মাইকেল মধুসূদন দত্ত

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

মধুসূদন দত্ত, মাইকেল মধুসূদন দত্তের জীবনী

মধুসূদনের জন্মস্থান

১৮২৪-১৮৭৩) মহাকবি, নাট্যকার, বাংলাভাষার সনেট প্রবর্তক, অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রবর্তক। ১৮২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি যশোর জেলার কপোতাক্ষ নদের তীরে সাগরদাঁড়ি গ্রামে, এক জমিদার বংশে তাঁর জন্ম। পিতা রাজনারায়ণ দত্ত ছিলেন কলকাতার একজন প্রতিষ্ঠিত উকিল। মা জাহ্নবী দেবীর তত্ত্বাবধানে মধুসূদনের শিক্ষারম্ভ হয়।

মধুসূদনের শিক্ষাজীবন

প্রথমে তিনি সাগরদাঁড়ির পাঠশালায় পড়াশোনা করেন। পরে সাত বছর বয়সে তিনি কলকাতা যান এবং খিদিরপুর স্কুলে দুবছর পড়ার পর ১৮৩৩ সালে হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। সেখানে তিনি বাংলা, সংস্কৃত ও ফারসি ভাষা শেখেন।

মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত, মধুসূদন দত্ত স্মরণীয় কেন

হিন্দু কলেজে অধ্যয়নকালেই মধুসূদনের প্রতিভার বিকাশ ঘটে। ১৮৩৪ সালে তিনি কলেজের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ইংরেজি ‘নাট্য-বিষয়ক প্রস্তাব’ আবৃত্তি করে উপস্থিত সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এখানে তাঁর সহপাঠী ছিলেন ভূদেব মুখোপাধ্যায়, রাজেন্দ্রলাল মিত্র, রাজনারায়ণ বসু, গৌরদাস বসাক প্রমুখ, যাঁরা পরবর্তী জীবনে স্বস্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। কিন্তু তাঁদের মধ্যে মধুসূদন উজ্জ্বলতম জ্যোতিষ্ক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কলেজের পরীক্ষায় তিনি বরাবর বৃত্তি পেতেন। এ সময় নারীশিক্ষা বিষয়ে প্রবন্ধ রচনা করে তিনি স্বর্ণপদক লাভ করেন।

হিন্দু কলেজে অধ্যয়নের সময়েই মধুসূদন কাব্যচর্চা শুরু করেন। তখন তাঁর কবিতা জ্ঞানান্বেষণ, Bengal Spectator, Literary Gleamer, Calcutta Library Gazette, Literary Blossom, Comet প্রভৃতি পত্রিকায় প্রকাশিত হতো।

এ সময় থেকেই তিনি স্বপ্ন দেখতেন বিলেত যাওয়ার। তাঁর ধারণা ছিল বিলেতে যেতে পারলেই বড় কবি হওয়া যাবে। তাই পিতা তাঁর বিবাহ ঠিক করলে তিনি ১৮৪৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি গ্রহণ করেন এবং তখন থেকে তাঁর নামের পূর্বে ‘মাইকেল’ শব্দটি যুক্ত হয়। কিন্তু হিন্দু কলেজে খ্রিস্টানদের অধ্যয়ন নিষিদ্ধ থাকায় মধুসূদনকে কলেজ ত্যাগ করতে হয়। তাই ১৮৪৪ সালে তিনি বিশপ্স কলেজে ভর্তি হন এবং ১৮৪৭ পর্যন্ত এখানে অধ্যয়ন করেন। এখানে তিনি ইংরেজি ছাড়াও গ্রিক, ল্যাটিন ও সংস্কৃত ভাষা শেখার সুযোগ পান।

মধুসূদনের খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ ও ব্যক্তিজীবনে তার প্রভাব

এ সময় ধর্মান্তরের কারণে মধুসূদন তাঁর আত্মীয়স্বজনদের নিকট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন। তাঁর পিতাও এক সময় অর্থ পাঠানো বন্ধ করে দেন।

মধুসূদনের শিক্ষকতা, সাংবাদিকতা, সম্পাদনায় যুক্ত হওয়া, সাহিত্যচর্চা, বিয়ে ও বিভিন্ন ভাষায় দক্ষতা অর্জন

অগত্যা মধুসূদন ভাগ্যান্বেষণে ১৮৪৮ সালে মাদ্রাজ গমন করেন। সেখানে তিনি দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেন। প্রথমে মাদ্রাজ মেইল অরফ্যান অ্যাসাইলাম স্কুলে (১৮৪৮-১৮৫২) এবং পরে মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হাইস্কুলে শিক্ষকতা (১৮৫২-১৮৫৬) করেন।

মাদ্রাজের সঙ্গে মধুসূদনের জীবনের অনেক ঘটনা জড়িত। এখানেই তিনি সাংবাদিক ও কবি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। তিনি Eurasion (পরে Eastern Guardian), Madras Circulator and General Chronicle ও Hindu Chronicle পত্রিকা সম্পাদনা করেন এবং Madras Spectator-এর সহকারী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন (১৮৪৮-১৮৫৬)। মাদ্রাজে অবস্থানকালেই Timothy Penpoem ছদ্মনামে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ The Captive Ladie (১৮৪৮) এবং দ্বিতীয় গ্রন্থ Visions of the Past প্রকাশিত হয়। রেবেকা ও হেনরিয়েটার সঙ্গে তাঁর যথাক্রমে প্রথম ও দ্বিতীয় বিবাহ এখানেই সংঘটিত হয়। মাদ্রাজে বসেই তিনি হিব্রু, ফরাসি, জার্মান, ইটালিয়ান, তামিল ও তেলেগু ভাষা শিক্ষা করেন।

এরমধ্যে মধুসূদনের পিতামাতা উভয়ের মৃত্যু হয়। পিতার মৃত্যুসংবাদ পেয়ে তিনি দ্বিতীয় স্ত্রী হেনরিয়েটাকে নিয়ে ১৮৫৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কলকাতা আসেন। সেখানে তিনি প্রথমে পুলিশ কোর্টের কেরানি এবং পরে দোভাষীর কাজ করেন। এ সময় বিভিন্ন পত্রিকায় প্রবন্ধ লিখেও তিনি প্রচুর অর্থোপার্জন করেন। তাঁর বন্ধুবান্ধবরা এ সময় তাঁকে বাংলায় সাহিত্যচর্চা করতে অনুরোধ জানান এবং তিনি নিজেও ভেতর থেকে এরূপ একটি তাগিদ অনুভব করেন। রামনারায়ণ তর্করত্নের রত্নাবলী (১৮৫৮) নাটক ইংরেজিতে অনুবাদ করতে গিয়ে তিনি বাংলা নাট্যসাহিত্যে উপযুক্ত নাটকের অভাব অনুভব করেন এবং তাঁর মধ্যে তখন বাংলায় নাটক রচনার সংকল্প জাগে। এই সূত্রে তিনি কলকাতার পাইকপাড়ার রাজাদের বেলগাছিয়া থিয়েটারের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েন। এমন একটি পরিস্থিতিতে নাট্যকার হিসেবেই মধুসূদনের বাংলা সাহিত্যাঙ্গনে পদার্পণ ঘটে। তিনি মহাভারতের দেবযানী-যযাতি কাহিনী অবলম্বনে ১৮৫৮ সালে পাশ্চাত্য রীতিতে রচনা করেন শর্মিষ্ঠা নাটক। এটিই প্রকৃত অর্থে বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম মৌলিক নাটক এবং একই অর্থে মধুসূদনও বাংলা সাহিত্যের প্রথম নাট্যকার।

পরের বছর মধুসূদন রচনা করেন দুটি প্রহসন: একেই কি বলে সভ্যতা ও বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ। প্রথমটিতে তিনি ইংরেজি শিক্ষিত ইয়ং বেঙ্গলদের মাদকাসক্তি, উচ্ছৃঙ্খলতা ও অনাচারকে কটাক্ষ করেন এবং দ্বিতীয়টিতে রক্ষণশীল হিন্দু সমাজের আচারসর্বস্ব ও নীতিভ্রষ্ট সমাজপতিদের গোপন লাম্পট্য তুলে ধরেন। এ ক্ষেত্রেও মধুসূদন পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেন। তাঁর প্রহসন দুটি কাহিনী, সংলাপ ও চরিত্রসৃষ্টির দিক থেকে আজও অতুলনীয়।

মধুসূদনের কৃতিত্ব এখানেই যে, তিনি যাকিছু রচনা করেছেন তাতেই নতুনত্ব এনেছেন। তিনিই প্রথম পাশ্চাত্য সাহিত্যের আদর্শ বাংলা সাহিত্যে সার্থকভাবে প্রয়োগ করেন। তখনকার বাংলা সাহিত্যে রচনার শৈলীগত এবং বিষয়ভাবনাগত যে আড়ষ্টতা ছিল, মধুসূদন তা অসাধারণ প্রতিভা ও দক্ষতাগুণে দূরীভূত করেন। ১৮৬০ সালে তিনি গ্রিক পুরাণ থেকে কাহিনী নিয়ে রচনা করেন পদ্মাবতী নাটক। এ নাটকেই তিনি পরীক্ষামূলকভাবে ইংরেজি কাব্যের অনুকরণে অমিত্রাক্ষর ছন্দ ব্যবহার বরেন। বাংলা কাব্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দের ব্যবহার এটাই প্রথম এবং এর ফলে তিনি বাংলা কাব্যকে ছন্দের বন্ধন থেকে মুক্তি দেন। বাংলা কাব্যে অমিত্রাক্ষর ছন্দের ব্যবহারে এই সফলতা তাঁকে ভীষণভাবে উৎসাহিত করে এবং এই ছন্দে একই বছর তিনি রচনা করেন তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য। পরের বছর ১৮৬১ সালে রামায়ণের কাহিনী নিয়ে একই ছন্দে তিনি রচনা করেন তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি । এটি বাংলা ভাষায় রচিত প্রথম মৌলিক মহাকাব্য। আর কোন রচনা না থাকলেও মধুসূদন এই একটি কাব্য লিখেই অমর হয়ে থাকতে পারতেন। এই কাব্যের মাধ্যমেই তিনি মহাকবির মর্যাদা লাভ করেন এবং তাঁর নব আবিষ্কৃত অমিত্রাক্ষর ছন্দও বাংলা সাহিত্যে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। রামায়ণে বর্ণিত অধর্মাচারী, অত্যাচারী ও পাপী রাবণকে একজন দেশপ্রেমিক, বীর যোদ্ধা ও বিশাল শক্তির আধাররূপে চিত্রিত করে মধুসূদন উনিশ শতকের বাঙালির নবজাগরণের শ্রেষ্ঠ কবির মর্যাদা লাভ করেন। এক্ষেত্রে তিনি ভারতবাসীর চিরাচরিত বিশ্বাসের মূলে আঘাত হেনে প্রকৃত সত্য সন্ধান ও দেশপ্রেমের যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন, বাংলা সাহিত্যে তা তুলনাহীন।

মধুসূদনের কাব্যে নারীবিদ্রোহ

মধুসূদনের কাব্যে এক ধরনের নারীবিদ্রোহের সুর লক্ষ করা যায়। তাঁর কাব্যের নায়িকাদের মধ্য দিয়ে যেন যুগ যুগ ধরে বঞ্চিত, অবহেলিত, আত্ম সুখ-দুঃখ প্রকাশে অনভ্যস্ত ও ভীত ভারতীয় নারীরা হঠাৎ আত্মসচেতন হয়ে জেগে ওঠে। তারা পুরুষের নিকট নিজেদের ভাল-মন্দ, সুখ-দুঃখ এবং কামনা-বাসনা প্রকাশে হয়ে ওঠে প্রতিবাদী। তাঁর বীরাঙ্গনা (১৮৬২) পত্রকাব্যের নায়িকাদের দিকে তাকালে এ কথার সত্যতা উপলব্ধি করা যাবে। এখানে জনা, কৈকেয়ী, তারা প্রমুখ পৌরাণিক নারী তাদের স্বামী বা প্রেমিকদের নিকট নিজেদের কামনা-বাসনা ও চাওয়া-পাওয়ার কথা নির্ভীকচিত্তে প্রকাশ করে। নারীচরিত্রে এরূপ দৃঢ়তার প্রকাশ বাংলা সাহিত্যে মধুসূদনের আগে আর কারও রচনায় প্রত্যক্ষ করা যায় না। মধুসূদনের এ সময়কার অপর দুটি রচনা হলো কৃষ্ণকুমারী (১৮৬১) ও ব্রজাঙ্গনা (১৮৬১)। প্রথমটি রাজপুত উপাখ্যান অবলম্বনে রচিত একটি বিয়োগান্তক নাটক এবং দ্বিতীয়টি রাধাকৃষ্ণ বিষয়ক গীতিকাব্য। এ পর্বে মধুসূদন দীনবন্ধু মিত্রের নীলদর্পণ নাটকটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন এবং কিছুদিন হিন্দু প্যাট্রিয়ট (১৮৬২) পত্রিকা সম্পাদনা করেন। ১৮৬২ সালের ৯জুন মধুসূদন ব্যারিস্টারি পড়ার উদ্দেশ্যে বিলেত যান এবং গ্রেজ-ইন-এ যোগদান করেন। সেখান থেকে ১৮৬৩ সালে তিনি প্যারিস হয়ে ভার্সাই নগরীতে যান এবং সেখানে প্রায় দুবছর অবস্থান করেন। ভার্সাইতে অবস্থানকালে তাঁর জীবনে দুটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটে। এখানে বসেই তিনি ইতালীয় কবি পেত্রার্কের অনুকরণে বাংলায় সনেট লিখতে শুরু করেন। বাংলা ভাষায় এটিও এক বিস্ময়কর নতুন সৃষ্টি। এর আগে বাংলা ভাষায় সনেটের প্রচলন ছিল না। দ্বিতীয় বিষয়টি হলো ভার্সাই নগরীতে থেকেই তিনি যেন মাতৃভূমি ও মাতৃভাষাকে নতুনভাবে এবং একান্ত আপনভাবে দেখতে ও বুঝতে পারেন, যার চমৎকার প্রকাশ ঘটেছে তাঁর ‘বঙ্গভাষা’, ‘কপোতাক্ষ নদ’ ইত্যাদি সনেটে। তাঁর এই সনেটগুলি ১৮৬৬ সালে চতুর্দ্দশপদী কবিতাবলী নামে প্রকাশিত হয়।

ভার্সাই নগরীতে দুবছর থাকার পর মধুসূদন ১৮৬৫ সালে পুনরায় ইংল্যান্ড যান এবং ১৮৬৬ সালে গ্রেজ-ইন থেকে ব্যারিস্টারি পাস করেন। ১৮৬৭ সালের ৫ জানুয়ারি দেশে ফিরে তিনি কলকাতা হাইকোর্টে আইন ব্যবসায় যোগ দেন। কিন্তু ওকালতিতে সুবিধে করতে না পেরে ১৮৭০ সালের জুন মাসে মাসিক এক হাজার টাকা বেতনে হাইকোর্টের অনুবাদ বিভাগে যোগদান করেন। দুবছর পর এ চাকরি ছেড়ে তিনি পুনরায় আইন ব্যবসা শুরু করেন। এবারে তিনি সফল হন, কিন্তু অমিতব্যয়িতার কারণে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন। অমিতব্যয়িতার ব্যাপারটি ছিল তাঁর স্বভাবগত। একই কারণে তিনি বিদেশে অবস্থানকালেও একবার বিপদগ্রস্ত হয়েছিলেন এবং বিদ্যাসাগরের আনুকূল্যে সেবার উদ্ধার পান। ১৮৭২ সালে মধুসূদন কিছুদিন পঞ্চকোটের রাজা নীলমণি সিংহ দেও-এর ম্যানেজার ছিলেন।

জীবনের এই টানাপোড়েনের মধ্য দিয়েও মধুসূদন কাব্যচর্চা অব্যাহত রাখেন। হোমারের ইলিয়াড অবলম্বনে ১৮৭১ সালে তিনি রচনা করেন হেক্টরবধ। তাঁর শেষ রচনা মায়াকানন (১৮৭৩) নাটক। বাংলা ভাষায় প্রকাশিত তাঁর ১২টি গ্রন্থ এবং ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত ৫টি গ্রন্থ রয়েছে।

মধুসূদন ছিলেন বাংলা সাহিত্যের যুগপ্রবর্তক কবি। তিনি তাঁর কাব্যের বিষয় সংগ্রহ করেছিলেন প্রধানত সংস্কৃত কাব্য থেকে, কিন্তু পাশ্চাত্য সাহিত্যের আদর্শ অনুযায়ী সমকালীন ইংরেজি শিক্ষিত বাঙালির জীবনদর্শন ও রুচির উপযোগী করে তিনি তা কাব্যে রূপায়িত করেন এবং তার মধ্য দিয়েই বাংলা সাহিত্যে এক নবযুগের সূচনা হয়। উনিশ শতকের বাঙালি নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ মধুসূদন তাঁর অনন্যসাধারণ প্রতিভার দ্বারা বাংলা ভাষার অন্তর্নিহিত শক্তি আবিষ্কার করে এই ভাষা ও সাহিত্যের যে উৎকর্ষ সাধন করেন, এরফলেই তিনি বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। বাংলা সাহিত্যে তিনি ‘মধুকবি’ নামে পরিচিত।

মধুসূদনের শেষ জীবন, জীবনের অবসান

বাংলার এই মহান কবির শেষজীবন অত্যন্ত দুঃখ-দারিদ্রে্যর মধ্যে কেটেছে। ঋণের দায়, অর্থাভাব, অসুস্থতা, চিকিৎসাহীনতা ইত্যাদি কারণে তাঁর জীবন হয়ে উঠেছিল দুর্বিষহ। শেষজীবনে তিনি উত্তরপাড়ার জমিদারদের লাইব্রেরি ঘরে বসবাস করতেন। স্ত্রী হেনরিয়েটার মৃত্যুর তিনদিন পরে ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন বাংলার এই মহা কবি কপর্দকহীন অবস্থায় জেনারেল হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

মধুসূদন দত্তের দুটি প্রহসনের নাম লেখ, মধুসূদন দত্তের প্রহসন হল

১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি রচনা করেন দুটি প্রহসন, যথা: ‘একেই কি বলে সভ্যতা’ এবং ‘বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ’ এবং পূর্ণাঙ্গ ‘পদ্মাবতী’ নাটক। পদ্মাবতী নাটকেই তিনি প্রথম অমিত্রাক্ষর ছন্দ ব্যবহার করেন। ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দে তিনি অমিত্রাক্ষরে লেখেন ‘তিলোত্তমাসম্ভব’ কাব্য। এরপর একে একে রচিত হয় ‘মেঘনাদ বধ কাব্য’ (১৮৬১) নামে মহাকাব্য, ‘ব্রজাঙ্গনা’ কাব্য (১৮৬১), ‘কৃষ্ণকুমারী’ নাটক (১৮৬১), ‘বীরাঙ্গনা’ কাব্য (১৮৬২), চতুর্দশপদী কবিতা (১৮৬৬)।

তার সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি অমিত্রাক্ষর ছন্দে রামায়ণের উপাখ্যান অবলম্বনে রচিত মেঘনাদবধ কাব্য নামক মহাকাব্য। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য গ্রন্থাবলি হলো :

  • দ্য ক্যাপটিভ লেডি
  • শর্মিষ্ঠা, কৃষ্ণকুমারী (নাটক)
  • পদ্মাবতী (নাটক)
  • বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ
  • একেই কি বলে সভ্যতা
  • তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য
  • বীরাঙ্গনা কাব্য
  • ব্রজাঙ্গনা কাব্য
  • চতুর্দশপদী কবিতাবলী
  • হেকটর বধ

মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত পত্রকাব্য টির নাম কি, মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত পত্রকাব্য টির নাম কী

মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘বীরাঙ্গনা’ বাংলা সাহিত্যের প্রথম পত্রকাব্য। এ কাব্যে মোট এগারটি পত্র আছে। এ কাব্যে মধুসূদন দত্ত পৌরাণিক নারীদের আধুনিক মানুষ হিসেবে পুনর্জাগরিত করেছেন।

বিজয়া দশমী কবিতা মধুসূদন দত্ত

”যেয়ো না,রজনি,আজি লয়ে তারাদলে!
গেলে তুমি,দয়াময়ি,এ পরাণ যাবে!-
উদিলে নির্দ্দয় রবি উদয়-অচলে,
নয়নের মণি মোর নয়ন হারাবে!
বার মাস তিতি,সত্যি,নিত্য অশ্রুজলে,
পেয়েছি উমায় আমি!কি সান্ত্বনা-ভাবে-
তিনটি দিনেতে,কহ,লো তারা-কুন্তলে,
এ দীর্ঘ বিরহ-জ্বালা এ মন জুড়াবে?
তিন দিন স্বর্ণদীপ জ্বলিতেছে ঘরে
দূর করি অন্ধকার;শুনিতেছি বাণী-
মিষ্টতম এ সৃষ্টিতে এ কর্ণ-কুহরে!
দ্বিগুণ আঁধার ঘর হবে,আমি জানি,
নিবাও এ দীপ যদি!”- কহিলা কাতরে
নবমীর নিশা-শেষে গিরীশের রাণী।

বিজয়া দশমী কবিতা মধুসূদন দত্ত সারাংশ

কবি মাইকেল মধুসুদন ১৮৬২ তে তার স্বপ্নভূমি ইংল্যান্ডে যান। এই সময় প্রচণ্ড অর্থাভাবে তার জীবন কাটে। কিছুদিন ফ্রান্সের ভার্সাই শহরে থাকাকালে তিনি ইতালীয় ভাষায় সনেট বাংলায় পরিবর্তনের চেষ্টা করেন। তার ফল ‘চতুর্দশপদী কবিতাবলী’। যা রচিত হয় ১৮৬৬ সালে। অনেকগুলি কবিতার মধ্যে এই ‘বিজয়া দশমী’ একটি কবিতা যার মধ্যে আছে বিজয়ার স্মৃতি।

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

মাইকেল মধুসূদন দত্তের কবিতা, মাইকেল মধুসূদন দত্ত কবিতা, মধুসূদন দত্ত কবিতা

মাইকেল মধুসূদন দত্তের উল্লেখযোগ্য কবিতাগুলি

  • কাশীরাম দাস
  • আত্মবিলাপ
  • ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
  • ঈশ্বরী পাটনী
  • কপোতাক্ষ নদ
  • কবি-মাতৃভাষা
  • কুক্কুট ও মণি
  • ছায়া পথ
  • দেবদৃষ্টি
  • নন্দন-কানন
  • কবি
  • কুরুক্ষেত্রে

মধুসূদন দত্তের প্রেমের কবিতা

কি – ভালবাসিতাম তোমায়

কি যে ভালবাসিতাম, আহা – কি -গভীর উৎফুল্ল র হৃৎকম্প নিয়া

তব দুটি করোজ্জ্বল আঁিখি চাহি চাহি বারবার দেখিতমা, প্রিয়া।

বাঁচিয়া উঠিত মম প্রাণ, দেখি তব হাসি-ভুরু কুঁচকালে যাহা হয়ে যেত মৃত;

কি-মধুর ছিলো তব ভাষ, তেমন মধুন কোন ছিলো না সঙ্গীতও।

মাইকেল মধুসূদন দত্ত Photos with his Books, মাইকেল মধুসূদন দত্ত ছবি

মধুসূদন দত্ত কৃত্তিবাস কে কি নামে অভিহিত করেছেন, মধুসূদন দত্ত কৃত্তিবাস কে কী নামে অভিহিত করেছেন

মধুসূদন দত্ত লিখেছেন, ‘কীর্তিবাস, কীর্তিবাস কবি, এ বঙ্গের অলঙ্কার;—হে পিতঃ, কেমনে, কবিতা-রসের সরে রাজহংস-কুলে মিলি করি কেলি আমি, না শিখালে তুমি?’ কৃত্তিবাসও যে বাল্মীকির কাব্যে গেঁথেছিলেন ‘নূতন মালা’, কৃত্তিবাসও যে তাঁর কাব্য রচনা করতে নূতন পথ খুঁজে নিয়েছিলেন। তাঁর সেই যাত্রাপথের কথা কল্পনা করা হয়েছে এই আখ্যানে।

মধুসূদন দত্ত বাণী

“জম্মিলে মরিতে হবে অমর কে কোথা কবে? চিরস্থির কবে নীর হায়রে জীবন নদে? ”

“নিশার স্বপন-সুখে সুখী যে কী সুখ তার, জাগে সে কাদিতে।”

“হে বঙ্গ, ভাণ্ডারে তব বিবিধ রতন।”

“প্তঙ্গ যে রঙ্গে ধায় ধাইলি, অদোধ হায় না দেখলি না শুনলি এবে রে প্রাণ কাঁদে।”

বহু দেশে দেখিয়াছি বহু নদ – দলে,কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মিটে কার জলে?”

“ওরে বাছা, মাতৃকোষে রতনের রাজি,এ ভিখারী-দশা তবে কেন তোর আজি? যা ফিরি, অজ্ঞান তুই, যা রে ফিরি ঘরে!”

“দিন দিন আয়ুহীন, হীনবল দিন দিন।”

মধুসূদনের কবি প্রতিভা, মধুসূদন এর কবি প্রতিভার পরিচয় দাও, মধুসূদনের কবি প্রতিভার পরিচয়, মধুসূদন কবি প্রতিভার পরিচয় দাও, বাংলা সাহিত্যে মধুসূদন দত্তের অবদান, মধুসূদন দত্তের কবি প্রতিভা, মধুসূদনের কবি প্রতিভার, মধুসূদন দত্তের কবি প্রতিভার পরিচয় দাও, মাইকেল মধুসূদন দত্তের অবদান, বাংলা কাব্যে মধুসূদন দত্তের অবদান আলোচনা করো

বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে কখনও কখনও এমন সব সাহিত্যিকের আবির্ভাব ঘটে যাদের প্রতিভার গুণে সাহিত্যে এক নতুন যুগের সূচনা হয়। মধুসূদন দত্ত ছিলেন এমনই এক অনন্য সাধারণ মৌলিক প্রতিভার কবি। বাঙলা কাব্যের সুদীর্ঘ যাত্রাপথের মোড় ঘুবিয়ে দিয়েছেন মধুসূদনের কাব্যকৃতি। তাঁর সাহিত্য জীবনের বিস্তার খুব বেশী নয়।

প্রবাস থেকে কবি যখন বাঙলা দেশে প্রত্যাবর্তন করেন, তখন বাঙালী সমাজে কাব্য রস পিপাসা মেটানোর প্রধান উপকরণ ছিল ঈশ্বরগুপ্তের পরিহাস রসিকতা এবং রঙ্গলালের ভাবাতিরেক আক্রান্ত রোমাণ্টিক কবিতা। কিন্তু নবযুগের আঙ্গিকে যথাযথভাবে সাহিত্য সৃজনের উপযুক্ত প্রতিভার আবির্ভাব তখনও হয়নি। মাইকেল মধুসূদন দত্ত নবযুগের বার্তাবহ হয়ে বাংলা কাব্যের প্রাঙ্গণে সবলে এবং মরমে প্রবেশ করে সেই অভাব পূর্ণ করলেন। এতদিন ধরে আমরা যে জীবন প্রত্যয় ও কাব্যাদর্শের মধ্যে নিরদ্বেগ জীবনযাপন করছিলাম, বাণীর বিদ্রোহ সস্তান মধুসূদন সেই শান্তির নীড়ে বজ্রাঘাত করলেন। মহাকবি মধুসূদন আধুনিক বাংলা সাহিত্যে পাশ্চাত্ত্য আদর্শে মহাকাব্য আখ্যানকাব্য, পত্রকাব্য, গীতিকাব্য প্রভৃতি সূচনা করে সাত বছরের মধ্যেই, সত্তর বছরের ইতিহাস এগিয়ে দিয়ে গেলেন। এত বড় কবিপ্রতিভা এবং অপরিমেয় মানসিক শক্তির অধিকারী কোন কবি ইদানীং ভারতের অন্যান্য প্রাদেশিক সাহিত্যেও পদার্পণ করেননি। এখানে তাঁর কাব্যগুলির সংক্ষিপ্ত পরিচয় লিপিবদ্ধ করলাম।

মধুসূদনের অমিত্রাক্ষর ছন্দ : কবি মধুসূদন দত্ত কাব্যকলাতে কেবল মৌলিকতা আনেননি তাঁর কাব্যে ছন্দে আনলেন এক নতুন জোয়ার। তিনি বুঝেছিলেন, যে সেকেলে পয়ার ছন্দের আট-ছয় যতিবন্ধনে বন্দী ভাবধারাকে মুক্তি দিতে হলে সর্বপ্রথম পয়ারের ছেদ যতির গতানুগতিক ও কৃত্রিম বন্ধন ছিঁড়ে ফেলে কাব্য পংক্তিকে ভাবের আবেগে ছেড়ে দিতে হবে। ভাবানুসারে যতিপাত হবে ছন্দের কৃত্রিম বাঁধনে নয়। এই নিয়মে তিনি বাংলা ভাষাতে অমিত্রাক্ষর ছন্দের প্রথম প্রবর্তন করলেন। মধুসূদনের এই প্যাসে বাংলা কাব্যে ছন্দ মুক্তির সূচনা হয়।

এ ছন্দের বৈশিষ্ট্য হল দুরকম প্রথমত এর পংক্তিতে মিল বা অত্যানুপ্রাস তুলে দেওয়া হল– যাকে মিত্রাক্ষর বলে। দ্বিতীয়ত প্রতি পংক্তির শেষে না থেমে ভাবের উত্থান পতা এ অর্থাবোধের সঙ্গে থামাতে হবে। অর্থাৎ বিরাম ঘটবে উচ্চারণ ও শ্বাস প্রশ্বাসের যান্ত্রিক কৌশলের জন্য নয় অর্থ ও ভাবানুসারে পংক্তির যেখানে খুশী থামা চলবে। এই হল বাংলা ছন্দের প্রথম মুক্তি এবং কবির ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যের মুক্তি। যেমন—

“কিন্তু মায়াময়ী মায়া, বাহু-প্রসারণে

ফেলাইল দুরে সবে জননী যেমতি

খেদান মশকবৃন্দে সুপ্ত সুত হতে

করপদ্ম সঞ্চালনে।” (মেঘনাদবধ ষষ্ঠ সর্গ)

অমিত্রাক্ষর ছন্দের মূল শক্তি এই নতুন বিন্যাস রীতিতেই নিহিত।

তিলোত্তমা সম্ভব, ১৮৬০ : এই অমিত্রাক্ষর ছন্দে তার প্রথম কাব্য ‘তিলোত্তমা সম্ভব’ ১৮৬০ সালে প্রকাশিত হয়। সংস্কৃত পুরাণে স্যুন্দ উপস্যুন্দ দৈত্য ভ্রাতাদের বধের জন্য তিলোত্তমা অপসরা সৃষ্টির কাহিনী তাঁর ভালো লেগেছিল। এই কাহিনীকেই মনের মতো করে সাজিয়ে তিনি চার সর্গে এই আখ্যান কাব্য রচনা করেন। এই কাব্যে সর্বপ্রথম অমিত্রাক্ষরের প্রবর্তন হয়েছে, তাই প্রথম প্রবর্তনের ত্রুটিও রয়ে গেছে। বিভিন্ন ত্রুটি সত্ত্বেও একাব্য আধুনিক কাব্যের সোপান রূপে চিহ্নিত হবার দাবী রাখে।

মধুসূদন দত্তের মেঘনাদবধ কাব্য

মেঘনাদবধ কাব্য : ‘তিলোত্তমা সম্ভব’ কাব্যের অমিত্রাক্ষর ছন্দের সন্দিহান কাটিয়ে মধুসুদন লিখলেন ‘মেঘনাদবদ কাব্য’। সত্যি কথা বলতে কী, মধুসূদনের বিশিষ্ট প্রতিভার শক্তি প্রকাশ পেয়েছে এই মেঘনাদ বধ কাব্যে। মেঘনাদবধ কাব্য দুটি খণ্ডে প্রকাশ হল প্রথম ১৮৬১ সালের জানুয়ারী মাসে, দ্বিতীয়টি ঐ বছরের জুন মাসের দিকে। পরে দুটি খণ্ড একত্রে কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় দ্বারা সম্পাদিত হয়ে প্রকাশিত হয় (১৮৬২)। তারপর থেকে মেঘনাদবধ কাব্য এক খণ্ডেই প্রকাশিত হয়ে আসছে।

এই মহাকাব্যের কাহিনী বিন্যাস ও চরিত্র রূপায়ণে নেয় মধুসূদন বাল্মীকির আদর্শকে সম্পূর্ণ রূপে বর্জন করে পাশ্চাত্য মহাকাব্যের আদর্শেই উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। কবি এতে যথা ধর্ম তথা জয় এই নীতিকে বিশেষ আমল দেয়নি। অদৃষ্টের চরম পরিণতিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। ভারতীয় সমাজের নীতি চেতনা, ধর্মবোধ গার্হস্থ্য বন্ধন প্রভৃতি যে আদর্শের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, রামায়ণে সেই আদর্শকে তুলে ধরা হয়েছিল। কিন্তু মধুসূদন এই জীবননীতিকে প্রশ্রয় দেননি। বরং দুষ্কৃতকারী রাবণের দুঃখ ও নৈরাশ্য যন্ত্রণার প্রতি অধিকতর সহানুভূতি বোধ করছেন এবং তাঁকেই কাব্যের নায়কত্ব দান করেছেন। ভারতীয় সমাজে যে রামচন্দ্রকে দেবতারূপে পূজা করেন, নীতিশাস্ত্রের কাণ্ডারী বলে মনে করেন। বাণীর বিদ্রোহী মাইকেল মধুসূদন তাঁকে অবহেলা ও উপেক্ষা করে যে, দুর্মদ, উচ্ছৃঙ্খল, কোন নিয়ম সংযম মানেন না, সেই রাবণকেই বরমাল্য দিয়েছেন। প্রাচীন ধর্ম ও নীতি শাসিত জীবনের পরিবর্তে আত্মশক্তিতে শক্তিমান, আপন বীরত্বে যিনি বীর সেই মানুষের মহিমাকেই মূর্ত করে তোলা হল এই মেঘনাদ বধকাব্যে’। এবং এখানেই যথার্থভাবে আধুনিক কাব্যের প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয়েছে।

ব্রজাঙ্গনা : মধুসূদনের প্রতিভা যে কী পরিমাণে অদ্ভুত ও ক্রিয়াবান ছিল তার প্রমাণ ‘ব্রজাঙ্গনা কাব্য’ (১৮৬১)। মেঘনাদবধ কাব্যের মাঝে মাঝে গীতিরস উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছিল। ‘ব্রজাঙ্গনা কাব্যে’ বিরহ শোকাতুর রাধার মর্মবেদনা ব্যক্ত হয়েছে। তার বৃহৎ কাব্যগ্রন্থগুলির পাশে হয়ত এই গীতি কবিতা তেমন মহিমান্বিত নয় তথাপি ‘ব্রজাঙ্গনার’ কবিতাগুলি ভাষা ও ছন্দে বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে।

মধুসূদনের বীরাঙ্গনা কাব্য, মধুসূদনের বীরাঙ্গনা কাব্য pdf, মধুসূদন দত্তের বীরাঙ্গনা কাব্য

বীরাঙ্গনা কাব্য : মাইকেল মধুসূদনের মেঘনাদবধ কাব্যের মধ্যে ও কিছু অনভ্যস্ততা ছিল কিন্তু বীরাঙ্গনা কাব্যে এদিক থেকে নিঁখুত হয়েছে। অমিত্রাক্ষর ছন্দের যথার্থ রূপটি এখানে ধরা পড়েছে। এটি বিদেশী কবি ও পত্রকাব্যের কাব্যের অনুসরণে রচিত। একুশখানি পত্রের সাহয্যে মধুসূদন একুশজন ভারতীয় নারীর চরিত্রাঙ্কনের পরিকল্পনা করেন কিন্তু বিভিন্ন কারণে মাত্র এগারো খানি পত্র রচনা করে তিনি ‘বীরাঙ্গনা কাব্যে’ প্রকাশ করেন। এই এগারো খানি পত্রের মধ্যে ‘সোমের প্রতি তারা’, ‘পুরববার প্রতি উর্বশী’, ‘দশরথের প্রতি কৈকেয়ী’, ‘লক্ষ্ণণের প্রতি সুপর্ণখা’ এবং ‘নীলধ্বজের প্রতি জনার’ পত্র কাব্যাংশে অতি উৎকৃষ্ট।

চতুর্দশপদী কবিতাবলী : ১৮৬৬ সালে মধুসূদনের শেষ কাব্যে ‘চতুর্দশপদী কবিতবলী’ প্রকাশিত হয়। তার পূর্বে অর্থলাভের ইচ্ছায় কবি বিলেতে গিয়েছিলেন কিন্তু তার পরিবর্তে তাকে অর্থাভাবে দুরাবস্থার মধ্যে পড়তে হয়। সেই সময় বিদেশী সনেটের আদর্শে তিনি— অনেকগুলি বাংলা সনেট রচনা করেন, তার নাম দেন ‘চতুর্দশপদী কবিতাবলী’ এই সনেটগুলির মধ্যে কবির নিজস্ব আবেগ অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এমনভাবে যে এই সনেটগুলিকে অমরতা দান করেছে। বিদেশে না গেলে কবি কখনও এমন নিষ্ঠুর বাস্তবকে দেখতে পেতেন না এবং আমাদেরকে এমন সনেট উপহার দিতে পারতেন না। তাই অধ্যাপক পরেশচন্দ্র ভট্টাচার্যের কথা উল্লেখ করে বলা যায়, – “নিজের আপনজনকে দেশকে জাতিকে, যথার্থভাবে জানতে হলে বোধ হয় একটু দূর থেকেই দেখতে হয়, হিমালয়ের বুকে বসে হিমালয়ের বিরাটত্ব উপলব্ধি করা যায় না, একমাত্র দূর থেকে দেখলেই তার সমগ্রতার বোধ আসে। তেমনি মধুসূদন ও দূর প্রবাসে অবস্থানকালেই স্বদেশ—স্বজনের স্মৃতি উদ্বেল হয়ে তার যথার্থ মূল্য অনুধাবন করতে পেরেছেন।”

মাত্র সাত বৎসর ১৮৫১-১৮৬৬ বাংলা কাব্য প্রাঙ্গণে পদচারণা করতে পেরেছিলেন। কিন্তু এই সাময়িক সময়ের মধ্যেও কবি মধুসূদন দত্ত বাংলা কাব্য ধারাকে যে অভিনবত্ব দান করেছিলেন তা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। তাই বলা যায় যে, মধুসূদন থেকে বাংলা কাব্যের আধুনিক যুগের সূচনা।

মেঘনাদবধ কাব্যের ষষ্ঠ সর্গের বিষয় বিন্যাসে মধুসূদনের মৌলিকতা নির্দেশ করো, মেঘনাদবধ কাব্যের ষষ্ঠ সর্গের বিষয়ে বিন্যাসে মধুসূদনের মৌলিকতা নির্দেশ করো

মাইকেল মধুসূদন দত্তের এক অনন্য সাধারণ সৃষ্টি এই মেঘনাদবধ কাব্যটি। তার শিল্প আত্মার প্রধান লক্ষণ ভাবুকতার প্রধান সংযম ও বীরধর্মী সৌন্দর্য সৃষ্টি। কাব্যটির নাম যেহেতু মেঘনাদ বধ অর্থাৎ ইন্দ্রজিতের হত্যা, সে কারণে সাধারণ পাঠক খুব সহজেই মেঘনাথ চরিত্রটিকে বারবার গ্রহণ করতে চেয়েছে। অনেক সমালোচকের মতে এ কাব্যের নায়ক রাবণ। কারণ এই চরিত্রটির মধ্য দিয়ে কবির আত্মার প্রতিফলন ঘটেছে। তবুও মাইকেল মধুসূদন দত্তের চিঠিগুলোর অনুসারে ইন্দ্রজিৎ বা মেঘনাদ যেয়ে কাব্যের নায়ক সে বিষয়ে কোন সন্দেহ থাকে না।

বাংলা সাহিত্যের প্রথম বিদ্রোহী সত্তা নিয়ে মাইকেল মধুসূদন দত্ত তার মেঘ্নাদবদ কাব্য কে রচনা করেছিলেন। কাব্য টি তে নটি খন্ড যার ষষ্ঠ খন্ডের নাম বধ । আসলে কাব্যের মূল ঘটনাটি এই স্বর্গ টিতেই ঘটেছে বলে সমস্ত কাব্যের মধ্যে এই স্বর্গ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই স্বর্গ টিতে ইন্দ্রজিতের বীরচিত সত্তা প্রকাশিত হয়েছে। রাবণ পুত্র ইন্দ্রজিৎ মাইকেল মধুসূদন দত্তের অন্তর্জাত সন্তান । তিনি খুব সহজেই দেবতা, দৈত্য দের পরাজিত করতে সক্ষম।

কনক লঙ্কার বিপর্যয়ের সময় একমাত্র ইন্দ্রজিৎ ভরসা। তাকে কেন্দ্র করে রাবণের সমস্ত যুদ্ধযাত্রার পরিকল্পনা। যদিও কবি বারবার এই পটভূমি তৈরি করতে গিয়ে নিজের হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করেছেন। তিনি কখনো চান নি যে তার মানস পুত্রের এমন শোচনীয় ভাবে মৃত্যু হোক। তাই তিনি বন্ধু রাজনারায়ণ বসু কে লিখেছিলেন – “It costs me many a tear to kill him” । আবার এই ষষ্ঠ সর্গে ইন্দ্রজিতের দেশপ্রেম স্বজনপ্রীতি এবং বীর মহিমার প্রকাশ ঘটেছে।

পিতৃব্য বিভীষণ গোপন পথে যজ্ঞাগারে লক্ষণ কে নিয়ে এসেছেন মেঘনাদ কে হত্যা করার জন্য। এই ঘটনা জেনে ইন্দ্রজিৎ তার পিতৃব্য কে বারবার ধিক্কার জানিয়েছেন। আবার লক্ষণের অতর্কিত আক্রমণ এবং হীন কর্মপ্রয়াস ইন্দ্রজিতের দৃষ্টিতে অত্যন্ত ঘৃণ্য ঘটনা। সমুন্নত বংশ মর্যাদা বোধ চরিত্রে আরেক লক্ষণীয় দিক। তিনি লঙ্কার রাক্ষস বংশকে তুলনা করেছেন শিবের ললাটের সঙ্গে। বিভিন্ন উপমা ব্যবহার করে তার বিপথগামী কাকাকে বারবার রাবণের পক্ষে ফেরানোর চেষ্টা করেছেন। তার কাছে চিরন্তন ধর্মবোধের চেয়ে জ্ঞাতিত্ব ভ্রাতৃত্ব ও জাতীয়তাবাদ মহৎ।

ইন্দ্রজিৎ তাই দেশ জাতি কুল মান এর গর্ভে উদ্ধত উচ্চ শিখর । আবার তিনি উন্নত সমর নীতি বোধের ও অত্যন্ত অভ্রান্ত এক প্রতীক। পূজারত প্রতিপক্ষকে অস্ত্র গ্রহণের সুযোগ না দিয়ে অতর্কিত আক্রমন তার বিচারে কোন বীর কর্ম নয় তা কলঙ্কময় নিচু জাতি কর্ম। ইন্দ্রজিৎ শুধু বীর নন তিনি একনিষ্ঠ পিতৃ-মাতৃ ভক্ত। জীবনের অন্তিম মুহূর্তে তিনি পিতা-মাতার পাদপদ্ম স্মরণ করেছেন। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সত্য ও ন্যায়ের অভ্রান্ত প্রতীক এই বীর মাতৃভূমিকে রক্ষার জন্য প্রাণপণ সংগ্রাম করেছেন। মৃত্যু হয়ে তার কোনো ভয় নেই তাই বলেছেন – ” রাবণ নন্দন আমি, না ডরি শমণে” ।

বীর মেঘনাদের বুদ্ধি চাতুরতা যেভাবে প্রকাশিত হয়েছে কাব্যে তাতে কবি ও মানসপুত্র মেঘনাদের বৈশিষ্ট্য আমাদের সামনে আরো বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। পিতৃব্য বিভীষণকে সুপথে আনতে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেছেন যদিও শেষ পর্যন্ত তিনি ব্যর্থ।

লক্ষণ তাকে বাণে বিদ্ধ করলে রক্তাক্ত অবস্থায় হাতের কাছে যা পেয়েছে তাই দিয়ে সে লক্ষণকে আঘাত হানে। কিন্তু মায়াদেবীর ছলনায় তার কোনো কিছুই লক্ষণের শরীরকে স্পর্শ করতে পারে না। এরপর লক্ষণ তাকে তরবারি দ্বারা ভূপতিত করে দেয়। কিন্তু এই পর্বে কবি যেমন নিজে কেঁদেছেন তেমনি বর্ষার মতো রক্তের ধারায় রাবণ সহ সমস্ত পাঠক কে কাদিয়েছেন। তাই আমরা যেভাবেই মেঘনাথ চরিত্রটিকে বিশ্লেষণ করি না কেন সে আমাদের কাছে চির এক বীর।

আবার তার বীর ধর্ম কে এক সামান্য নরের হতে শেষ হতে দিতে চান না। তাকে শত্রুর কাছে মরতে হবে বলে কোনো আক্ষেপ নেই। কিন্তু তার আক্ষেপ এক সামান্য নরের হাতে লক্ষণের মত ভীরু কাপুরুষের হাতে তাকে মৃত্যুবরণ করতে হচ্ছে এতে তার আক্ষেপের সীমা নেই। ইন্দ্র বিজয়ী বীরের এমন মৃত্যু পাঠকের মনে ইচ্ছা ছিল না। কারণ দেবতাদের বলে শক্তিশালী হয়ে কৌশল অবলম্বন করে অতর্কিতভাবে লক্ষণ তাকে হত্যা করেছে। হয়তো লক্ষণ এর কাছে পরাজিত হয়েছে নিহত হয়েছে কিন্তু কাব্যের ষষ্ঠ সর্গে মেঘনাদের চরিত্রের ধর্ম গুলি প্রকাশিত হয়েছে তা অন্য সকল কাব্য থেকে মেঘনাথ কাব্যটিকে অনন্য করে তুলেছে।

মাইকেল মধুসূদন দত্তের ছদ্মনাম হলো

মাইকেল মধুসূদন দত্তের ছদ্মনাম “টিমোথি পেনপোয়েম”

মধুসূদন দত্তের সনেট, মধুসূদন দত্তের সনেটের বৈশিষ্ট্য

বাংলা সনেট কবিতার প্রবর্তক মাইকেল মধুসূদন দত্ত।

বংলায় সনেটকে চতুর্দশপদী কবিতা বলা হয়। চোদ্দ অক্ষর বা মাত্রাযুক্ত পংক্তি বিশিষ্ট, চোন্দ পংক্তির গীতিকবিতাকে সনেট বলা হয়।

মাইকেল মধুসূদন দত্ত রচিত ‘বঙ্গভাষা’ কবিতাটি চতুর্দশপদী কবিতাবলী গ্রন্থ থেকে সংকলিত হয়েছে। কবিতাটি অক্ষরবৃত্ত ছন্দে রচিত। মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘বঙ্গভাষা’ কবিতাটি বাংলা সাহিত্যের প্রথম সনেট কবিতা।

হে বঙ্গ, ডাণ্ডারে তব বিবিধ রতন;

তা সবে, (অবোধ আমি!) অবহেলা করি,

পর-ধন-লোভে মত্ত,

করিনু ভ্রমণ পরদেশে,

ভিক্ষাবৃত্তি কুক্ষণে আচরি।

কাটাইনু বহু দিন সুখ পরিহরি

অনিদ্রায়, অনাহারে সঁপি কায়, মনঃ

মঞ্জিনু বিফল তপে অবরেণ্যে বরি:

কেলিনু শৈবালে, ভুলি কমল-কানন!

স্বপ্নে তব কুললক্ষ্মী করে দিলা পরে,

“ওরে বাছা, মাতৃকোষে রতনের রাজি,

এ ভিখারী-দশা তবে কেন তোর আজি?

যা ফিরি, অজ্ঞান তুই, যা রে ফিরি ঘরে।

পালিলাম আজ্ঞা সুখে; পাইলাম কালে

মাতৃভাষা-রূপ খনি, পূর্ণ মণিজালেও।

বিদ্যাসাগর কবিতা মধুসূদন দত্ত মূলভাব

বিদ্যাসাগর বিদ্যার সাগর রূপেই ভারতে বিখ্যাত, কিন্তু যে গরীব, এবং যে বিদ্যাসাগরের দয়াগুণের পরিচয় লাভ করেছে, সেই জানে, তিনি দয়ার‌ও সমুদ্র। হিমালয় পর্বতের সৌন্দর্য দূর থেকে দেখে মন ভরে যায়। কিন্তু যে সৌভাগ্যবশত হিমালয়ের সোনার চরণে আশ্রয় নেয়, সেই জানে গিরীশ (হিমালয়) কত গুণের অধিকারী।

বিদ্যার সাগর তুমি বিখ্যাত ভারতে।
করুণার সিন্ধু তুমি, সেই জানে মনে,
দীন যে, দীনের বন্ধু !– উজ্জল জগতে
হেমাদ্রির হেম-কান্তি অম্লান কিরণে।
কিন্তু ভাগ্য-বলে পেয়ে সে মহা পর্বতে,
যে জন আশ্রয় লয় সুবর্ণ চরণে,
সেই জানে কত গুণ ধরে কত মতে
গিরীশ। কি সেবা তার সে সুখ সদনে !
দানে বারি নদীরূপ বিমলা কিঙ্করী।
যোগায় অমৃত ফল পরম আদরে
দীর্ঘ-শিরঃ তরু-দল, দাসরূপ ধরি।
পরিমলে ফুল-কুল দশ দিশ ভরে,
দিবসে শীতল শ্বাসী ছায়া, বনেশ্বরী,
নিশায় সুশান্ত নিদ্রা, ক্লান্তি দূর করে।

মাইকেল মধুসূদন দত্ত বই

নাটক ও প্রহসন

  1. শর্মিষ্ঠা নাটক (১৮৫৯)
  2. একেই কি বলে সভ্যতা? (১৮৬০)
  3. বুড় সালিকের ঘাড়ে রোঁ (১৮৬০)
  4. পদ্মাবতী নাটক (১৮৬০)
  5. কৃষ্ণকুমারী নাটক (১৮৬১)
  6. মায়া-কানন (১৮৭৪)

কাব্য / কাব্যের ধরন

  1. তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য (১৮৬০) :-আখ্যান কাব্য
  2. মেঘনাদবধ কাব্য (১৮৬১):- মহাকাব্য
  3. ব্রজাঙ্গনা কাব্য (১৮৬১) :-গীতিকাব্য
  4. বীরাঙ্গনা কাব্য (১৮৬২) :-পএকাব্য
  5. চতুর্দশপদী কবিতাবলী (১৮৬৫) :-সনেট জাতীয় কাব্য

অনুবাদ গ্রন্থ

  1. হেক্‌টর-বধ (১৮৭১)

ইংরেজি রচনা

কাব্য

  1. কালেক্টেড পোয়েমস
  2. দি অপ্সরি: আ স্টোরি ফ্রম হিন্দু মিথোলজি
  3. দ্য ক্যাপটিভ লেডি
  4. ভিশনস অফ দ্য পাস্ট

কাব্যনাট্য

  1. রিজিয়া: ইমপ্রেস অফ ইন্ডে

অনুবাদ নাটক

  1. রত্নাবলী
  2. শর্মিষ্ঠা
  3. নীল দর্পণ অর দি ইন্ডিগো প্ল্যান্টিং মিরর

প্রবন্ধ সাহিত্য

  1. দি অ্যাংলো-স্যাক্সন অ্যান্ড দ্য হিন্দু
  2. অন পোয়েট্রি এটসেট্রা
  3. অ্যান এসে

মধুসূদন দত্তের রচনাবলী Pdf

মধুসূদন রচনাবলী | মাইকেল মধুসূদন দত্ত | বাংলা বই



মধুসূদন রচনাবলী | মাইকেল মধুসূদন দত্ত | বাংলা বই




মাইকেল মধুসূদন দত্ত

মাইকেল মধুসূদন দত্ত কেন বিখ্যাত ছিলেন?
মাইকেল মধুসূদন দত্ত একজন আধুনিক বাংলার প্রথম মহান কবি


আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।