উপসর্গ কাকে বলে

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

উপসর্গ কাকে বলে?, উপসর্গ কাকে বলে উদাহরণ দাও

যে সকল অব্যয়সূচক শব্দাংশ শব্দ বা ধাতুর পূর্বে বসে, শব্দ বা ধাতুটির অর্থের পরিবর্তন ঘটায় বা বিভিন্ন অর্থবোধক শব্দ সৃষ্টিতে সাহায্য করে অথচ নিজে কোন অর্থ প্রকাশ করতে পারে না তাকে বলা হয় উপসর্গ ।

বা

যেসব বর্ণ বা বর্ণের সমষ্টি ধাতু এবং শব্দের পূর্বে বসে সাধিত শব্দের অর্থের পরিবর্তন, সম্প্রসারণ কিংবা সংকোচন ঘটায়, তাদেরকে বলা হয় উপসর্গ।

বা

বাংলা ভাষায় এমন কতগুলো অব্যয়সূচক শব্দাংশ রয়েছ, যা স্বাধীন পদ হিসেবে বাক্যে ব্যবহৃত হতে পারে না। এগুলো শব্দের আগে বসে অর্থের পরিবর্তন করে।

যেসব অব্যয়সূচক শব্দাংশ শব্দের আগে যুক্ত হয়ে শব্দের অর্থের পরিবর্তন ঘটায় সেগুলোকে উপসর্গ বলে।

যেমনঃ প্র+বাদ= প্রবাদ, অপ+কার=অপকার, অধি+কার=অধিকার, আ+কার=আকার ইত্যাদি।

উপসর্গ’ কথাটির মূল অর্থ ‘উপসৃষ্ট’। এর কাজ হলো নতুন শব্দ গঠন করা। উপসর্গের নিজস্ব কোন অর্থ নেই, তবে এগুলো অন্য শব্দের সাথে যুক্ত হয়ে বিশেষ অর্থ প্রকাশ করে থাকে। মনে রাখতে হবে, উপসর্গ সব সময় মূল শব্দ বা ধাতুর পূর্বে যুক্ত হয়।

উপসর্গ কাকে বলে কত প্রকার, উপসর্গ কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি, উপসর্গ কয়টি ও কি কি

উপসর্গকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা হয় যথা

(১) বাংলা উপসর্গ,

(২) সংস্কৃতি উপসর্গ,

(৩) বিদেশ উপসর্গ।

খাঁটি বাংলা উপসর্গ :

বাংলায় আর্যদের আসার আগে যেসব জনজাতি বসবাস করত তাদের ভাষা থেকে যেসব উপসর্গের উৎপন্ন হয়ে বাংলা ভাষায় এসে ব্যবহৃত হয়েছে সেইসব উপসর্গকে দেশি বা খাঁটি বাংলা উপসর্গ বলা হয়।

যেমন: অ, অঘা, কু, অজ, অনা, বি, নি আ, আড়, আন, আব, ইতি, উন(উ), কদ, পাতি, ভর, নমরাম,স সা, সু, হা। উদাহরণ:

এগুলো হলো— অ, অঘা, অজ, অনা, আ, আত, আন, আব, ইতি, ওন, কদ, কু, নি, পাতি, বি, তব, রাম, স, সা, সু, হা।

বাংলা উপসর্গ মোট ২১টি। 

উদাহরণ

অ – অচেনা, অজানা, অকাজ, অবেলা, অফুরন্ত ইত্যাদি ।

আ – আচমকা, আকাল, আগাছা, আকাট ইত্যাদি ।

অনা – অনাবৃষ্টি, অনামুখ, অনাদর, অনাচার ইত্যাদি ।

কু – কুদৃষ্টি, কুকাজ, কুজন, কুসঙ্গ, কুকথা ইত্যাদি ।

সু – সুজন, সুন্দর, সুখবর, সুনজর ইত্যাদি ।

না – নারাজ, নামঞ্জুর, নাবালক ইত্যাদি ।

নি – নিখরচা, নিটোল, নির্জলা ইত্যাদি ।

বি – বিপদ, বিপথ, বিদেশ, বিজাত ইত্যাদি ।

পাতি – পাতিলেবু, পাতিহাঁস ইত্যাদি ।

হা – হাঘরে, হাহুতাশ, হাভাতে ইত্যাদি ।

ভর – ভরপেট, ভরদুপুর, ভরসন্ধে ইত্যাদি ।

রাম – রামদা, রামছাগল, রামধোলাই ইত্যাদি ।

সংস্কৃত বা তৎসম উপসর্গ, সংস্কৃত উপসর্গ কাকে বলে

যে সমস্ত উপসর্গগুলি সংস্কৃত ভাষা থেকে এসে বাংলা ভাষায় ব্যবহার যোগ্য হচ্ছে সেই সকল উপসর্গগুলিকে বলা হয় সংস্কৃত বা তৎসম উপসর্গ। এই সংস্কৃত বা তৎসম উপসর্গের সংখ্যা হল 20 টি ।

যেমন : প্র, পরা, অপ, নি, অব , সম, নির, দূর, অনু, অভি, অতি, অতি, উৎ, সু, বি, উপ, অধি, পরি, আ, প্রতি এছাড়াও আরো এই উপসর্গ সংখ্যা আছে যেমন-অন্তর, অন্তঃ ।

উদাহরণ- প্রবল, পরাজয়, উপহার প্রভৃতি ।

সংস্কৃত উপসর্গ: বাংলা ভাষায় ব্যবহূত সংস্কৃত উপসর্গ ২০টি। 

যেমন: প্র, পরা, অপ, সম, নি, অব, অনু, নির, দুর, বি, অধি, সু, উৎ, পরি, প্রতি, অভি, অতি, আপ, উপ, আ।

উদাহরণ: 

সংস্কৃত উপসর্গ একমাত্র ধাতুর অর্থাৎ ক্রিয়ার মূলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে নতুন শব্দ গঠন করে । যেমন —

প্র – প্রখ্যাত, প্রশংসা, প্রগতি, প্রকাশ, প্রখর ইত্যাদি ।

পরা – পরাজয়, পরাক্রান্ত, পরামর্শ, পরাক্রম, পরাজিত ইত্যাদি ।

অপ – অপকর্ম, অপঘাত, অপচয়, অপহরণ, অপবাদ ইত্যাদি ।

সম্ – সমাদর, সংস্কার, সংগত, সংকলন, সংস্কৃত ইত্যাদি ।

নি – নিগ্রহ, নিয়োগ, নিহত, নিবাস, নিদান ইত্যাদি ।

অব – অবনতি, অবসর, অবসাদ, অবকাশ, অবগত ইত্যাদি ।

অনু – অনুতাপ, অনুগত, অনুমান, অনুভব, অনুরোধ  ইত্যাদি ।

নিঃ – নির্ণয়, নির্গমন, নির্দেশ, নির্গত, নির্দয় ইত্যাদি ।

বিদেশি উপসর্গ, বিদেশি উপসর্গ কাকে বলে

বিদেশিদের আগমনের ফলে এদেশের মানুষের মধ্যে কথাবার্তার আদান প্রদানের মাধ্যমে বিদেশি ভাষা থেকে যেসব উপসর্গগুলি বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হয়েছে সেগুলিকে বিদেশি উপসর্গ বলা হয়।

যেমন: গর, ফি, দর, খাস,হর, বে, ব, বধ, নিস, বর, হেড, ফুল, সাব, হেড, হাফ, মিনি।উদাহরণ- গরমিল, ফিবছর, বধমেজাজ, ফুলমোজা,

বাংলা ভাষায় ব্যবহূত বিদেশি উপসর্গের মধ্যে ফরাসি, ইংরেজি উপসর্গের ব্যবহার বেশি দেখা যায়।

বিদেশি উপসর্গ মোট ১৯টি। 

বাংলা ভাষায় বহু বিদেশি শব্দ রয়েছে তার জন্য বিদেশি উপসর্গ পড়া প্রয়োজন । যেমন—

গর – গরহাজির, গরহজম, গরমিল ইত্যাদি ।

ফি – ফিরোজ, ফিবছর, ফিহপ্তা, ফিসন ইত্যাদি ।

বদ – বদমেজাজ, বদহজম, বদনাম ইত্যাদি ।

বে – বেদখল, বেরসিক, বেনজির, বেকায়দা, বেইমান ইত্যাদি ।

হর – হরদিন,  হররোজ, হরবোলা ইত্যাদি ।

নিম – নিমরাজি, নিমফুল ইত্যাদি ।

খাস – খাসমহল, খাসকামরা, খাসতালুক ইত্যাদি ।

হেড – হেডক্লার্ক, হেডমাস্টার, হেডপণ্ডিত ইত্যাদি ।

ফুল – ফুলমোজা, ফুলহাত, ফুলবাবু ইত্যাদি ।

হাফ – হাফহাতা, হাফপ্যান্ট, ইত্যাদি ।

আম – আমজনতা, আমদরবার ইত্যাদি ।

যেমন

ফরাসি উপসর্গ

আম—আমদরবার। আমপাবলিক।

কার — কারখানা, কারসাজি, কারবার।

গর — গরমিল, গরহাজির।

বদ — বদনাম, বদমেজাজি, বদহজম ইত্যাদি।

ইংরেজি উপসর্গ:

ফুল — ফুলপ্যান্ট, ফুলবাবু, ফুলফ্রি।

হাফ — হাফশার্ট, হাফটিকিট, হাফফ্রি ইত্যাদি।

উপসর্গের বৈশিষ্ট্য :

  • উপসর্গগুলি এক প্রকারের অব্যয় সূচক শব্দাংশ বা শব্দ।
  • উপসর্গের কোন নিজস্ব অর্থ নেই।
  • উপসর্গের মূল কাজ অর্থবোধক শব্দ সৃষ্টি করা।
  • উপসর্গগুলি শব্দের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মূল অর্থের পরিবর্তন ঘটিয়ে অর্থের বিশিষ্টতা দান করে।

উপসর্গের কাজ কি

‘উপসর্গ’ কথাটির মূল অর্থ ‘উপসৃষ্ট’। এর প্রধান কাজ হলো নতুন শব্দ গঠন করা। উপসর্গের নিজস্ব কোন অর্থ নেই, তবে এগুলো অন্য শব্দের সাথে যুক্ত হয়ে বিশেষ অর্থ প্রকাশ করে থাকে।

এছাড়া অন্যান কাজ গুলি হলো: –

  • নতুন অর্থবোধক শব্দ তৈরি করে।
  • শব্দের অর্থের পূর্ণতা সাধিত করে।
  • শব্দের অর্থের সম্প্রসারণ ঘটায়।
  • শব্দের অর্থের সংকোচন ঘটায়।
  • শব্দের অর্থের পরিবর্তন ঘটায়।

উপসর্গ ও অনুসর্গ কাকে বলে

উপসর্গ :- যেসব অব্যয় বা শব্দখণ্ড কোনো ধাতুর বা শব্দের আগে বসে ধাতু বা শব্দের অর্থের পরিবর্তন ঘটায় বা নতুন অর্থ দান করে সেই অব্যয় বা শব্দখণ্ডকে উপসর্গ বলে । যেমন— আ – কার = আকার, প্র – কার = প্রকার, উপ – কার = উপকার, অপ-কার = অপকার, প্রতি – কার = প্রতিকার ইত্যাদি ।

অনুসর্গ :- যে সকল শব্দ বা অব্যয় বাক্যের মধ্যে অবস্থিত বিশেষ্য ও সর্বনাম পদের পরে আলাদাভাবে বসে শব্দ বিভক্তির কাজ করে তাদের অনুস্বর্গ বা পরসর্গ বলে ।

উপসর্গ ও অনুসর্গের মধ্যে পার্থক্য, অনুসর্গ ও উপসর্গের পার্থক্য

উপসর্গঅনুসর্গ
উপসর্গ ধাতু ও শব্দের পূর্বে বসে।অনুসর্গ শব্দের পরে বসে।
উপসর্গ বিভক্তিরূপে ব্যবহৃত হতে পারে না।অনুসর্গ বিভক্তিরূপে ব্যবহৃত হয়।
উপসর্গ স্বাধীন পদ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে না।অনুসর্গ কখনও কখনও স্বাধীন পদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
উপসর্গ অব্যয়সূচক শব্দাংশ।অনুসর্গ অব্যয় জাতীয় শব্দ।
উপসর্গ শব্দের অর্থের পরিবর্তন ঘটায়।অনুসর্গ শব্দের অর্থের কোনো পরিবর্তন ঘটায় না।
উপসর্গের নতুন শব্দ গঠনের ক্ষমতা আছে।অনুসর্গের নতুন শব্দ গঠনের ক্ষমতা নেই।
উপসর্গের নিজস্ব অর্থ নেই।অনুসর্গের নিজস্ব অর্থ আছে।
উপসর্গ ও অনুসর্গের মধ্যে পার্থক্য
আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | উপসর্গ কাকে বলে

Q1. উপসর্গ দিয়ে শব্দ গঠন

১. নিচের কোনটি উপসর্গ যোগে গঠিত শব্দ?
ক. ভিখারি
খ. প্রবীণ
গ. সেলাই
ঘ. বাবুয়ানা
উত্তর : প্রবীণ

২. নিচের কোন শব্দে অপূর্ণ অর্থে ‘না’ উপসর্গ ব্যবহৃত হয়েছে?
ক. নাহক
খ. উপকূল
গ. নালায়েক
ঘ. নিম্ন
উত্তর : নালায়েক

৩. ঈষৎ অর্থ প্রকাশ করছে কোন উপসর্গ যুক্ত শব্দটি?
ক. আখাম্বা
খ. অনভিজ্ঞ
গ. আরক্ত
ঘ. অনভিজ্ঞ
উত্তর : আরক্ত

৪. নিচের কোনটি উপসর্গ?
ক. গুলো
খ. উপ
গ. টা
ঘ. ও
উত্তর : উপ

৫. ‘পাতি’ উপসর্গটি কোন অর্থে ব্যবহার করা হয়?
ক. বিপরীত
খ. শূন্য
গ. ছোট
ঘ. নিম্ন
উত্তর : ছোট

Q2. বাংলা উপসর্গ মনে রাখার কৌশল

Ans – সংস্কৃত উপসর্গ ২০ টি, বাংলা উপসর্গ ২১ টি।  এই দুই ধরনের উপসর্গের মধ্যে ৪ টি কমন রয়েছে। অর্থাৎ এমন চারটি উপসর্গ যারা সংস্কৃত ও বাংলা উভয় ক্ষেত্রে আছে। 
এই চারটি হলো- বি, নি, সু, আ।
অনেক সময় বাংলা কয়টি এবং সংস্কৃত কয়টি তাও গরমিল হয়ে যায়। এজন্যও একটি ছন্দ আছে। এক্ষেত্রে বলা যায় “বাংলার মানুষ কথা বলে বেশি।”
আর এ থেকেই বোঝা যায় বাংলা উপসর্গও বেশি। মানে বাংলা ২১ হলে, সংস্কৃত ২০ টি।

Q3. বিদেশি উপসর্গ কাকে বলে

Ans – বিদেশী উপসর্গ মূলত তিন প্রকার যথা- 1. আরবি উপসর্গ, ফারসি উপসর্গ, ইংরেজি উপসর্গ।

আরবি উপসর্গ : আম , খাস, লা, গর, উদাহরণ- আমদরবার, খাসমহল, লাজওয়াব, গরমিল।

ফারসি উপসর্গ : কার, দর, না, নিম ,ফি,বধ উদাহরণ – কারখানা, দরখাস্ত, নালায়েক, নিমবাজি, ফি।

ইংরেজি উপসর্গ : ফুল, হিফ, হেড, সাব উদাহরণ- ফুলহাতা, হাফহাতা, হেডমাস্টার, সাব ইন্সপেক্টর।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।