রাষ্ট্র কাকে বলে, রাষ্ট্রের উপাদান কয়টি, রাষ্ট্র বিজ্ঞানের জনক কে, রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে পার্থক্য কি

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

প্রশ্নপত্র

রাষ্ট্র কি, রাষ্ট্র কাকে বলে

রাষ্ট্র হলো একটি স্বাধীন অঞ্চল বা অধিকারী সরকার যা নির্দিষ্ট সীমাহীন অঞ্চলের ভূখণ্ডে অবস্থিত এক জনগণের পরিষেবা প্রদানের জন্য সংরক্ষণ এবং বাস কর্মক্ষমত্তা রক্ষা করে। এটি সাধারণভাবে একটি সরকার এবং একটি জনগণের সমন্বয় থাকে যা নির্দিষ্ট কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং আইন ও বিচারের প্রবাদ প্রযুক্ত করে। রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয় সামাজিক সুরক্ষা, সম্মান, এবং ব্যক্তিগত ও সামাজিক উন্নয়ন।

বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বিভিন্নভাবে রাষ্ট্রের সংজ্ঞা দিয়েছেন। যথাঃ

রাষ্ট্রপতি উইলসন(Willson)এর ভাষায় ‘‘কোন দির্দিষ্ট ভূখেন্ডে আইন অনুসারে সংগঠিত কোন জনসমষ্টিকে রাষ্ট্র বলে।’’

অধ্যাপক আলমন্ড ও কোলম্যান (almod and Coleman ) রাষ্ট্রকে রাজনৈতিক ব্যবস্থা  হিসেবে অভিহিত করেছেন ।তাঁদের ভাষায়,“the political system is the legitimate order maintaining or transforning systern in the society.”

রাষ্ট্রবিজ্ঞানী এরিন,স্টটল বলে‘‘রাষ্ট্র হলো একটি কয়েকটি পরিবার ও গ্রামের সমষ্টি যার উদ্দেশ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ জীবন।’’

ওপেনহেইম এর মতে,‘‘কোন জনসমষ্টি এর নিজস্ব সার্বভৌম সরকারের অধীনে কোন দেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করলে তাকে রাষ্ট্র বলে।’’

আবার বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে রাষ্ট্রের সংজ্ঞা দিয়েছেন一

[1] রাষ্ট্রের সাবেকি সংজ্ঞা: রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক অ্যারিস্টটলের মতে, রাষ্ট্র হল স্বাবলম্বী ও পূর্ণাঙ্গ জীবনযাপনের উদ্দেশ্যে সংগঠিত কয়েকটি পরিবার ও গ্রামের সমষ্টি। প্রাচীন গ্রিসের নগররাষ্ট্রের পটভূমিকায় অ্যারিস্টটলের দেওয়া এই সংজ্ঞা বর্তমান যুগের আধুনিক রাষ্ট্রের পক্ষে প্রযােজ্য নয়। এই যুগে ‘স্বাবলম্বী’ ও ‘পূর্ণাঙ্গ’ রাষ্ট্রের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না।

[2] রাষ্ট্রের আইনগত সংজ্ঞা: প্রখ্যাত আইনবিদ হলের মতে, রাষ্ট্র হল এমন এক জনসমাজ যা নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যসাধনের জন্য স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত এবং বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণ থেকে সর্বতােভাবে মুক্ত। ওপেনহাইমের অভিমত হল, যখন কোনাে নির্দিষ্ট একটি ভূখণ্ডে কোনাে সংগঠিত জনসমষ্টি সার্বভৌম সরকার প্রতিষ্ঠা করে, তখন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়। আবার, প্রাক্তন মার্কিন রাষ্ট্রপতি উইলসনের মতে, কোনাে নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে আইন প্রতিষ্ঠার জন্য সংগঠিত জনসমষ্টি হল রাষ্ট্র।

[3] রাষ্ট্রের আদর্শবাদী সংজ্ঞা: কান্ট ও হেগেল উভয়ই রাষ্ট্রকে এক সর্বাত্মক ও ঐশ্বরিক কর্তৃত্বসম্পন্ন অতিমানবীয় নৈতিক প্রতিষ্ঠানরূপে অভিহিত করেছেন। হেগেলের রচনায় রাষ্ট্রকে পৃথিবীতে ঈশ্বরের পদচারণা বলে বর্ণনা করা হয়েছে।

[4] রাষ্ট্রের আধুনিক সংজ্ঞা: আধুনিক আচরণবাদী চিন্তাবিদরা রাষ্ট্রের প্রচলিত সংজ্ঞাগুলি মেনে নিতে চাননি। এমনকি তাঁরা ‘রাষ্ট্র’ শব্দটির পরিবর্তে রাজনৈতিক ব্যবস্থা পরিভাষাটি প্রয়ােগের পক্ষপাতী। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী বার্জেস ও ব্লুন্টসলির মতে, একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে রাজনৈতিক দিক থেকে সংগঠিত জনসমষ্টি হল রাষ্ট্র।

[5] রাষ্ট্রের মার্কসবাদী সংজ্ঞা: মার্কসবাদীরা রাষ্ট্রের সংজ্ঞা নির্দেশ করতে গিয়ে বলেছেন যে, রাষ্ট্র হল শ্রেণিশােষণের এক হাতিয়ার ; এক শ্রেণি কর্তৃক অন্য শ্রেণির ওপর প্রভুত্ব বজায় রাখার প্রতিষ্ঠান| শ্রেণিবিভক্ত সমাজে শ্রেণিস্বার্থ সংরক্ষণের একটি রাজনৈতিক হাতিয়ার হল রাষ্ট্র।

[6] রাষ্ট্রের গার্নারের সংজ্ঞা: গার্নারের মতে, রাষ্ট্র হল সাধারণভাবে বৃহৎ এক জনসমাজ যা নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে স্থায়ীভাবে বসবাস করে, যা বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণ থেকে সম্পূর্ণ বা প্রায় মুক্ত এবং যার একটি সুসংগঠিত সরকার রয়েছে ও সেই সরকারের প্রতি অধিকাংশ জনগণ স্বাভাবিক আনুগত্য প্রদর্শন করে।

রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য

উপর্যুক্ত চারটি অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য ছাড়াও রাষ্ট্রের আরও তিনটি অপ্রধান বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সেগুলি হল一

  • [1] স্থায়িত্ব,
  • [2] আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও
  • [3] জাতীয়তাবাদ।

[1] স্থায়িত্ব: যে রাষ্ট্রের কোনাে স্থায়িত্ব নেই, তাকে রাষ্ট্র বলা যায় না। সরকারের অস্তিত্ব ক্ষণস্থায়ী, আজ যে সরকার ক্ষমতায় আছে, কাল তা নাও থাকতে পারে। কিন্তু রাষ্ট্র চিরস্থায়ী, তার একটি সুষ্ঠু ধারাবাহিকতা আছে। অবশ্য মার্কসবাদীরা রাষ্ট্রকে চিরস্থায়ী বলে মেনে নিতে চাননি।

[2] আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি: রাষ্ট্রের আর-একটি বৈশিষ্ট্য হল আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের স্বীকৃতি না পেলে কোনাে রাষ্ট্র আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রকৃত অর্থে রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচিত হয় না।

[3] জাতীয়তাবাদ: কোনাে কোনাে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রাষ্ট্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হিসেবে জাতীয়তাবাদের কথা বলে থাকেন। তাদের মতে, জাতীয়তাবাদের আদর্শে গভীরভাবে উদ্বুদ্ধ না হলে কোনাে জনসমষ্টি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনে সফল হতে পারে না। অবশ্য রাষ্ট্রভেদে জাতীয়তাবাদী চেতনা বিকাশের ধারা স্বতন্ত্র হতে বাধ্য।

রাষ্ট্রের উপাদান কয়টি, রাষ্ট্রের উপাদান কয়টি ও কি কি, রাষ্ট্র গঠনের উপাদান কয়টি, রাষ্ট্রের চারটি উপাদান কি কি

রাষ্ট্র বলতে রাজনৈতিক ভাবে সংগঠিত এবং একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে বসবাসকারী জনসমষ্টিকে বোঝায়।

রাষ্ট্রর মৌলিক উপাদান চারটি। যথা:

১। জনসমষ্টি

২। সার্বভৌমত্ব

৩। সরকার

৪। নির্দিষ্ট ভূখণ্ড

1. জনসংখ্যা (Population)

রাষ্ট্র হল মানুষের একটি মানবিক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রের অন্যতম অপরিহার্য উপাদান হচ্ছে জনসংখ্যা। জনসংখ্যা ছাড়া রাষ্ট্র হতে পারে না। একটি রাষ্ট্রের জনসংখ্যা কম-বেশি হতে পারে। যেমন সুইজারল্যান্ড, কানাডা, মালদ্বীপ, সিঙ্গাপুর এর  মতো খুব ছোট জনসংখ্যার রাষ্ট্র। অন্যদিকে রয়েছে চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়ার যেখানে খুব বেশি জনসংখ্যা রয়েছে।

রাষ্ট্রে বসবাসকারী লোকদের নাগরিক বলে। নাগরিকরা রাষ্ট্রের অধিকার ও স্বাধীনতা ভোগ করার পাশাপাশি বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করে। অন্য দেশের নাগরিকরা বসবাস করলে তখন তাদের বলা হয় বিদেশি। রাষ্ট্রের ভূখণ্ডে বসবাসকারী সকল ব্যক্তি, নাগরিক এবং সেইসাথে বিদেশিদের রাষ্ট্রীয় আইন ও নীতি মেনে চলতে হয়। রাষ্ট্র তার সরকারের মাধ্যমে তাদের উপর সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব প্রয়োগ করে।

2. অঞ্চল (Territory)

ভূখণ্ড একটি রাষ্ট্রের দ্বিতীয় অপরিহার্য উপাদান। রাষ্ট্র একটি আঞ্চলিক ইউনিট। নির্দিষ্ট ভূখণ্ড হল এর অপরিহার্য উপাদান। একটি রাষ্ট্র কখনো আকাশে বা সমুদ্রে থাকতে পারে না। এর পিজিকাল অংশ (অঞ্চল) নিয়ে গঠিত হয়। এটি মূলত একটি আঞ্চলিক রাষ্ট্র। একটি রাষ্ট্রের ভূখণ্ডের আকার বড় বা ছোট হতে পারে।

রাশিয়া, কানাডা, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, চীন, ব্রাজিল ইত্যাদি বড় আকারের রাষ্ট্র। অন্যদিকে নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, সুইজারল্যান্ড, বুরুন্ডি ইত্যাদি ছোট অঞ্চল রাষ্ট্র। সমগ্র ভূখণ্ড রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব বা সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধীনে বেষ্টিত। রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট ভূ-খন্ডের অন্তর্ভুক্ত সমস্ত ব্যক্তি, সংস্থা, সমিতি, প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি অঞ্চলের সার্বভৌম এখতিয়ারের অধীনে।

রাষ্ট্রের অঞ্চলের মধ্যে সমুদ্র বা কিছু দ্বীপও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, আন্দামান ও নিকোবর ভারতের অংশ। সেন্টমার্টিন দ্বীপ বাংলাদেশের অংশ। রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডের সমস্ত অংশের উপর সার্বভৌমত্ব প্রয়োগ করে।

3. সরকার (Government)

সরকার হল রাষ্ট্রের অন্যতম সংস্থা বা ম্যাজিস্ট্রেসি যা রাষ্ট্রের আইন প্রণয়ন, প্রয়োগ, এবং বিচার করে। সরকার রাষ্ট্রের তৃতীয় অপরিহার্য উপাদান। রাষ্ট্র সরকারের মাধ্যমে তার সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগ করে।

অনেকেই মনে করে যে রাষ্ট্র এবং সরকারের মধ্যে কোনও পার্থক্য নেই। যাইহোক, এটা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা উচিত যে সরকার রাষ্ট্রের একটি উপাদান মাত্র। এটি রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে ভূমিকা পালন করে।

তিনটি প্রধান অঙ্গ নিয়ে একটি সরকার গঠিত হয়। যেমন:

(1) আইনসভা (Legislature): যা রাষ্ট্রের আইন প্রণয়নের কার্য সম্পাদন করে। স্পিকার, প্রধানমন্ত্রি ও বিভিন্ন মন্ত্রি, সাংসদ নিয়ে আইনসভা গঠিত।

(২) নির্বাহী বিভাগ (Executive): রাষ্ট্রের আইন-প্রয়োগের কার্য সম্পাদন করে। নির্বাহী বিভাগের প্রধান হল প্রধানমন্ত্রি, কিছু দেশে রাষ্ট্রপতি বা অন্য কেউ হতে পারে।

(3) বিচার বিভাগ (Judiciary): আইনের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি এবং বিচার কার্য সম্পাদন করে। রাষ্ট্রের আইনের ধারক বাহক হচ্ছে এই বিচার বিভাগ। 

পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের সরকার বিদ্যামান রয়েছে। যেমন; 

  • গণতান্ত্রিক সরকার,
  • সমাজতান্ত্রিক সরকার,
  • এককেন্দ্রিক বা যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার,
  • একনায়কতান্ত্রিক সরকার
  • রাজতান্ত্রিক সরকার
  • রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার

4. সার্বভৌমত্ব (Soveirgnity)

সার্বভৌমত্ব একটি রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। কারণ একমাত্র রাষ্ট্রই সার্বভৌমত্বের অধিকারী। সার্বভৌমত্ব ছাড়া কোনো রাষ্ট্র কল্পনা কার যায় না। প্রকৃতপক্ষে, সার্বভৌমত্ব হল সেই ভিত্তি যার ভিত্তিতে রাষ্ট্র তার ভূখণ্ডে বসবাসকারী মানুষের জীবনের সমস্ত দিক নিয়ন্ত্রণ ও সুরক্ষা প্রদান করে।

সার্বভৌমত্ব দুধরনের;

(i) অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমত্ব: অভ্যন্তরীণ সার্বভৌমত্ব বলতে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রে এর চরম ক্ষমতাকে বােঝায়, অর্থাৎ রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে কোনাে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, এমনকি সরকার নিজেও রাষ্ট্রীয় আইনের উর্ধ্বে নয়।

(ii) বাহ্যিক সার্বভৌমত্ব: রাষ্ট্রের বাহ্যিক সার্বভৌমত্ব বলতে বােঝায় যে, বহিঃশক্তির সকল রকমের আক্রমণ ও নিয়ন্ত্রণ থেকে রাষ্ট্র মুক্ত, অর্থাৎ রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্বের কারণে কোনাে স্বাধীন রাষ্ট্র বিদেশি রাষ্ট্রের নির্দেশে পরিচালিত হয় না।

রাষ্ট্রের মূলনীতি কয়টি ও কি কি

রাষ্ট্র হচ্ছে সমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি রাজনৈতিক প্রতিষ্টান। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক এরিস্টটল বলেছেন,‘‘মানুষ স্বভাবতেই সামাজিক ও রাজনৈতিক জীব। ’’তাই মানুষের প্রয়োজনেরই রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটেছে। মানুষের প্রয়োজনেই রাষ্ট্রকে বহুবিদ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হয় । কিন্তু রাষ্ট্রের কি কি কাজ করা উচিত। কিংবা রাষ্ট্র কি কি কার্যাবলি সম্পাদন করবে তা নিয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মধ্যে যথেষ্ট মতপার্থক্য রয়েছে।

রাষ্ট্রের কার্যাবলি বা মূলনীতি : রাষ্ট্রের কার্যাবলি ও মূলনীতি নিয়ে মতভেদ থাকলেও কিছু কিছূ কার্যাবলি সম্পাদন করা রাষ্ট্রের জন্য অপরিহার্য । নিম্নে রাষ্ট্রের প্রধান প্রধান মূলনীতি বা কার্যাবলি সমূহ আলোচনা করা হলো

১.দেশরক্ষাঃ রাষ্ট্রের প্রথম ও প্রধান কাজ হচ্ছে দেশরক্ষা তথা রাষ্ট্রের নিরাপতা নিশ্চিত করা। এ লক্ষ্যে রাষ্ট্র গড়ে তোলে দক্ষ ও শাক্তিশালী সামগ্রিক ও আধাসমারিক বাহিনী। স্হনল,নৌ ও বিমান বাহিনীর সমম্বয়ে প্রতিরক্ষা বাহিনী গড়ে তোলা রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। এছাড়া সমরাষ্ট্র তৈরি্ ্ক্রয় ,সামরিক পরিকল্পনা ,সামরিক জোট গঠন এবং প্রতিরক্ষা অবকাঠামো গড়ে তোলাও রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।

২.অভ্যন্তরীণ শাস্তি শৃঙ্খলা রক্ষাঃ রাষ্ট্রের আরেকটি অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ শাস্তি শৃঙ্খলা রক্ষা করা। এজন্য রাষ্ট্র শক্তিশালি পুলিশ ও্ আনসার বাহিনী গঠন করে থাকে। এদের জন্য বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ্ক্রয় ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকে। 

৩.সার্বভৌমত্ব রক্ষাঃ রাষ্ট্রের একটি অপরিহার্য কাজ হলো  সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা। সার্বভৌমত্ব অর্জন না করলে যেমন রাষ্ট্র গঠিত হয় না,তেমনি সার্বভৌমত্ব হারালেও রাষ্ট্র বিলুপ্ত হয়। তাই রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক।

৪.সমাজতন্ত্র : অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সমতা আনার মাধ্যমে সবার জন্য সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করাই হলো সমাজতন্ত্রের মূল্য লক্ষ্য। শোষণমুক্ত, ন্যায়ভিত্তিক ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে সমাজতন্ত্রকে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।

৫.গণতন্ত্র : রাষ্ট্রের সব কাজে নাগরিকের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই হলো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূলনীতি। এর মাধ্যমে নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতা নিশ্চিত হবে; মানুষের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা হবে।

৬.ধর্মনিরপেক্ষতা : রাষ্ট্রের প্রতিটি মানুষ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে এবং ধর্ম পালনে কেউ কাউকে বাধা প্রদান করবে না- এই লক্ষ্য সামনে রেখে ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।

৭.অন্য রাষ্ট্রের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলাঃ আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য বিদেশে রাষ্ট্রদ্রত প্রেরণ ও অন্যান্য রাষ্ট্রের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তোলা রাষ্ট্রের কর্তব্য। এ উদ্দেশ্য বিদেশে রাষ্ট্রদূতদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন ও বিভিন্ন চুক্তি সম্পাদন করা রাষ্ট্রের অন্যতম কর্তব্য।

৮.শাসনকার্য পরিচালনাঃ রাষ্ট্রের শাসনকার্য পরিচালনা আইন বিভাগ  প্রদও আইন দ্বারা শাসন বিভাগ গঠন করতে হয়। তাছাড়া সঠিকভাবে শাসনকার্য পরিচালনার জন্য সঠিক নীতিমালা প্রণয়ন ,কর্মচারী নিয়োগ করা এবং তাদের প্রশিক্ষণেল ব্যবস্থ করা রাষ্ট্রের  অন্যতম কর্তব্য। 

৯.আইন প্রণয়ন ঃ রাষ্ট্রের একটি অন্যতম দায়িত্ব হলো আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন । আইন প্রনয়ণ ,সংশোধন ও বাতিল করার জন্য রাষ্ট্রকে আইন বিভাগ গঠন করতে হয়।   

১০.বিচার কার্য সম্পাদনঃ ন্যায় বিচারের স্বার্থে রাষ্ট্রকে বিচার বিভাগ গঠন  এব্য সৎ দক্ষ বিচারক নিয়োগ করতে হয়। কেননা নাগরিকদের সুবিচার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের অন্যতম কাজ।

১১.অধিকার সংরক্ষণঃ রাষ্ট্রের একটি অপরিতার্য কাজ হলো নাগরিকের অধিকার রক্ষা করা। নাগরিকের এ অধিকারগুলো তাদের জীবন বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

১২.অন্যান্য কার্যাবলিঃ উপর্যুক্ত কার্যাবলি ছাড়াও অর্থনৈতিক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড,জীবন ও সম্পদ রক্ষা,কৃষি,শিল্প ও বাণিজ্য সং ্ক্রান্ত কার্য,যোগাযোগ ও জনহিতকর কার্যাবলি ও রাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

পরিশেষে বলা যায়,রাষ্ট্রের কার্যাবলি অত্যবিধ ব্যাপক।জনগণের সামগ্রিক কল্যাণসাধন করাই রাষ্ট্রের গুরুদায়িত্ব।

রাষ্ট্র বিজ্ঞানের জনক কে

রাষ্ট্র সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে প্রথম আলোচনা করে রাষ্ট্র সম্পর্কে উত্থাপিত সকল সমস্যার সমাধানের জন্য এরিস্টটলকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক বলা হয়।

এরিস্টটলকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক হিসাবে বিবেচনা করা হয় কারণ:

  • রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে একটি স্বাধীন বিজ্ঞানের মর্যাদা দিয়েছেন
  • বিষয়ের প্রতি বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করা
  • সরকারের অঙ্গগুলির বর্ণনা
  • একটি বাস্তববাদী চিন্তাবিদ হতে
  • আইনের আধিপত্য বজায় রাখা
  • বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করে যেমন প্রবর্তক এবং তুলনামূলক
  • রাষ্ট্রের সম্পূর্ণ তত্ত্ব উপস্থাপন করতে

আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক হচ্ছেন নিকোলো মেকিয়াভেলী। রাষ্ট্র সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে তথ্য উত্থাপন কারা ও প্রথম আলোচনা করে রাষ্ট্র সম্পর্কে উত্থাপিত সকল সমস্যার সমাধানের জন্য এরিস্টটলকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক বলা হয়।

রাষ্ট্র বিজ্ঞানের সংজ্ঞা দাও

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একটি সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা দেওয়া বেশ কঠিন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞা নির্ধারণ করেছেন। যেমন- [1] ঐতিহ্যবাহী বা সাবেকি সংজ্ঞা, [2] আধুনিক সংজ্ঞা ও [3] মার্কসবাদী সংজ্ঞা।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ঐতিহ্যবাহী বা সাবেকি সংজ্ঞা

  • রাষ্ট্রকেন্দ্রিক সংজ্ঞা: রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ঐতিহ্যবাহী বা সাবেকি সংজ্ঞা মূলত রাষ্ট্রকেন্দ্রিক। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলির গঠন ও কার্যাবলি, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলির সঙ্গে রাষ্ট্রের পারস্পরিক সম্পর্ক ইত্যাদি বিষয় ঐতিহ্যবাহী সংজ্ঞায় প্রাধান্য পেয়েছে। সেই কারণে ঐতিহ্যবাহী সংজ্ঞাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক বা রাষ্ট্রকেন্দ্রিক সংজ্ঞা বলে অভিহিত করা হয়। গেটেলের অভিমত অনুযায়ী, রাষ্ট্রের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আলােচনা হল রাষ্ট্রবিজ্ঞান ব্লুন্টসলি বলেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান হল রাষ্ট্রের বিজ্ঞান। গার্নারের বক্তব্য হল, রাষ্ট্রকে নিয়েই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শুরু ও সমাপ্তি।
  • সরকারকেন্দ্রিক সংজ্ঞা: সিলি, ক্যাটলিন প্রমুখ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রাষ্ট্রবিজ্ঞান বলতে এমন কিছুকে বুঝিয়েছেন, যা সরকার সম্পর্কিত বিষয়ে অনুসন্ধান চালায়।
  • রাষ্ট্র ও সরকারকেন্দ্রিক সংজ্ঞা: অধ্যাপক গিলক্রিস্টের মতে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান রাষ্ট্র ও সরকার সম্পর্কে আলােচনা করে। ফরাসি রাষ্ট্রবিজ্ঞানী পল জানে বলেছেন, সমাজবিজ্ঞানের যে শাখা রাষ্ট্রের ভিত্তি ও সরকার নিয়ে আলােচনা করে, তাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বলে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আধুনিক সংজ্ঞা

আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা বিংশ শতাব্দীর গােড়ার দিকে রাষ্ট্রকেন্দ্রিক আলােচনার ধারাকে নাকচ করে দিয়ে ব্যক্তি ও গােষ্ঠীর আচরণকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। তাঁদের অভিমত হল, রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে শুধু রাষ্ট্র ও তার প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত আলােচনায় সীমায়িত করে রাখলে রাজনৈতিক জীবনের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় পাওয়া যাবে না। তাদের মতে, রাজনৈতিক দিককে সমাজের অন্যান্য বিষয় থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখলে রাষ্ট্রবিজ্ঞান অবাস্তব হয়ে পড়বে।

আচরণবাদী রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ডেভিড ইস্টনের বক্তব্য অনুসারে, মূল্যের কর্তৃত্বমূলক বণ্টনের আলােচনা হল রাষ্ট্রবিজ্ঞান। রবার্ট ডাল ও লাসওয়েল রাজনৈতিক ক্ষমতাকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। লাসওয়েলের মতে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান হল সমাজের প্রভাব ও প্রভাবশালীদের সম্পর্কে আলােচনা ও বিশ্লেষণ।| অ্যালান বলের মতে, রাষ্ট্রবিজ্ঞান হল এমন একটি বিষয়, যা সমাজভুক্ত ব্যক্তিদের বিরােধ ও বিরােধ মীমাংসা সম্পর্কে আলােচনা করে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মার্কসবাদী সংজ্ঞা

মার্কসবাদী রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের মতে, সমাজের শ্রেণিসম্পর্ক ও শ্রেণিসংগ্রাম সম্পর্কিত বিচারবিশ্লেষণ হল রাষ্ট্রবিজ্ঞান। মার্কসীয় তত্ত্বে রাষ্ট্রের উৎপত্তি ও প্রকৃতিকে সম্পূর্ণ ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গিতে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলােচনাকে সমাজের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন করে আলোচনা করলে তা অসম্পূর্ণ বলে পরিগণিত হবে। অর্থনীতি-নিরপেক্ষ রাজনীতির আলােচনা বিজ্ঞানসম্মত নয় বলে মার্কসবাদে দাবি করা হয়।

পরিশেষে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একটি গ্রহণযােগ্য সংজ্ঞা নির্দেশ করতে গিয়ে বলা যায়, রাষ্ট্রবিজ্ঞান হল সমাজবিজ্ঞানের এমন এক শাখা, যা বিজ্ঞানসম্মত পর্যালােচনার মাধ্যমে রাষ্ট্র সম্পর্কিত তত্ত্ব, শাসনপদ্ধতি, রাজনৈতিক ব্যবস্থা, রাজনৈতিক ক্ষমতা ও আচরণ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, আন্তর্জাতিক আইন ও সংগঠন ইত্যাদি সম্পর্কে বিচারবিশ্লেষণ করে।

রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে প্রধান পার্থক্য কি

সুদূর অতীতে একসময় রাষ্ট্র ও সরকারকে সমার্থক ভাবা হত। সপ্তদশ শতাব্দীতে ফরাসি সম্রাট চতুর্দশ লুই বলেছিলেন, “আমিই রাষ্ট্র” (I am the state’)। হবস-এর লেভিয়াথান (Leviathan) গ্রন্থেও রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে কোনাে ধরনের পার্থক্য স্বীকার করা হয়নি। কিন্তু রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে কয়েকটি মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। রাষ্ট্রের আদর্শকে বাস্তবায়িত করে সরকার। উইলােবির মতে, সরকার হল এমন এক প্রতিষ্ঠান, যার মাধ্যমে রাষ্ট্র তার ইচ্ছাকে কার্যকরী করে।

রাষ্ট্রসরকার
রাষ্ট্র একটি তত্ত্বগত ধারণা। রাষ্ট্রকে চোখে দেখা যায় না। রাষ্ট্রের রূপ বিমূর্ত।রাষ্ট্র বলতে অনেকে সরকারকে বুঝলেও সরকার হল রাষ্ট্রীয় ধ্যান ধারণার বাস্তব চেহারামাত্র।
রাষ্ট্র একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ড নিয়ে গঠিত, ভােটাধিকারের মাধ্যমে রাষ্ট্র গঠন করা যায় না।গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনগণ ভােটাধিকার প্রয়ােগ করে সরকার গঠন করে।
রাষ্ট্র চিরস্থায়ী, তার একটা সুষ্ঠু ধারাবাহিকতা আছে।সরকার ক্ষণস্থায়ী। আজ যে সরকার ক্ষমতায় আছে, কাল সেই সরকার নাও থাকতে পারে।
সার্বভৌম ক্ষমতার প্রকৃত অধিকারী হল রাষ্ট্র, সরকার নয়।রাষ্ট্রের প্রতিনিধিস্বরূপ সরকার এই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ভােগ ও প্রয়ােগ করে মাত্র।
রাষ্ট্রের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য চারটি, যথা জনসমষ্টি, নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, সরকার ও সার্বভৌমত্ব। ছােটোবড়াে নির্বিশেষে সব রাষ্ট্রের ক্ষেত্রেই এগুলি বর্তমান।সরকারের ক্ষেত্রে এমন কোনাে অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য নেই। বিভিন্ন রাষ্ট্রে সরকারের বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন। কোথাও গণতান্ত্রিক সরকার, কোথাও একনায়কতন্ত্রী, কোথাও ফ্যাসিবাদী, আবার কোথাও বা সমাজতন্ত্রী সরকার। আবার সরকারের কাঠামাে কোথাও এককেন্দ্রিক, কোথাও যুক্তরাষ্ট্রীয়, কোথাও রাষ্ট্রপতি-শাসিত অথবা সংসদীয় প্রকৃতির হতে পারে।
রাষ্ট্রের একটি নির্দিষ্ট ভূখন্ড রয়েছে, যার সমস্ত অধিবাসী রাষ্ট্রের সদস্য। যেমন, আমাদের দেশের সমস্ত নাগরিককে নিয়ে ভারত রাষ্ট্র গঠিত।সরকার হল সমগ্র রাষ্ট্রের জনগণের একটি ক্ষুদ্র অংশ নিয়ে গঠিত প্রতিনিধিত্বমূলক প্রতিষ্ঠান। ভারতের মুষ্টিমেয় নাগরিককে নিয়ে ভারত সরকার গঠিত হয়।
সাময়িকভাবে হলেও সরকার ছাড়া রাষ্ট্রের অস্তিত্ব সম্ভব।রাষ্ট্র থেকে সরকারকে বিচ্ছিন্ন করলে সরকারের আর কোনাে পৃথক অস্তিত্ব থাকে না।
রাষ্ট্র সামগ্রিকভাবে একটি প্রতিষ্ঠান। এর নিজস্ব কিছু আদর্শ আছে। এটি কোনােভাবেই সরকারের অংশ নয়।সরকার রাষ্ট্রের একটি অংশমাত্র। রাষ্ট্রের আদর্শগুলিকে বাস্তবায়িত করাই এর উদ্দেশ্য।
রাষ্ট্রের অধিবাসীরা সাধারণত রাষ্ট্রের বিরােধিতা করে না। রাষ্ট্রদ্রোহিতা গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়।সরকার সঠিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে না পারলে জনগণ সেই সরকারের বিরােধিতা করতেই পারে। সরকারের প্রতি বিরােধিতা মানেই রাষ্ট্রবিরােধিতা নয়।
রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে প্রধান পার্থক্য

উপর্যুক্ত আলােচনা থেকে এই বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, রাষ্ট্র ও সরকার কখনােই এক নয়, উভয়ের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য বিদ্যমান। বস্তুত, রাষ্ট্র হল একটি তত্ত্বগত ধারণা। রাষ্ট্রের তত্ত্বগত ধারণার বাস্তব প্রতিনিধি হল সরকার।

রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে পার্থক্য কি

বর্তমানে রাষ্ট্র ও সমাজকে এক বলে মনে করা হয় না। আধুনিক রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণ এবং মার্কসবাদী রাষ্ট্রবিজ্ঞানীগণও রাষ্ট্র ও সমাজকে এক বলে মনে করেন না। রাষ্ট্র হল বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সৃষ্ট এক প্রতিষ্ঠান। অন্যদিকে, সমাজ বলতে স্বেচ্ছায় প্রতিষ্ঠিত সংঘের সমষ্টিকে বােঝায়। রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে নিম্নলিখিত পার্থক্যগুলি লক্ষ করা যায় 一

প্রকৃতিসমাজরাষ্ট্র
উদ্ভবরাষ্ট্রের তুলনায় সমাজের উদ্ভব আগে হয়েছে। রাষ্ট্র সৃষ্টির অনেক আগে থেকেই সমাজের অস্তিত্ব পরিলক্ষিত হয়।সামাজিক বিবর্তনের একটি স্তরে রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়েছে।
উদ্দেশ্যসমাজের আর্থিক, নৈতিক, ধর্মীয় ইত্যাদি বহু উদ্দেশ্য বর্তমান। বহুবিধ উদ্দেশ্য সমাজের নানাবিধ সংগঠনের মাধ্যমে সাধিত হয়।রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য হল, তার সদস্যদের কল্যাণ সাধন করা। আদিম মানুষের সুন্দর ও স্বয়ংসম্পূর্ণ জীবনযাপনের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্র গড়ে উঠেছে।
ব্যাপকতাসমাজ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে। ওই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রাষ্ট্র হল একটি প্রতিষ্ঠান।রাষ্ট্রের তুলনায় সমাজের উদ্দেশ্য অনেক ব্যাপক রাষ্ট্র কেবলমাত্র বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য গড়ে উঠেছে।
সদস্যপদসমাজ হল বছু সংগঠনের সমষ্টি। কোনাে ব্যক্তি তার প্রয়ােজন পূরণের জন্য এক বা একাধিক সামাজিক সংগঠনের সদস্য হতে পারে। সামাজিক সংগঠনের সদস্যপদ গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক নয়।কোনাে নাগরিককে তার রাষ্ট্রের সদস্য হতেই হয়। অন্যভাবে বলা যায় যে, রাষ্ট্রের সদস্যপদ গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক। তবে কোনাে ব্যক্তি একইসঙ্গে একাধিক রাষ্ট্রের সদস্য হতে পারে না।
সরকারসমাজ গড়ে ওঠার জন্য সরকারের প্রয়ােজন। হয় না। সমাজের সদস্যগণ নিজেরাই সামাজিক কার্যকলাপ পরিচালনা করেন।রাষ্ট্র গড়ে ওঠার জন্য সরকার আবশ্যক। সরকারের মাধ্যমেই রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয়। অর্থাৎ, সরকারের মাধ্যমেই রাষ্ট্র মূর্ত হয়ে ওঠে।
ভূখণ্ডমাজ গড়ে ওঠার জন্য নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের আবশ্যিকতা নেই।রাষ্ট্র গড়ে ওঠার জন্য একটি অপরিহার্য উপাদান হল ভূখণ্ড। নির্দিষ্ট ভূখন্ড ছাড়া রাষ্ট্র গঠনের কথা কল্পনাই করা যায় না।
সার্বভৌমিকতাসমাজের সার্বভৌম ক্ষমতা নেই। সমাজের কাজকর্ম রাষ্ট্রীয় নির্দেশের অধীনে থেকেই পরিচালিত হয়।সার্বভৌম ক্ষমতা কেবল রাষ্ট্রেরই থাকে। একারণে রাষ্ট্রীয় সীমানার মধ্যে অবস্থিত সকল ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্রের নির্দেশ মেনে চলতে হয়। এ ছাড়া একাধিক ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিরােধ দেখা দিলে রাষ্ট্রই তার মীমাংসা করে।
কার্যপদ্ধতিসমাজের উদ্দেশ্যের বাস্তবায়ন ঘটে সহযােগিতার মাধ্যমে। বিভিন্ন স্বেচ্ছামূলক প্রতিষ্ঠান নিয়ে সমাজ গড়ে ওঠে। সামাজিক রীতিনীতি অমান্য করলে সমালােচনা সহ্য করতে হয়। কিন্তু কোনোরূপ। শাস্তির ভয় থাকে না।রাষ্ট্র তার উদ্দেশ্যের বাস্তবায়নের জন্য আইন প্রণয়ন করে রাষ্ট্রীয় আইন মেনে চলা বাধ্যতামূলক।রাষ্ট্রীয় আইন অমান্য করলে। শাস্তি পেতে হয়। এজন্য অনেকে রাষ্ট্রকে দমনপীড়নমূলক প্রতিষ্ঠান বলে মনে করে।
রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে পার্থক্য

রাষ্ট্র ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পার্থক্য লেখ, রাষ্ট্র ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা করো

১. উৎপত্তিগত পার্থক্য: 

রাষ্ট্র ও অন্যান্য সংঘের মধ্যে উৎপত্তিগত কিছু পার্থক্য লক্ষ করা যায়। হাজার হাজার বছরের দীর্ঘ বিবর্তনের ফলে রাষ্ট্রের উৎপত্তি হয়েছে। কিন্তু অন্যান্য সংঘ প্রতিষ্ঠানের জন্য এত দীর্ঘ পরিবর্তনের দরকার হয় না। সামাজিক মানুষ ইচ্ছা করলেই অন্যান্য সংঘ তৈরি করতে পারে। কিন্তু ইচ্ছানুসারে রাষ্ট্র তৈরি সম্ভব নয়।

২. ভূখণ্ডগত পার্থক্য: 

রাষ্ট্র ও অন্যান্য সংঘের মধ্যে সীমারেখাগত পার্থক্য লক্ষ করা যায়। রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট ভূখণ্ড বা সীমানা থাকে। কিন্তু অন্যান্য সংঘের কোনো নির্দিষ্ট সীমারেখা থাকে না। এই সমস্ত সংঘ দেশ জুড়েও থাকতে পারে আবার দেশের বাইরেও থাকতে পারে। যেমন রামকৃষ্ণ মিশন, রেডক্রস ইত্যাদি। 

৩. নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্র: 

রাষ্ট্র প্রয়োজনে অন্যান্য সংঘগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। কিন্তু সংঘ রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তাই রাষ্ট্রকে সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান বলা হয়।

৪. এক্তিয়ারগত পার্থক্য: 

রাষ্ট্রের একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমা থাকে। রাষ্ট্রের যাবতীয় কার্যকলাপ এই নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। অন্যান্য সামাজিক সংগঠনের কোনো নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমা থাকে না। অন্যান্য সংগঠনের কর্মক্ষেত্রের পরিধি এভাবে কোনো ভৌগোলিক সীমার মধ্যে আবদ্ধ নয়। রেডক্রস, রামকৃষ্ণ মিশন প্রভৃতি সংগঠনের শাখা-প্রশাখা ও কার্যকলাপ সারা পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে।

৫. নির্দিষ্ট সীমার বাইরে রাষ্ট্র সাধারণত সদস্য সংগ্রহ করে না। সামাজিক সংঘ-সংগঠনসমূহ সমগ্র পৃথিবী থেকে সদস্য সংগ্রহ করতে পারে।

৬. স্থায়িত্বের পার্থক্য:

রাষ্ট্র একটি স্থায়ী সংগঠন; কিন্তু সামাজিক সংগঠনগুলি দীর্ঘস্থায়ী নাও হতে পারে। নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য সিদ্ধির সঙ্গে সঙ্গেই এই সমস্ত সংগঠনের বিলুপ্তি ঘটতে পারে। রাষ্ট্র কিন্তু একটি স্থায়ী প্রতিষ্ঠান। স্থায়িত্ব হল রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।

৭. উদ্দেশ্যগত পার্থক্য:

অন্যান্য সামাজিক সংগঠনগুলির নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য থাকে। খেলাধূলা, শিক্ষাবিস্তার, ধর্মপ্রচার প্রভৃতির মধ্যে বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য সাধনের জন্যই প্রতিটি সংগঠন গড়ে তোলা হয়। কিন্তু রাষ্ট্রের কোনো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য থাকে না। রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য ব্যাপক ও বহুমুখী। সমাজের সামগ্রিক মঙ্গল সাধনই রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য।

৮. রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য ও কার্যাবলি ব্যাপক ও বহুমুখী। তাই রাষ্ট্রের সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা যায়। অন্যান্য সামাজিক সংগঠনের এই সমস্ত সমস্যা তত প্রবল নয়। 

৯. রাষ্ট্র সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী:

কেবল রাষ্ট্রেরই সার্বভৌম ক্ষমতা আছে। তাই রাষ্ট্রের নির্দেশই হল আইন। রাষ্ট্রের আইন অমান্য করলে তার জন্য অমান্যকারীকে শাস্তি ভোগ করতে হয়। এই শাস্তি আর্থিক, দৈহিক, এমনকি মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত হতে পারে। কিন্তু অন্যান্য সামাজিক সংগঠনের সার্বভৌম ক্ষমতা নেই। এই সমস্ত সংগঠন তাদের সদস্যদের কখনোই দৈহিক শাস্তি দিতে পারে না। খুব বেশি হলে এই সমস্ত সংগঠন তার সদস্যদের সভ্যপদ কেড়ে নিতে পারে।

মূল্যায়ন

পরিশেষে যায়, রাষ্ট্র ও অন্যান্য সংঘের মধ্যে বৈসাদৃশ্য থাকা সত্ত্বেও, বাস্তবে রাষ্ট্র ও যে-কোনো সামাজিক প্রতিষ্ঠান যে পরস্পরের পরিপূরক এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ সমাজবদ্ধ মানুষের সব রকম দাবি পূরণ করা রাষ্ট্রের একার পক্ষে সম্ভব নয়। যেমন—নৈতিকতার শিক্ষা, আধ্যাত্মিক দাবি পূরণ, জাতীয়তাবোধ জাগ্রত করা, বিভিন্ন সামাজিক বিষয়ে সংস্কারসাধন, স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রসারসাধন প্রভৃতি সামাজিক সংঘগুলিই করে থাকে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্র অন্যান্য সংঘগুলিকে তাদের কার্যসম্পাদনে সহযোগিতা করে থাকে। সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, রাষ্ট্র ও অন্যান্য সংঘগুলি পরস্পর পরস্পরের পরিপূরক।

আরো পড়তে: প্রাকৃতিক পরিবেশ কাকে বলে, প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান গুলো কি কি

জাতি ও রাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্য

স্বাধীন রাজনীতিক সংগঠনের মাধ্যমে জাতীয় জনসমাজ জাতিতে পরিণত হয়। এই কারণে সাধারণভাবে মনে করা হয় যে, জাতি ও রাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্য নেই। কিন্তু প্রকৃত বিচারে জাতি ও রাষ্ট্রের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য বর্তমান। গিলক্রিস্ট এবং হায়েস উভয়ের মধ্যে পার্থক্য প্রসঙ্গে আলোচনা করেছেন।

রাষ্ট্রজাতি
রাষ্ট্র গঠিত হয় চারটি উপাদান নিয়ে। এই উপাদান চারটি হল: জনসমষ্টি, নির্দিষ্ট ভূখণ্ড, সরকার ও সার্বভৌমিকতা।জাতি গঠনের জন্য এই উপাদানগুলি লাগে না। জনসমাজের মধ্যে গভীর ঐক্য হল জাতি গঠনের মূল উপাদান। এই ঐক্য বিভিন্নভাবে জনসমাজের মধ্যে সঞ্চারিত হতে পারে।
রাষ্ট্র সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী। এই ক্ষমতার অধিকার রাষ্ট্রকে বিশিষ্টতা প্রদান করেছে। রাষ্ট্রের হাতে কেন্দ্রীভূত এই ক্ষমতা সরকারের মাধ্যমে প্রযুক্ত হয়।জাতি বলতে যা বোঝায় তার সার্বভৌম ক্ষমতা বা ক্ষমতা প্রয়োগের যন্ত্র সরকার নেই। রাষ্ট্রের ক্ষমতা ও ইচ্ছা সরকারের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। কিন্তু জাতির এ রকম কোন সরকার নেই। 
একটি নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে একটি জনসমাজ আইনগতভাবে সংগঠিত হলে রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়।জাতি বলতে এমন এক জনসমাজকে বোঝায় যাদের মধ্যে একসঙ্গে বসবাসের সাধারণ ইচ্ছা আছে এবং যারা মনস্তাত্ত্বিকভাবে সংগঠিত।
রাষ্ট্র একজাতি-ভিত্তিক বা বহুজাতি-ভিত্তিক হতে পারে। একজাতি-ভিত্তিক রাষ্ট্রের উদাহরণ হল: জার্মানী, জাপান, হাঙ্গেরী, সুইডেন প্রভৃতি।বহুজাতিক-ভিত্তিক রাষ্ট্রের উদাহরণ হলঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, গণ-প্রজাতন্ত্রী চীন, সুইজারল্যাণ্ড, সুইডেন প্রভৃতি।
রাষ্ট্র ও জাতির সীমানা বা আয়তন খুব কম ক্ষেত্রেই সমানুপাতিক হয়। গার্ণার বলেছেন: “In fact they rarely coincide. ” রাষ্ট্রের সীমানা যেমন জাতীয় সীমানাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে, তেমনি জাতির সীমানাও রাষ্ট্রের সীমানাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে।জাতির নিজস্ব রাষ্ট্র বিলুপ্ত হতে পারে, এতদ্‌সত্ত্বেও জাতি টিকে থাকতে পারে। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে রাষ্ট্র হিসাবে জাপান ও জার্মানীর পতন ঘটে। কিন্তু জাতি হিসাবে জার্মান ও জাপানিগণ টিকে ছিল। 
রাষ্ট্র হল একটি আইনগত ধারণা। এর রাজনীতিক বাস্তবতা বিরোধ-বিতর্কের ঊর্ধ্বে।জাতি হল একটি ভাবগত বা মনস্তাত্ত্বিক ধারণা। এ হল এক মনস্তাত্ত্বিক অনুভূতির দ্বারা ঐক্যের চেতনা। 
রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত থাকে জনগণের আনুগত্যের উপর।জাতি প্রতিষ্ঠিত থাকে নিজেদের ঐক্যবদ্ধ চেতনার উপর।
সমাজে শান্তি -শৃঙ্খলার বজাই রাখার জন্য এবং বহিঃশক্তির আক্রমণ প্রতিরোধ করে নিজেদের নিরাপত্তা বিধানের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয়।জাতীয় সমাজ স্বাধীন বা স্বাধীনতাকামী রাজনৈতিক দলে সংগঠিত হয়ে জাতিতে পরিণত হয়।
রাষ্ট্র বৃহৎ প্রকৃতির হওয়াই এর ভাষা ,কৃষ্টি , ধর্ম ও আচার-ব্যবহার প্রভৃতির ক্ষেত্রে ভিন্নতা দেখা যায়।জাতির জনসমষ্টির ভাষা ,কৃষ্টি , ধর্ম ও আচার-ব্যবহার প্রভৃতির মধ্যে মিল থাকে।
জাতি ও রাষ্ট্রের মধ্যে পার্থক্য

উপসংহার

উভয়ের মধ্যে পার্থক্য সত্ত্বেও জাতি এবং রাষ্ট্র পরস্পরের পরিপূরক। এদের মধ্যে পারস্পরিক গভীর সম্পর্ক বর্তমান। জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার দাবির অর্থ হল স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি বা উদ্যোগ। জাতির প্রচেষ্টার ভিত্তিতেই স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। তেমনি আবার জাতি পূর্ণতা লাভ করে রাষ্ট্রের মধ্যেই। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ (United Nations Organisation) এই আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানটি হল সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলির সংগঠন। কিন্তু একে ‘রাষ্ট্রপুঞ্জ’ না বলে ‘জাতিপুঞ্জ’ বলা হয়েছে। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক স্তরে জাতি হিসাবে রাষ্ট্র পরিচিতি পায়।

রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কে ঐশ্বরিক মতবাদ

ঐশ্বরিক উৎপত্তিবাদ হল রাষ্ট্রের উৎপত্তিসংক্রান্ত সব থেকে প্রাচীন মতবাদ। এটি হল এক কল্পনাপ্রসূত মতবাদ। এই মতবাদ অনুসারে পৃথিবীতে রাষ্ট্র হল ঈশ্বরের সৃষ্টি। ঈশ্বর স্বয়ং রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছেন’—এই হল মতবাদের প্রধান প্রতিপাদ্য বিষয়। রাষ্ট্র ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুসারে পরিচালিত হয়। তাঁর ইচ্ছা প্রকাশিত হয় তাঁর প্রতিনিধির মাধ্যমে। রাজাই হলেন ঈশ্বরের মনোনীত প্রতিনিধি।

অর্থাৎ রাজার আদেশই হল ঈশ্বরের নির্দেশ। তাই জনগণের কর্তব্য হল দ্বিধাহীন ও প্রশ্নাতীতভাবে রাজার আজ্ঞা মেনে চলা। রাজার আদেশ অমান্য করার অর্থ হল ঈশ্বরের ইচ্ছার বিরোধিতা করা। সুতরাং রাজদ্রোহিতা ধর্মদ্রোহিতার সামিল। রাজার কথাই হল আইন। তাঁর যাবতীয় কার্যকলাপ কল্যাণকর এবং ন্যায়সঙ্গত। রাজা হলেন ঈশ্বরের একমাত্র প্রত্যক্ষ প্রতিনিধি।

তাই তাঁর যাবতীয় দায়-দায়িত্ব ঈশ্বরের কাছে। প্রজাসাধারণের কাছে তাঁর কোন দায় দায়িত্ব নেই। প্রজাদের কাছে জবাবদিহি করতে তিনি বাধ্য নন। অর্থাৎ এই দুনিয়ার কোন কিছু বা কারোর দ্বারাই তাঁর ইচ্ছা-অনিচ্ছা ও ক্ষমতা সীমাবদ্ধ নয়। এই মতবাদে রাজাকে প্রজাসাধারণ ও আইনের ঊর্ধ্বে স্থান দেওয়া হয়েছে। এইভাবে রাজাকে সর্বময় কর্তৃত্বসম্পন্ন করা হয়েছে। এই মতবাদে যে রাষ্ট্রের কথা বলা হয়, তা হল ধর্মীয় রাষ্ট্র (Theocratic State)।

প্রাচীনকালে মতবাদটির বহুল প্রচলন ছিল

রাষ্ট্রের উৎপত্তির ব্যাখ্যা হিসাবে ঐশ্বরিক উৎপত্তিবাদ অত্যন্ত প্রাচীন। প্রাচীনকালে মিশর, জাপান, ভারত প্রভৃতি এশিয়ার বহু দেশে এই মতবাদের বহুল প্রচলন ছিল। হিন্দু পুরাণ অনুসারে বহু রাজারই জন্ম দেবাংশে। কোন রাজবংশের উৎপত্তি সূর্য থেকে, আবার কারও বা চন্দ্র থেকে।

যুধিষ্ঠিরকে বলা হয় ধর্মপুত্র, রামচন্দ্র হলেন স্বয়ং বিষ্ণু। মনুর আইনশাস্ত্রের ভাষ্য অনুসারে নৈরাজ্যের নিগ্রহ বর্তমান ছিল, তখন মানুষের নিরাপত্তার জন্য ঈশ্বর রাজাকে সৃষ্টি করেছেন। মিশর ও জাপানে রাজাকে ভগবানের প্রতিনিধি বলে মনে করা হত। ওল্ড টেস্টামেন্ট (Old Testament) – এও এ ধরনের বহু উদাহরণ পাওয়া যায়।

প্রাচীন খ্রীস্টান চিন্তাধারা অনুসারে মানুষের পাপের প্রায়শ্চিত্তের জন্য ঈশ্বর রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছেন। প্রাচীন হিব্রু চিন্তাতেও এই মতবাদের সমর্থন পাওয়া যায়। মহাভারতের শাস্তিপর্বে ঐশ্বরিক উৎপত্তিবাদের আংশিক সমর্থন আছে। মহাভারতে নৃপতিকে ঈশ্বরতুল্য জ্ঞান করতে বলা হয়েছে। হিন্দু ধর্মশাস্ত্র অনুসারে প্রজাপতি ব্রহ্মা পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। জনগণের অনুরোধে তিনি প্রজাপালনের দায়িত্ব দিয়ে মনুকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন।

মধ্যযুগ

মধ্যযুগে ধর্মগুরু পোপ ও রাজার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলেছে। এই দীর্ঘস্থায়ী বিরোধ একটি মূল প্রশ্নকে কেন্দ্র করে সংঘটিত হয়েছে। সেই প্রশ্নটি হল: কে ঈশ্বরের প্রকৃত প্রতিনিধি? পোপ এবং রাজা উভয়েই ঈশ্বরের প্রতিনিধিত্ব এবং সঙ্গে সঙ্গে জনসাধারণের আনুগত্য দাবি করতে থাকেন।

আধুনিক যুগের সূচনায় রাজাই শেষ পর্যন্ত জয়ী হন। ঈশ্বরের একমাত্র প্রতিনিধি হিসাবে রাজা স্বীকৃতি লাভ করেন। তার ফলে রাজার সর্বময় কর্তৃত্ব ও প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। মধ্যযুগের শেষের দিকে প্রোটেস্ট্যান্ট রিফরমেশন স্বীকার করে নেয় যে উদ্ভূত জাতীয় রাষ্ট্রের নৃপতিরা প্রত্যক্ষভাবে ঈশ্বরের কাছ থেকে তাদের কর্তৃত্ব লাভ করেছেন।

খ্রীষ্টীয় পঞ্চম শতাব্দীতে সেন্ট অগাস্টাইন ‘City of God’-এর ধারণা প্রচার করেন। রোমান ধর্মযাজক সেন্ট পল (St. Paul), অ্যাকুইনাস (St. Thomas Acquinas) প্রমুখ চিন্তাবিদের লেখায়ও ঐশ্বরিক উৎপত্তিবাদের সমর্থন পাওয়া যায়। অ্যাকুইনাস মনে করতেন যে রাজার ক্ষমতা হল ঈশ্বর প্রদত্ত। মতবাদটি চরম আকার ধারণ করে ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে।

ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে ইংল্যাণ্ডের রাজাদের মধ্যে অনেকে এই মতবাদের সাহায্যে নিজেদের সর্বশক্তিমান হিসাবে প্রতিপন্ন করেছেন। এক্ষেত্রে রাজা প্রথম জেমসের প্রচেষ্টা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি সপ্তদশ শতাব্দীর গোড়াতেই ‘‘Free Mon archy” বা মুক্ত রাজতন্ত্রের তত্ত্ব প্রচার করেছেন। তিনি বলেছেন: ‘রাজা হলেন মর্ত্যলোকে ঈশ্বরের জীবন্ত প্রতিমূর্তি’ (“Kings are breathing images of God upon earth.’)।

রাজা প্রথম জেমস বিধিদত্ত অধিকারের তত্ত্বের দ্বারা প্রভাবিত। তিনি বলেছেন: “The State of Monarchy is the supremest thing upon earth, for kings are not only God’s lieutenants upon earth and sit upon God’s throne but even by God himself they are called God’s.” রাজা জেমস এটাই প্রচার করেছেন যে, রাজার ক্রিয়াকলাপ, বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলী হল অলৌকিক এবং সাধারণের ব্যাখ্যা ও বিতর্কের অতীত। দার্শনিকরাও ‘রাজকীয় রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেন না।

মার্টিন লুথার, স্যার রবার্ট ফিলমার প্রমুখ চিন্তাবিদও এই মতবাদের তাত্ত্বিক সমর্থক হিসাবে পরিচিত। ফিলমার (Sir Robert Filmer)-এর ‘প্যাট্রিয়ার্কা’ (Patriarcha) গ্রন্থে এই মতবাদের দৃঢ় তাত্ত্বিক সমর্থন আছে। ফিলমারও রাজার বিধিদত্ত অধিকারকে সমর্থন করেছেন। রাজতন্ত্রকে তিনি ঐশ্বরিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে ঘোষণা করেছেন। তাঁর মতে এই প্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক আইনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। তাঁর আরও অভিমত হল যে রাজা এবং প্রজার সম্পর্ক হল পিতা-পুত্রের সম্পর্কের মতই।

রাষ্ট্রের উৎপত্তিবাদে ঐশ্বরিক মতবাদের বৈশিষ্ট্য

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে রাষ্ট্রের উৎপত্তি সম্পর্কিত ঐশ্বরিক উৎপত্তিবাদের কতকগুলি বৈশিষ্ট্যের পরিচয় পাওয়া যায়। এই মূল বৈশিষ্ট্যগুলি হল নিম্নরূপ: 

  • (১) পৃথিবীতে রাষ্ট্র হল ঈশ্বরের সৃষ্টি। 
  • (২) পৃথিবীতে রাজা হলেন ঈশ্বরের প্রতিনিধি। প্রজাপালনের দায়িত্ব দিয়ে ঈশ্বর তাঁকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। 
  • (৩) রাজার আদেশই হল ঈশ্বরের নির্দেশ। রাজার আদেশই হল আইন এবং এই আইন হল চূড়ান্ত। 
  • (৪) রাজা তাঁর কাজকর্মের জন্য প্রজাসাধারণের কাছে দায়ী নন। তাঁর দায়-দায়িত্ব ঈশ্বরের কাছে। 
  • (৫) রাজদ্রোহিতা ধর্মদ্রোহিতার সামিল। প্রজাসাধারণ রাজার কাজকর্মের ব্যাপারে কোন প্রশ্ন তুলতে পারে না। 
  • (৬) ঐশ্বরিক উৎপত্তিবাদ চরম রাজতন্ত্রের জন্ম দেয়।
আরো অন্যান্য সরকারি স্কিম সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | রাষ্ট্র

Q1. রাষ্ট্র কি

Ans – রাষ্ট্র হল এমন এক জনসমাজ যা নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যসাধনের জন্য স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত এবং বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত। 

Q2. রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে প্রধান পার্থক্য কি

Ans – রাষ্ট্র হল এমন এক জনসমাজ যা নির্দিষ্ট ভূখণ্ডে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যসাধনের জন্য স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠিত এবং বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত। অন্যদিকে সরকার হল একটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা যার দ্বারা একটি দেশ বা সম্প্রদায় পরিচালিত এবং নিয়ন্ত্রিত হয়।

Q3. আমিই রাষ্ট্র উক্তিটি কার

Ans – আমিই রাষ্ট্র – উক্তিটি হল চতুর্দশ লুই এর।

Q4. জাতি রাষ্ট্র কাকে বলে

Ans – জাতিরাষ্ট্র বলতে মূলত একক জাতিগত পরিচয় বা জাতীয় আদর্শকে ভিত্তি করে গঠিত রাষ্ট্রকে বোঝায়। সাধারণত জাতিরাষ্ট্র সমূহে জাতির ইতিহাস, সংস্কৃতি ও মননশীলতার প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়।

Q5. ভারত রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রধান কে

Ans – ভারতের রাষ্ট্রপতি হলেন ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপ্রধান। রাষ্ট্রপতি ভারতের আইনবিভাগ, শাসনবিভাগ ও বিচারবিভাগের সকল শাখার আনুষ্ঠানিক প্রধান এবং ভারতের সামরিক বাহিনীর সর্বাধিনায়ক।

Q6. ভারতকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বলা হয় কেন

Ans – ভারতবর্ষের সংবিধানে, ভারতবর্ষকে ধর্ম-নিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে বলে।বহু ধর্মের দেশ ভারতবর্ষ, প্রত্যেক ভারতবাসীর স্ব-স্ব ধর্মাচরণের অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে অর্থাৎ রাষ্ট্র তাঁর নাগরিকের ধর্মাচরণে কোনোভাবেই হস্তক্ষেপ করবে না।

Q7. রাষ্ট্র শব্দটি সর্বপ্রথম কে ব্যবহার করেন

Ans – রাষ্ট্র শব্দটি সর্বপ্রথম ম্যাকিয়াভেলী ব্যবহার করেন ।

Q8. রাষ্ট্র দর্শনের জনক কে

Ans – এরিস্টটল গ্রীসের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী রাষ্ট্র দর্শনের জনক।

Q9. রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান কোনটি

Ans – রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো: সার্বভৌমত্ব। কারণ, রাষ্ট্র গঠনের ৪টি উপাদানের মধ্যে সার্বভৌমত্ব অন্যতম। সার্বভৌমত্ব ধারণাটি আধুনিক রাষ্ট্রের ভিত্তি। সার্বভৌমত্ব ছাড়া কোন রাষ্ট্র কল্পনা করা যায় না।

Q10. বাংলাদেশের রাষ্ট্র প্রধান কে

Ans – রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশের রাষ্ট্র প্রধান।

Q11. কল্যাণমূলক রাষ্ট্র কাকে বলে

Ans – কল্যাণমূলক রাষ্ট্র বলতে বুঝায় এমন এক রাষ্ট্রকে যা জনগণের সামগ্রিক কল্যাণে আত্মনিয়োগ করে।

Q12. রাষ্ট্র কোন ধরনের প্রতিষ্ঠান

Ans – রাষ্ট্র এক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান।

Q13. একটি রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কোনটি

Ans – একটি রাষ্ট্রের সংবিধানই ঐ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন।

Q14. পৃথিবীতে কয়টি রাষ্ট্র আছে

Ans – জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী 195 টি স্বাধীন পৃথিবীতে দেশ রয়েছে। তার মধ্যে 193 টি তাদের সদস্য। বাকি দুটি সদস্য নয়। আরও 6টি দেশ আছে যাদের আংশিক স্বীকৃতি রয়েছে।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।