মুদ্রাস্ফীতি সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

মুদ্রাস্ফীতি সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

মুদ্রাস্ফীতি কি, মুদ্রাস্ফীতি কাকে বলে

মূল্যস্ফীতি সম্পর্কে বিভিন্ন অর্থনীতিবিদের সংজ্ঞা নিয়ে দেওয়া হল

অর্থনীতিবিদ ক্রাউথার (Crowther) বলেন, “মুদ্রাস্ফীতি হল এমন এক অবস্থা যখন অর্থের মূল্য ক্রমাগত হ্রাস পায় এবং দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায়।”

অর্থনীতিবিদ কুলবর্ন (Coulborn) এর মতে, “মুদ্রাস্ফীতি হল এমন একটি পরিস্থিতি যেখানে অত্যধিক পরিমাণ অর্থ অতি সামান্য পরিমাণ দ্রব্যসামগ্রীর পশ্চাতে ধাবিত হয়। “

অধ্যাপক হট্রে (Hawtrey’) বলেন, “অত্যধিক অর্থের প্রচলনকে মুদ্রাস্ফীতি বলে।”

অধ্যাপক স্যামুয়েলসন (Samuelson) এর মতে, “দ্রব্যসামগ্রী এবং উৎপাদনের উপাদানসমূহের নাম যখন বৃদ্ধি পেতে থাকে, সাধারণভাবে তখন তাকে মুদ্রাক্ষীতি বলা হয়।”

লর্ড কেইস (Keynes) এর মতে, “যখন দ্রব্য সামগ্রীর মোট যোগানের তুলনায় কার্যকর চাহিদা বেশি হয় তখন সেই অবস্থাকে মুদ্রাস্ফীতি বলে।”

ক্ল্যাসিকেল অর্থনীবিদদের মতে, অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধিই হলো মুদ্রাস্ফীতি। মনিটারিস্টরা মনে করেন যে, অর্থের অতিরিক্ত যোগান বৃদ্ধির কারণে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পায় এবং মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়। কেইনসের মতে, পূর্ণ নিয়োগ অবস্থার পর অর্থের চাহিদার চেয়ে অর্থের যোগান বৃদ্ধি পেলে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়।

সুতরাং বিভিন্ন অর্থনীতিবিদ মুদ্রাস্ফীতির বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। সংক্ষেপে বলা যায়, যখন দেশে প্রচলিত অর্থের পরিমাণ উৎপাদিত মোট দ্রব্যসামগ্রীর তুলনায় অধিক হয় এবং তার ফলে দ্রব্যমূল্য বা দামস্তর ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে সে অবস্থাকেই ‘মুদ্রাস্ফীতি (Inflation) বলা হয়।

মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতি কি

মুদ্রাস্ফীতি হচ্ছে অর্থনীতিতে মুদ্রার পরিমাণ বেড়ে যাওয়া।

মূল্যস্ফীতি হচ্ছে কোন একটা নির্দিষ্ট সময়ে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়া।

ব্যাপারটা হচ্ছে অর্থনীতিতে যখন মুদ্রার সরবরাহ বেড়ে যায় কিন্তু পণ্য বা সেবার পরিমাণ একই থাকে তখনই মূল্যস্ফীতি হয়। অর্থাৎ বেশি টাকা দিয়ে কম পণ্য বা সেবা কিনতে হয়। মূলত মুদ্রাস্ফীতির ফলেই মূল্যস্ফীতি হয়। ইংরেজিতে বলা হয় inflation.

মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতি একে অপরের পরিপূরক। মুদ্রাস্ফীতিতে অর্থের মূল্য কমে এবং মুল্যস্ফীতেতে পণ্যের দাম বাড়ে।

অর্থনীতিতে মুদ্রার সরবরাহ বাড়লে হয় মুদ্রাস্ফীতি। মানুষের হাতে বাড়তি টাকা আসে। মানুষ আগের চেয়ে বেশি পণ্য কিনতে চায়। কিন্তু চাহিদার তুলনায় জোগান বাড়ে না বলে পণ্যের মূল্য বাড়ে। আর একটা নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে সামগ্রিক দামস্তর বেড়ে গেলে হয় মূল্যস্ফীতি

মূল্যস্ফীতি ও মুদ্রাস্ফীতি উদাহরণ

ধরুন, আপনার কাছে ১০০০ টাকা আছে। এই টাকা দিয়ে বছরের প্রথমে আপনি ২৫ কেজি চাউল কিনতে পারবেন কিন্তু বছর শেষে একই পরিমাণ চাউল কিনতে আপনার ১০৫০ টাকা লাগবে। এখানে এই ৫০ টাকা আপনার বেশি লাগবে যার মানে মুদ্রাস্ফীতির পরিমাণ ৫% যেটা দ্বারা বুঝায় আপনার টাকার ভ্যালু ৫% কমে গেছে। এটাই মুদ্রাস্ফীতি। এক্ষেত্রে টাকার মান কমে

আবার, মুদ্রাসংকোচনে টাকার মান বাড়ে। এক্ষেত্রে আপনি বছর শেষে ২৫ কেজি চাউলের বদলে ২৬ কেজি চাউল পাবেন। বা ২৫ কেজি চাউল আপনি আরো কম টাকায় পাবেন। এতে আপনার হাতে আরো অর্থ থেকেই যাবে সমপরিমাণ পণ্য কিনেও। এটাই মুদ্রাসংকোচন।

মুদ্রাস্ফীতি কত প্রকার, মুদ্রাস্ফীতির প্রকারভেদ

মুদ্রাস্ফীতি বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। মুদ্রাস্ফীতির কারণ এবং দামস্তর বৃদ্ধির, গতিবেগের ভিত্তিতে অর্থনীতিবিদগণ মুদ্রাস্ফীতিকে বিভিন্ন শ্রেণীতে বিভক্ত করেছেন। বিভিন্ন প্রকার মুদ্রাস্ফীতি সম্পর্কে নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হল :

(ক) কারণ অনুসারে প্রকারভেদ :-

১. অর্থ সরবরাহ বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি :

যখন কোন দেশের সরকার কর্তৃক প্রচলিত অর্থের যোগান বৃদ্ধির ফলে মূল্যস্তর বৃদ্ধি পায় তখন তাকে ‘অর্থ বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি’ বলা হয়। সাধারণত সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক অতিরিক্ত কাগজী নোট ছাপানোর ফলে এ ধরনের মুদ্রাস্ফীতি ঘটে।

২. ঋণ বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি :

যখন কোন দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ বিশেষ করে বানিজ্যিক ব্যাংকসমূহ ঋণ প্রদানের মাধ্যমে অতিরিক্ত অর্থ বাজারে ছাড়ে তখন দামস্তর বৃদ্ধি পায়। এ ধরনের মূল্যবৃদ্ধিকে ঋণজনিত মুদ্রাস্ফীতি’ বলা হয় ।

৩. মজুরি বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি :

অনেক সময় শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির ফলে দামস্তরের বৃদ্ধি ঘটে। এ ধরনের মূল্য বৃদ্ধিকে ‘মজুরি বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি’ বলা হয়।

৪. মুনাফা বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি :

অনেক সময় উৎপাদনকারীদের মুনাফা বৃদ্ধির ফলে দেশে দামস্তর বৃদ্ধি পায়। এ ধরনের মূল্য বৃদ্ধিকে মুনাফা বৃদ্ধিজনিত মূল্যস্ফীতি’ বলা হয় ।

৫. আয় বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি :

অনেক সময় উৎপাদনের উপাদানগুলোর আয় বৃদ্ধির ফলে দেশে দামস্তর বৃদ্ধি পায়। এ ধরনের মূল্য বৃদ্ধিকে ‘আয় বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়।

৬. ঘাটতি ব্যয়জনিত মুদ্রাস্ফীতি :

যখন কোন দেশে যুদ্ধ বা অন্য কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয় অথবা উন্নয়ন পরিকল্পনার অর্থসংস্থানের জন্য অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন হয় তখন সরকার ঘাটতি ব্যয়নীতি অনুসরণ করে। এর ফলে দেশে অর্থের যোগান ও দামস্তর বৃদ্ধি পায়। এ ধরনের মূল্য বৃদ্ধিকে ‘ঘাটতি ব্যয়জনিত মুদ্রাস্ফীতি’ বলা হয়।

৭. চাহিদা বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি :

অনেক সময় কোন দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি বা অন্য কোন কারণে উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রী অর্থাৎ সামগ্রিক যোগানের তুলনায় সামগ্রিক চাহিদা বৃদ্ধি পেলে দামস্তর বৃদ্ধি পায়। এভাবে সমাজে সামগ্রিক যোগানের তুলনায় সামগ্রিক চাহিদা বৃদ্ধির ফলে দামস্তরের যে বৃদ্ধি ঘটে তাকে ‘চাহিদা বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি’ বা চাহিদা প্রণোদিত মুদ্রাস্ফীতি’ (Demand pull inflation) বলা হয়।

৮. ব্যয় বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাক্ষীতি :

শ্রমিকের মজুরি, কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি এবং উৎপাদনের অন্যান্য উপকরণের দাম বৃদ্ধির ফলে দামস্তরের যে ক্রমাগত বৃদ্ধি ঘটে তাকে ব্যায় বৃদ্ধিজনিত মুদ্রাস্ফীতি’ (Cost push inflation) বলা হয়।

(খ) দামস্তরের গতিবেগের ভিত্তিতে প্রকারভেদ :-

দামস্তরের বৃদ্ধির গতির ভিত্তিতে মুদ্রাস্ফীতিকে তিনভাগে ভাগ করা যায়, যথা

(১) মৃদু মুদ্রাস্ফীতি

(২) পদসঞ্চারী মুদ্রাস্ফীতি

(৩) উল্লম্ফন মুদ্রাস্ফীতি।

১. মৃদু মুদ্রাস্ফীতি :

যখন দামস্তর ধীরগতিতে ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে থাকে তখন তাকে ‘মৃদু মুদ্রাস্ফীতি’ বলা হয়। এ ধরনের মুদ্রাস্ফীতি দেশের অর্থনীতিতে খুব একটা বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না। বরং অনেকের মতে, উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এ ধরনের মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা সহায়ক।

২. পদসঞ্চারী মুদ্রাস্ফীতি :

যখন দামস্তর অপেক্ষাকৃত অধিক হারে হাঁটার গতিতে বাড়তে থাকে তখন তাকে ‘পদসঞ্চারী মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়। এ ধরনের মুদ্রাস্ফীতি ক্রমশ প্রকট হয়ে তা অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হয়।

৩. অতি- মুদ্রাস্ফীতি বা উল্লক্ষনশীল মুদ্রাস্ফীতি :

যখন দামস্তর অত্যন্ত দ্রুতগতিতে বাড়তে থাকে তখন তাকে ‘অতি মুদ্রাস্ফীতি’ বা ‘উল্লক্ষনশীল মুদ্রাস্ফীতি’ বলা হয়।

অর্থনীতির চূড়ান্ত অস্বাভাবিক অবস্থায় এ ধরনের মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়। এ অবস্থায় দামস্তর লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে এবং অর্থের মূল্য দ্রুত হ্রাস পায়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানিতে এ ধরনের মুদ্রাস্ফীতি দেখা গিয়েছিল, সাম্প্রতিককালে জিম্বাবুয়েতে এ জাতীয় মুদ্রাস্ফীতি দেখা গিয়েছে।

(গ) নিয়ন্ত্রনের ভিত্তিতে প্রকারভেদ :-

১. অবাধ মুদ্রাস্ফীতি এবং

২. দমিত মুদ্রাস্ফীতি

১. অবাধ মুদ্রাস্ফীতি :

সরকারি কর্তৃপক্ষ যদি মূল্য বুদ্ধিকে নিয়ন্ত্রণ করতে কোন রকম চেষ্টা না করে এবং মূল্যবৃদ্ধি অবাধ গতিতে বা বাধাহীনভাবে চলতে থাকে তখন তাকে ‘অবাধ মুদ্রাস্ফীতি’ বলা হয়।

২. দমিত মুদ্রাস্ফীতি :

দামস্তর বৃদ্ধির গতিকে যখন বিভিন্ন সরকারি ব্যবস্থার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয় তখন তাকে ‘দমিত মুদ্রাস্ফীতি’ বলা হয়। এরূপ ক্ষেত্রে সরকার বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থা; যেমন- দ্রব্যের সর্বোচ্চ দাম নির্ধারণ, রেশনিং ব্যবস্থা, ব্যাংকের ঋণ নিয়ন্ত্রণ প্রভৃতি ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে মূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে। এ ধরনের মুদ্রাস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রন বা দমিত মুদ্রাক্ষীতি’ বলা হয়।

মুদ্রাস্ফীতির বৈশিষ্ট্য

তিন ধরনের মুদ্রাস্ফীতির বৈশিষ্ট্য হল : –

  • চাহিদা-টান মুদ্রাস্ফীতি: এটি ঘটে যখন পণ্য বা পরিষেবার চাহিদা উৎপাদন ক্ষমতার তুলনায় বেশি হয়। চাহিদা এবং যোগানের মধ্যে পার্থক্য (স্বল্পতা) মূল্য বৃদ্ধির ফলে।
  • খরচ-ধাক্কা মুদ্রাস্ফীতি: এটি ঘটে যখন উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। ইনপুট (শ্রম, কাঁচামাল, ইত্যাদি) এর দাম বৃদ্ধি পণ্যের দাম বাড়ায়।
  • অন্তর্নির্মিত মুদ্রাস্ফীতি: ভবিষ্যতের মূল্যস্ফীতির প্রত্যাশা অন্তর্নির্মিত মুদ্রাস্ফীতিতে পরিণত হয়। জীবনযাত্রার বর্ধিত ব্যয় বহন করার জন্য দাম বৃদ্ধির ফলে উচ্চ মজুরি হয়। অতএব, উচ্চ মজুরির ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়, যা পণ্যের মূল্য নির্ধারণের উপর প্রভাব ফেলে। বৃত্ত তাই অব্যাহত।

মুদ্রাস্ফীতির কারণ কি, মুদ্রাস্ফীতির কারণ ও ফলাফল

মুদ্রাস্ফীতির কারণ

একটি দেশের অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি একটি জটিল সমস্যা। মূল্যস্ফীতি বিভিন্ন কারনে ঘটতে পারে। যেসব কারণে মূল্যস্ফীতি হয়ে থাকে তা নিম্নে আলোচনা করা হল

১. অর্থের যোগান বৃদ্ধি :

মূল্যস্ফীতির অন্যতম কারন হল অর্থের যোগান বৃদ্ধি। অর্থের যোগান বৃদ্ধি পেলে জনগনের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে থাকে। অর্থের যোগান বৃদ্ধির সাথে যদি দ্রব্য ও সেবার উৎপাদন সামঞ্জস্য হারে বৃদ্ধি পায় তাহলে মূল্যস্ফীতির সম্ভাবনা কম থাকে। তবে অর্থের যোগান বৃদ্ধির সাথে যদি সামজ্ঞস্যহারে দ্রব্য ও সেবার মূল্য বৃদ্ধি পায় না, তাহলে মূল্যস্ফীতি দেখা দেয়।

২. সরকারের অতিরিক্ত ব্যয় :

অনেক সময় সরকারকে আয় অপেক্ষা অধিক ব্যয় করতে হয়। এ ব্যয়ের অর্থ সরকার যদি জনসাধারনের নিকট হতে ঋণের মাধ্যমে গ্রহণ করে তাহলে মুদ্রাস্ফীতির সম্ভাবনা থাকে না; কিন্তু সরকার যদি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিকট হতে ঋণ গ্রহণ করেন অথবা বিদেশ হতে ঋণ গ্রহণ করে এবং দেশের অভ্যন্তরে তা খরচ করে তবে তার ফলেও মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিবে।

৩. বাণিজ্যিক ব্যাংক কর্তৃক অধিক ঋণদান :

দেশে অর্থের যোগান বৃদ্ধি পেলে তাতে বাণিজ্যিক ব্যাংকের মজুদও বৃদ্ধি পায় এবং তারা ব্যবসায়ী, শিল্পপতিগণকে সহজ শর্তে অধিক ঋণ দান করে। ফলে ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় এবং শেষ পর্যন্ত মুদ্রাস্ফীতি ঘটে।

৪. উৎপাদন হ্রাস :

কৃষিজাত ও শিল্পজাত পণ্যের উৎপাদনের স্বল্পতা মুদ্রাস্ফীতির জন্য দায়ী। অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, বন্যা প্রভৃতির ফলে অনেক সময় কৃষির উৎপাদন ব্যাহত হয়। অর্থের যোগান ঠিক থেকে যদি দ্রব্যাদির উৎপাদন কমে যায় তাহলে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়।

৫. আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের উদ্বৃত্ত :

অন্তর্জাতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে যখন একটা দেশের অবস্থা অনুকুল হয়, তখন সেই দেশের লোকের আয় ও ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। এ অবস্থায় দ্রব্য উৎপাদন যদি অপরিবর্তিত থাকে তবে মুদ্রাস্ফীতি ঘটে।

৬. ভোগ ও বিনিময় ব্যয় বৃদ্ধি :

সমাজে ভোগব্যয় ও বিনিয়োগ ব্যয় বৃদ্ধি পেলে দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত বৃদ্ধি ঘটে। কারণ, ভোগব্যায় ও বিনিয়োগ ব্যয় বৃদ্ধির ফলে সামগ্রিক চাহিদা বৃদ্ধি পায়। কিন্তু স্বল্পকালীন সময়ে সে হারে উৎপাদন বৃদ্ধি পায় না। এর ফলে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়।

৭. মজুরি বৃদ্ধি :

মুদ্রাস্ফীতির অন্যতম কারণ হলো শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি। বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শ্রমিক সংঘ অত্যন্ত শক্তিশালী। তারা সংঘবদ্ধভাবে আন্দোলন করে মালিকদেরকে মজুরি বৃদ্ধি করতে বাধ্য করে। এভাবে মজুরি বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পায় এবং উৎপাদনকারীরাও দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়।

মুদ্রাস্ফীতির ফলাফল

মুদ্রাস্ফীতির ফলে সামগ্রিক মূল্য বৃদ্ধি হয় অথচ টাকার মূল্য হ্রাস পায়। তখন সমাজের একাংশ লাভ করে অপর অংশ ক্ষতির সম্মুখীন হয় এবং বাকি অংশে কোন প্রভাব পড়ে না। সমাজের বিভিন্ন অংশের উপর মধ্যে মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব:

  • ঋণদাতা ঋণগ্রহীতা : মুদ্রাস্ফীতির ফলে ঋণগ্রহীতা লাভবান হন ঋণদাতা ক্ষতিগ্রস্ত হন। মূল্যবৃদ্ধির ফলে টাকার মূল্য কমে যায় কিন্তু ঋণ গ্রহিতাকে একই পরিমাণ টাকা ফেরত দেয় যা সে ঋণ হিসেবে গ্রহণ করেছিল । দ্রব্য ও পরিষেবার নিরিখে তাকে কম পেমেন্ট করতে হয়। কারণ যখন সে টাকা ধার নিয়েছিল তারপর টাকার মূল্য হ্রাস পেয়েছে। সুতরাং ঋণের বোঝা কমে যায় ও ঋণগ্রহীতা লাভ হয় ।অপরদিকে ঋণদাতা একই পরিমাণ টাকা ফেরত পেলে প্রকৃত পক্ষে। সে কম টাকা ফেরত পেল যেহেতু টাকার মূল্য কমে গেছে। মুদ্রাস্ফীতির ফলে ঋণগ্রহীতা থেকে ঋণদাতার কাছে মুদ্রার পুনর বন্টন হয়।
  • বেতনভোগী ব্যক্তির উপর মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব: মুদ্রাস্ফীতির ফলে সকল বেতনভোগী ব্যক্তিদের উপর এই প্রভাব পড়ে । এক্ষেত্রে টাকার মূল্য হ্রাস পেলেও তাদের বেদন সেই অনুপাতে বৃদ্ধি হয় না।
  • শ্রমিকদের উপর মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব : মুদ্রাস্ফীতির ফলে শ্রমিকরা লাভবান হতেও পারে আবার নাও পারে, কত দ্রুত পারিশ্রমিক মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হচ্ছে তার উপর পুরো বিষয়টি নির্ভর করে। শ্রমিক সংগঠনের তৎপরতার উপর বিষয়টি নির্ভর করে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সময়ের ব্যবধানের জন্য ক্রমিক শ্রমিকরা ক্ষতির সম্মুখীন হয় কারণ যতদিনে তাদের পারিশ্রমিক বৃদ্ধি পায় ততদিনে কষ্ট বেড়ে যায়।
  • স্থায়ী আয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপর মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব : পে, বেকার ভাতা, বেকারত্ব, বীমা সামাজিক সুরক্ষা সুদ বাড়িভাড়া ইত্যাদি যারা পায় তারা হলেন স্থায়ী আয় বিশিষ্ট ব্যক্তি। ডিবেঞ্চের বা অন্যান্য সিকিউরিটি যারা ক্রয় করেন এবং যারা ডিপোজিট গচ্ছিত রাখেন। তারাও মাসে শেষের নির্দিষ্ট টাকা সুদ হিসেবে পান এরা প্রত্যেকে মুদ্রাস্ফীতির ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হন । কারণ এদের আয় নির্দিষ্ট অর্থমৌলবৃদ্ধির সঙ্গে তাদের টাকার মূল্য কমে যায়।
  • বিনিয়োগকারীদের উপর মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব : যে সমস্ত ব্যক্তিরা শেয়ার ক্রয় করেন মুদ্রাস্ফীতির ফলে তাদের লাভ হয় । মূল্য বৃদ্ধি হলে ব্যবসার প্রসার ঘটে কোম্পানির লাভ হয় । ফলে তারা ডিভিসি ডিভিডেন্ট পেতে পারেন বিভিন্ন হার মূল্য বৃদ্ধির হারের থেকেও বেশি । কিন্তু যারা বন্ধ ডিবেঞ্চার গভমেন্ট সেক্টর ইত্যাদি ক্রয় করে তাদের ক্ষতি হয়। কারণ তারা এগুলো থেকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা আয় করেন মূল্য বৃদ্ধির ফলে যার কোন পরিবর্তন হয় না উপর দিকে ক্ষমতা হ্রাস পায়।
  • ব্যবসায়ীদের উপর মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব : মূল্যবৃদ্ধির সময় ব্যবসায়ীরা লাভবান হয় ।উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে যখন মূল্যবৃদ্ধি হয় স্টকের নামও বেড়ে যায় সুতরাং যখন তারা জিনিসগুলো বিক্রি করেন তখন লাভই হয়।
  • কৃষিজীবী শ্রেণীর মানুষের উপর মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব : কৃষিজীবী মূলত তিন প্রকারের ।১.জমিদার ২.জমির স্বত্বাধিকারী এবং ৩.জমিহীন কৃষক। জমিদাররা ক্ষতিগ্রস্ত হন। কারণ তারা নির্দিষ্ট দিকে জমির স্বর্টাদিঃ5 যেহেতু আহমেদ করেন সে ক্ষেত্রে তাদের লাভ হয় কিন্তু কি সরকার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় কারণ উৎপাদন ব্যয় অপেক্ষার দ্রব্যের মূল্য বেশি হয়।
  • সরকারের উপর মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব : সরকার হলো ঋণ গ্রহীতা ও পরিবার হল রেলদাতা সুতরাং মুদ্রাস্ফীতির ফলে সরকারের লাভ হয় মুদ্রাস্ফীতি হলে সরকার পরিষেবা কর কমিয়ে দেয় বস্তুত মুদ্রাস্ফীতির ফলে করের প্রকৃত মূল্য কমে যায় সরকার সম্পদের পুনর বন্টনের দ্বারা লাভবান হয় উচ্চ আয় বিশিষ্ট ব্যক্তিরা সাধারণত করদাতা হয় তারা সরকারের ঋণদাতা হয় কারণ তারা সরকারি বন্ড ক্রয় করেন ঋণদাতা হিসেবে তাদের সম্পদের প্রকৃত মূল্য হ্রাস পায় ও প্রকৃতদ্বায়ক হ্রাস পায় কিন্তু কত মাত্রায় লাভ বা ক্ষতি হলো তা পরিমাপ করা যায় না স্মৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আয় বৃদ্ধি হলে সরকার কর হিসেবে বেশি রাজস্ব আদায় করে।
  • উৎপাদনের উপর মূল্যবৃদ্ধির মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব :মূল্যবৃদ্ধি হলে উৎপাদন বৃদ্ধি পায় বেশি লাভের আশায় তারা উৎপাদন বৃদ্ধি করে ফলস্বরূপ কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পায় আরো উৎপাদন বৃদ্ধি পায় আয়ো বাড়ে কিন্তু পুণ্য কর্মসংস্থান পর্যন্ত এটি সম্ভব এর বেশি বিনিয়োগ করলে অর্থনীতির উপর মুদ্রাস্ফীতি চাপ আরো বাড়ে কারণ যেহেতু পূর্ণসম্পদ ব্যবহৃত হয়েছে তাই উৎপাদন হওয়ার অপেক্ষায় অপেক্ষায় মূল্যবৃদ্ধির হারবার পূর্ণ সম্পদের পরিস্থিতি উৎপাদন ও কর্মসংস্থানের সুযোগের উপর বিরূপ প্রভাব অনিশ্চয়তার আশঙ্কাও অনেক সময় উৎপাদনের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।

কর্মসংস্থানের উপর মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব

  • বেকারত্ব ও মুদ্রাস্ফীতির সম্পর্ক বিপরীত। উইলিয়াম ফিলিপসের তত্ত্ব অনুযায়ী মুদ্রাস্ফীতির হার যত বেশি বেকারত্বের পরিমাণ তত কম তবে অধ্যাপক ফিলিপসের তত্ত্বটি স্বল্পমেয়াদি এটি স্টাগফ্লেশনের বিষয়টি বিশ্লেষণ করে না যখন দুটোই অনেক বেশি থাকে।
  • মুদ্রা স্থিতির ফলে বিবৃত সম্পদের বৃদ্ধি ঘটে যেহেতু অধিক লাভের আশায় উৎপাদকরা প্রয়োজনীয় দ্রব্যের পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় দ্রব্য উৎপাদন করে।
  • আর্থিক লেনদেনের পদ্ধতি পরিবর্তিত হয় ভবিষ্যতের জন্য উৎপাদকরা লিকুইড ক্যাশ নিজেদের কাছে গচ্ছিত রাখেন তারা লিকুইড ক্যাশকে স্টক এর রূপান্তরিত করার ক্ষেত্রে বেশি যত্নবান হয় এর ফলে সময়ের সাথে কিছু সম্পাদনা নষ্ট হয়।।
  • মুদ্রাস্মৃতি ফলে দ্রব্যের গুণগত মান হ্রাস পায় কারণ অধিক লাভের আশায় উৎপাদকরা নিম্নমানের দ্রব্য। স্মৃতির ফলে উৎপাদকরা স্টক মজুদ করে রাখে ফলে বাজারে কৃত্রিম সৃষ্টি হয় যখন উৎপাদকরা ব্ল্যাক মার্কেটের চড়া দামি জিনিস বিক্রি করে অপরদিকে ব্ল্যাক মার্কের অনেকটা দায়ের জন্য দায়ী।

সেভিংস এর উপর মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব

  • মূল্যবৃদ্ধি হয় টাকা জমানোর প্রবৃত্তিও কমে যায় কারণ দ্রব্য পরিষেবার মূল্যবৃদ্ধি হয় সেভিংস ব্রাশ বিনিয়োগ ও মূলধনের যোগান কে কমিয়ে দেয়।
  • মুদ্রাস্ফীতি বিদেশীর মূলধনের প্রবাহকে রোধ করে কারণ কাঁচামাল ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি হয় বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে লাভের পরিমাণ কমে যায় প্রসঙ্গত এফডিআই জিডিপির উপর উল্লেখযোগ্য প্রভাব বিস্তার করে।
  • ব্যালেন্স অফ পেমেন্ট এর উপর প্রভাব পড়ে। যখন বিদেশের তুলনায় দেশের বাজারে অধিক মূল্যবৃদ্ধি হয় তখন বিদেশের দ্রব্যগুলো তুলনামূলক সস্তা হয় রপ্তানি অপেক্ষা আমদানিক বৃদ্ধি পায় ফলে ব্যালেন্স অফ পে মেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
  • আর্থিক ব্যবস্থা হাইপার ইনফ্লেশনের সময় টাকার মূল্য যদি সারাদিন একাধিকবার হ্রাস পায় তাহলে আর্থিক ব্যবস্থা ঘষে করতে পারে পড়তে পারে।

মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের উপায় কি

মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিগুলোকে তিনটি গ্রুপে বিভক্ত করা যায়।

ক. আর্থিক পদ্ধতি,

খ. রাজস্ব পদ্ধতি এবং

গ. প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি।

ক. আর্থিক পদ্ধতি :

আর্থিক নীতির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থের যোগান নিয়ন্ত্রণ করে। ঘাটতি অর্থসংস্থান প্রতিরোধ করে তথা অতিরিক্ত নোট প্রচলন বন্ধ করে অর্থের যোগান নিয়ন্ত্রণ করা যায়। তাছাড়া বর্তমানে বাণিজ্যিক ব্যাংক কর্তৃক প্রদত্ত ঋণ হলো অর্থের যোগানের বড় অংশ। ঋণ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা অবলম্বন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অর্থের যোগানের ওপর প্রভাব বিস্তার করে এবং মুদ্রাস্ফীতি প্রতিরোধে সক্ষম হয়।

খ. পরিমাণগত ঋণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি :

(১) ব্যাংক হারের পরিবর্তন :

কেন্দ্রীয় ব্যাংক তার ব্যাংক হার বাড়িয়ে দিলে বাণিজ্যিক ব্যাংক কর্তৃক প্রদানযোগ্য ঋণের পরিমাণ কমবে। মোট অর্থের যোগান তখন কমে।

(২) খোলা বাজারে ঋণপত্র বিক্রয় :

মুদ্রাস্ফীতির সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক খোলা বাজারে ঋণপত্র বিক্রয় করতে পারে। বাণিজ্যিক ব্যাংক ঋণপত্রের ক্রেতা। তাদের হাত থেকে নগদ অর্থ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে চলে আসে। ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণ প্রদান ক্ষমতা কমে।

(৩) নগদ জমার অনুপাতের পরিবর্তন :

মুদ্রাস্ফীতির সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক নগদ জমার অনুপাত বাড়ায়। তখন বাণিজ্যিক ব্যাংকের হাতে নগদ অর্থের পরিমাণ কমে। ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংক বেশি ঋণদান করতে পারে। এভাবে পরিমাণগত ঋণনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলোর দ্বারা মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রিত হয়।

(৪) গুণগত ঋণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি :

গুণগত ঋণ নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি অনুসারে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে ঋণদানের ওপর বিধি-নিষেধ আরোপ করতে পারে। নৈতিক চাপ ও প্রচারের মাধ্যমে বাণিজ্যিক ব্যাংকের ঋণদানের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। তখন ঋণের প্রসার কমে এবং মুদ্রাস্ফীতির চাপ হ্রাস পায়।

মুদ্রাস্ফীতি ও মুদ্রা সংকোচন কি

মুদ্রাস্ফীতি | Inflation

কোন কালপরিধিতে পণ্য-সেবার মূল্য টাকার অঙ্কে বেড়ে গেলে অর্থনীতির ভাষায় তাকে মুদ্রাস্ফীতি বলা হয়। সাধারণত পণ্যদ্রব্যের দাম বেড়ে গেলে স্থানীয় মুদ্রা দিয়ে ঐ পণ্য ক্রয়ে বেশি পরিমাণ মুদ্রার প্রয়োজন কিংবা একই পরিমাণ মুদ্রা দিয়ে আগের পরিমাণ পণ্য কিনতে গেলে পরিমাণে কম পাওয়া যায়। সুতরাং মুদ্রাস্ফীতির ফলে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে যায়।

একই ভাবে অর্থনীতিতে পণ্যের আসল বিনিময়মূল্য কমে যায়। সাধারণত মুদ্রাস্ফীতি সূচকের মাধ্যমে হিসাব করা হয় যাকে মুদ্রাস্ফীতি সূচক বলা হয়।

মূদ্রাস্ফীতি একটি অর্থনীতিতে একাধারে ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। নেতিবাচক প্রভাবের মধ্যে নগদ অর্থের সুযোগ ব্যয় কমে যায় এবং মানুষ নগদ অর্থের সঞ্চয়ের বদলে তা খরচ করে ফেলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। এর ফলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান সঞ্চয়ের অভাবে ভোগে এবং অর্থনীতিতে বিনিয়োগ কমে আসে।

এছাড়াও মুদ্রাস্ফীতির ফলে গদবাধা আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার মান নিচে নেমে আসে এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সূদের প্রকৃত হার পুনরায় নিরূপণ করতে হয়। অপরদিকে ইতিবাচক প্রভাবগুলো হল পন্যের দাম বেড়ে যাওয়ার বিনিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগে উৎসাহী হয় যার ফলে অর্থনীতিতে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্ঠি হয় এবং যার মাধ্যমে নতুন উপভোক্তা তৈরী হয়।

মুদ্রাসংকোচন | Deflation

উত্তর: মুদ্রাসংকোচন হলো মুদ্রাস্ফীতির ঠিক বিপরীত ধারণা বা অবস্থা। যখন দেশে দ্রব্যসামগ্রীর যোগান অপেক্ষা অর্থের যোগান কম হয়, তখন দামস্তর ক্রমাগত ও অব্যাহতভাবে হ্রাস পেতে থাকে। দামস্তর হ্রাসের এই প্রবণতাই অর্থনীতিতে মুদ্রাসংকোচন হিসেবে বিবেচিত।

অধ্যাপক স্যামুয়েলসনের মতে, ‘মুদ্রাসংকোচন বলতে এমন অবস্থা বোঝায়, যখন অধিকাংশ দ্রব্যসামগ্রীর মূল্য ও উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পেতে থাকে।’

অর্থনীতিবিদ পল আইনজিগের মতে, ‘মুদ্রাসংকোচন হলো এমন একটি ভারসাম্যহীন অবস্থা, যেখানে দামস্তরের নিম্নগতির প্রতিক্রিয়া হিসেবে অর্থনৈতিক শক্তি সংকুচিত হয়ে আসে। সুতরাং বলতে পারি, যখন কোনো একটি দেশে দ্রব্যসামগ্রীর জোগান অপেক্ষা অর্থের জোগান কম হয় এবং এর ফলে দামস্তর ক্রমান্বয়ে হ্রাস পায়, তখন তাকে মুদ্রাসংকোচন বলে।

মুদ্রাস্ফীতি ও মুদ্রাসংকোচন এর মধ্যে পার্থক্য

মুদ্রাস্ফীতিমুদ্রাসংকোচন
যখন অধিক পরিমাণ অর্থ অল্প পরিমাণ দ্রব্যের দিকে ধাবিত হয় তখন তাকে মুদ্রাস্ফীতি বলে ।অন্যদিকে পূর্ণ নিয়ােগের সঙ্গে জড়িত দামস্তর অপেক্ষা চলতি দামস্তর যদি নেমে যায় তবে দেশের আয় ও নিয়ােগ কমে , সেই অবস্থাকে মুদ্রাসংকোচন বলে ।
মুদ্রাস্ফীতিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি পায় ।অন্যদিকে মুদ্রাসংকোচনে বিনিয়োগ হ্রাস পায় ।
মুদ্রাস্ফীতিতে অর্থের মূল্য হ্রাস পায়।অন্যদিকে মুদ্রাসংকোচনে অর্থের মূল্য বৃদ্ধি পায়।
মুদ্রাস্ফীতিতে দামস্তর বৃদ্ধি পায় । অন্যদিকে মুদ্রাসংকোচনে দামস্তর হ্রাস পায় ।
মুদ্রাস্ফীতিতে সামগ্রিক চাহিদা বৃদ্ধি পায়।অন্যদিকে মুদ্রাসংকোচনে সামগ্রিক চাহিদা হ্রাস পায় ।
অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে মুদ্রাস্ফীতি সহায়ক । অন্যদিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে মুদ্রাসংকোচ ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে ।
মুদ্রাস্ফীতি ও মুদ্রাসংকোচন এর মধ্যে পার্থক্য

মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যাংকের ভূমিকা, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভূমিকা

মুদ্রাস্ফীতি সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না মুদ্রাস্ফীতি দমন করতে হলে অর্থের আগমন বা লিকুইডিটি কম করতে হবে।

  • Monetary Measure প্রতিটা দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংক গুলির ক্ষেত্রে ঋণের উপর সুদ বৃদ্ধি করে। এটি অর্থ সরবরাহকে নিয়ন্ত্রণ করে, ফলে স্মৃতির নিয়ন্ত্রণে আসে ।যখন ঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার বৃদ্ধি পায় জনগণের টাকা জমানোর প্রবৃত্তি বেড়ে যায় এবং বিনিয়োগের ইচ্ছা কমে যায়।
  • Fiscal Measure: রাজস্ব নীতি অনুযায়ী মুদ্রাস্ফীতি দমন করতে সরকার ব্যক্তিগত ব্যাবসায় কর ধার্য করার মাধ্যমে সরকার ব্যক্তিগত ব্যয় হ্রাস করে । সমাজ কল্যাণের জন্য সরকার সাধারণত ব্যয় হ্রাস করতে পারেনা। তখন একমাত্র উপায় ব্যক্তিগত ব্যয় হ্রাস করা। কর বাড়লে সাধারণ মানুষ তাদের খরচ কমিয়ে দেয়। ফলে অর্থনীতিতে অর্থ সরবরাহ কম হয়।
  • Price Control: প্রাইস কন্ট্রোল এর ফলে মুদ্রাস্ফীতি স্বল্পকালের জন্য কমে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী ফল পাওয়া যায় না।একে Suppressed Inflation বলে । মুদ্রাস্ফীতির কারণ সঠিকভাবে নির্ধারণ করতে না পারলে মুদ্রাস্ফীতি দমন করা সম্ভব নয়।
  • Inflation Targeting এর মাধ্যমে মুদ্রাস্ফীতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।
  • Monetary Policy Framework Agreement: মনিটারি পলিসি ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট ২০১৫ সালের ২০ শে ফেব্রুয়ারি ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় সরকার মনিটরি পলিসি ফ্রেমওয়ার্ক সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই চুক্তি অনুযায়ী আর্থিক নীতির মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত মূল্য স্থায়িত্ব অথচ এক্ষেত্রে বৃদ্ধি ব্যাহত হয় না। RBI নিয়মিত মনিটারি পলিসি টার্গেট সংক্রান্ত ডকুমেন্ট প্রকাশ করে প্রতি ছয় মাস অন্তর পরবর্তী 6 থেকে 18 মাসের মুদ্রাস্ফীতির মাত্রা সম্পর্কেও তথ্য প্রকাশ করে ২০১৪ সালের এপ্রিল মাস থেকে আরবি অর্থনীতির প্রদর্শন হিসেবে সিপিআই কে ব্যবহার করা হয়।

মুদ্রাস্ফীতির হার নির্ণয়ের সূত্র

ভিত্তি বছরের তুলনায় চলতি বছরের দামস্তর বৃদ্ধির শতকরা হারকে মুদ্রাস্ফীতি হার বলে।

মুদ্রাস্ফীতির সূত্র

মুদ্রাস্ফীতির হার = ( বর্তমান সময়ের দাম – পূর্বের সময়ের দাম ) / পূর্বের সময়ের দাম X ১০০

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | মুদ্রাস্ফীতি সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

Q1, মুদ্রাস্ফীতি কেন হয়

Ans – মুদ্রাস্ফীতির প্রধানত দুটি কারণে হয়ে থাকে: ১) চাহিদাজনিত এবং ২) মূল্য জনিত।
উভয়ই কোন দেশের অর্থনীতিতে মূল্যবৃদ্ধির জন্যসমানভাবেই দায়ী, তবে ভিন্নভাবে কাজ করে। যখন কোনপণ্যের চাহিদা গ্রাহকদের কাছ থেকে বাড়ে তখন “চাহিদাজনিত” কারণে মূল্যবৃদ্ধি ঘটে। অন্যদিকে পণ্যের সরবরাহব্যয় বেড়ে গেলে মূল্য জনিত মূল্যবৃদ্ধি হয়।

Q2. মুদ্রাস্ফীতির সংজ্ঞা

Ans – আক্ষরিক অর্থে মুদ্রাস্ফীতি বলতে অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধিকে বোঝানো হয়। মুদ্রাস্ফীতি বলতে এমন একটি প্রক্রিয়াকে বোঝায় যার মাধ্যমে অধিকাংশ দ্রব্য সামগ্রীর দাম ক্রমাগত বৃদ্ধি পায়।

Q3. মুদ্রাস্ফীতির প্রধান কারণ কি

Ans – মুদ্রাস্ফীতি বলতে অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধিকে বোঝানো হয়। মুদ্রাস্ফীতি বলতে এমন একটি প্রক্রিয়াকে বোঝায় যার মাধ্যমে অধিকাংশ দ্রব্য সামগ্রীর দাম ক্রমাগত বৃদ্ধি পায়।

Q4. মুদ্রাস্ফীতি পরিমাপের পদ্ধতি

Ans – মুদ্রাস্ফীতি মাপার জন্য বিভিন্ন সূচক ব্যবহার করা হয়। এরমধ্যে দুটি প্রধান সূচক হল হোলসেল প্রাইস ইনডেক্স (যখন হোলসেলারের জায়গা থেকে মূল্যবৃদ্ধি মাপা হয়) এবং কনসিউমার প্রাইস ইনডেক্স (যখন কনজিউমার বা ক্রেতার জায়গা থেকে মূল্যবৃদ্ধি মাপা হয়)।

Q5. মুদ্রাস্ফীতি ইংরেজি

Ans – মুদ্রাস্ফীতি ইংরেজি Inflation।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।