খেয়া কবিতার প্রশ্ন উত্তর

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

WBBSE Class 9 Bangla Kheya Kobita Question Answer

সূচিপত্র

খেয়া কবিতা, খেয়া কবিতা pdf

খেয়া কবিতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রবীন্দ্রনাথের খেয়া কবিতা

খেয়া নৌকা পারাপার করে নদীস্রোতে,

কেহ যায় ঘরে, কেহ আসে ঘর হতে।

দুই তীরে দুই গ্রাম আছে জানাশোনা,

সকাল হইতে সন্ধ্যা করে আনাগোনা।

পৃথিবীতে কত দ্বন্দ্ব কত সর্বনাশ,

নূতন নূতন কত গড়ে ইতিহাস,

রক্তপ্রবাহের মাঝে ফেনাইয়া উঠে

সোনার মুকুট কত ফুটে আর টুটে,

সভ্যতার নব নব কত তৃষ্ণা ক্ষুধা,

উঠে কত হলাহল, উঠে কত সুধা–

শুধু হেথা দুই তীরে, কেবা জানে নাম,

দোঁহাপানে চেয়ে আছে দুইখানি গ্রাম।

এই খেয়া চিরদিন চলে নদীস্রোতে,

কেহ যায় ঘরে, কেহ আসে ঘর হতে।

খেয়া কবিতার সারাংশ, খেয়া কবিতার অন্তর্নিহিত অর্থ, খেয়া কবিতার বিষয়বস্তু

উত্তর: খেয়া কবিতাটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচিত চৈতালি কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত। রবীন্দ্রনাথ পতিসরের নাগর নদী ভ্রমণকালে থাকা অবস্থায় এই কবিতা রচনা করেছিলেন। কবি নদীর তীরে গড়ে ওঠা সরল গ্রাম্য জীবনধারা এই কবিতার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন।

খেয়া রবীন্দ্রনাথের একটি উল্লেখযোগ্য কবিতা। এই কবিতায় সভ্যতার দুইটি দিক; কোলাহল মগ্ন নগর এবং শান্তি প্রবন গ্রামাঞ্চলের জীবনের চরিত্র ফুটে উঠেছে।

কবিতার প্রথমেই সহজ সরল গ্রামাঞ্চলের শান্তিপ্রিয় মানুষের জীবনের বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে। নদীর দুই তীরে দুইটি গ্রাম কিন্তু এই দুই গ্রামের মানুষের মধ্যে রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক, জানাশোনা। নিত্যদিন ওরা খেয়ার মাধ্যমে এক গ্রাম হইতে অন্য গ্রামে আসা-যাওয়া করে। তাই খেয়ে নৌকা হয়ে উঠেছে দুই পাড়ের মানুষের আত্মীয়তার অনন্য বাহন।

গ্রামের মানুষ গুলি এতই সহজ যে ওরা বাইরের জগৎ সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। বহির্বিশ্বে কত না যুদ্ধ-বিগ্রহ লড়াই অবিরাম হয়ে যাচ্ছে আর কত না ইতিহাস নিত্যদিনে গড়ে উঠছে। ক্ষমতার লড়াই এর ফলে হচ্ছে রক্তপাত, যুদ্ধ। আর সেই যুদ্ধে কেহ বা ক্ষমতা অর্জন করছে আর কেহ ক্ষমতাচ্যুত হয়ে যাচ্ছে।

রক্তপ্রবাহের মাঝে ফেনাইয়া উঠে
সোনার মুকুট কত ফুটে আর টুটে

অর্থাৎ কত রাজা বা ক্ষমতাবান সরকার যুদ্ধে পরাজিত হচ্ছে আর যুদ্ধে জয় লাভ করছে। এ সবকিছুই যেন এই গ্রামের মানুষদের ছুইতে পারে নাই।

মানুষের সভ্যতার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সৃষ্টি হচ্ছে নতুনত্বের। বিজ্ঞানের অগ্রগতি মানব সভ্যতাকে নিয়ে এসেছে এক নতুন স্থানে। মানুষের মনে তৃষ্ণা জেগেছে না জানাকে জানার, অসম্ভবকে সম্ভব করার। তাই আবিষ্কৃত হচ্ছে নতুন পদ্ধতি নতুন প্রযুক্তি। আর তার সঙ্গে উঠছে অনেক হলাহল অর্থাৎ বিশৃঙ্খলতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কিন্তু নদীর এই দুই তীরবর্তী গ্রাম তার ব্যতিক্রম। এখানে নেই কোনো নতুনত্ব, নেই কোনো অগ্রগতি, নেই কোন বহির্বিশ্বের খবর।

এই খেয়া চিরদিন চলে নদীস্রোতে

তাদের সরল জীবনযাত্রায় কোন বাধাপ্রাপ্ত হয় নাই। গ্রামের দুই পারের মানুষের মধ্যে কোন দ্বন্দ্ব-সংঘাত ঘটেনি বরং ওদের মধ্যে রয়েছে মিলন, ভালোবাসা এবং আদান প্রদান। তাদের জীবনের নদীস্রোত নদীর খেয়ার মত চলে যাচ্ছে অবলীলায়।

খেয়া কবিতার মূলভাব, খেয়া কবিতার সারমর্ম

উত্তর: কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই কবিতার মাধ্যমে নগরজীবনের বা উন্নত সভ্যতার অন্ধকার দিক কে তুলে ধরেছেন। যদিও নগরজীবন বা আধুনিক সভ্যতা গ্রামাঞ্চলের মানুষ থেকে অনেক উন্নত কিন্তু তাদের মধ্যে মিল নেই, মায়া নেই বরং সংঘাত এবং দ্বন্দ্বে পরিপূর্ণ। আর তার বিপরীতে গ্রাম্য জীবনযাত্রা অনুন্নত হওয়া সত্বেও তাদের মধ্যে রয়েছে নিবিড় মিলন, ভালোবাসা একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা।

“খেয়া” কাব্যে বিষাদ ও ক্লান্তির সুর প্রাধান্য পায়। মানবজীবনের সুখ-দুঃখ এবং আশা-আকাঙ্ক্ষার কথা ধ্বনিত হয়েছে। এতে আধ্যাত্মিকতার মূর্ছনাও পরিলক্ষিত হয়।

খেয়া কবিতার উৎস, খেয়া কবিতাটি চৈতালি কাব্যগ্রন্থের কত সংখ্যক কবিতা, খেয়া কবিতা চৈতালি কাব্যগ্রন্থের কত সংখ্যক কবিতা, খেয়া কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত, খেয়া কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থের কত সংখ্যক কবিতা

উত্তর: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৮ চৈত্র, ১৩০২ বঙ্গাব্দে “খেয়া” কবিতাটি রচনা করেন। খেয়া কবিতা কবি শিলাইদহ ও পতিসরে বসে বোটে থাকাকালীন কবিতাগুলি রচনা করেন। ‘চৈতালী’ কাব্যগ্রন্থের মুখবন্ধে কবি বলেছেন, স্বল্প পরিসর পতিসর নদীতে বোটে থাকাকালীন নদীর দুই তীরে গ্রাম দুটিকে খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করেছেন। গ্রামবাসীদের সরল জীবনযাত্রার কথাই এই কবিতাটির মধ্যে দিয়ে উঠে এসেছে।

 ‘খেয়া‘ কবিতাটি চৈতালি কাব্যগ্রন্থের উনিশ সংখ্যক কবিতা

চৈতালি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্ত্তৃক রচিত একটি বাংলা কাব্যগ্রন্থ। এটি আশ্বিন, ১৩০৩ (১৮৯৬ খ্রীস্টাব্দ) বঙ্গাব্দে প্রকাশিত হয়। এতে সর্বমোট ৭৮টি কবিতা রয়েছে। এটি রবীন্দ্রনাথের কাব্য রচনার “চিত্রা-চৈতালি পর্ব”-এর অন্তর্গত একটি উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি। রবীন্দ্রনাথ গীতাঞ্জলির ইংরেজি অনুবাদ সং অফারিংসে “চৈতালি” থেকে ১টি কবিতা অন্তর্ভুক্ত করেছেন।

খেয়া কবিতার নামকরণের সার্থকতা বিচার করো, খেয়া কবিতার নামকরণের সার্থকতা, খেয়া কবিতার নামকরণের সার্থকতা বিশ্লেষণ করো

উত্তরঃ- নামকরণ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কবিতার ক্ষেত্রে তার বিষয়বস্তু অনুযায়ী নামকরণ হয়ে থাকে।

রবীন্দ্রনাথের ‘চৈতালি’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘খেয়া’ কবিতাটিতে কবি নাগরিক জীবন এবং গ্রামীণ জীবনের তুলনামূলক দুটি ছবি পাশাপাশি তুলে ধরেছেন। এক নাম-না-জানা নদীর দু-পাশে দুটি নাম-না-জানা গ্রাম সারা বাংলার গ্রামজীবনের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। গ্রামের সাধারণ মানুষ সহজসরল-অনাড়ম্বরভাবে তাদের জীবনযাত্রা নির্বাহ করে। নাগরিক জীবনের সুবিধা সেখানে নেই, কিন্তু খেয়ানৌকা সেখানে নদীর ব্যবধান ঘুচিয়ে মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের সেতু তৈরি করে।

অন্যদিকে, নাগরিক জীবনে সুখস্বাচ্ছন্দ্যের অভাব নেই, সেখানে অভাব শুধু মানবিক সম্পর্কের। তাই ক্ষমতার লোভে মানুষ সেখানে খুব সহজেই একে অন্যকে রক্তাক্ত করে। এক সাম্রাজ্যের পতনে আর-এক সাম্রাজ্যের উত্থান হয়। তথাকথিত সভ্যতার অগ্রগতিতে মানুষের জীবনযাত্রার যেমন উন্নতি হয় তেমনি তা ডেকে আনে সমাজ ও পরিবেশের ধ্বংসকেও। তাই কবি বলেছেন সভ্যতার উন্নতিতে বিষ এবং অমৃত দুই-ই উঠে আসে।

নাগরিক জীবনের এই উত্থান-পতনে পল্লীগ্রামের জীবন কিন্তু একটুকুও আন্দোলিত হয় না। আবহমান কাল ধরে তাদের জীবনযাত্রা একই ভাবে বয়ে চলে। মানুষে-মানুষে নিবিড় সম্পর্কই গ্রামের জীবনযাত্রার মূলভিত্তি। খেয়ানৌকা তাদের এই সম্পর্কের সূত্র। তাই কবিতাটির ‘খেয়া’ নামকরণ সার্থক ও যথাযথ হয়েছে।

খেয়া কবিতার প্রশ্নোত্তর, খেয়া কবিতার প্রশ্ন উত্তর MCQ

‘খেয়া’ কবিতাটিতে ক-টি পছত্তি আছে?

• বারো

• পনেরো

• তেরো

• চোদ্দো

সঠিক উওর : চোদ্দো

‘খেয়া’ কবিতায় নদী কীসের প্রতীক?

• মৃত্যুর

• আনন্দের

• বন্ধুত্বের

• জীবনের

সঠিক উওর : জীবনের

যা নদীস্রোতে পারাপার করে, তা হলো –

• জাহাজ

• খেয়া নৌকা

• খেয়া

• ভেলা

সঠিক উওর : খেয়া নৌকা

‘খেয়ানৌকা’-র কাজ হল –

• মালপত্র বয়ে নিয়ে যাওয়া

• যাত্রী পারাপার করা

• সীমান্তে পাহারা দেওয়া

• মাছ ধরা

সঠিক উওর : যাত্রী পারাপার করা

‘কেই যায়…কেহ আসে… হতে।’—

• ঘর, ঘরে

• গৃহে, গেহ

• ঘরে,ঘর

• বাড়ি, মাঠ

সঠিক উওর : ঘরে,ঘর

‘কেহ যায় ঘরে কেহ আসে ঘর হতে’- এখানে যে মূল ভাবনাটি প্রকাশ পেয়েছে,তা হল –

• মানুষ ঘরে-বাইরে যাতায়াত করে

• মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মানুষ চিরকালের আবাসভূমিতে প্রবেশ করে কিংবা সেখান থেকে পুনরায় জীবনে ফিরে আসে

• মানুষ ঘরে-বাইরে অনন্তকাল ধরে যাতায়াত করে

• কোনোটিই নয়

সঠিক উওর : মৃত্যুর মধ্য দিয়ে মানুষ চিরকালের আবাসভূমিতে প্রবেশ করে কিংবা সেখান থেকে পুনরায় জীবনে ফিরে আসে

নদীর দুই তীরে আছে-

• দুটি নগর

• দুটি গ্রাম

• বাঁশবন

• আমবাগান

সঠিক উওর : দুটি গ্রাম

পৃথিবীতে কত দ্বন্দ্ব, কত সর্বনাশ’ — পৃথিবীতে এই দ্বন্দ্ব ও সর্বনাশ ঘটে চলার কারণ হলো “

• ক্রয়বিক্রয়

• সভ্যতার ধ্বংস ও সৃষ্টি

• প্রাকৃতিক নিয়ম

• কোনোটিই নয়

সঠিক উওর : সভ্যতার ধ্বংস ও সৃষ্টি

নূতন নূতন কত গড়ে ইতিহাস——পৃথিবীতে নানাবিধ নতুন ইতিহাস গড়ে-

• দ্বন্দ্ব ও সর্বনাশ

• নদীস্রোত

• ঐ দুটি গ্রাম

• রাজপুরুষেরা

সঠিক উওর : দ্বন্দ্ব ও সর্বনাশ

‘সোনার মুকুট কত ফুটে আর টুটে।’—টুটে’ বলতে বোঝায়-

• মুক্ত হয়

• ছিঁড়ে যায়

• ভেঙে যায়

• সরে যায়

সঠিক উওর : ভেঙে যায়

সোনার মুকুট কত ফুটে আর টুটে ‘—পঙ্ক্তিটিতে বোঝানো হয়েছে- • রাজার অহংকার ও পতনকে

• রাজত্বের গড়ে ওঠাকে

• কোনো দেশের রাজার রাজ্যাভিষেক ও ধ্বংসকে

• রাজতন্ত্রের উত্থানপতনকে

সঠিক উওর : রাজতন্ত্রের উত্থানপতনকে

নব নব সভ্যতার বিকাশে প্রেরণা জোগায় কারা?

• তৃষ্ণা-ক্ষুধা

• দ্বন্দ্ব, সর্বনাশ

• নদী, স্রোত

• সকাল, সন্ধ্যা

সঠিক উওর : তৃষ্ণা-ক্ষুধা

নব নব কত তৃষ্ণা ক্ষুদা—এই লাইনটিতে কীসের কথা বলা হয়েছে?

• সভ্যতার

• নগরের

• মানুষের

• যন্ত্রের

সঠিক উওর : সভ্যতার

“উঠে কত হলাহল, উঠে কত সুখা’—এখানে ‘হলাহল’ ও ‘সুধা’-র প্রকৃত স্বরুপটি হল—

• বিষ ও অমৃত

• উত্থানপতন

• দ্বন্দ্ব সর্বনাশ

• সভ্যতার কুফল ও সুফল

সঠিক উওর : সভ্যতার কুফল ও সুফল

খেয়া কবিতার ছোট প্রশ্ন উত্তর

খেয়া কবিতায় নদী কিসের প্রতীক

উওর : খেয়া কবিতায় নদী জীবনের প্রতীক

খেয়া কবিতায় কোন নদীর কথা বলা হয়েছে

উওর : খেয়া কবিতায় দুটি গ্রামের গ্রামবাসীরা সকাল হতে সন্ধ্যা নদীর এপার ওপার আনাগোনা করে।

“খেয়া” শব্দের আভিধানিক অর্থ কী?

উত্তরঃ- ‘খেয়া’ শব্দটির আভিধানিক অর্থ হল ‘নদী পারাপারের নৌকা’ অথবা ‘নৌকা বা অন্য জলযানের দ্বারা নদী বা খাল পারাপার’।

‘খেয়া’ কবিতায় কটি পঙক্তি আছে?

উত্তরঃ- খেয়া কবিতাটিতে মোট ১৪টি পঙক্তি আছে।

খেয়ায় করে যাত্রীরা কোথায় যায়?

উত্তরঃ- ‘খেয়া’ কবিতার যাত্রীরা খেয়া করে নদী পারাপার করে। তারা কেউ নিজেদের ঘর থেকে নৌকায় আসে, আবার কেউ আপন ঘরে ফিরে যায়।

‘জানাশোনা’ শব্দের মাধ্যমে কী বলা হয়েছে?

উত্তরঃ- গ্রাম্য নদীর দুই তীরের মানুষদের মধ্যে জানাশোনা রয়েছে। একেই কবি দুই তীরের দুই গ্রামের জানাশোনা বলেছেন।

কবিতায় বর্ণিত নদীতটে কী আছে?

উত্তরঃ- কবিতায় বর্ণিত নদীর দুই তীরে বহুকালের চেনাজানা দুটি গ্রাম বিরাজ করছে।

‘সোনার মুকুট কত টুটে আর ফুটে’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?

উত্তরঃ- বহু রাজা বা রাজবংশের পতন ঘটে এবং সেই সঙ্গে নতুন রাজা বা রাজবংশের উত্থান ঘটে বোঝাতে কবি “সোনার মুকুট কত টুটে আর ফুটে” কথাটি বলেছেন।

সভ্যতার তৃষ্ণা ক্ষুধা কী?

উত্তরঃ- সভ্যতার ‘তৃষ্ণা ক্ষুধা’ বলতে কবি তথাকথিত বিত্তশালী মানুষের লোভ, ভোগ, বস্তুগত সম্পদের প্রাণহীন সংগ্রহকে বুঝিয়েছেন।

‘রক্তপ্রবাহের মাঝে ফেনাইয়া উঠে’ – ‘রক্তপ্রবাহের মাঝে’ কী ফেনিয়ে ওঠে?

উত্তরঃ- ‘রক্তপ্রবাহের মাঝে’ বিভিন্ন রাজশক্তির উত্থান ও পতনের ইতিহাস ফেনিয়ে ওঠে।

খেয়া কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর, খেয়া কবিতার রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর

খেয়ানৌকা পারপার করে নদীস্রোতে ” – খেয়া নৌকা পারাপারের মধ্যে দিয়ে কবি কোন ছবি তুলে ধরেছেন?

উত্তরঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘খেয়া’ কবিতায় খেয়ানৌকা নদীর দুই কূলের দুটি গ্রামের মানুষকে এক পার থেকে অন্য পারে নিয়ে যাওয়ার জন্য পারাপার করে।

উদ্ধৃত পতিটির মধ্য দিয়ে কবি গ্রামবাংলার মানুষের সহজসরল অনাড়ম্বর জীবনযাত্রার ছবি তুলে ধরেছেন। কবিতার গ্রাম দুটি সারা বাংলার পল্লিসমাজের প্রতিনিধিত্ব করেছে। মানবিক সম্পর্কের উপর ভিত্তি করেই গ্রামবাংলার মানুষের জীবন আবর্তিত হয়। নদী পারাপারের নৌকাটিই এখানে দুই পারের মানুষকে আত্মীয়তার সম্পর্কে বেঁধেছে। খেয়ানৌকা এখানে মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের যোগসূত্র।

কেহ যায় ঘরে, কেহ আসে ঘর হতে। — এই পক্তিটির মধ্য দিয়ে কবি কী বুঝিয়েছেন ?

উত্তর: উদ্ধৃত পতিটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘খেয়া’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে। এই কবিতায় কবি দুটি নাম-না-জানা গ্রামের মধ্য দিয়ে সারা বাংলার পল্লিসমাজের চিরন্তন ছবিকে তুলে ধরেছেন। গ্রামের মানুষের জীবন সহজসরল অনাড়ম্বর এবং মানুষে-মানুষে সম্পর্ক অনেক নিবিড়। গ্রামের সাধারণ মানুষ খেয়া নৌকা করে কেউ কাজ সেরে ঘরে ফেরে, কেউ-বা ঘর থেকে বেরিয়ে কাজে যায়। ক্ষমতা দখলের রক্তাক্ত লড়াইয়ে এই মানুষগুলি সামিল নয়। এরা পৃথিবীর আদি, অকৃত্রিম জীবনধারার বাহক।

পৃথিবীতে কত দ্বন্দ্ব, কত সর্বনাশ__ একথা বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?

উত্তরঃ উদ্ধৃত পঙ্ক্তিটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘খেয়া’ কবিতা থেকে গৃহীত। কবিতাটিতে কবি নাগরিক জীবন ও প্রানীপ জীবনের একটি তুলনামূলক ছবি পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন।

নাগরিক জীবন দ্বন্দ্ব-সংঘাতে উত্তাল। গ্রামের তুলনায় নগরে সুযোগসুবিধা-সুখস্বাচ্ছন্দ্য অনেক বেশি কিন্তু সেখানে মানুষের সঙ্গে মানুষের হৃদয়ের যোগ খুব কম। মানুষের সুখের লালসা সেখানে অনেক বেশি বলেই তাদের নিজেদের মধ্যে হানাহানি, রক্তারক্তিও বেশি। এই রক্তাক্ত সংঘাতই পৃথিবীর বুকে ডেকে আনে চরম সর্বনাশ।

সোনার মুকুট কত ফুটে আর টুটে! — উদ্ধৃত পক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ প্রাচীন ও মধ্যযুগে রাজারা মাথায় সোনার মুকুট পরতেন। তাই ‘সোনার মুকুট’ ক্ষমতার প্রতীক। ক্ষমতার মোহ মানুষের একটি সহজাত প্রবৃত্তি। আবহমান কাল ধরে পৃথিবীতে মানুষ ক্ষমতা দখলের লড়াই চালিয়ে এসেছে। আজ যে ক্ষমতার শীর্ষে, কাল হয়তো সে ক্ষমতাচ্যুত। যে যখন জিতেছে তার মাথায় শোভা পেয়েছে সোনার মুকুট আর পরাজিত ব্যক্তির ক্ষমতার প্রতীক সোনার মুকুট ভেঙে পড়েছে।

‘সকাল হইতে সন্ধ্যা’ কবি কেন বলেছেন? ‘দুই গ্রাম’ কীসের ব্যঞ্জনা বয়ে এনেছে?

উত্তরঃ- ‘চৈতালি’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘খেয়া’ কবিতার প্রায় প্রথমদিকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সকাল ও সন্ধ্যার উল্লেখ করেছেন। এখানে ‘সকাল’ হল মানবজীবনের শুরু আর ‘সন্ধ্যা’ সেই জীবনের অন্তিম লগ্নকে স্পষ্ট করে— তাই শব্দ দুটি গভীর ব্যঞ্জনায় অভিষিক্ত। রোমান্টিক কবি তাঁর অন্তর্দৃষ্টিকে অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যতের পানে প্রসারিত করে মানবের জীবনপ্রবাহকে উপলব্ধি করতে চেয়েছেন। উদাসী কবির সম্মুখে প্রসারিত নদীস্রোত, এপার-ওপারে দুখানি সাধারণ গ্রাম— তারই মাঝে যাত্রীদল নিয়ে খেয়াতরি চলমান। দুটি গ্রাম পরস্পরের দিকে অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে, যেন তারা বহু যুগের চেনাজানা। যাত্রীরা কেউ ঘরে ফিরেছে, কেউ বা ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে গেছে। তাদের আসা-যাওয়া চলেছে নিরন্তর। তথাকথিত সভ্যতা থেকে দূরবর্তী এই গ্রামদুটি পৃথিবীর হিংস্র উন্মত্ততায় বিচলিত নয়। তারা মিলনের সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রেখে নিজেদের অস্ত্বিত্ব বজায় রেখেছে বহমান কাল ধরে। দুটি গ্রাম তাই কবির দৃষ্টিতে প্রবহমান মানবতার প্রতীক । নদীতটে একাকী উদাসী কবি তাই মানবের অনন্ত আসা-যাওয়ার অর্থ শেষত খুঁজে পেয়েছেন।

“এই খেয়া চিরদিন চলে নদীস্রোতে” – ‘খেয়া’ কবিতায় এর মধ্য দিয়ে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?

উত্তরঃ- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘খেয়া’ একটি সনেট বা চতুর্দশপদী কবিতা। এখানে কবি গ্রামবাংলার চিরন্তন শান্তিপ্রিয় রূপটির উল্লেখ প্রসঙ্গে উক্তিটি করেছেন।

কবিতাটিতে কবি নাগরিক জীবন ও পল্লিজীবনের ছবি পাশাপাশি তুলে ধরেছেন। কবিতার নাম-না-জানা নদীর দুপাশের নাম-না-জানা দুটি গ্রাম সারা বাংলার পল্লিজীবনের প্রতীক। গ্রামের সাধারণ মানুষের জীবনে সভ্যতার ঢেউ এসে পৌঁছোয়নি। তাই নাগরিক জীবনের সুখস্বাচ্ছন্দ্য তাদের জীবনে নেই কিন্তু মানুষের সঙ্গে মানুষের ভালোবাসার সম্পর্ক আছে। খেয়ানৌকা সেখানে নদীর দুইপারের ব্যবধান ঘুচিয়ে মানুষে-মানুষে সম্পর্কের সেতু তৈরি করে।

অপরদিকে, নাগরিক জীবনে সুখস্বাচ্ছন্দ্য অনেক বেশি, তাই মানুষের পিপাসাও বেশি। নাগরিক মানুষের জীবন থেকে হারিয়ে গেছে প্রকৃতির স্পর্শ আর মানবিক সম্পর্কের বন্ধন। কবি দেখিয়েছেন নগরজীবনে যত উত্থানপতনই হোক না কেন, পল্লিজীবনে তার ঢেউ এসে আঘাত করে না। সেখানে আবহমান কাল ধরে শান্তগতিতে বয়ে চলে মানুষের জীবনযাত্রা। তাই নদীর দুই পাড়ের দুটি গ্রাম গভীর মমতায় একে অন্যের দিকে চেয়ে থাকে। মাঝে থাকা নদীর ব্যবধান ঘুচিয়ে খেয়া নৌকাও আবহমান কাল ধরে একইভাবে মানুষে-মানুষে সম্পর্কের সেতু গড়ে তোলে।

‘নূতন নূতন কত গড়ে ইতিহাস’ – পঙ্ক্তিটির গূঢ়ার্থ বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ- ‘চৈতালি’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘খেয়া’ কবিতা থেকে আলোচ্য কবিতাংশটি নেওয়া হয়েছে, যেখানে মানবসভ্যতার বিবর্তনের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে রোমান্টিক কবি তাঁর অন্তর্দৃষ্টিকে অস্পষ্ট অতীতের শেষতম ক্ষণ পর্যন্ত প্রসারিত করে মানবসভ্যতার শাশ্বত চিত্রে উঠে এসেছে মানবসভ্যতার দীর্ঘ বিবর্তনরেখাটি। কবি দেখেছেন যুগে যুগে মানুষ বহু বিচিত্র ইতিহাস নির্মাণ করে এগিয়ে নিয়ে চলেছে ভবিষ্যতের সভ্যতাটিকে। ধারাটির স্বরূপ খুঁজতে চেয়েছেন। সভ্যতা পর্যবেক্ষণের সেই সামগ্রিক নির্মোহ দৃষ্টি নিয়ে খেয়াঘাটের তটে বসে একাকী কবি উদাস হয়ে দেখেছেন, এপারের গ্রামখানি থেকে মানুষ খেয়া নৌকায় পার হয়েছে। সম্মুখের নদীবক্ষ, আবার কেউ ওপারের গ্রামগূঢ়ার্থ থেকে এসেছে এপারে। খেয়া পারাপারের এই দৃশ্য অবলোকন করতে করতে কবির মন হয়েছে অতীতচারী। তাঁর অন্তর্দৃষ্টিতে ভেসে উঠেছে অখণ্ড মানব ইতিহাসের বিস্তৃত ক্যানভাস। পৃথিবীর ইতিহাসে দেখা যায় যে বিভিন্ন সময়ে নানা যুদ্ধ-বিগ্রহের মধ্য দিয়ে এক-একটি দেশে রাজশক্তির পালা বদল হয়েছে। সুখ-সম্পদ-ক্ষমতার লোভে মানুষ খুব সহজেই একে অন্যকে আঘাত করেছে। অন্যের কাছ থেকে ক্ষমতা দখল করতে গিয়েই হয়েছে হানাহানির সূত্রপাত। এভাবেই এক সাম্রাজ্যের পতনে অন্য সাম্রাজ্যের উত্থান হয়ে রচিত হয়েছে মানবসভ্যতার নতুন নতুন ইতিহাস।

খেয়া কবিতার ছবি

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

খেয়া কবিতার শব্দার্থ

‘আনাগোনা’ শব্দটির অর্থ-

সঠিক উওর : আসা-যাওয়া

“উঠে কত হলাহল’—এখানে ‘হলাহল’ শব্দের অর্থ হল-

সঠিক উওর : গরল

‘খেয়ানৌকা পারাপার করে নদীস্রোতে;’ –‘পারাপার’ শব্দটির অর্থ হল-

সঠিক উওর : এক তীর থেকে অন্য তীরে যাওয়া

খেয়া কবিতার প্রশ্ন উত্তর pdf

পারুল বাংলা রেফারেন্স (অল ইন ওয়ান) – বাংলা সংস্করণ – ক্লাস – দশম (টেন)


পারুল বাংলা রেফারেন্স (অল ইন ওয়ান) – বাংলা সংস্করণ – ক্লাস – দশম (টেন)

খেয়া কবিতার প্রশ্ন উত্তর

সভ্যতার তৃষ্ণা ক্ষুধা কী?
উত্তরঃ- সভ্যতার ‘তৃষ্ণা ক্ষুধা’ বলতে কবি তথাকথিত বিত্তশালী মানুষের লোভ, ভোগ, বস্তুগত সম্পদের প্রাণহীন সংগ্রহকে বুঝিয়েছেন।


আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।