প্রার্থনা সমাজ কে প্রতিষ্ঠা করেন, এশিয়াটিক সোসাইটি কে প্রতিষ্ঠা করেন, সত্যশোধক সমাজ কে প্রতিষ্ঠা করেন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

প্রার্থনা সমাজ কে প্রতিষ্ঠা করেন, প্রার্থনা সমাজের প্রতিষ্ঠাতা কে

ডাঃ আত্মারাম পান্ডুরং 1867 সালে পশ্চিম ভারতে ধর্মীয় ও সামাজিক সংস্কারের জন্য প্রার্থনা সমাজ প্রতিষ্ঠা করেছেন।

উনিশ শতকে মহারাষ্ট্রের সমাজসংস্কার আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃত হিসাবে জ্যোতিবা ফুলেকে মনে রাখা হয় । তিনি জাতিভেদ প্রথা, অস্পৃশ্যতা দূরীকরণ এবং নিম্নবর্গের মানুষের অবস্থার উন্নতির জন্য আজীবন সংগ্রাম করে গেছেন । পাশ্চাত্য শিক্ষা, বিশেষত নারী শিক্ষার বিস্তারেও তিনি সচেষ্ট হয়েছিলেন । 

উনবিংশ শতকে ভারতে যে ধর্মীয় এবং সামাজিক পুনরুজ্জীবন আন্দোলন শুরু হয় তা ভারতীয় সমাজে বহুবিধ প্রভাব বিস্তার করে, যেমন—

(১) ভারতবাসীরা তাদের সামাজিক কুপ্রথার বিরুদ্ধে ক্রমশ সজাগ হয়ে ওঠে ।

(২) ভারতবাসীরা তাদের প্রাচীন ঐতিহ্য, কৃষ্টি ও সভ্যতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ওঠে ।

(৩) ভারতীয় নবজাগরণ ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারার বিকাশে নানা ভাবে সাহায্য করেছিল ।

(৪) ভারতীয় জাতীয়তাবাদ প্রথমে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বিকশিত হয়েছিল, পরে উনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে তা রাজনৈতিক চরিত্র লাভ করে ।

এশিয়াটিক সোসাইটি কে প্রতিষ্ঠা করেন

উইলিয়াম জোনস কলকাতায় এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন।1784 সালে কলকাতা এশিয়াটিক সোসাইটি প্রতিষ্ঠিত হয়।

এটি পার্কস্ট্রিট মোড়ে অবস্থিত। ধর্মতলা থেকে পার্কস্ট্রিটের দিকে যেতে রাস্তায় অবস্থিত ।

দ্য এশিয়াটিক সোসাইটি কলকাতার একটি অগ্রণী গবেষণা সংস্থা। ১৭৮৪ সালের ১৫ জুলাই ভারততত্ত্ববিদ স্যার উইলিয়াম জোনস ব্রিটিশ ভারতের তদানীন্তন রাজধানী কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে এই সংস্থাটি প্রতিষ্ঠা করেন। ভারতের তদানীন্তন গভর্নর-জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংস ছিলেন এই সংস্থার প্রধান পৃষ্ঠপোষক। ১৮০৮ সালে দক্ষিণ কলকাতার পার্ক স্ট্রিটের একটি ভবনে সংস্থাটি স্থানান্তরিত হয়। ১৯৬৫ সালে এই ঐতিহাসিক ভবনটির পাশেই সোসাইটির দ্বিতীয় ভবনটির দ্বারোদ্ঘাটন করা হয়। বর্তমানে সোসাইটির একটি নিজস্ব গ্রন্থাগার ও নিজস্ব সংগ্রহালয়ও রয়েছে। এই গ্রন্থাগার ও সংগ্রহশালায় সংরক্ষিত আছে অনেক প্রাচীন পুঁথি, বইপত্র, তাম্রসনদ, মুদ্রা, প্রতিকৃতি, ছবি ও আবক্ষ মূর্তি। উল্লেখ্য, কলকাতার এশিয়াটিক সোসাইটি সমজাতীয় সংস্থাগুলির মধ্যে প্রাচীনতম।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে এশিয়াটিক সোসাইটিতে শুধুমাত্র ইউরোপীয়রাই এর সদস্যপদ গ্রহণ করতে পারতেন। জন হাইড, জন কার্নাক, হেনরি ভ্যান্সিট্রাট, জন শোর, চার্লস উইল্কিন্স, ফ্রান্সিস গ্ল্যাডউইন, জোনাথন ডানকান প্রভৃতি এই প্রতিষ্ঠানের প্রথম সদস্য ছিলেন। কিন্তু ১৮২৯ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠানের তৎকালীন সম্পাদক হোরেস হেম্যান উইলসনের পরিকল্পনা মতো ভারতীয়রা এই প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদের অধিকারী হন। প্রসন্নকুমার ঠাকুর, দ্বারকানাথ ঠাকুর, রসময় দত্ত এবং রামকমল সেন এই প্রতিষ্ঠানের প্রথম ভারতীয় সদস্য ছিলেন। ১৮৩২ খ্রিস্টাব্দের ডিসেম্বর মাসে রাধাকান্ত দেবকে সদস্য হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। ১৮৩৩ খ্রিস্টাব্দে রামকমল সেন প্রথম ভারতীয় সম্পাদক এবং ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে রাজেন্দ্রলাল মিত্র এই প্রতিষ্ঠানের প্রথম ভারতীয় সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

সত্যশোধক সমাজ কে প্রতিষ্ঠা করেন

‘সত্যশোধক সমাজ’ জ্যোতিবা ফুলে মহারাষ্ট্রের পুনেতে 18 সেপ্টেম্বর 1873 সালে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন।

জ্যোতিরাও ফুলে ছিলেন পুনের মালি সম্প্রদায়ের একজন সমাজ সংস্কারক।

জ্যোতি রাও গোবিন্দরাও ফুলে ছিলেন দলিত জনগণের জন্য একজন ভারতীয় সামাজিক কর্মী, একজন চিন্তাবিদ, একজন বর্ণ-বিরোধী সমাজ সংস্কারক এবং মহারাষ্ট্রের একজন লেখক।

সত্যশোধক সমাজ হল একটি সামাজিক সংস্কার সমাজ যা 1873 সালের 24 সেপ্টেম্বর ভারতের পুনেতে জ্যোতিরাও ফুলে দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল শোষণ ও নিপীড়ন থেকে শূদ্র এবং অস্পৃশ্য জাতিদের মুক্ত করা।

মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠাতা কে

মুসলিম লীগ ১৯০৬ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রতিষ্ঠিত একটি রাজনৈতিক দল। শুরুতে আগা খান এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ কর্তৃক পরিচালিত এ দলটি মুসলিম জাতীয়তাবাদের পক্ষে জনসমর্থন তৈরিতে এবং অবশেষে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করে। ১৯০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় মুসলিম লীগ প্রতিষ্ঠার পটভূমি ১৮৮৫ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার সময় হতে চিহ্নত করা যেতে পারে।

সরকারের সঙ্গে ক্ষমতার অংশীদারিত্ব এবং ভারতে প্রতিনিধিত্বমুলক সরকার প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারকে অনুপ্রাণিত করার উদ্দেশ্য নিয়ে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত হিন্দু সম্ভ্রান্ত শ্রেণি কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা করেছিল।

মুসলিম সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ সম্মানিত নেতা স্যার সৈয়দ আহমদ খান মুসলিম সম্প্রদায়ের স্বার্থে ভারতীয় মুসলমানদের কংগ্রেসে যোগ না দিতে হুঁশিয়ার করে দিয়েছিলেন। তিনি আলীগড়ে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করে তাঁর আন্দোলন শুরু করেন। স্যার সৈয়দ আহমদ এবং তাঁর মতো অন্যান্য মুসলমান নেতারাও বিশ্বাস করতেন যে, একটি পশ্চাৎপদ জাতি হিসেবে মুসলমানগণ ব্রিটিশদের প্রতি বিরোধিতার পরিবর্তে আনুগত্যের মাধ্যমেই অধিকতর সুযোগ-সুবিধা পেতে পারে। মুসলমান জনগোষ্ঠীর মাঝে ইংরেজি শিক্ষা জনপ্রিয় করে তোলার জন্য তিনি তাঁর অনুসারীদের সর্বশক্তি নিয়োগের নির্দেশ দেন। এ উপলব্ধি এবং অনুবর্তী সক্রিয়তা ‘আলীগড় আন্দোলন’ নামে পরিচিতি লাভ করে।

ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ কে প্রতিষ্ঠা করেন

ব্রিট্রিশ-ভারতের গভর্ণর জেনারেল লর্ড ওয়েলেসলি ১৮০০ সালে “ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ” প্রতিষ্ঠা করেন।

ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ বা কলেজ অফ ফোর্ট উইলিয়াম ছিল ব্রিটিশ ভারতের গভর্নর-জেনারেল লর্ড ওয়েলেসলি প্রতিষ্ঠিত একটি প্রাচ্যবিদ্যা শিক্ষাকেন্দ্র। ১৮০০ সালের ০৯ জুলাই কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম চত্বরে এই কলেজ স্থাপিত হয়।

অনুশীলন সমিতি কে প্রতিষ্ঠা করেন

১৯০২ খ্রিষ্টাব্দের ২৪ মার্চ (সোমবার ১০ চৈত্র ১৩০৮) এই সমিতি তৈরি হয়েছিল সতীশচন্দ্র বসু ও প্রমথনাথ মিত্রের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায়।

১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘আনন্দমঠ উপন্যাসের সূত্রে তৎকালীন বাঙালি তরুণ সমাজ বিপ্লবের মন্ত্রে উজ্জীবীত হয়ে উঠেছিলেন। সতীশচন্দ্র বসু এঁদেরই একজন ছিলেন। বিশেষ করে দেশের সেবা করার জন্য শারীরিক, মানসিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক চর্চার ভিতর গড়ে ওঠ তরুণ প্রকৃত যোদ্ধা হয়ে উঠতে পারেন। এই আদর্শকে সামনে রেখে তৎকালিন জেনারেল এ্যাসেম্বলিজ ইন্সটিটিউশানের (পরবর্তী সময়ের স্কটিশচার্চ কলেজ) ব্যায়ামাগারে সতীশচন্দ্র বসু প্রথম একটি ‘কাশীনাথ সাহিত্য সমিতি’ গড়ে তুলেছিলেন। এটি ছিল মূলতঅনুশীলন’ প্রবন্ধের আদর্শে এই গড়ে ওঠা একটি সংগঠন। তাঁরই ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এখানে শরীর চর্চার পাশাপশি মানসিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক চর্চাকেন্দ্র হিসেব গড়ে উঠেছিল।

১৯০২ সাল নাগাদ অরবিন্দ ঘোষ বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথের কলকাতা আসার ব্যবস্থা করার পরে যুব সঙ্ঘ ও ব্যামাগার প্রতিষ্ঠা ইত্যাদির প্রতি মনোনিবেশ করেন। যতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাথে বিভূতিভূষন ভট্টাচার্য, সরলা দেবী ঘোষাল, প্রমথনাথ মিত্রের যোগাযোগ হয়। তখন কলকাতায় কিছু ক্লাব ও ব্যামাগার ছিল যার মধ্যে অধিক পরিচিত ছিল বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডের ব্যামাগার যেটি সরলাদেবী নিজে চালাতেন। এছাড়া ছিল সতীশ চন্দ্র বসু প্রতিষ্ঠিত অনুশীলন সমিতি, আত্মোন্নতি সমিতি ইত্যাদি।

সতীশ বসু নিজে জেনারেল এসেম্বলি ইনস্টিটিউশনের ছাত্র ও স্বামী বিবেকানন্দের শাক্ত দর্শন প্রভাবিত ব্যক্তি ছিলেন। বিবেকানন্দের দুই শিষ্য ভগিনী নিবেদিতা ও স্বামী সারদানন্দর সাথে তার সরাসরি যোগাযোগ ছিল। নিবেদিতা জাপানী ব্যক্তিত্ব কাকুজ ওকাকুরার সাথে বিশেষ পরিচিত ছিলেন, শ্রী বসুর ওপর জাতীয়তাবাদী চিন্তা, চেতনার প্রভাব পড়ার ক্ষেত্রে এনাদের অবদান ছিল। লাঠি খেলা, দেহ চর্চা ইত্যাতিদে নিয়োজিত সতীশ বসু স্বদেশী শিল্পের অন্যতম সমর্থক ছিলেন।।

স্বামী সারদানন্দ ও নিবেদিতার প্রভাবে তার হাত দিয়ে প্রতিষ্ঠা হল অনুশীলন সমিতির। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অনুশীলন তত্ব অনুসারে গঠিত এই সমিতি শারীরীক, মানসিক, নৈতিক ও আধ্যাত্মিক সক্ষমতা উন্নতির জন্যে কাজ করতে থাকে তরুনসমাজের ভেতর। যতীন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলের সাথে অনুশীলন সমিতির সংযোগ ঘটে প্রমথনাথ মিত্রের হাত ধরে।

সমিতির সদস্য সংগ্রহ শুরু হয় তরুনদের ভেতর থেকে, ছাত্রদের গীতা শপথ রাখতে হত। মা দুর্গার শাক্তমূর্তির আরাধনা ছিল মূল মন্ত্র। এই কারণেই সেযুগের মুসলিম সমাজের কাছে গ্রহণযগ্যতা পায়নি সমিতির কর্মকান্ড। তলোয়ার খেলা, ড্রিল্‌, মুষ্টিযুদ্ধ ও কুস্তির চর্চা করানো হতো সদস্যদের। সাপ্তাহিক পঠন পাঠনে জাতীয় আধ্যাত্মিকতা ও নৈতিক উন্নতির কথা বলা হত। প্রথম দিকে সমিতির কার্যকলাপ গুরুত্বপূর্ণ কোনো ছাপ ফেলতে পারেনি। ১৯০৩ সালে অরবিন্দ তার ভাই বারীন্দ্রকুমার ঘোষকে কলকাতা পাঠান। যতীন্দ্রনাথ ব্যানার্জীর সাথে মতপার্থক্যের ফলে বারীন্দ্রকে আবার বরোদায় চলে যেতে হয়। কলহ ও মতবিরোধের জন্যে অনুশীলন সমিতির কাজ বৃহৎ আন্দোলনের আকার দিতে পারেনা।

আর্য সমাজ কে প্রতিষ্ঠা করেন, আর্য সমাজের প্রতিষ্ঠাতা কে

আর্য সমাজ হচ্ছে বৈদিক মত পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী কর্তৃক ১৮৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত একটি হিন্দু সংগঠন ও সংস্কার আন্দোলন। দয়ানন্দ সরস্বতী ছিলেন একজন বেদ প্রচারক। আর্য সমাজ মূলত স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী প্রবর্তিত দশটি নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত। আর্য সমাজের সদস্যগণ নীতিগুলো মেনে চলেন। একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী সংগঠনটি উপাসনা পদ্ধতি নির্গুণ।

আর্য সমাজ সর্বপ্রথম হিন্দুধর্মে প্রত্যাবর্তন প্রক্রিয়ার প্রচলন করে। সংস্থাটি ১৮০০ সাল থেকে ভারতে নাগরিক অধিকার আন্দোলনের বৃদ্ধির দিকেও কাজ করেছে।

ভারত সভা কে প্রতিষ্ঠা করেন

সুরেন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায় প্রমুখ বুদ্ধিজীবী শ্রেণির নেতা উপলব্ধি করেছিলেন যে, দেশের বৃহত্তর জনগণের সংযোগে গণতান্ত্রিকভাবে সমিতি গঠন না করলে সরকার সেই সমিতির দাবিকে মূল্য দেবেন না। প্রকৃতপক্ষে, আগেকার রাজনৈতিক সমিতিগুলি ছিল রক্ষণশীল ও তাদের আচরণ ছিল অভিজাতসুলভ। তা ছাড়া, সর্বভারতীয় স্তরে সমিতি গঠন ও আন্দোলন পরিচালনা না করলে সরকার আঞ্চলিক কোন সমিতির দাবিকে গুরুত্ব দেবে না। একথা বুঝতে পেরে ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুলাই কলকাতার অ্যালবার্ট হলে সুরেন্দ্রনাথ ও আরও কয়েকজন বুদ্ধিজীবীর উদ্যোগে স্থাপিত হয় ভারতসভা বা ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন।

ভারতসভা’-র চারটি ঘোষিত উদ্দেশ্য ছিল : –

  • (১) জনমত গঠন, (২) ভারতের সকল জাতি ও সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্য স্থাপন, (৩) হিন্দু-মুসলিম ঐক্য স্থাপন এবং (৪) রাজনৈতিক আন্দোলনের সঙ্গে ভারতের জনসংযোগ ঘটানো।

ভারত সভার কার্যাবলি

ভারতের জাতীয়তাবোধ বিকাশে ভারত সভা একাধিক আন্দোলন পরিচালনা করে।

  • ব্রিটিশ সরকার সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার বয়সসীমা ২১ থেকে কমিয়ে ১৯ করার ফলে ভারতীয় ছাত্ররা প্রতিযোগীগিতায় পিছিয়ে পড়তে থাকে। ভারত সভা এই আইনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানায়। আইনের বিরুদ্ধে জনমত গঠনের জন্য সুরেন্দ্রনাথ দেশব্যাপী ভ্রমণ করেন।
  • ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দে লর্ড নর্থব্রুক নাট্যাভিনয় নিয়ন্ত্রণ আইন জারি করলে ভারত সভা এই আইনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানায়।
  • ১৮৭৮ খ্রিস্টাব্দে লর্ড লিটন দেশীয় সংবাদপত্র এবং অস্ত্র আইন জারি করলে ভারত সভা দেশব্যাপী আন্দোলন শুরু করে।
  • ১৮৮৩। খ্রিস্টাব্দে বিচারব্যবস্থার ত্রুটি দূর করার নামে বৈষম্যমূলক ইলবার্ট বিল পাস করলে ভারত সভা প্রতিবাদ জানায় এবং আন্দোলন শুরু করে।

উপরিউক্ত ভারতসভা কর্তৃক দাবিদাওয়া গুলি পুরোপুরি সফল না হলেও এই সভা ভারতের রাজনৈতিক জাগরন অথা জাতীয়তাবাদের বিকাশে প্রভুত অবদান রেখে ছিল এবং জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার পথ প্রদর্শকের কাজ করেছিল।

হিন্দু কলেজ কে প্রতিষ্ঠা করেন

1817 খ্রিস্টাব্দের 20 শে জানুয়ারি ডেভিড হেয়ার এর উদ্যোগে বৈদ্যনাথ মুখোপাধ্যায়, রাধাকান্ত দেব রসময় দত্ত, দ্বারকানাথ ঠাকুর এবং রামমোহন রায়ের সহায়তায় হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। 1855 খ্রিস্টাব্দে কলেজটি প্রেসিডেন্সি কলেজ নামে পরিচিত হয়।

ভদ্র হিন্দু ঘরের সন্তানদেরকে ইংরেজি ও ভারতীয় ভাষাসমূহ ছাড়াও ইউরোপ ও এশিয়ার সাহিত্য ও বিজ্ঞান বিষয়ে শিক্ষাদান ছিল এই কলেজ স্থাপনের প্রাথমিক উদ্দেশ্য। বাংলার সমাজ ও সাংস্কৃতিক জীবনে কলেজটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ভারতে ইংরেজ আগমনের পূর্বে বাংলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে বাংলা, সহজ পাটিগণিত ও সংস্কৃতের বাইরে উলে­খযোগ্য তেমন কিছু শিক্ষা দেওয়া হতো না। টোলসমূহে উচ্চতর সংস্কৃত, ব্যাকরণ ও সাহিত্য, ধর্মতত্ত্ব, ন্যায়শাস্ত্র ও দর্শনশাস্ত্র বিষয়ে পড়ানো হতো। এ শিক্ষা রাজা রামমোহন রায়ের মতো জ্ঞানালোকিত ভারতীয়দের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারে নি। তাদের মতে, এ শিক্ষা ‘ব্যাকরণের সূক্ষ্মতা আর অধিবিদ্যার চুলচেরা বিশ্লেষণ দিয়ে তরুণদের মনকে অহেতুক ভারাক্রান্ত করবে’, কারণ বাস্তবে এ শিক্ষার কোন প্রতিফলন নেই। ব্রিটিশ বণিকদের সঙ্গে যাদের লেনদেন ছিল, তারা ইংরেজি শিক্ষার প্রয়োজন তীব্রভাবে অনুভব করেন। এই প্রয়োজন মেটানোর উদ্দেশ্যে কিছু বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়।

আত্মীয় সভা কে প্রতিষ্ঠা করেন

আত্মীয় সভা হিন্দু ধর্ম ও সমাজ সংস্কারকারী রামমোহন রায় (১৭৭৪-১৮৩৩) কলকাতায় ১৮১৫ সালে আত্মীয়সভা প্রতিষ্ঠা করেন। এটি ছিল ব্যক্তিগত পর্যায়ে আলোচনার জন্য সমমনা ব্যক্তিদের একটি গোষ্ঠী, যারা কলকাতায় রামমোহনের মানিকটোলার বাগান বাড়িতে নিয়মিতভাবে মিলিত হতেন। আত্মীয়সভা (বান্ধব সমিতি) ছিল এক ধরনের আলোচনা স্থল যেখানে রামমোহন রায় ও তাঁর বন্ধুরা ধর্মীয় ও সামাজিক সমস্যা সম্পর্কে নিজেদের মধ্যে মত বিনিময় করতে সমবেত হতেন। আত্মীয়সভার সভাগুলিতে আলোচিত বিষয়ের মধ্যে ছিল মূর্তি পূজার অসারতা, বর্ণ প্রথা এবং সতীদাহ প্রথা ও বহুবিবাহের কুফলসমূহ এবং বিধবা বিবাহ প্রচলনের বাঞ্ছনীয়তা।

ভারতসভা কে প্রতিষ্ঠা করেন

শিবনাথ শাস্ত্রী ও সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে কলকাতায় ভারতসভা গড়ে উঠেছিল।

ভারতসভা প্রতিষ্ঠিত হয় 1786 সালের 26 শে জুলাই তারিখে। ভারতসভা প্রতিষ্ঠা করার পিছনে একাধিক উদ্দেশ্য ছিল অবশ্যই ভারতীয়দের সমর্থনে।

  1. হিন্দু মুসলমানদের মধ্যে সম্প্রীতি স্থাপন করা।
  2. জনসাধারণকে গণ আন্দোলনে সামিল করা।
  3. সারা দেশব্যাপী শক্তিশালী জনমত গঠন করা।
  4. রাজনৈতিক প্রয়োজনীয় জাতিধর্ম নির্বিশেষে বিভিন্ন গোষ্ঠীকে দলবদ্ধ করা।

কার্যকলাপ :

  1. ICS পরীক্ষার বয়স নির্ধারিত হয়েছিল 19 থেকে 21 বছর । পরে ভারতসভার প্রতিবাদ – আন্দোলনে তা বাতিল করতে হয় ব্রিটিশ সরকারকে।
  2. সংবাদপত্র আইন পাস করে সরকার দেশীয় সংবাদপত্রের উপর নিয়ন্ত্রণ চালু করে। ভারতসভা এর বিরুদ্ধে তীব্র গণ – আন্দোলন গড়ে তোলে। ফলে তা বাতিল করা হয়।
  3. ইলবার্ট বিল (Ilbert Bill, 1883) : এই বিলে ভারতীয় ম্যাজিস্ট্রেটগণ ইংরেজ নাগরিকদের বিচার করার অধিকার পায়। ইংরেজরা এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হলে, ভারতসভা বিলের সমর্থন জানায়।
আরো অন্যান্য প্রশ্নোত্তরের সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | প্রতিষ্ঠান

Q1. মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠাতা কে

Ans – হরিচাঁদ ঠাকুর (১১ মার্চ ১৮১২ – ৫ মার্চ ১৮৭৮) মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রবর্তক। তিনি সমাজের পিছিয়ে পড়া নিম্নশ্রেণির অথবা, দলিত মানুষের উন্নয়নে নানান কাজ করেছিলেন।

Q2. বিদ্যোৎসাহিনী সভা কে প্রতিষ্ঠা করেন

Ans – কালীপ্রসন্ন সিংহ, বিদ্যোৎসাহিনী সভা কে প্রতিষ্ঠা করেন।

Q3. বিজয়নগর রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা কে

Ans – হরিহর ও বুক্ক রায়, বিজয়নগর রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা।

Q4. দীপালি সংঘ কে প্রতিষ্ঠা করেন, দিপালী সংঘ কে প্রতিষ্ঠা করেন

Ans – লীলা রায় ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন নেত্রী ছিলেন। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে ‘দীপালী ছাত্রী সংঘ’ নামে ছাত্রী সংগঠন গড়ে ভারতে প্রথম তার মাধ্যমে ছাত্রীদের মধ্যে রাজনীতি চর্চা শুরু করেন।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।