পদ কাকে বলে
প্রথাগত বাংলা ব্যাকরণ অনুসরণে বলা হয় যে, অর্থবোধক বর্ণ বা বর্ণসমষ্টি দিয়ে গঠিত কোনো শব্দ বাক্যে ব্যবহৃত হলে তাকেই পদ বলে।
অথবা আমরা বলতে পারি, যে শব্দ বা ধাতু বিভক্তি যুক্ত হয়ে বাক্যে প্রয়োগ করবার উপযোগী হয় তাই পদ ।
এককথায় বললে, বিভক্তিযুক্ত ধাতু বা শব্দকে পদ বলে।
ভাষায় কেবল শব্দ ও ধাতু ব্যবহৃত হয় না। ভাষায় ব্যবহৃত হওয়ার জন্যে শব্দ ও ধাতুর সঙ্গে বিভক্তির যোগ অপরিহার্য হয়ে পড়ে। কেননা, বাক্যে অর্থাৎ ভাষায় প্রত্যেকটি শব্দ ব্যবহারের একটি নির্দিষ্টস্থান আছে। বাক্যের মধ্যে যেখানে যে শব্দের ব্যবহার আবশ্যক সেখানে সে শব্দের প্রয়োগ না হলে কথার অর্থ বা বাক্যের অর্থ কেউ বুঝতে পারে না।
যেমন – মানুষ বাঘ মারে
এই বাক্যটির প্রথম শব্দ মানুষ, দ্বিতীয় শব্দ বাঘ এবং মারে শব্দ তৃতীয় স্থানে অবস্থিত। এর প্রথম দুটি শব্দের স্থান পরিবর্তন করে দিলে বাক্যটি দাঁড়ায়- বাঘ “মানুষ মারে” (Tigers kill man), এতে বক্তার বক্তব্য একেবারেই আলাদা হয়ে যায়।
কাজেই, বাক্যের শব্দ বসানোর স্থান নির্ণয় করার জন্য শব্দের সঙ্গে কতগুলো চিহ্ন বা বিভক্তি (যেমন- শব্দ বিভক্তি, ক্রিয়া বিভক্তি) যোগ করতে হয়। বাক্যে ব্যবহৃত এরকম অবস্থান পরিচায়ক চিহ্নযুক্ত (অর্থাৎ বিভক্তিযুক্ত) শব্দের নাম পদ।
পদ কয় প্রকার, পদ কয় প্রকার ও কি কি
ব্যাকরণের যে অংশ শব্দ ও শব্দের গঠন, শব্দের শ্রেণী বিভাগ, পদ, পদের পরিচয়, প্রত্যয়, বচন, শব্দরূপ কারক, সমাস, ক্রিয়া, ক্রিয়ার কাল, শব্দের ও পদের ব্যুৎপত্তি আলোচনা করে তাকে পদ প্রকরণ বলে।
পদের প্রাথমিক পরিচয় দিতে গিয়ে সাধারণত বলা হয় যে, পদ প্রধানত দুই প্রকার যথা-
- নামপদ ও
- ক্রিয়াপদ।
নাম পদ চার প্রকার যথা –
১. বিশেষ্য
২. বিশেষণ
৩. সর্বনাম
৪. অব্যয়।
বিশেষ্য পদ কাকে বলে
বাক্যের মধ্যে ব্যবহৃত যে সমস্ত পদ দ্বারা কোনো ব্যক্তি, জাতি, সমষ্টি, বস্তু, স্থান, কাল, ভাব, কর্ম বা গুণের নাম বোঝানো হয়, তাকে বিশেষ্য পদ বলে। যেমন – শ্যামল, গোরু, বায়ু, সভা, দয়া, শমন, হিমালয় প্রভৃতি।
বিশেষ্য পদের শ্রেণিবিভাগ :
১ – সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য পদ – কলকাতা, সুভাষ, নজরুল, গঙ্গা, বাইবেল, রামায়ণ।
২ – বস্তুবাচক বিশেষ্য পদ- মাটি, কাগজ, জল, দুধ, চিনি, সোনা, রূপা।
৩ – জাতিবাচক বিশেষ্য পদ – বাঙালি, হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলমান।
৪ – সমষ্টিবাচক বিশেষ্য পদ – সভা, জনতা, সমিতি, বাহিনী, দল।
৫ – গুণবাচক বিশেষ্য পদ – সততা, সাধুতা, মহত্ব, দয়া, শৈশব।
৬ – ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য পদ – দর্শন, ভোজন, শয়ন, গমন।
বিশেষণ পদ কাকে বলে
যে পদের দ্বারা বিশেষ্য, সর্বনাম, ক্রিয়াপদের দোষ-গুণ, ভালো-মন্দ, পরিমাণ, অবস্থা ইত্যাদি বোঝায় তাকে বিশেষণ পদ বলে।
বিশেষণ পদের শ্রেণিবিভাগ :-
বিশেষণ পদকে পাঁচভাগে ভাগ করা যায়। যেমন –
১ – বিশেষ্যের বিশেষণ – অনেক, প্রচুর, ভালো, মন্দ প্রভৃতি।
২ – সর্বনামের বিশেষণ – সে খুব চালাক। তিনি বড়ো হত।
৩ – বিশেষণের বিশেষণ – খুব গরম, খুব ঠান্ডা, বড়ো ভালো।
৪ – অব্যয়ের বিশেষণ – ঠিক ওপরে, শতাধিক, শত ধিক, ঠিক নীচে।
৫ – ক্রিয়ার বিশেষণ – তাড়াতাড়ি দ্রুত হাঁটে, আমরা এখন খেলব।
বিশেষণ পদের উদাহরণ
উদাহরনঃ উজ্জ্বল নক্ষত্র, ধবধবে সাদা বিছানা, চলন্ত ট্রেন ইত্যাদি । বোল্ড শব্দ গুলি বিশেষণ পদ ।
সর্বনাম পদ কাকে বলে
বিশেষ্য পদের পরিবর্তে যে পদ ব্যবহার করা হয় তাকে সর্বনাম পদ বলে। বিশেষ্যর পরিবর্তে অন্য যে শব্দ ব্যবহৃত করা হয়, তাকে সর্বনাম পদ বলে।
যেমন- রাহাত ভালো ছেলে। সে নিয়মিত স্কুলে যায়।
উপরোক্ত এই উদাহরণের দ্বিতীয় বাক্যটিতে রাহাতের পরিবর্তে ‘সে’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। এখানে ‘সে’ হলো সর্বনাম পদ।
সর্বনামের শ্রেণিবিভাগ :-
বাক্যে নানা রূপে সর্বনাম পদের প্রয়োগ হয়। বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত সর্বনাম পদ সমূহকে নিম্নলিখিত কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন –
- ব্যক্তি বা পুরুষবাচক : তুমি, তোমরা সে, আমি, আমরা, তিনি, তারা, তাঁরা, এ, এরা।
- আত্মবাচক : স্বয়ং, নিজে, খোদ, আপনি।
- সামীপ্যবাচক : এ, এই, ইহাৱা, ইনি ইত্যাদি।
- দূরত্ববাচক: ঐ, ঐসব, সব।
- সাকল্যবাচক : সব, সকল, সমুদয়, তাবৎ।
- প্রশ্নবাচক : কি, কী, কে, কিসে, কোন, কার, কাহার।
- অনির্দিষ্টভাজ্ঞাপক : কেউ, কোন, কিছু, কেহ।
- ব্যতিহারিক : আপনা আপনি নিজে নিজে পরস্পর ইত্যাদি।
- সংযোগজ্ঞাপক যে, যিনি, যাঁরা, যারা, যাহারা ইত্যাদি।
- অন্যাদিবাচক: অন্য, অপর, পর ইত্যাদি
অব্যয় পদ কাকে বলে
লিঙ্গ, বচন, পুরুষ ও বিভক্তিতে যে পদের কখনও কোনো পরিবর্তন হয় না, তাকেই অব্যয় পদ বলে। অব্যয় ছাড়া সব পদেরই লিঙ্গ, বচন, পুরুষ ও বিভক্তিতে পরিবর্তন দেখা দেয়।
যেমন—বাঃ! কী মনোরম দৃশ্য। দুঃখ বিনা সুখ লাভ হয় কি? তোমার কিন্তু অবশ্যই যাওয়া চাই। রাম এবং লক্ষ্মণ বন গমন করেছিলেন।
এখানে বাঃ, বিনা, কিন্তু, এবং ইত্যাদি পদগুলির দ্বারা কোনো না কোনো ভাব প্রকাশ পেয়েছে। এই পদগুলি দুটি লাক্যের মধ্যে সম্বন্ধ ঘটিয়েছে। এছাড়া এই পদগুলির কোনো পরিবর্তন হয় না।
অব্যয় পদের শ্রেনীবিভাগ :-
অব্যয় পদ প্রধানত তিন প্রকারের। যথা-
১ – পদান্বয়ী অব্যয়।
২ – অনন্বয়ী অব্যয় ও
৩ – বাক্যান্বয়ী বা সমুচ্চয়ী অব্যয়।
বিরুদ্ধ পদ কাকে বলে
পরস্পর বিরোধি দুটি পদের মধ্যে যদি কোন তৃতীয় বিকল্প পদ না থাকে এবং বিরোধি পদ দুটি যদি যুক্তিভাবে বা একত্রে তাদের নির্দেশিত বিষয় সম্পূর্ণ ব্যক্ত্যর্থ প্রকাশ করে তাহলে তাদেরকে বিরূদ্ধ পদ বলে। যেমন-মানুষ ও অমানুষ সুন্দর ও অসুন্দর সৎ ও অসৎ এ পদ গুলো হচ্ছে একে অপরের বিরুদ্ধ পদ। বিরুদ্ধ পদের ক্ষেত্রে একটি সত্য হলে অপরটি মিথ্যা হবে। আবার একটি মিথ্যা হলে অপরটি সত্য হবে। কারণ দু’টি বিরূদ্ধ পদ একই সময় কোন বস্তুর সম্পর্কে সত্য বা মিথ্যা হতে পারেনা।
উদাহরণ স্বরূপ, মানুষ এবং অমানুষ একত্রে করলে তাদের নির্দেশিত বিষয় সকল প্রাণী পাওয়া যায়। কেননা মানুষ ছাড়া আর সমস্ত প্রাণী ‘অমানুষ’ পদটি অর্ন্তভুক্ত করে উভয় মিলে পূর্ণ ব্যক্তর্থে প্রকাশ করে।
সম্বোধন পদ কাকে বলে
যাকে সম্বোধন অর্থাৎ আহ্বান করা হয়, তাকে সম্বোধন পদ বলে। যেমন– তাসফিক পড়তে যাও, অর্পি খেতে যাও। এখানে ‘তাসফিক’ এবং ‘অর্পি’ সম্বোধন পদ।
সম্বোধন পদের ক্রিয়ার সাথে সম্পর্ক থাকে না।
হে, রে, ওগো, ওরে, ওহে অব্যয় শব্দগুলো কখনও কখনও সম্বোধন পদ রূপে এককভাবে বসে। কখনও কখনও অন্য পদের সঙ্গে বসে সেই পদের সঙ্গে একত্রে সম্বোধন পদ হয়। যেমন— ওহে, শোন। ওরে শয়তান, তবে শোন্।
ক্রিয়া পদ কাকে বলে, ক্রিয়াপদ কাকে বলে
যে পদ দ্বারা কোন কাজ করা, ঘটা , সম্পন্ন হওয়া ইত্যাদি বোঝায় তাকে ক্রিয়াপদ বলে।
ক্রিয়াপদ দুই প্রকার। যথাঃ-
১. সমাপিকা ক্রিয়া ।
২.অসমাপিকা ক্রিয়া।
সমাপিকা ক্রিয়া কাকে বলে
যে ক্রিয়াপদের দ্বারা বাক্যের অর্থ স্পষ্টরূপে প্রকাশিত হয় তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে।
যেমন – করেছে, ফিরবে, যাচ্ছে, পড়ছি, গিয়েছে ইত্যাদি।
অসমাপিকা ক্রিয়া কাকে বলে
যে ক্রিয়াপদের দ্বারা বাক্যের অর্থ স্পষ্ট হয় না তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে।
যেমন- ১. তুমি বাড়ী এসে (অসমাপিকা ক্রিয়া) ২. তুমি বাড়ী এসে খেলতে যাবে। (সমাপিকা ক্রিয়া)।
পদ পরিবর্তন, পদান্তর কাকে বলে
ভাষায় ব্যবহৃত একটি শব্দকে বিশেষ্য থেকে বিশেষণ রূপে এবং বিশেষণ থেকে বিশেষ্য রূপে পরিবর্তিত করাকে পদ পরিবর্তন বা পদান্তর বলে।
পদান্তর এর উদাহরণ
কোন কিছুর নাম বোঝাতে বিশেষ্য পদের ব্যবহার করা হয়। আবার বিশেষণের কাজ হল বাক্যের বিভিন্ন পদের দোষ, গুণ, অবস্থা, পরিমাণ প্রভৃতিকে বোঝানো।
কোনো একটিই পদ কোনো বাক্যে কখনও বিশেষ্য বা বিশেষণ কিংবা প্রয়োজনে উভয় রূপেই ব্যবহৃত হতে পারে। আর এই ব্যবহারের নিরিখেই পদটির প্রকৃতি নির্ধারিত হয়। কয়েকটি উদাহরণ দেখে নিই –
ক) ভাত না হলে ভেতো বাঙালির চলে না।
খ) বন্যেরা বনে সুন্দর।
গ) বুনো ফল বনে গিয়ে খেয়ো না।
উপরের বাক্যগুলোতে লক্ষ করলে দেখা যাবে ‘ভাত’ পদটিকে ‘ভেতো’ পদে রূপান্তরিত করা হয়েছে। একইরকমভাবে ‘বন্য’ বা ‘বুনো’ বিশেষণ পদ দুটি পরিবর্তিত হয়ে ‘বন’ হয়েছে। এই বিষয়টিই হল পদান্তর।
পদ পরিবর্তন তালিকা, পদ পরিবর্তন করো, পদ পরিবর্তনের তালিকা,পদান্তর করো, পদান্তর তালিকা
বাংলা ব্যাকরণের অংশ হিসাবে পরীক্ষায় আসার মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদ পরিবর্তন তালিকা প্রদান করা হলো।
নং | বিশেষ্য | বিশেষণ |
---|---|---|
1 | অংশ | আংশিক |
2 | অকরণ | অকরণীয় |
3 | অকস্মাৎ | আকস্মিক |
4 | অক্ষর | আক্ষরিক |
5 | অক্ষর | আক্ষরিক |
6 | অক্ষি | অক্ষীয় |
7 | অখণ্ডতা | অখণ্ড |
8 | অগ্নি | আগ্নেয় |
9 | আপ্যায়ন | আপ্যায়িত |
10 | অঙ্গ | আঙ্গিক |
11 | অঞ্চল | আঞ্চলিক |
12 | অণু | আণবিক |
13 | অতিথি | আতিথেয় |
14 | অধর্ম | অধার্মিক |
15 | অধিকার | অধিকৃত |
16 | অধিষ্ঠান | অধিষ্ঠিত |
17 | অধিষ্ঠান | অধিষ্ঠাত্রী |
18 | অধুনা | আধুনিক |
19 | অধ্যয়ন | অধীত |
20 | অধ্যাত্ম | আধ্যাত্মিক |
21 | অনুগমন | অনুগত |
22 | অনুগ্রহ | অনুগৃহীত |
23 | অনুগ্রহ | অনুগৃহীত |
24 | অনুবাদ | অনুদিত |
25 | অনুভব | অনুভূত |
26 | অনুমান | আনুমানিক |
27 | অনুমান | আনুমানিক |
28 | অনুরাগ | অনুরক্ত |
29 | অনুরোধ | অনুরুদ্ধ |
30 | অনুসরণ | অনুসৃত |
31 | অন্ত | অন্তিম |
32 | অন্তর | আন্তরিক |
33 | অন্তর | আন্তরিক |
34 | অন্তর্ধান | অন্তর্হিত |
35 | অন্বয় | অন্বিত |
36 | অপমান | অপমানিত |
37 | অপসরণ | অপসৃত |
38 | অবগতি | অবগত |
39 | অবগুণ্ঠন | অবগুণ্ঠিত |
40 | অবগুণ্ঠন | অবগুণ্ঠিত |
41 | অবদমন | অবদমিত |
42 | অবধারণা | অবধারিত |
43 | অবধারণা | অবধারিত |
44 | অবসর | অবসৃত |
45 | অবসাদ | অবসন্ন |
46 | অবসান | অবসিত |
47 | অবসান | অবসিত |
48 | অবিনাশ | অবিনশ্বর |
49 | অভিধা | অভিহিত |
50 | অভিধা | অভিহিত |
আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন
FAQ | পদ পরিবর্তন কর
Q1. ফুল পদ পরিবর্তন, ফুলের পদ পরিবর্তন
Ans – ফুলের বিশেষণ ফুলেল।
Q2. পদ পরিবর্তন আকাশ
Ans – আকাশ বিশেষণ আকাশি।
Q3. জল পদ পরিবর্তন
Ans – জল বিশেষণ জলীয়/জলো ।
Q5. মেঘ পদ পরিবর্তন
Ans – মেঘ বিশেষণ মেঘলা ।
আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারি ও বেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন।
Nice👏😊👍