গতি Class 9 প্রশ্ন ও উত্তর

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

গতি Class 9 অধ্যায়

উত্তর: পদার্থবিজ্ঞানে গতি হলো এমন ঘটনা যেখানে সময়ের সাথে সাথে বস্তুর অবস্থান পরিবর্তিত হয়। পদার্থবিজ্ঞানে সময়ের সাথে কোন বস্তুর সরণের হারকে গতি/বেগ বলে। এখানে বেগ একটি ভেক্টর রাশি। গাণিতিকভাবে গতিকে সাধারণত সরণ, দূরত্ব, বেগ, দ্রুতি, ত্বরণ এবং সময়ের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা হয়। একজন পর্যবেক্ষকের সাথে একটি প্রসঙ্গ কাঠামো যুক্ত করে সময়ের সাথে ঐ প্রসঙ্গ কাঠামোর সাপেক্ষে কোনো বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তন নির্ণয়ের মাধ্যমে বস্তুটির গতি পর্যবেক্ষণ করা হয়। পদার্থবিজ্ঞানে যে শাখায় কারণ উল্লেখ না করে কোনো বস্তুর গতি বর্ণনা করা হয় তা হলো স্থিতিবিদ্যা; এবং যে শাখায় বল ও এর প্রভাব বর্ণনা করা হয় তা হলো গতিবিদ্যা।

যদি কোনো বস্তু প্রদত্ত প্রসঙ্গ কাঠামোর সাপেক্ষে সময়ের সাথে অবস্থান পরিবর্তন না করে তাহলে বস্তুটিকে স্থিতিশীল, গতিহীন, নিশ্চল অথবা এর আশেপাশের সাপেক্ষে ধ্রুব অবস্থানে রয়েছে বলা হয়। যেহেতু কোনো প্রসঙ্গ কাঠামোই পরম নয়, সুতরাং পরম গতি নির্ণয় করা সম্ভব নয়। তাই মহাবিশ্বের সবকিছুই গতিশীল বিবেচনা করা যেতে পারে।

বস্তু, পদার্থ কণা, পদার্থ ক্ষেত্র, বিকিরণ, বিকিরণ ক্ষেত্র, বিকিরণ কণা, বক্রতা এবং স্থান-কাল সহ বহুবিধ ক্ষেত্রে গতির প্রভাব বিদ্যমান। এসব ভৌত ব্যবস্থার ব্যাখ্যায় গতি ও গতি-উদ্ভূত বিভিন্ন ধারণার প্রয়োগ করা হয়। প্রতিচ্ছবি, আকার এবং সীমানার গতিও এ প্রসঙ্গে আলোচ্য। সুতরাং গতি শব্দটি সাধারণভাবে কোন স্থানে একটি ভৌত ব্যবস্থা বা কনফিগারেশনের অবিচ্ছিন্ন পরিবর্তনকে নির্দেশ করে। উদাহরণস্বরূপ, তরঙ্গ অথবা কোয়ান্টাম কণার গতির কথা বলা যেতে পারে, যেখানে কনফিগারেশনটির নির্দিষ্ট অবস্থান থাকার সম্ভাবনা বিদ্যমান।

গতি হলো সময়ের সাথে সাথে প্রসঙ্গ কাঠামোর সাপেক্ষে কোন কিছুর অবস্থান পরিবর্তনের ঘটনা।

কোন বস্তুর গতিকে যে প্রধান রাশিটি দ্বারা পরিমাপ করা হয় তা হল ভরবেগ, যা বস্তুটির ভর ও বেগের গুণফল। বস্তুর ভর ও বেগের বৃদ্ধিতে এর ভরবেগও বৃদ্ধি পায়। ভরবেগের নিত্যতার সূত্রানুসারে কোন ব্যবস্থার উপর প্রযুক্ত নিট বাহ্যিক বল শূন্য হলে ব্যবস্থাটির মোট ভরবেগ সংরক্ষিত বা অপরিবর্তিত থাকে। বিশদভাবে বলা যায়, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ারত একাধিক বস্তুর মধ্যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বল ব্যতীত অন্য কোন বল কাজ না করলে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ঘটার পূর্বের মোট ভরবেগ ও পরের মোট ভরবেগ সমান হবে।

গতির সূত্র সমূহ, নিউটনের গতি সূত্র, নিউটনের গতির সূত্র, পদার্থ বিজ্ঞান ২য় অধ্যায় গতি সূত্র

উত্তর: পদার্থবিজ্ঞানে যেকোনো কিছুর গতির বর্ণনার জন্য গতিবিদ্যায় দুই শ্রেণীর সূত্র রয়েছে। বৃহৎ আকৃতির এবং মহাবিশ্বে সকল পরিচিত বস্তুর (যেমন গাড়ি, প্রাস, গ্রহ, কোষ, এবং মানুষ) গতি বর্ণনার জন্য চিরায়ত বলবিদ্যার সূত্র ব্যবহার করা হয়। অতি ক্ষুদ্র পারমাণবিক এবং অতিপারমাণবিক বস্তুর গতি কোয়ান্টাম বলবিজ্ঞানের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা হয়। ঐতিহাসিকভাবে নিউটন এবং অয়লার চিরায়ত বলবিদ্যার তিনটি সূত্র দিয়েছিলেন:

গতির প্রথম সূত্র, নিউটনের প্রথম গতিসূত্র টি লেখ

উত্তর: কোনো জড় প্রসঙ্গ কাঠামোতে, বাহ্যিক নিট বল প্রযুক্ত না হলে স্থির বস্তু চিরকাল স্থির থাকবে এবং গতিশীল বস্তু সমবেগে চলতে থাকবে।

গতির দ্বিতীয় সূত্র, নিউটনের দ্বিতীয় গতিসূত্র

উত্তর: জড় প্রসঙ্গ কাঠামোতে, সময়ের সাথে কোন বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তনের হার প্রযুক্ত বলের সমানুপাতিক এবং বল যে দিকে ক্রিয়া করে বস্তুর ভরবেগের পরিবর্তন সেদিকেই ঘটে। এই সূত্রানুযায়ী, F = ma, যেখানে F হলো প্রযুক্ত বল, m হলো বস্তুর ভর এবং a হলো বল প্রয়োগে সৃষ্ট ত্বরণ।

গতির তৃতীয় সূত্র, নিউটনের তৃতীয় গতিসূত্র, নিউটনের গতির ৩য় সূত্র

উত্তর: যখন একটি বস্তু দ্বিতীয় কোনো বস্তুর উপর বল প্রয়োগ করে, তখন দ্বিতীয় বস্তুটিও প্রথম বস্তুর উপর একই মানের বিপরীতমুখী বল প্রয়োগ করে।

গতি কাকে বলে, গতি কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি

উত্তর: যদি কোনো বস্তুর অবস্থান, তার চারপাশের অন্যান্য বস্তুর সাপেক্ষে ও সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়, তাহলে সেই বস্তুকে সচল বস্তু বলে। সচল বস্তুর এই গতিশীল অবস্থাকে গতি বলে।

উদাহরণ: ছুটন্ত রেলগাড়ি, উড়ন্ত পাখি, চলন্ত মানুষ ইত্যাদি হল সচল বস্তু কারণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে‌ এদের অবস্থানগত পরিবর্তন ঘটে। সচল বস্তুর অবস্থানগত এই পরিবর্তনকে বস্তুটির গতি বলে। মনে রাখা দরকার, বাস্তবক্ষেত্রে প্রায় সব ভৌত ঘটনাবলির মধ্যেই বস্তুর বা বস্তুসমূহের গতি অন্তর্নিহিত থাকে। এমনকি অণু-পরমাণুর মধ্যেও মৌলকণাগুলির নানা প্রকার গতি বিদ্যমান।

গতির প্রকারভেদ

রৈখিক গতি

উত্তর: কোনো বস্তু যদি একই দিকে সরলরেখা বরাবর গতিশীল হয়, তাহলে সেই গতিকে রৈখিক গতি বলে। উদাহরণ: সরলরৈখিক পথে অভিমুখ পরিবর্তন না করা একটি ট্রেনের গতি।

সুষমরৈখিক গতি

উত্তর: যদি কোনো গতিশীল বস্তু কোনো সরল বা বজ্রপথ বরাবর সমান সময় অবকাশে সর্বদা সমান দূরত্ব অতিক্রম করে, তাহলে সেই বস্তুর গতিকে সুষমরৈখিক গতি বলা হয়।

উদাহরণ: কোনো গাড়ি প্রথম 3 ঘণ্টায় 120 কিমি ও পরবর্তী 2 ঘণ্টায় ৪০ কিমি পথ অতিক্রম করলে গাড়িটির গতি সুষম কারণ, উভয়ক্ষেত্রেই গাড়িটি ঘণ্টায় 40 কিমি পথ অতিক্রম করে।

অসমরৈখিক গতি

উত্তর: যদি কোনো গতিশীল বস্তু কোনো সরল বা বজ্রপথ বরাবর সমান সময় অবকাশে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দূরত্ব অতিক্রম করে, তাহলে সেই বস্তুটির গতিকে অসমরৈখিক গতি বলা হয়।

উদাহরণ: কোনো গাড়ি যদি প্রথম ঘণ্টায় 20 কিলোমিটার পথ এবং দ্বিতীয় ঘণ্টায় 30 কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে, তাহলে গাড়িটির গতিকে অসম গতি বলা যায়।

গতিশক্তি কাকে বলে, গতি শক্তির সংজ্ঞা দাও, গতিশক্তি, গতি শক্তির সংজ্ঞা দাও, গতিশক্তি অর্থ

উত্তর: হাতুড়ি দিয়ে দেয়ালে পেরেক ঠুকলে হাতুড়ি তীব্র বেগে পেরেককে আঘাত করে। তখন পেরেকটি দেয়ালের বাধা অতিক্রম করে ঢুকে যায়। হাতুড়ি তার গতির জন্যই এই কাজ করতে সক্ষম হয় অর্থাৎ হাতুড়িটির গতিশক্তির জন্যই পেরেকটি দেয়ালের বাধা অতিক্রম করতে পারে। তোমরা নদীতে পাল তোলা নৌকা চলতে দেখেছ। নদীর স্রোতের গতিশক্তি নৌকাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। জোরে বাতাস বইলে পাল টাঙালে নৌকা এগিয়ে যেতে পারে। বায়ু প্রবাহের গতিশক্তিকে পাল টাঙিয়ে কাজে লাগিয়ে নৌকা এভাবে এগোয়।
পাহাড় পর্বত থেকে সমতলে নামার সময় নদী অত্যন্ত খরস্রোতা হয়। স্রোতের গতিশক্তি খুব বেশি বলে নদী বড় বড় পাথর খণ্ডকে গড়িয়ে নিয়ে যায়। আবার হাই জাম্প বা লং জাম্প দেওয়ার সময় প্রতিযোগীরা স্থির অবস্থা থেকে লাফ দেয় না, কিছু দূর থেকে দৌড়ে এসে লাফ দেয়। ফলে লাফ দিয়ে অনেক দূর যেতে পারে।

উপরের সকল ঘটনা লক্ষ করলে দেখা যায় যে, বাইরে থেকে বল প্রয়োগ করে কোনো সচল বস্তুকে থামালে, থেমে যাওয়ার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত বস্তুটি ওই বলের বিরুদ্ধে মোট যে পরিমাণ কাজ করে তাই দিয়ে বস্তুটির গতিশক্তির পরিমাপ করা যায়। কোনো গতিশীল বস্তু তার গতির জন্য কাজ করার যে সামর্থ্য বা শক্তি লাভ করে তাকে বস্তুটির গতিশক্তি বলে। যে কোনো সচল বস্তুর মধ্যে গতিশক্তি থাকে।

গতি শক্তির সংজ্ঞা

উত্তর: কোনো গতিশীল বস্তু তার গতির জন্য কাজ করার যে সামর্থ্য বা শক্তি লাভ করে তাকে বস্তুটির গতিশক্তি বলে।

সরল স্পন্দন গতি কাকে বলে

উত্তর: পর্যায়বৃত্ত গতিসম্পন্ন কোন বস্তুর গতি যদি সরলরৈখিক হয় এবং এর দিক যদি সাম্যাবস্থান এর অভিমুখী হয় তবে সেই গতিকে সরল স্পন্দন গতি বলে। কোন পর্যায়বৃত্ত গতিসম্পন্ন বস্তুর গতি যদি সরলরৈখিক হয়, এর ত্বরণ সাম্যাবস্থা থেকে সরণ এর সমানুপাতিক হয় এবং এর দিক যদি সর্বদা সাম্যাবস্থান অভিমুখী হয় তবে ওই বস্তুকণা র গতিকে সরল ছন্দিত স্পন্দন বলে, যেমন একটি স্প্রিং এর একপ্রান্তে একটি বস্ত বেধে ঝুলিয়ে একে সামান্য টেনে ছেড়ে দেয়া হলে তাতে সরল ছন্দিত স্পন্দনের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও সরল দোলকের গতিও সরল ছন্দিত স্পন্দনের উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

একমাত্রিক সরল ছন্দিত স্পন্দনে স্পন্দিত কণার উপর ক্রিয়ারত বলের মান নিম্মোক্ত ব্যবকলনীয় সমীকরণ দ্বারা প্রকাশ করা হয়ঃ {\displaystyle F_{net}=m{\frac {\mathrm {d} ^{2}x}{\mathrm {d} t^{2}}}=-kx,}

এখানে m হল স্পন্দনশীল কণার ভর, x সাম্যবস্থা থেকে এর সরণ , এবং k হল স্প্রিং ধ্রুবক।

সরল ছন্দিত স্পন্দন গতির বিভিন্ন দশা, একটি বৃত্তের মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়

বিভিন্ন প্রকার তরঙ্গ যেমন শব্দ, তড়িত চৌম্বক তরঙ্গ, পর্যাযবৃত্ত তড়িৎ প্রবাহ ইত্যাদির গতি প্রকৃতির আলোচনায় সরল ছন্দিত স্পন্দন গতির পাঠ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এদেরকে সরল ছন্দিত স্পন্দন গতির সমীকরণ দ্বারা প্রকাশ করা যায়।

সরল স্পন্দন গতির বৈশিষ্ট্য

(১) এটি একটি পর্যাবৃত্ত গতি

(২) এটি একটি স্পন্দন গতি

(৩) এটি একটি সরলরৈখিক গতি

(৪) যে কোন সময়ে ত্বরণের মান সাম্যাবস্থান থেকে সরণের মানের সমানুপাতিক

(৫) ত্বরণ সর্বদা একটি নির্দিষ্ট বিন্দু অভিমূখী

(৬)একটি নির্দিষ্ট সময় পরপর এই গতি বিপরীতমুখী হয়।

(৭)ত্বরণ সরণের বিপরীতমুখী।

(৮)ত্বরণ বস্তু কণাটির মধ্য অবস্থান অভিমুখী।

(৯) কম্পমান কণার সরণ সাইন বা কোসাইনের অপেক্ষক।

আহ্নিক গতি কাকে বলে, আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতি

উত্তর: পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে নিজ অক্ষে অনবরত পশ্চিম হতে পূর্ব দিকে আবর্তন করছে। পৃথিবীর এই আবর্তনকে আহ্নিক গতি বা দৈনিক গতি বলা হয়।

নিজ অক্ষে একবার ঘুরতে পৃথিবীর মোট ২৩ ঘন্টা ৫৬ মিনিট ৪ সেকেন্ড বা ২৪ ঘণ্টা সময় প্রয়োজন। এই সময়কে সৌরদিন বলা হয়।

আহ্নিক গতির কারণ

উত্তর: আহ্নিক গতির মূল কারণ হলো-পৃথিবীর আবর্তন এবং পৃথিবীর আকৃতি । উল্লেখ্য, পৃথিবীর আকৃতি বর্তুলাকার হলেও উভয় মেরুতে কিছুটা চাপা ও নিরক্ষরেখা বরাবর কিছুটা স্ফীত। নিরক্ষরেখা বরাবর পৃথিবীর ব্যাস সর্বাপেক্ষা অধিক হওয়ায় এই অঞ্চলে আহ্নিক গতির বেগও সর্বাপেক্ষা অধিক। এই বেগ প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ১৭০০ কিলোমিটার। আহ্নিক গতিবেগ ক্রমশ কমতে কমতে দুই মেরুর নিকটবর্তী স্থানে প্রায় স্তিমিত হয়ে যায়।

পৃথিবীর আবর্তন গতি থাকা সত্ত্বেও নিম্নোক্ত কতিপয় কারণে পৃথিবী পৃষ্ঠে বসবাসরত মানুষ ঐ আবর্তন অনুভব করে না এবং ছিটকে পড়ে না।

  • ১. পৃথিবীর আয়তনের তুলনায় ভূ-পৃষ্ঠে বসবাসরত জীবজগতের সকল প্রাণি ও মানুষ এত বেশি ক্ষুদ্রাকার যে পৃথিবীর ঘূর্ণন অনুভব করতে পারে না।
  • ২. পৃথিবী পৃষ্ঠে অবস্থিত সকল জৈব ও অজৈব পদার্থ মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে ভূ-পৃষ্ঠে আটকে আছে। ফলে আমরা পৃথিবী থেকে ছিটকে পড়ি না ।
  • ৩. মহাবিশ্বে সকল গ্রহ-উপগ্রহ ও পৃথিবী একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে এবং নির্দিষ্ট গতিতে অনবরত আবর্তিত হচ্ছে। ফলে পৃথিবীর যে কোনো স্থান থেকে মহাকাশে দৃষ্টিপাত করলে প্রায় একই চিত্র দৃষ্টিগোচর হয়। এ কারণে পৃথিবীর নিজ অক্ষে আবর্তনের বিষয়টি অনুধাবন করা সম্ভব হয় না।

বার্ষিক গতি কাকে বলে

উত্তর: পৃথিবী নিজ অক্ষে আবর্তিত হতে হতে সূর্যের মহাকর্ষ শক্তির আকর্ষণে একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে (সূর্যকে পরিক্রমনের পথ) নির্দিষ্ট সময়ে সূর্যের চারিদিকে আবর্তিত হতে থাকে। পৃথিবীর এইরূপ গতিকে বার্ষিক গতি বা পরিক্রমণ গতি বলা হয়।

পৃথিবী আপন অক্ষের চারিদিকে ২৪ ঘণ্টায় একবার আবর্তন করার পাশাপাশি পৃথিবী সূর্যকে কেন্দ্র করে ও নির্দিষ্ট কক্ষপথে সূর্যের চারিদিকে ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড একবার আবর্তন করে। পৃথিবীর এইরূপ আবর্তন কে বার্ষিক গতি বলে।

সূর্যের চারিদিকে একবার পূর্ণ পরিক্রমণ বা আবর্তনের জন্যে পৃথিবীর মোট সময় প্রয়োজন ৩৬৫ দিন ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড। একে সৌরবছর (Solar Year) বলে।
ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৩৬৫ দিনে এক সৌর বছর গণনা করা হয়। প্রতি বছর অতিরিক্ত ৫ ঘন্টা ৪৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড সময় কালকে প্রতি চার বছর অন্তর ১ দিন বা ২৪ ঘন্টা হিসেবে ঐ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসকে ২৮ দিনের বদলে ২৯ দিন হিসেবে গণনা করা হয়। এই বছরটি অধিবর্ষ (Leap Year) নামে অভিহিত।

মনে রাখা প্রয়োজন, কোনো একটি বছরের সংখ্যাগত নম্বরটিকে ৪ দিয়ে ভাগ করলে যদি কোনো ভাগ শেষ না থাকে, তবে ঐ বছরটি হবে লিপ ইয়ার। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৬ কে ৪ দিয়ে ভাগ করলে কোনো ভাগশেষ থাকে না ( ২০১৬ + ৪ = ৫০৪) অর্থাৎ ঐ বছরটি হবে একটি অধিবর্ষ। ঐ বছরে ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিনের বদলে ২৯ দিনে গণনা করা হবে।

পৃথিবী সূর্যকে পরিভ্রমনের সময় ৩রা জানুয়ারি পৃথিবী সূর্যের নিকটতম অবস্থানে (১৪ কোটি ৭০ লক্ষ কি.মি) এবং ৪ জুলাই সর্বাধিক দূরবর্তী অবস্থানে (১৫ কোটি ১০ লক্ষ কি.মি) থাকে। পৃথিবীর এইরূপ অবস্থানকে যথাক্রমে অনুসুর (Perihelion) ও অপসুর (Aphelion) বলে। বার্ষিক গতির গড় বেগ প্রতি ঘণ্টায় ১,০৭,০০০ কিলোমিটার।

বার্ষিক গতির কারণ

উত্তর: বার্ষিক গতির কারণসমূহ নিম্নরূপ :

১. পৃথিবীর আকার অভিগত গোলকের ন্যায়।

২. সূর্যকে পরিভ্রমণের জন্য পৃথিবীর কক্ষপথটি উপবৃত্তাকার।

৩. পৃথিবী নিজ কক্ষপথে (Orbit) ৬৬.৫° কোণে হেলে অবস্থান করছে। এবং

৪. পৃথিবী নিজ অক্ষে (Axis) ২৩.৫° কোণে হেলে অবস্থান করছে।

আহ্নিক গতির ফলাফল

উত্তর: আহ্নিক গতির ফলে পৃথিবীতে বেশ কিছু কর্মকান্ড সংঘটিত হয়ে থাকে। এগুলো হলো

১. দিবা-রাত্রির সংঘটন :

গোলাকার পৃথিবীর নিজস্ব কোনো আলো নেই বলে সূর্যের আলোকে পৃথিবী পৃষ্ঠ আলোকিত হয়ে থাকে। পৃথিবী স্থির থাকলে এর যে পার্শ্ব সূর্যের দিকে অবস্থান করতো কেবল সে অংশই আলোকিত হতো অর্থাৎ দিন হতো। অপর পার্শ্বে কোনো আলো না থাকায় ঐ অংশ অন্ধকারাছন্ন থাকতো অর্থাৎ রাত্রি হতো। বাস্তবে পৃথিবীর সর্বত্র ক্রমানুসারে দিন ও রাত্রি সংঘটিত হয়ে থাকে। পৃথিবীর আহ্নিক গতির কারণে এইরূপ দিবারাত্রি সংঘটিত হয়ে থাকে।

২. জোয়ার-ভাটার সৃষ্টি :

আহ্নিক গতির কারণে ভূ-পৃষ্ঠে কোনো একটি স্থানে প্রতিদিন দুইবার জোয়ার ও দুইবার ভাটা সংঘটিত হয়। তবে পৃথিবী নিজ অক্ষে অনবরত ঘূর্ণনশীল হওয়ায় আহ্নিক গতির ফলে একটি স্থানের প্রতিদিন একই সময়ে জোয়ার-ভাটা সংঘটিত না হয়ে ৫২ মিনিট সময়ের ব্যবধানে সংঘটিত হয়।

৩. বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্রস্রোতের সৃষ্টি :

পৃথিবীর আকার অভিগত গোলকের ন্যায়। ফলে নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে মেরু প্রদেশের দিকে পৃথিবীর অক্ষরেখাসমূহের ব্যাস ও আবর্তনের গতিবেগ ক্রমশঃ হ্রাস পেতে থাকে। ফেরেলের কোরিওলিস এফেক্ট সূত্রানুযায়ী, আহ্নিক গতির কারণে বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্রস্রোত উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে ও দক্ষিণ গোলার্ধে বাম দিকে বেঁকে যায়।

৪. তাপমাত্রার তারতম্য সৃষ্টি :

আহ্নিক গতির কারণে ভূ-পৃষ্ঠের যে কোনো একটি স্থান প্রায় ১২ ঘন্টা সূর্যের দিকে অবস্থান করে। ফলে দিনের বেলায় সূর্য রশ্মির তাপে ঐ স্থানটির বায়ু ও মাটি উত্তপ্ত হয়ে পড়ে।

আবার, পৃথিবীর নিজ অক্ষে ঘূর্ণনের কারণে ঐ স্থানটি ক্রমশ সূর্য হতে দূরে সরে যেতে থাকে এবং রাত্রির আবির্ভাব হয় এবং সূর্য হতে দূরে অবস্থান করায় তাপমাত্রা ক্রমশঃ কমতে থাকে। এভাবে একটি পূর্ণাঙ্গ দিবসে (২৪ ঘন্টা সময়কালে) একই স্থানে দিন ও রাত্রি সৃষ্টি হওয়ার ফলে তাপমাত্রার হ্রাস বৃদ্ধি ঘটে থাকে।

৫. জীবজগতের সৃষ্টি ও বংশ বিস্তার :

জীবজগতের সৃষ্টি ও টিকে থাকবার জন্যে ভূ-পৃষ্ঠে প্রতিটি স্থানে নির্দিষ্ট তাপমাত্রা, বায়ুপ্রবাহ ইত্যাদি জলবায়ুর উপাদানের প্রয়োজন। এ সকল জলবায়ুর উপাদানের পরিমাণের তারতম্যের ভিত্তিতে ভূ-পৃষ্ঠের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ, জীবজন্তু ও মানব সম্প্রদায় সৃষ্টি হয়েছে।

আহ্নিক গতির ফলে সমগ্র পৃথিবী ব্যাপী দিন রাত্রির সংঘটন ও তাপমাত্রার তারতম্যের ফলেই গোটা জীবজগত সৃষ্টি ও বংশ বিস্তার করে থাকে।

পৃথিবীর গতি কত প্রকার

উত্তর: পৃথিবী স্থির নয়। এটি প্রত্যহ নিজ অক্ষের উপর ঘুরছে এবং সাথে সাথে সূর্যের চারদিকে পরিভ্রমণ করছে। এটিই পৃথিবীর গতি। পৃথিবীর গতি দু’প্রকার। যথা—
১। আবর্তন বা আহ্নিক গতি ও
২। পরিক্রমণ বা বার্ষিক গতি

১। আবর্তন বা আহ্নিক গতি

পৃথিবী নিজ অক্ষ বা মেরুরেখার উপর পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে ২৩ ঘণ্টা ৫৬ মিনিট ৪ সেকেন্ড অর্থাৎ প্রায় ২৪ ঘণ্টায় একবার আবর্তন করছে। পৃথিবীর এই গতিকে আহ্নিক গতি বলে। নিরক্ষরেখায় আহ্নিক গতির বেগ সবচেয়ে বেশি।

২। আহ্নিক গতির কারণ

(১) সৌরজগতের সকল গ্রহই সূর্যকে পরিভ্রমণ করে। পৃথিবী সৌরজগতের একটি গ্রহ, তাই এটাও সূর্যকে পরিভ্রমণ করে। পৃথিবীর এই পরিভ্রমণের জন্য আহ্নিক গতির সৃষ্টি হয়।
(২) পৃথিবী সূর্যকে একটি উপবৃত্তাকার পথেই পরিভ্রমণ করে না; নিজ অক্ষ পথেও পৃথিবী আবর্তন করে। ফলে আহ্নিক গতির সৃষ্টি হয়।
(৩) নিউটনের সূত্র অনুসারে ক্ষুদ্র বস্তুই বৃহত্তর বস্তুর চারদিকে আবর্তন করে। পৃথিবী সূর্য অপেক্ষা ছোট। তাই পৃথিবী সূর্যের চারদিকে নিজ অক্ষের উপর ঘুরে। ফলে আহ্নিক গতির সৃষ্টি হয়।

পর্যায়বৃত্ত গতি কাকে বলে, পর্যাবৃত্ত গতি কাকে বলে, পর্যাবৃত্ত গতির সংজ্ঞা দাও

উত্তর: কোনো গতিশীল বস্তুকণার গতি যদি এমন হয় যে, এটি এর গতিপথে কোনো নির্দিষ্ট বিন্দুকে নির্দিষ্ট সময় পর পর একই দিক থেকে অতিক্রম করে, তাহলে সেই গতিকে পর্যায়বৃত্ত গতি বলে। এ গতি বৃত্তাকার, উপবৃত্তাকার, সরল রৈখিক বা আরো জটিল হতে পারে।

ঘড়ির কাটা, বৈদ্যুতিক পাখা, সাইকেলের চাকা ইত্যাদির গতিও পর্যাবৃত্ত গতির উদাহরণ।

নির্দিষ্ট সময় পর পর কোনো ঘটনার পুনরাবৃত্তি বা নির্দিষ্ট দূরত্ব পর পর কোনো কিছুর পুনরাবৃত্তিকে বলা হয় Periodicity বা পর্যায়বৃত্ততা।

পর্যায়বৃত্ততাকে দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যথাঃ–

১) কালিক পর্যাক্রম (Temporal Periodicity) : সময়ের সাথে যখন কোনো কিছুর নিয়মিত পুনরাবৃত্তি ঘটে তখন তাকে কালিক পর্যাক্রম বা Temporal Periodicity বলে। উদাহরণস্বরূপ, দোলায়মান সরল দোলক একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর একটি নির্দিষ্ট বিন্দুকে একই দিক থেকে অতিক্রম করে, ঘড়ির কাঁটা একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর একই অবস্থানে ফিরে আসে, বর্ষাকাল একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর ফিরে আসে।

২) স্থানিক পর্যাক্রম (Spatial Periodicity) : স্থানের সাথে যখন কোনো কিছুর নিয়মিত পুনরাবৃত্তি ঘটে তখন তাকে স্থানিক পর্যাক্রম বা Spatial Periodicity বলে। উদাহরণস্বরূপ, কঠিন পদার্থে কেলাসের অণু, পরমাণু, বা আয়নগুলো নির্দিষ্ট দূরত্ব পর পর পর্যায়ক্রমিকভাবে বিন্যস্ত থাকে।

স্পন্দন গতি কাকে বলে

উত্তর: পর্যাবৃত্ত গতি সম্পন্ন কোন বস্তুকণা যদি এর পর্যায়কালের অর্ধেক সময় একটি নির্দিষ্ট দিকে এবং বাকি অর্ধেক সময় পূর্বগতির বিপরীত দিকে চলে তবে তার সে গতিকে স্পন্দন (Oscillation) গতি বলে। অর্থাৎ, স্পন্দন গতিকে অগ্র পশ্চাৎ পর্যাবৃত্ত গতিও বলা যেতে পারে।

সরল দোলকের গতি, কম্পনশীল সুর শলাকা, গীটারের তারের গতি ইত্যাদি স্পন্দন/কম্পন গতির উদাহরণ। এছাড়া, কঠিন বস্তুসমূহের অভ্যন্তরে পরমাণু স্পন্দিত হয়।

সাধারণভাবে বলা যায়, সকল শব্দের উদ্ভবই কোন না কোন স্পন্দন গতি থেকে হয়।

স্পন্দন গতি এক প্রকার পর্যায়বৃত্ত গতি কেন?

উত্তর: আমরা জানি, কোনো গতিশীল বস্তুকণার গতি যদি এমন হয় যে, এটি এর গতিপথের কোনো নির্দিষ্ট বিন্দুকে নির্দিষ্ট সময় পরপর একই দিক থেকে অতিক্রম করে, তাহলে সেই গতিকে পর্যায়বৃত্ত গতি বলে। আবার, কোনো বস্তু যদি পর্যায়কালের অর্ধেক সময় কোনো নির্দিষ্ট দিকে এবং বাকি অর্ধেক সময় একই পথে তার বিপরীত দিকে চলে তবে এর গতিকে স্পন্দন গতি বলে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, স্পন্দনগতি সম্পন্ন কোনো বস্তু তার গতিপথে কোনো নির্দিষ্ট বিন্দুকে নির্দিষ্ট সময় পর পর একই বেগে এই দিক হতে অতিক্রম করে বলে সংজ্ঞানুসারে এর গতি পর্যায়বৃত্ত গতিও বটে। তাই স্পন্দন গতি এক প্রকার পর্যায়বৃত্ত গতি।

ঘূর্ণন গতি কাকে বলে

উত্তর: কোনো কিছু যদি একটা নির্দিষ্ট বিন্দুর সমদূরত্বে থেকে ঘুরতে থাকে তাহলে সেটাকে বলে ঘূর্ণন গতি।

পৃথিবীর আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতি প্রথম নির্ণয় করেন কে, পৃথিবীর আহ্নিক ও বার্ষিক গতি প্রথম নির্ণয় করেন কে

উত্তর: সবার আগে পৃথিবীর আহ্নিক গতি ও বার্ষিক গতি নির্ণয় করেন ‘আর্যভট্ট’।

পৃথিবীর পরিক্রমণ গতির আরেক নাম বার্ষিক গতি কেন

সূর্যকে একবার সম্পূর্ণ প্রদক্ষিণ করতে পৃথিবীর সময় লাগে ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড। এই সময়কালকে বলে এক সৌরবছর। তবে, হিসাবের সুবিধার জন্য পৃথিবীর একবার সম্পূর্ণ পরিক্রমণের সময়কে ৩৬৫ দিন ধরে প্রতি চতুর্থ বছরের দিনসংখ্যার সঙ্গে ১ দিন যােগ করে ৩৬৬ দিন ধরা হয়। এইভাবে, পরিক্রমণ গতির মাধ্যমে বছর নির্ধারিত হয় বলে এই গতির আর এক নাম বার্ষিক গতি।

গতিবেগ একই থাকলে সময় ও দূরত্ব সরল সমানুপাতী

উত্তরঃ গতিবেগ স্থির হলে , সময় ও দূরত্ব সরল সমানুপাতি।

আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

গতির সমীকরণ কয়টি, গতির সূত্র প্রতিপাদন

গতি

উত্তরঃ প্রসঙ্গ কাঠামোর সাপেক্ষে কোনো বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তন হওয়াকে গতি বলে।

স্থিতি

উত্তরঃ প্রসঙ্গ কাঠামোর সাপেক্ষে কোনো বস্তুর অবস্থানের পরিবর্তন না হওয়াকে স্থিতি বলে।

আপেক্ষিক গতি

উত্তরঃ গতিশীল প্রসঙ্গ কাঠামোর সাপেক্ষে কোনো বস্তুর গতি পরিমাপ করা হলে তাকে আপেক্ষিক গতি বলে।

আপেক্ষিক স্থিতি

উত্তরঃ গতিশীল প্রসঙ্গ কাঠামোর সাপেক্ষে কোনো বস্তুর স্থিতি পরিমাপ করা হলে তাকে আপেক্ষিক স্থিতি বলে।

পরম গতি

উত্তরঃ সম্পূর্ণ স্থির প্রসঙ্গ কাঠামোর সাপেক্ষে কোনো বস্তুর গতি পরিমাপ করা হলে তাকে পরম গতি বলে।

পরম স্থিতি

উত্তরঃ সম্পূর্ণ স্থির প্রসঙ্গ কাঠামোর সাপেক্ষে কোনো বস্তুর স্থিতি পরিমাপ করা হলে তাকে পরম স্থিতি বলে।

এই মহাবিশ্বে পরম গতি ও পরম স্থিতি বলতে কিছুই নেই, সব-ই আপেক্ষিক। তাই বলতে পারি– “পরম নয় কোনো গতি পরম নয় কোনো স্থিতি,সকল গতি আপেক্ষিক সকল স্থিতি আপেক্ষিক।”

গতির সূত্র, গতির সমীকরণ প্রতিপাদন

গতির সমীকরণ

চলন গতি কাকে বলে

উত্তরঃ কোনো বস্তুর গতি যদি এমনভাবে চলতে থাকে যাতে করে বস্তুর সকল কণা একই সময়ে একই দিকে সমান দূরত্ব অতিক্রম করে তাহলে ঐ গতিকে চলন গতি বলে।

গতি অধ্যায়ের সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

সরলরৈখিক গতি কাকে বলে

উত্তরঃ কোন বস্তু চলার পথে দিক পরিবর্তন করতেও পারে আবার নাও করতে পারে। বস্তু চলার পথে দিক পরিবর্তন না করলে সেই গতিকে বলে সরল রৈখিক গতি। যেমন নির্দিষ্ট মাধ্যমে আলোর গতি।

গতির সূত্র প্রতিপাদন

উত্তরঃ v=u+at. ত্বরণ, বেগ এবং সময়ের সম্পর্ক স্থাপন করা এই সূত্রের প্রতিপাদন দেখা যাক। কোনো বস্তু u সমপরিমাণ আদিবেগ দিয়ে a সুষম ত্বরণে t সময় চলে v শেষ বেগ পায়।

বাতাসের গতি মাপার যন্ত্রের নাম

উত্তরঃ বাতাসের গতি মাপার যন্ত্রের নাম এনিমোমিটার। এটি বিভিন্ন রকম হতে পারে। তবে সবচেয়ে সাধারণ প্রকৃতির এনিমোমিটার হল থ্রি কাপ এনিমোমিটার। এটি একই সাথে বাতাসের গতি ও দিক উভয় নির্ণয় করতে পারে।

এনিমোমিটার কাজ কিভাবে করে ?

মূলত প্রথমে এটির কাপগুলো বাতাসের গতির দিকে ঘুরে এর দিক নির্ণয় করে। আর এর পর কাপগুলোর ঘূর্ণন গতি নির্ণয় করে। এর সাথে যুক্ত মাইক্রোপ্রসেসরটি শ্যাফটের স্পীড নির্ণয় করে যাকে এনিমোমিটার ফ্যাক্টর বলে। এই ফ্যাক্টরটি এনিমোমিটার এর গঠনের উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হয়। এখন নিচের সূত্র দেখা যাক :

তাৎক্ষনিক বাতাসের গতি = এনিমোমিটার ফ্যাক্টর X তাৎক্ষনিক শ্যাফটের গতি

গড় বাতাসের গতি = এনিমোমিটার ফ্যাক্টর X (ঘূর্ণন সংখ্যা / সময়)

এখন ধরি এনিমোমিটার ফ্যাক্টরের মান ২। আর প্রতি মিনিটে ঘূর্ণন সংখ্যা ১২০ বার। সুতরাং গড় বাতাসের গতি হবে, (এনিমোমিটার ফ্যাক্টর X (ঘূর্ণন সংখ্যা / সময়)) = ২ X (১২০/৬০) = ৪ মাইল প্রতি ঘণ্টা।

সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর গতি কোন ধরনের গতি

উত্তরঃ সূর্যের চারদিকে পৃথিবীর গতি পর্যাবৃত্ত গতি

সরল স্পন্দন গতি কাকে

উত্তরঃ পর্যায়বৃত্ত গতিসম্পন্ন কোন বস্তুর গতি যদি সরলরৈখিক হয় এবং এর দিক যদি সাম্যাবস্থান এর অভিমুখী হয় তবে সেই গতিকে সরল স্পন্দন গতি বলে।

উড়োজাহাজের গতি নির্ণায়ক যন্ত্র

উত্তরঃ ট্যাকোমিটার উড়োজাহাজের গতি নির্ণায়ক যন্ত্র।

পরম গতি কাকে বলে

উত্তরঃ পরম স্থির কোন বস্তুর সাপেক্ষে কোন বস্তুর গতিকে তার পরম গতি বলে।

পরম গতি মানে কোনো বস্তুর প্রকৃত গতি। অর্থাৎ কোনো বস্তু বাস্তবিকভাবেই গতিশীল। এবং এর গতিকে বিচার বা বিশ্লেষণ করতে হলে অন্য কোনো বস্তুর উপর নির্ভর করতে হয়না।

পরিক্রমণ গতি কাকে বলে

উত্তরঃ পৃথিবী নিজের মেরুরেখার চারদিকে ঘুরতে ঘুরতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে উপবৃত্তাকার কক্ষপথে সূর্যের চারিদিকে ঘুরতে থাকে, পৃথিবীর এই গতিকে পরিক্রমন গতি বা বার্ষিক গতি বলে।

শব্দের গতিবেগ কত

উত্তরঃ শব্দের গতি হল শব্দ তরঙ্গ দ্বারা সময়ের প্রতি একক দূরত্ব যা এটি একটি ইলাস্টিক মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে। ২০ °সে (৬৮ °ফা) এ, বাতাসে শব্দের গতি প্রায় ৩৪৩ মিটার প্রতি সেকেন্ড (১,১২৫ ফুট/সে; ১,২৩৫ কিমি/ঘ; ৭৬৭ মা/ঘ; ৬৬৭ নট) মিটার , এক কিলোমিটার ২.৯ সেকেন্ডে বা এক মাইল ৪.৭ সেকেন্ডে।

পদার্থ বিজ্ঞান ২য় অধ্যায় গতি সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

গ্যাসের অনুগুলির গতিবেগ ও চাপের উপর উষ্ণতার প্রভাব লেখ

উত্তর: উষ্ণতা বৃদ্ধি পেলে গ্যাসের অণুগুলির গতিবেগ বৃদ্ধি পায় এবং উষ্ণতা হ্রাস পেলে গ্যাসের অণুর গতিবেগ হ্রাস পায় ।

গ্যাসীয় অবস্থায় অণুর গতির অবস্থা সম্বন্ধে, গ্যাসীয় অবস্থায় অণুর গতির অবস্থা

উত্তর: গ্যাসীয় অবস্থায় পদার্থের কণার গতি, কঠিন ও তরল অবস্থায় পদার্থের কণার গতির চেয়ে বেশি হয়। এর কারণ এ অবস্থায় কণাগুলো অধিক শক্তি লাভ করে থাকে যা তাদের গতিশক্তি (Kinetic Energy) বৃদ্ধি করে। এসময় কণাগুলো, ধারণকারী পাত্রের গায়ে প্রচুর বল প্র‍য়োগ করে, ফলে চাপ অত্যন্ত বেশি হয়। তাপ আরো বৃদ্ধি করলে গ্যাসের গৃহীত শক্তির পরিমাণও আরো বৃদ্ধি পায় ( সেই সাথে কণাসমূহের গতিশক্তিও)। তবে তাপমাত্রা সাধারণত 3500 K এর চেয়ে বেড়ে গেলে পদার্থ প্লাজমা অবস্থায় রুপান্তরিত হয়।

আবর্তন গতি কাকে বলে, পৃথিবীর আবর্তন গতি কাকে বলে

উত্তর: পৃথিবী যখন নিজের অক্ষরেখার উপর একপাক ঘুরে আসে তখন তার সময় লাগে 23 ঘন্টা 56 মিনিট এবং 40 সেকেন্ড এই সময় কে পৃথিবীর আবর্তন গতি বলা হয়। এই আবর্তন গতির সময় পৃথিবী পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঘোরে। নিরক্ষরেখায় এই বেগ 1667 KM/h ।

গতি ঘর্ষণ কাকে বলে

উত্তর: একটি বস্তুর সাপেক্ষে অন্য বস্তু যখন চলমান হয় তখন যে ঘর্ষণ বল তৈরি হয় তাকে গতি ঘর্ষণ বলে।

পরস্পরের সংস্পর্শে অবস্থিত দুটি বস্তুর সীমাস্থ ঘর্ষণ এবং অভিলম্ব প্রতিক্রিয়া অনুপাতকে স্থিতি ঘর্ষণ গুণাঙ্ক বলে

স্থিতি ও গতি কাকে বলে

উত্তর:

স্থিতি: যে বস্তু সময়ের সঙ্গে পারিপার্শ্বিকের সাপেক্ষে তার অবস্থান পরিবর্তন করে না সেই বস্তুগত বা স্থির বস্তু বলে এবং তার অবস্থাকে স্থিতি বলে।

স্থিতির উদাহরণ: যেমন, ঘরবাড়ি, গাছপালা, পাহাড়-পর্বত প্রভৃতি স্থির বস্তু কারণ সময়ের সঙ্গে এদের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয় না। (নদীর প্রবাহিত জল – সময়ের সঙ্গে জায়গায় পরিবর্তন করে তাই এটি স্থির বস্তু নয়।)

গতি: যে বস্তু সময়ের সঙ্গে পারিপার্শ্বিকের সাপেক্ষে তার অবস্থান পরিবর্তন করে, সেই বস্তু কে সচল বা গতিশীল বস্তু বলে এবং তার অবস্থাকে গতি বলে।

গতির উদাহরণ: চলন্ত গাড়ি নদীর জলস্রোত প্রভৃতি সচল বা গতিশীল। কারণ, সময়ের সঙ্গে এদের অবস্থান পরিবর্তন হয়।

স্থিতি ও গতির আপেক্ষিক ব্যাখ্যা

উত্তর: এই বিশ্বে পরম স্থিতি বা পরম গতি বলে কিছুই নেই মহাবিশ্বের সব বস্তুই গতিশীল। পৃথিবী প্রচন্ড বেগে সূর্যের চারদিকে ঘুরছে। সেইসঙ্গে পৃথিবীর উপরের সব বস্তুর নির্দিষ্ট বেগে সূর্যের চারদিকে ঘুরে চলেছে। এছাড়া রয়েছে পৃথিবীর ঘূর্ণন আবর্তন গতি। পৃথিবীর বাইরে যেমন চাঁদ থেকে পৃথিবী কে দেখলে চাঁদকে স্থির কিন্তু পৃথিবী কে সচল দেখায়। তাই আমরা যে স্থির বা গতিশীল বস্তুর কথা বলি তা প্রকৃতপক্ষে আপেক্ষিকভাবে স্থির বা আপেক্ষিকভাবে গতিশীল। সুতরাং, কোন বস্তুর গতি অথবা গতি সব সময় আপেক্ষিক।

আলোর গতিবেগ প্রতি সেকেন্ডে কত

উত্তর: একে সাধারণত c দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। শূন্যস্থানে আলোর দ্রুতি প্রতি সেকেন্ডে ঠিক ২৯,৯৭,৯২,৪৫৮ মিটারের সমান, যা প্রায় ৩ লক্ষ কিলোমিটার প্রতি সেকেন্ড বা ১.৮৬ লক্ষ মাইল প্রতি সেকেন্ড বা ৬৭১০ লক্ষ মাইল প্রতি ঘণ্টার সমতূল্য।

গতিশক্তির সূত্র

উত্তর: গতি শক্তি = 1/2 m v^2.

যেখানে, m বস্তুর ভর যা ঋণাত্মক হতে পারে না।

বস্তুর বেগ v, সেটা যদিও বা ঋণাত্মক হয়, v ^2 তো কখনো ঋণাত্মক হতে পারে না। কারণ কোন রাশির বর্গ কখনো ঋণাত্মক হতে পারে না।

নদীর গতিবেগ পরিমাপক একক, নদীর গতিবেগ পরিমাপের একক কি

উত্তর: নদীর গতিবেগ বা জলপ্রবাহ মাপার একক কিউসেক।

পদার্থ বিজ্ঞান ২য় অধ্যায় গতি mcq

গতির ধারণা ব্যাখ্যা করতে হবে

উত্তর: পদার্থবিজ্ঞানে গতি হলো এমন ঘটনা যেখানে সময়ের সাথে সাথে বস্তুর অবস্থান পরিবর্তিত হয়। পদার্থবিজ্ঞানে সময়ের সাথে কোন বস্তুর সরণের হারকে গতি/বেগ বলে। এখানে বেগ একটি ভেক্টর রাশি। গাণিতিকভাবে গতিকে সাধারণত সরণ, দূরত্ব, বেগ, দ্রুতি, ত্বরণ এবং সময়ের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা হয়।

সুষম বৃত্তীয় গতি কাক বোলে

উত্তর: যদি কোনও বস্তু অভিন্ন গতির সাথে একটি বৃত্তাকার পথে অগ্রসর হয়, তবে সেই গতিটিকে সুষম বৃত্তীয় গতি বলে।

দ্রুতি কী?

উত্তর: সময়ের সাথে দূরত্ব পরিবর্তনের হারকে দ্রুতি বলে।

বেগ কী?

উত্তর: সময়ের সাথে সরণের পরিবর্তনের হারকে বেগ বলে।

তাৎক্ষণিক দ্রুতি কী?

উত্তর: কোনো গতিশীল বস্তুর একটি নির্দিষ্ট মুহূর্তের দ্রুতিকে তাৎক্ষণিক দ্রুতি বলে।  

তাৎক্ষণিক বেগ কী?

উত্তর: কোনো গতিশীল বস্তুর একটি নির্দিষ্ট মুহূর্তের বেগকে তাৎক্ষণিক বেগ বলে

পদার্থ বিজ্ঞান ২য় অধ্যায় গতি সৃজনশীল প্রশ্ন pdf, পদার্থ বিজ্ঞান ৩য় অধ্যায় গতি সৃজনশীল প্রশ্ন pdf

গতি Class 9 Pdf

ভৌতবিজ্ঞান ও পরিবেশ পরিচয় ক্লাস ৯


ভৌতবিজ্ঞান ও পরিবেশ পরিচয় ক্লাস ৯

গতি Class 9 প্রশ্ন ও উত্তর

গ্যাসের অনুগুলির গতিবেগ ও চাপের উপর উষ্ণতার প্রভাব লেখ
উত্তর: উষ্ণতা বৃদ্ধি পেলে গ্যাসের অণুগুলির গতিবেগ বৃদ্ধি পায় এবং উষ্ণতা হ্রাস পেলে গ্যাসের অণুর গতিবেগ হ্রাস পায় ।


আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।