- জাতীয়তাবাদ কি, জাতীয়তাবাদ কাকে বলে
- জাতীয়তাবাদের বৈশিষ্ট্য
- জাতীয়তাবাদ বলতে কী বোঝায়, জাতীয়তাবাদ বলতে কি বুঝায়, জাতীয়তাবাদ বলতে কি বুঝ
- জাতীয়তাবাদের উপাদান কি কি
- জাতীয়তাবাদের জনক কে, জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা কে
- জাতি ও জাতীয়তাবাদ কি, জাতি ও জাতীয়তার পার্থক্যসমূহ
- জাতীয়তাবাদের মূল্যবিচার
- জাতীয়তাবাদের সীমাবদ্ধতা
- FAQ | জাতীয়তাবাদ
জাতীয়তাবাদ কি, জাতীয়তাবাদ কাকে বলে
জাতীয়তাবাদ হল এমন একটি আদর্শ যা বিশ্বাস করে যে তাদের জাতি অন্য সকল জাতি থেকে শ্রেষ্ঠ। শ্রেষ্ঠত্বের এই অনুভূতিগুলো প্রায়ই জাতিগত, ভাষা, ধর্ম, সংস্কৃতি বা সামাজিক মূল্যবোধের উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে।
রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে জাতীয়তাবাদের লক্ষ্য হচ্ছে দেশের জনপ্রিয় সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করা, নিজেকে চালিত করার অধিকার এবং আধুনিক বিশ্ব অর্থনীতির দ্বারা সৃষ্ট রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক চাপ থেকে রক্ষা করা।
জাতীয়তাবাদ একটি ভাবাদর্শ যা একটি জাতি বা জাতি-রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য, ভক্তি বা আনুগত্যের উপর জোর দেয় এবং অন্যান্য ব্যক্তি বা গোষ্ঠী স্বার্থকে ছাড়িয়ে যায়।
স্বদেশের তথা মাতৃভূমির গৌরব ও অগৌরবকে কেন্দ্র করে সেই দেশের মানুষ বা জাতির অন্তরে যে উল্লাস, স্বতঃস্ফূর্ত আবেগ, অনুভূতি, জাতীয় চেতনা, আত্মমর্যাদা ও আত্মাভিমান সঞ্চারিত হয় তাকেই জাতীয়তাবাদ বলে । জাতীয়তাবাদ একটি আধুনিক ধারণা ।
যেমন আন্তর্জাতিক খেলাধুলার আসরে বিজয়ী দেশগুলির সমর্থকদের বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস দেখা যায়, তেমন বিজিত দেশগুলির সমর্থকদের মধ্যে দেখা যায় সীমাহীন বিষাদ ও হতাশা । দেশের প্রতি এই মমত্ববোধ ও একাত্মতাই হল জাতীয়তাবাদ ।
জাতীয়তাবাদের সংজ্ঞা
একই ভৌগলিক সীমানায় বসবাসরত সমগ্র জনগণের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যবােধের ওপর অন্যকোনাে ভৌগােলিক সীমারেখায় অবস্থিত মানুষের আধিপত্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জনমতকে ঐক্যবদ্ধ করে সংগ্রাম পরিচালনা করার মানসিকতা হল জাতীয়তাবাদ। অর্থাৎ যখন কোন জনসমষ্টির মধ্যে ভাষাগত ঐক্য, সাংস্কৃতিক ঐক্য, জীবনধারণগত ঐক্য দেখা দেয় তখন তাদের মধ্যে জাতীয়তাবােধের সৃষ্টি হয়।
প্রামাণ্য সংজ্ঞাঃ বিভিন্ন পণ্ডিত বিভিন্নভাবে জাতীয়তাবাদের সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। নিম্নে উল্লেখযােগ্য কয়েকজনের সংজ্ঞা উপস্থাপন করা হলাে-
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জে. এইচ হায়েস (J. H. Hayes) তার Essay on Nationalism গ্রন্থে বলেন, জাতীয়তাবাদ এবং দেশপ্রেম-এ দুই আধুনিক অনাসক্ত বিষয়ের এক আবেগপূর্ণ সমন্বয় ও অতিরঞ্জিতকরণ।
আরনল্ড জে. টয়েনবি বলেন, Nationalism is nothing material or mechanical, but a subjective, psychological feeling in a living people” অর্থাৎজাতীয়তাবাদ কোনােরূপ বস্তুগত বা যান্ত্রিক কিছু নয়, বরং তা জীবন্ত মানুষের এক আত্মিক ও মনস্তাত্ত্বিক অনুভূতি।
অধ্যাপক, লাস্কির (Laski) -এর মতে, জাতীয়তাবাদ সাধারণভাবে মানসিক ব্যাপার, যারা এর অংশীদার, এ ঐক্যবােধ তাদেরকে বাকি মানবসমাজ থেকে স্বতন্ত্ররূপে চিহ্নিত করে।
অধ্যাপক ম্যাকাইভার (Maclver)-বলেন, “জাতীয়তাবাদ হলাে ঐতিহাসিক পরিস্থিতি দ্বারা সৃষ্ট আধ্যাত্ম চেতনা সংবলিত জনসমষ্টির সম্প্রদায়গত মনােভাব, যারা নিজেদের জন্য স্বতন্ত্র শাসনতন্ত্র রচনা করে একত্রে বসবাস করতে চায়।”
অধ্যাপক লয়েড (Lloyd) বলেছেন, “জাতীয়তাবাদকে একটি ধর্ম হিসেবে অভিহিত করা যায়, কারণ এর উৎস মানুষের গৃঢ়তম প্রবৃত্তির মধ্যে নিহিত আছে।” Nationalism is the religion of the modern world.’;
জাতীয়তাবাদের প্রকার
১. জাতিগত জাতীয়তাবাদ
২. সম্প্রসারণবাদী জাতীয়তাবাদ
৩. সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ
৪. ভাষাগত জাতীয়তাবাদ
৫. ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ
৬. উত্তর-ঔপনিবেশিক জাতীয়তাবাদ
৭. উদার জাতীয়তাবাদ
৮. আদর্শিক জাতীয়তাবাদ
৯. বামপন্থী জাতীয়তাবাদ
জাতীয়তাবাদের বৈশিষ্ট্য
জাতীয়তাবোধের দুটি মূল বৈশিষ্ট্য বর্তমান:
- (১) নিজেদের মধ্যে গভীর ঐক্যবোধ এবং
- (২) দুনিয়ার অন্যান্য জনসমাজ থেকে স্বাতন্ত্র্যবোধ। কোন জনসমষ্টি যখন ভাষা, সাহিত্য, বংশ, ধর্ম প্রভৃতি নানা কারণে নিজেদের সমস্বার্থ, সম-ঐতিহ্য, সম-গৌরব ও গ্লানির অংশীদার বলে মনে করে; যাদের বর্তমানের কার্যপ্রেরণা এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনা এক; জীবনদর্শন যাদের অভিন্ন তারা পরস্পর গভীর ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এই একাত্মবোধের ভিত্তিতেই জাতীয়তাবোধের সৃষ্টি হয়।
রাসেল (Bertrand Russel)-এর মতানুসারে জাতীয়তাবাদ হল একটি সাদৃশ্য ও ঐক্যের অনুভূতি (a sentiment of similarity and solidarity) যা পরস্পরকে ভালবাসতে শিক্ষা দেয়। তাই লয়েড-এর অভিমত হল, ‘জাতীয়তাবাদকে একটি ধর্ম হিসাবে অভিহিত করা যায়, কারণ এর উৎস মানুষের গূঢ়তম প্রবৃত্তির মধ্যে নিহিত আছে’। তিনি মন্তব্য করেছেন: “Nationalism may be called a religion because it is rooted in the deepest instincts of man.”
জাতীয়তাবাদ বলতে কী বোঝায়, জাতীয়তাবাদ বলতে কি বুঝায়, জাতীয়তাবাদ বলতে কি বুঝ
আদর্শ জাতীয়তাবাদ মানবসভ্যতার সমৃদ্ধি ও উন্নতিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কিন্তু সংকীর্ণ বা উগ্র জাতীয়তাবাদ সাম্রাজ্যবাদে রূপান্তরিত হয় এবং মানবসভ্যতার সংকট সৃষ্টি করে। সুতরাং আদর্শ জাতীয়তাবাদ তার কল্যাণকর প্রভাবের ক্ষিতে একটি মহান রাষ্ট্রনীতিক আদর্শ হিসাবে গণ্য হয়। আর উগ্র বা বিকৃত জাতীয়তাবাদ তার সাম্রাজ্যবাদী প্রভাব-প্রতিক্রিয়ার পরিপ্রেক্ষিতে মানবসভ্যতার শত্রু হিসাবে তীব্র সমালোচনার সম্মুখীন হয়। প্রকৃত জাতীয়তাবাদের মধ্যে এর গুণাবলী এবং বিকৃত জাতীয়তাবাদের মধ্যে এর ত্রুটিসমূহ নিহিত আছে। যথার্থ দেশপ্রেম জাতীয়তাবাদের আদর্শের মাধ্যমে মূর্ত হলে বিশ্বসভ্যতা এবং মানবতার পক্ষে তা আশীর্বাদস্বরূপ। হায়েস তাঁর Nationality and Patriotism শীর্ষক গ্রন্থে মন্তব্য করেছেন: “Nationalism when it becomes synonymous with purest patriotism will prove a unique blessing to humanity and to the world.”
ভারতীয় জাতীয়তাবাদের পটভূমি
জাতীয়তাবাদ বলতে যে আবেগ বা ধারণা বোঝায় এদেশে ইংরেজদের আগমনের আগে সেই আবেগ বা অনুভূতি তেমন ভাবে প্রকট হয় নি । তখন ভারতবর্ষ কতকগুলি খন্ড রাজ্যের সমষ্টি ছিল । ইংরেজরা এদেশে এসে সেই খন্ড খন্ড রাজ্যগুলিকে একই পতাকার তলায় নিয়ে এসে পরোক্ষ ভাবে এই দেশকে রাজনৈতিক দিক দিয়ে ঐক্যবদ্ধ করেছিল । ইংরেজবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে ভারতীয় জাতীয়তাবাদ রূপ পরিগ্রহ করেছিল ।
এছাড়া এর মূলের ছিল ইউরোপীয় জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রেক্ষিত । ইউরোপে ষোড়শ ও সপ্তদশ শতকে জাতীয় রাষ্ট্রের উদ্ভবের সঙ্গে জাতীয়তাবাদী ধারণার উন্মেষ ঘটেছিল । অষ্টাদশ শতাব্দীতে অনুষ্ঠিত ঘটনাবলি যথা ফরাসি বিপ্লব, আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রাম, ইটালি ও জার্মানির ঐক্য আন্দোলন প্রভৃতির মাধ্যমে এই জাতীয়তাবাদ সুষ্ঠু রূপ পরিগ্রহ করেছিল । ফরাসি বিপ্লবের বাণী- স্বাধীনতা, সাম্য ও মৈত্রী, আমেরিকার রাষ্ট্রপতি টমাস জেফারসনের মানবাধিকারের ঘোষণা ভারতীয়দের আবেগকে গভীরভাবে নাড়া দিয়েছিল ।
ঊনিশ শতকে ভারতীয় দেশীয় রাজ্যগুলি একই শাসনাধীনে আসার পর এদেশে ইংরেজ শাসনের বজ্রমুষ্টি যতই দৃঢ় হতে থাকে, ততই তার কুটিল রূপ ভারতীয়দের চোখ খুলে দেয় । ভারতীয়রা ধীরে ধীরে দেশবাসী হিসাবে নিজেদের অস্তিত্ব ও গুরুত্ব অনুভব করে । ঊনিশ শতক থেকে ভারতে এই জাতীয়তাবাদী ধারণার উন্মেষ ঘটেছিল । এভাবেই বলা যায় ঊনিশ শতকের এই জাতীয়তাবাদী চেতনার মূলে ছিল ইউরোপীয় চেতনার প্রেক্ষিত ।
ভারতীয় জাতীয়তাবাদের উৎস
এদেশে ইংরেজ শাসন প্রবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ইংরেজি শিক্ষার প্রচলন হয় । রাজা রামমোহন রায়, হেনরি ভিভিয়ান ডিরোজিও, ডেভিড হেয়ার, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, ডিঙ্কওয়াটার বেথুন প্রমুখ ভারতীয় ও ইংরাজ মনীষীগণ এদেশে ইংরেজি শিক্ষা প্রবর্তনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন । আর এই ইংরেজি শিক্ষার সুবাদে ভারতীয়রা পাশ্চাত্য জ্ঞান, বিজ্ঞান, শিক্ষা, সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হয় । এর সঙ্গে ভারতীয়গণ ইউরোপের জাতীয়তাবাদী ধ্যানধারণার সঙ্গে পরিচিত হন এবং নিজেরাও জাতীয়তাবোধে উদ্দীপ্ত হন ।
ইংরেজি শিক্ষা প্রবর্তনের সঙ্গে ভারতীয়রা ইউরোপের চিন্তানায়কদের সঙ্গে পরিচিতি লাভ করে । ইংরেজি শিক্ষার সূত্রে ভারতীয়রা মিল, বেন্থাম, স্টুয়ার্ট, ভলটেয়ার, রুশো, ম্যাৎসিনি, গ্যারিবল্ডি, কার্লমার্কস প্রভৃতি পাশ্চাত্য দার্শনিক ও চিন্তাবিদদের প্রগতিশীল চিন্তাধারার সংস্পর্শে আসেন । ফরাসি বিপ্লবের স্বাধীনতা, সাম্য ও মৈত্রীর আদর্শ, আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রাম, ইটালি ও জার্মানির ঐক্য আন্দোলন প্রভৃতি ভারতীয়দের নবচেতনায় উদ্বুদ্ধ করে ।
ক্রমশ ভারতীয়গণ উপলব্ধি করেন যে তাঁরাও একটি জাতি ও জাতি হিসাবে তাঁদেরও স্বাধীন সত্তা আছে এবং সেই স্বাধীনতাকে কেউ হরণ করতে পারে না । আর যদি তা কেউ করে তা থেকে মুক্তি পাবার অধিকার সব জাতিরই আছে । উনবিংশ শতাব্দীর সূচনা থেকেই পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত প্রথম ভারতীয় রাজা রামমোহন রায় ভারতীয়দের মধ্যে এই নব জাগরণের উন্মেষ ঘটান । জাতীয়তাবাদী ধারণার প্রথম উন্মেষ ঘটে বাংলায় এবং পরে তা সারা ভারতে পরিব্যাপ্ত হয় ।
দেশপ্রেম ও রাজনীতিক স্বাধীনতা
জাতীয়তাবাদের মধ্যে শুধু যে স্বজনপ্রীতিই থাকে, তা নয়— স্বদেশের প্রতি গভীর অনুরাগও থাকে। হায়েসের মতানুসারে জাতীয়তাবাদের কেন্দ্রস্থলে জন্মভূমির প্রতি গভীর অনুরাগ বর্তমান থাকে। হায়েস তাঁর Nationality and Patriotism শীর্ষক গ্রন্থে মন্তব্য করেছেন: “Nationalism consists of a modern fusion of emotional and exaggeration of two very old phenomena.” জনসমাজের মধ্যে এই স্বজনপ্রীতি বা একাত্মবোধের সঙ্গে দেশপ্রেম যুক্ত হলে জাতীয়তাবাদ পরিপূর্ণ রূপ লাভ করে। এই জাতীয়তাবাদ রাষ্ট্রনীতিক আশা-আকাঙ্ক্ষার মধ্যেই মূর্ত হয়ে উঠে।
অর্থাৎ জাতীয় জনসমাজ নিজেদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠন করতে পারলেই জাতীয়তাবাদ মূর্ত হয়ে উঠে। রাজনীতিক আদর্শ হিসাবে জাতীয়তাবাদ জাতীয় রাষ্ট্রগঠনের চরম পরিণতি। ল্যাস্কির মতানুসারে জাতীয়তাবাদের ভিত্তি হল মানুষের সঙ্গ পাওয়ার প্রবৃত্তি (gregarious instinct) এবং স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার ইচ্ছা। জাতিকে যে সকল উপাদান দৃঢ়ভাবে ঐক্যসূত্রে গ্রথিত করে তার মধ্যে রাজনীতিক বন্ধন হল সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। রাজনীতিক ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা ভোগ করার বাসনা একটি জাতির সকলকে সুদৃঢ়ভাবে ঐক্যবদ্ধ করে। স্বাজাত্যবোধ বৃদ্ধি পেলে প্রত্যেক জাতি নিজেদের স্বতন্ত্র রাষ্ট্র গঠন করতে চায়। এই প্রচেষ্টা সফল হলে জাতিভিত্তিক রাষ্ট্র গঠিত হয়।
আরো পড়তে: উদারনীতিবাদ কাকে বলে, উদারনীতিবাদের বৈশিষ্ট্য, উদারনীতিবাদের জনক কে
জাতীয়তাবাদের উপাদান কি কি
জাতীয়তাবাদ কি তা বুঝার জন্য জাতীয়তাবাদের উপাদান সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। কোন সমাজে জাতীয়তার চেতনা দানা বাঁধার পিছনে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো ভূমিকা পালন করে। যা মূলত জাতীয়তাবাদের উপাদান। তবে নিম্নলিখিত উপাদানগুলো একটি জনসমষ্টিকে জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ করতে বিশেষভাবে
সাহায্য করে :
- ১. ভৌগোলিক অখণ্ডতা বা ঐক্য : জাতীয়তাবাদের প্রথম ও প্রধান উপাদান হলো ভৌগোলিক একতা। জাতি গঠন করতে হলে কোন জনসমষ্টিকে একটি নির্দিষ্ট ও সংলগ্ন ভূখণ্ডে বসবাস করতে হবে।
- ২. বংশগত ঐক্য : বংশগত ঐক্য জাতীয়তাবাদের ক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে। এটা মানুষের মধ্যে এমন একপ্রকার সুদৃঢ়, ঐক্যভাব গড়ে তোলে যা জাতি গঠনে অতি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করে। কিন্তু আধুনিক নৃতত্ত্ববিদগণ এটাকে অপরিহার্য উপাদান বলে মনে করেন না। কারণ হল্যান্ড, ইংরেজ, জার্মান জাতি একই বংশ হতে উদ্ভূত হয়েও একই জাতীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হয় নি। আবার U.S.A বহু বংশের লোকের বসবাস সত্ত্বেও তারা একই জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ।
- ৩. ধর্মীয় ঐক্য : এটা জাতীয়তাবাদের অপর একটি উল্লেখযোগ্য উপাদান। জাতীয়তাবাদের ধারণার সৃষ্টি এবং তা জোরদার করার ক্ষেত্রে ধর্মীয় একতা একটি শক্তিশালী উপাদান হিসেবে কাজ করে। এটা জাতীয়তাবোধের সৃষ্টির এক মহান সূত্র এবং এর উপর ভিত্তি করে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে বহু জাতীয় রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়েছে।
- ৪. ভাষা ও সাহিত্যগত ঐক্য : ভাষা ও সাহিত্যের মাধ্যমে ভাবের আদানপ্রদান হয়। এ আদানপ্রদানই জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার প্রভূত উপায়। এছাড়া জাতি গঠনের জন্য এটা একান্তভাবে আবশ্যক নয়। বিভিন্ন ভাষাভাষী জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবাদ গড়ে উঠতে দেখা যায়। সুইজারল্যান্ডের জনগণ বিভিন্ন ভাষায় কথা বললেও তারা একই জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ । আবার ইংরেজ ও আমেরিকা একই ভাষা ব্যবহার করলেও তারা দুটি ভিন্ন জাতি।
- ৫. অর্থনৈতিক একতা : জনগণকে জাতীয়তাবোধে অনুপ্রাণিত করে অর্থনৈতিক একতা। অর্থনৈতিক দিক হতে যখন জনগণের মধ্যে ক্ষমতা বিরাজ করে, তখন তারা একত্রে বসবাস করার মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়। সব জনগণের অর্থনৈতিক স্বার্থ যখন এক ও অভিন্ন হয়, তখন তাদের মধ্যে জাতীয়তাবাদের বন্ধন সুদৃঢ় হয়ে উঠে।
- ৬. ভাবগত ঐক্য : জাতীয়তাবোধ গঠনের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ভাবগত ঐক্য। এটা ব্যতীত জাতি গঠনের অপরাপর উপাদানসমূহ তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ তাদের ছাড়াও একটি জাতি গড়ে উঠতে পারে। জাতীয় ঐক্য মূলত ভাবগত। Prof. Spengler বলেছেন, “জাতীয়তাবাদের উপাদান কুলগত বা ভাষাগত ঐক্য নয় বরং তা ভাবগত ঐক্য।”
- ৭. একক শাসনব্যবস্থা : এটা জাতীয়তাবাদ গঠনের অপর একটি উপাদান। একই শাসন ব্যবস্থার অধীনে দীর্ঘদিন থাকলে স্বভাবতই জনগণের মধ্যে জাতি গঠনের স্পৃহা দেখা দেয় এবং তারা জাতি গঠনে উদ্বুদ্ধ হয়।
জাতীয়তাবাদের জনক কে, জাতীয়তাবাদের প্রবক্তা কে
জাতীয়তাবাদ একটি আধুনিক ধারণা। ১৮ শতকে এর উদ্ভব ঘটে। ম্যাকিয়াভেলিকে আধুনিক জাতীয়তাবাদের জনক বলা হয়
জাতি ও জাতীয়তাবাদ কি, জাতি ও জাতীয়তার পার্থক্যসমূহ
সজ্ঞাগত পার্থক্যঃ জাতীয়তা হলো সেই জনসমষ্টি যারা এক ভাষা ও সাহিত্য, বংশ ও ধর্ম, ইতিহাস ও ঐতিহ্য, আশা ও আকাঙ্ক্ষা এবং ভৌগোলিক এলাকার ঐক্যসূত্রে আবদ্ধ ও লালিত। অপরপক্ষে জাতি হলো সেই জাতীয় সমাজ বা জাতীয়তা যা রাজনৈতিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ স্বাধীন বা স্বাধীনতা লাভে আগ্রহী ।
লর্ড ব্রাইস জাতি ও জাতীয়তার পার্থক্য নির্দেশ করতে গিয়ে বলেছেন, জাতীয়তা তখনই জাতিতে পরিণত হয় যখন এটা রাজনৈতিক দিক থেকে সুসংগঠিত হয়ে স্বাধীনতা লাভ করে বা স্বাধীনতা লাভে আগ্রহী হয় ।
- জাতীয়তা= জনসমাজ + রাজনৈতিক চেতনা
- জাতি = জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ জনসমাজ+রাজনৈতিক সংগঠন+স্বাধীনতা ।
ধারাগত পার্থক্যঃ জাতি হচ্ছে একটি বাস্তব ও সক্রিয় ধারণা। অপরদিকে জাতীয়তা হলো একটি মানসিক অনুভূতি । জাতির মধ্যে রাজনৈতিক সংগঠন পরিলিক্ষত হলেও জাতীয়তার মধ্যে রাজনৈতিক সংগঠন অনুপস্থিত ।
আদর্শগত পার্থক্যঃ জাতি একটি সুসংগঠিত আদর্শ, আর জাতীয়তা কিছু বোধ বা অনুভূতির সমন্বয় মাত্র । যে বোধ বা অনুভূতি জাতি গঠনে সহায়তা করে সে বোধটি কালক্রমে জাতির আদর্শ হিসেবে বিবেচিত হয় ।
চেতনাগত পার্থক্যঃ জাতি হচ্ছে বিশেষ কতকগুলো চেতনার সমন্বিত রূপের ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া যা জাতির অস্তিত্বকে স্থায়িত্ব প্রদানে সহায়তা করে। কিন্তু জাতীয়তা হলো এসব চেতনার প্রাথমিক অবস্থা ।
সময়গত পার্থক্যঃ প্লেটো , অ্যারিস্টটল জাতি সম্পর্কে যে ধারণা প্রদান করেন তা বেশ প্রাচীন ।পক্ষান্তরে জাতীয়তার উৎপত্তি আধুনিক কালে। আধুনিক রাষ্ট্র চিন্তার জনক ম্যাকিয়াভেলির হাতে প্রথম জাতীয় ধারণার উৎপত্তি হয় ।
জন্মলাভ ও বহিঃপ্রকাশগত পার্থক্যঃ জাতীয়তা জন্মলাভ করে নির্দিষ্ট ধ্যানধারণা ও বিশ্বাসের মধ্যে ।অপরদিকে জাতির মাধ্যমে জাতীয়তাবাদের বহিঃপ্রকাশ ঘটে ।
“কোন মানুষ যে দেশের সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত তা হল তার জাতি। আর কোন মানুষ যে দেশের নাগরিক তা হল তার জাতীয়তা। যেমন আমরা বাঙালি জাতি। “
“জাতি বলতে, কতগুলো মানুষের সমষ্টিকে বুঝায়া। আর জাতীয়তা হল, ঐ সমষ্টিগত মানুষগুলোর আধ্যাত্ন চেতনা ও মানসিক ধারনাকে বুঝায়। এটাই পার্থক্য।”
“জাতি হলো এক ধরণের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সম্প্রদায়। জাতিবোধ একটি নৈতিক এবং দার্শনিক চেতনা যা জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটায়। আর জাতীয়তা হল এমন এক জনসমাজ যারা ভাষা, সাহিত্য, রীতিনীতি, চাল-চলন, ধ্যান-ধারনা এবং ঐতিহ্যের দ্বারা ঐক্যবদ্ধ ও যারা নিজেদেরকে অন্য জনসমষ্টি হতে আলাদা মনে করে।”
জাতীয়তাবাদের মূল্যবিচার
জাতীয়তাবাদ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের তাত্ত্বিক আলোচনায় একটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রনীতিক আদর্শ। এই আদর্শের সমর্থনে বিভিন্ন যুক্তির অবতারণা করা হয়।
(১) একটি মহান আদর্শ: জাতির জীবনে জাতীয়তাবাদ একটি মহান আদর্শ। এ হল এক গভীর অনুপ্রেরণা। জাতীয়তাবাদ জাতিকে ঐক্যবোধে একাত্ম করে এবং দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে। এই আদর্শ দেশের ও দশের স্বার্থে আত্মত্যাগে ব্যক্তিকে অনুপ্রাণিত করে। এইভাবে জাতির সর্বাঙ্গীণ বিকাশের আবহাওয়া সৃষ্টি হয়।
(২) স্বাধীনতা সংগ্রামের উদ্দীপক: মুক্তিকামী দেশের পক্ষে জাতীয়তাবাদ আশীর্বাদস্বরূপ। জাতীয়তাবাদের দ্বারা গভীরভাবে উদ্বুদ্ধ হয়ে পরাধীন ও দুর্বল জাতি মরণপণ স্বাধীনতা-সংগ্রামে সামিল হয় এবং স্বাধীন ও শক্তিশালী রাষ্ট্রের মর্যাদা লাভ করে। অনেক বিচ্ছিন্ন জাতীয় জনসমাজ জাতীয়তাবাদের মহান আদর্শের প্রভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে এবং স্বৈরাচারী বিদেশী শাসনের শৃঙ্খল মুক্তির সংগ্রামের সামিল হয়েছে। এক্ষেত্রে ভারত ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস উদাহরণ হিসাবে উল্লেখযোগ্য। ইতালী ও জার্মানীর ঐক্য সাধনের ইতিহাস জাতীয়তাবাদের জয়গানে সমৃদ্ধ। আবার ভিয়েতনাম ও কাম্পুচিয়ার মুক্তিসংগ্রাম এবং আফ্রিকার জনগণের স্বাধীনতা সংগ্রাম জাতীয়তাবাদের বলিষ্ঠ বহিঃপ্রকাশের নজির। বস্তুত বিংশ শতাব্দীর ইতিহাসে এমন অনেক দৃষ্টান্ত বর্তমান। পৃথিবীর বিভিন্ন মহাদেশের ইতিহাসে জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ পরাধীন মানবগোষ্ঠীর বিদেশী শাসনের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা সংগ্রামের এবং জাতীয় স্বাধীনতা ও সার্বভৌমিকতা অর্জনের উজ্জ্বল কাহিনী আছে।
(৩) মানব সভ্যতাকে সমৃদ্ধ করে: জাতীয়তাবাদের জনক হিসাবে ইতালীর দার্শনিক ম্যাৎসিনি (Mazzini)-র কথা বলা হয়। তাঁর মতানুসারে বিভিন্ন গুণ ও প্রতিভার বিকাশ সাধনের মাধ্যমে জাতীয়তাবাদ মানবসভ্যতাকে সমৃদ্ধ ও উন্নত করে। বিশ্বের প্রত্যেক জাতির একেবারে নিজস্ব কিছু গুণ বা বৈশিষ্ট্য থাকে। জাতীয়তাবাদের মাধ্যমে এইসব গুণাবলীর বিকাশ ঘটে। প্রত্যেক মানবগোষ্ঠী জাতীয় গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্যের যথাযথ বিকাশের জন্য জাতীয় স্বাধীনতা ও আত্মবিকাশের অধিকারের স্বীকৃতি অপরিহার্য। পৃথিবীর প্রতিটি জাতির স্বকীয়তার স্বাধীন বিকাশ সুনিশ্চিত হলে মানবসভ্যতা সমৃদ্ধশালী ও বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়ে উঠবে। এবং জাতীয়তাবাদের মাধ্যমেই তা সম্ভব। এইভাবে প্রত্যেকটি জাতির গুণরাজির বিকাশের মাধ্যমে মানবসমাজ ও সভ্যতা সমৃদ্ধ ও উন্নত হয়। ম্যাৎসিনি সম্পর্কে লয়েড বলেছেন: “He thought each nation possessed certain talents, which taken together formed the wealth of the human race.”
(৪) সহযোগিতার আবহাওয়া গড়ে তোলে: জাতীয়তাবাদ জাতিসমূহের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষের আশংকা দূর করে এবং সহযোগিতা ও সম্প্রীতির সম্পর্ক সৃষ্টি করে। জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ জাতিসমূহের মধ্যে বিবাদ-বিসংবাদের প্রবণতা থাকে না; তার পরিবর্তে সৌভ্রাতৃত্ব ও ঐক্যবোধ জাগ্রত হয়। এইসব জাতি নিজের উন্নতি ত্বরান্বিত করে এবং অপরের উন্নতিতে সাহায্য করে। জাতীয়তাবাদের মূল কথাই হল, ‘নিজে বাঁচ এবং অপরকে বাঁচতে দাও’ (Live and let live)।
(৫) শাসক ও শাসিতের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক: জাতীয়তাবাদ দেশের শাসনব্যবস্থাকে স্বচ্ছন্দ ও সাবলীল করে। জাতীয়তাবাদের কারণে দেশের মধ্যে শাসক ও শাসিতের সম্পর্ক সহজ ও স্বাভাবিক হয়। আইনের নির্দেশ ও আইন মান্য করার মধ্যে কোন রকম অস্বস্তিকর ফাঁক থাকে না। তার ফলে সার্বভৌম কর্তৃত্ব ও ব্যক্তি-স্বাধীনতার মধ্যে সহজ সম্পর্ক স্থাপিত হয়। দেশবাসীকে রাষ্ট্রীয় কাজকর্মের সামিল করার ক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদের অবদান অনস্বীকার্য। জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ ছাড়া কোন সরকারই জনসাধারণের কাছ থেকে আনুগত্য আদায় করতে পারে না। স্বৈরতান্ত্রিক সরকারও এ ক্ষেত্রে অসহায় বোধ করে। বার্জেসের মতানুসারে জাতীয়তাবাদ রাষ্ট্রের অস্তিত্ব ও স্থায়িত্বকে দৃঢ় করে এবং সার্বভৌমিকতা ও স্বাধীনতার মধ্যে সংহতি স্থাপন করে। তা ছাড়া রাষ্ট্রের ভিতরে শান্তি-শৃঙ্খলা সংরক্ষণের ক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদী চেতনা সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
(৬) গণতন্ত্রের অনুকূল: জাতীয়তাবাদ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। সুস্থ গণতান্ত্রিক অধিকার ও চেতনার বিকাশের ক্ষেত্রে জাতীয়তাবাদ সহায়ক ও সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। জাতীয়তাবোধ একনায়কতন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে দেশবাসীর মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি করে। এই কারণে ঔপনিবেশিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী আন্দোলনে একটা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পরিলক্ষিত হয়। ইতিহাসে এরকম নজিরের অভাব নেই।
(৭) আন্তর্জাতিকতার পরিপূরক: জাতীয়তাবোধ জাতিকে নিজের জাতীয় চরিত্র ও স্বকীয়তা সংরক্ষণে যেমন উদ্দীপ্ত করে তেমনি অপর জাতির সঙ্গে সদ্ভাব ও সম্প্রীতি বজায় রাখতে অনুপ্রাণিত করে। জাতীয়তাবাদ বিভিন্ন জাতির মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও সম্প্রীতির পথকে প্রশস্ত করে। বিভিন্ন জাতির মধ্যে বিচ্ছিন্নতার পরিবর্তে জাতীয়তাবাদ সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা প্রয়াসী হয়। তার ফলে জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ জাতিসমূহের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। জাতীয়তাবাদের এই গঠনমূলক দিকটি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। জাতীয়তাবাদ হল আন্তর্জাতিকতার পরিপূরক। জিমার্ন বলেছেন: “Nationalism is a highway to internationalism.”
(৮) সাম্রাজ্যবাদ ও ঔপনিবেশিকতাবাদের অশুভ আক্রমণ থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করতে পারে জাতীয়তাবাদী আদর্শ। জাতীয়তাবাদী আদর্শই এশিয়া ও আফ্রিকায় ঔপনিবেশিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের বিস্তারকে রোধ করেছে এবং বহুলাংশে অপসারিত করেছে।
জাতীয়তাবাদের সীমাবদ্ধতা
জাতীয়তাবাদের সমর্থনসূচক নানারকম যুক্তি আছে। তবুও বিভিন্ন মনীষী ও চিন্তাবিদ জাতীয়তাবাদের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। অনেকের মতে জাতীয়তাবাদ মানবসভ্যতা ও বিশ্বশান্তির শত্রুস্বরূপ। জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে সাধারণত নিম্নলিখিত যুক্তিসমূহের অবতারণা করা হয়।
(ক) সভ্যতার সংকট: স্বদেশ ও স্বজনের প্রতি গভীর অনুরাগের ভিত্তিতে জাতীয়তাবাদ জাত্যভিমানে রূপান্তরিত হয়। নিজেদের সকল বিষয়ে উন্নত ধারণা এবং অন্য জাতির সকল কিছুকে হেয় জ্ঞান জাতির মধ্যে দেখা যায়। জাতির মধ্যে এক অন্ধ আবেগের সৃষ্টি হয়। একেই বলে উগ্র জাতীয়তাবাদ। এর ফলেই জাতির মনে নিজের সম্পর্কে গর্ববোধ এবং অপর জাতির প্রতি ঘৃণা জন্মায়। দেশবাসীর সুস্থ চেতনা দূষিত হয়। এক ধরনের উন্মত্ততা দেখা দেয়। এইভাবে বিকৃত রূপ ধারণ করে জাতীয়তাবাদ বিভিন্ন জাতির মধ্যে হিংসা, ঘৃণা ও বিদ্বেষের সম্পর্ক সৃষ্টি করে। তার ফলে মানবসভ্যতা সংকটের সম্মুখীন হয়।
(খ) সাম্রাজ্যবাদের আশংকা: উগ্র জাতীয়তাবাদী প্রবণতার তাড়নায় অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী জাতিগুলি দুর্বল জাতিগুলিকে হেয় জ্ঞান করে পদানত করতে প্রয়াসী হয়। এইরকম জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রগুলি ভাবতে শুরু করে যে পৃথিবীর অন্যান্য জাতির উপর প্রভুত্ব ও কর্তৃত্ব কায়েম করার স্বাভাবিক অধিকার তাদের আছে। জাতীয়তাবাদ তখন আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে। এবং এই শক্তি তখন নুতন নুতন সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়। কালক্রমে দুর্বল রাষ্ট্রসমূহ সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রের উপনিবেশে পরিণত হয়। এইভাবে উগ্রজাতীয়তাবাদ সাম্রাজ্যবাদের জন্ম দেয়। প্রকৃতপক্ষে জাতির আত্মস্বার্থ ও অহংবোধ থেকে এই সাম্রাজ্যবাদের সৃষ্টি হয়। অন্য জাতিকে পদানত করে নিজেদের জাতীয় গরিমা ও মহত্ত্ব প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা থেকে সাম্রাজ্যবাদের সৃষ্টি হয়। যুদ্ধ জয় ও সাম্রাজ্য বিস্তারের মাধ্যমে জাতীয় শৌর্যবীর্য পরিপূর্ণতা লাভ করে বলে মনে করা হয়। প্রকৃত প্রস্তাবে উগ্র জাতীয়তাবাদের চরম পরিণতি হিসাবে সামরিকতাবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের সৃষ্টি হয়। ল্যাস্কির মতে ‘ক্ষমতা বৃদ্ধি পেলে জাতীয়তাবাদ সাম্রাজ্যবাদে রূপান্তরিত হয়’ (“As power extends, nationalism becomes transformed into imperialism.”)। দ্বিতীয় মহাসমরের সময় হিটলার জার্মান জাতিকে বিকৃত ও উগ্র জাতীয়তাবাদের দ্বারা উদ্দীপ্ত করে তাঁর সাম্রাজ্যবাদী নীতিকে বাস্তবে রূপায়িত করতে চেষ্টা করেছিলেন। এই উগ্র জাতীয়তাবাদের দ্বারা উম্মত্ত জাতিগুলিই বিশ্বে বারে বারে যুদ্ধের আবহাওয়া সৃষ্টি করেছে। জাতিকে বিকৃত ও উগ্র জাতীয়তাবাদের দ্বারা উদ্দীপ্ত করে তাঁর সাম্রাজ্যবাদী নীতিকে বাস্তবে রূপায়িত করতে চেষ্টা করেছিলেন। এই উগ্র জাতীয়তাবাদের দ্বারা উন্মত্ত জাতিগুলিই বিশ্বে বারে বারে যুদ্ধের আবহাওয়া সৃষ্টি করেছে।
(গ) অন্যায়ের উৎস: উগ্র জাতীয়তাবাদের দ্বারা সাম্রাজ্যবাদী শক্তিসমূহ উন্মত্ত হয়। তারা প্রথমে দুর্বল রাষ্ট্রগুলির আর্থনীতিক ক্ষেত্রে আধিপত্য বিস্তার করে। তারপর প্রশাসনিক ও রাজনীতিক ক্ষেত্রে কর্তৃত্ব কায়েম করে। এইভাবে ঔপনিবেশিক শাসনব্যবস্থার সৃষ্টি হয়। আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতিকে এইসব ঔপনিবেশিক শক্তি গ্রাহাই করে না। সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলি অসভ্য ও অনুন্নত মানুষকে সভ্য ও উন্নত করার মহান আদর্শ ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের কথা জোর গলায় প্রচার করে। হিটলার একমাত্র আর্য জাতি হিসাবে জার্মান জাতির শ্রেষ্ঠত্ব এবং অন্য সকল জাতির উপর জার্মানদের আধিপত্য করার অধিকারের কথা বলেছেন। ভারতীয়দের শিক্ষিত ও সভ্য করার মহান দায়িত্বের কথা ইংরাজরা প্রচার করেছে। এই সব অন্যায় ও অমঙ্গলের উৎস হল উগ্র জাতীয়তাবাদ। ইউরোপের এই সাম্রাজ্যবাদী জাতীয়তাবাদকে বঙ্কিমচন্দ্র ‘ঘোরতর পৈশাচিক পাপ’ বলে তীব্র সমালোচনা করেছেন। রুশ চিন্তাবিদ সোলোভেব (Vladimir Solovyev ) -এর মতানুসারে ‘জাতীয়তাবাদ উগ্র হলে জাতিকে বিনষ্ট করে, কারণ তখন সে নিজেকে পরিণত করে মানবতার শত্রুতে। তিনি বলেছেন: “In its extreme form it destroys a nation for it makes the enemy of mankind.”
(ঘ) অগণতান্ত্রিক: জাতীয়তাবাদের এই উগ্র, হিংস্র ও বীভৎস প্রকাশ গণতান্ত্রিক ধ্যান-ধারণা ও সমস্ত মানবিক চেতনার পরিপন্থী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় ‘জাতীয়তাবাদ সভ্যতার সংকট স্বরূপ’ (“Nationalism is a menace to civilisation.’)। আর এক দিক থেকেও জাতীয়তাবাদের অ-গণতান্ত্রিক প্রকৃতি প্রকাশ পায়। জাতীয়তাবাদের সারকথা হিসাবে জাতীয় স্বার্থের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। বলা হয় যে ব্যক্তিস্বার্থের উপরে জাতীয় স্বার্থ প্রতিষ্ঠিত এবং এই জাতীয় স্বার্থের পরিপোষক হিসাবে রাষ্ট্র তার ভূমিকা পালন করে থাকে। অর্থাৎ জাতীয়তাবাদী বক্তব্য অনুসারে ব্যক্তিস্বার্থকে অবহেলা করা হয়। অথচ গণতন্ত্র বা উদারনীতিবাদে ব্যক্তিস্বার্থের উপর জোর দেওয়া হয়।
(ঙ) বিশ্বশান্তির বিরোধী: উগ্র জাতীয়তাবাদ আন্তর্জাতিক শক্তির পক্ষে ক্ষতিকর। এইরকম জাতীয়তাবাদ সর্বক্ষেত্রে স্বদেশ ও স্বজনের দাবিকে অগ্রাধিকার দেয়। ন্যায়-অন্যায়, যুক্তি ও আলাপ-আলোচনাকে অস্বীকার করা হয় এবং সর্বপ্রকার বিরোধ মীমাংসার জন্য যুদ্ধের পথ গ্রহণ করা হয়। আত্মগরিমা প্রতিষ্ঠাই জাতির মহৎ লক্ষ্য হিসাবে বিবেচনা করা হয়। এবং তারজন্য যুদ্ধ ও বলপ্রয়োগের নীতিকে লক্ষ্য সাধনের একমাত্র উপায় হিসাবে গ্রহণ করা হয়। বস্তুত উগ্র জাতীয়তাবাদ ও যুদ্ধ পরস্পরের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কযুক্ত। উগ্র জাতীয়তাবাদের যুদ্ধোন্মাদ ও ধ্বংসাত্মক লীলার ভয়ঙ্কর দৃষ্টান্ত হিসাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানী, জাপান ও ইতালীর বিধ্বংসী ভূমিকার কথা স্মরণ করা যায়। এই যুদ্ধবাদী প্রবণতা বিশ্বশান্তির ঘোরতর শত্রু। জাতীয়তাবাদ আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার বিরোধী।
(চ) সংকীর্ণতার সৃষ্টি করে: বিকৃত জাতীয়তাবাদ অন্ধ আবেগ ও উন্মাদনার সৃষ্টি করে। তার ফলে দেশ ও জাতির সবকিছুকে একটি বাঁধাধরা নির্দিষ্ট পথে পরিচালিত করা হয়। এইভাবে বাইরের জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সভ্যতা-সংস্কৃতির আলোেক প্রবেশের পথ অবরুদ্ধ হয়। জাতির স্বকীয়তা সংরক্ষণের অত্যুগ্র বাসনা বিচ্ছিন্ন বর্বরতায় পরিণত হয়। রাজনীতিক চিন্তা-চেতনার দিগন্তকেও জাতীয়তাবাদ সংকীর্ণ করতে উদ্যোগী হয়। এই সমস্ত কিছুর ফলে জাতির সর্বাঙ্গীণ ও বৈচিত্র্যময় উন্নতি ব্যাহত হয়। মানবজাতির সভ্যতা ও সংস্কৃতির ও মানবিক গুণাবলীর স্বাধীন ও স্বচ্ছন্দ বিকাশের পথে উগ্র জাতীয়তাবাদ বাধার সৃষ্টি করে। বস্তুত বিকৃত জাতীয়তাবাদ মানবসভ্যতার সৃজনশীল বিকাশের পথকে প্রতিহত করে। এর উদ্দেশ্য হল পরজাতি বিদ্বেষ ও সামরিকতাবাদের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সভ্যতা-সংস্কৃতি ও মননশীলতা গড়ে তোলা। এই উদ্দেশ্যেই নাৎসি নেতা হিটলার নাৎসিবাদের দৃষ্টিকোণ থেকে জার্মান জাতির সভ্যতা-সংস্কৃতি, শিক্ষা-দীক্ষা প্রভৃতিকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছিলেন। এ জাতীয় উদ্যোগ মানবজাতির সর্বাত্মক ও বৈচিত্র্যপূর্ণ বিকাশকে বিপন্ন করে তোলে। বস্তুত উগ্র জাতীয়তাবাদের আর্থ-রাজনীতিক এবং মনস্তাত্ত্বিক ও সাংস্কৃতিক প্রকাশ বিশ্বশান্তি ও সৌভ্রাতৃত্বের পরিপন্থী। প্রকৃতপক্ষে বিকৃত জাতীয়তাবাদ হল জাতির এক বাতিকগ্রস্ত রোগবিশেষ।
(ছ) আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের সৃষ্টি: জাতীয়তাবাদ রাজনীতিক স্বাধীনতার তত্ত্বের উপর অতিমাত্রায় গুরুত্ব আরোপ করে। এই কারণে জাতীয়তাবাদী চেতনার ভিত্তিতে জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারনীতি জোরদার হয়। কিন্তু এই নীতির ব্যাপক প্রয়োগ ঘটলে বিশ্বজুড়ে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের সৃষ্টি হবে। তখন পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের রাষ্ট্রসমূহের রাজনীতিক বিন্যাস বিপর্যস্ত হবে। এবং পরিবর্তিত রাজনীতিক পরিস্থিতিতে বহু ও বিভিন্ন নতুন প্রকৃতির সমস্যার সৃষ্টি হবে।
(জ) অপদার্থ শাসকদের হাতিয়ার: অনেক ক্ষেত্রে দেশের শাসকশ্রেণী নিজেদের ব্যর্থতা ও অসামর্থ্যকে আড়াল করার জন্য সংকীর্ণ স্বাদেশিকতার উন্মাদনা সৃষ্টির চেষ্টা করে। দেশ ও দেশবাসীর সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে ব্যর্থতাকে ঢাকার উদ্দেশ্যে সরকার যুদ্ধের আশঙ্কা ও আতঙ্ক সৃষ্টির ব্যাপারে উদ্যোগী হয়। সাধারণত উগ্র জাতীয়তাবাদী চেতনার প্রসারের মাধ্যমে ব্যর্থ শাসকরা এই অপচেষ্টার সামিল হন। অর্থাৎ অপদার্থ শাসকরা তাঁদের নিজেদের সংকীর্ণ স্বার্থ রক্ষার তাগিদে উগ্র জাতীয়তাবাদকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করেন।
(ঝ) প্রকৃত প্রস্তাবে ধনতন্ত্রের বিকাশের পর্যায়েই জাতীয়তাবাদ বিকৃত রূপ ধারণ করে। সামন্ততত্ত্বের বিরুদ্ধে ধনতন্ত্রের প্রতিষ্ঠার পর্বে বুর্জোয়াশ্রেণী জাতীয়তাবাদকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে। হায়েস এর মতানুসারে বিকৃত জাতীয়তাবাদ হল কৃত্রিম, ভণ্ড জাতিপ্রেম। তিনি তাঁর Nationality and Patriotism শীর্ষক গ্রন্থে বলেছেন: “Nationalism is artificial and it is far from ennobling, in a word it is patriotic snobbery.” জাতীয়তাবাদ বিকৃত হয়ে সংকীর্ণ স্বাদেশিকতায় পরিণত হলে তা সমাজ ও সভ্যতার শত্রুতে পরিণত হয়।
আরো অন্যান্য সরকারি স্কিম সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন
FAQ | জাতীয়তাবাদ
Q1. বাঙালি জাতীয়তাবাদ বলতে কী বোঝায়
Ans – বাংলা ভাষাভাষী মানুষের যে জাতীয়তাবাদ তাই বাঙালি জাতীয়তাবাদ।
Q2. বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি কী
Ans – বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ বিচার করা হয় সাধারণত বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্য বিশেষত ভাষা এবং সংস্কৃতির উপর নির্ভর করে। ৪৭ এর পরে এসে রাজনৈতিকভাবেও বেশ কিছু প্রভাব সৃষ্টি হয়েছে। কখন বাঙালি থেকে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের বিবর্তন ঘটেছে। তবে বাঙালি জাতীয়তাবাদ উল্লেখ করতে গেলে পশ্চিমবঙ্গ পূর্ব বঙ্গ দুইটা ধরেই কথা বলতে হবে। আর্য পূর্ব যুগে নেগ্রিটো ,অস্ট্রিক ,দ্রাবিড় এবং মঙ্গোলীয় মিশেলে অনার্য রক্তধারা থেকে বাঙালি জাতির সৃষ্টি। পরবর্তীতে বহিরাগত বহুদেশের শাসকরা এসে বাংলাকে শাসন ও শোষণ করেছে, প্রবেশ করেছেন নানা রকম সংস্কৃতি, কিন্তু এসবের মাঝেও বাঙালির নিজস্ব সংস্কৃতি উজ্জ্বলতর। আছে সংস্কৃতির উপর দাঁড়িয়েই বাঙালি জাতীয়তাবাদ।
Q3. উগ্র জাতীয়তাবাদ কি
Ans – ঊনবিংশ শতকের প্রথমার্ধ থেকে ইউরোপের প্রতিটি দেশ ও জাতি নিজের শ্রেষ্ঠ বলে ভাবতে শুরু করে। এই মানসিকতা থেকেই উগ্র জাতীয়তাবাদ শুরু হয়।
Q4. জাতীয়তাবাদের মূল মন্ত্র কি
Ans – জাতীয়তাবাদ একটি আদর্শ যেখানে জাতিকে মানব সমাজের কেন্দ্রীয় অবস্থানে স্থাপন করা হয় এবং অন্যান্য সামাজিক ও রাজনৈতিক আদর্শকে জাতিগত আদর্শের পরে স্থান দেয়া হয়। জাতীয়তাবাদ একটি জাতির সংস্কৃতি রক্ষার্থে ভূমিকা পালন করে এবং জাতির অর্জনসমূহকে সামনে তুলে ধরে।
আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারি ও বেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন।