প্রবাল প্রাচীর কাকে বলে, পৃথিবীর বৃহত্তম প্রবাল প্রাচীর কোনটি, প্রবাল প্রাচীর গড়ে ওঠার কারণ

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

প্রশ্নপত্র

প্রবাল প্রাচীর কাকে বলে

প্রবাল হল একধরনের জীব যাদের দেহ ক্যালসিয়াম কার্বনেড বা চুনের শক্ত খোলসে ঢাকা থাকে । এরা মহাসমুদ্রের নীচে বাস করে । প্রবাল কীট গুলি মারা যাওয়ার পর চুন জাতীয় দেহাবশেষ সঞ্চিত হয় ও পরবর্তীতে প্রবাল প্রাচীর নামে পরিচিতিলাভ করে ।

এই পৃথিবীতে ছড়িয়ে রয়েছে কতোই না বিস্ময়কর বস্তু। সমুদ্র গর্ভের প্রবাল প্রাচীর এমনই এক বিস্ময় বস্তু। সুন্দর রঙের মহিমায় খুব সহজেই মানুষের মন জয় করে নিতে পারে প্রবাল।

হঠাৎ দেখলে একে জড়বস্তু মনে হতে পারে, আসলে কিন্তু প্রবাল জীবন্ত সামুদ্রিক প্রাণী। এদের সাথেই প্রবাল প্রাচীরে বাস করে আরো অনেক উদ্ভিদ ও প্রাণী। অসাধারণ প্রাণবৈচিত্রের জন্য এই প্রাচীরগুলো অতুলনীয়।


প্রবাল ও তার প্রাচীর

বিস্ময়কর সামুদ্রিক জীব প্রবাল (Coral)। এরা প্রাণী, কিন্তু চলেফিরে বেড়ায় না। বরং সাগরতলে এক জায়গায় ঘাঁটি গেড়ে সারাটা জীবন কাটিয়ে দেয়। প্রাণীজগতে এদের স্থান অ্যান্থোজোয়া শ্রেণীতে। এরা অমেরুদন্ডী। প্রবালের অনেকগুলো প্রজাতি আছে।

এক একটা প্রবাল-প্রাণীকে বলা হয় পলিপ। এই পলিপগুলো সাধারণত আকারে খুবই ছোটো, মাত্র ১/২ মিলিমিটার লম্বা। জিনগত ভাবে সম্পর্কিত এরকম হাজার হাজার প্রবাল-পলিপ সমুদ্রের নিচে কলোনি বানিয়ে একসাথে বাস করে। এই কলোনি থেকেই গড়ে ওঠে প্রবাল প্রাচীর।

প্রবাল প্রাচীরগুলো দেখতে অপূর্ব সুন্দর। এগুলো বাদামি, লাল, নীল, সবুজ, হলুদ, সোনালি, ইত্যাদি নানান রঙে রঙানো থাকে। একই প্রাচীরের আলাদা আলাদা অংশ আলাদা আলাদা আকারের হতে পারে, যেমন, হরিণের শিং, মৌমাছির চাক, মানুষের মস্তিষ্ক, ইত্যাদি। প্রবাল প্রাচীরের মূল উপাদান প্রবাল-ক্ষরিত ক্যালসিয়াম কার্বোনেট। এছাড়াও প্রাচীরে বসবাসকারী অ্যালজি, স্পঞ্জ ও অন্যান্য জীবরা এতে নানান উপাদান যোগ করে এর বর্ণবৈচিত্রকে আরো বাড়িয়ে তোলে।

প্রবালের জীবন কাহিনী

প্রাণী হিসেবে প্রবাল একেবারে অনন্য। এদের খাওয়াদাওয়া থেকে বংশবৃদ্ধি, সব কিছুই অদ্ভুত। প্রবালের পলিপগুলো তাদের টেন্টাকেল বা আকর্ষের সাহায্যে সাগরের জলে ভেসে আসা অতিক্ষুদ্র প্রাণী-প্ল্যাঙ্কটন শিকার করে খায়। সাধারণত রাতের বেলায় এরা এইভাবে শিকার ধরে। তবে এইভাবে পলিপগুলো তাদের পুষ্টি চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ পূরণ করে। এদের পুষ্টির বেশিরভাগটা আসে এদের দেহকলায় আশ্রয় নেওয়া অতিসূক্ষ্ম অ্যালজিদের কাছ থেকে। প্রবাল-বান্ধব এই মিথোজীবী অ্যালজি জ়োঅক্স্যানথেলাই (Zooxanthellae) নামে পরিচিত।

অযৌন ও যৌন, দুরকম পদ্ধতিতেই প্রবাল বংশবৃদ্ধি করে। যৌন জননের ক্ষেত্রে অন্তঃনিষেক ও বহিঃনিষেক, দুই-ই হয়ে থাকে। বহিঃনিষেকের জন্য প্রবালের পছন্দ বসন্তকাল। এই সময় পূর্ণিমা থেকে পরপর ক’দিন, জোছনা রাতে সাগরজলের মায়াবী পরিবেশে প্রবাল প্রাচীরের পলিপরা ডিম্বাণু ও শুক্রাণু ছড়িয়ে যৌন জননে মেতে ওঠে। ডিম্বাণু ও শুক্রাণুগুলোর মিলনে জন্ম নেয় নতুন নতুন পলিপ।

পৃথিবীর বৃহত্তম প্রবাল প্রাচীর হলো অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড উপকূলের কাছে অবস্থিত গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ। এটা ২৯০০টা ক্ষুদ্রতর প্রাচীর ও ৯০০টার মতো প্রবাল দ্বীপ নিয়ে গঠিত এক বিরাট কাঠামো যা প্রায় ২৬০০ কিমি লম্বা। মহাকাশ-স্টেশন থেকে পৃথিবীর যে কয়েকটা প্রাণী-সৃষ্ট কাঠামো খালি চোখে দেখা যায় তার মধ্যে একটা হলো গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ।

প্রবাল প্রাচীর এর শ্রেণীবিভাগ

ক্রান্তীয় অঞ্চলে অগভীর সমুদ্রের তলদেশে সবুজ, সাদা, হলুদ ইত্যাদি নানা রঙের প্রবাল কীটের দেহ সঞ্চিত হয়। এদের দেহ চুনজাতীয় পদার্থ দ্বারা গঠিত। এই পদার্থ সঞ্চিত হয়ে চুনাপাথর সৃষ্টি করে। চুনাপাথর সঞ্চয় দীর্ঘাকৃতি বা বলয়ের আকৃতির হলে তাকে প্রবাল প্রাচীর বলে। উৎপত্তির পর্যায় ও প্রকৃতি অনুযায়ী প্রবাল প্রাচীরকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়্‌। যথা –

ক) প্রান্তদেশীয় প্রবাল প্রাচীর

সমুদ্রউপকূল বা দীপের সঙ্গে সংযুক্ত অবস্থায় সংকীর্ণ ও বলয়ের আকারে যে প্রবাল প্রাচীর গড়ে ওঠে তাকে প্রান্তদেশীয় প্রবাল প্রাচীর বলে। এটি যেকোন প্রবাল প্রাচীর গঠনের প্রাথমিক পর্যায়কে নির্দেশ করে। 

বৈশিষ্ট্য 

  • ১. এই ধরনের প্রবাল প্রাচীর উপকূলের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। 
  • ২.  এগুলির দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ কম অর্থাৎ আয়তনে ছোট হয়।
  • ৩.  সমুদ্রের দিকের অংশটি অপেক্ষাকৃত উঁচু হয়।
  • ৪.  এর উপরিভাগ সমতল হয় এবং ভাঁজ যুক্ত হয়। 
  • ৫. অনেক সময় প্রধান ভূখণ্ড ও প্রান্তদেশীয় রিফের মধ্যবর্তী অংশে সংকীর্ণ উপহ্রদ বা লেগুন থাকে। একে বোট চ্যানেল (Boat channel) বলে।

উদাহরণ – ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এবং লাক্ষাদ্বীপের চারপাশে প্রান্তদেশীয় প্রবালপ্রাচীর দেখা যায়।

খ) প্রতিবন্ধক প্রবালপ্রাচীর (Barrier Reef)

 সমুদ্রউপকূল বা দ্বীপ থেকে কিছুটা দূরে কয়েকশো মিটার থেকে 5 কিলোমিটার বিস্তৃত উপকূলের সমান্তরালে গড়ে ওঠা প্রবাল প্রাচীরকে প্রতিবন্ধক প্রবাল প্রাচীর বেরিয়ার রিফ (Barrier Reef) বলে। নৌচলাচলে বাধা সৃষ্টি করে বলে একে প্রতিবন্ধক প্রবালপ্রাচীর বলে। 

বৈশিষ্ট্য 

  • ১. মূল ভূখণ্ড থেকে গভীর ও বিস্তৃত জলভাগ দ্বারা বিচ্ছিন্ন থাকে। 
  • ২. এর গড় ঢাল 45° হলেও কিছু কিছু প্রবালপ্রাচীরের ঢল 15° থেকে 25°।  
  • ৩. এগুলির আয়তন বৃহৎ, অধিক বিস্তার এবং প্রশস্ত যুক্ত হয়। 
  • ৪. উপকূল এবং প্রাচীরের মধ্যে অগভীর এবং প্রশস্ত লেগুন বা উপহ্রদ থাকে।
  • ৫. এইগুলি একটানা ভাবে বিস্তৃত না হয়ে বিচ্ছিন্ন হয়।
  • ৬.  বিচ্ছিন্ন অংশের মধ্য দিয়ে জোয়ারের জল প্রবেশ করে। 

উদাহরণ – অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পূর্বে অবস্থিত গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ পৃথিবীর বৃহত্তম প্রবালপ্রাচীর।

গ) অ্যাটল( Atoll)

 সমুদ্রের মধ্যে মোটামুটি বলয়ের আকারে যেসকল খাড়া ঢাল বিশিষ্ট প্রবাল প্রাচীর গঠিত হয় তাদের অ্যাটল বা প্রবাল বলয় বলে।

উৎপত্তি  

সমুদ্রের মধ্যে আগ্নেয়গিরির চারপাশে প্রতিবন্ধক প্রবাল প্রাচীর গঠিত হবার পর আগ্নেয়গিরি নিমজ্জিত হলে নিমজ্জনের সঙ্গে তাল রেখে প্রবাল প্রাচীর উপরের দিকে বৃদ্ধি পেতে থাকে। আগ্নেয়গিরি সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হলেও প্রবাল প্রাচীরের বৃদ্ধি অব্যাহত থাকে। ফলে সমুদ্র জলতলের ওপর প্রবাল প্রাচীর বলয়ের আকারে অবস্থান করে।

বৈশিষ্ট্য  

  • ১. এদের আকৃতি বৃত্তাকার বা উপবৃত্তাকার।
  • ২. অ্যাটলর মধ্যবর্তী অংশে অগভীর উপহ্রদ থাকে। যার গভীরতা 30 থেকে 50 মিটার। 
  • ৩. অ্যাটলের বহির্মুখী দেওয়াল অত্যন্ত ঢালু হয়। 
  • ৪. অ্যাটলে অনেক সংযোগকারী পরিখা থাকে।
  • ৫. সমুদ্রগর্ভের কোন মালভূমি, পাহাড় বা গায়ের ওপর অ্যাটল গঠিত হয়।

উদাহরণ – পূর্ব ফিজি অ্যাটল, এলিশ দ্বীপের ফুনাফুটি অ্যাটল।

প্রবাল প্রাচীর এর বৈশিষ্ট্য

(i) স্থলভাগ থেকে প্রবাল প্রাচীর অত্যন্ত খাড়াঢাল বিশিষ্ট হয়ে থাকে।
(ii) প্রবাল প্রাচীর ক্রাকার, বৃত্তাকার বা লম্বভাবে উপকূলের সমান্তরালে গড়ে ওঠে। (iii) প্রবাল প্রাচীর উর্দ্ধদিকে 30-60 মিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়।

উদাহরণ : পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম প্রবাল প্রাচীরের নিদর্শন হল অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট বেরিয়ার রীফ।

অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ প্রবাল প্রাচীরটি 2,500 টি প্রবাল প্রাচীরের শৃখল। সবকটি ছােট দ্বীপসহ এই প্রাচীরটি 2.300 কিমি দীর্ঘ এবং গড় প্রশন্ততা I6 কিমি. এবং স্থান বিশেষে 144 কি.মি. পর্যন্ত প্রশস্ত। অস্ট্রেলিয়ার উঃ পূর্বে অবস্থিত প্রবাল প্রাচীরটি কেবল ভাটার সময় দেখা যায় ও এটি বহুস্থানে বিচ্ছিন্ন।

প্রবাল প্রাচীর এর গুরুত্ব

সমুদ্রগর্ভের প্রবাল প্রাচীরগুলো আমাদের অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদ। সব জায়গাতেই এগুলোকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে স্কুবা ডাইভিং ও পর্যটনের জনপ্রিয় কেন্দ্র। আকর্ষণীয় রঙের জন্য অলংকার শিল্পে প্রবাল ব্যবহার করা হয়। আমরা যে বস্তুটা পলা নামে চিনি, সেটা আসলে প্রবাল প্রাচীরের টুকরো। এছাড়া প্রবাল প্রাচীরগুলোর আশেপাশে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। আধুনিক গবেষণায় জানা গেছে, প্রবাল থেকে অ্যালঝাইমার্স, ক্যানসার, ইত্যাদি দুরারোগ্য রোগের ওষুধ তৈরি করা সম্ভব।

তবে প্রবাল প্রাচীরের গুরুত্বকে কেবল অর্থনৈতিক মাপকাঠিতে বিচার করলে ভুল হবে। কারণ, এগুলোর রয়েছে অসাধারণ প্রাকৃতিক গুরুত্ব। অগভীর সমুদ্রের প্রবাল প্রাচীরগুলো ঢেউ ও জলোচ্ছ্বাসের আঘাত থেকে উপকূলীয় ভূমিকে বাঁচাতে বিরাট ভূমিকা নেয়। এগুলো জীববৈচিত্রের জন্যও অতুলনীয়। সমুদ্রতলের মাত্র .১ শতাংশ জায়গা দখল করে থাকা প্রবাল প্রাচীরগুলো সমস্ত সামুদ্রিক প্রজাতির প্রায় ২৫ শতাংশকে আশ্রয় দেয়।

প্রবাল প্রাচীরকে খাদ্য সংগ্রহ, আশ্রয় ও প্রজননের জায়গা হিসেবে ব্যবহার ক’রে বেঁচে থাকে অন্তত ৪০০০ প্রজাতির মাছ। এছাড়াও এর ওপর নির্ভর করে জীবন কাটায় অ্যালজি, ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন, জুপ্ল্যাঙ্কটন, চিংড়ি, কাঁকড়া, মোলাস্ক, লবস্টার, ওয়র্ম, সি অ্যানিমোন, স্টারফিশ, স্কুইড, অক্টোপাস, স্পঞ্জ, ম্যানাটি, ডুগং, ডলফিন, কচ্ছপ, সাপ, ইত্যাদি অসংখ্য সামুদ্রিক উদ্ভিদ ও প্রাণী। অতুলনীয় প্রাণবৈচিত্রের জন্য প্রবাল প্রাচীরকে বলা হয় ‘সমুদ্রের বৃষ্টিবন’

প্রবাল প্রাচীর গড়ে ওঠার কারণ, প্রবাল প্রাচীর কিভাবে গঠিত হয়

প্রবাল কীটগুলি অনুকূল পরিবেশে একবার যেখানে জন্মাতে শুরু করে সেখানেই তারা উপনিবেশ গঠনের মাধ্যমে প্রজন্মের পর প্রজন্ম বংশ বৃদ্ধি করতে থাকে। উষ্ণ মণ্ডলের সমুদ্রে এদের সমাবেশ বেশি করে লক্ষ করা যায়। প্রবাল প্রাচীর গড়ে ওঠার প্রয়োজনীয় অবস্থা বা শর্তগুলি হল-

1. সমুদ্রজলের উন্নতা ও গভীরতা : প্রবাল কীটের বংশ বৃদ্ধির জন্য সমুদ্রজলের উষ্ণতা অবশ্যই 20°– 21° সে. হওয়া দরকার এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 60 – 75 মিটার গভীরতায় প্রবালকীটের বৃদ্ধির সহায়ক, কারণ এই গভীরতা পর্যন্ত অংশে সূর্যালোক পৌঁছায়।

2. পলিমুক্ত স্বচ্ছ জল : প্রবাল কীটের মুখে পলিকণা জমে গেলে তারা অক্সিজেন নিতে পারে না। ফলে এরা পরিপাক করতে পারে না ও মারা যায়। এজন্য পলিমুক্ত স্বচ্ছ জল দরকার।

3. লবণতার পরিমাণ : প্রচুর পরিমাণে চুনের কার্বোনেট প্রবাল কীটের প্রধান খাদ্য। জলের গড় লবণতা 27% থেকে 40%-এর বেশি হয়ে গেলে ওই কার্বোনেটের পরিমাণ কমে যায় এবং প্রবালকীট জন্মাতে পারে না।

4. মিষ্টি জল : পরিষ্কার মিষ্টি জল প্রবাল কীটের পক্ষে ক্ষতিকর বলে মোহানা থেকে দূরে এরা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।

5. জলের আলোড়ন ও সমুদ্র স্রোত : জলের আলোড়ন ও সমুদ্রস্রোত প্রবাল কীটের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য ও অক্সিজেনের জোগান অব্যাহত রাখে। এজন্য জীবন্ত প্রবাল কীট উপহ্রদের পরিবর্তে উন্মুক্ত সমুদ্রে দেখা যায়।

6. অন্তঃসাগরীর মঞ্চের অবস্থান : তটভূমি বরাবর 50 ফ্যাদম বা 100 মিটার গভীরতায় মহাদেশীয় শক্ত শিলার উপস্থিতি প্রবাল কীটের সুদৃঢ় ভিত্তি স্থাপনের সহায়ক।

পৃথিবীর বৃহত্তম প্রবাল প্রাচীর কোনটি

গ্রীষ্মমন্ডলীয় সমুদ্রের অগভীর তলদেশে সাধারণত প্রবাল প্রাচীর দেখতে পাওয়া যায়। তবে গভীর সমুদ্রে বা নাতিশীতোষ্ণ ও শীতপ্রধান অঞ্চলের সমুদ্রেও কিছু প্রবাল প্রাচীর আছে। সাগর মহাসাগরের পরিষ্কার তরঙ্গোচ্ছল জল প্রবালের পক্ষে অনুকূল। পৃথিবীর নানা প্রান্তে নানা ধরণের প্রবাল প্রাচীর রয়েছে। যেমন—

  • উপকূলীয় প্রবাল প্রাচীর,
  • ব্যারিয়ার প্রবাল প্রাচীর,
  • অ্যাটল জাতীয় প্রবাল প্রাচীর,
  • প্ল্যাটফর্ম প্রবাল প্রাচীর,
  • ব্যাঙ্ক প্রবাল প্রাচীর,
  • প্যাচ প্রবাল প্রাচীর,
  • রিবন প্রবাল প্রাচীর, ইত্যাদি।

সমুদ্রের বুকে প্রবাল প্রাচীরগুলো খুব ধীরে ধীরে সম্প্রসারিত হয়। একটা গ্রীষ্মমন্ডলীয় প্রাচীর এক বছরে মাত্র ১ থেকে ৩ সেন্টিমিটার ছড়ায়। প্রবাল প্রাচীর লক্ষ লক্ষ বছর ধরে বাড়তে বাড়তে একসময় ভূতাত্ত্বিক পরিবর্তনের ফলে দ্বীপে পরিণত হয়েছে, এমন উদাহরণও কম নেই। এগুলোকে বলা হয় প্রবাল দ্বীপ

পৃথিবীর বৃহত্তম প্রবাল প্রাচীর হলো অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ড উপকূলের কাছে অবস্থিত গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ। এটা ২৯০০টা ক্ষুদ্রতর প্রাচীর ও ৯০০টার মতো প্রবাল দ্বীপ নিয়ে গঠিত এক বিরাট কাঠামো যা প্রায় ২৬০০ কিমি লম্বা। মহাকাশ-স্টেশন থেকে পৃথিবীর যে কয়েকটা প্রাণী-সৃষ্ট কাঠামো খালি চোখে দেখা যায় তার মধ্যে একটা হলো গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ।

মেসোআমেরিকান ব্যারিয়ার রিফ হলো পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রবাল প্রচীর। ১০০০ কিমি লম্বা এই প্রবাল প্রাচীর মধ্য আমেরিকার উপকূলীয় সমুদ্রে কানকুন থেকে হন্ডুরাস পর্যন্ত ছড়িয়ে আছে। ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম পাপুয়া রাজ্যের উপকূলে রাজা আমপাত সারা পৃথিবীর মধ্যে জীববৈচিত্রে সবচেয়ে সমৃদ্ধ প্রবাল প্রাচীর। এশিয়ার আর একটা বিখ্যাত প্রবাল প্রাচীর হলো লোহিত সাগরীয় প্রাচীর। এটা সমুদ্রের শীতকালীন ও গ্রীষ্মকালীন তাপমাত্রার বড়ো পরিবর্তন সহ্য করার ক্ষমতার জন্য সুপরিচিত।

ভারতের কচ্ছ ও মান্নার উপসাগরে কয়েকটা বড়ো প্রবাল প্রাচীর আছে। এছাড়া লক্ষদ্বীপ এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের কাছে কিছু প্রাচীর দেখতে পাওয়া যায়। বঙ্গোপসাগরে প্রবাল প্রাচীরের সংখ্যা কম। তার মধ্যে বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন দ্বীপ একটা উল্লেখযোগ্য প্রবাল দ্বীপ।

ভারতের কোথায় প্রবাল প্রাচীর দেখা যায়

ভারতের প্রবাল দ্বীপ রামেশ্বরমে অবস্থিত।

ভারতে পাওয়া তিনটি প্রধান ধরনের প্রবাল প্রাচীর হল ফ্রিংগিং, ব্যারিয়ার এবং অ্যাটল। ভারতের প্রবাল প্রাচীরগুলি কচ্ছ উপসাগর, মান্নার উপসাগর, পক উপসাগর, আন্দামান ও নিকোবর এবং লাক্ষাদ্বীপ দ্বীপপুঞ্জ সহ অনেক অঞ্চলে পাওয়া যায়।

উত্তর-পশ্চিমে কচ্ছ উপসাগরে বিশ্বের সবচেয়ে উত্তরাঞ্চলীয় প্রাচীর রয়েছে।

বিভিন্ন প্রকার প্রবাল প্রাচীর এর উৎপত্তি ও বৈশিষ্ট্য উপযুক্ত চিত্র সহ সংক্ষেপে লেখ, বিভিন্ন প্রকার প্রবাল প্রাচীরের উৎপত্তি ও বৈশিষ্ট্য

1. প্রান্তদেশীয় প্রবাল প্রাচীর কাকে বলে :

অনুকূল পরিবেশে মহীসোপানের ঢালু অংশ বরাবর সংকীর্ণ বলায়াকারে এবং দ্বীপসমূহের চারপাশে যে প্রবাল প্রাচীর গঠিত হয়, তাকে প্রান্তদেশীয় প্রবাল প্রাচীর বলে।

◆ প্রান্তদেশীয় প্রবাল প্রাচীরের বৈশিষ্ট্যগুলি  হল –

i. এধরনের প্রাচীর তুলনামূলক সংকীর্ণ হয় ও এর বিস্তৃতি অপেক্ষাকৃত কম।

ii. স্থলভাগের দিকের অংশের চেয়ে সমুদ্রের দিকের প্রান্তভাগ কিছুটা উঁচু হয়।

iii. প্রবালের পাতলা স্তর দিয়ে এই প্রাচীর গঠিত হয়।

iv. কখনো কখনো প্রান্তদেশীয় প্রবাল প্রাচীর তটভূমি থেকে সংকীর্ণ অগভীর উপহ্রদ দ্বারা বিছিন্ন থাকে। দক্ষিণ ফ্লোরিডা প্রাচীর প্রান্তদেশীয় প্রাচীর-এর উদাহরণ।

2. প্রতিবন্ধক প্রবাল প্রাচীর কাকে বলে :

স্থলভাগ থেকে প্রশস্ত অগভীর উপহ্রদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন অনুদৈর্ঘ্য অথবা বৃত্তাকার প্রবাল প্রাচীরকে প্রতিবন্ধক প্রবাল প্রাচীর বলে। প্রান্তদেশীয় প্রাচীর বিবর্তিত হয়ে পরবর্তী পর্যায়ে প্রতিবন্ধক প্রাচীরে পরিণত হয়।

◆ প্রতিবন্ধক প্রবাল প্রাচীরের বৈশিষ্ট্যগুলি হল-

i. সমুদ্রের বেশ গভীর (60 মি. বা 30 ফ্যাদমের অধিক) অংশ থেকে এই প্রাচীরের বৃদ্ধি ঘটে।

ii. সমুদ্রপৃষ্ঠের ওপরে উন্মুক্ত অংশ থেকে কয়েক কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে।

iii. প্রতিবন্ধক প্রবাল প্রাচীর বেশ চওড়া হয় এবং এদের আকৃতি সাধারণত অর্ধচন্দ্রাকৃতি হয়। এর শিং বা প্রান্তদুটি স্থলভাগের অভিমুখে থাকে।

iv. স্থানে স্থানে অনেক পরিখা দ্বারা প্রাচীরটি বিচ্ছিন্ন থাকে, যার মধ্য দিয়ে উপহ্রদ ও সমুদ্রের মধ্যে সংযোগ গড়ে ওঠে। পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রতিবন্ধক প্রবাল প্রাচীরটি হল অস্ট্রেলিয়ার গ্রেট বেরিয়ার রিফ। এটি অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব দিকে বিস্তৃত।

3. অ্যাটল কাকে বলে :

প্রতিবন্ধক প্রাচীর গঠনের পর একদম শেষ পর্যায়ে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বৃত্তাকার বা প্রায় বৃত্তাকার উপহ্রদ পরিবেষ্টনকারী যে প্রবাল প্রাচীর গঠিত হয়, তাকে অ্যাটল বলে।

◆ অ্যাটলের বৈশিষ্ট্যগুলি হল-

i. নিমজ্জমান সামুদ্রিক আগ্নেয়গিরি কিংবা সমুদ্র জলপৃষ্ঠের উত্থান ও পতনের সঙ্গে এদের উৎপত্তি বিশেষভাবে যুক্ত। ও এদের আকৃতি বৃত্তাকার বা উপবৃত্তাকার হয়।

ii. অ্যাটলগুলির মাঝে অগভীর উপহ্রদ থাকে যার সর্বাধিক গভীরতা 30 থেকে 50 মিটার হয়।

iii. উপহ্রদের মধ্যে প্রবাল প্রাচীরের ধ্বংসাবশেষ জমে জমে সরু ফালির আকারে বৃত্তচাপের মত দ্বীপ গড়ে ওঠে, যা মানুষের বসবাসের উপযুক্ত হয়।

iv. অ্যাটলে অনেক সংযোগকারী পরিখা থাকে। ওইসব পরিখা দিয়ে উন্মুক্ত সমুদ্রের জল উপহ্রদে প্রবেশ করে।

v. কোনো কোনো অ্যাটল মহাদেশীয় ভূখণ্ড থেকে কয়েকশত কিমি দূরে সমুদ্রে অবস্থান করে।

আরো অন্যান্য সরকারি স্কিম সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | প্রবাল প্রাচীর

Q1. প্রবাল প্রাচীর কি

Ans – মৃত প্রবালের চুনগঠিত কঠিন খোলক বা আবরণগুলি অগভীর সমুদ্র তলদেশে জমতে জমতে যখন দীর্ঘ অপ্রশস্থ ভূভাগ তৈরি হয়, তখন তাকে বলে প্রবাল প্রাচীর।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।