Site icon prosnouttor

লর্ড মাউন্টব্যাটেন কে ছিলেন, মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা কি, মাউন্টব্যাটেন প্রস্তাব কি

লর্ড মাউন্টব্যাটেন কে ছিলেন, মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা কি, মাউন্টব্যাটেন প্রস্তাব কি
আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

লর্ড মাউন্টব্যাটেন কে ছিলেন

মাউন্টব্যাটেন, লর্ড (১৯০০-১৯৭৯) ১৯৪৭ সালের মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত ভারতের ভাইসরয় ও গভর্নর জেনারেল। লুই মাউন্টব্যাটেন ১৯০০ সালের ২৫ জুন ইংল্যান্ডের উইন্ডসর (Windsor)-এ জন্মগ্রহণ করেন। প্রিন্স লুই ব্যাটেনবার্গ ও রাণী ভিক্টোরিয়ার পৌত্রী প্রিন্সেস ভিক্টোরিয়া অব হেস্-এর চতুর্থ পুত্র লর্ড মাউন্টব্যাটেন ১৯১৩ সালে রাজকীয় নৌবাহিনীতে প্রবেশ করেন। ১৯২১ সালে প্রিন্স অব ওয়েলস্-এর সহকারী (aide-de-camp) নিযুক্ত হওয়ার আগে তিনি নৌবাহিনীর বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ১৯৪৩ সালে লর্ড দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মিত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক হিসেবে সাফল্যের সঙ্গে জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনা করেন এবং বার্মা পুনরুদ্ধার করেন। ১৯৪৭ সালের মার্চ মাসে তিনি ভারতের ভাইসরয় নিযুক্ত হন এবং একই বছরের মধ্যআগস্ট পর্যন্ত এই পদে আসীন থাকেন। ভাইসরয় হিসেবে তাঁর কার্যকাল সংক্ষিপ্ত হলেও এই সময়ে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সেসব সিদ্ধান্তের মধ্যে সর্বাধিক উল্লেখযোগ্য হচ্ছে উপমহাদেশের বিভক্তি এবং ভারত ও পাকিস্তানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর।

লর্ড স্বাধীন ভারতের প্রথম গভর্নর জেনারেল নিযুক্ত হন। এই পদে আসীন থাকাকালে (১৯৪৭-এর আগস্ট থেকে ১৯৪৮-এর জুন পর্যন্ত) তিনি ভারতীয় রাজন্যবর্গকে হয় ভারতীয় ইউনিয়ন, না হয় পাকিস্তানের সঙ্গে একীভূত হতে উদ্বুদ্ধ করেন।

তাঁর সময়ে কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যখন সংঘর্ষ বাঁধে তখন তিনি ভারত সরকারকে বিরোধটির শান্তিপূর্ণ মীমাংসার জন্য জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উত্থাপনের পরামর্শ দেন। তখন থেকে কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে।

মাউন্টব্যাটেন ১৯৪৭ সালে ‘আর্ল’ উপাধি প্রাপ্ত হন। ১৯৪৮ সালে দেশে ফিরে তিনি ব্রিটিশ নৌবাহিনীতে একাধিক উচ্চ পদে আসীন হন। ১৯৫০-৫২ সালে চতুর্থ ‘সি লর্ড’, ১৯৫২-৫৪ সালে ভূমধ্যসাগরীয় নৌবহরের প্রধান এবং ১৯৫৫ থেকে ১৯৫৯ পর্যন্ত প্রথম ‘সি লর্ড’ এগুলির অন্যতম। ১৯৫৬ সালে তিনি নৌবহরের অ্যাডমিরাল হন এবং ১৯৫৯ থেকে ১৯৬৫ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষা প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মাউন্টব্যাটেন কর্মজীবন থেকে অবসর নেওয়ার পরও ভারত বিষয়ে যথেষ্ট আগ্রহী ছিলেন। তিনি ১৯৭৯ সালের ২৭ আগস্ট আয়ারল্যান্ডের অদূরে ডোনেগাল বে-তে তাঁর নৌযানে এক বিস্ফোরণে নিহত হন।

মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা কি

মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা, যা আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটিশ ভারতের বিভাজনের জন্য মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা নামে পরিচিত, ভারতীয় ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় ছিল। ভারতের শেষ ভাইসরয় লর্ড লুই মাউন্টব্যাটেনের প্রস্তাবিত, এই পরিকল্পনাটি 1947 সালে ব্রিটিশ ভারতকে দুটি স্বাধীন দেশ ভারত ও পাকিস্তানে ভাগ করার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।

ভারত ভাগ কোনও নতুন ধারণা ছিল না। ব্রিটিশরা 1858 সালে তাদের শাসনের শুরু থেকেই অবিভক্ত ভারতের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছিল কিন্তু জড়িত সমস্ত পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য সমাধান নিয়ে আসতে ব্যর্থ হয়েছিল। মুসলিমরা একটি ইসলামী রাষ্ট্র চেয়েছিল, যখন হিন্দুরা একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র চেয়েছিল, তা সে সংখ্যালঘুদের জন্য বিশেষ সুযোগ-সুবিধা বা তাদের ছাড়াই হোক না কেন; শিখরা একটি স্বাধীন পাঞ্জাব চেয়েছিল; এবং খ্রিস্টান এবং জরথুস্ট্রিয়ানদের মতো অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের কী হবে সে নিয়েও যথেষ্ট চিন্তা ছিল। 

দেশভাগের সময় হিন্দু ও মুসলিমরা যাতে একে অপরকে হত্যা না করে, তা নিশ্চিত করাই ছিল এই পরিকল্পনার লক্ষ্য।

মাউন্টব্যাটেন প্রস্তাব কি, মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা বিভিন্ন দিক গুলি আলোচনা করো

জিন্নার পাকিস্তান রাষ্ট্রের দাবি এবং তাতে জওহরলাল ও প্যাটেলের সম্মতি থাকায় মাউন্টব্যাটেনের উপদেষ্টা ইসমে ভারতভাগের পরিকল্পনা ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাঠান (১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ৬ মে)। পার্লামেন্টে প্রস্তাবটি ‘ভারতীয় স্বাধীনতা আইন রূপে পাস হয় (যদিও রাজকীয় সম্মতি লাভ করে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ১৮ জুলাই) যা ‘মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা’ হিসেবে পরিচিত ছিল।

বিভিন্ন প্রস্তাব: মাউন্টব্যাটেনের প্রস্তাবে বলা হয়ㅡ

মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা বৈশিষ্ট্য

মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনার গুরুত্ব

মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনাটি অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে কারণ এটি ভারতের স্বাধীনতার সংগ্রামের সমাপ্তি এবং ভারত ও পাকিস্তানের আধুনিক দেশগুলির ভিত্তি স্থাপন করেছিল। এটির লক্ষ্য ছিল হিন্দু ও মুসলমানদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা মোকাবেলা করা, পাশাপাশি ব্রিটিশ শাসন থেকে ভারতীয় হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য একটি রোডম্যাপ প্রদান করা।

মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা মূল বিষয় কি ছিল

দেশব্যাপী চরম উত্তেজনার মধ্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট এটলি ঘোষণা করেন যে, ব্রিটিশ সরকার 1948 খ্রিস্টাব্দের জুন মাসের মধ্যে ভারতীয়দের হাতে ক্ষমতা প্রত্যার্পণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন । এ বিষয়ে প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করার জন্য লর্ড মাউন্টব্যাটেনকে দায়িত্ব দেওয়া হয় ।

1947 খ্রিস্টাব্দের 24 শে মার্চ লর্ড ওয়াভেলের স্থলাভিষিক্ত হয়ে লর্ড মাউন্টব্যাটেন দাঙ্গাবিধ্বস্ত ভারতে বড়লাট হয়ে আসেন । তিনি কংগ্রেস ও মুসলিম নেতাদের বোঝালেন যে, দেশবিভাগ অনভিপ্রেত হলেও তৎকালীন রাজনৈতিক ও সাম্প্রদায়িক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে সব পক্ষেরই উচিত তা মেনে নেওয়া ।

মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনার ফলাফল

মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনার মাধ্যমে ভারত বিভাজন পদ্ধতি

[1] শীর্ষনেতৃবর্গের সঙ্গে আলােচনার সূত্রে: ভাইসরয় মাউন্টব্যাটেন প্রায় দেড় মাসের মধ্যে (১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২৪ মার্চ থেকে ৬ মে মধ্যে) গান্ধিজি, জওহরলাল, বল্লভভাই প্যাটেল, জিন্না ও দেশীয় রাজাদের সঙ্গে প্রায় ১৩৩ বার বৈঠকে বসেন। ভারত বিভাজন আটকানাের বিভিন্ন উদ্যোগ সত্ত্বেও জিন্না তাঁর পাকিস্তান দাবিতে অনড় থাকেন। মাউন্টব্যাটেন উপলব্ধি করেন যে, ক্যাবিনেট মিশন বা মন্ত্রী মিশন নির্ধারিত ব্যবস্থাপনার পরিবর্তে এক বিকল্প পরিকল্পনা রচনা করা দরকার।

[2] বলকান পরিকল্পনা রচনার মাধ্যমে: বিকল্প পরিকল্পনা হিসেবে মাউন্টব্যাটেন বলকান পরিকল্পনা (Plan Balkan) অনুসরণ করেন। এই পরিকল্পনায় পাঞ্জাব ও বাংলা ভাগের প্রস্তাব রাখা হয় এবং বলা হয় যেসকল প্রদেশ সাংবিধানিক সভায় যােগ দেবে তাদেরও ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। কিন্তু নেহরু ও জিন্না এই পরিকল্পনাকে গ্রহণ না করায় বলকান পরিকল্পনা তার কার্যকারিতা হারায়।

[3] প্ল্যান পার্টিশানের রূপায়ণের দ্বারা: মাউন্টব্যাটেন ভারত বিভাজন লক্ষ্যে প্ল্যান পার্টিশান নামক এক পরিকল্পনা পেশ করেন। নেহরু ও ভি. পি. মেননের (রায়বাহুদুর মেননের) সাহায্য নিয়ে তিনি এই পরিকল্পনা রচনা করেন। এই পরিকল্পনায় বলা হয় ভারত ও পাকিস্তান দু-পক্ষের ডােমিনিয়ন সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে।

[4] ভারতীয় স্বাধীনতা আইন পাসের মাধ্যমে: মাউন্টব্যাটেনের প্রস্তাব মেনে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় স্বাধীনতা বিল রচনা করে। ব্রিটেনের আইনসভায় পাস হওয়ার (১৬ জুলাই) পর সম্রাট ষষ্ঠ জর্জ বিলটিতে সম্মতি জ্ঞাপন করেন (১৮ জুলাই)। বিলটি আইনে পরিণত হলে বড়লাট মাউন্টব্যাটেন তা কার্যকর করে ইন্ডিয়া ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন ডােমানিয়নের প্রতিষ্ঠা ঘটান।

[5] কংগ্রেস ও লিগের সাহায্য নিয়ে: গান্ধিজি ও মৌলানা আজাদ দেশভাগের ঘাের বিরােধী হলেও নেহরু ও প্যাটেলের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস কার্যকরী সমিতি শেষপর্যন্ত ভারত বিভাজনে সায় দিয়েছিল। মুসলিম লিগও মাউন্টব্যাটেন প্রস্তাব মেনে নিলে ভারত বিভাজন সম্ভব হয়।

মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা বিশ্লেষণ

মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা কৌশলগত প্রতারণার একটি মাস্টারপিস ছিল।

আরো অন্যান্য সরকারি স্কিম সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা

Q1. মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা কবে প্রকাশিত হয়

Ans – পার্লামেন্টে প্রস্তাবটি ‘ ভারতীয় স্বাধীনতা আইন ‘ রূপে পাস হয় ( ১৯৪৭ খ্রি. ১৮ জুলাই ) , যা ‘ মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা ‘ হিসেবে পরিচিত ।

Q2. মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা কবে ঘোষিত হয়

Ans – ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২৪শে মার্চ লর্ড লুই মাউন্টব্যাটেন ভারতের বড়লাটের কার্যভার গ্রহণ করেন। বহু চেষ্টা করেও তিনি ভারতের অখণ্ডতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হন এবং অবশেষে ৩রা জুন তিনি স্পষ্টভাবে ভারত বিভাগের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। তাঁর এই ঘোষণা বা পরিকল্পনা ‘মাউন্টব্যাটেন প্রস্তাব’ বা ‘মাউন্টব্যাটেন রোয়েদাদ’ নামে পরিচিত।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে
Exit mobile version