উদারনীতিবাদ কাকে বলে, উদারনীতিবাদের বৈশিষ্ট্য, উদারনীতিবাদের জনক কে

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

উদারনীতিবাদ কাকে বলে

বিগত তিন শতকেরও বেশি সময় ধরে উদারনীতিবাদ পশ্চিমি দুনিয়ার একটি বিশিষ্ট মতবাদ ( doctrine ) হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে । কিন্তু উনিশ শতকের প্রথমার্ধের পূর্ব পর্যন্ত মতবাদটির কোনো আনুষ্ঠানিক নাম ( formal designation ) ছিল না ।

যখন তা আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ উদারনীতিবাদ ’ ( ‘ liberalism ‘ ) হিসেবে পরিচিতি লাভ করল তখন তার দুঃসময় শুরু হয়ে গেছে । এ প্রসঙ্গে মন্তব্য করতে গিয়ে জি . সারতোরি ( G. Sartori ) বলেছেন , দেশের মানুষ ঠিক সেই সময় উদারনীতিবাদের কথা বলতে শুরু করে , যখন তারা উদারনীতিবাদী হিসেবে নিজেদের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছিল কিংবা হারাতে বসেছিল ।

কারণ , উদারনৈতিক চিন্তাধারার সামনে সব থেকে বড়ো চ্যালেঞ্জ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল গণতান্ত্রিক এবং সমাজতান্ত্রিক ধ্যানধারণা । নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য উদারনীতিবাদীরা গণতান্ত্রিক নীতিসমূহকে গ্রহণ ক’রে উদারনৈতিক গণতন্ত্রী বলে পরিচিত হন । কিন্তু সমাজতান্ত্রিক , বিশেষত সাম্যবাদী নীতিসমূহকে গ্রহণ করতে অস্বীকার করায় মার্কসীয় সমাজতন্ত্র উদারনীতিবাদের সামনে একটি বিরাট চ্যালেঞ্জ হিসেবেই থেকে গেছে ।

উদারনীতিবাদের সংজ্ঞা

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের উদারনীতিবাদের সাধারণ অর্থ হল রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে ব্যক্তি স্বাধীনতা নীতি প্রতিষ্ঠা। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা অনুযাযী, ‘উদারনীতিবাদ হলো এমন এক ধারণা যা সরকারি কাজের নীতি ও পদ্ধতিরূপে ,সমাজ গঠনে নীতি রূপে এবং ব্যক্তি ও সমাজের এক জীবনাদর্শরুপে ‘স্বাধীনতা’ কে প্রতিষ্ঠা করে। উদারনীতিবাদ ব্যক্তি কে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। উদারনীতিবাদ মনে করে আগে ব্যক্তি পরে রাষ্ট্র। এই তত্ব অনুসারে ব্যক্তির জন্য রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের জন্য ব্যক্তি নয়।

উদারনীতিবাদের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে হবহাউস তার libarelusam গ্রন্থে বলেছেন, ব্যক্তিত্বের আত্নপরিচালনার ক্ষমতার উপর ভিত্তি করে সমাজ গঠনের আদর্শকে উদারনীতিবাদ বলে। হ্যালেন্ড ল্যাস্কি উদারনীতিবাদ বলতে স্বাধীনতার অনুশাসনকে বুঝিয়েছেন।

উদারনীতিবাদ কাকে বলে এর বৈশিষ্ট্য গুলি আলোচনা করো, উদারনীতিবাদ কাকে বলে এর বৈশিষ্ট্য

সনাতন উদারনীতিবাদীরা নৈশ প্রহরী রাষ্ট্র ‘ ( ‘ nightwatchman state ) – এর যে তত্ত্ব প্রচার করেছিলেন , সংশোধনমূলক উদারনীতিবাদের প্রবক্তারা সেই তত্ত্বকে প্রত্যাখান করেন । ফলে রাষ্ট্রের নেতিবাচক দিকটির পরিবর্তে ইতিবাচক দিকটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয় । সংশোধনমূলক উদারনীতিবাদের মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলি –

1. রাজনৈতিক সাম্যের প্রতিষ্ঠা : সংশোধনমূলক উদারনীতিবাদীরা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সাম্য প্রতিষ্ঠার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন । তাঁরা ছিলেন গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় বিশেষভাবে আগ্রহী । তাঁদের মতে , জনগণকে সর্বপ্রকার রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস বলে মেনে নিলেই কেবল গণতন্ত্র সফল হতে পারে । কিন্তু আধুনিককালে রাষ্ট্রের জনসংখ্যা এবং আয়তন অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় জনগণের পক্ষে প্রত্যক্ষভাবে শাসনকার্য পরিচালনায় অংশগ্রহণ করা সম্ভব নয় । তাই তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে জনসাধারণ পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রপরিচালনায় অংশগ্রহণ করতে পারে । সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত হলেও গণতান্ত্রিক সরকার বিশেষ কোনো ব্যক্তি , গোষ্ঠী বা শ্রেণির স্বার্থে কাজ করে না ।

2. রাজনৈতিক ও পৌর অধিকারের স্বীকৃতি : সংশোধনমূলক উদারনীতিবাদ সুষ্ঠু ও সবল জনমত গঠনের জন্য নাগরিকদের রাজনৈতিক ও পৌর অধিকারকে স্বীকৃতি প্রদানের পক্ষপাতী । এইসব অধিকারের মধ্যে স্বাধীনভাবে মতামত প্রকাশের অধিকার , সভাসমিতি করার অধিকার , সরকারি কার্যের সমালোচনা করার অধিকার , জীবনের অধিকার , ধর্মের অধিকার , শিক্ষার অধিকার , সামাজিক সাম্যের অধিকার , নির্বাচন করার ও নির্বাচিত হওয়ার অধিকার ইত্যাদি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয় । 

3. একদলীয় ব্যবস্থার বিরোধিতা : বার্কার প্রমুখ সংশোধনমূলক উদারনীতিবাদী একদলীয় ব্যবস্থাকে গণতন্ত্রের হন্তারক ব্যবস্থা বলে মনে করেন । তাঁদের মতে , একাধিক রাজনৈতিক দল না থাকলে জনগণের বিভিন্ন প্রকার আশা – আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত হতে পারে না । কারণ , দ্বিদলীয় বা বহুদলীয় ব্যবস্থায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে সমাজের সমকালীন সমস্যাবলি সম্পর্কে আলোচনা করায় নাগরিকদের রাজনৈতিক জ্ঞান যেমন বৃদ্ধি পায় , তেমনি আবার বিরোধী দল ক্ষমতাসীন দলের সমালোচনা করে তাকে সংযত রাখে । এইভাবে গণতন্ত্রের স্বরূপ বজায় থাকে ।

4.  সাংবিধানিক উপায়ে সরকার পরিবর্তন : সংশোধনমূলক উদারনীতিবাদ শান্তিপূর্ণ ও সাংবিধানিক উপায়ে সরকারের পরিবর্তন সাধনের পক্ষপাতী । সরকার – নির্বাচনের চরম ক্ষমতা জনগণের হাতে অর্পিত থাকার যে কোনো সময় তারা একটি সরকারের পরিবর্তে অন্য সরকারকে ক্ষমতাসীন করতে পারে । তাই উদারনীতিবাদের সমর্থকরা বৈপ্লবিক উপায়ে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের যে কোনো প্রচেষ্টাকে কঠোরভাবে সমালোচনা করেন । 

5.  সার্বিক ভোটাধিকার: সংশোধনমূলক উদারনীতিবাদের অন্যতম মৌলিক নীতি হল সার্বিক প্রাপ্তবয়ঙ্গের ভোটাধিকারের প্রবর্তন । এরূপ নীতির সমর্থকদের মতে , যেহেতু গণতন্ত্র হল জনগণের শাসন , নেহে , গণসার্বভৌমিকতার বাস্তবায়নের জন্য জাতিধর্মবর্ণ , স্ত্রীপুরুষ , ধনীনির্ধন – নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিকের সমানভাবে ভোটদানের অধিকার থাকা বাঞ্ছনীয় । 

6. ন্যায় প্রতিষ্ঠা : সংশোধনমূলক উদারনীতিবাদ ন্যায় প্রতিষ্ঠায় বিশেষভাবে আগ্রহী । ‘ আইনের অনুশাসন ‘ ( ‘ Rule of Law ‘ ) – কে সংশোধনমূলক উদারনীতিবাদীরা গণতান্ত্রিক সমাজ গঠনের অপরিহার্য শর্ত বলে মনে করেন । ‘ আইনের দৃষ্টিতে সাম্য ‘ এবং ‘ ‘ আইন কর্তৃক সমভাবে সংরক্ষণ ‘ ( ‘ Equality before the Law ‘ and ‘ Equal Protection of Laws ‘ ) ছাড়া সমাজের মধ্যে ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না বলে এরুপ উদারনীতিবাদীদের ধারণা । 

7. নিরপেক্ষ আদালত : সংশোধনমূলক উদারনীতিবাদীরা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব একটি নিরপেক্ষ আদালতের হাতে অর্পণ করার পক্ষপাতী। এরুপ আদালত একদিকে যেমন সংবিধানের রক্ষাকর্তা ও ব্যাখ্যাকর্তা হিসেবে কাজ করবে, অন্যদিকে তেমনি নাগরিকদের মৌলিক অধিকারসমূহ সংরক্ষণ করবে। 

8. ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার : সংশোধনমূলক উদারনীতিবাদীরা ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকারের ওপর কিছু কিছু বাধানিষেধ আরোপ করার কথা বললেও তাঁরা এরূপ অধিকারের বিলোপসাধনের আদৌ পক্ষপাতী নন । বরং , তাঁদের মতে , ব্যক্তির হাতে সম্পত্তির অধিকার না থাকলে নাগরিকরা কাজকর্মে উৎসাহ পাবে না । ফলে দেশের সামগ্রিক উন্নতি ব্যাহত হবে । 

9. সংখ্যালঘু প্রতিনিধিত্বের ব্যবস্থা: এরূপ উদারনীতিবাদ শাসন বিভাগের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা ও অবাঞ্ছিত হস্তক্ষেপ রোধ করার জন্য আইন বিভাগকে ব্যবহার করতে চায় । তবে আইন বিভাগ যাতে কেবল সংখ্যাগরিষ্ঠের স্বার্থরক্ষার হাতিয়ারে পরিণত হতে না পারে , সেজন্য সংখ্যালঘু প্রতিনিধিত্বের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয় । সমানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব , পেশাগত প্রতিনিধিত্ব , বহুমুখী ভোটাধিকার ইত্যাদির মাধ্যমে সংশোধনমূলক উদারনীতিবাদ সংখ্যাগরিষ্ঠ ও সংখ্যালঘিষ্ঠের স্বার্থের মধ্যে সমন্বয়সাধনের চেষ্টা করে । 

10. জনকল্যাণকর রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা: সংশোধনমূলক উদারনীতিবাদ জনকল্যাণকর রাষ্ট্রের আদর্শ গ্রহণ করার ফলে রাষ্ট্রের কর্মক্ষেত্রের পরিধি যথেষ্ট পরিব্যাপ্ত হয়েছে । সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অসাম্য দূর করার জন্য গতিশীল কর ব্যবস্থার প্রবর্তন , শিল্প – বাণিজ্যের নিয়ন্ত্রণ , রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা গ্রহণ , কিছু কিছু শিল্পবাণিজ্যের জাতীয়করণ প্রভৃতি এরূপ উদারনীতিবাদের নীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে । এইসব নীতি অনুসরণের জন্য অনেকে এরুপ উদারনীতিবাদকে সমাজতন্ত্রের পরিপোষক বলে মনে করেন । 

11.  ফ্যাসিবাদ ও সাম্যবাদের বিরোধিতা: সংশোধনমূলক উদারনীতিবাদ যে – কোনো ধরনের সর্বনিয়ন্ত্রণবাদের বিরোধী । অন্যভাবে বলা যায় , এরূপ উদারনীতিবাদ নাতসিবাদ ও ফ্যাসিবাদের তীব্র সমালোচনা করার পাশাপাশি সাম্যবাদেরও চরম বিরোধিতা করে । সংশোধনমূলক উদারনীতিবাদীরা পুঁজিবাদের সমর্থক ও সংরক্ষক হলেও নাতসিবাদ ও ফ্যাসিবাদের এক নেতা ও এক দলের শাসন , ব্যক্তিপূজা , অগণতান্ত্রিক কার্যকলাপ , যুদ্ধবাজ পররাষ্ট্রনীতির অনুসরণ , জাতিবিদ্বেষ প্রভৃতির চরম বিরোধী । আবার , সাম্যবাদীরা রাজনৈতিক ক্ষেত্রে একদলীয় শাসন ও সর্বহারাশ্রেণির একনায়কত্বের প্রতিষ্ঠা ; অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে উৎপাদনের উপাদানগুলির ওপর ব্যক্তিগত মালিকানার পরিবর্তে সামাজিক মালিকানার প্রতিষ্ঠা ; শ্রেণিহীন , শোষণহীন ও রাষ্ট্রহীন সমাজব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা প্রভৃতির পক্ষপাতী বলে এরুপ উদারনীতিবাদীরা তাঁদেরও বিরোধিতা করেন ।

উদারনীতিবাদের মূল বৈশিষ্ট্য

উপরোক্ত আলোচনার ভিত্তিতে নয়া উদারনীতিবাদের মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলিকে চিহ্নিত করা যেতে পারে :

[ ১ ] রাষ্ট্রের পরিবর্তে ব্যক্তিকে অনেক বেশি গুরুত্ব প্রদান এবং ‘ সর্বাপেক্ষা কম শক্তিশালী রাষ্ট্রে’র তত্ত্ব প্রচার ; 

[ ২ ] সামাজিক সাম্য ও জনকল্যাণকর রাষ্ট্র – সংক্রান্ত সংশোধনমূলক উদারনৈতিক ধারণার তীব্র বিরোধিতা ; 

[ ৩ ] জাতীয় রাষ্ট্রের ধারণা পরিত্যাগ ;

[ ৪ ] অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পুঁজির বিশ্বায়ন , অর্থাৎ বিশ্বব্যাপী অবাধ বা অনিয়ন্ত্রিত প্রতিযোগিতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ ; 

[ ৫ ] সর্বপ্রকার সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচি , ন্যূনতম বেতন , শ্রমিকদের স্বার্থ সংরক্ষণ সংক্রান্ত আইন , বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারি ভরতুকিদানের ব্যবস্থা প্রভৃতির বিরোধিতা ;

[ ৬ ] বহুজাতিক সংস্থাগুলির অবাধ স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি প্রদান এবং 

[ 7 ] ‘ গণ – পছন্দ ’ ( ‘ Public Choice ‘ ) – এর নীতির মাধ্যমে প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের সাবেকি প্রতিরূপটি ( model ) – র অসংগতিগুলি চিহ্নিতকরণ , সরকারি নীতি প্রণয়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ার ওপর স্বার্থগোষ্ঠীগুলি ( Interest Groups ) – র প্রভাব হ্রাস ও রাজনৈতিক ক্ষমতাবিকেন্দ্রীকরণের ওপর গুরুত্ব আরোপ ।

উদারনীতিবাদ তত্ত্ব

লিবারেলিজম্ ( Liberalism ) নামক গ্রন্থে হবহাউস ( L. T. Hobhouse ) উদারনীতিবাদের কতকগুলি মৌলিক উপাদানের উল্লেখ করেছেন । তাঁর মতে , সামন্ততন্ত্র , অভিজাতদের শাসন এবং যাজক সম্প্রদায়ের ক্ষমতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম পরিচালনার সময় মধ্যবিত্তশ্রেণি ওইসব নীতিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছিল । ওই নীতিগুলি বা তত্ত্ব হলো: –

[ ১ ] পৌর স্বাধীনতার সংরক্ষণ ,

[ ২ ] অবাধ বাণিজ্যের স্বাধীনতা ,

[ ৩ ] ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ,

[ ৪ ] সামাজিক স্বাধীনতা , 

[ ৫ ] অর্থনৈতিক অধিকার , অর্থাৎ ব্যক্তিগত সম্পত্তি ও ব্যক্তিগতভাবে চুক্তি সম্পাদনের অধিকার ,

[ ৬ ] পারিবারিক স্বাধীনতা ( domestic freedom ) , 

[ ৭ ] স্থানীয় , বর্ণগত ও জাতিগত স্বাধীনতা , অর্থাৎ আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও জাতিগত সাম্যের অধিকার ,

[ ৮ ] আন্তর্জাতিক স্বাধীনতা , অর্থাৎ যুদ্ধের সম্ভাবনাকে প্রতিরোধ করে বিশ্বশান্তি রক্ষা করা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার বন্ধন সুদৃঢ় করা ও রাষ্ট্রসমূহের একটি বিশ্বযুক্তরাষ্ট্র ( world federation of states ) গঠন করার স্বাধীনতা এবং

[ ৯ ] রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও গণসার্বভৌমিকতার প্রতিষ্ঠা । 

আরো পড়তে: জাতীয়তাবাদ কি, জাতীয়তাবাদ বলতে কী বোঝায়, জাতীয়তাবাদের উপাদান কি কি, জাতীয়তাবাদের জনক কে

উদারনীতি কাকে বলে

উদারনীতি হল ব্যক্তি স্বাধীনতা, সম্মতি ও সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য একটি রাজনৈতিক ও দার্শনিক আদর্শ। বিভিন্ন উদারপন্থী এই মতাদর্শ সম্পর্কে তাদের বোঝার উপর ভিত্তি করে বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করে। নাগরিক এবং মানবাধিকার সহ ব্যক্তিগত অধিকারগুলি এই মতামতগুলির মধ্যে প্রথমে আসে।

এটি ধর্মনিরপেক্ষতা এবং গণতন্ত্রকে সংজ্ঞায়িত করে বাকস্বাধীনতা, ধর্মীয় বিবেক এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকেও সমর্থন করে। উদারতাবাদকে আরও সুনির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করার জন্য, একজনকে অবশ্যই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ভূমিকা, প্রকৃতি এবং কার্যকারিতা বুঝতে হবে, যা নিম্নলিখিত দিকগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে:

  • ব্যক্তি স্বাধীনতা: উদারতাবাদ মূলত স্বাধীনতার একটি আদর্শ। ব্যক্তি স্বাধীনতার প্রতি এর ভালোবাসা প্রশ্নাতীত। এটা হয়ে উঠেছে স্বাধীনতাবাদ। উদারপন্থীদের জন্য, স্বাধীনতা মানুষের ব্যক্তিত্বের মূল সারাংশ। এটি একজনের উন্নয়নের একটি মাধ্যম।
  • ব্যক্তি-কেন্দ্রিক: উদারতাবাদ শুরু হয় এবং ব্যক্তি দিয়ে শেষ হয়। উদারপন্থীদের জন্য, ব্যক্তি হল সমস্ত কার্যকলাপের কেন্দ্র, কেন্দ্রবিন্দু; ব্যক্তি হল শেষ যখন রাষ্ট্র সহ অন্যান্য সকল সমিতি হল উপায়, যা ব্যক্তির জন্য বিদ্যমান। ব্যক্তি হল কেন্দ্র যার চারপাশে সমস্ত জিনিস চলে।
  • পুঁজিবাদী অর্থনীতি: উদারনীতিবাদ একটি মুক্ত-বাজার অর্থনীতি, অর্থাৎ অর্থনীতির পুঁজিবাদী পদ্ধতির পক্ষে। এটি একটি ব্যক্তিগত সম্পত্তি ব্যবস্থায় বিশ্বাস করে, সম্পত্তির অধিকারকে পবিত্র হিসাবে বিবেচনা করে; একমাত্র উদ্দেশ্য হিসাবে সর্বাধিক লাভ; একমাত্র সারাংশ হিসাবে উত্পাদন এবং বিতরণের পুঁজিবাদী মোড; অর্থনীতির নিয়ন্ত্রক মাধ্যম হিসাবে বাজার শক্তি।
  • সীমিত রাষ্ট্র: উদারনীতিবাদ একটি সীমিত রাষ্ট্রের ধারণাকে সমর্থন করে। উদারপন্থীরা রাষ্ট্রকে ব্যক্তির মঙ্গল অর্জনের উপায় হিসেবে দেখে। তারা সব ধরনের সর্বগ্রাসী রাষ্ট্রের বিরোধিতা করে। তারা মনে করেন যে আরও শক্তিশালী রাষ্ট্র মানে কম স্বাধীন ব্যক্তি। লক বলতেন, “যেহেতু রাষ্ট্রের কার্যাবলী সীমিত, তাই এর ক্ষমতাও সীমিত।”
  • ঐতিহ্য/কুসংস্কারের বিরোধিতা: ঐতিহ্য/কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া হিসাবে উদারনীতির উত্থান হয়েছে, এটি তার প্রকৃতির দ্বারা সমস্ত প্রতিক্রিয়াশীল পদক্ষেপের বিরোধী। রেনেসাঁ এবং সংস্কার থেকে উদ্ভূত উদারতাবাদ যুক্তি ও যুক্তিবাদের জন্য দাঁড়িয়েছে এবং বাস্তবে দাঁড়িয়েছে। একটি নিষ্ক্রিয় সত্তা হিসাবে মানুষের সামন্তবাদী মডেলের বিপরীতে, উদারতাবাদ এমন একজন পুরুষের মডেলকে সমর্থন করে যে আরও সক্রিয় এবং আরও বেশি অর্জনশীল।
  • গণতন্ত্র: উদারতাবাদ গণতান্ত্রিক সরকারের একটি বাহক। এটি জনগণের, জনগণের দ্বারা এবং জনগণের জন্য একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায়; একটি সরকার যা সংবিধান এবং সাংবিধানিকতা অনুযায়ী কাজ করে; যে সরকার আইনের শাসন বজায় রাখে; একটি সরকার যা জনগণের অধিকার ও স্বাধীনতা সুরক্ষিত করে। লিবারেলিজম, ম্যাকগভর্ন বলেছেন, গণতন্ত্র এবং ব্যক্তিবাদের সমন্বয়।
  • কল্যাণবাদ: উদারনীতি কল্যাণবাদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। কল্যাণবাদ, রাষ্ট্রীয় কার্যকলাপ হিসাবে, এই ধারণা যে রাষ্ট্র জনগণের কল্যাণের জন্য কাজ করে। রাষ্ট্রীয় কার্যকলাপের উদার ধারণা হল যেখানে রাষ্ট্র জনগণের সেবা করে। অন্য কথায়, কল্যাণ রাষ্ট্র একটি ‘সমাজসেবা’ রাষ্ট্র।

উদারনীতিবাদের জনক কে

জন লক ছিলেন একজন ইংরেজ দার্শনিক এবং চিকিত্সক, যিনি ব্যাপকভাবে আলোকিত চিন্তাবিদদের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং সাধারণভাবে “উদারনীতির জনক” হিসাবে পরিচিত।

ফ্রান্সিস বেকনের ঐতিহ্য অনুসরণ করে ব্রিটিশ অভিজ্ঞতাবাদীদের মধ্যে প্রথম একজন হিসেবে বিবেচিত, লক সামাজিক চুক্তি তত্ত্বের জন্য সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। তার কাজ জ্ঞানতত্ত্ব এবং রাজনৈতিক দর্শনের বিকাশকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল। তাঁর লেখাগুলি ভলতেয়ার এবং জ্যাঁ-জ্যাক রুসো এবং অনেক স্কটিশ আলোকিত চিন্তাবিদদের পাশাপাশি আমেরিকান বিপ্লবীদের প্রভাবিত করেছিল। শাস্ত্রীয় প্রজাতন্ত্রবাদ এবং উদার তত্ত্বে তার অবদান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা ঘোষণায় প্রতিফলিত হয়।

আন্তর্জাতিকভাবে, লকের রাজনৈতিক-আইনি নীতিগুলি সীমিত প্রতিনিধিত্বমূলক সরকারের তত্ত্ব ও অনুশীলন এবং আইনের শাসনের অধীনে মৌলিক অধিকার ও স্বাধীনতার সুরক্ষার উপর গভীর প্রভাব ফেলে।

লকের মনের তত্ত্বটি প্রায়শই পরিচয় এবং আত্ম সম্পর্কে আধুনিক ধারণার উত্স হিসাবে উদ্ধৃত করা হয়, যা পরবর্তী দার্শনিকদের যেমন জিন-জ্যাক রুসো, ডেভিড হিউম এবং ইমানুয়েল কান্টের কাজগুলিতে বিশিষ্টভাবে চিত্রিত হয়।

ভারতে উদারনীতিবাদের প্রবক্তা কে

ভারতের স্বাধীনতার পরপরই, চক্রবর্তী রাজাগোপালাচারী (অনানুষ্ঠানিকভাবে রাজাজি নামে পরিচিত), সমাজতন্ত্রের জন্য নেহরুর উদ্দীপনাকে অপ্রতিদ্বন্দ্বী হতে দেওয়া ভারতের জন্য ঝুঁকি দেখতে শুরু করেছিলেন। রাজাজি 1957 সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সাথে বিচ্ছেদ করেন এবং স্বতন্ত্র পার্টি গঠন করেন যা ধ্রুপদী উদার নীতি এবং মুক্ত উদ্যোগকে সমর্থন করে।

তখন থেকে, অনেক নতুন চিন্তাবিদ যেমন এস.ভি. রাজু, শারদ অনন্তরাও যোশী, বরুন মিত্র, লোকসত্তা জয়প্রকাশ নারায়ণ, পার্থ জে. শাহ, গুরচরণ দাস, এবং সৌভিক চক্রবর্তী, রাঘবেন্দর আস্কানি, ভেঙ্কটেশ গেরিটি প্রমুখ, ভারতীয় উদারপন্থীদের উপর আবির্ভূত হয়েছেন।

নয়া উদারনীতিবাদ কাকে বলে

নয়া-উদারনীতিবাদকে অনেক সময় নয়া ক্ল্যাসিক্যাল (neo-classical) উদারনীতিবাদ হিসাবে অভিহিত করা হয়। রাষ্ট্রতত্ত্বের আলোচনায় উদারনীতিবাদের পুনরুত্থানই হল নয়া-উদারনীতিবাদ। নয়া-উদারনীতিবাদ হল আর্থনীতিক উদারনীতিবাদের পুনরুত্থান। বিংশ শতাব্দীর সত্তরের দশক থেকে নয়া-উদারনীতিবাদের আবির্ভাব ঘটেছে। নয়া-উদারনীতিবাদ হল প্রতিবিপ্লবী প্রকৃতির। বিংশ শতাব্দীব্যাপী সরকারের ক্রিয়াকর্ম ও কর্তৃত্ব এবং রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের পরিধি অতিমাত্রায় প্রসারিত হয়েছে। নয়া-উদারনীতিবিদ সরকারী ক্ষেত্রের ক্রমসম্প্রসারণকে আটকাতে চায় এবং সম্ভব হলে সরকারী ক্ষেত্রের ক্রমসম্প্রসারণের এই গতিটাকে বিপরীতমুখী করতে চায়। অ্যান্ড্রু হেউড তাঁর Political Ideologies শীর্ষক গ্রন্থে এ বিষয়ে বলেছেন: “Neo-liberalism is counter-revolutionary: its aim is to halt, and if possible reverse the trend towards “big” government and state intervention that had characterized much of the twentieth century.”

বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে নতুন সমাজব্যবস্থা এবং প্রযুক্তি পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রের উপর নতুন ও ব্যাপক দায়-দায়িত্ব ন্যস্ত হল। উদারনীতিবাদের নতুন ব্যাখ্যা দেওয়া হল এবং জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থার কথা বলা হল। অথচ চূড়ান্ত বিচারে এই কল্যাণব্রতী রাষ্ট্র সদর্থক রাষ্ট্র হিসাবে সাফল্য অর্জনে সক্ষম হয়নি। এই ইতিবাচক উদারনীতিক রাষ্ট্রের কাছে মানুষের আশা এবং বাস্তব অবস্থার মধ্যে ব্যাপক ব্যবধানের পরিপ্রেক্ষিতে হতাশা দেখা দিল। বিংশ শতাব্দীর উদারনীতিবাদী রাষ্ট্র সংকটের সম্মুখীন হল। এই অবস্থায় পরিবর্তন ও পরিমার্জনের প্রয়োজনীয়তা প্রতিপন্ন হল। এই পরিবর্তিত উদারনীতিবাদই হল নয়া উদারনীতিবাদ। পশ্চিমের দেশগুলিতে বিংশশতাব্দীর ষাট ও সত্তরের দশক থেকে এই উদারনীতিবাদের প্রয়োগ পরিলক্ষিত হয়।

নয়া উদারনীতিবাদের বৈশিষ্ট্য

(১) সীমিত রাষ্ট্রের ধারণা পুনঃপ্রতিষ্ঠা: নয়া উদারনীতিবাদে সনাতন উদারনীতিবাদের মতাে রাষ্ট্রের ভূমিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হলেও এই রাষ্ট্র কোনাে ক্ষমতাকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান বা স্বৈরাচারী প্রতিষ্ঠান নয়। নয়া উদানীতিবাদীরা ন্যূনতম রাষ্ট্র বা সীমিত রাষ্ট্রের কথা বলেন, যার একমাত্র কাজ হবে রাষ্ট্রের নাগরিকদের নিরাপত্তা প্রদান এবং ন্যায়সম্মতভাবে অর্জিত নাগরিকদের ব্যক্তিগত সম্পদের তত্ত্বাবধান করা। তাদের মতে, নিরাপত্তা রক্ষা, ন্যায়বিচার ও প্রতিরক্ষামূলক কাজ ছাড়া রাষ্ট্রের আর কোনাে কাজ থাকতে পারে না। এজন্য নয়া উদারনীতিবাদীরা রাষ্ট্রকে ‘Protective Agency’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

(২) অবাধ বাণিজ্য নীতি: নয়া উদারনীতিবাদীরা অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কোনােরকম রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণকে স্বীকার করেননি। তারা সনাতন উদারনীতিবাদের অবাধ বাণিজ্য নীতির পুনরুত্থানের প্রতি আস্থাশীল। নয়া উদারনীতিবাদ এই নীতিতে বিশ্বাসী, যদি ব্যক্তির অর্থনৈতিক জীবন সকলপ্রকার নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত থাকে, তবেই তার পক্ষে প্রকৃত উন্নতি ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে পৌছােনাে সম্ভব। নয়া উদারনীতিবাদ মুক্ত বাজার অর্থনীতি ব্যবস্থার নীতিতে বিশ্বাসী। এই মতবাদ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পুঁজির বিশ্বায়ন অর্থাৎ বিশ্বব্যাপী অবাধ বা অনিয়ন্ত্রিত প্রতিযোগিতার উপর বিশেষ গুরুত্ব আরােপ করে। তারা বিশ্বাস করেন মুক্ত বাজার অর্থনীতি প্রাচুর্য, দক্ষতা ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে পারে।

(৩) প্রাকৃতিক অধিকার তত্ত্ব: নয়া উদারনীতিবাদের অধিকার সংক্রান্ত বা নৈতিক নয়া উদারনীতিবাদী ধারার প্রধান প্রবক্তা হলেন রবার্ট নজিক। তিনি তার ‘Anarchy, State and Utopia’ গ্রন্থে যে তত্ত্বের প্রতি দৃঢ় সমর্থন জানিয়েছেন তা হল রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জন লক-এর প্রাকৃতিক অধিকার (Natural rights) তত্ত্ব। তিনি ন্যায়ের হকদারিত্ব তত্ত্ব প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে সর্বাপেক্ষা কম শক্তিশালী রাষ্ট্র তত্ত্বের উপর গুরুত্ব আরােপ করেছেন। তার মতে, সৎ উপায়ে অর্জিত সম্পত্তির উপর সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির ন্যায়সঙ্গত অধিকার থাকে। এমনকি উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পত্তির উপরও তার অধিকার বর্তায়। নজিক সম্পত্তির উপর ব্যক্তিগত অধিকার প্রতিষ্ঠার সপক্ষে জোরালাে বক্তব্য পেশ করেছেন। তার মতে, নাগরিকদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি অর্জন ও ভোগের অধিকার এবং চুক্তির স্বাধীনতা অলঙ্ঘনীয়। নয়া উদারনীতিবাদীদের মতে, যদি সব ব্যক্তিকে রাষ্ট্রীয় বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত রাখা যায় তাহলে সেই ব্যবস্থায় তাদের সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটতে পারে।

(৪) ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য ও আইনের শাসনের উপর গুরুত্ব: ‘The Constitution of Liberty’ গ্রন্থে নয়া উদারনীতিবাদের প্রবক্তা এফ এ হায়েক ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ ও আইনের শাসনের উপর গুরুত্ব দিয়ে প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্র গড়ে তুলতে চান। এফ এ হায়েক মানুষের ব্যক্তিগত সামর্থ্যের ক্ষেত্রে সরকারি হস্তক্ষেপকে কখনােই সমর্থন করেননি। তাই তিনি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রের শাসনকে বা জনকল্যাণমূলক রাষ্ট্রে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপকে কখনও সমর্থন করেননি। হায়েকের মতে, রাষ্ট্রের একমাত্র কাজ ব্যক্তিস্বাধীনতা কি সুরক্ষিত রাখা। তাই তিনি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রকে সমর্থন করে আইনের শাসন চাইলেও রাষ্ট্রের দমনপীড়নমূলক আইনকে কখনােই সমর্থন করেননি।

(৫) অর্থনৈতিক সংগঠন হল রাষ্ট্র: নয়া উদারনীতিবাদী তত্ত্বের প্রধান প্রবক্তা রবার্ট নজিকের মতে, রাষ্ট্র একটি অনৈতিক সংগঠন। তিনি এর পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেছেন, একমাত্র রাষ্ট্রের হাতেই সম্পূর্ণভাবে বলপ্রয়ােগের একচেটিয়া অধিকার রয়েছে। রাষ্ট্রের ভূখণ্ডে বসবাসকারী ব্যক্তিদের রক্ষা করার জন্য অনেকসময়ই রাষ্ট্র ব্যক্তির অধিকার ক্ষুন্ন করতে পারে কিন্তু নৈরাজ্যবাদীরা যেমন রাষ্ট্রব্যবস্থার পুরােপুরি অবসান চান, তিনি তা চাননি। রবার্টনজিক এমন ন্যূনতম রাষ্ট্র ধারণায় বিশ্বাস করেন, যা ব্যক্তির অধিকারকে কোনাে সময় ক্ষুন্ন করবে না।

(৬) মৌলিক স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি: নয়া উদারনীতিবাদ এর মৌলিক স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি প্রদান করেছেন। মার্কিন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জন রলস ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দে তাঁর ‘Political Liberalism’ গ্রন্থে বলেছেন যে, ন্যায় সম্পর্কিত ধারণার প্রথম নীতি হল সকলের জন্য সমান মৌলিক স্বাধীনতা। তাঁর মতে, ব্যাপক মৌলিক স্বাধীনতায় প্রতিটি মানুষের সমান অধিকার থাকবে। মৌলিক স্বাধীনতাগুলি হল বাক ও মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা, বিচার বুদ্ধি ও বিবেকের স্বাধীনতা, ভােটদানের স্বাধীনতা, সরকারি কাজে অংশগ্রহণের স্বাধীনতা, ব্যক্তিগত সম্পত্তি ভােগদখলের স্বাধীনতা ইত্যাদি। তার মতে, সামাজিক মূল্যবােধগুলি যেমন— স্বাধীনতা ও সুযােগ, আয় ও সম্পদ এবং আত্মমর্যাদার উপাদানগুলি সমানভাবে পরিবেশন করতে হবে। তবে নয়া উদারনীতিবাদ যেভাবে জনগণতন্ত্রের সঙ্গে সাযুজ্য সম্পাদন এবং যুক্তিবাদের সঙ্গে মানবতাবাদী ধর্মের সংযােগসাধন করেছে তা উল্লেখযােগ্য।

নয়া উদারনীতিবাদের জনক কে

নয়া উদারনীতিবাদ হল রাষ্ট্রতত্ত্বে অতীতের উদারনীতিবাদের পুনরুত্থান। এ হল উদারনীতিবাদের মুক্তি বা ‘লিবারটারিয়ানিজম’ (Libertarianism)। উদারনীতিবাদের এই সংশোধিত ভাষ্যই হল নয়া উদারনীতিবাদ। এই নয়া উদারনীতিবাদের প্রবক্তা হিসাবে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলেন হায়েক (F. A. Hayak), বারলিন (Isaiah Berlin), ফ্রীডম্যান (Milton Friedman), রলস (John Rawls), নজিক (Robert Nozick) প্রমুখ।

আরো অন্যান্য সরকারি স্কিম সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | উদারনীতিবাদ

Q1. উদারনীতিবাদ কি

Ans – উদারনীতিবাদের সাধারণ অর্থ হলো রাষ্ট্রীয় কতৃত্ববাদ এর বিরুদ্ধে ব্যক্তিস্বাধীনতা নীতি প্রতিষ্ঠা করা। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হব হাউসের মতে উদারনীতিবাদ হলো এমন একটি মতবাদ যেখানে প্রতিটি মানুষের স্বাধীনতা জীবনের কণ্ঠস্বর তাদের চিন্তা বিকাশ-এ বিকশিত হয়। উদারনীতিবাদের প্রধান ও প্রতিপাদই হলো স্বাধীনতা।

Q2. উদারনীতিবাদের দুজন মুখ্য প্রবক্তা কে

Ans – নয়া উদারনীতিবাদের দুজন প্রবক্তার নাম হলেন: জহন রলস (John Rawls)
রবার্ট নোজিক (Robert Nozick)।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।