বায়ু দূষণ কাকে বলে

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

বায়ু দূষণ কাকে বলে

বায়ুর উপাদানসমুহের পরিবর্তন যখন উদ্ভিদ ও জীবকূলের ক্ষতির কারণ হয় তখন তাকে বায়ু দূষণ বলে।

World Health Organization (WHO) বা বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, “পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের মধ্যে অনিষ্টকর পদার্থের সমাবেশ যখন মানুষ ও তার পরিবেশের ক্ষতি করে সেই অবস্থাকে বায়ু দূষণ বলে”।

সংজ্ঞা: বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণে বা মনুষ্যের সৃষ্ট কারণে অদ্ভত কঠিন বর্জ্য পদার্থ অথবা অপ্রয়োজনীয় কণা ও গ্যাসীয় পদার্থের ঘনত্ব বায়ুতে যদি স্বাভাবিক অনুপাতের থেকে কম বা বেশি হয় যায়, তাহলে ওই প্রকার বায়ুকে দূষিত বায়ু এবং এই পদ্ধতিকে বায়ু দূষণ বলে।

বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণে বায়ুর উপাদানের তারতম্য ঘটলে তাকে বায়ুদূষণ বলে। অর্থাৎ বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণবশত বা মানুষ সৃষ্টি কার্যকলাপের দরুন বাতাসে বিদ্যমান কোনো গ্যাসের পরিবর্তনের ফলে মানুষ ও অন্যান্য জীবজন্তুর ওপর যে ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে তাকে বায়ুদূষণ বলে

বায়ু বিভিন্ন গ্যাসের সংমিশ্রণ গঠিত। এর মধ্যে নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, আর্গন, কার্বন ডাইঅক্সাইড উল্লেখযোগ্য। অবশিষ্ট উপাদানগুলো হচ্ছে হাইড্রোজেন, হিলিয়াম, ক্রিপটন, জেনন, নিয়ন, নাইট্রাস অক্সাইড, মিথেন এবং জলীয়বাষ্প ও ধূলিকণা। বায়ুর ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণের একটি চরম সহনশীল মাত্রা রয়েছে। বায়ুতে বিদ্যমান উপাদানগুলোর সহজশীল মাত্রার বাইরে চলে গেলে জীবজগৎ তথা পরিবেশের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ে।

বায়ু দূষণের ভূমিকা

বায়ু দূষণ মানব স্বাস্থ্য, পরিবেশ এবং অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। বায়ু দূষণের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা হল:

  • স্বাস্থ্যের প্রভাব: বায়ু দূষণ শ্বাসযন্ত্রের রোগ, কার্ডিওভাসকুলার রোগ এবং এমনকি ক্যান্সারের মতো বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
  • পরিবেশগত প্রভাব: বায়ু দূষণ অ্যাসিড বৃষ্টি, ধোঁয়াশা এবং ফসল ও বনের ক্ষতি সহ পরিবেশগত অবনতি ঘটাতে পারে।
  • জলবায়ু পরিবর্তন: কিছু বায়ু দূষণকারী, যেমন কার্বন ডাই অক্সাইড এবং অন্যান্য গ্রিনহাউস গ্যাস, গ্লোবাল ওয়ার্মিং এবং জলবায়ু পরিবর্তনে অবদান রাখে।
  • অর্থনৈতিক প্রভাব: বায়ু দূষণ স্বাস্থ্য খরচ, উৎপাদনশীলতা হারানো এবং পরিবেশগত ক্ষতির মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে।
  • জন নীতি: সরকার এবং অন্যান্য সংস্থাগুলি নিয়ন্ত্রণ, প্রযুক্তি এবং শিক্ষার মাধ্যমে বায়ু দূষণ মোকাবেলায় পদক্ষেপ নিচ্ছে।

সামগ্রিকভাবে, বায়ু দূষণ একটি গুরুতর সমস্যা যার ক্ষতিকারক প্রভাবগুলি প্রশমিত করার জন্য বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা এবং পদক্ষেপ প্রয়োজন।

বায়ু দূষণের কারণ ও ফলাফল

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বায়ু হচ্ছে অত্যাবশ্যকীয় উপাদান। রাসায়নিক, ভৌতিক ও জৈবিক কারণে পরিবেশের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের যেকোনো পরিবর্তনের রূপ হচ্ছে দূষণ। বায়ু বিভিন্নভাবে দূষিত হয়। আধুনিক বিশ্বে শিল্পায়ন, নগরায়ন ও প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে বায়ু দূষণের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে জীবজগৎ তথা অজৈব বস্তুর ওপর তা নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

এটি পরিবেশের জন্য কাম্য নয়। বায়ুদূষণের যথাযথ কারণ ও এর ক্ষতিকর প্রভাবসমূহ সম্পর্কে সচেতন হয়ে বায়ুদূষণকে নিয়ন্ত্রণ করা অতীব জরুরি।

বায়ু দূষণের কারণ, বায়ু দূষণের ১০টি কারণ

বায়ু দূষণের কারণসমূহকে দুইটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-

ক. মানব সৃষ্ট কারণ এবং

খ. প্রাকৃতিক কারণ।

মানব সৃষ্ট কারণ :-

জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো :

ভূ-অভ্যন্তর হতে উত্তোলিত জ্বালানি যেমন-ডিজেল, পেট্রোল, কেরোসিন তেল ইত্যাদি পোড়ানোর কারণে ছোট-বড় বিভিন্ন ধরনের কণা বাতাসে মিশে বায়ু দূষণ ঘটায়।

যানবাহন থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ায় থাকে কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড, নাইট্রোজেনের অক্সাইডসমূহ প্রভৃতি গ্যাস যা মানুষের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

যানবাহন হতে নির্গত গ্যাস

বিভিন্ন যানবাহন, যেমনঃ বাস, ট্রাক, রেলগাড়ি, লঞ্চ, মোটরগাড়ি, স্টিমার, ইঞ্জিন চালিত নৌকা প্রভৃতি হতে প্রচুর ধোঁয়া নির্গত হয়। এসব ধোঁয়ায় কার্বন মনোঅক্সাইড (CO), নাইট্রিক অক্সাইড (NO3), সালফার ডাইঅক্সাইড (SO2), হাইড্রোজেন ক্লোরাইড (HCl), হাইড্রোজেন সালফাইড (H2S) প্রভৃতি যুক্ত থাকে। এগুলো বায়ুকে দূষিত করে এবং জীবকুলের বেশ ক্ষতিসাধন করে।

শিল্প-কারখানার নির্গত ধোঁয়া

শিল্প-কারখানার নির্গত ধোঁয়ার বিভিন্ন প্রকার গ্যাস ও ধাতব কণা যেমন- কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড ইত্যাদি দুর্গন্ধময় বিষাক্ত পদার্থ যা বাতাসের সাথে মিশে বাতাসকে দূষিত করে।

কলকারখানার চিমনি হতে, যানবাহনের সাইলেন্সের পাইপ হতে, রাস্তা নির্মাণকালে বিটুমিন গলানো হতে সর্বদা ধোঁয়া নির্গত হয় । এসব অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থের সাথে মিশে মেঘের ন্যায় ঘন কালো অবস্থার সৃষ্টি করে, তাকে ধোঁয়াশা বলে। বিশেষ করে শিল্পাঞ্চলে ধোঁয়াশা বেশি সৃষ্টি হয়। এর ফলে বায়ু দূষিত হয়।

ধোঁয়া

জ্বালানিসমূহের অসম্পূর্ণ দহনের ফল হলো ধোঁয়া। ধোঁয়া সৃষ্টির ফলে বায়ুদূষণ ঘটে। কলকারখানা, ইটের ভাটা, বাড়িতে রান্নার কাজে ভেজা কাঠ ব্যবহারের ফলে ধোঁয়া সৃষ্টি হয়। পরিবেশ দূষণের শতকরা প্রায় ১০–১৫ ভাগ ধোঁয়ার কারণে হয়ে থাকে।

পরিত্যক্ত বর্জ্য

পদার্থের দহন বিশেষ করে শহরাঞ্চলে পরিত্যক্ত বর্জ্য পদার্থসমূহ আবর্জনামুক্ত করার জন্য পোড়ানো হয়। এ থেকে নির্গত ধোঁয়াতেও কার্বন মনোক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড ইত্যাদি গ্যাস থাকে যা বাতাসকে দূষিত করে।

বন উজার

অপরিকল্পিতভাবে গাছপালা কর্তনের ফলে বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইড এর মাত্রা বেড়ে গিয়ে বাতাসকে দূষিত করে। এতে প্রাণি ও উদ্ভিদের শ্বাসকার্যে ব্যবহৃত অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইড এর ভারসাম্য বিনষ্ট হয়।

কীটনাশক ওষুধের ব্যবহার

কৃষিক্ষেত্র নষ্টকারী পোকামাকড়, আগাছা, ছত্রাক প্রভৃতি বিনাশ করার জন্য এলড্রিন, ক্লোরডেন, ডি. ডি. টি, হেণ্টাক্লোর, টেক্সোফেন, আনসার প্রভৃতি ব্যবহার করা হয়। এসব বিষাক্ত ওষুধের গ্যাস বায়ুতে মিশে বায়ুকে দূষিত করে।

তেজস্ক্রিয় পদার্থ

যুদ্ধক্ষেত্র অথবা পারমানবিক চুল্লিতে দুর্ঘটনার ফলে তেজস্ক্রিয় পদার্থের বিকিরণ হলে বায়ু দূষিত হয়।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ১৯৪৫ সালে হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমানবিক বোমার বিস্ফোরণ।

ইটভাটা

ইটভাটায় কাঠ ও কয়লা পোড়ানোর ফলে প্রচুর ধোঁয়া নির্গত হয় যা বায়ুর সাথে মিশে দূষণ ঘটায় ।

কৃষিক্ষেত্রে

কৃষিক্ষেত্রে আগাছা, কীটনাশক, জৈব ফসফেট এবং ক্লোরিনযুক্ত হাইড্রোকার্বন বায়ু দূষণ ঘটায়।

বায়ু দূষণের উপরিউক্ত মানব সৃষ্ট কারণ ছাড়াও ভবন নির্মাণ, খোলা স্থানে আবর্জনা, ধূমপান, লোহা, টায়ার ইত্যাদির দহনে বায়ু দূষিত হয়।

প্রাকৃতিক কারণ :-

আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত

আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে নির্গত সালফার ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোঅক্সাইড, হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস প্রভৃতি বায়ুর সাথে মিশে বায়ুকে দূষিত করে।

জৈব ও অজৈব পদার্থ

বিভিন্ন প্রকার জৈব ও অজৈব পদার্থের স্বাভাবিক পচনের ফলে যে গ্যাস সৃষ্টি হয় তা বায়ুকে দূষিত করে।

দাবানল ও ধূলিঝড়

বিস্তৃত বনাঞ্চলে দাবানল হলে তা ব্যাপক এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে বায়ুকে দূষিত করে। এছাড়া মরু এলাকায় ধূলিঝড়ও বায়ু দূষণ ঘটায় ।

গ্যাসক্ষেত্রের বিস্ফোরণ

গ্যাসক্ষেত্র বিস্ফোরণ বা দুর্ঘটনাজনিত কারণে যে গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে তা বায়ুকে দূষিত করে।

আয়নিক রশ্মি বিচ্ছুরণ 

কতিপয় মৌলিক পদার্থ ধ্বংসের ক্ষেত্রে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিকিরণ ঘটে। এতে স্থিতিশীল পরমাণু হতে ইলেকট্রন নির্গত হয়; যা বাতাসে মিশে বায়ুকে দূষিত করে।

বায়ু দূষণের ফলাফল

জগতের প্রতিটি প্রাণের অস্তিত্বের জন্য অত্যাবশ্যকীয় উপাদান বায়ু। বায়ু দূষণের ফলে জীবজগতের উপর যে প্রভাব পড়ে তা নিম্নে বর্ণনা করা হলো।

নিম্নে বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাবসমূহ উল্লেখ করা হলো:

মানব স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব

বায়ু দূষণের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় মানব স্বাস্থ্য। দূষিত বায়ু গ্রহণের মাধ্যমে শুধুমাত্র শ্বাস-প্রশ্বাসই নয় এর মাধ্যমে জীবনও বিপন্ন হতে পারে।

বায়ু দূষণের ফলে শ্বাসনালীতে জ্বালা, কাশি ও দম বন্ধ হয়ে যেতে পারে। বিশেষ করে সালফারের অক্সাইডগুলো ফুসফুসে নানা ধরনের রোগ সৃষ্টির প্রধান কারণ।

নাইট্রোজেনের অক্সাইডগুলোর বিষাক্ত প্রতিক্রিয়ায় ফুসফুস ফুলে যায় এবং ফুসফুসে পানি জমে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে। অতিমাত্রায় বায়ু দূষণ দীর্ঘস্থায়ী হাঁপানি, শ্বাসনালীর প্রদাহ ও কন্ঠস্বর ভঙ্গের কারণ হতে পারে।

পশুপাখির উপর প্রভাব

দূষিত বায়ু পশুপাখির খাদ্যকে দূষিত করে। পশুপাখি এসব দুষিত খাবার গ্রহণ করলে বিভিন্ন জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং অসুস্থ হয়ে পড়ে।

উদ্ভিদের উপর প্রভাব

দীর্ঘ সময় ধরে বায়ু দূষণ হলে উদ্ভিদের ক্ষতি করে। সালফার ডাই-অক্সাইড গাছের ক্লোরোফিলের ক্ষতি করে। ফলে খাদ্য উৎপাদন ক্ষমতা কমে গিয়ে উদ্ভিদের জীবনীশক্তি কমে যায়। বায়ুতে অতিমাত্রায় এ গ্যাস থাকলে পাতার কোষ মরে যায় এবং পাতা শুকিয়ে যায়।

বাস্তুসংস্থানের উপর প্রভাব

দূষিত বায়ু বাস্তুসংস্থানের উপরও প্রভাব ফেলে। বায়ু দূষণ স্থলজ এবং জলজ উভয় প্রকার বাস্তুসংস্থানকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।

বায়ু দূষণের আরেকটি উল্লেখযোগ্য প্রভাব হলো এসিড বৃষ্টি (Acid Rain)। এসিড বৃষ্টির ফলে প্রাণি, উদ্ভিদ এবং দালানকোঠার ক্ষতি হয়। এছাড়া বায়ু দূষণ গ্রিন হাউজ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টিরও একটি কারণ।

বায়ু দূষণের ছবি

বায়ু দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব

পৃথিবীর   বায়ুমন্ডলের   মধ্যে   অনিষ্টকর  পদার্থের সমাবেশ যখন মানুষ ও তার পরিবেশের ক্ষতিসাধন করে, তখন তাকে সাধারণ ভাবে বায়ু দূষণ বলে। শিল্পায়ন, নগরায়ন, পরিবহন, জীবাশ্ম জ্বালানির দহন ইত্যাদি কারণে বিভিন্ন ধরনের বায়ু দূষক পদার্থ উৎপন্ন হয় এবং বায়ু দূষণ ঘটায়। পরিবেশের অবনমনে বায়ু দূষণ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মানুষ সহ অন্যান্য প্রাণী, উদ্ভিদ জগত, জলবায়ু তথা সমগ্র বাস্তুতন্ত্রের ওপর বায়ুদূষণ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করে। নিম্নে বায়ু দূষণের প্রভাব আলোচনা করা হলো-

উদ্ভিদদের উপর বায়ু দূষণের প্রভাব

সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, হাইড্রোজেন সালফাইড, ক্লোরিন, ওজোন ইত্যাদি বায়ুদূষকগুলি উদ্ভিদ জগতকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। যেমন-

  • ১) সালফার ডাই অক্সাইড ও ক্লোরিনের আধিক্য হেতু বায়ুদষণে উদ্ভিদের ক্লোরোসিস ও নেক্রোসিস রোগ হয়।
  • ২) নাইট্রোজেনের অক্সাইডগুলির আধিক্যজনিত বায়ুদূষণে সূর্যমুখী, সরিষা, তামাক, বিম ইত্যাদি গাছের পাতায় বাদামী বর্ণের দাগ সৃষ্টি হয় এবং এদের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
  • ৩) ওজোন গ্যাসের আধিক্যজনিত বায়ু দূষণে বার্লি, বিন, পেঁয়াজ, আপেল, পাইন ইত্যাদি উদ্ভিদদের পাতার উপরিপৃষ্টে লালচে বাদামী দাগ সৃষ্টি হয়, পাতাগুলি বিবর্ণ হয়ে যায়, পাতার বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং উদ্ভিদগুলি অকাল বার্ধক্যের শিকার হয়।
  • ৪) বায়ুমন্ডলে উপস্থিত অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন তথা ইথিলিনের বিষক্রিয়াজনিত প্রভাবে টমেটো, কার্পাস, শশা ইত্যাদি উদ্ভিদদের পত্রে গুটি সৃষ্টি হয়, পুষ্প ও মুকুল ঝরে পড়ে, ক্লোরোসিস রোগ সৃষ্টি হয় এবং বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
  • ৫) সালফার অক্সাইড, হাইড্রোজেন ফ্লুরাইড ইত্যাদি বায়ু দূষকগুলির প্রভাবে উদ্ভিদদের বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় ক্রিয়া বিশেষত সালোকসংশ্লেষ ব্যাহত হয়।

মানুষের স্বাস্থ্যের উপর বায়ু দূষণের প্রভাব

কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড, নাইট্রোজেনের অক্সাইড সমূহ প্রভৃতি বায়ুদূষকগুলির পরিমাণ বায়ুতে বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বায়ু দূষণের পরিমাণ মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পায় এবং মানুষের শরীরে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হয়।মানুষের স্বাস্থ্যের উপর বায়ু দূষণ যে সমস্ত প্রভাব বিস্তার করে সেগুলি হল-

  • ১) কার্বন মনোক্সাইড নামক বায়ুদূষকটির বিষক্রিয়া জনিত কারণে মানুষের রক্তকোষে হিমোগ্লোবিনের অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়।ফলে শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ, মাথা ধরা ইত্যাদি রোগ লক্ষণ প্রকাশ পায়।
  • ২) ক্লোরিন ও হাইড্রোজেন ক্লোরাইডের আধিক্যজনিত বায়ু দূষণে চোখের রোগ, কনজাংটিভাইটিস, শ্বাসনালীতে প্রদাহ বা শ্বাস রোগ সৃষ্টি হয়।
  • ৩) সালফার ডাই অক্সাইড নামক বায়ুদূষকটির প্রভাবে ব্রংকাইটিস, হাঁপানি, কাশি, শ্বাসনালীর স্ফীতি, ফুসফুস ক্যান্সার ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হয়।
  • ৪) হাইড্রোজেন সালফাইট নামক বায়ুদূষকটি ডায়রিয়া, ক্ষুধামন্দা, ব্রংকিয়াল নিউমোনিয়া ইত্যাদি রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটায়।
  • ৫) ওজোন গ্যাসের প্রভাব জনিত বায়ুদূষণে মানবদেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়ে ব্রংকাইটিস, চর্ম ক্যান্সার, ফুসফুস ক্যান্সার ইত্যাদি রোগের সৃষ্টি হয়।
  • ৬) বায়ুতে নাইট্রোজেনের বিভিন্ন অক্সাইডগুলির প্রাচুর্যের ফলে মানুষ বিভিন্ন শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হয়।এছাড়া দাঁতের মাড়ির স্ফীতি, নিউমোনিয়া, ফুসফুস ক্যান্সার ইত্যাদি রোগ সৃষ্টিতে এই গ্যাস অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে।
  • ৭) পেশাগত কারণ জনিত বায়ুদূষণে বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন পেশাগত ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। যেমন-পাথর ভাঙ্গা ও সিমেন্ট কারখানায় কর্মরত শ্রমিকদের  শ্বাসনালী ও ফুসফুসে সিলিকার কণা জমে গিয়ে সিলিকোসিস রোগ হয়। আবার অ্যাসব্যাসটস নির্মাণ শিল্পে কর্মরত শ্রমিকদের শরীরে অ্যাসব্যাসটস তন্তু জমে অ্যাসব্যাস্টসিস রোগ হয়। এছাড়া পেট্রোল পাম্প,মোটর গ্যারেজ, কীটনাশক তৈরির কারখানা এবং কীটনাশক ও আগাছা নাশক ছড়ানোর কাজে নিযুক্ত ব্যক্তিদের চোখ জ্বালা, মাথা ধরা, ক্ষুধামন্দা, বমি বমি ভাব, পেটের যন্ত্রণা ইত্যাদি রোগের উপসর্গ দেখা যায়।

অন্যান্য প্রাণীদের উপর বায়ুদূষণের প্রভাব

মানুষের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব বিস্তারকারী বায়ুদূষকগুলি বিভিন্ন জীবজন্তুদেরও ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে।যেমন-

  • ১) নাইট্রোজেন অক্সাইড থেকে উৎপন্ন নাইট্রিক অ্যাসিড এবং সালফার অক্সাইড থেকে উৎপন্ন সালফিউরিক অ্যাসিড বিভিন্ন প্রাণীর বংশ বিস্তার, বৃদ্ধি ও বিকাশে বাধার সৃষ্টি হয়।
  • ২) ওজোন গ্যাসের আধিক্যজনিত বায়ুদূষণে বিড়াল, কুকুর ও খরগোশের ফুসফুসীয় কলায় ক্ষতের সৃষ্টি হয় এবং রক্তক্ষরণ ঘটে।
  • ৩) খাদ্যের মাধ্যমে পশুদের দেহে ক্লোরাইড প্রবেশ করলে সেই ক্লোরাইডের প্রভাবে পশুদের প্রজনন ও দুগ্ধ উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পায়, দাঁতের গঠন বিকৃত হয়, অস্থিতে ফাটল সৃষ্টি হয় এবং পাঁজোরের অতিরিক্ত বৃদ্ধি ঘটে।
  • ৪) সীসার বিষক্রিয়া জনিত বায়ুদষণে গবাদি পশুর খাদ্যস্পৃহা হ্রাস পায়, পাচনতন্ত্র পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং দ্রুত ও দুর্বল হৃৎকম্পন, খিঁচুনি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি রোগ লক্ষণ দেখা যায়।
  • ৫) বায়ুতে আর্সেনিকের পরিমাণ বেশি হলে তার বিষক্রিয়াজনিত কারণে প্রাণীদের লালা নিঃসরণ, আমাশয়, রক্তাল্পতা, গর্ভপাত ইত্যাদি রোগ সৃষ্টি হয়।
  • ৬) বায়ুমন্ডলে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের ফলে যে আয়নীয় বিকিরণ ঘটে তার প্রভাবে প্রাণী দেহে ক্যান্সার সৃষ্টি হয়। এছাড়া এর প্রভাবে প্রাণীদের জিনগত পরিবর্তন ঘটে এবং আয়ুষ্কাল হ্রাস পায়।
  • ৭) বায়ু দূষণের দ্বারা বিভিন্ন ধরনের কীটপতঙ্গ বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়।কৃষিজ ফসলের ক্ষতিসাধন কারী কতকগুলি কীটপতঙ্গের বংশবৃদ্ধি বায়ু দূষণের প্রভাবে ত্বরান্বিত হয়।যেমন-বায়ুতে সালফার ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধির ফলে মেক্সিকান লেডিবার্ড এবং কার্বন মনোক্সাইড, সালফার-ডাই-অক্সাইড ও নাইট্রজেন অক্সাইডের পরিমাণ বৃদ্ধির ফলে লংবাগ ছারপোকার বংশবিস্তার করা ত্বরান্বিত হয়।

জলবায়ুর উপর বায়ু দূষণের প্রভাব

বায়ু দূষণ জলবায়ুর উপরও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে। বায়ু দূষণের ফলে অতিরিক্ত কুয়াশা, শিল্পাঞ্চলে ধোঁয়াশা, অ্যাসিড বৃষ্টি, ওজোনস্তর অবক্ষয়, গ্রীন হাউস এফেক্ট ও বিশ্ব উষ্ণায়ন ইত্যাদির প্রভাব বৃদ্ধি পায়।

জড় পদার্থের উপর বায়ু দূষণের প্রভাব

জড় পদার্থের উপর বায়ু দূষণকারী পদার্থগুলির প্রভাব উল্লেখ করার মতো। যেমন-বায়ুতে উপস্থিত  অতিরিক্ত পরিমাণে হাইড্রোজেন সালফাইডের প্রভাবে সোনা ও রুপোর গয়না পত্র বিনষ্ট হয় এবং ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার তৈল শোধনাগার ও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সালফার-ডাই-অক্সাইড নির্গত হওয়ার ফলে ঐতিহাসিক স্মৃতিসৌধ (তাজমহল), ভাস্কর্য, পুরানো দিনের স্থাপত্য, ঘরবাড়ী ইত্যাদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

বায়ু দূষণের ফলে কি কি রোগ হয়

বর্তমানে সারা বিশ্বেই মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর বায়ু দূষণের কুফল পরিষ্কারভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য বলছে, আজকের পৃথিবীতে প্রতি বছর প্রায় ৭০,০০,০০০ মানুষ বায়ু দূষণ জনিত নানান রোগব্যাধিতে অকালে মারা যাচ্ছেন।

বায়ুর দূষণকারী পদার্থগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চিন্তার কারণ বাতাসে ভাসমান সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কণাগুলো। স্বাস্থ্যের ওপর এই কণাগুলোর কুফল রীতিমতো ভীতিজনক। এগুলো শ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুস অবধি পৌঁছে যায়, সবচেয়ে সূক্ষ্ম কণাগুলো রক্তেও মিশে যেতে পারে। দীর্ঘদিন বায়ু দূষণের মধ্যে বাস করলে এর কুফল স্বরূপ মানুষের দেখা দিতে পারে নানান বিপজ্জনক রোগ। যেমন,—

  • শ্বাসকষ্ট
  • ক্রনিক অ্যাজমা
  • ফুসফুসের নানা সংক্রমণ
  • হার্টের রোগ
  • স্নায়ুতন্ত্রের রোগ
  • ক্যানসার, ইত্যাদি।

বায়ু দূষণের ফলে মানুষের বহুবিধ রোগ হতে পারে। বিশেষ করে মোটরগাড়ি ও অন্যান্য যানবাহনের কালো ধোঁয়া নিঃসৃত কার্বন মনোক্সাইড শরীরের রক্ত প্রবাহে প্রবেশ করে রক্তে অক্সিহিমোগ্লোবিন থেকে অক্সিজেন বের করে দেয়। এতে মাথাধরা, দৃষ্টিহীনতা, পেটের ব্যথা ইত্যাদি নানা অসুস্থতার সৃষ্টি করে।

সূক্ষ্ম কণাগুলো ছাড়া বায়ু দূষণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ক্ষতিকর গ্যাসের আধিক্যও কম উদ্বেগজনক নয়। এগুলোর মধ্যে আছে নাইট্রোজেনের একাধিক অক্সাইড, সালফার ডাইঅক্সাইড ও নানান জৈব বাষ্প। বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে দূষিত বায়ুর নানা বিষাক্ত গ্যাস মানুষ ও পশুপাখির পক্ষে প্রাণঘাতীও হয়ে উঠতে পারে।

যে এলাকার বায়ু দূষণ যতো বেশি, সে এলাকায় শ্বাসতন্ত্রের নানা রোগ হয়ে উঠতে পারে ততো ভয়ংকর। করোনাভাইরাস ঘটিত কভিড রোগের ক্ষেত্রে বায়ু দূষণের এই মারাত্মক কুফল স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা গেছে। বিজ্ঞানিরা জানিয়েছেন, যে সব এলাকায় শিল্পায়ন ও নগরায়নের ফলে বায়ু দূষণ সবচেয়ে বেশি সেখানে কভিডে মৃত্যুহারও সবচেয়ে বেশি।

এই কারণে বায়ু দূষণ সম্পর্কে সারা পৃথিবীর মানুষকে আজ দ্রুত সচেতন হওয়া দরকার।

বায়ু দূষণের প্রতিকার, বায়ু দূষণ রোধের উপায়, বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণের উপায়

বায়ু আমাদের বেঁচে থাকার জন্য আবশ্যকীয় উপাদান তা একটু আগেই আলোচনা হলো। বায়ুর গুণগত মান বজায় থাকলে মানব স্বাস্থ্য ভালো থাকে, গাছের বর্ধন যথাযথভাবে হয়, কৃষি ফলন বৃদ্ধি পায়। তাই বায়ু দূষণ প্রতিরোধ করা জরুরি।

বায়ু দূষণ প্রতিরোধের প্রথম পদক্ষেপ হলো বায়ুমন্ডলে নির্গমনের পূর্বেই বায়ু দূষক উৎসের নির্গমন নিয়ন্ত্রণ করা। বায়ু দূষণ বিভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ, জ্বালানি পরিশোধন, মোটরগাড়ি চালনায় জনসচেতনতা প্রভৃতি প্রয়োগ করা যেতে পারে। বায়ু দূষণ প্রতিরোধের উপায়সমূহ নিয়ে আলোচনা করা হলো।

যানবাহন থেকে ধোঁয়া নির্গমন নিয়ন্ত্রণ

যানবাহন থেকে নির্গত বায়ু দূষকগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো কার্বন মনোঅক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড, অদাহা হাইড্রোকার্বন। এগুলো নির্গমন নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

এক্ষেত্রে ডিজেল বা পেট্রোল চালিত যানের তুলনায় সিএনজি চালিত যানের দূষণমাত্রা অনেক কম।

কল-কারখানার ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণ

কল-কারখানার ধোঁয়া নির্গমন নল ও চিমনি থেকে নির্গত বস্তুকণা পৃথক করার জন্য ছাকনি বা অন্য কোনো প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। এর ফলে দূষকগুলো বায়ুতে মিশে যাওয়ার পূর্বেই আলাদা হয়ে যাবে।

দূষণ পদার্থ শোষণ

বায়ু দূষণ প্রতিরোধের একটি আধুনিক পদ্ধতি দূষণ পদার্থের শোষণ। এই পদ্ধতিতে কৃষক পদার্থগুলো মুক্ত বায়ুতে ছড়িয়ে পড়ার পূর্বেই বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দূষক পদার্থ আলাদা করে নেওয়া যায়।

বিকল্প জ্বালানি প্রয়োগ

বিকল্প জ্বালানি অর্থাৎ প্রচলিত জীবাশ্ম জ্বালানির পরিমাণ ক্রমান্বয়ে হ্রাস করে অপ্রচলিত শক্তি যেমন- সৌরশক্তি, বায়োগ্যাস ইত্যাদির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। এর ফলে বায়ু দূষণ অনেক কমে যাবে।

পরিত্যক্ত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা

বিভিন্ন পরিত্যক্ত বর্জ্য যেগুলো কোনো কাজে লাগেনা সেগুলো না পুড়িয়ে মাটির নিচে পুঁতে ফেলা যেতে পারে।

কীটনাশকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ

যথেচ্ছ মাত্রায় কীটনাশক ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। পরিমিত পরিমাণে কীটনাশকের পাশাপাশি বিকল্প উপায়ে রোগ-ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

পচনযোগ্য দ্রব্য দ্রুত অপসারণ

হাটবাজার, দোকানপাট, বসতবাড়ি প্রভৃতি থেকে পচা বা পচনশীল দ্রব্য দ্রুত অপসারণ করতে হবে। এছাড়া শহরের ডাস্টবিনের ময়লা দীর্ঘ সময় ধরে না রেখে যতদূর সম্ভব তা দ্রুত শোধনাগারে পাঠাতে হবে অথবা মাটিতে পুতে ফেলে বাতাস দূষণ রোধ করতে হবে।

অঞ্চল ভাগ

বড় বড় শহরের আবাসিক, শিল্প, বাণিজ্যিক, অফিস-আদালত প্রভৃতি পরিকল্পিতভাবে স্থাপন করতে হবে। এতে শিল্প-কারখানার দূষিত বাতাস মানব জীবন ও অন্যান্য প্রাণির ক্ষতি করতে পারবে না।

বৃক্ষরোপন

উদ্ভিদ প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করে। উদ্ভিদ জীবজগতের জন্য অক্সিজেন ত্যাগ করে এবং জীবজগতের ত্যাগকৃত কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে ভারসাম্য বজায় রাখে। তাই প্রচুর পরিমাণে বৃক্ষরোপন করতে হবে এবং অন্যদেরও উৎসাহিত করতে হবে।

সচেতনতা বৃদ্ধি

বায়ু দূষণের কুফল সম্পর্কে জনগণকে সচেতন হতে হবে। এক্ষেত্রে জনসচেতনামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে।

  • (১) কলকারখানায় যেসব জ্বালানিতে ধোঁয়া কম হয় সেইসব জ্বালানি ব্যবহার করা দরকার। কয়লা, ডিজেল, প্রভৃতি ব্যবহার কমিয়ে দিয়ে তার বদলে বিদ্যুৎ ও প্রাকৃতিক গ্যাসের ব্যবহার বাড়াতে হবে।
  • (২) বিভিন্ন কল-কারখানা ইত্যাদিতে বিভিন্ন বিশেষ যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে বিষাক্ত গ্যাসগুলিকে দূর করা অথবা পরিবেশে গিয়ে তারা যাতে মিশতে না পারে, সে ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
  • (৩) বিশেষ পরিবহন আইনের মাধ্যমে পুরনো এবং বেশি ধোঁয়া সৃষ্টি করে এমন গাড়িগুলিকে বাতিল হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। গাড়িতে ব্যবহৃত তেল থেকে উৎপন্ন ধোঁয়া পরিশোধনযন্ত্র বসিয়ে বিষাক্ত গ্যাস কমানো যেতে পারে।
  • (8) কয়লা, কাঠ ইত্যাদি ধোঁয়া সৃষ্টি করে এমন জ্বালানি ব্যবহারের পরিবর্তে গ্যাস এবং ইলেকট্রিক হিটার ব্যবহার করলে দূষণ অনেক কমে যায়।
  • (৫) বৃক্ষরোপণ করে বায়ুদূষণ কিছুটা কমানো যায়।

বায়ু দূষণ রচনা, বায়ু দূষণ অনুচ্ছেদ, বায়ু দূষণ রচনা pdf

পরিবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো বায়ু। বিশুদ্ধ বায়ু ছাড়া পৃথিবীতে কোনো জীবের অস্তিত্ব টিকে থাকা অসম্ভব। কিন্তু সুস্থ পরিবেশে সুস্থ জীবন এখন আর নেই। দূষিত বায়ু আমাদের জীবনের জন্য বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন কারণে বায়ু দূষিত হতে পারে। তবে ধোঁয়া বায়ু দূষণের প্রধান কারণ। কারখানার ধোঁয়া, রান্নার ধোঁয়া, ইট ভাটার ধোঁয়া, যানবাহনের ধোয়া প্রভৃতি থেকে নির্গত কার্বন ডাই-অক্সাইড, ক্লোরোফ্লুরো কার্বন, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড বায়ুতে মিশে বায়ুকে দূষিত করে।

এছাড়া কার্বন ডাই-অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড এবং নাইট্রোজেন অক্সাইড পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। এসব গ্যাস জলীয়বাষ্পের সঙ্গে এসিড তৈরি করে এবং বায়ুকে দূষিত করে। বৃষ্টির সঙ্গে এই এসিড ভূপৃষ্ঠে পতিত হয়। এরই নাম ‘এসিড রেইন’ বা অম্লবর্ষণ। অনেক যানবাহনের জ্বালানি তেলে সীসা মিশ্রিত থাকে যা কালো ধোঁয়ার সঙ্গে নির্গত হয়ে বাতাসে ভাসতে থাকে। ফলে বায়ু দূষিত হয়।

তাছাড়া আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত, দাবানল, ধূলাবালি, কফ, থুথু, পায়খানা-প্রস্রাব ইত্যাদির কারণেও বায়ু দূষিত হয়। দূষিত বায়ুর নানা ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইড বেড়ে গেলে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়। কলকারখানা, যানবাহন ইত্যাদির ধোঁয়া বায়ুর সঙ্গে সেবনের ফলে ব্রঙ্কাইটিস, হাঁপানি, ক্যান্সার প্রভৃতি রোগ সৃষ্টির কারণ হতে পারে। এসিড বৃষ্টির ফলে উদ্ভিদ, জলজ প্রাণী, দালানকোঠা প্রভৃতির ক্ষতি হয়।

প্রাকৃতিক পরিবেশ আজ যে ছিন্নমস্তা রূপ ধারণ করতে চলেছে তার মূলে রয়েছে বায়ু দূষণ। প্রাণী জগতে প্রাণ ধারণের জন্য প্রয়ােজন নিল বায়ুর। জল ও খাদ্য ছাড়া মানুষ দু-চার দিন বেঁচে থাকতে পারে কিন্তু বায়ু অর্থাৎ বাতাস ছাড়া মানুষ বা প্রাণী এক মুহূর্তও বেচে থাকতে পারে না।

বায়ু দুষিত হলে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায় আর তার সঙ্গে আনুষঙ্গিক দুষিত গ্যাস আমাদের দেহে প্রবেশ করবে। এই অক্সিজেনের যােগান দেয় গাছ-পালা, এজন্য প্রাণী জগৎ বেঁচে আছে। তাই অরণ্য হল মানব জগতের ফুসফুস। সে অরণা আজ ফবংসের মুখে।

মানুষ একদিন প্রয়ােজনের তাগিদে অরণ্য কেটে বসতি স্থাপন করেছিল আর আজ তাদের আগ্রাসী মনোভাবের জন্য করেছে অরণ্য ছেদন। যান্ত্রিক সভ্যতায় কল কারখানার ধোঁয়া, অপরিচ্ছন্ন শহরের ধুলা-বালু, রাস্তার ধারে জ্বালানাে কয়লার ঘোষ ইত্যাদি বাতাসকে করছে বিষাক্ত। ফলে আবহাওয়ার তাপমাত্রা ক্রম বর্ধমান, অকাল বর্ষণ, ঘূর্ণিঝড় এর মূলে বায়ু দূষণের অভিশাপ। এই দূষিত বায়ু নিশ্বাসকে নিষ্ট করে ফুসফুসকে দ্রুত জীর্ণ করে দেয়, ফলে শ্বাস রােগ, ফুসফুসের ক্যান্সার ইত্যাদি রােগ দেখা দেয়।

সীসাযুক্ত ধোঁয়া শিশু ও গর্ভবর্তী মায়ের জন্য খুবই ক্ষতিকর। অথচ বায়ু এমন একটি মূল্যবান পদার্থ, যা ছাড়া আমরা এক মুহূর্তও বাঁচতে পারি না। সুস্বাস্থ্যের জন্য বিশুদ্ধ বায়ু একান্ত প্রয়োজন। সুখী ও সুস্বাস্থ্যময় জীবনের জন্য বায়ু দূষণ রোধে সকলকে সচেষ্ট ও সচেতন হতে হবে। নিজে বায়ু দূষণ রোধ করার পাশাপাশি অন্যদেরও সচেতন করে তুলতে হবে।

আরো অন্যান্য সরকারি স্কিম সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | বায়ু দূষণ

Q1. বায়ু কাকে বলে

Ans – পৃথিবীর চারদিকে ঘিরে থাকা বর্ণহীন, গন্ধহীন, নিরাকার, গ্যাসীয় মিশ্র পদার্থকে বায়ু বলে। আমরা প্রতিদিন আমাদের জীবনের প্রয়োজনে শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ করি, তাকেই বায়ু বলে।

Q2. বায়ু দূষণের ৫টি কারণ

Ans – আকাশ, বাতাস, জল, উদ্ভিদজগত, প্রাণীজগত সবকিছু নিয়ে আমাদের পরিবেশ । এগুলির কোনোটিকে বাদ দিয়ে আমরা বাঁচতে পারি না । মানুষ তার বিদ্যা, বুদ্ধি দিয়ে এবং অনলস পরিশ্রমে তার চারপাশের পরিবেশকে আরও সুন্দর করে সাজিয়েছে । প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে বেশি মণিমানিক্য সংগ্রহ করে মানুষ উষর মরুভূমির বুকেও ফুটিয়েছে সোনালী ফসল । কিন্তু সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে আর স্বার্থান্বেষী কিছু মানুষের লোভে প্রাকৃতিক পরিবেশ আজ নানান ভাবে দূষিত হচ্ছে ।
যেমন বায়ু, জল, মাটি, শব্দ প্রভৃতি দুষণের ফলে মানুষের জীবনেও এসেছে নানা রকম দুরারোগ্য ব্যাধি ।
১) গাছপালা ও ময়লা-আবর্জনা পোড়ানোর ফলে বায়ু দূষিত হয়।
২) কলকারখানা ও যানবাহন থেকে নির্গত কালো ধোঁয়ার ফলে বায়ু দূষিত হয়।
৩) বিভিন্ন ক্ষতিকর গ্যাস ও ধূলিকণা বায়ুতে মিশে বায়ুকে দূষিত করে।
৪) যেখানে-সেখানে মলমূত্র ত্যাগের ফলে দুর্গন্ধ বায়ুতে মিশে বায়ুকে দূষিত করে।
৫) যেখানে-সেখানে ময়লা-আবর্জনা ফেললে বায়ু দূষিত হয়।

Q3. বায়ু দূষণ কি

Ans – বিভিন্ন ধরনের পদার্থ যেমন– রাসায়নিক পদার্থ, গ্যাস, ধূলিকণা, ধোয়া এবং দুর্গন্ধ বায়ুতে মিশে যখন জীব ও প্রাকৃতিক পরিবেশের জন্য ক্ষতির কারণ হয় তখন তাকে বায়ু দূষণ বলে।

Q4. বায়ুর চাপ মাপার যন্ত্রের নাম কি

Ans – ব্যারোমিটার হল বায়ুর চাপ পরিমাপ করার যন্ত্র।

Q5. বায়ুর গতিবেগ মাপার যন্ত্রের নাম কি

Ans – বায়ুর গতিবেগ মাপার যন্ত্রের নাম অ্যানিনোমিটার।

Q6. বায়ুর আদ্রতা মাপার যন্ত্রের নাম কি

Ans – হাইগ্রোমিটার হ’ল একটি যন্ত্র যা বাতাসে, মাটিতে বা আবদ্ধ স্থানে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ পরিমাপ করতে ব্যবহৃত হয়।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।