আবহাওয়া কাকে বলে

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

আবহাওয়া কাকে বলে

কোনো নির্দিষ্ট স্থানের, কোনো নির্দিষ্ট সময়ের বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে নীচের স্তরের কতকগুলো পরিবর্তনশীল উপাদানের অবস্থাকে আবহাওয়া বলে।

কোন স্থানের স্বল্প সময়ের অর্থাৎ ১ থেকে ৭ দিনের বায়ু, তাপ, বৃষ্টিপাত প্রভৃতির গড় অবস্থাকে আবহাওয়া বলে।

আবহাওয়া মূলত হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট স্থানের নির্দিষ্ট সময়ের বায়ুর আর্দ্রতা, বায়ুর চাপ, বায়ু প্রবাহ, বৃষ্টিপাত ইত্যাদি উপাদান সমূহের গড় অবস্থা। আর এই গড় অবস্থাকেই বলা হয় আবহাওয়া।আবহাওয়া নিত্যদিনেরই ঘটনা যা সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়। আবহাওয়া কে বৈজ্ঞানিক ভাবে বলা হয় মেটিওরোলজি অর্থাৎ, আবহাওয়া নিয়ে যেখানে আলোচনা বা কথা বলা হয় সেটিই মেটিওরোলজি।

আবহাওয়া বলতে কোনাে একটি নির্দিষ্ট স্থানের নির্দিষ্ট সময়ের বায়ুর উয়তা, আদ্রর্তা, বায়ুপ্রবাহ, বায়ুচাপ, মেঘাচ্ছন্নতা, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রভৃতি উপাদানের গড় অবস্থাকে বােঝায়। আবহাওয়া একটি দৈনন্দিন ঘটনা যা প্রতিক্ষণে পরিবর্তিত হয়।

আবহাওয়ার বৈশিষ্ট্য

আবহাওয়ার কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা সাধারণত অপরিবর্তনশীল হয়ে থাকে। অপরিবর্তনশীল আবহাওয়ার বৈশিষ্ট্য গুলি হলো –

  • আবহাওয়া হচ্ছে আমাদের বায়ুমণ্ডলের নিম্ন স্তরের প্রতিদিনকার একটি অবস্থা।
  • আবহাওয়া হচ্ছে পরিবর্তনশীল অর্থাৎ যেকোন সময় এটির পরিবর্তন ঘটতে পারে।
  • স্থানের উপর নির্ভর করে আবহাওয়া খুব সহজেই পরিবর্তিত হতে পারে।
  • আবহাওয়া স্বল্পসময়ের অবস্থানকে তুলে ধরে প্রতিদিনকার সময় এর উপর নির্ভর করার মাধ্যমে।

আবহাওয়ার উপাদান গুলো কি কি

বায়ুমণ্ডলের পরিবর্তনশীল উপাদানগুলো হল : বায়ুর উষ্ণতা, বায়ুচাপ, বায়ুপ্রবাহ, বায়ুর আর্দ্রতা, মেঘ, বৃষ্টিপাত, তুষারপাত প্রভৃতি। আবহাওয়া সবসময়েই পরিবর্তনশীল। একই দেশের ছোট্ট একটি অঞ্চলেও আবহাওয়া অল্প সময়ের ব্যবধানেই বিশেষভাবে পরিবর্তিত হতে পারে। বিশেষ উল্লেখযোগ্য, কোনো স্থানে বা কোনো অঞ্চলে আবহাওয়া প্রতিদিন, এমনকী প্রতি ঘন্টায়ও পালটে যেতে পারে।

আবহাওয়ার প্রধান উপাদান সমূহ :

  • বায়ুপ্রবাহ
  • তাপ
  • চাপ
  • বৃষ্টিপাত
  • আর্দ্রতা
  • বায়ুর উষ্ণতা
  • বায়ুর চাপ ও বায়ু প্রবাহ
  • বায়ুর আর্দ্রতা ও বৃষ্টিপাত
  • বায়ু প্রবাহের দিক ও গতিবেগ
  • আকাশে মেঘের পরিমাণ ও প্রকারভেদ

বায়ুপ্রবাহ

বায়ুপ্রবাহ বা বায়ুমণ্ডলীয় সঞ্চালন বলতে বিরাট ক্ষেত্র জুড়ে বায়ুর স্থান পরিবর্তনকে বোঝায়। বায়ুপ্রবাহের মাধ্যমেই পৃথিবীপৃষ্ঠে উত্তাপের বিতরণ ঘটে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল বিবেচনায় সূর্যের তাপ

পৃথিবীতে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্নভাবে পড়ে, যার ফলে কোনো স্থান যখন সরাসরি উত্তপ্ত হয়, তখন তুলনামূলক শীতল স্থানের দিকে উত্তপ্ত বায়ু প্রবাহিত হয়। বায়ুর ধর্মই হলো বায়ু, অধিক উষ্ণ স্থান থেকে

শীতল স্থানের দিকে প্রবাহিত হয়, আর একারণেই পৃথিবীতে বায়ুপ্রবাহের ঘটনা ঘটে। এই বায়ুপ্রবাহ যখন সীমাবদ্ধ মাত্রায় হয়, তখন দখিনা হাওয়ার মতো সুখকর অনুভূতি বয়ে আনে, আবার যখন তা মাত্রাতিরিক্ত হয়, তখন তা স্থলভাগে ঘূর্ণিঝড় এবং জলভাগে তৈরি করে জলোচ্ছাস। মূলত উচ্চচাপীয় অঞ্চল থেকে নিমঞ্চাপীয় অঞ্চলে বায়ু প্রবাহিত হয়।

তাপ

তাপ একপ্রকার শক্তি যা আমাদের শরীরে ঠান্ডা বা গরমের অনুভূতি তৈরি করে। তাপগতিবিদ্যা অনুসারে, যখন দুটি বস্তুর মধ্যে প্রথমটি থেকে দ্বিতীয়টিতে আরেকটিতে শক্তি স্থানান্তরিত হয়,

তখন প্রথমটি দ্বিতীয়টি অপেক্ষা গরম হয় । আর অন্যভাবে বলা যায়, তাপ হলো পদার্থের অণুগুলোর গতির সাথে সম্পর্কযুক্ত এমন এক প্রকার শক্তি, যা কোনো বস্তু ঠান্ডা না গরম তার অনুভূতি জন্মায়। তাপগতিবিদ্যার তিনটি সূত্র রয়েছে ।

চাপ

পদার্থবিজ্ঞানের পরিভাষায় একক ক্ষেত্রফলের উপর প্রযুক্ত বলকে চাপ বলে। একে P দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

স্থির-তরল (হাইড্রোস্টাটিক) ব্যবস্থায় কোনো তলের উপর চাপ কেবল তলের সঙ্গে লম্ব ভাবে হয় এবং তলটিকে একই উচ্চতায় রেখে দিক পরিবর্তন করলে চাপের কোনো পরিবর্তন হয় না (প্যাস্কালের সূত্র)। তাই হাইড্রোস্টাটিক চাপকে স্কেলার বলে ধরা যায়। কিন্তু সচল-তরল (হাইড্রোডাইনামিক) ব্যবস্থায় চাপতলের দিকের উপর নির্ভর করতে পারে এবং তরলের মধ্যস্থিত কোনও বিন্দুতে চাপের মান ও দিক পুরোপুরি নির্দিষ্ট করতে হলে, সাধারণ ভেক্টরের ন্যায় ৩টি নয়, ৯টি বিশ্লেষিত মান নির্দেশ করতে হয়।

বৃষ্টিপাত

বৃষ্টি একধরনের তরল, যা আকাশ থেকে মাধ্যাকর্ষণের টানে ভূপৃষ্ঠের দিকে পড়ে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে মেঘের সৃষ্টি করে। এই ফোঁটাগুলি যথেষ্ট পরিমাণে ভারি হলে তা পৃথিবীর বুকে ঝরে পড়ে – একেই বলে বৃষ্টি। বিশ্বের অধিকাংশ অঞ্চলে বৃষ্টি সুপেয় জলের বড় উৎস। বিচিত্র জৈবব্যবস্থাকে বাঁচিয়ে রাখতে, জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলি সচল রাখতে ও কৃষি সেচব্যবস্থা সচল রাখতে বৃষ্টির প্রয়োজন হয়।

যদিও সকল প্রকার বৃষ্টি ভূপৃষ্ঠ অবধি পৌঁছায় না। শুকনো বাতাসের মধ্য দিয়ে পড়ার সময় কিছু বৃষ্টির বিন্দু শুকিয়ে যায়। ভারগা নামে পরিচিত এই বৈশিষ্ট্যটি শুষ্ক মরুভূমি অঞ্চলে দেখা যায়।

আর্দ্রতা

বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণকে বাতাসের আর্দ্রতা দ্বারা পরিমাপ করা হয়। দৈনন্দিন জীবনে আর্দ্রতা বলতে আমরা আপেক্ষিক আর্দ্রতাকে বোঝাই। আপেক্ষিক আর্দ্রতা হল কোন নির্দিষ্ট জায়গার বাতাসে থাকা জলীয় বাষ্পের আংশিক চাপ ও ঐ তাপমাত্রায় জলীয় বাষ্পের সম্পৃক্ত বাষ্পচাপ।

নির্দিষ্ট তাপে ও চাপে বাতাসে সর্বোচ্চ কি পরিমাণ জলীয় বাষ্প ধারণ করতে পারে তা সুনির্দিষ্ট। আর্দ্রতাকে পরম আর্দ্রতা ও নির্দিষ্ট আর্দ্রতাও বলা হয়। আপেক্ষিক আর্দ্রতা আবহাওয়ার পূর্বাভাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

আর্দ্রতা বেশি হলে গ্রীষ্মকালে বাইরে গেলে আমরা বেশি গরম অনুভব করি, কারণ তা ঘামের মাধ্যমে শরীরের তাপ বের করে দেবার প্রক্রিয়াটির কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। তাপ সূচক ছকে এই প্রভাব হিসাব করা হয়।

আবহাওয়ার উপাদান গুলির নিয়ন্ত্রক

  • অক্ষাংশ
  • সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা
  • জলভাগ – স্থলভাগ বন্টন
  • সমুদ্র স্রোত
  • পর্বত – এর অবস্থান
  • বায়ুচাপ বলয়
  • আবহাওয়া বিপর্যয়

জলবায়ু ও আবহাওয়ার পার্থক্য

জলবায়ু ও আবহাওয়ার মধ্যে মূল পার্থক্য হল স্থানের ব্যাপকতা ও সময়ের ব্যবধান। আবহাওয়া হল কোনো স্থানে বায়ুমণ্ডলের স্বল্প সময়ের গড় অবস্থা, কিন্তু জলবায়ু বলতে বৃহৎ অঞ্চলে বায়ুমণ্ডলের ৩০-৩৫ বৎসরের গড় অবস্থাকে বোঝায়।

প্রত্যেক দিনই যেমন আবহাওয়ার পরিবর্তন হয়, জলবায়ুর পরিবর্তন তেমনি হয় ঋতুভেদে বা স্থানভেদে। কোনো স্থানের অক্ষাংশ, উচ্চতা, সমুদ্র থেকে দূরত্ব প্রভৃতি সেই স্থানের জলবায়ুর উপাদান হিসেবে কাজ করে। এছাড়া স্থানীয় ভৌগোলিক উপাদানও সেই স্থানের জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া, পৃথিবীর সব অঞ্চলের জলবায়ুও একই রকমের হয় না

যেমন : পৃথিবীর কোনো অঞ্চল প্রচণ্ড ঠাণ্ডা, আবার কোনো অঞ্চল প্রচণ্ড গরম, কোনো অঞ্চল বৃষ্টিবহুল, কোনো অঞ্চলে আবার বৃষ্টি প্রায় হয় না বললেই চলে। জলবায়ু ঠিক গড় আবহাওয়া নয়, কেন না গড় আবহাওয়া থেকে প্রত্যেক দিনের আবহাওয়ার যে বিচ্যুতি, জলবায়ু গঠনে সেগুলোর ভূমিকা কিছু কম নয়। জলবায়ু হচ্ছে বায়ুমণ্ডলের সাধারণ অবস্থা।

আবহাওয়াজলবায়ু
কোনো নির্দিষ্ট স্থানের কোনো নির্দিষ্ট সময়ের বায়ুর উষ্ণতা, চাপ, বায়ুপ্রবাহ, আর্দ্রতা,
বৃষ্টিপাত প্রভৃতি উপাদানের অবস্থাকে আবহাওয়া বলে।
কোনো বিস্তৃত অঞ্চলের কমপক্ষে ৩০-৩৫ বছরের আবহাওয়ার গড় অবস্থাকে জলবায়ু বলে।
আবহাওয়া হল বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরের রোজকার অবস্থা।জলবায়ু হল বায়ুমণ্ডলের নিম্নস্তরের স্বল্পকালের সামগ্রিক অবস্থা।
আবহাওয়া স্বল্প পরিসর স্থানের বায়ুমণ্ডলের সাময়িক অবস্থা সূচিত করে।জলবায়ু বিস্তৃত অঞ্চলের বায়ুমণ্ডলের দীর্ঘকালীন গড় অবস্থা নির্দেশ করে।
কোনো স্থানের আবহাওয়া প্রতিদিন এমনকী প্রতি ঘন্টায়ও পরিবর্তিত হয়।কোনো অঞ্চলের জলবায়ু প্রতিদিনের ব্যবধানে পরিবর্তিত হয় না।
আবহাওয়া সহজেই পরিবর্তিত হয়।জলবায়ুর পরিবর্তন হয় ঋতুভেদে।
আবহাওয়া হল জলবায়ুর বিভিন্নতা।জলবায়ু হল আবহাওয়া সমন্বয়।
জলবায়ু ও আবহাওয়ার পার্থক্য
আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | আবহাওয়া

Q1. আবহাওয়া কাকে বলে উত্তর

উত্তর: আবহাওয়া হলো কোনো স্থানের রোদ, বৃষ্টি, তাপমাত্রা, মেঘ, কুয়াশা ও বায়ুপ্রবাহের স্বল্প সময়ের অবস্থা। অন্যভাবে বলা যায়, আবহাওয়া হলো কোনো নির্দিষ্ট সময়ে কোনো নির্দিষ্ট স্থানের আকাশ ও বায়ুমণ্ডলের সাময়িক অবস্থা। এই জন্যই দেশের বিভিন্ন স্থানের আবহাওয়া দিনের বিভিন্ন সময় ভিন্ন হয়। আবহাওয়ার উপাদানগুলো হলো তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বায়ুপ্রবাহ, মেঘ, বৃষ্টিপাত ও বায়ুচাপ ইত্যাদি।

Q2. কৃষি আবহাওয়া কাকে বলে

উত্তর: কৃষি কাজের জন্য যে অঞ্চলের আবহাওয়া ভালো বা যে অঞ্চলে কৃষি কাজ ভালো হয়,তাই কৃষি আবহাওয়া অঞ্চল। এই অঞ্চলের আবহাওয়া কৃষি কাজের জন্য উপযোগী।

Q3. বিরূপ আবহাওয়া কাকে বলে

উত্তর: ফসল উৎপাদনকালীন সময়ে যদি আবহাওয়ার অস্বাভাবিক আচরণের কারণে ফসলের ক্ষতি হয় তখন তাকে বিরূপ আবহাওয়া বলে।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।