নব্য প্রস্তর যুগের মানুষের জীবনযাত্রার পরিচয় দাও

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

নব্য প্রস্তর যুগ কাকে বলে

পাথরের যুগের শেষ পর্যায় হলো নতুন পাথর বা নব্য প্রস্তর যুগ (Neolithic Age)।

এ যুগে পাথরের অস্ত্রশস্ত্র ও ব্যবহার্য দ্রব্যাদির চরম উন্নতি সাধিত হয়েছিল। খ্রিস্টপূর্ব ৮,০০০ অব্দ থেকে ৩০০০ অব্দের মধ্যে এই যুগের সমাপ্তি ঘটে। এ যুগের প্রাচীন মানুষেরা তাদের শিকারি-সংগ্রাহক পরিচয় পুরোপুরি মুছে ফেলতে শুরু করে এবং কৃষিকাজের মাধ্যমে একস্থানে স্থায়ী হয়ে খাদ্য উৎপাদনের দিকে মনোনিবেশ করে। তারা বিভিন্ন পশুকে পোষ মানায় এবং খাদ্যশস্য উৎপাদন করে।

এ যুগে তারা আরো পালিশকৃত ও মসৃণ কুঠার, কাস্তে, বাটালি ব্যবহার শুরু করে কৃষি জমি কর্ষণের কাজে। কৃষি কাজের সুবিধার্থে তারা অপেক্ষাকৃত সমতল ভূমিকে বসবাসের জন্য বেছে নেয়, পাশাপাশি খেয়াল রাখে যেন কৃষি জমির থেকে নিকটস্থ জলাশয়ের দূরত্ব খুব বেশি না হয়। এ যুগে মানুষ গৃহনির্মাণসহ অন্যান্য বিভিন্ন শিল্পে পূর্বাপেক্ষা ব্যাপক উন্নতি ঘটায়। মৃৎশিল্প, সেলাই ও তাঁতশিল্প এ যুগে এসে হয় আরো উন্নত ও সমৃদ্ধ।

ধাতুর ব্যবহার শুরু হলে এই যুগ শেষ হয় এবং ব্রোঞ্জ যুগ, তাম্র যুগ এবং কোন কোন ভৌগোলিক অঞ্চলে লৌহ যুগ শুরু হয়।

নব্য প্রস্তর যুগের সময়কাল

খ্রিস্টপূর্ব ৪,০০০ অব্দ থেকে ২,৫০০ অব্দের মধ্যে এই যুগের সমাপ্তি ঘটে। প্রথাগতভাবে এই যুগ হচ্ছে প্রস্তর যুগের সমাপ্তি। নব্যপ্রস্তর যুগ হলোসিন এপিপ্যালিওলিথিক যুগ অনুসরণ করে আসে এবং কৃষিকাজের সূচনাকালে নবপোলীয় বিপ্লব ঘটে এবং এই সময়টাই নব্যপ্রস্তর যুগের শুরু।

নব্য প্রস্তর যুগের মানুষের জীবনযাত্রার পরিচয় দাও এই যুগের গুরুত্ব কি, নব্য প্রস্তর যুগের মানুষের জীবনযাত্রার পরিচয় দাও

[1] জীবিকা

  • পশুপালন: এযুগের মানুষ পশুপালনের কৌশল আয়ত্ত করে। কুকুর, ভেড়া, গােরু, গাধা, হাতি প্রভৃতি পশুকে তারা পােষ মানাতে শেখে।খাদ্যের জোগান ছাড়াও গৃহপালিত পশুকে তারা যাতায়াতের কাজে ব্যবহার করতে শুরু করে।
  • কৃষির সূচনা: নব্য প্রস্তর পর্বে আবাসস্থলের পাশে বীজ বা গাছের শিকড় পুঁতে দেওয়া শুরু হয়। এভাবেই কৃষির সূচনা ঘটে।

[2] সমাজ: পূর্বেকার সমাজকাঠামাে এ যুগে আরও পরিশীলিত হয়। পরিবারগুলির কাঠামাে আরও সুসংঘবদ্ধ হয়ে ওঠে। সমাজে একক বা দলগত বিবাহরীতি চালু হয়। সমাজে বিনিময়প্রথার উদ্ভব ঘটে এবং শ্রমবণ্টন ব্যবস্থা চালু হয়।

[3] আশ্রয়স্থল: নব্য প্রস্তর যুগের শেষের দিকে মানুষ স্থায়ী আবাস নির্মাণ করতে শেখে। গাছের ডালপালা ও ঘাসপাতা দিয়ে তারা কুটির বানাতে শেখে। সুইটজারল্যান্ডের আদিম অধিবাসীরা হ্রদের মধ্যে খুঁটি পুঁতে তার ওপর মাচা বেঁধে বসবাস করত এমন নিদর্শন মিলেছে।

[4] হাতিয়ার: নব্য প্রস্তর যুগের মানুষ আগের তুলনায় অনেক উন্নত মানের হাতিয়ার ব্যবহার করতে শুরু করে। এই পর্বের উল্লেখযােগ্য পাথরের হাতিয়ারগুলি ছিল কাটারি, নিড়ানি, ছেনি, বাটালি, কাস্তে, বর্শার ফলা, ছােরা, ছুঁচ প্রভৃতি। কুঠার, কোদাল-সহ বেশ কিছু হাতিয়ারে কাঠের হাতল লাগানাের কৌশল এসময় চালু হয়।

[5] আগুনের ব্যবহার: নব্য প্রস্তর যুগে মানুষ পাথর ভাঙার মধ্য দিয়ে প্রথম আগুন জ্বালানাের কৌশল আবিষ্কার করে। আগুনের সাহায্যে তারা কাঁচা মাংস আগুনে পুড়িয়ে নিয়ে বা সেদ্ধ করে খেতে শিখল, গুহার মুখে আগুন জ্বালিয়ে বুনাে জানােয়ারদের তাড়াতে শিখল এবং শীতের হাত থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে শিখল।

[6] চাকার আবিষ্কার: নব্য প্রস্তর যুগে এক তাৎপর্যপূর্ণ আবিষ্কার হল ‘চাকা’। চাকার ব্যবহারের মাধ্যমে মৃৎপাত্র উৎপাদনে পরিবর্তন আসে পাশাপাশি চাকাকে কাজে লাগিয়ে যানবাহন তৈরির ধারণা সৃষ্টি হয়।

[7] ভাষার উন্নয়ন: নব্য প্রস্তর যুগে ভাষার উন্নতি ঘটেছিল। এযুগে সমাজ কাঠামাে অনেক সংঘবদ্ধ হওয়ায় নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে বেশ কিছু ভাষার আত্মপ্রকাশ ঘটে।

[8] শিল্প

  • বস্ত্রবয়ন শিল্প: নব্য প্রস্তর যুগে বর্ষবয়ন শিল্পের সূচনা ঘটেছিল। শপের আঁশ থেকে তৈরি সুতাে দিয়ে এসময়ের কারিগররা লিনেন কাপড় বুনতে শেখে৷ মেসোপটেমিয়ার কারিগররা ভেড়ার লােম দিয়ে পশমি কাপড় বানাতে শেখে।
  • মৃৎশিল্প: নব্য প্রস্তর যুগে মৃৎশিল্পে অভাবনীয় অগ্রগতি ঘটে। চাকাকে কাজে লাগিয়ে কম সময়ে অনেক বেশি সংখ্যক মাটির পাত্র তৈরি হতে থাকে। মাটির তৈরি পাত্রকে পুড়িয়ে শক্ত করার কৌশল আবিষ্কৃত হয়। পাত্রগুলির গায়ে নানা ধরনের নকশা এবং রং করার কৌশল চালু হয়।

[9] শিল্পকলা ও ধর্মবিশ্বাস: নব্য প্রস্তর যুগের মানুষ পাথর কেটে দেবীমূর্তি গড়তে শিখেছিল৷ মেসােপটেমিয়ার ইউবেইদ এবং ইজিয়ান সভ্যতার ক্রীটে এই ধরনের মূর্তি মিলেছে।

নব্য প্রস্তর যুগের গুরুত্ব

মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশের ধারায় নব্য প্রস্তর যুগ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। প্রাচীন প্রস্তর যুগ ও মধ্য প্রস্তর যুগের থেকে নব্য প্রস্তর যুগের সময়কাল অনেক কম হলেও এই যুগে মানব সভ্যতার বেশ কিছু উল্লেখযােগ্য অগ্রগতি ঘটে। এই কারণে ঐতিহাসিক গর্ডন চাইল্ড এই অগ্রগতিকে নব্য প্রস্তর যুগের বিপ্লব বলেছেন।

  • মানব সমাজের চরিত্রগত পরিবর্তন :নব্য প্রস্তর যুগে মানুষ কৃষিকাজ ও পশুপালন করার কৌশল আবিষ্কার করে। ফলে খাদ্যসংগ্রহকারী মানুষ খাদ্য উৎপাদন করতে শেখে।
  • হাতিয়ারের উন্নতি : নতুন পাথরের যুগের মানুষ মসৃণ ধারালাে হাতলযুক্ত হাতিয়ার নির্মাণ করে। ফলে হাতিয়ারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।
  • নতুন আবিষ্কার : এই যুগে মানুষ কৃত্রিম আগুন, চাকা, চাকাযুক্ত গাড়ি, পালতােলা নৌকা, কাপড় বােনার কৌশল, আগুনে পােড়া মৃৎপাত্র তৈরির কৌশল আবিষ্কার করে।
  • স্থায়ী বাসস্থান : নব্য প্রস্তর যুগে মানুষ স্থায়ী বাসস্থান নির্মাণ করে, ফলে যাযাবর জীবনের অবসান ঘটে।
  • রাষ্ট্রব্যবস্থার ক্রম : স্থায়ী বসতি গড়ে ওঠার পর গােষ্ঠীপতি ধীরে ধীরে শাসকে পরিণত হয়।

নব্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য, নব্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য pdf

  • বন্য শস্য সংগ্রহ করা হয়েছিল এবং সম্ভবত প্রাথমিক বীজ নির্বাচন এবং পুনরায় বীজ বপন করা হয়েছিল। ময়দা বানানোর জন্য দানা পিষে শুরু হল।
  • নব্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য হলো পশুপালন। মানুষ প্রয়োজনে পশু পালন করতে শুরু করে। এযুগে পশুকে কৃষি জমিতে কাজে লাগানো হয়েছিল। উৎপাদন যথেষ্ট বৃদ্ধি পায়। পরিবহনেও পোষ মানাতে পশুর ব্যবহার শুরু হয়। এসময় দক্ষিণ এশিয়ার হাতি ও মহিষকে প্রতিপালন হয়েছিল। জর্ডনে কুকুর-ছাগল প্রতিপালন শুরু হয়।
  • বসতিগুলিতে আয়তক্ষেত্রাকার মাটির ইটের ঘর রয়েছে যেখানে পরিবার একক বা একাধিক কক্ষে একসাথে থাকত।
  • বেশিরভাগ পোশাক পশুর চামড়া দিয়ে তৈরি বলে মনে হয়, যেমনটি প্রচুর পরিমাণে হাড় এবং অ্যান্টলার পিনের সন্ধান দ্বারা নির্দেশিত যা চামড়া বেঁধে রাখার জন্য আদর্শ। পরবর্তী নবপ্রস্তর যুগে উলের কাপড় এবং লিনেন পাওয়া যেতে পারে।
  • নতুন প্রস্তর যুগে কৃষিকর্ম, নব্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য এর অন্যতম বিষয় কর্মকৌশল। এই যুগে মানুষ কাজের কৌশল আবিষ্কার করেছিল। তারা একত্রে বসবাস শুরু করেছিল। তাই, খাদ্য সংগ্রহসংগ্রহকারী থেকে তারা অন্যরূপ নেই। এযুগে মানুষ খাদ্য-উৎপাদনকারী হয়। পূর্বের খাদ্য ও আশ্রয়ের নিশ্চয়তা তাদের ছিল না। এসময় প্রকৃতিতে মানুষ ছিল বড়ই অসহায়। এইযুগে কৃষি পদ্ধতির আবিষ্কার ঘটে। তাদের পূর্বের অনিশ্চয়তা দূর হয়েছিল।
  • নব্য প্রস্তর যুগ-এ কৃষির আবিষ্কার হয়েছিল। মানুষ নির্দিষ্ট অঞ্চলে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। ফলে, মানুষের যাযাবর জীবনের অবসান ঘটে। বন্যপশু দ্বারা আক্রান্তের ভয় মানুষের কেটে যায়। তারা এযুগে গৃহনির্মাণ করতে শুরু করে। কুটির তৈরির জন্য তারা নানা জিনিস ব্যবহার করে।
  • নগরসভ্যতা গড়ার পূর্বে পৃথিবীতে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রমাণ মেলে না। নব্য প্রস্তর যুগের বৈশিষ্ট্য স্থায়ী বসতি নির্মাণ। তাই কোন গোষ্ঠীর নেতা বা দলপতির পদটি স্থায়িত্ব লাভ করে। অন্যান্য কারণে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ হতো। সংঘর্ষে জয়লাভের প্রয়োজন ব্যবহৃত হত নিয়মকানুন। এসময় গোষ্ঠীর ওপর নানা নিয়মকানুন চাপানো হতো। এইভাবে প্রশাসনিক কাঠামো গড়ে ওঠেছিল। এই পটভূমিতে নতুন পাথরের যুগে রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে ওঠেছিল।
  • এই যুগের মানুষের অর্থনৈতিক ভিত্তি ছিল কৃষি ও পশুপালন। এটি  হাতিয়ারের উন্নতির ফলে এইসময় কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। উৎপাদন বৃদ্ধিতে সমাজে বিনিময় প্রথার প্রচলন হয়েছিল। শ্রম বিভাজনের সূত্রপাত ঘটেছিল।  নারী-পুরুষের মধ্যে প্রথম এই শ্রমবিভাজন দেখা যায়।
  • পুরুষের কাজ ছিল-
    • হাতিয়ার তৈরি শিকার
    • পশুপালন করা
    • ঘরবাড়ি নির্মাণ
  • নারীদের কাজ ছিল-
    • গৃহকার্য করা
    • সন্তান প্রতিপালন করা
    • কৃষিকাজ
    • বস্ত্র উৎপাদন
    • বিখ্যাত ছুরি তৈরি ইত্যাদি।

আরো পড়ুন: প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ইতিহাস

নব্য প্রস্তর যুগের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্য

নব্য প্রস্তর যুগের আর্থ-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নে তুলে ধরা হলাে-

(১) হাতিয়ার তৈরীর কৌশলগত দক্ষতাঃ নব্য প্রস্তর যুগের বেশির ভাগ হাতিয়ার ছিল পাথরের তৈরী। এ সময়কার মানুষ পাথর দিয়ে পাথরকে মৃদু আঘাত করে খন্ড বিখন্ড করতাে। হাতিয়ারের মাধ্যমে এ যুগের মানুষের দক্ষতার গুরুত্বপূর্ণ বিকাশ ঘটেছিল।

(২) অর্থনীতি বা কৃষির সূচনাঃ নব্য প্রস্তর যুগের গুরুত্বপূর্ণ অবদান হলাে খাদ্য উৎপাদন বা কষির সূচনা। মানব সভ্যতার অগ্রগতির ধারাবাহিকতায় কৃষির আর্বিভাব একটি বৈপ্লবিক ঘটনার জন্ম দেয়।

(৩) পারিবারিক জীবনঃ পরিবার নামক সর্বজনীন সংগঠন এ যুগের অবদান। এ যুগে পিতা-মাতা ভাই-বােন, দাদা-দাদী, ফুফু, চাচা সবাই মিলে একত্রে বসবাস করতাে।

(৪) বাসস্থানঃ মানব জীবনের অতিপ্রয়ােজনীয় বিষয়গুলাের মধ্যে বাসস্থান অন্যতম। নব্য প্রস্তর যুগের মানুষের গৃহস্থালির প্রতি লক্ষ্য করলেই- তার পারিবারিক ও সামাজিক জীবনের আলেখ্য উদ্ভাসিত হয়। এ যুগের মানুষের গৃহ ছিল অতি সাধারণ। তারা প্রস্তর দ্বারা তাদের বাসগৃহ নির্মাণ করতাে। মূলত এ যুগে বসবাসের জন্য বাসস্থান একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পরিগণিত হয়।

পরিশেষঃ পরিশেষে বলা যায় যে, প্রস্তর যুগই আদি মানবজাতিকে আধুনিক মানবজাতিতে উন্নীত হওয়ার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে। এ যুগের বৈচিত্র্যময় আবিষ্কার ও উৎকর্ষতা সভ্যতার ইতিহাসে নবদিগন্তের জন্ম দেয়। সে হিসাবে প্রস্তর যুগের মানুষের ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এ কারণেই প্রস্তর যুগের ইতিহাসের মাধ্যমে মানবজীবনের প্রাচীন ইতিহাসের একটা রূপরেখা প্রণীত হয়।

নব্য প্রস্তর যুগের বিপ্লব, নব্য প্রস্তর যুগের বিপ্লব বলতে কী বোঝায়

নব্যপ্রস্তর যুগীয় বিপ্লব, নব্যপ্রস্তর যুগীয় জনগোষ্ঠী পরিবর্তন, কৃষি বিপ্লব, অথবা প্রথম কৃষি বিপ্লব, ছিল অসংখ্য মানব সংস্কৃতির বিস্তৃত পরিসরে বদল, এক শিকারী-সংগ্রহকারীর জীবনধারা থেকে একটি কৃষিকার্য ও স্থায়ী জীবনধারায়, যা তৈরী করে ক্রমবর্ধমানভাবে একটি বৃহত্তর জনসংখ্যার সম্ভাবনা। এই এক জায়গায় স্থায়ী সমাজ অনুমতি দিল মানবজাতিকে উদ্ভিদের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষা করতে যে কীভাবে তারা বেড়ে ওঠে ও বিকশিত হয়। এই নতুন জ্ঞান উদ্ভিদের গৃহপালনে উৎসাহিত করল।

  • প্রত্নতাত্ত্বিক তথ্য দেখায় যে বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদের ও প্রাণীদের গৃহপালন ঘটেছিল পৃথিবীর ভিন্ন ভিন্ন অংশে, যা শুরু হয় হলোসিন-এর ভূতাত্ত্বিক সময়-এর একটি উপযুগে, প্রায় ১২,৫০০ বছর আগে। এটি ছিল বিশ্বের কৃষিকার্যে ঐতিহাসিকভাবে প্রথম প্রমাণিত বিপ্লব। নব্যপ্রস্তর যুগীয় বিপ্লবটি বিপুলভাবে লভ্য খাদ্যসমূহের বৈচিত্র কমাল, যার ফলে মানবপুষ্টিতে মন্দা দেখা গেল।
  • নব্যপ্রস্তর যুগীয় বিপ্লবটি একটি সীমিত খাদ্য-উৎপাদন প্রযুক্তির সেটের চেয়ে অনেক বেশি জড়িত। পরবর্তী সহস্রাব্দের সময় এটি বদলায় ছোট ও যাযাবর শিকারী-সংগ্রহকারী দলগুলিকে (যারা এযাবৎ এইভাবে জীবনযাপন করত মানব প্রাগৈতিহাস জুড়ে), স্থায়ী (যাযাবর নয়) সমাজে গ্রাম বা শহরের তৈরীর উপর ভিত্তি করে। এই সমাজগুলি আমুল পরিবর্তিত করে তাদের পরিবেশ বিশেষ খাদ্যশস্য চাষাবাসের মাধ্যমে, কিছু কাজের সাথে যেমন সেচ ও অরণ্যবিনাশ যা অতিরিক্ত খাদ্য উৎপন্ন করা সম্ভব করল।
  • এই উন্নতিগুলি ভিত তৈরী করল ঘন জনসংখ্যার, শ্রম বিভাজন ও বৈশিষ্টকরণের, আরও বেশি বাণিজ্যের, অবহনীয় শিল্প ও স্থাপত্যের উন্নতির, কেন্দ্রীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতার, যাজকতান্ত্রিক ভাবাদর্শের, অব্যক্তিগতকৃত জ্ঞানের মাধ্যম (যেমন, লিখন), এবং সম্পত্তির স্বত্ব। প্রাচীনতম জ্ঞাত সভ্যতার পত্তন ও হয়েছিল দক্ষিণ মেসোপটেমিয়ার সুমের-এ (আনুঃ ৫,৫০০ বছর পূর্বে); এটির উত্থান ব্রোঞ্জ যুগ-এরও সূচনা করল।

উক্ত নব্যপ্রস্তর যুগীয় বৈশিষ্টগুলির সাথে কৃষিকার্যের, তাদের উত্থানের সাথে সম্পর্ক, এবং গবেষণামূলক পরস্পরের সম্পর্ক একাধিক নব্যপ্রস্তর যুগীয় সাইটে এখনও একটি এ্যাকাডেমিক বিতর্কের বিষয়, এবং জায়গা থেকে জায়াগায় ভিন্ন, সামাজিক বিবর্তনের সার্বজনীন নিয়মের বদলে।

লেভ্যান্ট দেখেছিল নব্যপ্রস্তর যুগীয় বিপ্লবের প্রাচীনতম অগ্রগতি প্রায় ১০,০০০ খৃষ্টপূর্বাব্দে, উর্বর চন্দ্রকলার মত বৃহত্তর জায়গা দ্বারা যা অনুসরণকৃত হয়। নব্যপ্রস্তর যুগীয় বিপ্লবটি “অনুপ্রাণিত করল মানব ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নগুলির কয়েকটি যেমন চাকার আবিষ্কার, শস্য-এর বীজরোপণ এবং টানা হাতে লিখনের উন্নয়ন, গণিত, জ্যোতিষশাস্ত্র এবং কৃষিকার্য।”

নব্য প্রস্তর যুগের হাতিয়ার

নব্য প্রস্তর যুগের মানুষ আগের তুলনায় অনেক উন্নত মানের হাতিয়ার ব্যবহার করতে শুরু করে । এই পর্বের উল্লেখযােগ্য পাথরের হাতিয়ারগুলি ছিল কাটারি , নিড়ানি, ছেনি, বাটালি , কাস্তে , বর্শার ফলা ,ছােরা ,উঁচ প্রভৃতি । কুঠার , কোদাল -সহ বেশ কিছু হাতিয়ারে কাঠের হাতল লাগানাের কৌশল এসময় চালু হয় ।

প্রাচীন প্রস্তর যুগ ও নব্য প্রস্তর যুগের পার্থক্য

ক্রমিকপার্থক্যের বিষয়প্রাচীন প্রস্তর যুগমধ্য প্রস্তর যুগনব্য প্রস্তর যুগ
১)সময়কাল৫০ হাজার  থেকে প্রায় ১৫ হাজার খ্রিষ্টপূর্বাব্দ পর্যন্তখ্রিষ্টপুর্ব ১৫ হাজার বছর থেকে ১০ হাজার বছর পর্যন্ত১০ হাজার থেকে ৫ হাজার পর্যন্ত
২)হাতিয়ারপাথর ও হাড়ের তৈরি হাতিয়ার ব্যবহারতিরধনুক, হারপুন,বড়শিকাস্তে, কুলো,হাতুড়ি, বাটালি,জাঁতা, শিলনোড়া
৩)হাতিয়ারের প্রকৃতিহাতিয়ারগুলি হত অমসৃণ ও বৃত্তাকারপ্রাচীন প্রস্তর যুগের চেয়ে উন্নত ও আকারে ক্ষুদ্রতীক্ষ্ণ, মসৃণ, ও আরও উন্নত হয়
৪)প্রযুক্তিতীরধনুক আবিষ্কারকৃষিকাজের সূচনাকৃষিকাজের উন্নত কৌশল আবিষ্কার
৫)জীবিকাপশু শিকার, ফলমূল সংগ্রহ এবং মাছ ধরেপশু শিকার ও ফলমূল সংগ্রহ।পশুপালন, খাদ্য উৎপাদন
৬)জীবনযাত্রাযাযাবর প্রকৃতিরজীবনযাত্রা অর্ধ যাযাবর প্রকৃতির।যাযাবর জীবনের অবসান
৭)আগুনের ব্যবহারআগুনের ব্যবহার জানত না। তাই কাঁচা মাংস খেতপ্রাকৃতিক আগুন নানা কাজে ব্যবহার করতআগুন জ্বালাতে ও নানন ব্যবহার শেখে
৮)সামাজিক জীবনসামাজিক ধারণা গড়ে উঠেছিল।সামাজিক ধারণার আরও বিকাশ ঘটেপরিবার ও রাষ্ট্রব্যবস্থার সূচনা
৯)সমাজের প্রকৃতিসমাজ ছিল মাতৃতান্ত্রিকসমাজ ছিল মাতৃতান্ত্রিকসমাজ ছিল মাতৃতান্ত্রিক
১০)পোশাকগাছের ছাল ও পশুর চামড়া দিয়ে পোশাকপ্রাচীন প্রস্তর যুগের মত কিন্তু উন্নতবয়ন শিল্পের বিকাশ ঘটে, বস্ত্র তৈরি করে ব্যবহার হয়
১১)যানবাহনপায়ে হেঁটেকুকুরে টানা শ্লেষ গাড়ির এবং গাছের গুড়ি খোদাই করে নৌকাচাকা লাগানো গাড়ি, নৌকা, ষাড় ও উটের পিঠে
১২)শিল্পকলাগুহাচিত্রছবি আঁকায় পটু ছিল। জ্যামিতিক নকশার ঢঙে ছবিপ্রতীক ছিহ্নের সাহায্যে চিত্রাঙ্কন হত
১৩)প্রাপ্তিস্থানআফ্রিকার গ্রেরিফট ও পাঞ্জাবের সোয়ান উপত্যকায়উত্তর ইউরোপে এবং ভারতের পাঞ্জাব, রাজস্থান ও গুজরাটে।ভারতের মেহেরগড় সভ্যতা
প্রাচীন প্রস্তর যুগ ও নব্য প্রস্তর যুগের পার্থক্য
আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | নব্য প্রস্তর যুগ

Q1. নব্য প্রস্তর যুগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল

Ans – নব্য প্রস্তর যুগের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল কৃষি পদ্ধতির আবিষ্কার করা।

Q2. নব্য প্রস্তর যুগের বিপ্লব কথাটি প্রথম উদ্ভাবন করেন

Ans – নব্যপ্রস্তর যুগীয় বিপ্লব নামটি চালু হয়েছিল ১৯২৩ সালে ভি. গর্ডন চাইল্ড কর্তৃক, মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসের কৃষি বিপ্লবের ধারাবাহিকের প্রথম বর্ণনা দিতে।

Q3. নব্য প্রস্তর যুগের প্রধান হাতিয়ার গুলি কি ছিল

Ans – নব্য প্রস্তর যুগে মানুষের তৈরি হাতিয়ারগুলি ছিল উন্নত, ধারালাে ও হাতলযুক্ত। এই যুগের মানুষ মাটি কাটার জন্য কোদাল, গাঁইতি, ফসল কাটার জন্য কাস্তে, হামানদিস্তা, শিলনােড়া, জাঁতা, বাটালি, হাতুড়ি প্রভৃতি কৃষি উপযােগী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করত।

Q4. নব্য প্রস্তর যুগের প্রধান আবিষ্কার কি

Ans – নব্য প্রস্তর যুগের অন্যতম প্রধান আবিষ্কার হল চাকার আবিষ্কার। এই আবিষ্কার তৎকালীন মানুষের জীবনে বিরাট পরিবর্তন নিয়ে আসে। প্রথমদিকে মাটির বাসনপত্র তৈরির জন্যই চাকার ব্যবহৃত হয়। পরে গাড়ি, রথ, সুতোকাটা প্রভৃতি বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হতে থাকে।

Q5. নব্য প্রস্তর যুগে ভারতে কোন ধাতুর ব্যবহার প্রচলিত ছিল

Ans – নব্য প্রস্তর যুগের শেষে মানুষ ধাতুর ব্যবহার শুরু করে। তারা সর্বপ্রথম তামা এবং এর কিছুকাল পর ব্রোঞ্জ ধাতুর ব্যবহার শেখে। তাই নব্য প্রস্তর যুগের পরবর্তী সময় কাল হলো তাম্র প্রস্তর যুগ। 

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।