রূপনারানের কূলে কবিতা, রূপনারানের কূলে কবিতার প্রশ্ন উত্তর

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

রূপনারানের কূলে কবিতা, রূপনারানের কূলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

রূপ-নারানের কূলে
জেগে উঠিলাম,
জানিলাম এ জগৎ
স্বপ্ন নয়।
রক্তের অক্ষরে দেখিলাম
আপনার রূপ,
চিনিলাম আপনারে
আঘাতে আঘাতে
বেদনায় বেদনায়;
সত্য যে কঠিন,
কঠিনেরে ভালোবাসিলাম,
সে কখনো করে না বঞ্চনা।
আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা এ জীবন,
সত্যের দারুণ মূল্য লাভ করিবারে,
মৃত্যুতে সকল দেনা শোধ ক’রে দিতে।

রূপনারানের কূলে কবিতা কোন কাব্যগ্রন্থের

রূপনারানের কূলে ‘ কবিতাটি কবি রবীন্দ্রনাথের ‘ শেষ লেখা ‘ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ।

কবিতা প্রকাশিত হয় ‘আনন্দবাজার পত্রিকায়, ২৪ শ্রাবণ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দে। রবীন্দ্রনাথের লেখা ‘শেষলেখা কাব্যগ্রন্থ থেকে ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতাটি সংকলিত।

রূপনারানের কূলে কবিতার উৎস

রবীন্দ্রনাথের মহাপ্রয়াণের কিছুদিন পরে ‘শেষলেখা কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশিত হয় ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের ভাদ্র মাসে (আগস্ট- সেপ্টেম্বর ১৯৪১ খ্রি.)। এই গ্রন্থে একটি গানসহ ১৫টি কবিতা সংকলিত হয়েছে। এই গ্রন্থের না জেলার বিজ্ঞপ্তি পত্রে কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ লিখেছেন, “এই গ্রন্থের নামকরণ পিতৃদেব করিয়া যাইতে পারেন নাই। শেষলেখা-র কয়েকটি কবিতা তাঁহার স্বহস্তলিখিত, অনেকগুলি শয্যাশায়ী অবস্থায় মুখে মুখে রচিত, নিকটে যাঁহারা থাকিতেন তাঁহারা সেইগুলি লিখিয়া লইতেন, পরে তিনি সেইগুলি সংশােধন করিয়া মুদ্রণের অনুমতি দিতেন।

রূপনারানের কূলে কবিতার প্রেক্ষাপট

পাঠ্য ‘ রূপনারানের কূলে ‘ কবিতাটি কবি রবীন্দ্রনাথ । ঠাকুরের জীবনের প্রান্তবেলার রচনা । ‘ রূপনারানের কূলে ‘ বলতে কবি আসলে প্রবহমান এই রূপময় পৃথিবীকে বোঝাতে চেয়েছেন ।

‘রূপনারানের কূলে’ কবিতাটি ‘শেষলেখা কাব্যগ্রন্থের ১১ নং কবিতা। এটি রচিত হয়েছিল ৩০ বৈশাখ, ১৩৪৮ (১৩ মে চকাে ১৯৪১ খ্রি) বঙ্গাব্দে। শান্তিনিকেতনের উদয়নে কবিতাটি রচিত হয়, তখন রাত্রি ৩টে বেজে ১৫ মিনিট। ‘আলাপচারী রবীন্দ্রনাথ’ গ্রন্থে ‘রানী চন্দ লিখেছেন, ভােরবেলা গুরুদেবের ঘরে ঢুকে দেখি তিনি তখনাে ঘুমুচ্ছেন, তাঁর বিছানার পাশে একখানি ছােটো কাগজে লেখা আছে, কয়েক লাইন কবিতা। শেষরাত্রে গুরুদেব বলেছেন কাছে যিনি ছিলেন লিখি রেখেছেন : রূপনারানের কূলে……ভালােবাসিলাম।

রূপনারানের কূলে কবিতার নামকরণ, রূপনারানের কূলে কবিতার নামকরণের সার্থকতা

কবি রূপনারানের কূলে জেগে উঠলেন। এ জগৎ স্বপ্ন নয়, তিনি জানলেন। দেখলেন রক্তের অক্ষরে তাঁর আপনার রূপ লেখা। আঘাত আর. বেদনার মাঝে তিনি নিজেকে চিনলেন। সত্য কঠিন। কবি সেই কঠিনকে ভালােবাসলেন। দুঃখের মধ্য দিয়ে যে সিদ্ধিলাভ ঘটে, তা কখনও বঞ্চনা করে না। জীবনভর দুঃখের তপস্যা চলে। দুঃখের তপস্যায়, সত্যের দারুণ মূল্য দিয়ে জীবনের সকল দেনা শােধ করে কবি মৃত্যুর হাতে নিজেকে নিশ্চিন্তে সমর্পণ করে দিতে প্রয়াসী।

‘ রূপনারানের কূলে ‘ কবিতায় এক সত্যদ্রষ্টা কবি রবীন্দ্রনাথ । ঠাকুরের আত্মজিজ্ঞাসার আশ্চর্য অভিব্যক্তি প্রকাশ পেয়েছে । মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়ে তিনি যেন জগৎ ও জীবনের সারাৎসার উপলব্ধি করতে চেয়েছেন । স্বপ্নের মায়াচ্ছন্নতা ত্যাগ করে তিনি রূপনারানের কুলে চোখ মেলে দেখেছেন ‘ আপনার রূপ ‘ । সুদীর্ঘ জীবনের যন্ত্রণা , বেদনা , আঘাত ও আলোড়নের রক্তাক্ত বাস্তবিকতায় নিজেকে খুঁজে পেয়েই তাঁর মনে হয়েছে , এ জগৎ স্বপ্ন নয় ‘ । আসলে স্বপ্ন তো বিভ্রম তৈরি করে । স্বপ্নের কুলেহিকায় অস্পষ্ট হয়ে যায় জীবনের স্বরূপ । কিন্তু তার যথাযথ পরিচয় ফুটে ওঠে , সত্যের নির্মমতায় ও কঠিন বিস্তারে । তাই তো কবি মনে করেন , এ জীবন দুঃখের তপস্যামাত্র । কারণ দুঃখের রুক্ষ পথেই মানুষ সত্যের দারুণ মূল্য অর্জন করতে পারে । সমস্ত ক্লান্তি – হতাশা – যন্ত্রণাকে অতিক্রম করে জীবনকে সত্যের ভিত্তিভূমিতে প্রতিষ্ঠিত করতে হয় । তখনই স্বপ্নের মায়া – অন্ধকার কেটে ‘ সত্তার নূতন আবির্ভাব ঘটে । ‘ এভাবে নিজের অন্তরের চেতনায় জীবনসত্যকে অর্জন করলে , আত্মিক সংকট থেকে মুক্তি ঘটে । 

জীবনোপলব্ধি স্বপ্নের বিপরীতে কঠিন সত্য কবি রবীন্দ্রনাথ সত্যকে কঠিন জেনেও , সেই কঠিনকেই ভালোবেসেছেন । কারণ ঘুম স্বপ্ন এবং মায়ার ‘ তিমির দুয়ার ‘ ভেদ করে , বিশ্বজগৎকে স্পষ্ট ও প্রত্যক্ষ রূপে উপলব্ধি করাতেই মানবজীবনের সার্থকতা ।

রূপনারানের কূলে কবিতা বিষয়বস্তু, রূপনারানের কূলে কবিতার বিষয়বস্তু, রূপনারানের কূলে কবিতার সারাংশ, রূপনারানের কূলে কবিতা সারসংক্ষেপ

“শেষ লেখা” কাব্যের 11 সংখ্যক “রূপনারানের কূলে” কবিতাটিতে জীবনের প্রান্তসীমায় উপনীত রবি কবির জগত ও জীবন সম্পর্কে সুগভীর বোধ এবং সুতীব্র মর্ত্যপ্রীতির  অস্তরাগ ছড়িয়ে পড়েছে। স্বপ্ন ও কল্পনার মায়া আবরণ কে দূরে সরিয়ে রবীন্দ্রনাথ এখানে যে জীবনকে দেখেছেন তা আঘাত ও সংঘাতময়। দুঃখ- যন্ত্রণা, হতাশা ও দ্বন্দ্ব-সংঘাতের মধ্য দিয়েই জীবনের যথার্থ পরিচয় পাওয়া যায়। কল্পনার কোমল ভূমিতে মধুরতা দিতে পারে স্বপ্ন। আবেশে দুলিয়ে দিতে পারে মন। দিতে পারে সব পেয়েছির দেশের সন্ধান।হয়তো  দিতে পারে রূপকথার সোনার কাঠির ছোঁয়া। কিন্তু সে তো ক্ষণিক এবং মিথ্যা। স্বপ্নভঙ্গের প্রথম মুহুর্ত যে কি ভীষণ ভয়াবহ হয়ে ওঠে তা আমাদের অজানা নয়।

কিন্তু কবির মতে জীবনের পথ ফুল বিছানো নয় বরং তা কাটায় আকীর্ণ। সেই কাঁটা মাড়িয়ে জীবনের সত্যকে সঞ্চয় করে নিতে হয়। তা কঠিন এবং কষ্টকর হলেও বঞ্চনার বস্তু নয়। কবির  অনুভূতিতে- “সত্য কঠিন। অনেক দুঃখ, দাবি নিয়ে আসে। স্বপ্নে তা তো থাকেনা। কিন্তু তবুও আমরা সেই কঠিন কেই ভালবাসি”। (রানিচন্দ কে বলা কথায়) কারণ তা আমাদের ঠকায় না। বাস্তবের এক সুতোয় বাধা-

“সে কখনো করে না বঞ্চনা”।

কবি ও স্বপ্নময়তা থেকে ফিরেছেন বাস্তব চেতনালোকে। কারণ সত্যের মুখোমুখি দাঁড়ানোর মধ্য দিয়েই মানবজীবন সার্থকতা পায়। জীবন হয়ে ওঠে কর্মময় ও গতি মুখর। সুখ-বিলাস বৈভবে মত্ত থেকে জীবনের প্রকৃত স্বরূপ কে জানা যায় না। সত্যের মধ্যেই আছে কোমল, কঠোর সবকিছুই। সাহস ভরে তাকে বরণ করে নিতে হবে। দুঃসহ তপস্যার মধ্যে দিয়ে সত্যের দারুন মূল্য লাভ করা যায়।

এ জগত এবং জীবনের কাছে মানবসমাজ চিরঋণী কারণ তার কাছে থেকে দিয়েছি যা নিয়েছি তার বেশি। জগৎ ও জীবনের কাছে যেমন আমাদের প্রত্যাশা আছে তেমনি চেতনাসমৃদ্ধ মানবের কাছে জীবনের প্রত্যাশা ও  দাবি আছে। দুঃসহকে  সহ্য করে, কঠিন কে ভালবেসে, মৃত্যুর মধ্য দিয়ে জগৎ ও জীবনের সকল দাবী শোধ করে দিতে হয়। কবির সুদীর্ঘ  জীবনলব্ধ  এই চরম অভিজ্ঞতাই প্রকাশ পেয়েছে। কবিতাটি ও সার্থক হয়ে উঠেছে।

রূপনারানের কূলে কবিতার প্রশ্ন উত্তর, রূপনারানের কূলে কবিতা প্রশ্ন উত্তর, রূপনারানের কূলে কবিতার প্রশ্ন উত্তর 2023

রূপনারানের কূলে কবিতা MCQ, রূপনারানের কূলে MCQ

“ চিনিলাম আপনারে ” – রবীন্দ্রনাথ যেভাবে নিজেকে চিনেছেন –

(ক) আঘাতে ও বেদনায় 

(খ) আঘাতে আঘাতে বেদনায়। 

(গ) আঘাত ও বেদনায়। 

(ঘ) আঘাতে আঘাতে বেদনায় বেদনায়। 

Ans. (ক) আঘাতে ও বেদনায়

‘ এ জীবন ’ হলাে— 

(ক) দুঃখের তপস্যা 

(খ) আমৃত্যু তপস্যা 

(গ) আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা 

(ঘ) তপস্যা। 

Ans. (গ) আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা

রূপনারানের কূলে ’ কবিতায় জীবন নিয়ে যে পঙক্তিটি আছে-

(ক) জানিলাম এ জীবন স্বপ্ন নয় 

(খ) আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা এ জীবন। 

(গ) কঠিন সত্যকে জানিলাম এ জীবনে 

(ঘ) কোনােটিই নয়। 

Ans. (খ) আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা এ জীবন।

“ সে কখনাে করে না ___________ ।” 

(ক) বিভ্রান্ত 

(খ) বঞ্চনা 

(গ) আশাহত 

(ঘ) মােহগ্রস্ত। 

Ans. (খ) বঞ্চনা

রক্তের অক্ষরে কবি কী দেখেছিলেন ? 

(ক) আপনার রূপ 

(খ) শহিদের আত্মদান 

(গ) শােষকের অত্যাচার। 

(ঘ) সম্প্রীতির চেহারা। 

Ans. (ক) আপনার রূপ

রূপনারানের কূলে ’ কবিতাটি যে কাব্যের অন্তর্গত

(ক) শেষ সপ্তক 

(খ) শেষলেখা 

(গ) মানসী 

(ঘ) মহুয়া।

Ans. (খ) শেষলেখা

রক্তের অক্ষরে কবি কী দেখেছিলেন?

(ক) আপনার রূপ

(খ) শহিদের আত্মদান 

(গ) শোষকের অত্যাচার 

(ঘ) সম্প্রীতির চেহারা

Ans. (ক) আপনার রূপ

‘রূপনারানের কূলে’ কবিতাটি যে কাব্যের অন্তর্গত

(ক) শেষ সপ্তক 

(খ) শেষলেখা

(গ) মানসী 

(ঘ) মহুয়া

Ans. (খ) শেষলেখা

‘এ জীবন’ হলো—

(ক) দুঃখের তপস্যা 

(খ) আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা 

(গ) আমৃত্যু তপস্যা 

(ঘ) তপস্যা

Ans. (খ) আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা

‘রূপনারানের কূলে’ কবিতায় জীবন নিয়ে যে পঙক্তিটি আছে

(ক) জানিলাম এ জীবন স্বপ্ন নয় 

(খ) আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা এ জীবন 

(গ) কঠিন সত্যকে জানিলাম এ জীবনে 

(ঘ) কোনোটিই নয়

Ans. (খ) আমৃত্যুর দুঃখের তপস্যা এ জীবন

“চিনিলাম আপনারে” – রবীন্দ্রনাথ যেভাবে নিজেকে চিনেছেন

(ক) আঘাতে ও বেদনায় 

(খ) আঘাতে আঘাতে বেদনায় 

(গ) আঘাত ও বেদনায় 

(ঘ) আঘাতে আঘাতে বেদনায় বেদনায়

Ans. (ঘ) আঘাতে আঘাতে বেদনায় বেদনায়

“সে কখনো করে না _________।”

(ক) বিভ্রান্ত 

(খ) বঞ্চনা 

(গ) আশাহত 

(ঘ) মোহগ্রস্ত

Ans. (খ) বঞ্চনা

“সে কখনো করে না বঞ্চনা” –‘সে’ হলো

(ক) মৃত্যু 

(খ) সত্য 

(গ) কঠিন সত্য 

(ঘ) কঠিন মিথ্যা

Ans. (গ) কঠিন সত্য

‘রূপনারানের কূলে’ কবিতায় কবি ভালোবেসেছেন

(ক) কঠিনকে 

(খ) সত্যকে 

(গ) নিজেকে 

(ঘ) কঠিন সত্যকে

Ans. (ঘ) কঠিন সত্যকে

“সত্যের দারুণ মূল্য লাভ করিবারে…” তারপর কবি যা করবেন

(ক) সকল দেনা শোধ করে দেবেন 

(খ) মৃত্যুবরণ করবেন 

(গ) মৃত্যুর মাধ্যমে সকল দেনা বা সত্যের দারুণ মূল্য শোধ করে দেবেন 

(ঘ) নতুন করে জন্মাবেন

Ans. (গ) মৃত্যুর মাধ্যমে সকল দেনা বা সত্যের দারুণ মূল্য শোধ করে দেবেন

“কঠিনেরে ভালোবাসিলাম” – যিনি ভালোবাসেন

(ক) নীরেন্দ্রনাথ 

(খ) জগদীশচন্দ্র 

(গ) দ্বিজেন্দ্রনাথ 

(ঘ) রবীন্দ্রনাথ

Ans. (ঘ) রবীন্দ্রনাথ

“জানিলাম এ জগৎ স্বপ্ন নয়” – যিনি জানলেন

(ক) রানি চন্দ 

(খ) রবীন্দ্রনাথ 

(গ) অবনীন্দ্রনাথ 

(ঘ) রথীন্দ্রনাথ

Ans. (খ) রবীন্দ্রনাথ

আরো পড়তে: ছোটদের জন্য একুশের কবিতা, একুশের কবিতা প্রশ্ন উত্তর

রূপনারানের কূলে কবিতার ছোট প্রশ্ন উত্তর

রুপনাৱানের কুলে’ কবিতাটি কোন্ কবির জীবনের কোন পর্বেৱ ৱচনা?

উ: ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতাটি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনের অন্তিম পর্বে মৃত্যুর কিছুদিন আগের রচনা।

রূপনাৱানেৱ কূলে’ কবিতাটি কোথায়, কোন সময়ে রচিত হয়?

উ: ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতাটি শান্তিনিকেতনের উদয়নে ৩০ বৈশাখ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দে (১৩ মে ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে) রাত্রি ৩টে ১৫ মিনিটে রচিত হয়।

রূপনাৱানেৱ কূলে’ কবিতাটি কার লেখা, কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে?

উ: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘শেষলেখা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে ‘রূপনারানের কূলে’ কবিতাটি নেওয়া হয়েছে।

পনাৱানের কূলে জেগে উঠে কবি কী জানলেন?

উ: রূপনারানের কূলে জেগে উঠে কবি জানলেন, এ জগৎ স্বপ্ন নয়।

কবি রক্তের অক্ষৱে কী দেখলেন?

উ: কবি রক্তের অক্ষরে দেখলেন আপনার রূপ।

কবি নিজেকে কীভাবে চিনলেন?

উ: কবি নিজেকে চিনলেন আঘাতে আঘাতে, বেদনায় বেদনায়।

কবিৱ কী উপলা হল এবং তাৱ ফলই বা কী হল?

উ: কবির উপলব্ধি হল যে, সত্য কঠিন এবং তার ফল হল যে, কবি কঠিন সত্যকে ভালােবাসলেন।

কবি উপলব্ধিজাত কঠিন সত্যকে ভালােবাসলেন, কেন?

উ: কবি উপলব্ধিজাত কঠিন সত্যকে ভালােবাসলেন, কারণ সে কখনও বঞ্চনা করে না।

কবিৱ এ জীবন কী বলে মনে হল?

উ: কবির এ জীবন আমৃত্যু দুঃখের তপস্যার সিদ্ধি বলে মনে হল।

কবির মৃত্যুতে সকল দেনা শােধ করে দেওয়ার অভিপ্রায় কেন?

উ: কবির মৃত্যুতে সকল দেনা শােধ করে দেওয়ার অভিপ্রায় এজন্য যে, তাতে তিনি সত্যের দারুণ মূল্য লাভ করবেন।

রূপনাৱানেৱ কূলে কবিতায় মৃত্যুতে সকল দেনা কীভাবে শােধ করা সম্ভব বলে কবি মনে করেছিলেন?

উ: জীবনভর দুঃখের যে তপস্যা চলেছে তাতে সত্যের দারুণ মূল্য দিয়ে জীবনের সকল দেনা চুকিয়ে মৃত্যুতে নিজেকে সমর্পণে প্রয়াসী হয়েছেন কবি রবীন্দ্রনাথ।

“কঠিনেরে ভালােবাসিলাম’—কবি কেন ‘কঠিন’কে ভালােবাসলেন?

উ: অনেক দুঃখ, আঘাত ও বেদনাময় তপস্যায় উত্তীর্ণ উপলদ্ধিজাত সত্য হল ভয়ানক কঠিন। কবি সেই কঠিনকে ভালােবাসলেন কঠিনকে ভালােবাসার কারণ এই।

রূপনারানের কূলে কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর 2023, রূপনারানের কূলে কবিতা বড়ো প্রশ্ন উত্তর

রূপনারানের কূলে জেগে উঠিলাম, রূপনারানের কূলে জেগে উঠে কবি কী জানলেন

রূপনারানের কূলে ‘ কবিতার কবি ঋষিকল্প রবীন্দ্রনাথ জেগে উঠলেন । 

আলোচ্য কবিতায় কবি রূপনারানকে প্রতীকী অর্থে ব্যবহার করেছেন । তাই ‘ রূপনারান ’ শব্দটি শুধু কোনো নদীর নাম হিসেবে সীমায়িত না – থেকে , প্রবহমান পৃথিবীর উদ্ভাসিত রূপ হয়ে ফুটে ওঠে । সুদীর্ঘ জীবনপথ পরিক্রমার পর ? স্বপ্ন – কল্পনায় আত্মলীন কবি যেন জীবনপ্রান্তে উপনীত হয়ে অভিনব উপলব্ধির আলোকে সেই রুপময় জগৎ প্রত্যক্ষ করেন । কবি রবীন্দ্রনাথ স্বপ্নময় আচ্ছন্নতার জগৎকে অতিক্রম করে বাস্তব জীবনের মাঝে এসে দাঁড়ান । সেখানে দৈনন্দিন বেদনা – যন্ত্রণা হতাশা – আঘাত ও দুঃখের সঙ্গে নিত্যপরিচয়েই স্পষ্ট হয় বেঁচে থাকা ।

সেখানে প্রতিনিয়ত সাহসে ভর করে মানুষকে জীবনসত্যের সম্মুখীন হতে হয় । সত্যদ্রষ্টা কবি বুঝেছেন বাস্তব সত্য বড়ো কঠিন ; সে অনেক দুঃখ ও A দাবি নিয়ে সমস্ত কিছুকে আমাদের চোখের সামনে মেলে ধরে । তাই প্রকৃত সত্য কখনও মানুষের সঙ্গে বঞ্চনা করে না । মায়ার আড়াল ভেঙে দুঃখের শিক্ষায় সে মানুষকে পরিণত করে তোলে , কঠিনকে ভালোবাসতে শেখায় , অনুভূতির অস্পষ্ট – অন্ধকার দূর করে মানবচৈতন্যকে জাগ্রত করে । মানুষ উপলব্ধি করে বিচ্ছেদে বেদনায় রক্তক্ষরণে আলোড়িত এ জীবন , আমৃত্যু দুঃখের তপস্যা । জীবননদীর প্রান্তসীমায় দাঁড়িয়ে কবি রবীন্দ্রনাথ নবচেতনায় সঞ্জীবিত হয়ে ফেলে আসা জীবনের প্রতি দৃষ্টিপাত করেছেন । কাঙ্ক্ষিত সত্যের সম্মুখীন হয়েই প্রাজ্ঞ কবি যেন জড়তার আবেশ কাটিয়ে নতুনভাবে জেগে উঠেছেন ।

রূপনারানের কূলে কবিতায় মৃত্যুতে সকল দেনা কীভাবে শোধ করা সম্ভব বলে কবি মনে করেছিলেন

উদ্ধৃত অংশটির বক্তা হলেন স্বয়ং কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর । মৃত্যুর মাধ্যমে এ জগতের সব ঋণ শোধের কথাই বলা হয়েছে । 

কবি জীবনের দীর্ঘ পথ পরিক্রমার শেষে প্রকৃত সত্যকে উপলব্ধি করেছেন । আঘাতে আঘাতে বেদনায় বেদনায় নিজেকে চিনেছেন । তিনি জেনেছেন— “ এ জগৎ স্বপ্ন নয় । ‘ দীর্ঘ জীবনে সুখ – দুঃখ , আনন্দ – বেদনার স্বরূপ চিনেছেন । জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত শুধু দুঃখের তপস্যা । এই সত্যকে তিনি জেনেছেন । সত্য কখনও কাউকে বঞ্চনা করে না । কঠিন সত্যের কাছে সবাইকে আত্মসমর্পণ করতে হয় । জীবিত অবস্থায় এই জগতের কাছ থেকে অনেক কিছু কবি গ্রহণ করেছেন , তাই তিনি জগতের কাছে ঋণী । সেই ঋণ শোধ করার সাধ থাকলেও সাধ্য কবির নেই । মহাকালের হাতে নিজেকে সমর্পণ করে দিয়ে কবি সকল ঋণ শোধ করতে চান ।

কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ রূপনারানের কূলে ‘ কবিতাটি তাঁর জীবনদর্শনের এক অসামান্য কাব্যিক প্রকাশ । ‘ রূপ – নারানের কূলে ’ জেগে ওঠার অর্থই প্রবহমান বাস্তবের ভিত্তিভূমিতে উপনীত হওয়া , যেখানে রক্তের অক্ষরে ‘ অর্থাৎ দৈনন্দিন বাস্তবতার যন্ত্রণা বেদনা ও আঘাতে ব্যক্তিজীবনে গতি ও প্রাণ আসে । এভাবেই জীবনসত্যের নির্মম এবং প্রাণবন্ত রূপ উদ্ভাসিত করে কবির জীবন হল ব্যক্তিস্বরুপকে । দুঃখের আঘাত অবিরত সহ্য করেও বেঁচে থাকা আসলে জীবনকে যথার্থ রূপে তার সত্যমূল্যে চেনার নিরন্তর প্রয়াস ছাড়া তো আর কিছুই নয় । কবি জীবনের সেই স্বধর্ম পালন করার জন্যই সত্য যে কঠিন তা উপলব্ধি করেও , সত্যকেই ভালোবেসেছেন । কারণ জীবন সম্পর্কে সমস্ত বিভ্রম দূর করে সে জগৎকে স্পষ্ট ও প্রত্যক্ষ করে তোলে । সে কখনও বঞ্চনা করে না । 

সত্যোপলব্ধির পথে নিয়ত বাধা – বিভ্রান্তি । এই সব কিছুকে দুঃখের তপস্যা দিয়ে অতিক্রম করতে হয় । তখন জীবনসায়াহ্নে উপনীত কবি শোনেন , “ সেথা সিংহদ্বারে বাজে দিন অবসানের রাগিনী / যার মূর্ছনায় মেশা এ জন্মের যা – কিছু সুন্দর , / স্পর্শ যা করেছে প্রাণ এ দীর্ঘ যাত্রাপথে / পূর্ণতার ইঙ্গিত জানায়ে । ” — মৃত্যুতে সকল দেনা শোধ হয় এভাবে জীবনের কাছে , পূর্ণতার কাছে সত্যের দাবি পুরণের মধ্য দিয়ে । একমাত্র সত্যের আশ্রয়ে ভর করেই জীবন ও মৃত্যুর বৃত্ত সম্পূর্ণ হয় ।

রূপনারানের কূলে জেগে উঠিলাম জানিলাম এ জগৎ স্বপ্ন নয়, ‘রূপনারানের কূলে’ জেগে উঠে কবি কী জানলেন?

কবি রবীন্দ্রনাথ আমৃত্যু জগৎ ও জীবনের বাস্তব রূপ উদ্‌ঘাটনে তৎপর থেকেছেন। তাই মানবপ্রেমিক, প্রকৃতি প্রেমিক কবি জগতের প্রকৃত সত্যের সন্ধানে রূপনারানের কূলে জেগে উঠে প্রত্যক্ষ করেছেন যে, ‘এ জগৎ স্বপ্ন নয়’। জগৎ সংসারের রূঢ় বাস্তবতা মর্ত্যপ্রেমিক কবির দৃষ্টিতে ধরা দিয়েছে। রবীন্দ্র মন ও মনন সদা সর্বদা সুদূরে স্পর্শ লাভের আকাঙ্ক্ষায় ছুটে বেড়িয়েছে। তাই ‘বলাকা’-র গতিতত্ত্ববাদেও সেই সুদূরপিয়াসি সত্তাটিই প্রকাশিত। যার ফলে তিনি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, সমাজ ও জীবনে সভ্যতার ধ্বজাধারী উন্নতি মানুষের বোধকে কলুষিত করছে। যার বিষময় ফল হল বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা। এই পরিস্থিতি কবি হৃদয়কে দুঃখে ভারাক্রান্ত করে তুলেছে।

সভ্যতার বর্বরোচিত রূপটি দেখে কবি উপলব্ধি করেছেন যে, জগৎ আপাতদৃষ্টিতে স্বপ্ন দিয়ে ঘেরা মনে হলেও তার প্রকৃত রূপ ভিন্ন। স্বপ্ন তো কল্পনায় গড়া যার মধ্যে বাস্তবতার আঁচ পাওয়া সম্ভব নয়। তবে স্বপ্নের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেলেই সত্যের প্রকৃত রূপটি প্রস্ফুটিত হয়ে ওঠে। কবি রবীন্দ্রনাথ তাই আবেগবর্জিত বস্তুনিষ্ঠ জগতের স্বরূপটি উন্মোচনে প্রয়াসী হয়েছেন, যেখানে জগতের যা কিছু সত্য তা-ই গ্রহণীয়। মূলত, এই কারণেই পার্থিব জগতের বস্তুনির্ভরতার সঙ্গে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে জীবনের প্রকৃত অর্থ উপলব্ধি করে সত্তা লালিত বিশ্বাসের মোহ ভেঙে কবি বলতে পেরেছেন যে, জগতের যা কিছু তা স্বপ্নিল নয়। স্বপ্নের বেড়াজাল ছিন্ন করে সত্যের আলোকরশ্মি জগতের অবক্ষয়ী রূপটি সর্বসমক্ষে তুলে ধরে মানুষের বোধকে জাগ্রত করে।তাই কবি জীবন-নদীতে অবগাহন করে জগতের সত্যানুসন্ধানে ব্রতী হতে চান।

‘রূপনারানের কূলে’ কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ জীবনসায়াহ্নে উপনীত হয়ে যা উপলদ্ধি করেছেন, তা নিজের ভাষায় লেখাে

কবির উপলব্ধি: কথামুখ : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ লেখা কাব্যগ্রন্থের ১১ সংখ্যক কবিতা ‘রূপনারানের কূলে’- তে কবি তাঁর পরিণত বয়সের জীবনদর্শনের এক অসামান্য প্রকাশ ঘটিয়েছেন।

প্রকৃতস্বরূপ : কবিতাটিতে দেখা যায়, স্বপ্নের জগৎ থেকে কবি ফিরে এসেছেন মাটি ও মানুষের টানে। আঘাতে-সংঘাতে-বেদনায় তিনি উপলদ্ধি করেছেন নিজের প্রকৃত স্বরূপ, যা প্রকৃতপক্ষে মানবচেতনার যথাযথ রূপ। মানবজীবন কল্পনাবিলাসের কোমল মাটিতে দাঁড়িয়ে থাকা কোনাে অসম্ভব বা অবাস্তবের প্রকাশ এ নয়। কঠোর সত্যের মুখােমুখি দাঁড়ানাের মধ্য দিয়েই মানবজীবন সার্থকতা লাভ করে।

দুঃখের তপস্যা : এই সত্যের স্বরূপ এটাই যে, তাতে জীবনের গতিশীলতা প্রকাশ পায়। কবির কথায় আমৃত্যু দুঃখের তপস্যা হল এই জীবন। তাকে অস্বীকার করে রঙিন স্বপ্ন কল্পনার জগতে আশ্রয় নেওয়ার মধ্যে জীবন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়টিই স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

শেষের কথা : রানি চন্দকে রবীন্দ্রনাথ এই কবিতা প্রসঙ্গে বলেছিলেন—“সত্য কঠিন—অনেক দুঃখ, দাবি নিয়ে আসে। স্বপ্নে তা তাে থাকে নাচ কিন্তু তবুও আমরা সেই কঠিনকেই ভালােবাসি। ভালােবাসি সেই কঠিনের জন্য সবকিছু দুঃসহ কাজ করতে।” এভাবেই আলােচ্য কবিতাটিতেও এই জীবনের প্রকৃত স্বরূপটি চিনে নেওয়ার কথা বলেছেন কবি। ‘রূপনারানের কূলে’ এভাবেই তিনি সত্য ও জীবনের সন্ধান করেছেন।

রূপনারানের কূলে pdf

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | রূপনারানের কূলে

Q1. রূপনারানের কূলে কবিতায় কবি সত্যকে কোন বিশেষণে ভূষিত করেন

Ans – সত্যদ্রষ্টা কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর রূপনারানের কূলে’ কবিতায় সত্যকে ‘কঠিন’ বিশেষণে ভূষিত করেছেন।

Q2. রূপনারানের কূলে জেগে ওঠার অর্থ কি

Ans – “রূপনারানের কুলে জেগে ওঠা” বলতে কবি ইঙ্গিত করেছেন জীবনের শেষপ্রান্তে উপনীত হয়ে পার্থিব জগতের মোহমুক্তি এবং আধ্যাত্মিক চেতনার উন্মেষ।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।