বৃত্ত কাকে বলে, বৃত্তের ক্ষেত্রফল কাকে বলে

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

বৃত্ত কাকে বলে | What is Circle in Bangla

একটি নির্দিষ্ট বিন্দুকে কেন্দ্র করে সর্বদা সমান দূরত্ব বজায় রেখে অন্য একটি বিন্দু তার চারদিকে একবার ঘুরে এলে যে ক্ষেত্র তৈরি হয় তাকে বৃত্ত বলে। অন্যভাবে বললে, একটি নির্দিষ্ট বিন্দুকে কেন্দ্র করে সর্বদা সমান দূরত্ব বজায় রেখে যে বক্ররেখা ঘুরে আসে তাকে বৃত্ত বলে।

কেন্দ্র ও ব্যাসার্ধ বিশিষ্ট একটি বৃত্ত চিত্র
কেন্দ্র ও ব্যাসার্ধ বিশিষ্ট একটি বৃত্ত

আরও পরিশীলিত আকারে বৃত্ত কাকে বলে তা বর্ণনা করা যেতে পারে। একটি নির্দিষ্ট বিন্দুকে কেন্দ্র করে সর্বদা সমান দূরত্ব বজায় রেখে অন্য একটি বিন্দু নির্দিষ্ট বিন্দুটির চারদিকে একবার ঘুরে এলে যে সুষম আবদ্ধ বক্রাকার ক্ষেত্র তৈরি হয় তাকে বৃত্ত বলে।

একই সমতলে অবস্থিত একটি নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে সমদুরবর্তী সকল বিন্দু দ্বারা গঠিত সুষম আবদ্ধ বক্রাকার চিত্রকে বৃত্ত বলে।

সমদুরবর্তী বলতে বুঝায় যে সকল বিন্দু একটি নির্দিষ্ট বিন্দু হতে সমান দুরত্বে বা নির্দিষ্ট দুরত্বে অবস্থিত। অর্থাৎ, নির্দিষ্ট বিন্দু হতে যেসব বিন্দুর দুরত্ব একটি ধ্রূবক রাশি। নির্দিষ্ট বিন্দুটিকে বলা হয় বৃত্তের কেন্দ্র। আর নির্দিষ্ট দুরত্বকে বলা হয় বৃত্তের ব্যাসার্ধ। অর্থাৎ নির্দিষ্ট বিন্দু বা কেন্দ্র হতে বৃত্তের পরিধির উপর যে কোন একটি বিন্দুর দরত্বকে বৃত্তের ব্যাসার্ধ বলে। বৃত্তের ব্যাসার্ধর দ্বিগুণকে বৃত্তের ব্যাস বলে।

নিচের বিষয়গুলো একটি বৃত্তের জন্য সত্য:

  • একই সরল রেখায় অবস্থিত নয় এমন তিনটি বিন্দু দিয়ে একটি ও কেবল একটি মাত্র বৃত্ত আঁকা যায়।
  • একটি বৃত্ত একটি সরলরেখাকে সর্বোচ্চ দুইটি বিন্দুতে ছেদ করে।
  • দুইটি নির্দিষ্ট বিন্দু দিয়ে অসংখ্য বৃত্ত আঁকা যায়।
  • একই সরল রেখায় অবস্থিত এমন তিনটি বিন্দুর মধ্যে দিয়ে গমনকারী কোন বৃত্ত আঁকা সম্ভব নয়।

বৃত্তের বৈশিষ্ট্য

বৃত্তের কেন্দ্র, ব্যাসার্ধ, ব্যাস, পরিধি, ক্ষেত্রফল, স্পর্শক, প্রতিসমতা ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে যেসব বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়, তার কতকগুলো বৈশিষ্ট্য নিচে উল্লেখ করা হলোঃ

  • একটি নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যকে পরিসীমা বিবেচনা করে যেসব দ্বিমাত্রিক ক্ষেত্র যেমন ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, বহুভুজ, বৃত্ত ইত্যাদি অঙ্কন করা যায় তাদের মধ্যে বৃত্ত ক্ষেত্রটির ক্ষেত্রফল হবে সবচেয়ে বেশি।
  • বৃত্তের পরিধি ও বৃত্তের ব্যাসার্ধ সমানুপাতিক।
  • বৃত্তের একই চাপের উপর দণ্ডায়মান বৃত্তস্থ কোণগুলো পরস্পর সমান।
  • বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাত সবসময়ই ২২:৭, যা π বলে পরিচিত অর্থাৎ π=22/7।
  • বৃত্তের কেন্দ্র থেকে ব্যাসভিন্ন যেকোনো জ্যা এর উপর অঙ্কিত লম্ব ঐ জ্যা কে সমদ্বিখণ্ডিত করে।
  • বৃত্তের দুইটি সমান সমান জ্যা পরস্পরকে ছেদ করলে তাদের একটির অংশদ্বয় অপরটির অংশদ্বয়ের সমান।
  • একটি বৃত্তের অসংখ্য ব্যাসার্ধ আঁকা যায়।
  • একই সমতলে অবস্থিত এবং সমরেখ নয় এমন তিনটি বিন্দু দিয়ে একটি ও কেবল একটি বৃত্ত অঙ্কন করা যায়।
  • বৃত্তের সমান সমান জ্যা এর মধ্যবিন্দুগুলো সমবৃত্ত।
  • বৃত্তস্থ ট্রাপিজিয়ামের তির্যক বাহুদ্বয় পরস্পর সমান।
  • দুইটি সমান্তরাল জ্যা এর মধ্যবিন্দুর সংযোজক সরলরেখা কেন্দ্রগামী এবং জ্যা দুইটির উপর লম্ব।
  • বৃত্তের যেকোনো জ্যা এর লম্বদ্বিখণ্ডক কেন্দ্রগামী।
  • বৃত্তে অন্তর্লিখিত চতুর্ভুজের একটি বাহুকে বর্ধিত করলে যে বহিঃস্থ কোণ উৎপন্ন হয় তা বিপরীত অন্তঃস্থ কোণের সমান।
  • বৃত্তস্থ চতুর্ভুজের যেকোনো কোণের সমদ্বিখণ্ডক ও তার বিপরীত কোণের বহির্দ্বিখণ্ডক বৃত্তের উপর ছেদ করে।
  • বৃত্তের একই চাপের উপর দণ্ডায়মান কেন্দ্রস্থ কোণ বৃত্তস্থ কোণের দ্বিগুণ।
  • সব বৃত্তই পরস্পর সদৃশ।
  • যেসব বৃত্তের ব্যাসার্ধ পরস্পর সমান, সেসব বৃত্ত পরস্পর সর্বসম।
  • বৃত্তের ক্ষেত্রফল ও তার ব্যাসার্ধের উপর অঙ্কিত বর্গক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল সমানুপাতিক।
  • বৃত্তের অধিচাপে অন্তর্লিখিত কোণ একটি সূক্ষ্মকোণ।
  • যে বৃত্তের কেন্দ্র মূলবিন্দু (0,0) এবং ব্যাসার্ধ ১ একক, তার নাম একক বৃত্ত (unit circle)।
  • বৃত্তের ব্যাস বৃত্তের ব্যাসার্ধের দ্বিগুণ।
  • বৃত্তের প্রত্যেক ছেদকের ছেদবিন্দুদ্বয়ের অন্তর্বর্তী সকল বিন্দু বৃত্তের অভ্যন্তরে থাকে।
  • যেকোনো বৃত্তের স্পর্শবিন্দুতে স্পর্শকের উপর অঙ্কিত লম্ব কেন্দ্রগামী।

বৃত্তের ইতিহাস

বৃত্তের ইতিহাস অনেক পুরানো। প্রাচীন সভ্যতায় বৃত্তের ধারণা থেকে চাকার আবিষ্কার হয়। ফলে বর্তমান প্রচলিত সকল আধুনিক যন্ত্রপাতি নির্মাণ সম্ভবপর হয়েছে। খ্রিস্টপূর্ব ১৭০০ অব্দের কাছাকাছি সময়ে প্রাচীন মিশরীয় গণিতবিদগণ π (পাই) এর আসন্ন মান ব্যবহার করে বৃত্তের ক্ষেত্রফল নির্ণয় করেন। তবে π যে তুরীয় সংখ্যা তা ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে লিন্ডেম্যান (Lindeman) প্রমাণ করেন। ইউক্লিড খ্রিস্টপূর্ব ৩২০ হতে ৩০০ অব্দের মধ্যে ১৩ খন্ডের যে গ্রন্থ রচনা করেন সেখানে তিনি বৃত্তের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করেন। পরবর্তীতে প্লেটো (Plato) বৃত্তের সংজ্ঞা দেন।


বৃত্তের কেন্দ্র কাকে বলে

যে নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে বৃত্তের পরিধির উপর অবস্থিত সকল বিন্দুর দুরত্ব সমান, ঐ নির্দিষ্ট বিন্দুকে বৃত্তের কেন্দ্র বলে। একটি বৃত্তের কেবল একটি মাত্র কেন্দ্র থাকে। তাই বৃত্তের কেন্দ্র একটি অনন্য বিন্দু। একটি নিদির্ষ্ট বিন্দু একাধিক বৃত্তের কেন্দ্র হতে পারে। অর্থাৎ, একটি কেন্দ্র দিয়ে একাধিক বৃত্ত অংকন করা যায়। কিন্তু একটি বৃত্তের একাধিক কেন্দ্র থাকতে পারে না। বৃত্তের ব্যাসার্ধ বৃত্তের কেন্দ্রগামী একটি রেখাংশ। আবার, বৃত্তের ব্যাসও বৃত্তের কেন্দ্রগামী একটি রেখাংশ।

নিচের বিষয়গুলো একটি বৃত্তের কেন্দ্রের জন্য সত্য:

  • একটি বৃত্তের একটি ও কেবল একটি মাত্র কেন্দ্র থাকে।
  • কেন্দ্র হলো একটি বৃত্তের ব্যাসের মধ্যবিন্দু।
  • একটি কেন্দ্র দিয়ে অসংখ্য বৃত্ত অংকন করা যায়।
  • একটি বৃত্তের দুইটি ব্যাস পরস্পর কেন্দ্র বিন্দুতে ছেদ করে।

বৃত্তের ব্যাসার্ধ কাকে বলে

বৃত্তের কেন্দ্র হতে পরিধি পর্যন্ত দূরত্বকে ব্যাসার্ধ বলে। অন্যভাবে বললে, বৃত্তের কেন্দ্র থেকে পরিধির উপর যে কোন বিন্দুর দূরত্বকে বৃত্তের ব্যাসার্ধ বলে। অর্থাৎ, বৃত্তের কেন্দ্র ও পরিধির উপর যে কোন বিন্দুর সংযোজক রেখাংশ হলো বৃত্তের ব্যাসার্ধ। একটি বৃত্তে অসংখ্য ব্যাসার্ধ আঁকা যায়।

বৃত্তের ব্যাসার্ধ হলো ব্যাসের অর্ধেক। ∴ ব্যাসার্ধ = ব্যাস ÷ ২ : বৃত্তের ব্যাসার্ধ = ব্যাস ÷ ২

নিচের বিষয়গুলো একটি বৃত্তের ব্যাসার্ধের জন্য সত্য:

  • একটি বৃত্তে অসংখ্য ব্যাসার্ধ আঁকা যায়।
  • বৃত্তের সকল ব্যাসার্ধের দৈর্ঘ্য পরস্পর সমান।
  • বৃত্তের ব্যাসার্ধ হলো ব্যাসের অর্ধেক।
  • একটি বৃত্তের ব্যাসার্ধ জানা থাকলে বৃত্তটি আঁকা যায়।

বৃত্তের বিভিন্ন অংশ চিহ্নিত একটি বৃত্ত চিত্র
বৃত্তের বিভিন্ন উপাদান বিশিষ্ট একটি বৃত্ত

বৃত্তের ব্যাস কাকে বলে

বৃত্তের কেন্দ্রগামী জ্যা কে বৃত্তের ব্যাস বলে। অন্যভাবে বললে, বৃত্তের জ্যা কেন্দ্রগামী হলে তাকে বৃত্তের ব্যাস বলে।

বৃত্তের কেন্দ্র দিয়ে অতিক্রমকারী রেখাংশের প্রান্তবিন্দুদ্বয় বৃত্তের পরিধির উপর অবস্থিত হলে, ঐ রেখাংশকে বৃত্তের ব্যাস বলে। বৃত্তের কেন্দ্র বৃত্তের ব্যাসের মধ্যবিন্দু। আবার বৃত্তের ব্যাস বৃত্তের একটি জ্যা বটে। তবে এটি একটি বিশেষ জ্যা। বৃত্তের ব্যাস বা এই বিশেষ জ্যা বৃত্তের কেন্দ্র দিয়ে যায়। বৃত্তের ব্যাসই বৃহত্তম জ্যা। একটি বৃত্তে অসংখ্য ব্যাস আঁকা যায়।

বৃত্তের ব্যাস বৃত্তের ব্যাসার্ধের দ্বিগুণ। ∴ ব্যাস = ২ ⨯ ব্যাসার্ধ : বৃত্তের ব্যাস = ২ ⨯ ব্যাসার্ধ

নিচের বিষয়গুলো একটি বৃত্তের ব্যাসের জন্য সত্য:

  • একটি বৃত্তে অসংখ্য ব্যাস আঁকা যায়।
  • বৃত্তের সকল ব্যাসের দৈর্ঘ্য পরস্পর সমান।
  • বৃত্তের ব্যাস হলো ব্যাসার্ধের দ্বিগুণ।
  • একটি বৃত্তের ব্যাসের দৈর্ঘ্য জানা থাকলে বৃত্তটি অংকন করা যায়।
  • বৃত্তের ব্যাস হলো বৃত্তের বৃহত্তম জ্যা।

বৃত্তের ক্ষেত্রফল কাকে বলে, বৃত্তের পরিধি ও ক্ষেত্রফল

বৃত্তের ব্যাসার্ধের বর্গকে π দ্বারা গুণ করলে ক্ষেত্রফল পাওয়া যায়। এখন প্রশ্ন হলো π কি? বৃত্তের পরিধি ও ব্যাসের অনুপাত হলো π. একটি বৃত্তের ব্যাস ৭ একক হলে তার পরিধি হয় ২২ একক।

∴ বৃত্তের পরিধি : বৃত্তের ব্যাস = ২২ : ৭ : অর্থাৎ, π = ২২৭।
একটি বৃত্তের ব্যাসার্ধ r একক হলে এর ক্ষেত্রফল πr2 বর্গ একক।

∴ বৃত্তের ক্ষেত্রফল = πr2 বর্গ একক।

একটি বৃত্তের ব্যাসার্ধ r একক হলে এর ক্ষেত্রফল = πr2 বর্গ একক।

বৃত্তের সূত্র সমূহ, বৃত্তের ক্ষেত্রফলের সূত্র, বৃত্তের ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের সূত্র কি

বৃত্তের ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের সূত্রটি হল πr² যেখানে r হচ্ছে বৃত্তের ব্যাসার্ধ এবং π হচ্ছে একটি ধ্রুবক বা constant যার মান 3.1416 প্রায়। একটি বৃত্তের ব্যাস বা ব্যাসার্ধ জানলে আমরা খুব সহজে সেই বৃত্তটির ক্ষেত্রফল নির্ণয় করতে পারব।

বৃত্তের ক্ষেত্রফল A=πr2

ধরুন একটি বৃত্তের ব্যাস দেওয়া রয়েছে 5 সেন্টিমিটার, এক্ষেত্রে আপনাকে বৃত্তটির ক্ষেত্রফল নির্ণয় করতে হবে। নিম্নে আমরা আপনাকে দেখাচ্ছি কিভাবে আপনি ক্ষেত্রফল নির্ণয় করতে পারবেন।

প্রথমে ব্যাস কে ব্যাসার্ধ পরিণত করতে হবে অর্থাৎ ব্যাসকে দুই দিয়ে ভাগ করলে আমরা ব্যাসার্ধ পাব। অর্থাৎ আমরা পাই বৃত্তটির ব্যাসার্ধ 2.5 সেন্টিমিটার। এখন আমরা হিসাব করলে পাব:

বৃত্তের ক্ষেত্রফল A=πr2
⇒A=π(2.5)2
⇒A=19.63495

অর্থাৎ বৃত্তের ক্ষেত্রফল 19.63 বর্গসেন্টিমিটার।

এই পদ্ধতিতে আমরা যে কোন বৃত্তের ব্যাস অথবা ব্যাসার্ধ জানার মাধ্যমে খুব সহজে তার ক্ষেত্রফল নির্ণয় করতে পারব। বৃত্তের ক্ষেত্রফল নির্ণয় করা অনেক রকমের গণিতে প্রয়োজন হয়ে থাকে। এমনকি বড় বড় গাণিতিক সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে এর ব্যবহার হয়ে থাকে।

বৃত্তের ক্ষেত্রফল নির্ণয়

ব্যাসার্ধ বিশিষ্ট একটি বৃত্ত চিত্র
ব্যাসার্ধ বিশিষ্ট একটি বৃত্ত

নিচের বিষয়গুলো একটি বৃত্তের ক্ষেত্রফলের জন্য সত্য:

  • বৃত্তের ক্ষেত্রফল হলো ব্যাসার্ধের বর্গের π গুণ।
  • বৃত্তের ব্যাসার্ধের দৈর্ঘ্য জানা থাকলে ক্ষেত্রফল নির্ণয় করা যায়।
  • বৃত্তের ব্যাসের দৈর্ঘ্য জানা থাকলে ক্ষেত্রফল নির্ণয় করা যায়।

বৃত্তের জ্যা কাকে বলে

বৃত্তের পরিধির উপর যেকোনো দুইটি বিন্দুর সংযোজক রেখাংশকে বৃত্তের জ্যা বলে। এরূপ দুইটি বিন্দু যোগ করে অসংখ্য রেখাংশ অঙ্কন করা যায়। তাই একটি বৃত্তের অসংখ্য জ্যা থাকতে পারে।

বৃত্তের ব্যাসই হচ্ছে বৃত্তের বৃহত্তম জ্যা। আবার, বৃত্তের যে কোন জ্যা এর লম্ব সমদ্বিখণ্ডক কেন্দ্রগামী। তাছাড়া, যেকোনো বৃত্তের সমান সমান জ্যা কেন্দ্র হতে সমদূরবর্তী। বৃত্তের জ্যা এর আরেকটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো বৃত্তের দুটি জ্যা এর মধ্যে কেন্দ্রের নিকটতর জ্যাটি অপর জ্যা অপেক্ষা বৃহত্তর।

নিচের বিষয়গুলো একটি বৃত্তের জ্যা এর জন্য সত্য:

  • একটি বৃত্তে অসংখ্য জ্যা আঁকা যায়।
  • বৃত্তের যে কোনো জ্যা এর লম্বসমদ্বিখণ্ডক কেন্দ্রগামী।
  • বৃত্তের কেন্দ্র থেকে সমদুরবর্তী সকল জ্যা পরস্পর সমান।
  • বৃত্তের বৃহত্তম জ্যা হলো ব্যাস।
  • বৃত্তের সমান সমান জ্যা কেন্দ্র হতে সমদূরবর্তী।

বৃত্তাংশ কাকে বলে

বৃত্তের একটি জ্যা ও একটি চাপ দ্বারা গঠিত অঞ্চলকে বৃত্তাংশ বলে।

বৃত্তের বৃহত্তম জ্যা কোনটি

কোনো বৃত্তের সকল ব্যাস সমান এবং ব্যাসই বৃত্তের বৃহত্তম জ্যা।


বৃত্তের স্পর্শক কাকে বলে

একটি সরলরেখা যদি একটি বৃত্তকে একটি ও কেবল একটি মাত্র বিন্দুতে ছেদ করে তাহলে ঐ সরলরেখাটিকে বৃত্তের স্পর্শক বলে। অন্যভাবে বললে, একটি সরলরেখা ও একটি বৃত্ত যদি একটি ও কেবল একটি বিন্দুতে ছেদ করে তাহলে সরলরেখাটিকে বৃত্তের স্পর্শক বলে।

বৃত্তের একটি অনন্য বিন্দুতে স্পর্শকারী, ব্যাসের উপর লম্ব সরলরেখাকে বৃত্তের স্পর্শক বলে। অতএব, বৃত্তের স্পর্শক বৃত্তের একটি অনন্য বিন্দুতে স্পর্শ করে। স্পর্শক সবসময়ই বৃত্তের ব্যাস বা ব্যাসার্ধের উপর লম্ব এবং বৃত্তের পরিধির উপর একটি মাত্র বিন্দু দিয়ে অতিক্রম করে।

বৃত্তের উপরস্থ কোনো বিন্দুতে বৃত্তে কেবল একটি স্পর্শক আঁকা যায়। আবার, বৃত্তের বহিঃস্থ কোনো বিন্দু হতে ঐ বৃত্তে সর্বোচ্চ দুইটি স্পর্শক আঁকা যায়। তাছাড়া, বৃত্তের কোনো বিন্দুতে অঙ্কিত স্পর্শক স্পর্শবিন্দুগামী ব্যাসার্ধের উপর লম্ব।

নিচের বিষয়গুলো একটি বৃত্তের স্পর্শকের জন্য সত্য:

  • একটি বৃত্তে অসংখ্য স্পর্শক আঁকা যায়।
  • একটি স্পর্শক বৃত্তের ব্যাসার্ধর উপর লম্ব।
  • বৃত্তের একটি বিন্দুতে একটি ও কেবল একটি স্পর্শক আঁকা যায়।
  • বৃত্তের বহিঃস্থ কোনো বিন্দু হতে ঐ বৃত্তে সর্বোচ্চ দুইটি স্পর্শক অংকন করা যায়।
  • যেকোনো স্পর্শক বৃত্তকে একটি ও কেবল একটি বিন্দুতে ছেদ করে।

বৃত্তের পরিধি কাকে বলে

একটি বৃত্তের কেন্দ্র হতে সমান দূরত্ব বজায় রেখে কোন বিন্দুর চলার পথের দৈর্ঘ্যকে বৃত্তের পরিধি বলে।

বৃত্তের সীমান্ত বরাবর দৈর্ঘ্যকে বৃত্তের পরিধি বলে। অতএব বৃত্তের পরিধি হলো বৃত্তের পরিসীমা। বৃত্তের ব্যাস বা ব্যাসার্ধ জানা থাকলে পরিধি নির্ণয় করা যায়। বৃত্তের ব্যাসকে π দ্বারা গুণ করলে গুণ করলে পরিধি পাওয়া যায়। একটি বৃত্তের ব্যাসার্ধ r একক হলে এর পরিধি 2πr একক।

∴ বৃত্তের পরিধি = 2πr একক। একটি বৃত্তের ব্যাসার্ধ r একক হলে : বৃত্তের পরিধি = 2πr একক।

নিচের বিষয়গুলো একটি বৃত্তের পরিধির জন্য সত্য:

  • বৃত্তের পরিধির উপর অসংখ্য বিন্দু থাকে।
  • বৃত্তের কেন্দ্র থেকে পরিধির উপর সকল বিন্দুর দুরত্ব পরস্পর সমান।
  • বৃত্তের ব্যাসার্ধের দৈর্ঘ্য জানা থাকলে পরিধি নির্ণয় করা যায়।
  • বৃত্তের ব্যাসের দৈর্ঘ্য জানা থাকলে পরিধি নির্ণয় করা যায়।
  • বৃত্তের ক্ষেত্রফল জানা থাকলে পরিধি নির্ণয় করা যায়।

বৃত্তের পরিধির সূত্র, বৃত্তের পরিধি নির্ণয়ের সূত্র

বৃত্তের পরিধি নির্ণয়ের সূত্রটি হল 2πr যেখানে r হচ্ছে বৃত্তের ব্যাসার্ধ এবং π হচ্ছে একটি ধ্রুবক বা constant যার মান 3.1416 প্রায়। একটি বৃত্তের ব্যাস বা ব্যাসার্ধ জানলে আমরা খুব সহজে সেই বৃত্তটির পরিধি নির্ণয় করতে পারব।

বৃত্তের পরিধি C=2πr

ধরুন একটি বৃত্তের ব্যাস দেওয়া রয়েছে 10 সেন্টিমিটার, এক্ষেত্রে আপনাকে বৃত্তটির পরিধি নির্ণয় করতে হবে। নিম্নে আমরা আপনাকে দেখাচ্ছি কিভাবে আপনি পরিধি নির্ণয় করতে পারবেন।

প্রথমে ব্যাস কে ব্যাসার্ধ পরিণত করতে হবে অর্থাৎ ব্যাসকে দুই দিয়ে ভাগ করলে আমরা ব্যাসার্ধ পাব। অর্থাৎ আমরা পাই বৃত্তটির ব্যাসার্ধ 5 সেন্টিমিটার। এখন আমরা হিসাব করলে পাব:

বৃত্তের পরিধি C=2πr
⇒C=2π(5)
⇒C=31.41593
⇒C≈31.42
অর্থাৎ বৃত্তের পরিধি 31.42 সেন্টিমিটার।

এই পদ্ধতিতে আমরা যে কোন বৃত্তের ব্যাস অথবা ব্যাসার্ধ জানার মাধ্যমে খুব সহজে তার পরিধি নির্ণয় করতে পারব। বৃত্তের পরিধি নির্ণয় করা অনেক রকমের গণিতে প্রয়োজন হয়ে থাকে। এমনকি বড় বড় গাণিতিক সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে এর ব্যবহার হয়ে থাকে।

বৃত্তের পরিসীমা, বৃত্তের ক্ষেত্রে পরিসীমা না বললে পরিধি বলে কেন?

কোন ক্ষেত্র বক্ররেখা দ্বারা পরিবেষ্টিত হলে ওই রেখাকে ওই ক্ষেত্রের পরিধি বলে। এবং কোন ক্ষেত্র সরলরেখা দ্বারা পরিবেষ্টিত হলে তার ক্ষেত্রে “পরিসীমা” শব্দটি ব্যবহৃত হয়।

যেহেতু বৃত্ত বক্ররেখা দ্বারা প্রতিবেষ্টিত । তাই এর ক্ষেত্রে “পরিধি” শব্দটির ব্যবহার করা হয়।

বৃত্ত হল গোলাকার আকৃতি যার বহিঃ সীমা দেখতে বক্রাকার ও পরিধি বা মোট দৈর্ঘ্য = ২*π*r , এখানে r = ব্যাসাধ, আর অন্য বস্তু, যেমন আয়তাকার বস্তুর বহিঃ সীমা হল সরলরেখা , মোট দৈর্ঘ্য বা পরিসীমা= ২*(বস্তুটির দৈর্ঘ্য+ প্রস্থ) । কাজেই , আকৃতি ও পরিমাপ পদ্ধতি দুটিই ভিন্ন, তাই একে পরিধি বলা হয়।

বৃত্তের পরিসীমা সূত্র, বৃত্তের পরিসীমার সূত্র

বৃত্তের পরিধি বা পরিসীমা নির্ণয়ের সূত্র হলো 2Πr একক। অর্থাৎ বৃত্তের পরিসীমা বা পরিধি = বৃত্তের ব্যাস এর দৈর্ঘ্য x Π(পাই চিহ্ন বা 3.1416)।


বৃত্তের ছেদক রেখা কাকে বলে

যে সরলরেখা বৃত্তকে দুইটি বিন্দুতে ছেদ করে তাকে বৃত্তের ছেদক রেখা বলে। অতএব, একটি জ্যা কে উভয়দিকে সীমাহীনভাবে বর্ধিত করলে ছেদক রেখা উৎপন্ন হয় যা বৃত্তকে দুইটি বিন্দুতে ছেদ করে।


বৃত্তচাপ কাকে বলে

বৃত্তের পরিধির যেকোনো অংশকে বৃত্তচাপ বলে। বৃত্ত চাপের প্রান্তবিন্দুদ্বয় যদি কোন রেখাংশের প্রান্তবিন্দুদ্বয় হয়, তাহলে ঐ রেখাংশকে বৃত্তের জ্যা বলে।

বৃত্তের একই চাপের উপর দণ্ডায়মান বৃত্তস্থ কোণ কেন্দ্রস্থ কোণের অর্ধেক। বিপরীতক্রমে, বৃত্তের একই চাপের উপর দণ্ডায়মান কেন্দ্রস্থ কোণ বৃত্তস্থ কোণের দ্বিগুণ। আবার, অর্ধবৃত্তস্থ কোণ এক সমকোণ বা ৯০°।

বৃত্তের বিভিন্ন অংশ ও অঞ্চল বিশিষ্ট বৃত্ত চিত্র
বৃত্তের বিভিন্ন অংশ ও অঞ্চল দেখা যাচ্ছে।

নিচের বিষয়গুলো একটি বৃত্তের বৃত্তচাপের জন্য সত্য:

  • একটি বৃত্তে অসংখ্য বৃত্তচাপ উৎপন্ন হতে পারে।
  • বৃত্তের ব্যাস বৃত্তের পরিধিকে পরস্পর সমান দুইটি বৃত্তচাপে বিভক্ত করে।
  • বৃত্তচাপ দ্বারা কেন্দ্রে উৎপন্ন কোণকে কেন্দ্রস্থ কোণ বলে।
  • বৃত্তচাপ দ্বারা পরিধিতে উৎপন্ন কোণকে বৃত্তস্থ কোণ বলে।

অর্ধ বৃত্তচাপ বা অর্ধবৃত্ত কাকে বলে

যে বৃত্তচাপের দৈর্ঘ্য পরিধির অর্ধেক তাকে অর্ধ বৃত্তচাপ বা অর্ধবৃত্ত বলে।

বৃত্ত কলা কাকে বলে

বৃত্তের দুইটি ব্যাসার্ধ ও একটি চাপ দ্বারা গঠিত অঞ্চলকে বৃত্তকলা বা বৃত্তীয় ক্ষেত্র বলে।

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | বৃত্ত

Q1. বৃত্তের বৃহত্তম জ্যা কে কি বলে

Ans – বৃত্তের বৃহত্তম জ্যাকে ব্যাস বলে । এই জ্যা বৃত্তের কেন্দ্র বরাবর যায় ।

Q2. সমকেন্দ্রিক বৃত্ত কাকে বলে

Ans – একই কেন্দ্র বিশিষ্ট একাধিক বৃত্তকে সমকেন্দ্রিক বৃত্ত বলে।

Q3. লম্ব বৃত্তাকার চোঙ কাকে বলে

Ans – কোনো আয়তক্ষেত্রের একটি বাহুকে অক্ষ ধরে আয়তক্ষেত্রটিকে ওই বাহুর চারিদিকে একবার পূর্ণ আবর্তন করালে যে ঘনবস্তু উৎপন্ন হয় তাকে লম্ব বৃত্তাকার চোঙ (Right-circular Cylinder) বলে ।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।