ক্রোমোজোম কাকে বলে, ক্রোমোজোমের কাজ

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

প্রশ্নপত্র

ক্রোমোজোম কাকে বলে

প্রতিটি কোষে অবস্থিত একপ্রকার তন্তময় বস্তু যা ক্ষারীয় রঞ্জক দ্বারা রঞ্জিত হয় তাকে ক্রোমোজোম বলা হয়। সকল জীবকোষের ক্রোমোজোম তন্তুর মত হলেও এদের আকৃতি কোষ বিভাজনের বিভিন্ন দশায় ও উপদশায় পরিবর্তিত হয়।

ব্যাকটেরিয়ার প্রোক্যারিওটিক নিউক্লিয়াসের মধ্যে একটি মাত্র ক্রোমোজোম থাকে। ক্রোমোজোমকে এর আকৃতি ও প্রকৃতি উন্নত জীব কোষের ক্রোমোজোমের তুলনায় অনেক সরল। ইউক্যারিওটিক উদ্ভিদ ও প্রাণী কোষে ক্রোমোজোমের আকৃতি এবং সংখ্যা বিভিন্ন প্রকারের হয়।

তবে একই প্রাণী ও একই উদ্ভিদের সকল দেহ কোশেই একই সংখ্যক ক্রোমোজোম থাকে। যেমন মানুষের যকৃত, বৃক্ষ এবং শ্বেত কণিকা থেকে ক্রোমোজোম পৃথক করলে তাদের সংখ্যা সকল ক্ষেত্রেই 46 টি হবে। মানুষের 46 টি ক্রোমোজোম এর মধ্যে তেইশটি বিভিন্ন আকারের ক্রোমোজোম থাকে। এদের বলা হয় একটি হ্যাপ্লয়েড সেট। যেহেতু প্রতিটি ক্রোমোজোম দুটি করে থাকে তাই দেহ কোষের ক্রোমোজোমের বলা হয় দুই সেট বা ডিপ্লয়েড।

সংজ্ঞাঃ

কোষের নিউক্লিয়াসে অবস্থিত অনুলিপন ক্ষমতা সম্পন্ন ক্ষুদ্রাঙ্গ যা বংশগতীয় উপাদান, মিউটেশন, প্রকরন ইত্যাদি কাজে ভূমিকা পালন করে তাকে ক্রোমোসোম বলে। ক্রোমোসোম অর্থ হলো রঞ্জিত দেহ বা রংধারনারী দেহ।

ক্রোমোজোম কয় প্রকার ও কি কি

বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ক্রোমোসোম দুই প্রকার। যথা

  • ১. অটোসোম বা দেহকোষ।
  • ২. সেক্স ক্রোমোসোম বা জনন কোষ।

১. অটোসোম : জীবের বৈশিষ্ট্য নির্ধারণকারী ক্রোমোসোমকে অটোসোম বলে। মানবদেহে ২২ জোড়া অটোসোম থাকে।

২. সেক্স ক্রোমোসোম : লিঙ্গ নির্ধারণকারী ক্রোমোসোমকে সেক্স ক্রোমোসোম বলে। মানবদেহে ১ জোড়া সেক্স ক্রোমোসোম থাকে।

সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে ক্রোমোসোমকে ৪ ভাগে ভাগ করা যায়।

i. মেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোসোম : যে ক্রোমোসোমের সেন্ট্রোমিয়ারটি একেবারে মাঝখানে অবস্থিত তাকে মেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোসোম বলে। এর দুই বাহু সমদৈর্ঘ্য বিশিষ্ট হয় এবং অ্যানাফেজ পর্যায়ে এর আকৃতি ইংরেজি ‘V’ অক্ষরের মতো হয়।

ii. সাব-মেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোসোম : যে ক্রোমোসোমের সেন্ট্রোমিয়ারটি মধ্যখান থেকে একটু এক পাশে অবস্থিত তাকে সাব-মেটাসেন্ট্রিক ক্রোমোসোম বলে। অ্যানাফেজ দশায় এরা ইংরেজি ‘L’ অক্ষরের মতো দেখায়।

iii. অ্যাক্রোসেন্ট্রিক ক্রোমোসোম : যে ক্রোমোসোমের সেন্ট্রোমিয়ারটি কোনো এক প্রান্তের কাছাকাছি থাকে তাকে অ্যাক্রোসেন্ট্রিক ক্রোমোসোম বলে। অ্যানাফেজ দশায় এদের অনেকটা ইংরেজি ‘J’ অক্ষরের মতো দেখায়।

iv. টেলোসেন্ট্রিক ক্রোমোসোম : যে ক্রোমোসোমের সেন্ট্রোমিয়ারটি একেবারে প্রান্তভাগে অবস্থিত তাকে টেলোসেন্ট্রিক ক্রোমোসোম বলে। অ্যানাফেজ দশায় একে ইংরেজি ‘I’ অক্ষরের মতো দেখায়।

সেন্ট্রোমিয়ারের সংখ্যা অনুযায়ী ক্রোমোজোম ৫ প্রকার। যথা-

  • ১. মনোসেন্ট্রিক -১টি সেন্ট্রোমিয়ার থাকে
  • ২. ডাইসেন্ট্রিক- ২টি সেন্ট্রোমিয়ার থাকে
  • ৩. পলিসেন্ট্রিক- ২ এর অধিক সেন্ট্রোমিয়ার থাকে
  • ৪. ডিফিউজড- সেন্ট্রোমিয়ার নির্দিষ্ট স্থানে সুস্পষ্টভাবে থাকে না
  • ৫. অ্যাসেন্ট্রিক- কোন সেন্ট্রোমিয়ার থাকে না।

ক্রোমোজোমের গঠন ও কাজ

একটি আদর্শ ক্রোমোসোম নিম্নোক্ত অংশের সমন্বয়ে গঠিত-

ক্রোমোজোমের গঠন, ক্রোমোজোম কিভাবে তৈরি হয়

ক্রোমোজোমের গঠনকে আমরা দুটি ভাগে ভাগ করতে পারি 

  • ১. ভৌতিক গঠন বা ক্রোমোজোমের ভৌত গঠন এবং
  • ২. ক্রোমোজোমের রাসায়নিক গঠন।

ক্রোমোজোমের ভৌত গঠন, ক্রোমোজোমের ভৌত গঠনকে আমরা এভাবেই বর্ণনা করতে পারি।

ক্রোমোজোম ভৌত গঠন অধ্যায়ন করার উপযুক্ত দশা হল মাইটোটিক মেটাফেজ দশা। এই মাইটোটিক মেটাফেজ দশায় একটি আদর্শ ক্রোমোজোমের গঠন নিম্নরূপ হয়:-

মেটাফেজ ক্রোমোজোম এর মধ্যে থাকে একটি মুখ্য খাঁজ (primary constriction) বা সেন্ট্রোমিয়ার এবং একটি গৌণ খাঁজ বা (secondary constriction)। সেন্ট্রোমিয়ার এর দুদিকে প্রসারিত থাকে ক্রোমোজোমের দুটি বাহু। প্রতিটি বাহু দুটি করে ক্রোমাটিডে বিভক্ত থাকে। এছাড়াও কোন কোন ক্রোমোজোমে গৌণ খাঁজের প্রান্তভাগে টেনিস বলের মত গোলাকার গঠন দেখা যায়, এদের নাম স্যাটেলাইট অঞ্চল। ক্রোমোজোমের ক্রোমাটিন গুলির প্রান্তকে বলা হয় টেলোমিয়ার

ক্রোমাটিড

ক্রোমোজোমের সেন্ট্রোমিয়ার অঞ্চলের দিকে প্রসারিত বাহুদের বলা হয় ক্রোমাটিড। সেন্ট্রোমিয়ারের প্রতি পাশের ক্রোমাটিড দুটি একই আকারের হয়ে থাকে। তবে সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থান অনুসারে একদিকের দুটি ক্রোমাটিড অপর পাশের দুটি ক্রোমাটিড থেকে ছোট বা বড় হতে পারে। ছোট বাহুর ক্রোমাটিডকে বলা হয় p এবং বড়ো বাহুর ক্রোমাটিডকে বলা হয় q।

মাইটোটিক কোষ বিভাজনের মেটাফেজ দশার প্রাথমিক পর্যায় পর্যন্ত সেন্ট্রোমিয়ার বিভাজিত হয় না। তাই ক্রোমাটিডগুলি একই সঙ্গে থাকে। তবে মেটাফেজের মধ্য পর্যায়ে সেন্ট্রোমিয়ার বিভাজিত হবার ফলে ক্রোমাটিডগুলিও পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। অ্যানাফেজ দশা প্রতিটি ক্রোমোজোমের ক্রোমাটিনগুলি স্পিন্ডলের দিকে গমন করে। সুতরাং মেটাফেজ ক্রোমোজোমের গঠনে দুটি করে ক্রোমাটিড থাকলেও অ্যানাফেজ ক্রোমোজোমে থাকে একটি করে ক্রোমাটিড।

ক্রোমোনেমা

কখনো কখনো কোষ বিভাজনের ইন্টারফেজ দশা এবং বিশেষত প্রোফেজ দশায় ক্রোমোজোমের গঠন অত্যন্ত সরু সুতোর মতো দেখায়। এই অবস্থায় এদের বলা হয় ক্রোমোনেমা। আসলে এরা ক্রোমাটিডের প্রাথমিক অবস্থা। বিজ্ঞানীদের ধারণা ক্রোমোনেমা এবং তার পূর্ববর্তী রূপ ক্রোমাটিড এর মধ্যে একটি মাত্র দ্বিতন্ত্রী DNA অণু প্রোটিনের সঙ্গে বিশেষভাবে যুক্ত অবস্থায় সমগ্র ক্রোমাটিড জুড়ে অবস্থান করে।

ক্রোমোমিয়ার

ইন্টারফেজ দশা আর ক্রোমোজোম গুলি জটিল অণুবীক্ষণ যন্ত্রে পর্যবেক্ষণ করলে এদের গায়ে দানার মতো উপাদান দেখতে পাওয়া যায়। এই উপাদানগুলিকে বলা হয় ক্রোমোমিয়ার। মেটাফেজ দশায় ক্রোমোজোম গুলি পেচিয়ে খুব ঘন হয়ে যায়।
তাই এই দশায় ক্রোমোমিয়ারগুলি দেখা যায় না।

সেন্ট্রোমিয়ার

মেটাফেজ ক্রোমোজোম এর কোন একটি অংশে একটি করে বিশেষ খাঁজ থাকে। এই অংশের নাম মুখ্য খাঁজ বা সেন্ট্রোমিয়ার। ক্ষারীয় রঞ্জক দিয়ে ক্রোমোজোমকে রঞ্জিত করলে সেন্ট্রোমিয়ার অংশটি অধিকমাত্রায় রঞ্জিত হয়।এজন্য সেন্ট্রোমিয়ার অঞ্চলটি হেটারোক্রোমাটিন অঞ্চল বলে চিহ্নিত হয়েছে।

কাইনেটোকোর

সেন্ট্রোমিয়ার এর পাশে অবস্থিত কাইনেটোকোর অংশটি দেখতে চাকতির মত হয়। এই চাকতি অংশেই মাইক্রোটিউবিউল গুলি যুক্ত থাকে। সাধারণত ৪ থেকে ৪০ টি মাইক্রোটিউবিউল কাইনেটোকোর অংশ যুক্ত হতে পারে। অধিকাংশ ক্রোমোজোমে একটি কাইনেটোকর থাকে। তাই একে বলা হয় মনোসেন্ত্রিক। তবে কিছু ক্ষেত্রে কাইনেটোকোর অংশটির কোন নির্দিষ্ট অবস্থান থাকে না ফলে মাইক্রোটিউবিউল গুলি সমগ্র ক্রোমোজোম জুড়ে ছড়িয়ে থাকে। এরূপ ক্রোমোজোমকে বলা হয় হলোসেন্ট্রিক।

টেলোমিয়ার

ক্রোমোজোমের প্রান্ত বা অন্তিম ভাগকে বলা হয় টেলোমিয়ার। বিজ্ঞানী মুলার সর্বপ্রথম টেলোমিয়ার অঞ্চলের উল্লেখ করেন।

গৌণ খাঁজ

কোন কোন ক্রোমোজোমের মুখ্য খাঁজে অতিরিক্ত একটি খাজ দেখা যায়। একে বলা হয় গৌণ খাঁজ। এই অংশটিতে কাইনেটোকোর থাকে না। ফলে মাইক্রোটিউবিউল এই অংশের যুক্ত হয় না।

নিউক্লিওলার অর্গানাইজার

কোন কোন ক্ষেত্রে গৌণ খাঁজের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে রাইবোজোমাল RNA তৈরীর জন্য নির্দিষ্ট থাকে। এই জিনগুলি খুব সক্রিয় হওয়ায় গৌণ খাজের উৎপত্তি হয়ে থাকে। গৌণ খাঁজের এই অংশকে বলা হয় নিউক্লিওলার অর্গানাইজার।

স্যাটেলাইট

গোলাকার আকৃতির এক প্রকার গঠন গৌণ খাঁজের শেষ প্রান্তে কোন কোন ক্রোমোজোমে দেখা যায় এদেরকে স্যাটেলাইট বলে।

ক্রোমোজোম চিত্র

ক্রোমোজোমের রাসায়নিক গঠন

ক্রোমোজোমের রাসায়নিক গঠন নিচে বর্ণনা করা হল—–

প্রাণী কোষের নিউক্লিয়াসে ডিটারজেন্টের সাহায্যে বিক্রিয়া করিয়ে সেন্ট্রিফিউজ যন্ত্রে ঘূর্ণন করলে ক্রোমাটিন বস্তু অধঃপতিত হয়।

ক্রোমাটিন বস্তুদের পুনরায় রাসায়নিক বিশ্লেষণ করে জানা গেছে যে এটি DNA এবং প্রোটিনের সমন্বয়ে গঠিত। প্রোটিনের মধ্যে হিস্টোন প্রোটিনগুলিই অন্যতম উপাদান। হিস্টোন ক্ষারধর্মী প্রোটিন। কারণ এতে অধিক সংখ্যায় ক্ষারীয় অ্যামাইনো এসিড যেমন আরজিনিন এবং লাইসিন থাকে।

ক্রোমাটিনে ৫ প্রকার হিস্টোন প্রোটিন থাকে। এদের নাম H1, H2A, H2B, H3 এবং H4। ক্রোমাটিনে হিস্টোনের সমপরিমানে অহিস্টোন প্রোটিন থাকে। তবে হিস্টোন প্রোটিনগুলি ক্রোমাটিনের আকৃতি তৈরিতে অংশ নিয়ে থাকে।

নিউক্লিওজোম

ক্রোমাটিন অসংখ্য একক নিয়ে গঠিত। এককদের নাম নিউক্লিওজোম। রজার কর্নবার্গ হাজার ১৯৭৪ খ্রীস্টাব্দে সর্বপ্রথম নিউক্লিওজোমের মডেল প্রস্তুত করেন। তিনি উৎসেচকের সাহায্যে ক্রোমাটিনকে আংশিকভাবে পাতিত করে ২০০ বেস জোড়া যুক্ত খন্ডক দেখতে পান।

পরবর্তী সময়ে ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যেও ২০০ বেস জোড়া যুক্ত DNA খন্ডক দেখা সম্ভব হয়। এই খন্ডক ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ এর নিচে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দানার মত দেখায়। এই দানাদের V বডির বা নিউক্লিওজোম বলে বর্ণনা করা হয়েছে।

২০০ বেস জোড়া যুক্ত DNA কে উৎসেচক দিয়ে আরো বেশি পাচিত করলে আরো ছোট আকৃতির দানাদার গঠন পাওয়া যায়, যা উৎসেচক দিয়ে আর পাচিত হয় না। এই অবস্থার দানাদের কোরপার্টিকেল বলা হয়। প্রতিটি কোর পার্টিকেলে ১৪৬ টি জোড়া বেস যুক্ত DNA থাকে।

এই DNA দুটি করে H2A, H2B, H3, H4 হিস্টোন দ্বারা গঠিত অক্টামার এককে ১.৬৫ বার বেষ্টন করে থাকে। H1 হিস্টোন নিউক্লিওজোম কোর পার্টিক্যালের ঠিক বাইরে অবস্থান করে। ক্রোমাটিনের এইরূপ একককে বলা হয় ক্রোমাটোজোম। প্রতিটি ক্রোমোজোমের ব্যাস ১১ ন্যানোমিটার এবং উচ্চতা ৬ ন্যানোমিটার। পাশাপাশি অবস্থিত দুটি নিউক্লিওজোম এর মধ্যে কিছু পরিমাণ DNA থাকে। এই DNA কে স্পেসার বা লিংকার DNA বলে।

ক্রোমোজোমের রাসায়নিক উপাদান

ক্রোমোজোমের গঠন বিষয়ে ভালভাবে বুঝতে ক্রোমোজোমের রাসায়নিক উপাদান সম্বন্ধে জানা প্রয়োজন।

ব্যাকটেরিয়া থেকে মানুষ পর্যন্ত সকল জীব কোষেই ক্রোমোজোম থাকে। তবে ব্যাকটেরিয়ার ক্রোমোজোমের তুলনায় অন্যান্য বহুকোষী জীবের ক্রোমোজোমের আকার, সংখ্যা এবং রাসায়নিক গঠন ভিন্ন ধরনের হয়। ক্রোমোজোমের রাসায়নিক বিশ্লেষণ করলে এতে প্রধান দুটি উপাদান পাওয়া যায়। যথা নিউক্লিক অ্যাসিড এবং প্রোটিন। নিউক্লিক এসিডের মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগের অধিক থাকে DNA এবং বাকি অংশ RNA ।

প্রোটিনদের মধ্যে ক্রোমোজোমের মূল গঠনে অধিকমাত্রায় হিস্টোন বা বেসিক প্রোটিন পাওয়া যায়। অহিস্টোন বা এসিড প্রোটিন থাকে খুবই সামান্য। ইঁদুরের যকৃৎ কোষের ক্রোমাটিন বস্তু রাসায়নিক বিশ্লেষণ করে এতে ১:১ অনুপাত হিস্টোন প্রোটিন এবং DNA পাওয়া গেছে। অপরদিকে হিস্টোন প্রোটিন এবং DNA পাওয়া গেছে ০.৬ঃ১ অনুপাতে এবং RNA ও DNA পাওয়া গেছে ০.১ঃ১ অনুপাতে।

ব্যাকটেরিয়ার ক্রোমোজোমের ইউক্যারিওটিক কোষের মত হিস্টোন প্রোটিন পাওয়া যায় না। তাই ব্যাকটেরিয়ার ক্রোমোজোমকে নগ্ন (naked) ক্রোমোজোম বলে। ব্যাকটেরিয়ার ক্রোমোজোম থেকে DNA পৃথক করলে ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে দেখা যায় যে এই DNA বিশেষভাবে কুণ্ডলী তৈরি করে থাকে।

ব্যাকটেরিয়া DNA তে সকল অংশ থেকেই প্রোটিন তৈরির সংকেত গঠিত হয়ে থাকে। এর তুলনায় প্রাণী কোষের DNA তে বিশেষত মানুষের DNA একটি বৃহৎ অংশ থেকে প্রোটিন তৈরীর কোন সংকেত গঠিত হয় না। মানুষের ক্রোমোজোমের DNAতে 3×10⁹ বেস জোড়া আছে। এরা আনুমানিক এক লক্ষ জিন তৈরি করতে পারে। তবে এই জিনের মধ্যে কেবল মাত্র ৩% জিন কার্যকরী প্রোটিন তৈরি করে।

যেহেতু ক্রোমোজোমের অন্যতম রাসায়নিক উপকরণ এই হচ্ছে DNA তাই ক্রোমোজোম আসলে জিনের সংগঠক এবং বাহক রূপে কাজ করে।

আরো পড়তে: উদ্ভিদ কাকে বলে, উদ্ভিদ কোষ কাকে বলে

ক্রোমোজোমের কাজ

ক্রোমোজোমের কাজ হলো মাতাপিতা হতে জিন সন্তানসন্ততিতে বহন করে নিয়ে যাওয়া। মানুষের চোখের রং, চুলের প্রকৃতি, চামড়ার গঠন ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য ক্রোমোজোম কর্তৃক বাহিত হয়ে বংশগতির ধারা অক্ষুন্ন রাখে।

এ কারণে ক্রোমোজোমকে বংশগতির ভৌতভিত্তি (Physical basis of heredity) বলে আখ্যায়িত করা হয়।

ক্রোমোসোম এর কাজ নিচে তুলে ধরা হলো–

  • বংশগতির বৈশিষ্ট্য ধারণ করে।
  • DNA ধারণ করে।
  • জীবের জৈব রাসায়নিক ও শরীরবৃত্তিক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
  • কোষ বিভাজনে অংশগ্রহণ করে।

ক্রোমোজোম কে আবিষ্কার করেন

বিজ্ঞানী স্ট্রেসবার্জার(Strasburger) সর্বপ্রথম 1875 সালে ক্রোমোজোম আবিষ্কার করেন ।

১৮৭৫ সালে স্ট্রেসবার্জার ক্রোমোসোম আবিষ্কার করেন এ ওয়েলডেয়ার ১৮৮৮ সালে ক্রোমোসোম নামকরন করেন।

সেক্স ক্রোমোজোম কাকে বলে

যে ক্রোমোজোম মানুষের জনন কার্যে সহায়তা করে এবং লিঙ্গ নির্ধারনে ভুমিকা রাখে তাকে সেক্স ক্রোমোজোম বলে ।

যৌন বৈশিষ্ট্য নিয়ন্ত্রণকারী ক্রোমোজোমকে যৌন বা লিঙ্গ নির্ধারক ক্রোমোজোম (Sex Chromosome) বলে।

হোমোলোগাস ক্রোমোজোম

যে কোনো ডিপ্লয়েড (2n)কোষে যেকোনো একটি ক্রোমোজোম ঐকোষের কোনো না কোনো একটি ক্রোমোজোমের সঙ্গে আকৃতি গত ভাবে (অর্থাৎ সেত্রোমিয়ার এর অবস্থান , বাহুর দৈর্ঘ্য ইত্যাদি ))একই এবং এই ক্রোমোজোম জোড়ার প্রতিটিতে জিনের একই সজ্জা ক্রম থাকে , এদেরপরস্পরকে একে অপরে সমসঙ্গস্থ ক্রোমোজোম বা হোমোলোগাস ক্রোমোজোম বলে ।

মানুষের প্রতিটি দেহকোষে কয়টি ক্রোমোজোম রয়েছে

মানবদেহে ২৩ জোড়া বা ৪৬টি ক্রোমোসোম থাকে। এই ৪৬টি ক্রোমোসোমের মধ্যে ৪৪টি বা ২২ জোড়া অটোসোম এবং ২টি বা ১ জোড়া সেক্স ক্রোমোসোম।

এই 23 জোড়া ক্রোমোজোমের মধ্যে এক জোড়া সেক্স ক্রোমোজোম থাকে যা আপনি  পুরুষ না  মহিলা তা নির্বাচন করে । মেয়েদের ক্ষেত্রে XX এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে XY থাকে ।

জনন কোষে ক্রোমোজোম সংখ্যা কত

দেহের জনন কোষকে গ্যামেট বলা হয়।

মানুষের দেহকোষে অটোজমের সংখ্যা ৪৪টি বা ২২ জোড়া এবং যৌন বা লিঙ্গ নির্ধারক ক্রোমোজোমের সংখ্যা ২টি বা ১ জোড়া এবং জনন কোষে বা শুক্রাণু বা ডিম্বাণুতে অটোজমের সংখ্যা ২২ জোড়া এবং যৌন বা লিঙ্গ নির্ধারক ক্রোমোজোমের সংখ্যা ১ জোড়া। সেগুলো হলো X এবং Y। মহিলাদের গ্যামেটে XX এবং পুরুষদের গ্যামেটে XY ক্রোমোজোম থাকে।

x ক্রোমোজোম y ক্রোমোজোমের চেয়ে কত গুন বড়

X ক্রোমোজোম y ক্রোমোজোমের চেয়ে গুন বড় এটি সংখ্যা উপর নির্ভর করবে  ।নারীর কোষের দুটা ক্রোমোজমই হলো X অর্থাৎ XX। আর পুরুষের XY। Y ক্রোমোজম পুরুষালি প্রতীক আর X হলো নারীবাচক এর প্রতকি । Y ক্রোমোজোমের গুণ একটাই।

xy মানে হল পুরুষ ক্রমোজোম ।যা প্রতিটি পুরুষের ভিতরে থাকা xy  ক্রোমোজোম। xx এই ক্রোমোজোম টি একটি মেয়ের ভিতরে থাকে।

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | ক্রোমোজোম

Q1. ক্রোমোজোম কি

Ans – কোষের নিউক্লিয়াসের ভেতর অবস্থিত নিউক্লিয় জালক থেকে উৎপন্ন নিউক্লিক অ্যাসিড ও প্রোটিন দিয়ে গঠিত যে-সুতোর মতো অংশ জীবদেহের বংশগত বৈশিষ্ট বহন করে এবং জীবের এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে পরিবাহিত করে, তাকে ক্রোমোজোম বলে।

Q2. ক্রোমোজোমের প্রধান উপাদান কোনটি

Ans – ক্রোমজমের প্রধান উপাদান DNA।
ক্রোমোজোম ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক এসিড বা ডিএনএ বা জীন অণু ধারণ করে এবং ডিএনএ -এর মাধ্যমে প্রোটিন সংশ্লেষ করে। এটাই মুলত ক্রোমোজোমের প্রধান উপাদান।

Q3. ক্রোমোজোমের দ্বিত্বন হয় কোন পর্যায়ে

Ans – আন্যাফেজ ধাপে ক্রোমোজোমের দ্বিত্বন হয়।

Q4. স্যাটেলাইট যুক্ত ক্রোমোজোম কে কি বলে

Ans – স্যাটেলাইট বিশিষ্ট ক্রোমোজোমকে স্যাট ক্রোমোজোম বলে।

Q5. সেন্ট্রোমিয়ার ক্রোমোজোমের শেষপ্রান্তে থাকলে তাকে কি বলে

Ans – সেন্ট্রোমিয়ার ক্রোমোজোমের শেষপ্রান্তে থাকলে তাকে টেলোসেন্ট্রিক বলে।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।