সামাজিকীকরণ কি, সামাজিকীকরণ বলতে কি বুঝায়, সামাজিকীকরণের প্রধান মাধ্যম কোনটি

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

প্রশ্নপত্র

সামাজিকীকরণ কি, সামাজিকীকরণ কাকে বলে

মানব শিশু ভূমিষ্ঠ হবার পর তাকে সামাজিক পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে টিকে থাকার প্রয়োজনে অনেক কিছু শিখতে হয়। এ শিক্ষণ প্রক্রিয়া জন্মের পর থেকে শুরু হয় এবং তার জীবনব্যাপি চলতে থাকে। শিশুর এ শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় প্রথমে তার মা-বাবা, পরিবারের সদস্যরা, প্রতিবেশি, আত্মীয়-স্বজন এবং পরবর্তীতে তার শিক্ষক, সহযোগী, চেনা অচেনা অনেকেই খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এ শিক্ষণ প্রক্রিয়া মানব শিশুকে ভাষা, আচার আচরণ, প্রথা পদ্ধতি, মূল্যবোধ, আদব-কায়দা ইত্যাদি সম্পর্কে অবহিত করানোর মাধ্যমে তাকে সামাজিক মানুষ হয়ে উঠতে সহায়তা করে। জীবনব্যাপি চলতে থাকা এই শিক্ষণ প্রক্রিয়াকেই সামাজিকীকরণ বলে।

সামাজিকীকরণের সংজ্ঞা

সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় ব্যক্তি মূলত: সংস্কৃতি সম্পর্কে অবহিত হয়। 

  • সামাজিকীকরণ প্রসঙ্গে মনোবিজ্ঞানী বোগারডাস (Bogardus) বলেছেন, “সামাজিকীকরণ হচ্ছে এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে ব্যক্তি জনকল্যাণের নিমিত্তে একত্রে নির্ভরযোগ্য আচরণ করতে শেখে। এটি করতে গিয়ে সামাজিক আত্মনিয়ন্ত্রণ, দায়িত্ব ও সুসামঞ্জস্য ব্যক্তিত্বের অভিজ্ঞতা লাভ করে।”
  • Kingsley Davis তাঁর Human Society গ্রন্থে বলেছেন, “যে প্রণালীতে মানব শিশু পূর্ণাঙ্গ সামাজিক মানুষে পরিণত হয় তাই সামাজিকীকরণ।”
  • Ogburn and Nimkoff “যে পদ্ধতিতে ব্যক্তি নিজ নিজ মানবগোষ্ঠীর ব্যবহারিক মূল্যবোধের সাথে সামঞ্জস্য প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হয়, তাই সামাজিকীকরণ।” তাদের মতে, সামাজিকীকরণ ব্যতীত সমাজে জীবন-যাপন করা সম্ভব নয়।

উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে একটা মেয়ে শিশু তার মা দাদিমা কিংবা বোনকে অনুকরণ করে এবং কীভাবে কন্যা, বোন, বান্ধবী, স্ত্রী কিংবা মা হয়ে উঠবে সেটা ধীরে ধীরে রপ্ত করে। তার চারিপাশের ঘনিষ্ঠ জনও সেভাবেই তাকে বেড়ে উঠতে সহায়তা করে। যেমন— তার জন্মদিনে তাকে পুতুল কিংবা রান্নার খেলনা হাড়ি-পাতিল ইত্যাদি উপহার দেয়। 

পক্ষান্তরে, ছেলে শিশু অনুকরণ করে তার বাবাকে, ভাইকে কিংবা পরিবারের কোনো পুরুষ সদস্যকে এবং সে পুত্র, ভাই, বন্ধু, স্বামী কিংবা বাবা হয়ে উঠার প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে রপ্ত করে। সে খেলনা হিসেবে পায় ফুটবল, রেসের গাড়ি-ঘোড়া, রোবোট মানব কিংবা পেশীবহুল পুরুষের প্রতিবিম্ব যা সমাজে তার ভূমিকা নির্ধারণ করতে উৎসাহিত করে।

সামাজিকীকরণ বলতে কি বুঝায়

মানুষ হল সামাজিক জীব। সংস্কৃতির মাধ্যমে ব্যক্তির মানবিক বৈশিষ্ট্য সমূহের উন্মেষ ও বিকাশ ঘটে। ব্যক্তিত্ব বিকাশের এই বিষয়টি একটি স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়া। প্রত্যেক সমাজেই সদ্যজাত শিশুকে ধীরে ধীরে বেশ কিছু প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তার ব্যক্তিত্ব বিকাশের চেষ্টা করা হয় এবং তাকে সমাজের উপযোগী বা সামাজিক করে তোলা হয়; এই সামাজিক প্রশিক্ষণই হল সামাজিকীকরণ।

মানুষের অধিকাংশ আচার-ব্যবহারই অর্জিত, সহজাত নয়। শিশু যখন পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে তখন সে শুধুমাত্র কয়েকটি জৈবিক চাহিদা সম্পন্ন প্রাণী হিসাবেই থাকে। সে প্রধানত ক্ষুধা, তৃষ্ণা, কষ্ট প্রভৃতি ইন্দ্রিয়ানুভূতির দ্বারাই তাড়িত হয়। জন্মাবার পর থেকে তাকে প্রচলিত রীতিনীতি ও মূল্যবোধ শেখানো হয়। সে ভাষা শেখে এবং এই ভাষার মাধ্যমেই সে নিজের সামাজিক ঐতিহ্য আস্বত্ব করে। যে পদ্ধতিতে একজন শিশুর সামাজিক বৈশিষ্ট্যগুলি উন্মোচিত ও বিকোশিত হয় এবং তার ব্যক্তিত্ব সুগঠিত হয়, সেই প্রক্রিয়াকে বলা হয় সামাজিকীকরণ।

কিংসলে ডেভিস এর মতে, মানব শিশুর ক্রমশ সামাজিক জীবে পরিণত হওয়ার পদ্ধতি হল সামাজিকীকরণ।

পিটার ওসলে এর মতে, সামাজিকীকরণ হল এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সংস্কৃতি প্রবাহিত হয়। তাছাড়া এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে ব্যক্তি গোষ্ঠীর রীতিনীতি ও আচার-ব্যবহার শেখে।

সামাজিকীকরণের প্রকারভেদ

সামাজিকীকরণ চার প্রকার। যথা:

১) মুখ্য সামাজিকীকরণ
২) প্রত্যাশিত সামাজিকীকরণ
৩) উন্নয়নমূলক সামাজিকীকরণ
৪) পুন: সামাজিকীকরণ

মুখ্য সামাজিকীকরণ

সাধারণত বাচ্চারা যা শেখে তাই মুখ্য সামাজিকীকরণ। এ ধরনের সামাজিকীকরণ তখন ঘটে, যখন একটি শিশু ঐ নিয়ম, মূল্যবোধ, আচার আচরণ শিখে, যেগুলো একটি নির্দিষ্ট সংস্কৃতির সাথে মানানসই জীবনযাপনের জন্য প্রদর্শন করা উচিত। একটি শিশুর সাত-আট বছরের মধ্যেই সমন্বয় পূর্ণভাবে শারীরিক এবং মানসিক উন্নয়নের জন্য এটি প্রয়োজন।

এসময় শিশু যা দেখবে সেটাই শিখবে। উদাহরণস্বরূপ: শিশু যদি তার বাবাকে একজন বয়স্ক লোকের সাথে খারাপ আচরণ করতে দেখে তাহলে সে ভাববে এই আচরণ সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য। তাই সেও বয়স্ক লোকদের সাথে খারাপ ব্যবহার শুরু করবে।

মুখ্য সামাজিকীকরণ এর কয়েকটি উদাহরণ: বাচ্চা যা পরিবার থেকে শিখে তা ই মুখ্য সামাজিকীকরণ, সুন্দর, ব্যবহার, কান্না, হাঁসা, যোগাযোগ, ভালোবাসা, দুঃখ।

প্রত্যাশিত বা আগাম সামাজিকীকরণ

এধরনের সামাজিকীকরণ সেই প্রক্রিয়াকে বুঝায় যেখানে একজন ব্যক্তি ভবিষ্যতের সামাজিক সম্পর্কের জন্য অনুশীলন করেন। কেউ যখন নতুন একটি দল বা গোষ্ঠী তে প্রবেশ করতে চায় তখন তাকে নিজেকে ওই দল বা সমাজের মত পরিবর্তন করতে হয়। এটি হলো প্রত্যাশিত বা আগাম সামাজিকীকরণ।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একটি শিশু পিতৃত্বের প্রত্যাশা করে যখন সে তার বাবা-মাকে তাদের দৈনন্দিন জীবনে ভূমিকা পালন করতে দেখে। যারা বিশ্ববিদ্যালয় আইন নিয়ে পড়াশোনা করে তারা শিখছে কিভাবে আইনজীবিদের মতো আচরণ করতে হয়। অর্থাৎ একটি শিশুর পিতা হওয়ার প্রত্যাশা, আইনজীবী হওয়ার অনুশীলন, ডাক্তার হওয়ার অনুশীলন, গাড়ি চালানোর অনুশীলন, কম্পিউটার চালানোর অনুশীলন ইত্যাদি হলো প্রত্যাশিত সামাজিকীকরণ।

উন্নয়নমূলক সামাজিকীকরণ

এই সামাজিকীকরণ একটি শেখার প্রক্রিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করে যেখানে সামাজিক দক্ষতা বিকাশের দিকে মনোনিবেশ করা হয়।

উদাহরণস্বরূপ: একজন লাজুক ছাত্র মৌখিক যোগাযোগ বিকাশের জন্য নতুন নতুন শিক্ষার্থীদের ইংরেজি শেখাতে শুরু করে।

পুন: সামাজিকীকরণ

এধরনের সামাজিকীকরণে পূর্ববর্তী আচরণের ধরন গুলি প্রত্যাখ্যান করা এবং নতুন আচরণ, অভ্যাস গ্রহণ করা যাতে করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি তার জীবনের এক অংশ থেকে অন্য অংশে স্থানান্তরিত হতে পারে। এর প্রথম পর্যায় হলো একজন ব্যক্তির পূর্বের বিশ্বাস এবং আস্থা ধ্বংস করা। পুনঃ মানবজীবনের চক্র জোরে বইছে বলে বলা হয়ে থাকে। 

পুনঃসামাজিকীকরণ ২ প্রকার। যথা: ইচ্ছাকৃত এবং অনিচ্ছাকৃত। ইচ্ছাকৃত

পুনঃসামাজিকীকরণের উদাহরণ: বিবাহ, কলেজে ভর্তি, সন্ন্যাস গ্রহণ, সৈনিকে যোগদান, নতুন দেশে গমন, ডিভোর্স/তালাক।

অনিচ্ছাকৃত পুনঃসামাজিকীকরণের উদাহরণ: বন্দী হওয়া, বেকারত্ব, বিধবা হওয়া।

সামাজিকীকরণের বাহনসমূহ

সামাজিকীকরণ শুরু হয় শিশুর জন্ম লগ্নে, একজন ব্যক্তির মৃত্যু পর্যন্ত চলতে থাকে। সাম্প্রতিককালের সামাজিকীকরণ প্রত্যয়টি প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির আচরণ আলোচনা স্থান পেয়েছে যা আগে শিশুর ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ ছিল। সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, গোষ্ঠীকে এর বাহন হিসেবে গণ্য করা হয়। নিচে সামাজিকীকরণের প্রধান বাহন সমূহের ভূমিকা আলোচনা করা হলো:

পরিবার

পিতা-মাতা বা পরিবারের মাধ্যমেই শিশুর সামাজিকীকরণ এর সূত্রপাত ঘটে। পিতামাতার কাছ থেকেই শিশু কথা বলা শিখে। নৈতিকতার শিক্ষা লাভ করে। পরিবারের পিতামাতাকে শ্রদ্ধা করার মাধ্যমে কর্তৃত্বের প্রতি আস্থাশীল হয়ে ওঠে। শিশুর চরিত্র গঠনে পরিবারের ভূমিকা অপরিহার্য। সহযোগিতা, সহিষ্ণুতা, আত্মবিসর্জন, স্নেহ, ভালোবাসা ইত্যাদি সামাজিক ও নৈতিক গুণাবলী শিশু পরিবার থেকেই অর্জন করে কিন্তু প্রতিকূল পারিবারিক পরিবেশে শিশু বিপথগামী হয়। সমাজবিজ্ঞানীদের মতে কিশোর অপরাধ এর মূলে রয়েছে প্রতিকূল পারিবারিক পরিবেশ।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

সামাজিকীকরণের দ্বিতীয় বাহন হল স্কুল। স্কুলে শিশু যা শিখে তা তার চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গি কে প্রভাবিত করে। ভালো স্কুলে পড়াশোনা করলে শিশুর গুণাবলীর পথ সুগম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে পরিকল্পিত শিক্ষাব্যবস্থার অপরিহার্যতা অনস্বীকার্য। স্কুল সামাজিক নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও ভূমিকা পালন করে। পরিবার থেকে স্কুলে ভর্তি হওয়া একটি শিশুর জীবনে কঠিন পর্যায় হিসেবে চিহ্নিত। প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিবার এবং স্কুলের মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান। পরিবারের চেয়ে স্কুল অধিকতর নৈর্ব্যক্তিক, রুটিনমাফিক। শিক্ষাগ্রহণ একটি আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া। কিন্তু বর্তমান শ্রেণীবিভক্ত সমাজের সর্বস্তরে শিশুর অভিন্ন শিক্ষা তথা একই ধরনের সামাজিকীকরণ সম্ভব নয়।

খেলার সাথী

সমবয়সী, খেলার সাথী, বন্ধুবান্ধব সামাজিকীকরণ এর গুরুত্বপূর্ণ বাহন। শিশুর সামাজিকীকরণ এর দিক থেকে সম্পর্ক দুই ধরনের। কর্তৃত্বমূলক এবং সমতাভিত্তিক। খেলার সাথী, বন্ধু, সমবয়সীদের সাহচর্যে সামাজিকীকরণ এর মাধ্যমে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং উপলব্ধির বিকাশ ঘটে। শিশুরা সমবয়সীদের নিকট থেকে যা পায় তা তাদের পরিবার বা শিক্ষকের কাছে পায় না। তারা সহযোগিতামূলক নৈতিকতা, ফ্যাশন পছন্দ-অপছন্দের বিষয়াদি গ্রহণ করে। সমাজবিজ্ঞানে সমবয়সী গোষ্ঠী বলা হয়। যেসব শিশুর দিনের বেলা অন্তত ৮ ঘন্টা একত্রে থাকে এবং খেলাধুলা করে সময় কাটায় তাদের ভেতর সমবয়সী বন্ধু বর্গের পারস্পরিক বন্ধন আগের চেয়ে আধুনিককালে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। তবে সমবয়সীদের মধ্যেও যারা অধিকতর শক্তিশালী তারা প্রায়ই দুর্বল সমবয়সীদের উপর প্রাধান্য বিস্তার করে। সমবয়সী বন্ধু বর্গের ভেতর শিশুরা ভিন্নমাত্রায় মিথস্ক্রিয়ায় লিপ্ত হয়। একজন ব্যক্তির সমগ্র জীবন সমবয়সী বন্ধু বর্গের সম্পর্ক দ্বারা প্রভাবিত হতে পারে।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান

প্রাচীন বিশ্বের সামাজিক বন্ধনকে দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করার ক্ষেত্রে ধর্মের ভূমিকা ছিল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। আধুনিক সমাজে ধর্মের ভূমিকা হ্রাস পাচ্ছে যদিও। প্রত্যেক পরিবারের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যাতে বয়স নির্বিশেষে পরিবারের সবাই অংশগ্রহণ করে। শিশুরা লক্ষ্য করে পিতা-মাতা এবং বয়োজ্যেষ্ঠরা কিভাবে ধর্মীয় আচার পালন করেন। তারা এসব দেখে নিজের জীবনকে পিতামাতার মত পরিচালিত করার অনুপ্রেরণা পায়।

রাষ্ট্র

রাষ্ট্র হল সামাজিকীকরণের কর্তৃত্বমূলক বাহন। রাষ্ট্র জনগণের জন্য আইন প্রণয়ন করে যা মেনে চললে তাদের আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে। রাষ্ট্রের আইন মেনে চলা বাধ্যতামূলক, আইন লংঘন করলে তাকে শাস্তি পেতে হবে। এভাবে রাস্তা মানুষের আচরণ নিয়ন্ত্রণ এর মাধ্যমে সামাজিকীকরণে ভূমিকা পালন করে।

গণমাধ্যম

আধুনিক সমাজের শিশুরা টেলিভিশন এবং অন্যান্য গণমাধ্যমের প্রভাবে সামাজিক আচরণ এবং ভূমিকা সম্পর্কে জানতে পারে। সংবাদপত্র, রেডিও, চলচ্চিত্রের মাধ্যম দ্বারা বিচিত্র ধরনের পাঠক,দর্শক, শ্রোতার মধ্যে প্রতিটি ভাবের আদান-প্রদান সম্ভব। টেলিভিশন সবচেয়ে জনপ্রিয় গণমাধ্যম। এখানে বিনোদনমূলক শিশুরা প্রভাবিত হয়। বয়স অনুসারে অনুষ্ঠান দেখার মধ্যে তারতম্য দেখা যায়। আঠারো শতক থেকে পাশ্চাত্যে সংবাদপত্র, সাময়িকী, জার্নাল ব্যাপকভাবে প্রকাশিত হতে থাকে। সমাজের একটি ক্ষুদ্র পাঠক শ্রেণীর মধ্যে এসব সীমাবদ্ধ ছিল। একশত বছর পর মুদ্রিত বই পুস্তক, পত্রিকা, দৈনন্দিন জীবনযাত্রার সাথে যুক্ত হয়। এসবের সাথে বৈদ্যুতিক যোগাযোগ এবং টেলিভিশনসহ অন্যান্য গণমাধ্যম যুক্ত হওয়ায় সামাজিকীকরণে গণমাধ্যমের ভূমিকা বৃদ্ধি পেয়েছে।

সামাজিকীকরণের আরেকটি বাহন হল কর্মক্ষেত্র।

আরো পড়ুন : জাতীয়তাবাদ কি, জাতীয়তাবাদ বলতে কী বোঝায়, জাতীয়তাবাদের উপাদান কি কি, জাতীয়তাবাদের জনক কে

সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া

মানুষের জীবন প্রক্রিয়া একই সাথে শারীরিক ও সামাজিক এবং প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠে। শিশুরা যে পরিবেশ বেড়ে উঠে সেই পরিবেশের সংস্কৃতি ও মানুষের বিভিন্ন ধরনের ব্যবহার ও সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে আমৃত্যু জীবনের প্রতিটি পর্যায়ে কোনো না কোনো কিছু শিখছে। সামাজিকীকরণ একটি প্রক্রিয়া যা প্রতিটি পর্যায়ে চলতে থাকে।

উদাহরণ হিসেবে আমরা বলতে পারি বড়দের সালাম দেওয়া, শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক আসলে দাঁড়ানো এগুলো আমরা জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে শিখেছি আর তার প্রকাশ ঘটাচ্ছি। আনন্দ ও দুঃখের বহিঃপ্রকাশ প্রত্যেক সমাজ একই হলেও এক্ষেত্রে সামাজিকীকরণের ভূমিকা রয়েছে। 

শৈশবকাল

শৈশবকাল জীবনের আলাদা ও পৃথক একটি অংশ। শিশুরা নবজাতক থেকে আলাদা, শৈশবকাল উঠতি বয়স (কৈশোর) ও শিশুদের মাঝে অবস্থিত। ফরাসি ইতিহাসবিদ ফিলিপ্পো আরাইস (Philippe Aries) ১৯৬৫ সালে মত প্রকাশ করেন যে শৈশব কাল জীবনের পৃথক ও উন্নতির একটা পর্যায়। শিশুরা আলাদা কিছু ব্যবহার ও কাজ করে থাকে। শিশুরা বড়দের সাথে একই ধরনের কাজে যোগদান করে। যদিও সেটা শৈশবকালীন ভূমিকা (Role Take) করাকে বোঝায় এই পৃথক কিছু কাজ বা ব্যবহার শিশুদের সবার থেকে আলাদা করে ।

কৈশোর কাল

কিশোর বা কৈশোরকাল ধারণাটি আমাদের কাছে একজন ব্যক্তি নিজেস্ব যৌন বিষয়ে সক্ষম হয় একই সাথে জন্মদান এর ক্ষেত্রে এই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ এ সময় কিশোররা একটা বড় পরিবর্তন (যেমন-শারীরিক ও মানসিক) এর ভেতর দিয়ে যায়। এ সময়ে অর্থাৎ কিশোররা প্রাপ্তবয়স্কদের বিভিন্ন বিষয়গুলোকে অনুকরণ করে কিন্তু তাদের আচরণে থাকে শিশুদের ছাপ আর তারা শিশুদের প্রচলিত আইনের আওতায় পরিগণিত হয় তারা বড়দের মতো কাজে যেতে ইচ্ছা পোষণ করে কিন্তু তারা অবস্থান করে বিদ্যালয়ে।

উঠতি প্রাপ্ত বয়স্ক

উঠতি প্রাপ্তবয়স্ক পর্যায় হলো আলাদা একটি পর্যায়। এসময়ে ব্যক্তিগত ও শারীরিক (যৌনতা) বিষয়ে উন্নতি হয়ে থাকে। বিভিন্ন দল ও মানুষের উপর পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় যে মানুষ তার উঠতি বিশ বছরের প্রথমে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ানো এবং সেই সাথে, শারীরিক ও যৌনতা বিষয়ক, রাজনৈতিক এবং ধর্মীয় বিষয় এ জ্ঞান অন্বেষণ ও প্রকাশ করায় ইচ্ছুক থাকে।

প্রাপ্ত বয়স্ক

প্রাপ্তবয়স্ক পর্যায়ে ব্যক্তি ভবিষৎ কিছু বিষয়ের জন্য নিজস্ব কিছু বিষয়ে পরিবর্তন এনে থাকে ভবিষ্যতকে নতুন ও সুন্দর মাত্রা দেওয়ার জন্য। মানুষ সাধারণত মোবাইল প্রযুক্তির বদৌলতে পিতামাতা ও অন্যান্যদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষা করছে। আর কাজের বিষয়ে তারা পূর্বের প্রজন্মের মতোই অনুকরণ করছে। যেমন: বিবাহ, পারিবারিক জীবন এবং কিছু সামাজিক বিষয়ে সমস্যার সমাধান। শারীরিক ও বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করার ক্ষেত্রে বর্তমানে ব্যক্তির নিজস্ব অগ্রাধিকার বেশি। এটা অবশ্যই ব্যক্তির স্বাধীনতার সাথে সম্পর্কিত। 

বার্ধক্য

প্রত্যেক সমাজে বয়স্ক মানুষেরা বেশি সম্মান ও শ্রদ্ধার পাত্র হিসেব পরিগণিত হয়। বিভিন্ন দেশে বয়স্কদের সুবিধা ভালো থাকলেও চাকরি থেকে অব্যাহতির পরে তাদের জীবন পূর্বের থেকে কিছুটা দুর্বল হয়। এটা ভাবা হয় যে যারা বয়স্ক বয়সের সাথে তাল মিলিয়ে চলছে নিজের সমৃদ্ধ ভান্ডার নিয়ে তাদেরকে যদি স্বীকৃতির চেয়ে বেশি সামাজিক সুযোগ সুবিধা দেওয়া তাহলে সেটা অনেক ভালো হয়। আর যদি কোনো সমাজে স্বাস্থ্যবান বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বেশি থাকে সেটা বহিঃস্থ ও অন্যান্য দৃষ্টিতে অনেক সুন্দর হিসেবে বিবেচিত হয়।

সামাজিকীকরণের বৈশিষ্ট্য

  • একাধিক মাধ্যম: ব্যক্তি নিজে নিজেই সামাজিকীকরণ ঘটাতে পারেনা। তাকে এই কাজে সাহায্য করে যেসকল উপাদান – সেগুলিকে বলে সামাজিকীকরণের মাধ্যম। সামাজিকীকরণের প্রধান মাধ্যমগুলি হল – পরিবার , বন্ধুগোষ্ঠী , শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান , গণমাধ্যম , রাষ্ট্র , বিভিন্ন আদর্শ – ইত্যাদি। এইসকল উপাদানগুলি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্যক্তির সামাজিকীকরণে সহায়তা করে। 
  • উপাদানগুলির পারস্পরিক সম্পর্ক: সামাজিকীকরণের বিভিন্ন মাধ্যমগুলির মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বর্তমান। ব্যক্তি ও সামাজিকীকরণের মাধ্যমগুলি পারস্পরিক ক্রিয়া – প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে সামাজিকীকরণ ঘটায়। যেমন রাষ্ট্র যথাযথ শিক্ষার ব্যবস্থা করলে শিক্ষা ব্যক্তির চেতনার উন্নতি ঘটায়। মানুষের চেতনার উন্নতি সামাজিকীকরণে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করে। 
  • সামাজিক প্রক্রিয়া: সামাজিকীকরণ সম্পূর্ণরূপে একটি সামাজিক প্রক্রিয়া। সমাজে অবস্থানকারী ব্যক্তি সামাজিক উপাদানগুলির সঙ্গে ক্রিয়া – প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমেই সামাজিকীকরণ ঘটায়। সামাজিকীকরণের প্রতিটি উপাদান সম্পূর্ণরূপে সামাজিক। 
  • সকল সমাজে বিদ্যমান: সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া সকল সমাজেই বিদ্যমান। দেশ ও কালভেদে সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া সকল সমাজেই লক্ষ্য করা যায়। আদিম সমাজ থেকে বর্তমান সমাজ পর্যন্ত ; এমনকী , যেসকল সমাজে সভ্যতার আলো পৌঁছয়নি , সেসকল সমাজেও সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া লক্ষ্য করা যায়। 
  • গতিশীল প্রক্রিয়া: সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়াটি একটি গতিশীল প্রক্রিয়া। সমাজের পরিবর্তন ও সময়ের বিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়াটিও সমানতালে সংগঠিত হতে থাকে। 
  • নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া: সামাজিকীকরণ একটি নিরবচ্ছিন্ন প্রক্রিয়া। মানবজীবন ও সমাজজীবনের কোনো স্তরেই সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া সমাপ্ত হয়না – তা প্রবহমান এবং নিরবচ্ছিন্ন। সমাজ সৃষ্টি থেকে বর্তমান সময়কাল পর্যন্ত সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া নিরন্তর সংগঠিত হয়ে চলেছে। 
  • সামাজিকীকরণ সমাজের সকল অংশকে প্রভাবিত করে: কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর মধ্যেই যে সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া সংগঠিত হয় – তা কিন্তু নয়। সামাজিকীকরণ সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে সংগঠিত হয়। সমাজে বসবাসকারী সকলেই সামাজিকীকরণের মাধ্যমে সমাজের সঙ্গে পরিচিত হয় ও সামাজিক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করে। 
  • পরিস্থিতিভেদে তারতম্য: পরিস্থিতিভেদে সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। একটি আদর্শ সমাজের ব্যক্তিবর্গের সামাজিকীকরণ ঘটে আদর্শরূপে ; অন্যদিকে , যেসকল সমাজের পরিবেশ অসামাজিক , সেসকল সমাজের ব্যক্তিবর্গের সামাজিকীকরণ ঘটে নেতিবাচকরূপে। 
  • সমাজের পরিবর্তন: সামাজিক পরিবর্তনের একটি প্রধান উপাদান হল সামাজিকীকরণ। সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যক্তিবর্গ সমাজের পরবর্তনশীল রীতিনীতির সঙ্গে অভিযোজন ঘটিয়ে সামাজিক পরিবর্তনের পথ প্রশস্ত করে। 
  • মিথস্ক্রিয়া: সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই ব্যক্তি , সামাজিক প্রতিষ্ঠান ও সমাজের মধ্যে মিথস্ক্রিয়া সংগঠিত হয়। ব্যক্তি , প্রতিষ্ঠান ও সমাজের মিথস্ক্রিয়া সামাজিক পরিবর্তনকে সূচিত করে। 

সামাজিকীকরণের উপাদান

সমাজের বসবাস উপযােগী উপাদানে পরিণত হওয়াকে সামাজিকীকরণ বলা হয়ে থাকে। সামাজিকীকরণ সমাজজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যয়। এটি মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত চলে বলে একে Life long process বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। এই প্রক্রিয়া মানুষের ব্যক্তিত্বকে সমাজজীবনে প্রতিষ্ঠিত করতে সহায়তা করে। মূলত সামাজিকীকরণ একটি সামাজিক শিক্ষণ প্রক্রিয়া।

সামাজিকীকরণের উপাদানঃ প্রতিটি বস্তু বা প্রক্রিয়া আমরা যাই বলি না কেন, কিছু উপাদান দিয়েই এর গঠন প্রক্রিয়াটি সমাপ্ত হয়। মানবদেহে যেমনঃ রক্ত, মাংস, পানি ইত্যাদি দিয়ে গঠিত তেমনি সামাজিকীকরণও কিছু উপাদান দিয়ে গঠিত। নিম্নে সামাজিকীকরণের উপাদানসমূহের বিবরণ দেয়া হলাে-

(১) অনুকরণ (Imitation): শিশুরা অনুকরণপ্রিয় বড়দের কথা বলার ভঙ্গিসহ আশেপাশের অনেক কিছুই অনুকরণ করতে শিখে। অনুকরণের মাধ্যমেই শিশুর সামাজিকীকরণের সূচনা হয়। বয়স্ক ব্যক্তিদের কথা বলা, কাজ করার প্রচলিত রীতিগুলােও সে অনুকরণ করে।

(২) শেখা (Learning): শিক্ষণ এমন একটি Process যার মাধ্যমে কৃষ্টির উপাদান বিভিন্ন যুগে সঞ্চালিত হয়। শিশু তার পরিবার বা সমবয়সী কিংবা অন্য কারাে কাছ থেকে তার স্বীয় Culture এর বিভিন্ন উপাদানগুলাে আয়ত্ত করে এবং সামাজিক হয়।

তাই Learning ছাড়া ব্যক্তির Sociolization হয় না। মানুষ সামাজিক পরিবেশ থেকে শিক্ষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সামাজিক জীবে পরিণত হয়। সমাজে বসবাস করতে গিয়ে মানুষের আচরণ কেমন হওয়া উচিৎ? কীভাবে কথা বলতে হবে? কীভাবে বন্ধুবান্ধবের সাথে মিশতে হবে? ইত্যাদি শিক্ষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিখে থাকে।

(৩) মিথষ্ক্রিয়া (Interaction): মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে মানুষ সমাজে তার অবস্থাকে প্রমাণ এবং দৃঢ় করে এবং ক্রমান্বয়ে স্থায়িত্ব লাভ করে।

(৪) ভাষা (Lanuage): সামাজিকীকরণের প্রধান উপাদান হচ্ছে ভাষা। ভাষা মানব ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আদিম মানুষেরা হাত-পা নাড়িয়ে অভিব্যক্তি প্রকাশ করত। কিন্তু যখন থেকে ভাষার উৎপত্তি হয়েছে ও উন্নতি সাধন হয়েছে তখনই মানুষ সামাজিকীকরণ হয়েছে।

(৫) স্নেহ (Affection): পারস্পরিক মমতাবোধ সামাজিকীকরণের অন্যতম উপাদান। মানুষ যদি যন্ত্রবৎ হয়ে যেত তাহলে পারস্পরিক সহযােগিতার সুযােগ থাকত না। সহযােগিতা সামাজিকীকরণের অন্যতম দিক। সহযােগিতার বিভিন্ন দিক রয়েছে; যেমন সহমর্মিতা, সান্তনা, সৌহার্দ্য গুলােকে আবার আত্মীয় সম্পর্ক বলা হয়ে থাকে।

সামাজিকীকরণের গুরুত্ব

সামাজিকীকরণের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি সমাজের স্বীকৃত জীবনধারায় অভ্যস্থ হওয়ার শিক্ষা পায়। তাই এর গুরুত্ব অনেক। সামাজিকীকরণের গুরুত্বপূর্ণ দিকসমূহ নিম্নে তুলে ধরা হলো :

  • ইহা মানুষকে সমাজের আচরণ রপ্ত করতে শেখায়।
  • সামাজিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে সহায়তা করে।
  • সমাজের সভ্য ও পরিচিতি লাভে সহায়তা করে।
  • ইহা পারস্পরিক সহযোগিতা, দ্বন্দ্ব, সহমর্মিতা, আত্মীকরণে সহায়তা করে।
  • ইহা সামাজিক ব্যাধি, অনাচার, বিশৃঙ্খলা রোধ করে।
  • ইহা ব্যক্তি ও সমাজের স্বার্থ রক্ষার্থে ভারসাম্য সৃষ্টি করে।

সামাজিকীকরণের বাহনসমূহ, সামাজিকীকরণের বিভিন্ন মাধ্যম

সামাজিকীকরণ হলো একটি চলমান প্রক্রিয়া । বিভিন্ন মাধ্যম ও প্রতিষ্ঠানসমূহ ব্যক্তির সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করে থাকে।

পরিবার

মানুষের জীব সামগ্রিক জীবনের সামাজিকীকরণ প্রথমে পরিবার থেকে শুরু হয়। নবজাতক শোনা, দেখা, স্বাদ নেওয়া সহ বিভিন্ন বিষয় প্রথমে পরিবার থেকে শিখে থাকে। পরিবারের সদস্যরা সামাজিক পরিবেশের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করে। সব সমাজ ও পরিবার সামাজিকীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। বিভিন্ন ধরনের আদব কায়দা, নীতি নৈতিকতা এবং শিক্ষার প্রথম ধাপ পরিবার থেকে শিশু শিখে থাকে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

সামাজিকীকরণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠার থেকে ব্যক্তি বিভিন্ন নৈতিক জ্ঞান লাভ করে। একজন দ্বান্বিক তাত্ত্বিক পর্যবেক্ষণ করেন যে, স্কুল কলেজ অর্থাৎ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাজের পুরস্কার এবং শাস্তির বিষয়টা আছে সেটার প্রথম পরিচয় ঘটে থাকে। শিশুরা সময়ের সাথে সাথে বেশি বাস্তববাদী হয়ে উঠে সেটা শারীরিক মানবিক ও সামাজিক সক্ষমতাকেও বুঝিয়ে থাকে।

উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ অনেক ব্যয়বহুল তার পরেও সেখানে দেখা যায় যে মেধাবী শিক্ষার্থীরা এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সুবিধা পেয়ে থাকে। একই সাথে কম দক্ষ শিক্ষার্থীরা এই সব সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়।

সঙ্গী ও সহপাঠী

সামাজিকীকরণে পরিবারের এর সাথে সাথে সঙ্গী ও সহপাঠীরাও ভূমিকা পালন করে থাকে। পরিবার থেকে বেরিয়ে শিশুরা একই বয়সী শিশুর সাথে একই সামাজিক যোগ্যতা ভাগ করে । এক অপরের সাথে মিথষ্ক্রিয়ার ফলে ব্যবহার আচরণে পরিবর্তন আসে।

গণমাধ্যম ও প্রযুক্তি

গণমাধ্যম ও প্রযুক্তি শিশুর সামাজিকীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। রেডিও, টেলিভিশন, রেকর্ডগান এবং ইন্টারনেরট এগুলো সামাজিকীকরণের সাথে জড়িত। বর্তমানে ইন্টারনেট টেলিভিশনের থেকে বেশি সামাজিকীকরণে ভূমিকা পালন করছে। বিভিন্ন ধরনের টেলিভিশন অনুষ্ঠান এমনকি ব্যবসায়িক অনুষ্ঠান উঠতি বয়সীদের সাথে বিভিন্ন অপরিচিত সংস্কৃতি ও জীবনযাপন এর ধরনের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।

কর্মক্ষেত্র

একটি পেশায় কী ধরনের ব্যবহার যথাপোযুক্ত সেটা মানবিক সামাজিকীকরণের গুরুত্বপূর্ণ একটি পর্যায়। সহকর্মীর কাছে থেকেও বিভিন্ন বিষয় আদান প্রদান হয়ে থাকে। যখন একটা পেশা থেকে আরেকটি পেশায় কেউ যোগদান করে পেশাগত সামাজিকীকরণ প্রত্যেকের কর্মক্ষেত্র বড় পরিবর্তন আনে ও চলতে থাকে। প্রযুক্তিগত দক্ষতাও সামাজিকীকরণে ভূমিকা পালন করছে।

ধর্ম

ধর্ম পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ় করার ক্ষেত্রে চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করে। সমাজের মানুষের ধর্মীয় আদর্শ, বিশ্বাস ও জীবনধারার উপর ধর্ম ভূমিকা পালন করে থাকে। সঠিক জীবনধারার লক্ষে ধর্মের গুরুত্ব অপরিসীম।

রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থা

রাষ্ট্র ও প্রচলিত সরকার ব্যবস্থা সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। রাষ্ট্র একটি কর্তৃত্বমূলক প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রের বিভিন্ন সুনির্দিষ্ট নিয়মনীতি থাকে যা রাষ্ট্রের সদস্য বা জনগণকে মেনে চলতে হয়। অন্যথায় শাস্তির ব্যবস্থা থাকে। শিশু ছোটবেলা থেকে এই সমস্ত শাস্তির বিষয় ও জীবনযাপনের নিয়মের সাথে পরিচালিত হয়ে উঠে। সবশেষে এটাই প্রতীয়মান যে, রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থা শিশুর সামাজিকীকরণে ভূমিকা পালন করে।

সামাজিক নীতি ও সামাজিকীকরণ

শিশুর সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে সামাজিক নীতি বিভিন্ন ভূমিকা পালন করে থাকে। বহির্বিশ্বে বিশেষ শিশু প্রতিপালনের ক্ষেত্রে উন্নত দেশগুলো বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে। শিশুর সামাজিকীকরণ হলো খুবই প্রয়োজনীয় এবং অত্যবশ্যকীয়। সে জন্য সরকার সিদ্ধান্ত নেয় কোন কোন পদক্ষেপ শিশুর সামাজিকীকরণে অবদান রাখবে। ডেনমার্ক ও সুইডেনে দেশের এক তৃতীয়াংশ শিশুর প্রতিপালনে সরকার বিভিন্ন নীতিমালা গ্রহণ করেছে। অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলো শিশুর প্রতিপালনে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও দুর্বল অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কারণে পদক্ষেপগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ফলপ্রসূ হয় না।

সামাজিকীকরণে পরিবারের ভূমিকা, সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়ায় পরিবারের ভূমিকা, শিশুর সামাজিকীকরণে পরিবারের ভূমিকা

সামাজিকীকরণের কতগুলাে মাধ্যম রয়েছে তার মধ্যে পরিবারের ভূমিকাই সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। বলা হয়ে থাকে যে, শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথে বংশগতি মূল উপাদান জোগায়, সংস্কৃতি নকশা তৈরি ক হ পরিবারে পিতামাতা কারিগর হিসেবে কাজ করে। কারণ শিশুর সমস্ত দৈহিক, মানসিক, বস্তুগত ও অবগত যাবতীয় প্রয়ােজন মেটায় পরিবার।

পরিবারেই শিশু তার চিন্তা, আবেগ ও কর্মের অভ্যাস গঠন করে। মূলত শিশুর চরিত্রের ভিত্তিপ্রস্তর রচিত হয় পরিবারেই। কীভাবে কথা বলতে হয়, নিজের আবেগ কিভাবে প্রকাশ করা হয় তা শিশু পরিবার হতেই শিক্ষালাভ করে। অর্থাৎ ভবিষ্যৎ জীবনযুদ্ধে সে যেন বাস্তবতার মুখােমুখি হতে পারে তার জন্য পূর্ব হতেই পরিবার তাকে শিক্ষা প্রদান করে।

পরিবার শিশুর অপ্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রদানের ব্যবস্থা করে থাকে। শিশুর চলাফেরা, কথাবার্তা, ভাষা শিক্ষা দেওয়া, আচার-আচরণ শিক্ষা দেওয়া, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দান করার দায়িত্ব একমাত্র পরিবারের। সমাজের একজন যােগ্য ও দায়িত্বশীল ব্যক্তিত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে গড়ে তােলার জন্য পরিবারের অবদান সবচেয়ে বেশি। সুতরাং শিশুর ব্যক্তিত্ব নির্ভর করে তিনটি সম্পর্কের ওপর, যথা-

  • পিতা-মাতার মধ্যে সম্পর্ক
  • পিতা-মাতা ও শিশুর মধ্যে সম্পর্ক এবং
  • পরিবারের শিশুদের মধ্যে সম্পর্কের ওপর।

পিতা-মাতার মধ্যে সম্পর্ক মধুর হলেই সে পরিবারের শিশুরা সুন্দর পারিবারিক পরিবেশে নিজেদের ব্যক্তিত্ব গঠন করতে সক্ষম হয়। অপরদিকে পিতামাতার মধ্যে ঝগড়া বিবাদ, বিবাহ-বিচ্ছেদ, মারামারি বা পারিবারিক অশান্তি বিরাজ করলে সে পরিবারের শিশুদের মধ্যে মনােদৈহিক সমস্যা দেখা দেয় এবং ঐসব শিশুরা নানা প্রকার অপরাধকর্মে লিপ্ত হয়।

পিতামাতা ও শিশুদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করলে পরবর্তীকালে ঐ শিশুরা আত্মবিশ্বাসী হয়ে গড়ে ওঠে এবং সমাজে সহজ জীবনযাপন করতে পারে। পরিবারের শিশুদের মধ্যে কেমন সম্পর্ক বিরাজ করবে তার ওপর ভিত্তি করে সে পরিবারের শিশুদের ব্যক্তিত্ব গঠিত হবে। সুতরাং শিশুর সামাজিকীকরণের সংস্থা হিসেবে পরিবারের পক্ষে যা করা সম্ব, অন্য কোনাে সংস্থার পক্ষে তা অচিন্তনীয়।

সামাজিকীকরণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা

সামাজিকীকরণের ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদিও পরিবারের মধ্য দিয়েই শিশুর যে সামাজিকীকরণ শুরু হয় বিদ্যালয়ের মাধ্যমে সে প্রক্রিয়ার অবিচ্ছিন্নতা বজায় থাকে। সমাজের সভ্যরা যাতে সামাজিক মূল্য, সামাজিক আদর্শ, সামাজিক অভ্যাসগুলাে আয়ত্ত করতে পারে তার জন্য প্রতিটি সমাজকে তার শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে সমাজের প্রতিটি সভ্যকে তার নির্দিষ্ট ভূমিকা পালন করার জন্য শিক্ষা দান করতে হয়।

সমাজ তার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিশু-কিশােরদেরকে সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞান দান করে। সমাজে বসবাস করতে হলে প্রত্যেক ব্যক্তিকে কতকগুলাে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হয়। ব্যক্তির মধ্যে দায়িত্ববােধ ও সামাজিক চেতনা না থাকলে সে এ দায়িত্ব পালন করতে পারে না।

শিক্ষার দ্বারাই ব্যক্তির মনে এ দায়িত্ববােধ ও সামাজিক চেতনা সৃষ্টি করা যেতে পারে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মানুষকে নানাভাবে শিক্ষাদান করে মানুষের সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া সার্থক করে তােলে। তাছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আচার-অনুষ্ঠান, আইন-কানুন, পাঠ্যপুস্তক, শিক্ষক-শিক্ষিকা শিশুর মনে মূল্যবােধ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

গ্রামীণ সমাজ বলতে কী বোঝো

বৈশিষ্ট্যগত কারণেই গ্রামীণ সমাজ অন্য যেকোনো সমাজ থেকে আলাদা। বাংলাদেশ তথা ভারতীয় উপমহাদেশ প্রধানত গ্রামনির্ভর জনপদ। যুগ যুগ ধরে এখানে গ্রাম-সমাজ টিকে ছিলো অপরিবর্তিত রূপে। গ্রামীণ সমাজের মূল ভিত্তি ছিল স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্রামীণ সম্প্রদায়। গ্রামের মানুষ তাদের প্রয়োজনীয় সব উপকরণ নিজেরাই উৎপাদন করতো। ফলে বাইরের গ্রাম বা শহরের সাথে তাদের যোগাযোগ ছিল খুবই সীমিত।

গ্রামীণ সমাজ বলতে মূলত কৃষিকাজ ও কৃষক সমাজ নিয়ে গঠিত জনপদকে বুঝায়। চাষযোগ্য জমি, কৃষকের উঠান, লাঙ্গল-জোয়ালসহ চাষীর মাঠে গমন, আঁকা-বাঁকা কাঁচা সড়ক কিংবা ছোট নদী আর গাছ-গাছালি, স্নেহ-ছায়া ও পাখ-পাখালির কল-কূজনে মুখরিত গুচ্ছ গুচ্ছ বাড়ি ঘর নিয়ে গ্রাম গড়ে ওঠে। এ গ্রামের আদিবাসীরা যে আথর্- সামাজিক ব্যবস্থা গড়ে তোলে তা-ই মূলত গ্রামীণ সমাজ। গ্রামে শহরের তুলনায় জনবসতির ঘনত্ব কম।

Nelson তাঁর Rural Sociology গ্রন্থে বলেছেন, “পরিসংখ্যানগত দিক থেকে গ্রাম হচ্ছে সে জনপদ যার জনসংখ্যা ২৫০০ জনের কম।”

নগর সমাজ বলতে কী বোঝো

‘নগর’ এর ইংরেজি প্রতিশব্দ হিসেবে Urban, City, Town ইত্যাদি প্রচলিত। পাকা ভবন, প্রশস্ত পাকা রাস্তা, মানুষের কোলাহল, যন্ত্র নির্ভর গতিশীল জীবন নিয়ে গড়ে উঠে নগর। কোনো জনপদকে নগর, শহর বা পৌর অঞ্চল হিসেবে স্বীকৃতি পেতে হলে সেখানে উচ্চমাত্রার জনসংখ্যা এবং কৃষি বহির্ভুত পেশার আধিক্য থাকতে হয়।

সমাজবিজ্ঞানী Dr. William Munro বলেছেন, বিপুল জনগোষ্ঠী, স্বল্প পরিসরের মধ্যে অসংখ্য বাসস্থান, স্বায়ত্তসাশিত পৌর কতৃর্প ক্ষ, নানাবিধ অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং জীবিকার তাগিদে ছুটে চলা মানুেষর ব্যস্ত জীবন নিয়ে গড়ে ওঠে নগর সমাজ।

Louis Wirthএর মতে, নগর হল সামাজিক দিক হতে বৈসাদৃশ্যপূর্ণ মানুষের তুলনামূলকভাবে বড়, ঘন এবং স্থায়ী বাসস্থানের অঞ্চল।

Alvin Boskoff নগর সমাজের কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ করেছেন। এগুলো হচ্ছে:

  • ক) শিল্প-বাণিজ্য এবং বৃত্তি সম্পর্কীয় অকৃষি পেশার আধিক্য
  • খ) নিয়মতান্ত্রিক শ্রমবিভাজন
  • গ) জনসখ্যার অত্যধিক ঘনত্ব এবং
  • ঘ) জ্ঞাতি সম্পর্কের বন্ধনহীন সামাজিক নিয়ন্ত্রণ।

গ্রাম ও শহরের সামাজিকীকরণের পার্থক্য

বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাদৃশ্য থাকলেও গ্রামীণ ও নগর সমাজের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য পার্থক্য বিদ্যমান। গ্রামীণ ও নগর সমাজের বৈসাদৃশ্য বাহ্যিকভাবে পরিলক্ষিত হয়-

গ্রামীণ সমাজশহরের বা নগর সমাজ
গ্রামীণ সমাজ কৃষিভিত্তিক।নগর সমাজ শিল্পোৎপাদন ও সেবাভিত্তিক।
গ্রামীণ সমাজের সংস্কৃতি সনাতন ও ঐতিহ্যবাহী।নগর সমাজ অগ্রসরমান ও আধুনিক।
গ্রামীণ সমাজে নির্দিষ্ট জনসংখ্যার বাধ্যবাধকতা নেই। একটি গ্রামে সাধারণত এক থেকে দশ হাজার মানুেষর বসবাস।একটি জনপদকে শহর হতে হলে কমপক্ষে ৫০ হাজার মানুষ বসবাস করতে হয়। কোনো কোনো মেগাশহরে এক কোটির অধিক মানুষ বসবাস করে।
গ্রামে জনসংখ্যার ঘনত্ব অনেক কম।শহরে জনসংখ্যার ঘনত্ব অনেক বেশি।
গ্রামীণ সমাজে বসতবাড়ি ও জলাশয় ব্যতীত অধিকাংশ ভুমি কৃষি উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।শহরে কৃষি ভুমি নেই বললেই চলে।
গ্রামীণ সমাজে মানুষের পেশা কৃষি, ক্ষুদ্র ব্যবসা, দিনমজুরি ও স্থানীয় পেশাভিত্তিক জনগোষ্ঠী। নগর সমাজ কৃষি বহির্ভুত শিল্পোৎপাদন ও সেবাভিত্তক পেশার আধিক্য।
গ্রামীণ সমাজে শিক্ষার হার কম, উচ্চশিক্ষিত মানুষ খুব কমই গ্রামে বসবাস করেন।নগর সমাজে শিক্ষার হার অপেক্ষাকৃত বেশি। শহরে অনেক শিক্ষিত এবং উচ্চশিক্ষিত মানুষ বসবাস করেন।
গ্রামীণ সমাজে নাগরিক সুযোগসুবিধা গ্যাস, বিদ্যুৎ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ প্রভৃতি সুযোগ-সুবিধা তুলনামূলকভাবে কম।নগর সমাজে গ্যাস, বিদ্যুৎ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পয়ঃনিষ্কাশনসহ নাগরিক সুেযাগ-সুবিধা অনেক বেশি এবং উন্নত।
গ্রামীণ সমাজে সামাজিক নিয়ন্ত্রণ জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, প্রথা ও মূল্যবোধের ভিত্তিতে সামাজিক নিয়ন্ত্রণ হয়। নগর সমাজে আইন এবং বিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান মূখ্য ভুমিকা পালন করে।
গ্রামীণ সমাজের ক্ষমতা কাঠামো কৃষি জমি, বৃহৎ জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, বংশ মর্যাদা ইত্যাদি সনাতন উপাদানের অস্তিত্ব লক্ষণীয়।নগর সমাজের কর্তৃত্বপূর্ণ পেশা, শিক্ষা, নগদ অর্থ, বিলাসবহুল বাড়ি-গাড়ি, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মালিকানা, রাজনৈতিক প্রভাব প্রভৃতি উপাদানের দৃঢ় ভুমিকা রয়েছে।
গ্রাম ও শহরের সামাজিকীকরণের পার্থক্য
আরো অন্যান্য সরকারি স্কিম সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | সামাজিকীকরণ

Q1. সামাজিকীকরণ কী

Ans – সামাজিকীকরণ হল এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সম্প্রদায়গুলি সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য সমাজের নিয়ম ও মূল্যবোধ সম্পর্কে তাদের সদস্যদের লেনদেন বা শিক্ষিত করে। সামাজিকীকরণ হল ব্যক্তিত্ব বিকাশ এবং সাংস্কৃতিক বিকাশের সমন্বয়। 

Q2. সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া কখন শুরু হয়

Ans – সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয় জন্মের পর থেকে। মানুষের জীব সামগ্রিক জীবনের সামাজিকীকরণ প্রথমে পরিবার থেকে শুরু হয়।

Q3. সামাজিকীকরণের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম কোনটি, সামাজিকীকরণের প্রধান মাধ্যম কোনটি

Ans – সামাজিকীকরণের কতগুলাে মাধ্যম রয়েছে তার মধ্যে পরিবারের ভূমিকাই সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। বলা হয়ে থাকে যে, শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথে বংশগতি মূল উপাদান জোগায়, সংস্কৃতি নকশা তৈরি ক হ পরিবারে পিতামাতা কারিগর হিসেবে কাজ করে। কারণ শিশুর সমস্ত দৈহিক, মানসিক, বস্তুগত ও অবগত যাবতীয় প্রয়ােজন মেটায় পরিবার।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।