বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস

আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

সূচিপত্র

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের ইতিহাস

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান সরকার গভীর রাতে পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) নিরীহ জনগণের উপর হামলা চালায়। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে গোলাবর্ষণ করা হয়, অনেক স্থানে নারীদের উপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয় এবং অনেক স্থানে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। এমতাবস্থায় বাঙালিদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার অবস্থা সৃষ্টি হয় এবং অনেক স্থানেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণার অপেক্ষা না করেই অনেকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। পরবর্তিতে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা পাবার পর আপামর বাঙালি জনতা পশ্চিম পাকিস্তানি জান্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে এবং ভারতের অবিস্মরণীয় সমর্থনের ফলস্বরূপ দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তান স্বাধীন করে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটায়।

১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে জন্ম নেয় ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটি রাষ্ট্র। কিন্তু ভারতের পশ্চিমে অবস্থিত পশ্চিম পাকিস্তান ও পূর্ব দিকের ভূখণ্ড তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) মধ্যে বৈরীতার হাওয়া দেখা যাচ্ছিলো শুরু থেকেই। বিশেষ করে অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী পশ্চিম পাকিস্তান ভাষাসহ চাকরি ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের সাথে বৈষম্যের আচরণ করতে থাকে- যার ফলশ্রুতিতে ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে একটা অনিবার্য সংঘাতের দিকে মোড় নেয় পরিস্থিতি।

শুরুটা হয় ১৯৫২-তে ভাষার ওপর আঘাত থেকে। এতেই থেমে থাকেনি তারা, রীতিমত সাংস্কৃতিক আগ্রাসন চালাতে থাকে। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে যখন বাংলার দামাল ছেলেরা রক্ত দিল রাজপথে, তখন থেকেই বলতে গেলে বাঙালিদের মানসপটে অঙ্কিত হয়ে গিয়েছিল যে, স্বাধিকারই আসল মুক্তি। তাছাড়া এই নিপীড়ন চলতেই থাকবে। এরপর একসময় রবীন্দ্র সংস্কৃতি চর্চার ওপর খড়গহস্ত নেমে আসে। এভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাঙালিদের হেনস্তা করতে থাকে পশ্চিম পাকিস্তানিরা। সরকারি, সামরিক, বেসামরিক সব খাতেই নজির বিহীন বৈষম্যের শিকার হয় বাঙালিরা। মাঝে একবার বাংলাকে উর্দু হরফে লেখার পর্যন্ত চেষ্টা করেছিল তারা।

এসব কিছুর কারণে বাঙালিরা ভেতরে ভেতরে ফুঁসতে থাকে। ‘৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ‘৬৬ এর ৬ দফা, ‘৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান এরই ইঙ্গিত দেয়। বাঙালিরা দিনকে দিন বুঝতে থাকে প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন কোনোক্রমেই হাসিল করতে দেবে না পাক সামরিক জান্তারা। তাই ‘৭০ এর নির্বাচনে জেতার পরও যখন আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসতে দেওয়া হলো না, উল্টো আলোচনার নামে টালবাহানা করা হচ্ছিল- বুদ্ধিমান সকলেই বুঝতে পেরেছিলেন সামনে কী আসতে চলেছে। বাঙালি জাতি এগিয়ে যেতে থাকে সেই করুণ ২৬ মার্চ এর ইতিহাস -এর দিকে।

৭ই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক বুদ্ধিদীপ্ত কাজ করে বসলেন, যা ইতিহাসের পাতায় বাংলার স্বাধীনতার ইতিহাস -এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে থাকবে। আকারে ইঙ্গিতে পুরোটাই বুঝিয়ে দিলেন বাঙালিকে এবার স্বাধীনতার সংগ্রামই করতে হবে, কিন্তু সরাসরি দেশকে স্বাধীন ঘোষণা করেননি, কারণ ঠিক সেই মুহূর্তে তাঁর নিজের এবং উপস্থিত জনতার জীবনের আশঙ্কা ছিল। তাঁর সেই ভাষণ আজও বাঙালির কানে বাজে।

কিন্তু পাকিস্তানিরা যখন শান্তির পথ বেছে নিল না, ২৫ মার্চে টিক্কা খান, জেনারেল রাও ফরমান আলী খান, জেনারেল নিয়াজি এদের মাস্টারপ্ল্যানে সরাসরি বাঙালিকে হত্যার মহোৎসবে মেতে উঠলো, সেই রাতেই বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হবার পূর্বে বেতারের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা করলেন। এরপর চট্টগ্রাম বেতারে আওয়ামী লীগ নেতা এম এ হান্নান দ্বিতীয়বার বঙ্গবন্ধুর হয়ে ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। এবং ২৭ মার্চ মেজর জিয়াউর রহমান কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। এরপর শুরু হয় রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ।

স্বাধীনতার ঘোষণা

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান সরকার গভীর রাতে পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) নিরীহ জনগণের উপর হামলা চালায় ও গ্রেপ্তার করা হয় স্বাধীন বাংলাদেশের রূপকার শেখ মুজিবুর রহমানকে। তবে গ্রেপ্তারের কিছু আগেই ২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন। ঘোষণাটি নিম্নরুপ:

এটাই হয়ত আমার শেষ বার্তা, আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান জানাই, আপনারা যেখানেই থাকুন, আপনাদের সর্বস্ব দিয়ে দখলদার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত প্রতিরোধ চালিয়ে যান। বাংলাদেশের মাটি থেকে সর্বশেষ পাকিস্তানি সৈন্যটিকে উৎখাত করা এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের আগ পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধ অব্যাহত থাকুক।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস কবে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস কত তারিখে, 26 march বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস, বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস কবে পালন করা হয়,

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ২৬শে মার্চ পালিত বাংলাদেশের জাতীয় দিবস। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে (কাল রাত) তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেদের স্বাধীনতার সংগ্রাম শুরু করে। ২৫ মার্চ রাতে গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আনুষ্ঠানিকভাবে এক তার বার্তায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। ২৬ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে এম এ হান্নান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের উদ্দেশ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণের ঘোষণা পত্র পাঠ করেন। পরে ২৭ মার্চ জিয়াউর রহমান একই কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা পাঠ করেন।

১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে এই দিনটিকে বাংলাদেশে জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয় এবং সরকারিভাবে এ দিনটিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ১৬ই ডিসেম্বর, বাংলাদেশে কেন ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীনতা দিবস পালন না করে ২৬শে মার্চ স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয়?

পাকিস্তান সেনাবাহিনী ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বাংলাদেশে (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) গণহত্যা শুরু করে। ২৬ মার্চ গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে স্বাধীন দেশ হিসাবে ঘোষণা করেন। ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরে বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার গঠন করা হয়। ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের যুদ্ধ চলতে থাকে, যার শেষ হয় ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে। অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জিত হয় ১৬ ডিসেম্বরে, কিন্তু ২৬ মার্চ থেকেই বাংলাদেশ স্বাধীন। এ কারণেই ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস পালন করা হয়।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস রচনা, বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস অনুচ্ছেদ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস সম্পর্কে রচনা

ভূমিকা

স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার। অনাহারী একজন গৃহহীন পথের লােকও ব্যক্তিগত জীবনে স্বাধীনতা কামনা করে। স্বাধীনতার অর্থ পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে সার্বভৌম আত্মমর্যাদা নিয়ে দেশ ও জাতির অগ্রযাত্রা। স্বাধীনতা প্রত্যেক জাতির অমূল্য সম্পদ। যে জাতি যেদিন স্বাধীনতা লাভ করে সেদিনটি জাতীয় জীবনে এক গৌরবান্বিত, আনন্দঘন ও তাৎপর্যময় দিন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস

২৬শে মার্চ, ১৯৭১ এ পৃথিবীর মানচিত্রে একটি দেশের নামের অন্তর্ভুক্তি ঘটে,বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস এ দিনটিকে ঘিরে রচিত হয়েছে। এ দিনের নবীন সূর্যোদয়ের মধ্য দিয়ে আমাদের জাতীয় জীবনে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। তাই ২৬শে মার্চ আমাদের তথা বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবস।

সংগ্রামের ইতিহাস

একসময় পুরাে ভারতবর্ষ শাসন করত ব্রিটিশ তথা ইংরেজরা। ১৯৪৭ সালে উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটে এবং ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়। পাকিস্তান রাষ্ট্রের ছিল দুটি অংশ। একদিকে পূর্ব পাকিস্তান, অন্যদিকে পশ্চিম পাকিস্তান। স্বাধীনতার পরপরই পাকিস্তানের কুচক্রী শাসকগােষ্ঠী নানাভাবে পূর্ব বালাকে শাসন ও শােষণ করার ষড়যন্ত্র শুরু করে। রাজনীতি, চাকরি, ব্যবসায়-বাণিজ্য, অর্থ-সম্পদ, বিলি-বাটোয়ারা সব ক্ষেত্রেই তারা পূর্ব বাংলাকে ঠকাতে শুরু করে। এরই প্রেক্ষাপটে ১৯৫২ সালে ভাষা-আন্দোলন হয়। রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে শহীদ হন সালাম, রফিক, জব্বার বরকতসহ আরও অনেকে।

এরপরই শুরু হয় বাঙালির স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলন। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাহিনী এদেশের মানুষের ওপর ঝাপিয়ে পড়ে। নির্বিচারে গুলি করে মানুষ হত্যা শুরু করে। ২৫ মার্চ গভীররাতে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পূর্বেই অর্থাৎ ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘােষণা করেন। শুরু হয় সশস্ত্র মুক্তিসংগ্রাম।

দীর্ঘ নয় মাস যুদ্ধের পর আর কোনাে উপায় খুঁজে না পেয়ে হানাদার পাকবাহিনী ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর কাছে নিঃশর্তভাবে আত্মসমর্পণ করে। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বিকেল ৫টা ১ মিনিটে ঢাকায় রমনা রেসকোর্স ময়দানে বর্তমান সােহরাওয়ার্দী উদ্যানে যৌথ কম্যান্ডের পক্ষে লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরােরা এবং পাকিস্তানের পক্ষে লেফটেন্যান্ট জেনারেল নিয়াজী পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেন। ১৯৭১-এ ১৬ই ডিসেম্বর অর্জিত হয় মুক্তিযুদ্ধের বিজয়। তাই ১৬ই ডিসেম্বর আমরা পালন করি বিজয় দিবস হিসেবে।

স্বাধীনতা দিবস উদযাপন

প্রতিবছর ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের জন্য আমরা ওই দিন ভােরে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করি। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে এ দেশের সর্বস্তরের জনগণ নানা অনুষ্ঠান আয়ােজনের মধ্য দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানায়। এই দিনের অনুষ্ঠানমালা আমাদের স্বাধীনতার চেতনাকে শাণিত ও উজ্জীবিত করে।

উপসংহার

আমাদের জাতীয় জীবনে স্বাধীনতা যেমন তাৎপর্য বহন করে, তেমনি লক্ষ লক্ষ ক্লিষ্ট ও আর্তমানুষ যাতে জাতীয় পতাকাকে সমুন্নত রেখে নতুন জীবনকে পাথেয় করে নিজেদের গড়ার শপথ নিতে পারে সেদিকে আমাদের লক্ষ রাখা বাঞ্ছনীয়। তাহলেই আমরা নতুন স্বপ্ন-সম্ভাবনায় উজ্জ্বল হয়ে উঠব এবং দুঃখ-বেদনা ক্ষণকালের জন্য হলেও ভুলতে পারব। আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি বটে, কিন্তু আমাদের অর্থনৈতিক মুক্তি এখনাে আসে নি।

অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জিত হলেই আমাদের স্বাধীনতার রূপ পূর্ণাঙ্গ হবে। তাই এই নতুন রাষ্ট্রকে নব চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে বিতাড়িত করতে হবে অশিক্ষা, কুশিক্ষা, বেকারত্ব, বুভুক্ষা ও দারিদ্র। তবেই না আমরা একটি স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতে পারব। তাই আসুন সবরকম বিভেদ-বিচ্ছেদ ভুলে, হানাহানি সংঘাত ভুলে, সংকীর্ণ স্বার্থচিন্তা জলাঞ্জলি দিয়ে দেশ গড়ার কাজে ব্রতী হই।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস নিয়ে কিছু কথা

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের গুরুত্ব বোঝার জন্য আমাদের সময়ের মধ্যে ফিরে যেতে হবে।

  • 1947 সালে, ব্রিটিশরা আনুষ্ঠানিকভাবে দক্ষিণ এশিয়ার উপমহাদেশ ত্যাগ করে। ঔপনিবেশিকতার দিনগুলিতে, মুসলমান এবং হিন্দুরা প্রায়শই একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করত। ফলে স্বাধীনতার পর উত্তেজনা দেখা দেয়। উভয় দলই সংখ্যালঘু হওয়ার ভয়ে ছিল।
  • ফলস্বরূপ, দেশভাগের সময় দুটি দেশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল: ভারত এবং পাকিস্তান। কিন্তু পাকিস্তান খুব কমই একটি ঐক্যবদ্ধ জাতি ছিল। পরিবর্তে, এটি পশ্চিম পাকিস্তান এবং পূর্ব পাকিস্তানে বিভক্ত হয়েছিল। এই অঞ্চলগুলি নাটকীয়ভাবে ভিন্ন ছিল।
  • যদিও উভয় অঞ্চলে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল, সেখানে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ছিল। এবং সেই সময়ে, সবাই স্বীকৃত ছিল না। পূর্ব পাকিস্তানের অনেকেই শীঘ্রই অনুভব করলেন যে তাদের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। অর্থনীতি থেকে জাতীয় ভাষা পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তানীরা সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ার অংশ ছিল না।
  • 1970 এর দশকে, এই পার্থক্যগুলি মাথায় আসে। ১৯৭১ সালের নির্বাচনে শেখ মুজিবুর রহমান জয়ী হন। কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান তাকে স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করেন। পরিবর্তে, ইয়াহিয়া খান পূর্ব পাকিস্তানে মুক্তিযোদ্ধাদের নির্মূল করার জন্য “অপারেশন সার্চলাইট” শুরু করেন।
  • ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানকে, যা বর্তমানে বাংলাদেশ নামে পরিচিত, একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেন। এটি একটি রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ শুরু করে।
  • পশ্চিম পাকিস্তানি সেনারা আত্মসমর্পণ করলে 1971 সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এই সংঘাত স্থায়ী হয়। পূর্ব পাকিস্তান সম্পূর্ণ স্বাধীন দেশ হিসেবে স্বীকৃতি লাভের বেশি দিন হয়নি। জাতিসংঘ ও তার মিত্রদের সহায়তায় পশ্চিম পাকিস্তান বাংলাদেশ প্রজাতন্ত্রকে স্বীকৃতি দিতে সম্মত হয়। এবং শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি বাংলাদেশের সংগ্রামের নেতৃত্ব দেন, তিনি বঙ্গবন্ধু, ‘বাংলার বন্ধু’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস নিয়ে উক্তি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের স্লোগান

দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বাংলাদেশে পেয়েছিল স্বাধীন দেশ। তাই এই স্বাধীনতা দিবসে সকল শহীদদের কে স্মরণ করছি মনের গভীর থেকে।

  • এই স্বাধীনতা তখনি আমার কাছে প্রকৃত স্বাধীনতা হয়ে উঠবে, যেদিন বাংলার কৃষক-মজুর ও দুঃখী মানুষের সকল দুঃখের অবসান হবে – বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
  • একবার রাজাকার মানে চিরকাল রাজাকার; কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা মানে চিরকাল মুক্তিযোদ্ধা নয়। – হুমায়ূন আজাদ
  • একটা আদর্শের জন্য লড়ে কারোর মৃত্যু হতেই পারে, কিন্তু মৃত্যুর পরেও সেই আদর্শ হাজারটা মানুষের মধ্যে বেঁচে থাকে।
  • যদি দেশের জন্য তোমার ভেতরে আবেগ না থাকে তাহলে তোমার শরীরে রক্ত না জল বইছে।
  • বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর – জীবনানন্দ দাশ
  • স্বাধীনতা তুমি পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন। – শামসুর রাহমান
  • যে মাঠ থেকে এসেছিল স্বাধীনতার ডাক, সেই মাঠে আজ বসে নেশার হাট – রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ
  • তোমার বুকের মধ্যে আমাকে লুকিয়ে রাখো আমি এই মাটি ছেড়ে, মাটির সান্নিধ্য ছেড়ে, আকাশের আত্মীয়তা ছেড়ে, চাই না কোথাও যেতে, কোথাও যেতে – মহাদেব সাহা
  • “নিজের দেশকে ভালোবাসা যদি অপরাধ হয়, তাহলে আমি অপরাধী।” – ঋষি অরবিন্দ ঘোষ

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের ছবি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস ছবি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের ছবি ডাউনলোড

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের গান

বাংলাদেশের স্বাধীনতার কিছু বিখ্যাত গান নিম্নরূপ :

  • ও আমার দেশের মাটি/ তোমার পরে ঠেকাই মাথা – কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
  • আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি – কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
  • বাংলার মাটি বাংলার জল – কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
  • ওরে আজ ভারতের নব যাত্রাপথে – কবি কাজী নজরুল ইসলাম
  • ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা – দ্বিজেন্দ্রলাল রায়
  • বল বল সবে শত বীণা বেনু রবে, ভারত আবার জগত সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লবে – অতুলপ্রসাদ সেন
  • ধন্য মি জন্মেছি মা তোমার ধূলিতে – সলিল চৌধুরী
  • কারার ঐ লৌহ কপাট – কবি কাজী নজরুল ইসলাম
  • জয় বাংলা, বাংলার জয় গীতিকার : গাজী মাজহারুল আনোয়ার সুরকার : আনোয়ার পারভেজ
  • একবার যেতে দে না আমার ছোট্ট সোনার গাঁয় গীতিকার : গাজী মাজহারুল আনোয়ার সুরকার : আনোয়ার পারভেজ
  • একতারা, তুই দেশের কথা বল রে এবার বল গীতিকার : গাজী মাজহারুল আনোয়ার সুরকার : আনোয়ার পারভেজ
  • সেই রেল লাইনের ধারে মেঠো পথটার পাড়ে গীতিকার : মোহাম্মদ রফিকুজ্জামান সুরকার : আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল
  • একাত্তরের মা জননী, কোথায় তোমায় মুক্তিসেনার দল? গীতিকার ও সুরকার : আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল
  • মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে গীতিকার : গোবিন্দ হালদার সুরকার : আপেল মাহমুদ
  • একসাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা গীতিকার : গোবিন্দ হালদার সুরকার : আপেল মাহমুদ
  • তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেবো রে গীতিকার ও সুরকার : আপেল মাহমুদ
  • একনদী রক্ত পেরিয়ে বাংলার আকাশে গীতিকার ও সুরকার : খান আতাউর রহমান

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের কবিতা

বাংলাদেশের স্বাধীনতার কিছু বিখ্যাত কবিতা নিম্নরূপ:

  • স্বাধীনতা – দেবব্রত সিংহ
  • কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প – রুদ্র মুহান্মদ শহীদুল্লাহ
  • স্বাধীনতা, উলঙ্গ কিশোর – নির্মলেন্দু গুণ
  • একটি পতাকা পেলে- হেলাল হাফিজ
  • বাতাসে লাশের গন্ধ – রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ
  • স্বাধীনতা – তাপস ঠাকুর
  • স্বাধীনতা, এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো – নির্মলেন্দু গুণ
  • কচুর স্বাধীনতা – দয়াল দাস
  • স্বাধীনতা তুমি – শামসুর রাহমান
  • তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা – কবি শামসুর রাহমান
  • বর্ণমালা, আমার দুঃখিনী বর্ণমালা – কবি শামসুর রাহমান

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা

  • ”প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ জীবন বাংলাদেশ আমার মরণ বাংলাদেশ…” আমাদের জীবন-মরণ এই বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে সবাইকে শুভেচ্ছা।
  • ”স্বাধীনাতা তুমি ……” মহান স্বাধীনতার জন্য যে সকল অকুতোভয় বীর সন্তানরা বিলিয়ে দিয়েছিলেন তাদের তাজা প্রাণ সে সকল শহীদদের স্মরণে….. সকলকে মহাণ স্বাধীনতা দিবসের অভিনন্দন।
  • ”এক নদী রক্ত পেরিয়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা আমরা তোমাদের ভুলবনা…” — বাংলার স্বাধীনতার জন্য যাদের রক্তের নদী বয়ে গিয়েছিল বাংলার বুকে সেই সকল শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনায়– স্বাধীনতা দিবস সফল হোক।
  • ”একটি বাংলাদেশ তুমি… জনতার, সারা বিশ্বের বিস্ময় তুমি আমার অহংকার।” সারা বিশ্বের বিস্ময় এই বাংলাদেশের জন্য আসুন আমরা সবাই মিলে কাজ করি। স্বাধীনতার সুবর্ণ  জয়ন্তীতে এটাই হোক আমাদের শপথ।
  • তোমার মাঝেই স্বপ্নের শুরু,তোমার মাঝেই শেষ ৷তবু ভালো লাগা ভালোবাসাময় তুমি,আমার বাংলাদেশ৷
  • ২৬শে মার্চ তুমি নও শুধু একটি তারিখ। নও একটি স্মৃতি চিহ্ন, তুমি লাখো শহীদের রক্তের প্রতিক। তুমি চির বঞ্চিতের হুংকার,আবার তুমিই দিয়েছো চির শান্তি, ৩০ লক্ষ শহীদ আত্মার।
  • ২৬ মার্চ তুমি একটি উজ্জ্বল নক্ষত্র। বাংলা মায়ের আকাশ পাড়ে, তোমার জন্যই আজি বইছে আনন্দ, উল্লাস স্নেহ মাখা বাংলার হৃদয় জুড়ে। সকলকে মহান স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা।
  • ””কি বলার কথা, কি বলছি। কি শোনার কথা কি শুনছি। কি দেখার কথা কথা কি দেখছি। … ত্রিশ বছর পরেও আমি স্বাধীনতাটাকে খুঁজছি।”” ভাই অনেক বড় বড় কথা না বলে বরং দেশের জন্য আমরা কি করেছি এবং কি করতে পারি সেটাই ভাবি এবং আমাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব ততটুকু করার চেষ্টা করি।
  • আর একটি দিনও নয়। এখনই এই মুহুর্ত থেকে আসুন সবাই দেশের জন্য কাজ করি। নেতাদের জন্য অপেক্ষা না করে আমরা যে যেখানে আছি সেখান থেকে যে ভাবে যতটুকু সম্ভব দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কাজ করি। আর কত এভাবে পিছিয়ে থাকব? আমরা সবাই মিলেই পারি আমাদের সেই সব শহীদ ভাইদের রক্তের মুল্যায়ন করতে।
আরো অন্যান্য অতি জনপ্রিয় প্রশ্নোত্তর সম্পর্কে জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন 

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের ভাষণ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বক্তব্য, বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের বক্তব্য, বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতা

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বক্তব্য দিয়ে, তাক লাগিয়ে দিন সবাইকে!

প্রিয় বন্ধুরা ।

আজ ২৬ শে মার্চ ।‌ সুমহান স্বাধীনতা দিবস । ঐতিহাসিক এদিনে আয়োজিত আলোচনা সভার‌ সম্মানিত সভাপতি , মাননীয় প্রধান অতিথি ,উপস্থিত সচেতন শ্রোতাবৃন্দ –

আপনাদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে শুরু করছি আমার সংক্ষিপ্ত বক্তব্য ।‌‌

আপনারা অবগত আছেন, ২৬ শে মার্চ মহান ‌স্বাধীনতা দিবস । ১৯৭১ সালের এই দিনে শুরু হয়েছিল মাতৃভূমিকে সত্যিকারভাবে স্বাধীন ও সার্বভৌম মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার সশস্ত্র সংগ্রাম । দীর্ঘ নয় মাসের মরণপণ লড়াইয়ের পর ঐ বছরই ১৬ ডিসেম্বর এ জাতীয় অর্জন করেছিল বহু প্রত্যাশিত বিজয় । তাই জাতির ইতিহাসে ২৬ শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস হিসেবে বিশেষ মর্যাদায় সমুজ্জ্বল । এমন একটি মহান দিনে শহীদ স্মরণে আলোচনা সভার আয়োজন করার জন্য উদ্যোক্তাগণকে জানাই আন্তরিক মোবারকবাদ ।

মূলত স্বাধীনতা আল্লাহর বড় নেয়ামত ও পরাধীনতা আল্লাহর লানত । স্বাধীনতা অর্জনে বিমুখতা ও কাপুরুষতা আল্লাহর গজবের মধ্যে গণ্য ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ । স্বাধীনতার নেয়ামত হাসিল করতে হলে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয় । জানমালের কুরবানি দিতে হয় । আর হ্যাঁ এটা বাঙালি জাতি ভালো করে বুঝে ছিল । তাইতো বৃদ্ধ ,যুবক,কিশোর দলে দলে নিজের জীবনকে বাজি রেখে একাত্তরের বর্গীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছিল । রক্ত সাগর পাড়ি দিয়ে

পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর ভয়াল থাবা থেকে এদেশ ও মাটিকে রক্ষা করেছিল ।

ইতিহাসের পাতায় লেখা ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ বাঙ্গালীদের জীবনের একটি স্মরণীয় এবং কাল রাত ছিল । ওরা এই রাতেই নিরস্ত্র হাজার হাজার বাঙালীকে নির্মমভাবে শহীদ করেছিল । আমি জোর গলায় বলবো তারা এ রাতে বাঙ্গালীদের শুধু শহীদ করেনি বরং তারা নিজেদের পরাজয়ের এলান দিয়েছিল ।

আমি আরো একটু পিছন থেকে বলতে চাই ।

ইতিহাসের পাতাগুলো প্রমাণ করেছে ভারত উপমহাদেশে ব্রিটিশদের টানা দুশো বছরের অপশাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করে স্বাধীনতা সোনার হরিণ হাতের নাগালে আসার সময় যখন ঘনিয়ে এলো ঠিক তখনই সাম্প্রদায়িকতা মাথাচাড়া দিয়ে উঠল ।‌ মুসলমানরা চাইল জাতিগত ভিন্ন আবাসভূমি । আর হিন্দুরা চায় তাদের নিজস্ব স্বাধীন এলাকা । এভাবে ভারত বর্ষ দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে গেল । এক অংশের নাম হলো পাকিস্তান অপর অংশের নাম হল হিন্দুস্তান ।‌ এভাবে দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে দুটি পৃথক রাষ্ট্রের জন্ম হল

পাকিস্তান স্বাধীন হলো ১৯৪৭ সালের ১৪ আগষ্ট আর হিন্দুস্তান স্বাধীন হলো ১৯৪৭ সালের ১৫ আগষ্ট । পাকিস্তান গঠিত হয় পাঁচটি প্রদেশ নিয়ে আর হিন্দুস্তান গঠিত হয় ২৫ টি প্রদেশ নিয়ে । হিন্দুস্তানের প্রদেশগুলো ভৌগলিক দিক থেকে একটা অন্যটির সঙ্গে সংযুক্ত ও মিলিত ছিল । কিন্তু পাকিস্তানের পাঁচটি প্রদেশের মধ্যে চারটি মৌলিকভাবে সংলগ্ন থাকলেও পঞ্চম প্রদেশ অর্থাৎ আমাদের এই বাংলাদেশ পাকিস্তানের মূল ভূখন্ড থেকে দেড় হাজার মাইল দূরত্বে ছিল । এটাই মূল সমস্যা ছিল না । পাকিস্তানি নেতারা জনগণের সঙ্গে ওয়াদা করেছিলো স্বাধীন পাকিস্তানের আইন রচনা করা হবে কোরআন সুন্নাহ ভিত্তিক । পূর্ব-পশ্চিমের জনগণের মধ্যে কোন ভেদাভেদ থাকবে না । কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল উল্টো চিত্র

আপনারা জানেন ,

তারা জুলুম নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়েছিল বাঙ্গালীদের উপর । যার সংক্ষিপ্ত ফিরিস্তি এরকম –

১. পূর্ব পাকিস্তানের মাতৃভাষা বাংলার পরিবর্তে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে উর্দু চাপিয়ে দেওয়ার অপচেষ্টা ।

২. পূর্ব পাকিস্তান জনবহুল ও সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সাথে বিমাতাসুলভ আচরণ শুরু করে ছিল । ফলে আঞ্চলিক শোষণ ও জুলুমের শিকার হলো বাঙালী জাতি ।

৩. সরকারি অফিস-আদালতে চাকরির ক্ষেত্রে একচেটিয়া আধিপত্য ছিল পশ্চিম পাকিস্তানিদের ।

৪. উন্নয়ন অবকাঠামোতে কল-কারখানা, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট বিনির্মাণে বৈষম্যমূলক নীতি অবলম্বন করেছিল ।

৫. ১৯৭০ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ ভাবে বিজয়ী দলকে সরকার গঠন করতে না দেয়া ।

৬. মার্চ রাতের অন্ধকারে পাকিস্তানি বাহিনী কর্তৃক এদেশের নিরীহ নিরস্ত্র মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড লিপ্ত হয়েছিল ।

পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর এতসব উপনিবেশিক মনোভাব, শোষণ-বৈষম্য, জুলুম-অত্যাচারের কারণেই সেদিন স্বাধীনতা প্রিয় বাঙালী জাতি তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিল । মুক্তির লড়াইয়ে অবতীর্ণ হওয়া ছাড়া তাদের আর কোন উপায় ছিল না । তাই বাংলার বীর সন্তানেরা স্বাধীনতা অর্জন অথবা শহীদ হওয়ার মহত্তম প্রেরণায় অস্ত্র হাতে নিয়ে অবতীর্ণ হয়েছিল মুক্তিসংগ্রামে । দীর্ঘ নয় মরণপণ লড়াই করে অনেক রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনে বিজয় ‌। সূচিত হয় ঐতিহাসিক বিজয় দিবস ১৬ ডিসেম্বর ।

২৬ শে‌ মার্চ‌ আজকের এই মহান স্বাধীনতা দিনে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি আমি সকল শহীদ ভাই বোনদেরকে।

পরিশেষে আমি বলতে চাই ,

আমার দেশের স্বাধীনতা যদি বাধাগ্রস্ত হয় , আমার দেশের সার্বভৌমত্ব যদি ভূলুণ্ঠিত হয়, আমার দেশের ধর্মপ্রাণ জনগণের দীন ও ধর্মের উপর যদি আগ্রাসন চালানো হয় , দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই সকল ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের জাল ছিন্ন ভিন্ন করে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ফিরিয়ে আনব ইনশাআল্লাহ ।

আপনাদেরকেও দেশ ও জাতিকে রক্ষা করার জন্য অতন্দ্র প্রহরীর মতো সতর্ক থাকার উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে আমার সংক্ষিপ্ত বক্তব্য শেষ করছি ।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস FAQ’s

প্রশ্ন ১. স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা কত তারিখে উত্তোলন করা হয়?

উত্তরঃ ১৯৭১ সালের ২ মার্চ ( ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবন প্রঙ্গনে এক ছাত্র সমাবেশে )

প্রশ্ন ২. কে প্রথম বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছেন?

উত্তরঃ তৎকালীন ছাত্রনেতা ডাকসু ভিপি আ স ম আবদুর রব

প্রশ্ন ৩. বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ডিজাইনার কে? তখন পতাকার লাল বৃত্তের মধ্যে কিসের প্রতীক ছিল?

উত্তরঃ কামরুল হাসান; বাংলাদেশের মানচিত্র

প্রশ্ন ৪. কবে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করা হয়?

উত্তরঃ ৩ মার্চ ১৯৭১ সালে পল্টন ময়দানে

প্রশ্ন ৫. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ কোথায় দেন?

উত্তরঃ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান)

প্রশ্ন ৬. ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কয় দফা দাবি পেশ করেন?

উত্তরঃ ৪ দফা

প্রশ্ন ৭. অপারেশন সার্চলাইট কবে হয়?

উত্তরঃ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে (বৃহস্পতিবার)

প্রশ্ন ৮. অপারেশন সার্চ লাইট কি?

উত্তরঃ পাক হানাদার বাহিনী কর্তৃৃক বাংলাদেশীদের ওপর বর্বরোচি গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ

প্রশ্ন ৯. কে কখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন?

উত্তরঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ ( ২৬ শে মার্চ কে স্বাধীনতা দিবস হিসাবে ঘোষণা করা হয় ১৯৮০ সালে)

প্রশ্ন ১০. স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র স্থাপন করা হয় কবে?

উত্তরঃ ২৬ শে মার্চ ১৯৭১ সালে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের ইতিহাস Pdf

অফ ব্লাড অ্যান্ড ফায়ার: দ্য আনটোল্ড স্টোরি অফ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ


অফ ব্লাড অ্যান্ড ফায়ার: দ্য আনটোল্ড স্টোরি অফ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ

বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস

কে কখন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন?
উত্তরঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ ( ২৬ শে মার্চ কে স্বাধীনতা দিবস হিসাবে ঘোষণা করা হয় ১৯৮০ সালে)


আপনার বন্ধুদের সাথে এই পোস্ট শেয়ার করতে

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।