙ্গানিজের অভাবজনিত লক্ষণ প্রকাশ পায়। অতিরিক্ত অম্লধর্মী মাটিতে এতটাই ম্যাঙ্গানিজ থাকে যে তা বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে।

  • বোরন কোষপ্রাচীর গঠন, ঝিল্লিকে ধরে রাখা, ক্যালসিয়াম গ্রহণ এবং অনেক ক্ষেত্রে শর্করার স্থানচ্যূতি ঘটানোয় বোরন সাহায্য করে। উদ্ভিদের অন্তত ১৬টি কাজে বোরন ভূমিকা পালন করে। এর মধ্যে রয়েছে ফুল ফোটা, পরাগরেণু বেরোনো, ফল ধরা, কোষ বিভাজন, জল ব্যবহার ও হরমোনের চলাচল। উদ্ভিদের গোটা জীবন জুড়েই বোরন প্রয়োজন। এর অভাবে কুঁড়ি ঝরে যায় এবং গাছে ছোপ ছোপ হয়ে যায়, পাতা পুরু হয় এবং কুঁকড়ে ভঙ্গুর হয়ে যায়। ফল, কন্দ ও মূল বিবর্ণ হয়ে যায়, ফেটে যায় এবং বাদামি ছোপ ধরে।

  • দস্তা এটি উৎসেচকের একটি উপাদান এবং বিভিন্ন উৎসেচকের কাজে সহায়ক ভূমিকা পালন করে (যেমন উদ্ভিদের বৃদ্ধি ঘটাতে একান্ত প্রয়োজনীয় অক্সিন)। শর্করার বিপাকক্রিয়া, প্রোটিনসংশ্লেষ এবং কাণ্ডের বৃদ্ধিতে এটি ভূমিকা রয়েছে। এর অভাবে পাতা কুঁকড়ে যায় ও পাণ্ডু বর্ণের হয়ে যায়। জিঙ্কের অভাব থেকে লোহার অভাবও দেখা দেয় এবং একই লক্ষণ প্রকাশ পায়। ক্ষয়প্রাপ্ত মাটি ও যেখানে পিএইচ মাত্রা ৫.৫ থেকে ৭-এর মধ্যে সেখানে জিঙ্কের অভাব ঘটে। এই মাত্রা বেশি কমিয়ে দিলে জিঙ্ক বেড়ে গিয়ে বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে।

  • তামা উদ্ভিদের শিকড়ে তামা জমে থাকে এবং নাইট্রোজেন বিপাকক্রিয়ায় সহায়তা করে। এটি বহু উৎসেচকের মধ্যে থাকে এবং যে সব উৎসেচক শর্করা ও প্রোটিন ব্যবহার করে, তাতেও অংশ নিতে পারে। এর অভাবে পাতার অগ্রভাগের পেছনের অংশ মরে যায় এবং পাতায় বাদামি ছোপ হয়ে যায়। জৈব উপাদানে তামা দৃঢ়বদ্ধ থাকে কিন্তু মাটি জৈব চরিত্রের হলে তামার অভাব হতে পারে। এটা মাটি থেকে হারিয়ে যায় না ঠিকই কিন্তু অনেক সময়ই পাওয়া যায় না। অতিরিক্ত তামায় বিষক্রিয়া ঘটে।

  • মলিবডেনাম যে সব উৎসেচক নাইট্রেটকে অ্যামোনিয়ায় রূপান্তরিত করে, সেগুলিতে মলিবডেনাম থাকে। এর অভাবে প্রোটিনসংশ্লেষ বন্ধ হয়ে যায় এবং উদ্ভিদের বৃদ্ধি থেমে যায়। শিকড়ে নাইট্রোজেন জোগান দেয় যে ব্যাকটেরিয়া, তারও মলিবডেনাম প্রয়োজন হয়। এর অভাবে বীজের গঠন সম্পূর্ণ হয় না এবং উদ্ভিদে নাইট্রোজেনের অভাব ঘটে। এর অভাবে পাতা বিবর্ণ হয়ে যায় এবং ধারের দিকগুলো ভাঁজ হয়ে যায়।

  • ক্লোরিন অসমোসিস (জলের চলাচল), সালোকসংশ্লেষ এবং খনিজ পদার্থ সংগ্রহের জন্য প্রয়োজনীয় আয়নের ভারসাম্য রক্ষায় ক্লোরিনের ভূমিকা রয়েছে। এর অভাবে গাছ নুয়ে পড়ে, শিকড় মোটা হয়ে যায়, উদ্ভিদ হলুদ হয়ে যায়। কোনও কোনও গাছের গন্ধ কমে যায়। উদ্ভিদ, ক্লোরিনের আয়নীয় রূপ ক্লোরাইড ব্যবহার করে। ক্লোরাইড দ্রবণ আকারে পাওয়া যায় এবং সহজে বেরিয়ে যায়। ক্লোরিন বেশি হয়ে গেলে কোনও কোনও গাছে বিষক্রিয়া দেখা দেয়।

  • নিকেল নিকেল এমন একটি উপাদান, যা উদ্ভিদে অতি সামান্য পরিমাণে লাগলেও অপরিহার্য। নিউইয়র্কের ইথাকার উদ্ভিদ, মাটি ও পুষ্টি গবেষণাগারের কৃষি গবেষণা পরিষেবা সম্প্রতি নিকেলকে এই স্বীকৃতি দিয়েছে। ইউরিয়া থেকে নাইট্রোজেনকে মুক্ত করে গাছের ব্যবহারের উপযোগী করতে ইউরিয়েজ উৎসেচককে সাহায্য করে নিকেল। লোহা শোষণক্রিয়াতেও নিকেল কাজে লাগে। অঙ্কুরোদ্গমের জন্য বীজেরও নিকেল প্রয়োজন হয়। বাড়তি নিকেল ছাড়া যে সব গাছ বেড়ে ওঠে, তারা যখন পরিণতিতে পৌঁছয় বা জননপ্রক্রিয়া শুরু করে তত দিনে ধাপে ধাপে তাদের মধ্যে নিকেলের অভাব দেখা দেয়। যদি নিকেলের অভাব থাকে তা হলে অনেক সময় উদ্ভিদ ক্ষমতাসম্পন্ন বীজ ফলাতে পারে না।

  • সোডিয়াম উদ্ভিদের অসমোসিস প্রক্রিয়া (জলের চলাচল) এবং আয়নীয় ভারসাম্য রাখতে সোডিয়াম কাজে লাগে।

  • কোবাল্ট কলাই শস্যে নাইট্রোজেন জোগান দিতে এবং অন্যান্য শস্যের শিকড়গ্রন্থিতে নাইট্রোজেন জোগান দিতে কোবাল্ট কাজে লাগে। উদ্ভিদে নাইট্রোজেন আত্মীকরণের ক্ষেত্রে কোবাল্টের চাহিদা অনেক বেশি। কোবাল্টের অভাব ঘটলে উদ্ভিদে নাইট্রোজেনের অভাব দেখা দেয়।

  • সিলিকন সিলিকন কোষ প্রাচীরের একটি উপাদান। উদ্ভিদে সিলিকন দ্রবণ প্রয়োগ করলে তা উদ্ভিদের কোষের দেওয়ালকে দৃঢ় করে, ফলে তা কীটপতঙ্গের কাছে অভেদ্য হয়ে যায়। এর ফলে উদ্ভিদের তাপ ও খরার সঙ্গে যোঝার ক্ষমতা বাড়ে। সিলিকনের ফোলিয়ার স্প্রে করলে তা ক্ষেতের শস্যে পতঙ্গের সংখ্যা কমিয়ে দেয়। পরীক্ষায় দেখা গেছে, উদ্ভিদের দেহে ছত্রাকের সংক্রমণ ঘটলে, সেখানে উদ্ভিদ সিলিকন সঞ্চয় করে কোষ প্রাচীরে ছত্রাকের অনুপ্রবেশে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। সিলিকনের অন্যান্য জরুরি কার্যকারিতার মধ্যে রয়েছে, পাতার টাটকা ভাব বজায় রাখা, কাণ্ডের শক্তি বৃদ্ধি, লোহার স্থানচ্যূতি ও ম্যাঙ্গানিজের বিষক্রিয়া রোধ । সিলিকন সব উদ্ভিদের ক্ষেত্রে অপরিহার্য না হলেও অনেকগুলির ক্ষেত্রেই অত্যন্ত উপকারী।

উদ্ভিদ কিভাবে খাদ্য তৈরি করে

সালোকসংশ্লেষণ হলো উদ্ভিদের খাদ্য তৈরির প্রক্রিয়া। এ প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদের সবুজ পাতার ক্লোরোফিল সূর্যের আলোক শক্তিকে শোষণ করে পানি ও কার্বন ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করে খাদ্য তৈরি করে।

উদ্ভিদ সূর্যের আলোকে (photon) ক্লোরোফিল এর সাহায্যে আঁকড়ে ধরে ,জল এবং কার্বন ডাই অক্সাইডকে বেঁধে খাদ্য তৈরি করে। প্রয়োজন মত সেই খাদ্য ভেঙ্গে আবার জল ও কার্বন ডাই অক্সাইড তৈরি করে এবং নিঃসৃত শক্তি কাজে লাগায় ।

এক্ষনে প্রশ্ন — খাদ্য তৈরি হয় কেবল ক্লোরোফিল যেখানে আছে কেবল সেখানে, কিন্তু শক্তির প্রয়োজন সমস্ত জীবিত অঙ্গ প্রত্যঙ্গে । কাজেই তৈরি যেখানে হয় সেখান থেকে পরিবহনতন্ত্রের মাধ্যমে , খাবার যেখানে যেখানে দরকার সেখানে যায় । বাড়তি যেটা থাকে সেটাকে উদ্ভিদ মজুত করে। Simple কার্বোহাইড্রেট জোড়া দিয়ে Complex কার্বোহাইড্রেট, স্নেহজাতীয় বা প্রোটিন তৈরি করে নিজের পছন্দ মত স্থানে জমা করে রাখে, নিজের সন্তানসন্ততি (seed)দের বড় হবার জন্যে বা প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকার জন্য । আমাদের জন্য করে না, কিন্তু আমরা এইসব জমা খাদ্যের জন্যই বেঁচে আছি,কারন খাদ্য তৈরি করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।

উদ্ভিদ সূর্যালোকের সাহায্যে শর্করা জাতীয় খাদ্য উৎপাদন করে ফ্লোয়েম টিস্যুর মাধ্যমে সারাদেহে প্রতিটি কোষে পৌছে দেয়।

উদ্ভিদ কোশ, উদ্ভিদ কোষ কাকে বলে

উদ্ভিদ দেহ যে কোষ দ্বারা গঠিত তাকে উদ্ভিদ কোষ বলে। এটি উদ্ভিদদেহের গঠন ও কার্যের একক। উদ্ভিদের জড় কোষপ্রাচীর থাকে। কোষে থাকে বিভিন্ন কোষ অঙ্গাণু, যেমন- কোষঝিল্লি, প্রোটোপ্লাজম, সাইটোপ্লাজম, ক্লোরোপ্লাস্ট, নিউক্লিয়াস, গলজিবডি, রাইবোজোম, লাইসোজোম, এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম, মাইটোকনড্রিয়া, কোষ গহ্বর।

উদ্ভিদ কোষের বৈশিষ্ট্য

নিচে উদ্ভিদ কোষের বৈশিষ্ট্য দেওয়া হলো-

  • কোষপ্রাচীর থাকে।
  • এ কোষে প্লাস্টিড থাকে।
  • এ কোষে সেন্ট্রিওল থাকে না।
  • লাইসোজোমের উপস্থিতি বিরল।
  • পরিণত উদ্ভিদ কোষে বড় কোষগহ্বর থাকে।
  • এ কোষে মাইক্রোভিলাই থাকে না।

উদ্ভিদ কোষ চিত্র

উদ্ভিদ বিজ্ঞানের জনক কে

উদ্ভিদ বিদ্যার জনক থিওফ্রাস্টাস। আবার ভারতীয় উদ্ভিদবিজ্ঞানের জনক হিসেবে সমধিক পরিচিত উইলিয়াম রক্সবার্গ।

উদ্ভিদ কোষ ও প্রাণী কোষের মধ্যে পার্থক্য

 উদ্ভিদ কোষপ্রাণী কোষ
 ১উদ্ভিদকোষের পুরু প্রাচীর থাকে।প্রাণিকোষের কোষ প্রাচীর নেই।
 ২উদ্ভিদকোষে কোষ গহ্বর বিদ্যমান।প্রাণিকোষে কোষগহ্বর নেই। থাকলেও তা আকারে ছোট।
 ৩বিভিন্ন প্রকার প্লাস্টিড থাকে।কোনো ধরনের প্লাস্টিড নেই।
 ৪সেন্ট্রোজোম ও সেন্ট্রিওল অনুপস্থিত।সেন্ট্রোজোম ও সেন্ট্রিওল বিদ্যমান।
 ৫উদ্ভিদকোষে সঞ্চিত খাদ্য মূলত শ্বেতসার।প্রাণিকোষে সঞ্চিত খাদ্য মূলত গ্লাইকোজেন।
উদ্ভিদ কোষ ও প্রাণী কোষের মধ্যে পার্থক্য

প্রাণী এবং উদ্ভিদের বিষয়ে তথ্য দেখতে আমাকে সাহায্য করুন

প্রাণী নিজের খাদ্য নিজে তৈরি করতে পারে না। উদ্ভিদ সূর্যের আলো, মাটি, পানি, বায়ু ইত্যাদি ব্যবহার করে খাদ্য উত্পাদন করে প্রাণীকে সাহায্য করে।

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় আমার এলাকায় উদ্ভিদ সংরক্ষণের ৩টি উপায় হলো:

  • উদ্ভিদ সংরক্ষণের অন্যতম প্রধান উপায় হচ্ছে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা।
  • বৃক্ষ নিধন বন্ধ করা জরুরি। যদি বৃক্ষ নিধন করা হয় তবে ১টি গাছ কাটলে ২টি গাছ লাগাতে হবে।
  • বেশি বেশি বৃক্ষরোপণ ও বনায়নের মাধ্যমে উদ্ভিদ সংরক্ষণ করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব।

উদ্ভিদ কিভাবে প্রাণীর উপর নির্ভরশীল ৫ টি বাক্য, উদ্ভিদ ও প্রাণীর পারস্পরিক নির্ভরশীলতা

উদ্ভিদ ও প্রাণী বেঁচে থাকার জন্য যেসব কারণে মাটি, পানি ও বায়ু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তা নিম্নরূপ:

  • উদ্ভিদ তার খাদ্য তৈরি ও বৃদ্ধির জন্য প্রাণীর ওপর নির্ভরশীল। যেমন—প্রাণীর ত্যাগ করা কার্বন ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করে উদ্ভিদ খাদ্য তৈরি করে।
  • পরাগায়ণের জন্য। যেমন—পাখি, মৌমাছি ইত্যাদি উদ্ভিদের পরাগায়ণে সাহায্য করে।
  • বীজের বিস্তরণের জন্য। উদ্ভিদের বীজ বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে প্রাণীর মাধ্যমে।
  • পুষ্টি উপাদানের জন্যও উদ্ভিদ প্রাণীর ওপর নির্ভরশীল। যেমন—প্রাণীর মৃতদেহ পচে প্রাকৃতিক সারে পরিণত হলে উদ্ভিদ তা পুষ্টি হিসেবে গ্রহণ করে এবং বেড়ে ওঠে।
  • মাটি, পানি ও বায়ু সব উদ্ভিদ ও প্রাণীর জীবনকে প্রভাবিত করে।
  • উদ্ভিদ মাটিতে জন্মে এবং মাটি থেকে পানি ও পুষ্টি উপাদান শোষণ করে বেঁচে থাকে।
  • উদ্ভিদ খাদ্য তৈরি করতে পানি ও বায়ুর কার্বন ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করে।
  • উদ্ভিদ ও প্রাণী শ্বসন কাজে বায়ুর অক্সিজেন ব্যবহার করে।
  • বায়ু ও পানি ছাড়া কোন উদ্ভিদ ও প্রাণী বেঁচে থাকতে পারে না।

আরো পড়তে – গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ, জলজ উদ্ভিদ, ট্রান্সজেনিক উদ্ভিদ কাকে বলে

নগ্নবীজী উদ্ভিদ

যে সকল উদ্ভিদের ফুল ও বীজ হয় কিন্তু ফুলে গর্ভাশয় নেই বলে ফল উৎপন্ন হয় না বিধায় বীজ নগ্ন অবস্থায় থাকে, তাদের নগ্নবীজী বা ব্যক্তবীজী উদ্ভিদ (Gymnosperm) বলে। উদাহরণ – সাইকাস, পাইনাস।

নগ্নবীজী উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য

  • এদের ফুল ও বীজ হয়; কিন্তু ফল হয় না।
  • ফুলে ডিম্বাশয় না থাকায় বীজগুলো নগ্ন থাকে।
  • পরাগরেণু সরাসরি ডিম্বকে পরিণত হয়।
  • এদের ডিম্বাশয়সহ গর্ভাশয়, গর্ভদণ্ড ও গর্ভমুণ্ড নেই।
  • ডিম্বক পরিণত হয়ে বীজ উৎপন্ন করে।
  • মাইক্রোস্পোর ও মেগাস্পোর তৈরি করে অর্থাৎ এরা স্পোরোফাইট অসমরেণু।
  • এদের রেণুপত্র অর্থাৎ স্পোরোফিলগুলো ঘনভাবে সন্নিবেশিত হয় এবং স্ট্রোবিলাস তৈরি হয় না।
  • ডিম্বক থাকে মেগাস্পোরোফিলের কিনারায় নগ্ন অবস্থায়।
  • গর্ভাশয় না থাকায় কোনো ফল সৃষ্টি হয় না।
  • ফল সৃষ্টি হয় না বিধায় বীজ/নিষিক্ত ডিম্বক নগ্ন অবস্থায় থাকে।
  • নগ্নবীজী উদ্ভিদে দ্বিনিষেক ঘটে না তাই শাঁস হ্যাপ্লয়েড এবং নিষেকের পূর্বে সৃষ্টি হয়।

আবৃতবীজী উদ্ভিদ কাকে বলে

যেসব উদ্ভিদের ফুল, ফল ও বীজ উৎপন্ন হয় এবং ফলের বীজ নির্দিষ্ট আবরণ দিয়ে আবৃত থাকে তাদের আবৃতবীজী উদ্ভিদ বা অ্যানজিওস্পার্ম বলে।

বৈচিত্র্যময় উদ্ভিদজগতের প্রধান উদ্ভিদ হলো আবৃতবীজী উদ্ভিদ। পৃথিবীতে এদের জীবিত প্রজাতির সংখ্যা প্রায় ২,৮৬,০০০টি। ৩০০টি গোত্রের ১২০০০ গণের অধীনে এদের শ্রেণিবিন্যস্ত করা হয়েছে। প্রায় ৮ কোটি বছর পূর্বে ভূতাত্ত্বিক ক্রিটেসিয়াস যুগে আবির্ভূত হয়ে বর্তমান পর্যন্ত এরা পৃথিবীর বিস্তৃত অঞ্চলে প্রাধান্য বিস্তার করছে।

আবৃতবীজী উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য

  • উদ্ভিদ স্পোরোফাইটিক, পুষ্পক, স্বভোজী এবং অসমরেণুপ্রস।
  • দেহ নরম বা শক্ত, অকাষ্ঠল বা কাষ্ঠল, চিরসবুক বা পর্ণমোচী (deciduous)।
  • এরা ভাস্কুলার টিস্যু সমৃদ্ধ; জাইলেম টিস্যুতে প্রকৃত ভেসেলকোষ এবং ফ্লোয়েম টিস্যুতে সঙ্গীকোষ থাকে।
  • এদের পাতা সরল বা যৌগিক।
  • এসব উদ্ভিদের ফুল একক বা মঞ্জুরীতে থাকে।
  • গ্যামেটোফাইট খুব সংক্ষিপ্ত ও পরনির্ভরশীল।
  • গর্ভাশয় আবদ্ধ প্রকোষ্ঠ বিশেষ; গর্ভাশয়ের অভ্যন্তরে ডিম্বক (ovule) সৃষ্টি হয়।
  • নিষেকের পর গর্ভাশয় ফল-এ পরিণত হয় এবং বীজ ফলের মধ্যে নিহিত থাকে।
  • পরাগরেণু পরাগায়নের সময় গর্ভমুন্ডে পতিত হয়।
  • শুক্রাণু সর্বত্র নিশ্চল এবং আর্কিগোনিয়াম অনুপস্থিত।
  • দ্বিনিষেক সবক্ষেত্রেই ঘটে তাই সস্য ট্রিপ্লয়েড (3n)।
  • সুস্পষ্ট জনুক্রম বিদ্যমান।

পেপারোমিয়া উদ্ভিদ

Peperomia pellucida হল Piperaceae (গোল মরিচ পরিবার) পরিবারভুক্ত বর্ষজীবী অগভীর মুল বিশিষ্ট হার্ব। এরা সাধারণত ১৫-৪৫ সেমি উঁচু হয়ে থাকে। এদের মুল সাকুলেন্ট, চকচকে ও হার্ট আকৃতির মাংসল পত্র বিশিষ্ট। অনেকগুলো স্পাইকের মধ্যে Dot-like বীজ গুলি সংযুক্ত থাকে। এদের বীজ থেকে সরিষার মত গন্ধ পাওয়া যায়। Piperaceae পরিবারের প্রায় ডজন খানেক গন ও তিন হাজার প্রজাতি আছে।সারা বছরই এদের পুস্পায়ন ঘটে।

পেপারোমিয়া গাছের উপকারিতা কী

  • চোখের প্রদাহ সাড়ার জন্য ব্যবহার হয়।
  • হাই ব্লাড প্রেসার কমাতে লাগে।
  • মাথা ব্যাথা , সেক্স সমস্যার জন্য লাগে।
  • মানসিক রোগের জন্য ব্যবহার হয়।

ঔষধি উদ্ভিদ কাকে বলে

ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হয় বলে এসব উদ্ভিদকে ঔষধি বা ভেষজ উদ্ভিদ বলা হয়। এমন কয়েকটি ভেষজ উদ্ভিদের নাম নিচে দেয়া হল-

  • থানকুনি : থানকুনি পেটের অসুখ হলে এটি বেশি কার্যকর।
  • তুলসী : সাধারণ সর্দি-কাশিতে এর রস বেশ উপকারী।
  • কালোমেঘ : ছোট ছেলেমেয়েদের জ্বর, অজীর্ণ ও লিভার ভালো রাখতে এটি খাওয়ানো হয়।
  • বাসক : কাশি নিরাময়ে অধিক ব্যবহৃত হয়।
  • সর্পগন্ধা : সর্পগন্ধার মূলের বা ফলের রস উচ্চ রক্তচাপে ব্যবহৃত হয়। পাগলের চিকিৎসায়ও এটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
  • বহেড়া : হাঁপানি রোগের জন্য বিশেষ উপকারী এটি। চুল পড়া বন্ধ করে।
  • হরীতকী : রক্তশূন্যতা, পিত্তরোগ, হৃদরোগ ইত্যাদি নিরাময়ে কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
  • আমলকী : পেটের পীড়া, বদহজম ও কাশিতে উপকারী।

উদ্ভিদ বিজ্ঞান কাকে বলে

উদ্ভিদ প্রজাতি নিয়ে বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা ও গবেষণা লদ্ধ বিশেষ জ্ঞানই হলো উদ্ভিদ বিজ্ঞান।

জীব বিজ্ঞানের যে শাখায় উদ্ভিদের আকার, আকৃতি, গঠন প্রকৃতি, আবাসস্থল, স্বভাব, পূর্ণ জীবনবৃত্তান্ত শ্রেণীবিন্যাস ও মানব কল্যাণে তাদের প্রয়োগ ইত্যাদি যাবতীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা, পর্যালোচনা ও গবেষণা করা হয় তাকে উদ্ভিদবিজ্ঞান (Botany) বলে।

চিরহরিৎ উদ্ভিদ কাকে বলে

চিরহরিৎ শব্দের অর্থ হলো চির সবুজ। উদ্ভিদবিদ্যায় চিরহরিৎ বৃক্ষ হলো সেসব উদ্ভিদ, যাদের পাতা প্রত্যেক ঋতুতেই সবুজ থাকে। এরা উষ্ণ ও আর্দ্রভূমিতে কিছু এলাকাজুড়ে বন আকারে জন্মে। অল্প ঠাণ্ডা শীতপ্রধান জলবায়ুর অধিকাংশ উদ্ভিদ প্রজাতিই চিরহরিৎ।

যেসব ফসল/উদ্ভিদের ফলন ভালো হয় তাদের নাম, যেসব ফসল /উদ্ভিদের ফলন ভালো হয় তাদের নাম, যেসব ফসল / উদ্ভিদের ফলন ভালো হয় তাদের নাম

ভারত এবং বাংলাদেশ, দুটি কৃষি সমৃদ্ধ দেশ, যেসব ফসল উদ্ভিদের ফলন ভালো হয় তাদের নাম সম্মন্ধে আলোচনা করব। এখানে একই রকম জলবায়ু পরিস্থিতি এবং কৃষিকাজ কে উন্নত করেছে। উভয় দেশই জীবিকা নির্বাহ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য শস্য উৎপাদনের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভর করে। এই ব্লগে, আমরা এমন কিছু ফসল সম্মন্ধে আলোচনা করব যেগুলি শক্তিশালী এবং প্রচুর উদ্ভিদ উৎপাদনের ক্ষমতার জন্য পরিচিত, বিশেষ করে ভারত এবং বাংলাদেশে, এই অঞ্চলের কৃষকদের জন্য মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে।

চাল

ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশেই ধান প্রধান ফসল এবং উভয় দেশেই ধান চাষের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। প্রচুর বৃষ্টিপাত এবং সেচের সুযোগ সহ অনুকূল জলবায়ু সহ, কৃষকরা উচ্চ ফলন অর্জন করতে পারে। ভারতের বাসমতি ধান এবং বাংলাদেশের বোরো ধানের জাতগুলি তাদের ব্যতিক্রমী গুণমান এবং উৎপাদনশীলতার জন্য পরিচিত।

গম

গম ভারত ও বাংলাদেশ উভয়েরই কৃষিক্ষেত্রে একটি অপরিহার্য ফসল। শীত মৌসুম গম চাষের জন্য উপযুক্ত পরিস্থিতি প্রদান করে এবং বছরের পর বছর ধরে বিভিন্ন উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে। সময়মত বপন, সঠিক সেচ, এবং আধুনিক কৃষি কৌশল অবলম্বন কৃষকদের চিত্তাকর্ষক গমের ফলন অর্জনে সহায়তা করতে পারে।

ভুট্টা

ভুট্টা একটি বহুমুখী ফসল যা ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন কৃষি-জলবায়ু অঞ্চলে ফলপ্রসূ হয়। এটির উচ্চ ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে এবং এটি খাদ্য এবং খাদ্য উভয় হিসাবে ব্যবহৃত হয়। পাইওনিয়ার, গঙ্গা এবং ডিকেসি-র মতো হাইব্রিড জাতগুলি ভুট্টার উত্পাদনশীলতা বাড়াতে সফল হয়েছে। মাটির পর্যাপ্ত উর্বরতা, সময়মতো রোপণ এবং কার্যকর কীটপতঙ্গ ও রোগ ব্যবস্থাপনা ভুট্টার ভালো ফলনে অবদান রাখে।

আখ

ভারত ও বাংলাদেশ উভয়েরই কৃষি অর্থনীতিতে আখ চাষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এই দেশগুলির গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ু আখ বৃদ্ধির জন্য আদর্শ পরিস্থিতি প্রদান করে। সঠিক সেচ, পুষ্টি ব্যবস্থাপনা এবং কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে কৃষকরা চিনি ও ইথানল শিল্পে অবদান রেখে উচ্চ ফলন অর্জন করতে পারে।

ডাল

মসুর ডাল, ছোলা এবং অড়হর ডাল ভারত ও বাংলাদেশের মানুষের খাবারের প্রোটিনের অত্যাবশ্যক উৎস। ফলন বাড়ানোর জন্য উন্নত জাত, যেমন অড়হর এবং ছোলা উদ্ভাবন করা হয়েছে। সঠিক ফসলের ঘূর্ণন, মাটির উর্বরতা ব্যবস্থাপনা এবং রোগ নিয়ন্ত্রণের অনুশীলন ডাল ফসলের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করতে পারে।

আলু

ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশেই আলু চাষ ব্যাপক। এটি একটি মূল্যবান অর্থকরী ফসল যা ভাল ফলনের সম্ভাবনা প্রদান করে। কৃষকরা তাদের নির্দিষ্ট অঞ্চল এবং ক্রমবর্ধমান অবস্থার জন্য উপযোগী বিভিন্ন আলুর জাত বেছে নিতে পারেন। সফল আলু চাষের জন্য পর্যাপ্ত মাটির আর্দ্রতা, সঠিক রোপণ কৌশল এবং কার্যকর কীটপতঙ্গ ও রোগ ব্যবস্থাপনা অপরিহার্য।

সরিষা

সরিষা ভারত ও বাংলাদেশ উভয় দেশেই একটি জনপ্রিয় তৈলবীজ ফসল, যা ভোজ্য তেল এবং গুরুত্বপূর্ণ উপজাত সরবরাহ করে। অনুকূল তাপমাত্রা এবং উপযুক্ত আর্দ্রতা সহ, সরিষার ফলন ভাল হয়। বাংলাদেশে BARI Sarisha-14 এবং ভারতে Pusa Mustard 30 এর মত জাতগুলি তাদের উচ্চ উৎপাদনশীলতার জন্য পরিচিত। ভালো জমি তৈরি, সময়মতো বপন, এবং সঠিক পুষ্টি ব্যবস্থাপনা সর্বোত্তম সরিষার ফলনে অবদান রাখে।

উপসংহার

ভারত ও বাংলাদেশে, বেশ কিছু ফসল ভালো গাছের ফলন এবং কৃষি উৎপাদনে অবদান রাখতে তাদের সম্ভাবনা প্রদর্শন করেছে। ধান, গম, ভুট্টা, আখ, ডাল, আলু এবং সরিষা এই অঞ্চলে ধারাবাহিকভাবে উচ্চ-ফলনশীল ক্ষমতা দেখিয়েছে।

যাইহোক, স্থানীয় কৃষি-জলবায়ু পরিস্থিতি, মাটির ধরন এবং ফলন অপ্টিমাইজ করার জন্য উপযুক্ত চাষাবাদ পদ্ধতি বিবেচনা করা কৃষকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উপযুক্ত ফসলের জাত নির্বাচন, আধুনিক চাষাবাদের কৌশল প্রয়োগ এবং সঠিক শস্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করার মাধ্যমে, ভারত ও বাংলাদেশের কৃষকরা তাদের ফসলের উৎপাদনশীলতা সর্বাধিক করতে পারে, উভয় দেশেই খাদ্য নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখতে পারে।

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | উদ্ভিদ

Q1. জলজ উদ্ভিদ পানির স্রোতে ভেঙে যায় না কেন

Ans – জলজ উদ্ভিদ সারা দেহের মাধ্যমে পানিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান, বিশেষ করে খনিজ লবণ সংগ্রহ করে। এভাবে জলজ উদ্ভিদের সমগ্র দেহ পানির সংস্পর্শে থাকায় কাণ্ড এবং অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ খুব নরম হয়, যা পানির স্রোত ও জলজ প্রাণীর চলাচলের সঙ্গে মানানসই। আর এ কারণেই জলজ উদ্ভিদ পানির স্রোতে ভেঙে যায় না।

Q2. কোন উদ্ভিদে সালোকসংশ্লেষণের হার বেশি

Ans – C4 উদ্ভিদে সালোকসংশ্লেষণে হার সবচেয়ে বেশি। সব উদ্ভিদে C4 চক্র সংঘটিত হয় তাদেরকে বলা হয় C4 উদ্ভিদ। এসব উদ্ভিদে সালোকসংশ্লেষণের ফলে উৎপাদিত প্রথম স্থায়ী যৌগ ৪ কার্বন বিশিষ্ট অক্সালো এসিটিক এসিড হওয়ায় এদেরকে C4 উদ্ভিদ বলে।এরা উচ্চ তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। যেমন-ভুট্টা, আখ।

Q3. কিছু কিছু উদ্ভিদ প্রোলিন উৎপাদন করে কেন

Ans – খরার প্রভাবে উদ্ভিদ দেহের প্রোটিন ভেঙে বিভিন্ন জৈব-রাসায়নিক কর্মকান্ডে ব্যবহৃত হয়। উদ্ভিদ দেহে প্রোটিন বেশি মজুদ থাকলে তা খরা প্রতিরোধে সাহায্য করে। আবার প্রোটিন ভেঙে নানা রকম বিষাক্ত দ্রব্য উৎপন্ন হতে পারে। এ জন্য কিছু কিছু উদ্ভিদ প্রোলিন নামক এক ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য তৈরি করে যা এ বিষক্ততার মাত্রাকে কমিয়ে ফসলকে খরা সহনশীল করে তোলে।

Q4. বাঁশ কোন জাতীয় উদ্ভিদ

Ans – বাঁশ ঘাস জাতীয় উদ্ভিদ। নানা রকম বাঁশ গাছে নিয়ম করে ফুল ফোটে, কোন জাতের গাছে প্রতি বছর,কোনটা ৩ বছর, কোনটা ৪৮ বছর, কোনটা ৫০ বছর, আবার কোনটা ১০০ বছর পরেও ফুল ধরে। ফুল থেকে বীজ হয়, বীজ থেকে গাছ ও হয়।

Q5. উদ্ভিদের দেহে কত ভাগ পানি

Ans – উদ্ভিদ কোষে শতকরা 90 ভাগই পানি থাকে। অন্যান্য উপাদানের মধ্যে থাকে ক্লোরোপ্লাস্ট, সেল ওয়াল, ভ্যাকিউলস ও আদার অর্গণেলস।

Q6. মূল নেই কোন উদ্ভিদের

Ans – পৃথিবীতে কিছু শৈবাল ও ছত্রাক রয়েছে, যাদের মূল নেই। যেমন – মিউকর, সারগামাস, ঈস্ট ইত্যাদি।

Q7. ছোট দিনের উদ্ভিদ কোনটি

Ans – ছোট দিনের উদ্ভিদ হলো পাট, চন্দ্রমল্লিকা , ডালিয়া।

Q8. শ্বসন প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ ত্যাগ করে

Ans – উদ্ভিদ ও প্রাণী শ্বসনের সময় অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং কার্বন ডাই-অক্সাইড ত্যাগ করে। সবুজ উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় বায়ু থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন ত্যাগ করে।

Q9. গমনে সক্ষম একটি উদ্ভিদের নাম

Ans – গমনে সক্ষম দুটি উদ্ভিদের নাম হল—ক্ল্যামাইডােমােনাস, ভলভক্স ।

Q10. ভারতের মরু অঞ্চলে কোন ধরনের স্বাভাবিক উদ্ভিদ দেখা যায়

Ans – ভারতে মরু অঞ্চলে ক্যাকটাস, ফনীমনসা, বাবলা, খেজুর, কাঁটাঝোপ ও বিভিন্ন ঘাস জন্মায়।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।