নবম শ্রেণীর ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

নেপোলিয়ন বোনাপার্ট, নেপোলিয়ন কে ছিলেন, নেপোলিয়ন বোনাপার্টের জীবনী

নেপোলিয়ন বোনাপার্ট (১৭৬৯-১৮২১) ছিলেন একাধারে ফ্রান্সের অবিসংবাদিত সম্রাট ও তুখোড় সেনাপ্রধান, যিনি ফরাসি বিপ্লবের ক্রান্তিলগ্নে (১৭৮৯-১৭৯৩) ফ্রান্সের হাল ধরেছিলেন এবং ফ্রান্সকে ইউরোপের শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

নেপোলিয়নের জন্ম ১৭৬৯ সালে ফ্রান্সের অধীনস্থ কর্সিকা দ্বিপে, সেখানকার প্রশিদ্ধ বোনাপার্ট বংশে। তিনি ১৭৮৫ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে ফ্রান্সের সেনাবাহিনীর গোলন্দাজ বাহিনীতে অফিসার হিসেবে যোগদান করেন এবং বিভিন্ন সময়ে সামরিক নৈপুণ্যে তিনি একে একে পদোন্নতি পেতে থাকেন। উল্লেখ্য, ফরাসি বিপ্লব চলাকালীন সময় ১৭৯০-১৭৯১ সালে বৃটেন ফ্রান্সের ভূমধ্যসাগরীয় বন্দর-নগরী টুলো (Toulon) দখন করে নেয়। কিন্তু ১৭৯৩ সালে নেপোলিয়ন সুকৌশলে টুলো বৃটেন থেকে পূণরোদ্ধার করতে সক্ষম হন। এই সাফল্যের জেড়ে নেপোলিয়ন কে ক্যাপটেন পদবী থেকে সরসরি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদবীতে পদন্নতি দেওয়া হয়।

নেপোলিয়ন বোনাপার্টের জীবনী

ইউরোপের মুক্তিদাতানেপোলিয়ন বোনাপার্ট
জন্ম১৫ আগস্ট, ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দ
পিতামাতাকার্লো বোনাপার্ট, লেটিজিয়া
ফরাসি জাতির সম্রাট১৮০৪ খ্রিস্টাব্দ
পতন১৮১৫ খ্রিস্টাব্দ
মৃত্যু১৮২১ খ্রিস্টাব্দ
নেপোলিয়ন বোনাপার্টের জীবনী

পরবর্তিতে ১৭৯৭ সালে নেপোলিয়ন অস্ট্রিয়াকে ইতালির যুদ্ধে পরাজিত করলে তাঁঁকে খুবই দ্রুত মেজর জেনারেল ও পরবর্তিতে ১৭৯৯ সালে ফ্রান্সের সেনাপ্রধান করা হয়। সেই সময় তাঁর বয়স ছিলো মাত্র ৩০ বছর। এতো অল্প বয়সে ফ্রান্সের সেনাপ্রধান হওয়া ও ফ্রান্সের জনগণের কাছে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা থাকায় নেপোলিয়ন ১৮০০ সালে সেনাঅভ্যুত্থান ঘটিয়ে পুরো ফ্রান্সের ক্ষমতা নিজের কাছে কুক্ষিগত করেন। আর ফ্রান্সের জনগণ ও তা এক প্রকার মেনে নেয়।

১৮০১-১৮১০ এই দশটি বছর নেপোলিয়নের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। একে তো তিনি ফ্রান্সের বিরুদ্ধে পবিত্র রোমান সম্রাজ্য, প্রাশিয়া, নেদারল্যান্ডস, ইতালি ও বৃটেন কর্তৃক তৈরি সামরিক জোটকে কে একে একে পরাজিত করেন, অপরদিকে তিনি প্রায় হাজারো বছরের পুরণো পবিত্র রোমান সম্রাজ্যকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দেন ইউরোপের মানচিত্র থেকে। ১৮০৩ সালে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে নেপোলিয়ন নিজেকে ফ্রান্সের সম্রাট হিসেবে ঘোষণা করেন। আবার, ১৮০৬ সালে নেপোলিয়ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে লুইজিয়ানা (Louisiana) অঙ্গরাজ্য মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিক্রি করেন দেন, যা বিখ্যাত Louisian Purchase নামে পরিচিত।

নেপোলিয়নের পতনের সুত্রপাত হয় ১৮১২ সাল থেকে, যে বছর তিনি রাশিয়ার জার আলেকজান্ডারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ৬ লাখ সৈন্য দ্বারা সুসজ্জিত গ্রান্ড আর্মি (Grand Army) নিয়ে রাশিয়া আক্রমণ করেন। কিন্তু রাশিয়ায় তখন শীতকাল বিরাজ করায় আর জার আলেকজান্ডারের পোড়া-মাটি কৌশলের কারণে ১৮১৩ সালে নেপোলিয়ন কে সেই অভিজান অসমাপ্ত রেখেই অবশিষ্ট দেড় লাখ সৈন্য নিয়েই ফ্রান্সে ফিরে আসতে হয়। নেপোলিয়নের এই পরাজয় ফ্রান্সের বেশিরভাগ মানুষ ও সরকার মেনে নিতে পারে নি। তাই ১৮১৪ সালে তাঁকে ভূমধ্যসাগরের এলবা দ্বীপে নির্বাসন দেওয়া হয়। তবে ১৮১৫ সালে নেপোলিয়ন সেখানে থেকে পালিয়ে আসতে সক্ষম হলে ১০০ দিনের জন্য ফ্রান্সেদ ক্ষমতা দখল রাখতে সক্ষন হন। সেই ১০০ দিন রাজত্বকালেই তিনি বৃটেনের সেনাপতি ডিউক অব ওয়েলিংটনের নিকট ওয়াটারলু যুদ্ধে পরাজিত হন। এরই জেড় ধরে নেপোলিয়নকে চিরতরে আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত সেন্ট হেলেনা দ্বীপে নির্বাসন দেওয়া হয়। যেখানে ১৮২১ সালে আর্সেনিকের বিষক্রিয়ায় নেপোলিয়ন মৃত্যুবরণ করেন।

নেপোলিয়নের উত্থান ও পতন, নেপোলিয়নের পতনের কারণ, নেপোলিয়নের পতনের কারণ কি, নেপোলিয়নের পতনের কারণ pdf, নেপোলিয়ন বোনাপার্টের পতনের কারণ

নেপোলিয়নের উত্থান

১৮০৪ সাল থেকে ১৮১৪ সাল পর্যন্ত তিনি ফ্রান্সের সম্রাট ছিলেন। তাঁর রাজত্বকালে ফ্রান্স অনেক শক্তিশালী ছিল। ১৮১২ সালে তিনি রাশিয়া আক্রমণ করে বাজেভাবে পরাজিত হন। পরের বছর তিনি নিজ দেশেই অস্ট্রিয়া, রাশিয়া, ব্রিটেন, পর্তুগাল, সুইডেন, স্পেন ও জার্মান দ্বারা আক্রমণের স্বীকার হন। এই সম্মিলিত আক্রমণের মুখে ফ্রান্স পরাজিত হয় এবং সম্রাট নেপোলিয়ানকে ইতালির এলবা দ্বীপে নির্বাসন দেওয়া হয়। তিনি প্রায় ১ বছর পর পালিয়ে গিয়ে আবারও ফ্রান্সের ক্ষমতা দখল করেন। 

১৮১৫ সালে ওয়াটার লু যুদ্ধে পরাজিত হলে, তাঁকে দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের প্রত্যন্ত ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত দ্বীপ সেন্ট হেলেনা নির্বাসন দেওয়া হয়। তিনি ১৮২১ সালের ৫ মে, সেন্ট হেলেনা দ্বীপে মাত্র ৫১ বছর বয়সে মারা যান।

নেপোলিয়নকে সেই দ্বীপে সমাহিত করা হয়েছিল। কিন্তু ১৮৪০ সালে, তার দেহাবশেষ ফ্রান্সকে ফেরত দেওয়া হয় এবং প্যারিসের লেস ইনভালাইডসে একটি ক্রিপ্টে সমাহিত করা হয়। যেখানে অন্যান্য ফরাসি সামরিক নেতাদের দাফন করা হয়েছিল। ১৮২১ সালে নির্বাসন অবস্থায় সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন নেপোলিয়ান বোনাপার্ট।

নেপোলিয়ন বোনাপার্টের পতনের কারণ

১৮০২ বা ১৮০৭ যখনই হোক না কেন—তাঁর শাসননীতিও সাম্রাজ্যের গঠনের মধ্যেই তাঁর পতনের বীজ নিহিত ছিল। তাঁর পতনের মূলে নানা কারণ বিদ্যমান ছিল। যেমন –

(ক) সীমাহীন উচ্চাকাঙ্ক্ষা

  • (১) সীমাহীন উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও আত্মপ্রত্যয় তাঁর পতনের অন্যতম প্রধান কারণ। অল্পবয়সে একের পর এক সাফল্য অর্জন করার ফলে তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষা গগনচুম্বী হয়ে ওঠে। নিজ শক্তি ও প্রতিভা সম্পর্কেও তিনি সীমাহীন আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন এবং অচিরেই এই আত্মবিশ্বাস উন্মত্ততায় পরিণত হয়।
  • (২) তিনি ভুলে যান যে, মানুষের শক্তির একটি সীমা আছে। তিনি মনে করতেন যে, ‘অসম্ভব কথাটি একমাত্র মূর্খদের অভিধানে লেখা থাকে। এই উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও আত্মবিশ্বাসের ফলস্বরূপ তিনি সাধারণ বাস্তববোধ হারিয়ে মরীচিকার পিছনে ছুটতে থাকেন।
  • (৩) তিনি নিজ জেদ ও অহঙ্কারবশত এমন সব ভুল সিদ্ধান্ত নিতে থাকেন, যাতে তাঁর পতন অনিবার্য হয়ে ওঠে। প্রাচীন রোম সাম্রাজ্য বা শার্লাম্যানের অনুকরণে তিনি সমগ্র ইউরোপকে এক শাসন ও আইনের বন্ধনে আবদ্ধ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি ভুলে যান যে উনিশ শতকের সূচনায় এই ধরনের সাম্রাজ্য স্থাপনের উদ্যোগ অবান্তর ও হাস্যকর।
  • (৪) তাঁর স্পেন ও রাশিয়া আক্রমণ ছিল বিরাট ভ্রান্তি । লিপজিগের যুদ্ধের পর বিজয়ী শক্তিবর্গ তাঁকে যে সন্ধির প্রস্তাব দেয়, তা প্রত্যাখান করাও ছিল তাঁর চরম নির্বুদ্ধিতা। এই প্রস্তাব গ্রহণ করলে তাঁকে কেবল হল্যান্ড ও বেলজিয়াম ছাড়তে হত।
  • (৫) সীমাহীন আত্মবিশ্বাসের অধিকারী নেপোলিয়ন এই প্রস্তাব প্রত্যাখান করে নিজ পতনকে অনিবার্য করে তোলেন। মার্শাল ফচ (Foch) বলেন যে, নেপোলিয়ন ভুলে যান যে মানুষ কখনও ঈশ্বর হতে পারে না। তিনি এ কথাও ভুলে যান যে, যুদ্ধ অপেক্ষা শান্তিই হল মানুষের সর্বোচ্চ লক্ষ্য।

(খ) ফ্রান্সে স্বৈরতন্ত্র

  • একদা মুক্তির দূত হিসেবে বন্দিত হলেও কালক্রমে ফ্রান্স ও ফ্রান্সের বাইরে নেপোলিয়নের শাসনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
  • (১) তিনি বিপ্লব-বিধ্বস্ত অশান্ত ফ্রান্সে শাস্তি প্রতিষ্ঠা করেন এবং বিপ্লবের সুফলগুলিকেও দেশবাসীর ঘরে পৌঁছে দেন।
  • (২) তাঁর যুদ্ধজয় ফরাসিদের গৌরবান্বিত করে, কালক্রমে তারা নেপোলিয়নের প্রতি বিরূপ হয়ে পড়ে। বাক্-স্বাধীনতা খর্ব করে, বিচারে দেশবাসীকে কারাগারে পাঠিয়ে, সাম্রাজ্যের সর্বত্র গুপ্তচর নিয়োগ করে তিনি দেশে -এক স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠা করেন।
  • (৩) ঐতিহাসিক ডেভিড টমসন বলেন, “নেপোলিয়নের স্বৈরশাসনে ফ্রান্স ক্রমে একটি পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়। ফলে নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে চক্রান্ত শুরু হয় এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ লোকেরাই ছিলেন এই চক্রান্তের নায়ক।
  • (৪) এছাড়া বৈদেশি যুদ্ধ, লোকক্ষয়, অর্থনৈতিক দুর্দশা, গ্রামাঞ্চলের চরম বিশৃঙ্খলা ফরাসিদের চরমভাবে ক্ষুধ করে তোলে। মানুষ প্রবলভাবে নেপোলিয়ন-বিরোধী হয়ে ওঠে। তাদের দাবি ছিল শান্তি।
  • (৫) সমগ্র ইউরোপে যখন নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্ত গণ-জাগরণ শুরু হয়েছে, ফরাসিরা তখন ছিল রণক্লান্ত ও অবসাদগ্রস্ত। মিত্রবাহিনী যখন প্যারিসের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে তখনও তারা ছিল অবসাদগ্রস্ত। তারা যে কোনও মূল্যে শান্তি স্থাপনের জন্য আকুল হয়ে ওঠে। ১৮১৫ খ্রিস্টাব্দে নেপোলিয়নের পতনে তারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে।

(গ) সাম্রাজ্যের স্ব-বিরোধিতা

ঐতিহাসিক ডেভিড টমসন বলেন, “নেপোলিয়নের সাম্রাজ্যের আত্মবিনাশী স্ব-বিরোধিতা এবং স্বতঃসিদ্ধ দুর্বলতার জন্যই এই সাম্রাজ্যের পতন অনিবার্য ছিল।” যেমন –

  • (১) নেপোলিয়ন ছিলেন বিপ্লবের অগ্নিময় তরবারি। বিপ্লবী আদর্শেরধারক হিসেবে তিনি ইউরোপের দেশগুলি জয় করেন এবং সংস্কারের মাধ্যমে বিজিত দেশগুলিতে বিপ্লবী ভাবধারার প্রসার ঘটান।
  • (২) বিজিত রাজ্যের অধিবাসীরা তাঁর কাছে অনেক কিছু আশা করেছিল। অচিরেই কিন্তু তাঁর বিপ্লবী ভাবমূর্তি ম্লান হয়ে যায়। মানুষ বুঝতে পারে যে, তিনি ফ্রান্সের স্বার্থে ইউরোপকে ব্যবহার করছেন। তিনি নিজেও স্বীকার করেন যে, “ফ্রান্সের স্বার্থই আমার কাছে সর্বাগ্রগণ্য।”
  • (৩) বিজিত রাজ্যে তিনি যে শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করেন, তা পুরোনো রাজবংশগুলির স্বৈরাচার অপেক্ষাও ভয়ঙ্কর ছিল। নানাপ্রকার স্বৈরাচারী আইন ও বিধি-ব্যবস্থার প্রবর্তন, মাত্রাতিরিক্ত কর আরোপ, বাধ্যতামূলক সেনা সংগ্রহ, অর্থনৈতিক শোষণ এবং বলপূর্বক মহাদেশীয় অবরোধ প্রথা আরোপ প্রভৃতি কারণে ওইসব রাজ্যে তিনি ঘৃণার পাত্রে পরিণত হন।
  • (৪) জাতীয়তাবাদী আদর্শের কথা প্রচার করেও তিনি জাতীয়তাবাদী ভাবধারার উপর আঘাত হানেন। ইতালি, জার্মানি, স্পেন, হল্যান্ড, নেপলস্, ওয়েস্টফেলিয়া প্রভৃতি রাজ্যে তিনি নিজ রাজবংশ প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হন। ইতালিতে সৎপুত্র ইউজেন, হল্যান্ডে ভ্রাতা লুই, নেপলস্-এ ভগ্নিপতি মুরাট, স্পেনে ভ্রাতা যোসেফ এবং জার্মানিতে ভ্রাতা জেরোম-কে তিনি শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেন।
  • (৫) এইসব রাজ্যে রাজতন্ত্র ‘ভুঁইফোড় সামরিক স্বৈরতন্ত্রে’ পরিণত হয়। স্বাভাবিকভাবেই জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ মানুষের পক্ষে তা মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না। ঐতিহাসিক রবার্ট এরগ্যাং বলেন, “নেপোলিয়ন যে জাতীয়তাবাদী শক্তির জাগরণ ঘটান, তা তাঁর বিরুদ্ধে শত্রুপক্ষের সেনাদল অপেক্ষা বহুগুণ শক্তিশালী ছিল।”

(ঘ) সাম্রাজ্যের দুর্বল ভিত্তি

  • (১) তাঁর সাম্রাজ্যের ভিত্তি ছিল খুবই দুর্বল। জনগণের আনুগত্য নয়—সামরিক শক্তির জোরেই তিনি একদা সিংহাসন দখল করেছিলেন এবং মনে করেছিলেন যে, সামরিক শক্তির জোরেই তিনি সেই বিশাল সাম্রাজ্য টিকিয়ে রাখবেন।
  • (২) ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে তিনি উপলব্ধি করতে পারেননি যে, তাঁর ধারণা সঠিক নয়। ফ্রান্সের মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন পেলে তাঁর সাম্রাজ্য হয়তো টিকে থাকত, কিন্তু ১৮১০ খ্রিস্টাব্দের পর তিনি সামরিক সাফল্য এবং ফরাসি জাতির আনুগত্য দুটি থেকেই বঞ্চিত হন।

(ঙ) মহাদেশীয় ব্যবস্থা

মহাদেশীয় অবরোধ তাঁর পতনের অন্যতম কারণ। নৌ-যুদ্ধে ইংল্যান্ডকে পরাস্ত করা সম্ভব নয় বুঝে তিনি ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এক অর্থনৈতিক যুদ্ধ শুরু করেন। এই যুদ্ধ জয় করতে গিয়ে তিনি নিত্যনতুন সমস্যায় জড়িয়ে পড়েন। এই যুদ্ধের ফলেই তিনি পোপ, স্পেন ও রাশিয়ার সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন, পরবর্তীকালে যার ফল হয় খুবই মারাত্মক।

(চ) ধর্মীয় অসন্তোষ

১৮০১ খ্রিস্টাব্দে পোপ সপ্তম পায়াস ও নেপোলিয়নের মধ্যে যে ‘কনকর্ডাট বা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, তার দ্বারা ক্যাথলিক ধর্ম ফ্রান্সের স্বীকৃত ধর্মে পরিণত হয়। এতে পোপ ও ক্যাথলিকরা খুশি হলেও প্রোটেস্টান্টরা কিন্তু ক্ষুব্ধ হয়। ইতিমধ্যে পোপ মহাদেশীয় ব্যবস্থা মানতে অস্বীকৃত হলে নেপোলিয়ন তাঁর রাজ্য দখল করেন এবং পোপকে বন্দি করেন (১৮০৯ খ্রিঃ)। এর ফলে সমগ্র ক্যাথলিক জগতে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়।

(ছ) স্পেনীয় ক্ষত

  • (১) নেপোলিয়ন অন্যায়ভাবে স্পেন দখল করে নিজ ভ্রাতা যোসেফকে স্পেনের সিংহাসনেবসালে স্পেনবাসীর আত্মমর্যাদা ও জাতীয়তাবোধে তীব্র আঘাত লাগে। পর্তুগালের সঙ্গে মিলিত হয়ে স্পেনবাসী নেপোলিয়নের বিরুদ্ধে মরণপণ সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়।
  • (২) ছয় বৎসরব্যাপী (১৮০৮-১৮১৪ খ্রিঃ) এই উপদ্বীপের যুদ্ধ -এ নেপোলিয়ন পরাজিত হলে তাঁর মর্যাদা বিনষ্ট হয়, তাঁর বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয় এবং তাঁর পরাজয়ে সারা ইউরোপে প্রবল উদ্দীপনার সঞ্চার হয়। 
  • (৩) তিনি নিজেই বলেছেন, “স্পেনীয় ক্ষতই আমার সর্বনাশ করেছে।” ঐতিহাসিক গ্রান্ট ও টেম্পারলি বলেন যে, তাঁর স্পেনীয় নীতি ছিল এক বিশাল ভ্রান্তি।

(জ) মস্কো বা রাশিয়া অভিযান

  • (১) নেপোলিয়নের রাশিয়া অভিযান -এর শোচনীয় ব্যর্থতা তাঁর পতনকে অনিবার্য করে তোলে। দুরত্বও প্রাকৃতিক অসুবিধাকে উপেক্ষা করে মস্কো অভিযান চালিয়ে তিনি মারাত্মক ভুল করেন।
  • (২) পশ্চিমে চিরশত্রু ইংল্যান্ডকে পরাজিত না করে তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রা করেন। এর ফলে তাকে পূর্ব ও পশ্চিম দু’দিকে দুই শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে সংগ্রামে অবতীর্ণ হতে হয়।
  • (৩) পরাজিত না হয়েও পরাজয়ের গ্লানি ও বিপুল ক্ষয়ক্ষতিতে তাঁর মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত হয়। তাঁর অপরাজেয় ‘গ্র্যান্ড আর্মি’ ধ্বংস হয়। এর ফলে সমগ্র ইউরোপে নব-উন্মাদনার সৃষ্টি হয়। তাঁর স্বৈরাচারী শাসনে নিপীড়িত মানুষ জোটবদ্ধ হয়ে মুক্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়।

(ঝ) ফ্রাঙ্কফুর্ট প্রস্তাব

ফ্রাঙ্কফুর্ট প্রস্তাব অগ্রাহ্য করা ছিল নেপোলিয়নের রাজনৈতিক জীবনের একটি মারাত্মক ভুল। লাইপজিগের যুদ্ধে পরাজয়ের পর বিজয়ী শক্তিবর্গ নেপোলিয়নের নিকট ফ্রাঙ্কফুর্ট প্রস্তাব পেস করেন। এই প্রস্তাব নেপোলিয়নের পক্ষে যথেষ্ট সম্মানজনক ছিল। তাঁকে শুধু বেলজিয়াম ও হল্যান্ডের উপর অধিকার ত্যাগ করতে বলা হয়। কিন্তু এই সম্মানজনক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে নেপোলিয়ন চরম অদূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন।

(ঞ) মিত্রশক্তির জোট গঠন

ইতিপূর্বের যুদ্ধগুলিতে নেপোলিয়নের জয়লাভের প্রধান কারণ ছিল নেপোলিয়ন বিরোধী শক্তিগুলি পরস্পর ঐক্যবদ্ধ না থাকা। কিন্তু চতুর্থ শক্তিজোট গঠিত হওয়ার পর তাদের মিলিত শক্তির সামনে নেপোলিয়নের ফরাসি বাহিনী অত্যন্ত দুর্বল ছিল। এই চতুর্থ শক্তিজোট শেষ পর্যন্ত নেপোলিয়নের পতনকে ত্বরান্বিত করে।

(ট) সামরিক দুর্বলতা

  • (১) সামরিক জীবনের সূচনা-পর্বে নেপোলিয়ন যে সেনাবাহিনী নিয়ে যুদ্ধ করতেন তা ছিল বিপ্লবের আদর্শে উদ্বুদ্ধ ফরাসি সেনাদল। কালক্রমে সাম্রাজ্যের আয়তন বৃদ্ধি পেলে তিনি বিজিত দেশগুলি থেকে সেনা সংগ্রহ করতে থাকেন।
  • (২) পোল, ডেন, জার্মান, ডাচ, ইতালীয় প্রভৃতি বিভিন্ন জাতির লোক নিয়ে তিনি বিশাল সেনাদল গঠন করেন। এর ফলে তাঁর সেনাদলের জাতীয় চরিত্র বিনষ্ট হয়।তারা ছিল নিছক ভাড়াটে সৈনিক-বিপ্লবী আদর্শের জন্য কোনও আত্মত্যাগের প্রেরণা তাদের মধ্যে ছিল না।
  • (৩) এছাড়া, ক্রমাগত যুদ্ধের ফলে তাঁর সেনাদল রণক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং দক্ষ ও অভিজ্ঞ সেনাদের অনেকেরই মৃত্যু হয়। অনভিজ্ঞরা তাদের স্থান দখল করলে সেনাদল দুর্বল হয়ে পড়ে।
  • (৪) রণকৌশলের ক্ষেত্রে নেপোলিয়ন নানা উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় দিয়েছেন। তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ডিউক অব ওয়েলিংটন ও ব্লুকার তাঁর রণকৌশল শিখে তাঁর বিরুদ্ধেই তা প্রয়োগ করেন।

(ঠ) ইংল্যান্ডের ভূমিকা

  • (১) নেপোলিয়নের পতনে ইংল্যান্ডের ভূমিকা ছিল অতি গুরুত্বপূর্ণ। ইংল্যান্ড ধারাবাহিক ভাবে নেপোলিয়নের বিরোধিতা চালিয়ে যায়। ইংল্যান্ডের উদ্যম ও আর্থিক সহায়তায় ইউরোপে বারংবার নেপোলিয়ন-বিরোধী শক্তিজোট গড়ে ওঠে।
  • (২) সমগ্র ইউরোপকে সংঘবদ্ধ করার ব্যাপারে ইংল্যান্ডের ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইংল্যান্ডের অদ্বিতীয় নৌ-বাহিনীর জন্যই মহাদেশীয় ব্যবস্থা ব্যর্থ হয় এবং উপদ্বীপের যুদ্ধে স্পেন ও পর্তুগাল জয়যুক্ত হয়। ওয়াটার্লুর যুদ্ধেও তিনি ইংরেজ সেনাপতি ডিউক অব ওয়েলিংটনের কাছে পরাজিত হন।

ফরাসি বিপ্লব প্রসূত রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযােগে নেপােলিয়ন ফ্রান্সের সম্রাট হন। কিন্তু মাত্র এক দশকের মধ্যেই তার পতন ঘটে। উত্তরােত্তর ক্ষমতার পশ্চাদ্ধাবনই নেপােলিয়নের পতনকে অনিবার্য করে তােলে।

কোড নেপোলিয়ন কি, কোড নেপোলিয়ন, কোড নেপোলিয়ন টিকা, কোড নেপোলিয়ন বলতে কী বোঝো, কোড নেপোলিয়ন কাকে বলে

কোড নেপোলিয়ন (Code Napoleon): ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্টের সংস্কার কর্মসূচিগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ হল ‘কোড নেপোলিয়ন’ (Code Napoleon) বা আইনবিধির প্রবর্তন। তার শাসনকালের পূর্বে ফ্রান্সের নানা স্থানে নানা ধরনের বৈষম্যমূলক ও পরস্পরবিরোধী আইন প্রচলিত ছিল।

নেপোলিয়ন সমগ্র ফ্রান্সে একই ধরনের আইন প্রবর্তনের উদ্দেশ্যে ৪ জন বিশিষ্ট আইনজীবীকে নিয়ে একটি পরিষদ গঠন করেন। এই পরিষদের প্রচেষ্টায় দীর্ঘ চার বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে যে আইনবিধি সংকলিত হয়, তা ‘কোড নেপোলিয়ন’ নামে খ্যাত।

কোড নেপোলিয়নে ধারার সংখ্যা, কোড নেপোলিয়ন এর কয়টি ধারা

২২৮৭টি বিধি সংবলিত এই আইন সংহিতা তিন ভাগে বিভক্ত ছিল— দেওয়ানি, ফৌজদারি এবং বাণিজ্যিক আইন। আইনের দৃষ্টিতে সমতা, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও সম্পত্তির অধিকারের স্বীকৃতি ছিল এই আইন সংহিতার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য।

কোড নেপোলিয়ন ও বিপ্লবের আদর্শ:

কোড নেপোলিয়ন ও বিপ্লবের আদর্শ: নেপোলিয়ন প্রাকৃতিক আইন ও রোমান আইনের সমন্বয় সাধন করে কোড নেপোলিয়ন রচনা করেছিলেন।

 i) এই আইনের ফলে পারিবারিক বন্ধন যেমন দৃঢ় হয় ঠিক তেমনি সামাজিক ক্ষেত্রে সাম্যও প্রতিষ্ঠিত হয়।

 ii) ব্যক্তি বা পরিবারের বিশেষ অধিকারের পরিবর্তে সকল নাগরিকের সমান মর্যাদা ও সুযোগ লাভের অধিকার স্বীকৃত হয়।

iii) বংশকৌলীন্যের পরিবর্তে যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকুরি প্রদানকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এর ফলে কেবল অভিজাত বংশীয়রাই নয়, নিম্ন সম্প্রদায়ের যোগ্য ব্যক্তিরাও সামাজিক মর্যাদা অর্জন করার সুযোগ ও অধিকার লাভ করে।

iv) বিপ্লবের ফলে সামন্তপ্রথা লোপ করে যে নতুন ভূমি বন্দোবস্ত চালু করা হয়, কোড নেপোলিয়নে তাকে স্বীকৃতি দেওয়া হলে সামন্তপ্রথার অস্তিত্ব চিরতরে বিলুপ্ত হয়।

কোড নেপোলিয়ন এর বৈশিষ্ট্য

কোড নেপোলিয়নের দ্বারা –

(i) আইনের চোখে দেশের সকল নাগরিকের মধ্যে সময় প্রতিষ্ঠা করা হয়,

(ii) সামন্ততান্ত্রিক অসাম্যর বিলোপ ঘটানো,

(iii) ব্যক্তিস্বাধীনতার স্বীকৃতি দেওয়া হয়,

(iv) যোগ্যতার ভিত্তিতে সরকারী চাকরিতে নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়,

(v) সম্পত্তির অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়,

(vi) ধর্মীয় সহনশীলতার নীতি গ্রহণ করা হয় এবং

(vii) অপরাধের শাস্তি হিসেবে জরিমানা, কারাদন্ড সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত, মৃত্যুদন্ড প্রভিতির ব্যবস্থা করা হয়।

কোড নেপোলিয়নের গুরুত্ব

i) একই আইন প্রবর্তন : কোড নেপোলিয়ন সমগ্র ফ্রান্সে একইধরনের আইনব্যবস্থা চালু করে। ফলে ফরাসি প্রশাসন একটি সুবিন্যস্ত রূপ লাভ করে।।

ii) বিপ্লবের আদর্শকে রক্ষা : ফরাসি বিপ্লবকালে যে সমস্ত ঘোষণা ও আইনগত ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছিল সেগুলি একটি আইনগ্রন্থে সংকলিত হয়। এইভাবে কোড নেপোলিয়নের প্রবর্তন বিপ্লবী আদর্শকে উজ্জীবিত ও রক্ষা করেছিল।

iii) ফরাসি সমাজের বাইবেল হিসেবে স্বীকৃতি : ‘কোড নেপোলিয়ন’ প্রবর্তন ফ্রান্সের বুর্জোয়া শ্রেণি ও কৃষকসহ অধিকাংশ মানুষকে সন্তুষ্ট করতে সক্ষম হয়েছিল। এইভাবে তা ফরাসি সমাজের বাইবেল’-এ পরিণত হয়।

এইভাবে কোড নেপোলিয়নের মাধ্যমে নেপোলিয়ন বিপ্লবের আদর্শগুলিকে বাস্তবায়িত করতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। এই আইসংহিতা কেবল ফ্রান্সেই নয়, ফ্রান্সের সীমানা ছাড়িয়ে ইউরোপের বিভিন্ন রাষ্ট্রেও স্বীকৃতি পেয়েছিল। এই আইনের মাধ্যমে সকল মানুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব না হলেও এ বিষয়ে যে আন্তরিক প্রয়াস লক্ষ করা গিয়েছিল, তা বিশেষভাবে উল্লেখের দাবি রাখে।

কোড নেপোলিয়নের ত্রুটি:

কোড নেপোলিয়নের বিভিন্ন ত্রুটি ছিল। যেমন –

  • (i) এতে সমাজে নারীর মর্যাদা হ্রাস হয়,
  • (ii) স্ত্রীর ওপর স্বামীর কর্তৃত্ব প্রতিস্থিথয়,
  • (iii) পারিবারিক সম্পত্তির অধিকার থেকে নারীকে বচিত করা হয় এবং
  • (iv) শ্রমিকশ্রেণী তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।

নেপোলিয়ন বোনাপার্টের সংস্কার, নেপোলিয়নের সংস্কার গুলি লেখ, নেপোলিয়নের অভ্যন্তরীণ সংস্কার

ফ্রান্সের সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্ট শুধু একজন যোদ্ধা ছিলেন না তিনি ছিলেন একজন দক্ষ সংস্কারক ।ফরাসি দেশের প্রাচীন ঘুণেধরা রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থার সার্বিক পরিবর্তন সাধন করে তিনি অক্ষয় কীর্তি রেখে গেছেন । বিপ্লবজনিত অব্যবস্থা ও বিশৃংখলা , ভীতি ও সন্ত্রাসের পর বিপ্লবের সুফল গুলোকে স্থায়িত্ব দান করার মানসে তিনি এক গঠনমূলক কাজে হাত দেন । যার ফলশ্রুতিতে ফ্রান্সে অচিরেই রাহাজানি ,ও লুন্ঠন বন্ধ হয়ে যায় এবং দৈনন্দিন জীবন যাত্রার শান্তি শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ফিরে আসে । 

সংস্কারের উদ্দেশ্য

তিনি বেশ কয়েকটি উদ্দেশ্য নিয়ে সংস্কারের কাজে অবতীর্ণ হন। যেমন –

  • (১) তিনি একটি কেন্দ্রীভূত শাসন প্রবর্তন ও জনহিতকর কার্যাবলীর মাধ্যমে ফরাসি জাতির কৃতজ্ঞতাভাজন হতে চেয়েছিলেন।
  • (২) বিপ্লবোত্তর যুগে দেশবাসীর আশা-আকাঙ্ক্ষারসঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তিনি একটি স্থায়ী ও শক্তিশালী সরকার গঠন করতে চান।
  • (৩) প্রয়োজনীয় শাসন-সংস্কারের মাধ্যমে তিনি ব্যক্তিগত প্রভাব-প্রতিপত্তি ও যশ বৃদ্ধি করতে চান। তিনি নিজেই বলছেন যে, “আমি এমন গৌরব রেখে যেতে চাই যা ভবিষ্যৎ বংশধরদের কাছে উদাহরণ হয়ে থাকবে।”
  • (৪) ফরাসি বিপ্লব ও দার্শনিকদের শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ নেপোলিয়নের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল বিপ্লবের সুফলগুলিকে (আইনের চোখে সমানাধিকার, বিশেষ অধিকার লোপ প্রভৃতি) স্থায়িত্ব প্রদান। এইসব

সমন্বয় বিধান

  • (১) বিপ্লব সারা দেশে বিভিন্ন গোষ্ঠী, সম্প্রদায় ও দলের মধ্যে রেষারেষি এবং বিদ্বেষের পরিবেশ সৃষ্টি করে। এই অনৈক্য দেশের উন্নতির পথে অন্যতম প্রধান অন্তরায় ছিল। এই কারণে তিনি বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে বোঝাপড়ার উপর প্রবল গুরুত্ব আরোপ করেন।
  • (২) দেশত্যাগী অভিজাত ও বিদ্রোহী যাজকদের সম্পর্কিত কঠোর আইনগুলি শিথিল করা হয়। রাজতন্ত্রী, জেকোবিন, জিরণ্ডিনদের প্রতি উদারনীতি গ্রহণ করা হয়। লা-ভেণ্ডি নামক স্থানের ক্যাথলিকদের ধর্মাচরণের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
  • (৩) রাজনৈতিক কারণে নির্বাসিত লাফায়েৎ, ব্যারিকে প্রমুখ ব্যক্তিদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। ষোড়শ লুই-এর মৃত্যুদণ্ড, রোবসপিয়রের পতন প্রভৃতি উপলক্ষে অনুষ্ঠিত ‘জাতীয় উৎসব’ বন্ধ করা হয়। এইভাবে তিনি এক সমন্বয়ের পরিবেশ গড়ে তোলেন।

শাসনতান্ত্রিক সংস্কার

  • (১) নেপোলিয়নের প্রথম ও প্রধান কৃতিত্ব হল বিপ্লব এবং যুদ্ধ-বিধ্বস্ত ফ্রান্সে আইনের শাসন প্রবর্তন করে দেশবাসীর মনে শান্তি ও নিরাপত্তাবোধ সুনিশ্চিত করা। এই উদ্দেশ্যে তিনি একটি কেন্দ্রীভূত স্বৈরশাসন গড়ে তোলেন এবং শাসনব্যবস্থারপ্রতিটি ক্ষেত্রে নিজ আধিপত্য স্থাপন করেন।
  • (২) প্রথম কনসাল হিসেবে তিনি সমস্ত ক্ষমতার অধিকারী হন। আইনসভা চারটি কক্ষে বিভক্ত হয়। একমাত্র নিম্নকক্ষের সদস্যরা নির্বাচিত হলেও বাকি তিন কক্ষের সদস্যরা প্রথম কনসাল কর্তৃক মনোনীত হতেন।
  • (৩) প্রথম কনসালের সম্মতি ছাড়া কোনও বিল আইনসভায় পেশ করা যেত না বা আইনসভায় পাস হলেও কোনও বিল আইনের মর্যাদা পেত না। সমগ্র দেশকে মোট ৮৩টি প্রদেশ বা ডিপার্টমেন্টে বিভক্ত করা হয়। প্রদেশগুলি আবার ৫৪৭টি জেলা বা ক্যান্টনে বিভক্ত ছিল।
  • (৪) প্রদেশ ও জেলাগুলির শাসনকর্তা অর্থাৎ ‘প্রিফেক্ট’ ও ‘সাব-প্রিফেক্ট’ এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মচারী—এমনকী পৌরসভাগুলির প্রধান ‘মেয়র’-দেরও তিনি নিয়োগ করতেন। মন্ত্রী, আমলা, বিচারক, সেনাপতি—সব পদস্থ কর্মচারীই তাঁর দ্বারা নিযুক্ত হত।
  • (৫) নির্বাচন দ্বারা সরকারি কর্মচারী নিয়োগ নিষিদ্ধ হয়। তিনি সর্বদা দক্ষ ব্যক্তিদেরই নিয়োগ করতেন। এর ফলে তাঁর প্রশাসন দক্ষ ব্যক্তিতে পূর্ণ ছিল। পুলিশ বিভাগের দায়িত্ব ছিল ফুচে (Fouche)-র হাতে। বিদেশ দপ্তর ছিল ট্যালিরান্ড (Tallyrand)-এর দায়িত্বে।
  • (৬) লুই বোনাপার্ট দেখতেন অভ্যন্তরীণ দপ্তর। অর্থ দপ্তরের দায়িত্ব ছিল গোদিন (Goudin)-এর উপর। বিভিন্ন মন্ত্রী থাকলেও মন্ত্রিসভা বলে কিছু ছিল না। নেপোলিয়ন মন্ত্রীদের সঙ্গে পৃথক পৃথকভাবে আলোচনা করতেন। প্রশাসনিক, প্রতিরক্ষা, বৈদেশিক নীতি-নির্ধারণ বা আইন প্রণয়ন-সংক্রান্ত প্রস্তাব উত্থাপন সব ক্ষমতাই তাঁর হস্তগত হয়।
  • (৭) স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনমূলক প্রতিষ্ঠানগুলির ক্ষমতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা খর্ব করা হয়। এইভাবে তিনি ফ্রান্সে গণতন্ত্রের মুখোশে এক স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন।

অর্থনৈতিক সংস্কার

  • (১) ফরাসি বিপ্লবের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল অর্থনৈতিক বিশৃঙ্খলা। অধ্যাপক ডেভিড টমসন অর্থব্যবস্থা ও করপ্রথাকে পুরাতনতন্ত্রের ‘ক্যানসার’ (Cancer) বলে অভিহিত করেছেন। নেপোলিয়নের ক্ষমতা দখলের সময়ে ফ্রান্সের আর্থিক সংকট চরমে উঠেছিল।
  • (২) এই অবস্থায় তিনি অর্থনৈতিক সংস্কারে মন দেন। গোদিন অর্থ দপ্তরের মন্ত্রী নিযুক্ত হন। সরকারি দপ্তরগুলিতে ব্যয়-সংকোচের নির্দেশ দেওয়া হয় এবং নেপোলিয়ন নিজেই সরকারি বাজেট পরীক্ষা করতে শুরু করেন।
  • (৩) অর্থ দপ্তরকে দু’ভাগে বিভক্ত করে তিনি রাজস্ব দপ্তর ও অডিট দপ্তর তৈরি করেন। অডিট বিভাগ সরকারি ব্যয়ের হিসাব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করত। নেপোলিয়ন নিজে সর্বসমক্ষে অডিট রিপোর্ট পাঠ করে তার যথার্থতা যাচাই করতেন।
  • (৪) তিনি ফরাসি জনসাধারণকে বোঝাতে সক্ষম হন যে, সরকারকে কর দেওয়া প্রতিটি নাগরিকের অবশ্য কর্তব্য। সবাইকে আয়কর দিতে বাধ্য করা হয়। নতুন কোনও কর ধার্য না করে প্রচলিত করগুলি আদায়ের ব্যাপারে জোর দেওয়া হয়।
  • (৫) প্রত্যক্ষ কর অপেক্ষা পরোক্ষ কর আদায়ের উপর তিনি বেশি গুরুত্ব দেন এবং লবণ ও সুরার উপর পরোক্ষ কর আরোপিত হয়। তিনি প্রাদেশিক বা আঞ্চলিক সভাগুলির কর আদায়ের অধিকার বাতিল করেন। কর আদায় ব্যবস্থাকে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে আনা হয়। কর আদায়কারীরা ছিল রাষ্ট্রের বেতনভুক কর্মচারী।
  • (৬) আর্থিক পুনর্গঠনের উদ্দেশ্যে তিনি ১৮০০ খ্রিস্টাব্দে ‘ব্যাঙ্ক অব ফ্রান্স’ প্রতিষ্ঠা করেন। ঋণদান ও মুদ্রাব্যবস্থার সব দায়িত্ব এই ব্যাঙ্কের উপর অর্পিত হয়। তিনি পুনরায় সোনা ও রূপার মুদ্রা বাজারে চালু করেন।
  • (৭) ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতির জন্য চেম্বার অব কমার্স বা বণিক সঙ্ঘের পুনর্গঠন, স্টক এক্সচেঞ্জ স্থাপন, রাস্তাঘাট নির্মাণ ও বন্দরগুলির উন্নয়নের কর্মসূচি নেওয়া হয়। ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে তিনি কৃষি ও শিল্পের উন্নতির দিকেও নজর দেন।
  • (৮) তিনি শিল্প সংরক্ষণ নীতি গ্রহণ করেন। অবাধ বাণিজ্য নীতি নয়—তিনি মার্কেন্টাইল নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি বেকারদের কর্মসংস্থানের জন্য গঠনমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করেন।

শিক্ষা সংস্কার

  • (১) নেপোলিয়নের শিক্ষা সংস্কারের মূল লক্ষ্য ছিল সম্রাট ও রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত নাগরিক গড়ে তোলা। প্রাথমিক শিক্ষা ছিল ‘কমিউন’ বা পুরসভারহাতে। তাঁর উদ্যোগে প্রচুর মাধ্যমিক, ফলিত বিজ্ঞান, কারিগরি, আইন, চিকিৎসা, শিক্ষক-শিক্ষণ ও সামরিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • (২) বিভিন্ন শহরে তিনি ২৯টি ‘লাইসি’ বা নির্বাচিত আবাসিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে সামরিকশিক্ষাও দেওয়া হত। ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দে ফ্রান্সে বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুল ছিল ৩৭৭টিও সরকারি মাধ্যমিক স্কুল ৩৭০টি। আইন বিদ্যালয় প্যারিসেই ছিল ১২টি।
  • (৩) সমগ্র দেশে যাতে একই ধরনের শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তিত হয় সেই উদ্দেশ্যে ১৮০৮ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘ইউনিভার্সিটি অব ফ্রান্স’। এখান থেকেই সর্বস্তরের শিক্ষার পাঠ্যসূচি তৈরি হত। তাঁর লক্ষ্য ছিল ধর্মনিরপেক্ষ শিক্ষার প্রসার। ছাত্ররা যাতে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা না করে সেজন্য ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পাঠ্যসূচি সংশোধন করা হয়।

শিক্ষা সংস্কারের ত্রুটি

তাঁর শিক্ষা-সংস্কার ত্রুটিহীন ছিল না।যেমন –

  • (১) মুখে জাতীয় শিক্ষার কথা বললেও শিক্ষার দরজা একমাত্র সম্পন্ন মধ্যবিত্তদের জন্যই উন্মুক্ত ছিল।সাধারণ মানুষের পক্ষে শিক্ষার ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব ছিল না।
  • (২) তিনি স্ত্রী-শিক্ষা বিস্তারে কোনও গুরুত্ব দেন নি। সরকারি ব্যয় হ্রাসের উদ্দেশ্যে নারীশিক্ষার দায়িত্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলির উপর ছেড়ে দেওয়া হয়।তাঁর মতে নারীশিক্ষার উদ্দেশ্য হল কর্তব্যপরায়ণা গৃহবধূ ও মাতা তৈরি করা।
  • (৩) তাঁর প্রাথমিক শিক্ষার কোনও পরিকল্পনা ছিল না। প্রাথমিক শিক্ষাকে তিনি গির্জার হাতেই ছেড়ে দেন।
  • (৪) শিক্ষায় উৎসাহ দেওয়া হলেও জনসাধারণকে স্বাধীন মতামত প্রকাশের অধিকার দেওয়া হয় নি। সংবাদপত্র ও পুস্তক প্রকাশের স্বাধীনতা ছিল না। সরকার-বিরোধী সংবাদপত্রের প্রকাশ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
  • (৫) নাটক ও নাট্যশালার উপর পুলিশি নিয়ন্ত্রণ কায়েম করা হয়। এই অবস্থায় দেশে সৃজনশীল সাহিত্য ও শিল্পের বিকাশ সম্ভব ছিল না।

ধর্মসংস্কার

  • ১৭৯১ খ্রিস্টাব্দের বিপ্লবী সংবিধান দ্বারা (‘সিভিল কনস্টিটিউশন অব দি ক্লার্জি)গির্জাকে রাষ্ট্রায়ত্ত করা হলে পোপের সঙ্গে ফরাসি রাষ্ট্রের বিরোধ বাধে। ক্যাথলিক প্রজারা এই ব্যবস্থা মানতে পারে নি। ধর্মীয় ক্ষেত্রে নেপোলিয়নের পদক্ষেপ গুলি হল –
  • (১) কনকর্ডাট: ধর্মের আধ্যাত্মিক ব্যাপারে নেপোলিয়নের কোনও মাথাব্যথা না থাকলেও রাজনৈতিক স্বার্থে তিনি খ্রিস্টীয় জগতের ধর্মগুরু পোপের সঙ্গে বিরোধ মিটিয়ে নেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন। এই উপলক্ষে ১৮০১ খ্রিস্টাব্দে তিনি পোপ নবম পায়াস-এর সঙ্গে এক ‘ধর্ম-মীমাংসা চুক্তি বা ‘কনকর্ডাট’ (Concordat of 1801) স্বাক্ষর করেন।
  • (২) কনকর্ডাট -এর মূল বক্তব্য: ধর্ম মীমাংসা চুক্তি অনুসারে স্থির হয় যে, (ক) পোপ বিপ্লবী আমলে ফরাসি গির্জা ও গির্জার সম্পত্তির জাতীয়করণ মেনে নেবেন। (খ) ফরাসি সরকার রোমান ক্যাথলিক গির্জা ও ধর্মমতকে স্বীকৃতি দেবে। (গ) ভবিষ্যতে যাজকগণ সরকার কর্তৃক মনোনীত হবেন এবং পোপ তাঁদের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেবেন। (ঘ) রাষ্ট্র যাজকদের বেতন দেবে।
  • (৩) ধর্মীয় ঐক্য: ধর্ম মীমাংসা চুক্তির দ্বারা রাষ্ট্র ও পোপ উভয়েই লাভবান হন। পোপের সঙ্গে বিরোধ মেটায় ফ্রান্সে ধর্মীয় ঐক্য আসে এবং নেপোলিয়নের শক্তি বৃদ্ধি পায়। তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ ক্যাথলিকদের সমর্থন লাভ করেন। যাজকদের উপর রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠিত হয়। কোবান-এর মতে, নানা ত্রুটি সত্ত্বেও এই চুক্তি ছিল নেপোলিয়নের এক বিরাট সাফল্য।

আইন সংস্কার

  • নেপোলিয়নের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ও গৌরবময় কীর্তি হল তাঁর ‘আইন সংহিতা’ বা ‘কোড নেপোলিয়ন’ (‘CodeNapoleon’)। এক্ষেত্রে তার পদক্ষেপ গুলি হল –
  • (১) আইনগত অনৈক্য: এতদিন পর্যন্ত ফ্রান্স ও বিভিন্ন প্রদেশে কোনও সাধারণ আইনবিধি প্রচলিত ছিল না। সমগ্র দেশে নানা ধরনের বৈষম্যমূলক, পরস্পর-বিরোধী এবং যুগের অনুপযোগী প্রায় ৩৬০টি বিভিন্ন ধরনের আইন প্রচলিত ছিল।এক কথায়, সমগ্র ফ্রান্সে কোনও আইনগত ঐক্য ছিল না।
  • (২) বিপ্লবী নেতৃবৃন্দের ব্যর্থতা: কনভেনশন ও ডিরেক্টরি যুগে বিপ্লবী নেতৃবৃন্দ এইসব পরস্পর-বিরোধী আইনগুলির মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করে সারা দেশে এক ধরনের আইন প্রণয়নের চেষ্টা করেন, কিন্তু এ কাজে তাঁরা সফল হন নি।
  • (৩) আইবিধি সংকলন: নেপোলিয়নের উদ্যোগে ফ্রান্সের চারজন বিশিষ্ট আইনজীবীকে নিয়ে গঠিত এক কমিশন চার বছরের (১৮০০-১৮০৪ খ্রিঃ) অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে ১৮০৪ খ্রিস্টাব্দে একটি আইনবিধি সংকলন করে।
  • (৪) কোন নেপোলিয়ন: আইনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য মোট ৮৪টি অধিবেশন বসে। এর মধ্যে ৩৬টি অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্বয়ং নেপোলিয়ন। ১৮০৭ খ্রিস্টাব্দে নেপোলিয়ন এর নামকরণ করেন ‘কোড নেপোলিয়ন’ বা ‘নেপোলিয়নের আইন সংহিতা”।
  • (৫) বিপ্লবের স্থায়ী ফল কোন নেপোলিয়ন: এই আইনবিধির মধ্যে ফ্রান্সের প্রাচীন আচার-অনুষ্ঠান, রোমান রীতি-নীতি এবং ফরাসি বিপ্লবী ঐতিহ্যের সমন্বয় লক্ষ্য করা যায়। এই আইনবিধি কোনওভাবেই ধর্মীয় বা রাজনৈতিক কুসংস্কার দ্বারা কলুষিত হয় নি। ‘কোড নেপোলিয়ন’-কে বিপ্লবের স্থায়ী ফল বলা যেতে পারে।
  • (৬) আইন সংহিতার বিভাগ: মোট ২২৮৭টি বিধি-সম্বলিত এই আইন সংহিতা তিনভাগে বিভক্ত।যথা –দেওয়ানি, ফৌজদারি ও বাণিজ্যিক আইন।
  • (৭) আইন সংহিতার বৈশিষ্ট্য: আইনের দৃষ্টিতে সমতা, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা, যোগ্যতানুযায়ী সরকারি চাকরিতে নিয়োগ, বিপ্লবী ভূমিব্যবস্থার স্বীকৃতি, সামন্ততান্ত্রিক বৈষম্যের বিলুপ্তি এবং ব্যক্তি-স্বাধীনতা ও সম্পত্তির অধিকারের স্বীকৃতি প্রভৃতি এই আইন সংহিতার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য।
  • (৮) দ্বিতীয় জাস্টিনিয়ান: এই আইনবিধির মূল নীতিগুলি পরবর্তীকালে ইউরোপের বিভিন্ন রাষ্ট্র কর্তৃক গৃহীত হয়েছিল। নেপোলিয়ন নিজেও তাঁর যুদ্ধগুলির চেয়ে এই আইন সংহিতাকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করতেন। ঐতিহাসিক লেফেভর এই আইনবিধিকে সমাজে বাইবেলের সঙ্গে তুলনা করেছেন। এই আইনবিধির জন্য তাঁকে ‘দ্বিতীয় জাস্টিনিয়ান’ বলে অভিহিত করা হয়।
  • (৯) আইন সংহিতার ত্রুটি: বলা বাহুল্য, এই আইনবিধি একেবারে ত্রুটিহীন ছিল না। যেমন –
    • (ক) এই আইনবিধিতে রোমান আইনকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়ায় প্রগতিশীলতার সব পথ বন্ধ হয়ে যায়।
    • (খ) এতে নারী সমাজের মর্যাদা হ্রাস করা হয়। নারীকে পুরুষের অধীনে রাখা হয়। পারিবারিক সম্পত্তির উপর তাদের কোনও অধিকার ছিল না, স্বামীর সম্পত্তি ছাড়া তারা কোনও সম্পত্তি অর্জন, বিক্রি বা দান করতে পারত না। বিবাহ-বিচ্ছেদের অধিকার সংকুচিত করা হয়।
    • (গ) স্ত্রী ও পুত্রের উপর স্বামী ও পিতার কর্তৃত্ব সুদৃঢ় করা হয়, যদিও ফরাসি বিপ্লবের আদর্শ হল সমানাধিকার।
    • (ঘ) শ্রমিকদের অধিকারের স্বীকৃতি দেওয়া হয় নি।
  • (১০) আইন সংহিতার গুরুত্ব: জনহিতকর কার্য – নেপোলিয়ন নানা জনহিতকর কাজের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। যেমন –
    • (১) বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়ন: তিনি কৃষি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির দিকে নজর দেন। বেকার সমস্যা সমাধানের জন্য তিনি নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তাঁর আমলে বহু রাজপথ, খাল, বাঁধ, সেতু, বন্দর, পয়ঃপ্রণালী ও উদ্যান নির্মিত হয়।
    • (২) সৌধ সংস্কার ও নির্মাণ: তিনি ফ্রান্সের প্রাচীন সৌধগুলির সংস্কার করেন এবং বহু নতুন সৌধ নির্মাণ করেন। প্যারিস নগরীকে তিনি নতুন সাজে সজ্জিত করেন।
    • (৩) ল্যুভর মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠা: ভাস্কর্য ও শিল্পকলার অন্যতম সংগ্রহশালা ল্যুভর মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠা তাঁর অন্যতম কীর্তি।
    • ৪) লিজিয়ন অব অনার প্রদান: রাষ্ট্রের প্রতি সেবা ও আনুগত্যের স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি সামরিক ও অসামরিক ব্যক্তিদের ‘লিজিয়ন অব অনার’ (Legion of Honour) নামক উপাধি দানের ব্যবস্থা করেন।

সংস্কারের ফলাফল

  • নেপোলিয়নের সংস্কার কার্যকলাপের ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী। যেমন –

(১) শান্তি, স্থিতি ও সমৃদ্ধি ফিরিয়ে আনা

  • বিপ্লব-বিধ্বস্ত ফ্রান্সে যখন চরম নৈরাজ্য চলছে, সমগ্র জাতি যখন চরম বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে সম্পূর্ণ দিশেহারা, রাজনৈতিক স্থিতি বলে যখন দেশে কিছু নেই, প্রজাতন্ত্র না রাজতন্ত্র—এই বিতর্কে মানুষ যখন বিভ্রান্ত, এই অবস্থায় নেপোলিয়ন দেশে শান্তি, স্থিতি ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ফিরিয়ে আনেন।

(২) শক্তিশালী ফ্রান্স

  • অধ্যাপক ডেভিড টমসন বলেন যে, “ফ্রান্সকে শৃঙ্খলায় আবদ্ধ করে বোনাপার্ট ফ্রান্সে আইনের শাসন ফিরিয়ে আনেন। মাত্র কয়েক বছরের সংস্কার প্রচেষ্টার মাধ্যমে ফ্রান্সের জনজীবনে তিনি নতুন প্রাণের সঞ্চার করেন এবং ফ্রান্স একটি শক্তিশালী দেশে পরিণত হয়।”

(৩) বিপ্লবের ভাবধারা প্রতিষ্ঠিত

  • নেপোলিয়ন ছিলেন বিপ্লবের ধারক ও বাহক—বিপ্লবের অগ্নিময় তরবারি। তাঁর সেনাদল যেখানেই গেছে, সেখানেই এসেছে পরিবর্তনের জোয়ার। ঐতিহাসিক রেড্ডাওয়ে (Reddaway) বলেন যে, যেখানেই নেপোলিয়নের সেনাবাহিনী। গেছে সেখানেই পুরাতনতন্ত্রের সমাধি রচিত হয়ে ফরাসি বিপ্লবের ভাবধারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

(৪) নেপোলিয়নের নিজস্ব উক্তি

  • নেপোলিয়ন এক সময় মন্তব্য করেছেন—“আমিই বিপ্লব” (“I am the Revolution.”)। আবার তিনি অন্যত্র বলেছেন, “আমি বিপ্লবের ধ্বংসকারী”। আপাতদৃষ্টিতে পরস্পর-বিরোধী বলে মনে হলেও বক্তব্যের মধ্যেই সত্যতা আছে।

(৫) বিপ্লবের সন্তান নেপোলিয়ন

  • ফ্রান্সবাসীকে তিনি স্বাধীনতা দেন নি, কিন্তু তিনি বিপ্লবের সাম্যনীতিকে গ্রহণ করে ‘কোড নেপোলিয়ন’-এর মাধ্যমে ফ্রান্সে আইন, বিচার, কর, চাকরির সমানাধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। বংশগত মর্যাদা অপেক্ষা প্রকৃত যোগ্যতাকে তিনিমর্যাদা দেন এবং সামন্ততান্ত্রিক বিশেষাধিকার লোপ করেন। এদিক থেকে তিনি সত্যই ‘বিপ্লবের সন্তান’।

(৬) ওয়েদালার মন্তব্য

  • ফিলিপ ওয়েদালা বলেন যে, নেপোলিয়নের সাম্রাজ্য বিপ্লবের সামনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করে, বিপ্লবের বিস্তারলাভে সাহায্য করেছে। ঐতিহাসিক ফিশার-এর মতে, “নেপোলিয়ন হলেন বিপ্লবের সন্তান।”

(৭) জর্জ রুদের মন্তব্য

  • ঐতিহাসিক জর্জ রুদে-র মতে, নেপোলিয়ন প্রকৃতপক্ষে বিপ্লবের সন্তান ছিলেন না। তিনি ফ্রান্সে জনপ্রতিনিধিত্বমূলক সব প্রতিষ্ঠানের অবসান ঘটিয়ে ও ফরাসি বিপ্লবের স্বাধীনতার আদর্শ বিসর্জন দিয়ে সকল ক্ষমতা নিজে কুক্ষিগত করেন।

জর্জ রুদে-র মতে, প্রকৃতপক্ষে নেপোলিয়ন বুর্জোয়া স্বার্থই রক্ষা করেছিলেন। তিনি শ্রমিকদের মন জয় করতে পারেন নি। শ্রমিক-মালিক বিরোধে তিনি মালিকদের পক্ষই অবলম্বন করেন।

নেপোলিয়নের সাম্রাজ্য বিস্তার, নেপোলিয়নের সাম্রাজ্য, বিপ্লবী আদর্শ নেপোলিয়নীয় সাম্রাজ্য ও জাতীয়তাবাদ

ইংল্যান্ড ও রাশিয়া ছাড়া ইউরোপের প্রায় সকল দেশেই কনসালরূপে (১৭৯৯ – ১৮০৪ খ্রি:) ও সম্রাটরূপে (১৮০৪ – ১৮০৭ খ্রি:) নেপোলিয়ন তার সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটান।

১. ইউরোপীয় শক্তিজোটে ভাঙন: 

১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে কনসাল হয়ে নেপোলিয়ন অস্ট্রিয়া, রাশিয়া, ইংল্যান্ডকে নিয়ে গড়ে ওঠা ইউরোপীয় শক্তিজোটে ভাঙন ধরান।

২. ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আধিপত্য বিস্তার: 

১৮০০ খ্রিস্টাব্দের জুনে আল্পস্ অতিক্রম করে নেপোলিয়নের ফরাসি বাহিনী ইতালিতে প্রবেশ করে। মারেংগা ও হোহেনলিন্ডনের যুদ্ধে অস্ট্রিয়াকে ফরাসিবাহিনী পরপর পরাজিত করে। যুদ্ধে জিতে রাইন নদীর বামতীরসহ বেশ কিছু অঞ্চল ও বেলজিয়ামের ওপর ফ্রান্সের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮০৩ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে নেপোলিয়ন হ্যানোভার ও নেপল্স অধিকার করেন।

৩. ভিয়েনা দখল: 

উলমের যুদ্ধে (১৮০৫ খ্রি., ২০ অক্টোবর) নেপোলিয়নের ফরাসি বাহিনী অস্ট্রিয়ার ৫০ হাজার সেনাকে পরাজিত করে ভিয়েনার দখল নেয়।

৪. অস্ট্রিয়া-রাশিয়া জোটের বিরুদ্ধে জয়: 

ট্রাফালগারের যুদ্ধে (১৮০৫ খ্রি.) ব্রিটিশের কাছে পরাজিত হলেও নেপোলিয়ন নতুন উদ্যম নিয়ে উলম্-এর যুদ্ধে অস্ট্রিয়াকে পরাজিত করেন। এরপর অস্টারলিজের যুদ্ধে (১৮০৫ খ্রি., ২ ডিসেম্বর) তিনি অস্ট্রিয়া-রাশিয়ার মিলিত জোটের বিরুদ্ধেও জয়ী হন।

৫. প্রাশিয়া ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে জয়: 

নেপোলিয়ন জেনার যুদ্ধে (১৮০৬ খ্রি.) প্রাশিয়াকে পরাজিত করেন। ফ্রিডল্যান্ডের যুদ্ধে (১৮০৭ খ্রি., জুন) নেপোলিয়নের ফরাসি বাহিনী রাশিয়াকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে। এই যুদ্ধে পরাজিত হয়ে রাশিয়ার জার প্রথম আলেকজান্ডার নেপোলিয়নের সঙ্গে টিলজিটের সন্ধি (১৮০৭ খ্রি., ৮ জুলাই) স্বাক্ষরে বাধ্য হন।

সমগ্র ইউরোপজুড়ে নেপোলিয়ন সাম্রাজ্য বিস্তার করেন। ইতালি, জার্মানি, স্পেন, হল্যান্ড, নেপলস্ প্রভৃতি দেশে নেপোলিয়ন নিজের রাজবংশের লোকেদের সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত করেন। ইতালিতে সৎ পুত্র হবজেন, জার্মানিতে জোরেম, স্পেনে ভ্রাতা জোসেফ, হল্যান্ডে ভ্রাতা লুই এবং নেপলসে ভগ্নিপতি মুরাকে শাসনভার দেন।

নেপোলিয়নের রাশিয়া আক্রমণ, নেপোলিয়নের রাশিয়া অভিযান

নেপোলিয়ন কর্তৃক রাশিয়া আক্রমণের প্রধান কারণগুলি ছিল—

(1) টিলসিটের সন্ধির ত্রুটি :

টিলসিটের সন্ধিতে (1807 খ্রি.) নেপোলিয়ন তুরস্ক ও সুইডেনের বিরোধী যুদ্ধে রাশিয়াকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিলেও তিনি সেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন। ফলে জার অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন।

(2) ওল্ডেনবার্গ দখল :

রুশ জারের ভগ্নীপতি ওল্ডেনবার্গের ডিউক মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা মানতে অস্বীকার করায় নেপোলিয়ন ডিউকের রাজ্যটি দখল করে নেয়। ফলে জার নেপোলিয়নের প্রতি অত্যন্ত রুষ্ট হন।

(3) গ্রান্ড ডাচি অব ওয়ারশ গঠন :

নেপোলিয়ন ‘গ্রান্ড ডাচি অব ওয়ারশ’ গঠন করলে রাশিয়া নিজের অধিকৃত পোল্যান্ডের এলাকা দখলে রাখার ব্যাপারে শঙ্কিত হয়ে পড়ে। নেপোলিয়নের কাছে পোল্যান্ড অনাক্রমণের প্রতিশ্রুতি চাইলে নেপোলিয়ন তা অস্বীকার করেন।

(4) মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা :

রাশিয়া প্রথমে নেপোলিয়নের মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও পরে ক্রমশ প্রচন্ড আর্থিক ক্ষতির কারণে এই ব্যবস্থা মানতে অস্বীকার করে। ফলে রাশিয়ার ওপর নেপোলিয়ন ক্ষুব্ধ হন এবং রাশিয়া আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন।

রাশিয়া অভিযানে নেপোলিয়নের ব্যর্থতার কারণ

(1) পোড়ামাটি নীতি :

ফরাসি সৈন্যবাহিনী রাশিয়ার অভ্যন্তরে প্রবেশ করলে রুশ সেনারা ফরাসি সেনাবাহিনীকে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশের সুযোগ করে দেয়। এরপর রুশ সেনারা ‘পোড়ামাটি নীতি’ গ্রহণ করে ক্রমশ পিছিয়ে যেতে থাকে। ফলে ফরাসি বাহিনী শীঘ্রই সেখানে খাদ্যাভাব, পানীয় জলের অভাব, রুশ গেরিলা বাহিনীর আক্রমণ প্রভৃতির ফলে বিপর্যস্ত হয়।

(2) মহামারির প্রাদুর্ভাব :

রাশিয়ায় ফরাসি বাহিনীর মধ্যে ‘টাইফাস’ নামক ভয়ানক জ্বর ও অন্যান্য মহামারি ছড়িয়ে পড়লে প্রচুর ফরাসি সেনার মৃত্যু হয়।

(3) প্রাকৃতিক বিপর্যয় :

ফরাসি সৈন্যবাহিনী রাশিয়ার অভ্যন্তরে ও স্বদেশে ফেরার পথে তীব্র শীত, তুষারপাত, ঝড়বৃষ্টি প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে। ফলে বহু ফরাসি সৈন্যের মৃত্যু হয়।

(4) নেপোলিয়নের দম্ভ :

নেপোলিয়ন ক্ষমতার দম্ভে বাস্তববোধ ও সম্ভব অসম্ভবের সীমারেখা সম্পর্কে ধারণা পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেছিলেন। তিনি রুশ জারকে দুর্বল ও অযোগ্য ভেবে নিঃসন্দেহে একটি মারাত্মক ভুল করেছিলেন।

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | নবম শ্রেণীর ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর

Q1. নেপোলিয়নের আত্মজীবনীর নাম কি

Ans – নেপোলিয়ন বোনাপার্ট এর আত্মজীবনীর নাম হলো An autobiography the emperor

Q2. নেপোলিয়ন কে বিপ্লবের সন্তান বলা হয় কেন

Ans – নেপোলিয়ন ফরাসি বিপ্লবের ‘সাম্য’ নীতিকে বলবৎ করেন। কোড নেপোলিয়ন এর মাধ্যমে তিনি আইনগত সমতা ও যোগ্যতার মর্যাদাদানের ব্যবস্থা করেন এবং সামন্ততান্ত্রিক বিশেষ অধিকারের বিলোপ ঘটান। ইউরোপে ‘সাম্য’ ও জাতীয়তাবাদের আদর্শ তিনিই ছড়িয়ে দেন। তাই তাকে ঐতিহাসিক ফিশার ‘বিপ্লবের সন্তান’ বলে অভিহিত করেছেন।

Q3. নেপোলিয়ন কোথায় জন্মগ্রহণ করেন

Ans – নেপোলিয়ন ইতালির কর্সিকা দ্বীপে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

Q4. নেপোলিয়ন ইউরোপের কোন কোন রাষ্ট্র দখল করেন

Ans – নেপোলিয়ন এখন ফ্রান্সের উপর তার দখল সুসংহত করেছিলেন, নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, এবং বেশিরভাগ পশ্চিম জার্মানি এবং উত্তর ইতালি।

Q5. নেপোলিয়ন কোন দ্বীপে জন্মগ্রহণ করেন

Ans – নাপোলেওঁ দ্য বোনাপার্ত ১৭৬৯ সালের ১৫ আগস্ট ফ্রান্সের কর্সিকা দ্বীপের আজাক্সিও শহরে জন্মগ্রহণ করেন। 

Q6. নেপোলিয়নের জীবনের শেষ যুদ্ধ কি ছিল

Ans – ওয়াটার লুর যুদ্ধ

Q7. কোড নেপোলিয়ন এ স্থান পায় কটি উক্তি

Ans – ২২৮১ টি উক্তি

Q8. নেপোলিয়নের শ্রেষ্ঠ সেনাপতি কে ছিলেন

Ans – ম্যাসেনা ছিলেন নেপোলিয়ানের শ্রেষ্ঠ সেনাপতি।

Q9. নেপোলিয়ন কবে ফ্রান্সের সম্রাট হন

Ans – ১৮০৪ সালে ফরাসি সিনেট কর্তৃক নেপোলিয়ন বোনাপার্ট সম্রাট পদে অভিষিক্ত হন।

Q10. নেপোলিয়ন বোনাপার্টের ক্ষমতা লাভ

Ans – 1804 সালে, নেপোলিয়ন নিজেকে ফরাসি সম্রাট ঘোষণা করেন এবং একটি নতুন রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি সামরিক বিজয়ের মাধ্যমে ফরাসি সাম্রাজ্যকে প্রসারিত করতে থাকেন, অবশেষে ইউরোপের অন্যতম শক্তিশালী শাসক হয়ে ওঠেন।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।