ভারতের সংবিধান, ভারতের সংবিধান কে রচনা করেন, ভারতীয় সংবিধানের ধারা কয়টি

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

ভারতের সংবিধান

স্বাধীন ভারত রাষ্ট্রের সংবিধান রচনার জন্য ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৯ আগস্ট নবগঠিত কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার আইনমন্ত্রী ড ভীমরাও রামজী আম্বেদকর-এর নেতৃত্বে পাঁচজন সদস্যকে নিয়ে একটি সংবিধান খসড়া প্রস্তুত কমিটি গঠিত হয়। তাঁর নেতৃত্বে দীর্ঘ তিন বছরের চেষ্টায় যে সংবিধান রচিত হয় ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে নভে তা পুর্ণাঙ্গ ভারতীয় সংবিধান হিসেবে গণপরিষদ কর্তৃক গৃহীত হয় এবং ২৮৪ জন সদস্য এই সংবিধানে স্বাক্ষর করেন। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৪ জানুয়ারি গণ-পরিষদের শেষ অধিবেশন বসে এবং ঐ অধিবেশন ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদ ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের। প্রথম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।

১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে জানুয়ারি এই নতুন সংবিধান প্রবর্তিত হয়। এই সংবিধান অনুসারে ভারত একটি সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে—অর্থাৎ এদিনে ভারতে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়। ২৬শে জানুয়ারি ভারতে প্রতি বছর প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে পালিত হয়। এই প্রসঙ্গে স্মরণীয় যে, পরাধীন ভারতে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে জানুয়ারি দিনটি স্বাধীনতা দিবস হিসাবে পালিত হয়েছিল। সেই দিনের স্মৃতি হিসেবে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে ২৬শে জানুয়ারি কে প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

” ভারতীয় সংবিধান পৃথিবীর বৃহত্তম সংবিধান। সূচনা পর্বে ২৫১ পৃষ্ঠায় রচিত, ২২টি অধ্যায়ে বিভক্ত এই সংবিধানে মোট ৩৯৫ টি সূত্র ও ৮ টি তফসিল ছিল। সংবিধান। রচনার কাজে গণপরিষদের তিন বছর সময় লাগে। আসলে নানা ভাষা, মত, ধর্ম,সংস্কৃতি ও সমস্যা নিয়ে গঠিত ভারতবর্ষ এক সুবিশাল দেশ। জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষে সকল দিক বজায় রেখে সকল স্বার্থের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করে সংবিধানের খসড়া রচনা ও আলাপ আলোচনার মাধ্যমে তা গ্রহণ করার জন্য এত দীর্ঘ সময় লাগে।।

ভারতের সংবিধান কে রচনা করেন, ভারতের সংবিধানের রচয়িতা কে, ভারতের সংবিধান কে লিখেছিলেন

৯ ই ডিসেম্বর ১৯৪৬ এ গণপরিষদ বা constituent assembly গঠিত হয়। ২৯ শে আগস্ট ১৯৪৭ এ ড্রাফটিং কমিটি গঠিত হয়। ৭ সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটিই মূলত সংবিধান রচনার ভার নিয়েছিল, যার প্রধান ছিলেন বি আর আম্বেদকর।

অনেকেই মনে করেন যে ভারতের সংবিধানের রচয়িতা বি আর আম্বেদকর। কিন্তু এই ধারণাটি ভুল। ভারতের সংবিধানটি রচনা করেছিলেন খসড়া পরিষদ বা ড্রাফটিং কমিটি। সেই কমিটি-র সদস্যরা ছিলেন:

  • আল্লাদি কৃষ্ণস্বামী আইয়ার
  • এন গোপালস্বামী
  • বি.আর. আম্বেদকর
  • কে.এম মুন্সী
  • মহম্মদ সাদুল্লা
  • বি.এল. মিত্র
  • ডি.পি. খৈতান

বি. এল. মিত্র স্বাস্থ্যের কারণে পদত্যাগ করলে তাঁর জায়গায় আসেন এন. মাধব রাউ। ১৯৪৮ সালে ডি. পি. খৈতান-এর মৃত্যুর পর পরিবর্ত হিসাবে আসেন টি. টি. কৃষ্ণমাচারী।

এই ড্রাফটিং কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন আম্বেদকর।

স্বাধীন ভারত রাষ্ট্রের সংবিধান রচনার জন্য ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৯ আগস্ট নবগঠিত কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার আইনমন্ত্রী ড ভীমরাও রামজী আম্বেদকর-এর নেতৃত্বে পাঁচজন সদস্যকে নিয়ে একটি সংবিধান খসড়া প্রস্তুত কমিটি গঠিত হয়। তাঁর নেতৃত্বে দীর্ঘ তিন বছরের চেষ্টায় যে সংবিধান রচিত হয় ১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে নভে তা পুর্ণাঙ্গ ভারতীয় সংবিধান হিসেবে গণপরিষদ কর্তৃক গৃহীত হয় এবং ২৮৪ জন সদস্য এই সংবিধানে স্বাক্ষর করেন।

ভারতীয় সংবিধানের বৈশিষ্ট্য

১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে জানুয়ারি ভারতের সংবিধান বলবৎ হওয়ার দিন থেকে এই সংবিধান অনুযায়ী ভারত রাষ্ট্রের শাসনকার্য পরিচালিত হয়ে আসছে । পৃথিবীর অগ্রণী দেশসমূহের সংবিধানের ভালো দিকগুলি নিতে গিয়ে ভারতের সংবিধান নানা বৈশিষ্ট্যে মন্ডিত হয়েছে ।

বিশ্বের দীর্ঘতম ও জটিলতম সংবিধান | Largest and Rigid Constitution

ভারতের সংবিধান হল পৃথিবীর দীর্ঘতম, লিখিত ও জটিল সংবিধান । ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে জানুয়ারি ভারতের সংবিধান কার্যকর হওয়ার সময় এই সংবিধানে মোট ৩৯৫ টি ধারা এবং ধারাগুলি ২২টি পার্টে ও ৮ টি তপশীল –এ বিভক্ত ছিল । বর্তমানে এই সংবিধানে মোট ৪৪৮ টি ধারা আছে এবং ধারাগুলি ২২টি পার্টে ও ১২ টি তপশীল -এ বিভক্ত । বিশ্বের কোনো দেশের সংবিধানে এতগুলি ধারা এবং উপধারা নেই । ভারতীয় সংবিধানে ইংল্যান্ড, আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, আয়ারল্যান্ড প্রভৃতি দেশের সংবিধানের বৈশিষ্ট্য প্রতিফলিত হয়ছে ।

সুপরিবর্তনীয় ও দুষ্পরিবর্তনীয় | Flexible

ভারতীয় সংবিধানের কতকগুলি ধারা আছে অনড় আবার সেই সঙ্গে কতকগুলি ধারা আছে পরিবর্তনীয় । প্রয়োজনে মাঝে মাঝেই সরকারকে সংবিধান সংশোধন করতে হয় । সংবিধানে প্রদত্ত নির্দেশ অনুযায়ীই এই সংবিধান সংশোধন করতে হয় । সংবিধানের কোনো ধারা পরিবর্তন করতে হলে আইনসভার উচ্চ কক্ষ ও নিম্নকক্ষের ২/৩ অংশ সদস্যের সম্মতিতে সংশোধনী প্রস্তাব উত্থাপন এবং ৩/৪ অংশ সদস্যের দ্বারা তা গৃহীত না হলে সংবিধানের কোনো ধারার পরিবর্তন আনা যাবে না । সংবিধানের ৪২ তম সংশোধনে উল্লেখ করা হয়েছে যে সংবিধানের যে-কোনো অংশের পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিবর্জনের নিরঙ্কুশ ক্ষমতা পার্লামেন্টের হাতে থাকবে । ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে জানুয়ারি ভারতের সংবিধান চালু হওয়ার পর থেকে ২ রা জানুয়ারি ২০১৩ পর্যন্ত ৯৮ বার সংবিধান সংশোধিত হয়েছে ।

যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো | Federal

সংবিধানে ভারতবর্ষকে কোথাও যুক্তরাষ্ট্র বলে উল্লেখ করা হয় নি । ভারতবর্ষকে বলা হয়েছে রাজ্য সমূহের সমষ্টি বা রাজ্যসংঘ (Union of States) । যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসন কাঠামো অনুসারে কেন্দ্রে কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্যে রাজ্য সরকার গঠিত হয়েছে । ভারতীয় রাষ্ট্র ব্যবস্থার শীর্ষে রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার । অঙ্গ রাজ্যগুলির শাসনভার সেখানকার নির্বাচিত সরকারের ওপর ন্যস্ত । ক্ষমতা বিভাজনের ক্ষেত্রে সংবিধানে তিনটি তালিকা আছে— (i) কেন্দ্রীয় তালিকা, (ii) রাজ্য তালিকা ও (iii) যুগ্ম তালিকা । কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারগুলি কতকগুলি বিষয়ে স্বাধীনতা ভোগ করেন ও আইন প্রণয়ন করেন । প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র সংক্রান্ত বিষয়, মুদ্রা, যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রভৃতি ৯৭টি বিষয় কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে আছে । একে কেন্দ্রীয় তালিকা বলে । রাজ্যগুলির অভ্যান্তরীণ প্রশাসন, স্থানীয় স্বায়ত্ত শাসন প্রভৃতি মোট ৬৬ টি বিষয়ের ভার দেওয়া হয়েছে রাজ্যগুলির ওপর । একে রাজ্য তালিকা বলে । এছাড়া বিচারব্যবস্থা, সংবাদপত্র, বিদ্যুৎ, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও সেচ প্রভৃতি ৪৭টি বিষয়ে যুগপৎ কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকারগুলি আইন প্রণয়ন করতে পারে । একে যুগ্ম তালিকা বলে ।

নাগরিকের মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি | Fundamental right

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের অনুকরণে ভারতের নাগরিকগণ যাতে গণতান্ত্রিক অধিকার যথাযত রূপে ভোগ করতে পারেন সেজন্য ভারতীয় সংবিধানে নাগরিকদের কতকগুলি মৌলিক অধিকার দান করা হয়েছে । সংবিধানের ১৪ নং থেকে ৩৫ নং ধারাতে নাগরিকদের উদ্দেশ্যে উল্লিখিত সাতটি মৌলিক অধিকারগুলি হল— (i) সাম্যের অধিকার, (ii) স্বাধীনতার অধিকার, (iii) শোষণের বিরুদ্ধে অধিকার, (iv) ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার, (v) শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ে অধিকার, (vi) সম্পত্তির অধিকার (vii) সাংবিধানিক প্রতিকারের অধিকার । ১৯৭৮ খ্রিস্টাব্দে ৪৪তম সংবিধান সংশোধন করে ‘ সম্পত্তির অধিকার ‘কে মৌলিক অধিকারের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে । বর্তমানে ভারতের নাগরিকরা ছয়টি মৌলিক অধিকার ভোগ করে থাকেন । অবশ্য এই অধিকারগুলি নিরঙ্কুশ নয় । জরুরি অবস্থার সময় নাগরিকদের এই মৌলিক অধিকার খর্ব করা হয় । মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হলে যে-কোনো ভারতীয় নাগরিক হাইকোর্ট বা সুপ্রিমকোর্টে আপীল করতে পারেন ।

নির্দেশমূলক নীতির সংযোজন | Directive Principle

ভারতীয় সংবিধানে কতকগুলি নির্দেশমূলক নীতির সংযোজন করা হয়েছে । আয়ারল্যান্ডের সংবিধানের অনুকরণে গৃহীত রাষ্ট্র পরিচালনার নির্দেশমূলক নীতিগুলি সংবিধানের অন্যতম বৈশিষ্ট্য । ভারতের সংবিধানে ৩৬ নং থেকে ৫১ নং ধারাগুলিতে এই নির্দেশমূলক নীতি গৃহীত হয়েছে । জনগণের সর্বাঙ্গীন কল্যাণ সাধন করে ভারতবর্ষকে একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে পরিণত করাই হল নির্দেশমূলক নীতির উদ্দেশ্য । বেকারভাতা, বার্ধক্যভাতা, স্ত্রী ও শিশুদের বিশেষ সুযোগদান, অবৈতনিক চিকিত্সা ইত্যাদি এই নীতির অন্তর্গত । মৌলিক অধিকারগুলির মতো এগুলি আইনে বলবৎযোগ্য না হলেও ৪২ তম সংবিধান সংশোধনে এই নীতি গুলির উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে । নির্দেশমূলক নীতিকে কোনভাবেই মৌলিক অধিকার বলে দাবি করা যায় না ।

সংসদীয় শাসনব্যবস্থা | Parliamentary System

যুক্তরাষ্ট্রীয় সংবিধান হলেও ভারতীয় সংবিধানে সংসদীয় শাসনব্যবস্থা নির্দিষ্ট আছে । ভারতের মন্ত্রিসভা পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল থেকে নিযুক্ত হয় । লোকসভার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে গঠিত মন্ত্রীসভাই প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী । রাষ্ট্রপতি হলেন নিয়মতান্ত্রিক প্রধান । রাজ্যাগুলিতেও এই প্রথা চালু আছে ।

এক নাগরিকত্ব | Single Citizenship

ভারতীয় শাসনতন্ত্রে ভারতবাসীর এক নাগরিকত্ব (Single Citizenship) স্বীকৃত হয়েছে । ভারতের অঙ্গ রাজ্যগুলিতে পৃথক নাগরিকত্বের ব্যবস্থা নেই । সংবিধানের প্রস্তাবনায় ভারত রাষ্ট্রকে একটি সার্বভৌম গণতান্ত্রিক প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্ররূপে বর্ণনা করা হয়েছে । পরবর্তীকালে প্রস্তাবনার মূল বয়ানটি সংশোধন করে ভারতবর্ষকে সার্বভৌম সমাজতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্ররূপে বর্ণনা করা হয়েছে । ভারতবর্ষের গণতান্ত্রিক ও প্রজাতান্ত্রিক রূপের সঙ্গে এর সমাজতান্ত্রিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ রূপটি তুলে ধরতেই রাষ্ট্র নায়কগণ ১লা এপ্রিল ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দে সংবিধানের ৪২তম সংশোধনীতে উক্ত শব্দদুটি সংযোজিত করেছেন ।

মৌলিক কর্তব্য | Fundamental Duties

ভারতীয় সংবিধানে নাগরিকদের ১০টি মৌলিক কর্তব্যের [Fundamental duties] উল্লেখ আছে । প্রতিটি নাগরিক এই কর্তব্যগুলি মেনে চলতে বাধ্য । এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল জাতীয় পতাকার প্রতি সম্মান প্রদর্শন, সংবিধানের আদর্শ মান্য করা, দেশের সার্বভৌমত্ব, অখন্ডতা, সংহতি, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ইত্যাদির প্রতি মর্যাদা প্রদান ।

ধর্ম নিরপেক্ষতা

সংবিধানে ভারতকে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র (Secular State) হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে । কোনো বিশেষ ধর্মকে ভারতের রাষ্ট্রীয়ধর্ম (State Religion) হিসেবে স্বীকার করা হয়নি । ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী জাতি, ধর্ম ও ভাষার পার্থক্যের জন্য রাষ্ট্র কোনো বৈষম্যমূলক আচরণ করবে না । প্রত্যেক নাগরিকই স্বাধীনভাবে নিজ নিজ ধর্ম আচরণ করতে পারবে ।

এককেন্দ্রিকতা

ভারতীয় সংবিধান যুক্তরাষ্ট্রীয় হলেও দেশের সার্বিক নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের হাতে আছে । দেশের ঐক্য ও সংহতি যাতে কোনো রূপেই বিঘ্নিত হতে না পারে তার জন্যই সংবিধান রচয়িতাগণ কেন্দ্রের হাতে অধিকতর ক্ষমতা অর্পণ করেছেন ।

দায়িত্বশীল সরকার

কেন্দ্রে একটি দায়িত্বশীল সরকার আছে । এই সরকারই প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী । সরকার তার যাবতীয় কাজের জন্য পার্লামেন্টের কাছে দায়বদ্ধ । পার্লামেন্ট মন্ত্রিসভার কাজের সমালোচনা করতে পারে । সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যবৃন্দের সমর্থন লাভে ব্যর্থ হলে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন ।

সার্বজনীন ভোটাধিকার

ভারতীয় সংবিধানে প্রথমে ২১ বত্সর বয়স্ক প্রত্যেক নাগরিককে ভোটাধিকার দেওয়া হয়েছিল । ১৯৮৮ খ্রিস্টাব্দে ৬২তম সংবিধান সংশোধনের দ্বারা ভোটদানের বয়সসীমা ২১ থেকে কমিয়ে ১৮ বত্সর করা হয়েছে । এক্ষেত্রে জাতি, ধর্ম, বর্ণ বা ধনী দরিদ্রের মধ্যে কোনো পার্থক্য করা হয় না ।

বিচার বিভাগের স্বাধীনতা

ভারতের সংবিধানে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষায় বিশেষ ব্যবস্থা অবলম্বন করা হয়েছে । সুপ্রিমকোর্ট এবং রাজ্য হাইকোর্টগুলির বিচারকদের চাকরির নিরাপত্তা রক্ষিত হয়েছে । কোনো বিচারক একবার বিচারক পদে নিয়োজিত হলে শাসন বিভাগ কর্তৃক তাঁর বেতন ও ভাতা কমানো যায় না । বিচারকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ পার্লামেন্টের দুই তৃতীয়াংশের ভোটে গৃহীত হওয়া ছাড়া শাসনবিভাগ কোন মতেই তাঁকে পদচ্যুত করতে পারবে না । এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ভারতের বিচার বিভাগের একটি বিশেষ সাংবিধানিক মর্যাদা আছে । শাসন বিভাগের প্রভাব থেকে বিচার বিভাগকে মুক্ত রাখার ব্যবস্থাও সংবিধানে করা হয়েছে । ইংল্যান্ডের গণতান্ত্রিক রীতি নীতি অনুযায়ী জনসাধারণ কর্তৃক প্রাপ্তবয়স্ক ভোটাধিকারের ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় সরকার এবং প্রাদেশিক সরকার সমূহ নির্বাচিত হয় । নির্ধারিত সময়ের পূর্বে লোকসভায় কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিধানসভায় কোনো রাজ্য সরকার পরাজিত হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রিসভাকে পদত্যাগ করতে হয় । তখন তার জায়গায় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বা গোষ্ঠীর মধ্যে থেকে নতুন সরকার গঠিত হয় । কোনো দল বা গোষ্ঠী সরকার গঠনে অক্ষম হলে নতুন করে জনগণের রায় নেবার প্রয়োজন হয়, অর্থাৎ নতুন করে কেন্দ্রে অথবা রাজ্যে অন্তর্বর্তী নির্বাচনঅনুষ্ঠিত হয় ।

যুক্তরাষ্ট্রীয় সংবিধান

ভারতের সংবিধানে ভারতকে যুক্তরাষ্ট্র বলে অভিহিত করা হয়নি । কিন্তু নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলির জন্য ভারতীয় সংবিধানকে যুক্তরাষ্ট্রীয় বলে মনে হয়, যেমন-

(১) যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য হল লিখিত ও অপরিবর্তনীয় সংবিধান । ভারতের সংবিধান লিখিত এবং আংশিক ভাবে অপরিবর্তনীয় ।

(২) যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় একটি কেন্দ্রীয় সরকার ও কতগুলি আঞ্চলিক সরকার পাশাপাশি অবস্থান করে । ভারতের ক্ষেত্রে একটী কেন্দ্রীয় সরকার ও ২৮টি রাজ্য সরকার এই দুই ধরণের সরকার নিয়েই ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠিত ।

(৩) যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল সংবিধানের প্রাধান্য, ভারত রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে ভারতীয় সংবিধানের প্রাধান্য স্বীকৃত হয়েছে ।

(৪) ভারতীয় শাসনব্যবস্থার অপর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল একটি নিরপেক্ষ যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত । ভারতেও সংবিধান অনুসারে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে । এই আদালত হল সুপ্রিমকোর্ট ।

ভারতকে একটি যুক্তরাষ্ট্র বলে মনে করা হলেও:- (১) আইন প্রণয়ন, (২) শাসন পরিচালনা, (৩) আর্থিক বিষয়, (৪) রাজ্যের নাম, সীমানা ইত্যাদির পরিবর্তন, (৫) উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারী নিয়োগ (I.A.S, I.P.S প্রভৃতি) (৬) অর্ডিনান্স জারি, (৭) রাজ্যে কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনী প্রেরণ, (৮) জরুরিঅবস্থা ঘোষণা প্রভৃতি বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় ভারতীয় শাসনব্যবস্থা আকৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রীয় হলেও প্রকৃতিগতভাবে এককেন্দ্রিক । অন্যভাবে বলা যায় ভারতীয় সংবিধান হল আধা-যুক্তরাষ্ট্রীয় সংবিধান ।

আরো পড়তে: ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতির নাম কি, ভারতের প্রথম মহিলা রাষ্ট্রপতি নাম কি

ভারতীয় সংবিধান কবে গৃহীত হয়, ভারতের সংবিধান কবে গৃহীত হয়

ভারতের সংবিধান ১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর গণপরিষদে গৃহীত হওয়ার পর ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি থেকে এই সংবিধান কার্যকরী হয়।

উল্লেখ্য, ১৯৩০ সালের ২৬ জানুয়ারি জাতীয় কংগ্রেসের ঐতিহাসিক স্বাধীনতা ঘোষণার স্মৃতিতে ২৬ জানুয়ারি তারিখটি সংবিধান প্রবর্তনের জন্য গৃহীত হয়েছিল। সংবিধানে ভারতীয় রাজ্যসংঘকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র রূপে ঘোষণা করা হয়েছে। “সমাজতান্ত্রিক”, “ধর্মনিরপেক্ষ” ও “সংহতি” এবং সকল নাগরিকের মধ্যে “ভ্রাতৃভাব” – এই শব্দগুলি ১৯৭৬ সালে একটি সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের সঙ্গে যুক্ত করা হয়।

সংবিধান প্রবর্তনের স্মৃতিতে ভারতীয়রা প্রতি বছর ২৬ জানুয়ারি তারিখটি প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে উদযাপন করেন। ভারতের সংবিধান বিশ্বের সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলির মধ্যে বৃহত্তম। লিখিত সংবিধান। এই সংবিধানে মোট ২৪টি অংশে ৪৪৮টি ধারা, ১২টি তফসিল এবং ১১৩টি সংশোধনী বিদ্যমান।

ভারতের সংবিধানের ইংরেজি সংস্করণে মোট শব্দসংখ্যা ১১৭,৩৬৯। এই সংবিধানের প্রবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে পূর্বপ্রচলিত ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের অবসান ঘটে। দেশের সর্বোচ্চ আইন হওয়ার দরুন, ভারত সরকার প্রবর্তিত প্রতিটি আইনকে সংবিধান-অনুসারী হতে হয়। সংবিধানের খসড়া কমিটির চেয়ারম্যান ড. ভীমরাও রামজি আম্বেডকর ছিলেন ভারতীয় সংবিধানের প্রধান স্থপতি।

ভারতের সংবিধান কবে কার্যকরী হয়, ভারতের সংবিধান কবে কার্যকর হয়

ভারতের সংবিধান ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন। এই সংবিধানে সরকারের গঠন, কার্যপদ্ধতি, ক্ষমতা ও কর্তব্য নির্ধারণ; মৌলিক অধিকার, রাষ্ট্রপরিচালনার নির্দেশমূলক নীতি, এবং নাগরিকদের কর্তব্য নির্ধারণের মাধ্যমে দেশের মৌলিক রাজনৈতিক আদর্শের রূপরেখাটি নির্দিষ্ট করা হয়েছে। ১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর গণপরিষদে গৃহীত হওয়ার পর ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি থেকে এই সংবিধান কার্যকরী হয়।

আরো পড়তে: ভারতের জাতীয় সংগীত

ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক কর্তব্য কয়টি, ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক অধিকার কয়টি

ভারতে মৌলিক অধিকার: ভারতের সংবিধানের এই অংশটি আপনাকে মৌলিক অধিকার সম্পর্কে ধারণা দেবে। বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় মৌলিক অধিকার বিভাগ থেকে 2-3 নম্বর প্রশ্ন আসে। ভারতের মৌলিক অধিকারগুলি নাগরিক স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি দেয় যাতে সমস্ত ভারতীয় ভারতের নাগরিক হিসাবে শান্তি ও সম্প্রীতির সাথে তাদের জীবনযাপন করতে পারে। এই অধিকারগুলি “মৌলিক” হিসাবে পরিচিত কারণ এগুলি সর্বাত্মক উন্নয়নের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় যেমন, বস্তুগত, বৌদ্ধিক, নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক এবং দেশের মৌলিক আইন অর্থাৎ সংবিধান দ্বারা সুরক্ষিত।এই আর্টিকেলটিতে আপনি ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক অধিকার সম্পর্কে তথ্য পাবেন।

মৌলিক অধিকার কি [ধারা 12-35 (পর্ব-III)]

ভারতীয় সংবিধানের আর্টিকেল 12-35 এ মৌলিক অধিকার রয়েছে। এই মানবাধিকারগুলি ভারতের নাগরিকদের দেওয়া হয়েছে কারণ সংবিধানে উল্লেখ আছে যে এই অধিকারগুলি অলঙ্ঘনীয়। এই মৌলিক অধিকার গুলি হল -সাম্যের অধিকার,স্বাধীনতার অধিকার,শোষণের বিরুদ্ধে অধিকার,ধর্মের অধিকার ,সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাগত অধিকারও সাংবিধানিক প্রতিকারের অধিকার।

ব্যক্তির দ্বারা তার পূর্ণ বুদ্ধিবৃত্তিক, নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক মর্যাদা অর্জনের জন্য এই মৌলিক অধিকারগুলি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।

সংবিধানে তাদের অন্তর্ভুক্তির উদ্দেশ্য মানুষের নয়, সরকারের আইন প্রতিষ্ঠা করা। মৌলিক অধিকার রাষ্ট্রের যে কোনো আক্রমণের বিরুদ্ধে নাগরিকদের স্বাধীনতা রক্ষা করে এবং দেশে স্বৈরাচারী ও স্বৈরাচারী শাসন প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা প্রদান করে। ব্যক্তি ও দেশের সর্বাত্মক উন্নয়নের জন্য এগুলো অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে মনে করা হয়।

কয়টি মৌলিক অধিকার আছে?

ভারতের সংবিধানে তৃতীয় অধ্যায়ের 12 নং থেকে 35 নং ধারার মধ্যে মৌলিক অধিকার রয়েছে। ভারতের মৌলিক অধিকার মোট 6টি (1978 সালে 44 তম সংবিধান সংশোধন এর মাধ্যমে সম্পত্তির অধিকার সংবিধানের মৌলিক অধিকারের অংশ থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে ) মৌলিক অধিকার রয়েছে।

সংবিধানের মৌলিক অধিকার গুলি হলো

  • সাম্যের অধিকার (14 থেকে 18 নম্বর অনুচ্ছেদ)
  • স্বাধীনতার অধিকার (19 থেকে 22নম্বর অনুচ্ছেদ)
  • শোষণের বিরুদ্ধে অধিকার (23 ও 24 নম্বর অনুচ্ছেদ)
  • ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার (25 থেকে 28 নম্বর অনুচ্ছেদ)
  • সংস্কৃতি ও শিক্ষা-বিষয়ক অধিকার (29 ও 30 নম্বর অনুচ্ছেদ)
  • সংবিধানের প্রতিবিধানের অধিকার (32 ও 35 নম্বর অনুচ্ছেদ)

মৌলিক অধিকার: সাম্যের অধিকার (14 থেকে 18 নম্বর অনুচ্ছেদ)

  • 14 নং আর্টিকেলে বলা হয়েছে আইনের দৃষ্টিতে সবাই সমান ও আইন সবাইকে সম ভাবে রক্ষা করবে।
  • 15 নং আর্টিকেলে বলা হয়েছে রাষ্ট্র কোন নাগরিকের সাথে ধর্ম ,জাতি,বর্ণ, লিঙ্গ বা জন্ম স্থানের ভিত্তিতে বৈষম্যমূলক আচরণ করতে পারবে না।
  • 16 নং আর্টিকেল অনুসারে সরকারি চাকুরি তে সব নাগরিক দের সমান সুযােগসুবিধা থাকবে |
  • 17 নং আর্টিকেল অনুসারে অস্পৃশ্যতা নিষিদ্ধ বলে ঘােষনা করা হয়েছে
  • 18 নং আর্টিকেল অনুসারে সামরিক ও শিক্ষা ক্ষেত্র ছাড়া সমস্তু ক্ষেত্রে উপাধি গ্রহন ও ব্যাবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
  • ভারতীয় সংবিধান দ্বারা অনুমোদিত সাম্যের অধিকারের ব্যতিক্রমটি হ’ল: রাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপাল কোনও আদালতের কাছে জবাবদিহি করে না।

মৌলিক অধিকার: স্বাধীনতার অধিকার (19 থেকে 22 নম্বর অনুচ্ছেদ)

ভারতীয় সংবিধানের 19 নং আর্টিকেলে নাগরিকদের 6 প্রকার স্বাধীনতার অধিকার দেওয়া হয়েছে ।

(1)বাক স্বাধীনতা ও মতামত প্রকাশ

(2) শান্তিপূর্ণ ও নিরন্ত্রভাবে সমাবেত হওয়া

(3) সংঘ ও সমিতি গঠন

(4) ভারতের সর্বত্র চলাফেরা করা।

(5) ভারতের যে কোন অঞ্চলে স্বাধীনভাবে বসবাস

(6) যে কোন বৃত্তি বা পেশা অবলম্বন

  • 20 নং আর্টিকেল, আইনভঙ্গের অপরাধে অভিযুক্ত কোন ব্যক্তিকে আইন অনুসারেই শাস্তি প্রদান
  • 21 নং আর্টিকেলেয় বলা হয়েছে কোনো ব্যক্তিকে আর জীবন ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।
  • 21A আর্টিকেল অনুসারে রাষ্ট্র 6-14 বছর বয়সী সকল শিশুদের জন্য অবৈতনিক ও বাধ্যতামুলক শিক্ষার ব্যাবস্থা করবে।
  • বিশেষ ক্ষেত্রে গ্রেপ্তার এবং আটকের বিরুদ্ধে সুরক্ষা: 22 নং আর্টিকেল অনুসারে কোন ব্যক্তিকে যুক্তি সংগত কোন কারণ ছাড়া গ্রেফতার করা যাবে না।

মৌলিক অধিকার: শোষণের বিরুদ্ধে অধিকার (23 ও 24 নম্বর অনুচ্ছেদ)

  • 23 নং আর্টিকেলে বলা হয়েছে মানুষ নিয়ে ব্যবসা অর্থাৎ মানুষ ক্রয় বিক্রয়, বেগার খাটানাে বা অনুরুপ ভাবে বলপূর্বক শ্রমদান নিষিদ্ধ।
  • 24 নং আর্টিকেলে বলা হয়েছে 14 বছরের কম বয়সী শিশুদের খনি কারখানা বা অন্য কোন বিপজ্জনকক কার্যে নিয়ােগ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

মৌলিক অধিকার: ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার (25 থেকে 28 নম্বর অনুচ্ছেদ)

  • সংবিধানের 25 নং আর্টিকেলে বলা হয়েছে প্রত্যেক ব্যক্তি নিজের বিবেক এবং বিশ্বাস অনুযায়ী যে কোন ধর্ম গ্রহন ধর্মীয়আচার অনুষ্ঠান পালন ও নিজ ধর্ম প্রচার করতে পারবে ।
  • সংবিধানের 26 নং আর্টিকেলে বলা হয়েছে প্রতিটি ধর্মীয় সম্প্রদায় নিজেদের ধর্ম প্রচারের জন্য ধর্ম প্রতিষ্ঠান স্থাপন, রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা করতে পারবে ।
  • সংবিধানের 27 নং আর্টিকেলে বলা হযেছে কোন বিশেষ ধর্ম বা ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উন্নতি এবং রক্ষনাবেক্ষনের জন্য কোন ব্যক্তি কে কর বা চাঁদা দিতে বাধ্য করা যাবে না।
  • সংবিধানের 28 নং আর্টিকেলে বলা হয়েছে যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ বা আংশিক ভাবে সরকারি অর্থে পরিচালিত সেগুলিতে ধর্ম শিক্ষা দেওয়া যাবে না।

মৌলিক অধিকার: সংস্কৃতি ও শিক্ষা-বিষয়ক অধিকার (29 ও 30 নম্বর অনুচ্ছেদ)

  • সংবিধানের 29 নং আর্টিকেলে বলা হযেছে ভারতীয় ভূখন্ডের যে কোন অংশে বসবাসকারী নাগরিক নিজ নিজ ভাষা,লিপি ও সংস্কৃতি সংরক্ষণের অধিকার ভোগ করতে পারবে।
  • সংবিধানের 30 নং আর্টিকেলে বলা হয়েছে ধর্মীয় ও ভাষা গত সংখ্যালঘু সহ সকল সংখ্যালঘুদের নিজেদের ইচ্ছানুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও পরিচালনার অধিকার কে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে ।

মৌলিক অধিকার: সংবিধানের প্রতিবিধানের অধিকার (32 ও 35 নম্বর অনুচ্ছেদ)

নাগরিকদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘিত হলে সংবিধান প্রতিকারের নিশ্চয়তা দেয়। সরকার কারো অধিকার লঙ্ঘন বা বাধা দিতে পারে না। যখন এই অধিকারগুলি লঙ্ঘিত হয়, সংক্ষুব্ধ পক্ষ আদালতের কাছে যেতে পারে। নাগরিকরা এমনকি সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারেন যা মৌলিক অধিকার প্রয়োগের জন্য রিট জারি করতে পারে। সংবিধানের 32 নং আর্টিকেলে বলা হয়েছে ভারতীয় নাগরিকরা যদি মনে করেন যে তাদের মৌলিক অধিকার ক্ষুন্ন হচ্ছে বা খর্ব করার চেষ্টা করা হচ্ছে সেক্ষেত্রে তারা হাইকোর্ট বা সুপ্রীম কোর্টের দারস্থ হতে পারেন|

মৌলিক অধিকার: রিট

মৌলিক অধিকার প্রয়োগের জন্য বিচার বিভাগকে রিট দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।  সুপ্রিম কোর্ট ভারতের ভূখণ্ডের মধ্যে যে কোনও ব্যক্তি বা সরকারের বিরুদ্ধে মৌলিক অধিকার প্রয়োগের জন্য আদেশ বা নিম্নোক্ত রিটগুলি জারি করতে পারে:

1.Habeas Corpus(হেবিয়াস কর্পাস):এটি সরকারী বা কোনও ব্যক্তিগত ব্যক্তির কাছে জারি করা হয় যিনি অন্য ব্যক্তিকে তার হেফাজতে রেখেছেন। দ্বিতীয় ব্যাক্তিকে আদালতের কাছে হাজির করা হয় যাতে তিনি কী কারণে আবদ্ধ ছিলেন তা আদালতকে জানাতে পারেন।

2.Mandamus(ম্যান্ডামাস): এর আক্ষরিক অর্থ কমান্ড।  এটি ব্যক্তিকে এমন কিছু সরকারী বা আইনী দায়িত্ব পালনের জন্য আদেশ দেয় যা সেই ব্যক্তি সম্পাদন করতে অস্বীকার করেছে।

3.Prohibition(প্রহিবিশন): এখতিয়ারের সীমা অতিক্রম না করার জন্য উচ্চ আদালত নিম্ন আদালতে এই রিটটি জারি করে।  প্রসিডিং অমীমাংসিত থাকার সময় এটি জারি করা হয়।

4.Certiorari(সার্টিওরারি): এই রিট আদালত বা ট্রাইব্যুনালের বিরুদ্ধে, আদালত বা ট্রাইব্যুনালের আদেশ বা সিদ্ধান্ত বাতিল করতে জারি করা হয়।  আদেশ দেওয়ার পরে এটি জারি করা যেতে পারে।

5.Quo Warranto(ক্যুও ওয়ারেন্টো):আদালত দাবির বৈধতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ বিষয়ক একটি প্রক্রিয়া। এতে উচ্চতর আদালত কোনও সরকারী আধিকারিককে অপসারণ করতে পারবেন যদি তিনি অবৈধভাবে এই পদটি গ্রহণ করেন।

মৌলিক অধিকারের বৈশিষ্ট্য

মৌলিক অধিকারগুলি যেভাবে প্রয়োগ করা হয় সেগুলি সাধারণ আইনী অধিকার থেকে আলাদা। আইনগত অধিকার লঙ্ঘিত হলে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি নিম্ন আদালতে না গিয়ে সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারবেন না। তাকে প্রথমে নিম্ন আদালতে যেতে হবে।কিছু মৌলিক অধিকার সকল নাগরিকের জন্য উপলব্ধ এবং বাকিগুলি সকল ব্যক্তির (নাগরিক এবং বিদেশী) জন্য।

মৌলিক অধিকার নিরঙ্কুশ অধিকার নয়। তাদের যুক্তিসঙ্গত বিধিনিষেধ রয়েছে যার অর্থ তারা রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, জনসাধারণের নৈতিকতা, শালীনতা এবং অন্য দেশের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের সাথে শর্ত সাপেক্ষে।মৌলিক অধিকারগুলি ন্যায়সঙ্গত বোঝায় যে তারা আদালত দ্বারা প্রয়োগযোগ্য। মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে মানুষ সুপ্রিম কোর্টের কাছে যেতে পারে।

মৌলিক অধিকার সংসদ দ্বারা একটি সাংবিধানিক সংশোধনী দ্বারা সংশোধন করা যেতে পারে কিন্তু শুধুমাত্র যদি সংশোধনী সংবিধানের মৌলিক কাঠামো পরিবর্তন না করে। জাতীয় জরুরি অবস্থার সময় মৌলিক অধিকার স্থগিত করা যেতে পারে। কিন্তু, ধারা 20 এবং 21 এর অধীনে নিশ্চিত করা অধিকার স্থগিত করা যাবে না।সামরিক আইন বা সামরিক শাসনের অধীনে থাকা একটি এলাকায় মৌলিক অধিকারের প্রয়োগ সীমিত করা যেতে পারে।

মৌলিক অধিকারের গুরুত্ব

ভারতের মৌলিক অধিকার ভারতের প্রকৃত গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য, ও সবরকম অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক বৈষম্যের অবসান ঘটানো। ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনায় সমতার আদর্শ প্রস্তাবিত রয়েছে যেখানে বলা হয়েছে যে ভারতের সমস্ত মানুষ এ সমান সংবিধানের কাছে। মৌলিক অধিকার অনুযায়ী ভারতীয় ভূখন্ডের মধ্যে কোন ব্যক্তিকে আইনের দৃষ্টিতে সমতা অথবা আইনের দ্বারা সমানভাবে সংরক্ষিত হবার অধিকার থেকে কেউ অস্বীকার করবে না। সেই কারণে ভারতবর্ষের সংবিধানে মৌলিক অধিকারগুলি খুবই গুর্রুত্বপূর্ণ।

ভারতীয় সংবিধানের ধারা কয়টি, ভারতীয় সংবিধানের ধারা গুলি কি কি

ভারতের সংবিধানের গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেল বা অনুচ্ছেদগুলি(1-350) এক নজরে দেখে নেওয়া যাক:-

1 নং ধারা:-.ভারতীয় ইউনিয়ন ও ভূখণ্ডগত এলাকা।

2 নং ধারা:- নতুন রাজ্যের সূচনা ও গঠন।

3 নং ধারা:-. রাজ্যের সীমানা পরিবর্তন বা ভূখণ্ডগত এলাকার পরিবর্তন ও রাজ্যের নাম পরিবর্তন।

4 নং ধারা:-.নতুন রাজ্যের সূচনা, রাজ্যের সীমানার পরিবর্তন ইত্যাদির জন্য সংবিধানের প্রথম ও চতুর্থ তফশিলের সংশােধনজনিত ব্যবস্থা।

 নাগরিকতা (Citizenship)

5 নং ধারা:- ভারতীয় সংবিধান চালু বা কার্যকর হবার সময়ে নাগরিকতা সম্পর্কিত বিষয়।

6 নং ধারা:-. যে সমস্ত ব্যক্তি পাকিস্তান থেকে ভারতে এসেছে, সেই সমস্ত ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব অধিকার (Rights of citizenship) প্রদান।

7 নং ধারা:-যে সমস্ত ভারতীয় পাকিস্তানে বসবাস করছে, তাদের নাগরিকতানিত অধিকার প্রদান।

8 নং ধারা:- যে সমস্ত ভারতীয় বংশােদ্ভূত (NRI) ব্যক্তি ভারতের বাইরে বসবাস করছে, তাদের বিশেষ

নাগরিকত্বের অধিকার প্রদান।

9 নং ধারা:- সে সমস্ত ব্যক্তি বিদেশী কোনাে রাষ্ট্রের নাগরিকতা গ্রহণ করেছে তারা ভারতীয় নাগরিক হিসাবে গণ্য হবে না।

10 নং ধারা:- নাগরিকদের অধিকার সংক্রান্ত বিষয়।

11 নং ধারা:-পার্লামেট নাগরিকতার বিষয়টি আইন প্রণয়নের দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করবে।

মৌলিক অধিকারসমূহ (Fundamental Rights)|

12 নং ধারা:- রাষ্ট্রের সংজ্ঞা ও বর্ণনা।

13 নং ধারা:- মৌলিক অধিকারগুলির সাথে সঙ্গতিহীন আইন অথবা মৌলিক অধিকারগুলিকে খর্ব করে এমন আইন বাতিলযােগ্য।

14 নং ধারা:-.সাম্যের অধিকার।

15 নং ধারা:-জাতি, ধর্ম, বর্ণ, স্ত্রী, পুরুষ, জন্মস্থান ইত্যাদি নির্বিশেষে যে-কোন প্রকার বৈষম্যকে

নিষিদ্ধকরণ।

16 নং ধারা:- সরকারী চাকুরীলাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকদের সমান সুযোগ-সুবিধা প্রদান।

17 নং ধারা:-অস্পৃশ্যতা নিষিদ্ধকরণ।

18 নং ধারা:- পদবীগ্রহণ নিষিদ্ধ।

19 নং ধারা:-

(I)বাক্ ও মতামত প্রকাশের অধিকার।

(ii) শান্তিপূর্ণভাবে ও নিরস্ত্রভাবে সমবেত হওয়ার অধিকার। 

(iii) সমিতি বা সংঘ গঠনের অধিকার।

(iv) ভারতের সর্বত্র স্বাধীনভাবে চলাফেরার

অধিকার। 

(v) ভারতের ভূখণ্ডের যে-কোন

অংশে বসবাস করার অধিকার। 

(vi) যে-কোন বৃত্তি অবলম্বন করার, অথবা যে-কোন উপজীবিকা, ব্যবসা-বাণিজ্য চালানাের অধিকার।

20 নং ধারা:- কোন অপরাধের জন্য নাগরিককে বিধিবহির্ভূত ও অতিরিক্ত শাস্তিপ্রদান করা যাবে না।

20 A নং ধারা:-জীবন ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতার সংরক্ষণ।

21 নং ধারা:- প্রাথমিক শিক্ষাকে মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতিপ্রদান।

22 নং ধারা:- গ্রেপ্তার ও আটক রাখার বিরুদ্ধে সংরক্ষণমূলক ব্যবস্থা। কোন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হলে সত্বর তাকে গ্রেপ্তারের কারণ জানাতে হবে।

23 নং ধারা:- বলপ্রয়ােগের দ্বারা পরিশ্রম করানাে, বেগার খাটানাে নিষিদ্ধকরণ।

24 নং ধারা:- ১৪ বছরের কম বয়স্ক শিশুদের কলকারখানা, খনি বা অন্য কোন বিপজ্জনক কাজে নিযুক্ত করা নিষিদ্ধ।

25 নং ধারা:- সকল ব্যক্তিই সমানভাবে বিবেকের স্বাধীনতা অনুসারে ধর্মস্বীকার, ধর্মাচরণ এবং ধর্মপ্রচারের স্বাধীনতা ভােগ করবে।

26 নং ধারা:- প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায় বা গােষ্ঠী নিজের ধর্মীয় সংগঠন ও কার্যাদি পরিচালনা করতে পারবে।

27 নং ধারা:-ধর্মীয় কারণে কােন ব্যক্তিকে কর দিতে বাধ্য বা যাবে না।

28 নং ধারা:- শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মীয় শিক্ষার ক্লাসে ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণের বিষয়টি তাদের ইচ্ছাধীন।

ভারতীয় সংবিধানের ধারা সমূহ pdf

ভারতীয় সংবিধানের ধারা সমূহ pdf Click here

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | ভারতীয় সংবিধান

Q1. সংবিধান কি

Ans – সংবিধান হল রাষ্ট্র পরিচালনার মৌলিক দলিল। যেসব নিয়মের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালিত হয় তাকে সংবিধান বলে। সরকার কিভাবে নির্বাচিত হবে আইন, শাসন ও বিচার বিভাগ কিভাবে গঠিত হবে এদের ক্ষমতা কী রকম হবে, জনগণ ও সরকারের সম্পর্ক কেমন হবে এসব বিষয়ে সংবিধান উল্লেখ থাকে। এসব বিষয়ে ক্ষেত্রে সংবিধানের পরিপন্থী কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় না। রাষ্ট্রের সরকার সংবিধান বিরোধী কোন কাজ করতে পারে না।

তাই সংবিধানকে রাষ্ট্রের চালিকাশক্তি বলা হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের জনক এরিস্টটল বলেছেন সংবিধান হলো এমন এক জীবন পদ্ধতি যা রাষ্ট্র স্বয়ং নিজে বেছে নিয়েছে । তার মানে রাষ্ট্র নিজেই তার জীবন কে পরিচালনা করার জন্য সংবিধানকে বেছে নিয়েছেন।

Q2. ভারতের সংবিধানের জনক, ভারতীয় সংবিধানের রূপকার কে

Ans – ভারতীয় সংবিধানের জনক হলেন ড: ভিম রাও আম্বেদকর। তিনি ভারতীয় সংবিধানের প্রধান স্থপতি ছিলেন যার জন্য তিনি “ভারতীয় সংবিধানের জনক” উপাধি অর্জন করেছিল। 1947 সালে, ড. আম্বেদকর সংবিধানের খসড়া কমিটির সভাপতি নিযুক্ত হন। আম্বেদকর একজন বিজ্ঞ সংবিধান বিশেষজ্ঞ ছিলেন, তিনি প্রায় 60টি দেশের সংবিধান অধ্যয়ন করেছিলেন।

Q3. ভারতীয় সংবিধানের ২১ নং ধারা

Ans – 21 নং আর্টিকেলেয় বলা হয়েছে কোনো ব্যক্তিকে আর জীবন ও ব্যক্তিগত স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।
21A আর্টিকেল অনুসারে রাষ্ট্র 6-14 বছর বয়সী সকল শিশুদের জন্য অবৈতনিক ও বাধ্যতামুলক শিক্ষার ব্যাবস্থা করবে।

Q4. সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সংবিধান এর নাম কি

Ans – সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের সংবিধানকে সনদ (Charter) বলা হয়।

Q5. ভারতের সংবিধানের প্রস্তাবনা

Ans – প্রস্তাবনার অর্থ হল সংবিধানের ভূমিকা বা সংবিধানের অন্তর্গত আইনগুলির সংকলন। সংবিধান প্রণেতারা আমেরিকার সংবিধান থেকে এই প্রস্তাবনার ধারণা গ্রহন করেন। আমেরিকার সংবিধান হল প্রস্তাবনা সম্বলিত প্রথম লিখিত সংবিধান। ভারতীয় সংবিধানের মূল ভাবধারাটি জে. এল. নেহেরুর উদ্দেশ্য সমূহ সংক্রান্ত প্রস্তাবাদির ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে।

এই প্রস্তাবাদি 13ই ডিসেম্বর, 1946 তারিখে গণপরিষদে গৃহীত হয়। ন্যায়বিচারের ধারণা রাশিয়া থেকে গৃহীত, ‘স্বাধীনতা’, ‘সাম্য’ ও ‘সৌভ্রাতৃত্ব’ এর ধারণা ফরাসী বিপ্লব থেকে গৃহীত।প্রস্তাবনা, সংবিধানের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনা ‘অবজেক্টিভ রেজোলিউশন’-এর উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। এটি 42তম সাংবিধানিক সংশোধনী আইন (1976) দ্বারা সংশোধন করা হয়েছে, যাতে তিনটি নতুন শব্দ যুক্ত করা হয়েছে – সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ এবং অখণ্ডতা।

Q6. সংবিধান মানে কি

Ans – সংবিধান হলো রাষ্ট্র বিষয়ে নাগরিকদের রাজনৈতিক আশা-আকাঙ্ক্ষা-স্বপ্নের তাত্ত্বিক কাঠামোর প্রায়োগিক নির্দেশনা।
নিঃসন্দেহে সংবিধান খুবই স্পর্শকাতর আইনি দলিল। সংবিধান প্রনয়ন একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া। ন্যায্য সংবিধান অর্জন সহজ কথা নয়, এর জন্য প্রয়োজনে যুদ্ধ করতে হয়-যেমনটি বাঙালি জাতি করেছে ১৯৭১ সালে।

Q7. ভারতের সংবিধান স্বীকৃত ভাষা কয়টি

Ans – ভারতীয় সংবিধান দ্বারা অনুমোদিত 22 টি ভাষা রয়েছে। ভারতীয় সংবিধানের অষ্টম তফশিল 22টি ভাষাকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

Q8. ভারতের সংবিধানে শিক্ষার অধিকার হলো, ভারতীয় সংবিধানে শিক্ষা সংক্রান্ত ধারা

Ans – ভারতীয় সংবিধানের ২৮, ৩০, ৪৫, ৪৬, ৬২, ৬৩, ৬৪, ৩৫০ প্রভৃতি ধারায় শিক্ষাসংক্রান্ত আলােচনা রয়েছে।

Q9. বর্তমানে ভারতীয় সংবিধানে কয়টি ধারা আছে

Ans – ভারতের সংবিধানে মূলত 395টি ধারা ছিল। বর্তমানে সংবিধানের একটি প্রস্তাবনা এবং 470টি ধারা রয়েছে যা 25টি অংশে এবং 12টি তফসিলে বিভক্ত।

Q10. ভারতীয় সংবিধানে স্বাধীনতার অধিকার

Ans – ভারতীয় সংবিধানের 21 ধারায় নাগরিকদের জীবন এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতার অধিকার প্রদান করে। এই অধিকার নিশ্চিত করে যে প্রত্যেক ব্যক্তির মর্যাদা ও স্বাধীনতার সাথে বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে এবং আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত পদ্ধতি ব্যতীত কোনও ব্যক্তিকে তাদের জীবন বা ব্যক্তিগত স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।

Q11. ভারতীয় সংবিধানের 14 নং ধারা

Ans – ধারা 14: সাম্যের অধিকার: আইনের সামনে সমতা মানে আইনের দৃষ্টিতে সকল ব্যক্তি সমান, এবং কোনো ব্যক্তিকে তাদের ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ বা অন্য কোনো কারণের ভিত্তিতে বৈষম্য করা যাবে না। এর অর্থ এই যে আইনটি তাদের সামাজিক অবস্থান বা সম্পদ নির্বিশেষে সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য।

Q12. ভারতীয় সংবিধানের 19 নং ধারা

Ans – ধারা19: বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার: ভারতীয় সংবিধানের 19 ধারায় নাগরিকদের বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার প্রদান করে। বক্তৃতা, লেখা বা সংবাদ মাধ্যমের মতো যেকোনো মাধ্যমে মতামত, চিন্তাভাবনা, বিশ্বাস এবং ধারণা প্রকাশের স্বাধীনতা এই অধিকারের অন্তর্ভুক্ত।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।