- উপভাষা কি
- উপভাষা কাকে বলে
- উপভাষা কাকে বলে কয় প্রকার ও কী কী, উপভাষা কয়টি ও কি কি
- উপভাষার বৈশিষ্ট্য
- বাংলা ভাষার উপভাষা কয়টি ও কি কি, বাংলা উপভাষা কয়টি ও কি কি
- বঙ্গালী উপভাষার বৈশিষ্ট্য
- অভিশ্রুতি কোন উপভাষার বৈশিষ্ট্য, অভিশ্রুতি যে উপভাষার বৈশিষ্ট্য
- রাঢ়ী উপভাষা কাকে বলে, কেন্দ্রীয় উপভাষা কাকে বলে
- রাঢ়ী উপভাষার বৈশিষ্ট্য
- বরেন্দ্রী উপভাষার বৈশিষ্ট্য
- সামাজিক উপভাষা কাকে বলে
- কামরূপী উপভাষা কোন কোন অঞ্চলে প্রচলিত
- রাঢ়ী উপভাষার ধ্বনিতাত্ত্বিক ও রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য
- ভাষা ও উপভাষার মধ্যে পার্থক্য
- FAQ | উপভাষা
উপভাষা কি
উপভাষা প্রমিত ভাষার (Standard Language) পাশাপাশি প্রচলিত অঞ্চলবিশেষের জনগোষ্ঠী কর্তৃক ব্যবহূত আঞ্চলিক ভাষা। পৃথিবীর সর্বত্রই প্রমিত ভাষার পাশাপাশি এক বা একাধিক আঞ্চলিক ভাষা বা উপভাষা (Dialect) ব্যবহূত হয়ে থাকে। প্রমিত ভাষার সঙ্গে উপভাষার ব্যবধান ধ্বনি, রূপমূল, উচ্চারণ ও ব্যাকরণগত কাঠামোর মধ্যে নিহিত থাকে। সাধারণত প্রমিত ভাষায় ভাষাভঙ্গির সংখ্যা বৃদ্ধি, ভৌগোলিক ব্যবধান এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক শ্রেণিবিন্যাসগত পার্থক্যের কারণে উপভাষার সৃষ্টি হয়। প্রমিত ভাষা দেশের সর্বস্তরে ব্যবহূত হয়; লিখিত পদ্ধতির ক্ষেত্রেও তা অনুসৃত হয়, কিন্তু উপভাষার ব্যবহার কেবল বিশেষ অঞ্চলের জনসাধারণের মধ্যেই সীমিত থাকে।
উপভাষা কাকে বলে
উপভাষা কথ্য ভাষার পাশাপাশি প্রচলিত অঞ্চলবিশেষের জনগোষ্ঠী কর্তৃক ব্যবহূত আঞ্চলিক ভাষা। পৃথিবীর সর্বত্রই উপভাষার ব্যবহার রয়েছে । কথ্য ভাষার সাথে উপভাষার পার্থক্য ধ্বনি, রূপমূল, উচ্চারণ ও ব্যাকরণগত কাঠামোর মধ্যে নিহিত থাকে । উপভাষা দেশের মধ্যে কোন বিশেষ অঞ্চলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে ।
ইংরেজি ‘ Dialect ‘ শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ হলো ‘ উপভাষা ‘। উপভাষার উপ সর্গটির অর্থ হচ্ছে সাদৃশ্য। মানে যা ভাষার নিকটবর্তী, ভাষার মতো বা ভাষা সদৃশ তাকেই উপভাষা বলে।
ড. আ. মোর্শেদের মতে, উপভাষা হচ্ছে চলিত ভাষার একটি উপরূপ, যা চলিত ভাষাভাষীদের চেয়ে কম অঞ্চলে বা নিজস্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, ড. সুকুমার সেন, অতীন্দ্র মজুমদার ইত্যাদি অধিকাংশ পন্ডিতগণেরই একই মত পোষণ করেছেন।
উপভাষার সংজ্ঞা
উপভাষা হল একটি ভাষার অন্তর্গত এমন একটি বিশেষ রূপ যা একটি বিশেষ অঞ্চলের মুখে প্রচলিত থাকে যার সঙ্গে সেই আদর্শ ভাষার বেশ কিছু পার্থক্য থাকে।
উপভাষা কাকে বলে কয় প্রকার ও কী কী, উপভাষা কয়টি ও কি কি
উৎপত্তির কারণ অনুযায়ী উপভাষাগুলিকে প্রধানত তিন-ভাগে ভাগ করা যেতে পারে-
- আঞ্চলিক উপভাষা,
- সামাজিক উপভাষা ও
- বিভাষা।
আঞ্চলিক উপভাষা: কোনাে ভাষা যদি বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে ব্যবহৃত হয় এবং সেই ভাষায় কথা বলা মানুষের সংখ্যাও যদি বিপুল হয়, তা হলে সেই ভাষার কথ্যরূপ সব জায়গায় একরকম থাকে না। অঞ্চল বিশেষে সেই ভাষার মধ্যে কিছু কিছু আলাদা বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। এইরকম আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্যযুক্ত কথ্যভাষাকে বলা হয় আঞ্চলিক উপভাষা।
সামাজিক উপভাষা: অঞ্চলভেদ ছাড়াও সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি অনুসারে একই ভাষার মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন রূপ গড়ে উঠতে পারে। শ্রমিকশ্রেণি যে ভাষায় কথা বলে, শিক্ষকশ্রেণির ভাষা তার থেকে আলাদা। অপরাধজগতে এক ধরনের স্বতন্ত্র ভাষার প্রচলন আছে, যা সংকেত ভাষা বা code language নামে পরিচিত। এ ছাড়া পার্থক্য আছে নারী ও পুরুষের ভাষাতেও। এইভাবে সামাজিক নানা স্তরভেদে একই ভাষার যে স্বতন্ত্র রূপ গড়ে ওঠে, তাকে বলা হয় সামাজিক উপভাষা (Social dialect) বা সমাজভাষা (Sociolect)।
বিভাষা বা ব্যক্তিভাষা: একই শ্রেণিতে থাকা এবং একই আঞলিক উপভাষা ব্যবহারকারী এক ব্যক্তির ভাষার সঙ্গে আর এক ব্যক্তির ভাষার প্রভেদ থাকে। মানুষের এই ব্যক্তিগত ভাষা বৈচিত্র্যকেই বলে ব্যক্তিভাষা বা বিভাষা (Ideolect)।
ড. সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, ড. সুকুমার সেন, অতীন্দ্র মজুমদার ইত্যাদি অধিকাংশ পন্ডিতগণেরই একই মত পোষণ করেছেন। বাংলা ভাষার প্রধান উপভাষা মোট পাঁচটি।এগুলো হল:
১। রাঢ়ী
২। ঝাড়খণ্ডী
৩। বরেন্দ্রী
৪। বাঙালি ও
৫। কামরূপী।
রাঢ়ী
মধ্য পশ্চিম বঙ্গ। অর্থাৎ তার ভিতরে রয়েছে পশ্চিম রাঢ়ী- বীরভূম, বর্ধমান, পূর্ব বাঁকুড়া। পূর্ব রাঢ়ী- কলকাতা, চব্বিশ পরগণা, নদীয়া, হাওড়া, হুগলী, উত্তর-পূর্ব মেদিনীপুর, মুর্শিদাবাদ।
ঝাড়খণ্ডী
দক্ষিণ – পশ্চিম প্রান্ত বঙ্গ ও বিহারের কিছু অংশ। এর মধ্যে রয়েছে মালভূম, সিংভূম, ধলভূম, দক্ষিণ পশ্চিম বাঁকুড়া, দক্ষিণ – পশ্চিম মেদিনীপুর অঞ্চলে ঝাড়খণ্ডী উপভাষা প্রচলিত।
বরেন্দ্রী
উত্তর বঙ্গ অর্থাৎ মালদাহ, দক্ষিণ দিনাজপুর, রাজশাহী ও পাবনা জেলা এ উপভাষার অন্তর্ভুক্ত।
বাঙালি
পূর্ব বঙ্গ দক্ষিণ পূর্ব বঙ্গ এ উপভাষী অঞ্চল। ঢাকা, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, বরিশাল, খুলনা, যশোহর, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম এ উপভাষার অন্তর্ভুক্ত।
কামরূপী
পূর্ববঙ্গ কামরূপী ভাষার অন্তর্ভুক্ত। এতে আছে জলপাইগুড়ি, রংপুর, কুচবিহার, উত্তর দিনাজপুর, কাছাড়, শ্রীহট্ট, ত্রিপুরা।
উপভাষার বৈশিষ্ট্য
1. উপভাষা একটি আদর্শ ভাষা একান্ত একটি আঞ্চলিক রূপ সুতরাং আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্যগুলি প্রধানভাবে প্রতি লক্ষিত হয়।
2. পৃথিবীর সব ভাষারই উপভাষা থাকে।
3. উপ ভাষায় লিখিত সাহিত্য কে লোক সাহিত্য বলে।
বাংলা ভাষার উপভাষা কয়টি ও কি কি, বাংলা উপভাষা কয়টি ও কি কি
গঙ্গা বা ব্রহ্মপুত্র নদীর যেমন বহু উপনদী ও জোড় নদী আছে তেমনই বাংলা ভাষারও বহু উপভাষা ও অসংখ্যক কথ্যভাষা তথা বুলি রয়েছে। সেগুলিকে নিয়েই তো আজকের বর্তমান বাংলা ভাষা। পরিপূর্ণ ও পরিপুষ্ট সুসংবদ্ধ বাংলা ভাষা। তাই বলা যায় বাংলা একটি মিশ্র ভাষা।
ভাষাতত্ত্ববিদ শ্রী প্রভাত রঞ্জন সরকারের মতানুসারে পৃথিবীর যে কোন ভাষাকে আটটি শর্তের কষ্টিপাথরে বিচার করা যায়,অর্থাত্ ভাষা ও উপভাষার পার্থক্য নিরূপণ করা যায়। শর্ত গুলি হল –
(১) নিজস্ব শব্দ সম্ভার(own vocabulary) ।
(২) নিজস্ব শব্দরূপ (case ending) ।
(৩) নিজস্ব ক্রিয়া প্রকরণ (verbe ending) ।
(৪) নিজস্ব সর্বনাম (pronoun) ।
(৫) উচ্চারণ রীতি (intonation) ।
(৬) লিখিত বা অলিখিত সাহিত্য ও লোকগীতি ।
(৭) নিজস্ব মানসবোধাত্মক ধ্বনি বিজ্ঞানগত অভিব্যক্তি(psyco-acoustic notes)ও তান্মাত্রিক বোধাত্মক ধ্বনি বিজ্ঞানগত অভিব্যক্তি (inferential acoustic notes)।
(৮) সংরচনাশৈলী।
এই আট টি শর্তের একটিও কম হলে তা উপভাষা, বুলি, বা খন্ড-ভাষা হয়ে যাবে ।
ভাষাতত্ত্ববিদ্ শ্রী প্রভাত রঞ্জন সরকারের মতানুসারে বাংলা ভাষার মূলত ১২টি উপভাষা। উপভাষা গুলি হল –
১. মধ্যরাঢ়ীয় বাংলা।
২. কাঁথি বাংলা।
৩. কলকাতা বাংলা।
৪. নদীয়া বাংলা।
৫. শেরশাহবাদীযা বা মালদাইয়া বা জঙ্গিপুরী বাংলা।
৬. বরেন্দ্রী বাংলা ।
৭. রংপুরী বাংলা ।
৮. সিলেটি বাংলা।
৯. ঢাকাই বা বিক্রমপুরী বাংলা।
১০. যশোর বাংলা।
১১. বরিশাল বা চন্দ্রদ্বীপী বাংলা।
১২. চট্টল বাংলা।
বঙ্গালী উপভাষার বৈশিষ্ট্য
১. ও এর স্থলে উ উচ্চারিত হয়। উদাহরন : তোমার -> তুমার
২. অপিনিহিতির সার্বিক প্রয়োগ দেখা যায়। যেমন করিয়া -> কইরা।
৩. মহাপ্রাণ বর্ণ অল্পপ্রাণ বর্ণের মতো উচ্চারিত হয়। যেমন – ভাই -> বাই
অভিশ্রুতি কোন উপভাষার বৈশিষ্ট্য, অভিশ্রুতি যে উপভাষার বৈশিষ্ট্য
অভিশ্রুতি যে উপভাষার প্রধান বৈশিষ্ট্য সেটি হল রাঢ়ী উপভাষা
রাঢ়ী উপভাষা বা কেন্দ্রীয় প্রমিত বাংলা বাংলা ভাষার একটি উপভাষা। পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ-পূর্ব অংশের বাংলাভাষী মানুষদের কথাবলার মধ্যে এই উপভাষার প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এই উপভাষার পরিমার্জিত বাংলা রূপকেই বাংলা ভাষার শুদ্ধ লিখন রূপ হিসেবে গণ্য করা হয়।
রাঢ়ী উপভাষার সর্বপ্রধান বৈশিষ্ট্য অভিশ্রুতি ও স্বরসংগতি। যেমন- ‘বলিয়া’>’বলে’, ‘করিয়া’>’করে’, ‘আঁকিয়া’>’এঁকে’ ইত্যাদি হল অভিশ্রুতি জনিত পরিবর্তন। দেশি>দিশি, ইংরাজি> ইংরিজি ইত্যাদি স্বরসংগতি জনিত পরিবর্তন। চন্দ্রবিন্দুর উচ্চারণ রাঢ়ী উপভাষার খুবই স্পষ্ট। যেমন- চাঁদ, বাঁশ,কাঁটা ইত্যাদি।
রাঢ়ী উপভাষা কাকে বলে, কেন্দ্রীয় উপভাষা কাকে বলে
রাঢ়ী উপভাষা বা কেন্দ্রীয় বাংলা বাংলা ভাষার একটি উপভাষা। পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ-পূর্ব অংশের বাংলাভাষী মানুষদের কথাবলার মধ্যে এই উপভাষার প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। এই উপভাষার পরিমার্জিত বাংলা রূপকেই বাংলা ভাষার প্রমিত লিখন রূপ হিসেবে গণ্য করা হয়।
এই উপভাষাটি পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান, বাঁকুড়া জেলার পূর্বাংশ, হুগলী, হাওড়া, কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা, নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলায় প্রচলিত। তাছাড়া বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া এবং মেহেরপুর জেলাতেও এই উপভাষা স্থানীয়ভাবে প্রচলিত। এই উপভাষা থেকে আধুনিক প্রমিত বাংলার ভিত্তি গঠিত হয়।
রাঢ়ী উপভাষার বৈশিষ্ট্য
১. অধিকরণ কারকে ” বিভক্তি দেখা যায়। যেমন – ঘরত থাকুন
২. কর্তৃ কারকে ‘এ’ বিভক্তি দেখা যায়।
বরেন্দ্রী উপভাষার বৈশিষ্ট্য
ধ্বনিগত বৈশিষ্ট্য
1। শব্দের আদিতে অ স্থলে র এবং র স্থলে অ উচ্চারিত হয়। উদাহরণ: আমের রস —> রামের অস
2। শ্বাসাঘাত এর কোন নির্দিষ্ট স্থান নেই।
3। শব্দের আদিতে মহাপ্রাণ বর্ণ ঠিক থাকে কিন্তু মাঝে ও অন্তে অল্পপ্রাণ বর্নে পরিণত হয়।
রূপগত বৈশিষ্ট্য :
1। কামরূপী উপভাষার মতোই গৌণ কার্য ‘ক’ বিভক্তি দেখা যায়। যেমন – আমাকে –> হামাক
2। বাঙালি উপভাষার মতই অধিকরণ কারকে ত বিভক্তি দেখা যায়। ঘর –> ঘরত
সামাজিক উপভাষা কাকে বলে
সমাজভাষাবিজ্ঞানে, সামাজিক উপভাষা হল একটি সমাজের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সামাজিক শ্রেণী বা পেশাগত গোষ্ঠীর সাথে যুক্ত বিভিন্ন ধরনের ভাষা । এছাড়াও একটি sociolect, গোষ্ঠী idiolect, এবং শ্রেণী উপভাষা হিসাবে পরিচিত।
কামরূপী উপভাষা কোন কোন অঞ্চলে প্রচলিত
কামরূপী ভাষার আরেক নাম রাজবংশী ভাষা। যে অঞ্চলে এই উপভাষার উদ্ভব সেই অঞ্চল ধ্রুপদী সাহিত্যে প্রসিদ্ধ কামরূপ বা তার সংলগ্ন এলাকা নামে পরিচিত তাই এই নাম, আধুনিক অসমীয়াভাষও এই ভাষা থেকে ই।
রাঢ়ী উপভাষার ধ্বনিতাত্ত্বিক ও রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য
রাঢ়ি উপভাষার ধ্বনিতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য
- ‘অ’-এর জায়গায় ‘ও’-উচ্চারণের প্রবণতা। সাধারণত ই, উ, ক্ষ এবং য-ফলা যুক্ত ব্যঞ্জনের পূর্ববর্তী ‘অ’-কার-এর উচ্চারণের ক্ষেত্রেই এই প্রবণতা লক্ষ করা যায়। যেমন—অতি > ওতি; অতুল > ওতুল; লক্ষ > লােকখাে; সত্য > শােত্তো।
- শব্দের শুরুতে শ্বাসাঘাত থাকলে শব্দের মধ্যে শেষে অবস্থিত মহাপ্রাণ (বর্গের দ্বিতীয় ও চতুর্থ বর্ণ) ধ্বনি অল্পপ্রাণ ধ্বনিতে (বর্গের প্রথম ও তৃতীয় বর্ণ) পরিণত হয়। যেমন—মধু > মদু; বাঘ > বাগ; বলছি > বলচি; মাঠ > মাট।
- অভিশ্রুতির ব্যাপক ব্যবহার এই উপভাষার একটি অন্যতম প্রধান লক্ষণীয় বৈশিষ্ট্য। যেমনকরিয়া > কইর্যা > করে; দেখিয়া > দেইখ্যা > দেখে; বলিয়া > বইল্যা > বলে; আজি > আইজ > আজ।
- স্বরসংগতির প্রবণতা এই উপভাষায় লক্ষণীয়। যেমন—বিলাতি > বিলিতি; পূজা > পুজো।
- নাসিক্যীভবন এবং স্বতােনাসিক্যীভবনের প্রবণতা দেখা যায়। যেমন-চন্দ্র > চাঁদ; কণ্টক > কাঁটা; বন্ধ> বাঁধ; বংশ > বাঁশ; পঞ্চ> পাঁচ।
- শব্দের শেষে বা মাঝে অবস্থিত অঘােষ ধ্বনি (বর্গের প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ণ) কখনাে কখনাে সঘােষ ধ্বনিতে, অর্থাৎ বর্গের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম ধ্বনিতে পরিণত হয়। যেমন শাক > শাগ; ছাত > ছাদ।
- ল-ধ্বনি কখনো কখনাে ন-ধ্বনিরূপে উচ্চারিত হয়। যেমন লুচি > নুচি; লেপ > নেপ।
রাঢ়ি উপভাষার রূপতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য
- কর্তৃকারক ছাড়া অন্য কারকের বহুবচনে দের বিভক্তি ব্যবহার করা হয়। যেমন- ছেলেদের; বালকদের; মেয়েদের।
- গৌণ কর্মে ‘কে’ বিভক্তি এবং মুখ্য কর্মে শূন্য বিভক্তি ব্যবহৃত হয়। যেমন—দাদা ভাইকে (গৌণ কর্ম) বই (মুখ্য কর্ম) পড়াচ্ছে; মা শিশুকে (গৌণ কর্ম) চাঁদ (মুখ্য কর্ম) দেখাচ্ছে।
- অধিকরণ কারকে ‘এ’ ও ‘তে’ বিভক্তির ব্যবহার লক্ষ করা যায়। যেমন- ঘরে যাও; বাড়িতে থেকো।
- সামান্য অতীত বােঝাতে প্রথম পুরুষের অকর্মক ক্রিয়াপদে ‘ল’ বিভক্তি এবং সকর্মক ক্রিয়াপদে ‘লে’ বিভক্তির প্রয়ােগ। যেমন—সে গেল; সে বইটি দিলে; সে কাজটি করলে।
- সামান্য অতীত কালের উত্তম পুরুষে ‘লাম’, ‘লুম’, ‘লেম’, ‘নু’ বিভক্তি ব্যবহৃত হয়। যেমন-আমি করলাম; আমি করলুম; আমি করলেম; আমি করনু।
- মূল ধাতুর সঙ্গে আছ যােগে যৌগিক ক্রিয়াপদ গঠিত হয়ে থাকে। যেমন করিতেছি > করছি; করিয়াছি > করেছি।
- বিভিন্ন কারকে বিভক্তির জায়গায় অনুসর্গেরব্যবহারও লক্ষ করা যায়। করণ কারকে সঙ্গে, ‘সাথে’, ‘দিয়ে’ এবং অপাদান কারকে ‘থেকে’, ‘হতে’ প্রভৃতি ব্যবহৃত হয়। যেমন—আমার বােন এখন পেনসিল দিয়ে লেখে; এইমাত্র আমটি গাছ থেকে পড়ল।
আরো পড়তে: ভাষা কাকে বলে, মাতৃভাষা কাকে বলে
ভাষা ও উপভাষার মধ্যে পার্থক্য
ভাষা ও উপভাষার মধ্যে কিছুটা মিল থাকলেও এদের মধ্যে বেশ কিছু অমিলও রয়েছে। নিচে ভাষা ও উপভাষার মধ্যে পার্থক্য দেখানো হলো-
ভাষা | উপভাষা |
---|---|
ভাষা বৃহত্তর অঞ্চলে প্রচলিত | উপভাষা ক্ষুদ্রতর অঞ্চলে প্রচলিত। |
ভাষা হল কোন ভাষা সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে ভাব বিনিময়ের নিরাকার ব্যবস্থা | উপভাষা হলো সেই ব্যবস্থার প্রত্যক্ষ ব্যবহারিক রূপ। |
সাহিত্য ও শিক্ষায় সংবাদপত্রে ইত্যাদিতে আদর্শ ভাষা ব্যবহৃত হয়। | এই ভাষায় লিখিত সাহিত্য কে আদর্শ মান্দনিক সাহিত্য বা ক্লাসিকাল সাহিত্য বলে। আর উপভাষায় লেখা সাহিত্যকে লোকসাহিত্য বলে। |
যে ধ্বনি মানুষের বাক যন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত হয় এবং যার মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করা হয় তাকে ভাষা বলে। | অন্যদিকে বৃহৎ অঞ্চলে প্রচলিত কোনো ভাষা অঞ্চলভেদে যে ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করে, ভাষার সেই আঞ্চলিক রূপভেদগুলিকে উপভাষা বলে। |
ভাষা একটি বৃহৎ অঞ্চলে প্রচলিত। | অন্যদিকে উপভাষা অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্র অঞ্চলে প্রচলিত। |
ভাষার একটি সার্বজনীন আদর্শ রূপ থাকে। | অন্যদিকে উপভাষা সেই আঞ্চলিক ভাষার রূপ। |
আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন
FAQ | উপভাষা
Q1. ঝাড়খন্ডী উপভাষা কোন কোন অঞ্চলে প্রচলিত
Ans – প্রধানত পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বীরভূম, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর ও পশ্চিম বর্ধমান জেলা, ঝাড়খণ্ডের বোকারো, ধানবাদ, সড়াইকেলা, পূর্ব ও পশ্চিম সিংভূম জেলা, এবং ওড়িশার ময়ূরভঞ্জ জেলায় এই বাংলা ঝাড়খন্ডী উপভাষার প্রচলন লক্ষ্য করা যায়।
Q2. রাঢ়ী উপভাষা কোন কোন অঞ্চলে প্রচলিত
Ans – এই রাঢ়ী উপভাষাটি পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান, বাঁকুড়া জেলার পূর্বাংশ, হুগলী, হাওড়া, কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা, নদিয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলায় প্রচলিত।
Q3. বাঙ্গালী উপভাষা কোন কোন অঞ্চলে প্রচলিত
Ans – বাঙ্গালী উপভাষা বলতে বোঝানো হয় দেশের বিভিন্ন ক্ষুদ্র অঞ্চলে ব্যবহৃত ভাষাকে বা আঞ্চলিক ভাষাকে বা বিশেষ অঞ্চলের দৈনন্দিন জীবন – যাপনের ভাষাকে। বঙ্গালি উপভাষা অঞ্চল হলো ‘বরিশালি’ (বরিশাল), ‘খুলনাইয়া’ (খুলনা), ‘ময়মনসিংহীয়’ (ময়মনসিংহ), ‘নোয়াখালীয়’ (নোয়াখালী), ‘ঢাকাইয়া কুট্টি’ ইত্যাদি। পৃথিবীর প্রায় সব ভাষাতেই উপভাষা আছে। বস্তুত ভাষা ও উপভাষার মধ্যে কোনো সহজাত পার্থক্য নেই; উপভাষা হলো একটি ভাষার ভৌগোলিক রূপভেদ।
Q4. কলকাতায় কোন আঞ্চলিক উপভাষা প্রচলিত
Ans – পশ্চিমবঙ্গের প্রধান উপভাষা হল রাঢ়ী উপভাষা। পৃথিবীর সর্বত্রই প্রমিত ভাষার পাশাপাশি এক বা একাধিক আঞ্চলিক ভাষা বা উপভাষা (Dialect) ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারি ও বেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন।