বিশ্ব উষ্ণায়ন কাকে বলে

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

বিশ্ব উষ্ণায়ন কাকে বলে, বিশ্ব উষ্ণায়ন কি, বিশ্ব উষ্ণায়ন কাকে বলে উত্তর

সূর্য থেকে আগত তাপশক্তি পৃথিবীপৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করে এবং এ বিকিরিত তাপশক্তির অধিকাংশই পুনরায় বায়ুমন্ডলে ফিরে যায়। কিন্তু মানবসৃষ্ট দূষণ এবং বনভূমি উজাড় করার ফলে বায়ুমন্ডলে গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণ আশঙ্খাজনিতভাবে বেড়ে গেছে। পৃথিবীর গড় উষ্ণতা বৃদ্ধি কে বলে বিশ্ব উষ্ণায়ন।

পৃথিবীর গড় উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে এটাই গ্লোবাল ওয়ামিং বা বিশ্ব উষ্ণায়ন। সূর্য থেকে আগত তাপশক্তি পৃথিবীপৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করে এবং এ বিকিরিত তাপশক্তির অধিকাংশই পুনরায় বায়ুমন্ডলে ফিরে যায়।

কিন্তু মানবসৃষ্ট দূষণ এবং বনভূমি উজাড় করার ফলে বায়ুমন্ডলে গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণ আশঙ্খাজনিতভাবে বেড়ে গেছে। এর ফলে বিকিরিত তাপশক্তি পুনরায় বায়ুমন্ডলে ফিরে যাওয়ার পথে বাধাগ্রস্থ হয় এবং এভাবেই বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা বিশ্ব উষ্ণায়ন বা Global warming নামে পরিচিত।

বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণ

বিজ্ঞানের অগ্রগতি এবং উন্নত প্রযুক্তির এই যুগে মানুষ তার স্বার্থের জন্য বারবার প্রকৃতির উপর প্রভাব বিস্তার করেছে। প্রকৃতিকে অবদমন করে মানুষ মেতে উঠেছে সভ্যতার উল্লাসে। কিন্তু যথোচিত সীমা অতিক্রম করা মানুষের এই ঔদ্ধত্য প্রকৃতি মেনে নেয়নি। তারই ভয়াবহ ফলস্বরূপ দেখা যায় বিশ্ব উষ্ণায়নের ভয়াবহ প্রভাব। বিশ্ব উষ্ণায়ন বলতে বোঝায় বায়ুমণ্ডলের ও ভূপৃষ্ঠের বাতাসের তাপমাত্রা ক্রমশ বেড়ে ওঠা। এবং তার ফলে বিশ্বব্যাপী তাপের বিকিরণ সাম্যতায় পরিবর্তন। যা সারা বিশ্বের আবহাওয়াকে প্রভাবিত করেছে। বিশ্ব উষ্ণায়ন বা পৃথিবীর গড় উষ্ণতা বৃদ্ধি আজ একটি আতঙ্কের বিষয়।

মানুষের বিভিন্ন প্রকার অবিবেচনাপ্রসূত ক্রিয়াকলাপ, যেমন— অত্যধিক পরিমাণে জীবাশ্ম জ্বালানির দহন, নির্বিচারে বৃক্ষচ্ছেদন ও অরণ্যবিনাশ, কৃষিকাজে প্রয়োজনের তুলনায় অধিক পরিমাণে নাইট্রোজেন জাতীয় সারের ব্যবহার, ক্রমবর্ধমান শিল্পায়ন ও নগরায়ন প্রভৃতি বিভিন্ন কারণে বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত ভাবে বেড়ে চলেছে এবং তার ফলস্বরূপ নিম্ন বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে । পৃথিবীর স্বাভাবিক উষ্ণতা অপেক্ষা এরূপ ক্রমবর্ধমান ও অস্বাভাবিক উষ্ণতা বৃদ্ধিকে বিশ্ব উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং বলা হয় । বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী । যেমন :-

বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রাকৃতিক কারণ

(১) মেরু অঞ্চলের বরফের গলন ও পার্বত্য অঞ্চলে হিমবাহের গলন :

ভূমণ্ডলের গড় উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্য মেরু অঞ্চলের বরফের স্তর ও পার্বত্য অঞ্চলের হিমবাহের গলন ঘটবে ও সমুদ্র জলতলের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে । ফলস্বরূপ সমুদ্র উপকূলভাগের নীচু অংশ জলমগ্ন হবে, উপকূলবর্তী অঞ্চলের মাটি লবণাক্ত ও অনুর্বর হয়ে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হবে এবং সমগ্র সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্র বিঘ্নিত হবে ।

(২) সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধি :

বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে মেরু অঞ্চলের বরফ গলে গিয়ে সমুদ্রের জলের যোগান বৃদ্ধি পাবে ও সমুদ্র জলপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাবে । বিজ্ঞানীদের মতে বর্তমানে পৃথিবীর গড় উষ্ণতা ১° সে. বৃদ্ধির ফলে সমুদ্র জলতলের উচ্চতা প্রায় ১০ থেকে ১৫ সেমি. বৃদ্ধি পেয়েছে । এর ফলে পৃথিবীর নিম্ন উপকূল অঞ্চলসমূহ এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কম উচ্চতাসম্পন্ন দ্বীপগুলি সমুদ্রজলে নিমজ্জিত হবে ।

(৩) অধঃক্ষেপণের প্রকৃতির পরিবর্তন :

বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি ফলে আবহাওয়া শুষ্ক হয়ে উঠবে । ফলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হ্রাস পাবে ও ভৌমজলের ভাণ্ডারে টান পড়বে । এইভাবে অধঃক্ষেপণের প্রকৃতির পরিবর্তন ঘটবে ও সমগ্র বাস্তুতন্ত্র বিঘ্নিত হবে ।

(৪) শস্য উৎপাদনের বৈষম্য :

বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে বৃষ্টিপাতের প্রকৃতির পরিবর্তন ঘটবে, বৃষ্টিপাতের বন্টনেও চরম অসাম্য দেখা দেবে । ফলে কৃষিজমির পরিমাণ হ্রাস পাবে । অতিবৃষ্টি বা অনাবৃষ্টি দীর্ঘায়িত হয়ে কৃষিজ ফসল উৎপাদনে ব্যাঘাত সৃষ্টি করবে ।

(৫) জলের জোগানে ঘাটতি:

তাপমাত্রা বাড়ার কারণে বাষ্পীভবন দ্রুততর হবে। ফলে ভূপৃষ্ঠে হ্রদ, নদী, জলাশয়ের জলের পরিমাণ কমবে। এছাড়া মৃত্তিকায় আর্দ্রতার পরিমাণ হ্রাস পেলে ভূগর্ভের জলে টান পড়বে।

(৬) জলীয় বাষ্পের বলয়

জলীয় বাষ্প এক ধরনের গ্রিনহাউস গ্যাস। পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে, জলাশয় থেকে আরও বেশি জল বাষ্পীভূত হয় এবং বায়ুমণ্ডলে থাকে যা বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি করে।

(৭) ভূগর্ভস্থ চিরহিমায়িত মৃত্তিকা

হিমায়িত মাটি যাতে পরিবেশগত গ্যাসগুলি বেশ কয়েক বছর ধরে আটকে থাকে এবং পৃথিবীর পৃষ্ঠের নীচে উপস্থিত থাকে। এটি হিমবাহে বিদ্যমান। পারমাফ্রস্ট গলে যাওয়ার সাথে সাথে এটি বায়ুমণ্ডলে গ্যাসগুলিকে আবার ছেড়ে দেয়, পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে।

(৮) দাবানলের দাপট

বনের দাবানল প্রচুর পরিমাণে কার্বনযুক্ত ধোঁয়া যেমন- কার্বন ডাই অক্সাইড(CO2), কার্বন মনোঅক্সাইড(CO),মিথেন(CH4) প্রচুর এরোসেল নির্গত করে। এই গ্যাসগুলি বায়ুমণ্ডলে নির্গত হয় এবং এর ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।

বিশ্ব উষ্ণায়নের মানুষ্যসৃষ্ট কারণ

(৯) কৃষিক্ষেত্রের ভূমিকা:

কৃষিক্ষেত্রে আগাছা-লতা পাতার পচন, গৃহস্থ বর্জ্য, কৃষিজাত বর্জ্য, জীবজন্তুর বর্জ্য থেকে ব্যাপক পরিমানে মিথেন গ্যাস উৎপন্ন করে। বায়ুমণ্ডলে গ্রীন হাউস গ্যাস যোগ করে এবং পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ায়।যা মোটেও কাম্য নয়।

(১০) জগতে জনবিস্ফোরন:

পৃথিবীতে প্রানবায়ু অক্সিজেনের পরিমান সীমিত হওয়ার দরুন ব্যাপক জনসমুদ্র থেকে নির্গত কার্বন ডাই অক্সাইড পৃথিবীর দম আটকাতে সফল।এর ফলে বাতাসে কার্বন ডাই অক্সাইড এর পরিমান স্বাভাবিকের থেকে অনেকগুন বেড়ে গিয়ে বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য প্রধান কারন হয়ে দাঁড়ায়।

(১১) বৃক্ষচ্ছেদনের ধ্বংসলীলা

সবুজ সুন্দরী অরণ্য অক্সিজেনের প্রধান উৎস। কার্বন ডাই অক্সাইড( CO2 ) গ্রহন করা এবং অক্সিজেন( O2) ছেড়ে দেওয়ার মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে। মানুষ নিজস্ব ঘরোয়া ও বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে শ্যামলী অরণ্য সুন্দরীকে উজাড় করে ফেলছে।যা পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতার দিকে পরিচালিত করছে, যার ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে ।

(১২) জীবাশ্ম জ্বালানির আগ্রাসন

জনসংখ্যা বাড়ার ফলে নগরায়ন, শিল্পায়ন ও যানবাহনের সংখ্যা অগনিত পরিমানে বাড়ছে। এদের ইন্ধন জোগাতে জীবাশ্ম জ্বালানি- কয়লা, পেট্রোল, ডিজেল, কেরোসিন, গ্যাসোলিন, CNG এবং LPG এর আগ্রাসন বেড়ে চলেছে।ফলস্বরূপ সর্বনাশী গ্রীন হাউস গ্যাস কার্বন ডাই অক্সাইড( CO2 ) এর বায়ুমন্ডলকে বিষাক্ত করে তুলছে ।

(১৩) শিল্পদানবের ক্রমবর্ধন

শিল্পায়নের আগমনে পৃথিবীর তাপমাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। কলকারখানা থেকে নির্গত ক্ষতিকর দূষক পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়াচ্ছে। 2013 সালে, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য আন্তঃসরকারি প্যানেল রিপোর্ট করেছে যে 1880 থেকে 2012 সালের মধ্যে বৈশ্বিক তাপমাত্রার বৃদ্ধি 0.9°C সেলসিয়াস হয়েছে। যা শিল্পায়নের পূর্বের গড় তাপমাত্রার তুলনায় বৃদ্ধি 1.1° C ।

বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলাফল

বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রধান প্রভাবগুলি নিম্নরূপ:

জলবায়ুর পরিবর্তন

বিগত কয়েক দশকের তথ্য বিশ্লেষণের মাধ্যমে দেখা যাচ্ছে যে বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে পৃথিবীব্যাপী আবহাওয়া ও জলবায়ুর পরিবর্তন শুরু হয়েছে। এই জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব পৃথিবীর প্রতিটি দেশের উপর পড়ছে। যেমন –  ১৯৯০ এর দশকে পৃথিবীর উষ্ণতম বছর গুলি পরিলক্ষিত হয়, যার মধ্যে ১৯৯৫ সাল পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণতম বছর। সাইবেরিয়ার বেশির ভাগ অংশের তাপমাত্রা পূর্ববর্তী শতক গুলির তুলনায় ৩ থেকে ৫  ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। 

১৮৫০ সালের পর থেকে ইউরোপের আল্পস পর্বতের অর্ধেক বরফ গলে গিয়েছে। মেরু অঞ্চলে সমুদ্রের জলের উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় আন্টার্কটিকায় পেঙ্গুইনের সংখ্যা কমে গেছে এবং ক্রিল জাতীয় একপ্রকার সামুদ্রিক প্রানী যাদের বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রানীরা খাদ্য হিসাবে গ্রহন করে তাদের পরিমানও ক্মে গেছে। 

ক্রান্তীয় অঞ্চল গুলি আরো উষ্ণ ও শুষ্ক হচ্ছে, কৃষিকাজ ব্যহত হচ্ছে ও জলের অভাব দেখা যাচ্ছে। মঙ্গোলিয়ার গোবি মরু অঞ্চলে গ্রীষ্মকালীন বৃষ্টিপাতের পরিমান বিগত ৩০ বছর ধরে ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলেও বৃষ্টিপাত পূর্বের তুলনায় অনেক কমে গেছে। 

খরার প্রবনতা বৃদ্ধি

কোন অঞ্চলে কোন নির্দিষ্ট সময়ে স্বাভাবিকের তুলনায় বৃষ্টিপাতের পরিমান কম হলে খরা হয়েছে বলে ধরা হয়। সাধারণত বৃষ্টিপাতের খামখেয়ালিপনার জন্য খরার সৃষ্টি হয়ে থাকে। বৃষ্টিপাতের অভাবে জলের বিভিন্ন উৎস গুলি শুকিয়ে যায়, সেই উৎস গুলি থেকে মানুষের প্রয়োজনীয় জলের ঘাটতি দেখা যায়, পুকুর, নদী এমনকি ভৌম জলের অভাব দেখা যায়। বর্তমানে বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন হওয়ায় বৃষ্টিপাতের পরিমান ও বন্টনে তারতম্য দেখা যাচ্ছে, কোথাও অল্প সময়ে বিপুল বৃষ্টি হচ্ছে আবার কোথাও বৃষ্টিপাতের পরিমান পূর্বের তুলনায় অনেক কমে গেছে। 

সমুদ্র জলের উচ্চতা বৃদ্ধি

বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য মেরু অঞ্চলে সঞ্চিত থাকা বরফ চূড়া গুলি অতি দ্রুত গলে যাচ্ছে, যার ফলে সমুদ্র জলের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। IPCC এর মতে বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে আগামী ১০০ বছরের মধ্যে সমুদ্র জলের উচ্চতা ২০ থেকে ৮০ সেমি মতো বৃদ্ধি পাবে। সমুদ্র জলের উচ্চতা বৃদ্ধি উপকূলীয় অঞ্চলে মানুষজন এবং তাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও পরিবেশগত ভয়াবহতার সৃষ্টি করছে।

সমুদ্র জল পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রাথমিক প্রভাব হল উপকূলীয় অঞ্চলে বন্যা, ভূমিক্ষয়, সমুদ্র তরঙ্গ ও ঘূর্নিঝর জনিত জলোচ্ছ্বাসের পরিমান বৃদ্ধি। যার ফলে উপকূলীয় বাস্তুতন্ত্র যেমন জলাভূমির সমুদ্র জলে নিমজ্জন , উপকূলীয় অঞ্চলের স্বাভাবিক উদ্ভিদ ও বাসস্থানের অবলুপ্তি, ভৌমজলের মধ্যে সামুদ্রিক নোনা জলের প্রবেশ এবং কৃষিজাত জমির অভাব পরিলক্ষিত হয়।    

আগামী  এক শত বছরে সমুদ্র জলের উচ্চতা যে পরিমান বাড়বে বলে অনুমান করা হয়েছে, সেই পরিমান উচ্চতা বৃদ্ধি পেলে সমুদ্র মধ্যবর্তী দ্বীপ যেমন মালদ্বীপ, মার্শাল দ্বীপ যেগুলি সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে মাত্র ২ থেকে ৪ মিটার পর্যন্ত উঁচু সেগুলি সম্পূর্ন ভাবে সমুদ্রতলে নিমজ্জিত হয়ে যেতে পারে। দক্ষিণ- পূর্ব এশিয়ার দেশ গুলির উপকূলবর্তী অঞ্চল গুলিতেই সবচেয়ে বেশি মানুষ বসবাস করে, সেই মানুষ গুলিও একটি বিরাট সমস্যার সম্মুখিন পর্যন্ত হতে পারে। 

বন্যার প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি

বিশ্ব উষ্ণায়ন জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটিয়ে জলবায়ু সম্পর্কীত দূর্যোগ, যেমন – ঝড়, বন্যা প্রভৃতির পরিমান বাড়িয়ে দেয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় পৃথিবীর প্রায় দুই-পঞ্চমাংশ মানুষ মৌসুমি বায়ুর প্রভাবিত অঞ্চলে বসবাস করে আর এই মৌসুমি বায়ুর উৎপত্তির প্রধান কারণ সমুদ্র ও স্থলভাগের উষ্ণতার পার্থক্য। বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য স্থলভাগ দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে স্থল ও জলভাগের উষ্ণতার তারতম্য সৃষ্টি করছে আবার এই উষ্ণায়নের জন্য মৌসুমি বায়ুর জলধারণ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। 

মানুষের স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব

বিশ্ব উষ্ণায়ন মানুষের স্বাস্থ্যের ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলে। প্রাথমিক ভাবে বলা যায় বিশ্ব তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে মৃত্যুহার বৃদ্ধি পেয়েছে। নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের দেশ গুলিতে তাপ প্রভাব দেখা যাচ্ছে। ক্রান্তীয় অঞ্চলও উষ্ণ থেকে আরো উষ্ণতর হচ্ছে। গ্রীষ্মকালে এই তাপ প্রভাবের কারণে আজ সারা বিশ্ব ব্যাপী অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। উষ্ণায়নের কারণে জীবাণু ঘটিত রোগের পরিমাণও বাড়ছে। পতঙ্গ বাহিত রোগ যেমন ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া এই বিশ্ব উষ্ণায়নের সাথেই প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে যুক্ত। 

জীববৈচিত্র্যের উপর প্রভাব

IPCC এর রিপোর্ট অনুযায়ী বর্তমান সময়ে যে সব জীব বিলুপ্তির মুখে দাঁড়িয়ে আছে তার মূলেও রয়েছে এই বিশ্ব উষ্ণায়ন জনিত জলবায়ুর পরিবর্তন। 

যেমন – আফ্রিকার পার্বত্য গরিলা, আন্দিজের ভাল্লুক, বাংলার রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার ও সুন্দরবনের জলাভূমি বিভিন্ন প্রজাতি, মেরু ভাল্লুক, পেঙ্গুইন প্রভৃতি জীব প্রজাতি। সমুদ্রের প্রবাল প্রাচীর যা জলের উষ্ণতার পরিবর্তনের সাথে অতি স্পর্শকাতর, তাই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ধ্বংসের মুখে অবস্থিত। 

কৃষি উৎপাদনের উপর প্রভাব

বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে জলবায়ু পরিবর্তিত হচ্ছে এবং জলবায়ু পরিবর্তন কৃষিজ উৎপাদন কে প্রভাবিত করছে, বিশেষ করে ক্রান্তীয় অঞ্চলের অন্তর্গত আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা ও এশিয়ার দেশ সমূহের উপর,যেখানে পূর্বে থেকে ফসলের উৎপাদন হয় খুব কম। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে ফসল বলয় গুলি ক্রমশ উচ্চ অক্ষাংশীয় অঞ্চলের দিকে সরে যাচ্ছে । বিশেষ করে গম বলয় অঞ্চল গুলির উত্তরে সরণ।

তাপ প্রবাহ

আবহাওয়া জনিত দূর্যোগ গুলির মধ্যে অন্যতম হল তাপ প্রবাহ, যা পূর্বে উষ্ণ ক্রান্তীয় অঞ্চলের দেশ গুলিতে গ্রীষ্মকালে মাঝে মধ্যে দেখা যেত কিন্তু আজকের সময়ে সেই তাপ প্রবাহের সংখ্যা ও স্থায়ীত্ব অনেক গুন বৃদ্ধি পেয়েছে। এই তাপ প্রবাহ আজ কেবল মাত্র ক্রান্তীয় অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ নয় নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের দেশ গুলিতেও গ্রীষ্মকালে এই তাপ প্রবাহ দেখা যাচ্ছে। তাপ প্রবাহের তীব্রতা বৃদ্ধির এক মাত্র কারণ হল বিশ্ব উষ্ণায়ন। যার ফলে প্রতি বছর অনেক মানুষ প্রান হারাচ্ছে। 

তাপমাত্রা বৃদ্ধি

গ্লোবাল ওয়ার্মিং পৃথিবীর তাপমাত্রায় অবিশ্বাস্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। 1880 সাল থেকে পৃথিবীর তাপমাত্রা ~1 ডিগ্রি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে হিমবাহের গলন বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি উপকূলীয় অঞ্চলে বিধ্বংসী প্রভাব ফেলতে পারে।

ইকোসিস্টেমের জন্য হুমকি

গ্লোবাল ওয়ার্মিং প্রবাল প্রাচীরগুলিকে প্রভাবিত করেছে যা উদ্ভিদ এবং প্রাণীর জীবনের ক্ষতির কারণ হতে পারে। বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রবাল প্রাচীরের ভঙ্গুরতাকে আরও খারাপ করে তুলেছে।

জলবায়ু পরিবর্তন

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটেছে। কোথাও খরা, কোথাও বন্যা। এই জলবায়ু ভারসাম্যহীনতা বিশ্ব উষ্ণায়নের ফল।

রোগের বিস্তার

গ্লোবাল ওয়ার্মিং তাপ এবং আর্দ্রতার ধরণে পরিবর্তন ঘটায়। এর ফলে মশা চলাচল করে যা রোগ বহন করে এবং ছড়ায়।

উচ্চ মৃত্যুর হার

বন্যা, সুনামি এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধির কারণে, গড় মৃত্যুর সংখ্যা সাধারণত বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও, এই ধরনের ঘটনা মানুষের জীবনকে ব্যাহত করতে পারে এমন রোগের বিস্তার ঘটাতে পারে।

প্রাকৃতিক বাসস্থানের ক্ষতি

জলবায়ুর বৈশ্বিক পরিবর্তনের ফলে বেশ কিছু উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল নষ্ট হয়ে যায়। এই ক্ষেত্রে, প্রাণীদের তাদের প্রাকৃতিক আবাসস্থল থেকে স্থানান্তরিত হতে হবে এবং তাদের অনেকগুলি এমনকি বিলুপ্ত হয়ে যায়। এটি জীববৈচিত্র্যের উপর বৈশ্বিক উষ্ণায়নের আরেকটি বড় প্রভাব।

বিশ্ব উষ্ণায়ন, বিশ্ব উষ্ণায়ন প্রবন্ধ রচনা, বিশ্ব উষ্ণায়ন রচনা

ভূমিকা:

আমাদের পৃথিবী সময়ের সাথে সাথে যত আধুনিক হচ্ছে সেই আধুনিকতার সঙ্গে উদ্ভাবিত হচ্ছে নিত্য নতুন উত্তরাধুনিক সব সমস্যা। সেই সকল সমস্যাগুলির মধ্যে বেশকিছু এমনই গুরুতর যে সেগুলি সমগ্র পৃথিবীর ভবিষ্যৎ কী বহু ক্ষেত্রে প্রশ্নচিহ্নের মুখে ফেলে দিচ্ছে। সভ্যতার আধুনিকীকরণ করতে গিয়ে মানুষ সভ্যতার অস্তিত্বকে ফেলে দিচ্ছে সংকটের মুখে।

ইতিহাসে বিশ্ব উষ্ণায়ন:

ইতিহাসে বিশ্ব উষ্ণায়নের নথিভূক্ত প্রামাণ্য দলিলের খোঁজ করতে গেলে আমাদের পিছিয়ে যেতে হবে মধ্য যুগে। মধ্যযুগের শুরুর দিকে অর্থাৎ প্রায় ৯৫০ থেকে ১২৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ইউরোপ থেকে শুরু করে চিন দেশ অব্দি একটি স্বাভাবিক বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রবণতা লক্ষ্য করা গিয়েছিল। আধুনিক গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফলের উপর ভিত্তি করে মনে করা হয় যে এই উষ্ণায়নের ঘটনাটি সমগ্র পৃথিবী ব্যাপী হয়নি বরং তা একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।

আধুনিক পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে 950 খ্রিস্টাব্দে থেকে হঠাৎ করে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের গড় তাপমাত্রা বেড়ে যেতে থাকে। এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির সম্ভাব্য কারণ হিসেবে গবেষকরা চিহ্নিত করেছেন সূর্যের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া আগ্নেয়গিরি সক্রিয়তা কমে আসা এবং সমুদ্রের গতিপ্রবাহের পরিবর্তনের মতন জাগতিক ভৌগলিক প্রক্রিয়াগুলিকে।

তবে বর্তমান ভূতাত্ত্বিক গবেষণায় দেখা গেছে মধ্যযুগের আগেও পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে স্বাভাবিক বিশ্ব উষ্ণায়ন ঘটেছে। পৃথিবীর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে শুরু করে সমুদ্রগর্ভ সব জায়গার তাপমাত্রা সময়ের সাথে সাথে বেড়েছে বা কমেছে। তবে এই সকল বিশ্ব উষ্ণায়নের ঘটনাগুলি আধুনিক যুগের বিশ্ব উষ্ণায়নের সাথে সমার্থক নয়।

আধুনিক পরিস্থিতি:

আধুনিক বিশ্ব উষ্ণায়নের পরিস্থিতি ইতিহাসে উদ্ভূত স্বাভাবিক বিশ্ব উষ্ণায়নের পরিস্থিতি তুলনায় সম্পূর্ণরূপে আলাদা। আধুনিক যন্ত্র দ্বারা নথিভুক্ত তাপমাত্রা দলিল অনুযায়ী ১৮৬০ সাল থেকে হাজার ১৯০০ সালের মধ্যে পৃথিবীর ভূভাগ এবং সমুদ্র জলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছিল ১.৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ০.৭৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সেইখানে ১৯৭৯ সাল থেকে প্রতি দশকে এই তাপমাত্রা ০.১৪ থেকে ০.২২ ডিগ্রী সেলসিয়াস হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।

বিজ্ঞানীদের মতে ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দ অব্দি পৃথিবীর তাপমাত্রা নির্দিষ্ট সুসাম্য বজায় ছিল। তারপর থেকেই সময় যত এগিয়েছে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ততই বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা ২০০৫ সালকে পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণতম বছর হিসেবে চিহ্নিত করেছে। উদ্ভূত এই পরিস্থিতির সুদুরপ্রসারি ফলাফলের কথা চিন্তা করে সেই বিংশ শতাব্দীর সূচনাকাল থেকেই পরিবেশ বিজ্ঞানীরা অনতিবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বারবার বলে আসছেন।

উষ্ণায়নের কারণ:

বর্তমানকালে উদ্ভূত বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণ চিহ্নিত করতে গেলে কোন একটি বিষয়ের ওপর দোষারোপ করা যায় না। শিল্প বিপ্লবের পরবর্তী সময় থেকেই পৃথিবীর বুকে যন্ত্রপাতি ও কলকারখানার যে ঢক্কানিনাদ সুইটি পৃথিবীর বুকে আধুনিক অস্বাভাবিক বিশ্ব উষ্ণায়নের আদিমতম কারণ। তাছাড়া মানুষের ভোগের ব্যাপক বাসনা এবং লোভের বশবর্তী হয়ে মানুষ ব্যাপকভাবে সমগ্র বিশ্বজুড়ে অরণ্য ধ্বংস লিপ্ত হয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই পৃথিবীর শ্বাসযন্ত্র পড়েছে সংকটের মুখে এবং যার অনিবার্য ফল হিসেবে এসেছে বিশ্ব উষ্ণায়ন এর মতন সংকট। 

কারণ প্রাচীন ও মধ্যযুগের বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে জলবায়ুগত পরিবর্তনের পরিস্থিতি বিভিন্ন জাগতিক ও মহাজাগতিক কারণে উদ্ভূত হবার ফলে সেগুলি স্বাভাবিক বিশ্ব উষ্ণায়ন হিসেবে বিবেচিত হয়। এজন্যে তা পৃথিবীর অস্তিত্বের পক্ষে কখনই সংকটজনক ছিল না।

বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রক্রিয়া:

বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যা করতে গেলে বিশ্ব উষ্ণায়নের মূল কারণ হলো আধুনিক গবেষণাগার এবং কারখানাগুলি থেকে নির্গত কার্বন-ডাই-অক্সাইড, কার্বন-মনো-অক্সাইড, সালফার-ডাই-অক্সাইড-এর মতন অসংখ্য ক্ষতিকারক গ্যাসসমূহ।

একদিকে যেমন পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠে এই সকল গ্যাসগুলিকে শোষণ করে নিজে উত্তপ্ত হয়, অন্যদিকে তেমনি এই সমস্ত গ্রীন হাউস গ্যাসগুলি বায়ুমন্ডলে মেশার ফলে সূর্য থেকে পৃথিবীতে আগত রশ্মি বিকিরিত হয়ে বায়ুমণ্ডল থেকে মহাশূন্যে নির্গত না হতে পেরে পৃথিবীর মধ্যেই থেকে যায় এবং পৃথিবীকে উভয় দিক থেকে উষ্ণ করে তোলে।

এই প্রক্রিয়াকে এক কথায় বলা হয় গ্রীন হাউজ এফেক্ট। অন্যদিকে এই সমস্ত ক্ষতিকারক গ্যাস গুলি বায়ুমন্ডলে নেশার ঘরে বায়ুমন্ডলে থাকা অতি প্রয়োজনীয় ওজোন স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 

বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলাফল:

বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলাফল সম্পর্কে নাতিদীর্ঘ একটি আলোচনা করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। কারণ এর ফলাফল এতই বিস্তৃত ও ব্যাপক যে তাকে প্রতিবেদনের একটি অংশে লিপিবদ্ধ করা প্রায় অসম্ভব। বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রত্যক্ষ এবং ভয়ঙ্কর ফলরূপে যা উল্লেখ করা যেতে পারে তা হল সমুদ্রের জলস্তরে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি।

প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীজুড়ে তাপমাত্রা একটু একটু করে অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়ে চলার কারণে পৃথিবীর দুই মেরুতে অবস্থিত বিপুল পরিমাণ বরফ একটু একটু করে গলে যেতে শুরু করেছে। বরফের এই অস্বাভাবিক গলনের ফলে ফলে সমুদ্রের জলস্তরও একটু একটু করে ঊর্ধ্বগামী হচ্ছে।

অন্যদিকে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে বিভিন্ন যে ক্ষতিকারক গ্রিনহাউস গ্যাসগুলি বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে, সেগুলি একইসাথে ওজোন স্তরের ব্যাপক ক্ষতি করার কারণে পৃথিবীর প্রাণ ধারণের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ওজোন গভীর স্তরে ক্ষত সৃষ্টি হচ্ছে। এসকল প্রবণতা পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্বকেই ফেলে দিচ্ছে সংকটের মুখে।

ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব:

বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে পৃথিবীজুড়ে স্বাভাবিক উষ্ণতার যে ব্যাপক তারতম্য দেখা দিচ্ছে, এবং তার ফলাফল হিসেবে যে সমস্ত অন্যান্য ভয়াবহ সমস্যাগুলি সামনে আসছে তার প্রভাব আরো ব্যাপক এবং সুদুরপ্রসারী। যেমন বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় অধিক মাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্রাণী ও প্রয়োজনীয় ব্যাকটেরিয়া পৃথিবী থেকে লুপ্ত হয়ে যেতে চলেছে।

অন্যদিকে সমুদ্রের জল স্তর সময়ের সাথে সাথে ক্রমাগত বাড়তে থাকার কারণে সমুদ্র ও নদী তীরবর্তী বিভিন্ন অঞ্চল তলিয়ে যেতে বসেছে। এছাড়া গ্রীন হাউস গ্যাসগুলি দ্বারা তৈরি  ওজোন স্তরে তৈরি হওয়া ক্ষতে বা ওজোন হোলের মাধ্যমে অত্যন্ত ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি পৃথিবীতে প্রবেশ করার ফলে স্কিন ক্যানসারের মতো মারণ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিচ্ছে। সর্বোপরি পৃথিবীর সামগ্রিক জলবায়ুতে আসছে এক বিরাট পরিবর্তন, যা বিশ্বকে ঠেলে দিচ্ছে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পথে। 

সমাধানের উপায়:

এই ভয়ঙ্কর সমস্যা সমাধানের উপায় খুঁজে বার না করতে পারলে অস্তিত্ব সংকট থেকে পৃথিবীর উদ্ধার সম্ভব নয়। এইভাবে একই হারে বিশ্ব উষ্ণায়ন চলতে থাকলে পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব নির্মূল হয়ে যাওয়া সময়ের অপেক্ষা ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই সেজন্য একযোগে আমাদের বিশ্ব উষ্ণায়ন থেকে প্রতিকারের উপায়ের অনুসন্ধান করতে হবে। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা এই জ্বলন্ত সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য বেশ কয়েকটি উপায়ের কথা উল্লেখ করেছেন। 

  • বিশ্ব উষ্ণায়নকে পরাজিত করার জন্য সর্বপ্রথম গ্রিনহাউস গ্যাস সৃষ্টি এবং তার নির্গমন যথাসম্ভব নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। 
  • এক্ষেত্রে সর্বপ্রথম মানুষকে নিজেদের জীবনচর্যার ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। 
  • গাড়ি, কারখানা ধোঁয়া ইত্যাদির ব্যবহার যথাসম্ভব কমিয়ে ফেলতে হবে বা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
  • ক্লোরো-ফ্লুরো-কার্বন এর মতন ক্ষতিকারক বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হয় এমন যন্ত্রপাতির ব্যবহার যথাসম্ভব কমিয়ে ফেলতে হবে।
  • জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
  • শক্তির অপ্রচলিত উৎসগুলি ব্যবহারের দিকে অধিক গুরুত্ব আরোপ করতে হবে।
  • সর্বোপরি ব্যাপক পরিমাণে বনসৃজন করতে হবে। 

উদ্যোগসমূহ:

পৃথিবীজুড়ে বিশ্ব উষ্ণায়নকে পরাস্ত করার উদ্দেশ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বর্তমানকালে বিভিন্ন সংগঠন গঠিত হয়েছে। বিভিন্ন অলাভজনক সংস্থা, সরকারি তথা কর্পোরেট বিভিন্ন সংগঠন এক্ষেত্রে নিরন্তর কাজ করে চলেছে। এইসকল সংস্থাগুলি বনসৃজন করা, আঞ্চলিক স্তরে মানুষকে সচেতন করা, দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা ইত্যাদি জনকল্যাণমূলক কাজ গুলি করে থাকে।

আন্তর্জাতিক স্তরে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ বিশ্ব উষ্ণায়নকে একটি আন্তর্জাতিক সংকট হিসেবে ঘোষণা করে সর্বস্তরে এর মোকাবিলা ডাক দিয়েছে। স্থানীয় স্তরেও মানুষকে বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে সচেতন করে তোলার উদ্দেশ্যে বিভিন্ন শুভ উদ্যোগ গৃহীত হচ্ছে।

উপসংহার:

বিশ্ব উষ্ণায়ন বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক সমস্যা এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। এই সমস্যা স্থান-কাল-পাত্র, দেশ, মহাদেশ নির্বিশেষে সকলের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জের মুখে এনে আজ দাঁড় করিয়েছে। তাই আজ এই সমস্যার প্রকৃত গুরুত্ব অনুধাবন করে নিজেদের সর্বশক্তি দিয়ে এর মোকাবিলার উদ্দেশ্যে ঝাঁপিয়ে না পড়লে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কতদিন পৃথিবীর আলো দেখতে পাবে সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।

তবে আশার কথা এই যে, সময়ের সাথে সাথে বিশ্ব উষ্ণায়ন এর ব্যাপারে সর্বস্তরের সচেতনতা যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে, তেমনি গ্রীন হাউজ গ্যাসের ব্যাপক নির্গমনও একটু একটু করে কমে আসতে শুরু করেছে। ফলে ওজোন স্তরে তৈরি হওয়া ক্ষতও ধীরে ধীরে নিরাময় হয়ে উঠছে। তাই আমরা একদিন পৃথিবীর সম্পূর্ণ স্বাভাবিক জলবায়ুতে সুস্থ পরিবেশে নিঃশ্বাস নিতে পারব- এই আশাকে সঙ্গী করে বিশ্ব উষ্ণায়নকে পরাহত করবার দৃঢ় প্রত্যয়ে ভবিষ্যতের পথে এগিয়ে যাওয়াই একান্ত বাঞ্ছনীয়।

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | বিশ্ব উষ্ণায়ন

Q1. বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য দায়ী কোন গ্যাস

Ans – বিশ্ব উষ্ণায়নের ক্ষেত্রে দূষণের জন্য সর্বাধিক দায়ী কার্বন-ডাই-অক্সাইড।

Q2. বিশ্ব উষ্ণায়ন বলতে কী বোঝো

Ans – সৌররশ্মি দীর্ঘ তরঙ্গরূপে মহাশূন্যে ফেরার সময় এই গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির দ্বারা শােষিত হওয়ায় নিম্ন বায়ুমণ্ডলের উন্নতা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। পৃথিবীর স্বাভাবিক উষ্ণতা অপেক্ষা এরূপ ক্রমবর্ধমান ও অস্বাভাবিক উষতা বৃদ্ধিকে বিজ্ঞানীরা বিশ্ব উষ্ণায়ন বা Global Warming নামে অভিহিত করেছেন।

Q3. বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণের দুটি উপায়

Ans – বর্তমান বিশ্বে গ্রিন হাউসের প্রতিকূল প্রভাব নিয়ন্ত্রণে নিম্নলিখিত ব্যবস্থাসমূহ নেয়া যেতে পারে:-
১। জ্বালানি শক্তির সংক্ষেণের মাধ্যমে বায়ুমন্ডলে ঈঙ২ গ্যাসের উত্তরোত্তর পরিমাণ হ্রাস-বৃদ্ধি করা।
২। সৌর পানি বায়ু পারমাণবিক শক্তির মতো পুনঃপুনঃ ব্যবহার যোগ্য শক্তি ব্যবহারের ওপর জোর দেওয়া।
৩। প্রতি কিলোমিটারে বর্তমানের চেয়ে অনেক কম জ্বালানি তেল প্রয়োজন হয় এমন মটরযান ইঞ্জিন উদ্ভাবন করা।
৪। কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপাদনকারী জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার যথাসম্ভব কম করা।
৫। বনাঞ্চল সংরক্ষণ ও নিয়মিত ব্যাপক বনায়নের মাধ্যমে নতুন নতুন বনাঞ্চল সৃষ্টি করা।
৬। কৃষি কাজে রাসায়নিক সারের ব্যবহারের পরিমাণ কমিয়ে জৈব সারের ব্যবহার ব্যাপক প্রচলন করা।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন


আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।