Site icon prosnouttor

নবম শ্রেণীর ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর

নবম শ্রেণীর ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর

নবম শ্রেণীর ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

নেপোলিয়ন বোনাপার্ট, নেপোলিয়ন কে ছিলেন, নেপোলিয়ন বোনাপার্টের জীবনী

নেপোলিয়ন বোনাপার্ট (১৭৬৯-১৮২১) ছিলেন একাধারে ফ্রান্সের অবিসংবাদিত সম্রাট ও তুখোড় সেনাপ্রধান, যিনি ফরাসি বিপ্লবের ক্রান্তিলগ্নে (১৭৮৯-১৭৯৩) ফ্রান্সের হাল ধরেছিলেন এবং ফ্রান্সকে ইউরোপের শক্তিধর রাষ্ট্রে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

নেপোলিয়নের জন্ম ১৭৬৯ সালে ফ্রান্সের অধীনস্থ কর্সিকা দ্বিপে, সেখানকার প্রশিদ্ধ বোনাপার্ট বংশে। তিনি ১৭৮৫ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে ফ্রান্সের সেনাবাহিনীর গোলন্দাজ বাহিনীতে অফিসার হিসেবে যোগদান করেন এবং বিভিন্ন সময়ে সামরিক নৈপুণ্যে তিনি একে একে পদোন্নতি পেতে থাকেন। উল্লেখ্য, ফরাসি বিপ্লব চলাকালীন সময় ১৭৯০-১৭৯১ সালে বৃটেন ফ্রান্সের ভূমধ্যসাগরীয় বন্দর-নগরী টুলো (Toulon) দখন করে নেয়। কিন্তু ১৭৯৩ সালে নেপোলিয়ন সুকৌশলে টুলো বৃটেন থেকে পূণরোদ্ধার করতে সক্ষম হন। এই সাফল্যের জেড়ে নেপোলিয়ন কে ক্যাপটেন পদবী থেকে সরসরি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদবীতে পদন্নতি দেওয়া হয়।

নেপোলিয়ন বোনাপার্টের জীবনী

ইউরোপের মুক্তিদাতানেপোলিয়ন বোনাপার্ট
জন্ম১৫ আগস্ট, ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দ
পিতামাতাকার্লো বোনাপার্ট, লেটিজিয়া
ফরাসি জাতির সম্রাট১৮০৪ খ্রিস্টাব্দ
পতন১৮১৫ খ্রিস্টাব্দ
মৃত্যু১৮২১ খ্রিস্টাব্দ
নেপোলিয়ন বোনাপার্টের জীবনী

পরবর্তিতে ১৭৯৭ সালে নেপোলিয়ন অস্ট্রিয়াকে ইতালির যুদ্ধে পরাজিত করলে তাঁঁকে খুবই দ্রুত মেজর জেনারেল ও পরবর্তিতে ১৭৯৯ সালে ফ্রান্সের সেনাপ্রধান করা হয়। সেই সময় তাঁর বয়স ছিলো মাত্র ৩০ বছর। এতো অল্প বয়সে ফ্রান্সের সেনাপ্রধান হওয়া ও ফ্রান্সের জনগণের কাছে ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা থাকায় নেপোলিয়ন ১৮০০ সালে সেনাঅভ্যুত্থান ঘটিয়ে পুরো ফ্রান্সের ক্ষমতা নিজের কাছে কুক্ষিগত করেন। আর ফ্রান্সের জনগণ ও তা এক প্রকার মেনে নেয়।

১৮০১-১৮১০ এই দশটি বছর নেপোলিয়নের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। একে তো তিনি ফ্রান্সের বিরুদ্ধে পবিত্র রোমান সম্রাজ্য, প্রাশিয়া, নেদারল্যান্ডস, ইতালি ও বৃটেন কর্তৃক তৈরি সামরিক জোটকে কে একে একে পরাজিত করেন, অপরদিকে তিনি প্রায় হাজারো বছরের পুরণো পবিত্র রোমান সম্রাজ্যকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন করে দেন ইউরোপের মানচিত্র থেকে। ১৮০৩ সালে মাত্র ৩৪ বছর বয়সে নেপোলিয়ন নিজেকে ফ্রান্সের সম্রাট হিসেবে ঘোষণা করেন। আবার, ১৮০৬ সালে নেপোলিয়ন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে লুইজিয়ানা (Louisiana) অঙ্গরাজ্য মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিক্রি করেন দেন, যা বিখ্যাত Louisian Purchase নামে পরিচিত।

নেপোলিয়নের পতনের সুত্রপাত হয় ১৮১২ সাল থেকে, যে বছর তিনি রাশিয়ার জার আলেকজান্ডারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ৬ লাখ সৈন্য দ্বারা সুসজ্জিত গ্রান্ড আর্মি (Grand Army) নিয়ে রাশিয়া আক্রমণ করেন। কিন্তু রাশিয়ায় তখন শীতকাল বিরাজ করায় আর জার আলেকজান্ডারের পোড়া-মাটি কৌশলের কারণে ১৮১৩ সালে নেপোলিয়ন কে সেই অভিজান অসমাপ্ত রেখেই অবশিষ্ট দেড় লাখ সৈন্য নিয়েই ফ্রান্সে ফিরে আসতে হয়। নেপোলিয়নের এই পরাজয় ফ্রান্সের বেশিরভাগ মানুষ ও সরকার মেনে নিতে পারে নি। তাই ১৮১৪ সালে তাঁকে ভূমধ্যসাগরের এলবা দ্বীপে নির্বাসন দেওয়া হয়। তবে ১৮১৫ সালে নেপোলিয়ন সেখানে থেকে পালিয়ে আসতে সক্ষম হলে ১০০ দিনের জন্য ফ্রান্সেদ ক্ষমতা দখল রাখতে সক্ষন হন। সেই ১০০ দিন রাজত্বকালেই তিনি বৃটেনের সেনাপতি ডিউক অব ওয়েলিংটনের নিকট ওয়াটারলু যুদ্ধে পরাজিত হন। এরই জেড় ধরে নেপোলিয়নকে চিরতরে আটলান্টিক মহাসাগরে অবস্থিত সেন্ট হেলেনা দ্বীপে নির্বাসন দেওয়া হয়। যেখানে ১৮২১ সালে আর্সেনিকের বিষক্রিয়ায় নেপোলিয়ন মৃত্যুবরণ করেন।

নেপোলিয়নের উত্থান ও পতন, নেপোলিয়নের পতনের কারণ, নেপোলিয়নের পতনের কারণ কি, নেপোলিয়নের পতনের কারণ pdf, নেপোলিয়ন বোনাপার্টের পতনের কারণ

নেপোলিয়নের উত্থান

১৮০৪ সাল থেকে ১৮১৪ সাল পর্যন্ত তিনি ফ্রান্সের সম্রাট ছিলেন। তাঁর রাজত্বকালে ফ্রান্স অনেক শক্তিশালী ছিল। ১৮১২ সালে তিনি রাশিয়া আক্রমণ করে বাজেভাবে পরাজিত হন। পরের বছর তিনি নিজ দেশেই অস্ট্রিয়া, রাশিয়া, ব্রিটেন, পর্তুগাল, সুইডেন, স্পেন ও জার্মান দ্বারা আক্রমণের স্বীকার হন। এই সম্মিলিত আক্রমণের মুখে ফ্রান্স পরাজিত হয় এবং সম্রাট নেপোলিয়ানকে ইতালির এলবা দ্বীপে নির্বাসন দেওয়া হয়। তিনি প্রায় ১ বছর পর পালিয়ে গিয়ে আবারও ফ্রান্সের ক্ষমতা দখল করেন। 

১৮১৫ সালে ওয়াটার লু যুদ্ধে পরাজিত হলে, তাঁকে দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের প্রত্যন্ত ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রিত দ্বীপ সেন্ট হেলেনা নির্বাসন দেওয়া হয়। তিনি ১৮২১ সালের ৫ মে, সেন্ট হেলেনা দ্বীপে মাত্র ৫১ বছর বয়সে মারা যান।

নেপোলিয়নকে সেই দ্বীপে সমাহিত করা হয়েছিল। কিন্তু ১৮৪০ সালে, তার দেহাবশেষ ফ্রান্সকে ফেরত দেওয়া হয় এবং প্যারিসের লেস ইনভালাইডসে একটি ক্রিপ্টে সমাহিত করা হয়। যেখানে অন্যান্য ফরাসি সামরিক নেতাদের দাফন করা হয়েছিল। ১৮২১ সালে নির্বাসন অবস্থায় সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন নেপোলিয়ান বোনাপার্ট।

নেপোলিয়ন বোনাপার্টের পতনের কারণ

১৮০২ বা ১৮০৭ যখনই হোক না কেন—তাঁর শাসননীতিও সাম্রাজ্যের গঠনের মধ্যেই তাঁর পতনের বীজ নিহিত ছিল। তাঁর পতনের মূলে নানা কারণ বিদ্যমান ছিল। যেমন –

(ক) সীমাহীন উচ্চাকাঙ্ক্ষা

(খ) ফ্রান্সে স্বৈরতন্ত্র

(গ) সাম্রাজ্যের স্ব-বিরোধিতা

ঐতিহাসিক ডেভিড টমসন বলেন, “নেপোলিয়নের সাম্রাজ্যের আত্মবিনাশী স্ব-বিরোধিতা এবং স্বতঃসিদ্ধ দুর্বলতার জন্যই এই সাম্রাজ্যের পতন অনিবার্য ছিল।” যেমন –

(ঘ) সাম্রাজ্যের দুর্বল ভিত্তি

(ঙ) মহাদেশীয় ব্যবস্থা

মহাদেশীয় অবরোধ তাঁর পতনের অন্যতম কারণ। নৌ-যুদ্ধে ইংল্যান্ডকে পরাস্ত করা সম্ভব নয় বুঝে তিনি ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে এক অর্থনৈতিক যুদ্ধ শুরু করেন। এই যুদ্ধ জয় করতে গিয়ে তিনি নিত্যনতুন সমস্যায় জড়িয়ে পড়েন। এই যুদ্ধের ফলেই তিনি পোপ, স্পেন ও রাশিয়ার সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন, পরবর্তীকালে যার ফল হয় খুবই মারাত্মক।

(চ) ধর্মীয় অসন্তোষ

১৮০১ খ্রিস্টাব্দে পোপ সপ্তম পায়াস ও নেপোলিয়নের মধ্যে যে ‘কনকর্ডাট বা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, তার দ্বারা ক্যাথলিক ধর্ম ফ্রান্সের স্বীকৃত ধর্মে পরিণত হয়। এতে পোপ ও ক্যাথলিকরা খুশি হলেও প্রোটেস্টান্টরা কিন্তু ক্ষুব্ধ হয়। ইতিমধ্যে পোপ মহাদেশীয় ব্যবস্থা মানতে অস্বীকৃত হলে নেপোলিয়ন তাঁর রাজ্য দখল করেন এবং পোপকে বন্দি করেন (১৮০৯ খ্রিঃ)। এর ফলে সমগ্র ক্যাথলিক জগতে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়।

(ছ) স্পেনীয় ক্ষত

(জ) মস্কো বা রাশিয়া অভিযান

(ঝ) ফ্রাঙ্কফুর্ট প্রস্তাব

ফ্রাঙ্কফুর্ট প্রস্তাব অগ্রাহ্য করা ছিল নেপোলিয়নের রাজনৈতিক জীবনের একটি মারাত্মক ভুল। লাইপজিগের যুদ্ধে পরাজয়ের পর বিজয়ী শক্তিবর্গ নেপোলিয়নের নিকট ফ্রাঙ্কফুর্ট প্রস্তাব পেস করেন। এই প্রস্তাব নেপোলিয়নের পক্ষে যথেষ্ট সম্মানজনক ছিল। তাঁকে শুধু বেলজিয়াম ও হল্যান্ডের উপর অধিকার ত্যাগ করতে বলা হয়। কিন্তু এই সম্মানজনক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে নেপোলিয়ন চরম অদূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছিলেন।

(ঞ) মিত্রশক্তির জোট গঠন

ইতিপূর্বের যুদ্ধগুলিতে নেপোলিয়নের জয়লাভের প্রধান কারণ ছিল নেপোলিয়ন বিরোধী শক্তিগুলি পরস্পর ঐক্যবদ্ধ না থাকা। কিন্তু চতুর্থ শক্তিজোট গঠিত হওয়ার পর তাদের মিলিত শক্তির সামনে নেপোলিয়নের ফরাসি বাহিনী অত্যন্ত দুর্বল ছিল। এই চতুর্থ শক্তিজোট শেষ পর্যন্ত নেপোলিয়নের পতনকে ত্বরান্বিত করে।

(ট) সামরিক দুর্বলতা

(ঠ) ইংল্যান্ডের ভূমিকা

ফরাসি বিপ্লব প্রসূত রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযােগে নেপােলিয়ন ফ্রান্সের সম্রাট হন। কিন্তু মাত্র এক দশকের মধ্যেই তার পতন ঘটে। উত্তরােত্তর ক্ষমতার পশ্চাদ্ধাবনই নেপােলিয়নের পতনকে অনিবার্য করে তােলে।

কোড নেপোলিয়ন কি, কোড নেপোলিয়ন, কোড নেপোলিয়ন টিকা, কোড নেপোলিয়ন বলতে কী বোঝো, কোড নেপোলিয়ন কাকে বলে

কোড নেপোলিয়ন (Code Napoleon): ফরাসি সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্টের সংস্কার কর্মসূচিগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ হল ‘কোড নেপোলিয়ন’ (Code Napoleon) বা আইনবিধির প্রবর্তন। তার শাসনকালের পূর্বে ফ্রান্সের নানা স্থানে নানা ধরনের বৈষম্যমূলক ও পরস্পরবিরোধী আইন প্রচলিত ছিল।

নেপোলিয়ন সমগ্র ফ্রান্সে একই ধরনের আইন প্রবর্তনের উদ্দেশ্যে ৪ জন বিশিষ্ট আইনজীবীকে নিয়ে একটি পরিষদ গঠন করেন। এই পরিষদের প্রচেষ্টায় দীর্ঘ চার বছরের অক্লান্ত পরিশ্রমে যে আইনবিধি সংকলিত হয়, তা ‘কোড নেপোলিয়ন’ নামে খ্যাত।

কোড নেপোলিয়নে ধারার সংখ্যা, কোড নেপোলিয়ন এর কয়টি ধারা

২২৮৭টি বিধি সংবলিত এই আইন সংহিতা তিন ভাগে বিভক্ত ছিল— দেওয়ানি, ফৌজদারি এবং বাণিজ্যিক আইন। আইনের দৃষ্টিতে সমতা, ধর্মীয় সহিষ্ণুতা, ব্যক্তিস্বাধীনতা ও সম্পত্তির অধিকারের স্বীকৃতি ছিল এই আইন সংহিতার উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য।

কোড নেপোলিয়ন ও বিপ্লবের আদর্শ:

কোড নেপোলিয়ন ও বিপ্লবের আদর্শ: নেপোলিয়ন প্রাকৃতিক আইন ও রোমান আইনের সমন্বয় সাধন করে কোড নেপোলিয়ন রচনা করেছিলেন।

 i) এই আইনের ফলে পারিবারিক বন্ধন যেমন দৃঢ় হয় ঠিক তেমনি সামাজিক ক্ষেত্রে সাম্যও প্রতিষ্ঠিত হয়।

 ii) ব্যক্তি বা পরিবারের বিশেষ অধিকারের পরিবর্তে সকল নাগরিকের সমান মর্যাদা ও সুযোগ লাভের অধিকার স্বীকৃত হয়।

iii) বংশকৌলীন্যের পরিবর্তে যোগ্যতার ভিত্তিতে চাকুরি প্রদানকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এর ফলে কেবল অভিজাত বংশীয়রাই নয়, নিম্ন সম্প্রদায়ের যোগ্য ব্যক্তিরাও সামাজিক মর্যাদা অর্জন করার সুযোগ ও অধিকার লাভ করে।

iv) বিপ্লবের ফলে সামন্তপ্রথা লোপ করে যে নতুন ভূমি বন্দোবস্ত চালু করা হয়, কোড নেপোলিয়নে তাকে স্বীকৃতি দেওয়া হলে সামন্তপ্রথার অস্তিত্ব চিরতরে বিলুপ্ত হয়।

কোড নেপোলিয়ন এর বৈশিষ্ট্য

কোড নেপোলিয়নের দ্বারা –

(i) আইনের চোখে দেশের সকল নাগরিকের মধ্যে সময় প্রতিষ্ঠা করা হয়,

(ii) সামন্ততান্ত্রিক অসাম্যর বিলোপ ঘটানো,

(iii) ব্যক্তিস্বাধীনতার স্বীকৃতি দেওয়া হয়,

(iv) যোগ্যতার ভিত্তিতে সরকারী চাকরিতে নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়,

(v) সম্পত্তির অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়,

(vi) ধর্মীয় সহনশীলতার নীতি গ্রহণ করা হয় এবং

(vii) অপরাধের শাস্তি হিসেবে জরিমানা, কারাদন্ড সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত, মৃত্যুদন্ড প্রভিতির ব্যবস্থা করা হয়।

কোড নেপোলিয়নের গুরুত্ব

i) একই আইন প্রবর্তন : কোড নেপোলিয়ন সমগ্র ফ্রান্সে একইধরনের আইনব্যবস্থা চালু করে। ফলে ফরাসি প্রশাসন একটি সুবিন্যস্ত রূপ লাভ করে।।

ii) বিপ্লবের আদর্শকে রক্ষা : ফরাসি বিপ্লবকালে যে সমস্ত ঘোষণা ও আইনগত ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়েছিল সেগুলি একটি আইনগ্রন্থে সংকলিত হয়। এইভাবে কোড নেপোলিয়নের প্রবর্তন বিপ্লবী আদর্শকে উজ্জীবিত ও রক্ষা করেছিল।

iii) ফরাসি সমাজের বাইবেল হিসেবে স্বীকৃতি : ‘কোড নেপোলিয়ন’ প্রবর্তন ফ্রান্সের বুর্জোয়া শ্রেণি ও কৃষকসহ অধিকাংশ মানুষকে সন্তুষ্ট করতে সক্ষম হয়েছিল। এইভাবে তা ফরাসি সমাজের বাইবেল’-এ পরিণত হয়।

এইভাবে কোড নেপোলিয়নের মাধ্যমে নেপোলিয়ন বিপ্লবের আদর্শগুলিকে বাস্তবায়িত করতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। এই আইসংহিতা কেবল ফ্রান্সেই নয়, ফ্রান্সের সীমানা ছাড়িয়ে ইউরোপের বিভিন্ন রাষ্ট্রেও স্বীকৃতি পেয়েছিল। এই আইনের মাধ্যমে সকল মানুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব না হলেও এ বিষয়ে যে আন্তরিক প্রয়াস লক্ষ করা গিয়েছিল, তা বিশেষভাবে উল্লেখের দাবি রাখে।

কোড নেপোলিয়নের ত্রুটি:

কোড নেপোলিয়নের বিভিন্ন ত্রুটি ছিল। যেমন –

নেপোলিয়ন বোনাপার্টের সংস্কার, নেপোলিয়নের সংস্কার গুলি লেখ, নেপোলিয়নের অভ্যন্তরীণ সংস্কার

ফ্রান্সের সম্রাট নেপোলিয়ন বোনাপার্ট শুধু একজন যোদ্ধা ছিলেন না তিনি ছিলেন একজন দক্ষ সংস্কারক ।ফরাসি দেশের প্রাচীন ঘুণেধরা রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থার সার্বিক পরিবর্তন সাধন করে তিনি অক্ষয় কীর্তি রেখে গেছেন । বিপ্লবজনিত অব্যবস্থা ও বিশৃংখলা , ভীতি ও সন্ত্রাসের পর বিপ্লবের সুফল গুলোকে স্থায়িত্ব দান করার মানসে তিনি এক গঠনমূলক কাজে হাত দেন । যার ফলশ্রুতিতে ফ্রান্সে অচিরেই রাহাজানি ,ও লুন্ঠন বন্ধ হয়ে যায় এবং দৈনন্দিন জীবন যাত্রার শান্তি শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা ফিরে আসে । 

সংস্কারের উদ্দেশ্য

তিনি বেশ কয়েকটি উদ্দেশ্য নিয়ে সংস্কারের কাজে অবতীর্ণ হন। যেমন –

সমন্বয় বিধান

শাসনতান্ত্রিক সংস্কার

অর্থনৈতিক সংস্কার

শিক্ষা সংস্কার

শিক্ষা সংস্কারের ত্রুটি

তাঁর শিক্ষা-সংস্কার ত্রুটিহীন ছিল না।যেমন –

ধর্মসংস্কার

আইন সংস্কার

সংস্কারের ফলাফল

(১) শান্তি, স্থিতি ও সমৃদ্ধি ফিরিয়ে আনা

(২) শক্তিশালী ফ্রান্স

(৩) বিপ্লবের ভাবধারা প্রতিষ্ঠিত

(৪) নেপোলিয়নের নিজস্ব উক্তি

(৫) বিপ্লবের সন্তান নেপোলিয়ন

(৬) ওয়েদালার মন্তব্য

(৭) জর্জ রুদের মন্তব্য

জর্জ রুদে-র মতে, প্রকৃতপক্ষে নেপোলিয়ন বুর্জোয়া স্বার্থই রক্ষা করেছিলেন। তিনি শ্রমিকদের মন জয় করতে পারেন নি। শ্রমিক-মালিক বিরোধে তিনি মালিকদের পক্ষই অবলম্বন করেন।

নেপোলিয়নের সাম্রাজ্য বিস্তার, নেপোলিয়নের সাম্রাজ্য, বিপ্লবী আদর্শ নেপোলিয়নীয় সাম্রাজ্য ও জাতীয়তাবাদ

ইংল্যান্ড ও রাশিয়া ছাড়া ইউরোপের প্রায় সকল দেশেই কনসালরূপে (১৭৯৯ – ১৮০৪ খ্রি:) ও সম্রাটরূপে (১৮০৪ – ১৮০৭ খ্রি:) নেপোলিয়ন তার সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটান।

১. ইউরোপীয় শক্তিজোটে ভাঙন: 

১৭৯৯ খ্রিস্টাব্দে কনসাল হয়ে নেপোলিয়ন অস্ট্রিয়া, রাশিয়া, ইংল্যান্ডকে নিয়ে গড়ে ওঠা ইউরোপীয় শক্তিজোটে ভাঙন ধরান।

২. ইউরোপের বিভিন্ন দেশে আধিপত্য বিস্তার: 

১৮০০ খ্রিস্টাব্দের জুনে আল্পস্ অতিক্রম করে নেপোলিয়নের ফরাসি বাহিনী ইতালিতে প্রবেশ করে। মারেংগা ও হোহেনলিন্ডনের যুদ্ধে অস্ট্রিয়াকে ফরাসিবাহিনী পরপর পরাজিত করে। যুদ্ধে জিতে রাইন নদীর বামতীরসহ বেশ কিছু অঞ্চল ও বেলজিয়ামের ওপর ফ্রান্সের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮০৩ খ্রিস্টাব্দের মে মাসে নেপোলিয়ন হ্যানোভার ও নেপল্স অধিকার করেন।

৩. ভিয়েনা দখল: 

উলমের যুদ্ধে (১৮০৫ খ্রি., ২০ অক্টোবর) নেপোলিয়নের ফরাসি বাহিনী অস্ট্রিয়ার ৫০ হাজার সেনাকে পরাজিত করে ভিয়েনার দখল নেয়।

৪. অস্ট্রিয়া-রাশিয়া জোটের বিরুদ্ধে জয়: 

ট্রাফালগারের যুদ্ধে (১৮০৫ খ্রি.) ব্রিটিশের কাছে পরাজিত হলেও নেপোলিয়ন নতুন উদ্যম নিয়ে উলম্-এর যুদ্ধে অস্ট্রিয়াকে পরাজিত করেন। এরপর অস্টারলিজের যুদ্ধে (১৮০৫ খ্রি., ২ ডিসেম্বর) তিনি অস্ট্রিয়া-রাশিয়ার মিলিত জোটের বিরুদ্ধেও জয়ী হন।

৫. প্রাশিয়া ও রাশিয়ার বিরুদ্ধে জয়: 

নেপোলিয়ন জেনার যুদ্ধে (১৮০৬ খ্রি.) প্রাশিয়াকে পরাজিত করেন। ফ্রিডল্যান্ডের যুদ্ধে (১৮০৭ খ্রি., জুন) নেপোলিয়নের ফরাসি বাহিনী রাশিয়াকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে। এই যুদ্ধে পরাজিত হয়ে রাশিয়ার জার প্রথম আলেকজান্ডার নেপোলিয়নের সঙ্গে টিলজিটের সন্ধি (১৮০৭ খ্রি., ৮ জুলাই) স্বাক্ষরে বাধ্য হন।

সমগ্র ইউরোপজুড়ে নেপোলিয়ন সাম্রাজ্য বিস্তার করেন। ইতালি, জার্মানি, স্পেন, হল্যান্ড, নেপলস্ প্রভৃতি দেশে নেপোলিয়ন নিজের রাজবংশের লোকেদের সিংহাসনে প্রতিষ্ঠিত করেন। ইতালিতে সৎ পুত্র হবজেন, জার্মানিতে জোরেম, স্পেনে ভ্রাতা জোসেফ, হল্যান্ডে ভ্রাতা লুই এবং নেপলসে ভগ্নিপতি মুরাকে শাসনভার দেন।

নেপোলিয়নের রাশিয়া আক্রমণ, নেপোলিয়নের রাশিয়া অভিযান

নেপোলিয়ন কর্তৃক রাশিয়া আক্রমণের প্রধান কারণগুলি ছিল—

(1) টিলসিটের সন্ধির ত্রুটি :

টিলসিটের সন্ধিতে (1807 খ্রি.) নেপোলিয়ন তুরস্ক ও সুইডেনের বিরোধী যুদ্ধে রাশিয়াকে সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিলেও তিনি সেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন। ফলে জার অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন।

(2) ওল্ডেনবার্গ দখল :

রুশ জারের ভগ্নীপতি ওল্ডেনবার্গের ডিউক মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা মানতে অস্বীকার করায় নেপোলিয়ন ডিউকের রাজ্যটি দখল করে নেয়। ফলে জার নেপোলিয়নের প্রতি অত্যন্ত রুষ্ট হন।

(3) গ্রান্ড ডাচি অব ওয়ারশ গঠন :

নেপোলিয়ন ‘গ্রান্ড ডাচি অব ওয়ারশ’ গঠন করলে রাশিয়া নিজের অধিকৃত পোল্যান্ডের এলাকা দখলে রাখার ব্যাপারে শঙ্কিত হয়ে পড়ে। নেপোলিয়নের কাছে পোল্যান্ড অনাক্রমণের প্রতিশ্রুতি চাইলে নেপোলিয়ন তা অস্বীকার করেন।

(4) মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা :

রাশিয়া প্রথমে নেপোলিয়নের মহাদেশীয় অবরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও পরে ক্রমশ প্রচন্ড আর্থিক ক্ষতির কারণে এই ব্যবস্থা মানতে অস্বীকার করে। ফলে রাশিয়ার ওপর নেপোলিয়ন ক্ষুব্ধ হন এবং রাশিয়া আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন।

রাশিয়া অভিযানে নেপোলিয়নের ব্যর্থতার কারণ

(1) পোড়ামাটি নীতি :

ফরাসি সৈন্যবাহিনী রাশিয়ার অভ্যন্তরে প্রবেশ করলে রুশ সেনারা ফরাসি সেনাবাহিনীকে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশের সুযোগ করে দেয়। এরপর রুশ সেনারা ‘পোড়ামাটি নীতি’ গ্রহণ করে ক্রমশ পিছিয়ে যেতে থাকে। ফলে ফরাসি বাহিনী শীঘ্রই সেখানে খাদ্যাভাব, পানীয় জলের অভাব, রুশ গেরিলা বাহিনীর আক্রমণ প্রভৃতির ফলে বিপর্যস্ত হয়।

(2) মহামারির প্রাদুর্ভাব :

রাশিয়ায় ফরাসি বাহিনীর মধ্যে ‘টাইফাস’ নামক ভয়ানক জ্বর ও অন্যান্য মহামারি ছড়িয়ে পড়লে প্রচুর ফরাসি সেনার মৃত্যু হয়।

(3) প্রাকৃতিক বিপর্যয় :

ফরাসি সৈন্যবাহিনী রাশিয়ার অভ্যন্তরে ও স্বদেশে ফেরার পথে তীব্র শীত, তুষারপাত, ঝড়বৃষ্টি প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়ে। ফলে বহু ফরাসি সৈন্যের মৃত্যু হয়।

(4) নেপোলিয়নের দম্ভ :

নেপোলিয়ন ক্ষমতার দম্ভে বাস্তববোধ ও সম্ভব অসম্ভবের সীমারেখা সম্পর্কে ধারণা পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেছিলেন। তিনি রুশ জারকে দুর্বল ও অযোগ্য ভেবে নিঃসন্দেহে একটি মারাত্মক ভুল করেছিলেন।

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

FAQ | নবম শ্রেণীর ইতিহাস দ্বিতীয় অধ্যায় প্রশ্ন উত্তর

Q1. নেপোলিয়নের আত্মজীবনীর নাম কি

Ans – নেপোলিয়ন বোনাপার্ট এর আত্মজীবনীর নাম হলো An autobiography the emperor

Q2. নেপোলিয়ন কে বিপ্লবের সন্তান বলা হয় কেন

Ans – নেপোলিয়ন ফরাসি বিপ্লবের ‘সাম্য’ নীতিকে বলবৎ করেন। কোড নেপোলিয়ন এর মাধ্যমে তিনি আইনগত সমতা ও যোগ্যতার মর্যাদাদানের ব্যবস্থা করেন এবং সামন্ততান্ত্রিক বিশেষ অধিকারের বিলোপ ঘটান। ইউরোপে ‘সাম্য’ ও জাতীয়তাবাদের আদর্শ তিনিই ছড়িয়ে দেন। তাই তাকে ঐতিহাসিক ফিশার ‘বিপ্লবের সন্তান’ বলে অভিহিত করেছেন।

Q3. নেপোলিয়ন কোথায় জন্মগ্রহণ করেন

Ans – নেপোলিয়ন ইতালির কর্সিকা দ্বীপে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

Q4. নেপোলিয়ন ইউরোপের কোন কোন রাষ্ট্র দখল করেন

Ans – নেপোলিয়ন এখন ফ্রান্সের উপর তার দখল সুসংহত করেছিলেন, নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, সুইজারল্যান্ড, এবং বেশিরভাগ পশ্চিম জার্মানি এবং উত্তর ইতালি।

Q5. নেপোলিয়ন কোন দ্বীপে জন্মগ্রহণ করেন

Ans – নাপোলেওঁ দ্য বোনাপার্ত ১৭৬৯ সালের ১৫ আগস্ট ফ্রান্সের কর্সিকা দ্বীপের আজাক্সিও শহরে জন্মগ্রহণ করেন। 

Q6. নেপোলিয়নের জীবনের শেষ যুদ্ধ কি ছিল

Ans – ওয়াটার লুর যুদ্ধ

Q7. কোড নেপোলিয়ন এ স্থান পায় কটি উক্তি

Ans – ২২৮১ টি উক্তি

Q8. নেপোলিয়নের শ্রেষ্ঠ সেনাপতি কে ছিলেন

Ans – ম্যাসেনা ছিলেন নেপোলিয়ানের শ্রেষ্ঠ সেনাপতি।

Q9. নেপোলিয়ন কবে ফ্রান্সের সম্রাট হন

Ans – ১৮০৪ সালে ফরাসি সিনেট কর্তৃক নেপোলিয়ন বোনাপার্ট সম্রাট পদে অভিষিক্ত হন।

Q10. নেপোলিয়ন বোনাপার্টের ক্ষমতা লাভ

Ans – 1804 সালে, নেপোলিয়ন নিজেকে ফরাসি সম্রাট ঘোষণা করেন এবং একটি নতুন রাজবংশ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি সামরিক বিজয়ের মাধ্যমে ফরাসি সাম্রাজ্যকে প্রসারিত করতে থাকেন, অবশেষে ইউরোপের অন্যতম শক্তিশালী শাসক হয়ে ওঠেন।

আপনি কি চাকরি খুজঁছেন, নিয়মিত সরকারিবেসরকারি চাকরির সংবাদ পেতে ক্লিক করুন। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে মানব সম্পদ উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাড়ার জন্য, ক্লিক করুন। হিন্দিতে শিক্ষামূলক ব্লগ পড়তে, এখানে ক্লিক করুন। এছাড়াও, স্বাস্থ, টেকনোলজি, বিসনেস নিউস, অর্থনীতি ও আরো অন্যান্য খবর জানার জন্য, ক্লিক করুন

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে
Exit mobile version