প্রলয়োল্লাস কবিতার প্রশ্ন উত্তর

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

প্রলয়োল্লাস, প্রলয়োল্লাস কবিতা

কবি কাজী নজরুল ইসলাম প্রলয়োল্লাস কবিতা

তোরা সব জয়ধ্বনি কর!
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!
ঐনূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখির ঝড়
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!
আস্‌ল এবার অনাগত প্রলয়–নেশায় নৃত্য–পাগল,
সিন্ধু–পারের সিংহ–দ্বারে ধমক হেনে ভাঙল আগল!
মৃত্যু–গহন অন্ধকুপে, মহাকালের চন্ড–রূপে ধূম্র–ধূপে
বজ্র–শিখার মশাল জ্বেলে আসছে ভয়ংকর!
ওরে ওই হাসছে ভয়ংকর!
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!
দ্বাদশ রবির বহ্নি–জ্বালা ভয়াল তাহার নয়ন–কটায়,
দিগন্তরের কাঁদন লুটায় পিঙ্গল তার ত্রস্ত জটায়!
বিন্দু তাহার নয়ন –জলে
সপ্ত মহাসিন্ধু দোলে
কপোল–তলে!
বিশ্ব –মায়ের আসন তারই বিপুল বাহুর ‘পর –
হাঁকে ঐ “জয় প্রলয়ংকর!”
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!
মাভৈঃ, ওরে মাভৈঃ, মাভৈঃ, মাভৈঃ জগৎ জুড়ে প্রলয় এবার ঘনিয়ে আসে
জরায়–মরা মুমূর্ষুদের প্রাণ–লুকানো ঐ বিনাশে।
এবার মহা–নিশার শেষে
আসবে ঊষা অরুণ হেসে
করুণ্ বেশে!
দিগম্বরের জটায় লুটায় শিশু–চাঁদের কর!
আলো তার ভরবে এবার ঘর!
তোরা সব জয়ধ্বনি কর!!

প্রলয়োল্লাস কবিতার ব্যাখ্যা, প্রলয়োল্লাস কবিতার বিষয়বস্তু, প্রলয়োল্লাস কবিতার প্রেক্ষাপট, প্রলয়োল্লাস কবিতার সারাংশ, প্রলয়োল্লাস কবিতার মূলভাব

উত্তরঃ বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘ অগ্নিবীণা ‘ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতাটি আসলে কবির জীবন উল্লাসের কবিতা। কবিতায় মোট উনিশ বার ‘ তোরা সব জয়ধ্বনি কর ’ এই আহ্বানসূচক পঙ্ক্তিটি উচ্চারিত হয়েছে , যা বুঝিয়ে দেয় এই পত্তিটিকেই কবি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন।

শোষণ – বঞ্চনা , পরাধীনতার নাগপাশ ছিন্ন করে জীবনের যে জাগরণ ঘটে , স্বাধীনতা ও সাম্যের দ্বারা যার প্রতিষ্ঠা হয় , তাকেই কবি স্বাগত জানিে ন। গ্রন্থাকারে যে বছর প্রলয়োল্লাস কবিতাটি প্রকাশ পায় ওই একই বছরে ‘ ধূমকেতু ‘ পত্রিকার একটি সংখ্যায় নজরুল লেখেন , “ পূর্ণ স্বাধীনতা পেতে হলে সকলের আগে আমাদের বিদ্রোহ করতে হবে। সকল কিছু নিয়ম – কানুন , বাঁধন – শৃঙ্খল ও মানা – নিষেধের বিরুদ্ধে। ” প্রলয়োল্লাস কবিতায় দেখা যায়

“ সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে ধমক হেনে ভাঙল আগল। ” অর্থাৎ এই পঙ্ক্তিটি থেকে বোঝা যায় কবি স্পষ্টই বিদ্রোহের কথা বলেছেন। প্রবল তেজ , বিপর্যয় নিয়ে যে বিপ্লবী শক্তির আগমন ঘটে তা প্রাথমিকভাবে শঙ্কিত করতে পারে , কিন্তু বিশ্বমায়ের আসন সে – ই পাতে। কবি দেখেছেন—

“ অন্ধকারার বন্ধ কূপে

দেবতা বাধা যজ্ঞ – যূপে ”

এই দেবতা এখানে স্বাধীনতার প্রতীক। এখান থেকে মুক্ত হয়ে তার আগমনের সময় হয়ে গিয়েছে। তাই ‘ প্রলয়োল্লাস ’ কবিতায় কবি বলেছেন , ধ্বংস দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আসলে প্রাণহীন অসুন্দরকে বিনাশ করতেই এই ধ্বংস। এর পরেই চিরসুন্দরের প্রতিষ্ঠা ঘটবে। তাকেই স্বাগত জানানোর জন্য সকলকে আহ্বান করেছেন কবি।

প্রলয়োল্লাস কবিতার নামকরণের সার্থকতা

উত্তরঃ কবি নজরুল তাঁর সমগ্র জীবন , কর্ম ও কাব্যকীর্তি দিয়ে সমস্ত শোষণ , পীড়ন , বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন । তাঁর প্রায় অধিকাংশ কবিতাই প্রতিবাদী কবিতা । তবে আলোচ্য প্রতিবাদী কবিতা ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতাটির প্রতিবাদী কবিতা হিসেবে একটি বিশেষ স্থান রয়েছে । কারণ কাব্যজীবনের শুরুতে যে – দুটি কবিতা নজরুলকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছিল , তার একটি হল ‘ প্রলয়োল্লাস ’ ও অপরটি ‘ বিদ্রোহী ‘ । বিদ্রোহী কবি একদিকে ‘ বিদ্রোহী ‘ কবিতায় নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন এই বলে

‘ মহা – বিদ্রোহী রণক্লান্ত

আমি সেই দিন হব শান্ত ,

যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন রোল

আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না ।

অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ

ভীম রণভূমে রণিবে না

বিদ্রোহী রণ – ক্লান্ত

আমি সেই দিন হব শান্ত ।

‘ অন্যদিকে ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ – এ বিবরণ দিচ্ছেন ‘্যামর তাহার কেশের দোলায় ঝাপটা মেরে গগন দুলায় , / সর্বনাশী জ্বালামুখী ধূমকেতু তার চামর ঢুলায় ।

” কবির অসাম্প্রদায়িকতা , ভারতীয়ত্ব , দেশাত্মবোধ , স্বাধীনতাপ্রিয়তা তাঁর অন্যান্য কবিতার মতো ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ – কেও জারিত করেছে । প্রলয় তথা বিপ্লবের আগমনি তাঁর লেখনীকে করেছে জ্বালাময়ী ; প্রতিবাদের সুর শব্দচয়নে , ছন্দের বিভঙ্গে কবিতাটি প্রতিবাদী কবিতা প্রলয়োল্লাসেও তো বটেই , বিদ্রোহের বাণীরূপ হয়ে উঠেছে । বিশ্বমানবতার মূর্ত প্রতীক নজরুল আহ্বান জানিয়েছেন ‘ তোরা সব জয়ধ্বনি কর । ‘ এ জয়ধ্বনি বিনাশের নয় । এ জয়ধ্বনি বিনাশ – পরবর্তী নতুন আশার , যা রূপকথার ফিনিক্স পাখির মতো অগ্নিময় ধ্বংসস্তূপ থেকে প্রাণের বার্তাকে সঞ্চারিত করে ।

প্রলয়োল্লাস কবিতার উৎস

উত্তরঃ প্রলয়োল্লাস হল ১৯২১ সালে রচিত একটি দাদরা তালের বিদ্রোহাত্মক বাংলা গান, যা এর প্রথম চরণ তোরা সব জয়ধ্বনী কর নামেও পরিচিত। গানটির রচয়িতা এবং সুরকার ছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ১৯২২ সালে প্রকাশিত নজরুলের প্রথম কাব্যগ্রন্থ অগ্নিবীণায় এটি প্রকাশিত হয়।

প্রলয়োল্লাস ব্যাসবাক্য সহ সমাস

উত্তরঃ

  • প্রলয়ের উল্লাস – সম্বন্ধ তৎপুরুষ
  • প্রলোয়ার নিমিরতো উল্লাশ – নিমিতো তোৎপুরুষ
  • প্রলয় জনিত উল্লাস- মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস

প্রলয়োল্লাস কবিতার MCQ, প্রলয়োল্লাস কবিতার গুরুত্বপূর্ণ বহু বিকল্প ভিত্তিক প্রশ্ন উত্তর (MCQ)

“আসছে এবার অনাগত প্রলয়-নেশার নৃত্য –

(ক) রত

(খ) দূত

(গ) পাগল

(ঘ) মাতন

উত্তরঃ (গ) পাগল

“বজ্ৰশিখার মশাল জ্বেলে আসছে –

(ক) নতুন

(খ) দুর্নিবার

(গ) শকট’

(ঘ) ভয়ংকর

উত্তরঃ (ঘ) ভয়ংকর

“ঝামর তাহার কেশের দোলায় ঝাপটা মেরে গগন –

(ক) মাতায়

(খ) জ্বালায়

(গ) দুলায়

(ঘ) নাচায়

উত্তরঃ (গ) দুলায়

“সর্বনাশী জ্বালামুখী ধুমকেতু তার চামর –

(ক) দোলায়

(খ) বুলায়

(গ) ঢুলায়

(ঘ) নাচায়

উত্তরঃ (গ) ঢুলায়

“অট্টরোলের হট্টগোলে স্তন্ধ –

(ক) বরাকর

(খ) চরাচর

(গ) গগন

(ঘ) অনন্তর

উত্তরঃ (খ) চরাচর

“জগৎ জুড়ে কী ঘনিয়ে আসে? –

(ক) ঝঞা

(খ) প্রলয়

(গ) মেঘ

(ঘ) বৃষ্টি

উত্তরঃ (খ) প্রলয়

“আসবে ঊষা অরুণ হেসে –

(ক) দারুণ বেশে

(খ) মোহন বেশে

(গ) করুণ বেশে

(ঘ) নবীন বেশে

উত্তরঃ (গ) করুণ বেশে

দিগম্বরের জটায় কে হাসে?

(ক) শিশু চাঁদের কর

(খ) পূর্ণ চাঁদের কর

(গ) অর্ধ চাদের কর।

(ঘ) ক্ষয়িত চাঁদের কর

উত্তরঃ (ক) শিশু চাঁদের কর

কবি সবাইকে কী করতে আহ্বান জানিয়েছেন?

(ক) বিপ্লব করতে

(খ) বিদ্রোহ করতে

(গ) প্রতিবাদ করতে

(ঘ) জয়ধ্বনি করতে

উত্তরঃ (ঘ) জয়ধ্বনি করতে

কবিতায় ব্যবহৃত ‘কেতন’ শব্দের অর্থ কী?

(ক) পতাকা

(খ) ঘর

(গ) নিবাস

(ঘ) ব্যজন

উত্তরঃ (ক) পতাকা

প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় কোন্ ঝড়ের কথা বলা হয়েছে?

(ক) টর্নেডো

(খ) ঘূর্ণি

(গ) কালবৈশাখী

(ঘ) ফাপি

উত্তরঃ (গ) কালবৈশাখী

কীসের দোলায় ঝামর ঝাপটা মেরে গগন দুলায়?

(ক) হাওয়ার

(খ) কেশের

(গ) মেঘের

(ঘ) জটার

উত্তরঃ (খ) কেশের

চামর চুলায় কে?

(ক) চন্দ্র

(খ) সূর্য

(গ) নক্ষত্র

(ঘ) ধূমকেতু

উত্তরঃ (খ) সূর্য

বিশ্বপাতার বক্ষ-কোলে কী ঝোলে? –

(ক) ফল

(খ) ফুল

(গ) মুণ্ডু

(ঘ) কৃপাণ

উত্তরঃ (ঘ) কৃপাণ

পিল এস্ত জটায় কী লুটায়? –

(ক) হাসি

(খ) আনন্দ

(গ) কাঁদন

(ঘ) বেদন

উত্তরঃ (গ) কাঁদন

কপোল’ শব্দের অর্থ কী? –

(ক) কপাল

(খ) গণ্ডদেশ

(গ) কাঠের পোল

(ঘ) কোনোটিই নয়

উত্তরঃ (খ) গণ্ডদেশ

জীবনহারা অ-সুন্দরকে ছেদন করতে আসছে –

(ক) নবীন

(খ) প্রবীণ

(গ) যুবা

(ঘ) শিশু

উত্তরঃ (ক) নবীন

প্রলয় কোথায় উদ্ধা ছুটায়? –

(ক) নীল খিলানে

(খ) জগৎজুড়ে

(গ) লাল খিলানে

(ঘ) দিগন্তে

উত্তরঃ (ক) নীল খিলানে

প্রলয়োল্লাস কবিতার অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর (SAQ)

‘ এই তো রে তার আসার সময়’- ‘ তার ‘ বলতে কার আসার সময়ের কথা বলা হয়েছে ?

উত্তরঃ নজরুলের ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় ‘ তার ‘ বলতে প্রলয়ংকারের আসার কথা বলা হয়েছে । পৃথিবীতে যখনই অস্তিত্বের সংকট ঘটেছে তখনই এই ‘ প্রলয় ‘ রুদ্ররূপে তা নিরসন করেছে ।

‘ প্রলয় নূতন সৃজন – বেদন ! ‘ — তাৎপর্য কী ?

উত্তরঃ সৃষ্টির আগে শিল্পী , অথবা শিশুর জন্মের আগে মা যে – বেদনা অনুভব করেন , কবিও তেমনি যুগান্তরের ইঙ্গিতবাহী এই আসন্ন প্রলয়ের মধ্যে সৃষ্টির যন্ত্রণাকে অনুভব করেছেন ।

‘ আসছে নবীন — নবীন কে ?

উত্তরঃ ‘ প্রলয়োল্লাস ’ কবি নজরুল ‘ নবীন ’ বলতে নবযুগের বার্তাবাহক মহাকাল , ভয়ংকর বা নবীন বিপ্লবী শক্তিকে বুঝিয়েছেন , যাদের হাত ধরে পৃথিবীতে আসবে নতুন যুগ ।

‘ ওই ভাঙা – গড়া খেলা যে তার— ভাঙা – গড়া খেলা বলতে কী বোঝ ?

উত্তরঃ ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় ‘ ভাঙা – গড়ার খেলা ’ বলতে কবি নজরুল ধ্বংস ও সৃষ্টির চক্রাকার আবর্তনকে বুঝিয়েছেন ।

বধুরা কেন প্রদীপ তুলে ধরবে ?

উত্তরঃ ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতা অনুসারে , যুগান্তরের অন্ধকারের বুক চিরে কাল – ভয়ংকর এগিয়ে আসে মানুষের আকাঙ্ক্ষিত মুক্তিবার্তা নিয়ে । কবি বধুদের প্রদীপ তুলে নিয়ে এই শক্তিকে বরণ করে নিতে বলেছেন ।

‘ আসছে এবার অনাগত প্রলয় – নেশার নৃত্য পাগল – ‘ নৃত্য পাগল ‘ কে ?

উত্তরঃ নজরুলের ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় ‘ নৃত্য পাগল ‘ বলতে , মুক্তিগামী মানুষের বৈপ্লবিক সত্তাকে কবি প্রলয়রূপী নটরাজের নৃত্যপরায়ণ রুপের সঙ্গে তুলনা করেছেন ।

‘ ওই নূতনের কেতন ওড়ে — ‘ নূতনের কেতন ওড়া বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন ?

উত্তরঃ ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতা অনুসারে , কালবৈশাখী ঝড় যেমন রুক্ষ – শুষ্ক ও জীর্ণ প্রকৃতির বুকে নতুন প্রাণের উদ্দামতা বহন করে আনে , কবি সেভাবেই পরাধীন দেশের প্রাচীন অচলায়তনকে ভেঙে ‘ নূতন ‘ জীবন ও মূল্যবোধের সূচনাবার্তা ঘোষণা করতে চেয়েছেন ।

‘ কালবোশেখির ঝড়- কীসের প্রতীক ?

উত্তরঃ কবি কাজী নজরুল ইসলাম ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় ‘ কালবোশেখির ঝড় ‘ – কে নতুন জীবন ও মূল্যবোধের প্রতীক বলে মনে করেছেন ।

প্রলয়নেশার নৃত্য পাগল কীসের জন্য আসছেন ?

উত্তরঃ প্রলয় – নেশার নৃত্য পাগল সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে অর্থাৎ সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজ শাসকের অন্যায় – অত্যাচারের অবসান ঘটাতে আসছেন ।

ওই আসে সুন্দর সু ‘ ওই আসে সুন্দর ’ – ‘ সুন্দর কীভাবে আসে ?

উত্তরঃ ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতা অনুসারে ‘ সুন্দর ’ , ‘ কাল ভয়ংকরের বেশে ‘ অর্থাৎ রুদ্ররূপী প্রলয়ের রূপ ধরে আসে ।

‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে কে আগল ভাঙল ?

উত্তরঃ কবি নজরুলের ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতা অনুসারে সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে ‘ প্রলয় – নেশার নৃত্য পাগল ‘ অর্থাৎ মুক্তিকামী ভারতীয়ের বিপ্লবী সত্তা আগল বা শৃঙ্খল ভেঙেছে ।

‘ দিগম্বরের জটায় হাসে শিশু – চাদের কর— ‘ দিগম্বর কে ?

উত্তরঃ কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতা থেকে গৃহীত উদ্ধৃতিটিতে ‘ দিগম্বর ’ বলতে মহাদেবকে বোঝানো হয়েছে ।

‘ এবার মহানিশার শেষে’— কী ঘটবে ?

উত্তরঃ ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতা অনুসারে ‘ মহানিশার শেষে ‘ অর্থাৎ পরাধীন দেশের অত্যাচার – অপমানের শেষে , ঊষার হাসি তথা মুক্তি সূর্যের প্রথম আলোয় জাতির জীবন নতুন করে উদ্ভাসিত হবে ।

“ তোরা সব জয়ধ্বনি কর । কার জয়ধ্বনি করতে বলা হয়েছে ?

উত্তরঃ কবি কাজী নজরুল ইসলাম ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় পরাধীন ভারতের মুক্তিকামী জনগণকে স্বপ্ন বা আশাপূর্ণকারী প্রলয়ের জয়ধ্বনি করতে বলেছেন ।

‘ সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?

উত্তরঃ কাজী নজরুল সিন্ধুপারের সিংহদ্বার বলতে সাগর তীরে অবস্থিত ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির দ্বারা শাসিত ভারতকে বুঝিয়েছেন ।

‘ মহাকাল ’ কী ?

উত্তরঃ ‘ মহাকাল ’ শব্দটির একটি অর্থ হল অনবচ্ছিন্ন কাল বা সময়প্রবাহ । কিন্তু পাঠ্য কবিতায় ‘ মহাকাল ’ হল প্রলয় সৃষ্টিকারী মহাদেবের ধ্বংসাত্মক রূপের প্রতীক । রুদ্ররূপী শিবের আরেক নাম হল মহাকাল ।

‘ ওরে ওই হাসছে ভয়ংকর।— ভয়ংকর হাসছে কেন ?

উত্তরঃ নজরুলের ‘ প্রলয়োল্লাসে ’ ‘ ভয়ংকর ’ শব্দটি রূপকার্থে ব্যবহৃত , যার অর্থ ধ্বংসকারী বিপ্লবীসত্তা । মহাকালের ‘ চণ্ডরূপী ‘ ভয়ংকর সকল অন্যায় – অত্যাচারকে বিনাশ করে নতুন যুগের সূচনা করার তৃপ্তিতে হাসছেন ।

‘ অট্টরোলের হট্টগোলে স্তব্ধ চরাচর- চরাচর স্তব্ধ কেন ?

উত্তরঃ ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় ভয়ংকরের আগমনে চারদিকে কলরোল ধ্বনিত হয়েছে । এই অট্টরোল মুক্তিকামী মানুষের মনে কোনো এক আসন্ন ঝড়ের ইঙ্গিত বহন করে আনে , তাই চরাচর স্তব্ধ ।

” ওরে ওই স্তব্ধ চরাচর- ‘ – ‘ চরাচর ‘ স্তব্ধ কেন ?

উত্তরঃ বিদ্রোহী কবি নজরুল ইসলাম রচিত ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় ধ্বংসের দেবতা প্রলংকর শিবের অট্টহাসির ভয়ংকর শব্দে বিশ্বচরাচর স্তব্ধ হয়ে পড়েছে । এই স্তব্ধতা মুক্তিকামী মানুষের মনে কোনো এক আসন্ন ঝড়ের ইঙ্গিত বহন করে আনে ।

‘ দ্বাদশ রবির বহ্নিজ্বালা ‘ বলতে কী বোঝানো হয়েছে ?

উত্তরঃ ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় নবযুগের বার্তাবাহী ভয়ংকর প্রলয় , একটি সূর্যের তেজ নয় , বারোটি সূর্যের ন্যায় দীপ্ত ও তীব্র । এই তীব্রতা বোঝাতেই উক্ত শব্দবন্ধটি ব্যবহৃত হয়েছে ।

‘ বিশ্বমায়ের আসন তারই বিপুল বাহুর পর— —অর্থ কী ?

উত্তরঃ কবির আহূত ‘ ভংয়কর ‘ এই বিশ্বের রক্ষাকর্তা । অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে সে শুভ শক্তির প্রতিষ্ঠা করবে , দেশমাতার আসন সুনিশ্চিত হবে । তাই কবি উক্ত উদ্ধৃতিটি করেছেন ।

প্রলয়োল্লাস কবিতার সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন ও উত্তর

‘ কাল – ভয়ংকরের বেশে এবার ওই আসে … ! – এমন উক্তি কার সম্পর্কে করা হয়েছে ? এমন উক্তির কারণ কী ?

উত্তরঃ ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় কবি নজরুল চিরসুন্দর বা চিরনবীন সম্পর্কে আলোচ্য উক্তিটি করেছেন ।

কবি নজরুল চিরবিদ্রোহী । তাই পরাধীন ভারতের মুক্তিকামী মানুষের অন্তরের বৈপ্লবিক শক্তিকে তিনি উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছেন । তাঁর বিশ্বাস জীর্ণ লোকাচার – প্রচলিত জড়তা – নিশ্চল প্রাণহীনতা উত্তির কারণ এবং দাসত্বের অবসান ঘটলেই গড়ে উঠবে নতুন জীবন । সুতরাং , বিনাশের ভয়াবহতার মধ্যেই লুকিয়ে আছে সত্য ও সুন্দরের বীজ । কবি ধ্বংসের মধ্যেই খুঁজে পেয়েছেন সৃষ্টির ব্যানা এবং যন্ত্রণা । সেজন্যেই তিনি সেই ভয়ংকর সুন্দরেরই বন্দনা গান গেয়েছেন ।

‘ তোরা সব জয়ধ্বনি কর।- ‘ তোরা ‘ কারা ? তাদের জয়ধ্বনি করতে বলা হচ্ছে কেন ?

উত্তরঃ নজরুল ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় কবি ‘ তোরা ’ বলতে , পরাধীন দেশের স্বাধীনতার প্রত্যাশী আপামর জনসাধারণকে বুঝিয়েছেন ।

ভারতবর্ষের পরাধীনতা কবি নজরুলের কাছে ভীষণ পীড়াদায়ক ছিল । তিনি সর্বদাই এই অবস্থার অবসান চাইতেন । তিনি বুঝেছিলেন কালবৈশাখীর মতো ভয়ংকর শক্তি কিংবা প্রলয় – নেশায় মত্ত মহাদেবের মতোই কেউ এসে এই অবস্থার অবসান ঘটাবে । তাই কবি ভারতীয়দের এই ধ্বংস ও সৃষ্টির দেবতার আগমনের উদ্দেশ্যে জয়ধ্বনি করার আহ্বান জানিয়েছেন ।

‘ আসছে এবার অনাগত প্রলয় – নেশার নৃত্য পাগল , -‘অনাগত ’ কে ? সে ‘ প্রলয় – নেশার নৃত্য পাগল ’ কেন ? অনাগত কে ?

উত্তরঃ ‘ অনাগত ’ শব্দটির আক্ষরিক অর্থ যা আসেনি । এক্ষেত্রে পরাধীনতার নাগপাশ থেকে আমাদের মুক্ত করতে পারে এমন শক্তির আগমন যে আসন্ন তা আশাবাদী কবি মনশ্চক্ষে প্রত্যক্ষ করেছেন । শিব বা রুদ্ররূপী এই শক্তিকেই কবি ‘ অনাগত ’ বলেছেন ।

‘ প্রলয় ’ ও ‘ নৃত্য পাগল ‘ শব্দ দুটির দ্বারা কবি শিবের বিধ্বংসী ও নটরাজরূপের কথা বলতে চেয়েছেন । কবির কাঙ্ক্ষিত অনাগত শক্তি অত্যাচারী ব্রিটিশ শক্তিকে ধ্বংসের ও মন্থনের দ্বারা আমাদের স্বাধীনতার নতুন সকাল উপহার দেওয়ার স্বপ্নে বিভোর ।

বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে আসছে ভয়ংকর ! -‘ভয়ংকর বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন ? তার আসার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো ।

উত্তরঃ নজরুল তাঁর ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতাতে ‘ ভয়ংকর ‘ বলতে ‘ ভয়ংকর ‘ — অর্থ নবযুগের বার্তাবহ প্রলয়রূপী বিপ্লব বা বিদ্রোহকে বুঝিয়েছেন । ‘ রুদ্ররূপী ‘ শিবকে তিনি এর প্রতীক রূপে কল্পনা করেছেন ।

‘ ভয়ংকর ‘ — অর্থ → অত্যাচারী ব্রিটিশের শাসনে ভারতবাসী স্থবির হয়ে গিয়েছিল । আর ভারতবর্ষ হয়ে গিয়েছিল অচলায়তন । কালের নিয়মে অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটবেই । সেই অচলায়তন ভাঙবে মানুষের সম্মিলিত বিপ্লবের দ্বারা । আশাবাদী কবি আসন্ন বিপ্লবের এই আছড়ে পড়া ঢেউকে ভয়ংকর প্রলয়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন ।

‘ মাভৈঃ মাভৈঃ ! জগৎ জুড়ে প্রলয় এবার ঘনিয়ে আসে— কবি ‘ মাভৈঃ ’ বলে কী জানাতে চেয়েছেন ? প্রলয় এসে কোন্ কাজ করবে বলে কবির মনে হয়েছে ?

উত্তরঃ ‘ মাভৈঃ ’ শব্দে কবির উত্তর বিদ্রোহী সত্তার অধিকারী কবি নজরুল তাঁর ‘ প্রলয়োল্লাস কবিতায় ‘ মাভৈঃ মাভৈঃ ‘ শব্দযুগলের ব্যবহার করেছেন , যার অর্থ ভয় কোরো না , অর্থাৎ নির্ভয়ে এগিয়ে চলো । পরাধীনতার অন্ধকার থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য প্রহর গণনারত ভারতবাসীকে কবি পুরাতনকে ধ্বংস করে নূতনের বিজয় পতাকা ওড়ানোর জন্য হৃদয়ে সাহস সঞ্চার করার কথা জানতে চাওয়া বলেছেন । মহাপ্রলয়ের ফলে পৃথিবীতে বারে বারে অশুভ শক্তি ধ্বংস হয়ে সৃষ্টির বীজ বপিত হয়েছে । প্রলয়ের ফলে দীর্ঘ পরাধীনতার শেষে স্বাধীনতার সূর্যালোকে ভারতবর্ষ উদ্ভাসিত প্রলয় যা কাজ করবে হয়ে উঠবে — এটাই কবির আশা ।

‘ জরায় মরা মুমূর্ষুদের প্রাণ – লুকানো ওই বিনাশে ? —পঙ্ক্তিটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও ।

উত্তরঃ বিপ্লব আসছে যোদ্ধার বেশে , নতুন সূর্যের সন্ধানে তার অগ্রগমন । কিন্তু এই অগ্রগতির পথে অনেক বাধা । বহু সংস্কার , বহু জরাগ্রস্ত , অন্ধ ও মুমূর্ষু মতবাদ এসে পথের গতি পঙক্তিটির তাৎপর্য শ্লথ করতে চায় । কিন্তু এসবকে , বিনাশ করে নতুন দিনের সন্ধানী আলোয় , প্রলয়রূপী বৈপ্লবিক সৃজন তার নিজের পথ করে নেবে । কবি নজরুলের ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতার প্রশ্নোধৃত অংশে কবি – কণ্ঠে এই ভাবনাই ব্যস্ত হয়েছে ।

‘ দিগম্বরের জটায় হাসে শিশু – চাদের কর —’দিগম্বরের জটা ’ ও ‘ শিশু – চাদের কর ’ – এই দুই চিত্রকল্পের মেলবন্ধনের স্বরূপ বুঝিয়ে দাও ।

উত্তরঃ নজরুল তাঁর কল্পনাশক্তির শিখরে পৌঁছেছেন ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতার প্রশ্নোস্তৃত অংশে । দিগম্বর অর্থাৎ দেবাদিদেব শিবের অন্য এক রূপ হল রুদ্র চণ্ডের সংহারক মূর্তি । অথচ তাঁরই জটায় শোভা বৃদ্ধি করে চাঁদের ছোট্ট একটি ফালি । ঠিক যেন প্রলয়ের ভয়ংকরতার পাশাপাশি প্রতীক্ষায় আছে এক নতুন দিনের স্নিগ্ধ শাস্তির হাতছানি । রাতের শেষে যেমন দিন আসে , অঝোর বর্ষণের শেষে দেখা দেয় সোনাঝরা রোদ , তেমনই প্রলয় শেষে আবির্ভূত হবে মানবমুক্তির স্নিগ্ধ সৌন্দর্য , এই হল কবির বিশ্বাস ।

‘ এই তো রে তার আসার সময় তার আসার চিহ্নগুলি কী ছিল ?

উত্তরঃ কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় কবি ‘ তার ’ বলতে ‘ মহাকাল ’ – কে বুঝিয়েছেন । এই মহাকালই পারে তার মহাপ্রলয়ের দ্বারা অত্যাচারী ব্রিটিশ শক্তির বিনাশ করে স্বাধীনতা আনতে । আশাবাদী কবি মহাকালের আগমন যে আসন্ন তা যেন অন্তর দিয়ে প্রত্যক্ষ করেছেন । মহাকালের হাতের চাবুক বিদ্যুতের মতো চমকিত হচ্ছে বারবার । বজ্রের শব্দ হ্রেষাধ্বনির মতো অনুরণিত হচ্ছে । আর ঘোড়ার খুরের আঘাতে নীল আকাশ থেকে উল্কা খসে পড়ছে । মহাকালে আগমনবার্তা তার রথের চাকার ঘর্ষণই সূচিত করছে ।

‘ ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর ? – ধ্বংসকে ভয় না – পাওয়ার কারণটি বুঝিয়ে দাও ।

উত্তরঃ উদ্ধৃতিটি নজরুলের ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতার অংশ বিশেষ । কালের রথে চড়ে মহাপ্রলয়ের মধ্যে দিয়ে মহাকালের বা ভয়ংকরের আগমন দেখে কবি অগ্রদূতকে ভয় না – পেতে বলেছেন । প্রলয় ধ্বংসকারী , কিন্তু এটাও সত্য যে , প্রলয়ই সৃষ্টির হাতছানি । ধ্বংসের ভয় না পাওয়ার কারণ প্রলয় আমাদের মধ্যে বেদনাবোধ জাগালেও নতুন কিছু সৃষ্টি করে । প্রলয়ই পারে নবচেতনার আলোকে প্রাণহীন অসুন্দরের মধ্যে নতুন প্রাণের সঞ্চার করতে । কবি তাই তার অগ্রদূতকে অভয় দিয়ে বলেছেন প্রলয় চিরসুন্দর । সে ভেঙে আবার গড়তেও পারে । তাই প্ররকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই ।

ভেঙে আবার গড়তে জানে সে চিরসুন্দর ।’- ‘ সে ‘ কে ? ভেঙে আবার গড়ার বিষয়টি বুঝিয়ে দাও ।

উত্তরঃ নজরুলের ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতার উদ্ধৃত অংশটিতে ‘ সে ’ বলতে কবি ‘ অসীম শক্তির ’ অধিকারী মহাদেব বা প্রলয়রূপী ‘ সে ’ – এর পরিচয় প্রাকৃতিক শক্তিকে বুঝিয়েছেন । ভেঙে আবার গড়া ধ্বংসের মধ্যেই সৃষ্টির বীজ নিহিত । এই চিরন্তন সত্যই জগতে প্রতিষ্ঠিত । কবি তার ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় ধ্বংসের জয়গান করেছেন । আপাতদৃষ্টিতে তাতে বিরোধ থাকলেও এটাই সত্য । পরাধীন ভারতে পরাধীনতার শৃঙ্খল মোচনের জন্য কবি মহাদেবকে আহ্বান জানিয়েছেন । সেই চিরসুন্দর অশুভ শক্তির বিনাশ ঘটিয়ে শুভ শক্তির সূচনা করবেন ।

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

প্রলয়োল্লাস কবিতার বড় প্রশ্ন উত্তর, প্রলয়োল্লাস কবিতার বড় প্রশ্ন ও উত্তর

‘প্রলয়োল্লাস‘ কবিতায় প্রলয়ের যে – চিত্র অঙ্কিত হয়েছে তার বর্ণনা দাও ।

উত্তরঃ নজরুলের ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় প্রলয়ের এক কাল্পনিক চিত্র অঙ্কিত হয়েছে । এই ভয়ংকর ধ্বসংকারী প্রলয় কালবৈশাখীর মতোই পুরাতন জীর্ণতা দূর করে নতুনের আগমন সূচিত করে । কবি জয়ধ্বনির দ্বারাই তাকে গ্রহণ করেছেন । প্রলয়ের নেশায় পাগল সেই মহাকাল ঔপনিবেশিক শক্তির সিংহদ্বারে আঘাত হেনে , রুদ্ররূপী মহাদেবের মতো বজ্রশিখার মশাল জ্বেলে পরাধীনতার অন্ধকার থেকে ভারতবাসীকে মুক্ত করতে এগিয়ে আসছে । তার কেশের দোলায় আকাশ কেঁপে ওঠে । জ্বালামুখী ধূমকেতু তার দাস । কৃপাণ হাতে সে এগিয়ে আসছে । তার অট্টরোলে বিশ্ব স্তব্ধ । এই মহাপ্রলয়ের চোখে দ্বাদশ রবির অগ্নিতেজ । সেই রুদ্রের পিঙ্গলবর্ণের জটার দোলায় ত্রস্ত দিগন্ত । তার এক বিন্দু চোখের জলে মহাসিন্ধুর বিশালতা ও তেজ । এই রুদ্ররূপী নটরাজের বাহুর ওপরেই বিশ্বমায়ের আসন পাতা । এই মহাপ্রলয় জরাগ্রস্ত ও মুমূর্ষুদের বিনাশ করে নতুন দিশা দেখায় । মহাকালের সারথির তীব্র চাবুকে ধ্বনিত হয় ঘোড়ার কাঁদন । সেই ঘোড়ার খুরের দাপটে নীল আকাশে উল্কা ছুটছে । অন্ধকার কারাগারের আড়ালে যে – দেবতারূপ বিপ্লবীরা আটকে আছে এবার তাদের মুক্তি আসন্ন । কবির মতে , এই ধ্বংসলীলায় ভীত হওয়ার কিছু নেই । কারণ সে নবীনের বার্তাবহ । প্রাণহীন অসুন্দরকে ধ্বংস করতে ছুটে আসছে । এই প্রলয়ের কাজই হল ভাঙা – গড়া ।

‘প্রলয়োল্লাস’ কবিতায় একদিকে ধ্বংসের চিত্র আঁকা হয়েছে আবার অন্যদিকে নতুন আশার বাণী ধ্বনিত হয়েছে । প্রসঙ্গটি কবিতা অবলম্বনে আলোচনা করো ।

অথবা ,

‘ওই নূতনের কেতন ওড়ে কালবোশেখির ঝড় ।— ‘প্রলয়োল্লাস কবিতার বিষয়বস্তুর পরিপ্রেক্ষিতে মন্তব্যটির তাৎপর্য আলোচনা করো ।

উত্তরঃ কাজী নজরুল ইসলাম রচিত ‘ প্রলয়োল্লাস ’ কবিতায় যেমন একদিকে ধ্বংস বা প্রলয়ের চিত্র আঁকা হয়েছে , অন্যদিকে আবার এক গভীর আশার বাণী ধ্বনিত হয়েছে । একদিকে কালবৈশাখী ঝড়ের দাপটের চিত্র , অন্যদিকে আসন্ন প্রলয়ের পরেই নতুন দিনের প্রতীক্ষার অবসান— সবমিলিয়ে বিনাশ ও সৃষ্টির অন্যদিকে গড়ার চিত্র চমৎকার মেলবন্ধনে প্রাণিত নজরুলের ‘ প্রলয়োল্লাস ’ কবিতা । প্রথম কয়েকটি স্তবকে অনাগত প্রলয়ের ‘ প্রলয়োল্লাস’ একদিকে ধ্বংস তাণ্ডবের বর্ণনা পাঠককে ভয়ে বিবশ করে তোলে । সেখানে ওরে ওই হাসছে ভয়ংকর ‘ , অথবা ‘ জয় প্রলয়ংকর ‘ ইত্যাদি বাক্যাংশ ব্যবহার করে , কবি খুব সচেতনভাবে প্রলয়ের ধ্বংসকারী রূপকে পাঠকের সামনে তুলে ধরেছেন । একদিকে দ্বাদশ রবির বহ্নিজ্বালা ভয়াল তাহার নয়নকটায় ‘ , অন্যদিকে ‘ বিন্দু তাহার নয়নজলে সপ্তমহাসিন্ধু দোলে – আগুন ও জলের সহাবস্থান একই নয়নে দেখিয়ে কবি এই বার্তাই দিতে চেয়েছেন যে , অন্ধকারের সঙ্গেই আলো , কালোর সঙ্গেই সাদা ওতপ্রোত ও একাকার । ঠিক এই বার্তাই রূপ পায় , যখন কবি উল্লসিত আবেগে বলে ওঠেন , ‘ এবার মহানিশার শেষে / আসবে ঊষা অরুণ হেসে ‘ অথবা ‘ ধ্বংস দেখে ভয় কেন তোর ? – প্রলয় নূতন সৃজন – বেদন । ‘ কবি জানেন সৃষ্টির বেদনা । তাই মহাপ্রলয়ের শেষে যে নতুন দিনের উদয় অবশ্যই হবে সে – সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত । আশা ও ভীতির দোলাচলে ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতাটি একটি ছন্দোময় আবেগগীতি ।

‘প্রলয়োল্লাস‘ কবিতাটিতে কবি নজরুল ইসলামের বিদ্রোহীসত্তার প্রতিফলন কীভাবে ঘটেছে , তা কবিতা অনুসারে আলোচনা করো ।

উত্তরঃ কবি নজরুল সম্পর্কে আলোচনার শুরুতেই যে – বিশেষণগুলি অতিসহজেই তাঁর সম্বন্ধে প্রযুক্ত হতে পারে , সেগুলি হল— আপসহীন , ফরিয়াদি , সর্বোপরি বিদ্রোহী কবি । চিরকাল অন্যায় , শোষণ , অসাম্যের বিরুদ্ধে নজরুল যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন । তাঁর চরিত্রের এই ঋজুতা প্রতিফলিত হয়েছে তাঁর কবিতাতেও । অনিবার্য যন্ত্রণাকে মাথা নীচু করে মেনে নেননি তিনি । এ প্রসঙ্গে লর্ড বায়রনের একটি স্মরণীয় উক্তি— ‘ For I will teach , If possible the stones to rise against Earth’s tyrants . ”

এরই অনুরণন যেন শুনতে পাই নজরুলের ‘ আসছে এবার অনাগত প্রলয় – নেশার নৃত্য পাগল , সিন্ধুপারের সিংহদ্বারে ধমক হেনে ভাঙল আগল’— পঙ্ক্তিগুলিতে । নজরুলের ধমনিতে প্রবাহিত বহ্নি তাঁর অন্তরের সুপ্ত আগ্নেয়গিরিকে জাগ্রত করে , উদ্‌বেলিত বিদ্রোহীসত্তার প্রতিফলন লাভাস্রোতের মতো শব্দেরা এসে প্রজ্বলিত করে স্ফুলিঙ্গ । এই স্ফুলিঙ্গেরই নিদর্শন — ‘ মাভৈঃ মাভৈঃ ! জগৎ জুড়ে প্রলয় এবার ঘনিয়ে আসে / জরায় – মরা মুমুর্ষুদের প্রাণ – লুকানো ওই বিনাশে ! ‘ ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে স্পষ্ট সতর্কবার্তা দিয়েছেন কৰি এই কবিতায় । কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘ সবুজের অভিযান ‘ কবিতায়— “ ওরে নবীন , ওরে আমার কাঁচা … ‘ পঙ্ক্তিগুলির সঙ্গে পূর্বোক্ত পক্তির সাদৃশ্য অতিস্পষ্ট । বিপ্লবপন্থায় বিশ্বাসী মাতৃভূমির প্রতি উৎসর্গীকৃতপ্রাণ নজরুল উদার , উন্মুক্ত বিশ্বমানবতাকেই তাঁর কাব্যরচনার অবলম্বন হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন ।

তোরা সব জয়ধ্বনি কর ! কাদের উদ্দেশ্যে কবির এই আহ্বান ? কবিতার ভাববস্তু বিশ্লেষণ করে এই আহ্বানধ্বনির পুনরাবৃত্তির যৌক্তিকতা প্রতিপন্ন করো ।

অথবা ,

‘তোরা সব জয়ধ্বনি কর ! ‘ — এখানে ‘ তোরা বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে ? তারা কেন , কাদের জয়ধ্বনি করবে ?

উত্তরঃ উদ্ধৃত অংশটি নজরুলের ‘ প্রলয়োল্লাস ’ কবিতার অংশ – বিশেষ । ‘ তোরা ’ বলতে কবি পরাধীন ভারতের সেইসব মানুষদের বুঝিয়েছেন , যারা কবির আহ্বানের ইংরেজদের হাতে অত্যাচারিত , অশিক্ষা , কুংস্কারের উদ্দেশ্য অন্ধকারে নিমজ্জিত এবং চেতনাহীন । তাই তাদের চেতনা জাগ্রত করতে এবং পরাধীনতার শৃঙ্খলমোচনের জন্য ও বিপ্লবীসত্তাকে উজ্জীবিত করার উদ্দ্যেশ্যে কবির এই আহ্বান ।

অনুনয় – বিনয় নয় , পরাধীন ভারতকে স্বাধীন করতে চাই তীব্র আন্দোলন । তাই তো তাঁর বিদ্রোহীসত্তা বারবার উদাত্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেন কারাগারের লৌহকপাট ভেঙে ফেলতে । কখনও – বা কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা যে দ্বারপ্রান্তে উপস্থিত সে – কথা জানিয়ে তিনি জয়োল্লাস করতে বলেছেন । আশাবাদী কবি তাই বারে বারে প্রলয়কে আহ্বান জানিয়েছেন । এই প্রলয়ই পারে কালবৈশাখীর ঝড় বা মহাকালে চণ্ডরূপে সিন্ধুপারের সিংহদ্বারের আগল ভেঙে বিপ্লবীদের মুক্তি দিতে , জরাগ্রস্ত মুমূর্ষু জাতির মধ্যে প্রাণের সঞ্চার করতে । কবি মহাপ্রলয়ের এই ধ্বংসলীলা দেখে ভয় না – পেতে বলেছেন । কেননা রুদ্ররূপ মহাপ্রলয় কবিতার ভাববস্তুর নিরিখে আহ্বানধ্বনির পুনরাবৃত্তির যৌক্তিকতা একইসঙ্গে ধ্বংস ও সৃষ্টিরও । সেই – ই পারে ধ্বংসের উপর নতুন সমাজ স্থাপন করতে । তাই কবি তাকে | বরণ করে নিয়ে জয়োল্লাস করতে বলেছেন । কবিতায় ‘ তোরা সব জয়ধ্বনি কর ! ’ চরণটি আঠারো বার উচ্চারণের কারণ , এর গীতিময়তা এবং পরাধীন ও প্রায় স্থবিরত্বপ্রাপ্ত অসহায় ভারতবাসীর হৃদয়ে উজ্জীবনের অনুরণন জাগানো ।

প্রলয়োল্লাস কবিতা pdf

WBTA স্ট্রাইকার সাজেস্টিভ ক্লাস 10 বাংলা

WBTA স্ট্রাইকার সাজেস্টিভ ক্লাস 10 বাংলা

প্রলয়োল্লাস কবিতার প্রশ্ন উত্তর

‘ তোরা সব জয়ধ্বনি কর।- ‘ তোরা ‘ কারা ? তাদের জয়ধ্বনি করতে বলা হচ্ছে কেন ?
উত্তরঃ নজরুল ‘ প্রলয়োল্লাস ‘ কবিতায় কবি ‘ তোরা ’ বলতে , পরাধীন দেশের স্বাধীনতার প্রত্যাশী আপামর জনসাধারণকে বুঝিয়েছেন ।


আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।