শিল্পায়ন কি, শিল্পায়ন কাকে বলে, অর্থনৈতিক উন্নয়নে শিল্পায়নের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

শিল্পায়ন কি

শিল্পায়ন শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো ‘Industrialization’। যা ল্যাটিন শব্দ Industria হতে উৎপন্ন হয়েছে। আর Industria শব্দের অর্থ হলো কর্মকাণ্ড বা উদ্যোগ। বৃহৎ অর্থে কোনো খাতে বৃহৎ যান্ত্রিক উৎপাদন সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে শিল্পায়ন বলা হয়।

শিল্পায়নের ইতিহাস শুরু হয় ব্রিটিশ শাসনামলে। ব্রিটিশরা এখানে টেক্সটাইল, সিমেন্ট, চিনি, চা, ইত্যাদি শিল্পের বিকাশ ঘটায়। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকার শিল্পায়নের উপর জোর দেয়। ১৯৭০-এর দশকে আমদানি-প্রতিস্থাপন শিল্পায়ন কৌশল অনুসরণ করে। ১৯৮০-এর দশকে বাণিজ্য উদারীকরণের মাধ্যমে শিল্পায়নের দিকে ঝুঁকে পড়ে।

শিল্পায়ন কাকে বলে

অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের ইউরোপ তথা ব্রিটেনে শিল্প বিপ্লব ঘটে। তখন থেকেই মানুষ শিল্পায়ন শব্দটির সাথে পরিচয় ঘটে।

শিল্পায়ন হলো এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে মানুষ কৃষি সমাজ থেকে যান্ত্রিক শিল্প সমাজে প্রবেশ করে। উন্নয়নশীল দেশে শিল্পায়ন প্রক্রিয়াটি বেশি লক্ষ্য করা যায়। শিল্পায়নে মানুষের কর্মসংস্থান করে ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি করে । শিল্পায়ন শব্দটি মূলত কৃষি সমাজ থেকে (আনুষঙ্গিক বৈশিষ্ট্যাদি এবং সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমস্যাবলিসহ যান্ত্রিক শিল্পের বিকাশকে বুঝানো হয়ে থাকে। শিল্প বিপ্লব হতেই এই শব্দটির উৎপত্তি।

সর্বোপরি জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পায় ফলে কৃষির উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস পায়। শিল্পে উৎপাদিত পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায় এবং উৎপাদন বৃদ্ধি পায় । বাংলাদেশে বিভিন্ন শিল্প রয়েছে। তার মধ্যে কয়েকটি শিল্পের নাম দেওয়া হলো: বস্ত্র শিল্প, ইট শিল্প, কাঠ শিল্প, খাদ্য শিল্প, সার শিল্প, সিমেন্ট শিল্প, চামড়া শিল্প, জাহাজ শিল্প, ওষুধ শিল্প, চিনি শিল্প, আইসক্রিম শিল্প, মৎস্য শিল্প, রাবার শিল্প ইত্যাদি।

শিল্পায়নের বৈশিষ্ট্য

শিল্পায়নের কতিপয় বৈশিষ্ট্য নিচে দেওয়া হলো:

  • সমাজের শ্রম শক্তির বৃহদাংশ কৃষি থেকে শিল্পে নিয়োজিত হয়।
  • এটা কৃষি থেকে অকৃষি এবং সেবামূলক খাতের বর্ধনশীল প্রক্রিয়া। 
  • এতে উৎপাদন প্রধানত যন্ত্র এবং কারখানা কেন্দ্রিক হতে থাকে।
  • ব্যাপক ভিত্তিক উৎপাদন।
  • বিনিয়োগের মাত্রা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
  • আধুনিককাল।
  • সমাজের প্রযুক্তিগত নির্ভরতা বৃদ্ধি।
  • ভোগের মাত্রাগত এবং পরিমাণগত বৃদ্ধি।
  • নগরায়ন। 
  • মুক্তবাজার।
  • শ্রম বিভাজন জটিলতার এবং সূক্ষ্মতর রূপ পেতে থাকে। 
  • সামাজিক সংগঠনসমূহ পরিবর্তিত হতে থাকে।

শিল্পায়নের কারণ

মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণই শিল্পায়নের প্রধান কারণ। এছাড়াও বিভিন্ন কারণে শিল্পায়ন ঘটেছে। নিচে এদের তালিকা দেওয়া হলো:

  • ক্রমবর্ধমান মানুষে নিত্য নতুন চাহিদা পূরণের নিমিত্তে।
  • গ্রামে কর্মসংস্থানের সীমিত সুযোগ।
  • অনগ্রসর কৃষি ব্যবস্থা ও কৃষি অর্থনীতির অনিশ্চয়তা। 
  • বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা ও জীবনযাত্রার আধুনিকীকরণ।
  • জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন।
  • যোগাযোগ ও পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন।
  • শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়ন ও ব্যবহার।
  • আর্থ-সামাজিক মান উন্নয়ন।
  • কারখানা ও যন্ত্রপাতিতে উচ্চমাত্রার পুঁজি বিনিয়োগ। 
  • শিল্পোৎপাদন কৌশলে বিজ্ঞানের প্রয়োগ। 
  • বাজারমুখী অর্থনীতি ইত্যাদি।

শিল্পায়নের প্রভাব

আধুনিক শিল্প ও প্রযুক্তি আমাদের যে পণ্য উপহার দিচ্ছে তা মানুষের জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় ও উপকারী হলেও পরিবেশের উপর এগুলো মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। এ সমস্ত পণ্যের মধ্যে এয়ারকন্ডিশনার, ডিটারজেন্ট, প্লাস্টিক, টেলিভিশন সেট, স্টোরি, কম্পিউটার, মাইক্রোকম্পিউটার, সিনথেটিক ফাইবারের জিনিসপত্র, সিনথেটিক রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক অন্যতম। এ সমস্ত পণ্য সবই আধুনিক শিল্পায়নের অবদান। এসব পণ্যের মধ্যে কিছু পণ্যের বিকল্প পণ্য বাজারে এসেছে, যা পরিবেশকে নষ্ট করতে আরো অধিক সাহায্য করেছে। যেমন— উল এবং সূতি কাপড়ের বিকল্প হিসাবে সিনথেটিক ফাইবারের কাপড়, সাবানের বিকল্প হিসেবে ডিটারজেন্ট, প্রাণীজাত জৈব সারের বিকল্প হিসাবে এসেছে সিনথেটিক রাসায়নিক সার ইত্যাদি। আমেরিকার প্রখ্যাত পরিবেশবিদ Barry Commoner তার Closing Circle পুস্তক (1972) এ ব্যাপারে যা বর্ণনা করেছেন তার কিছু নমুনা নিচে উল্লেখ করা হলো:

  • শিল্পায়নের জন্য দরকার বিদ্যুৎশক্তি। আর বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদনের জন্য দরকার বিদ্যুৎকেন্দ্র। বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত সালফার ডাইঅক্সাইড ও নাইট্রোজেন অক্সাইড বায়ু দূষণ ও এসিড বৃষ্টির জন্য দায়ী। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে নির্গত তেজস্ক্রিয়তা নির্গমনের ও আশঙ্কা রয়েছে।
  • সিনথেটিক ফাইবার, কীটনাশক, ডিটারজেন্ট, প্লাস্টিক এবং সিনথেটিক রাবার তৈরি শিল্প কারখানার কাঁচামাল হিসেবে ব্যাপকভাবে সিনথেটিক জৈব রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহৃত হচ্ছে। ক্লোরিন ও পারদের মতো বিষাক্ত পদার্থ এগুলোর মধ্যে অন্যতম। বর্ধিত হারে পারদ খাদ্য শিকলের (Food chain) মাধ্যমে পানিতে, পানি থেকে মাছ এবং মাছ থেকে মানুষের শরীরে চলে আসছে যা মানুষের স্বাস্থ্যহানীসহ জলজ ইকোসিস্টেমে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। 
  • ব্যাপক ভিত্তিতে গাড়ি শিল্প গড়ে উঠায় দেশে দেশে গাড়ির ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বর্ধিত হারে বায়ু দূষণ সমস্যার সৃষ্টি করেছে। 
  • একবার ব্যবহারযোগ্য বোতল, সিরিঞ্জ, প্যাকিং সামগ্রী ইত্যাদি কঠিন বর্জ্য সমস্যার সৃষ্টি করেছে।কীটপতঙ্গ নিধন ও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বাজারে এলো কীটনাশক (DDT) যা ব্যবহার মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর উপর মারাত্মক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করল। 
  • মানুষের জন্য দুধ ও মাংসের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে ব্যাপক ভিত্তিতে হাঁস মুরগি ও গবাদি পশুর খামার গড়ে উঠার সাথে সংশ্লিষ্ট শিল্প কারখানাও গড়ে উঠেছে। এ সমস্ত খাবার ও শিল্প কারখানা থেকে যে জৈব আবর্জনা উৎপাদিত হয় তা বেশিরভাগই ক্ষেত্রেই পরিশোধন ছাড়া নদী নালা-খাল বিলে অবমুক্ত করা হচ্ছে। ফলে যেমন পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমন মানুষের স্বাস্থ্যহানীও ঘটছে।

অর্থনৈতিক উন্নয়নে শিল্পায়নের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

অর্থনৈতিক উন্নয়নে শিল্পায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। সামাজিক অর্থনৈতিক পরিবর্তনে এর প্রভাব অনেকটা তাৎপর্যপূর্ণ। শিল্পায়নের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা নিম্নরূপ:

১। কর্মসংস্থান সৃষ্টি: শিল্পায়নের ফলে নতুন নতুন শিল্পের বিকাশ ঘটে। এর ফলে নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র তৈরি হয়। এতে গ্রামীণ সমাজ থেকে আগত ব্যক্তিবর্গ কাজের সুযোগ পায়। নিজেদেরকে দক্ষ জনবল হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেতেও নগর জীবন অধিকতর সহায়ক।

২। উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি: শিল্পায়নের ফলে উৎপাদন প্রক্রিয়াতে যান্ত্রিকীকরণ ও আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। এর ফলে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।

৩। রপ্তানি আয় বৃদ্ধি: শিল্পায়নের ফলে শিল্প ক্ষেত্রে উৎপাদন অনেকাংশে বেড়ে যায় যার ফলশ্রুতিতে রপ্তানিযোগ্য পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এর ফলে রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পায়।

৪। সমাজ কাঠামোয় পরিবর্তন: শিল্পায়নের ফলে সমাজ কাঠামোয় পরিবর্তন আসে। তাছাড়া নগরে বিভিন্ন বিষয়ে বহুমুখী সুযোগ-সুবিধা থাকায় সমাজের নানা শ্রেণির মানুষ শহরে ভীড় জমায়। শিল্পায়নের ফলে এর ফলে সমাজের শ্রেণি কাঠামোয় পরিবর্তন সাধিত হয়। এ প্রেক্ষিতে সমাজ কাঠামোর মধ্যে পরিবর্তন সাধিত হয়।

৫।পেশাগত বৈচিত্রঃ শিল্পায়নের ফলে সমাজে পেশাগত বৈচিত্র দেখা যায়। সমাজে নানা পেশার মানুষ তারা তাদের পূর্বের পেশা পরিবর্তন করে নতুন পেশায় যুক্ত হওয়ার সুযোগ পায় এতে করে মানুষের মধ্যে পেশাগত বৈচিত্র উপলক্ষিত হয়।

 ৬। সামাজিক গতিশীলতা বৃদ্ধি: নগরায়ণ ও শিল্পায়নের ফলে সামাজিক গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন পেশার সুযোগ থাকায় গ্রাম ও নগরবাসীদের মধ্যে দ্রুত গতিতে আর্থ-সামাজিক পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।

৭। আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশ: শিল্পায়নের ফলে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও বিকাশ ঘটে। উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা, বহুমুখী সংস্কৃতি, পারস্পরিক সম্পর্ক, দৈনন্দিন জীবন-যাপন প্রভৃতি ক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও বিকাশে শিল্পায়ন গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।

৮। গ্রামীণ জীবনে প্রভাব: গ্রামীণ সংস্কৃতি তথা গ্রামীণ জীবনের উপর নগর সংস্কৃতির প্রভাব সুস্পষ্ট। গ্রামের ঐতিহ্যবাহী জীবনপ্রণালী যেমন- ঘরবাড়ি, আসবাবপত্র, পোশাক-পরিচ্ছদ, খাদ্যাভ্যাস, সাংস্কৃতিক আচার-প্রথা, ঐতিহ্য ইত্যাদিতে যেমন পরিবর্তন হয় তেমনি বিভিন্ন ধ্যান-ধারণার ক্ষেত্রেও নগরের প্রভাব গ্রামীণ জীবনের উপর গিয়ে প্রভাব বিস্তার করে।

৯। স্থানান্তর গমন ত্বরান্বিত হয়: শিল্পায়নের ফলে মানুস গ্রাম ছেড়ে শহরে স্থানান্তরের সুযোগ পায়। এর ফলে উন্নয়নশিল দেশের অপেক্ষাকৃত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর একটি অংশ কর্মসংস্থানের তাগিদে শিল্প নগরে পাড়ি জমায়। এবং কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়।

১০। দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন: শিল্পায়ন জীবন সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনে ভূমিকা পালন করে থাকে। শিল্পায়নের ফলে শহরের মানুষ ও গ্রামের মানুসের যোগাযোগ বৃদ্ধি পায় যার ফলশ্রুতিতে শহরের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি গ্রামের মানুষের উপর বিস্তার করে। কেননা নগরাবাসীরা তুলনামূলকভাবে বেশি বাস্তববাদী, বেশি গণতান্ত্রিক চেতনার অধিকারী। ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবোধের ক্ষেত্রেও নগরের অধিবাসীরা বেশি অগ্রগামী। নগরবাসীরা তুলনামূলকভাবে বেশি রাজনীতি সচেতন। ধর্মনিরপেক্ষতায়ও তারা অধিকতর অগ্রসর।

১১। আন্তর্জাতিক যোগাযোগ: শিল্পায়নের ফলে বর্হিবিশ্বের সাথে অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক, রাজনৈতিক, কুটনৈতিক ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগ অনেক বৃদ্ধি পায় যা বিশ্বায়নকে ত্বরান্বিত করে। বিশ্বায়নের ফলে নানা ক্ষেত্রে আন্তঃরাষ্ট্রীয় যোগাযোগে নতুন গতি সঞ্চারিত হয়।

১২। জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে অবদান: শিল্পায়ন জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। বিবিএস এর সাময়িক হিসাব অনুযায়ী ২০২১ – ২২ অর্থবছরে বাংলাদেশে জিডিপিতেশিল্প খাতের অবদান ৩৭.০৭ শতাংশ ২০২০ ২১ অর্থবছরে জিডিপিতে এখাতের অবদান ছিল ৩৬.০১ শতাংশ।

১৩। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ফলে শিল্পায়নের জন্য বিনিয়োগের সুযোগ বৃদ্ধি পায়।

শিল্পায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক প্রক্রিয়া যা একটি দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিল্পায়ন একটি গতিশীল প্রক্রিয়া। সরকার শিল্পায়নকে উৎসাহিত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।

১৪। জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন: শিল্পায়নের ফলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটে এতে মানুষের আয় বৃদ্ধি পায়। এর ফলে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, ও সামাজিক নিরাপত্তার সহ সকল ক্ষেত্রে জীবনযাত্রার মানের উন্নতি ঘটে।

আরো পড়তে: অর্থনৈতিক বিশ্বায়ন কি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কি, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কি, বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক জোট কোনটি

পরিবেশের উপর শিল্পায়নের প্রভাব

শিল্পায়নের ক্ষেত্রে চারটি প্রাথমিক প্রভাব বিন্দু রয়েছে – বায়ু, জল, মাটি এবং বাসস্থান।

  • সবচেয়ে বড় সমস্যা হল বায়ু দূষণ, জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে উৎপন্ন ধোঁয়া এবং নির্গমনের কারণে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের EPA 80 টিরও বেশি বিভিন্ন টক্সিন নিয়ন্ত্রণ করে যা শিল্প দূষণে পাওয়া যায়, অ্যাসবেস্টস এবং ডাইঅক্সিন থেকে শুরু করে সীসা এবং ক্রোমিয়াম পর্যন্ত। এই নিয়মগুলি সত্ত্বেও, শিল্পগুলি বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ বায়ু দূষণের জেনারেটরগুলির মধ্যে রয়েছে৷
  • জল দূষণও এই অঞ্চলে একটি সমস্যা, বিশেষ করে এমন অঞ্চলে যেখানে প্রাকৃতিক জলের উত্সের পাশে কারখানাগুলি তৈরি করা হয়। এই বিষাক্ত পদার্থগুলি বিভিন্ন আকারে আসতে পারে – কঠিন, তরল বা বায়বীয় – এবং এগুলি স্থানীয় জল সরবরাহকে দূষিত করতে পারে। এমনকি ল্যান্ডফিল এবং অন্যান্য বর্জ্য নিষ্পত্তির এলাকাগুলি স্থানীয় জল সরবরাহে বিষাক্ত পদার্থগুলিকে ফেলতে পারে, যা নীল নদের ক্ষেত্রে যেমন জল দূষণের দিকে পরিচালিত করে।
  • মাটি দূষণ আরেকটি সমস্যা যা শিল্পায়নের সাথে হাত মিলিয়ে যায়। সীসা মাটি দূষণের সবচেয়ে সাধারণ রূপ, তবে অন্যান্য ভারী ধাতু এবং বিষাক্ত রাসায়নিকগুলিও মাটিতে প্রবেশ করতে পারে এবং ফলস্বরূপ, সেখানে জন্মানো যে কোনও ফসলকে দূষিত করতে পারে।
  • অবশেষে, শিল্পায়ন নাটকীয় আবাসস্থল ধ্বংসের দিকে পরিচালিত করেছে। তাদের কাঠের জন্য বন কেটে ফেলা হয়, এবং রাস্তা, ফালা খনি এবং নুড়ির গর্ত তৈরি করার জন্য বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস করা হয়। এই বাসস্থানগুলি ধ্বংস করা স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রকে বিপর্যস্ত করে এবং যদি প্রজাতিগুলি তাদের নতুন পরিবেশে স্থানান্তরিত বা মানিয়ে নিতে অক্ষম হয় তবে উদ্ভিদ ও প্রাণী বিলুপ্তির দিকে পরিচালিত করে। সহজ পদক্ষেপ, যেমন পুনর্ব্যবহৃত প্লাস্টিক ডিস্ক গল্ফ ডিস্ক ব্যবহার করে, আমাদের বন এবং অন্যান্য পরিবেশগত সম্পদ রক্ষা করতে অনেক দূর যেতে পারে।

শিল্পায়নের মাধ্যমে কিভাবে একটি দেশ স্বনির্ভরতা অর্জন করে

শিল্পায়ন একটি দেশকে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, গবেষণা ও উন্নয়নের প্রচার এবং অর্থনীতির আধুনিকায়নের মাধ্যমে স্বনির্ভরতা অর্জনে সহায়তা করতে পারে। শিল্প উন্নয়ন অর্থনীতির অন্যান্য খাত যেমন কৃষি ও সেবাকেও উৎসাহিত করতে পারে।

শিল্পায়ন একটি দেশকে স্বনির্ভরতা অর্জনে সহায়তা করতে পারে:-

  • প্রযুক্তি স্থানান্তর প্রচার
  • উৎপাদিত পণ্যের আমদানি সীমিত করা
  • গার্হস্থ্য শিল্পের বিকাশ

শিল্প বিপ্লব সমাজগুলিকে একটি কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি থেকে একটি উত্পাদন অর্থনীতিতে স্থানান্তরিত করেছিল। এর ফলে:

  • উত্পাদন এবং দক্ষতা বৃদ্ধি
  • একটি বন্ধু পূর্ণ নাম লিখুন
  • আরও মাল
  • উন্নত মজুরি
  • গ্রামীণ এলাকা থেকে শহরাঞ্চলে অভিবাসন
  • শিল্পায়ন একটি দেশকে স্বনির্ভরতা অর্জনে সহায়তা করতে পারে:
  • স্থিতিশীল চাকরি এবং ভাল সুবিধা প্রদান
  • পরিবার এবং সম্প্রদায়ের সমৃদ্ধি বৃদ্ধি

আত্মনির্ভরশীলতা হল একটি উন্নয়নমূলক গুণ যার অর্থ জীবন টেকসই এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতির সাথে নিজেকে প্রদান করার জন্য সম্পূর্ণরূপে সজ্জিত এবং কার্যকরী হওয়া।

শিল্পায়নের নেতিবাচক প্রভাব

শিল্পায়নের অনেক নেতিবাচক প্রভাব থাকতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে:

  • পরিবেশগত ক্ষতি: শিল্পায়ন বিপজ্জনক বর্জ্য তৈরি করে এবং পরিবেশের জন্য ঝুঁকি বাড়াতে পারে। কারখানার দূষণ বায়ু এবং জলকে দূষিত করতে পারে, যা মানুষের স্বাস্থ্য এবং উদ্ভিদ ও প্রাণীর বৃদ্ধিকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
  • শিশু শ্রমিক: কারখানার মালিকরা বেশি পণ্য উৎপাদনের জন্য শিশুদের নিয়োগ দেয়।
  • দূষণ: শিল্পায়ন দূষণের মাত্রা বৃদ্ধির প্রধান কারণ।
  • জীবনযাত্রায় পরিবর্তন: শিল্পায়ন প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষয়, বায়ু, পানি এবং শব্দ দূষণ এবং বিষাক্ত ও বিপজ্জনক বর্জ্য জমা হতে পারে। এগুলি মানুষের স্বাস্থ্য এবং জীবনযাত্রার মানকে প্রভাবিত করতে পারে।
  • বিপজ্জনক কর্মক্ষেত্র: শিল্পায়ন বিপজ্জনক কাজের পরিবেশ, বিপজ্জনক যন্ত্রপাতি, এবং দীর্ঘ কাজের সময় জড়িত হতে পারে।
  • প্রযুক্তিগত অগ্রগতি: শিল্পায়ন, প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সাথে মিলিত, পরিবেশকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
  • অজানা প্রভাব: শিল্পায়ন অনেক নেতিবাচক পরিণতির সাথে যুক্ত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে পরিবেশের অবনতি, শ্রমিক শোষণ এবং ক্ষুদ্র অভিজাতদের হাতে সম্পদের কেন্দ্রীকরণ।
  • নগরায়ন: শিল্পায়ন এবং নগরায়ণ শহুরে স্থানগুলিতে শারীরিক পরিবর্তন ঘটাতে পারে, যা শহুরে তাপের মতো পরিবেশগত অবক্ষয় ঘটাতে পারে।

শিল্পায়ন ও নগরায়নের মধ্যে পার্থক্য

শিল্পায়ন ও শহরায়ন এর মধ্যে যথেষ্ট মিল থাকলেও এদের মধ্যে কতিপয় পার্থক্য রয়েছে। যা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

বৈশিষ্ট্যশিল্পায়ননগরায়নে
সংজ্ঞাগত শিল্পায়ন ও শহরায়ন এর মধ্যে সংজ্ঞাগত পার্থক্য রয়েছে। শিল্পায়ন বলতে আমরা শিল্পক্ষেত্রে উৎপাদন ব্যবস্থার উন্নয়নকে বুঝি অর্থাৎ মনুষ্যনির্ভর উৎপাদন ব্যবস্থার স্থানে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটিয়ে উৎপাদন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করাবুঝায় অন্যদিকে শহরায়ন বলতে বোঝায় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর শহরের পরিবেশে বসবাসের জন্য শহরমুখী হওয়া অর্থাৎ শহরমুখীর প্রবণতাকে বোঝায়।
উদ্ভবগতঅষ্টাদশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে সংগঠিত শিল্প বিপ্লবের সময়কালে শিল্পায়নের সূচনা হয় বলে মূলত ধরে নেয়া হয় বা তার পরবর্তী সময়ে। কিন্তু প্রাচীনকাল থেকে নগরের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় যা আমরা প্রাচীন গ্রিসের সভ্যতার নিদর্শন  ধরে নিতে পারি যেখানে ছোট ছোট নগর রাষ্ট্র ছিল।
পদ্ধতিগতযান্ত্রিক উপায়ে উৎপাদন বাড়ানোর প্রক্রিয়া হল শিল্পায়ন কিন্তু শহরায়ন হল একটি জীবন পদ্ধতি যেখানে মানুষ বসবাসের উদ্দেশ্যে শহর গড়ে তুলে।
পরিবর্তনগতশিল্পায়ন বলতে মূলত আমরা উৎপাদন ব্যবস্থার পরিবর্তনকে বুঝি।অন্যদিকে শহরায়ন হচ্ছে জনসংখ্যার স্থানিক পরিবর্তন, পেশার পরিবর্তন এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তন।
ধারণার ভিন্নতাযান্ত্রিক উৎপাদনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক গতিকে বৃদ্ধি করার মাধ্যম হচ্ছে শিল্পায়ন। বিপরীতে, শহরায়ন হচ্ছে শহরে বসতি স্থাপন করা, কৃষি ও গ্রামীণ পেশাকে ত্যাগ করে শহরের বিভিন্ন পেশার সঙ্গে জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা।
স্থাপনাগতশিল্পায়নের ফলে কলকারখানা স্থাপনের জন্য প্রচুর পরিমাণে জায়গার প্রয়োজন হয় আর এক্ষেত্রে অনেক আবাসস্থল ক্ষতির সম্মুখীন হয়। আবার শিল্পায়নের ফলে প্রচুর পরিমাণে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেঅন্যদিকে ফারহানের ক্ষেত্রে পুঞ্জিভূত বসতির সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ শহরে বসবাসের প্রবণতায় অনেক বস্তির সৃষ্টি হতে পারে।
জীবনধারনগতশিল্পায়ন মানুষের উন্নত জীবন ধারণের পথ তৈরি করে দেয়। যেখান থেকে মানুষ তাদের অর্থনীতিকে সচল রাখে।অন্যদিকে, শহরায়ন মানুষকে উন্নত জীবনযাপনে অভ্যস্ত করে তুলেন পাশাপাশি বস্তির সৃষ্টি করে।
শিল্পায়ন ও নগরায়নের মধ্যে পার্থক্য
আরো অন্যান্য সরকারি স্কিম সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | শিল্পায়ন

Q1. অব শিল্পায়ন কি

Ans – ভারতে ইংরেজদের রাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠার আগে বাংলা তথা ভারতে কুটিরশিল্প যথেষ্ট সমৃদ্ধ ছিল। ব্রিটিশ সরকার ভারতের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব দখল করার পর দীর্ঘদিন ধরে ভারতে শিল্পায়ন বিরােধী বিভিন্ন নীতি গ্রহণ করে। তারা ইংল্যান্ডের শিল্প কারখানায় উৎপাদিত সামগ্রীর দ্বারা ভারতের বাজারগুলি ছেয়ে দেয় এবং ভারতকে একটি কাঁচামাল রপ্তানিকারক দেশে পরিণত করে। এর ফলে অষ্টাদশ শতকের মধ্যভাগ থেকে ভারতের চিরাচরিত সমৃদ্ধ কুটিরশিল্প ধ্বংস হয়ে যায়। এই ঘটনা ‘অব শিল্পায়ন’ (De-industrialisation) নামে পরিচিত।

Q2. আদি শিল্পায়ন কি

Ans – শিল্প-বিপ্লবের পূর্ববর্তী অবস্থাকে বলা হয় আদি-শিল্পায়ন বা Proto-Industrialisation ।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।