লর্ড মাউন্টব্যাটেন কে ছিলেন, মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা কি, মাউন্টব্যাটেন প্রস্তাব কি

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

লর্ড মাউন্টব্যাটেন কে ছিলেন

মাউন্টব্যাটেন, লর্ড (১৯০০-১৯৭৯) ১৯৪৭ সালের মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত ভারতের ভাইসরয় ও গভর্নর জেনারেল। লুই মাউন্টব্যাটেন ১৯০০ সালের ২৫ জুন ইংল্যান্ডের উইন্ডসর (Windsor)-এ জন্মগ্রহণ করেন। প্রিন্স লুই ব্যাটেনবার্গ ও রাণী ভিক্টোরিয়ার পৌত্রী প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়া অব হেস্-এর চতুর্থ পুত্র লর্ড মাউন্টব্যাটেন ১৯১৩ সালে রাজকীয় নৌবাহিনীতে প্রবেশ করেন। ১৯২১ সালে প্রিন্স অব ওয়েলস্-এর সহকারী (aide-de-camp) নিযুক্ত হওয়ার আগে তিনি নৌবাহিনীর বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪৩ সালে লর্ড দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মিত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসেবে সাফল্যের সঙ্গে জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেন এবং বার্মা পুনরুদ্ধার করেন। ১৯৪৭ সালের মার্চ মাসে তিনি ভারতের ভাইসরয় নিযুক্ত হন এবং একই বছরের মধ্যআগস্ট পর্যন্ত এই পদে আসীন থাকেন। ভাইসরয় হিসেবে তাঁর কার্যকাল সংক্ষিপ্ত হলেও এই সময়ে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সেসব সিদ্ধান্তের মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য হচ্ছে উপমহাদেশের বিভক্তি এবং ভারত ও পাকিস্তানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর।

লর্ড স্বাধীন ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত হন। এই পদে আসীন থাকাকালে (১৯৪৭-এর আগস্ট থেকে ১৯৪৮-এর জুন পর্যন্ত) তিনি ভারতীয় রাজন্যবর্গকে হয় ভারতীয় ইউনিয়ন, না হয় পাকিস্তানের সঙ্গে একীভূত হতে উদ্বুদ্ধ করেন।

তাঁর সময়ে কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যখন সংঘর্ষ বাঁধে তখন তিনি ভারত সরকারকে বিরোধটির শান্তিপূর্ণ মীমাংসার জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপনের পরামর্শ দেন। তখন থেকে কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে।

মাউন্টব্যাটেন ১৯৪৭ সালে ‘আর্ল’ উপাধি প্রাপ্ত হন। ১৯৪৮ সালে দেশে ফিরে তিনি ব্রিটিশ নৌবাহিনীতে একাধিক উচ্চ পদে আসীন হন। ১৯৫০-৫২ সালে চতুর্থ ‘সি লর্ড’, ১৯৫২-৫৪ সালে ভূমধ্যসাগরীয় নৌবহরের প্রধান এবং ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৯ পর্যন্ত প্রথম ‘সি লর্ড’ এগুলির অন্যতম। ১৯৫৬ সালে তিনি নৌবহরের অ্যাডমিরাল হন এবং ১৯৫৯ থেকে ১৯৬৫ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মাউন্টব্যাটেন কর্মজীবন থেকে অবসর নেওয়ার পরও ভারত বিষয়ে যথেষ্ট আগ্রহী ছিলেন। তিনি ১৯৭৯ সালের ২৭ আগস্ট আয়ারল্যান্ডের অদূরে ডোনেগাল বে-তে তাঁর নৌযানে এক বিস্ফোরণে নিহত হন।

মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা কি

মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা, যা আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটিশ ভারতের বিভাজনের জন্য মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা নামে পরিচিত, ভারতীয় ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় ছিল। ভারতের শেষ ভাইসরয় লর্ড লুই মাউন্টব্যাটেনের প্রস্তাবিত, এই পরিকল্পনাটি 1947 সালে ব্রিটিশ ভারতকে দুটি স্বাধীন দেশ ভারত ও পাকিস্তানে ভাগ করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

ভারত ভাগ কোনও নতুন ধারণা ছিল না। ব্রিটিশরা 1858 সালে তাদের শাসনের শুরু থেকেই অবিভক্ত ভারতের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছিল কিন্তু জড়িত সমস্ত পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য সমাধান নিয়ে আসতে ব্যর্থ হয়েছিল। মুসলিমরা একটি ইসলামী রাষ্ট্র চেয়েছিল, যখন হিন্দুরা একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র চেয়েছিল, তা সে সংখ্যালঘুদের জন্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধা বা তাদের ছাড়াই হোক না কেন; শিখরা একটি স্বাধীন পাঞ্জাব চেয়েছিল; এবং খ্রিস্টান এবং জরথুস্ট্রিয়ানদের মতো অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের কী হবে সে নিয়েও যথেষ্ট চিন্তা ছিল। 

দেশভাগের সময় হিন্দু ও মুসলিমরা যাতে একে অপরকে হত্যা না করে, তা নিশ্চিত করাই ছিল এই পরিকল্পনার লক্ষ্য।

  • ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লেমেন্ট অ্যাটলি ভারতে এসে পৌঁছান এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লেমেন্ট অ্যাটলি তাকে ক্ষমতা দ্রুত হাত বদল নিশ্চিত করার দায়িত্ব দেন।
  • 1947 সালের মে মাসে, মাউন্টব্যাটেন একটি প্রকল্প উপস্থাপন করেছিলেন যেখানে প্রদেশগুলিকে স্বাধীন উত্তরাধিকারী রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করা হবে এবং তারপরে গণপরিষদে যোগদান বা যোগদান না করার বিকল্প দেওয়া হবে। এই কৌশলটির নাম দেওয়া হয়েছিল “ডিকি বার্ড প্ল্যান” ।
  • ভাইসরয় 3 রা জুনের পরিকল্পনা নামে পরিচিত একটি কৌশল তৈরি করেছিলেন।
  • বিচ্ছেদ, স্বাধীনতা, উভয় জাতির সার্বভৌমত্ব এবং তাদের নিজস্ব সংবিধান লেখার অধিকার সবই এই পরিকল্পনার অংশ ছিল।
  • জম্মু ও কাশ্মীরের মতো দেশীয় রাজ্যগুলি ভারত বা পাকিস্তানে যোগ দেবে কিনা তা বেছে নিতে পারে।

মাউন্টব্যাটেন প্রস্তাব কি, মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা বিভিন্ন দিক গুলি আলোচনা করো

জিন্নার পাকিস্তান রাষ্ট্রের দাবি এবং তাতে জওহরলাল ও প্যাটেলের সম্মতি থাকায় মাউন্টব্যাটেনের উপদেষ্টা ইসমে ভারতভাগের পরিকল্পনা ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাঠান (১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৬ মে)। পার্লামেন্টে প্রস্তাবটি ‘ভারতীয় স্বাধীনতা আইন রূপে পাস হয় (যদিও রাজকীয় সম্মতি লাভ করে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জুলাই) যা ‘মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা’ হিসেবে পরিচিত ছিল।

বিভিন্ন প্রস্তাব: মাউন্টব্যাটেনের প্রস্তাবে বলা হয়ㅡ

  • [i] ভারতবর্ষকে বিভক্ত করে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি ডােমিনিয়নের সৃষ্টি করা হবে। ডােমিনিয়ন দুটি সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে নিজ নিজ অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক বিষয়সমূহ পরিচালনা করবে।
  • [ii] মুসলমান প্রধান প্রদেশ—সিন্ধু, ব্রিটিশ অধিকৃত বালুচিস্তান, উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, পশ্চিম পাঞ্জাব ও পূর্ব বাংলা নিয়ে পাকিস্তান গড়া হবে।
  • [iii] পাঞ্জাব ও বাংলাকে বিভক্ত করে কোন্ অঞ্চলকে কোন্ ডােমিনিয়নের সঙ্গে যুক্ত করা হবে তা নির্ধারণের জন্য একটি সীমানা নির্ধারণ কমিশন ক্ষমতা হস্তান্তরের আগেই গঠিত হবে।
  • [iv] আসামের শ্রীহট্ট জেলা কোন্ ডােমিনিয়নের সঙ্গে যুক্ত হবে তা গণভােটে স্থির হবে।
  • [v] দেশীয় রাজ্যগুলি নিজ নিজ রাজ্যে সার্বভৌম ক্ষমতা লাভ করবে এবং ইচ্ছা করলে তারা যে-কোনাে ডােমিনিয়নে যােগ দিতে পারবে।
  • [vi] প্রতি ডােমিনিয়নের নির্বাচিত গণপরিষদ নিজ এলাকার সংবিধান রচনা করবে।
  • [vii] যতদিন না সংবিধান রচিত হচ্ছে ততদিন ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক নিযুক্ত একজন গভর্নর-জেনারেল ওই ডােমিনিয়নের শাসনে থাকবেন।
  • [viii] স্বাধীনতালাভের পর ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কোনাে আইন ওই দুই ডােমিনিয়নে বলবৎ থাকবে না। প্রতি ডােমিনিয়নের নির্বাচিত আইনসভা নিজ নিজ দেশের জন্য আইন রচনা করবে।

মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা বৈশিষ্ট্য

  • পরিকল্পনার কেন্দ্রীয় বৈশিষ্ট্য ছিল ব্রিটিশ ভারতকে দুটি পৃথক রাষ্ট্র, ভারত ও পাকিস্তানে বিভক্ত করা। এই বিভাজনটি মূলত ধর্মীয় লাইনের উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছিল, যেখানে পাকিস্তান মুসলমানদের জন্য একটি আবাসভূমি হতে চেয়েছিল।
  • পরিকল্পনায় দুটি অধিরাজ্য, ভারত ও পাকিস্তান সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়েছিল, যার মধ্যে দেশীয় রাজ্যগুলির একটি রাষ্ট্রে যোগদান বা স্বাধীন থাকার বিকল্প ছিল। ধর্মীয় জনসংখ্যার উপর ভিত্তি করে সীমারেখা টানা হয়েছিল, কিন্তু সম্প্রদায়ের জটিল মিশ্রনের কারণে এই বিভাজনটি সরল ছিল না।
  • পরিকল্পনাটির একটি দ্রুত সময়রেখা ছিল, যার লক্ষ্য ছিল 15 আগস্ট, 1947 সালের মধ্যে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। এই জরুরিতা একটি মসৃণ রূপান্তর বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জের দিকে নিয়ে যায় এবং সম্পদ, সম্পদ এবং প্রশাসনিক যন্ত্রপাতির বিভাজন সম্পর্কিত সমস্যাগুলিকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনার গুরুত্ব

মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনাটি অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে কারণ এটি ভারতের স্বাধীনতার সংগ্রামের সমাপ্তি এবং ভারত ও পাকিস্তানের আধুনিক দেশগুলির ভিত্তি স্থাপন করেছিল। এটির লক্ষ্য ছিল হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা মোকাবেলা করা, পাশাপাশি ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারতীয় হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য একটি রোডম্যাপ প্রদান করা।

মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা মূল বিষয় কি ছিল

দেশব্যাপী চরম উত্তেজনার মধ্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট এটলি ঘোষণা করেন যে, ব্রিটিশ সরকার 1948 খ্রিস্টাব্দের জুন মাসের মধ্যে ভারতীয়দের হাতে ক্ষমতা প্রত্যার্পণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন । এ বিষয়ে প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করার জন্য লর্ড মাউন্টব্যাটেনকে দায়িত্ব দেওয়া হয় ।

1947 খ্রিস্টাব্দের 24 শে মার্চ লর্ড ওয়াভেলের স্থলাভিষিক্ত হয়ে লর্ড মাউন্টব্যাটেন দাঙ্গাবিধ্বস্ত ভারতে বড়লাট হয়ে আসেন । তিনি কংগ্রেস ও মুসলিম নেতাদের বোঝালেন যে, দেশবিভাগ অনভিপ্রেত হলেও তৎকালীন রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে সব পক্ষেরই উচিত তা মেনে নেওয়া ।

মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনার ফলাফল

  • মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা ভারত ও পাকিস্তানের জন্য ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পথ প্রশস্ত করেছিল। 1947-এ, ভারত ও পাকিস্তান দুটি সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে আবির্ভূত হয়, যা প্রায় 200 বছরের ব্রিটিশ সাম্রাজ্য শাসনের অবসান ঘটায়।
  • যদিও পরিকল্পনাটি সাম্প্রদায়িক সহিংসতা প্রতিরোধের লক্ষ্যে ছিল, দুর্ভাগ্যবশত, এটি ব্যাপক রক্তপাত, দাঙ্গা এবং বাস্তুচ্যুতির দিকে পরিচালিত করে কারণ লক্ষ লক্ষ হিন্দু, মুসলমান এবং শিখ দুই দেশের মধ্যে স্থানান্তরিত হয়েছিল।
  • সহিংসতা জাতির জন্মের উপর ছায়া ফেলে এবং উপমহাদেশের সম্মিলিত স্মৃতিতে স্থায়ী দাগ ফেলে।
  • এই বিভাজন দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক ল্যান্ডস্কেপকে নতুন আকার দেয়। দুটি জাতির সৃষ্টি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, সীমানা এবং জোটের পুনর্নির্ধারণের দিকে পরিচালিত করে, যা আগামী কয়েক দশক ধরে এই অঞ্চলের রাজনীতিকে প্রভাবিত করে।
  • বিভাজনটি কাশ্মীর সংঘাতের জন্যও মঞ্চ তৈরি করে, কারণ জম্মু ও কাশ্মীরের রাজকীয় রাজ্য ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে একটি বিতর্কিত অঞ্চল হয়ে ওঠে, যার ফলে চলমান উত্তেজনা এবং সংঘাত দেখা দেয়।
  • মাউন্টব্যাটেন প্ল্যানের উত্তরাধিকার ঐতিহাসিক বিতর্ক এবং বিশ্লেষণের একটি বিষয়। যদিও এটি স্বাধীনতা প্রদানের লক্ষ্য অর্জন করেছে।

মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনার মাধ্যমে ভারত বিভাজন পদ্ধতি

[1] শীর্ষনেতৃবর্গের সঙ্গে আলােচনার সূত্রে: ভাইসরয় মাউন্টব্যাটেন প্রায় দেড় মাসের মধ্যে (১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২৪ মার্চ থেকে ৬ মে মধ্যে) গান্ধিজি, জওহরলাল, বল্লভভাই প্যাটেল, জিন্না ও দেশীয় রাজাদের সঙ্গে প্রায় ১৩৩ বার বৈঠকে বসেন। ভারত বিভাজন আটকানাের বিভিন্ন উদ্যোগ সত্ত্বেও জিন্না তাঁর পাকিস্তান দাবিতে অনড় থাকেন। মাউন্টব্যাটেন উপলব্ধি করেন যে, ক্যাবিনেট মিশন বা মন্ত্রী মিশন নির্ধারিত ব্যবস্থাপনার পরিবর্তে এক বিকল্প পরিকল্পনা রচনা করা দরকার।

[2] বলকান পরিকল্পনা রচনার মাধ্যমে: বিকল্প পরিকল্পনা হিসেবে মাউন্টব্যাটেন বলকান পরিকল্পনা (Plan Balkan) অনুসরণ করেন। এই পরিকল্পনায় পাঞ্জাব ও বাংলা ভাগের প্রস্তাব রাখা হয় এবং বলা হয় যেসকল প্রদেশ সাংবিধানিক সভায় যােগ দেবে তাদেরও ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। কিন্তু নেহরু ও জিন্না এই পরিকল্পনাকে গ্রহণ না করায় বলকান পরিকল্পনা তার কার্যকারিতা হারায়।

[3] প্ল্যান পার্টিশানের রূপায়ণের দ্বারা: মাউন্টব্যাটেন ভারত বিভাজন লক্ষ্যে প্ল্যান পার্টিশান নামক এক পরিকল্পনা পেশ করেন। নেহরু ও ভি. পি. মেননের (রায়বাহুদুর মেননের) সাহায্য নিয়ে তিনি এই পরিকল্পনা রচনা করেন। এই পরিকল্পনায় বলা হয় ভারত ও পাকিস্তান দু-পক্ষের ডােমিনিয়ন সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে।

[4] ভারতীয় স্বাধীনতা আইন পাসের মাধ্যমে: মাউন্টব্যাটেনের প্রস্তাব মেনে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় স্বাধীনতা বিল রচনা করে। ব্রিটেনের আইনসভায় পাস হওয়ার (১৬ জুলাই) পর সম্রাট ষষ্ঠ জর্জ বিলটিতে সম্মতি জ্ঞাপন করেন (১৮ জুলাই)। বিলটি আইনে পরিণত হলে বড়লাট মাউন্টব্যাটেন তা কার্যকর করে ইন্ডিয়া ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন ডােমানিয়নের প্রতিষ্ঠা ঘটান।

[5] কংগ্রেস ও লিগের সাহায্য নিয়ে: গান্ধিজি ও মৌলানা আজাদ দেশভাগের ঘাের বিরােধী হলেও নেহরু ও প্যাটেলের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস কার্যকরী সমিতি শেষপর্যন্ত ভারত বিভাজনে সায় দিয়েছিল। মুসলিম লিগও মাউন্টব্যাটেন প্রস্তাব মেনে নিলে ভারত বিভাজন সম্ভব হয়।

মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা বিশ্লেষণ

মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা কৌশলগত প্রতারণার একটি মাস্টারপিস ছিল।

  • এটি ভারতকে ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের জন্য ও পাকিস্তানকে ভারতের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনে সহায়তা করেছিল।
  • ব্রিটিশদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভারত ও পাকিস্তান থেকে তাদের সৈন্যবাহিনীকে বের করে আনতে হয়েছিল এবং ভারতীয় নেতাদের ক্ষমতা দিতে হয়েছিল।
  • এটি জনসংখ্যা বিনিময়ের অনুমতি দেয়, যার ফলে হিন্দুরা পাকিস্তান থেকে ভারতে চলে যেতে পারে এবং মুসলমানরা ভারত থেকে পাকিস্তানে চলে যেতে পারে।
  • জনসংখ্যার বিনিময় দুটি নতুন রাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা হ্রাস করে এবং পরে তাদের একে অপরের সাথে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস সহজ করে তোলে।
  • ব্রিটেনকে কোনো সহিংসতা ছাড়াই উপমহাদেশ থেকে তার সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করতে সক্ষম করা।
আরো অন্যান্য সরকারি স্কিম সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা

Q1. মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা কবে প্রকাশিত হয়

Ans – পার্লামেন্টে প্রস্তাবটি ‘ ভারতীয় স্বাধীনতা আইন ‘ রূপে পাস হয় ( ১৯৪৭ খ্রি. ১৮ জুলাই ) , যা ‘ মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা ‘ হিসেবে পরিচিত ।

Q2. মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা কবে ঘোষিত হয়

Ans – ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২৪শে মার্চ লর্ড লুই মাউন্টব্যাটেন ভারতের বড়লাটের কার্যভার গ্রহণ করেন। বহু চেষ্টা করেও তিনি ভারতের অখণ্ডতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হন এবং অবশেষে ৩রা জুন তিনি স্পষ্টভাবে ভারত বিভাগের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। তাঁর এই ঘোষণা বা পরিকল্পনা ‘মাউন্টব্যাটেন প্রস্তাব’ বা ‘মাউন্টব্যাটেন রোয়েদাদ’ নামে পরিচিত।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।