বিশেষণ কাকে বলে, বিশেষণ পদ কাকে বলে, বিশেষণ পদের উদাহরণ

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

বিশেষণ কাকে বলে

যে পদ বিশেষ্য, সর্বনাম এবং ক্রিয়াপদের অবস্থা, দোষ, গুণ, সংখ্যা, পরিমাণ প্রভৃতি উল্লেখ করে, তাকেই বিশেষণ পদ বলে।

বিশেষণ পদের উদাহরণ – ভাঙা ঘর, অন্ধকার রাত, চলন্ত গাড়ি – এই উদাহরণ গুলোর মধ্যে ভাঙা, অন্ধকার, চলন্ত এই পদগুলো বিশেষণ পদ।

এগুলো ঘর, রাত, গাড়ি বিশেষ্য পদের পূর্বে বসে বিশেষ্য পদগুলোকে বিশেষিত করেছে। এ ধরনের উদাহরণগুলো হলো বিশেষ্যের বিশেষণ।

বিশেষণের গঠন পদ্ধতি

বিভিন্ন ভাবে বিশেষণ গঠিত হতে পারে। যেমন –

  • ক্রিয়াজাত – খাবার পানি, অনাগত দিন, হারানো সম্পতি।
  • অব্যয়জাত – বড়লোক, আচ্ছা মানুষ, উপরি দেন-পাওনা। 
  • সর্বনামঙ্গাত – কোথা-কার কে, কবেকার গল্প, স্থায়ী ঠিকানা।
  • সমাসসিদ্ধ – আনহারা, চৌচালা ঘর, বেকার।
  • অনুকার অন্যয়জাত – টসটসে ফল, তকতকে মেঝে, কলকনে শীত, শনশনে হাওয়া, পিকিধিকি আগুন।
  • কৃদন্ত – কৃতী সন্তান, অতীত কাল, জানাশোনা মানুষ, শায়ে-চলা পথ।
  • তদ্ধিতান্ত – মেঠো পথ, জাতীয় সম্পদ, নৈতিক বল উপসর্গযুক্ত – অপহৃত সম্পদ, নির্জলা মিথ্যে, নিখুঁত কাজ।
  • বিদেশি – লাওয়ারিশ কার, দরপত্তনি তালুক, লাখেরাজ দলিল, নাস্তানাবুদ অবস্থা।

বিশেষণের প্রকারভেদ

বিশেষণ পদকে প্রধানত দুটি শ্রেনীতে ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা-

  1. নাম বিশেষণ এবং
  2. ভাব বিশেষণ।

নাম বিশেষণ কয় প্রকার

নাম বিশেষণকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

  1. বিশেষ্যের বিশেষণ এবং
  2. সর্বনামের বিশেষণ।

অন্যদিক থেকে আবার নাম বিশেষণকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা

  • রূপবাচক – কালো মেঘ, নীল আকাশ, সবুজ মাঠ।
  • গুণবাচক – দক্ষ কারিগর, ঠাণ্ডা হাওয়া, চৌকস লোক।
  • অবস্থাবাচক – মোটা মেয়ে, রোগা ছেলে, তাজা মাছ, খোঁড়া পা।
  • সংখ্যাবাচক – শ টাকা, হাজার লোক, দশ দশা।
  • ক্রমবাচক – পঞ্চাশ পৃষ্ঠা, অষ্টম শ্রেণি, প্রথমা কন্যা।
  • পরিমাণবাচক – এক কেজি চিনি, তিন কিলোমিটার রাস্তা, বিঘাটেক জমি, দশ শতাংশ ভূমি, হাজার টনী জাহাজ। 
  • অংশবাচক – খোল আনা দখল, সিকি পথ, অর্ধেক সম্পত্তি।
  • উপাদানবাচক – কাঠের দরজা, পাথরের ঘর, কালো মাটি।
  • প্রশ্নবাচক – কেমন অবস্থা? কতদূর পথ?
  • নির্দিষ্টতা জ্ঞাপক – এই মেয়ে, ষোলই ডিসেম্বর ইত্যাদি।

ভাব বিশেষণ কয় প্রকার

ভাব বিশেষণকে আবার চার ভাগে ভাগে করা যায়। যথা-

  1. ক্রিয়া বিশেষণ,
  2. বিশেষণের বিশেষণ,
  3. অব্যয়ের বিশেষণ এবং
  4. বাক্যের বিশেষণ।

বিভিন্ন প্রকার বিশেষণের সংজ্ঞা

নাম বিশেষণ

যে বিশেষণ পদ সাধারণত কোনো বিশেষ্য বা সর্বনাম পদকে বিশেষিত করে, তাকেই বলা হয় নাম বিশেষণ।

বিশেষ্যের বিশেষণ

যে পদ বিশেষ্য পদের দোষ, গুণ, অবস্থা, সংখ্যা, পরিমাণ, ইত্যাদি প্রকাশ করে তাকে বিশেষ্যের বিশেষণ বলে।

যেমন – মেঘলা দিন, বুদ্ধিমান মানুষ, অসুস্থ লোক, অনেক মানুষ, ভালো ছাত্র-ছাত্রী।

সর্বনামের বিশেষণ

যে বিশেষণ পদ কোনো সর্বনাম পদের গুণ, প্রকৃতি ইত্যাদি বোঝায় তাকে সর্বনামের বিশেষণ বলে।

যেমন – বোকা তুমি, তাই ওদের কথা বিশ্বাস করলে। মূর্খ তুই, এ কথা কী বুঝবি।

ভাব বিশেষণ

যে পদ সাধারণত বিশেষ্য ও সর্বনাম পদ ভিন্ন অন্য কোনো পদকে বিশেষিত করে তাকেই ভাব বিশেষণ বলে।

ক্রিয়ার বিশেষণ

যে বিশেষণ পদ ক্রিয়ার গুণ, অবস্থা ইত্যাদি নির্ণয় করে তাকে ক্রিয়ার বিশেষণ বলে।

অথবা আমরা বলতে পারি, যে পদ ক্রিয়া সংগঠনের ভাব, কাল বা রূপ নির্দেশ করে, তাই ক্রিয়া বিশেষণ।

যেমন – সে তাড়াতাড়ি লেখে। মিনতি আস্তে আস্তে লেখে। বাতাস ধীরে বইছে। সে খুব তাড়াতাড়ি হাটল। পরে একবার এসো।

বিশেষণের বিশেষণ

যে বিশেষণ পদ অন্য বিশেষণ পদের গুণ বা অবস্থা প্রকাশ করে তাকে বিশেষণের বিশেষণ বলে।

অথবা আমরা বলতে পারি, যে পদ নাম বিশেষণ কিংবা ক্রিয়া বিশেষণকে সম্পূর্ণ রূপে বিশেষিত করে, তখন তাকে বিশেষণের বিশেষণ বলে।

যেমন – খুব গরম দুধ। নিতান্ত ভালো মানুষ। অতি বড়ো নিন্দুকেও একথা বলতে পারবে না। সামান্য একটু দুধ দাও, অতিশয় মন্দ কথা। রকেট অতি দ্রুত চলে।

অব্যয়ের বিশেষণ

কোনো পদ যখন কোনো অব্যয় পদের গুণ, অবস্থা, সংখ্যা প্রভৃতি উল্লেখ করে, তাকে অব্যয়ের বিশেষণ বলে।

অথবা আমরা বলতে পারি, যে ভাব বিশেষণ অব্যয় পদ বা অব্যয় পদের অর্থকে বিশেষিত করে, তখন তাকে অব্যয়ের বিশেষণ বলে।

যেমন – ঠিক নীচে, শত ধিক্, ঠিক ওপরে দেখতে পাবে। ধিক্ তারে, শত ধিক নির্লজ্জ যে জন।

বাক্যর বিশেষণ

কখনও কখনও কোনো বিশেষণ পদ একটি সম্পূর্ণ বাক্যকে বিশেষিত করে, তখন তাকে বাক্যে বিশেষণ বলা হয়।

যেমন – দুর্ভাগ্যক্রমে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দেশ আবার নানা সমস্যাজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। বাস্তবিকই আজ আমাদের কঠিন পরিশ্রমের খুবই প্রয়োজন।

বিশেষণের অভিশায়ন

বিশেষণ পদ যখন দুইবা ততোধিক বিশেষ্য পদের মধ্যে গুণ, অবস্থা, পরিমাণ প্রভৃতি বিষয়ে তুলনায় একের উৎকর্ষ বা অপকর্ষ বুঝিয়ে থাকে, তখন তাকে বিশেষণের অতিশায়ন বলে।

যেমন – যমুনা একটি দীর্ঘ নদী, পদ্মা দীর্ঘতর, কিন্তু মেঘনা বাংলাদেশের দীর্ঘতম নদী। সূর্য, পৃথিবী ও চন্দ্রের মধ্যে তুলনায় সূর্য বৃহত্তম, পৃথিবী চন্দ্রের চেয়ে বৃহত্তর এবং চন্দ্র পৃথিবী অপেক্ষা ক্ষুদ্রতর।

বিশেষণ পদ কাকে বলে

যে পদ বিশেষ্য, সর্বনাম এবং ক্রিয়াপদের অবস্থা, দোষ, গুণ, সংখ্যা, পরিমাণ প্রভৃতি উল্লেখ করে, তাকেই বিশেষণ পদ বলে।

বিশেষণ পদের উদাহরণ

১) আরিফ সাহেব সুখী ব্যক্তি – ব্যক্তির গুণ বোঝায়

২) পাকা আম খেতে মিষ্টি – আমের অবস্থা।

৩) নাসিম বিশাল সম্পত্তির অধিকারী – সম্পত্তির পরিমাণ।

বিশেষণ পদের শ্রেণীবিভাগ

বিশেষণ পদ পাঁচ প্রকার। যথাঃ

  • (ক) বিশেষ্যের বিশেষণ,
  • (খ) বিশেষণের বিশেষণ,
  • (গ) সর্বনামের বিশেষণ,
  • (ঘ) অব্যয়ের বিশেষণ
  • (ঙ) ক্রিয়ার বিশেষণ। 

বিশেষ্যের বিশেষণ : যে পদ বিশেষ্য পদের দোষ, গুণ, অবস্থা ইত্যাদি প্রকাশ করে তাকে বিশেষ্যের বিশেষণ বলে। যেমন- ভাল মানুষ, লাল ফুল ইত্যাদি।

বিশেষণের বিশেষণ : যে বিশেষণ পদ অন্য কোনো বিশেষণ পদের দোষ, গুণ, অবস্থা ইত্যাদি প্রকাশ করে তাকে বিশেষণের বিশেষণ বলে। যেমন- কাঁঠালটি খুব মিষ্টি।

সর্বনামের বিশেষণ : যে বিশেষণ পদ অন্য কোনো বিশেষণ পদকে বিশেষিত করে তাকে সর্বনামের বিশেষণ বলে। যেমন- তিনি সুখি, সে পরিশ্রমী।

ক্রিয়া বিশেষণ : যে বিশেষণ পদ ক্রিয়ার গুণ বা অবস্থা প্রকাশ করে তাকে ক্রিয়া বিশেষণ বলে। যেমন- তাড়াতাড়ি খাও, ধীরে চল ইত্যাদি।

অব্যয়ের বিশেষণ : যে বিশেষণ পদ কোনো অব্যয় পদকে বিশেষভাবে প্রকাশ করে তাকে অব্যয়ের বিশেষণ বলে। যেমন- এ জামাটা প্রায় তোমার জামার মতো।

ক্রিয়া বিশেষণ কাকে বলে

যে শব্দ ক্রিয়াকে বিশেষিত করে, তাকে ক্রিয়া বিশেষণ বলে।

ক্রিয়াবিশেষণ বলতে সেসব পদ বা শব্দকে বোঝায়, যা ক্রিয়াপদকে বিশেষিত করে। সাধারণত এই ধরনের পদ ক্রিয়া বা কাজের স্থান, সময়, অবস্থা নির্দেশ করে।

ক্রিয়া বিশেষণ এর উদাহরণ

নিচের বাক্য তিনটির নিম্নরেখ শব্দগুলাে ক্রিয়া বিশেষণের উদাহরণ:

  • ছেলেটি দ্রুত দৌড়ায়।
  • লোকটি ধীরে হাঁটে।
  • মেয়েটি গুনগুনিয়ে গান করছে।

অনেক সময়ে বিশেষ্য ও বিশেষণ শব্দের সঙ্গে ‘এ’, ‘তে’ ইত্যাদি বিভক্তি এবং ‘ভাবে’, ‘বশত’, ‘মতাে ইত্যাদি শব্দাংশ যুক্ত হয়ে ক্রিয়াবিশেষণ তৈরি হয়। যেমন – ততক্ষণে, দ্রুতগতিতে, শান্তভাবে, ভ্রান্তিবশত, আচ্ছামতাে ইত্যাদি।

ক্রিয়া বিশেষণ চেনার উপায়

যে শব্দ ক্রিয়ার ভাব, কাল ও রূপ নির্দেশ করে, তাকে ক্রিয়া-বিশেষণ বলা হয়।এছাড়া একটি শব্দের ভাব অন্য শব্দের যুক্ত হয়ে যদি পরের কোনো শব্দকে বিশেষিত করে তখনও ক্রিয়া বিশেষণ হয়। এই জাতীয় শব্দের শেষে এ প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন অকুণ্ঠ প্রাণে। এখানে অকুণ্ঠ শব্দটি প্রাণ শব্দের সাথে যুক্ত হয়ে তৈরি হয় তৈরি হয় অকুণ্ঠ প্রাণ। এই শব্দের সাথে এ যুক্ত হয়ে তৈরি হয় অকুণ্ঠ প্রাণে। এই জাতীয় শব্দ হতে পারে।

ভাব বিশেষণ কয় প্রকার

যে সকল শব্দ বিশেষ্য ও সর্বনাম ব্যতীত অন্য পদ গুলোকে বা বাক্যকে বা উভয়ের অর্থকে বিশেষিত করে, তাদেরকে ভাব-বিশেষণ বলা হয়। 

ভাব বিশেষণ চার প্রকার। যথাঃ

  • ১. ক্রিয়া বিশেষণ।
  • ২. বিশেষণের বিশেষণ বিশেষণীয় বিশেষণ।
  • ৩. অব্যয়ের বিশেষণ।
  • ৪. বাক্যের বিশেষণ।
আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | বিশেষণ

Q1. মন্ত্র বিশেষণ রূপ কি

Ans – মন্ত্র বিশেষণ রূপ হল মন্ত্রপূত বা মন্ত্রণা।

Q2. শিক্ষা বিশেষণ রূপ কি

Ans – শিক্ষার বিশেষণ রূপ হল শিক্ষিত।

Q3. বায়ু বিশেষণ রূপ কি

Ans – বায়ুর বিশেষণ রূপ হলো বায়ব।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।