বঙ্গবাণী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর ২০২১

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

বঙ্গবাণী কবিতার মূলভাব

উত্তরঃ মধ্যযুগীয় পরিবেশে বঙ্গভাষী ও বঙ্গভাষার প্রতি বলিষ্ঠ বাণীবদ্ধই এ কবিতার দুর্লভ নিদর্শন। এ কবিতায় কবি মাতৃভাষা তথা বাংলা ভাষার প্রতি তার উপলব্দি ব্যক্ত করেছেন। সাধারণ মানুষের সাথে ভাব বিনিময়ের ক্ষেত্রে মাতৃভাষাই সবচেয়ে উপযোগী। তাই তো কবি মাতৃভাষায়ই গ্রন্থ রচনায় মনোনিবেশ করেছেন।

তবে আরবি, ফারসি ভাষার প্রতি কবির কোনো বিদ্বেষ নেই। কেননা এ ভাষাতেই আল্লাহ ও মহানবির স্তূতি করা হয়েছে। কিন্তু স্রষ্টাকে ডাকার ক্ষেত্রে কোনো ভাষাগত সীমাবদ্ধতা নেই, কেননা সব ভাষাই তার বোধগম্য। কবিতার শেষাংশে কবি এই বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যে যাদের মনে স্বদেশ ও স্বভাষার প্রতি কোনো অনুরাগ নেই তাদের দেশ ত্যাগ করে চলে যাওয়া উচিত।

বঙ্গবাণী কবিতার ব্যাখ্যা

উত্তরঃ ‘বঙ্গবাণী’ কবিতায় প্রকাশিত হয়েছে- ভাষাপ্রেম, মাতৃভাষাকে নিয়ে কবির মনোভাব। তারাই বাংলা ভাষাকে হিন্দুর অক্ষর মনে করে যাদের মারফত জ্ঞান নেই। কবি দেশ ত্যাগ করতে বলেছেন- যারা মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়। আরবি-ফারসি ভাষায় আল্লাহ ও মহানবির স্মৃতি বর্ণিত হয়েছে। জনসাধারণের সাথে ভাব বিনিময়ের একমাত্র পন্থা মাতৃভাষায় কথা বলা বা লেখা । কবি বংশ ও জন্মপরিচয় সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তাদের প্রতি যাদের স্বদেশ ও স্বভাষার প্রতি অনুরাগ নেই। মধ্যযুগীয় পরিবেশে মাতৃভাষার প্রতি আবদুল হাকিমের গভীর ভালোবাসার নিদর্শন ইতিহাসে বিরল এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য কালজয়ী আদর্শ।

বঙ্গবাণী কবিতার গুরুত্বপূর্ণ বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তর

‘বঙ্গবাণী‘ কবিতার শেষ চরণ কোনটি?

ক. দেশি ভাষা উপদেশ মনে হিত অতি

খ. নিজ দেশ তেয়াগী কেন বিদেশে ন যায়

গ. বঙ্গদেশী বাণী কিবা যত ইতি বাণী

ঘ. সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি

উত্তর: ক. দেশি ভাষা উপদেশ মনে হিত অতি

‘সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় না জানি‘- কবি আব্দুল হাকিম কাদের সম্পর্কে এ উক্তি করেছেন?

ক. নিজ দেশ ত্যাগ করে যারা বিদেশ যায়

খ. বাংলাদেশে যারা বাংলা ভাষাকে ঘৃণা করে

গ. দেশি ভাষায় বিদ্যা লাভ করে যে তৃপ্ত নয়

ঘ. যারা বাংলাকে হিন্দুয়ানী ভাষা বলে মনে করে

উত্তর: খ. বাংলাদেশে যারা বাংলা ভাষাকে ঘৃণা করে

উক্ত অনুভূতির প্রকাশ ঘটেছে কোন চরণে?

ক. দেশি ভাষে বুঝিতে ললাটে পুরে ভাগ

খ. সেই বাক্য বুঝে প্রভু আপে নিরঞ্জন

গ. দেশি ভাষা উপদেশ মনে হিত অতি

ঘ. বঙ্গদেশী বাক্য কিবা যত ইতি বাণী

উত্তর: গ. দেশি ভাষা উপদেশ মনে হিত অতি

আবদুল হাকিম কোন শতকের কবি?

ক. পঞ্চদশ খ. সপ্তদশ

গ. ষষ্ঠদশ ঘ. অষ্টাদশ

উত্তর: খ. সপ্তদশ

আবদুল হাকিম কত সালে জন্মগ্রহণ করেন?

ক. ১৫২০ সালে খ. ১৬২০ সালে

গ. ১৭২০ সালে ঘ.১৮২০ সালে

উত্তর: খ. ১৬২০ সালে

আবদুল হাকিম কোথায় জন্মগ্রহণ করেন?

ক. সন্দ্বীপের সুধারামপুর গ্রামে

খ. বর্ধমান জেলার আসানসোল গ্রামে

গ. পিরোজপুরের শঙ্করপাশা গ্রামে

ঘ. ঢাকার নবাবগঞ্জে

উত্তর: ক. সন্দ্বীপের সুধারামপুর গ্রামে

আবদুল হাকিমের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ কোনটি?

ক. লালমতি খ. নসীহত্যামা

গ. সয়ফুলমুলুক ঘ. নূরনামা কারবালা

উত্তর: ঘ. নূরনামা কারবালা

‘শহরনামা‘ কার লেখা?

ক. মাইকেল মধুসূদন দত্ত খ. ভারতচন্দ্র রায় গুণাকর

গ. মহাকবি আলাওল ঘ. আবদুল হাকিম

উত্তর: ঘ. আবদুল হাকিম

‘নূরনামা‘ কোন ধরনের গ্রন্থ?

ক. গল্পগ্রন্থ খ. নাটক

গ. কাব্যগ্রন্থ ঘ. উপন্যাস

উত্তর: গ. কাব্যগ্রন্থ

আবদুল হাকিমের কবিতায় কোনটির পরিচয় মেলে?

ক. অনুপম ব্যক্তিত্বের

খ. সৎ চরিত্রের

গ. প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসার

ঘ. অগাধ পাণ্ডিত্যের

উত্তর: ক. অনুপম ব্যক্তিত্বের

বঙ্গবাণী কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

বঙ্গবাণী কবিতাটি কোন শতকে রচিত

উত্তরঃ ‘বঙ্গবাণী’ কবিতাটি রচিত হয় – সপ্তদশ শতকে।

বঙ্গবাণী কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে

উত্তরঃ ‘বঙ্গবাণী’ কবিতাটি নূরনামা’ কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে।

বঙ্গবাণী কবিতায় নিরঞ্জন শব্দটি কী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে

উত্তরঃ বঙ্গবাণী কবিতায় নিরঞ্জন শব্দটি সৃষ্টিকর্তা বা আল্লাহ অর্থে ব্যবহার হয়েছে।

‘নূরনামা‘ কাব্যগ্রন্থটি কে রচনা করেছেন?

উত্তর: ‘নূরনামা’ কাব্যগ্রন্থটি আবদুল হাকিম রচনা করেছেন।

কবি কাদের অনুরোধে বাংলা কাব্য রচনা করেন?

উত্তর: যারা কিতাব পড়তে জানে না তাদের অনুরোধে কবি বাংলা কাব্য রচনা করেন।

কোন ভাষার ব্যাপারে কবির দ্বিমত নেই?

উত্তর: আরবি, ফারসি, হিন্দি ভাষার ব্যাপারে কবির দ্বিমত নেই।

কবি কাদের দেশ ত্যাগ করতে বলেছেন?

উত্তর: যাদের মাতৃভাষার প্রতি অনুরাগ নেই কবি তাদের দেশ ত্যাগ করতে বলেছেন।

‘বঙ্গবাণী‘ শব্দের অর্থ কী?

উত্তর: ‘বঙ্গবাণী’ শব্দের অর্থ বাংলা ভাষা।

‘বঙ্গবাণী‘ কবিতায় কী প্রকাশ পেয়েছে?

উত্তর: ‘বঙ্গবাণী’ কবিতায় বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে।

কবি কোন ভাষায় গ্রন্থ রচনায় মনোনিবেশ করেছেন?

উত্তর: কবি মাতৃভাষায় গ্রন্থ রচনায় মনোনিবেশ করেছেন।

বঙ্গবাণী কবিতার অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর

কবি বাংলায় কাব্য রচনার পক্ষে কী যুক্তি দিয়েছেন?

উত্তর: বাংলাভাষী মানুষের জন্য বাংলায় গ্রন্থ রচনাই উত্তম বলে কবি মনে করেন। সাহিত্য রচনা করে লেখক সাধারণ মানুষের সাথে নিজ মনের সংযোগ ঘটান। যদি সাহিত্য রচনার ভাষা জনসাধারণের বোধগম্য না হয় তবে এ সংযোগ সম্ভব হয় না। কবির মতে, সাধারণ মানুষের জন্য মাতৃভাষায়। রচিত কাব্যই সবচেয়ে উপযোগী। এ কারণই তিনি মাতৃভাষা তথা বাংলায় কাব্য রচনা করায় মনোনিবেশ করেছেন।

বাংলা ভাষা বিদ্বেষীদের কবি কী উপদেশ দিয়েছেন?

উত্তর: কবি বাংলা ভাষা বিদ্বেষীদের দেশ ত্যাগ করার উপদেশ দিয়েছেন। অনেক মানুষই আছে যারা বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছে অথচ বাংলা ভাষার প্রতি তাদের কোনো মমতা নেই। এদের বংশ ও জন্মপরিচয় সম্পর্কে কবির মনে সন্দেহ জাগে। এসব মাতৃভাষাবিদ্বেষীদের প্রতি কবির প্রচণ্ড ক্ষোভ। তাই তিনি সখেদে বলেছেন, এসব মানুষের নিজ দেশ ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়া উচিত।

‘দেশী ভাষা বিদ্যা যার মনে ন জুয়ায়’ কথাটি দিয়ে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: উক্ত চরণে স্বভাষার প্রতি উদাসীন ব্যক্তিদের কথা বলা হয়েছে। মাতৃভাষা মাত্রই সকলের কাছে প্রিয় ও আপন। এ ভাষাতেই তারা মনের সকল আবেগ ও অনুভূতি প্রকাশ করে। কিন্তু এমন কিছু মানুষও আছে যারা মাতৃভাষাকে হেয় জ্ঞান করে। মাতৃভাষার মিষ্টতায় যাদের মন ভরে না তারা শিকড়হীন পরগাছার মতো।

‘আরবি ফারসি হিন্দে নাই দুই মত‘— বুঝিয়ে লেখো।

উত্তর: কবি মাতৃভাষা ব্যবহারের পক্ষপাতী হলেও আরবি-ফারসি ব্যবহারেও তার কোনো দ্বিমত নেই। কবি সকল ভাষার ঊর্ধ্বে মাতৃভাষাকেই স্থান দিয়েছেন। তাই বলে আরবি-ফারসি ভাষার প্রতি তার কোনো বিদ্বেষ নেই। আল্লাহ ও মহানবির স্তুতি বর্ণনায় এ সকল ভাষার ব্যবহারকে তিনি শ্রদ্ধা দেখিয়েছেন।

‘মারফত ভেদে যার নাহিক গমন। হিন্দুর অক্ষরে হিংসে সে সবের গণ’- ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: ধর্মীয় বিষয়ে জ্ঞানহীন মানুষেরাই বাংলাকে হিন্দুদের ভাষা বলে কটাক্ষ করে। বাংলাদেশি বা বাঙালিদের কাছে বাংলা ভাষা খুবই আপন ও প্রিয়। ব্যক্তি হিন্দু বা মুসলিম যাইহোক না কেন মাতৃভাষাই তার অনুভূতি প্রকাশের উত্তম পন্থা। কিন্তু একদল ধর্মীয় জ্ঞানহীন সংকীর্ণমনা মানুষ মনে করে। মুসলিমদের আরবি ফারসি ভাষা ব্যবহার করাই উচিত। তাদের ধারণা বাংলা একটি হিন্দুয়ানি ভাষা। ধর্ম সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকলে তাদের এ ধারণা হতো না।

কবির কাব্য রচনার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: কবি সাধারণ মানুষকে সাহিত্য পাঠের সুযোগ করে দেয়ার জন্য কাব্য রচনা করেছেন। যে ভাষা জনসাধারণের বোধগম্য নয়, সে ভাষায় সাহিত্য রচনা করলে তা তারা বুঝতে পারে না। ফলে তারা সাহিত্য পাঠের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়। তৎকালীন সময়ে আরবি ফারসি ভাষায় পুস্তক রচিত হতো বলে তা সাধারণ মানুষ বুঝতে পারত না। কবি এ সকল সাধারণ মানুষের জন্য মাতৃভাষায় কাব্য রচনা করছেন যাতে তারাও সাহিত্য পাঠ করতে পারে।

বঙ্গবাণী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

মোদের গরব মোদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষা | মাগো তোমার কোলে, তোমার বোলে কতই শান্তি ভালবাসা । আ মরি বাংলা ভাষা। কি জাদু বাংলা গানে, গান গেয়ে দীড় মাঝি টানে, গেয়ে গান নাচে বাউল, গান গেয়ে ধান কাটে চাষা | বাজিয়ে রবি তোমার বীণে, আনল মালা জগৎ জিনে| তোমার চরণ তীর্থে মাগো জগৎ করে যাওয়া আসা| আ মরি বাংলা ভাষা ।

‘বঙ্গবাণী’ কবিতায় ‘নিরঞ্জন’ শব্দটি কী অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে?

উত্তর: বঙ্গবাণী কবিতায় নিরঞ্জন শব্দটি সৃষ্টিকর্তা বা আল্লাহ অর্থে ব্যবহার হয়েছে।

“দেশি ভাষে বুঝিতে ললাটে পুরে ভাগ’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: ডেসি ভাষা বুঝিতে লোলাতে ভাভ বলতে কবি নিজের মাতৃভাষায় শিক্ষা ও জ্ঞান চর্চার মাধ্যমে ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়াকে বুঝিয়েছে। বঙ্গবাণী কবিতায় কবি মানুষের অনুভূতি প্রকাশের প্রধান মাধ্যমে হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তার কাছে মাতৃভাষাই শ্রেষ্ঠ। আরভি ফারসি ভাষায় তার কোনো বিদ্বেষ নেই। কিনতি আরভি ফারসি ভাষায় জ্ঞান চর্চা করা সাধারণ মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। এক্ষত্রে নিজের মাতৃভাষায় যদি শিক্ষা ও মজ্ঞান লাভের সুবিধা দেওয়া হয় তাহলে তাদের ভাগ্য সুপ্রস্নন্ন হবে বলে কবি বলেছেন। কইবি মনে করেন মানুষ তার শিকল আশা আবেগ মাতৃভাষা প্রকাশ করতে ভালোবাসেন। প্রশ্ন উক্ত লাল দ্বারা এটাই বুঝিয়েছেন।

উদ্দীপকে “বঙ্গবাণী” কবিতার যে ভাবের প্রতিফলন ঘটেছে তা ব্যাখ্যা কর।

উত্তর: উদ্দীপকের বঙ্গবানী কবিতায় মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসা ও গভীর অনুরাগের কথা বলা হয়েছে। নিচে তা বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করা হলো।

মানুষের মনের ভাব প্রকাশের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম হছে তার নিজস্ব ভাষা। আর আমাদের নিজস্ব ভাষা হচ্ছে বাংলা। তাই আমরা মাতৃভাষা বাংলায় নিজেদের আশা, আবেগ, অনুরাগ ইত্যাদি প্রকাশ করি। পৃথিবীর অনেক জাতি তাদের মাতৃভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করে। দেশের মানুষ দেশ ভালোবাসার পাশা পাশী তাদের মাতৃভাষার প্রতি খুবই আবেগ পূর্ণ।

উদ্দীপকের কবাতাটিতে মাতৃভাষা বাংলারপ্রতি মানুষের অনুরাগের প্রকাশ পেয়েছে। তারা দেশ কে যেমন ভালোবাসে ঠিক তেমনি নিজের মাতৃভাষা কেও অনেক ভালোবাসে। মাতৃভাষায় নিজের মনের ভাব সবার সাথে শেয়ার করতে খুব পছন্দ করে। এই ভাষা হচ্ছে বাগালিদের একমাত্র ইতিহাস ও ঐতিহ্য। এই কবিতায় কবি মাতৃভাষাতেই কবি মনের প্রশান্তি খুঁজে পায়। এই বঙ্গবাণী কবিতায় কই তার নিজ ডেশের ভাষার স্মৃতি রক্ষায় বলেছেন। কবি মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষার জন্য ও জ্ঞান চর্চার জন্য বিশেষ ভাবে আরোপ করেছেন। কারণ এই ভাষার সঙ্গে বাঙ্গালি জাতির প্রটেক্টই উপাধান জড়িতও।

উক্ত ভাব প্রকাশের ক্ষেত্রে উদ্দীপকের কবির চেয়ে আবদুল হাকিমের অবস্থান সুদৃঢ় ও বলিষ্ঠ- ‘বঙ্গবাণী” কবিতার আলোকে-মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

উত্তর: মাতৃভাষা হছে মায়ের ভাষা। এই ভাষা এক জাতি হতে অন্য জাতিতে বিকাশ ঘটে। আমরা সবাই জন্ম থেকেই মাতৃভাষার সাথে পরিচিত। তাই এই ভাষায় নিজের মনের ভাব প্রকাশ করতে পারাটা খুবই আনন্দের বিষয়। বাঙ্গালির মাতৃভাষা হচ্ছে বাংলা। বাংলা আমাদের মাতৃভাষা ও মায়ের মুখের ভাষা। তাই প্রত্যেকে নিকের ভাষায় অনুরাগ প্রকাশ করে থাকে।

উদিপক থেকে আমরা দেখতে পাই কবি বাংলা ভাষার প্রতি তার গভীর অনুরাগ প্রকাশ করেছে। বাংলাভাষা কবির আশা ও অনুরাগের সাথে মিশে গেছে। কবি এই ভাষায় গান সুনার জন্য অনেক ব্যাকুল। কবির মতে বাংলাভাষার সুরে যে যাদু আছে তা প্রকাশ করা যায় না। উদ্দীপকের কবির সাথে বঙ্গবাণী কবিতার কবির অনুভব একই সুরতে গাথা।

বঙ্গবাণী কবিতায় কবি স্বভাষায় বিরোধ কারিদের এদেশ ছেরে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। বিদেশি ভাষার অনুরাগীদের কবি পছন্দ করেন না। কারণ তিনি মাতৃভাষায় শিক্ষা ও জ্ঞান চর্চার জন্য পরামর্শ দেন। কবি এই কবিতায় মারফতে জ্ঞানহীন দের যে উপদেশ বানী শুনিয়েছেন তা উদ্দীপকে নেই। এই দিক থেকে উদ্দীপক ও বঙ্গবাণী কবিতায় মন্তব্যটি যথার্থও।

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

নানান দেশের নানান ভাষা | বিনে স্বদেশী ভাষা মিটে কি আশা ॥ কত নদী সরোবর কী বা ফল চাতকীর;

ধারাজল বিনে কভু ঘুচে কি তৃষা?

“হিন্দুর অক্ষর’ বলতে কোন ভাষাকে বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: ‘হিন্দুর অক্ষর’ বলতে বাংলা ভাষাকে বোঝানো হয়েছে।

‘দেশী ভাষা উপদেশ মনে হিত অতি’— বুঝিয়ে লেখো।

উত্তর: শুধু মাতৃভাষাতে কথা বলেই মনের সাধ মেটানো সম্ভব, মনের গৃঢ়ভাব সম্পূর্ণরূপে ব্যক্ত করা সম্ভব- প্রশ্নোক্ত চরণটিতে একথাই প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ আমাদের মাতৃভূমি। বংশানুক্রমে এদেশে আমাদের বসতি। তাই মাতৃভাষা বাংলায় বর্ণিত বক্তব্য আমাদের মনকে স্পর্শ করে। বাংলাতে আমাদের ভাবের প্রবাহ গতিশীল বলে এ ভাষাতে বয়োজ্যেষ্ঠগণ আমাদের হিতোপদেশ দেন। আমরা স্বপ্ন সাজাই, কাব্য লিখি— এ ভাষার অমিয় সুধা নিয়ে সফল জীবন গড়ি। আলোচ্য চরণটি দ্বারা এ কথাই বোঝানো হয়েছে।

উদ্দীপকে ‘বঙ্গবাণী’ কবিতার কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: উদ্দীপকে ‘বঙ্গবাণী’ কবিতায় প্রকাশিত মাতৃভাষার প্রতি গভীর অনুরাগের চিরন্তন অনুভূতির দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।

‘বঙ্গবাণী’ কবিতায় কবি আবদুল হাকিম তার গভীর উপলদ্ধি ও বিশ্বাসের কথা নির্দ্বিধায় ব্যক্ত করেছেন। বাংলা ভাষার প্রতি অগাধ শ্রদ্ধার ধারক এ কবির আরবি-ফারসি ভাষার প্রতি মোটেই বিদ্বেষ নেই। তবে তাঁর মতে, যে ভাষা জনসাধারণের বোধগম্য নয়, যে ভাষায় অন্যের সঙ্গে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভাব বিনিময় করা যায় না, সে ভাষা পরিহার করে সর্বস্তরে মাতৃভাষা চর্চা করা উচিত। কারণ মাতৃভাষায় বর্ণিত বক্তব্যই আমাদের মনকে গভীরভাবে স্পর্শ করতে পারে।

উদ্দীপকে মাতৃভাষার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে। পৃথিবীর তিন ভাগ জল-প্লাবিত হলেও বৃষ্টির জল ব্যতীত চাতকীর তৃষ্ণা মেটে। অনুরূপভাবে নানান দেশে নানান ভাষা প্রচলিত হলেও স্বদেশি ভাষা ভিন্ন অন্য কোনো ভাষায় কথা বলে প্রকৃত আনন্দ ও তৃপ্তি পাওয়া যায় না বলে উদ্ধৃত কবিতাংশের কবি অভিমত পোষণ করেছেন যা ‘বঙ্গবাণী’ কবিতার মূল সুর। সেদিক বিবেচনায় উদ্দীপকে ‘বঙ্গবাণী’ কবিতার মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসার অনুভূতিই প্রকাশিত হয়েছে।

উদ্দীপকটি ‘বঙ্গবাণী’ কবিতার সমগ্রতাপশী নয়- বিশ্লেষণ করো।

উদ্দীপকটি ‘বঙ্গবাণী’ কবিতার সমগ্রতাস্পর্শী নয়— মন্তব্যটি যথার্থ।

‘বঙ্গবাণী’ কবিতায় মাতৃভাষার প্রতি কবির গভীর ভালোবাসা প্রকাশিত হয়েছে। বিদেশি ভাষা জনসাধারণের বোধগম্য নয় বলে সে ভাষা মনের ভাব পরিপূর্ণভাবে প্রকাশ করার উপযোগী নয়। কিন্তু মাতৃভাষা এক্ষেত্রে সম্পূর্ণ সফল। তাই কবি মাতৃভাষায় কথা বলা ও লেখার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন। অন্যদিকে উদ্দীপকে শুধু মাতৃভাষাপ্রীতির দিকটিই আলোচিত হয়েছে।

নিজ ভাষার প্রতি গভীর হৃদয়াবেগ প্রকাশে উদ্দীপকের কবিতাংশের কবি চাতকীর রূপকের আশ্রয় নিয়েছেন। চাতকী যেমন বিস্তৃত জলরাশির মাঝেও বৃষ্টির জলের জন্য হাপিত্যেশ করে মরে, তেমনি অনেক ভাষার ভিড়েও মানুষ মাতৃভাষার আশ্রয়ে শান্তি খুঁজে ফেরে। মাতৃভাষাপ্রীতি মানুষের সহজাত বৈশিষ্ট্য। ‘বঙ্গবাণী’ কবিতা এবং উদ্ধৃত কবিতাংশে মাতৃভাষার প্রতি যে ভালোবাসা প্রকাশ পেয়েছে তা অকপট ও আন্তরিক।

‘বঙ্গবাণী’ কবিতায় এ দিকটি ছাড়াও আরও নানা বিষয় উঠে এসেছে। আমাদের উপলব্ধি ও বিশ্বাস এই যে মাতৃভাষাই ভাব প্রকাশের সর্বোকৃষ্ট মাধ্যম। তাই মাতৃভাষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েই আমাদের অন্য সব ভাষার প্রতি আন্তরিক হওয়া উচিত। কারণ যে ভাষা জনগণের বোধগম্য নয় সে ভাষায় ভাব বিনিময় করা সম্ভব নয়। মাতৃভাষায় বর্ণিত বক্তব্য আমাদের অন্তরকে স্পর্শ করে বলেই সর্বক্ষেত্রে এ ভাষা প্রচলন করা উচিত।

‘বঙ্গবাণী’ কবিতায় কবি আবদুল হাকিম মাতৃভাষার গুরুত্ব উপলদ্ধি করে এ বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন। এছাড়া আলোচ্য কবিতায় মাতৃভাষাবিদ্বেষীদের স্বরূপ এবং তাদের হীন মানসিকতার প্রতি তীব্র শ্লেষ প্রকাশ করা হয়েছে। কিন্তু উদ্দীপকের কবিতাংশে শুধু মাতৃভাষার প্রতি কবির ভালোবাসা ও ভাবাবেগের দিকটিই ফুটে উঠেছে। সে বিবেচনায় প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথাযথ অর্থবহ।

বঙ্গবাণী কবিতা pdf

বঙ্গবাণী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর ২০২১, বঙ্গবাণী কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর Pdf

দশম শ্রেণির জন্য বাংলা শিক্ষা

দশম শ্রেণির জন্য বাংলা শিক্ষা

বঙ্গবাণী কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর ২০২১

“হিন্দুর অক্ষর’ বলতে কোন ভাষাকে বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘হিন্দুর অক্ষর’ বলতে বাংলা ভাষাকে বোঝানো হয়েছে।


আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।