গতি কাকে বলে

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

গতি কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি

সময়ের সাথে যখন কোন বস্তু তার নিজ অবস্থানের পরিবর্তন ঘটায় তখন বস্তুটির এ অবস্থাকে গতি বলে। অর্থাৎ একটি গতিশীল বস্তু যে গুণের কারণে গতিশীল থাকে বা থাকতে চায় তাকে গতি বলে।

উদাহরণ : মনে করি, একটি ট্রেন ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার বেগে চলছে। যে বৈশিষ্ট্যের জন্য ট্রেনটি গতিশীল তাই এর গতি।

গতি পাঁচ প্রকার। যথা, পর্যাবৃত্ত গতি, স্পন্দন গতি, রৈখিক গতি, ঘুর্ণন গতি, চলন গতি

স্থিতি কি বা কাকে বলে

সময়ের পরিবর্তনের সাথে যখন কোন বস্তু পারিপার্শ্বিকের সাপেক্ষে নিজ অবস্থানের পরিবর্তন করে না তখন বস্তুটির এ অবস্থাকে স্থিতি বলে। অর্থাৎ একটি স্থিতিশীল বস্তু যে গুণের কারণে স্থির অবস্থানে থাকে বা থাকতে চায় তাকে স্থিতি বলে।

উদাহরণ : ঘরবাড়ি, গাছপালা ইত্যাদি সময়ের পরিবর্তনের সাথে অবস্থানের পরিবর্তন ঘটায় না। অর্থাৎ এরা স্থির বস্তু এবং এদের এ স্থিরাবস্থাকে স্থিতি বলা হয়।

সরল স্পন্দন গতি কাকে বলে

কোন বস্তুর উপর প্রয়োগকৃত বল যদি তার সরণের সমানুপাতিক হয় এবং বলের দিক যদি সরণের বিপরীত দিকে হয়, তাহলে সেই বস্তু যে ধরনের গতি লাভ করে তাকে সরল স্পন্দন গতি বলে।

সরল স্পন্দন গতির একটি উদাহরন হল দোলক, যখন এটি অল্প বিস্তারে দুলিত হয়।

একটি বস্তু যদি এমন ভাবে ভ্রমন করে যে এটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর একটি নির্দিষ্ট বিন্দু অতিক্রম করে এবং এটির ত্বরন ঐ বিন্দুটির থেকে এটির দুরত্বের সমানুপাতিক হয় তবে এই ভ্রমনটিকে সরল স্পন্দন গতি বলা হবে ।

এখানে একটি বৃত্ত ও তার ওপর একটি বিন্দু X (বা Y) দেখান হয়েছে ।এই X বিন্দুটিকে বৃত্তটির পরিধিকে কক্ষপথ করে সমগতিতে চালনা করলে X থেকে আনত AB ব্যাসের ওপর লম্বের পাদবিন্দুর গতি হবে আদর্শ সরল স্পন্দন গতি।

পর্যায়বৃত্ত গতি কাকে বলে, পর্যাবৃত্ত গতি কাকে বলে

পর্যায়বৃত্ত গতি হলো একধরনের গতি যেটা নির্দিষ্ট সময় অন্তর নিজ অক্ষে ফিরে আসে। বৃত্তাকার, উপবৃত্তাকার, সরল রৈখিক বা আরো জটিল হতে পারে।

“যদি কোন বস্তু তার গতিপথের কোন একটা নির্দিষ্ট বিন্দুকে চক্রাকারে বার বার অতিক্রম করে তাহলে সেই বস্তুর গতিটাকে বলা হবে পর্যায়বৃত্ত গতি।”

যেমনঃ ফ্যানের পাখার গতি।

এবার একটু ব্যাখ্যা করি- মনেকরি ফ্যানের একটা পাখাকে নির্দিষ্ট করে ধরলাম এবং নির্দিষ্ট পাখাটি যেখানে স্হির হয়ে আছে সেখানে একটা চিহ্ন দিয়ে রাখলাম। যখন ফ্যানটি চালু করা হলো তখন ওই নির্দিষ্ট পাখাটির দিকে নজর রাখলাম এবং দেখতে পাখাটি ওই চিহ্ন দিয়ে রাখা জায়গাটি বার বার অতিক্রম করছে বন্ধ না করা পর্যন্ত। তো ফ্যানটি যে গতিবেগে ওই নির্দিষ্ট চিহ্ন দিয়ে রাখা জায়গাটি বার বার অতিক্রম করছে মূলত সেই গতিটাই পর্যায়বৃত্ত গতি। পৃথিবীও ঠিক এভাবে সূর্যের চারিদিকে পর্যায়বৃত্ত গতিতে ঘুরছে, অর্থাৎ পৃথিবীর গতিটাও পর্যায়বৃত্ত গতির একটা চমৎকার উদাহরন। এছাড়া বিভিন্ন গাড়ির চাকাকেও পর্যায়বৃত্ত গতির উদাহরন হিসেবে টানা যেতে পারে।

আহ্নিক গতি কাকে বলে

পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে নিজ অক্ষে অনবরত পশ্চিম হতে পূর্ব দিকে আবর্তন করছে। পৃথিবীর এই আবর্তনকে আহ্নিক গতি বা দৈনিক গতি বলা হয়।

নিজ অক্ষে একবার ঘুরতে পৃথিবীর মোট ২৩ ঘন্টা ৫৬ মিনিট ৪ সেকেন্ড বা ২৪ ঘণ্টা সময় প্রয়োজন। এই সময়কে সৌরদিন বলা হয়।

আহ্নিক গতির কারণ

আহ্নিক গতির মূল কারণ হলো-পৃথিবীর আবর্তন এবং পৃথিবীর আকৃতি । উল্লেখ্য, পৃথিবীর আকৃতি বর্তুলাকার হলেও উভয় মেরুতে কিছুটা চাপা ও নিরক্ষরেখা বরাবর কিছুটা স্ফীত। নিরক্ষরেখা বরাবর পৃথিবীর ব্যাস সর্বাপেক্ষা অধিক হওয়ায় এই অঞ্চলে আহ্নিক গতির বেগও সর্বাপেক্ষা অধিক। এই বেগ প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১৭০০ কিলোমিটার। আহ্নিক গতিবেগ ক্রমশ কমতে কমতে দুই মেরুর নিকটবর্তী স্থানে প্রায় স্তিমিত হয়ে যায়।

পৃথিবীর আবর্তন গতি থাকা সত্ত্বেও নিম্নোক্ত কতিপয় কারণে পৃথিবী পৃষ্ঠে বসবাসরত মানুষ ঐ আবর্তন অনুভব করে না এবং ছিটকে পড়ে না।

১. পৃথিবীর আয়তনের তুলনায় ভূ-পৃষ্ঠে বসবাসরত জীবজগতের সকল প্রাণি ও মানুষ এত বেশি ক্ষুদ্রাকার যে পৃথিবীর ঘূর্ণন অনুভব করতে পারে না।

২. পৃথিবী পৃষ্ঠে অবস্থিত সকল জৈব ও অজৈব পদার্থ মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে ভূ-পৃষ্ঠে আটকে আছে। ফলে আমরা পৃথিবী থেকে ছিটকে পড়ি না ।

৩. মহাবিশ্বে সকল গ্রহ-উপগ্রহ ও পৃথিবী একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে এবং নির্দিষ্ট গতিতে অনবরত আবর্তিত হচ্ছে। ফলে পৃথিবীর যে কোনো স্থান থেকে মহাকাশে দৃষ্টিপাত করলে প্রায় একই চিত্র দৃষ্টিগোচর হয়। এ কারণে পৃথিবীর নিজ অক্ষে আবর্তনের বিষয়টি অনুধাবন করা সম্ভব হয় না।

আহ্নিক গতির ফলাফল :-

আহ্নিক গতির ফলে পৃথিবীতে বেশ কিছু কর্মকান্ড সংঘটিত হয়ে থাকে। এগুলো হলো

১. দিবা-রাত্রির সংঘটন :

গোলাকার পৃথিবীর নিজস্ব কোনো আলো নেই বলে সূর্যের আলোকে পৃথিবী পৃষ্ঠ আলোকিত হয়ে থাকে। পৃথিবী স্থির থাকলে এর যে পার্শ্ব সূর্যের দিকে অবস্থান করতো কেবল সে অংশই আলোকিত হতো অর্থাৎ দিন হতো। অপর পার্শ্বে কোনো আলো না থাকায় ঐ অংশ অন্ধকারাছন্ন থাকতো অর্থাৎ রাত্রি হতো। বাস্তবে পৃথিবীর সর্বত্র ক্রমানুসারে দিন ও রাত্রি সংঘটিত হয়ে থাকে। পৃথিবীর আহ্নিক গতির কারণে এইরূপ দিবারাত্রি সংঘটিত হয়ে থাকে।

২. জোয়ার-ভাটার সৃষ্টি :

আহ্নিক গতির কারণে ভূ-পৃষ্ঠে কোনো একটি স্থানে প্রতিদিন দুইবার জোয়ার ও দুইবার ভাটা সংঘটিত হয়। তবে পৃথিবী নিজ অক্ষে অনবরত ঘূর্ণনশীল হওয়ায় আহ্নিক গতির ফলে একটি স্থানের প্রতিদিন একই সময়ে জোয়ার-ভাটা সংঘটিত না হয়ে ৫২ মিনিট সময়ের ব্যবধানে সংঘটিত হয়।

৩. বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি :

পৃথিবীর আকার অভিগত গোলকের ন্যায়। ফলে নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে মেরু প্রদেশের দিকে পৃথিবীর অক্ষরেখাসমূহের ব্যাস ও আবর্তনের গতিবেগ ক্রমশঃ হ্রাস পেতে থাকে। ফেরেলের কোরিওলিস এফেক্ট সূত্রানুযায়ী, আহ্নিক গতির কারণে বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্রস্রোত উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে ও দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে যায়।

৪. তাপমাত্রার তারতম্য সৃষ্টি :

আহ্নিক গতির কারণে ভূ-পৃষ্ঠের যে কোনো একটি স্থান প্রায় ১২ ঘন্টা সূর্যের দিকে অবস্থান করে। ফলে দিনের বেলায় সূর্য রশ্মির তাপে ঐ স্থানটির বায়ু ও মাটি উত্তপ্ত হয়ে পড়ে।

আবার, পৃথিবীর নিজ অক্ষে ঘূর্ণনের কারণে ঐ স্থানটি ক্রমশ সূর্য হতে দূরে সরে যেতে থাকে এবং রাত্রির আবির্ভাব হয় এবং সূর্য হতে দূরে অবস্থান করায় তাপমাত্রা ক্রমশঃ কমতে থাকে। এভাবে একটি পূর্ণাঙ্গ দিবসে (২৪ ঘন্টা সময়কালে) একই স্থানে দিন ও রাত্রি সৃষ্টি হওয়ার ফলে তাপমাত্রার হ্রাস বৃদ্ধি ঘটে থাকে।

৫. জীবজগতের সৃষ্টি ও বংশ বিস্তার :

জীবজগতের সৃষ্টি ও টিকে থাকবার জন্যে ভূ-পৃষ্ঠে প্রতিটি স্থানে নির্দিষ্ট তাপমাত্রা, বায়ুপ্রবাহ ইত্যাদি জলবায়ুর উপাদানের প্রয়োজন। এ সকল জলবায়ুর উপাদানের পরিমাণের তারতম্যের ভিত্তিতে ভূ-পৃষ্ঠের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ, জীবজন্তু ও মানব সম্প্রদায় সৃষ্টি হয়েছে।

আহ্নিক গতির ফলে সমগ্র পৃথিবী ব্যাপী দিন রাত্রির সংঘটন ও তাপমাত্রার তারতম্যের ফলেই গোটা জীবজগত সৃষ্টি ও বংশ বিস্তার করে থাকে।

ঘূর্ণন গতি কাকে বলে, ঘূণন গতি কাকে বলে

নির্দিষ্ট কোনো বস্তু যদি একটি নির্দিষ্ট বিন্দু বা অক্ষকে কেন্দ্র করে সেই বিন্দু বা অক্ষের চতুর্দিকে বৃত্তাকার পথে গতিশীল থাকে তবে ওই গতিকে ঘুর্ণন গতি (Rotational motion) বলে।

সাধারণভাবে কোন বস্তু একটি স্থির বিন্দু বা অক্ষের সাপেক্ষে ঘুরতে থাকলে এর গতিকে ঘূর্ণন গতি বলা হয়। ঘূর্ণনরত দৃঢ় বস্তুর অভ্যন্তরীণ প্রতিটি বিন্দুর কৌণিক সরণের হার ঘূর্ণন বিন্দু বা অক্ষের সাপেক্ষে একই হয়। পৃথিবীর আহ্নিক গতি, ঘূর্ণায়মান চাকার আবর্তন গতি, চলন্ত পাখার ব্লেডের গতি হল ঘূর্ণন গতির উদাহরণ।

স্পন্দন গতি কাকে বলে, দোলন গতি কাকে বলে

পর্যায়বৃত্ত গতিসম্পন্ন কোনো বস্তু যদি পর্যায়কালের অর্ধেক সময় কোনো নির্দিষ্ট দিকে এবং বাকি অর্ধেক সময় একই পথে তার বিপরীত দিকে চলে তবে এর গতিকে স্পন্দন গতি বা দোলন গতি বলে।

পর্যাবৃত্ত গতি সম্পন্ন কোনো বস্তু যদি পর্যায়কালের অর্ধেক সময় কোনো নির্দিষ্ট দিকে এবং বাকি অর্ধেক সময় তার বিপরীত দিকে চলে তবে এর গতিকে স্পন্দন গতি বলে। দোলনার গতি, দেয়ালঘড়ির দোলকের গতি স্পন্দন গতির উদাহরণ।

স্পন্দন গতির অপর নাম দোলন গতি

চলন গতি কাকে বলে

কোনো বস্তু যদি এমনভাবে চলতে থাকে যাতে করে বস্তুর সকল কণা একই সময়ে একই দিকে সমান দূরত্ব অতিক্রম করে তাহলে ঐ গতিকে চলন গতি বলে। টেবিলের ড্রয়ারের গতি, ঢালু তল দিয়ে কোনো বাক্স পিছলে পড়ার গতি, লেখার সময় হাতের গতি এগুলো সবই চলন গতির উদাহরণ।

চলন গতি দুই প্রকার। যেমন, (১) সরল চলন গতি ও (২) বক্র চলন গতি

(১)সরল চলন গতিঃ যখন কোনো বস্তু সরল পথে এমনভাবে চলতে থাকে যে তার প্রতিটি কণা একই দিকে সমপরিমাণ দূরত্ব অতিক্রম করে, তখন এই গতিকে সরল চলন গতি বলে।

(২) বক্র চলন গতিঃ যে চলন গতি বক্রপথে ঘটে তাকে বক্রচলন বা বক্ররৈখিক গতি বলে। যেমন, পৃথিবীর বার্ষিক গতি, উল্লম্ব নাগরদোলায় ঝুলন্ত চেয়ার গুলির গতি ইত্যাদি।

বার্ষিক গতি কাকে বলে

পৃথিবী নিজ অক্ষে আবর্তিত হতে হতে সূর্যের মহাকর্ষ শক্তির আকর্ষণে একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে (সূর্যকে পরিক্রমনের পথ) নির্দিষ্ট সময়ে সূর্যের চারিদিকে আবর্তিত হতে থাকে। পৃথিবীর এইরূপ গতিকে বার্ষিক গতি বা পরিক্রমণ গতি বলা হয়।

পৃথিবী আপন অক্ষের চারিদিকে ২৪ ঘণ্টায় একবার আবর্তন করার পাশাপাশি পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে ও নির্দিষ্ট কক্ষপথে সূর্যের চারিদিকে ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড একবার আবর্তন করে। পৃথিবীর এইরূপ আবর্তন কে বার্ষিক গতি বলে।

সূর্যের চারিদিকে একবার পূর্ণ পরিক্রমণ বা আবর্তনের জন্যে পৃথিবীর মোট সময় প্রয়োজন ৩৬৫ দিন ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড। একে সৌরবছর (Solar Year) বলে।
ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৩৬৫ দিনে এক সৌর বছর গণনা করা হয়। প্রতি বছর অতিরিক্ত ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড সময় কালকে প্রতি চার বছর অন্তর ১ দিন বা ২৪ ঘন্টা হিসেবে ঐ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসকে ২৮ দিনের বদলে ২৯ দিন হিসেবে গণনা করা হয়। এই বছরটি অধিবর্ষ (Leap Year) নামে অভিহিত।

মনে রাখা প্রয়োজন, কোনো একটি বছরের সংখ্যাগত নম্বরটিকে ৪ দিয়ে ভাগ করলে যদি কোনো ভাগ শেষ না থাকে, তবে ঐ বছরটি হবে লিপ ইয়ার। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৬ কে ৪ দিয়ে ভাগ করলে কোনো ভাগশেষ থাকে না ( ২০১৬ + ৪ = ৫০৪) অর্থাৎ ঐ বছরটি হবে একটি অধিবর্ষ। ঐ বছরে ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিনের বদলে ২৯ দিনে গণনা করা হবে।

পৃথিবী সূর্যকে পরিভ্রমনের সময় ৩রা জানুয়ারি পৃথিবী সূর্যের নিকটতম অবস্থানে (১৪ কোটি ৭০ লক্ষ কি.মি) এবং ৪ জুলাই সর্বাধিক দূরবর্তী অবস্থানে (১৫ কোটি ১০ লক্ষ কি.মি) থাকে। পৃথিবীর এইরূপ অবস্থানকে যথাক্রমে অনুসুর (Perihelion) ও অপসুর (Aphelion) বলে। বার্ষিক গতির গড় বেগ প্রতি ঘণ্টায় ১,০৭,০০০ কিলোমিটার।

বার্ষিক গতির কারণ

বার্ষিক গতির কারণসমূহ নিম্নরূপ :

১. পৃথিবীর আকার অভিগত গোলকের ন্যায়।

২. সূর্যকে পরিভ্রমণের জন্য পৃথিবীর কক্ষপথটি উপবৃত্তাকার।

৩. পৃথিবী নিজ কক্ষপথে (Orbit) ৬৬.৫° কোণে হেলে অবস্থান করছে। এবং

৪. পৃথিবী নিজ অক্ষে (Axis) ২৩.৫° কোণে হেলে অবস্থান করছে।

উপরোক্ত বিষয়গুলোর কারনে বার্ষিক গতি হয়ে থাকে।

পরম গতি কাকে বলে

পুরোপুরি স্থির বস্তুর সাপেক্ষে কোনো বস্তুর গতিকে পরম গতি বলে, যা একেবারেই অসম্ভব। কারণ, এ মহাবিশ্বে পুরোপুরি স্থির একটিও নেই।

সকল স্থিতি ও গতি আপেক্ষিক অর্থাৎ যেকোনো সময় বস্তুর অবস্থা পরিবর্তন হতে পারে। কোনো ব্যক্তি বা বস্তু সারাজীবন স্থির বা গতিশীল থাকতে পারে না। কোনো দ্বিতীয় বস্তুর সাথে তুলনা করে এটা ব্যাখ্যা করা হয়।

সরল গতি কাকে বলে, সরলরৈখিক গতি কাকে বলে, সরল রৈখিক গতি কাকে বলে

কোনো কিছু যদি সরলরেখায় যায় তাহলে তার গতিকে সরল রৈখিক গতি বলে।

কোন বস্তু চলার পথে দিক পরিবর্তন করতেও পারে আবার নাও করতে পারে। বস্তু চলার পথে দিক পরিবর্তন না করলে সেই গতিকে বলে সরল রৈখিক গতি। যেমন নির্দিষ্ট মাধ্যমে আলোর গতি।

সরল দোলন গতি কাকে বলে

যদি কোনো গতিশীল বস্তু একটি নির্দিষ্ট সময়ে এর সাম্যাবস্থানের সাপেক্ষে এদিকে-ওদিকে দুলতে থাকে তবে সেই গতিকে সরল দোলন গতি (Simple Harmonic Motion) বলে। সরল দোলকের গতি, স্প্রিং-এর গতি ইত্যাদি।

সরল দোলন গতির বৈশিষ্ট্য

সরল দোলন গতির কতগুলি নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য আছে। এই বৈশিষ্ট্যসমূহ দিয়ে কোনো কণার গতি সরল দোলন গতি কিনা তা নির্ধারণ করা হয়। নিচে সরল দোলন গতির বৈশিষ্ট্যসমূহ দেয়া হলোঃ

  • সরল দোলন গতি হলো এক ধরনের রৈখিক পর্যাবৃত্ত গতি। অর্থাৎ কোনো বস্তুকণা একই সময়ে বারবার একটি নির্দিষ্ট সরলরেখাংশ বরাবর এদিক-ওদিক যাওয়া-আসা করে।
  • সরল দোলন গতি বিশিষ্ট কণার ত্বরণ সর্বদা তার সাম্যাবস্থান অভিমুখী হয়।
  • কণাটির ত্বরণ সাম্যাবস্থান থেকে সরণের সমানুপাতিক।
  • কণাটি যে মুহূর্তে সাম্যাবস্থান অতিক্রম করে সেই মুহূর্তে গতিবেগ সর্বোচ্চ হয়। সরণের শেষ সীমায় গতিবেগ মুহূর্তের জন্য শূন্য হয় এবং তারপরেই কণাটি বিপরীত দিকে যাত্রা শুরু করে।
  • সরল দোলন গতির পর্যায়কাল তার বিস্তারের উপর নির্ভরশীল নয়। বিভিন্ন বাহ্যিক কারণে বিস্তার হ্রাস পেতে থাকলেও পর্যায়কাল অপরিবর্তিত থাকে।
  • সরল দোলন গতি সম্পন্ন কণার স্পন্দন সীমা সাম্যাবস্থান থেকে উভয় দিকে সমান দূরে অবস্থান করে।
  • সরল দোলন গতি সম্পন্ন কণার সরণ সাইন বা কোসাইন অপেক্ষক দ্বারা প্রকাশ করা যায়।

জটিল গতি কাকে বলে

কোনো বস্তু যদি এমনভাবে গতিশীল হয় যে, বস্তুর গতি বিশুদ্ধ চলন গতি বা ঘূর্ণন গতি নয় কিন্তু উভয় গতির সমন্বয়, তাহলে বস্তুর এরূপ গতিকে মিশ্র গতি বা জটিল গতি বলে ।

আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতি কাকে বলে

পৃথিবীর দুইটা ঘোরার গতি আছে, একটা হল দৈনিক আর একটা হল বাৎসরিক। প্রথমটাকে বলা হয় ‘আহ্নিক গতি’ আর দ্বিতীয়টাকে বলা হয় ‘বার্ষিক গতি’। আহ্নিক গতির কারণ হল যে পৃথিবী-গোলকটা তার নিজের (উত্তর-দক্ষিন দিক বরাবর) অক্ষের উপরে (প্রায়) প্রতি চব্বিশ ঘণ্টায় একবার করে ঘোরে।

আর বার্ষিক গতির কারণ হল যে একই সাথে পৃথিবীর অক্ষটাও প্রতি এক বছরে সূর্যের চারদিক দিয়ে একবার করে ঘোরে। আহ্নিক গতির ফলে পৃথিবীতে (প্রায় সব জায়গাতে) রাত ও দিনের সৃষ্টি হয়। আর বার্ষিক গতির ফলে সৃষ্টি হয় বিভিন্ন কয়েকটি ঋতু – যেমন ইউরোপের চারটা আর বাংলাদেশের ছয়টা ঋতু।

সরল ছন্দিত গতি কাকে বলে

যদি কোনো বস্তুর ওপর ক্রিয়াশীল বল বা ত্বরণ সাম্যাবস্থান থেকে এর সরণের সমানুপাতিক ও বিপরীতমুখী হয়, তাহলে বস্তুর এই গতিকে সরল ছন্দিত গতি বলে।

সরল ছন্দিত গতির বৈশিষ্ট্য

  • এটি একটি পর্যাবৃত্ত গতি।
  • এটি একটি স্পন্দন গতি।
  • এটি একটি সরল রৈখিক গতি।
  • যেকোনো সময় বল বা ত্বরণের মান সাম্যাবস্থান বা মধ্যাবস্থান থেকে সরণের মানের সমানুপাতিক।
  • বল বা ত্বরণ সর্বদা একটি নির্দিষ্ট বিন্দু অভিমুখী।

রৈখিক গতি কাকে বলে

কোনো বস্তু যদি একটি সরল রেখা বরাবর গতিশীল হয় অর্থাৎ কোনো বস্তুর গতি যদি একটি সরল রেখার উপর সীমাবদ্ধ হয়, তাহলে তার গতিকে রৈখিক গতি বলে। একটি সোজা সড়কে কোনো গাড়ির গতি রৈখিক গতি।

আপেক্ষিক গতি কাকে বলে, আপেক্ষিক স্থিতি ও আপেক্ষিক গতি কাকে বলে

আপেক্ষিক গতি: বস্তুর স্থিতি ও গতি পর্যবেক্ষকের উপর নির্ভরশীল। যেমন- ট্রেনে যেতে যেতে দেখা যায় পথের ধারে গাছপালা, ঘরবাড়ি ইত্যাদি দ্রুত বিপরীত দিকে ছুটে চলেছে। এটি হলো চলন্ত ট্রেনের সাপেক্ষে ওই গাছপালা, ঘরবাড়ি ইত্যাদির আপেক্ষিক গতি।

আপেক্ষিক স্থিতি গতি: চলন্ত ট্রেনের কামরার ভেতরে বসে থাকা কোন যাত্রীর কাছে কামরার ভেতরের সমস্ত জিনিসপত্র এবং ওই কামরায় বসে থাকা অন্য সব যাত্রীদের স্থির বলে মনে হয়। কিন্তু চলন্ত ট্রেনের বাইরের দাঁড়িয়ে থাকা কোন দর্শকের কাছে ট্রেনের সবকিছুই গতিশীল বলে মনে হয়। আবার দুটি ট্রেন পাশাপাশি একই দিকে সমবেগে চলতে থাকলে ওই দুটি ট্রেনের কামরায় বসে থাকা যাত্রীদের পরস্পরের কাছে স্থির বলে মনে হয়। এই অবস্থায় বলা হয় যে, এক যাত্রীর সাপেক্ষে অপর যাত্রী আপেক্ষিক গতি বেগ শূন্য। সুতরাং বলা যায় যে, বস্তুর স্থির বা গতিশীল অবস্থা হলো এমন একটি আপেক্ষিক বিষয় যা পর্যবেক্ষকের অবস্থার উপর নির্ভর করে।

মিশ্র গতি কাকে বলে

কোনো বস্তু যদি এমনভাবে গতিশীল হয় যে, বস্তুর গতি বিশুদ্ধ চলন গতি বা ঘূর্ণন গতি নয় কিন্তু উভয় গতির সমন্বয়, তাহলে বস্তুর এরূপ গতিকে মিশ্র গতি বা জটিল গতি বলে।

যেমন –
(i) চলন্ত গাড়ির চাকার ঘূর্ণনের সঙ্গে সঙ্গে চাকার ঘূর্ণন অক্ষ চলনগতি সম্পন্ন হবে।
(ii) পৃথিবীর আহ্নিক গতিতে অক্ষের চারদিকে ঘূর্ণন হয়, কিন্তু বার্ষিক গতিতে ঘূর্ণন  অক্ষের চলনগতি হয়।

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | গতি কাকে বলে

Q1. বক্র গতি কাকে বলে

Ans – যখন কোনো বস্তু বক্র পথে চলে, তখন তাকে বক্র চলন গতি বলে।

Q2. ছন্দিত গতি কাকে বলে

Ans – কোনো গতিশীল বস্তুকণার যদি এমন হয় যে, এটি এর গতিপথের কোনো নির্দিষ্ট বিন্দুকে নির্দিষ্ট সময় পর পর একই দিক হতে অতিক্রম করে তবে সেই গতিকে ছন্দিত গতি বলে।

Q3. আবর্ত গতি কাকে বলে

Ans – যদি কোন গতিশীল বস্তুর একটি নির্দিষ্ট বিন্দু অক্ষের চারদিকে বৃত্তাকার পথে ঘোরে তবে বস্তুটির গতিকে আবর্ত গতি বলে।

যেমন ঘূর্ণায়মান বৈদ্যুতিক পাখার গতি হল আবর্তন গতি ঘূর্ণন গতির উদাহরণ।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।