জগদীশ চন্দ্র বসু বিজ্ঞানী রচনা, স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু জীবনী

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

প্রশ্নপত্র

স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু জীবনী

জগদীশ চন্দ্র বসু সাধারণ মানুষের মাঝে পরিচিত “গাছের প্রাণ আছে” এই আবিষ্কারের মাধ্যমে। এছাড়াও বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় তার নিঃশঙ্ক পদচারণা আমাদের অবাক করে দেয়। একাধারে জগদীশ চন্দ্র বসু ছিলেন পদার্থবিদ এবং উদ্ভিদ বিজ্ঞানী। আমরা সাধারণত ভেবে থাকি, এই দুটি বিষয়ের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য আছে। জগদীশ চন্দ্র বসু কিন্তু প্রমাণ করেছিলেন বিজ্ঞানের সব বিষয়গুলি একে অন্যের সঙ্গে গভীরভাবে সংযুক্ত।

বাঙালি পদার্থবিদ, জীববিজ্ঞানী এবং কল্পবিজ্ঞান রচয়িতা আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু এর একটি সংক্ষিপ্ত জীবনী । জগদীশ চন্দ্র বসু এর জীবনী – Jagdish Chandra Bose Biography in Bengali বা জগদীশ চন্দ্র বসু এর আত্মজীবনী বা (Jagdish Chandra Bose Jivani Bangla. A short biography of Jagdish Chandra Bose. Jagdish Chandra Bose Birth, Place, Life Story, Life History, Biography in Bengali) জগদীশ চন্দ্র বসু এর জীবন রচনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

জগদীশ চন্দ্র বসু

জগদীশ চন্দ্র বসু (Jagdish Chandra Bose) ছিলেন একজন বাঙালি পদার্থবিদ, জীববিজ্ঞানী এবং কল্পবিজ্ঞান রচয়িতা ছিলেন। ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যবহারিক এবং গবেষণাধর্মী বিজ্ঞানের সূচনা হয় জগদীশ চন্দ্র বসুর (Jagdish Chandra Bose) হাত ধরে হয় বলে মনে করা হয়। ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার্স জগদীশ চন্দ্র বসুকে (Jagdish Chandra Bose) রেডিও বিজ্ঞানের একজন জনক হিসেবে অভিহিত করে।

নাম (Name)জগদীশ চন্দ্র বসু (Jagdish Chandra Bose)
জন্ম (Birthday)৩০ নভেম্বর ১৮৫৮ (30th November 1858)
জন্মস্থান (Birthplace)বিক্রমপুর
অভিভাবক (Parents)/পিতামাতাভগবান চন্দ্র বসু ও বামাসুন্দরী দেবি
জাতীয়তাব্রিটিশ ভারতীয়
দাম্পত্য সঙ্গী (Spouse)অবলা বসু
কর্মক্ষেত্রপদার্থবিজ্ঞান, জৈবপদার্থবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, উদ্ভিদবিজ্ঞান, প্রত্নতত্ত্ব, বাংলা সাহিত্য, বাংলা কল্পবিজ্ঞান
প্রতিষ্ঠানকলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়
শিক্ষায়তনিক উপদ্রেসট্রাবৃন্দজন উইলিয়াম স্ট্রাট 
পরিচিতির কারণমিলিমিটার, তরঙ্গবেতার, ক্রেসকোগ্রাফ, উদ্ভিদবিজ্ঞান
উল্লেখযোগ্য পুরস্কারসিআইই (১৯০৩), সিএসএই (১৯১১), নাইট ব্যাচেলর (১৯১৭)
মৃত্যু (Death)২৩ নভেম্বর ১৯৩৭ (13th November 1937)
স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু জীবনী

জন্ম ও পরিবার

জগদীশ চন্দ্র বসু ৩০ নভেম্বর ১৮৫৮ ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্গত বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি অঞ্চলের বিক্রমপুরে (বর্তমানে মুন্সিগঞ্জ, বাংলাদেশ) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।

জগদীশ চন্দ্র বসুর পিতা ভগবান চন্দ্র ময়মনসিংহ জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বে ছিলেন, কিন্তু পরবর্তীকালে তিনি বর্ধমান ও অন্যান্য কিছু অঞ্চলের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের ও সহকারী কমিশনার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তার মাতা নাম ছিল বামা সুন্দরী দেবী তিনি এখন গৃহনি ছিলেন।

জগদীশ চন্দ্র বসুর প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা

জগদীশ চন্দ্র বসুর বাল্যকাল কেটেছে ফরিদপুর গ্রামে স্বাভাবিকভাবে সেই কারণে তিনি তার প্রাথমিক শিক্ষা সেই গ্রামের একটি বিদ্যালয় থেকে শুরু করে।

জগদীশ চন্দ্র বসু বাবা ভগবান চন্দ্র তার ছেলেকে সহজেই স্থানীয় ইংলিশ স্কুলে পাঠাতে পারতেন কিন্তু তিনি চেয়েছিলেন তার ছেলে ইংরেজি ভাষা শেখার আগে তার মাতৃভাষা শিখুক এবং তার সংস্কৃতি সম্পর্কে জানুক। তিনি মনে করতেন জগদীশ যদি নিজের মাতৃভাষা ও সংস্কৃতি সম্পর্কে সচেতন হয় তাহলে বাল্য জগদীশের মনে স্বদেশ প্রেমের ভাবনা জাগ্রত হবে।

তার পিতার ইচ্ছামতন কয়েক বছর সে তার গ্রামে নিজের মাতৃভাষায় পড়াশোনা করার পরে, জগদীশ চন্দ্র বোস ১৮৬৯ সালে তাকে কলকাতায় পাঠানো হয়েছিল। যেখানে হাইয়ের স্কুলে তিন মাস কাটিয়ে তিনি সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ভর্তি হন, এটি একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং কলেজ উভয়ই ছিল।

১৮৭৯ সালে জগদীশ চন্দ্র বোস কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে B.se পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পরে বোস মেডিসিন পড়ার জন্য লন্ডনে চলে যান কিন্তু অসুস্থ স্বাস্থ্যের কারণে তিনি ১৮৮২ সালের জানুয়ারিতে লন্ডন ত্যাগ করেন এবং তার ভগ্নিপতি আনন্দমোহন বসুর কথা মতন জগদীশ চন্দ্র প্রকৃতিবিজ্ঞান সম্বন্ধে শিক্ষালাভের উদ্দেশ্যে কেমব্রিজে আসেন। সেখানে তিনি ক্রিস্ট কলেজে ভর্তি হন এবং প্রাকৃতিক বিজ্ঞান অধ্যয়ন শুরু করেন। ১৮৮৪ সালে পড়াশোনা সম্পন্ন করে দেশে ফিরে আসে। পরবর্তীকালে জগদীশ চন্দ্র বসু ১৮৯৬ সালে আবার ইংল্যান্ডের লন্ডনে যান এবং সেখানকার বিখ্যাত লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেন।

জগদীশ চন্দ্র বসুর অধ্যাপনা জীবন

১৮৮৪ সালে জগদীশ চন্দ্র বসু প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের দ্বিতীয় শ্রেণিতে স্নাতক এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞান স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ভারতে ফিরে এসে তিনি ১৮৮৫ সালে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে যোগদান করেন।

তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসাবে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রথম ভারতীয়। যদিও তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল তবে তাকে ওই পদে নির্ধারিত অর্ধেক বেতন দেওয়া হয়েছিল। জগদীশ চন্দ্র বসু এই বৈষম্যের অনেক বিরোধিতা করেছিলেন এবং সেই পদে কর্মরত একজন ইউরোপীয়কে যে বেতন দেওয়া হচ্ছে সেই তিনি সমান ন্যায্য বেতন দাবি করেছিলেন। প্রথম দিকে তার প্রতিবাদের বিষয়টি কলেজ কর্তৃপক্ষ দিক থেকে বিবেচনা করা হয়নি। সেই কারণে স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু বেতন নিতে অস্বীকার করেছিলেন এবং তিন বছর বিনা বেতনে তার শিক্ষকতার কাজ চালিয়ে যান। শেষ পর্যন্ত অফিসাররা জগদীশ চন্দ্র বসুর যোগ্যতা এবং চরিত্রটি পুরোপুরি উপলব্ধি করে এবং তার নিয়োগকে পূর্ববর্তী স্থায়ীভাবে স্থায়ী করে দেন। গত তিন বছর ধরে তার প্রাপ্ত মোট বেতন দেওয়া হয়েছিল।

এরপর তহবিল এবং বৈজ্ঞানিক সরঞ্জামের অভাব সত্ত্বেও জগদীশ চন্দ্র বসু প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনা ও গবেষণা কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। শিক্ষক হিসাবে বোস তার ছাত্রদের মধ্যে খুব জনপ্রিয় ছিলেন। প্রেসিডেন্সি কলেজের তার অনেক শিক্ষার্থী প্রচুর খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তাদের মধ্যে বিশিষ্ট ছিলেন সত্যেন্দ্র নাথ বোস, মেঘনাদ সাহা ও শিশির কুমার মিত্র।

জগদীশ চন্দ্র বসুর কর্মজীবন

 জগদীশচন্দ্র বসু পড়াশুনা শেষ করে কলকাতায় ফিরে আসেন । এবং সেখানকার বিখ্যাত প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থ বিদ্যায় অধ্যাপনার চাকরি লাভ করেন ১৮৮৫ সালে । তিনি কলেজে পাঠ্যবিষয়কে বাস্তব পরীক্ষার সাহায্যে এমনভাবে প্রাণবন্ত করতে পারতেন যে , ছাত্ররা সৰচমকৃত ও মুগ্ধ হয়ে যেতাে । শুধু পড়ানোের দক্ষতায় নয় , তার ন্যায়নিষ্ঠা ও দৃঢ়তা শত্রুকেও বশ মানাতাে ।

 ৩৫ বছর বয়সে তার জন্মদিনের এক উৎসবে তিনি নিজেকে পুরােপুরি বিজ্ঞানের সাধনায় নিয়ােজিত রাখার শপথ নিলেন । জগদীশ চন্দ্রের জীবনে এক অপূরণীয় ক্ষতি ঘটে গিয়েছিল । পাঁচ বছরের মধ্যে তিনি হারিয়েছেন তার পিতা – মাতাকে ।

 ১৮৯৫ সালে জগদীশচন্দ্র বসুর বিদ্যুৎ বিষয়ক মৌলিক গবেষণার বিষয় লন্ডনের রয়াল সোসাইটির জার্নালে প্রকাশিত হয় ।

জগদীশ চন্দ্র বসুর উপাধি

 ১৮৯৬ সালে তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি . এস . সি . উপাধি লাভ করেন ।

 তিনি গাছেরও প্রাণ আছে এই তত্ব প্রমাণ করেন । এই তত্বকে প্রতিষ্ঠিত করতে তিনি নানা ধরনের সূক্ষ্ম যন্ত্রপাতির উদ্ভব ঘটিয়েছিলেন পরীক্ষা – নিরীক্ষার প্রয়ােজনে । 

জগদীশ চন্দ্র বসুর মৃত্যু

১৯১৫ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অবসর নেওয়ার পরেও তিনি গবেষণা কাজ চালিয়ে যান এবং ধীরে ধীরে তার পরীক্ষাগারটি নিজের বাড়িতে স্থানান্তরিত করেন। ১৯১৭ সালের ৩০ নভেম্বর বোস ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, জগদীশ চন্দ্র বসু তার জীবনের শেষ অবধি পরিচালক হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন।

মহান বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু, যিনি বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিলেন, তিনি ১৯৩৭ সালের ২৩শে নভেম্বর ৭৮ বছর বয়সে ভারতের ঝাড়খন্ডের গিরিডিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ পরলোক গমন করেন।

বাংলা বিজ্ঞান চর্চার ইতিহাসে জগদীশ চন্দ্র বসুর অবদান, জগদীশ চন্দ্র বসু আবিষ্কার

বাংলায় বিজ্ঞান চর্চায় জগদীশচন্দ্র বসুর অবদান সত্যিই অনস্বীকার্য তিনি ১৮৯৪ সাল থেকে তিনি শিক্ষকতার সাথে সাথে তিনি নিজেকে গবেষণা এবং পরীক্ষাগুলিতে সম্পূর্ণরূপে নিবেদিত করেছিলেন।

তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজের একটি ছোট ঘেরটিকে একটি পরীক্ষাগারে রূপান্তরিত করেছিলেন। এখানে তিনি অপসারণ, বিচ্ছিন্নতা এবং মেরুকরণ সম্পর্কিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছিলেন। তাকে ‘ওয়্যারলেস টেলিগ্রাফি’ আবিষ্কারক বলা ভুল হবে না কারণ মার্কোনি আবিষ্কারের পেটেন্ট আবিষ্কারের মাত্র এক বছর আগে জগদীশ চন্দ্র বসু সবার সামনে তার আবিষ্কার ও গবেষণা প্রকাশ করেছিলেন।

তিনি একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি ডিভাইস তৈরি করে যা রেডিও তরঙ্গকে জ্ঞান দেয় তৈরি করেছিলেন। তিনি দেখতে পেল যে দীর্ঘ সময় ধরে অবিচ্ছিন্ন ব্যবহারের সাথে সেই ডিভাইসটির সংবেদনশীলতা হ্রাস পেয়েছে এবং তার সংবেদনশীলতা ব্যবহারের স্বল্প বিরতির পরে ফিরে এসেছিল। এখান থেকে সিদ্ধান্তে পৌঁছে যে ধাতবগুলিরও আবেগ এবং স্মৃতি থাকে।

বোস সর্বপ্রথম এমন একটি যন্ত্র ডিজাইন করেছিলেন জগদীশের আঠারো মাসের সেই গবেষণার মধ্যে মুখ্য ছিল অতিক্ষুদ্র তরঙ্গ নিয়ে গবেষণা।

মাইক্রোওয়েভ তরঙ্গের আবিষ্কার

১৮৯৫ সালে জগদীশচন্দ্র বসু অতিক্ষুদ্র তরঙ্গ সন্ধান এবং কোন তার ছাড়া এক স্থান থেকে অন্য স্থানে তা প্রেরণে সফলতা পান। ১৮৮৭ সালে বিজ্ঞনী হের্‌ৎস প্রত্যক্ষভাবে বৈদ্যুতিক তরঙ্গের অস্তিত্ব প্রমাণ করেন। এনিয়ে আরও গবেষণা করার জন্য তিনি চেষ্টা করছিলেন যদিও শেষ করার আগেই তিনি মারা যান। জগদীশচন্দ্র তার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে সর্বপ্রথম প্রায় ৫ মিলিমিটার তরঙ্গ দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট তরঙ্গ তৈরি করেন। এ ধরনের তরঙ্গকেই বলা হয়ে অতি ক্ষুদ্র তরঙ্গ বা মাইক্রোওয়েভ। আধুনিক রাডার, টেলিভিশন এবং মহাকাশ যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই তরঙ্গের ভূমিকা অনস্বীকার্য। মূলত এর মাধ্যমেই বর্তমান বিশ্বের অধিকাংশ তথ্যের আদান প্রদান ঘটে থাকে।

জগদীশচন্দ্র বসুর বিখ্যাত আবিষ্কার – “গাছেরও প্রাণ আছে”

ভারতের অন্যতম মহান বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু উদ্ভিদ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করেছিলেন। আজ তার কারণে আমরা গাছগুলি এবং তাদের কার্যক্রমগুলি খুব ভালভাবে জানতে পেরেছি।

১৯০০ সালের ১০ ​​মে যখন লন্ডনের রয়্যাল সোসাইটির কেন্দ্রীয় হলটি বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের দ্বারা জমাট ভরা ছিল সেখানে জগদীশ চন্দ্র বসু একটি পরীক্ষা প্রদর্শন করে দেখান যে উদ্ভিদের অন্যান্য জীবজন্তু এবং মানুষের মতো প্রাণ ও অনুভূতি রয়েছে।

উদ্ভিতের যে প্রাণ আছে তা প্রমান করার জন্য জগদীশ চন্দ্র বসু এমন একটি উদ্ভিদ বেছে নিয়েছিলেন যার ব্রোমাইড দ্রবণ ধারণ করে একটি জারে তার কান্ড পর্যন্ত সাবধানে ডুবিয়ে রাখেন। তিনি উদ্ভিদের সাথে একটি উপকরণ প্লাগ করে যা একটি পর্দায় আলোকিত স্পটটি দেখতে সাহায্য করে সেই স্পটটি বীট হিসাবে উদ্ভিদের গতিশীলতা দেখায়।

এইবার ব্রোমাইড দ্রবণ সেই উদ্ভিদটি ডুবিয়ে রাখা হয় কিছু ক্ষণ এর মধ্যে যখন সেই গাছটি ব্রোমাইড দ্রবণ শোষণ করে তার কিছু ক্ষণের মধ্যে পর্দায় প্রদর্শিত স্পটটি দুলের মতোই চলাচল শুরু করে। কয়েক মিনিটের মধ্যেই স্পটটি হিংস্র পদ্ধতিতে স্পন্দিত হয়েছিল এবং অবশেষে হঠাৎ স্টপ এ এসেছিল।

অনুষ্ঠানটি অনেক প্রশংসা ও করতালি দিয়ে স্বাগত জানানো হয়েছিল তবে কিছু পদার্থবিজ্ঞানী সন্তুষ্ট ছিলেন না এবং কিন্তু জগদীশ চন্দ্র বসু “উদ্ভিতের প্রাণ আছে” বিষয়টির উপর খুব আত্মবিশ্বাসী ছিলেন পরবর্তীকালে তিনি ভালমতন ব্যাপারটি প্রমান করা জন্য কাজ চালিয়ে যেতে থাকে।

ক্রেস্কোগ্রাফ আবিষ্কার

বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু গাছের বৃদ্ধি পরিমাপের জন্য ক্রেস্কোগ্রাফ যন্ত্রটিও আবিষ্কার করেছিলেন। তিনি এই ডিভাইসের সাহায্যে গাছের অগ্রভাগের বৃদ্ধি পরিমাপ করে দেখান এছাড়া একটি গাছ বাহারি উদ্দিপকের প্রভাবে ( যেমন – তাপমাত্রা, রাসায়নিক পদার্থ, গ্যাস ও তড়িৎ প্রবাহের) উপস্থিতিতে কিরূপ আচরণ করে সেই পরীক্ষার ব্যাখ্যা ও প্রদর্শন করেন।

আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসুর সম্মান ও পুরস্কার

বিজ্ঞানে অতুলনীয় অবদানের কারণে তাকে একদিক পুরুস্কার ও সন্মান দিয়ে ভূষিত করা হয়, স্যার জগদীশ চন্দ্র বসুর উদ্দেশে মহান বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন বলেছিলেন – “জগদীশচন্দ্র যেসব অমূল্য তথ্য পৃথিবীকে উপহার দিয়েছেন তার যে কোনটির জন্য বিজয়স্তম্ভ স্থাপন করা উচিত।”

  • ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার্স তাকে রেডিও বিজ্ঞানের একজন জনক হিসেবে অভিহিত করে।
  • ১৮৮৬ সালে জগদীশ চন্দ্র বসু লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিজ্ঞানে ডক্টরেট ডিগ্রি লাভ করেছিলেন।
  • ১৯০৩ সালে জগদীশ চন্দ্র বসু ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক কম্পায়েন্ট অফ দ্য অর্ডার অফ ইন্ডিয়ান এম্পায়ার ভূষিত হয়েছিল।
  • বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু ১৯১৭ সালে ব্রিটিশ সরকারের তরফ থেকে নাইট উপাধিতে ভূষিত হয়েছিল।
  • ১৯২০ সালে জগদীশ চন্দ্র বসু রয়্যাল সোসাইটির ফেলো নির্বাচিত হন।
  • আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু ১৯২৮ সালে তিনি ভিয়েনা একাডেমি অফ সাইন্স-এর সদস্য হন।

জগদীশ চন্দ্র বসু বিজ্ঞানী রচনা

ভূমিকা

আধুনিক বিজ্ঞান যাঁদের অবদানে এমন উৎকর্ষের শীর্ষে আরোহণ করেছে, তাঁদের মধ্যে বাঙালি বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসুর নাম সর্বজনস্বীকৃত। উপমহাদেশে তিনি ছিলেন প্রথম আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া বিজ্ঞানী। বর্তমান বিশ্বে যোগাযোগ প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতির পিছনে জগদীশ চন্দ্র বসুর অবদান ছিল প্রারম্ভিক । বিনা তারে শব্দ প্রেরণের প্রযুক্তি তিনিই প্রথম বিশ্বকে উপহার দিয়েছেন। এছাড়া উদ্ভিদের প্রাণ আছে, এই ধারণা আবিষ্কার করে তিনি পৃথিবীর পরিবেশবিদ্যাতেও ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছেন। তিনি একাধারে পদার্থবিজ্ঞানী এবং জীববিজ্ঞানী হিসেবে বাংলাদেশের বিজ্ঞানচর্চার অহংকার ।

জন্ম ও বাল্যকাল

জগদীশ চন্দ্র বসু ১৮৫৮ সালের ৩০শে নভেম্বর ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। জগদীশ চন্দ্র বসুর পূর্বপুরুষ বাস করতেন মুন্সীগঞ্জ জেলার রাড়িখাল গ্রামে। তাঁর বাবার নাম ভগবানচন্দ্র বসু। তিনি পেশায় ছিলেন একজন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। জগদীশের লেখাপড়া শুরু হয় ফরিদপুরের গ্রামীণ বিদ্যালয়ে। পরে কলকাতার হেয়ার স্কুলে ও সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল ও কলেজে পড়াশোনা করেন। ১৮৮০ সালে বিএ পাশ করার পর তিনি ইংল্যান্ডে যান। এরপর ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞানে অনার্সসহ বিএ এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৮৮৫ সালে মাতৃভূমিতে ফিরে এসে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন।

অধ্যাপনা জীবন

জগদীশ চন্দ্র বসু কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপনা করেন। তবে প্রেসিডেন্সি কলেজে তাঁর অধ্যাপনা জীবন খুব সুখের ছিল না। নানা ধরনের প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে তিনি অধ্যাপনা ও গবেষণার কাজ চালিয়ে গেছেন। যেমন- এখানে ব্রিটিশ ও দেশীয় অধ্যাপকদের মধ্যে বেতনের বৈষম্য ছিল চোখে পড়ার মতো। এর প্রতিবাদে তিনি এক নাগাড়ে তিন বছর পর্যন্ত বেতন গ্রহণ করেননি। এখানে গবেষণার করার মতো পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধাও ছিল না। ছোটো একটি কক্ষকে গবেষণাগার বানিয়ে অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি তাঁর গবেষণার কাজ অব্যাহত রেখেছেন।

পদার্থবিদ্যায় অবদান

পদার্থবিদ্যায় গবেষণায় জগদীশ চন্দ্র বসুর মৌলিক আবিষ্কার হলো, বিনা তারে রেডিও সংকেত পাঠানোর যন্ত্র তৈরি করা। সে সময়ে তারের মাধ্যমে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় শব্দ পাঠানো যেত। ১৮৯৫ সালে তিনি প্রথমবারের মতো বিনা তারে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় শব্দ পাঠাতে সক্ষম হন। মাইক্রোওয়েভ গবেষণার ক্ষেত্রেও তাঁর অবদান আছে। তিনিই প্রথম বিদ্যুৎ-চৌম্বকীয় তরঙ্গ-দৈর্ঘ্যকে মিলিমিটার পর্যায়ে নামিয়ে আনতে সক্ষম হন। তিনি রেডিও সংকেতকে শনাক্তকরণের জন্য অর্ধপরিবাহী জংশন ব্যবহার করেন। এই আবিষ্কার পেটেন্ট করে বাণিজ্যিক সুবিধা নেওয়ার বদৌলতে তিনি সেটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেন। এসব অবদানের কারণে প্রযুক্তি-পেশাজীবীদের আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ‘ইনস্টিটিউট অব ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং‘ তাঁকে রেডিও বিজ্ঞানের জনক হিসেবে অভিহিত করেছে ।

জীববিজ্ঞানে অবদান

উদ্ভিদবিদ্যাতেও জগদীশ চন্দ্র বসুর অবদান অনন্য। তিনি উদ্ভিদ শারীরতত্ত্বের উপর বহু গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেন। উদ্ভিদের সূক্ষ্ম নড়াচড়া শনাক্ত করা এবং বিভিন্ন উদ্দীপকে উদ্ভিদের সাড়া দেওয়া ইত্যাদি ছিল তাঁর গবেষণার বিষয়। আবিষ্কার করেন উদ্ভিদের বৃদ্ধি রেকর্ড করার জন্য ক্রেস্কোগ্রাফ নামক যন্ত্র। উদ্দীপকের প্রতি উদ্ভিদের সাড়া দেওয়ার প্রকৃতি যে বৈদ্যুতিক, সেটিও তিনি প্রমাণ করেন। 

বসু বিজ্ঞান মন্দির প্রতিষ্ঠা এবং অন্যান্য কৃতিত্ব

১৯১৭ সালের ৩০শে নভেম্বর উদ্ভিদ শারীরতত্ত্ব নিয়ে গবেষণার জন্য তিনি কলকাতায় ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’ প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর জীবনের উপার্জিত সমস্ত অর্থ তিনি এই গবেষণাগার নির্মাণ করতে ও এর জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ কিনতে ব্যয় করেন। বাংলা ভাষার একজন বিখ্যাত লেখক হিসেবেও জগদীশ চন্দ্র বসুর খ্যাতি রয়েছে। তাঁর একটি বিখ্যাত বইয়ের নাম ‘অব্যক্ত’।

উপসংহার

১৯৩৭ সালের ২৩শে নভেম্বর জগদীশ চন্দ্র বসু মৃত্যুবরণ করেন। পরাধীন দেশে বাস করেও আজীবন তিনি যে মৌলিক সাধনা করেছেন, তা এখন সমগ্র বিশ্বের অহংকার। আর্থিকভাবে তিনি যথেষ্ট সচ্ছল ছিলেন না; তা সত্ত্বেও তিনি নিরবচ্ছিন্নভাবে গবেষণার কাজ চালিয়ে গেছেন। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ বিজ্ঞানীদের কাছে তিনি অনুপ্রেরণার উৎস।

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | জগদীশ চন্দ্র বসু প্রশ্ন উত্তর

Q1. জগদীশ চন্দ্র বসু কোথায় জন্মগ্রহণ করেন

Ans – বিক্রমপুর জেলার রাঢ়িখাল গ্রামে ।

Q2. জগদীশ চন্দ্র বসু-এর শিক্ষাগত যোগ্যতা

Ans – জগদীশ চন্দ্র বোস কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে B.sc পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়।

Q3. জগদীশ চন্দ্র বসুর জন্ম কবে হয় ?

Ans – ৩০ নভেম্বর ১৮৫৮ সালে ।

Q4. জগদীশ চন্দ্র বসুর উল্লেখযোগ্য পুরস্কার কী কী ?

Ans – সিআইই (১৯০৩), সিএসএই (১৯১১), নাইট ব্যাচেলর (১৯১৭)।

Q5. জগদীশ চন্দ্র বসু কী জন্য স্যার উপাধি পান ?

Ans – বৃটিশ সরকার বিজ্ঞানের অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপতাকে স্যার উপাধিতে ভূষিত করে ।

Q6. জগদীশ চন্দ্র বসুর আবিষ্কার কী ?

Ans – মিলিমিটার তরঙ্গ, বেতার, ক্রেসকোগ্রাফ, উদ্ভিদবিজ্ঞান ।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।