প্রাকৃতিক পরিবেশ কাকে বলে, প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান গুলো কি কি

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

প্রশ্নপত্র

প্রাকৃতিক পরিবেশ কাকে বলে

প্রাকৃতিক পরিবেশ (natural environment) মানুষের জীবনযাত্রাকে গুরুত্বপূর্ণভাবে প্রভাবিত করে থাকে। যেসব অবস্থা, শক্তি এবং বস্তুসমূহ জীবকে প্রভাবিত করে তাই পরিবেশ। মানুষের সার্বিক অবস্থা যেমন অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, আচার আচরণ, কর্মদক্ষতা, রীতিনীতি, জীবনযাত্রা প্রভৃতি প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল। আমাদের চারপাশের সবকিছুই প্রাকৃতিক পরিবেশ। প্রকৃতি প্রদত্ত পরিবেশই হলো প্রাকৃতিক পরিবেশ। এ পরিবেশ একটি অঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ওপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে।

প্রাকৃতিক পরিবেশের সংজ্ঞা

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর মতে, “মানুষ এবং মানুষের কার্যাবলি ব্যতীত একটি অঞ্চলে প্রকৃতির সৃষ্টি বস্তু, যেমনঃ ভূমির বন্ধুরতা, জলবায়ু, উদ্ভিদজগৎ, মৃত্তিকা প্রভৃতির সমন্বয়ই প্রাকৃতিক পরিবেশ।”

অধ্যাপক এম. সি. আগরওয়ালা (Prof. M. C Agarwala) এর মতে, “প্রাকৃতিক পরিবেশ হলো যেসব প্রাকৃতিক উপাদানের সমষ্টি যাদের উৎপত্তি ও সৃষ্টির ওপর মানুষের কোনো হাত নেই।”

প্রাকৃতিক পরিবেশের বৈশিষ্ট্য

প্রাকৃতিক পরিবেশের নানবিধ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, এগুলি নিচে আলোচনা করা হল। 

প্রাচীনত্ব – প্রাকৃতিক পরিবেশের উৎপত্তি পৃথিবী সৃষ্টির সময়কাল থেকে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক পরিবেশের উৎপত্তি একসঙ্গে না হলেও এর প্রাচীনত্ব নিয়ে কোন সংশয় নেই। 

বিভিন্ন উপাদানের সমন্বয় – প্রাকৃতিক পরিবেশ বিভিন্ন উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। প্রতিটি উপাদান স্বনিয়ন্ত্রিত হওয়া সত্ত্বেও এগুলি পরস্পরের সঙ্গে সুদূঢ় সমন্বয়ের ভিত্তিতে সহাবস্থান করছে।

পরিবেশের ভারসাম্য – পরিবেশের প্রতিটি উপাদানের মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকে। সাময়িক ভাবে কোন উপাদানের পরিমানের হ্রাসবৃদ্ধি ঘটলেও তা দ্রুত ভারসাম্যে ফিরে আসে। 

পরিবর্তনশীলতা – পৃথিবীর জন্ম থেকে আজ পর্যন্ত ভৌত রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে চলেছে, তাই প্রাকৃতিক পরিবেশ সদা পরিবর্তনশীল। 

নিয়মানুবর্তীতা – প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান গুলির মধ্যে যে সব প্রক্রিয়া কাজ করে সেগুলি সুনির্দিষ্ট নিয়ম মেনে পরিচালিত হয়। 

আন্তঃসম্পর্ক – পরিবেশ গঠনকারী উপাদান গুলির মধ্যে নিবিড় আন্তঃসম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাই কোন একটি উপাদানের পরিবর্তন ঘটলে অন্য আর একটি উপাদানের পরিবর্তন ঘটে। 

উন্মুক্ত বাস্তুতন্ত্র – পরিবেশের উপাদান গুলির মধ্যে শক্তির স্থানান্তর ও রূপান্তর উন্মুক্ত তন্ত্রের মাধ্যমে ঘটে থাকে। 

কীভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশ গঠিত হয়

প্রাকৃতিক পরিবেশ জড় ও জীব উপাদান নিয়ে গঠিত হয়।

প্রকৃতি নিজে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিটি জীবের সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য যে উপদানগুলি তৈরি করেছে, সেই উপাদানগুলির সমষ্টিকে প্রাকৃতিক পরিবেশ বলে। খাদ্য, পানীয়, জলবায়ু, আবহাওয়া, প্রাকৃতিক সম্পদ অর্থাৎ ব্যক্তির বসবাস ও জীবনধারণের জন্য যেসব প্রাকৃতিক উপাদানগুলি প্রয়ােজন হয় তারই সমষ্টি হল প্রাকৃতিক পরিবেশ।

এ ছাড়া আর একটি দিক থেকেও মানুষের আচার-ব্যবহার, জ্ঞানার্জন, সংস্কৃতি ইত্যাদির ওপর প্রাকৃতিক পরিবেশ প্রভাব বিস্তার করে। অনেক সময় প্রাকৃতিক বিপর্যয় যেমন—খরা, বন্যা, অগ্নুৎপাত, ভূমিকম্প ইত্যাদি মানুষের জীবনযাপনের অনুকূল নয়। আদিম যুগেই মানুষের এই অভিজ্ঞতা হয়েছিল। কিন্তু তাদের কিছু করার ছিল না। কতকটা নিষ্ক্রিয়ভাবেই পরিবেশের প্রভাবকে তারা মেনে নিয়েছিল। তাকে ধবংসকারী দেবদেবী কল্পনা করে শান্ত করার জন্য পূজার্চনা করত। ক্রমশ বুদ্ধিবলে, অভিজ্ঞতা ও জ্ঞানার্জনের ফলে প্রাকৃতিক শক্তিগুলির ধ্বংসকারী ভূমিকা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ঘড়বাড়ি, অস্ত্র, চাষ পদ্ধতি, আগুন জ্বালানাে, গাড়ির চাকা ইত্যাদি আবিষ্কার করতে শুরু করে।

শুধু তাই নয় শক্তিগুলিকে সবলে এনে নিজের এবং সমাজ তথা সকলের কল্যাগসাধন করতে সক্ষম হয়। এব্যাপারে যে প্রক্রিয়াটি প্রধান ভূমিকা গ্রহণ করে তা হল শিক্ষা। অর্থাৎ প্রাকৃতিক পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান, প্রতিকূল পরিবেশকে নিয়ন্ত্রণ এবং তাকে কাজে লাগিয়ে শিক্ষার সাহায্যে মানবসভ্যতা এগিয়ে চলে।

প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান গুলো কি কি, প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান কয়টি

পরিবেশ হচ্ছে পৃথিবীর মূল ভিত্তি। পরিবেশ কোনো স্থানের যাবতীয় অবস্থা বা পরিস্থিতির সমষ্টির রূপ। মানবসমাজ ও সমাজবদ্ধ মানবগোষ্ঠী সম্পর্কে তথ্যপূর্ণ পর্যালোচনার স্বার্থে পরিবেশ সম্পর্কিত আলোচনা অত্যন্ত জরুরি। ব্যক্তিমানুষের ওপর যেমন, মানবসমাজের ওপরও, তেমনি পরিবেশের প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিবেশ বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। আর এসব পরিবেশের রয়েছে সুনির্দিষ্ট উপাদান।

প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদানসমূহ

মানব সভ্যতার ক্রিয়াকলাপের প্রভাব পরিবেশের ওপর অজীব ও সজীব উভয় উপাদানের ওপর ক্রিয়াশীল । মানব সভ্যতার উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশে পরিবেশের উপাদানগুলোর ভূমিকা অনস্বীকার্য। কেননা পরিবেশের এসব অনুকূল উপাদানগুলোই মানব সভ্যতাকে উন্নতির দিকে এগিয়ে নেয়। কিন্তু প্রতিকূল উপাদানগুলো মানব সভ্যতাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। এতে করে পরিবেশ বিশ্বের মানবজাতিকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে।

প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদানসমূহকে দুভাবে বিভক্ত করা যায়। নিম্নে এসব উপাদানসমূহ আলোচনা করা হলো।

অজৈব প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান

যে পরিবেশ অজৈব, প্রাকৃতিক উপাদানসমূহ নিয়ে গঠিত, তাকে অজৈব প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান বলে। অজৈব প্রাকৃতিক পরিবেশের উপদাসমূহ হলো।

ক. ভৌগোলিক অবস্থান : ভৌগোলিক পরিবেশগত দিক দিয়ে পৃথিবী তিন ধরনের হয়ে থাকে। যথা : উচ্চ অক্ষাংশ, মধ্য অক্ষাংশ এবং নিম্ন অক্ষাংশ। আবার মহাদেশীয় অবস্থান, দ্বৈপ অবস্থান, উপদ্বীপীয় অবস্থান, সমুদ্র প্রান্তীয় অবস্থান প্রভৃতির ওপরও পরিবেশের তারতম্য লক্ষ করা যায়।

খ. ভূপ্রকৃতি : ভূপ্রকৃতি প্রাকৃতিক পরিবেশের অজৈব উপাদান হিসেবে উল্লেখযোগ্য। গঠন বৈশিষ্ট্যের তারতম্যের জন্যও ভূপ্রকৃতি বিভিন্ন ধরনের লক্ষ করা যায় । যথা : মালভূমি অঞ্চল, পাবর্ত্য অঞ্চল, পাহাড়ি অঞ্চল এবং সমভূমি অঞ্চল।

গ. জলবায়ু : প্রাকৃতিক পরিবেশের অন্যতম উপাদান হচ্ছে জলবায়ু। জলবায়ুর ওপর মানুষের স্বাস্থ্য, শক্তি ও সামর্থ্য অনেকাংশে নির্ভরশীল। যেমন- ক্রান্তীয় অঞ্চলে প্রচণ্ড উত্তাপ এবং অধিক আর্দ্রতা অপেক্ষা নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের স্বপ্ন ও ব্যবস্থা, কৃষিকার্য প্রভৃতির ওপর জলবায়ুগত পরিবেশ বিশেষভাবে প্রভাব বিস্তার করে। যথাযোগ্য আর্দ্রতা স্বাস্থ্যের পক্ষে অধিকতর অনুকূল। অর্থাৎ কোনো অঞ্চলের মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, পরিবহণ মৃত্তিকা থেকে। যার ফলে মৃত্তিকার গুণগতমান ও উর্বরতা শক্তির ওপর ভিত্তি করে পরিবেশের পার্থক্য ঘটে।

ঘ. মৃত্তিকা : প্রাকৃতিক পরিবেশের একটি উল্লেখযোগ্য অজৈব উপাদান মৃত্তিকা। সমস্ত প্রাণিকুলের খাদ্যের উৎপাদন হয় মৃত্তিকা থেকে। যার ফলে মৃত্তিকার গুণগতমান ও উর্বরতা শক্তির ওপর ভিত্তি করে পরিবেশের পার্থক্য ঘটে।

ড. নদনদী: নদনদী প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদানসমূহের মধ্যে অন্যতম। নদনদী মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডসহ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

চ. খনিজ সম্পদ : খনিজ সম্পদের ভূমিকা প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান হিসেবে অপরিসীম। খনি হতে প্রাপ্ত সোনা, রূপা, কয়লা, তৈল, তামা, প্রাকৃতিক গ্যাস প্রভৃতি মানুষের জীবনযাত্রা ও অর্থনৈতিক প্রণালিকে ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত করে।

জৈব প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান

প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদানসমূহের মধ্যে জৈব উপাদান উল্লেখযোগ্য। জৈব উপাদানসমূহের মধ্যে উদ্ভিজ্জ সম্পদ ও প্রাণিজ সম্পদ বিশেষভাবে ভূমিকা রাখে।

ক. উদ্ভিদ সম্পদ : ভূপৃষ্ঠে প্রকৃতির সৃষ্ট সকল প্রকার গাছপালাকে উদ্ভিদ বলে। প্রাকৃতিক পরিবেশের অন্যতম উপাদান হচ্ছে উদ্ভিদ। উদ্ভিদ বায়ুমণ্ডলের অক্সিজেন (O)) ও কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2)-এর ভারসাম্য রক্ষা করে। সৃষ্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ হতে সমস্ত প্রাণিকুলকে রক্ষা করে। উদ্ভিদের ওপর প্রাণী খাদ্যের জন্য নির্ভরশীল। অর্থাৎ জীবিকা নির্বাহসহ আর্থিক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে উদ্ভিদ যথেষ্ট প্রভাব রাখে।

খ. প্রাণিজ সম্পদ : এ পৃথিবীতে অসংখ্য প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। আর এসব প্রাণীই প্রাকৃতিক পরিবেশের অন্যতম উপাদান।

প্রাকৃতিক পরিবেশের ছবি

প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের উপায়

প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের উপায় নিচে আলোচনা করা হলো:-

  1. জনসচেতনতা সৃষ্টি করার মাধ্যেমে পরিবেশ সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
  2. আমাদের চারপাশের ময়লা-আবর্জনা একটি নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে অথবা ডাস্টবিনে ফেলে পরিবেশ সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
  3. বাড়ির চারপাশে কিংবা রাস্তার পাশে গাছে লাগিয়ে পরিবেশ সংরক্ষণ করতে পারি।
  4. প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার কমিয়ে এবং রিসাইকেল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
  5. মোটরগাড়িতে চড়ার পরিবর্তে হেঁটে কিংবা সাইকেল ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশ সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
  6. প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার মধ্যামে পরিবেশ সংরক্ষণ করা যেতে পারে।
  7. বৈদ্যুতিক কাজ শেষে বাতি কিংবা বৈদ্যুতিক ফ্যান বন্ধ রেখে বিদ্যুৎ অপচয় রো্ধ করে পরিবেশ সংরক্ষণ করতে পারি।
  8. শব্দ, বায়ু, পানি, মাটি ইত্যাদির দূষণ থেকে পরিবেশ-কে রক্ষা করলে পরিবেশ সংরক্ষণ করা যাবে।
  9. জীবাশ্ম জ্বালানি ও বিদ্যুতের ব্যবহার অনেকটা কমিয়ে আমরা পরিবেশ সংরক্ষণ করতে পারি।
  10. প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহারর ও সুরক্ষা করার মাধ্যেমে পরিবেশ সংরক্ষণ করা সম্ভব।

আরো পড়তে: ভূগোল ও পরিবেশের মধ্যকার সম্পর্ক বিষয়ক প্রতিবেদন

প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর জলবায়ুর প্রভাব আলোচনা কর

বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ও জলবায়ুর পরিবর্তন প্রসঙ্গ উপেক্ষা করার উপায় নেই। তবু বিশ্বনেতাদের অনেকে বিষয়টি পাশে ঠেলে রাখতে চান। তাঁদের কারণে জাতিসংঘ জলবায়ু তহবিলের আকারও সন্তোষজনক হচ্ছে না; আর জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত ক্ষতি মোকাবেলায় পর্যাপ্ত উদ্যোগও দেখা যাচ্ছে না। তাই আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক পরিমণ্ডলে বাংলাকে সোচ্চার হতে হবে। দেশের ভেতরেও বিভিন্ন কর্মসূচি নিতে হবে। যেমন,

  1. পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর উন্নয়ন পরিকল্পনা থেকে বিরত থাকতে হবে।
  2. জলাধার রক্ষা করতে হবে।
  3. নদীর নাব্যতা বাড়াতে হবে, বিল-জলাশয় খনন করতে হবে।
  4. ব্যাপকভাবে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করতে হবে এবং বনাঞ্চল বাড়াতে হবে।
  5. উপকূলে সবুজ বেষ্টনীর পরিসীমা বাড়াতে হবে।
  6. পাহাড় কাটা বন্ধ করতে হবে।
  7. জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করতে হবে।
  8. এবং সবুজ অর্থনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে আন্তরিক হতে হবে।

প্রাকৃতিক পরিবেশ ও মানুষের তৈরি পরিবেশের মধ্যে পার্থক্য

প্রাকৃতিক পরিবেশ (Natural Environment):

প্রাকৃতিক পরিবেশ অথবা প্রাকৃতিক জগত বলতে সমগ্ৰ জীবিত এবং প্রাণহীন বস্তুর স্বাভাবিক অবস্থানকে বুঝায়, এক্ষেত্রে এটা মোটেও কৃত্রিম নয়।এই শব্দটি প্রায়শই পৃথিবীতে অথবা পৃথিবীর কিছু অংশে ব্যবহৃত হয়। সমস্ত প্রজাতি, জলবায়ু, আবহাওয়া এবং প্রাকৃতিক সম্পদ এই পরিবেশের অন্তর্ভুক্ত যেটা মানুষের বাঁচা ও অর্থনৈতিক কার্যকলাপকে প্রভাবিত করে। অর্থাৎ সহজভাবে বলা যায় প্রকৃতির দেওয়া পরিবেশকেই প্রাকৃতিক পরিবেশ বলে।

পৃথিবীর আকাশ, বাতাস, পাহাড় পর্বত, নদনদী, পানি, মাটি, পশুপাশি, গ্রহ, উপায়, চন্দ্র, সূর্য প্রভৃতি প্রকৃতির দান। এসব প্রকৃতির দানের ওপর মানুষ তার নিজস্ব বুদ্ধি ও শ্রমশক্তির প্রয়োগ করে সভ্যতার শানাবিধ উপাদান ও উপকরণ সৃষ্টি করেছে। প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর মানুষের কোনো হাত নেই। প্রকৃতিই এ পরিবেশ সৃষ্টি করে।

মানুষের তৈরি পরিবেশ (Man Made Environment):

মানুষের তৈরি সকল উপাদান নিয়ে মানুষের তৈরি বা কৃত্রিম পরিবেশ সৃষ্টি হয়। মানুষের তৈরি পরিবেশের উপাদান মানুষ তৈরি করে থাকে। তাছাড়া মানুষের তৈরি পরিবেশ প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর নির্ভর করে। যেমন: ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, কাপড়–চোপড়, রাস্তা–ঘাট, বাস, ট্রেন, নৌকা ইত্যাদি, এসকল উপাদান নিয়েই গড়ে উঠেছে মানুষের তৈরি পরিবেশ। আর মানুষের তৈরি উপাদান হলো: ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, চেয়ার, টেবিল, আসবাবপত্র, কাপড়–চোপড়, বিদ্যালয়, যানবাহন ইত্যাদি।

প্রাকৃতিক পরিবেশ অথবা প্রাকৃতিক জগত বলতে সমগ্ৰ জীবিত এবং প্রাণহীন বস্তুর স্বাভাবিক অবস্থানকে বুঝায়। প্রাকৃতিক ও মানুষের তৈরি পরিবেশের মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ-

প্রাকৃতিক পরিবেশমানুষের তৈরি পরিবেশ
আমাদের প্রকৃতির সকল উপাদান নিয়ে তৈরি হয়েছে আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ। মানুষের তৈরি সকল উপাদানের সমন্বয়ে মানুষের তৈরি পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান মানুষ তৈরি করতে পারে না।মানুষের তৈরি পরিবেশের উপাদান মানুষ তৈরি করে থাকে।
প্রাকৃতিক পরিবেশ মানুষের তৈরি পরিবেশের উপর নির্ভরশীল নয়।মানুষের তৈরি পরিবেশ প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর নির্ভর করে।
মানুষের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে প্রাকৃতিক পরিবেশের গুরুত্ব অপরিসীম। মানুষের তৈরি পরিবেশের উপাদান ছাড়াও মানুষ বাঁচতে পারবে।
প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান হলো: গাছপালা, পশুপাখি, মাটি, পানি, বায়ু, সূর্যের আলো ইত্যাদি।মানুষের তৈরি পরিবেশের উপাদান হলো: ঘরবাড়ি, দালানকোঠা, রাস্তাঘাট, বিদ্যালয়, কাপড়-চোপড়, যানবাহন ইত্যাদি।
প্রাকৃতিক পরিবেশের  মধ্যে জিব ও জর উভয়ই বিদ্যামান।মানুষের তৈরি পরিবেশ এর মধ্যে শুধু জড় বিদ্যামান।  
প্রাকৃতিক পরিবেশ ও মানুষের তৈরি পরিবেশের মধ্যে পার্থক্য

ভারতের চা চাষের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ বর্ণনা দাও, ভারতের চা চাষের অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ বর্ণনা করো

চা চাষের অনুকূল ভৌগোলিক অবস্থা কে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায় যথা-

A. অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং

B. অনুকূল অর্থনৈতিক পরিবেশ।

অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ

জলবায়ু 

চা প্রধানত ক্রান্তীয় এবং উপক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলে জন্মায়।অধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত মৌসুমী জলবায়ুতে চা চাষ ভালো হয়। চা চাষের জন্য প্রয়োজনীয় জলবায়ুগত উপাদান নিচে আলোচনা করা হলো। 

 i. উষ্ণতা: চা চাষের জন্য 20° থেকে 30° সেলসিয়াস উষ্ণতায় প্রয়োজন 35° সেলসিয়াস উষ্ণতার বেশি এবং 10° সেলসিয়াস উষ্ণতার কম উষ্ণতা চা চাষের পক্ষে ক্ষতিকর। 

ii. বৃষ্টিপাত: বছরে গড়ে 150 সেন্টিমিটার থেকে 300 সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত চাষের পক্ষে আদর্শ। প্রতিমাসে বৃষ্টি হলে গাছের বৃদ্ধি খুব ভালো হয়।

iii. তুষারপাত: টানা 10 দিনের বেশি তুষারপাত চা গাছের ক্ষতি করে।

iv. ছায়া প্রদানকারী বৃক্ষ : প্রখর সূর্যকিরণ সহ্য করতে পারে না বলে চা বাগানে ছায়া প্রদানকারী বৃক্ষ রোপন করা প্রয়োজন।

v. অন্যান্য জলবায়ুগত অবস্থা: উচ্চ আদ্রতা, কুয়াশা, শিশির, গাছের চারা বৃদ্ধির সহায়ক। শীত এবং গ্রীষ্মকালে বিপরীত দিক থেকে প্রবাহিত বাতাস চা পাতার বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। অন্যদিকে অনেকদিন বৃষ্টিহীন অবস্থা চা চাষে ক্ষতি করে।

মৃত্তিকা

উর্বর লৌহসমৃদ্ধ দোআঁশ মাটি এবং জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ মাটি চা চাষের উপযোগী। মাটিতে ফসফরাস ও পটাশের পরিমাণ বেশি থাকলে চায়ের স্বাদ এবং সুগন্ধ বৃদ্ধি পায়। 

ভূপ্রকৃতি

প্রচুর বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন হলেও জমিতে জল জমে থাকলে চা গাছের শিকড়ের ক্ষতি করে। এজন্য সুষ্ঠু জলনিকাশি ব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন।

অনুকূল অর্থনৈতিক পরিবেশ

শ্রমিক 

চা গাছের পরিচর্যা, নিড়ানো, আগাছা পরিষ্কার, নিয়মিত গাছ ছাটা ইত্যাদির জন্য প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। চা পাতা ( দুটি পাতা একটি কুঁড়ি ) তোলার জন্য অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন হয় বলে নারী এবং শিশু শ্রমিকদের কাজে লাগানো হয়।

মূলধন

চা গাছ রোপণের দুই বছরের মধ্যে কোন উৎপাদন হয় না। এছাড়া উন্নত মানের চা চাষ, বাগানে চা পাতা বাছাই, শ্রমিকদের বেতন, উর্বরতা রক্ষা করার জন্য রাসায়নিক সার প্রয়োগ প্রভৃতির জন্য প্রচুর মূলধনের প্রয়োজন হয়। 

পরিবহন

সমস্ত রকম কাজের জন্য বাগিচা , বাজার ও বন্দরের মধ্যে উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে ওঠা দরকার ।

চাহিদা

চা উৎপাদক অঞ্চল থেকে প্রধান ভােগকেন্দ্রগুলি সাধারণত দূরে থাকে । চায়ের অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বাজার বৃদ্ধি চা উৎপাদনের পক্ষে অনুকূল ।

আরো অন্যান্য সরকারি স্কিম সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | প্রাকৃতিক পরিবেশ

Q1. প্রাকৃতিক পরিবেশ কি

Ans – প্রকৃতির দেওয়া পরিবেশকেই প্রাকৃতিক পরিবেশ বলে। পৃথিবীর আকাশ, বাতাস, পাহাড় পর্বত, নদনদী, পানি, মাটি, পশুপাশি, গ্রহ, উপায়, চন্দ্র, সূর্য প্রভৃতি প্রকৃতির দান। এসব প্রকৃতির দানের ওপর মানুষ তার নিজস্ব বুদ্ধি ও শ্রমশক্তির প্রয়োগ করে সভ্যতার শানাবিধ উপাদান ও উপকরণ সৃষ্টি করেছে। প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর মানুষের কোনো হাত নেই। প্রকৃতিই এ পরিবেশ সৃষ্টি করে।

Q2. কী ধরনের প্রাকৃতিক পরিবেশ হ্যালোফাইট জাতীয় উদ্ভিদ জন্মানোর পক্ষে উপযোগী

Ans – শারীরবৃত্তীয় শুষ্ক মৃত্তিকা হ্যালোফাইট উদ্ভিদ জন্মানোর পক্ষে উপযোগী। 

Q3. হিমবাহ কোন প্রাকৃতিক পরিবেশে দেখা যায়

Ans – হিমবাহ সমুদ্রে দেখা যায়। 

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।