ভারতের স্বাধীনতা দিবস

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

ভারতের স্বাধীনতা দিবস সম্পর্কে রচনা, ভারতের স্বাধীনতা দিবস রচনা, ভারতের স্বাধীনতা দিবস নিয়ে কিছু কথা

দেশজননী ভারতবর্ষের শৃঙ্খলমুক্তির জীবনের ইতিহাসে স্মরণীয় দিন ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট। কয়েক শতক ধরে বহু বীর সন্তানের বুকের রক্ত ঝরানো ও বহু বীর শহীদের আত্মবলীদানের পর এসেছে মাতৃজননী ভারতমাতার জাতীয় মুক্তি তথা স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতার অরুণোদয় সূচিত হয়েছে সুদীর্ঘ আন্দোলন ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যা প্রায় দুশো বছর ধরে চলা ব্রিটিশ রাজশক্তিকে পদানত করে। প্রসঙ্গত আজ আমরা স্বাধীনতার দীর্ঘ ৭৫ বছর অতিক্রম করে প্লাটিনাম জয়ন্তী তথা স্বাধীনতার ঐতিহাসিক মহোৎসবে সমাগত হয়েছি।

ভারত বহু শতাব্দী ধরে মাতৃভূমির পরাধীনতার গ্লানি-স্বাধীনতার আকাঙ্খাকে কখনই পরিত্যাগ করেননি তেমনি মনের মন্দিরে লালন করে আসা স্বাধীনতার আর্তিকে ফুরিয়ে যেতে দেয়নি। বরং ভারতমাতার দুঃসাহসী বীরসংগ্রামীরা আত্মোৎস্বর্গ দ্বারা মাতৃভূমি, সংস্কৃতি ও স্বাধীনতা সংগ্রামে সহিংস কিংবা অহিংস আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অশেষ দুঃখকষ্ট বরণ করেছেন, নিপীড়ন-নির্যাতন সহ্য করেছেন এবং এমনকি মৃত‍্যুবরণও করেছেন। এহেন স্বাধীনতা ব্রিটিশ রাজশক্তির কৃপা বা অনুগ্রহের দান নয়, বরং আদায়কৃত বা অর্জিত।

১৯৪৬ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রভাবে ব্রিটেনের রাজকোষ শূন্য হয়ে পড়ে। এমতাবস্থায় ব্রিটেনের পক্ষে অভ্যন্তরীণ বা আন্তর্জাতিক কোনও রকম সাহায্য লাভ অসম্ভব হয়ে পড়ে। ব্রিটেনের লেবার সরকার বুঝতে পারে সেই পরিস্থিতিতে ভারতে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিরতাকে সামাল দেওয়ার ক্ষমতা বা অর্থবল ব্রিটিশ ভারতীয় সেনাবাহিনী হারিয়ে ফেলেছে। তাঁরা ভারতে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটানোর সিদ্ধান্ত নেন। ১৯৪৭ সালের গোড়ার দিকে ব্রিটিশ সরকার ঘোষণা করে দেয় যে, ১৯৪৮ সালের জুন মাসের মধ্যে ভারতের শাসনক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে।

স্বাধীনতা ঘোষণার সময় যত এগিয়ে আসতে থাকে, পাঞ্জাব ও বাংলা প্রদেশের হিন্দু ও মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা তত বৃদ্ধি পায়। দাঙ্গা রোধে ব্রিটিশ বাহিনীর অক্ষমতার কথা মাথায় রেখে ভারতের তদানীন্তন ভাইসরয় লুইস মাউন্টব্যাটেন ক্ষমতা হস্তান্তরের দিনটি সাত মাস এগিয়ে আনেন। ১৯৪৭ সালের জুন মাসে জওহরলাল নেহরু, আবুল কালাম আজাদ, মহম্মদ আলি জিন্নাহ, ভীমরাও রামজি আম্বেডকর প্রমুখ জাতীয়তাবাদী নেতৃবৃন্দ ধর্মের ভিত্তিতে ভারত বিভাগের প্রস্তাব মেনে নেন। হিন্দু ও শিখ সংখ্যাগুরু অঞ্চলগুলি ভারতে ও মুসলমান সংখ্যাগুরু অঞ্চলগুলি নবগঠিত রাষ্ট্র পাকিস্তানে যুক্ত হয়; পাঞ্জাব ও বাংলা প্রদেশ দ্বিখণ্ডিত হয়। লক্ষ লক্ষ মানুষ হয় ছিন্নমূল। তাঁরা দলে দলে র‌্যাডক্লিফ লাইন পেরিয়ে নিজেদের পছন্দমতো দেশে আশ্রয় নেন। বেশির ভাগ মানুষই চোখের জলে নিজেদের দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। পঞ্জাবে শিখ অঞ্চলগুলি দ্বিখণ্ডিত হওয়ায় রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা হয়। দাঙ্গা হয় বাংলা ও বিহারেও। তবে সেখানে মহাত্মা গান্ধীর উপস্থিতি দাঙ্গার প্রকোপ কিছুটা প্রশমিত করতে সক্ষম হয়েছিল। তা সত্ত্বেও ২৫০,০০০ থেকে ৫০০,০০০ লোক সীমান্তের দুই পারের দাঙ্গায় হতাহত হয়। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট নতুন পাকিস্তান জন্ম নেয়।

করাচিতে মহম্মদ আলি জিন্নাহ এই রাষ্ট্রের প্রথম গভর্নর-জেনারেল হিসেবে শপথ নেন। মধ্যরাতে অর্থাৎ, ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট সূচিত হলে জওহরলাল নেহরু তাঁর বিখ্যাত ‘নিয়তির সঙ্গে অভিসার’ ভাষণটি প্রদানের মাধ্যমে ভারতের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ভারতীয় ইউনিয়নের জন্ম হয়। নতুন দিল্লিতে নেহরু ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী রূপে কার্যভার গ্রহণ করেন। মাউন্টব্যাটেন হন স্বাধীন ভারতের প্রথম গভর্নর-জেনারেল।

১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট সূচিত হলে জওহরলাল নেহেরু তাঁর ভাষণ প্রদানের মাধ্যমে ভারতের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। নতুন ভারতীয় ইউনিয়নের জন্ম হয়। নতুন দিল্লিতে জওহরলাল নেহেরু ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী রূপে কার্যভার গ্রহণ করেন। মাউন্টব্যাটেন হন স্বাধীন ভারতের প্রথম গভর্নর-জেনারেল।

ভারতের স্বাধীনতা দিবসের ইতিহাস

সপ্তদশ শতক থেকে ভারতবর্ষে ইংরেজরা বাণিজ্য করার জন্য বসতি স্থাপন করে। তারপর ধীরে ধীরে তারা ভারতবর্ষে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখল করার দিকে হাত বাড়ায়। অবশেষে ১৭৫৭ খ্রিস্টাব্দে পলাশীর যুদ্ধে বাংলার স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের মাধ্যমে ভারতের স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়।

তারপর থেকে ভারতের উপর চলেছে ইংরেজদের শোষণ এবং অত্যাচার। সমৃদ্ধ ভারতবর্ষ থেকে সম্পদ লুট করে নিয়ে গিয়ে ব্রিটেন ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। ভারতবর্ষে দেখা দিয়েছে একের পর এক মহামারী, খাদ্যাভাব, দুর্ভিক্ষ ইত্যাদি। যতদিন গেছে ভারত দরিদ্র থেকে দরিদ্রতর হয়েছে।

প্রায় ২০০ বছর ব্রিটিশ শাসনের অধীনে থাকার পরে মুক্তির স্বাদ পেয়েছিল ভারতের জনতা। নীল আকাশে উড়েছিল তিরঙ্গা। এর পরে কেটে গিয়েছে প্রায় ৭৫ বছর। আগামী ১৫ অগস্ট ফের দেশ জুড়ে পালিত হবে স্বাধীনতা দিবস। যদিও ভারতের স্বাধীনতা নিয়ে এমন বেশ কয়েকটি তথ্য রয়েছে যেগুলি খুব কম ব্যক্তিই জানেন। এই স্বাধীনতা দিবসে চলুন দেখে নি সেই সমস্ত তথ্যগুলি —

  • ইতিহাস অনুযায়ী ১৯৪৭ এর ১৫ অগস্ট ভারত স্বাধীনতা লাভ করে। কিন্তু তার এক মাস আগে ১৪ জুলাই আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বাধীনতা লাভ করেছিল ভারত।
  • স্বাধীনতার আগে ভারতে মোট ৫৫০ জন রাজার ছোট ছোট রাজ্য ছিল। সেই রাজ্যগুলিকে একত্রিত করতে প্রথম পদক্ষেপ করেন সর্দার বল্লভভাই পটেল। কিছু ক্ষেত্রে দেখা করে এবং কিছু ক্ষেত্রে চিঠি পাঠিয়ে তিনি তাঁদের অনুরোধ জানিয়েছিলেন। এমনকী তাঁদের সঙ্গে ব্যক্তিগত আলোচনাও করেছিলেন। অবশেষে তাঁরা প্রত্যেকেই ভারতের সঙ্গে যুক্ত হতে রাজি হয়েছিলেন।
  • স্বাধীনতা প্রাপ্তির পরে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত স্বাধীনতা দিবসে প্রতিটি রাজ্যের রাজ্যপালই দেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতেন।
  • এই প্রথার প্রথম পরিবর্তন হয় ১৯৭৪-এ। বিশিষ্ট তামিল লেখক তথা তামিলনাড়ুর প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এম করুণানিধি কেন্দ্রীয় সরকারের গোটা বিষয়টি তুলে ধরেন এবং সেই প্রথার পরিবর্তন হয়।
  • এম করুণানিধিই হলেন প্রথম মুখ্যমন্ত্রী যিনি স্বাধীনতা দিবসে ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন।
  • ভারতের জাতীয় পতাকার নকশা কিন্তু কখনই এমনটা ছিল না। ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার আগে ছ’বারেরও বেশি বদলেছে জাতীয় পতাকার নকশা। অবশেষে কংগ্রেসের পিঙ্গালি ভেঙ্কাইয়ার নকশাই ভারতের জাতীয় পতাকা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ভারতের আইন অনুযায়ী, জাতীয় পতাকা খাদি কাপড়ে তৈরি করা হয়।

ভারতের স্বাধীনতা দিবসের গুরুত্ব, ভারতের স্বাধীনতা দিবসের তাৎপর্য

“কত বিপ্লবি বন্ধুর রক্তে রাঙা, বন্দিশালার ওই শিকল ভাঙা…” – স্বাধীনতা দিবস প্রকৃত অর্থে ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের একটি জাতীয় দিবস। এই প্রজাতন্ত্রের স্বাধীনতাকে ব্রিটিশের হাত থেকে ছিনিয়ে নিতে প্রাণ গেছে বহু বীর-বিপ্লবীর। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন ছিল কিছু মানুষের অব্যর্থ পরিশ্রম। যার ফলেই ব্রিটিশদের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছে ভারত।

ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল, মাস্টারদা সূর্য সেন, প্রীতিলতা এরকম শত সহস্র বিপ্লবীদের প্রাণের উৎসর্গে ভারত পেয়েছিল পূর্ণ স্বাধীনতা। ভারতের ইতিহাসে এই ১৫ অগস্ট দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম। ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট ভারত ব্রিটিশ রাজশক্তির শাসন থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা অর্জন করে। তারপর থেকেই এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য প্রতিবছর স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয়।

১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট জওহরলাল নেহেরু ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ গ্রহণের পর দিল্লির লাল কেল্লার লাহোরি গেটের উপর ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। সেই থেকেই প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী লাল কেল্লায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন এবং জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন। জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার সাথে সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, কুচকাওয়াজ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সারা দেশে স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয়। সমগ্র অনুষ্ঠানটি জাতীয় চ্যানেল দূরদর্শনের সাহায্যে সারা দেশে সম্প্রচারিত হয়। রাজ্য রাজধানীগুলিতেও পতাকা উত্তোলন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাগুলিও পতাকা উত্তোলন করে। এদিন সমস্ত স্কুল-কলেজেও পতাকা উত্তোলন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। সব জায়গায় মিষ্টি বিতরণ করা হয়। আকাশে বাতাসে ফুটে ওঠে আনন্দের ছটা। ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েরা এই উপলক্ষ্যে বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সাজপোষাক পরে শোভাযাত্রা করে।

স্বাধীনতা প্রাপ্তির ৭৫ বছর পরেও এই একবিংশ শতাব্দিতে আদতেই কি স্বাধীনতার মর্যাদা গণতন্ত্রে পূর্ণতা পাচ্ছে? এই বর্তমান সামাজিক পটভূমিতে হাজারও প্রশ্ন উঠে আসে। কেননা,হিংসা,বিভেদ,চক্রান্তমূলক রাজনীতি স্বাধীন ভারতের পরাধীন মনস্কতার পরিচায়ক হয়ে দাঁড়়িয়েছে। সেই রক্তে রাঙা পূর্ণ স্বাধীনতার বীজ বহন করতে স্বাধীন গণতান্ত্রিক ভারত বিভিন্ন সময়ে অক্ষম হয়ে পড়েছে।

১৫ ই অগাষ্ট-কে শুধুমাত্র একটি জাতীয় দিবস হিসেবে পালন না করে এর যথাযথ তাৎপর্য উপলব্ধি করা প্রয়োজন। আমাদের দেশকে হিংসা এবং হানাহানি থেকে মুক্ত করার জন্য নতুন প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে।

১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস, 15th august ভারতের স্বাধীনতা দিবস, 15 ই আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস

১৫ আগস্ট দিল্লির ঐতিহাসিক লালকেল্লায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। অনুষ্ঠানটি জাতীয় চ্যানেল দূরদর্শনের সাহায্যে সারা দেশে সম্প্রচারিত হয়। রাজ্য রাজধানীগুলিতেও পতাকা উত্তোলন সহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। অন্যান্য শহরে রাজনৈতিক নেতৃবর্গ নিজ নিজ কেন্দ্রে পতাকা উত্তোলন করেন। নানা বেসরকারি সংস্থাও পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। স্কুল-কলেজেও পতাকা উত্তোলন ও অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা এই উপলক্ষে বিশিষ্ট স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সাজপোশাক পরে শোভাযাত্রা করে।

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

ভারতের স্বাধীনতা দিবস কবিতা, ভারতের স্বাধীনতা দিবসের কবিতা, ভারতের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে কবিতা, ভারতের স্বাধীনতা দিবস নিয়ে কবিতা

স্বাধীনতা দিবসের কবিতা হল ১৫ই আগস্ট দেশের স্বাধীনতা নিয়ে আমাদের অনুভূতির কাব্যিক প্রকাশের একটি প্রদর্শনী। দীর্ঘ স্বাধীনতা সংগ্রামের পর ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট আমাদের দেশ স্বাধীন হয়। তারপর থেকে প্রতি বছর 15ই আগস্ট আমরা স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করি। এখানে আমরা স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে কিছু স্বরচিত কবিতা প্রদান করছি।

কবিতা: স্বাধীনতা তুমি, কবি শামসুর রাহমান

স্বাধীনতা তুমি
রবি ঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান।
স্বাধীনতা তুমি
কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো
মহান পুরুষ, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা-
স্বাধীনতা তুমি
শহীদ মিনারে অমর একুশে ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল সভা
স্বাধীনতা তুমি
পতাকা-শোভিত স্লোগান-মুখর ঝাঁঝালো মিছিল।
স্বাধীনতা তুমি
ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি।
স্বাধীনতা তুমি
রোদেলা দুপুরে মধ্যপুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার।
স্বাধীনতা তুমি
মজুর যুবার রোদে ঝলসিত দক্ষ গ্রন্থিল পেশি।
স্বাধীনতা তুমি
অন্ধকারের খাঁ-খাঁ সীমান্তে মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিক।
স্বাধীনতা তুমি
বটের ছায়ায় তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর
শাণিত কথার ঝলসানি-লাগা সতেজ ভাষণ।
স্বাধীনতা তুমি
চা-খানায় আর মাথে-ময়দানে ঝোড়ো সংলাপ।
স্বাধীনতা তুমি
কালবোশেখির দিগন্তজোড়া মত্ত ঝাপটা।
স্বাধীনতা তুমি
শ্রাবণে অকুল মেঘনার বুক
স্বাধীনতা তুমি পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন।
স্বাধীনতা তুমি
উঠানে ছড়ানো মায়ের শুভ্র শাড়ির কাঁপন।
স্বাধীনতা তুমি
বোনের হাতের নম্র পাতায় মেহেদি রঙ।
স্বাধীনতা তুমি
বন্ধুর হাতে তারার মতন জ্বলজ্বলে এক রাঙা পোস্টার।
স্বাধীনতা তুমি
গৃহিণীর ঘন খোলা কালো চুল,
হাওয়ায় হাওয়ায় বুনো উদ্দাম।
স্বাধীনতা তুমি
খোকার গায়ের রঙিন কোর্তা,
খুকির অমন তুলতুলে গালে
রৌদ্রের খেলা।
স্বাধীনতা তুমি
বাগানের ঘর, কোকিলের গান,
বয়েসী বটের ঝিলিমিলি পাতা,
যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা।

কবিতা:”স্বাধীনতা”

স্বাধীনতা তুমি লাল সবুজের রক্তে আঁকা পতাকা।
স্বাধীনতা তুমি স্বপ্ন বিলাসী মন ময়ুরীর পাখা।
স্বাধীনতা তুমি পূর্ব দিগন্তে রক্তিম সূর্যের আভা।
স্বাধীনতা তুমি পশ্চিম দিগন্তে গোধূলি লগনের মায়া।

স্বাধীনতা তুমি হাজার বছরের স্বপ্নে আঁকা ছবি।
স্বাধীনতা তুমি পূর্ব দিগন্তে সোনালী স্বপ্নের রবি।
স্বাধীনতা তুমি নীল আকাশে রূপালী মেঘের ছায়া।
স্বাধীনতা তুমি সবুজ মাঠে সোনালী ফসলের শোভা।

স্বাধীনতা তুমি আষাঢ় শ্রাবণে অজস্র ঝরা বৃষ্টি।
স্বাধীনতা তুমি জীবনের বিনিময়ে বিস্ফোরণী সৃষ্টি।
স্বাধীনতা তুমি ক্লান্ত দুপুরে বট বৃক্ষের ছায়া।
স্বাধীনতা তুমি নব যৌবন আর উচ্ছল প্রেমের মায়া।

স্বাধীনতা তুমি লাখো শহীদের সংগ্রামী অভিযান।
স্বাধীনতা তুমি লাখো জনতার যুদ্ধে যাওয়ার ইতিহাস
স্বাধীনতা তুমি লাখো শহীদের বিসর্জিত জীবন।
স্বাধীনতা তুমি লাখো জনতার উৎসর্গীত মরণ।

স্বাধীনতা তুমি দামাল ছেলেদের জীবনের জয়গান।
স্বাধীনতা তুমি সন্তান হারানো মায়ের আর্তনাদ।
স্বাধীনতা তুমি ভাই হারানো বোনের আহাজারি।
স্বাধীনতা তুমি মা হারানো সন্তানের কান্নাকাটি।

স্বাধীনতা তুমি সোনালী সকালের বিজয়ের হাতছানি।
স্বাধীনতা তুমি যুবক যুবতির উচ্ছাস মাখা হাসি।
স্বাধীনতা তুমি নদীর কলতান মাঝির মুখের ভাটিয়ালী।
স্বাধীনতা তুমি কৃষানীর বুকে কৃষকের হাতছানি।

স্বাধীনতা তুমি স্বামী হারানো বিধবার আর্তনাদ ।
স্বাধীনতা তুমি শোষণের বিরুদ্ধে বিজয়ের অহংকার।
স্বাধীনতা তুমি অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভ।
স্বাধীনতা তুমি অনেক সমস্যার একটি সমাধান।

স্বাধীনতা তুমি যালিমের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়ের সুখ।
স্বাধীনতা তুমি মায়ের মুখে হাসি ফুটানো ফুল।
স্বাধীনতা তুমি হাজার বছরের স্বপে আঁকা ছবি।
স্বাধীনতা তুমি নতুন প্রভাতের উজ্জ্বল রাঙা রবি।

ভারতের স্বাধীনতা দিবসের ছবি, 15th august ভারতের স্বাধীনতা দিবসের ছবি

ভারতের স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা

  • আসুন সেই সাহসী বীরদের শ্রদ্ধা জানাই, যারা আমাদের দেশের জন্য নিজেদের জীবন বলিদান করেছে। যারা সকল দেশবাসীর কাছে গর্বিত, যারা সমস্ত জাতিকে শক্তিশালী করে তুলেছে তাদের শত কোটি প্রণাম। আজকের দিনের গৌরব আগামীকাল আপনার জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠুক। শুভ স্বাধীনতা দিবস!
  • আপনাকে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা ! আসুন আজকের এই দিনটি উদযাপন করি তাদের জন্য যারা আজ আমাদের স্বাধীনতার জন্য তাদের রক্ত ঝরিয়েছে। তারাই দেশের গৌরব অর্জনের যোগ্য।
  • আসুন আমরা উদযাপন করি এবং স্বাধীনভাবে দেশে বেঁচে থাকার স্বাধীনতা উপভোগ করি। আমাদের জাতীয় বীরাঙ্গন যারা বেদনা ও অপমান সহ্য করে আমাদের স্বাধীনতা দিয়েছেন তাদের স্মরণ করি। একজন ভারতীয় হিসাবে গর্ব বোধ করি। শুভ স্বাধীনতা দিবস।
  • আমরা স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে গর্ববোধ করি। কারণ আমরা এমন সাহসী পুরুষদের দেশ জন্মগ্রহণ করেছি যারা আমাদের জাতির স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছিল এবং তাদের ত্যাগ দিয়ে আমাদের গৌরব এনেছে। আমরা গর্বিত আমরা ভারতীয়। সকল ভারতবাসীকে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা এবং শুভ কামনা।
  • স্বাধীনতা প্রতিটি মানুষের জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস। এটি কেড়ে নেওয়ার অধিকার কারোর নেই। কারণ আপনি একটি স্বাধীন দেশে বাস করা একজন স্বাধীন মানুষ। শুভ স্বাধীনতা দিবস।
  • স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে, আমার একমাত্র কামনা হল, ভারত সর্বদা উন্নতির পথে চলুক এবং ভারতীয়রা সর্বদা উন্নত দেশ তৈরির জন্য কাজ করুক। শুভ স্বাধীনতা দিবস।
  • আমি ভাগ্যবান যে আমি এই মহান দেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমি গর্বিত যে আমি একজন ভারতীয়। শুভ স্বাধীনতা দিবস!
  • ভারত বিশ্বের সেরা দেশ এবং সর্বদা থাকবে। শুভ স্বাধীনতা দিবস!

ভারতের স্বাধীনতা দিবসের বক্তব্য, ভারতের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বক্তৃতা

স্বাধীনতা দিবসের জন্য বক্তৃতার উদাহরণ

উপস্থিত সকল অতিথি এবং বন্ধুদের জানাই ভারতের ৭৬ তম স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা। সকলের সামনে এই বিশেষ দিনে আমাকে কিছু বলার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ। পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তি পাওয়ার দিনটিকে উদযাপন করতে আজ আমরা সবাই এখানে মিলিত হয়েছি। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ব্রিটিশদের ২০০ বছরের শাসন থেকে আমাদের দেশ স্বাধীন হয়েছিল। ব্রিটিশ শাসনে ভারতীয়দের উপর চালানো হয়েছিল অকথ্য অত্যাচার। এই অত্যাচার, পরাধীনতার বেড়াজাল থেকে ভারতকে, ভারতবাসীদের মুক্ত করতে আত্মবলিদান দিয়েছে বহু বীর। এঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন মহাত্মা গান্ধি, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু, ভগৎ সিং, রাজগুরু, জহরলাল নেহরু, লালা লাজপত রায়, বাল গঙ্গাধর তিলক, প্রমুখ। দেশকে স্বাধীনতা এনে দেওয়ার পিছনে এঁদের অবদান অনস্বীকার্য। এই শুভদিনে তাঁদের প্রণাম জানাই। আজকের দিনে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়ে থাকে। প্রধানমন্ত্রী দিল্লির লাল কেল্লায় পতাকা উত্তোলন করেন এবং দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানান। একই সঙ্গে ৩১ বন্দুকের স্যালুট দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী এদিন দেশবাসীর উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে থাকেন। সেনারা প্রধানমন্ত্রীকে এদিন স্যালুট জানায়। এই অনুষ্ঠানে আর্মি ব্যান্ডের সুর সকলকে মুগ্ধ করে। আজকের এই শুভদিনে দেশের কল্যাণের জন্য নিজের কাছে শপথ গ্রহণ করুন। সবসময় দেশের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করার অঙ্গীকারও গ্রহণ করুন। ভারতের ৭৬ তম স্বাধীনতা দিবসে আপনাদের সকলকে আরও একবার শুভেচ্ছা জানিয়ে আমার বক্তব্য শেষ করছি। জয় হিন্দ!

ভারতের স্বাধীনতা দিবসের স্লোগান

আজ ১৫ অগস্ট, ইংরেজদের অকথ্য অত্যচারের থেকে মুক্তির উদীয়মান সূর্য এই দিনেই উদয় হয়েছিল। লাখ লাখ বীরের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর এইদিন ভারতের মানুষ পেয়েছিল স্বাধীনতার সুখ। আজ সেই বীর যোদ্ধাদের জন্যই আমরা প্রাণ ভরে সুখের নিঃশ্বাস নিতে পারি। অনেক সংগ্রাম, রক্তক্ষয় ও অশ্রুজলের মধ্যে দিয়ে প্রায় দুশো বছরের পরাধীনতার হাত থেকে মুক্তি পেয়েছি আমরা। এমন অনেক মুক্তিযোদ্ধা আছেন যাঁরা স্বাধীন ভারতের উদীয়মান সূর্যও দেখে যেতে পারেননি।

স্বাধীনতার লড়াই অত সহজ ছিল না। সেই সময় দেশের প্রতিটি অঞ্চল থেকে বয়স, জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষ একসাথে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেছিল।

আজ এই স্বাধীন ভারতে দাঁড়িয়ে আমাদের উচিত সেই বিপ্লববাদী স্লোগানগুলি মনে করা, যা শুনে ব্রিটিশদের কপালে ভাঁজ পড়েছিল।

  • তোমরা আমাকে রক্ত দাও, আমি তোমাদের স্বাধীনতা দেব। – নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু
  • স্বাধীনতা কেউ দেয় না, অর্জন করে নিতে হয়। – নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু
  • স্বরাজ আমাদের জন্মগত অধিকার এবং আমরা তা অর্জন করবই। – বাল গঙ্গাধর তিলক
  • ছাইয়ের প্রতিটি ক্ষুদ্র অণু আমার উত্তাপের সঙ্গে চলমান। আমি এমনই এক পাগল, যে কারাগারে বসেও স্বাধীন। – ভগৎ সিং
  • করেঙ্গে ইয়া মরেঙ্গে – মহাত্মা গান্ধী
  • ইনকিলাব জিন্দাবাদ – ভগৎ সিং
  • সারফারোশি কি তামান্না অব হামারে দিল মে হ্যায় -রামপ্রসাদ বিসমিল
  • জয় জওয়ান জয় কিষাণ – লাল বাহাদুর শাস্ত্রী

ভারতের স্বাধীনতা Pdf

মধ্যরাতে স্বাধীনতা



মধ্যরাতে স্বাধীনতা

ভারতের স্বাধীনতা দিবস

মাউন্টব্যাটেন কেন ভারত স্বাধীনতা ১৫ আগস্টকে বেছে নিয়েছিলেন?
মাউন্টব্যাটেন ২য় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের আত্মসমর্পণের দ্বিতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে ভারতের স্বাধীনতার তারিখ হিসেবে ১৫ আগস্টকে বেছে নিয়েছিলেন।


আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।