পরিবেশ কাকে বলে, পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার, পরিবেশ দূষণ রচনা

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

প্রশ্নপত্র

পরিবেশ কাকে বলে

পরিবেশ মানুষের জীবনকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে। আর এ পরিবেশ কোনো স্থানের অবস্থা বা পরিস্থিতির সমষ্টির রূপ। মানব সমাজ ও সমাজবদ্ধ মানবগোষ্ঠী সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ আলোচনার স্বার্থে পরিবেশ সম্পর্কিত জ্ঞানার্জন অত্যন্ত জরুরি। পরিবেশ কোনো স্থানের সার্বিক অবস্থা বা পরিস্থিতির সমষ্টিগত রূপ। পরিবেশের তারতম্যের জন্য পৃথিবীতে বসবাসরত যেকোনো অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মান বিভিন্ন হয়। আর যেসব অবস্থাসমূহ এবং বস্তুসমূহ জীবকে প্রভাবিত করে তাই পরিবেশ। একটি অঞ্চলের মানুষের অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের ওপরও পরিবেশ যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে।

সাধারণভাবে বলা যায় আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে তার সমন্বিত রূপ হচ্ছে পরিবেশ।পরিবেশ আমাদের চতুষ্পার্শ্বস্থ অবস্থা অর্থাৎ যে পারিপার্শ্বিক অবস্থার মধ্যে মানুষ তার জীবনযাত্রা নির্বাহ করে, তাকে পরিবেশ বলে।

পরিবেশের সংজ্ঞা

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর মতে,যে সমগ্র অবস্থা, শক্তি ও বস্তুসমূহ জীবনকে পরিবর্তিত অথবা প্রভাবিত করে তাকে পরিবেশ (Environment) বলে।”

অধ্যাপক ম্যাকাইভার ও পেজ (Prof. MacIver and Page) এর মতে, “Environment is not one but infinitely various.” অর্থাৎ আমাদের বসবাস বা বাসস্থানই হলো পরিবেশ।

অধ্যাপক চেম্বার্স (Prof. Chambers) বলেন, “পরিবেশ হলো পারিপার্শ্বিক অবস্থা যা উন্নয়ন প্রক্রিয়ার প্রভাব বিস্তার করে।”

আরো পড়তে: বায়ু দূষণ কাকে বলে

পরিবেশ কত প্রকার, পরিবেশ কত প্রকার ও কি কি

পরিবেশের উপাদানগুলোকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:

(ক) প্রাকৃতিক উপাদান :

প্রকৃতি হতে যে উপাদান পাওয়া যায় তা পরিবেশের প্রাকৃতিক উপাদান নামে পরিচিত। যেমন- প্রাণী, গাছপালা, জলবায়ু, বৃষ্টিপাত, নদ-নদী, পাহাড়-পর্বত, আকাশ, সমুদ্র, সূর্য, নক্ষত্র ইত্যাদি প্রাকৃতিক পরিবেশের উ পান। 

মানুষের জীবনযাত্রার উপর প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদানগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে। প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান আবার দুটি ভাগে বিভক্ত যথা-

১. জৈব উপাদান :

প্রাকৃতিক পরিবেশে জীব সম্প্রদায়দের নিয়ে গঠিত উপাদানই জৈব উপাদান। যেমন- প্রাণী ও গাছপালা ও অণুজীব। 

২. অজৈব উপাদান :

প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রাণহীন পদার্থদের নিয়ে গঠিত উপাদানসমূহ অজৈব উপাদান। যেমন- রাসায়নিক উপাদান ও রূপান্তরিত উপাদান।

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদানসমূহ ব্যবহৃত হয়ে থাকে

(খ) সামাজিক উপাদান :

মানুষের জীনধারণের জন্য যেসব পদার্থ প্রয়োজন তা সামাজিক উপাদান নামে পরিচিত। পুরো সমাজটাই একটা পরিবেশ। আমাদের মানুষজনকে নিয়ে গঠিত সমাজ আমাদের উপর প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া কায়েম করে। 

এই সমাজকে নিয়েই গঠিত হয় সামাজিক পরিবেশ মানুষের দৈহিক ও অর্থনৈতিক জীবনের উপর সমাজের প্রভাব সর্বজনবিদিত। সমাজিক পরিবেশ গড়ে উঠে তিন ধরনের পরিবেশকে নিয়ে। যথা-

১. অর্থনৈতিক পরিবেশ :

অর্থনৈতিক পরিবেশ সামাজিক পরিবেশের, যেমন : অংশ, তেমনি আবার প্রাকৃতিক পরিবেশের অংশ। অর্থনৈতিক পরিবেশের উপাদান হলো ঘরবাড়ি, জমিজমা, বাগান, পথঘাট, যন্ত্রপাতি, মসজিদ, মন্দির, গির্জা ইত্যাদি ।

২. সাংস্কৃতিক পরিবেশ :

মানুষের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার যেসব উপাদানকে নিয়ে গড়ে উঠে সেসব উপাদানের সমাবেশের ফলেই সৃষ্টি হয় সাংস্কৃতিক পরিবেশের। সাংস্কৃতির পরিবেশের উপাদান হলো- প্রথা, বিশ্বাস, ঐতিহ্য, জ্ঞান- বুদ্ধি, চিন্তাধারা ইত্যাদি।

৩. মনস্তাত্ত্বিক পরিবেশ :

মনস্তাত্ত্বিক পরিবেশ নামে এক ধরনের পরিবেশ রয়েছে পূর্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে মানুষের কিছু বিশেষ মানসিকতা বা মনোভাব এবং স্বাভাবিক প্রবণতার সৃষ্টি হয়।

পরিবেশের গুরুত্ব

ক) জীবনযাপনের জন্য পরিবেশের গুরুত্ব অপরিসীম।

খ) পরিবেশ আমাদের জীবন যাত্রার মানকে প্রভাবিত করে। এরফলে আমাদের জীবন যাত্রার মান সহজ সরল হয়।

গ) প্রকৃতি থেকে আমরা অনেক উপকারী জিনিস পাই যা আমাদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করে।

ঘ) প্রকৃতি থেকে ওষুধ পাই যা আমাদের খুব উপকারে আসে।

ঙ) জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ বড় ভূমিকা পালন করে।

চ) স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য পরিবেশের গুরুত্ব তুলনাহীন।

পরিবেশ দূষণ কাকে বলে

জীব মণ্ডলের ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক বৈশিষ্ট্যের অনাকাঙ্খিত পরিবর্তন যা জীবজগত পরিবেশের ক্ষতি সাধন করে তাকে পরিবেশ দূষণ বলে।

দূষণ হল জীবমণ্ডলের ভৌত, রাসায়নিক এবং জৈবিক বৈশিষ্ট্যের এমন অনাকাঙ্খিত সুবিশাল পরিবর্তন যা জীবজগৎ ও পরিবেশের ওপরে বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে। যন্ত্রচালিত আধুনিক সভ্যতা, শিল্প বিপ্লব, বিলাসবহুল জীবনযাত্রা, ভোগবাদ, অতিরিক্ত ভোগ্যপণ্য উৎপাদন, অনিয়ন্ত্রিত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, প্রাকৃতিক সম্পদের যথেচ্ছ ব্যবহার, শিল্পায়ন, নগরায়ণ এবং অতিরিক্ত সংশ্লেষিত দ্রব্যের অত্যাধিক পরিমাণে ব্যবহারের ফলেই পৃথিবীর বায়ু, জল, মাটি আজ দুষিত ও বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে উঠছে দিন দিন।

পৃথিবীব্যাপী এই মারাত্মক দূষণের ফলে প্রকৃতির ভারসাম্য আজ বিঘ্নিত যা ব্যাপকভাবে প্রভাব পড়ছে পরিবেশে, মানবশরীরে ও মানব অর্থনীতিতে।

পরিবেশ দূষণের প্রকারভেদ :

পরিবেশ দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ গুলির মধ্যে হল- বায়ুদূষণ, জলদূষণ, মাটিদূষণ, শব্দদূষণ প্রভৃতি।

বায়ু দূষণ (Air pollution) : প্রাকৃতিক কারণে বা মানুষের বিভিন্ন কাজকর্মের দ্বারা বায়ুমণ্ডলের উপাদানের হ্রাস বা বৃদ্ধির মাধ্যমে জীবের ওপর যে ক্ষতিকর প্রভাব দেখা যায়, তাকে বায়ুদূষণ বলে।

জল দূষণ (Water pollution ) : প্রাকৃতিক কারণে বা মনুষ্যসৃষ্ট কারণে জলে ক্ষতিকারক জীবাণু বা অবাঞ্ছিত বস্তুর উপস্থিতির ফলে জলের যে ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক বৈশিষ্ট্যের পরিবর্তন ঘটে, তাকে জলদূষণ বলে।

মাটি দূষণ (Soil pollution) : অবাঞ্ছিত জৈব পদার্থ বা রাসায়নিক পদার্থের সংযোজনের ফলে মাটির স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্যের যে পরিবর্তন ও গুণগত মানের অবক্ষয় ঘটে, তাকে মাটিদূষণ বলে।

শব্দদূষণ (Sound pollution) : সহনশীলতা অতিক্রমকারী শব্দ যখন শ্রোতার কাছে পীড়াদায়ক হয় এবং প্রাণীদের শারীরিক ও মানসিক সাম্যাবস্থাকে বিঘ্নিত করে, তাকে শব্দদূষণ বলে।

পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার, পরিবেশ দূষণের কারণ, পরিবেশ দূষণের কারণ ও ফলাফল

পরিবেশ দূষণের কারণগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল-

বায়ু দূষণের প্রধান কারণ গুলি কি কি

1.গ্রিনহাউস গ্যাস :বিভিন্ন শিল্প কলকারখানা ও মোটর গাড়ি থেকে নির্গত ধোয়ার নানারকম গ্রীন হাউস গ্যাস যেমন CO2, NH3, N2O, NO, CFC প্রভৃতি বায়ুকে দূষিত করে ।

2. কণাগত পদার্থ :মোটর গাড়ির ধোঁয়ায় থাকা বেঞ্জোপাইরিন, তাপবিদ্যুৎ ও সিমেন্ট কারখানার উড়ন্ত ছাই, অ্যাসবেসটস কনা, সিলিকা, অভ্র, কয়লা পাট, কার্পাস এবং প্রভৃতি জৈব কণা বায়ু দূষিত করছে ।

বায়ু দূষণের ফলাফল গুলি আলোচনা কর

অ্যাসিড বৃষ্টি :

1. H2S, NO2 ও CO2, গ‍্যাসগুলি H2SO4, HNO3 ও H2CO3 সৃষ্টি করে অ্যাসিড বৃষ্টি বা অম্লবৃষ্টি ঘটায় যা জলে মিশে জলকে আম্লিক করে তোলে যার ফলে বিভিন্ন জলজ প্রাণী ক্ষতির মুখে পড়ে।

2. উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষে ব্যাহত হয়।

3. অ্যাসিড বৃষ্টির ফলে পরিবেশের মডেল স্ট্যাচু ও ঘরবাড়ির ক্ষতি সাধন করে।

4. অ্যাসিড বৃষ্টির ফলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ও সমুদ্রের জলতল বৃদ্ধি পায়।

5. অ্যাসিড বৃষ্টির কারণে আবহাওয়া ও বৃষ্টিপাতের ধরন পরিবর্তিত হয় যেমন কোথাও খরা, কোথাও অতিবৃষ্টি কোথাও আবার অনাবৃষ্টি দেখা যায়।

6. অ্যাসিড বৃষ্টির ফলে জলজ বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য ক্ষতির মুখে পরে।

বায়ু দূষণের কারণে কি কি রোগ হয়

ছোট ছোট কণাগুলি ফুসফুসের মধ্যে প্রবেশ করে ফুসফুসে নানারকম রোগের সৃষ্টি করে যেমন অ্যাসবেসটস কণা ফুসফুসের ক্যানসার, কয়লার গুড়ো অ্যানথ্রাকোসিস, ব্ল‍্যাকলাং , তুলোতন্তু বিসিনোসিস, অ্যালার্জি  প্রভৃতি রোগ সৃষ্টি করে।

জল দূষণের কারণ গুলি কি কি

1. কৃষিক্ষেত্রের বর্জ্য পদার্থ : কৃষি কাজের জন্য বিভিন্ন রকম রাসায়নিক সার ইউরিয়া, অ্যামোনিয়াম, সালফেট, সুপার ফসফেট,  পটাশ ও বিভিন্ন রকম কীটনাশক ও আগাছানাশকের কারণে জল দূষণ হচ্ছে।

2.জীবাণু : গৃহস্থালি ও পৌর প্রয়ঃপ্রণালীর বিভিন্ন রকম জীবাণু জলে মিশে জলকে দূষণের ফলে নানারকম রোগের সৃষ্টি করছে।

জল দূষণের ফলাফল

ইউট্রোফিকেশন : ফসফেট জাতীয় রাসায়নিক সার ও ডিটারজেন্ট জলে মেশার ফলে জলজ উদ্ভিদের অতিবৃদ্ধি ঘটে একে ইউট্রোফিকেশন বলে।

1. শ্যাওলার অতিবৃদ্ধি ও মৃত শ‍্যাওলার পচনের ফলে ব্যাপক মাত্রায় জল দূষণ হচ্ছে। এর ফলে জলের O2 এর পরিমাণ হ্রাস পায় অ্যালগাল ব্লুম বলে।

2. ইউট্রোফিকেশন এর ফলে জলের BOD বৃদ্ধি পায় এর ফলে বিভিন্ন জলজ প্রাণীর মৃত্যু ঘটে।

জীবাণুঘটিত রোগ : ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া প্রোটোজোয়া, কৃমি প্রভৃতি দূষিত জলে উপস্থিত থাকাই বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হচ্ছে । জল দূষণের ফলে রোগ গুলি মানবদেহে বাঁসা বাঁধছে।

1. হেপাটাইটিস ভাইরাসের সংক্রমে হেপাটাইটিস রোগের সৃষ্টি হয়।

2. ভিব্রিও কলেরি সালমোনেল্লা নামক ব্যাকটেরিয়া সংক্রমনের ফলে কলেরা ও টাইফয়েড রোগের সৃষ্টি হয়।

3. এন্টামিবা, হিস্টোলাইটিকা,জিয়ার্ডিয়া প্রভৃতি আদ্যপ্রাণীর সংক্রমনে আমাশা, জিয়ার্ডিয়েসিস রোগের সৃষ্টি হয়।

মাটি দূষণের কারণ গুলি কি কি

জীবাণু : বিভিন্ন রকম পৌর আবর্জনা মানুষ ও প্রাণীর মলমূত্র  মাটিকে বিভিন্ন ভাবে দূষিত করছে।

রাসায়নিক পদার্থ : বিভিন্ন রকম সার ও কীটনাশক (ম‍্যালাথিয়ন, অ্যালড্রিন) ও আগাছানাশক মাটির উর্বরতা ক্ষমতাকে নষ্ট করে মাটিকে দূষিত করছে।

মাটি দূষণের ফলাফল

মনুষ্যজাতির উপর প্রভাব : সরাসরি মাটির সঙ্গে স্পর্শ বা প্রশ্বাসের মাধ্যমে মাটিদূষক দেহে প্রবেশ করলে বিভিন্ন রকমের রোগের সৃষ্টি করে।

মাটি দূষণের ফলে কি কি রোগ হয়

1. পোলিওমাইলাইটিস ভাইরাসের সংক্রমণে শিশুদের পোলিও রোগের সৃষ্টি হয়।

2. রোটা ভাইরাসের সংক্রমনে শিশুদের উদরাময় রোগের লক্ষণ দেখা যায়।

3. ব্যাকটেরিয়া ও কৃমির সংক্রমনের ফলে শিশুদের বিভিন্ন রকম রোগের সৃষ্টি হয়।

জৈব বিবর্ধন : অর্গানোক্লোরিন ও অর্গানোফসফেট জাতীয় কীটনাশক কৃষি ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হলে এরা সর্বশেষে জলে মেশে এবং জীবদেহে ফ্যাট জাতীয় পদার্থে সঞ্চিত হতে থাকে। এগুলি অভঙ্গুর দূষক এবং খাদ্যশৃঙখলের মাধ্যমে প্রতি পুষ্টি স্তরে প্রবেশ করে। পুষ্টিস্তর দিয়ে সঞ্চিত হওয়ার সময় প্রতিটি পুষ্টিস্তরে দূষকগুলির ঘনত্ব বৃদ্ধি পায় ও সর্বত্র পুষ্টি স্তরে ঘনত্ব সর্বাধিক হয় এই ঘটনাকে জৈব বিবর্ধন বলে।

শব্দ দূষণের কারণ গুলি আলোচনা কর

যানবাহন : ট্রাম, বাস, লরি প্রভৃতির ইলেকট্রিক হর্ন, চাকার ঘর্ষণ, মোটোর ইঞ্জিন প্রকৃতির আওয়াজ শব্দ দূষিণ করে।

শিল্প : বিভিন্ন রকম প্রেসের মেশিন, টেক্সটাইল লুম, নিউজ পেপার প্রেস,  পাঞ্চিং মেশিন, গাড়ি সারাই সাইরেন প্রকৃতির অত্যাধিক আওয়াজের ফলে শব্দ দূষিত হচ্ছে।

শব্দ দূষণের ফলাফল

মানুষের উপর প্রভাব :

1.শব্দ দূষণের ফলে মানুষের শ্রবণক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে।

2. ১০০ ডেসিমেল শব্দের মধ্যে থাকলে বধিরতা দেখা দেয় কারণ কানের অর্গান অফ কর্টির কোষগুলি সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে।

3. দীর্ঘক্ষন জোরালো আওয়াজের ফলে হৃৎপিণ্ডের উপর প্রভাব ফেলে এতে হৃৎস্পন্দনে ও রক্তচাপের হার বেড়ে যায়।

অন্যান্য প্রাণীর উপর প্রভাব :

1. কুকুর, বিড়াল এবং অন্যান্য বন্য প্রাণীরা জোরালো শব্দ সহ্য করতে পারে না সেই সঙ্গে জোরালো আওয়াজের ফলে শিকারে বাধা ঘটে।

2. অত্যাধিক মাত্রায় শব্দের ফলে বিভিন্ন প্রাণীর (যেমন পাখি) প্রজননে লিপ্ত হতে বাধা সৃষ্টি করে।

আরো পড়তে: প্রাকৃতিক পরিবেশ কাকে বলে, প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদান গুলো কি কি

পরিবেশ দূষণ রচনা, পরিবেশ দূষণ অনুচ্ছেদ, পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা

ভূমিকা

এই পৃথিবীতে বাস করে মানুষ, তার সঙ্গে রয়েছে আকাশ-বাতাস, সূর্য-তারা, পাহাড় -পর্বত, গাছপালা, ফুল-ফল, কত জীবজন্তু। এই সে সব জিনিস, যা দিয়ে আমাদের পৃথিবী সাজানো হয়েছে, তা সবই আমাদের প্রয়োজনীয়। পৃথিবীর বা প্রকৃতির কোনো- কিছুই তুচ্ছ নয়, যেখানে যেটা থাকলে মানায়, সেখানে ঠিক সেটাই আছে। এভাবে পৃথিবীতে জীব মাত্রই একে অন্যের জীবন ধারনে, অস্তিত্ব রক্ষায়, বৃদ্ধিতে-ধ্বংসে সাহায‍্য করছে। সুবিন্যস্ত এই পরিশের জন্যই পৃথিবী এত সুন্দর।

পরিবেশ বলতে কী বোঝায়

আমাদের চারপাশে যা কিছু আছে – ঘরবাড়ি, গাছপালা, অজস্র জীবজন্তু, প্রাকৃতিক নানা জিনিস – সকলকে নিয়েই গঠিত হয়েছে আমাদের পরিবেশ। নানা কারণে পৃথিবীর সুন্দর পরিবেশ দিন দিনই কলুষিত হয়ে পড়ছে। এর অন্যতম প্রধান কারন পৃথিবীতে জনসংখ্যার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা যতই বাড়ছে তাদের জন্য তত বেশি খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থান যানবাহন ইত্যাদির প্রয়োজন হচ্ছে। এসবের সংস্থান করতে গিয়ে মানুষ পরিবেশকে দূষিত করে তুলেছে। মানুষ সবুজ বনভূমি কেটে ফেলায়, এবং সেখানে বসতি ও কলকারখানা স্থাপন করা পরিবেশ হচ্ছে দুষিত।

গাছপালা আমাদের অক্সিজেনের যোগাল দেয়, তাই গাছ কেটে ফেলায় অক্সিজেনের পরিমান কমছে, বাতাসে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমান বাড়ছে, কলকারখানা গুলি থেকে নির্গত ধোঁয়া, ধুলিকনা ও অন্যান্য বর্জ্য পদার্থ পরিবেশকে দূষিত করছে। পরিবেশ দূষণের ফলে বাতাসে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইডের ভারসাম্য ক্রমশই নষ্ট হচ্ছে। ফলে জল-মাটি-বায়ু দূষিত হচ্ছে, ফল, ফুল, ফসল দূষণের শিকার হয়ে পড়ছে।

পরিবেশ দূষনের কুফল

খাদ‍্য বা জল না পেলে মানুষ কয়েকদিন বেঁচে থাকতে পারে, কিন্তু বাতাস ছাড়া তার পক্ষে এক মুহূর্তও বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। এমন প্রয়োজনীয় বাতাস নানা কারণে দূষিত হাওয়ায় মানুষ তো বটেই, সমগ্র প্রাণীকূল ও উদ্ভিদজগত বিপদের সম্মুখীন হয়েছে। বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্যাসের পরিমান বেড়ে যাওয়ায় পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করেছে। এর বিষময় প্রভাবে সুমেরু অঞ্চলের বর গলতে শুরু করেছে। বরফ গলার পরিমাণ আরও বেরে গেলে পৃথিবীর বহু অঞ্চলে আগামী দিনে প্লাবন ঘটতে পারে।

পরিবেশ দূষিত হলে প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। ফলে অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি, ঝড় ঝঞা ইত্যাদি প্রাকৃতিক – বিপর্যয় দেখা দেয়। উদাহরণস্বরূপ, দীর্ঘদিন বৃষ্টি না হলে মাটিতে জলের স্বাভাবিক স্তর অনেক নিচে চলে যায় । ফলে ওপরের স্তরের মাটি রসহীন হয়ে পড়ে। মাটি রসহীন হয়ে পড়লে গাছপালার স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটে না এবং ফসলাদি ঠিকমত হয় না। ফসলাদি ঠিকমত না হলে খাদ্যাভাব দেখা দেয়। আবার গাছপালার অভাবে জীবজন্তুরও টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে । সুতরাং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হলে মানুষ ও জীবজন্তু উভয়ের জীবন ধারণের পক্ষে ব্যাঘাত ঘটে ।

ইদানিং জানা যাচ্ছে, বায়ুমণ্ডলের ওপরের ওজোন স্তর বায়ু দূষণের ফলে ক্রমেই অধিক পুরু হয়ে যাচ্ছে । ফলস্বরূপ, সূর্যের তাপ ঠিকমত বিকিরিত হতে না পেরে পৃথিবীর স্থলভাগ আরো অধিক উত্তপ্ত হয়ে উঠবে এবং এর প্রতিক্রিয়ায় দুই মেরু প্রদেশের পুঞ্জীভূত বরফের স্তর গলে গিয়ে সারা বিশ্বব্যাপী মহাপ্লাবন ঘটবে।

আরো পড়তে: জীব কাকে বলে, জড় কাকে বলে, জীব বিজ্ঞানের জনক কে, জীব ও জড়ের পার্থক্য

পরিবেশ দূষণের বিরূপ প্রভাব

জলে – স্থলে – অন্তরীক্ষে এবং অসীম বায়ুমণ্ডলে আজ দূষণ প্রক্রিয়া ছড়িয়ে পড়েছে । মানুষের মল-মূত্র যেমন জল ও বাতাসকে দূষিত করছে তেমনি কারখানার বর্জ্য, নদী ও সমুদ্রের জলকে প্রাণিকুলের বসবাসের অযোগ্য করে তুলেছে। তাছাড়া সাবমেরিনে রাসায়নিক ও পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার বিশ্বের জলরাশিকে বিষিয়ে তুলেছে । আজ বাতাসে বৃদ্ধি পেয়েছে কার্বন ডাই অক্সাইড, উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে আবহাওয়ামণ্ডল।

উত্তপ্ততার কারণে – ফুলে উঠেছে সমুদ্রবক্ষ,দেখা দিয়েছে গ্রিন হাউস ইফেক্ট। বনাঞ্চল ধ্বংসের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে মরুকরণ প্রক্রিয়া। পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার কারণে অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, অকালবন্যা বা ঝড় – জলোচ্ছ্বাসে মর্তবাসী প্রায়শ বিপন্ন হয়ে পড়ছে। যানবাহন ও কারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাসে মানুষ ক্যান্সার শ্বাসকষ্টের মতো দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে। তাছাড়া শব্দদূষণের কারণে মানুষের স্নায়ুবিক বৈকল্য দেখা দিয়েছে।

পরিবেশ দূষণের কারণ

পরিবেশ দূষণের কারণ অনেক । তবে নিম্নলিখিত কারণগুলোকে মুখ্য হিসেবে আমরা চিহ্নিত করতে পারি।

১. অবাধ শিল্পায়ন : শিল্পায়নের কারণে প্রতিদিন বিষাক্ত বর্জ্য পদার্থ বাড়ছে। এ বর্ধিত বর্জ্য পদার্থ বিশ্বের পরিবেশকে বিষিয়ে তুলেছে। বর্জ্য অপসারণ ও নির্মলে শিল্প মালিকদের দায়িত্বহীনতা এ সমস্যাটিকে গুরুতর করে তুলেছে।

২. জনসংখ্যার বিস্ফোরণ : অতিরিক্ত জনসংখ্যা বৃদ্ধি পরিবেশের জন্যে সবচেয়ে বড় হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। বিপুল জনগোষ্ঠীর মুখের আহার যোগাড় করার জন্যে বন জঙ্গল সাফ করে আবাদি জমিতে পরিণত করতে হচ্ছে । এতে পরিবেশ ভারসাম্য হারাচ্ছে। তাছাড়া মানুষের মল মূত্র, কফ কাশি প্রভৃতি বাতাস ও জলকে দূষিত করছে। অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার পরিবেশকে বিপন্ন করছে।

৩. অস্ত্র প্রতিযোগিতা : পারমাণবিক ও রাসায়নিক অস্ত্রের অবাধ ব্যবহার পরিবেশের জন্যে হুমকি হয়ে দাড়িয়েছে। প্রায়ই সমুদ্র ও ভূগর্ভে পারমাণবিক পরীক্ষা চালানো হচ্ছে । যুদ্ধের সময় পরমাণু বা রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার বিশ্বের পরিবেশকে বিপন্ন করে তুলেছে। পরমাণু চুল্লির বর্জ্য ও পরিত্যক্ত অসামগ্রী আজ সবচেয়ে বড় পরিবেশগত সমস্যা সৃষ্টি করেছে। ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে রাশিয়ার চেরনোবিলে পরমাণু দুর্ঘটনা থেকে প্রচুর পরিমাণ তেজস্ক্রিয় পদার্থ পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে।

৪. যান্ত্রিক যানবাহনের ব্যবহার : তরল জ্বালানিচালিত যানবাহনের অবাধ ব্যবহার আবহাওয়াকে দুষিত করে তুলেছে । যানবাহনের বিষাক্ত কালো ধোঁয়া বিষাক্ত গ্যাস ছড়াচ্ছে । তাছাড়া যানবাহনের চালকদের কাণ্ডজ্ঞানহীন হর্ণ বাজানো তীব্র শব্দদূষণ ঘটাচ্ছে।

পরিবেশ দূষণ রোধের উপায়, পরিবেশ দূষণের প্রতিকার

যেহেতু পরিবেশকে আমরা নিজেরাই দূষিত করি, সেহেতু একে দূষণমুক্ত রাখার জন্য আমাদেরকেই সচেষ্ট হতে হবে । বায়ুদূষণ প্রতিরোধকল্পে অধিক পরিমাণে গাছপালা লাগাতে হবে, যত্রতত্র মলমূত্র ত্যাগের অভ্যাস পরিহার করে স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার করতে হবে, ইটের ভাটায় লম্বা চিমনী ব্যবহার করতে হবে । এবং জীবজন্তুর মৃতদেহ মাটিতে পুঁতে রাখতে হবে। জলদূষণ রোধের জন্য কল কারখানার বর্জ্য পদার্থ নদ- নদীতে ফেলা বন্ধ করতে হবে। জমিতে ব্যবহৃত কীটনাশক ওষুধ যাতে খাল- বিল বা নদীতে না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। শব্দদূষণ রোধে জনবসতি এলাকায় বিকট শব্দে হর্ণ বাজান যেমন নিষিদ্ধ করতে হবে, তেমনি বিকট শব্দে লাউডস্পিকার, মাইক, রেডিও, টেলিভিশন ইত্যাদি বাজানো নিষিদ্ধ করতে হবে যাতে জনসাধারণের অসুবিধার উৎপত্তি না ঘটে।

পরিবেশ দূষণের প্রতিকার : নিম্নে পরিবেশ দূষণের প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করা হলো ―

১. সচেতনতা বৃদ্ধি : প্রথমেই পরিবেশ দূষণের ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে হবে । যাতে তারা অবাধে বৃক্ষনিধন, অতিরিক্ত সার কীটনাশক ব্যবহার ও যত্রতত্র মল-মূত্র ত্যাগ থেকে বিরত থাকে।

২. যুদ্ধংদেহী মনোভাব পরিহার : বিশ্ব নেতৃবৃন্দ যদি অত্র প্রতিযোগিতা ও যুদ্ধংদেহী মনোভাব পরিহার করেন তাহলে পরমাণু ও রাসায়নিক অস্ত্রজনিত পরিবেশ দূষণ থেকে বিশ্ববাসী রক্ষা পাবে।

৩. জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ : বিশ্বের লাগামহীন জনসংখ্যা বৃদ্ধি রোধ করতে না পারলে পরিবেশ দূষণ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব নয়। জনসংখ্যাকে কাম্য সংখ্যার মধ্যে রাখতে পারলে পরিবেশ সুস্থতা ফিরে পাবে।

৪. বৃক্ষরোপণ : বৃক্ষনিধন বন্ধ ও প্রচুর বৃক্ষরোপণ করে পরিবেশের সুস্থতা ফিরিয়ে আনা যায়। সেজন্য বৃক্ষরোপণকে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে হবে।

৫. উন্নত যান্ত্রিক কৌশল আবিষ্কার : শিল্পক্ষেত্রে আরো উন্নত যান্ত্রিক ব্যবস্থা উদ্ভাবন করতে হবে যাতে বর্জ্যে বিষাক্ত পদার্থের মাত্রা কম থাকে। তাছাড়া বর্জ্য নির্মূল ও অপসারণেও উন্নততর ব্যবস্থাপনার জন্যে গবেষণা চালাতে হবে।

৫. যান্ত্রিক গাড়ির ব্যবহার নিরুৎসাহিতকরণ : পরিবেশ দূষণ রোধ করার জন্যে তরল জ্বালানিচালিত যান্ত্রিক যানবাহনের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে হবে। কেননা, শহরে পরিবেশ দূষণের ক্ষেত্রে যান্ত্রিক গাড়ির ধোয়া সবচেয়ে বড়ো ভুমিকা পালন করে। যন্ত্রবিহীন যানবাহন ব্যবহারে উৎসাহিত করতে হবে।

৬. সামাজিক আন্দোলন : পরিবেশ দূষণের বিরুদ্ধে এক দুর্বার সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আসল কথা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরিবেশবাদী সংগঠন গড়ে উঠেছে। অন্যদিকে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে ঐকমত্যে উপনীত হয়েছে।

উপসংহার

এই বিশ্বকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্যে বসবাসের উপযোগী করে রাখতে হলে আমাদের সবাইকে পরিবেশ সচেতন হতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের বসবাসের জন্যে পৃথিবী একটাই এবং এই ছোট্ট পৃথিবীকে বাঁচিয়ে রাখাই আমাদের দায়িত্ব। কবি সুকান্তের ভাষায়-

“এ বিশ্বকে সবার কাছে বাসযোগ্য করে যাব আমি-
এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।”

আরো অন্যান্য সরকারি স্কিম সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | পরিবেশ দূষণ

Q1. পরিবেশ দূষণ কি

Ans – বায়ু, জল, মাটি প্রভৃতির ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক বৈশিষ্ট্যের যে অনভিপ্রেত পরিবর্তন মানবসভ্যতাকে বা কোনো প্রজাতির জীবনকে, কোনো শিল্পের প্রক্রিয়াকে, কোনো সজীব অস্তিত্বকে এমনকি কোনো সাংস্কৃতিক বা প্রাকৃতিক সম্পদকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে বা করতে পারে, তাকেই পরিবেশ দূষণ বলা হয়।

Q2. পরিবেশ দূষণ গুলো কি কি

Ans – পরিবেশ দূষণ হলো পরিবেশে বিভিন্ন ধরনের পদার্থ বা দ্রব্য নির্গত হলে তাকে দূষিত বলা হয়। পরিবেশ দূষণের প্রধান কারণগুলো হলো

বায়ু দূষণ: যানবাহন, কলকারখানা, বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করার পাইপ ইত্যাদি থেকে উদ্ভিদ ও প্রাণীজাতির জীবনকে বিষাক্ত করে বা হতে পারে। বায়ু দূষণের ফলে হাঁচি-কাশি, শ্বাসকষ্ট, এলার্জি এবং ক্যান্সার হতে পারে।

পানি দূষণ: পানি দূষণের কারণ হলো পানির মধ্যে উপস্থিত বিভিন্ন ধরনের পদার্থ যেমন রাসায়নিক সার, কৃমি নাশক, প্লাস্টিক ইত্যাদি। পানি দূষণের ফলে পানিতে উপস্থিত জীবাণু ও ভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে।

খাদ্য দূষণ: খাদ্য দূষণের কারণ হলো খাদ্যে উপস্থিত বিভিন্ন ধরনের জীবাণু ও পারজীবী যেমন স্লাম, প্লাস্টিক ইত্যাদি। খাদ্য দূষণের ফলে পেট ব্যথা, বমি ও পানি দিয়ে বমি হতে পারে।

ধ্বংস দূষণ: ধ্বংস দূষণের কারণ হলো প্রাকৃতিক উপাদান যেমন বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিক, কাগজ ইত্যাদি যা পরিবেশে নির্গত হলে পরিবেশ দূষিত হয়। ধ্বংস দূষণের ফলে প্রাণীজাতির সংখ্যা কমে যেতে পারে।

শহরীকরণ: শহরীকরণের ফলে পরিবেশে বিভিন্ন ধরনের দূষণ হয়। শহরীকরণের কারণ হলো বিভিন্ন ধরনের কাজ যেমন বাসা নির্মাণ, সড়ক নির্মাণ, কলকারখানা ইত্যাদি।

Q3. পরিবেশ দূষণের ক্ষতিকর প্রভাবসমূহ ব্যাখ্যা কর

Ans – পরিবেশের ভাল-মন্দ মানুষের কৃতকর্মের ফল। মানুষের উদাসীনতায় দিন দিন পরিবেশ ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে। মানুষ নিষ্ঠুরভাবে পরিবেশকে বিনাশ করছে। এতে মানুষ নানা রােগসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ছে।

শারীরিক প্রভাব: পরিবেশ দূষণের ফলে মানুষ পরােক্ষ বা প্রত্যক্ষভাবে নিম্নোক্ত নানা শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।

দূষিত এলাকার গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভপাত ও মৃত শিশু প্রসবের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে এবং শিশুদের বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ব্যাহত হচ্ছে।

দূষিত বায়ুর সংস্পর্শে চোখ, নাক বা গলার সংক্রমণ হচ্ছে। সেই সাথে ব্রঙ্কাইটিস। বা নিউমােনিয়া, মাথাব্যথা, অ্যাজমার সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

দীর্ঘদিন বায়ু দূষণের মধ্যে থাকায় ফুসফুসের ক্যান্সার, হৃদরােগ, লিভার বা কিডনির দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

শিল্প কলকারখানার বর্জ্য মিশ্রিত পানি ব্যবহারে চর্মরােগ, টাইফয়েড, জন্ডিস বা হেপাটাইটিসের মতাে রােগ হচ্ছে।

দুষিত পানির প্রভাবে খাদ্যচত্রের মাধ্যমে সীসা, প্লাস্টিকসহ নানা ক্ষতিকর পদার্থ মানবদেহে চলে আসছে।

শব্দ দূষণের কারণে হাইপার টেনশন, হৃদরােগ, মাথাব্যথা বা স্নায়ুর সমস্যাসহ শিশুর জন্মগত ত্রুটি হচ্ছে।

প্রাকৃতিক প্রভাব: পরিবেশ দূষণে ঘূর্ণিঝড়, জলােচ্ছ্বাস, ভূমিকম্প, বন্যা, নদীভাঙ্গন, খরা, মরুকরণ ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ একাধারে যেমন প্রকৃতির উপর ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে, তেমনি ভূমিরূপ পরিবর্তনসহ প্রকৃতির নানাবিধ স্থায়ী ও অস্থায়ী পরিবর্তন। সাধন করছে। সেই সাথে এগুলাে । জনজীবনের ব্যাপক ক্ষতিসাধন করছে।

Q4. পরিবেশ দূষণ রোধে করণীয়

Ans – পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন উপায় রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে:

হ্রাস করণ, পুনঃব্যবহার করণ এবং পুনর্ব্যবহার করণ: দূষণ কমানোর সবচেয়ে কার্যকর উপায় হল আমরা যে পরিমাণ বর্জ্য তৈরি করি তা হ্রাস করা। রিসাইক্লিং এবং আইটেম পুনঃব্যবহারও দূষণ প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে।

নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস ব্যবহার: নবায়নযোগ্য শক্তির উৎস যেমন সৌর, বায়ু এবং জলবিদ্যুৎ জীবাশ্ম জ্বালানির কারণে সৃষ্ট দূষণের পরিমাণ কমাতে পারে।

বৃক্ষরোপন: গাছ বাতাস থেকে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য দূষক শোষণ করে, তাই বেশি করে গাছ লাগানো দূষণ কমাতে সাহায্য করতে পারে।

রাসায়নিকের ব্যবহার হ্রাস : কীটনাশক এবং সারের মতো কঠোর রাসায়নিক ব্যবহার এড়িয়ে চলতে হবে, যা পরিবেশকে দূষিত করতে পারে এবং বন্যপ্রাণীর ক্ষতি করতে পারে।

পরিবেশ-বান্ধব পণ্য ব্যবহার করা : বায়োডিগ্রেডেবল, অ-বিষাক্ত এবং পরিবেশ বান্ধব পণ্য ব্যবহার করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে পরিচ্ছন্নতা পণ্য, প্রসাধনী এবং গৃহস্থালীর আইটেম।

Q5. পরিবেশ দূষণের ফলে পশু পাখির কি ক্ষতি হয়

Ans – জমিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মাটি দূষণ হয়। এর ফলে ফলানো ফসল পশুপাখি খেলে নানা ধলনের রোগে আক্রান্ত হয়। তাছাড়া ফসলে যে বিষ ছিটিয়ে দেওয়া হয় তা খেয়ে পশুপাখি মারা যায়।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।