পাগলা গণেশ প্রশ্ন উত্তর

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় পাগলা গণেশ গল্পের বিষয় সংক্ষেপ

পৃথিবীতে এক ধরনের মলম আবিষ্কৃত হয়েছে , যা মাধ্যাকর্ষণ শক্তিকে ছাড়িয়ে উড়ান পথে মানুষকে নিয়ে যাচ্ছে । নানান ধরনের উড়ান যন্ত্রে উড়ে গিয়ে মানুষ ৩৫৮৯ সালে সূর্যের শেষ দুটো গ্রহও আবিষ্কার করে ফেলেছে । অনেকে মহাকাশের দূর দিগন্তে পাড়ি দিয়ে একশো – দেড়শো বছর পরে ফিরছে । পৃথিবীতে মানুষ মৃত্যুহীন হয়ে গেছে । এই মানুষেরা গত দেড়শো বছরে পৃথিবীতে কোনো শিশুর জন্ম দেখেনি । পৃথিবী থেকে নান্দনিক সকল বিষয় উধাও হয়ে গেছে । মানুষ ঝুঁদ হয়ে আছে কেবল বিজ্ঞান নিয়ে । পাগলা গণেশ একে বাড়াবাড়ি মনে করেন ।

তিনি মৃত্যুঞ্জয় টনিক সেবন করে জীবনের শেষ প্রান্তকে বাঁধ দিয়ে ফেলেছেন । সুকুমার শিল্পবিরোধী আন্দোলন দেখেছেন তিনি । তিনি বেঁচে থাকার দীর্ঘ ক্লান্তি থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য হিমালয়ে নিপাট নির্জনতার সন্ধান করছেন । হিমালয়ও তাকে তা দিতে পারছে না । গণেশ কবিতা লিখছেন , গান গাইছেন , ছবি আঁকছেন । আর বিজ্ঞানের অবিরাম সাধনায় যারা মগ্ন তারা গণেশের এমন কাজকে অকেজো বলে অবহেলা করছে । তাই গণেশ পৃথিবীর ভারসাম্যের কথা ভাবেন । নিজের পারিবারিক জীবনও তিনি ভুলে গেছেন ।

বউ – ছেলেমেয়ে কারো মুখ তিনি মনে করতে পারেন না ৷ বহু বছর ধরে তারাও মহাজ্যোতিষ্কমণ্ডলে এক – একজন কৃতী বিজ্ঞানী । তারা আর আসে না । গণেশ কবিতা লিখছিলেন । লেখা পাতাগুলো তিনি বাতাসে উড়িয়ে দিচ্ছিলেন । একজন পুলিশ আকাশপথে ধামা থেকে নেমে এসে চিনতে পেরেছিল — গণেশবাবু তার স্যার , সায়েন্স কলেজের প্রাক্তন অধ্যাপক ৷ পুলিশটি একখানা পাতা কুড়িয়ে নিয়ে পড়ে কিছু বুঝতে না পারলেও নিজের প্রিয় শৈশবকে ছুঁতে পেরেছিল । নতুন করে শৈশবকে অনুভব করার আনন্দ খুঁজে পেয়েছিল সে । সে তার মাকে আর বউকেও এনেছিল ।

সেদিন একটা নান্দনিকচর্চার ছোটোখাটো আসর হয়েছিল গণেশের ডেরায় । সে তার পুলিশ বন্ধুদের আনতে শুরু করে । তারপর গণেশের ডেরায় লোক আসা বাড়তে থাকে । সপ্তাহখানেক পরে রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব এসে গণেশের কাণ্ডটাকে বিজ্ঞানবিরুদ্ধ ঘোষণা করে জানায় পৃথিবীর লোক গান গাইছে , কবিতা লিখছে , ছবি আঁকছে । গণেশ তখন তৃপ্তির হাসি হেসে তার প্রসন্নতাকে উজাড় করে দিয়ে বলেন , ‘ তাহলে আর ভয় নেই । দুনিয়াটা বেঁচে যাবে।

পাগলা গণেশ MCQ প্রশ্ন ও উত্তর

‘ পাগলা গণেশ ‘ একটি বিষয়ক গল্প

বিজ্ঞান / কল্পবিজ্ঞান / রূপকথা
উত্তর কল্পবিজ্ঞান ।

‘ অবজার্ভেটরি ‘ – র বাংলা প্রতিশব্দ

পরীক্ষাগার / গবেষণাগার / নিরীক্ষণাগার
উত্তর নিরীক্ষণাগার ।

সভ্যসমাজ থেকে দূরে পালিয়ে গিয়ে গণেশ আশ্রয় নিয়েছিলেন

হিমালয়ের গিরিগুহায় / গভীর জঙ্গলে / মহাকাশে
উত্তর হিমালয়ের গিরিগুহায় ।

গল্পের তথ্য অনুসারে মৃত্যুঞ্জয় টনিক আবিষ্কার হয়েছিল সালে

৩৫৮৯/৩৪৩৯/৩৫০০
উত্তর ৩৪৩৯ সালে ।

অন্তহীন আয়ুতে গণেশের উপলব্ধি হল

মৃত্যুহীন জীবনের যন্ত্রণা / সুইসাইডের ইচ্ছা / মরা মানুষকে বাঁচিয়ে তোলা
উত্তর: মৃত্যুহীন জীবনের যন্ত্রণা ।

গণেশ লেখে

উপন্যাস / কবিতা / গল্প
উত্তর: কবিতা।

গণেশের কবিতা _ শুনবে বলে গণেশের বিশ্বাস

আকাশ , বাতাস , প্রকৃতি / ছাত্র , ছাত্রের মা / পাঁচজন শ্রোতা
উত্তর: আকাশ , বাতাস , প্রকৃতি।

“ গণেশ তাদের মুখশ্রী ভুলে গেছে । ” কাদের ?

ছাত্রদের / ছেলেমেয়েদের / বি জ্ঞানীদের
উত্তর: ছেলেমেয়েদের।

গণেশকে কবিতায় পেলে গণেশ

কবিতা সুর দিয়ে গান করে / অনেক কবিতা লেখে / কবিতা লেখার পাতা ভাসিয়ে দেয়
উত্তর: কবিতা লেখার পাতা ভাসিয়ে দেয়।

এক সপ্তাহ পরে

রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব গণেশের ডেরায় নামলেন / সবাই হিজিবিজি ছবি আঁকছে / লোকে গান গাইতে লেগেছে
উত্তর: রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব গণেশের ডেরায় নামলেন ।

‘ পৃথিবী যে উচ্ছন্নে গেল ! ‘ — এই দুশ্চিন্তা হল

পাগলা গণেশের / এক ভদ্রমহিলার / রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিবের
উত্তর: রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিবের

‘ যাঃ তাহলে আর ভয় নেই ।’— ভয় ছিল

গবেষণার / সুকুমার শিল্পে / পৃথিবী মরছে — এই মরে যাওয়াতে
উত্তর: পৃথিবী মরছে — এই মরে যাওয়াতে ।

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

পাগলা গণেশ গল্পের অতিসংক্ষিপ্ত (SAQ) প্রশ্ন উত্তর

‘ পাগলা গণেশ ’ গল্পটি কার লেখা ?

উঃ‘ পাগলা গণেশ ’ গল্পটি শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের লেখা ।

‘ পাগলা গণেশ ’ গল্পটি লেখকের কোন গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে ?

উঃ‘ পাগলা গণেশ ’ গল্পটি লেখকের ‘ পাগলা গণেশ ’ নামক গল্পগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে ।

‘ পাগলা গণেশ ’ গল্পটি কী ধরনের গল্প ?

উঃ ‘ পাগলা গণেশ ’ কল্পবিজ্ঞানের গল্প ।

মাধ্যাকর্ষণ প্রতিরোধকারী মলম আবিষ্কারের পর পৃথিবীতে কীসের হিড়িক পড়ে গেছে ?

উঃ মাধ্যাকর্ষ প্রতিরোধকারী মলম আবিষ্কারের পর পৃথিবীতে নানারকম উড়ান যন্ত্র আবিষ্কারের হিড়িক পড়ে গেছে ।

পাগলা গণেশ গল্পে গণেশের বয়স

উঃ পাগলা গণেশের বয়স দুশো বছর ।

মাজ থেকে দেড়শো বছর আগে কী আবিষ্কার হয়েছিল ?

উঃ আজ থেকে দেড়শো বছর আগে মৃত্যুঞ্জয় টনিক আবিষ্কৃত হয়েছিল ।

গণেশ কেন অমর হয়ে গেল ?

উঃ মৃত্যুঞ্জয় টনিক সেবন করে গণেশ অমর হয়ে গেল ।

গণেশকে কীসের বাতিকে পেয়েছে ?

উঃ গণেশকে কবিতা লিখে আকাশে উড়িয়ে দেওয়ার বাতিকে পেয়েছে ।

গণেশের ক – টি ছেলে ও ক – টি মেয়ে ?

উঃ গণেশের তিন ছেলে ও এক মেয়ে ৷

গণেশের স্ত্রী কোথায় কাজ করেন ?

উঃ গণেশের স্ত্রী ক্যালিফোর্নিয়া মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রে কাজ করেন ।

গণেশ আগে কোথায় , কী পড়াতেন ?

উঃ গণেশ আগে কলকাতার সায়েন্স কলেজে মাইক্রো ইলেকট্রনিকস পড়াতেন ।

পাগলা গণেশ গল্পের সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

‘ পাগলা গণেশ ’ গল্পে সভ্যতার কোন সমস্যার দিকে ইঙ্গিত রয়েছে ?

উত্তরঃ আলোচ্য ‘ পাগলা গণেশ ’ নামক কল্পবিজ্ঞানধর্মী গল্পে দেখা যায় , মানবসভ্যতা বিজ্ঞানের হাত ধরে সুদূর ভবিষ্যতে উন্নতির শিখরে পৌছেছে । এই পরিস্থিতিতে বিজ্ঞানের বাড়াবাড়ি এবং মানবমনের সৃষ্টিশীলতার মৃত্যু হওয়ার সমস্যাটিকে ইঙ্গিতবাহী করে তোলা হয়েছে ।

‘ পাগলা গণেশ ‘ গল্পে যেসকল উড়ানযন্ত্রের উল্লেখ আছে সেগুলির পরিচয় দাও ।

উত্তরঃ ‘ পাগলা গণেশ ’ গল্পে মাধ্যাকর্ষণ প্রতিরোধী মলম আবিষ্কারের ফলে নানারকম উড়ানযন্ত্র আবিষ্কারের হিড়িক পড়ে যায় । সেগুলি হল — ডাইনিদের বাহন ডান্ডাওলা ঝাঁটার মতো , নারদের ঢেঁকির মতো , কার্পেটর মতো , কার্তিকের বাহন ময়ূরের মতো সব উড়ানযন্ত্র ।

“ খামোখা সময় নষ্ট । ” — এমন ভাবনার কারণ কী ?

উত্তরঃ ঘরে ঘরে মানুষ বিজ্ঞান নিয়ে এমন ঝুঁদ হয়ে আছে যে , প্রতি ঘরের প্রত্যেকেই কোনো – না – কোনো বিজ্ঞানী । ফলে বিজ্ঞান চর্চা ছাড়া অন্য কোনো চর্চায় কেউ মাথা ঘামায় না ৷ কবিতা , গান , ছবি আঁকা , কথাসাহিত্য , নাটক সিনেমা এসব নিয়ে মাথা ঘামানো মানে খামোখা সময় নষ্ট করা । কারণ চারদিকে বিজ্ঞানচর্চার মধ্যে এসব চর্চা কোনো কাজে লাগে না ।

“ খেলাধুলোর পাটও চুকে গেছে । ” — কীভাবে বোঝা গেল ? “

উত্তরঃ বিজ্ঞানের চরমতম সাফল্য ও প্রসারের যুগেও খেলাধুলোর বল থাকতেই পারে , কেন – না বিজ্ঞান মস্তিষ্কের বিষয় , খেলাধুলো শরীরচর্চা ও বিনোদনের ব্যাপার । তবুও যখন ‘ পাগলা গণেশ ’ সাহিত্য বিচিত্রা গল্পে ৩৫৮৯ সালের প্রেক্ষাপটে দেখা গেল — মানুয বিজ্ঞানে বুদ , খেলাধুলোর সের – জনপ্রিয় আসরগুলি , অর্থাৎ অলিম্পিক – বিশ্বকাপ উঠে গেছে , তখনই বোঝা যায় খেলাধুলোর পাট চুকে গেছে ।

“ আছে শুধু বিজ্ঞান আর বিজ্ঞান । ” — পৃথিবীতে আর কী কী থাকার কথা ?

উত্তরঃ বিজ্ঞান মানুষের কাজে এক আশীর্বাদস্বরূপ শক্তির উৎস সন্দেহ নেই ৷ কিন্তু বিজ্ঞানই যে মানুষের জীবনের একমাত্র বিষয় , তা কখনো হতে পারে না । মানবমনের সুকুমার শিল্পবোধের নান্দনিক প্রকাশ কবিতা – গান – কবির মতো বিষয়গুলিও তাই মানবসভ্যতার অঙ্গ হওয়ার কথা ছিল । সেইসঙ্গে ক্রীড়া ও দয়া মায়া – করুণা – ভালোবাসার মতো আবেগ – অনুভূতিও থাকা জরুরি ।

পাগলা গণেশের জীবনের প্রতি বিরক্তি কীভাবে গড়ে উঠেছিল ?

উত্তরঃ দুশো বছর বয়সি পাগলা গণেশের পঞ্চাশ বছর বয়সে যে মৃত্যুঞ্জয় টনিক আবিষ্কার হয়েছিল , তা সে সেবন করায় তার অমর হয়ে যায় । আর দেড়শো বছর আগে যে সুকুমার শিল্পবিরোধী আন্দোলন গড়ে উঠেছিল তা পাগলা গণেশের পছন্দ হয়নি । এইভাবেই তার জীবনের প্রতি বিরক্তি গড়ে ওঠে ।

ঢেঁকি থেকে নামা আর ভেলা থেকে নামা লোক দুটোর সঙ্গে গণেশের কী কথা হয়েছিল ?

উত্তরঃ একটা ঢেঁকি আর একটা ভেলায় চড়ে আসা লোক দুটো গণেশের কাজের ফিরিস্তি থেকে জেনেছিল , গণেশ কবিতা লিখছে , কবিতার পাতা বাতাসে ভাসিয়ে দিচ্ছে — যদি কেউ কুড়িয়ে পায় আর পড়তে ইচ্ছে হয় তো পড়বে । এরপর লোক দুটো গণেশের কাজের প্রতি অবহেলার ভাব প্রকাশ করে ।

‘ একা সে পৃথিবীর গতি কিছুতেই উল্টে দিতে পারবে না ।’— গণেশের এরূপ ধারণা কেন হয়েছিল ?

উত্তরঃ গণেশ কবিতা লিখে দুটো লোকের কাছ থেকে অবহেলা পেয়েছে , আর গান গাওয়ায় দুটো পাখাওয়ালা ভদ্রলোকের কাছ থেকে কথার খোঁচা খেয়েছে এবং ছবি খোদাই করতে গিয়ে এক ভদ্রমহিলার কাছ থেকে সে উপেক্ষা লাভ করেছে । তারপরেই তার মনে হয়েছে , পৃথিবীর গতিপ্রকৃতি সে একা উলটে দিতে পারবে না ।

‘ পৃথিবীর বাঁচবার ওষুধ ।’— পৃথিবীর কী অসুখ করেছে বুঝিয়ে দাও ।

উত্তরঃ পৃথিবীর গভীর থেকে গভীরতর অসুখ এখন । এই অসুখে পৃথিবী বিষণ্ণ ৷ বিজ্ঞানের বাড়াবাড়িতে গার্হস্থ্যধর্মের মায়া – মমতার সবরকম পথ নষ্ট হয়ে গেছে । তাকে ফেরত পাওয়ার ওষুধ হল সুকুমার শিল্প । সুতরাং পৃথিবীর প্রকৃতপক্ষে গভীর অসুখ করেছে ।

পাগলা গণেশ গল্পের বড় প্রশ্ন উত্তর

“ সালটা ৩৫৮৯ । ” — এই সময়ের মধ্যে পৃথিবীতে কোন্ কোন্ নতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের কথা গল্পে বলা হয়েছে ?

উত্তরঃ শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘ পাগলা গণেশ ’ গল্পটি একটি কল্পবিজ্ঞানের কাহিনি । আলোচ্য গল্পে ৩৫৮৯ সাল নাগাদ পৃথিবীতে কেমন অবস্থা তৈরি হতে পারে তারই ইঙ্গিত দিয়েছেন লেখক । উক্ত সময়ে নতুন নতুন বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার ঘটবে পৃথিবীতে । যেমন — ওই সময়ের মধ্যে মাধ্যাকর্ষণ প্রতিরোধকারী মলম আবিষ্কৃত হবে , যার ফলে পৃথিবীতে নানারকম উড়ানযন্ত্র আবিষ্কারের হিড়িক পড়ে যাবে । মানুষ মৃত্যুঞ্জয়ী টনিক আবিষ্কার করবে , সূর্যের আরও দুটি গ্রহ আবিষ্কৃত হবে এবং জানা যাবে যে সূর্যের আর কোনো গ্রহ নেই । ইতিমধ্যে চাঁদ , মঙ্গল , শুক্র গ্রহে মানুষ ল্যাবরেটরি স্থাপন করবে ।

“ ওসব অনাবশ্যক ভাবাবেগ কোনো কাজেই লাগে না । ” — ‘ অনাবশ্যক ভাবাবেগ ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ? তাকে সত্যিই তোমার ‘ অনাবশ্যক ‘ বলে মনে হয় কি ?

উত্তরঃ প্রশ্নোক্ত অংশটি শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘ পাগলা গণেশ ’ নামক গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে । ‘ অনাবশ্যক ভাবাবেগ ’ বলতে কিছু শিল্পসৃষ্টির কথা বলা হয়েছে । যেমন — কবিতা , গান , ছবি আঁকা , কথাসাহিত্য , নাটক , সিনেমা প্রভৃতির চর্চা ।
আলোচ্য গল্পে লেখক ৩৫৮৯ সালের যে সময়ের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন , সেই সময়ে মানুষ বিজ্ঞান ছাড়া অন্য কিছুর চর্চাই করবে না হয়তো , তাই তাদের কাছে মনের আবেগের কোনো মূল্য থাকবে না । তাই শিল্পেরও কোনো মর্যাদা থাকবে না । কিন্তু আমার মনে হয় মনের আবেগ হারিয়ে গেলে পৃথিবীটা মরুভূমির মতোই রুক্ষ হয়ে পড়বে । পৃথিবীকে তথা মানুষকে তো বাঁচিয়ে রাখবে মনের আবেগ । কবিতা , গান , ছবি আঁকা প্রভৃতি চর্চা করলে , এগুলির মধ্যে মানুষ বেঁচে থাকার আনন্দ খুঁজে পাবে । তাই কবিতা , গান , আঁকা প্রভৃতির চর্চাকে ‘ অনাবশ্যক ’ মনে করি না ।

“ চর্চার অভাবে মানুষের মনে আর ওসবের উদ্রেক হয় না । ” — মানুষের মন থেকে কোন্ কোন্ অনুভূতিগুলি হারিয়ে গেছে ?

উত্তরঃ প্রশ্নোক্ত অংশটি সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের কল্পবিজ্ঞানের কাহিনি ‘ পাগলা গণেশ ’ থেকে নেওয়া হয়েছে । মানুষের মন থেকে হারিয়ে গেছে সৌন্দর্য , দয়া – মায়া – করুণা প্রভৃতির অনুভূতি । এইসব অনুভূতিগুলির আর প্রয়োজন না থাকায় , মানুষের জীবনে এসবের চর্চাও আর হয় না ।

“ ব্যতিক্রম অবশ্য এক আধজন আছে । ” — ব্যতিক্রমী মানুষটি কে ? কীভাবে তিনি ‘ ব্যতিক্রম ’ হয়ে উঠেছিলেন ?

উত্তর : প্রশ্নোক্ত অংশটি সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘ পাগলা গণেশ ’ নামক কল্পবিজ্ঞানের কাহিনি থেকে নেওয়া হয়েছে । এখানে ব্যতিক্রমী মানুষটি হলেন স্বয়ং পাগলা গণেশ । এই গল্পে বর্ণিত ৩৫৯৮ সালেরও ১৫০ বছর পূর্বে যখন ‘ মৃত্যুঞ্জয় ‘ টনিক ’ আবিষ্কৃত হয় , তখন অন্য অনেকের মতো গণনাও তার ৫০ বছর বয়সে তা পান করেন এবং তার আর মৃত্যু হয় না । প্রায় সমসময় থেকেই শিল্পবিরোধী আন্দোলনও শুরু হয় । মানুষের কাছে তখন থেকেই বিজ্ঞান হয়ে ওঠে চর্চার একমাত্র বিষয় । চর্চার বিষয় থেকে অনিবার্যভাবে বাদ পড়ে যায় সাহিত্য , শিল্প , সংগীত । বিষয়গুলিকে মানুষ অনাবশ্যক বলে বিবেচিত করে ।

সমকালীন ঘটনার এই গতিপ্রকৃতি গণেশের পছন্দ হয় না । বিজ্ঞানের বাড়াবাড়িরও যে একটা সীমা থাকা দরকার এ তার মনে হয় । তাই একক প্রচেষ্টায় কালের গতিকে উলটো দিকে ফেরানোর ব্যর্থ চেষ্টা না করে গণেশ আশ্রয় নেন সভ্যসমাজ থেকে দূরে হিমালয়ের গিরিগুহায় । একান্ত নির্জনে ব্যতিক্রমী প্রচেষ্টায় গণেশ করতে শুরু কবিতাচর্চা , গান গাওয়া , ছবি আঁকার সাধনা । এভাবেই তিনি বেগের যুগে আবেগনির্ভরতার পথে , যুগবিরুদ্ধ কাজ করে ব্যতিক্রমী হয়ে ওঠেন ।

“ ও মশাই , অমন বিকট শব্দ করছেন কেন ? ” — কার উদ্দেশে কারা এ কথা বলেছিল । কোন কাজকে তারা ‘ বিকট শব্দ ‘ মনে করেছিল ?

উত্তরঃ প্রশ্নোক্ত অংশটি শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘ পাগলা গণেশ ’ নামক গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে । কথাগুলি বলা হয়েছিল পাগলা গণেশের উদ্দেশে । দুটি পাখাওয়ালা লোক কথাগুলি বলেছিল । পাগলা গণেশের গানের গলা ভালোই ছিল । একদিন সন্ধেবেলা তিনি গলা ছেড়ে গান গাইতে শুরু করেন । সেইসময় দুটো লোক আকাশযানে চড়ে লাসা থেকে ইসলামাবাদ উড়ে যাচ্ছিল , যেতে যেতে তাদের কানে পাগলা গণেশের গানের শব্দ পৌঁছোয় । তারা গণেশের গানের কোনো অর্থ বা আবেগ বুঝতে পারে না , তাই তারা বিরক্ত হয় । তাদের মনে হয় ওই গানের আওয়াজ বিকট শব্দ ছাড়া আর কিছুই নয় । অর্থাৎ ব্যতিক্রমী মানুষ পাগলা গণেশের গলা ছেড়ে গান গাওয়াকেই মানুষরা মনে করে ‘ বিকট শব্দ ’ ।

পাগলা গণেশ গল্পের রচনা ধর্মী প্রশ্ন উত্তর

‘ পাগলা গণেশ ’ গল্পের মুখ্য চরিত্র গণেশকে তোমার কেমন লাগল ?

উত্তরঃ প্রখ্যাত কথাশিল্পী শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় ‘ পাগলা গণেশ ’ গল্পে গণেশ মুখ্য তথা কেন্দ্রীয় চরিত্র । তিনি একাধারে অসাধারণ এবং ব্যতিক্রমী একটি চরিত্র । মৃত্যুঞ্জয় টনিক গণেশকে অমরতা দান করেছে । তিনি নিজে বিজ্ঞানের অধ্যাপক , অথচ কেবল যুগের হুজুগে না চলে , নিছক বিজ্ঞানকর্মে নিজেকে ব্যাপৃত না রেখে , মানুষের মধ্যে উপ্ত মানসবৃত্তিগুলির বিকাশে তিনি আন্তরিক সচেষ্ট হয়েছেন । যুগধর্ম অনুযায়ী তখন পৃথিবীর সর্বত্র বিজ্ঞান ছাড়া আর যেন ভাবনার কোনো বিষয়ই নেই । গত ১৫০ বছরে বিজ্ঞানের অভাবনীয় উন্নতি হয়েছে । আবার পাশাপাশি ‘ সুকুমার শিল্পবিরোধী আন্দোলন ’ – ও চলছে । তাই মানবমন থেকে আবেগ , স্নেহ – মায়া – মমতার মতো অনুভূতিগুলি যেমন হারিয়ে যাচ্ছে , তেমনই শিল্প – সাহিত্যসংস্কৃতির পাঠও চুকে যাচ্ছে । তার তখন মনে হয়েছিল — ‘ বিজ্ঞানের বাড়াবাড়িরও একটা সীমা থাকা দরকার । ‘ এমতাবস্থায় প্রায় একক প্রচেষ্টায় কবিতা – গান – আঁকা ইত্যাদির চর্চার জন্য গণেশ হিমালয়ের গিরিগুহায ডেরা বাঁধেন ।

সেখানে কবিতা লিখে তিনি ভাসিয়ে দেন বাতাসে , ভাবেন যদি কারও কাছে পৌছোয় , যদি কেউ পড়ে । কখনও তিনি গান করেন , ছবি আঁকেন । এমন সৃষ্টিছাড়া কীর্তিকলাপ যার , তাকে তো ‘ পাগলা ’ বলে মনে হতেই পারে । কিন্তু গণেশ ‘ পাগলা ’ নন , তিনি আন্তরিক । যান্ত্রিক পৃথিবীর হৈ – হল্লার মাঝে নিঃসঙ্গ হলেও তিনি মানবতার পূজারি । বিজ্ঞাননির্ভর মানুষ একে অপরের থেকে বিচ্ছিন্ন । তাই পারস্পরিক আবেগের সূত্রে মানুষকে বাঁধতে তিনি বিজ্ঞানের পাশে মানুষের সৃষ্টিশীলতা ও মানসবৃত্তিকে প্রতিষ্ঠা দিতে চেয়েছেন । একক যুদ্ধের সার্থক সৈনিক গণেশ তাই এক সার্থক মানবচরিত্র হিসেবে এ গল্পে আত্মপ্রকাশ করেছেন । গল্পশেষে তাই রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব যখন জানান লোকে গান গাইতে লেগেছে , কবিতা মকসো করছে , হিজিবিজি ছবি আঁকছে । ‘ তখন গণেশের প্রাণময় উক্তি— “ যাঃ তাহলে আর ভয় নেই । দুনিয়াটা বেঁচে যাবে … ”।

“ এই মৃত্যহীন জীবন , এই অন্তহীন আয়ু কি এভাবেই যন্ত্রণার মধ্যে কাটাতে হবে ? ” — গণেশ ‘ যন্ত্রণা ’ বলেছেন কাকে ? তাঁর এমন মনে হওয়ার কারণ কী ?

উত্তরঃ মৃত্যুঞ্জয় টনিক গণেশকে অস্বাভাবিক দীর্ঘজীবন দান করেছিল , তিনি অমরতা লাভ করেছিলেন । পাশাপাশি দীর্ঘজীবনে বিজ্ঞানের অস্বাভাবিক বাড়াবাড়িও তার মনকে পীড়া দিতে শুরু করে । বিশেষত , তিনি যখন লক্ষ করেন , বিজ্ঞানের বেগধর্মী যোজনায় মানুষের জীবন থেকে ক্রমে হারিয়ে যাচ্ছে দয়া – মায়া – করুণা – ভালোবাসার মতো আবেগ – অনুভূতি এবং সাহিত্য – শিল্প – সংস্কৃতির পাটও চুকে যাচ্ছে , তখন তার মন অস্থির হয়ে ওঠে । তা ছাড়া হিমালয়ের নির্জন – পরিসরে , একান্তে , এককভাবে যে একটু চারুকলা অর্থাৎ সৃষ্টির চর্চায় তিনি ডুবে থাকবেন — তাও তিনি পারছিলেন না , সেখানেও তাকে মাঝেমধ্যে মানুষের ব্যঙ্গাত্মক উক্তি শুনতে হচ্ছিল । জীবনের এই পরিস্থিতিকে তাই গণেশ যন্ত্রণা বলে মনে করেছেন ।
বিজ্ঞান যখন সর্বগ্রাসী হয়ে সমগ্র পৃথিবীতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে , তখন সে বিষয়ে নিতান্ত বিব্রত হয়েই যোদ্ধার মতো গণেশ সভ্যসমাজ থেকে দূরে হিমালয়ের গিরিগুহায় আশ্রয় নেন । সেই নির্জনতার অবকাশে চলতে থাকে তার একক শিল্পচর্চা । তিনি গান গেয়ে তৃপ্তি পান , পাথর কেটে বানান ছবি , কবিতা লিখে ছড়িয়ে দেন বাতাসে — যদি কেউ পড়ে এই ভেবে । কিন্তু গণেশের ওই নিভৃত শিল্পসংগ্রাম অন্য অনেকের ভালো লাগে না । একদিন ঢেঁকি ও ভেলা – যাত্রী দুই ব্যক্তি গণেশের কবিতাচর্চাকে তীব্র ব্যঙ্গ করে । অন্য একদিন দুটো পাখাওয়ালা লোক তাকে এসে রীতিমতো ধমক লাগিয়ে জিজ্ঞাসা করে– “ ও মশাই , এমন বিকট শব্দ করছেন কেন ? ” গণেশ তার গানচর্চার ব্যাখ্যা দিলে , তারা তার গানকে ‘ বিটকেল শব্দ ’ আখ্যা দেয় । অন্য একদিন গণেশ যখন যান্ত্রিক বাটালি দিয়ে পাথর কেটে ছবি আঁকছিল , ধামায় আরোহিণী এক মহিলা তার সেই চর্চা দেখে ব্যঙ্গোক্তি করে— “ খেয়েদেয়ে কাজ নেই ! ছবি হচ্ছে ! হুঁঃ ! ” এসব ঘটনা গণেশের মনে তীব্র হতাশার জন্ম দেয় । তাই গণেশ এমন মনে করতে বাধ্য হন ।

পাগলা গণেশ প্রশ্ন উত্তর, পাগলা গণেশ গল্পের Pdf

প্রান্তিক প্রকাশক বাংলা সপ্তম শ্রেণির প্রবেশিকা বাংলা সহায়িকা

প্রান্তিক পাবলিশার বাংলা ক্লাস সপ্তম প্রবেশিকা বাংলা সহায়িকা (দেবাশিস মৌলিক লেখক)

পাগলা গণেশ প্রশ্ন উত্তর

পাগলা গণেশের জীবনের প্রতি বিরক্তি কীভাবে গড়ে উঠেছিল ?
উত্তরঃ দুশো বছর বয়সি পাগলা গণেশের পঞ্চাশ বছর বয়সে যে মৃত্যুঞ্জয় টনিক আবিষ্কার হয়েছিল , তা সে সেবন করায় তার অমর হয়ে যায় । আর দেড়শো বছর আগে যে সুকুমার শিল্পবিরোধী আন্দোলন গড়ে উঠেছিল তা পাগলা গণেশের পছন্দ হয়নি । এইভাবেই তার জীবনের প্রতি বিরক্তি গড়ে ওঠে ।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।