শব্দ দূষণ কাকে বলে, শব্দ দূষণের কারণ ও প্রতিকার

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

শব্দ দূষণ কাকে বলে

মানুষের সক্ষমতার অতিরিক্ত সুরবর্জিত কর্কশ শব্দ যা মানুষের শারীরবৃত্তীয় স্বাভাবিক কাজকর্মে বিঘ্ন ঘটায় এবং শরীর ও মনের উপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে তাকে শব্দদূষণ বলে।

অন্যভাবে বললে মানুষের সহন ক্ষমতা বা শ্রুতি সীমার অতিরিক্ত তীব্র, তীক্ষ্ণ, অবাঞ্ছিত, কর্কশ এবং বেসুরের অশ্বস্থিকর শব্দকে শব্দ দূষণ বলে।

শব্দ হলো এক প্রকার শক্তি। এই শক্তি আমাদের কানে প্রবেশ করে শ্রবণ অনুভূতি সৃষ্টি করে, এই শক্তিকে শব্দ বলা হয়।

যেমন- কোনো বস্তুতে ঘর্ষণের ফলে বায়ুতে এক ধরনের তরঙ্গ ধ্বনি সৃষ্টি হয় যা শব্দ নামে পরিচিত। পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের একটি হলো কান, যা দিয়ে আমরা শব্দ শুনি। মানুষের এই শ্রবণ ইন্দ্রিয়ের তীব্রতা ধারণ ক্ষমতার একটি নির্দিষ্ট সীমা আছে। তীব্রতা অনুসারে শ্রবণ ইন্দ্রিয়ের ধারণ ক্ষমতা দেখানো হয়েছে। যেমন-

শব্দের মাত্রা (ডেসিবল)শ্রবণ ইন্দ্রিয়ের ধারণ ক্ষমতা
১-১০সামান্য আওয়াজ 
১০-৩০খুব শান্ত পরিবেশ
৩০-৫০মোটামুটি শান্ত পরিবেশ
৫০-৭৫বিরক্তিকর নয় এমন সাধারণ আওয়াজ
৭৫-১০০বিরক্তিকর তীব্র আওয়াজ
১০০-১৩০অসহ্য আওয়াজ
১৩০-১৫০শ্রবণ যন্ত্রে ব্যথা অনুভূত হয়
১৫০ এর বেশি।শ্রবণযন্ত্রের অনুভূতি ক্ষমতা নষ্ট হয়।
শব্দের মাত্রা

উপরোক্ত ছক অনুযায়ী আমাদের শ্রবণযন্ত্রের স্বাভাবিক ধারণ ক্ষমতা ১-৭৫ ডেসিবল এর মধ্যে সীমাবদ্ধ। উক্ত মাত্রার উপরের শব্দ মানুষের জন্য ক্ষতিকর।

সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, মানুষের স্বাভাবিক শ্রবণ ক্ষমতায় ঊর্ধ্বে সৃষ্ট যে কোনো শব্দ যা স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটায় তাই হলো শব্দ দূষণ।

শব্দ দূষণের কারণ ও প্রতিকার, শব্দ দূষণের কারণ ও ফলাফল

বাজ পড়ার শব্দ এবং মেঘের গর্জন প্রভৃতি প্রাকৃতিক কারণ ছাড়া বেশিরভাগ শব্দ দূষণ মানুষের সৃষ্ট বিভিন্ন ক্রিয়ায় ঘটে। শব্দদূষণের প্রধান কারণ বা উৎসগুলি হল।

শব্দ দূষণের কারণ, শব্দ দূষণের ১০টি কারণ

শব্দ দূষণের উল্লেখযোগ্য কারণগুলো নিম্নরূপ :

১. কল-কারখানা

কল-কারখানার নির্গত বিকট শব্দ দূষণের অন্যতম কারণ। যেমন- ছাপাখানা, পাথরভাঙ্গা মেশিন, সার কারখানা ও শক্তি উৎপাদন কেন্দ্রের মেশিনের আওয়াজ।

২. দালান-কোঠা

বিশেষ করে শহরাঞ্চলে বড় বড় দালান-কোঠা নির্মাণের সময় নির্মাণ সামগ্রী প্রস্তুত, পাইলিং প্রভৃতি করার সময় বিকট আওয়াজ হয়, যা আশেপাশে ব্যাপক শব্দ দূষণ ঘটায়।

৩. যানবাহন

ট্রেন, বাস, ট্রাক, লঞ্চ, স্টিমার, জাহাজ ইত্যাদি যানবাহনের ইঞ্জিনের শব্দে দূষণ হয়। যানবাহনের হর্ণও শব্দ দূষণের অন্যতম কারণ। এছাড়া সাধারণ বিমান, জেট বিমান, যুদ্ধ বিমান প্রভৃতি তীব্র গতিতে চলার সময় যে আওয়াজ হয় তা শব্দ দূষণ ঘটায়।

৪. সাইরেন ও যুদ্ধ সামগ্রীর শব্দ

ফায়ার সার্ভিস, এম্বুলেন্স বা যুদ্ধের সময় যে সাইরেন বাজানো হয় তাও শব্দ দূষণ ঘটায়। এছাড়া গোলাবারুদ, বোমা বিস্ফোরণ, গ্রেনেড বিস্ফোরনে বিকট আওয়াজ হয়, যা শব্দ দূষণের উৎস হিসেবে কাজ করে।

৫. গান বাজনা ও বাদ্যযন্ত্র

মাইক, ক্যাসেট বা রেডিওতে উচ্চ শব্দে গান বাজানো হলে শব্দ দূষিত হয়। বাদ্যযন্ত্রের ড্রামের আওয়াজেও শব্দ দূষণ ঘটে।

৬. মেঘের গর্জন

বর্ষাকালে বৃষ্টিপাতের সাথে মেঘের গর্জন ও বজ্রপাতের ফলে বিকট আওয়াজ হয় যা শব্দ দূষণ ঘটায়।

৭. ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত

ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট কম্পন এবং আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের সৃষ্টি হয় তার ফলে শব্দ দূষণ ঘটে।

৮. পশুপাখির শব্দ

কুকুরের ঘেউ ঘেউ, কাকের কা কা, বাঘ বা সিংহের গর্জনের ফলেও শব্দ দূষণ হয়।

৯. জনসমাগম

রাজনৈতিক সভা, সমাবেশ, মিছিল, মিটিং, হাটবাজারসহ বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে অনেক মানুষের সমাগম হলে সেখানে শব্দ দূষণ ঘটে।

১০. সামাজিক অনুষ্ঠান

বেশিরভাগ সামাজিক অনুষ্ঠানে শোরগোল স্বাভাবিক বিষয় হয়ে গেছে। বিয়ে, পার্টিতে পুরো ভলিউমে গান বাজায় এবং মধ্যরাত পর্যন্ত নাচ করে, যা আশেপাশের লোকদের অবস্থাকে আরও খারাপ করে তোলে।

শব্দ দূষণের প্রতিকার

শব্দ দূষণ যেহেতু মানুষকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে তাই এ দূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। নিম্নোক্ত উপায়গুলির মাধ্যমে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।

১. যানবাহনের শব্দ নিয়ন্ত্রণ :

সকল প্রকার যানবাহনের শব্দ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। মোটরগাড়ির সাইলেন্সার পাইপ ঠিক রাখতে হবে এবং অযথা হর্ণ বাজানো যাবে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস, আদালত, হাসপাতাল প্রভৃতি এলাকায় হর্ণ বাজানো যাবে না।

২. অযথা শব্দ না করা :

হাটার সময় জুতার খট খট শব্দ না করা। অধিক কথা উচ্চস্বরে না বলা, কথা-বার্তায় নম্রতা বজায় রেখে শ্রুতিমধুর করার মাধ্যমে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

৩. রেডিও, টিভি, মাইকের ব্যবহার :

উচ্চ শব্দে রেডিও, টিভি বা মাইক ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকলে কানের পর্দা দীর্ঘকাল স্বাভাবিক থাকে।

8. বাসস্ট্যান্ড দূরে রাখা :

যেসব এলাকায় অধিক লোকের বসবাস অর্থাৎ লোকালয় থেকে বাসস্ট্যান্ড দূরে রাখতে হবে। এতে শব্দ দূষণ হ্রাস পাবে।

৫. শিল্প-কারখানার শব্দ নিয়ন্ত্রণ :

শিল্প-কারখানায় তীব্র শব্দ উৎপাদনকারী যন্ত্রপাতির প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ঘটিয়ে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এতে শব্দ দূষণ উৎসস্থলেই নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে। এছাড়া অবাঞ্ছিত শব্দ তৈরিকারী যন্ত্রপাতির উপর আচ্ছাদন ব্যবহার করেও শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

৬. আতশবাজি নিয়ন্ত্রণ :

অনেক সময় বিভিন্ন উৎসবে আতশবাজি ব্যবহার করা হয়। আতশবাজির তীব্র শব্দ নিয়ন্ত্রণের জন্য লোকালয়ে আতশবাজি ব্যবহার নিষিদ্ধ করা।

সর্বোপরি আমাদেরকে সচেতন হতে হবে। সচেতনতাই শব্দ দূষণ অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। একই সাথে আইনের যথাযথ প্রয়োগও নিশ্চিত করতে হবে।

শব্দ দূষণের প্রভাব

শব্দদূষণ মানবস্বাস্থ্যের ওপর বা মানবজীবনের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে। অত্যাধিক শব্দের ফলে মানুষের মধ্যে বিরক্তিকর উদ্রেক হয়। অনেক সময় শব্দ দূষণের ফলে মানবদেহে অস্থায়ী বা স্থায়ী শারীরিক বা মানসিক রোগ সৃষ্টি হয়। আলোচনার সুবিধার জন্য মানুষের উপর শব্দদূষণের প্রভাবকে দুটি শ্রেণীতে ভাগ করা হয়। তা হলো-

শব্দদূষণের অস্থায়ী প্রভাব

(১) কোনো কারনে উচ্চমাত্রার শব্দ মানুষের কর্ণের পর্দার সাময়িক ক্ষতি করে। এর ফলে অস্থায়ীভাবে মানুষের শ্রবণ ক্ষমতা নষ্ট হয়। দীর্ঘ সময় ৯০ ডেসিবেল শব্দের মধ্যে থাকলে আংশিক বধিরতা দেখা দেয়।

(২) দীর্ঘ সময় ধরে ১২৫ ডেসিবেল শব্দের নিকটে থাকলে কানের মধ্যে যন্ত্রণার উদ্রেক হয়।

(৩) অনেক সময় জেট বিমানের শব্দ, মাইকের আওয়াজ প্রভৃতির শব্দ শ্রবণে বাধার সৃষ্টি করে। একে মাস্কিং বলে।

শব্দ দূষণের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব

(১) শ্রবণযন্ত্রের ওপর প্রভাব: দেখা গেছে দীর্ঘদিন ১০০ ডেসিবেল শব্দের মধ্যে কাটালে বধিরতা দেখা দেয়  কারণ অনেক সময় ১০০ ডেসিবেল শব্দের ফলে অন্তকর্ণের অর্গান অফ কর্টির শ্রুতি যন্ত্রের কোষগুলি একেবারে নষ্ট হয়ে যায়। তাছাড়া অনেকক্ষেত্রে 160 ডেসিবেল মাত্রার বিকট শব্দের ফলে কানের পর্দা পর্যন্ত ছিঁড়ে যায়। সেজন্য মানুষ স্থায়ীভাবে বধির হয়ে পরে।

(২) হৃদযন্ত্রের ওপর প্রভাব: দীর্ঘস্থায়ী বিকট আওয়াজ মানুষের হৃদযন্ত্রের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। এতে হৃদস্পন্দনের গতি বেড়ে যায় বা কমে যায়। শব্দদূষণের ফলে অনেক সময় ধমনীর রক্তের চাপও বেড়ে যায়।

(৩) শ্বাসকার্যের ওপর প্রভাব: শব্দদূষণের ফলে বহু মানুষের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাসের হার পরিবর্তিত হয়। উঁচু তীব্র শব্দের প্রভাবে শ্বাসক্রিয়ার গভীরতা ও বেড়ে যায়। এবং দ্রুত প্রশ্বাস গ্রহণ ও নিঃশ্বাস ত্যাগ হয়।

(৪) মস্তিষ্কের উপর প্রভাব: যন্ত্রণাদায়ক শব্দ মানুষের স্নায়ুতন্ত্র তথা মস্তিষ্ক ও সুষুম্নাকাণ্ডকে প্রভাবিত করে। অনেক সময় স্মৃতিশক্তি হ্রাস পায়, মানসিক অবসাদ দেখা দেয়। বিকট শব্দের ফলে মাথা ধরে শরীরের বিভিন্ন প্রকার উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। তাছাড়া কারও না কারোর মধ্যে বমি ভাব ও খিচুনি ভাব দেখা দেয়। বিভিন্ন কাজে একাগ্রতা নষ্ট হয়।

(৫) চক্ষুর ওপর প্রভাব: শব্দদূষণের ফলে অনেক মানুষের দৃষ্টিশক্তির ত্রুটি লক্ষ্য করা যায়। বিভিন্ন রং এর আলো চেনার ক্ষমতা নষ্ট হয়  অনেক সময় শব্দ দূষণের ফলে চোখের তারার রন্ধের প্রসারন ঠিকমতো হয় না।

(৬) পরিবেশের ওপর প্রভাব: শব্দদূষণের ফলে বহু প্রাণী ও পাখি প্রজননে অংশ নিতে পারে না। ফলে ওই পাখি ও প্রাণীর নতুন অপত্য পৃথিবীতে আসে না। সেজন্য পরিবেশের বাস্তুরীতির ভারসাম্য বিঘ্নিত হয় এবং তার প্রভাব মানুষের মধ্যেও পড়ে।

শব্দ দূষণের ফলাফল

শব্দ দূষণের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ উভয় প্রকার প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। এটি বিরক্তিকর হওয়ার পাশাপাশি শারীরিক ও মানসিক দিক থেকে ক্ষতি করে থাকে। নিম্নে শব্দ দূষণের অন্যতম ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরা হলো।

১. বধিরতা

কানের স্বাভাবিক ধারণ ক্ষমতা ১-৭৫ ডেসিবল। এর অধিক শব্দ হলে কানের শ্রবণশক্তি ধীরে ধীরে হ্রাস পায়। দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের উচ্চ শব্দ শ্রবণ করলে বধির হয়ে যেতে পারে।

২. স্নায়ুযন্ত্র

শব্দ দূষণের ফলে স্নায়ুযন্ত্রের উপর চাপ পড়ে যা পরবর্তীতে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন- রক্তসংবহন তন্ত্র, শ্বসনতন্ত্র এবং বিভিন্ন গ্রন্থির উপর প্রভাব ফেলে।

৩. রক্তনালীর সংকোচন বৃদ্ধি

অনেক সময় তীব্র শব্দের প্রভাবে রক্তনালীর সংকোচন বৃদ্ধি পায়। ফলে হৃদপিন্ড থেকে নির্গত রক্তের পরিমাণও কমে যায়। এতে হৃদ প্রসারণের চাপ বৃদ্ধি পায় এবং হৃদযন্ত্রের কার্যকলাপও বন্ধ হতে পারে ।

৪. শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি

অধিক শব্দ দূষণযুক্ত এলাকায় বসবাস করলে শিশুদের দৈহিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে শিশু বধির হয়ে যেতে পারে এবং মানসিক বিকাশ বিঘ্ন হতে পারে।

৫. শ্বাস-প্রশ্বাস

শব্দ দূষণের ফলে শ্বাস-প্রশ্বাসের উপর প্রভাব পড়ে এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের হার অস্বাভাবিক হয়ে যেতে পারে।

৬. স্মৃতিশক্তি হ্রাস ও খিটখিটে মেজাজ

শব্দ দূষণের ফলে মানুষের স্মৃতিশক্তি হ্রাস পেতে পারে এবং মেজাজ খিটখিটে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৭. মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা

যানবাহন, নির্মাণ সাইট এবং এমনকি আমাদের বাড়িতে অত্যধিক শব্দ দূষণ মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করতে পারে।

অতি মাত্রায় শব্দ দূষণে আক্রমনাত্মক আচরণের ঘটনা, ঘুমের ব্যাঘাত, ক্রমাগত চাপ, ক্লান্তি, বিষণ্নতা, উদ্বেগ, হিস্টিরিয়া এবং উচ্চ রক্তচাপ এবং আরও গুরুতর এবং দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

৮. ঘুমের ব্যাধি

অত্যধিক উচ্চ মাত্রার শব্দ আপনার ঘুমের ধরণকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

রাতে ভালো ঘুম না হলে, আপনি সারাদিন ক্লান্তিবোধের সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। এটি অফিসের পাশাপাশি বাড়িতে আপনার কর্মক্ষমতা প্রভাবিত করবে।

৯. কার্ডিওভাসকুলার সমস্যা

রক্তচাপের মাত্রা, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ এবং স্ট্রেস সংক্রান্ত হার্টের সমস্যা বাড়ছে।

গবেষণায় দেখা গেছে যে উচ্চ-তীব্রতার শব্দ উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টি করে এবং হৃদস্পন্দনের হার বৃদ্ধি করে। কারণ এটি স্বাভাবিক রক্ত ​​​​প্রবাহকে ব্যাহত করে।

১০. বন্যপ্রাণীর উপর প্রভাব

শব্দ দূষণের কারণে বন্যপ্রাণীরা মানুষের চেয়ে অনেক বেশি সমস্যার সম্মুখীন হয় কারণ তারা শব্দের ওপর বেশি নির্ভরশীল।

বায়োলজি লেটার্সে প্রকাশিত একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে মানুষের সৃষ্ট শব্দ বিভিন্ন প্রাণীকে প্রভাবিত করে।

উপরিউক্ত প্রভাবগুলো ছাড়াও অধিক মাত্রায় শব্দ দূষণের ফলে ঘুম কমে যাওয়া, মাথা ঝিমঝিম করা, বমিভাব হওয়া, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, পড়ালেখা বিঘ্নিত হওয়া, অস্বস্তিবোধসহ স্বাভাবিক জীবনযাত্রা বিঘ্নিত হতে পারে।

শব্দ দূষণের ছবি

শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণের উপায়

শব্দদূষণ নিম্নলিখিত উপায়ে নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিরোধ করা যায়। যথা –

  • (১) প্রযুক্তিগত উপায়ে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ
  • (২) আইনসম্মত উপায়ে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ
  • (৩) পরিবেশগত উপায়ে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ এবং
  • (৪) জনশিক্ষার মাধ্যমে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ।

প্রযুক্তিগত উপায়ে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ

(i) বিভিন্ন কলকারখানার বা শিল্পসংস্থার পুরানো আমলের উচ্চ শব্দ বা কর্কস শব্দ উৎপাদনকারী যন্ত্রের প্রযুক্তিগত উন্নতি ঘটিয়ে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিরোধ করা যায়।

(ii) অনেকক্ষেত্রে যেসব যন্ত্রপাতি থেকে অবাঞ্ছিত শব্দ উৎপন্ন হয় সেসব যন্ত্রপাতির ওপর শব্দ নিয়ন্ত্রণকারী আচ্ছাদনের ব্যবহারের মাধ্যমে শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

(iii) যেসব মানুষ বিভিন্ন শিল্পে বা অন্যাস্থানে যেখানে ৪০ ডেসিবেলের বেশি শব্দের প্রভাব রয়েছে সেখানে কাজ করেন, তাদের জন্য শব্দ প্রতিরোধক ইয়ার প্লাগ, ক্যানাল কাপ এবং ইয়ার মাফ ব্যবহারের ব্যবস্থা করা হয়। ফলে শব্দ দূষণ ওইসব মানুষের ওপর তেমন কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারে না।

(iv) যেসব শিল্পকারখানায় প্রচন্ড শব্দ উৎপন্ন হয় সেখানে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বা প্রতিরোধের জন্য শব্দ প্রতিরোধী অঞ্চল তৈরি করা প্রয়োজন হয়।

(v) গাড়ির হর্নের তীব্র আওয়াজ প্রতিরোধ করার জন্য সাইলেন্সার লাগাতে হবে।

আইনসম্মত উপায়ে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শব্দদূষণ বিরোধী আইন প্রচলিত হয়েছে। ভারতের হাসপাতাল, বিচারালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ১০০ মিটারের মধ্যে সৃষ্টি করা আইনত নিষিদ্ধ। এছাড়াও অন্যান্য স্থানের জন্য শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণকারী কিছু বিধি-নিষেধ আছে। কলকাতা হাইকোর্ট এই বিধি নির্দেশিকা প্রকাশ করে। শুধু তাই নয়, ‘মোটর ভেহিকেলস অ্যাক্ট’ অনুযায়ী বসতি অঞ্চলে গাড়ি চালানোর সময় হর্ন ব্যবহারের মাত্রা ও নির্দিষ্ট করা আছে।

পরিবেশগত উপায়ে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ

(i) গাছপালা শব্দ শোষণ করতে পারে তাই শহরাঞ্চলে রাস্তার দু’ধারে গাছপালা লাগিয়ে শব্দদূষণ রোধ করা হয়। পরীক্ষায় দেখা গেছে, তেতুল, বট, অশোক, নিম, নারকেল, দেবদারু প্রভৃতি উদ্ভিদ বেশি মাত্রায় শব্দ শোষণ করে।

(ii) বর্তমানে শহর অঞ্চলের অনেক বাড়িতে ঘরের প্রাচীর এবং ছাদ শব্দ নিরোধক দ্রব্য দ্বারা আচ্ছাদিত করা হয়। এর ফলে শব্দদূষণ কিছুটা প্রতিরোধ করা যায়।

জনশিক্ষার মাধ্যমে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ

(i) বিভিন্ন প্রকার গণমাধ্যমের সহায়তায় প্রচারের দ্বারা শব্দ দূষণের কুফল সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করলে শব্দদূষণ কিছুটা নিয়ন্ত্রিত হয়।

(ii) বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে ৬৫ ডেসিবেল এর নিচে মাইক বাজানো হলে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রিত হয়।

(iii) আতশবাজি পোড়ানো, পটকা ফাটানো বন্ধের ব্যাপারে মানুষজনকে সচেতন করলে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রিত হয়।

(iv) স্কুটার, মোটর সাইকেল, মোটরগাড়ি ইত্যাদির অযথা হর্ন ব্যবহার না করলেও শব্দ দূষণ কিছুটা নিয়ন্ত্রিত হয়।

শব্দ দূষণ ও তার প্রতিকার রচনা

ভূমিকা

পরিবেশের সাথে মানুষের নিবিড় সম্পর্ক। পরিবেশ হলো মানুষের সুস্থভাবে বেঁচে থাকার প্রধান মাধ্যম। কিন্তু মানুষ পরিবেশের বিভিন্ন উপাদান অর্থাৎ বায়ু, পানি, মাটি ও শব্দকে বিভিন্নভাবে দূষণ করছে।

শব্দ দূষণ

শব্দ দূষণ এ যুগের এক গুরুত্বপূর্ণ, জলজ্যান্ত সমস্যা। দিন দিন এ সমস্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।শহরে শব্দ দূষণের মাত্রা সর্বাধিক। প্রতিনিয়তই এখানে মোটরগাড়ির হর্ন, কলকারখানার বিকট আওয়াজ, বাজি পটকার শব্দ, রেডিও, টেলিভিশনের শব্দ, লোকজনের চিৎকার চেঁচামেচি, উৎসবের মত্ততা, মাইকে চড়া সুর, সব মিলেমিশে এক অপস্বর সৃষ্টির মহাযজ্ঞ চলছে। শব্দ দূষণের পরিণাম ভয়াবহ।

শব্দ দূষণ আধুনিক সভ্যতার আর এক অভিশাপ। গ্রামের তুলনায় শহরে এর উপদ্রব বেশি। প্রতিনিয়তই আমরা আছি শব্দের জগতে কিন্তু তা যখন কানের কাছে অসহ্য হয়ে উঠে তখনই তাকে বলে শব্দ দূষণ। বিজ্ঞানীদের মতে ২০থেকে ৬০ ডেসিবেল শব্দ সহ্য করবার ক্ষমতা থাকে মানুষের কিন্তু তা যখন এর
মাত্রা ছাড়ায় তখনই বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।

ক্রমাগত মোটর গাড়ি, ট্রাক, ট্রেন, বাইক, বৈদ্যুতিক হর্ণের কর্কশতা, মাইকের শব্দ, বোমা বাজি, পটকার ধ্বনি ইত্যাদি অহরহ পাল্লা দিয়ে শব্দ দূষণ করে চলেছে। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় মানুষের কানের। তাছাড়া মানসিক ক্ষতিও করে, রক্তচাপ বাড়ায়, হৃৎপিণ্ডের অসুখ ও অনিদ্রা রােগ দেখা দেয়।

শব্দ দূষণের ভয়াবহতা

শব্দ দূষণ যে শুধু বিরক্তি সৃষ্টি করে তাই নয়, মানবদেহের আর্টারিগুলো বন্ধ করে দেয় এবং হূৎপিণ্ডকে দ্রুত কাজ করতে বাধ্য করে।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, শব্দ দূষণ স্নায়বিক বৈকল্যের কারণ হতে পারে ।বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, ধারাবাহিক শব্দ দূষণ শ্রবণশক্তি নষ্ট করে এবং স্নায়ুর স্থায়ী ক্ষতি সাধন করে।তাঁদের মতে, রাজধানীতে বসবাসকারী মানুষের হার্ট, কিডনি ও ব্রেনের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ছে।

শব্দ দূষণে শিশুদের মেজাজ হচ্ছে খিটখিটে। তারা শ্রবণশক্তি হারাচ্ছে, হারাচ্ছে তাদের একনিষ্ঠতা।এর প্রভাব তাদের লেখাপড়ার ওপর পড়ছে ।সব ধরনের শব্দ দূষণের ফলেই মানুষের ঘুম, শ্রবণশক্তি, মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের অবনতি হয়।যেকোনো ধরনের শব্দ দূষণই গর্ভবতী মায়েদের ক্ষতি করে দারুণভাবে।

শব্দ দূষণে মানুষের স্থায়ী মানসিক বৈকল্য দেখা দিতে পারে।

শব্দদূষণের প্রতিকার

শব্দদূষণের হাত থেকে বাঁচতে হলে চাই সকলের সচেতনতা শব্দ দূষণের কারণগুলো বের করে তা প্রতিরোধ করা জরুরি। যতটুকু সম্ভব উচ্চশব্দ পরিহার করা।গাড়ির হর্নকে স্বাভাবিক করা। 

উপসংহার

সুস্থভাবে বেশি দিন বেঁচে থাকার জন্য শব্দদূষণমুক্ত পরিবেশ গড়া সবারই কর্তব্য তাই সবাই সচেতন হলে শব্দদূষণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। 

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | শব্দ দূষণ

Q1. শব্দ দূষণ কী, শব্দ দূষণ কি

Ans – বিভিন্ন উৎস থেকে উৎপন্ন জোরালো এবং অপ্রয়োজনীয় শব্দ যখন মানুষের সহনশীলতার মাত্রা ছাড়িয়ে বিরক্তিঘটায় এবং স্বাস্থ্যের ক্ষতিসাধন করে তখন তাকে শব্দ দূষণ বলে।

Q2. শব্দ দূষণ পরিমাপের একক কি

Ans – শব্দ দূষণ পরিমাপের একক ডেসিবল।

Q3. শব্দ দূষণের ফলে কি রোগ হয়

Ans – প্রতিনিয়ত শব্দদূষণ বাড়াচ্ছে হৃদরোগের ঝুঁকি। গবেষণা বলছে, প্রায় ৩০টি জটিল রোগের অন্যতম উৎস শব্দ দূষণ। শব্দের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে আগামীতে অসুস্থ প্রজন্ম জন্ম নেবে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।ধারাবাহিক উচ্চ শব্দের মধ্যে থাকলে হার্টঅ্যাটাক ও স্ট্রোকের আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।