ট্রুম্যান নীতি কি, ট্রুম্যান নীতি কাকে বলে, ট্রুম্যান নীতি কবে ঘোষিত হয়, হ্যারি ট্রুম্যান কে ছিলেন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

ট্রুম্যান নীতি কি, ট্রুম্যান নীতি কী

তুরস্ক ও গ্রিসকে সোভিয়েত প্রভাব থেকে মুক্ত করার উদ্দেশ্যে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১২ই মার্চ প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান মার্কিন কংগ্রেসে একটি বক্তৃতা দেন। এই বক্তৃতায় তিনি তুরস্ক, গ্রিস এবং বিশ্বের যে কোনো দেশকে সোভিয়েত আগ্রসনের বিরুদ্ধে সামরিক ও আর্থিক সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন। এই ঘোষণা টুম্যান নীতি (Truman Doctrine) নামে পরিচিত।

সেদিন তিনি বলেন :

  • আমি বিশ্বাস করি, সশস্ত্র সংখ্যালঘুদের দ্বারা অথবা বাইরের চাপের দ্বারা যেসব রাষ্ট্র পরাধীন হতে চলেছে সেই রাষ্ট্রকে সমর্থন করা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নৈতিক দায়িত্ব।
  • আমি বিশ্বাস করি, আমাদের অবশ্যই স্বাধীনতাকামী মুক্ত লোকদের তাদের নিজস্ব উপায়ে এবং তাদের নিজস্ব লক্ষ্যে কাজ করতে সহায়তা করতে হবে।
  • আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সহায়তা প্রাথমিকভাবে অর্থনৈতিক এবং আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে হওয়া উচিত যা অর্থনৈতিক স্থায়িত্ব এবং সুশৃঙ্খল রাজনৈতিক প্রক্রিয়াগুলোর জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।

ট্রুম্যান নীতিতে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোকে সহায়তার ঘোষণা দেয়, কারণ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া রুশ কমিউনিস্ট বিদ্রোহকে যুক্তরাষ্ট্র সমসাময়িক সবচেয়ে বড় হুমকি বলে মনে করত। পরে ট্রুম্যান নীতিই হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি ভিত্তি।

এই নীতির উপর ভিত্তি করেই ৪ এপ্রিল, ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘উত্তর আটলান্টিক নিরাপত্তা জোট’ বা ‘ন্যাটো’। মূলত সোভিয়েত ইউনিয়নকে রুখতেই এই সামরিক জোট গঠন করা হয়। ট্রুম্যান নীতি ঘোষণার মধ্য দিয়েই অবতারণা হয় স্নায়ুযুদ্ধের। এমনকি ঐতিহাসিকগণ কংগ্রেসে ট্রুম্যানের দেওয়া ভাষণের দিনকেই স্নায়ুযুদ্ধ শুরুর তারিখ হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন।

ট্রুম্যান নীতি কাকে বলে

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১২ মার্চ মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস. ট্রুম্যান মার্কিন সংসদের এক যৌথ অধিবেশনে বলেন—এখন থেকে পৃথিবীর যে-কোনো জায়গায় স্বাধীন জনগণ যদি সশস্ত্র সংখ্যালঘু বা বাইরের কোনো শক্তির আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টাকে প্রতিরোধ করতে চায় তাহলে আমেরিকা তাদের সাহায্য করবে। এই তত্ত্বই টুম্যান তত্ত্ব। বলাবাহুল্য, টুম্যান সশস্ত্র সংখ্যালঘু বলতে সাম্যবাদী বিদ্রোহীদের এবং বাইরের শক্তি বলতে সোভিয়েত রাশিয়াকেই বুঝিয়েছিলেন।

১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১২ মার্চ মার্কিন সংসদের এক যৌথ অধিবেশনে ট্রুম্যান বলেন যে, এখন থেকে পৃথিবীর যে কোনাে স্থানে স্বাধীন জনগণ যদি সশস্ত্র সংখ্যালঘু অথবা বাইরের শক্তির আধিপত্য বিস্তারের প্রচেষ্টাকে প্রতিরােধ করার চেষ্টা করে, সেক্ষেত্রে তাদের সাহায্য করাই হবে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নীতি। এই ঘােষণাই ট্রুম্যান নীতি নামে পরিচিত। বলা বাহুল্য, ট্রুম্যান সশস্ত্র সংখ্যালঘু বলতে সাম্যবাদী বিদ্রোহীদের এবং বাইরের শক্তি বলতে সােভিয়েত ইউনিয়নকে বুঝিয়েছিলেন।

পটভূমি

  • চার্চিলের ফালটন বক্তিতা: ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী চার্চিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্তর্গত মিসৌরি প্রদেশের ফালটন শহরে এক ভাষণে সাম্যবাদের প্রসার রােধ করার লক্ষ্যে ইঙ্গ-মার্কিন যৌথ প্রতিরােধ গড়ে তােলার আহ্বান জানান।
  • কেন্নানের বেষ্টনী নীতি: মার্কিন বিদেশনীতির উপদেষ্টা জর্জ এফ. কেন্নান সােভিয়েত সম্প্রসারণ প্রতিহত করার লক্ষ্যে এক প্রবন্ধ লিখে জানান, রুশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে অহেতুক কোনাে যুদ্ধে না গিয়ে আমেরিকার উচিত হবে যে অঞ্চলে সােভিয়েত প্রভাব রয়েছে তাকে সীমাবদ্ধ রাখা।

উদ্দেশ্য

  • রাজনৈতিক: যুদ্ধোত্তর পরিস্থিতিতে ইউরােপে ক্রমবর্ধমান সােভিয়েত বা সাম্যবাদী প্রভাব প্রতিহত করার জন্য প্রতিরােধমূলক রণকৌশল গ্রহণ।
  • অর্থনৈতিক: ট্রুম্যান নীতি ঘােষণার অন্যতম লক্ষ্য ছিল অর্থসাহায্যের নামে অন্যান্য দেশকে অস্ত্র ও শিল্পজাত দ্রব্য বিক্রি করে বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটানাে।

ট্রুম্যান নীতি কবে ঘোষিত হয়

মার্কিন রাষ্ট্রপতি হ্যারি ট্রুম্যান ১৯৪৭ খ্রিঃ ১২ মার্চ মার্কিন কংগ্রেসের এক বক্তৃতায় তুরস্ক ও গ্রিসসহ বিশ্বের যেকোনো দেশকে সোভিয়েত আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যে সামরিক ও আর্থিক সাহায্য দানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল , তা ট্রুম্যান নীতি নামে পরিচিত ।

ট্রুম্যান নীতির মূল উদ্দেশ্য কি, ট্রুম্যান নীতির উদ্দেশ্য কী ছিল

এই নীতি ঘোষণার পশ্চাতে আমেরিকার কয়েকটি উদ্দেশ্য ছিল। এগুলি হল :

(i) সাম্যবাদের প্রতিরোধ : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে সোভিয়েত রাশিয়ার সাম্যবাদকে প্রতিরোধ করার জন্য আমেরিকা প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে এই নীতি গ্রহণ করে।

(ii) অস্ত্র বিক্রি: এই নীতি ঘোষণার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল অর্থসাহায্যের নাম করে বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলিকে অস্ত্র বিক্রি করা।

(iii) বাণিজ্যের প্রসার: সবশেষে, মার্কিন শিল্পজাত পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা করে বাণিজ্যের প্রসার ঘটানো।

(iv) আর্থিক স্বয়ম্ভরতা বৃদ্ধিতে: ইউরােপের ১৬টি দেশ এই পরিকল্পনা গ্রহণ করে তিন বছরে ১২৫০ কোটি ডলার লাভ করে। এর ফলেই ব্রিটেন, ফ্রান্স, পশ্চিম জার্মানি আর্থিক স্বয়ম্ভরতা ফিরে পায়।

(v) পুঁজিবাদী প্রবণতা বৃদ্ধি: গণতান্ত্রিক দেশগুলি সােভিয়েত সাম্যবাদ ছেড়ে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী জোটের দিকে ঝুঁকে পড়ে।

(vi) কমিউনিস্ট দলের পরাজয়ে: ইউরোপের বিভিন্ন দেশে গণতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী দলগুলি নির্বাচনে কমিউনিস্ট ও সমাজতান্ত্রিক দলগুলিকে পরাজিত করতে সমর্থ হয়। ফলে সেসব দেশে ধনতান্ত্রিক ধাঁচের ‘গণতান্ত্রিক সরকার’ প্রতিষ্ঠিত হয়।

ট্রুম্যান নীতি কি ছিল

১৯৩৩ সাল থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্ট। ১৯৪৫ সালে রুজভেল্ট মারা যাবার পর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হন হ্যারি এস ট্রুম্যান।দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে বিশ্ব রাজনীতি নতুন দিকে মোড় নেয় এবং বিশ্ব রাজনীতির এই প্রেক্ষাপটে ১৯৪৭
সালে প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান আমেরিকার জন্য যে পররাষ্ট্রনীতি প্রনয়ন করেন সেটিই মূলত ট্রুম্যান ডকট্রিন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচাইতে ধনী ও শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসাবে আবির্ভূত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যদিও যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন একই সাথে অক্ষশক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, কিন্তু ১৯৪৫ সালের পরপরেই তাদের সম্পর্ক দ্রুত শীতল হয়ে যায় এবং ১৯৪৭ সালের
মধ্যেই দুই দেশের মধ্যে স্নায়ু-যুদ্ধ বা শীতল-যুদ্ধ (Cold War) শুরু হয়ে যায়। ১৯৪৭ সালের ১২ মার্চ প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যান যে পররাষ্ট্রনীতি ঘোষণা করেন তাকে ট্রুম্যান মতবাদ বা Truman Doctrine বলে। এই মতবাদের প্রধান প্রধান দিক হলো –

  • সমাজতন্ত্রের বিস্তার রোধ এবং এ লক্ষ্যে জোট গঠন সহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ।
  • কোনো সশস্ত্র বিপ্লবী গোষ্ঠী বা কোনো বহিরাগত শক্তি যদি কোনো দেশে বিপ্লব সংঘটিত করতে চায়, সেই ক্ষত্রে যুক্তরাষ্ট্র বিপ্লবীদের বিরুদ্ধের সরকারকে সমর্থন করবে। আর এই সমর্থনের ধরন হবে, আর্থিক ভাবে বিপ্লব বিরোধীদের সমর্থন করা এবং যুক্তরাষ্ট্র বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে সরাসরি তার সেনাবাহিনী পাঠাবে না। অব্যাহত সোভিয়েত হুমকি মোকাবেলা করার জন্য ১৯৪৮ সালের ১২ জুলাই যুক্তরাষ্ট্র গ্রীস এবং তুরস্ক সরকারকে সাহায্য করার জন্য আর্থিক মঞ্জুরী ঘোষণা করে।
  • পশ্চিম ইউরোপসহ দূরপ্রাচ্য,মধ্যপ্রাচ্য,দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ -পূর্ব এশিয়ায় মার্কিন প্রভাব বজায় রাখা।
  • ট্রুম্যান মতবাদ অনুসারে যেসমস্ত দেশ সোভিয়েত কমিউনিজমের হুমকির মুখে ছিল, সেসব দেশকে যুক্তরাষ্ট্র আর্থিক সাহায্য প্রদান করে। তাছাড়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তীসময়ে ইউরোপের বিধ্বস্ত অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ব্যাপক আর্থিক সাহায্য প্রদান করে।
  • যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রী জর্জ সি. মার্শাল ১৯৪৭ সালে ইউরোপকে আর্থিক সাহায্য করার প্রস্তাব করেন। এই পরিকল্পনাকে বলা হয় মার্শাল প্ল্যান। মার্শাল প্লানের অধীনে ১৯৪৮ থেকে ১৯৫১ সল পর্যন্ত ইউরোপকে যুক্তরাষ্ট্র বিপুল আর্থিক সাহায্য প্রদান করে। এতে ইউরোপের বিধ্বস্ত অর্থনীতি আবারো চাঙ্গ হয়ে উঠে।
  • বিভিন্ন সামরিক ও অর্থনৈতিক জোট গঠন করা।যেমন-১৯৪৯ সালে সোভিয়েত হুমকিকে মোকাবেলা করার জন্য ন্যাটো বা উত্তর অাটলান্টিক চুক্তি সংস্থা (North Atlantic Treaty Organization বা NATO) গঠিত হয়, যা এখনো বিদ্যমান।
  • পারমানবিক অস্ত্রের উৎপাদন ও মহাকাশ অভিযান। ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে মার্কিন নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা।
  • বিভিন্ন দেশের জাতীয় মুক্তি আন্দোলনকে সমর্থন দান।
  • অনুন্নত দেশগুলোকে অর্থনৈতিক সাহায্য দান।

হ্যারি ট্রুম্যান কে ছিলেন

হ্যারি এস. ট্রুম্যান (Harry S. Truman) (মে ৮, ১৮৮৪ – ডিসেম্বর ২৬, ১৯৭২) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩৩তম রাষ্ট্রপতি। ফ্রাঙ্কলিন ডি. রুজভেল্টের মৃত্যুর পর তিনি ভাইস প্রেসিডিন্ট নির্বাচিত হন।

তিনি ইউরোপীয় দেশগুলোর বিধ্বস্ত অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের জন্য মার্শাল ল বাস্তবায়িত করেন এবং ট্রুম্যান মতবাদ ও ন্যাটো প্রতিষ্ঠিত করেন।

ট্রুম্যান নীতি ও মার্শাল পরিকল্পনা, ট্রুম্যান নীতি ও মার্শাল পরিকল্পনা সংক্ষেপে আলোচনা কর, ট্রুম্যান নীতি ও মার্শাল পরিকল্পনা সংক্ষেপে আলোচনা করো

1947 সালে, রাষ্ট্রপতি হ্যারি এস. ট্রুম্যান অঙ্গীকার করেছিলেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে কোনো জাতিকে কমিউনিজম প্রতিরোধে সাহায্য করবে যাতে এর বিস্তার রোধ করা যায়। তার নিয়ন্ত্রণের নীতি ট্রুম্যান মতবাদ নামে পরিচিত।

ট্রুম্যান মতবাদ দেখিয়েছিল যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিচ্ছিন্নতাবাদে ফিরে আসবে না, বরং বিশ্ব বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা নেবে।

যুদ্ধের পরে পুনর্নির্মাণে সাহায্য করার জন্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মার্শাল প্ল্যানে ইউরোপকে $13 বিলিয়ন সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয়।

ট্রুম্যান মতবাদ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ব প্রবাহিত হয়েছিল এবং অনেক দেশে রাজনৈতিক উত্থান রাজত্ব করেছিল। জর্জ কেনানের লং টেলিগ্রামের জন্য ইতিমধ্যেই কমিউনিজম থেকে সতর্ক, 1940 এর দশকের শেষের দিকে ইউরোপ এবং এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশ কমিউনিস্ট সরকার গ্রহণ করলে মার্কিন সরকার হতাশ হয়ে পড়ে।

যখন ইউনাইটেড কিংডম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অবহিত করে যে এটি গ্রীস এবং তুরস্কে কমিউনিস্ট বিদ্রোহের সাথে লড়াই করার সামর্থ্য রাখে না, তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট হ্যারি এস ট্রুম্যান জারি করেন যা ট্রুম্যান মতবাদ নামে পরিচিত হবে: একটি প্রতিশ্রুতি যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যা যা প্রয়োজন তা করবে। অর্থনৈতিক এবং সামরিক উভয়ভাবেই বিশ্বজুড়ে কমিউনিজমের বিস্তার রোধ করতে।

এই পদক্ষেপের মাধ্যমে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইঙ্গিত দেয় যে বিশ্ব মঞ্চে তার ভূমিকা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে শেষ হবে না, আমেরিকার দেড় শতাব্দীর বিচ্ছিন্নতাবাদী পররাষ্ট্রনীতির অবসান ঘটিয়েছে।

ট্রুম্যানের প্রেসিডেন্সির সময়, ট্রুম্যান মতবাদের ফলে এশিয়ায় আরেকটি সংঘাত দেখা দেবে, এবার কোরিয়ায়, কারণ মার্কিন সরকার একটি কমিউনিস্ট সরকারের অধীনে কোরিয়ার একীভূতকরণ রোধ করার চেষ্টা করেছিল। ট্রুম্যানের নীতি 1980 এর দশকে আমেরিকান হস্তক্ষেপ চালিয়ে যেতে থাকবে।

মার্শাল প্ল্যান

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি ছিল ইউরোপের পুনর্গঠন। যুদ্ধটি ধ্বংসের একটি ঝাঁক ফেলে দেয় যা অবকাঠামোকে বিকল করে দেয় এবং 1946-1947 সালের শীতকালে ব্যাপক খাদ্য ঘাটতির দিকে পরিচালিত করে।

মার্কিন সরকার আশঙ্কা করেছিল যে একটি ক্ষুধার্ত, বিধ্বস্ত ইউরোপ কমিউনিজমে পরিণত হতে পারে (যেমন চীন 1949 সালে করবে)। ইউরোপীয় অর্থনীতিকে স্থিতিশীল করার জন্য, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জর্জ সি. মার্শাল ইউরোপকে $13 বিলিয়ন অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদানের পরিকল্পনার প্রস্তাব করেন।

মার্শাল প্ল্যান ব্যাপকভাবে সফল প্রমাণিত হয়েছিল, যা সাহায্য গ্রহণকারী ইউরোপীয় দেশগুলোকে পুনর্বাসন করতে সাহায্য করেছিল। এটি আমেরিকান অর্থনীতিতে একটি উত্সাহও সরবরাহ করেছিল, যেহেতু মার্শাল প্ল্যান তহবিল আমেরিকান পণ্য কেনার জন্য ব্যবহৃত হয়েছিল।

ট্রুম্যান নীতির গুরুত্ব

(i) তুরস্কে সাম্যবাদের প্রতিরোধ: রাশিয়া ও তার সাম্যবাদী মতাদর্শ থেকে তুরস্ককে প্রভাবমুক্ত করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রচুর অর্থসাহায্য করে। তুরস্কের স্বাধীনতা অটুট থাকে ।

(ii) গ্রিসে কমিউনিস্টদের দমন: গ্রিসের রাজতন্ত্রী সরকারকে কমিউনিস্টদের দমন করার জন্য আমেরিকা 400 মিলিয়ন ডলার সাহায্য করে। মার্কিন সাহায্যে বলীয়ান হয়ে গ্রিস কমিউনিস্টদের দমন করে।

(iii) ইরানের সঙ্গে চুক্তি: সোভিয়েত প্রভাবমুক্ত করার জন্য ইরানকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অর্থসাহায্য করে এবং ইরানের সঙ্গে একটি চুক্তিও স্বাক্ষর করে। আসলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্য ছিল ইরানের তেলের খনিগুলিকে দখল করা।

(iv) ঠান্ডা লড়াই-এর সূচনা: ট্রুম্যান নীতিকে কার্যকর করতে গিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিমি দেশগুলিকে সঙ্গে নিয়ে সরাসরি সোভিয়েত রাশিয়ার বিরোধিতা করে। ফলে মার্কিন পুঁজিবাদের সঙ্গে সোভিয়েত রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক আদর্শের সংঘাত ঘটে এবং ঠান্ডা লড়াইয়ের সূত্রপাত হয়।

আরো অন্যান্য সরকারি স্কিম সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | ট্রুম্যান নীতি

Q1. ট্রুম্যান নীতি কি বিষয়ক ঘোষণা

Ans – ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১২ মার্চ মার্কিন সংসদের এক যৌথ অধিবেশনে ট্রুম্যান বলেন যে, এখন থেকে পৃথিবীর যে কোনাে স্থানে স্বাধীন জনগণ যদি সশস্ত্র সংখ্যালঘু অথবা বাইরের শক্তির আধিপত্য বিস্তারের প্রচেষ্টাকে প্রতিরােধ করার চেষ্টা করে, সেক্ষেত্রে তাদের সাহায্য করাই হবে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নীতি। এই ঘােষণাই ট্রুম্যান নীতি নামে পরিচিত। বলা বাহুল্য, ট্রুম্যান সশস্ত্র সংখ্যালঘু বলতে সাম্যবাদী বিদ্রোহীদের এবং বাইরের শক্তি বলতে সােভিয়েত ইউনিয়নকে বুঝিয়েছিলেন।

Q2. ট্রুম্যান মতবাদ কি

Ans – ট্রুম্যান মতবাদের উচ্চারণ রিপাবলিকান এবং ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে মার্কিন দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা এবং বৈদেশিক নীতির ঐকমত্যের সূচনাকে চিহ্নিত করেছে যা নিয়ন্ত্রণ এবং প্রতিরোধের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে যা ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় এবং পরে দুর্বল হয়ে পড়ে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার পরেও টিকে থাকে।

Q3. ট্রুম্যান ডকট্রিন কি

Ans – মনরো নীতির পরিবর্তে উদার সামরিক সক্রিয়তা এবং সোভিয়েত মদদে বিশ্বব্যাপী কমিউনিস্ট বিদ্রোহের লাগাম টেনে ধরতে হ্যারি ট্রুম্যান যে নীতির ঘোষণা দেন ঐতিহাসিকভাবে সেটাই ট্রুম্যান ডকট্রিন বা ট্রুম্যান নীতি নামে পরিচিত।

Q4. ট্রুম্যান ডকট্রিন ঘোষিত হয়

Ans – হ্যারি ট্রুম্যান ১৯৪৮ সালের ৪ জুলাই গ্রিস ও তুরস্কে কমিউনিস্ট বিদ্রোহকে নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রতিশ্রুতি দিলে এ নীতি আরও বিকশিত হয়। ট্রুম্যান বলেন, যদি গ্রীস এবং তুরস্ককে সহায়তা না দেওয়া হয় তাহলে পুরো অঞ্চল মারাত্মক পরিণতি নিয়ে কমিউনিজমের দিকে ঝুঁকে পড়বে।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।