ছয় দফা আন্দোলন, ছয় দফা কর্মসূচি, ছয় দফা গুলো কি কি, ছয় দফা মনে রাখার কৌশল

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

প্রশ্নপত্র

ছয় দফা আন্দোলন

ছয় দফা আন্দোলন বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক ও গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনা। ১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে “৬ দফা দাবি” পেশ করেন।

৪ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের লাহোরে পৌঁছান এবং তার পরদিন অর্থাৎ ৫ ফেব্রুয়ারি তিনি ৬ দফা দাবি পেশ করেন। ৬ ফেব্রুয়ারি পত্রিকায় শেখ মুজিবকে বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। ফলে নিজেই ৬ ফেব্রুয়ারি এর সম্মেলন বর্জন করেন।

১৯৬৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় ছয়দফা প্রস্তাব এবং দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনের কর্মসূচি সংগৃহীত হয়। শেখ মুজিবুর রহমান ও তাজউদ্দিন আহমদের ভূমিকা সংবলিত ছয় দফা কর্মসূচির একটি পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়। যার নাম ছিল ছয় দফা আমাদের বাঁচার দাবি।

২৩শে ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমান বিরোধীদলীয় সম্মেলনে ৬ দফা পেশ করেন। এরপর ১৮ মার্চ আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ মুজিবুর রহমানের নামে ‘আমাদের বাঁচার দাবি: ৬-দফা কর্মসূচি’ শীর্ষক একটি পুস্তিকা প্রচার করা হয়। ২৩ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দফা উত্থাপন করা হয় লাহোর প্রস্তাবের সাথে মিল রেখে। ছয় দফা দাবির মূল উদ্দেশ্য- পাকিস্তান হবে একটি ফেডারেল রাষ্ট্র, ছয় দফা কর্মসূচির ভিত্তিতে এই ফেডারেল রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যকে(প্ররাষ্ট্র/উপরাষ্ট্র)পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে। ছয়দফা কর্মসূচীর ভিত্তি ছিল ১৯৪০ সালের ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব। পরবর্তীকালে এই ৬ দফা দাবিকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতির স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন জোরদার হয়। বাংলাদেশের জন্য এই আন্দোলন এতোই গুরুত্বপূর্ণ যে একে ম্যাগনা কার্টা বা বাঙালি জাতির মুক্তির সনদও বলা হয়।

ছয় দফা কর্মসূচি, ছয় দফা কর্মসূচি কি

পূর্ব বাংলার জনগণের প্রতি পাকিস্তান রাষ্ট্রের চরম বৈষম্যমূলক আচরণ ও অবহেলার বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম তাৎপর্য লাভ করে ৬ দফার স্বায়ত্তশাসনের দাবির মধ্যে। ১৯৬৬ সালের ৫-৬ ফেব্রুয়ারি লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী দলগুলোর সম্মেলনে যোগদান করেন শেখ মুজিবুর রহমান। সেখানে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের অধিকার রক্ষার জন্য ৬ দফা দাবি তুলে ধরেন।

দফাগুলো হলো—

  • ১. পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাধীন সংসদীয় পদ্ধতির সরকার। সর্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে প্রাপ্তবয়স্কদের ভোটে নির্বাচন অনুষ্ঠান।
  • ২. কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে মাত্র দুটি বিষয় থাকবে—প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অন্য সব বিষয়ে অঙ্গরাজ্যগুলোর পূর্ণ ক্ষমতা থাকবে।
  • ৩. সারা দেশে হয় অবাধে বিনিয়োগযোগ্য দুই ধরনের মুদ্রা, না হয় বিশেষ শর্ত সাপেক্ষে একই ধরনের মুদ্রা প্রচলন করা।
  • ৪. সব ধরনের কর ধার্য করার ক্ষমতা থাকবে আঞ্চলিক সরকারের হাতে। আঞ্চলিক সরকারের আদায় করা রাজস্বের একটা নির্দিষ্ট অংশ কেন্দ্রীয় সরকারকে দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে।
  • ৫. অঙ্গরাজ্যগুলো নিজেদের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার মালিক হবে। এর নির্ধারিত অংশ তারা কেন্দ্রকে দেবে।
  • ৬. অঙ্গরাজ্যগুলোকে আঞ্চলিক নিরাপত্তার জন্য আধা সামরিক বাহিনী গঠন করার ক্ষমতা দেওয়া।

৬ দফা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামরিকসহ সব অধিকারের কথা তুলে ধরে। আইয়ুব খান সরকার ৬ দফাকে ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী কর্মসূচি’ হিসেবে আখ্যায়িত করে। এতে প্রত্যক্ষভাবে স্বাধীনতার কথা বলা না হলেও এই ৬ দফা কর্মসূচি বাঙালিদের স্বাধীনতার মন্ত্রে গভীরভাবে উজ্জীবিত করে। এটি ছিল বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ।

ছয় দফা দিবস কবে

প্রতি বছর ৭ই জুন বাংলাদেশে ‘৬ দফা দিবস’ পালন করা হয়। ১৯৬৬ সালের ৭ জুন ৬ দফা দাবির পক্ষে দেশব্যাপী তীব্র গণ-আন্দোলনের সূচনা হয়। এই দিনে আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালে টঙ্গী, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জে পুলিশ ও ইপিআরের গুলিতে মনু মিয়া , শফিক, শামসুল হক, মুজিবুল হকসহ মোট ১১ জন বাঙালি নিহত হন। ৬ দফা আন্দোলনে প্রথম নিহত হয়েছিলেন সিলেটের মনু মিয়া। ছয় দফা মূলত স্বাধীনতার এক দফা ছিল। ছয় দফার মধ্যেই স্বাধীনতার বীজ নিহিত ছিল।

ছয় দফা কর্মসূচি কে উত্থাপন করেন

১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এক সম্মেলনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে “৬ দফা দাবি” পেশ করেন।

ছয় দফা কর্মসূচি গুলো কি কি, ছয় দফা গুলো কি কি, ৬ দফা গুলো কি কি, ছয় দফা দাবি গুলো কি কি

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ঐতিহাসিক ছয় দফার ভূমিকা ছিল অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ। মূলত এই ছয় দফা কর্মসূচির মাধ্যেমে বাঙ্গালি জাতি পূর্ণতা পেয়েছে। তাই আমাদের প্রত্যকের ঐতিহাসিক ছয় দফা কর্মসূচী জেনে রাখা প্রয়োজন। আপনারা যারা এবছর চাকরির পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করবেন তারা ছয় দফা গুলো কি কি এই সমন্ধে পড়ে জেনে রাখতে পারেন। নিচে ৬ দফা গুলো কি কি তা উল্লেখ করা হলো-

ছয় দফার প্রথম দফা কি

প্রথম দফাঃ শাসনতান্ত্রিক কাঠামো ও রাষ্ট্রের প্রকৃতি

লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে সংবিধান রচনা করে পাকিস্তান রাষ্ট্র-কে একটি ফেডারেশনে পরিণত করতে হবে; যেখানে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার গঠন করা থাকবে এবং প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিকদের ভোটে নির্বাচিত আইন পরিষদ সার্বভৌম হবে।

দ্বিতীয় দফাঃ কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা

কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা থাকবে কেবল মাত্র দুইটি ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকবে- যথা, দেশরক্ষা ও বৈদেশিক নীতি। অবশিষ্ট সকল বিষয়ে অঙ্গ-রাষ্ট্রগুলির ক্ষমতা থাকবে বাধাহীন।

তৃতীয় দফাঃ মুদ্রা বা অর্থ-সম্বন্ধীয় ক্ষমতা

এই দফায় মূলত দেশের মুদ্রা ব্যবস্থা সম্পর্কে দুইটি বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

  • সারা দেশের জন্যে দু’টি আলাদা আলাদা, অথচ অবাধে বিনিময়যোগ্য মুদ্রা চালু থাকবে।
  • বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, সারা দেশের জন্য শুধুমাত্র একটি মুদ্রা ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে মূলধন পাচারের পথ বন্ধ করার জন্য শাসন ব্যবস্থায় একটি কার্যকর ব্যবস্থা বজায় রাখতে হবে। এক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের জন্যও একটি পৃথক রিজার্ভ ব্যাংক তৈরি করতে হবে এবং পূর্ব পাকিস্তানের জন্য একটি পৃথক আর্থিক বা মুদ্রানীতি চালু করতে হবে।

চতুর্থ দফাঃ রাজস্ব, কর, বা শুল্ক সম্বন্ধীয় ক্ষমতা

আঞ্চলিক সরকারের হাতে সকল ধরনের ট্যাক্স,খাজনা ও কর ধার্য এবং আদায়ের ক্ষমতা থাকবে। আঞ্চলিক সরকারের আদায়কৃত একটি নির্দিষ্ট অংশ সাথে সাথেই ফেডারেল তহবিলে জমা হবে। শাসনতন্ত্রে এ ব্যাপারে রিজার্ভ ব্যাংক সমূহ এর বিধান কার্যকর থাকবে।

পঞ্চম দফাঃ বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক ক্ষমতা

বৈদেশিক মুদ্রা ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রদেশগুলোর হাতে পূর্ণ নিয়ন্ত্রন ক্ষমতা কার্যকর থাকবে। বৈদেশিক বাণিজ্য ও বৈদেশিক সাহায্যের ব্যাপারে প্রদেশগুলো যুক্তিযুক্ত হারে যুক্তরাষ্ট্র জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা চাহিদা মিটাবে।

ষষ্ঠ দফাঃ আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের ক্ষমতা

আঞ্চলিক সংহতি ও শাসনতন্ত্র প্রতি রক্ষার জন্য শাসনতন্ত্রে অঙ্গ-রাষ্ট্রগুলিকে স্বীয় কর্তৃত্বাধীনে আধা সামরিক বা আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠন ও রাখার ক্ষমতা দিতে হবে।

ছয় দফা মনে রাখার কৌশল

শাসনতান্ত্রিক কাঠামোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতাবলে মুদ্রা, রাজস্ব, বৈদেশিক বাণিজ্য ও আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের প্রয়োজন। 

ব্যাখ্যা:

১. শাসনতান্ত্রিক কাঠামোর জন্য = শাসনতান্ত্রিক কাঠামো ও রাষ্ট্রের প্রকৃতি

২. কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতাবলে = কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা

৩. মুদ্রা = মুদ্রা বা অর্থ-সম্বন্ধীয় ক্ষমতা

৪. রাজস্ব = রাজস্ব, কর বা শুল্ক সম্বন্ধীয় ক্ষমতা

৫. বৈদেশিক বাণিজ্য = বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক ক্ষমতা

৬. আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের = আঞ্চলিক সেনাবাহিনী গঠনের ক্ষমতা

ছয় দফার গুরুত্ব

  • ছয় দফা আন্দোলনের মাধ্যমে বাঙালি জাতীয়তাবাদের সুদৃঢ় ঘটেছিল। এ আন্দোলনের সময় সমগ্র বাঙালি জাতি একটি প্লাটফর্মের অধীনে চলে আসে।
  • ৬ দফা দাবি ছিল বাঙালি জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার এক মূর্ত প্রতীক এবং এ কারণেই এর প্রতি তাদের অকুণ্ঠ সমর্থন ছিল।
  • ৬ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে বাঙালি জাতি ১৯৬৯ এ ঝাপিয়ে পড়েছিল। ৬ দফা দাবির মাধ্যমে সর্বপ্রথম পূর্ব পাকিস্তানকে একটি পৃথক অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত করে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের দাবি পেশ করা হয়। শেখ মুজিবুর রহমানের প্রচারণার ফলে ৬ দফার দাবি অতি শীঘ্র বাংলার জনগণের প্রাণের দাবি হয়ে ওঠে। ।
  • ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই বাঙালিরা স্বাধিকার আন্দোলন পরিচালনা করে। তবে পাকিস্তান সৃষ্টির প্রথম দিকে এ আন্দোলন তেমন পূর্ণতা পায় নি। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত ৬ দফা দাবি বাঙালি জাতিকে তাদের স্বাধিকার আদায়ের অপরিসীম শক্তি ও সাহস যুগিয়েছে।
  • ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ৬ দফার প্রভাব ছিল গুরুত্বপূর্ণ। আওয়ামী লীগ ছয় দফা কর্মসূচিকে তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে সন্নিবেশ করে। নির্বাচনী প্রচারাভিযানে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ তথা শেখ মুজিবুর রহমান নির্বাচনে জয়লাভ করলে জনগণকে ৬ দফা বাস্তবায়নের আশ্বাস দেন।
  • ৬ দফাকে কেন্দ্র করে ১৯৭০ সাল পর্যন্ত স্বায়ত্তশাসনের দাবি শেষ পর্যন্ত স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়। ৬ দফা আন্দোলন ছিল একটি গণমুখি আন্দোলন। ৬ দফা আদায়ের জন্য বাঙালি জাতি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ হয়ে সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্যদিয়ে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়।
  • ৬ দফা কর্মসূচি প্রণয়নের ফলে বাঙালি জাতির রাজনৈতিক জীবনে একটি বিরাট পরিবর্তন সূচিত হয়। কারণ ৬ দফা প্রণয়নে যিনি একক ভূমিকা পালন করেন তিনি হলেন শেখ মুজিবুর রহমান। অনেকে এটাকে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের ম্যাগনাকার্টা বলে অভিহিত করেছেন।

ছয় দফা কর্মসূচিকে বাঙালির ম্যাগনাকার্টা বলা হয় কেন

ছয় দফা দাবির মূল উদ্দেশ্য- পাকিস্তান হবে একটি ফেডারেলরাষ্ট্র এবং ছয় দফা কর্মসূচীর ভিত্তিতে এই ফেডারেলরাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গরাজ্যকে পূর্ন স্বায়ত্তশাসন দিতে হবে। ছয়দফা কর্মসূচীর ভিত্তি ছিল ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব । পরবর্তীকালে এই ৬ দফা দাবিকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতির স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন জোরদার করা হয়। ফলে ১৯৭১ সালে বাঙালিরা ছয় দফার অনুপ্রেরণায় যুদ্ধ করে বাংলাদেশ স্বাধীন করে ।

এজন্যই ছয় দফা দাবি কে বাঙালি জাতির ম্যাগনাকার্টা বা মুক্তির সনদ বলা হয় ।

ম্যাগনাকার্টা নামের ইতিহাস

১২১৫ সালের লন্ডনে এক নদীর পাড়ে একটি ঘটনা ঘটেছিলো, যা ইংরেজি ভাষাভাষী অঞ্চলসহ বিশ্বের ঘটনা প্রবাহকে পাল্টে দিয়েছিলো। রাজা নিজের খুশিমতো জোর করে নাগরিক সমাজের সম্পত্তি আত্মসাত্ বা করায়ত্ত করে নিতেন। এরই বিরুদ্ধে নাগরিক সমাজ একত্রিত হন।

নদীর পাড়ে রানীমেড নামক স্থানে জড়ো হয়ে সমবেত নাগরিক স্থির করেন যে, রাজার ক্ষমতার রাশ টেনে ধরতে হবে। এর ফল হচ্ছে ম্যাগনাকার্টা। এটি ৬৩টি অনুচ্ছেদে বিভক্ত ৪ হাজার শব্দের এক সমৃদ্ধ দলিল। শতশত বছর ধরে ইংরেজ জাতি এবং বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রসমূহ এই মূলনীতি অনুসরণ ও ব্যাখ্যা করেছে এবং স্বাধীনতার ভিত্তি গড়ে উঠেছে। আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণা এবং বিল অব রাইট লেখা হয়েছে এর উপর ভিত্তি করে। সর্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণাতেও প্রতিফলিত হয়েছে এর ধারণাসমূহ। সরকারের শাসনের রাশ টেনে ধরার ক্ষেত্রে একে প্রতীকী অর্থে ব্যবহার করা হয়।

বাঙালির ম্যাগনাকার্টা

১৯৪৭ সালে উপমহাদেশ বিভক্ত হয়ে ভারত পাকিস্তান স্বাধীন রাষ্ট্র গঠিত হলেও স্বাধীন হয়নি তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান তথা বর্তমান বাংলাদেশ। ভারত পাকিস্তান বিভক্ত হলে পূর্বপাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তানের অন্তভূক্ত হয়ে থাকে। বাঙালীদের উপর ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের বৈষম্য, শোষণ-নিপীড়ন, জোড়-জুলুম, অন্যায়-অত্যাচার শেষ হয়ে গেলে পশ্চিম পাকিস্তানিরা বাঙালীদের উপর চরম বৈষম্য, অন্যায়-অত্যাচার শুরু করে। তারই ধারাবাহিকতায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের বুদ্ধিজীবী, অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিবিদেরা এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠে এবং ১৯৬৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারী আওয়ামীলীগের ওয়ার্কিং কমিটির সভায় ছয়দফা দাবি আদায়ের লক্ষে কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়।

পরবর্তীতে ১৯৬৬ সালের ১৮ মার্চ আওয়ামীলীগের কাউন্সিল অধিবেশনে শেখ মুজিবুর রহমানের নামে ‘আমাদের বাঁচার দাবি: ৬-দফা কর্মসূচি’ শীর্ষক একটি পুস্তিকা প্রচার করা হয়। ক্রমান্বয়ে ছয় দফা দাবিকে কেন্দ্র করে বাঙালি জাতির স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন গড়ে উঠে। আর তাই ছয় দফা দাবিকে বাঙালী জাতির মুক্তির সনদ বলা হয় এবং এটিকে ইংল্যান্ডের ”রাজা জন” কতৃক স্বীকৃত ম্যাগনাকার্টার সাথে তুলনা করা হয়।

আরো অন্যান্য প্রশ্নোত্তরের সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | ছয় দফা

Q1. ঐতিহাসিক ছয় দফা কোথায় ঘোষিত হয়

Ans – ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি প্রথম “লাহোরে” উত্থাপন করা হয়।

Q2. ছয় দফা আন্দোলন কত সালে হয়

Ans – ১৯৬৬ সালের ২৩ মার্চ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দফা কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়।

Q3. ছয় দফা কী

Ans – ১৯৬৬ সালের এ দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ ৬-দফা দাবির পক্ষে দেশব্যাপী তীব্র গণআন্দোলনের সূচনা হয়।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।