সমাস কাকে বলে

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

সমাস কাকে বলে, সমাস কাকে বলে ও কত প্রকার, সমাস কাকে বলে কত প্রকার ও কী কী, সমাস কত প্রকার ও কি কি, সমাসের শ্রেণীবিভাগ, সমাস কত প্রকার, সমাস কয় প্রকার

পরস্পরের মধ্যে অর্থ সম্বন্ধযুক্ত দুই বা ততোধিক পদের মিলনের ফলে  একটি পদে পরিণত হলে তাকে সমাস বলে।

সমাস কয় প্রকার ও কি কি

বর্তমানে বাংলা ভাষার ব্যাকরণে নয়টি  সমাসের কথা উল্লেখ রয়েছে সেগুলি হল
1. দ্বন্দ্ব সমাস
2. কর্মধারয় সমাস
3. তৎপুরুষ সমাস
4. বহুব্রীহি সমাস
5. দ্বিগু সমাস
6. নিত্য সমাস
7. বাক্যাশ্রয়ী সমাস
8. অলুক সমাস
9. অব্যয়ীভাব সমাস

দ্বন্দ্ব সমাস কাকে বলে, দ্বন্দ্ব সমাস কাকে বলে ও উদাহরণ

যে সমাসে পূর্বেরপদ ও উত্তরপদ, দুই পদের অর্থই প্রধান রূপে প্রতীয়মান হয়, তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে হয়ে থাকে।

উদাহরণ : পিতামাতা = পিতা ও মাতা, পাহাড় পর্বত= পাহাড় ও পর্বত। বাবামা = বাবা ও মা, ভাইবোন = ভাই ও বোন।

কর্মধারয় সমাস কাকে বলে ও উদাহরণ

বিশেষ্য পদের সাথে বিশেষণ বা বিশেষণ পদের সাথে বিশেষ্য পদের যে সমাস হয় এবং সমস্ত পদে পরপদের অর্থের প্রাধান্য থাকে তাকে কর্মধারয় সমাস বলে।

কর্মধারয় সমাস পাঁচ প্রকার :

  • (১) সাধারণ কর্মধারয়
  • (২) মধ্যপদলোপী কর্মধারয়
  • (৩) উপমান কর্মধারয়
  • (৪) উপমিত কর্মধারয়
  • (৫) রূপক কর্মধারয়।

সাধারণ কর্মধারয় সমাস কাকে বলে :

যে কর্মধারয় সমাসে পরপদ বিশেষ্য ও পূর্বপদ বিশেষণ অথবা পূর্বপদ ও পরপদ উভয়ই বিশেষণ বা বিশেষ্য, তাকে সাধারণ কর্মধারয় সমাস বলে। উদাহরণ – মহারাজা = মহান যে রাজা, সজ্জন = সংযে ইতি ।

মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস: 

যে কর্মধারয় সমাসে ব্যাসবাক্যের মধ্যপদটি সমস্তপদে লোপ পায়, তাকে মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস বলে। উদাহরণ – সিংহাসন = সিংহ চিহ্নিত আসন, বরযাত্রী = বরের অনুগামী যাত্রী।

উপমান কর্মধারয় সমাস কাকে বলে: 

যে কর্মধারয় সমাসে উপমানের সঙ্গে সাধারণ বর্ণবাচক পদের সমাস হয়, তাকে উপমান কর্মধারয় সমাস বলে। উদাহরণ – তুষারশুভ্র = তুষারের ন্যায় শুভ্র, ঘনশ্যাম = ঘনের ন্যায় শ্যাম ।

উপমিত কর্মধারয় সমাস কাকে বলে: 

যে কর্মধারয় সমাসে উপমেয়ের সঙ্গে উপমানের সমাস হয়, কিন্তু সাধারণ ধর্মের উল্লেখ থাকে না, তাকে উপমিত কর্মধারয় সমাস বলে। উদাহরণ – পুরুষসিংহ = পুরুষ সিংহের ন্যায়,  ফুলবাবু = বাবু ফুলের মতো ।

রূপক কর্মধারয় সমাস: 

যে কর্মধারয় সমাসে উপমান ও উপমেয়ের মধ্যে অভেদ কল্পনা করা হয়, তাকে রূপক কর্মধারয় সমাস বলে। উদাহরণ – সুখসাগর = সুখ রূপ সাগর,  জ্ঞানালোক = জ্ঞান রূপ আলোক ।

তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে ও উদাহরণ, তৎপুরুষ সমাস

যে সমাসে সমস্যমান পদগুলির মধ্যে পূর্বপদে কর্ম, করণ, নিমিত্ত প্রভৃতি কারকের বিভক্তি বা অনুসর্গ লোক পায় এবং পরপদের অর্থ প্রধান হয়, তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে।
উদাহরণ- ধানের ক্ষেত = ধানক্ষেত, ভাতকে রাঁধা = ভাতরাঁধা।

তৎপুরুষ সমাসের প্রকারভেদ : তৎপুরুষ সমাসকে 11 ভাগে ভাগ করা যায় যথা-

  • 1. কর্ম তৎপুরুষ
  • 2. ব্যাপ্তি তৎপুরুষ
  • 3.করন তৎপুরুষ
  • 4. নিমিত্ত তৎপুরুষ
  • 5. অপাদান তৎপুরুষ
  • 6. অধিকরণ তৎপুরুষ
  • 7. সম্বন্ধ তৎপুরুষ
  • 8. উপপদ তৎপুরুষ
  • 9. না তৎপুরুষ
  • 10. উপসর্গ তৎপুরুষ
  • 11. অলোপ তৎপুরুষ

কর্ম তৎপুরুষ 

যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদে কর্মকারকের বিভক্তির চিহ্ন সর্বপদে লোপ পায়, তাই হল কর্ম তৎপুরুষ। উদাহরণ- ঘরমোছা = ঘরকে মোছা, লোকহাসানো = লোককে হাসানো।

ব্যাপ্তি তৎপুরুষ

যে তৎপুরুষ সমাসে স্থান বা কালের ব্যাপ্তি বোঝায়, তাকে ব্যাপ্তি তৎপুরুষ সমাস বলে। উদাহরণ – চিরসুখী = চিরকাল ব্যাপিয়া সুখী, আকন্ঠ = কন্ঠ পর্যন্ত।

করণ তৎপুরুষ

যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদে করণকারকের বিভক্তি চিহ্ন থাকলেও সবপদে তা বিলোপ পায়, তা হল করণ তৎপুরুষ সমাস । উদাহরণ- মধুমাখা = মধু দ্বারা মাখা, শ্রমলব্ধ = শ্রম দ্বারা লব্ধ ।

নিমিত্ত তৎপুরুষ

যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদে নিমিত্ত কারকের চিহ্ন সবপদে লোপ পায়, তাকে নিমিত্ত তৎপুরুষ সমাস বলা হয় । উদাহরণ- শান্তিনিকেতন = শান্তির জন্য নিকেতন, রান্নাঘর = রান্নার নিমিত্ত ঘর।

অপাদান তৎপুরুষ

যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদে অপাদান কারকের চিহ্ন সর্বপদে লোপ পায় তাকে বলা হয় অপাদান তৎপুরুষ সমাস। উদাহরণ- জলাতঙ্ক = জল হইতে আতঙ্ক, স্নাতকোত্তর = স্নাতক হইতে উত্তর।

অধিকরণ তৎপুরুষ

যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদে অধিকরণ কারকের বিভক্তি চিহ্ন সর্বপদে লোপ পায় তাকে বলা হয় অধিকরণ তৎপুরুষ। উদাহরণ- গাছপাকা = গাছে পাকা, রাতকানা = রাতে কানা, সত্যা= সত্যে আগ্রহ।

সম্বন্ধ তৎপুরুষ

যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদে সমৃদ্ধ পাদের চিহ্ন সর্বপদে লোপনীয় তাকে সম্বন্ধ তৎপুরুষ সমাস বলা হয়। উদাহরণ-  রাজমিস্ত্রি = মিস্ত্রিদের রাজা, দলপতি = দলের পতি।

উপপদ তৎপুরুষ

উপপাদের সঙ্গে কুদস্তপদের মিলনে যে সমাস গঠিত হয়, তাকে উপপদ তৎপুরুষ সমাস বলে। বৃদন্তপদের পূর্ববর্তী পদকে উপপদ বলে। উদাহরণ- জলদ = জল দেয় যে, দিশাহারা = দিশা হারিয়েছে যে।

না-তৎপুরুষ

যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদে না-বাচক শব্দ থাকে এবং পরবর্তীপদে বিশেষ্য বা বিশেষণ হয়, তাকে না-তৎপুরুষ সমাস বলা হয়। উদাহরণ- অমঙ্গল = অ (নয়) মঙ্গল,  অনামী = অ (নয়) নামী।

উপসর্গ তৎপুরুষ

যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদে উপসর্গ সংযুক্ত থাকে এবং পরপদ বিশেষ্য হয় তাকে উপসর্গ তৎপুরুষ সমাস বলে। উদাহরণ-  উপমুখ্যমন্ত্রী = মুখ্যমন্ত্রীর সদৃশ, প্রতিবাদ = বাদের বিপরীত।

অলোপ তৎপুরুষ

যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদে বিভক্তির বিলোপ হয় না এবং পরপদের অর্থ প্রধান হয়, তাকে অলোপ তৎপুরুষ সমাস বলে। উদাহরণ- খেলার মাঠ = খেলার মাঠ, ভোরের পাখি = ভোরের পাখি।

বহুব্রীহি সমাস কাকে বলে ও উদাহরণ

যে সমাসে সমস্যমান পদগুলির অর্থ প্রধান রূপে প্রতীয়মান না হয়ে সর্বপদটির দ্বারা তৃতীয় কোন ব্যক্তি বা বস্তুকে বোঝায়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে। উদাহরণ- নীলকণ্ঠ = নীলকণ্ঠ যাঁর, এখানে ‘নীলকণ্ঠ’ বলতে যার কণ্ঠ নীল রঙের তাকে না বুঝিয়ে পৃথিবীর হলাহল ধারণকারী মহাদেবকে বোঝায়।

বহুব্রীহি সমাসের প্রকারভেদ: বহুব্রীহি সমাসকে 6 ভাগে ভাগ করা যায় যথা-

  • 1. ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি
  • 2. সমানাধিকরণ বহুব্রীহি
  • 3. মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি
  • 4. ব্যতিহার বহুব্রীহি
  • 5. সদার্থক বহুব্রীহি
  • 6. নঞর্থক বহুব্রীহি ।

ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি

যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদ বিশেষণ ও পরপদ বিশেষ্য হয় এবং এদের কোনো একটি পদ ‘এ’ বা ‘তে’ বিভক্তি যুক্ত হয়, তাকে ব্যাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস বলে। উদাহরণ- পদ্মনাভ = পদ্ম নাভিতে যাঁর, পাদপদ্ম = পদ্ম পড়ে যাঁর।

সমানাধিকরণ বহুব্রীহি

যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদ বিশেষণ ও পরপদ বিশেষ্য হয়, তাকে সমানাধিকরণ বহুব্রীহি সমাস বলে। উদাহরণ-বিশালাক্ষী = বিশাল অভি যার, সুগন্ধি = সুগন্ধ যার।

মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি

যে বহুব্রীহি সমাসে ব্যাসবাক্যের ব্যাখ্যামূলক মধ্যবর্তী পদটি লোপ হয়ে যায়, তাকে মধ্যপদলোপী বহুব্রীহি সমাস বলে। উদাহরণ-  কপোতাক্ষ = কপোতের অক্ষির মতো অক্ষি যার, মৃগনয়না = যুগের নয়নের মতো নয়ন যার।

ব্যতিহার বহুব্রীহি

যে বহুরীহি সমাসে একই শব্দের পুনরুক্তি দ্বারা পরস্পর কাজ করা বোঝায়, তাকে ব্যতিহার বহুব্রীহি সমাস বলে। উদাহরণ- মারামারি = পরস্পরকে মারা, কোলাকুলি = কোলে কোলে যে আলিঙ্গন।

সদার্থক বহুব্রীহি

যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদ সমাসবদ্ধ পদের পূর্বে সহিত অর্থ বোঝানোর জন্য ‘স’ শব্দটি পূর্বে বসে তাকে সদার্থক বহুব্রীহি সমাস বলে। উদাহরণ- সবান্ধব = বান্ধবের সহিত বর্তমান, সার্থক = অর্থের সহিত বর্তমান।

নঞর্থক বহুব্রীহি

যে বহুব্রীহি সমাসে পূর্বপদ নঞর্থক অর্থাৎ না -বাচক হয়, তাকে নর্থক বহুব্রীহি সমাস বলে। উদাহরণ- অজ্ঞান= অ (নাই) জ্ঞান যার, নিরাশ = নি (নাই) আশ যার।

দ্বিগু সমাস কাকে বলে ও উদাহরণ

সমাহার বা মিলন অর্থে সংখ্যাবাচক শব্দের সঙ্গে বিশেষ্য পদের যে সমাস সংগঠিত হয়, তাকে দ্বিগু সমাস বলে। উদাহরণ- পঞ্চনদ = পঞ্চ নদের সমাহার, শতাব্দী = শত আব্দের সমাহার।

নিত্য সমাস কাকে বলে ও উদাহরণ, নিত্য সমাস কাকে বলে

যে সমাসের ব্যাসবাক্য করতে হলে অন্য পদের প্রয়োজন পড়ে এবং যে সমাসের ব্যাসবাক্য প্রধানত হয় না, তাকে নিত্য সমাস বলে। উদাহরণ- জন্মান্তর = অন‍্য জম্ন, নীলাভ = ঈষৎ নীল।

বাক্যাশ্রয়ী সমাস কাকে বলে, বাক্যাশ্রয়ী সমাস কাকে বলে ও উদাহরণ, বাক্যাশ্রয়ী সমাস এর উদাহরণ

যে সমাস একটি বাক্য বা বাক্যাংশ বা খন্ড বাক্যকে আশ্রয় করে যে সমাজ তৈরি হয় হয়, তাকে বাক্যাশ্রয়ী সমাস বলে। উদাহরণ- রবীন্দ্রজন্মজয়ন্তী = রবীন্দ্রনাথের জন্ম উপলক্ষ্যে জয়ন্তী, বসে আঁকো প্রতিযোগিতা = বসে আঁকার প্রতিযোগিতা।

অলোপ সমাস কাকে বলে, অলুক সমাস কাকে বলে ও উদাহরণ

যে সমাসে সমস্যমান পদের বিভক্তি সমস্তপদে পরিণত হবার পরেও লোপ পায় না, বা থেকে যায়, তাকে অলোপ সমাস বলে। এর অপর নাম অলুক সমাস। সমস্যমান পদের বিভক্তি সাধারণ ভাবে সমস্তপদে গিয়ে লোপ পেয়ে যায়।

যে সমাসের সমস্তপদে পূর্বপদে বিভক্তির চিহ্ন লুপ্ত হয় না, তাকে অলুক সমাস বলে। ‘অ’ অর্থে নয় ‘লুক’ বা ‘লোপ’ অর্থে বিলুপ্ত হওয়া। তবে জেনে রাখতে হবে অলোপ সমাস আলাদা বা স্বতন্ত্র কোনো সমাস নয়। দ্বন্দ্ব, তৎপুরুষ, বহুব্রীহি, সমাসে অলুক সমাস হয় ‌।

  • অলুক দ্বন্দ্ব :  ঘরে-বাইরে = ঘরে ও বাইরে, হাটে-বাজারে = হাটে ও বাজারে,  দিনেরাতে = দিনে ও রাতে, হাতে-কলমে = হাতে ও কলমে, দেশে-বিদেশে = দেশে ও বিদেশে।
  • অলুক তৎপুরুষ: গোরুর গাড়ি = গোরুর গাড়ি, পথে দেখা = পথে দেখা, মুড়ির চাল = মুড়ির জন্য চাল, অস্তেবাসী = অন্তে বাস করে যে,গানেভরা = গান দ্বারা ভরা, অরণ্যেরোদন = অরণ্যে রোদন, পড়ারঘর = পড়ার জন্য ঘর।
  • অলুক বহুব্রীহি: গায়ে হলুদ = গায়ে হলুদ দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে, মুখেভাত = মুখে ভাত দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানে, গলায়মালা = গলায় মালা যার ।

অব‍্যয়ীভাব সমাস কাকে বলে ও উদাহরণ

যে সমাসের ভিতরে অব্যয়ের ভাবটাই বা অর্থটাই হল প্রধান তাকে অব্যয়ীভাব সমাস বলে । উদাহরণ- হাঘর = ঘরের অভাব , নিরামিষ = আমিষের অভাব ।

সমস্তপদ বা মিলিত পদ

পদের যে গঠন-প্রক্রিয়ায় একাধিক পদ একত্র জুড়ে একটি বড়াে পদের জন্ম দেয়, সেই গঠন-প্রক্রিয়াকে বলে সমাস। যেমন, কাগজ ও পত্র পদ দুটি একত্র যুক্ত হয়ে তৈরি হয়েছে কাগজপত্র’ পদটি। এই যে ‘কাগজপত্র পদটি তৈরি হল, তার গঠন-পদ্ধতিটি হল সমাস। সমাসের ফলে যে পদ তৈরি হয় তাকে বলে সমস্তপদ বা মিলিত পদ। কাগজপত্র তাই মিলিতপদ বা সমস্তপদ।

সমাসবদ্ধ পদের গঠনবৈশিষ্ট্য অনুযায়ী সমাসকে তিনভাগে ভাগ করা যায় –

  • (১) সংযােগমূলক সমাস
  • (২) ব্যাখ্যানমূলক সমাস
  • (৩) বর্ণনামূলক সমাস

সংযােগমূলক সমাস কাকে বলে

যে জাতীয় সমাসে একাধিক পদ সংযুক্ত হয় কিন্তু পদগুলির নিজস্ব অর্থের কোনােরকম পরিবর্তন ঘটে না, তাকে বলে সংযােগমূলক সমাস। দ্বন্দ্ব সমাস হল সংযােগমূলক সমাস। এই সমাসে একাধিক সমার্থক বা প্রায়-সমার্থক শব্দ পাশাপাশি বসে অথবা দুই বিপরীতার্থক পদ একসঙ্গে বসে। তবে এ সমাসে ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি বা বস্তুর সমন্বয় বােঝায় না, পরন্তু একই ব্যক্তি বা বস্তুর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের সমন্বয় বােঝায়। যেমন, জলবায়ু, দীনদরিদ্র, টাকাপয়সা, ছােটোবড়াে, স্বর্গ মর্তয- পাতাল ইত্যাদি।

বর্ণনামূলক সমাস কাকে বলে

যে সমাসের সমস্তপদের মধ্য দিয়ে পূর্ববর্তী বা পরবর্তী কোনাে পদের অর্থই প্রাধান্য পায় না, বরং অন্য কোনাে ব্যক্তি বা বস্তুর অর্থ প্রাধান্য পায়, তাকে বলে বর্ণনামূলক সমাস। যেমন বহুব্রীহি সমাস। যেমন – চন্দ্রমুখী, ক্ষুরধার, হাতাহাতি।

ব্যাখ্যামূলক সমাস কাকে বলে

যে সমাসের পাশাপাশি-বসা দুটি পদের মধ্যে প্রথম পদটি দ্বিতীয় পদটিকে ব্যাখ্যা করে, তাকে বলে ব্যাখ্যানমূলক সমাস। যেমন মহাকবি, মিশ-কালাে, গােলাপ-লাল। কর্মধারয়, তৎপুরুষ সমাস এই জাতীয়।

সমাসের কাজ কী

  • ক) সংক্ষিপ্তকরণ অর্থাৎ ভাষার শব্দ (পদ) বাহুল্যকে বর্জন করে ভাষাকে ঘনপিনদ্ধ করা ও অর্থব্যঞ্জক করে তোলা।
  • খ) সৌন্দর্য বৃদ্ধি অর্থাৎ নতুন নতুন শব্দ বা পদ সৃষ্টি করে ভাষাকে সৌন্দর্য মন্ডিত করে তোলা।
  • গ) পদের সাথে পদের সংহতি স্থাপন করা।

সমাস শব্দের অর্থ কি

সমাস শব্দের আক্ষরিক অর্থ হল – “এক হওয়া’ বা সংক্ষেপ। সমাসের ব্যাকরণসম্মত অর্থ হল সংক্ষিপ্তকরণ বা একপদীকরণ। মূলত, সমাসে একটি বাক্যাংশ একটি শব্দে পরিণত হয়। বাক্যে শব্দের ব্যবহার কমানোর উদ্দেশ্যে সমাস ব্যবহার করা হয়।

সমাস চেনার সহজ উপায়

দ্বন্দ্ব সমাস চেনার উপায়

  • ক)  পূর্বপদ ও পরপদের অর্থ স্বাধীন হবে ।
  • খ)  বিভক্তি সমান থাকবে ।  

ব্যাসবাক্য লেখার নিয়ম –  পূর্বপদ + ও + পরপদ 

উদাহরণ

  • কুশীলব = কুশ ও লব
  • দম্পতি = জায়া ও পতি
  • আমরা = তুমি, আমি ও সে
  • জন মানব = জন  ও মানব
  • সত্যাসত্য = সত্য ও অসত্য
  • ক্ষুৎপিপাসা = ক্ষুধা ও পিপাসা

অলুক দ্বন্দ্ব সমাস চেনার উপায়

  • ক) পূর্বপদ ও পরপদের অর্থ স্বাধীন হবে ।
  • খ) উভয় পদে ৭মী  (এ ) বিভক্তি  থাকবে ।  

ব্যাসবাক্য লেখার নিয়ম – পূর্বপদ + ও + পরপদ   

উদাহরণ

  • ঘরে বাইরে = ঘরে ও বাইরে            
  • দুধে ভাতে =দুধে ও ভাতে   
  • দেশে বিদেশে =  দেশে ও বিদেশে   
  • বনে বাদাড়ে =     বনে  ও  বাদাড়ে  

দ্বিগু সমাস চেনার উপায়

  • ক) পূর্বপদে সংখ্যাবাচক শব্দ থাকবে।
  • খ) পরপদে বিশেষ্য  থাকবে।  
  • গ) সমস্তপদের অর্থ হবে সমষ্টি বা সমাহার।

ব্যাসবাক্য লেখার নিয়ম –  পূর্বপদ + ও + পরপদ   

উদাহরণ

  • তেপান্তর = তে (তিন)  প্রান্তরের সমাহার
  • সেতার = সে (তিন ) তারের সমাহার
  • ত্রিফলা = ত্রি (তিন)  ফলের সমাহার
  • নবরত্ন = নব (নয়) রত্নের সমাহার

সমাস নির্ণয় কর, ব্যাসবাক্য সহ সমাস নির্ণয় কর, ব্যাসবাক্য সহ সমাস, ব্যাসবাক্য সহ সমাস pdf

নংপ্রদত্ত শব্দব্যাসবাক্যসমাসের নাম
হাতেখড়িহাতে খড়ি দেওয়া হয় যে অনুষ্ঠানেমধ্যপদলোপী বহুব্রীহি
হতশ্রীহত হয়েছে শ্রী যারসমানাধিকরণ বহুব্রীহি
শূর্পনখাশূর্পের (কুলা) ন্যায় নখ যে নারীরমধ্যপদলোপী বহুব্রীহি
খোশমেজাজখোশ মেজাজ যারসমানাধিকরণ বহুব্রীহি
অনুধাবনপশ্চাৎ গমনঅব্যয়ীভাব
নীলকন্ঠনীল কন্ঠ যারসমানাধিকরণ বহুব্রীহি
অনাশ্রিতনয় আশ্রিতনঞ তৎপুরুষ
অনুসরণপশ্চাৎ ধারণঅব্যয়ীভাব
হৃতসর্বস্বহৃত হয়েছে সর্বস্ব যারসমানাধিকরণ বহুব্রীহি
অনুগমনপশ্চাৎ সরণঅব্যয়ীভাব
১০অবিশ্বাস্যনয় বিশ্বাস্যনঞ তৎপুরুষ
১১ঘরমুখোঘরের দিকে মুখ যারপ্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি
১২অস্থিরন স্থিরনঞ তৎপুরুষ
১৩অতিমাত্রমাত্রাকে অতিক্রমঅব্যয়ীভাব
১৪অনেকনয় একনঞ তৎপুরুষ
১৫একচোখাএক দিকে চোখ যারপ্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি
১৬অক্ষতনয় ক্ষতনঞ তৎপুরুষ
১৭নি খরচেনিঃ (নেই) খরচ যারপ্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি
১৮অনশনন অশননঞ তৎপুরুষ
১৯অকেজোকোনো কাজে লাগে না যাপ্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি
২০দোমনাদুই দিকে মন যারপ্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি
২১অনাসক্তন আসক্তনঞ তৎপুরুষ
২২দোটানাদুই দিকে টান যারপ্রত্যয়ান্ত বহুব্রীহি
২৩অনৈক্যন ঐক্যনঞ তৎপুরুষ
২৪অল্পপ্রাণঅল্পপ্রাণ যারবহুব্রীহি সমাস
২৫অসত্যন(নয়)সত্যনঞ তৎপুরুষ
২৬আমূলমূল পর্যন্তঅব্যয়ীভাব
২৭অনতিবৃহৎন অতি বৃহৎনঞ তৎপুরুষ
২৮চতুর্ভুজচার ভুজের সমষ্টিদ্বিগু সমাস
২৯অনুরূপরূপের সদৃশঅব্যয়ীভাব
৩০আমরাতুমি,  আমি ও সেএকশেষ দ্ব›দ্ব
৩১আলুনিলবণের অভাবঅব্যয়ীভাব
৩২আজকালআজ ও কালদ্বন্দ্ব সমাস
৩৩আশীবিষআশীতে বিষ যারবহুব্রীহি
৩৪অবিশ্বাসনয় বিশ্বাসনঞ তৎপুরুষ
৩৫আরক্তিমঈষৎ রক্তিমঅব্যয়ীভাব
৩৬ঊর্ণনাভউর্ণা নাভিতে যারবহুব্রীহি সমাস
৩৭উপজেলাজেলার সদৃশঅব্যয়ীভাব
৩৮ঝরনাধারাঝরনার ধারাষষ্ঠী তৎপুরুষ
৩৯গোলাপফুলগোলাম নামক ফুলমধ্যঃ কর্মধারয়
৪০চৌরাস্তাচার রাস্তার সমাহারদ্বিগু সমাস
৪১চিরসুখীচিরকাল ব্যাপিয়া সুখীদ্বিতীয় তৎপুরুষ
৪২চা-বাগানচায়ের বাগানষষ্ঠী তৎপুরুষ
৪৩চতুদর্শপদীচতুর্দশ পদের সমাহারদ্বিগু সমাস
৪৪অপর্যাপ্তনয় পর্যাপ্তনঞ তৎপুরুষ
৪৫ছায়াশীতলছায়া দ্বারা শীতলতৃতীয়া তৎপুুরুষ
৪৬জনমানবজন ও মানবদ্ব›দ্ব সমাস
৪৭জীবনপ্রদীপজীবন রূপ প্রদীপরূপক কর্মধারয়
৪৮জনাকীর্ণজন দ্বারা আকীর্ণতৃতীয়া তৎপুরুষ
৪৯জাদুকরজাদু করে যেউপপদ তৎপুরুষ
৫০জীবন-নদীজীবন রূপ নদীরূপক কর্মধারয়
৫১জন্মান্ধজন্ম থেকে অন্ধপঞ্চমী তৎপুরুষ
ব্যাসবাক্য সহ সমাস pdf

সন্ধি ও সমাসের পার্থক্য

সন্ধির ক্ষেত্রেও দুই বা তার বেশি শব্দ জুড়ে নতুন শব্দ গঠিত হয়। কিন্তু সন্ধি ও সমাস এক নয়। কেন, তা আমরা সন্ধি-সমাসের মধ্যে পার্থক্যের মাধ্যমে বুঝে নেবো।

সন্ধিসমাস
1.বর্ণের সঙ্গে বর্ণের বা ধ্বনির সঙ্গে ধ্বনির মিলনে সন্ধি হয়। যেমন-গ্রন্থ + আগার = গ্রন্থাগার1.দুই বা ততোধিক শব্দের অর্থগত মিলনে হয় সমাস। যেমন- আমি, তুমি ও সে = আমরা
2.সন্ধিতে একটি পদের অর্থ অক্ষুণ্ণ থাকে।2.সমাসে দ্বন্দ্ব সমাস ছাড়া তা নাও থাকতে পারে।
3.পূর্বপদের বিভক্তি লোপ পায় না।3.অলুক সমাস বাদে অন্যান্য ক্ষেত্রে বিভক্তি লোপ পায়।
4.পদক্রম অক্ষুণ্ণ থাকে।4.কখনও কখনওপদগুলি পরস্পর স্থান পরিবর্তন করে।
5.বহিরাগত অন্য শব্দের ব্যবহার হয় না।5.সমাসের প্রয়োজনে অন্য শব্দ আসতে পারে। যেমন অন্য গ্রাম = গ্রামাত্তর
6.অর্থ অক্ষুণ্ণ থাকে।6.অর্থের পরিবর্তন ঘটতে পারে।যেমন-বীণা পাণিতে যাহার = বীণাপানি।যার মানে সরস্বতীকে বোঝায়।
সন্ধি ও সমাসের পার্থক্য
আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | সমাস

Q1. সেতার কোন সমাস

উত্তর: ব্যাসবাক্য – তিন তারের সমাহার সমাস – দ্বিগু সমাস

Q2. গৃহস্থ কোন সমাস

উত্তর: ব্যাসবাক্য – গৃহে থাকে যে সমাস – উপপদ তৎপুরুষ

Q3. গায়ে হলুদ কোন সমাস

উত্তর: ব্যাসবাক্য – গায়ে হলুদ সমাস – অলুক তৎপুরুষ

Q4. আমরা কোন সমাস

উত্তর: ব্যাসবাক্য – তুমি, আমি ও সে সমাস – একশেষ দ্ব›দ্ব

Q5. ইত্যাদি কোন সমাস

উত্তর: ব্যাসবাক্য – ইতি হতে আদি সমাস – তৎপুরুষ সমাস

Q6. চিরসুখী কোন সমাস

উত্তর: ব্যাসবাক্য – চিরকাল ব্যাপিয়া সুখী সমাস – দ্বিতীয় তৎপুরুষ

Q7. মৌমাছি কোন সমাস

উত্তর: ব্যাসবাক্য – মৌ-সঞ্চয়কারী মাছি সমাস – মধ্যঃ কর্মধারয়

Q8. নীলাম্বর কোন সমাস

উত্তর: ব্যাসবাক্য – নীল যে অম্বর সমাস – কর্মধারায় সমাস

Q9. ক্ষুধিত পাষাণ কোন সমাস

উত্তর: ব্যাসবাক্য – ক্ষুধিত যে পাষাণ সমাস – কর্মধারয় সমাস

Q10. তপোবন কোন সমাস

উত্তর: ব্যাসবাক্য – তপের নিমিত্ত বন সমাস – চতুর্থী তৎপুরুষ

Q11. অনুতাপ কোন সমাস

উত্তর: ব্যাসবাক্য – যে তাপ সমাস – বহুব্রীহি সমাস

Q12. তেপান্তর কোন সমাস

উত্তর: ব্যাসবাক্য – তিন প্রান্তরের সমাহার সমাস – দ্বিগু সমাস

Q13. নবরত্ন কোন সমাস

উত্তর: ব্যাসবাক্য – নব রত্নের সমাহার সমাস – দ্বিগু সমাস

Q14. বীণাপাণি কোন সমাস

উত্তর: ব্যাসবাক্য – বীণা পানিতে যার সমাস – বহুব্রীহি সমাস

Q15. নদীমাতৃক কোন সমাস

উত্তর: ব্যাসবাক্য – নদী মাতা যার সমাস – বহুব্রীহি সমাস

Q16. বিরানব্বই কোন সমাস

উত্তর: ব্যাসবাক্য – দুই এবং নব্বই সমাস – নিত্য সমাস

Q17. শশব্যস্ত কোন সমাস

উত্তর: ব্যাসবাক্য – শশকের ন্যায় ব্যস্ত সমাস – কর্মধারয় সমাস

Q18. আশীবিষ কোন সমাস

উত্তর: ব্যাসবাক্য – আশীতে বিষ যার সমাস – বহুব্রীহি

Q19. নরাধম কোন সমাস

উত্তর: ব্যাসবাক্য – নরের মধ্যে অধম সমাস – ৭মী তৎপুরুষ সমাস

Q20. শতাব্দী কোন সমাস

উত্তর: ব্যাসবাক্য – শত অব্দের সমাহার সমাস – দ্বিগু সমাস

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।