বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি কবিতা, বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি কবিতার প্রশ্ন উত্তর

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি কবিতা, বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি কবিতা Lyrics, Banglar Mukh Kobita

বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ
খুঁজিতে যাই না আর : অন্ধকারে জেগে উঠে ডুমুরের গাছে
চেয়ে দেখি ছাতার মতো ব্ড় পাতাটির নিচে বসে আছে
ভোরের দয়েলপাখি – চারিদিকে চেয়ে দেখি পল্লবের স্তূপ
জাম-বট-কাঁঠালের-হিজলের-অশথের করে আছে চুপ;
ফণীমনসার ঝোপে শটিবনে তাহাদের ছায়া পড়িয়াছে;
মধুকর ডিঙা থেকে না জানি সে কবে চাঁদ চম্পার কাছে
এমনই হিজল-বট-তমালের নীল ছায়া বাংলার অপরূপ রূপ

দেখেছিল; বেহুলাও একদিন গাঙুড়ের জলে ভেলা নিয়ে –
কৃষ্ণা-দ্বাদশীর জোৎস্না যখন মরিয়া গেছে নদীর চড়ায় –
সোনালি ধানের পাশে অসংখ্য অশ্বত্থ বট দেখেছিল, হায়,
শ্যামার নরম গান শুনেছিল – একদিন অমরায় গিয়ে
ছিন্ন খঞ্জনার মতো যখন সে নেচেছিল ইন্দ্রের সভায়
বাংলার নদ-নদী-ভাঁটফুল ঘুঙুরের মতো তার কেঁদেছিল পায়।

বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি কবিতার মূলভাব, বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি কবিতার সারমর্ম

কবি বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের মধ্যে বিশ্বের রুপ দেখতে পেয়েছেন। তাই পৃথিবীর রূপ-বৈচিত্রের প্রতি তার কোন মােহ নেই। ভােরের অন্ধকারে জেগে উঠে তিনি দেখেছেন, ডুমুরের বড়াে পাতা যেন ছাতার মতাে বিছিয়ে রয়েছে, আর তার নিচে বসে আছে ভােরের দোয়েল পাখি। এ যেন তার শান্তির নীড়। জাম, বট, কাঠাল, হিজল, অশ্বথ গাছের দল নীরবে সে দিকে তাকিয়ে আছে। ফণীমনসার ঝোপে, শটিবনে তাদের ছায়া পড়েছে। কবির মানসলােকে ফুটে উঠেছে অতীতকালের এক ছবি।

তাঁর মনে হয়েছে চম্পক নগরের চাদ সদাগর যখন তাঁর সাতটি মধুকর ডিঙা নিয়ে বাজি করতে যেতেন, তখন বাংলার এই স্নিগ্ধ সৌন্দর্য্য তাঁর চিত্তে এনে দিত গভীর প্রশান্তি। আবার যেদিন গভীর অন্ধকার রাতে বেহুলা মৃত স্বামী লখীন্দরকে ভেলায় ভাসিয়ে গাঙুড়ের জলে চলেছিল, সেদিন কৃষ্ণা দ্বাদশীর স্নান জ্যোৎস্নায় সােনালি ধানের পাশে এমনই অসংখ্য বটগাছ দেখেছিল। শ্যামা পাখির নরম গান শুনে তার চিত্ত বেদনার্ত হয়েছিল। তারপর একদিন ইন্দ্রের সভায় গিয়ে ছিন্ন খঞ্জনা পাখির মতো যখন বেহুলা নেচেছিল, তখন বাংলার নদী, মাঠ, ভাঁটফুল ঘুঙুরের মতাে তার দুঃখে কাতর হয়ে তার পায়ে পায়ে কেঁদে উঠেছিল।

বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি কবিতার ব্যাখ্যা

প্রকৃতিপ্রেমী কবি জীবনানন্দ দাশ তাঁর কবিতারাজির মধ্যে বাংলার পল্লী প্রকৃতির অপরূপ সব ছবি সাজিয়ে তুলেছেন। তাঁর কবিতার মধ্যে গ্রাম বাংলা এক অনন্য মহিমায় উন্নীত হয়েছে। পৃথিবীর সব সৌন্দর্য তিনি বাংলাদেশের মধ্যেই খুঁজে পেয়েছেন। বাংলার প্রকৃতি তাঁকে এতটাই মুগ্ধ করেছে যে তিনি আর পৃথিবীর অন্যত্র বিচরণ করতে রাজি নন।

তিনি বাংলাদেশের বাইরের পৃথিবী সম্বন্ধে অজ্ঞাত ছিলেন না বরং বাংলাদেশের মধ্যেই পৃথিবীর সমস্ত সৌন্দর্যের কারুকার্য লক্ষ্য করে নিয়ে আর বাইরের জগতের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার প্রয়োজন অনুভব করেননি। তাঁর কবিতায় বর্ণিত বাংলার প্রকৃতি, বৃক্ষ-লতা, নদী, পশু-পাখি লৌকিক কাহিনি, পরিবেশ প্রভৃতি সবকিছুর মধ্য দিয়ে বাংলার শাশ্বত রূপটিই ফুটে উঠেছে। এরূপ শুধু মাত্র নৈসর্গিক নয় কবি কল্পনায় দৃষ্ট নতুনভাবে সৃষ্ট এক এক অপরূপ রূপচ্ছবি।

কবি বাংলার রূপকে কেবল মাত্র ক্ষণিকের মুগ্ধতায় প্রত্যক্ষ করেননি বরং চাঁদ সদাগর ও বেহুলার প্রসঙ্গ টেনে এনে তাতে আহবমান কালের বিশেষত্ব স্থাপন করে দিয়েছেন। কবির ধারণায় মধুকর ডিঙায় চড়ে সমুদ্র যাত্রার সময় চাঁদ সদাগর এবং কলা গাছের ভেলায় চড়ে গাঙুর নদীর জলে ভেসে চলার সময় বেহুলাও বাংলার পল্লী প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্য অবলোকন করেছিলেন।

যুগ যুগ ধরে বাংলার প্রাকৃতিক অবয়ব মনলোভা হয়ে রয়েছে, রূপ পিপাসুর তৃষ্ণা নিবারণ করে চলেছে, জীবনানন্দের বর্ণনায় এমনি ভাবে বাংলার রূপ হয়ে উঠেছে বিশ্বের রূপ ভাণ্ডার। জীবনানন্দের মতো এমনি করে আর কোনো কবি বাংলার রূপের ছটায় বিমুগ্ধ হয়ে যাননি, ফলে বাংলার রূপ বর্ণনায় আর কেউ তাঁর সমকক্ষহয়ে উঠতে পারেননি। সত্যিই এক্ষেত্রে কবি জীবনানন্দ দাশ তুলনারহিত।

বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি কবিতা কোন কাব্যগ্রন্থের

‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি’ কবিতাটি জীবনানন্দের ‘রূপসী বাংলা’ নামক কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ৩ নং কবিতা।

বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি কবিতার নামকরণের সার্থকতা

বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি কবিতাটি কবি জীবননানন্দ দাশের ‘রূপসী বাংলা কাব্য গ্রন্থের অন্তর্গত। এই কবিতাগুলি ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে কবি রচনা করেন। কবিতা গুলিতে বাংলার সঙ্গে কবির মনের বা আত্মার সম্পর্কের চিত্র ভেসে উঠেছে। কবি নিজে এই কবিতাগুলি সম্পর্কে লিখেছেন, “এরা প্রত্যেকে আলাদা-আলাদা স্বতন্ত্র সত্তার মতাে নয় কেউ, অপরপক্ষে সার্বিক বােধে এক শরীরী গ্রাম বাংলার আলুলায়িত প্রতিবেশ, প্রসূতির মতাে ব্যক্তিগত হয়েও পরিপুরকের মতাে পরস্পর নির্ভর।”

কবি বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের মধ্যে বিশ্বের রুপ দেখতে পেয়েছেন। তাই পৃথিবীর রূপ-বৈচিত্রের প্রতি তার কোন মােহ নেই। ভােরের অন্ধকারে জেগে উঠে তিনি দেখেছেন, ডুমুরের বড়াে পাতা যেন ছাতার মতাে বিছিয়ে রয়েছে, আর তার নিচে বসে আছে ভােরের দোয়েল পাখি। এ যেন তার শান্তির নীড়। জাম, বট, কাঠাল, হিজল, অশ্বথ গাছের দল নীরবে সে দিকে তাকিয়ে আছে।

ফণীমনসার ঝোপে, শটিবনে তাদের ছায়া পড়েছে। কবির মানসলােকে ফুটে উঠেছে অতীতকালের এক ছবি। তাঁর মনে হয়েছে চম্পক নগরের চাদ সদাগর যখন তাঁর সাতটি মধুকর ডিঙা নিয়ে বাজি করতে যেতেন, তখন বাংলার এই স্নিগ্ধ সৌন্দর্য্য তাঁর চিত্তে এনে দিত গভীর প্রশান্তি। আবার যেদিন গভীর অন্ধকার রাতে বেহুলা মৃত স্বামী লখীন্দরকে ভেলায় ভাসিয়ে গাঙুড়ের জলে চলেছিল, সেদিন কৃষ্ণা দ্বাদশীর স্নান জ্যোৎস্নায় সােনালি ধানের পাশে এমনই অসংখ্য বটগাছ দেখেছিল। শ্যামা পাখির নরম গান শুনে তার চিত্ত বেদনার্ত হয়েছিল।

তারপর একদিন ইন্দ্রের সভায় গিয়ে ছিন্ন খঞ্জনা পাখির মতো যখন বেহুলা নেচেছিল, তখন বাংলার নদী, মাঠ, ভাঁটফুল ঘুঙুরের মতাে তার দুঃখে কাতর হয়ে তার পায়ে পায়ে কেঁদে উঠেছিল।

আমাদের পাঠ্য জীবনানন্দ দাশের রূপসী বাংলা কবিতাটির শিরােনাম কবির দেওয়া নয়; মধ্যশিক্ষা পর্ষৎ এ নামটি দিয়েছে। মূল কাব্যগ্রন্থে কোন কবিতারই নাম নেই। কবিতাগুলি শুধুই সংখ্যা। কবিতাগুলি আবার পরস্পরের পরিপূরক এবং সকলে মিলে রূপসী বাংলাদেশের চিত্ররূপময় এক অখণ্ড সত্তাকে প্রকাশ করেছে। সেদিক থেকে বিচার করলে কাব্যগ্রন্থের যে কোন কবিতাকেই রূপসী বাংলা নাম দেওয়া যেত এবং পর্যৎ সেভাবেই এই নাম দিয়েছেন। 

 রূপসী বাংলা’ নিসর্গপ্রীতি ও দেশপ্রেমের এক অনুপম কবিতা। রােম্যান্টিক কবিরা তাঁদের জন্মভূমিকে প্রধানত জননীরূপে কল্পনা করে তার বন্দনা করে থাকেন। মা যতই দীনাহীনা হােক, সন্তানের চোখে তার যেমন একটা শ্রদ্ধার রূপ আছে। তেমনি জন্মভূমির সমস্ত তুচ্ছতা ও দীনতা সত্ত্বেও কবিরা জন্মভূমিকে স্বর্গের মত পবিত্র ভাবেন এবং ভালােবাসেন। 

রূপসী বাংলা কবিতা

 জীবনানন্দ সেই শ্রদ্ধা ও আবেগে আপ্লুত হয়ে বলেন, বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ/খুঁজিতে যাই না আর। এই হল বাংলা কবির রূপসী বাংলা। রূপসী বাংলার অজস্র রূপ কবি সমস্ত ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভােগ করেছেন, কিন্তু একদিন তাকে এই বাংলার বুক ছেড়ে মৃত্যুলােকে চলে যেতে হবে এই কথা ভেবে কবির মন হয়ে উঠেছে বেদনা বিধুর। আকাশের নরম বুক থেকে নক্ষত্র পতন এবং কুয়াশার মধ্যে রূপশালী ধানের ঝরে পড়ার মধ্যে সেই ইঙ্গিতই প্রচ্ছন্ন। অন্ধকারে কুচক্রী পেঁচা যেমন করে ইদুর ধরে খায়, তেমনি মৃত্যু একদিন কবিকে গ্রাস করবে, কিন্তু তার দুচোখ ভরে জেগে থাকবে নিষ্ঠুর মৃত্যু আর বাংলার চাদ, শূন্য মাঠ এবং শিশিরের গন্ধ। মৃত্যুর নির্দিষ্ট কোন সময় নেই; কালীদহে পদ্মের নৃল কখন ঝড়ে ভাঙে, আর চিল কখন শালিকের প্রাণ হরণ করে, তা কবির অজানা; তবু তিনি বাংলার মাঠে-ঘাটেই মরতে চান এবং মৃত্যুর সময় যেন তার চোখে মুখে জেগে থাকে গাঙুড়ের ঢেউয়ের গন্ধ; যেন তার বুকের ওপর জেগে থাকে চিত্ররূপময়ী রূপসী বাংলা এবং কবি শুয়ে থাকতে চান ওই বাংলার বুকে অর্ধনারীশ্বরের মত একাত্ম হয়ে।

 সমস্ত কবিতাটির ভাবকেন্দ্রে আছে, রূপসী বাংলা। তারই জন্যই কবির অকুণ্ঠ ভালােবাসা এবং তাকে ছেড়ে যেতে হবে বলেই কবির মনে করুণ মৃত্যুচিন্তা। মরণের বৃন্তে এই যে অনন্ত জীবন কামনা কবিতাটির আদ্যান্তে পরিব্যাপ্ত হযে আছে, রূপসী বাংলায় তার একমাত্র উপজীব্য বিষয় তাই কবিতার নামটি সার্থক প্রসঙ্গত বলে মনে করা যায়।

বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি কবিতার প্রশ্ন উত্তর

অতি সংক্ষিপ্ত উত্তরের জন্য প্রশ্ন উত্তর

‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত?

উত্তরঃ ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি’ কবিতাটি জীবনানন্দের ‘রূপসী বাংলা’ নামক কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত।

ডুমুর গাছের পাতার নীচে কবি কোন পাখিকে বসে থাকতে দেখেছিলেন?

উত্তরঃ ডুমুর গাছের পাতার নীচে কবি দোয়েল পাখিকে বসে থাকতে দেখেছিলেন।

শ্যামা কী?

উত্তরঃ শ্যামা একজাতী পাখি।

‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি’ কবিতাটি কার রচিত?

উত্তরঃ কবি জীবনানন্দ দাশের।

কবিতাটির তাঁর কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত?

উত্তরঃ ‘রূপসী বাংলা’ নামক কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত।

কত খ্রিস্টাব্দে কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছিল?

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দে।

ফণীমনসা কী?

উত্তরঃ এক ধরনের কাঁটাযুক্ত গাছ।

খঞ্জনা কী?

উত্তরঃ এক ধরনের স্ত্রী জাতীয় পাখি।

অমরা কোথায় অবস্থিত?

উত্তরঃ অমরা স্বর্গে অবস্থিত।

(ছ) কার পায়ে বাংলার নদী মাঠ ভাঁটফুল কেঁদেছিল?

উত্তরঃ বেহুলার পায়ে বাংলার নদী মাঠ ভাঁটফুল কেঁদেছিল।

(জ) কোন তিথিতে বেহুলা অমরার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল?

উত্তরঃ কৃষ্ণা দ্বাদশী তিথিতে।

সংক্ষিপ্ত উত্তরের জন্য প্রশ্ন উত্তর

ফণী মনসার ঝোপে শটিবনে’ কীসের ছায়া পড়েছিল?

উত্তরঃ কবি অন্ধকারে জেগে উঠে ডুমুরের গাছে নীচে ভোরের দোয়েল পাখিকে বসে থাকতে দেখেছেন। কবি চারদিকে চেয়ে দেখেছেন পল্লবের স্তূপ জাম বট কাঠালের হিজলের অশম্বের গাছ। আর এই গাছগুলোর ছায়া ফণী মনসার ঝোপে শটিবনে পড়তে দেখেছেন।

“বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি” কবিতায় উল্লেখ আছে এমন অন্তত তিনটি গাছের নাম লেখো।

উত্তরঃ তিনটি গাছের নাম জামগাছ, বটগাছ, কাঠাল গাছ।

“বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি” কবিতায় উল্লেখ আছে এখন অন্তত তিনটি পাখির নাম লেখো?

উত্তরঃ বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি কবিতায় উল্লেখ আছে এমন তিনটি পাখির নাম – দোয়েল পাখি, শ্যামা পাখি আর খঞ্জনা পাখি।

কবি পৃথিবীর রূপ দেখতে আগ্রহী নন কেন?

উত্তরঃ কবি বাংলার অপরূপ, মর্মস্পর্শী এবং তৃপ্তিদায়ক নিগর্স জগৎ থেকে তাঁর রূপতৃষ্ণা মিটিয়ে নিয়েছেন তাই তিনি পৃথিবীর রূপ দেখতে আগ্রহী নন।

দোয়েল পাখিকে কবি কোথায় বসে থাকতে দেখেছিলেন তখন সময় কী ছিল?

উত্তরঃ ডুমুর গাছের বড়ো পাতাটির নীচে কবি দোয়েল পাখিকে বসে থাকতে দেখেছিলেন। তখন সময় ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন অর্থাৎ রাত্রি।

চম্পা কী?

উত্তরঃ চম্পা হল চম্পক নগর। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার একটি প্রাচীন রাজ্য। প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলার বণিক সম্প্রদায় বাণিজ্য করতে সেখানে যেতেন।

বেহুলা কোন নদী বেয়ে যাচ্ছিলেন? তাঁর গন্তব্য কোথায় ছিল?

উত্তরঃ বেহুলা গাঙুড় নদী বেয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর গন্তব্যস্থল ছিল অনির্দিষ্ট, তিনি গাঙুরের পথ বেয়ে অজানার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েছিলেন।

বেহুলা ইন্দ্রের সভায় যাত্রাকালে কার গান শুনেছিলেন? তাঁর নাচকে কার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে?

উত্তরঃ বেহুলা ইন্দ্রের সভায় যাত্রাকালে শ্যামা পাখির গান শুনেছিলেন। বেহুলার নাচকে ছিন্ন খঞ্জনার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

বেহুলার যাত্রাপথে প্রাকৃতিক দৃশ্যের পরিচয় কবির অনুসরণে লেখো।

উত্তরঃ বেহুলা তাঁর মৃত স্বামীকে নিয়ে কলা গাছের ভেলায় করে গাঙুড়ের জলে ভেসে চলার সময় কৃষ্ণা দ্বাদশীর মরা জ্যোৎস্নায় নদীর চড়ায় সোণালী ধান সহ অসংখ্য অশ্বত্থ বট প্রভৃতি বৃক্ষ দেখেছিলেন। এমনকি ইন্দ্রের সভায় নৃত্য প্রদর্শন করার সময় শ্যামার নরম গান শুনেছিলেন। সেসময় বাংলার নদী মাঠ ভাটফুল তার পায়ে ঘুঙুরের আওয়াজ তুলেছিল। গাঙুরের জলে ভেসে চলার সময় অন্ধকার ভেদ করে বাংলার অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্যরাজি বেহুলায় চোখে ধরা পড়েছিল বলে কবি কল্পনা করেছেন।

রূপসী বাংলা কবিতার রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি’ কবিতাটি অবলম্বনে কবি জীবনানন্দের প্রকৃতি প্রীতির বর্ণনা দাও।

‘রূপসী বাংলা’ কাব্যের একটি উল্লেখযোগ্য কবিতা ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি।’ কবি বাংলা, বিশেষতঃ গ্রাম বাংলার প্রকৃতি ও প্রাণীর মধ্যে দেখেছেন এক বিশিষ্ট রূপ বা সৌন্দর্য, যা তাঁকে গভীরভাবে আকৃষ্ট করেছে। যেরূপ তাঁর মনোলোকের গভীরে প্রবেশ করে তার মনকে শান্ত স্নিগ্ধ করেছে। মাত্র কয়েকটি গ্রাম্য দৃশ্যের বর্ণনার মাধ্যমে তিনি বাংলার এক নিবিড় পরিচয়কে তুলে ধরেছেন। ‘বাংলার মুখ’ প্রয়োগটি লক্ষ্যণীয়। যে কোন ব্যক্তি বা প্রাণীর অবয়বের মধ্যে মুখটিই প্রধান। মুখের দর্শনের মাধ্যমে দর্শনীয় ব্যক্তি বা বস্তুর পরিচয় ঘটে। এখানে বাংলার মুখ (অর্থাৎ অবয়ব) ফুটে উঠেছে কখনো ভোরের দোয়েল পাখির, পল্লবের স্তূপে ভোরের স্নিগ্ধ প্রকৃতিতে অবস্থানের মাধ্যমে, কখনো জাম, বট, কাঁঠাল, হিজল, অশ্বত্থ গাছের নিবিড় অবস্থানে। কবি বাংলার এই রূপ চেতনার মধ্যে বাংলার লোককথা মনসা মঙ্গল কাব্যের ধনপতি সদাগর আর বেহুলার উল্লেখের মাধ্যমে, তাকে আরো সজীব করে তুলেছেন। এইভাবে কবির বাংলার সৌন্দর্য দেখার বিশেষ মাত্রাটি ফুটে উঠেছে।

তিনি বাংলার রূপে এতোই মুগ্ধ যে পৃথিবীর রূপে তাঁর আর কোনো লোভ নেই। ভোরবেলা আধো আলো, আধো অন্ধকারে দোয়েল পাখির ডুমুরের পাতার তলে বসে থাকা, চারদিকে জাম-বট-কাঁঠাল-হিজল-অশ্বত্থের নিঃশব্দে দাঁড়িয়ে থাকা – বাংলার স্নিগ্ধ প্রকৃতিকে যেন আরও শান্ত করে তুলেছে। কবি তাঁর নিজের দেখা এই প্রকৃতির সঙ্গে চাঁদ সদাগরের বাণিজ্য যাত্রায় যাওয়ার সময় যে স্কৃতি, সেই প্রকৃতি কবির কল্পনায় একাকার হয়ে গেছে। এমনকি চাঁদ সদাগরের কনিষ্ঠ পুত্রবধূ বেহুলা যখন মৃত স্বামীর প্রাণ ফিরিয়ে আনতে গাঙুরে ভেলা ভাসিয়ে স্বর্গলোকের উদ্দেশ্য যাত্রা করেছিল, তার সেই যাত্রায় যে বিষাদ ছিল, সেই বিষাদ কবি ফুটিয়ে তুলেছেন ‘কৃষ্ণা দ্বাদশীর জ্যোৎস্না যখন মরিয়া গেছে নদীর চড়ায়’ – এই একটি পংক্তির মাধ্যমে। তার সেই যাত্রায় বাংলার অপরূপ রূপের অন্তরালে এক বিষাদের বা হৃদয় ভাঙা কান্নার ফল্গুধারা মিলে মিশে একাকার হয়ে উঠেছে কবির কল্পনায়। এমনকি স্বামীর জীবন ফিরিয়ে আনতে বেহুলাকে নৃত্য করে ইন্দ্রকে যে খুশি করতে হয়েছিল – সেই হৃদয় নিংড়ানো কান্নার পেছনে নৃত্যের ভঙ্গী লয় তালে যেন বাংলারই অপরূপ সৌন্দর্য নদী মাঠ ভাঁটফুল তার পায়ের ঘুঙুরে কান্নার রোল হয়ে বেজে উঠেছিল।

‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর –  ব্যাখ্যা করো।’

উত্তরঃ আলোচ্য কবিতাংশটি কবি জীবনানন্দ দাশের ‘রূপসী বাংলা’ নামক কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি’ শীর্ষক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। কবি এখানে বাংলার রূপ সাগরে ডুব দিয়ে নিজের রূপ তৃষ্ণা নিবারণের প্রসঙ্গ উপস্থাপন করেছেন।

কবি জীবনানন্দ দাশ ছিলেন প্রকৃতিপ্রেমী ও সৌন্দর্য পিপাসু। নিজের রূপ তৃষ্ণা নিবারণার্থে তিনি বাংলার প্রাকৃতিক উপাদানসমূহ মননশীল হৃদয়ে অবলোকন করেছেন। বাংলার প্রাকৃতিক রূপ সৌন্দর্য তাঁর হৃদয় হরণ করে নিয়েছে। আবহমান কালের বাংলার প্রকৃতি গাছপালা, কাহিনি উপখ্যান লতা-পাতা ফল-মূল সবকিছুই তাঁর চোখে অনন্য ও তুলনাতীত প্রতিপন্ন হয়েছে। বাংলার রূপ সাগরে ডুব দিয়ে তিনি এতটাই তৃপ্ত হয়েছেন যে রূপের সন্ধানে বাংলা ছেড়ে পৃথিবীর অন্যত্র বিচরণ করতে তাঁর আর প্রয়োজন নেই। পৃথিবীর রূপ বৈচিত্র সম্বন্ধে তিনি যথার্থ ভাবেই সচেতন। তবুও বাংলার রূপ মহিমা তাঁর কাছে এতটাই প্রকট যে পৃথিবীর রূপ খুঁজতে তিনি আর অন্য কোথাও যাননি। বাংলাই তাঁর কাছে পৃথিবীর সমুদয় রূপের আধার হিসাবে প্রতিপন্ন হয়েছে।

একদিন চলে যাবে তােমার সন্তান”—কে, কার সন্তান? কার নিবেদন? চলে যাওয়ার অনুভূতি যে সব চিত্রের মাধ্যমে কবি ব্যক্ত করেছেন সেগুলিকে ব্যাখ্যা কর। 

অথবা,

“কখন মরণ আসে কে জানে”—মৃত্যুর আকস্মিকতা কবি যে সব বাস্তব চিত্রে প্রতিফলিত হতে দেখেছে সেগুলির বর্ণনা দাও। দৈহিক মৃত্যুর পর কবি কোথায় কীভাবে থাকতে চেয়েছেন? 

উত্তর: রূপসী বাংলা কবিতার কবি জীবনানন্দ দাশ হলেন তার জন্মভূমি রূপসী বাংলার সন্তান। রূপসী বাংলাকে উদ্দেশ্য করে কবি জীবনানন্দ একথা নিবেদন করেছেন।

বাংলার বুক থেকে চলে যাওয়ার অর্থ পৃথিবীর বুক থেকে চিরবিদায় নেওয়া। এই শেষ বিদায় নেওয়ার অনুভূতি অর্থাৎ মৃত্যুর অনুভূতি কবি কয়েকটি প্রতীক বা চিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। এর মধ্যে কয়েকটি চিত্রকে ঠিক বাস্তব মৃত্যুর দৃশ্য বলা যায় না; এগুলি রােমান্টিক কবির রােমান্টিক মৃত্যু কল্পনা। অন্য চিত্রগুলি মৃত্যুর বাস্তব দৃশ্য,—খাদ্য-খাদকের নখে-দন্তে ওই চিত্রগুলি রক্তাক্ত।

প্রথম চিত্রগুলির অন্যতম হল আকাশের নীলাভ নরম বুক থেকে নক্ষত্রের ঝরে পড়া। রবীন্দ্রনাথ একে তারকার আত্মহত্যা বলেছেন। কিন্তু একথা কে না জানে, তারকা বা নক্ষত্রের জীবন নেই। তাই নক্ষত্রের ঝরা বা উল্কা পতনকে বাস্তব মৃত্যু বলা যায় না। তেমনি হেমন্তের কুয়াশার মধ্যে যে রূপশালী ধান ঝরে যায়, তাকে রূপময় জীবনের অবসানের সঙ্গে তুলনা করা যায়, কিন্তু বাস্তবে তাকে মৃত্যু বলা যায় না। তবে এখানে যে মৃত্যুর কল্পনা আছে, সে মৃত্যু শান্ত সুন্দর, আদৌ ভয়ঙ্কর নয়। রীতিমত রােমান্টিক।

অপরপক্ষে কবি নিজের অনিবার্য মৃত্যুর অনুষঙ্গে কতকগুলি বাস্তব মৃত্যুচিত্রও এঁকেছেন। সেগুলি হল, নিম পেঁচার ইঁদুর ধরে খাওয়া, কালীদহের ঝড়ে পদ্মের নালভাঙা, গাংচিলের নখে শালিখের প্রাণবধ প্রভৃতি। মৃত্যু যেমন অতর্কিতে এসে মানুষকে নাশ করে, তেমনি ওই সব হিংস্র পক্ষী তাদের জীবিকার জন্য অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রাণীদের হত্যা করে; কখনাে বা প্রাকৃতিক প্রচণ্ড দুর্যোগ প্রকৃতিরই সুন্দর কমনীয় জিনিসকে বিনষ্ট করে। এখানে কবি ভয়ঙ্কর মৃত্যুর কথা বলেছেন।

কিন্তু বাস্তব হােক, কাল্পনিক হােক, কবির অনুভূতিতে সব মৃত্যুচিত্রই আশ্চর্যভাবে সত্য হয়ে উঠেছে, কারণ কবির নিজের অবশ্যম্ভাবী মৃত্যু এদের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে।

কবির দৈহিক মৃত্যু হলেও কবির অনুভূতি অবিনশ্বর বলেই তিনি মনে করেছেন। কারণ তিনি কামনা করেছেন, মৃত্যুর মধ্যেও যেন রূপসী বাংলা তার সমস্ত ঐশ্বর্য ও মাধুর্য নিয়ে কবির বুকের ওপর যেন জেগে থাকে। ঠিক যেমন উমা ও মহেশ্বর একত্রে মিলিত হয়ে অর্ধনারীশ্বর মূর্তি ধারণ করেছিলেন, তেমনি কবি ওই একইরূপে তার রূপসী বাংলার সমগ্র সত্তার সঙ্গে একাত্ম হয়ে যেতে চান। এই পৌরাণিক রূপকল্পটি কবির একাত্মতার ইচ্ছাকে তীব্রতর, গভীর ও মনােজ্ঞ করে তুলেছে। 

“তবু যেন মরি আমি এই মাঠ-ঘাটের ভিতর, কার লেখা, কোন কবিতার অংশ ? যে মাঠ-ঘাটের কথা বলা হয়েছে তার বর্ণনা দাও। বক্তা সেই মাঠ-ঘাটের ভেতর মরতে চান কেন?

উত্তর :প্রশ্নোক্তৃত পঙক্তিটি রবীন্দ্রোত্তর যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি জীবনানন্দ দাশের লেখা। এটি রূপসী বাংলা কাব্যগ্রন্থের ১৯ সংখ্যক কবিতা, রূপসী বাংলা’র অংশ। 

উদ্ধৃত অংশে যে মাঠ-ঘাটের কথা বলা হয়েছে তা হচ্ছে কবির জন্মভূমি,—অবিভক্ত বাংলাদেশের মাঠ-ঘাট। এখানে আকাশের নীলাভ নরম বুকে শােভা পায় দীপ্যমান নক্ষত্র, হৈমন্তিক কুয়াশায় ঝরে পড়ে রূপশালী ধান, নিশীথের অন্ধকারে ভেসে আসে নিমপেঁচার ডাক, মেঠো ইঁদুর পাকা ফসল কুড়িয়ে গর্তে সঞ্চয় করে রাখে। এখানকার শূন্য মাঠের উপরে বাঁকা চাদ প্রহর জাগে, নিচে ঘাসের ডগায় জমে থাকা শিশিরবিন্দু থেকে পাওয়া যায় ঘ্রাণ। সংক্ষেপে,

রূপশালী ধান, নিমপেঁচা, মেঠো ইদুর, গাংচিল, শালিখ, শস্যহীন মাঠ, গাঙুড়ের ঢেউ,—এইসব চেতন ও অচেতন বস্তু ও প্রাণীদের নিয়েই কবির ‘রূপসী বাংলার মাঠ-ঘাট। এটাই কবির চোখে দেখা বাংলার রূপ।

কবি জীবনানন্দ দাশ তাঁর জন্মভূমি অবিভক্ত বাংলাদেশকে দেখেছেন মাতারূপে। স্বদেশপ্রেমিক কবির কাছে দেশের মাটিই যেন মা। যে বাংলার রূপ দেখে কবি পৃথিবীর আর কোন দেশের মুখ খুঁজতে যাননি, সেই বাংলাই কবির রূপসী বাংলা। এই রূপসী বাংলার অজস্র রূপ প্রকৃতিপ্রেমিক কবি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভােগ করেছেন, ভালােবেসেছেন।

কবি জানেন, জীবনে মৃত্যু অনিবার্য। রূপসী বাংলার নিসর্গ ও জীবজগৎ তার এতই প্রিয় যে, তিনি বাংলার বুক ছেড়ে অন্য কোথাও মরতে চান না। তার একমাত্র অভীপ্সা, তিনি যেন বাংলার মাঠে-ঘাটে অজস্র রূপ আর অনির্বচনীয় মাধুর্যের মধ্যে তার জীবনের অন্তিম শয্যা রচনা করেন। মৃত্যুর মধ্যেও কবি বঙ্গজননীর রূপ-রস-গন্ধ-ভরা সান্নিধ্য প্রাণভরে চেয়েছেন। তার একান্ত কামনা হল, রূপসী বাংলার মাঠভরা ফসল, নীলাভ আকাশ, শস্যভরা মাটির সঙ্গে তার অন্তর-যােগ যেন বিচ্ছিন্ন হয় মৃত্যুর পরেও।

আমারে কুড়ায়ে নেবে মেঠো ইদুরের মতাে মরণের ঘরে’—উদ্ধৃতিটি কোন কবির কোন্ কবিতার অংশ? আমারে’ বলতে কাকে বােঝানাে হয়েছে? কুড়ায়ে নেবে’ কথার অর্থ কী? কে কুড়ায়ে নেবে?

উত্তর: আলােচ্য অংশটি কবি জীবনানন্দের রূপসী বাংলা কবিতার একটি নির্মম করুণ উক্তি।

এখানে আমারে’ বলতে কবি নিজেকেই বুঝিয়েছেন। পারিপার্শ্বিক হত্যা ও মৃত্যুর দৃশ্য কবিকে অতিমাত্রায় মৃত্যুসচেতন করে তুলেছে।

এখানে কুড়ায়ে নেবে’কথাটির অর্থ হল গ্রাস করে নেবে; অন্ধকারে নিম পেঁচা যেমন ইঁদুরকে কুড়িয়ে নেয় বা গ্রাস করে নেয়, তেমনি মৃত্যুও অতর্কিতে এসে কবিকে গ্রাস করবে। মুমূর্ষ ইদুরের মুখে যেমন ক্ষুদের গন্ধ লেগে থাকে, অর্থাৎ তার ক্ষুদ খাবার আকাঙ্ক্ষা জড়িয়ে থাকে, তেমনি স্রিয়মান কবির মনেও জেগে থাকবে জীবনকামনা; এ জীবন কামনা অবশ্যই ইঁদুরের মত একান্তভাবে জৈবিক নয়, ক্ষুদ খাবার আকাঙ্ক্ষা নয়,—তা শূন্য মাঠ, বাঁকা চাদ, শিশিরের গন্ধের সঙ্গে জড়িয়ে থাকা সুন্দরের জন্য আকাঙ্ক্ষা।

পেঁচা রূপ মৃত্যু এসে কবিকে ইঁদুরের মত কুড়িয়ে নেবে বা গ্রাস করে নেবে। পেঁচা এখানে মৃত্যুর প্রতীক। সে কুৎসিত, ধূর্ত, কোটচারী; অতর্কিতভাবে সে দুর্বল প্রাণীদের আক্রমণ করে হত্যা করে। কবির মৃত্যু হয়তাে রূপশালী ধানের ঝরে পড়ার মত বা নক্ষত্রের পতনের মত শান্ত সহজ হবে না, সে মৃত্যু নিষ্ঠুর ভয়ঙ্কররূপে অতর্কিতে আসবে কবির জীবনে। তাই কুচক্রী পেঁচার উপমাটি বেশ লাগনসই এবং সার্থক।

রূপসী বাংলা কবিতায় কবি বাংলাকে রূপসী বলেছেন কেন? কবিতাটির প্রথম অংশে কোন্ কাল এবং দিনরাত্রির কোন সময়ের কথা বলা হয়েছে, উদ্ধৃতিসহ আলােচনা করাে। মৃত্যুর পর কবি কী ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, লেখাে।

উত্তর: ১ম অংশ : বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ/খুঁজিতে যাই না আর’—উদ্ধৃতাংশে যে বাংলার মুখের কথা কবি জীবনানন্দ দাশ বলেছে, তা হচ্ছে তার জন্মভূমি অবিভক্ত বাংলাদেশ।

উত্তরে হিমালয় থেকে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে চট্টগ্রাম থেকে পশ্চিমে সাঁওতাল পরগণা পর্যন্ত ছিল এর ভৌগােলিক সীমানা। কবির মাতৃভূমি এই নদীমাতৃক বাংলাদেশই, তার দৃষ্টিতে রূপসী বাংলা’, রূপের তিলােত্তমা। মাতৃমহিমা যেমন মাতার শুধুমাত্র স্নেহ ও দেহরূপ নয়, সন্তানের অকৃত্রিম অনুরাগই তাকে মহিয়সী করে তােলে, তেমনি জীবনানন্দও বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যই মুগ্ধ হননি, তার আন্তরিক দেশানুরাগ বাংলাকে রূপসী তিলােত্তমারূপে কল্পনা করেছে।

কবির দৃষ্টিতে বাংলাকে অপরূপ রূপসী করেছে গ্রামবাংলার প্রকৃতি। চেতন ও অচেতন বস্তু এবং সজীব প্রাণী সকলে মিলে। মাঠ-ঘাট, তামসী রাত্রে আকাশের নীলাভ নরম বুক’-এ দীপ্যমান নক্ষত্ররাজি, হেমন্তের শিশির কুয়াশা, দিকে দিকে রূপশালী ধান, অন্ধকারের মধ্যে নিমপেঁচার গান, মেঠো ইদুর, বাঁকা চাদ’-এর স্নিগ্ধ জ্যোৎস্না, দিগন্তবিস্তৃত শূন্য মাঠ, গাংচিল, শালিখ, কালীদহ, গাঙুড়ের ঢেউ কবির মনের গভীরে কল্পনার সাথী হয়েছে।

জীবনানন্দের রােমান্টিক কবিমন বাংলার প্রাচীন ইতিহাস, কাব্যগাথা, পুরাণ, রূপকথার রহস্যলােকে অভিসার করে তার অতীত সৌন্দর্যকেও খুঁজে পেতে চেয়েছে। এজন্যই রবীন্দ্রনাথের কাছে যা ‘সােনার বাংলা, জীবনানন্দের দৃষ্টিতে তা রূপসী বাংলা।

২য় অংশ : চতুর্দশপদী বা সনেটধর্মী রূপসী বাংলা কবিতায় প্রথম আটটি ছত্রে অর্থাৎ অষ্টকে কবি স্পষ্ট করে কোন ঋতু বা দিনরাত্রির কোন সময়ের কথা উল্লেখ করেননি। কিন্তু হিম, কুয়াশা, রূপশালী ধান, শিশিরের ঘ্রাণ, নক্ষত্র প্রভৃতি শব্দের উল্লেখ করে এবং ওই শব্দগুলির সাহায্যে অনিবার্য মৃত্যুর অনুষঙ্গে অঙ্কিত চিত্রগুলির মাধ্যমে কবি তার প্রিয় হেমন্তকালকে এবং বিশেষভাবে হেমন্তের রাত্রিকে যে আভাসিত করেছেন, তা নিঃসন্দেহে বলা যেতে পারে।

কুয়াশায় ঝরে পড়ে দিকে দিকে রূপশালী ধান একদিন’—মাঠে মাঠে কুয়াশায় স্বর্ণবর্ণ পাকা রূপশালী ধানের ঝরে পড়ার দৃশ্য হেমন্তকালকেই ইঙ্গিত করে। আলােচ্য কবিতায় কবি মৃত্যুর কয়েকটি প্রতীকচিত্র অঙ্কন করেছেন। এই মৃত্যুচিত্রগুলির বেশির ভাগই হেমন্তের হিমেল প্রান্তরের পটভূমিতে আঁকা। বাঁকা চাঁদ’, শূন্য মাঠ’, শিশিরের ঘ্রাণ’—এই ছত্রটিতে আভাসিত হয়েছে হেমন্ত প্রকৃতির ছবি।

‘যে ইঙ্গিতে নক্ষত্রও ঝরে/আকাশের নীলাভ নরম বুক ছেড়ে দিয়ে হিমের ভিতরে/ডুবে যায়, কবিতার অষ্টকের এই পঙক্তিগুলিতে রাত্রির প্রথম ইঙ্গিত পাওয়া যায়। দিনের আলাের গভীরে’ থাকা নক্ষত্ররাজি দেখা নয়, রাত্রির অন্ধকারেই নীলাভ আকাশের বুক থেকে নক্ষত্রপতন দেখা যায়। এবং তা ওই হেমন্তেই হয়তাে বা নিমপেঁচা অন্ধকারে গা’বে তার গান,—নিশাচর পাখি নিমপেঁচার অন্ধকারে গান গাওয়াও রাত্রির ইঙ্গিত দেয়। বাঁকা চাদ, শূন্য মাঠ, শিশিরের ঘ্রাণ’—অষ্টকের সর্বশেষ এই ছত্রে ক্ষয়িষ্ণু বাঁকা চাঁদের স্নিগ্ধ জ্যোৎস্নায় ফসল কাটা মাঠের বর্ণনা এবং শিশিরের ঘ্রাণ রাত্রিকেই বিশেষভাবে আভাসিত করেছে।

“রূপসী বাংলা যেন বুকের উপর জেগে থাকে,”লেখা এবং কোন্ কবিতার অন্তর্গত? কার বুকের উপর রূপসী বাংলার জেগে থাকার বাসনাটি ব্যক্ত হয়েছে? রূপসী বাংলার প্রতি কবি তাঁর ভালবাসা কীভাবে পরিস্ফুট করেছেন? কবি তাঁর অনিবার্য মৃত্যুকে যে কটি চিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন তার পরিচয় দাও। 

অথবা,

রূপসী বাংলা’কবিতায় কবি বাংলার প্রতি যে ভালােবাসা ব্যক্ত করেছেন, তা নিজের ভাষায় লেখাে।

উত্তর(ক): রবীন্দ্রোত্তর যুগের অসামান্য কবি জীবনানন্দ দাশের ‘রূপসী বাংলা কবিতার একটি  স্মরণীয় পঙক্তি হল এই আলােচ্য অংশটি।

কবি জীবনানন্দ নিজেই ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন, তাঁর মৃত্যুর সময়ে যেন রূপসী বাংলা তাঁর বুকের ওপর জেগে থাকে।

এই চতুর্দশপদী কবিতাটির প্রতিটি পঙক্তিতে কবি জীবনানন্দ দাশ তার মাতৃভূমি রূপসী বাংলার প্রতি জাগিয়েছেন ঐকান্তিক ভালবাসা। বাংলাদেশ কবির কাছে যেন রূপের তিলােত্তমা। তিনি সেই বাংলার মুখ দেখে পৃথিবীর আর কোন দেশের মুখ দেখতে চাননা। তা সে দেশ যতই সুন্দর হােক না কেন? কবি বাংলার অনির্বচনীয় রূপের সন্ধান করেছেন বাংলার সবুজ-শ্যামল প্রকৃতির মধ্যে, দূর নক্ষত্রলােকে, বাংলার অতীত ইতিহাসে, পুরাণ, রূপকথা এবং কাব্য-সংস্কৃতির রহস্যময়তায়। জন্মভূমির জন্য কবির এই ভালবাসা অনিবার্য মৃত্যুর বিষন্ন ছায়াপাতে কিছুটা করুণ।

কবি ভালবেসেছেন বাংলার নির্জন প্রান্তর, রূপশালী ধান। হেমন্ত ঋতুর হিমেল বিষন্নতার সঙ্গে রয়েছে কবির অন্তরের যােগ; ইদুরের মুখে ক্ষুদের গন্ধের মত তার সমগ্র সত্তায় জেগে আছে জীবন কামনা বাংলার শূন্য মাঠ এবং তার ওপর বাঁকা চাঁদ কবিকে করেছে অভিভূত। এই আশ্চর্য ইন্দ্রিয়সচেতন কবি ঘাসের ডগায় জমে থাকা শিশির বিন্দুর মধ্যে গন্ধ অনুভব করেন। জীবনে মৃত্যু অনিবার্য, তাই মৃত্যুতে তার আপত্তি নেই, কিন্তু সেই মৃত্যু যেন কবির জন্য বাংলার মাঠে-ঘাটে শয্যা রচনা করে। যমুনা নয়, মৃত্যুর সময় যেন বাংলার গাঙুড়ের ঢেউয়ের গন্ধ তার চোখে-মুখে লেগে থাকে, বুকে জেগে থাকে যেন বাংলার অজস্র রূপ,—তারই মাঝে তিনি অর্ধনারীশ্বর হয়ে শুয়ে থাকতে চান। তিনি চান, মৃত্যুর পরে তার সমগ্র সত্তা যেন মাতৃসত্তায় লীন হয়ে যায়।

জীবনানন্দের কাব্যে মৃত্যুচিন্তা তাঁর কাব্য-ভাবনার একটি অন্যতম উঠেছে 

বৈশিষ্ট্য, আর রূপসী বাংলা কাব্যে তাে প্রায় সিংহভাগ জুড়ে রয়েছে এই চিন্তা। এই বাংলার মাঠে বিশীর্ণ বটের নিচে শুয়ে র’ব’, ‘যেদিন সরিয়া যাব তােমাদের কাছ থেকে’, ‘ঘুমায়ে পড়িব আমি একদিন তােমাদের নক্ষত্রের রাতে’ ইত্যাদি বহু কবিতায় কবির এই মর্তভূমি থেকে চলে যাবার চিন্তা। আলােচ্য কবিতায় কতকগুলি প্রতীকের সাহায্যে কবি এই সত্যটিকে নির্মমভাবে প্রকাশ করেছেন। আকাশ থেকে নক্ষত্রের ঝরে পড়া, হৈমন্তিক কুয়াশায় রূপশালী ধানের ঝরে পড়া, অন্ধকারে পেঁচার ইঁদুর-ধরা, এসব চিত্রের মধ্যে মৃত্যুর অনিবার্যতার চেতনা প্রকাশিত হয়েছে।

ঝড়ে কালীদহের কমলের নাল-ভাঙা, গাংচিলের শালিক ধরা,—এই দুটি চিত্রের মধ্যে পাই মৃত্যুর আকস্মিকতার অনুভব। সব চিত্রই মৃত্যুকবলিত জীবনের কারুণ্যকে প্রকাশ করেছে। এখানে কুয়াশা, পেঁচা, নক্ষত্র, ধান, ইঁদুর, পদ্মের নাল, শালিক মৃত্যুর এবং জীবনের প্রতীকরূপে কল্পিত হয়েছে। রূপসী বাংলাকে ছেড়ে যেতে হবে বলেই কবির পক্ষে মৃত্যু যেমন অত্যন্ত করুণ হয়ে উঠেছে, তেমনি মরণের বৃন্তে জীবনের ফুল হয়েছে শতদলে বিকশিত; অর্থাৎ কবির জীবনকামনা উৎসারিত হয়েছে। শতধারায়; এ কামনা রূপসী বাংলার রূপ দেখার কামনা; তাই রূপসী বাংলা কবির চোখে হয়ে উঠেছে রূপের তিলােত্তমা।

“তারি নিচে শুয়ে থাকি যেন আমি অর্ধনারীশ্বর।”—এ কামনা কার? কার নিচে কবি শুয়ে থাকতে চেয়েছেন? অর্ধনারীশ্বর শব্দটির অর্থ বুঝিয়ে দাও। 

উত্তর: এই ঐকান্তিক কামনা প্রকাশ করেছেন রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ। মৃত্যুর মধ্যেও কবি বঙ্গজননীর রূপ-রস-গন্ধ-ভরা সান্নিধ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হতে চাননি; তাই তিনি এরকম কামনা করেছেন।

 তিলােত্তমা বাংলার অজস্র রূপ আর অনির্বচনীয় মাধুর্যের মধ্যে কবি তাঁর জীবনের অন্তিম শয্যা রচনা করতে চেয়েছেন। বাংলাকে ভালােবেসে তিনি মরণের মাঝেও বাংলা প্রকৃতির কোলে শান্তি পেতে চেয়েছেন।

 অর্ধনারীশ্বর’ কথাটির মধ্যে আছে একটি পৌরাণিক অনুষঙ্গ। শিব ও পার্বতীর পরস্পরের মিলনের ফলে যে অপূর্বসুন্দর একটি মূর্তি রচিত হয়, তাকে বলা হয়েছে অর্ধনারীশ্বর। এই সমগ্র মূর্তিটির অর্ধাংশ পুরুষ এবং অর্ধাংশ নারী। কবি জীবনানন্দও মৃত্যুর মাঝে রূপসী বাংলার সঙ্গে একাত্ম হয়ে যেতে চান; তখন বাংলার প্রকৃতি ও কবিসত্তা মিলে যা পাওয়া যাবে তা হল অর্ধনারীশ্বরের অনুভূতি। এই চিত্রকল্পটির মধ্যে কবির প্রকৃতিপ্রেম এবং রােমান্টিক অনুভূতির চরম প্রকাশ ঘটেছে।

বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি কবিতা pdf

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি কবিতা

Q1. বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি কবিতার শিল্পরূপ

Ans – ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি’ কবিতায় বাংলার রূপ ধ্যান করতে গিয়ে কবি বাংলার বিশেষতঃ গ্রাম বাংলার প্রকৃতি ও প্রাণীর মধ্যে দেখেছেন। এক বিশিষ্ট রূপ বা সৌন্দর্য, যা তাঁকে গভীরভাবে আকৃষ্ট করেছে। মাত্র কয়েকটি গ্রাম্য দৃশ্যের বর্ণনার মাধ্যমে তিনি বাংলার এক নিবিড় পরিচয়কে তুলে ধরেছেন। ‘বাংলার মুখ’ প্রয়োগটি লক্ষণীয়। যে কোন ব্যক্তি বা প্রাণীর অবয়বের মুখটিই প্রধান। মুখের দর্শনের মাধ্যমে দর্শনীয় ব্যক্তি বা বস্তুর পরিচয় ঘটে। এখানে বাংলার মুখ ফুটে উঠেছে কখনো ভোরের দোয়েল পাখির, পল্লবেরর স্তূপে ভোরের স্নিগ্ধ প্রকৃতিতে অবস্থানের মাধ্যমে কখনো জাম, বট, কাঁঠাল, হিজল, অশ্বত্থ গাছের নিবিড় অবস্থানে। কবি বাংলার এই রূপ চেতনার মধ্যে বাংলার লোককথা মনসা মঙ্গল কাব্যের ধনপতি সদাগর আর বেহুলার উল্লেখের মাধ্যমে তাকে আরো সজীব করে তুলেছেন। এইভাবে কবির বাংলার সৌন্দর্য দেখার বিশেষ মাত্রাটি ফুটে উঠেছে।

Q2. বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি কবিতার কাব্য সৌন্দর্য

Ans – আলোচ্য কবিতাংশটি কবি জীবনানন্দ দাশের ‘রূপসী বাংলা’ কাব্য গ্রন্থের অন্তর্গত ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি’ নামক কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। কবি এখানে মনসা মঙ্গল কাব্যের বেহুলা প্রসঙ্গের মধ্য দিয়ে বাংলার প্রকৃতির শাশ্বত সৌন্দর্যের জয়গান করেছেন।

Q3. বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি কবিতায় কবির দেশপ্রেম

Ans – কবি জীবনানন্দের লেখা ‘বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি’ কবিতাটি থেকে নেওয়া হয়েছে। কবি বাংলার রূপের প্রতি এতোই আকৃষ্ট যে তিনি আর পৃথিবীর রূপ দেখতে চান না।
কবি বাংলার বিশেষতঃ গ্রাম বাংলার প্রকৃতি ও প্রাণীর মধ্যে দেখেছেন এক বিশিষ্ট রূপ বা সৌন্দর্য, যা তাঁকে গভীরভাবে আকৃষ্ট করেছে। যে রূপ তাঁর মনোলোকের অন্তরে প্রবেশ করে তার মনকে শান্ত স্নিগ্ধ করেছে। কবি বাংলার রূপ চেতনার মধ্যে বাংলার লোককথা মনসা মঙ্গল কাব্যের ধনপতি সদাগর আর বেহুলার উল্লেখের মাধ্যমে, তাকে আরো সজীব করে তুলেছেন, এইভাবে কবির বাংলার সৌন্দর্য দেখার বিশেষ মাত্রাটি ফুটে উঠেছে তাই কবি আর পৃথিবীর রূপ খুঁজতে যেতে চান না।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।