পাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে, সেন বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে, দাস বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

খলজি বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে

খিলজি রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন জালাল উদ্দীন ফিরুজ খিলজি।

খিলজীরা মূলত তুরক আফগান জাতি গোষ্ঠীর যারা মূলত তুর্কি এবং যারা দিল্লিতে আসার আগে আফগানিস্তান বসবাস করত। জালালুদ্দিন খিলজীর পূর্বসূরীরা হেলমান্দ এবং লামঘান এ ২০০ বছরের ও অধিক সময় ধরে বসবাস করত।

তবে খিলজীদের তুর্কি জাতিগোষ্ঠীর থেকে আলাদা ভাবা হত।বরং তারা স্থানীয় আফগানদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে তাদের সাথেই মিশে গিয়েছিল এবং তাদের সংস্কৃতিকে নিজের করে নিয়েছিল।দিল্লি দরবারে তারা আফগান হিসেবেই পরিচিত ছিল।

জালালউদ্দিন খিলজি (শাসনকাল ১২৯০-১২৯৬; মৃত্যু ১৯শে জুলাই ১২৯৬) ছিলেন খিলজি রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রথম সুলতান, এই বংশ ১২৯০ থেকে ১৩২০ সাল পর্যন্ত দিল্লির সুলতানি শাসন করেছিল। ফিরুজ নামে পরিচিত, জালালউদ্দিন মামলুক রাজবংশের আধিকারিক হিসাবে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। তিনি সুলতান মুইজউদ্দীন কায়কাবাদের রাজসভায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদ অধিকার করেছিলেন। কায়কাবাদ পক্ষাঘাতগ্রস্থ হওয়ার পরে একদল গণ্যমান্য ব্যক্তি তাঁর নবজাত পুত্র শামসুদ্দীন কয়ুমারসকে নতুন সুলতান হিসাবে নিয়োগ করে জালালউদ্দিনকে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল। পরিবর্তে, জালালউদ্দিন তাদের হত্যা করে নিজে বকলমে শাসক হয়ে বসেছিলেন। কয়েক মাস পরে, তিনি কয়ুমারস কে সরিয়ে নিজে নতুন সুলতান হয়ে বসেন।

নন্দ বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে

নন্দ রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মহাপদ্ম নন্দ।

মহাপদ্ম নন্দ, নন্দ রাজবংশের প্রথম রাজা ছিলেন যিনি ৩৪৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৩২৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্য্যন্ত মগধ রাজত্ব করেন।

মহাপদ্ম নন্দ শিশুনাগ রাজবংশের শেষ রাজা মহানন্দিনের শূদ্র গর্ভজাত পুত্র ছিলেন। তিনি মহানন্দিন ও তার অন্যান্য পত্নীদের সকল পুত্রদের হত্যা করে মগধের সিংহাসন অধিকার করে নন্দ রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। মগধের সিংহাসন লাভ করে উত্তর ভারতের প্রাচীন রাজবংশগুলিকে ধ্বংস করে একছত্র সম্রাট হিসেবে নিজেকে ঘোষণা করেন। তিনি পাঞ্চাল, কাশী, হৈহেয়, অস্মক, কুরু, সুরসেন, বিতিহোত্র, বিদেহ ও কলিঙ্গ রাজ্যের কিয়দংশ অধিকার করেন। বিন্ধ্য পর্বতশ্রেণীর দক্ষিণেও তার রাজত্ব বিস্তৃত হয়।

তুঘলক বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে

তুগলক সাম্রাজ্য ১৩২০ সালে গিয়াসউদ্দিন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত একটি তুর্কি মুসলিম রাজবংশ যারা ১৩২০ থেকে ১৪১৩ পর্যন্ত দিল্লী সালতানাতের শাসক ছিল। এই সালতানাতের রাজধানী ছিল দিল্লি।

তুগলক সাম্রাজ্যের সূচনা হয়েছিল গিয়াসউদ্দিন তুগলকের মাধ্যমে। তার মৃত্যুর পর তার ছেলে মুহাম্মদ বিন তুগলক ক্ষমতায় আসীন হন। তিনিই তুগলক সাম্রাজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটিয়েছিলেন। তারপরও মুহাম্মদ বিন তুগলক তার দূর্বল রাজ্যনীতি, অসহিষ্ণুতা এবং রহস্যময় আচরনের কারণে কুখ্যাত ছিলেন। তাই বাংলা এবং উর্দূতে তুগলকি কাণ্ড বলতে আজব এবং অবান্তর কাণ্ড-কারখানাকে বুঝায়।

মুহাম্মদ বিন তুগলকের মৃত্যুর পর এক মাসেরও কম সময়ের জন্য ক্ষমতায় এসেছিলেন তার দুঃসম্পর্কের আত্মীয় মুহাম্মদ ইবন তুগলক। কিন্তু ফিরোজ শাহ তুগলক মুহাম্মদ ইবন তুগলককে হত্যা করে ক্ষমতা দখল করে নেন। ফিরোজ শাহ তুগলক সৈন্যবাহিনীর দিকে খুব একটা মনোযোগ না দেওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের একটা বিশাল অংশ তার হাতছাড়া হয়ে যায়। ফিরোজ শাহ তুগলকের মৃত্যুর দশ বছরের মধ্যেই তুগলক সাম্রাজ্যের পতন শুরু হয়।

মৌর্য বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে

মৌর্য সাম্রাজ্য চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তিনি ছিলেন প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব এবং আনুমানিক 322 খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে 298 খ্রিস্টপূর্বাব্দ পর্যন্ত শাসন করেছিলেন। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের ক্ষমতায় উত্থান মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাকে চিহ্নিত করেছিল, যা প্রাচীন ভারতের অন্যতম প্রভাবশালী এবং বিস্তৃত সাম্রাজ্য হয়ে উঠেছিল।

চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য একজন চতুর কৌশলবিদ এবং সামরিক নেতা ছিলেন। তিনি জোট গঠন করেছিলেন, একটি শক্তিশালী সেনাবাহিনী তৈরি করেছিলেন এবং সেই সময়ে প্রাচীন ভারতের মগধ অঞ্চলে শাসনকারী নন্দ রাজবংশকে সফলভাবে উৎখাত করেছিলেন। তার উপদেষ্টা চাণক্য (কৌটিল্য বা বিষ্ণুগুপ্ত নামেও পরিচিত) এর সহায়তায় চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য তার বিশাল সাম্রাজ্য শাসন করার জন্য একটি সুসংগঠিত প্রশাসন এবং দক্ষ শাসন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করেছিলেন।

চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের শাসনামলে, মৌর্য সাম্রাজ্য উল্লেখযোগ্যভাবে বিস্তৃত হয়েছিল, দক্ষিণের প্রান্ত ব্যতীত বেশিরভাগ ভারতীয় উপমহাদেশকে জুড়েছিল। তার সাম্রাজ্য পশ্চিমে বর্তমান আফগানিস্তান ও পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ এবং পূর্বে মায়ানমার (বার্মা) এর কিছু অংশ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

প্রায় 24 বছর রাজত্ব করার পর, চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য তার সিংহাসন ত্যাগ করে জৈন ধর্ম গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেন। তিনি তার পুত্র বিন্দুসারের কাছে সাম্রাজ্য হস্তান্তর করেন, যিনি উত্তরাধিকার অব্যাহত রাখেন এবং সাম্রাজ্যকে আরও বিস্তৃত করেন। চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যকে একজন বিচক্ষণ শাসক এবং মৌর্য সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে স্মরণ করা হয়, যা ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে স্থায়ী প্রভাব ফেলেছিল।

মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা কে

মুঘলদের আদি বাসভূমি মঙ্গোলিয়া। ভারতীয় উপমহাদেশে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা জহিরউদ্দিন মুহাম্মদ বাবর। পানিপথের প্রথম যুদ্ধে ইব্রাহিম লোদীকে পরাজিত করে বাবর মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন। পানিপথের প্রথম যুদ্ধ সংঘটিত হয় ২১ এপ্রিল, ১৫২৬ সালে।

মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা জহিরউদ্দীন মুহাম্মদ বাবর।

মির্জা জাহিরউদ্দিন মুহাম্মদ বাবর ছিলেন মধ্য এশিয়ার একজন বিখ্যাত মুসলিম সম্রাট এবং মুঘল সাম্রাজের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি সাধারণত বাবর নামেই অধিক পরিচিত। ১৪৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তিনি বর্তমান উজবেকিস্তানে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৫৩০ সালের ২৬ ডিসেম্বর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

তিনি তৈমুর লঙ্গের ৬ষ্ঠ বংশধর ছিলেন। তৈমুরীয় আমির মীরন শাহের মাধ্যমে বাবুরের বংশধারা প্রবাহিত হয়েছে এবং মাতার দিক থেকে চেঙ্গিস খানের বংশধর ছিলেন। তিনি মির্জা ওমর সাঈদ বেগের (ওমর সেখ মির্জা) পুত্র ও তৈমুরী শাসক সুলতান মোহাম্মদের প্রপৌত্র ছিলেন। তিনি পানিপথের প্রথম যুদ্ধে দিল্লীর লোদি রাজবংশের শেষ সুলতান ইব্রাহিম লোদিকে পরাজিত করে দিল্লি দখল করে মুঘল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। তার মৃত্যুর পর তার পুত্র মির্জা হুমায়ুন সিংহাসনে আরোহণ করেন। পানিপথের যুদ্ধে তিনিই প্রথম কামানের ব্যবহার করেন এবং তার প্রখর রণকৌশলের (রুমী কৌশল) কাছে হার মানেন ইব্রাহিম লোদি।

গুপ্ত বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে

গুপ্ত সাম্রাজ্য ছিল একটি প্রাচীন ভারতীয় সাম্রাজ্য। আনুমানিক খ্রিষ্টীয় ৩২০ থেকে ৫৫০ অব্দের মধ্যবর্তী সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশের অধিকাংশ অঞ্চল জুড়ে এই সাম্রাজ্য প্রসারিত ছিল। মহারাজ শ্রীগুপ্ত ধ্রুপদি সভ্যতা-র আদর্শে এই সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। গুপ্ত শাসকদের সময়/শাসনামলে ভারতে যে শান্তি ও সমৃদ্ধি স্থাপিত হয়েছিল, তার ফলশ্রুতিতে দেশ বৈজ্ঞানিক ও শিল্পক্ষেত্রে বিশেষ উৎকর্ষ লাভ করতে সক্ষম হয়। গুপ্তযুগকে বলা হয় ভারতের স্বর্ণযুগ। এই যুগ ছিল আবিষ্কার, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, বাস্তুবিদ্যা, শিল্প, ন্যায়শাস্ত্র, সাহিত্য, গণিত, জ্যোতির্বিদ্যা, ধর্ম ও দর্শনের বিশেষ উৎকর্ষের যুগ; বর্তমান হিন্দু সংস্কৃতি মূলত এই যুগেরই ফসল।

গুপ্ত যুগ, ভারতের স্বর্ণযুগ নামেও পরিচিত, প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়কে প্রতিনিধিত্ব করে, যা প্রায় 320 CE থেকে 550 CE পর্যন্ত বিস্তৃত। এই যুগটি শিল্প, সাহিত্য, বিজ্ঞান এবং দর্শনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি প্রত্যক্ষ করেছে। এই আর্টিকেলে, গুপ্ত যুগ, ইতিহাস, শাসক, প্রতিষ্ঠাতা, এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

গুপ্ত যুুগের আমলে অনেক পণ্ডিত ব্যক্তি যেমন কালিদাস, আর্যভট্ট, বরাহমিহির, বিষ্ণু শর্মা -এর অবির্ভাব হয়েছিলো। প্রথম চন্দ্রগুপ্ত, সমুদ্রগুপ্ত ও দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত ছিলেন গুপ্ত সাম্রাজ্যের সর্বাপেক্ষা প্রসিদ্ধ সম্রাট। তার সাম্রাজ্য সীমা দক্ষিণ ভারতেও প্রসার লাভ করে ।

আরো পড়তে: প্রার্থনা সমাজ কে প্রতিষ্ঠা করেন, এশিয়াটিক সোসাইটি কে প্রতিষ্ঠা করেন, সত্যশোধক সমাজ কে প্রতিষ্ঠা করেন

দাস বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে

দাস রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কুতুব আল-দিন আইবক। কুতুব আল-দিন আইবক ছিলেন মুহাম্মদ ঘোরীর একজন সেনাপতি। তিনি 1206 থেকে 1210 সালের মধ্যে দাস রাজবংশ শাসন করেছিলেন। তিনি ছিলেন ভারতে তুর্কি শাসনের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা।

কুতুবউদ্দিন আইবেক ছিলেন মোহাম্মদ ঘুরীর একজন ক্রীতাদাস। পরবর্তীতে তিনি কুতুবউদ্দিন আইবেকের সেনাপতি হন। তিনি মোহাম্মদ ঘুরীর অনুমতিক্রমে দিল্লিতে ভারত বিজয়ের পরে স্থায়ীভাবে মুসলিম সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করেন। এজন্য তাকে দাস বংশের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়। আর তিনি তুর্কিস্থানের অধিবাসী হওয়ায় কুতুবউদ্দিন আইবেক ও তাঁর উত্তরাধিকারীদের শাসনামলকেপ্রাথমিক যুগের তুর্কি শাসন বলেও অভিহিত করা হয়।দানশীলতার জন্য তাকে ‘লাখবক্স’ বলা হত। দিল্লীর কুতুবমিনার নির্মান কাজ শুরু হয় তার শাসনামলে। তিনি মিনারের কাজ শেষ করে যেতে পারেননি। দিল্লীর বিখ্যাত সাধক কুতুবুদ্দিন বখতিয়ার কাকীর নামানুসারে এই মিনারের নাম রাখা হয়।

ইলতুতমিশ হলেন কুতুবউদ্দিন আইবেকের জামাতা। তিনি ছিলেন প্রাথমিক যুগে দিল্লির শ্রেষ্ঠসুলতান।দিল্লির সালাতানাতের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা তিনি। ভারতের মুসলমানদের মধ্যে প্রথম তিনি মুদ্রার প্রচলন করেন।তিনি কুতুবমিনার নির্মান কাজ শেষ করেন।ইলতুতমিশের কন্যা রাজিয়া সুলতানা ছিলেন দিল্লির সিংহাসনে আহোরনকারী প্রথম মুসলিম নারী। সুলতান নাছির উদ্দিন মাহমুদসরল ও অনাড়ম্ভর জীবন-যাপনের জন্য তিনি ‘ জিন্দাপীর’ নামে পরিচিত। তিনি কুরআন নকল ও টুপি সেলাই করে জীবিকা নির্বাহ করতেন।সুলতান গিয়াসউদ্দিন বিদ্যোৎসাহী ও গুনীজনের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। ‘ ভারতের তোতা পাখি হিসেবে খ্যাত আমির খসরু ছিলেন আর সভাকবি।

সেন বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে

সেন রাজবংশ ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথম দিকের মধ্যযুগীয় একটি হিন্দু রাজবংশ ছিল, যা বাংলা থেকে একাদশ ও দ্বাদশ শতাব্দী পর্যন্ত সেন সাম্রাজ্য হিসেবে শাসন করেছিল। বল্লাল সেন রচিত গ্রন্থ অনুসারে সেন রাজবংশ এর গোরাপত্তন ৯০০ শতকেরও পূর্বে। বাংলার পাল রাজাদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে করতে তারা একসময় পাল রাজাদেরকে পরাজিত করে পাল সাম্রাজ্য করায়ত্ত করেন। সেন রাজাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে তারা রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং সামাজিক শাসন প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। বাংলা হতে পরিচালিত সেন সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ছিল বঙ্গোপসাগরের উপকুল থেকে উত্তরভারত (কনৌজ) পর্যন্ত।

সেন রাজাদের আদি বাসস্থান ছিল রাঢ়ভূমের আদি কর্ণসুবর্ণে। সেনরা জাতিতে ব্রাহ্মণ ছিলেন কিন্তু ব্রাহ্মণ হয়ে রাজন্যধর্ম/ক্ষত্রিয়বৃত্তি পালনের জন্য বল্লাল সেনের অদ্ভুতসাগর গ্রন্থে ক্ষত্রচরিত্রাচার্য্য ব্রাহ্মণ ও লক্ষণ সেনের তাম্রশাসন অনুসারে রাজন্যধর্মাশ্রয়ী ব্রাহ্মণ ( উভয়ের ভাবার্থ একই) বলে শিলালিপিতে উল্লেখ করে গেছেন।

পাল রাজবংশের পতনের পর বাংলাদেশে তাদের শাসন অর্ধশতাব্দী বছরেরও কম, মাত্র ৪৩ বছর। তবে সময়কাল সংক্ষিপ্ত হলেও প্রাচীন বাংলার সর্বশেষ ইতিহাসটাই ধারণ করে আছে সেন বংশ। তবে সময়ের দিক দিয়ে নিকটবর্তী হলেও এ ইতিহাসগুলিও বিভিন্ন সময় কালে বেশ গড়মিল আছে, বিভিন্ন ঐতিহাসিকদের তথ্যে আছে বিভিন্নতা। এমনকি সেন রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা সামন্ত সেন নাকি তার নাতি বিজয় সেন- এ নিয়েও ঐতিহাসিকদের মাঝে এখনো বিতর্ক আছে।

সেন বংশের প্রথম ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব সামন্তসেন সম্পর্কে খুব কমই জানা যায়। জীবনের শেষদিকে তিনি গঙ্গাতীরে রাঢ়ের কোথাও বসতি স্থাপন করেন। তবে তিনি কোন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন নি এবং তাঁর নামের সাথে কোন রাজকীয় উপাধিও সংযুক্ত হয় নি। তিনি কোন রাজ্য প্রতিষ্ঠা না করায় সেন বংশের প্রথম রাজার মর্যাদা দেওয়া হয় তার পুত্র হেমন্ত সেনকে। হেমন্ত সেন পাল রাজা রামপালের অধীনে একজন সামন্ত রাজা ছিলেন বলে জানা যায়।

“বিজয় সেন ধর্মের দিক হতে হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি ছিলেন গোঁড়া হিন্দু সাম্প্রদায়িক ও ভিন্ন ধর্মের প্রতি ছিলেন তিনি চরম অসহিষ্ঞু। তাঁর আমলে ব্যাপক মাত্রায় বৌদ্ধদের উপর অত্যাচার নির্যাতন হয়। বৌদ্ধ নির্যাতনের এই ধারা পরবর্তী সেন রাজাদের আমালেও অব্যাহত ছিল। সেন বংশের অধীনেই সর্বপ্রথম সমগ্র বাংলা দীর্ঘকালব্যাপী একক রাজার অধীনে ছিল। তখনকার বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলায় সেন রাজাদের দমন নীতি চরম রূপ ধারণ করে। সেন রাজাদের অত্যাচারে বৌদ্ধদের একটা অংশ নেপালে গিয়ে আশ্রয় গ্রহন করে। যে কারণে চর্যাপদ নেপাল থেকে আবিস্কৃত হয়।” (Chowdhury, M. Abdul Mu’min, The Rise and Fall of Buddhism in South Asia, London , 2008).

বিজয় সেনের পর তার পুত্র বল্লাল সেন আনুমানিক ১১৬০ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে আরোহণ করেন। ইতোমধ্যে বাংলায় পাল সাম্রাজ্যের পুরোপুরি বিলুপ্তি ঘটে। বল্লাল সেন নতুন করে মগধ ও মিথিলাও সেন রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত করে নেন। কুখ্যাত কৌলিণ্য বা জাতিভেদ প্রথার প্রবর্তন করেন বল্লাল সেন। ফলে ব্রাহ্মণদের প্রভাব প্রতিপত্তি অত্যন্ত বৃদ্ধি পায়। বিপরীতে বৌদ্ধ ধর্ম নানাবিধ অত্যাচার নিপীড়ন ও বিধি নিষেধের কবলে পড়ে ক্রমে দুর্বল হতে থাকে। বাঁচার তাগিদে বাধ্য হয়ে বৌদ্ধদের একটা অংশ হিন্দু ধর্ম গ্রহণ করে বর্ণ প্রথার সর্বনিন্মে স্থান পায়। বৃদ্ধ বয়সে পুত্র লক্ষণ সেনের উপর শাসনভার অর্পণ করে বল্লাল সেন সস্ত্রীক ত্রিবেনীর নিকট গঙ্গাতীরে চলে যান।

লক্ষণ সেন ১১৭৮ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি প্রাগ-জ্যৌতিষ, গৌড়, কলিঙ্গ, কাশী প্রভৃতি অঞ্চল রাজ্যভুক্ত করে সেন সাম্রাজ্যের আওতা আরো বৃদ্ধি করেন। কেউ কেউ মনে করেন পিতৃধর্ম ত্যাগ করে লক্ষণ সেন বৈষ্ঞব ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং পিতা ও পিতামহের উপাধি ‘পরম মহেশ্বর’ এর পরিবর্তে ‘পরম বৈষ্ঞব’ গ্রহণ করেন। তবে পিতার তৈরি কৌলিণ্যপ্রথা খুব কঠোরভাবে প্রয়োগ করতেন তিনি। ফলে বৌদ্ধ ও নিম্নবর্ণের হিন্দুদের উপর নিপীড়ন বৃদ্ধি পেতে থাকে। নিম্নবর্ণের মানুষদের কোন সামাজিক মর্যাদা ছিলো না। ‘সতীদাহ প্রথা’ কঠোরভাবে মানা হতো। অর্থাৎ স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীকে মৃত স্বামীর জীবন্ত চিতায় পুড়িয়ে মেরে ফেলা হতো। ব্রাহ্মণ ছাড়া আর কারো বিদ্যা অর্জন করার অধিকার স্বীকৃত ছিল না। ব্রাহ্মণদের অত্যাচার সাধারণ মানুষের জীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছিল। নিম্ন বর্ণের হিন্দু ও বৌদ্ধদের উপর চরম নির্যাতন হতো। বৌদ্ধ সমাজ ও সংস্কৃতিতে নেমে আসে চরম দুর্দশা। ব্রাহ্মণদের প্রভাবে সাধারণ হিন্দুরাও দুর্বল হয়ে পড়ে। প্রাচীন বাংলার এই শেষ পর্যায়ে মুসলমান সমাজের ভিত গড়ে উঠার প্রক্রিয়া শুরু হয়।

লক্ষণ সেনের রাজধানী ছিল নদীয়া। ১২০৫ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম সেনাপতি তুর্কি বীর ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খলজির সাহসী, বুদ্ধিদীপ্ত ও ঝটিকা আক্রমণে পরাজিত হয় লক্ষণ সেন প্রাসাদের পেছন দিক দিয়ে খালি পায়ে সপরিবারে পালিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব বাংলায় অবস্থান নেন। পূর্ব বাংলায় আরো কিছুকাল রাজত্ব করে আনুমানিক ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর দুই পুত্র বিশ্বরূপ সেন ও কেশব সেন পূর্ব বাংলায় কিছুকাল শাসন বজায় রাখেন। তবে এ নিয়ে ইতিহাসে বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায় না। তবে একথা নির্দ্বিধায় বলা চলে মুসলিম সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজী কর্তৃক লক্ষণ সেনের পরাজয়ের মাধ্যমে বাংলায় ইসলামের রাজনৈতিক বিজয়ের মধ্য দিয়েই সেন শাসনের অবসান ঘটে।

পাল বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে

পাল ছিলেন পাল রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি পাল সাম্রাজ্যের দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করেন।

গোপাল ছিলেন বাংলার পাল রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ৭৫০ থেকে ৭৮১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন। গোপাল বাংলার শতবর্ষব্যাপী চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর করে শাসনভার গ্রহণের জন্য সুপরিচিত। তার নামের সঙ্গে যুক্ত “পাল” তার কোনো জাতিগত পরিচয়কে নির্দেশ করে না। “পাল” অর্থ রক্ষাকর্তা বা রক্ষক। তার সম্পর্কে তার নিজস্ব কোনো উৎস থেকে কিছু জানা যায়নি। তার বংশধরদের তাম্রশাসন বা তাম্রলিপি ও পাল সভাকবিদের কাব্য থেকে তার ও তার রাজত্ব সম্পর্কে কিছুটা জানা যায়।

আরো অন্যান্য প্রশ্নোত্তরের সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | প্রতিষ্ঠাতা

Q1. পুষ্যভূতি বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে

Ans – ভারতে পুষ্যভূতি রাজবংশকে ভারতে সেই সময়ে অত্যন্ত মূল্যবান হিসাবে বিবেচনা করা হয়। রাজবংশটি ” নারবর্ধন ” নামে প্রথম শাসকের সাথে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। “রাজ্যবর্ধন” ছিলেন “প্রভাকর-বর্ধন” এর পুত্র এবং পুষ্যভূতি রাজবংশের জন্য উল্লেখযোগ্য রাজা হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

Q2. হায়দ্রাবাদ রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা কে

Ans – হায়দ্রাবাদ রাজ্যটি মীর কামার-উদ্দিন খান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যিনি ১৭১৩ থেকে ১৭২১ সাল পর্যন্ত মুঘলদের অধীনে ডেকানের বা দাক্ষিণাত্যের গভর্নর ছিলেন।

Q3. রাষ্ট্রকূট বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে

Ans – দন্তিদুর্গ ছিলেন রাষ্ট্রকূট রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা । তিনি কলিঙ্গ, কোশল, কাঞ্চী, শ্রীশ্রীল, মালব, লতা প্রভৃতি জয় করেছিলেন এবং চালুক্য রাজা কীর্তিবর্মাকে পরাজিত করে মহারাষ্ট্র দখল করেছিলেন বলে কথিত আছে। প্রথম কৃষ্ণ ছিলেন দন্তিদুর্গের পুত্র ও উত্তরসূরি।

Q4. কুষাণ বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে

Ans – সম্রাট কুজুল কদফিসেস ছিলেন এর প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।