মার্শাল পরিকল্পনা কি, মার্শাল টিটো কে ছিলেন, মার্শাল পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য কি ছিল

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মার্শাল পরিকল্পনা কি, মার্শাল পরিকল্পনা কী

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৫ জুন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে এক বক্তৃতায় আমেরিকার বিদেশসচিব জর্জ মার্শাল এক ঘোষণায় যুদ্ধবিধ্বস্ত সমগ্র ইউরোপে আর্থিক পুনুরুজ্জীবনের পরিকল্পনা পেশ করেন যা মার্শাল পরিকল্পনা নামে পরিচিত।

মার্শাল পরিকল্পনা প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ইউরোপীয় পুণর্গঠন প্রকল্প নামে পরিচিত। ইউরোপের বিভিন্ন দেশকে সহায়তা প্রদান করার একটি মার্কিন পরিকল্পনা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী ইউরোপীয় দেশগুলোর বিধ্বস্ত অর্থনৈতিক পুনর্গঠন এবং এসব দেশে সোভিয়েত কমিউনিজমের বিস্তার রোধ করার লক্ষ্যে এ পরিকল্পনা অনুসারে যুক্তরাষ্ট্র এসব দেশকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র সচিব জর্জ মার্শালের নামানুসারে এ পরিকল্পনাটি নাম রাখা হয়। ১৯৪৭ সালের জুন মাসে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদত্ত এক ভাষণে ইউরোপ পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করা হয়। রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট দুই পক্ষ থেকে এ পরিকল্পনাটি সমর্থন লাভ করে। 

এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাগণ এ পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করেন। এদের মধ্যে উইলিয়াম ক্লেটন ও জর্জ কেনান অন্যতম। সিনেটরদের মধ্যে আর্থার এইচ ভ্যান্ডারবার্গ এ প্রকল্প প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

এ পরিকল্পনা ১৯৪৮ সালের এপ্রিল মাসে প্রণয়ন করা শুরু হয় এবং চার বছর যাবৎ পরিচালিত হয়।

মার্শাল টিটো কে ছিলেন

সাবেক যুগোস্লাভিয়ার রাজনৈতিক নেতা জোসিপ ব্রজ টিটো, যিনি মার্শাল টিটো নামেও পরিচিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় অক্ষশক্তির পক্ষে নাৎসিদের বিপক্ষে ইউরোপে সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরোধ ‘যুগোস্ল্যাভ পার্টিজান’ এর নেতৃত্ব দিয়েই তিনি বিশ্বব্যাপী পরিচিতি এবং প্রশংসা পান। যুদ্ধ শেষে যুগোস্লাভিয়ার সর্বময় কর্তৃত্ব লাভ করেন এবং প্রথম থেকেই স্বৈরাচারী হিসেবে পরিচিতি পান। তথাপি তার সরকারের সাফল্যময় কূটনীতিক এবং অর্থনৈতিক নীতিমালার কারণে প্রশংসাও কম পাননি। যুগোস্লাভিয়ায় সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হওয়ায় অনেকে তাকে ‘দ্বিতীয় যুগোস্লাভিয়া’র স্থপতিও বলে থাকেন। তার ঘটনাবহুল জীবনের আরেকটি আলোচিত অধ্যায় হচ্ছে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া। ন্যামের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান ৫ নেতার মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম।

জোসিপ ব্রজ টিটো ১৮৯২ সালের ৭ মে ক্রোয়েশিয়ার কুমরোভেচ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। এ অঞ্চল সে সময় অস্ট্রো-হাঙ্গেরিয়ান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। পারিবারিক সূত্রে তিনি ক্রোয়েশীয় আর স্লাভিক, দুটোই ছিলেন। কারণ, তার বাবা ক্রোয়েশীয় হলেও মা ছিলেন স্লোভেনীয়। ফলে শৈশব থেকেই স্লোভেনীয় আর ক্রোয়েশীয়, দুটি ভাষা যুগপৎ শিখতে থাকেন টিটো।

বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে দুই মেরুতে ভাগ হওয়া বিশ্বে প্রাথমিকভাবে সোভিয়েত ব্লকের একজন একনিষ্ঠ সমর্থক হিসেবেই পরিচিত ছিলেন টিটো, যদিও স্টালিনের সাথে তার সম্পর্ক খুব একটা উষ্ণ ছিল না। প্রথম থেকেই টিটোর সরকারের মাঝে গোঁড়া মার্ক্সিস্ট বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে বদ্ধমূল ছিল। এ বিশ্বাসের বিরুদ্ধমতকে একেবারে শুরু থেকেই দমন করতে শুরু করেন টিটো। তবে খুব দ্রুতই তিনি সোভিয়েত ব্লক থেকে বেরিয়ে গিয়ে স্বাধীনভাবে যুগোস্লাভিয়া পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেন। এতে করে স্টালিনের সাথে তার সম্পর্কের অবসান ঘটে, যা বিশ্ব রাজনীতিতে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা বলে বিবেচিত হয়।

স্নায়ুযুদ্ধ ধীরে ধীরে তীব্র রূপ ধারণ করতে থাকলে সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত ছোট দেশগুলো নিজেদের রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে। এ সময় তারা সোভিয়েত আর মার্কিন ব্লকের বাইরে নিজেদের মধ্যে পৃথক জোট নিরপেক্ষ পরিচয় গড়ে তোলার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। এই চেষ্টা টিটো সহ আরো ৪ জন্য রাষ্ট্রনেতার অবদানে সফলতার মুখ দেখে, গড়ে ওঠে ন্যাম। ১৯৬০-৮০’র দশকের শেষদিক পর্যন্তও ন্যামের যথেষ্টই প্রভাব ছিল। এই আন্দোলনের প্রথম সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন টিটো।

ইতিহাসের প্রথম দেশ হিসেবে যুগোস্লাভিয়া বিশ্বের যেকোনো দেশের পর্যটকদের জন্য ভিসামুক্ত ঘোষণা করেন টিটো। তার একটি বড় সাফল্য ছিল দেশের প্রশাসনিক এবং অর্থনৈতিক কাঠামো বিকেন্দ্রীকরণ করে পুরো দেশে ছড়িয়ে দেয়া, যেন সর্বস্তরের মানুষ তাতে যোগ দিতে পারে। শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতকে যতদূর পারা যায় সরকারিকরণ করে দরিদ্রশ্রেণীর জন্য বিনাখরচে পড়ালেখা এবং চিকিৎসার ব্যবস্থাও প্রশংসার দাবিদার। 

আমৃত্যু প্রেসিডেন্ট থাকার সংবিধান পাস করানোর পর বেশি দিন সে সুবিধা ভোগ করতে পারেননি টিটো। সত্তরের দশকের শেষ দিকে তার স্বাস্থ্য ক্রমাগত খারাপ হতে থাকে। রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম থেকে তিনি ধীরে ধীরে নিজেকে গুটিয়ে নিতে শুরু করেন এবং কেবল সর্বোচ্চ পর্যায়ের সরকারি কাজগুলোই করতেন। ১৯৮০ সালের পয়লা জানুয়ারিতেই হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। তার শরীরে রক্ত সঞ্চালন ঠিকমতো হচ্ছিল না।

৩ দিন পর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেও এক সপ্তাহের মধ্যে আবার হাসপাতালের বেডে শুতে হয় তাকে। এই শয্যাই ছিল তার মৃত্যুশয্যা। মে মাসের ৪ তারিখ শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন জোসিপ ব্রজ টিটো। তার মৃত্যুতে যুগোস্লাভিয়া সহ পুরো বিশ্ব রাজনীতিতেই নেমে এসেছিল শোকের ছায়া। ৪ জন রাজা, ৩১ জন প্রেসিডেন্ট, ৬ জন প্রিন্স, ২২ জন প্রধানমন্ত্রী সহ মোট ১৫৮টি দেশের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়, যা ছিল তৎকালীন সময়ের সর্ববৃহৎ শেষকৃত্যানুষ্ঠান।

মার্শাল পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য কি ছিল, মার্শাল পরিকল্পনার উদ্দেশ্য কি ছিল

মার্শাল পরিকল্পনার দুটি মূল উদ্দেশ্য হল—– যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরোপের দেশগুলিকে অর্থসাহায্য দিয়ে তাদেরকে সোভিয়েত প্রভাব থেকে মুক্ত করা। ও মার্কিন অর্থ সাহায্যগ্রহণকারী দেশগুলিকে মার্কিন রাষ্ট্রজোটের অন্তর্ভুক্ত করা এবং তাদের বিদেশ নীতি নির্ধারণে আধিপত্য কায়েম করা।

1. সোভিয়েত প্রভাবমুক্ত ইউরোপ গঠন: যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরোপের দেশগুলিকে অর্থসাহায্য দিয়ে সোভিয়েত প্রভাবমুক্ত ইউরোপ গঠন করা।

2. আন্তর্জাতিক বাজার তৈরি: মার্কিন বাণিজ্যের স্বার্থে অর্থসাহায্যের বিনিময়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশগুলির অর্থনীতি মজবুত করে এক আন্তর্জাতিক বাজার গড়ে তোলা।

3. মার্কিন রাষ্ট্রজোটের শক্তিবৃদ্ধি: সাহায্যগ্রহণকারী দেশগুলিকে নিয়ে মার্কিন নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী রাষ্ট্রজোটের শক্তি বাড়ানো।

4. অন্য রাষ্ট্রের বিদেশনীতি নির্ধারণ: সাহায্যগ্রহণকারী দেশগুলির অভ্যন্তরীণ বিদেশনীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে মার্কিন আধিপত্য কায়েম করা।

অর্থনীতিতে “মার্শাল পরিকল্পনার সমতূল্য” বলতে সাধারণত বড় ধরনের আপদকালীন আর্থিক সহায়তা বোঝানো হয়।

এ পরিকল্পনায় সোভিয়েত ইউনিয়ন আর তার সহযোগী দেশগুলোকে কিছু সহায়তা করার প্রস্তাব রাখা হলেও তারা সে প্রস্তাব গ্রহণ করেনি। এ প্রস্তাবে অনুমোদন দিলে সমাজতান্ত্রিক অর্থনীতিতে মার্কিন হস্তক্ষেপের একটা আশঙ্কা ছিল। 

পরিকল্পনাটির চার বছর মেয়াদকালে সর্বমোট ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ইউরোপীয় দেশগুলোতে অর্থনৈতিক ও কারিগরী সহায়তা হিসেবে প্রদান করে। ১৯৫১ সালের শেষে সমন্বিত নিরাপত্তা পরিকল্পনার মাধ্যমে মার্শাল পরিকল্পনা প্রতিস্থাপিত হয়।

মার্শাল পরিকল্পনা কাকে বলে, মার্শাল পরিকল্পনা বলতে কি বোঝো

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ইউরোপের বিধ্বস্ত অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জর্জ সি. মার্শাল ইউরোপকে আর্থিক সাহায্য করার যে প্রস্তাব করেন, তা মার্শাল প্ল্যান (Marshall Plan) নামে পরিচিত। মার্শাল প্লানের অধীনে ১৯৪৮ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত ইউরোপকে যুক্তরাষ্ট্র বিপুল আর্থিক সাহায্য প্রদান করে। এতে ইউরোপের বিধ্বস্ত অর্থনীতি আবারও চাঙ্গা হয়ে উঠে। পরিকল্পনাটি ইউরোপীয় পুনরুদ্ধার প্রোগ্রাম (European Recovery Program (ERP) হিসাবে মার্কিন কংগ্রেস দ্বারা অনুমোদিত হয়।

১৯৪৭ সালের জুন মাসে, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদত্ত এক ভাষণে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী জর্জ সি. মার্শাল ইউরোপ পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করেন। রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট দুই পক্ষ থেকে এ পরিকল্পনাটি সমর্থন লাভ করে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাগণ এ পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করেন। এদের মধ্যে উইলিয়াম ক্লেটন ও জর্জ কেনান অন্যতম। সিনেটরদের মধ্যে আর্থার এইচ ভ্যান্ডারবার্গ এ প্রকল্প প্রণয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

৫ জুন ১৯৪৭ সালে, ইউরোপীয় দেশসমূহের একটি সভায় এ পুনর্গঠন প্লানটি  উত্থাপিত হয়। পরিকল্পনা মতে ১৯৪৮ থেকে ১৯৫১ সাল পর্যন্ত সর্বমোট ১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ইউরোপীয় দেশগুলোতে অর্থনৈতিক ও কারিগরী সহায়তা হিসেবে প্রদান করা হয়।

যদিও প্রথম অবস্থায় মার্শাল পরিকল্পনা ছিল একটি ইউরোপীয় অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রোগ্রাম কিন্তু পরবর্তীতে এটি সমস্ত ইউরোপীয় জাতির সহযোগিতার বৃহত্তর ঐক্যের দিকে নিয়ে যায়। পরিকল্পনার ভিত্তিটি উত্তর আটলান্টিক ট্রিটি অর্গানাইজেশন (ন্যাটো) গঠনের দিকে পরিচালিত করেছিল যা ভবিষ্যতের আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে একটি প্রতিরক্ষামূলক সামরিক জোট হিসাবে ভূমিকা পালন করবে। ফলস্বরুপ, ন্যাটো প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার সামরিক জোটে প্রদার্পন করে।

জর্জ সি. মার্শাল তার এই প্রচেষ্টার জন্য ১৯৫৩ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার অর্জন করে। আমেরিকান সাহায্যের উপর নির্ভরতা ইউরোপ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্যের পথ খুলে দিয়েছে। পরবর্তীতে, ইউরোপীয় দেশগুলো নিজেদের মধ্যে ঐক্যের আহ্বানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ধারণা তৈরি করেছিল। ফলে, আমেরিকান হস্তক্ষেপ ছাড়া ইউরোপের রেলপথ, মহাসড়ক এবং বিমানবন্দরের বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে।

প্রেসিডেন্ট হ্যারি ট্রুম্যান বলেছিলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল ‘‘বিজিতদের খাওয়ানো এবং সমর্থন করার জন্য প্রথম মহান জাতি।’’ মার্শাল প্ল্যানকে আমেরিকার সবচেয়ে সফল বৈদেশিক নীতি এবং সবচেয়ে কার্যকর বৈদেশিক সাহায্য কর্মসূচির একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মার্শাল প্ল্যানের মাধ্যমে ইউরোপীয় দেশগুলোকে $13 বিলিয়নেরও বেশি সাহায্য দেওয়া হয়। যার মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অক্ষশক্তি বা পরাজিত দেশ জার্মানি এবং ইতালি রয়েছে।

মার্শাল পরিকল্পনা কবে কার্যকর হয়, মার্শাল পরিকল্পনা কার্যকরী হয়

ইউরোপের বিভিন্ন দেশকে সহায়তা প্রদানের জন্য 1947 সালের 5ই জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র-সচিব জর্জ সি মার্শাল হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ভাষণ দেন, তাকেই মার্শাল পরিকল্পনা বলে।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ইউরোপীয় দেশগুলোর বিধ্বস্ত অর্থনৈতিক পুনর্গঠন এবং এসব দেশে সোভিয়েত কমিউনিজমের বিস্তার রোধ করার লক্ষ্যে এ পরিকল্পনা অনুসারে যুক্তরাষ্ট্র এসব দেশকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এ পরিকল্পনা ১৯৪৮ সালের এপ্রিল মাসে প্রণয়ন করা শুরু হয় এবং চার বছর যাবৎ পরিচালিত হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলোকে পুনর্গঠনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিজেদের তহবিল থেকে এই সুবিধা দেওয়ার অঙ্গীকারকেই মার্শাল পরিকল্পনা হিসাবে গৃহীত হয়। এর উদ্দেশ্য নিম্নে দিলাম।

(1) দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ইউরোপীয় বিধ্বস্ত দেশগুলোকে পুনর্গঠনের জন্য বিপুল পরিমাণে অর্থের প্রয়োজন। সেই ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিজস্ব তহবিল থেকে 12 বিলিয়ন ডলার মঞ্জুর করেছে। এই পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয় 1948 এর এপ্রিল মাসে।

(2) সোভিয়েত ইউনিয়নের অগ্রগতি রুখতে এই ব্যবস্থা।

(3) সাহায্য-গ্রহণকারী দেশগুলোকে মার্কিন ছত্রছায়ায় আনা।

ট্রুম্যান নীতি ও মার্শাল পরিকল্পনা

পরিচিতি

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৫ জুন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে মার্শাল তার ভাষণে বলেন—যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দারিদ্র্য, ক্ষুধা, হতাশা, বেকারত্ব-সহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক সংকটমােচনের জন্য যুক্তরাষ্ট্র অর্থসাহায্য দেবে। “আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী জর্জ সি. মার্শাল ট্রুম্যান নীতির উদ্দেশ্যকে সফল করতে একটি পরিকল্পনা পেশ করেন। ওই পরিকল্পনায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিধ্বস্ত সমগ্র ইউরােপেই আর্থিক পুনরুজ্জীবনের কথা বলা হয়। এই উদ্দেশ্যে তিনি তার বক্তৃতায় European Recovery Programme বা ERP নামে এক কর্মসূচির কথা ঘােষণা। করেন। এটিই মার্শাল পরিকল্পনা নামে খ্যাত।”

পটভূমি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়কালে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলির অর্থনীতি সম্পূর্ণরূপে পঙ্গু হয়ে পড়েছিল। এইসমস্ত দেশ আমেরিকার কাছ থেকে অর্থসাহায্য না পেলে স্বাভাবিকভাবেই সােভিয়েত রাশিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়বে, তখন আর এইসমস্ত দেশকে সাম্যবাদের প্রভাব থেকে মুক্ত করা যাবে না। আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্শাল এই সত্যের পটভূমিকায় তাঁর পরিকল্পনার নীতি গ্রহণ করেন।

উদ্দেশ্য

  • সােভিয়েত প্রভাবমুক্ত ইউরােপ গঠন: যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউরােপের দেশগুলিকে অর্থসাহায্য দিয়ে তাদের সােভিয়েত প্রভাব থেকে মুক্ত করা।
  • মার্কিন আধিপত্য প্রতিষ্ঠা: অর্থসাহায্য গ্রহণকারী দেশগুলির অভ্যন্তরীণ ও বিদেশ নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রেও মার্কিন আধিপত্য কায়েম করা।

প্রয়ােগ

১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দের জুন মাসের মধ্যে পশ্চিম জার্মানি-সহ পশ্চিম ইউরােপের ১৬টি দেশ মার্শাল পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল। এইসমস্ত দেশ মিলিত হয়ে গঠন করেছিল OEEC (Organisa tion for European Economic Cooperation) বা ইউরােপীয় অর্থনৈতিক সহযােগিতা সংস্থা। মার্শাল পরিকল্পনা গ্রহণকারী দেশগুলির মধ্যে উল্লেখযােগ্য ছিল পশ্চিম জার্মানি, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া, লুক্সেমবুর্গ, ডেনমার্ক, গ্রিস, আইসল্যান্ড, আয়ারল্যন্ড, ইটালি, নেদারল্যান্ড, নরওয়ে, পাের্তুগাল, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও তুরস্ক।

আরো পড়তে: ট্রুম্যান নীতি কি, ট্রুম্যান নীতি কাকে বলে, ট্রুম্যান নীতি কবে ঘোষিত হয়, হ্যারি ট্রুম্যান কে ছিলেন

ট্রুম্যান নীতি কি মার্শাল পরিকল্পনার উদ্দেশ্য গুলি কি ছিল

[1] আর্থিক স্বয়ম্ভরতা বৃদ্ধিতে: ইউরােপের ১৬টি দেশ এই পরিকল্পনা গ্রহণ করে তিন বছরে ১২৫০ কোটি ডলার লাভ করে। এর ফলেই ব্রিটেন, ফ্রান্স, পশ্চিম জার্মানি আর্থিক স্বয়ম্ভরতা ফিরে পায়।

[2] পুঁজিবাদী প্রবণতা বৃদ্ধি: গণতান্ত্রিক দেশগুলি সােভিয়েত সাম্যবাদ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী জোটের দিকে ঝুঁকে পড়ে।

[3] কমিউনিস্ট দলের পরাজয়ে: ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গণতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী দলগুলি নির্বাচনে কমিউনিস্ট ও সমাজতান্ত্রিক দলগুলিকে পরাজিত করতে সমর্থ হয়। ফলে সেসব দেশে ধনতান্ত্রিক ধাঁচের ‘গণতান্ত্রিক সরকার’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

আরো অন্যান্য সরকারি স্কিম সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | মার্শাল পরিকল্পনা

Q1. মার্শাল পরিকল্পনা কার্যকর হয় কত খ্রিস্টাব্দে

Ans – ১৯৪৭ সালের ৫ জুন ‘মার্শাল পরিকল্পনা’ ঘোষিত হয়। এ পরিকল্পনা ১৯৪৮ সালের এপ্রিল মাসে প্রণয়ন করা শুরু হয় এবং চার বছর যাবৎ পরিচালিত হয়।

Q2. মার্শাল পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য

Ans – মার্শাল পরিকল্পনা উদ্দেশ্য গুলো ছিল নিম্নরূপ:
1) যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলসমূহ পুনর্গঠন
2) বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতাসমূহ দূর করা
3) শিল্পে আধুনিকায়ন এবং 
4) পুনরায় একটি সমৃদ্ধ ইউরোপ সৃষ্টি করা

Q4. মার্শাল পরিকল্পনা গ্রহণকারী দেশের সংখ্যা ছিল

Ans – মার্শাল পরিকল্পনা গ্রহণকারী দেশের সংখ্যা ছিল 16।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।