ধ্বনি কাকে বলে

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

ধ্বনি কাকে বলে কত প্রকার

মানুষের সঙ্গে মানুষের ভাব বিনিময়ের জন্য যেসব অর্থ যুক্ত শব্দ বাগযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারণ করা হয় সেইসব শব্দের ক্ষুদ্রতম অংশকে বলা হয় ধ্বনি।

যেমন ভারত > ভ+আ+র+ত < এটি ৪টি ধ্বনি দিয়ে গঠিত । কুল > ক+উ+ল এখানে ৩টি ধ্বনি রয়েছে ।

মানুষের বাগযন্ত্রের সহায়তায় উচ্চারিত ধ্বনি থেকেই ভাষার সৃষ্টি। বস্তুত ভাষাকে বিশ্লেষণ করলে চারটি মৌলিক উপাদান পাওয়া যায়। এই উপাদানগুলো হলো— ধ্বনি, শব্দ, বাক্য ও অর্থ। মানুষ তার মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য ‘কথা’ বলে।

মানুষের ‘কথা’ হলো অর্থযুক্ত কিছু ধ্বনি। ব্যাকরণ শাস্ত্রে মানুষের কণ্ঠনিঃসৃত শব্দ বা আওয়াজকেই ধ্বনি বলা হয়। বস্তুত অর্থবোধক ধ্বনিসমূহই মানুষের বিভিন্ন ভাষার বাগ্‌ধ্বনি। ধ্বনিই ভাষার মূল ভিত্তি।

কোনো ভাষার উচ্চারিত শব্দকে বিশ্লেষণ করলে যে উপাদানসমূহ পাওয়া যায় সেগুলোকে পৃথকভাবে ধ্বনি বলে। ধ্বনির সঙ্গে সাধারণত অর্থের সংশ্লিষ্টতা থাকে না, ধ্বনি তৈরি হয় বাগ্যন্ত্রের সাহায্যে। ধ্বনি তৈরিতে যেসব বাগ্-প্রত্যঙ্গ সহায়তা করে সেগুলো হলো ফুসফুস, গলনালি, জিহ্বা, তালু, মাড়ি, দাঁত, ঠোঁট, নাক ইত্যাদি।

ধ্বনি কত প্রকার ও কি কি :-

‘ধ্বনি’র সাধারণ অর্থ যেকোনো ধরনের আওয়াজ’। কিন্তু ব্যাকরণ ও ভাষাতত্ত্বের পারিভাষিক অর্থে মানুষের বাগ্যন্ত্রের সাহায্যে তৈরি আওয়াজকে ধ্বনি বলে। আর এই ধ্বনি দু-প্রকার যথা –

  1. স্বরধ্বনি ও 
  2. ব্যঞ্জনধ্বনি

স্বরধ্বনি কাকে বলে

যে সব ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস থেকে বাতাস বেরিয়ে যেতে মুখবিবরের কোথাও কোনো রকম বাধা পায় না, সেই সব ধ্বনিকে বলা হয় স্বরধ্বনি।

যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় মুখের ভেতরে কোথাও বাধা পায় না এবং যা অন্য ধ্বনির সাহায্য ছাড়া নিজেই সম্পর্ণভাবে উচ্চারিত হয় তাকে স্বরধ্বনি বলে।

বাংলা ভাষায় মৌলিক স্বরধ্বনি ৭টি। যেমন- অ, আ, ই, উ, এ, ও, অ্যা।

ব্যঞ্জনধ্বনি কি বা কাকে বলে

যে সকল ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস থেকে বাতাস বেরিয়ে যেতে মুখবিবরের কোথাও না কোথাও কোনো প্রকার বাধা পায় কিংবা ঘর্ষণ লাগে, সেই সব ধ্বনিকে ব্যঞ্জনধ্বনি বলে।

যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় মুখের ভেতরে কোথাও না কোথাও বাধা পায় এবং যা স্বরধ্বনির সাহায্য ছাড়া স্পষ্টরূপে উচ্চারিত হতে পারে না তাকে ব্যঞ্জনধ্বনি বলে।

যেমন- ক (ক+অ), চ (চ+অ), ট, ত প ইত্যাদি। ব্যঞ্জনধ্বনির সংখ্যা ৩২টি।

স্বরধ্বনির প্রকারভেদ

উচ্চারণের তারতম্যের জন্য স্বর ধ্বনিগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা –

১ – হ্রস্ব স্বরধ্বনি ও

২ – দীর্ঘ স্বরধ্বনি।

হ্রস্ব স্বরধ্বনি কাকে বলে

যে সমস্ত স্বরধ্বনি উচ্চারণ করতে অল্প কম সময় লাগে তাকে হ্রস্ব স্বরধ্বনি বলে। যেমন – অ, ই, উ, ঋ।

দীর্ঘ স্বরধ্বনি কাকে বলে

যে স্বরধ্বনি উচ্চারণ করতে একটু বেশি সময় লাগে, তাকে দীর্ঘ স্বরধ্বনি বলে। যেমন – এ, ঐ, ও, ঔ।

গঠনগত দিক থেকে স্বরধ্বনিতে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন-

১ – মৌলিক স্বরধ্বনি ও

২ – যৌগিক স্বরধ্বনি ।

মৌলিক স্বরধ্বনি কাকে বলে

যে ধ্বনিগুলোকে বিশ্লেষণ করা যায় না তাদেরকে মৌলিক স্বরধ্বনি বলে। এদের সংখ্যা সাত টি যথা- অ, আ, ই, উ, এ, ও অ্য।

যৌগিক স্বরধ্বনি কাকে বলে

যে ধ্বনিগুলোকে বিশ্লেষণ করা যায় তাদেরকে যৌগিক স্বরধ্বনি বলে।

যেমন- ঐ (অ+ই), ঔ (অ+উ)। এইজন্য যৌগিক স্বরকে আবার সন্ধ্যক্ষর, যুগ্ম স্বর বা দ্বিস্বর বলা হয়।

জিহবার অবস্থান অনুযায়ী স্বরধ্বনিকে পাঁচটি শ্রেণীবিভাগে ভাগ করা যায়। যেমন –

১ – সম্মুখস্থ বা প্রসারিত স্বরধ্বনি,

২ – পশ্চাৎ ভাগস্থ স্বরধ্বনি,

৩ – কুঞ্চিত স্বরধ্বনি,

৪ – সংবৃত স্বরধ্বনি এবং

৫ – বিকৃত স্বরধ্বনি।

সম্মুখস্থ বা প্রসারিত স্বরধ্বনি কাকে বলে

যে সমস্ত স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহ্বা সামনে চলে আসে, তাকে সম্মুখস্থ বা প্রসারিত স্বরধ্বনি বলে। যেমন- ই, এ, অ্যা।

পশ্চাৎভাগস্থ স্বরধ্বনি কাকে বলে

যে সব স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহ্বা পিছনের দিকে পিছিয়ে যায়, তাকে পশ্চাৎ ভাগস্থ স্বরধ্বনি বলে। যেমন- উ, ও, অ।

কুঞ্চিত স্বরধ্বনি কাকে বলে

যে সব স্বর ধ্বনিগুলো উচ্চারণের সময় ঠোঁট দুটি গোলাকার কুঞ্চিত হয়, তাকে কুঞ্চিত স্বরধ্বনি বলা হয়। যেমন- অ, উ, ও।

সংবৃত স্বরধ্বনি কাকে বলে

যে সমস্ত স্বর ধ্বনি সমূহ উচ্চারণের সময় সবচেয়ে কম প্রসারিত ও উন্মুক্ত হয়, তাদেরকে সংবৃত স্বরধ্বনি বলে। যেমন- ই, উ।

বিবৃত স্বরধ্বনি কাকে বলে

যে সমস্ত স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় মুখদ্বার পুরোপুরি প্রসারিত হয়, সেসব স্বরধ্বনি গুলিকে বিবৃত স্বরধ্বনি বলে। যেমন আ।

উচ্চারণের স্থান অনুযায়ী স্বরধ্বনি আবার ছয় প্রকার । যেমন –

১ – কণ্ঠ্যধ্বনি

২ – তালব্যধ্বনি

৩ – ওষ্ঠ্যধ্বনি

৪ – কণ্ঠ্যতালব্যধ্বনি

৫ – কণ্ঠৌষ্ঠ্যধ্বনি

৬ – মূর্ধন্যধ্বনি

কণ্ঠ্যধ্বনি

যে সমস্ত ধ্বনির উচ্চারণ স্থান কণ্ঠনালির উপরিভাগ বা জিহ্বামূল, তাদের কণ্ঠ্যধ্বনি বলে। যেমন- অ, আ।

তালব্যধ্বনি

যে সমস্ত ধ্বনির উচ্চারণ স্থান তালু, তাদের তালব্য ধ্বনি বলে। যেমন – ই, ঈ, তালব্যধ্বনি।

ওষ্ঠ্যধ্বনি

যে সমস্ত ধ্বনির উচ্চারণ স্থান ওষ্ঠ, তাদের ওষ্ঠ্যধ্বনি বলে। যেমন:- উ, ঊ, ।

কণ্ঠ্যতালব্যধ্বনি

যে সমস্ত ধ্বনির উচ্চারণ স্থান কণ্ঠ এবং তালু উভয়ই, তাদের কণ্ঠ্যতালব্য ধ্বনি বলে। যেমন- এ, ঐ কণ্ঠ্যতালব্য ধ্বনি।

কণ্ঠৌষ্ঠ্যধ্বনি

যে সমস্ত ধ্বনির উচ্চারণ স্থান কণ্ঠ ও ওষ্ঠ, তাদের কণ্ঠৌষ্ঠ্য ধ্বনি বলে। যেমন- ও, ঔ কণ্ঠৌষ্ঠ্য ধ্বনি।

মূর্ধন্য ধ্বনি

যে সমস্ত ধ্বনির উচ্চারণ স্থান মূর্ধা বা তালুর অর্থভাগ, তাদের মূর্ধন্য ধ্বনি বলে। যেমন – ঋ।

ধ্বনি ও বর্ণ কাকে বলে

ধ্বনি

ভাষার মূল উপাদান হল ধ্বনি । ব্যাকরণের ভাষায় বাকযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত শব্দ বা আয়াজকেই ধ্বনি বলা হয় । অর্থাৎ পাখির কণ্ঠের কাকলি কিংবা রাস্তা ঘাটের বিভিন্ন আওয়াজ, এগুলো কিন্তু ধ্বনি নয় । ধ্বনি হবে বাকযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত অর্থপূর্ণ আওয়াজ । আর ধ্বনি ধ্বনির লিখিত রূপকে বলা হয় বর্ণ । অর্থাৎ অর্থবহ আওয়াজের লিখিত রূপ বর্ণ বলে পরিচিত । যখন আমরা উচ্চারণ করি অ, আ, ই, ঈ, তখন সেটি ধ্বনি । আর যখন অ, আ, ই, ঈ, এগুলিকে লিখিত রূপ দেই তখন হয়ে ওঠে বর্ণ । সুতরাং ধ্বনি আর বর্ণের মধ্যে পার্থক্য হল এই যে, ধ্বনি হল উচ্চারিত এবং বর্ণ হল লিখিত রূপ । এককথায় ধ্বনির উৎপত্তি বাকযন্ত্র ।

বাকযন্ত্র

ধ্বনি নির্দেশক লিখিত চিহ্নকে বর্ণ (Letter) বলে। যেমন – অ,আ, ই, ঈ, ক,খ, গ,ঘ ইত্যাদি।

বাংলা ভাষায় মোট ৫০টি বর্ণ রয়েছে। তার মধ্যে, অ থেকে ঔ পর্যন্ত মোট ১১টি স্বরবর্ণ এবং ক” থেকে -ঁ পর্যন্ত মোট ৩৯টি ব্যঞ্জনবর্ণ । স্বরবর্ণ এবং ব্যঞ্জনবর্ণকে একত্রে বর্ণমালা বলে। বাংলা ভাষায় বর্ণ ৫০টি এবং বর্ণমালা ১টি।

ধ্বনিতত্ত্ব কাকে বলে

বাংলা ব্যাকরণে ধ্বনি বা বর্ণের আলোচনাকে ধ্বনিতত্ত্ব বলে। ধ্বনি, ধ্বনির শ্রেণীবিভাগ, ধ্বনির উচ্চারণ, বর্ণ, বর্ণের প্রকারভেদ, বর্ণের উচ্চারণ, বর্ণবিন্যাস, ধ্বনি পরিবর্তন, ণত্ব ও ষত্ব বিধান সন্ধি ইত্যাদি ধ্বনিতত্ত্বের আলোচ্য বিষয়।

স্পর্শ ধ্বনি কাকে বলে

বাংলা বর্ণমালার যেসকল বর্ণগুলি উচ্চারণ করার সময় জিভের কোনো অংশের সাথে কণ্ঠ, তালু, মূর্ধা, দন্ত এবং ওষ্ঠের স্পর্শ ঘটে, সেই সকল বর্ণগুলিকে স্পর্শ বর্ণ বলে. অর্থাৎ যেসকল বর্ণগুলি উচ্চারণকালে জিভের সাথে মুখ গহ্বরের কোন না কোন অংশের স্পর্শ ঘটে, সেগুলিকে স্পর্শ বর্ণ বলে।

ক থেকে ম পর্যন্ত মোট ২৫টি বর্ণ স্পশ বর্ণের মধ্যে পরে কারণ এই ২৫টি বর্ণ উচ্চারণের সময় জিভের সাথে মুখ গহ্বরের কোন না কোন অংশের স্পর্শ ঘটে।

উচ্চারণ স্থানের নাম অনুসারে এগুলোকে ৫ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথাঃ

  • কন্ঠ্য ধ্বনিঃ  ক, খ, গ, ঘ, ঙ
  • তালব্য ধ্বনিঃ চ, ছ, জ, ঝ, ঞ
  • মূর্ধন্য ধ্বনিঃ ট, ঠ, ড, ঢ, ন
  • দন্ত্য ধ্বনিঃ ত, থ, দ, ধ, ন
  • ওষ্ঠ্য ধ্বনিঃ প, ফ, ব, ভ, ম

ঘোষ ধ্বনি কাকে বলে, ঘোষ ও অঘোষ ধ্বনি কাকে বলে

ঘোষ বর্ণ

যে বর্ণগুলো উচ্চারণ করতে ফুসফুস থেকে অপেক্ষাকৃত  অধিক বাতাস প্রবাহিত হয় এবং উচ্চারণ নিনাদিত হয় তাদের ঘোষ বর্ণ বলে।

বর্গের ৩য়-৪র্থ  বর্ণ  ঘোষ বর্ণঃ  গ-ঘ-জ-ঝ-ড-ঢ-দ-ধ-ব-ভ

অঘোষ বর্ণ

যে বর্ণগুলো উচ্চারণ করতে ফুসফুস থেকে অপেক্ষাকৃত  কম বাতাস প্রবাহিত হয় এবং উচ্চারণ নাদিত হয় তাদের অঘোষ বর্ণ বলে।

বর্গের ১ম ও ২য়  বর্ণ অঘোষ বর্ণঃ ক-খ-চ-ছ-ট-ঠ-ত-থ-প-ফ

অঘোষ ধ্বনি কাকে বলে

কোন কোন ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্রী অনুরণিত হয় না। তখন ধ্বনিটির উচ্চারণ গাম্ভীর্যহীন ও মৃদু হয়। এরূপ ধ্বনিকে অঘোষ ধ্বনি বলে।

মহাপ্রাণ ধ্বনি কাকে বলে

যেসকল ধ্বনি উচ্চারণের সময় নিঃশ্বাস জোরে সংযোজিত হয় অর্থাৎ উচ্চারণের সময় ফুসফুস থেকে বাতাস জোরে বের হয়, সেগুলোকে মহাপ্রাণ ধ্বনি বলে।

অল্পপ্রাণ ধ্বনি কাকে বলে

যেসকল ধ্বনি উচ্চারণের সময় নিঃশ্বাস জোরে সংযোজিত হয় না অথবা ফুসফুস থেকে বের হওয়াা বাতাসের জোর কম থাকে, সেগুলোকে অল্পপ্রাণ ধ্বনি বলা হয়।

পার্শ্বিক ধ্বনি কাকে বলে

যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় বাতাস জিহ্বার পেছনের দুপাশ থেকে বেরিয়ে আসে তাকে পার্শ্বিক ধ্বনি বলে।

ধ্বনি ও বর্ণের মধ্যে পার্থক্য

ধ্বনি ও বর্ণ বলতে অনেকে এক‌ই জিনিস বোঝেন। আসলে কিন্তু তা নয়। ধ্বনি ও বর্ণ পরস্পরের পরিপূরক, কিন্তু অভিন্ন নয়। নিচে আমরা ধ্বনি বর্ণের পার্থক্যগুলি দেখানো হলো-

ধ্বনিবর্ণ
ধ্বনি হলো ভাষার মূল উপাদান বর্ণ হলো ধ্বনি নির্দেশক প্রতিক বা চিহ্ন।
ধ্বনি সৃষ্টি হয় বাগ্‌যন্ত্রে।বর্ণকে অঙ্কন করা হয়।
ধ্বনি এক ধরনের আওয়াজ-সংকেত।বর্ণ এক ধরনের চিত্র-সংকেত।
ধ্বনি ক্ষণস্থায়ী। বর্ণ দীর্ঘস্থায়ী।
ধ্বনি হল ভাষার প্রাথমিক উপাদান।বর্ণ হল ভাষার একটি বিকল্প উপাদান।
ধ্বনির ভাব প্রকাশ ক্ষমতা অনেক বেশি।বর্ণের ভাব প্রকাশ ক্ষমতা ধ্বনির চেয়ে কম।
ধ্বনি কানে শোনা যায়। বর্ণকে চোখে দেখা যায়।
ধ্বনি ও বর্ণের মধ্যে পার্থক্য

ধ্বনি পরিবর্তন কাকে বলে

ধ্বনি পরিবর্তন বলতে স্বরধ্বনি এবং ব্যঞ্জনধ্বনির পরিবর্তনকেই বোঝায়।

চলমান জীবন প্রবাহে পরিবর্তনশীলতা একটি বাধ্যতামূলক বৈশিষ্ট্য, আর সেই পরিবর্তনশীলতাকে মানুষ প্রকাশ করে তার মৌখিক ভাষার মাধ্যমে, তাই তার পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী l যে কোনো প্রচলিত মৌখিক ভাষাই পরিবর্তনশীল l

ছোটবেলায় শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক মহাশয়ের আলোচনায় বার বার এসেছে “কোনো জাতির মৌখিক ভাষা বহমান নদীর মতো” তখন কথাটি একটি প্রবাদ বাক্যের মতো কানে বাজত, কিন্তু সাহিত্যের ছাত্র হওয়ায় ক্রমশ সেই প্রবাদের গূঢ় রহস্য ভেদ হচ্ছে, – নদী যেমন সময়ের সাথে সাথে এলো মেলো ভাবে তার চলার পথ বদলায়, তেমনি যুগ থেকে যুগান্তরে তার প্রকৃতি বদলায় l

নদী বদলায় তার স্রোত, ভাষা বদলায় তার ধ্বনি l নদীর স্রোত ভিন্নমুখী হলে যেমন নদীর গতিপথ বদলায়, তেমনি কালক্রমে মূল ভাষার ধ্বনি পরিবর্তন হতে হতে নতুন ভাষার পরিচিতি পায়, যা মান্য ভাষার অন্তর্গত কিন্তু অন্য নাম নিয়ে বাস্তবে ও ভাষার আলোচনায় আলোচিত হয় l

ধ্বনি পরিবর্তন, ধ্বনি পরিবর্তন কত প্রকার, ধ্বনি পরিবর্তনের উদাহরণ

আদি স্বরাগম

উচ্চারণের সুবিধার জন্য বা অন্য কোন কারণে শব্দের আদিতে স্বরধ্বনি আসলে তাকে বলে আদি স্বরাগম।

যেমন- স্ত্রী > ইস্ত্রি, স্কুল > ইস্কুল, স্টেশন > ইস্টিশন। এরূপ আস্তাবল, আস্পর্ধা ইত্যাদি।

মধ্য স্বরাগম, বিপ্রকর্ষ বা স্বরভক্তি

সময় সময় উচ্চারণের সুবিধার জন্য সংযুক্ত ব্যঞ্জনধ্বনির মাঝখানে স্বরধ্বনি আসে। এরূপ স্বরকে বলা হয় মধ্য স্বরাগম।

যেমন-
»  = রত্ন > রতন, ধর্ম > ধরম, স্বপ্ন > স্বপন, হর্ষ > হরষ ইত্যাদি।
»  = মুক্তা > মুকুতা, তুর্ক > তুরুক, ভ্রু > ভুরু।
বেঞ্চ > বেঞ্চি ইত্যাদি।

অন্ত্য স্বরাগম

কোন কোন সময় শব্দের শেষে অতিরিক্ত স্বরধ্বনি আসে। এরূপ স্বরাগমকে বলা হয় অন্ত্য স্বরাগম। যেমনঃ দিশ > দিশা, পােখত > পােক্ত, বেঞ্চ > বেঞ্চি ইত্যাদি।

অপিনিহিতি

পরের ই-কার ও উ-কার আগে উচ্চারিত হলে কিংবা যুক্তব্যঞ্জন ধ্বনির আগে ই-কার বা উ-কার উচ্চারিত হলে তাকে অপিনিহিতি বলে।
যেমন:- আজি > আইজ, সাধু>সাউধ, রাখিয়া > রাইখ্যা, বাক্য > বাইক্য।

অসমীকরণ

একই স্বরের পুনরাবৃত্তি দূর করার জন্যে শব্দের মাঝখানে যখন “আ” স্বরধ্বনি যুক্ত হয় তখন একে বলে অসমীকরণ।
যেমন:- ধপ + ধপ = ধপাধপ, টপ + টপ = টপাটপ ইত্যাদি।

স্বরসঙ্গতি

একটি স্বরধ্বনির প্রভাবে শব্দে অপর স্বরের পরিবর্তন ঘটলে তাকে স্বরসঙ্গতি বলে। যেমন- দেশী > দিশি, বিলাতি > বিলিতি ইত্যাদি ।

  • ক) প্রগত: আদিস্বর অনুযায়ী অন্ত্যস্বর পরিবর্তন হলে প্রগত স্বরসঙ্গতি হয়। যেমন- মূলা > মূলাে, শিকা > শিকে।
  • খ) পরাগত: অন্ত্যস্বরের কারণে আদ্যস্বর পরিবর্তিত হলে পরাগত স্বরসঙ্গতি হয় । দেশি > দিশি, নাকি > নিকি। আখাে > আখুয়া > এখাে।
  • গ) মধ্যগত: আদ্যস্বর ও অন্ত্যস্বর কিংবা আদ্যস্বর অথবা অন্ত্যস্বর অনুযায়ী মধ্যস্বর পরিবর্তিত হলে মধ্যগত স্বরসঙ্গতি হয়। যেমন- বিলাতি > বিলিতি ইত্যাদি।

সম্প্রকর্ষ বা স্বরলােপ

দ্রুত উচ্চারণের জন্য কেবল শব্দের আদি, অন্ত্য বা মধ্যবর্তী কোন স্বরধ্বনি লােপকে বলা হয় স্বরলােপ বা সম্প্রকর্ষ ।

যেমন- বসতি > বস্ তি, জানালা > জান্ লা ইত্যাদি ।

  • ক) আদি স্বরলােপ: পাদ + উদ্ ক > পা + উদক > পাদক, অলাবু > লাউ, উদ্ধার > উধার > ধার।
  • খ) মধ্যস্বর লােপ: অগুরু > অগ্রু, সুবর্ণ > স্বর্ণ, > রাধনা > রান্না, গৃহিণী > গিরিণী > গিরণী > গিন্নী।
  • গ) অন্ত্যস্বর লােপ: আশা > আশ, আজি > আজ।

এ ধ্বনি উচ্চারণের ৫টি নিয়ম উদাহরণসহ

  • ১. শব্দের প্রথমে যদি ‘এ’-কার থাকে এবং তারপরে ই, ঈ, উ, ঊ, এ, ও, য়, i, ল, শ এবং হ থাকলে সাধারণত ‘এ’ অবিকৃতভাবে উচ্চারিত হয়। যথা: একি (একি), দেখি (দেখি), মেকি (মেকি), ঢেঁকি (ঢেঁকি), বেশি (বেশি) ইত্যাদি।
  • ২. শব্দের আদ্য ‘এ’-কারের পরে যদি ং (অনুস্বার) ‘ঙ’ কিংবা ‘ঙ্গ’ থাকে এবং তার পরে ‘ই’ (হ্রস্ব বা দীর্ঘ) ‘উ’ (হ্রস্ব বা দীর্ঘ) অনুপস্থিত থাকে তবে সে ক্ষেত্রে ‘এ’, ‘অ্যা’-কারে রূপান্তরিত হয়। যথা: বেঙ [ব্যাঙ, কিন্তু ‘ই’ ()ি-কার সংযুক্ত হলে বেঙি], খেংরা (খ্যাংরো কিন্তু খেঙ্রি), বেঙ্গমা (ব্যাঙ্গোমা কিন্তু বেঙ্গোমি), লেংড়া (ল্যাঙ্ড়া কিন্তু লেঙ্ড়ি), নেংটা (ন্যাঙ্টা কিন্তু নেঙ্টি) ইত্যাদি।
  • ৩. ‘এ’-কারযুক্ত একাক্ষর ধাতুর সঙ্গে ‘আ’-প্রত্যয়যুক্ত হলে, সাধারণত সেই ‘এ’ কারের উচ্চারণ ‘অ্যা’ কার হয়ে থাকে। যথা: ক্ষেপা (ক্ষেপ্ + আ = খ্যাপা), ঠেলা (ঠেল্ + আ = ঠ্যালা) ইত্যাদি।
  • ৪. মূলে ‘ই’ কার বা ‘ঋ’-কারযুক্ত ধাতু প্রতিপদিকের সঙ্গে ‘অ’-কার যুক্ত হলে সেই ‘ই’-কার ‘এ’-কার রূপে উচ্চারিত হবে, কখনও ‘অ্যা’-কার হবে না। যথা: কেনা (কিন্ ধাতু থেকে) মেলা (< মিল্), লেখা (< লিখ্), গেলা (< গিল্), মেশা (< মিশ্) ইত্যাদি।
  • ৫. একাক্ষর (monosyllable) সর্বনাম পদের এ সাধারণত স্বাভাবিকভাবে অর্থাৎ অবিকৃত ‘এ’-কার রূপে উচ্চারিত হয়। যথা: কে, সে, এ, যে ইত্যাদি।
আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | ধ্বনি

Q1. একটি তাড়িত ধ্বনি হল

Ans – যেসব ধ্বনির উচ্চারণকালে কোনও উচ্চারক একটি উচ্চারণস্থানে দ্রুতভাবে সংকুচিত হয় সেগুলোকে তাড়িত বা তাড়নজাত ব্যঞ্জনধ্বনি বলা হয়। বাংলা ভাষার “ড়” ও “ঢ়” বর্ণের উচ্চারণরীতি তাড়িত।

Q2. খন্ড ধ্বনির অপর নাম

Ans – খণ্ড ধ্বনির অপর নাম বিভাজ্য ধ্বনি।

Q3. ধ্বনি শব্দের অর্থ কি

Ans ধ্বনি শব্দের অর্থ “সেই বস্তু যা শোনা যায়”

Q4. বাংলা ভাষায় মৌলিক ধ্বনি কয়টি

Ans – বাংলা ভাষায় ৩৭টি মৌলিক ধ্বনি রয়েছে।

Q5. ধ্বনি নির্দেশক চিহ্নকে কি বলে

Ans – ধ্বনি নির্দেশক চিহ্নকে বর্ণ বলা হয়।

Q6. বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত ধ্বনির সংখ্যা কয়টি

Ans – বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত ধ্বনির সংখ্যা ৪১টি । 

Q7. ধ্বনি উচ্চারণের উৎস কোনটি

Ans – ধ্বনি উচ্চারণের উৎস ফুসফুস।

Q8. স্পর্শ ধ্বনি কয়টি

Ans স্পর্শ ধ্বনি ২৫ টি ।

Q9. মৌলিক ধ্বনি কয়টি

Ans – বাংলা ভাষায় ৩৭টি মৌলিক ধ্বনি রয়েছে।

Q10. নাসিক্য ধ্বনি কয়টি

Ans – বর্তমান বাংলা ভাষায় তিনটি নাসিক্য ধ্বনিমূলগুলো আছেঃ “ঙ”, “ন”, ও “ম”।

Q11. কম্পনজাত ধ্বনি কোনটি

Ans – কম্পনজাত ধ্বনি “র”

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।